(শ্রাবণী শুক্লা দ্বাদশী)
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
প্রভু শ্রীরূপ-গোসাঞির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
গৌরপ্রিয় শ্রীরূপ-গোসাঞি—কতই-গুণের নিধি রে
গৌরাঙ্গচাঁদের ভাব, প্রচার করিয়া সব,
জানাইতে আর কেহ নাই।।
জানাইতে আর কেহ নাই—জয় জয় শ্রীরূপ-গোসাঞি
গৌর-মনোবৃত্তি-মাখা—শ্রীরূপ-গোসাঞি প্রকাশ কৈলা
প্রভুর মনোবৃত্তি-কথা—শ্রীরূপ-গোসাঞি প্রকাশ কৈলা
নিগম-নিগূঢ় শ্রীচৈতন্যের—মনোবৃত্তি প্রকাশ শ্রীরূপ হৃদে
গৌরের মনোবৃত্তি মূরতি ধরে—শ্রীরূপ-গোসাঞি-রূপে বিহরে
নীলাচলে বসতি কালে
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন-নীলাচলে বসতিকালে
তিনজনের এক মনের ভাব
কেউ যাইতেন না শ্রীমন্দিরে
হরিদাস শ্রীরূপ সনাতন—কেউ যাইতেন না শ্রীমন্দিরে
অদৃশ্য-অস্পৃশ্য-বোধে দৈন্য-বলে—কেউ যাইতেন না শ্রীমন্দিরে
মঙ্গল-আরতি দেখে দেখা দিতে—নিত্য আসিতেন গৌরহরি
আসিয়াছেন সিদ্ধ-বকুল-তলে
ঠাকুর-হরিদাসের কাছে—আসিয়াছেন সিদ্ধ-বকুল-তলে
কি লেখা এক-তালপত্র-প্রতি-অকস্মাৎ তাঁর পড়ল দৃষ্টি
আপনার মনোবৃত্তি—তালপত্রে লেখা দেখেন
‘আপনার মনোবৃত্তি’—
সেই শ্লোকরূপে স্ফূর্ত্তি—আপনার মনোবৃত্তি
বিস্মিত শ্রীগৌরহরি
কে জানিল আমার মনোবৃত্তি
প্রভু,–জিজ্ঞাসিলেন ঠাকুর-হরিদাসে
আমার মনোবৃত্তি লিখিল কে,–প্রভু,–জিজ্ঞাসিলেন ঠাকুর-হরিদাসে
সেই শ্লোকের প্রকাশ শ্রীরূপ-দ্বারে—শুনি হরিদাসের মুখে
ভাসি দুটী নয়ন-জলে—বাহু পসারি করলেন কোলে
আইস আমার শ্রীরূপ বলে—বাহু পসারি করলেন কোলে
আমার এই মনোবৃত্তি—কেমন করে জানলে তুমি
গৌরহরি এইরূপে—জানাইলেন জগতেরে
আমার,–মনোবৃত্তি প্রকাশ শ্রীরূপ করে—জানাইলেন জগতেরে
আমার মনোবৃত্তি এই—শ্রীরূপ-রূপে বিহরই
গৌরাঙ্গ-মনোবৃত্তি-রূপ—কতই-গুণের গোসাঞি শ্রীরূপ
গৌরাঙ্গ-নিগূঢ়-মনোবৃত্তি—শ্রীরূপ-রূপে ধরেছে মূরতি
গৌরমনোবৃত্তি প্রকাশকারী—শ্রীরূপ-গোসাঞির যাই বলিহারি[মাতন]
তাতে বিহরে,–সর্ব্বোপরি অনুপাম,
তাঁর কান্তাগণাধিকা, সর্ব্বারাধ্যা শ্রীরাধিকা,
তার সখীগণ-সঙ্গ যুথ।।
রাগামার্গে তাহা পাইতে, যাঁহার করুণা হইতে,
বুঝিল পাইল যেতে জনা।’’
শ্রীরূপের করুণা বিনে—আর পাবার উপায় নাই
ব্রজে রাধাকৃষ্ণ পাবার—আর কোন উপায় নাই
শ্রীরূপের চরণ আশ্রয় বিনে—আর জানবার উপায় নাই
শ্রীরাধাকৃষ্ণ-কেলি-রহস্য—আর জানবার উপায় নাই
কেউ ত’ জানত না
যুগল-লীলা-রহস্য-কথা—কেউ ত’ জানত না
সখী আর মঞ্জরী বিনা—কেউ ত’ জানত না
শ্রীরাধিকার সহচরী বিনা—তারা ত’ বটে বোবার দল
নিকুঞ্জ-বিলাস-রহস্য-কথা—প্রকাশ হবার আশা ছিল না
সেই,–বোবাদের বুখে থাকত লুকানা—প্রকাশ হবার আশা ছিল না
আমাদের সৌভাগ্য বশে—এবার,–প্রেমসিন্ধু—অবতারে
তার মধ্যে প্রধাম বোবা
এবে শ্রীরূপ-গোসাঞি আখ্যা—তার মধ্যে প্রধান বোবা
সেই ত’ শ্রীরূপ-মঞ্জরী—শ্রীরূপ-গোসাঞিকে জান কি ভাই
শ্রীরাধিকার প্রাণ-সহচরী—শ্রীরূপ-গোশাঞিকে জান কি ভাই
শ্রীরূপ-মঞ্জরী শ্রীরূপ-গোসাঞি—জগতেতে প্রচার কৈল
যুগল-কেলি-রহস্য কথা—জগতেতে প্রচার কৈল
উন্নত-উজ্জ্বল-রহস্য-কথা—জগতেতে প্রচার কৈল
যুগল-সেবা পাবার উপায়—জগতেতে প্রচার কৈল
‘যুগল-সেবা পাবার উপায়’—
রাগমার্গ অনুগমনে—যুগল সেবা পাবার উপায়
সখী-আনুগত্য গোপীদেহে—যুগল-সেবা পাবার উপায়
কলিহত-জীবে জানাইল
শ্রীগৌরাঙ্গের মনোবৃত্তি—কলিহত-জীবে জানাইল
‘শ্রীগৌরাঙ্গের মনোবৃত্তি’—
রাগামার্গে যুগল-সেবা প্রাপ্তি—শ্রীগৌরাঙ্গের মনোবৃত্তি
গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে—কলিহত-জীবে জানাইল
যদি,–শ্রীরূপ-গোসাঞি না জানাত—নৈলে,–কে বা জানত বল
ব্রজলীলায় প্রবেশের সুকৌশল—নৈলে,–কে বা জানত বল
যুগল-রহস্যে প্রবেশের উপায়—কেউ ত’ সন্ধান পেত না
যাদি শ্রীরূপ,–না জানাত করি’ করুণা—কেউ ত’ সন্ধান পেত না
সখী আনুগত্য বিনা—কেউ ত’ কখনও পায় না
আমার শ্রীরূপের পদাশ্রয় বিনা—কেউ ত’ কখনও পায় না
শ্রীরূপ-কৃপায় মিলে সর্ব্বথা—যুগল-সেবা,–প্রাপ্তির উপায় নাই অন্যথা
রাগমার্গে পাবার পন্থা—একমাত্র শ্রীরূপের কৃপা ভরসা
‘রাগমার্গে পাবার পন্থা’—
যুগল কিশোরের সেবা—রাগমার্গে পাবার পন্থা
তাই,–বলেছেন ঠাকুর নরোত্তম
যুগল-সেবা কারেও না মিলে
শ্রীরূপমঞ্জরীর কৃপা না হলে—যুগল-সেবা কারেও না মিলে
শ্রীরূপ দেয় যারে হাতে ধরে—কিশোরী অঙ্গীকার করেন তারে
‘শ্রীরূপ দেয় যারে হাতে ধরে’—
এই আমার নব-দাসী বলে—শ্রীরূপ দেয় যারে হাতে ধরে
শ্রীরাধাচরণ,–পাবার আর উপায় নাই
শ্রীরূপের কৃপা বিনে ভাই—শ্রীরাধাচরণ,–পাবার আর উপায় নাই
যুগল-লীলায় প্রবেশ করবার—কেউ ত’ অধিকার পায় না
আমার শ্রীরূপের করুণা বিনা—কেউ ত’ অধিকার পায় না
গৌর-মনোবৃত্তি শ্রীরূপ-গোসাঞির—কি বলব করুণার কথা
স্মঙরিলে প্রাণ কেঁদে উঠে—কি বলব করুণার কথা
লুপ্তব্রজ উদ্ধার তরে—প্রাণ,–গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে
অতুল-ঐশ্বর্য্য ছেড়ে—বাসে কৈল ব্রজপুরে
বিষয় ত্যাগ কি ছার কথা
প্রাণ,–গৌর-সঙ্গ ত্যাগ করে
প্রাণ-সরবস-নিধি—প্রাণ,–গৌর-সঙ্গ ত্যাগ করে
নিজ,–ভোগ্যনিধি-সঙ্গ হারা হয়ে—বাস করিলেন ব্রজবনে
গৌর-বিরহে ভোগ করে—বাস করিলেন ব্রজবনে
কেবল আমাদের তরে—বাস করিলেন ব্রজবনে
আমাদের দুঃখে দুঃখী হয়ে—বাস করিলেন ব্রজবনে
আমাদের দুঃখ মুছাবার তরে—বাস করিলেন ব্রজবনে
‘আমাদের দুঃখ মুছাবার তরে’—
যুগল-লীলা-রহস্য জানাইয়ে—আমাদের দুঃখ মুছাবার তরে
বাস করিলেন ব্রজবনে
তাঁর পদ করহ ভাবনা।।’’
যদি থাকে মনে বাসনা—শ্রীরূপের পদ কর ভাবনা
‘যদি থাকে মনে বাসনা’—
রাগমার্গের উপাসনা—যদি থাকে মনে বাসনা
শ্রী,–রাধাকৃষ্ণের উপাসনা—যদি থাকে মনে বাসনা
যদি,–যুগল রহস্য জানতে চাও
জেনে যদি,–যুগল-সেবা পেতে চাও
শ্রীরূপের পদে শরণ লও—জেনে যদি,–যুগল-সেবা পেতে চাও
অনুরূপ স্বরূপ স্বভাব না পেলে—যুগল-সেবা মিলবে না
শ্রীরূপের পদাশ্রয় বিনা—যুগল-সেবা মিলবে না
শ্রীচৈতন্য-করুণা-বারিধি—শ্রীরূপ-গোসাঞি আমার গুণনিধি
যুগল-উজ্জ্বলরস-লীলামৃত—কলিহত-জীবে পিয়াইলা
কৃপাদিঠে স্বভাব জাগাইয়ে—কলিহত-জীবে পিয়াইলা
‘কৃপাদিঠে স্বভাব জানাইয়ে’—
স্ফুরতু বঃ শচীনন্দন বলে—কৃপাদিঠে স্বভাব জাগাইয়ে
ব্রজলীলা-গ্রন্থ প্রকাশের—ভাই,–জান কি গোসাঞি অভিমত
ব্রজলীলা-গ্রন্থ বর্ণন করে—গোসাঞি আমার,–জানাইলেন জগতেরে
ব্রজলীলা-পরিণতি গৌর জানান—সব গ্রন্থ প্রকাশের এই ত’ মর্ম্ম
ব্রজলীলায় না ডুবিলে—গৌর,–কেমন করে বুঝবে বল
সেখানে ডুবতে পেলে—তবে ত’ এখানে উঠবে
গুণনিধি শ্রীরূপ গোসাঞি—প্রকাশিলা গ্রন্থরূপে
নিগূঢ়—ব্রজলীলা-রহস্য—প্রকাশিলা গ্রন্থরূপে
জানাইতে গোরা-রসভূপে—প্রকাশিলা গ্রন্থরূপে
ব্রজলীলা-গ্রন্থ প্রকাশের—এই আশয় না হইলে
মধুর-ব্রজবনে বসে—কেন ভাসল নয়ন-জলে
আর কি দেখতে পাব বলে—কেন ভাসল নয়ন-জলে
আর কি দেখতে পাব বলে’—
চিতচোর প্রাণ-গৌর—আর কি দেখতে পাব বলে
প্রাণ বাঁধা গৌর-চরণে
আছেন বটে বৃন্দাবনে—প্রাণ বাঁধা গৌর-চরণে
শ্রীরূপের অষ্টক তার প্রমাণে—প্রাণ বাঁধা গৌর-চরণে
‘শ্রীরূপের অষ্টক তার প্রমাণে’—
সদোপাস্য আদি করে—শ্রীরূপের অষ্টক তার প্রমাণে
বাস করে ব্রজপুরে
সরবস-গৌর ছেড়ে—বাস করে ব্রজপুরে
গৌর,–পাবার পথ দেখাবার তরে—বাস করে ব্রজপুরে
আমার গৌর কে বটে—শ্রীরূপ,–জানাইলেন জগতেরে
যদি,–শ্রীরূপ গোসাঞি না বর্ণিত—নৈলে কে বা জানত
‘যদি,–শ্রীরূপ গোসাঞি না বর্ণিত, —
অনর্পিত আদি শ্লোকে—যদি,–শ্রীরূপ গোসাঞি না বর্ণিত
গৌর-লীলার গূঢ়-রহস্য—নৈলে কে বা জানত
যদি,–নিজকৃত-শ্লোকে না বর্ণিত—কার বা অনুভব হত
পরতত্ত্ব-সীমা শ্রীচৈতন্য—কার বা গোচর হত
পরিণতি ভোগ বলে কে বা বুঝত—গৌর-লীলা,–ভোগে কে মুগ্ধ হত
গোসাঞি যদি,–শ্লোকাকারে না বর্ণিত—গৌর-লীলা,–
‘গোসাঞি যদি,–শ্লোকাকারে না বর্ণিত’—
সেই-লীলা ভোগে মুগ্ধ হয়ে—গোসাঞি যদি,–শ্লোকাকারে না বর্ণিত
আর কি দেখতে পাব বলে—গোসাঞি যদি,–শ্লোকাকারে না বর্ণিত
নিজ-কৃত শ্রীচৈতন্যাষ্টকে—গোসাঞি যদি,–শ্লোকাকারে না বর্ণিত
তাতে,–গৌর-ভোগের লালসা জাগে—গোসাঞি,–মগ্ন
জানাইলেন জগতেরে
গৌরলীলা-ভোগ পরিণতি-ভোগ বলে—জানাইলেন জগতেরে
ব্রজলীলার পরিণতি—যদি,–গৌর-রহস্য জানতে চাও
শ্রীরূপের পদে শরণ লও—যদি,–গৌর-রহস্য জানতে চাও
শ্রীরূপের পদে শরণ বিনা—গৌর-রহস্য জানতে পাবে না
শ্রীরূপের পদ কর ভাবনা—যদি,–গৌর-ভোগে থাকে বাসনা
(২)
গুণের সমুদ্র দয়াময়।
যাঁহার করুণা হৈলে, শ্রীচৈতন্য-চরণ মিলে,
ব্রজে রাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি হয়।।
পরম বৈরাগ্য যাঁর, চরিত্রের নাহি পার,
অসীম ঐশ্বর্য্য তেয়াগিয়া।
মহাপ্রভুর আগমন, শুনি গোসাঞি সেইক্ষণ,
প্রয়াগে চলিলা হর্ষ হইয়া।।
অনুজ বল্লভ সনে, শীঘ্র গেলা সেই স্থানে,
চৈতন্যের শ্রীচরণ, দর্শনে আনন্দ মন,
ভূমে দোঁহে পড়ে লোটাইয়া।।’’
চাও হে করুণা-নয়ন-কোণে
পুনঃ পুনঃ দুই জনে, নিরখিয়া প্রভু পানে,
প্রেমজলে ভরিল নয়ান।’’
গৌর-মুখ-ইন্দু হেরে—প্রেমসিন্ধু উথলিল
দন্তে তৃণগুচ্ছ করি, দৈন্য করে বেরি বেরি,
যা শুনিতে বিদরে পরাণ।।
শ্রীরূপেরে নিরখিয়া, প্রভু প্রেমে মত্ত হৈয়া,
প্রিয়বাক্য অনেক কহিলা।
অজ ভব দেবগণ, আরাধয়ে যে চরণ,
তাহা রূপের মস্তকে ধরিলা।।’’
আইস আমার রূপ বলে—শ্রীরূপের মাথায় চরণ দিলা
প্রেম বশে গৌররায়, উঠ উঠ বলি তায়,
মহাসুখে কৈল আলিঙ্গন।’’
আইস আইস আইস বলে—বাহু পসারি’ কৈল কোলে
তাহা কিছু না যায় বর্ণন।।’’
ও করুণা-বারিধি গৌরহরি–তোমার কৃপার যাই বলিহারি
বিষয়-সংসার-কূপ হতে—বলাৎকারে আনিলে কাড়ি’
তবে প্রভু রূপে লৈয়া, নিকটেতে বসাইয়া,
সনাতনের পুছে সমাচার।’’
করুণা-বারিধির প্রাণ কাঁদছে
সনাতন কোথা’ রইল—করুণা,-বারিধির প্রাণ কাঁদছে
প্রভু আমার–
শ্রীরূপ কহিল সব, শুনিয়া চৈতন্যদেব,
কহে কিছু চিন্তা নাহি তার।।’’
করুণা-বারিধি শ্যামসুন্দর—অচিরে বন্ধন মুক্ত করিবে
শ্রীরূপে প্রসন্ন হৈয়া, কতদিন কাছে থুইয়া,
রাধাকৃষ্ণ-তত্ব শিখাইলা।’
শ্রীরূপেরে শিক্ষা দিলা—প্রয়াগে ত্রিবেণী-তীরে
পরম-আনন্দ মন, রূপে করি আলিঙ্গন,’’
কাতরে শ্রীরূপ কয়, সঙ্গে থাকি আজ্ঞা হয়,
শুনি প্রভু মহাহর্ষচিতে।
কহেন মধুরবাণী, সদা সঙ্গে আছ তুমি,
পুনঃ সে আসিবা ব্রজ হৈতে।।’’
আমি,–তোমার সঙ্গ ছাড়া নই—সদা সঙ্গে আছ তুমি
এই মত কহি কত, তবে প্রভু শচী-সুত,
কাশী চলে নৌকায় চড়িয়া।
প্রভুর শ্রীচন্দ্র-মুখ, নয়নে হেরিয়া রূপ,
ভূমে পড়ে মুরছিত হইয়া।।’’
হা-গৌর বলে শ্রীরূপ-গোসাঞি—মুরছিত ত্রিবেণী তীরে
সে সময়ে ভেল যাহা, কহিতে না পারি তাহা,
কতক্ষণে কিছু সম্বরিলা।
মহাপ্রভুর শ্রীচরণ, তাহে সমর্পিয়া মন,
বৃন্দাবনে গমন করিলা।।’’
শ্রীরূপ গোসাঞি বৃন্দাবনের পানে—যায় যায় ফিরে চায়
বয়ান ভাসে নয়ন-ধারায়—যায় যায় ফিরে চায়
কতদিনে দেখতে পাব
হরিবোলা রসের বদন—কতদিনে দেখতে পাব
অত্যন্ত দুঃখিত চিত্তে, শীঘ্র আইলা মথুরাতে,
সুবুদ্ধি মিশ্রের দেখা পাইলা।
মিশ্র আনন্দিত হৈয়া, দুইজনে সঙ্গে লৈয়া,
দ্বাদশ বন দেখাইলা।।’’
বনমাধুরী দর্শন করে—ব্যাকুল হয়ে শ্রীরূপ গোসাঞি কাঁদে
বিস্তারিতে নারি আর, গমনাগমন তাঁর,
কতদিন পরে বৃন্দাবনে।
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন, হৈল দোঁহার মিলন,
দোঁহে প্রেমে আপনা না জানে।।’’
পরস্পর গলা ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
স্মঙরি শ্রীগৌরাঙ্গ-গুণে—রূপ-সনাতন কাঁদেন দুজনে
যাহা শুনি পাষাণ মিলায়।’’
স্মঙরি শ্রীগৌরাঙ্গ-গুণে—গলা ধরে কাঁদে দুজনে
আনন্দ হইল চিতে, নাহি পারে সম্বরিতে,
কাঁদি দোঁহে ধরণী লোচায়।।’’
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—ব্রজরজে লোটায় দুজনে
অতি অনুরাগে মনে, শ্রীরূপ শ্রীবৃন্দাবনে,
রহে সদা প্রেমেতে উল্লাস।
ফল মূল মাধুকরী, বিপ্র গৃহে ভিক্ষা করি,
ভুঞ্জে কভু কভু উপবাস।।’’
ছিড়া কান্থা বহির্ব্বাস এইমাত্র রহে পাশ,
তরুতলে করেন শয়ন।’’
ছেঁড়া কাঁথা নেড়া মাথা
মুখে গৌরগুণ গাথা—ছেঁড়া কাঁথা নেড়া মাথা
লোকে জিজ্ঞাসিলে বলে মুঞি শ্রীচৈতন্যের দাস রে।।’’ [মাতন]
প্রাণ ত’ কাঁদে না
অনুরাগের কথা শুনে—প্রাণ ত’ কাঁদে না
দিবানিশি অবিশ্রাম, জপে রাধা কৃষ্ণ নাম,
ভাবভরে করয়ে নর্ত্তন।।
ক্ষণে করে ভক্তি পুনঃ, অন্তর্ম্মনা অনুক্ষণ,
কি কব ভজন-রীতি তাঁর।’’
এমন অনুরাগে না ভজিলে—শুধু কি,–মুখের কথায় গৌর মিলে
প্রেমময় অক্ষর যাঁহার।।
মহাধীর তনু যাঁর, কে বুঝে হৃদয় তাঁর,
কভু যমুনার তটে যাইয়া।।
হা শচীনন্দন বলি, কাঁদে দুই বাহু তুলি,’’
আমার,–চিতচোর প্রাণ গৌর—আর কি দেখা দিবে না
ডাকে রাধাকৃষ্ণ নাম লৈয়া।।
অতি সুকোমল দেহ, সদা প্রেমে নাচে সেহ,
আর কি বলিব একমুখে।
অধম পামরগণ, পতিত দুঃখিত জন,
নিজগুণে কৃপা করে তাকে।
আমি বড় দুরাচার, মোরে কর অঙ্গীকার,
তাপেতে হৈলাম সদা ভোর।
ও পদ-পঙ্কজে মন, রহে যেন অনুক্ষণ,
এই নিবেদন শুন মোর।।
পতিত-পাবন নাম ধর, পতিতে নিস্তার কর,
করি নিজ করুণা বিস্তার।
কহে দাস নরহরি, রাখ মোরে কেশে ধরি,
তোমা বিনা গতি নাহি আর।।’’
দয়ানিধি শ্রীরূপ গোসাঞি—এইবার মোরে কৃপা কর।
তাঁর পদ করহ ভাবনা।।
শ্রীচৈতন্য-আজ্ঞা পাইয়া,
যত ভক্তি-সিদ্ধান্তের খনি।
তাহা উঠাইয়া কত,’’
প্রাণ গৌর হে যা কর বলে—গৌর-প্রেমসিন্ধুতে ডুব দিয়ে
জীবে দিলা প্রেম-চিন্তামণি।।’’
শ্রীরূপ গোসাঞি প্রেমভক্তির খণি—জীবে দিলেন প্রেমচিন্তামণি
প্রকাশি উজ্জ্বল নীলমণি—জীবে দিলেন প্রেমচিন্তামণি
পেয়ে উজ্জ্বল নীলমণি—জীব পেল প্রেমচিন্তামণি
যুগল-উজ্জ্বল-রস—নৈলে কে বা জানত
‘যুগল-উজ্জ্বল-রস’—
প্রাণ-রাধা-রাধারমণের—যুগল-উজ্জ্বল-রস
যদি,–গ্রন্থাকারে না প্রকাশ হত—যুগল-উজ্জ্বল-রস
‘যদি,–গ্রন্থাকারে না প্রকাশ হত’—
উজ্জ্বল নীলমণি নাম দিয়ে—যদি,–গ্রন্থাকারে না প্রকাশ হত
শ্রীরাধাকৃষ্ণ—রসকেলি, নাট্যগীত পদাবলী,
শুদ্ধ পরকীয়া মত করি।
শ্রীচৈতন্যের মনোবৃত্তি, স্থাপন করিলা ক্ষিতি
আস্বাদিয়া তাহার মাধুরী।।’’
গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে—আবার আপনি,–আচরিয়ে দেখাইলেন
যুগল-রহস্য-ভোগের পথ—আবার আপনি,–আচরিয়ে দেখাইলেন
যুগল-রহস্য আস্বাদিয়ে—আবার আপনি,–আচরিয়ে দেখাইলেন
শ্রীচৈতন্যের মনোবৃত্তি-মুরতি—গোসাঞি স্থাপন করিলা ক্ষিতি
শুদ্ধ পরকীয়া তত্ত্ব—গোসাঞি স্থাপন করিলা ক্ষিতি
‘শুদ্ধ পরকীয়া তত্ত্ব’—
যাতে হয় রসাধিক্য—শুদ্ধ পরকীয়া তত্ত্ব
ব্রজ বিনা যা নাই অন্যত্র—শুদ্ধ পরকীয়া তত্ত্ব
নৈলে কে বা জানত
ব্রজলীলার রসোৎকর্ষ—নৈলে কে বা জানত
যদি,—পৃথক পৃথক গ্রন্থে না বর্ণিত—নৈলে কে বা জানত
‘যদি,—পৃথক পৃথক গ্রন্থে না বর্ণিত’—
প্রাণ গৌরাঙ্গের ইঙ্গিত পেয়ে—যদি,—পৃথক পৃথক গ্রন্থে না বর্ণিত’
ললিত মাধব, বিদগ্ধ মাধব—যদি,—পৃথক পৃথক গ্রন্থে না বর্ণিত’
রসোৎকর্ষ কে বা জানতে
মধুর-শ্রীব্রজলীলার—রসোৎকর্ষ কে বা জানত
ব্রজের,–যুগল-কেলি-বিলাস-রসাস্বাদ—কে বা পেত রে
চৈতন্য-বিরহে শেষ, পাই অতিশয় ক্লেশ,
তাহে যত প্রলাপ বিলাপ।’’
গোসাঞি আমার,–আহার নিদ্রা পরিহরি—ব্রজরজে দেয় গড়াগড়ি
প্রাণ-গৌরাঙ্গের গুণ স্মঙরি—ব্রজরজে দেয় গড়াগড়ি
হা,–সোণার গৌর প্রভু বলি’—ব্রজরজে দেয় গড়াগড়ি
গৌরের নীলাচল-বিহার স্মঙরিয়ে—নিশিদিশি কাঁদে রে
এক এক লীলা বর্ণন করে—নিশিদিশি কাঁদে রে
অষ্টকেতে প্রতি শ্লোকে করে—নিশিদিশি কাঁদে রে
পুনরপি দৃশোর্যাস্যতি পদম্
স চৈতন্যঃ কিং মে—পুনরপি দৃশোর্যাস্যতি পদম্
ব্যাকুল হয়ে শ্রীরূপ-গোসাঞি কাঁদে—আর কি দেখতে পাব নয়নে
গম্ভীরার গুপ্তধনে—আর কি দেখতে পাব নয়নে
রাধাভাবে কৃষ্ণবিরহে ভোরা—আর কি দেখতে পাব গোরা
স্বরূপ-রামরায়ের কর-ধরা—আর কি দেখতে পাব গোরা
সেই মহাভাবে ভোরা শচীনন্দন—দেখিতে কি পাব পুনঃ
রথের আাগে নটনপর শ্রীচৈতন্য—করিবে কি আমার নয়ন ধন্য
‘রথের আগে নটনপর শ্রীচৈতন্য’—
আমার পরাণ-বঁধু পেলাম বলে—রথের আগে নটনপর শ্রীচৈতন্য
রথের আগে নটনপর শ্রীচৈতন্য—করিবে কি আমার নয়ন ধন্য
‘রথের আগে নটনপর শ্রীচৈতন্য’—
আমার পরাণ-বঁধু পেলাম বলে—রথেব আগে নটনপর শ্রীচৈতন্য
হবে কি আমার নয়ন-গোচর
সিন্ধুতট-বিহারী গৌরসুন্দর—হবে কি আমার নয়ন-গোচর
শ্রীযমুনাতীর উদ্দীপনে—সিন্ধুতীরে সদা বিহরে
‘শ্রীযমুনাতীর উদ্দীপনে’—
সিন্ধুর কালজল হেরে—শ্রীযমুনাতীর উদ্দীপনে
এইরূপে,–কাঁদে গোসাঞি নিশিদিনে
নিরজনে বসে মধুর-বৃন্দাবনে—এইরূপ,–কাঁদে গোসাঞি নিশিদিনে
‘নিরজনে বসে মধুর-বৃন্দাবনে’—
শ্রীসনাতন গোপালভট্ট সনে—নিরজনে বসে মধুর-বৃন্দাবনে
গৌরের,–নীলাচল-লীলা-কীর্ত্তন করে—এইরূপে,–কাঁদে গোসাঞি নিশিদিনে
সে সব কহিতে ভাই, দেহে প্রাণ রহে নাই,
এ রাধাবল্লভ হিয়ে তাপ।।’’
মনোবৃত্তিরূপ শ্রীরূপ গোসাঞি—এইবার মোরে কৃপা কর
বিঃ দ্রষ্টব্য—অতঃপর প্রতিসূচক কীর্ত্তনের শেষে নিম্নোক্ত—
‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর’’
পরাণ গৌরাঙ্গগণ—তোমরা,–কোথা’ বা লুকালে
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—একে একে সব কোথা’ লুকালে
আমাদের,–কাল-কলির কবলে ফেলে—প্রাণ, –গৌর লয়ে কোথা’ লুকালে
আমাদের, আর,–দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই গো—আমাদের,–কার কাছে রেখে গেলে
মুখ,–মলিন দেখে দুঃখ জানি’—শুধাইতে আর কেউ নাই গো
কেন,–কি হয়েছে বাপ আয় বলে—শুধাইতে আর কেউ নাই গো
মুখ,–মলিন দেখি’ বাহু পসারি’—কোলে নে-বার কেউ নাই গো
কেন,–বল কি হয়েছে বলে—কোলে নেবার কেউ নাই গো
প্রাণ,–গৌর-কথা বলে শুনে—আর,–জুড়াইবার ঠাঁই নাই গো
‘প্রাণ,–গৌর-কথা বলে শুনে’—
দগ্ধ-হৃদয় শান্তকারী—প্রাণ,–গৌর কথা বলে শুনে
জুড়াইবার উপায় নাই
গৌর-কথা,–বলবার শুনবার প্রাণ নাই—জুড়াইবার উপায় নাই
একে একে পলাল সবাই—গৌর-কথা,–বলবার শুনবার প্রাণ নাই
প্রাণারাম গৌরাঙ্গ-কথা—শুনতে পাই না বলতে পাই না
কারে বলব দুঃখের কথা—শুনতে পাই না বলতে পাই না
কারে বলব দুঃখের কথা—আজ,–সকল সুখেই বঞ্চিত মোরা
হায়,–নরহরি মুকুন্দ মুরারি।
আহা,–সঙ্গে স্বরূপ রামানন্দ, হরিদাস প্রেমকন্দ,
আরে হা,–দামোদর পরমানন্দ পুরী।।
হায় রে,–‘‘যে সব করিয়া লীলা,’’
মধুর নদীয়া আর নীলাচলে—যে সব করিলা লীলা
‘মধুর নদীয়া আর নীলাচলে’—
সুরধুনী আর সিন্ধুকূলে—মধুর নদীয়া আর নীলাচলে
হায় রে,–
আরে হা
আমার প্রাণ-গৌরাঙ্গের—প্রেমপুরুষোত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
স্থাবর জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
‘স্থাবর জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা’—
ঝারিখণ্ড-পথে ব্রজে যেতে—স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা
পাষাণ-গলান-লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে ত পেলাম না
‘কীর্ত্তন-নটন-লীলা’—
সুরধুনী—পুলিনে—‘কীর্ত্তন-নটন-লীলা’
আমার,–চিতচোর-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—‘কীর্ত্তন-নটন-লীলা’
ও,–‘‘গমন-নটন-লীলা’’
ওগো আমার,–সীতানাথের আনানিধির—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–নদীয়া-বিনোদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–প্রাণ-শচীদুলালিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়ার—গমন-নটন-লীলা
সঙ্গীর্ত্তন,–কেলিরস-বিনোদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
সঙ্কীর্ত্তন,–রাসরস-উন্মাদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–নরহরির চিতচোরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রসময়-গৌরকিশোরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–নবদ্বীপ-পুরন্দরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীরূপ-হৃৎকেতন-গোরার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীসনাতনের গতি-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–লোকনাথের হৃদ্বিহারীর—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গোপাল-ভট্টের প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রঘুনাথ-ভট্টের প্রাণারাম-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীজীব-জীবন-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–দাস-রঘুনাথের সাধনের ধনের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–সার্ব্বভৌমের চৈতন্য-দাতার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রাজা প্রতাপরুদ্রের ত্রাণকারীর—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গজপতি-উদ্ধারণের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রামরায়ের চিতচোরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–স্বরূপের সর্ব্বস্ব-ধনের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–নিতাই-পাগল-করা গোরার—গমন-নটন-লীলা
ও,–‘‘গমন-নটন-লীলা’’
নাটুয়া-মূরতি গৌর আমার—চলে যেতে নেচে যায়
আমার প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–নাটুয়া-মূরতি নটন-গতি—
মহা,–ভাবনিধি,-গৌরাঙ্গ আমার—চলে যেতে নেচে যায়
ভাবনিধি গোরা,–ভাব-হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যায়
ও,–
রসের গোরা,–চলে যেতে নেচে যেছে—সঙ্গীতেতে কথা কহিছে
ওগো আমার,–রসের গোরা চিতচোরা—সঙ্গীতেতে কথা কহিছে
নদীয়া-বিনোদ গৌরাঙ্গের—গমনে নটন বচনে গান
শচীদুলাল প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমনই নটন বচনই গান
কে দেখেছে কে শুনেছে কোথায়—চলতে নাচে বলতে গায়
রসময় গৌরাঙ্গরায়—চলতে নাচে বলতে গায়
যেন,–কত-শত-কোকিল কুহরিছে
পঞ্চমরাগ জিনি’—যেন,–কত-শত-কোকিল কুহরিছে
যেন,–আমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
জগত,–অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
গৌরহরি হরি বলিছে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
ও—‘‘মধুর চাহনি আকর্ষণ।’’
হরি বলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি মন হরিছে
‘হরি বলে যার পানে চাইছে’—
রসের গোরা নেচে নেচে—হরি বলে যার পানে চাইছে
সে, অমনি ঢলে পড়িছে
ভাবনিধি যার পানে চাইছে—সে, অমনি ঢলে পড়িছে
ভাবনিধি যার পানে চাইছে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়িছে
ভাবেতে অবশ হয়ে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়িছে
রসের গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রসোন্মাদী—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
যে,–ঢলে পড়ে তারে বুকে ধরে—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে [মাতন]
আমার,–রঙ্গিয়া প্রাণ-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
অনঙ্গমোহন গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
রঙ্গের মন্দির গোরার—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
‘রঙ্গের-কামের কোঁড়া—রঙ্গের মন্দির গোরা
প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর
শর,–বরিষণের নাহি অবসর—প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর
নিজ,–পারিষদ উপর শর—বরষিছে নিরন্তর
নিরন্তর শর বরিষণে—পারিষদ হইল জর জর
আমার,–ভাবনিধি প্রাণ-গৌরাঙ্গ—অভাবের সঙ্গ করে না
মহা—ভাবনিধি প্রাণ-গৌরাঙ্গ—অভাবের সঙ্গ করে না
কম্প-অশ্রু-পুলকাদি—নানা,–ভাব-ভূষণে ভুষিত অঙ্গ
অন্তরঙ্গ-ভাবুক-সঙ্গে—নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ
আরে আরে আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
আরে,–আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
আরে আমার চিতচোর—গৌর কিশোর-বর
রসে তনু ঢর-ঢর—গৌর কিশোর-বর
রসে তনু ঢর ঢর—গৌর কিশোর-বর
‘রসে তনু ঢর-ঢর’—
শ্রী,–নবদ্বীপ-পুরন্দর—রসে তনু ঢর ঢর
কারে বলব দুঃখের কথা—দেখা শুনা হল না
গমনে নটন বচনে গান—দেখা শুনা হল না
তাই মঞি না পাইনু দেখিতে।’’
দেখিতে ত’ পেলাম না রে
পাষাণ-গলান-লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না রে
‘পাষাণ-গলান-লীলা’—
আমার,–চিতচোর প্রাণ-গৌরাঙ্গের—পাষাণ-গলান-লীলা
অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
ওযে,–লীলায় শিলা গলেছে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
মধুর শ্রীনীলাচলে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
পাষাণে শ্রীপদচিহ্ন—আজও,—সেই লীলার সাক্ষী দিছে
আরে আরে আরে আমার
পরাণের পরাণ আমার
‘‘শ্রীল জগন্নাথ—আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে,
নাচে পরি’ ভাব-রত্ন-সাজ।।’’
ভাবনিধি শচীসূত—ভাব-ভূষণে বিভুষিত
করিছেন জগন্নাথ দরশন
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বে দাঁড়ায়ে—করিছেন জগন্নাথ দরশন
ভাবনিধি গৌর আমার—রাধিকা-ভাবিত-মতি
শ্রী,–জগন্নাথের বদন চেয়ে—রাধিকা-ভাবিত-মতি
জগন্নাথের বদন চেয়ে—স্বর্ণ-বর্ণ-হল বিবর্ণ
না জানি কি কইতে কইতে—স্বর্ণ-বর্ণ হল বিবর্ণ
জগন্নাথ বলতে নারে—জ-জ-জ-জ-গ-গ করে
কম্প অশ্রু পুলক সঘর্ম্ম।
এই সপ্ত সাত্ত্বিক-ভাব, আর দুই অনুভাব,
হাস্য নৃত্য সব প্রেমধর্ম্ম।।’’
সাত্ত্বিক-বিকার যত—গৌর-অঙ্গে হল বেকত
নানা,–ভাবাবলি-ভূষণেতে—গৌর-অঙ্গ বিভূষিত
অবিরল-নয়ন-ধারার—বিরাম নাই বিরাম নাই
যেন,–শ্রাবণ-মেঘের ধারা—বিরাম নাই বিরাম নাই
শ্রীগৌরাঙ্গের নয়ন-ধারা—যেন,–পিচকারী-জলযন্ত্র-ধারা
এক-এক-ধারায় শত-শত-ধারা—যেন,–পিচকারী—জলযন্ত্র-ধারা
অবিরল-নয়ন-ধারায়—ভাসিল রে মুখ-কমল
মুখ-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদ-কমলে
হৃদ-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ-কমলে
চরণ-কমল পাখালিয়ে—নিম্ন-খাল পূর্ণ হল
শ্রীগৌরাঙ্গের নয়ন-ধারায়—নিম্ন-খাল পূর্ণ হল
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বদেশের—নিম্ন-খাল পূর্ণ হল
সেই গৌরের পদ-পরশে—পাষাণ গলিয়া গেল
প্রাণভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ-গলান গোরা
সকল সুখেই বঞ্চিত মোরা
তখন জনম হল না মোদের
যখন হল প্রকট বিহার—তখন জনম হল না মোদের
লীলা-অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
শ্রীগুরুমুখের কথা স্মঙরি
গিয়াছিলাম নীলাচলে
রথ-যাত্রাকালে ভাই ভাই মিলে—গিয়াছিলাম নীলাচলে
গিয়াছিলাম নীলাচলে—বড় সাধ দেখব বলে
দেখিব আপনে জগন্নাথ
রামরায় স্বরূপ লইয়া।
নিজ-ভাব কহে উঘাড়িয়া।
মোর কি হইব হেন দিনে।
সে কথা কি শুনিব শ্রবণে।।
প্রভু মোর সাত সম্প্রদায়।
করিব কীর্ত্তন উভরায়।।’’
হায় রে,–‘‘মোর কি এমন দশা হব।
সে লীলা কি নয়নে হেরিব।।’’
গিয়াছিলাম শ্রীনীলাচলে
ভাই-ভাই-ভাই মিলে—গিয়াছিলাম শ্রীনীলাচলে
রথেব আগে গৌর-নর্ত্তন—বড় সাধ দেখব বলে
রাধাপ্রেমের কত বল—তাই,–দেখে রূপ সনাতন
‘রাধাপ্রেমের কত বল’—
নাগরে নাগরী কৈল—রাধাপ্রেমের কত বল
তাই,–দেখে রূপ সনাতন
গায় রায়-রামানন্দ, মুকুন্দ মাধবানন্দ,’’
চেয়ে,–মহাভাব-প্রকটিত-বদন-পানে—ভাবনিধির ভাব জেনে
বাসুঘোষ গোবিন্দ শঙ্কর।।
প্রভুর দক্ষিণ-পাশে, নাচে নরহরিদাসে,
বামে নাচে প্রিয় গদাধর।’’
‘‘নাচিতে নাচিতে প্রভু, আউলাইয়া পড়ে কভু,
আবেশে ধরয়ে দোঁহার কর।।
নিত্যানন্দ মুখ হেরি,’ বলে পহুঁ হরি হরি,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে উচ্চৈঃস্বরে।
স্মঙরি শ্রীবৃন্দাবন, প্রাণ করে উচাটন,’’
সেইভাবে ভোরা গোরা—জগন্নোথে জগন্নাথ হেরে
সেইভাবে ভোরা গোরা—যেন,–পেয়েছে নব-বৃন্দাবনে
আপন-পরাণ-ধনে—যেন,–পেয়েছে নব-বৃন্দাবনে
প্রভাস-মিলনে—যেন,–পেয়েছে নব-বৃন্দাবনে
আক্ষেপে করিছেন উক্তি
তথাপি আমার মন হরে বৃন্দাবন হে।।’’
তাই,–‘‘স্মঙরি শ্রীবৃন্দাবন, প্রাণ করে উচাটন,
আবেশে ধরয়ে রায়ের করে।।’’
স্বরূপ-রামরাযের,–বদন-পানে চেয়ে—বলে,–এ দাসীরে কৃপা কর
বলে,–বৃন্দাবনে কর লীলা—এ দাসীরে সদয় হও
রথের আগে কত খুজলাম—দেখিতে ত’ পেলাম না
কেঁদে কেঁদে ফিরে এলাম—দেখিতে ত’ পেলাম না—
কারে বলব দুঃখের কথা—দেখিতে ত’ পেলাম না
হায় রে,– তখনে না হৈল জন্ম, এবে ভেল ভববন্ধ
সে না শেল রহি গেল চিতে।।’’
লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
হায় রে,–ভূগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।’’
শ্রীগুরুদেবের কৃপা প্রেরণায়—আবার,–গিয়াছিলাম বৃন্দাবনে
ভাই ভাই মিলে কত খুঁজেছি
শ্রীগুরুদেবের প্রেরণায়—ভাই ভাই মিলে কত খুঁজেছি
তাঁদের বসতি স্থানে গিয়ে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ রূপ সনাতন বলে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ,–ভট্টযুগ শ্রীজীব গোসাঞিকত না ডেকেছি
কোথায় আছ,–ভূগর্ভ শ্রীলোকনাথ বলে—কত না ডেকেছি
শ্রী,–রাধাকুণ্ড-তীরে গিয়ে—কত না ডেকেছি
দাস-গোসাঞি কোথায় আছ বলে—কত না কেঁদেছি
কেউ ত’ দেখা দিলে না
কেঁদে কেঁদে ফিরে এলাম—কেউ ত’ দেখা দিলে না
বৃন্দাবনে ভক্তগণ-সাধ।।’’
প্রাণ,–গৌরলীলীা তার গণের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম নো
অন্ধভেল সবাকার আঁখি।’’
আঁখি,—তারা হারাল জ্যোতি হারাল—আঁখি আর,—কেমন করে-
আঁখি,—তারা গৌরগণ হারাল
দর্শন-শক্তি গৌর হারাল—আঁখি,–তারা গৌরগণ হারাল
সে,–আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল
গৌরলীলা,–দরশনে যে বঞ্চিত হল—সে—আঁখি হওয়াই ভাল
একে একে সব লুকায়েছে—ব্যাথার ব্যথী কে বা আছে
আমি,–গুরু-গৌরাঙ্গ-বৈমুখী—আমার,–মুখ কেউ দেখ না
দেখিতে মানুষের আকার বটে—কিন্তু,–মনুষ্যত্বের গন্ধ না রে
একতিল কি প্রাণ থাকত
সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত
সে সুখে বঞ্চিত হয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত
হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে
অন্নজল-বিষ খাই, তবু,–‘‘মরিয়া নাহিক যাই,
ধিক্ ধিক্ নিলাজ পরাণ।’’
ওরে রে নিলাজ-পরাণ—আর,–কি-সুখে বা আছ রে
গুরু-গৌরাঙ্গ-বৈমুখী প্রাণ—আর,–কি-সুখে বা আছ রে
বঞ্চিত হয়ে সে-সুখ হতে—আর,–কি-সুখে বা আছ রে
‘বঞ্চিত হয়ে সে-সুখ হতে’ –
এমন,–পড়ে পড়ে মায়ার লাথি খেতে—বঞ্চিত হয়ে সে সুখ হতে
গেলেই ত’ ভাল রে
এখনও ভালয় ভালয়—গেলে ত’ ভাল রে
হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—গেলেই ত’ ভাল রে
তবে যদি যাও সেই ভাল।।’’
হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—নিশিদিশি ডাক রে
ওরে রে কৃতঘ্ন-পরাণ—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
‘অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি’—
অদোষ-দরশী শ্রীগুরুদেবের—অহৈতুকী—কৃপা স্মঙরি
প্রাণভরে গাও রে
কণ্ঠহার কর রে
শ্রীগুরু-দত্ত নামাবলী—কণ্ঠহার কর রে
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—ব্যাকুল হয়ে গাও রে
ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে বেড়াব
গৌরপ্রেমের পাগল হয়ে—দেশ বিদেশে বেড়াব
জপ হর কৃষ্ণ হরে রাম।’’
ও ভাই,–বোল হরিবোল—নিতাই গৌরহরি বোল।
গৌরহরি বোল, গৌরহরি বোল, গৌরহরি বোল।।
প্রেমসে কহে। শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—প্রভু নিতাই –শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত-শ্রীরাধারাণীকী জয়।
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন-শ্রীনিতাইচাঁদকী জয়।
করুণাসিন্ধু-গৌরভক্তবৃন্দকী জয়। শ্রীবৃন্দাবনধামকী জয়।
শ্রীখোল-করতালকী জয়। চারি-সমম্প্রদায়কী জয়।
শ্রীনবদ্বীপ-ধামকী জয়। আপন আপন শ্রীগুরুদেবকী জয়।
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন
শিশুপশুপালক-বালকজীবন-শ্রীমদ্রাধারমণদেবকী জয়।