শ্রীশ্রী লোকনাথ গোস্বামিপাদের সূচক-কীর্ত্তন

(আষাঢ়-কৃষ্ণাষ্টমী)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দ নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।

—-০—-

‘‘গৌরপ্রেম-গুণমণি, কেবল প্রেমের খনি,’’

কেবল প্রেমের খনি

গৌরপ্রেম-গুণমণি—কেবল প্রেমের খনি

‘‘লোকনাথ লোকের পরাণ।
যাঁর শিশুকাল হইতে, প্রবল বৈরাগ্য চিতে,’’

শুনি’ মধুর গৌর-চরিতে

শিশুকালে নিজ-পিতার মুখে—শুনি’ মধুর গৌর-চরিতে
লোকনাথের বৈরাগ্য চিতে—শুনি’ মধুর গৌর-চরিতে

‘‘পরম উদার দয়াবান্।।’’

পরম-উদার দয়াবান

লোকনাথ লোকের পরাণ—পরম-উদার দয়াবান্

[মাতন]
এই ত’ লোকনাথের পরিচয়

ভক্তি রত্নাকর প্রথম তরঙ্গ :

‘‘পদ্মনাভ প্রভু-অদ্বৈতের প্রিয় অতি
লোকনাথ হেন-বৃদ্ধ-বিপ্রের সন্ততি।।’’

শ্রীপদ্মনাভ-তনয়

লোকনাথ প্রভু হয়—শ্রীপদ্মনাভ-তনয়

সেই-পদ্মনাভের সন্ততি

যাঁর তালখড়ি-গ্রামে স্থিতি—সেই-পদ্মনাভের সন্ততি
যে অদ্বৈতের প্রিয় অতি—সেই-পদ্মনাভের সন্ততি

‘‘লোকনাথ গৃহে সদা রহয়ে উদাস।’’

মনেতে সদাই উদাস

গৌরপ্রেমের খনি লোকনাথ—মনেতে সদাই উদাস
শুনি’ গৌরচন্দ্রের প্রকাশ—মনেতে সদাই উদাস

লোকমুখে শুনে রে

প্রভুর নদীয়া-বিহার—লোকমুখে শুনে রে

নিশিদিশি প্রাণ কাঁদে

নিতাই গৌর বিহরে শুনে—নিশিদিশি প্রাণ কাঁদে

কতদিনে দেখতে পাব

নদীয়ায় গৌরাঙ্গ-বিহার—কতদিনে দেখতে পাব

[মাতন]
সদা চিন্তে মনে মনে

নবদ্বীপে যাব কতদিনে—সদা চিন্তে মনে মনে
‘নবদ্বীপে যাব কতদিনে’—
কবে বিকাব গৌরচরণে—নবদ্বীপে যাব কতদিনে

[মাতন]
সদা চিন্তে মনে মনে

‘‘প্রেমরস আস্বাদনে, দিবানিশি নাহি জানে
আন কথা না করে শ্রবণে।’’

না বলে শুনে আন-ভাব

যে-দিন হতে,–শুনেছে গৌরচন্দ্রের প্রকাশ—না বলে শুনে আন-ভাষ

আন-কথা না বলে শুনে

গৌরাঙ্গ-প্রকাশ শুনেছে যে-দিনে—আন-কথা না বলে শুনে
‘গৌরাঙ্গ-প্রকাশ শুনেছে যে-দিনে’—
মধুর-নদীয়া-ভূবনে—গৌরাঙ্গ-প্রকাশ শুনেছে যে-দিনে

আন-কথা না বলে শুনে

প্রাণরাম গৌর-কথা বিনে—আন-কথা না বলে শুনে

ভাল লাগে না অন্য-কথা

বিনা গৌর-গুণগাথা-ভাল লাগে না অন্য-কথা

‘‘মহৈশ্বর্য্য ত্যাগ করি’, আইলা নদীয়াপুরী,
যথা প্রভু শ্রীশচীনন্দন।।’’

লুব্ধ-ভ্রমর কি রইতে পারে

কমল বিকাশ হলে পরে—লুব্ধ-ভ্রমর কি রইতে পারে

লোকনাথ আইলা নদীয়াপুরে

যেথা,–প্রাণগৌর বিহরে—লোকনাথ আইলা নদীয়াপুরে
গৌরে স্বাভাবিক অনুরাগে—লোকনাথ আইলা নদীয়াপুরে
বাহির হয়ে গৃহ হতে—লোকনাথ আইলা নদীয়াপুরে
প্রাণগৌর বলে কাঁদতে কাঁদতে—লোকনাথ আইলা নদীয়াপুরে

সে কি,–বাঁধা পড়ে বিষয়-বন্ধনে

গৌর-অনুরাগ জেগেছে যার প্রাণে—সে কি,–বাঁধা পড়ে বিষয়-বন্ধনে
‘‘প্রভু-মুখ নিরখিয়া’’,

আঁখি পালটিতে নারে

লোকনাথ প্রভুরে হেরে—আঁখি পালটিতে নারে

‘‘প্রভু-মুখ নিরখিয়া, ধরণীতে লোটাইয়া,
রহিলেন চরণ-যুগলে।’’

লুটায়ে,–পড়িল গৌর-পদতলে

লোকনাথ,–ভাসি’ দুটী-নয়ন-জলে—লুটায়ে,–পড়িল গৌর-পদতলে
তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে—লুটায়ে,–পড়িল গৌর-পদতলে
তোমার অহৈতুকী-কৃপা-বলে,–তোমার চিরদাস এসেছে বলে—

লুটায়ে,–পড়িল গৌর-পদতলে

লোকনাথ যেন চির পরিচিত,–মিলিল বহুদিন পরে—

লুটায়ে,–পড়িল গৌর-পদতলে

‘‘গৌরাঙ্গ আনন্দ-মনে, হেরি’ লোকনাথ-পানে,
প্রেমভরে করে টলমলে।।’’

যেন,–অপেক্ষা করেছিলেন

প্রাণের প্রাণ গৌরহরি—যেন,—অপেক্ষা করেছিলেন
লোকনাথ আসবে বলে—যেন,–অপেক্ষা করেছিলেন

প্রেমভরে গৌর টলমল করে

লোকনাথের পানে চেয়ে—প্রেমভরে গৌর টলমল করে
আপনায় সম্বরিতে নারে—প্রেমভরে গৌর টলমল করে
‘‘আইস আইস লোকনাথ,’’

হেমদণ্ড-বাহু পসারি’

প্রেমদিঠে তাহারে নেহারি’—হেমদণ্ড—বাহু পসারি’

প্রেমস্বরে বলে গৌরহরি

‘‘আইস আইস লোকনাথ, আজি মোর সুপ্রভাত,’’

আ’মরি কি মধুর-লীলা
আস্বাদনের লীলা রে

নিগূঢ়-গৌরাঙ্গলীলা—আস্বাদনের লীলা রে
অশেষ-বিশেষে রস—আস্বাদনের লীলা রে

দাস পেয়ে প্রভু পরম-সুখী

শুধু নয় দাস সুখী—দাস পেয়ে প্রভু পরম-সুখী

আজ,–আপনাকে ধন্য মানে

রসভোগী গৌর আমার,–আজ,–আপনাকে ধন্য মানে
নিজ-প্রিয়ভক্ত-দরশনে—আজ,—আপনাকে ধন্য মানে

প্রভু-দর্শনে দাসের সুখ যেমতি

দাস-দর্শনে প্রভুরও তেমতি—প্রভু-দর্শনে দাসের সুখ যেমতি

দোঁহে দোঁহার সৌভাগ্য মানে

পরস্পর-দরশনে—দোঁহে দোঁহার সৌভাগ্য মানে

‘‘আইস আইস লোকনাথ, আ মী মোর সুপ্রভাত,
এত বলি’ শচীর কুমার।


ভুজযুগ পসারিয়া,’’

সজল-প্রেমদিঠে চাইয়া

‘‘ভুজযুগ পসারিয়া, আলিঙ্গন কৈল ধাইয়া,’’

এ ত’ নয়,–ধেয়ে গিয়ে আলিঙ্গন

এ যে,–সহজ-প্রেমের আকর্ষণ—এ ত’ নয়,–ধেয়ে গিয়ে আলিঙ্গন

‘‘বুক বহি পড়ে অশ্রুধার।।’’

গৌরের,–মুখবুক ভাসে নয়ন-নীরে

লোকনাথে বুকে ধরে—গৌরের,–মুখবুক ভাসে নয়ন-নীরে
আজ আমার সুপ্রভাত বলে—গৌরের,–মুখবুক ভাসে নয়ন-নীরে

[মাতন]
প্রাণ,–গৌর-ভাসে নয়ন-জলে

লোকনাথে করি’ কোলে—প্রাণ,–গৌর ভাসে নয়ন জলে

[মাতন]

‘‘লোকনাথ করে দৈন্য,’’

আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু

গৌরদাস স্বভাব-দৈন্যে বলে—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
আমি অস্পশ্য বিষয়কীট—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
আমি,–তোমা-স্পর্শের যোগ্য নই—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু

‘‘লোকনাথ করে দৈন্য, শুনি’ প্রভু শ্রীচৈতন্য,
নিষেধি’ নিকটে বসাইল।’’

দৈন্য সম্বরণ কর বলে

তোমার দৈন্যে মোর বুক ফাটে—দৈন্য সম্বরণ কর বলে

‘‘নিষেধি নিকটে বসাইল।
প্রেমাবেশে বার বার, পুছে প্রভু সমাচার’’

আ’মরি কি প্রীতির লীলা

‘‘প্রেমাবেশে বার বার, পুছে প্রভু সমাচার,
লোকনাথ সব নিবেদিল।।
পুনঃ প্রভু হর্ষ হইয়া, প্রিয় লোকনাথ লইয়া,
নিভৃতে কহয়ে ধীরে ধীরে।’’

অমিয়া-মাখান-স্বরে

হৃদ-কর্ণ-রসায়ন—অমিয়া-মাখান—স্বরে

‘‘নিভৃতে কহয়ে ধীরে ধীরে।’’


‘‘লোকনাথ গৃহে সদা রহয়ে উদাস।
সর্ব্বত্যাগী নবদ্বীপে আইলা প্রভুপাশ।।
প্রভু গৌরচন্দ্র অতি অনুগ্রহ কৈল।
বৃন্দাবনে যাইতে ত্বরায় আজ্ঞা দিল।।
ঐছে আজ্ঞা হইল ইথে আছে প্রয়োজন।
প্রভু করিবে শীঘ্র সন্ন্যাস গ্রহণ।।
সন্ন্যাসী হইয়া যাইবেন বৃ্ন্দাবনে।
এই হেতু আগে পাঠাইতে ইচ্ছা মনে।।
লোকনাথ বুঝিলেন এসব আভাস।
দই-এক-দিনে প্রভু করিবেন সন্ন্যাস।।
শ্রীচাঁচর-কেশের হইবে অদর্শন।
ইথে প্রাণ কিরূপে ধরিবে প্রিয়গণ।।
ঐছে বহুচিন্তা মাত্র ব্যাকুল হইল।
কাঁদিতে কাঁদিতে প্রভু-পদে প্রণমিল।।
অন্তর্য্যামী প্রভু লোকনাথে আলিঙ্গিয়া।
করিলেন বিদায় গোপনে প্রবোধিয়া।।’’


‘‘নিভৃতে কহয়ে ধীরে ধীরে।
মনোদুঃখ পরিহরি’, মোর দোষ ক্ষমা করি’,
যাইতে হইল ব্রজপুরে।।’’

যাও ত্বরা ব্রজপুরী

মোর দোষ ক্ষমা করি’—যাও ত্বরাব্রজ পুরী

[মাতন]
যাও তুমি ত্বরা করে

লোকনাথ ব্রজপুরে—যাও তুমি ত্বরা করে

[মাতন]
কোন দুঃখ ভেবো না মনে

ত্বরা করি যাও ব্রজবনে—কোন দুঃখ ভেবো না মনে

‘‘সনাতন-রূপের সাথ, ভট্টযুগ রঘুনাথ,
আর যত মোর প্রিয়গণ।
ক্রমে ক্রমে সেইস্থানে, মিলিবে তোমার সনে,
পাইবে আনন্দ অনুক্ষণ।।’’

লোকনাথ তুমি যাও আগে

সবে যাবে তোমার পিছে পিছে—লোকনাথ তুমি যাও আগে
‘সরে যাবে তোমার পিছে পিছে’—
ক্রমে ক্রমে বৃ্ন্দাবনে—সবে যাবে তোমার পিছে পিছে

লোকনাথ তুমি যাও আগে
সবে মিলিবে তোমার সাথ

রূপ সনাতন ভট্টযুগ রঘুনাথ—সবে মিলিবে তোমার সাথ[মাতন]
‘‘আর এক শুন তুমি,

ও,–আমার, প্রিয় লোকনাথ

‘‘আর এক শুন তুমি, কতদিন পরে আমি,
করিব সন্ন্যাস অঙ্গীকার।’’

তাই,–বলি তোমায় ব্রজে যেতে

তোমার,–মনোব্যথা হবে জেনে—তাই,–বলি তোমায় ব্রজে যেতে
‘তোমার,–মনোব্যথা হবে জেনে’—
আমার সন্ন্যাস-বেশ দেখে—তোমার,–মনোব্যথা হবে জেনে

তাই,–বলি তোমায় ব্রজে যেতে
তাই আমার এই ব্যবহার

প্রাণে ব্যথা লাগবে তোমার—তাই আমার এই ব্যবহার

[মাতন]

‘‘কবির সন্ন্যাস অঙ্গীকার।
দেবের দুর্ল্লভ ধন, জীবে করি’ বিতরণ,
নাশিব দারুণ-কলিভার।।
ভক্তগণ লইয়া সঙ্গে, বিহরিব নানা রঙ্গে,
সঙ্কীর্ত্তন প্রচার করিয়া।।’’

শ্রীহরি বোলন-রঙ্গে

‘‘সঙ্কীর্ত্তন প্রচার করিয়া।
বৃন্দাবনে থাক তুমি, সকল শুনাব আমি,
সমাচার দিব পাঠাইয়া।।
শুনি’ সন্ন্যাসের কথা, অন্তরে উঠিল ব্যথা,
প্রভুর শ্রীকেশ-পানে চায়।’’

মনে মনে গণে রে

প্রভুর চাঁচর-কেশ হেরে—মনে মনে গণে রে

হায় কি শুনতে হল আমায়

এই,–চাঁচর-কেশ মুড়াবে গোরারায়—হায় কি শুনতে হল আমায়

কি,–দারুণ-কথা শুনতে হল

এই,–কেশ মুড়াবে শচীদুলাল—কি,–দারুণ-কথা শুনতে হল
এর-চেয়ে,–বজ্রাঘাত ভাল ছিল—কি,–দারুণ-কথা শুনতে হল

প্রাণগৌর হবে সন্ন্যাসী

মুড়ায়ে,–এই চাঁচর-কেশ-রাশি—প্রাণগৌর হবে সন্ন্যাসী

হায় কি শুনলাম দারুণ-বাণী

চাঁচর-কেশ,–মুড়াবে গৌর গুণমনি—হায় কি শুনলাম দারুণ-বাণী
এর-চেয়ে,–ভাল ছিল পড়া অশনি—হায় কি শুনলাম দারুণ-বাণী

কেন ব্রজ না পড়িল মাথে

এই,–দারুণ কথা শুনবার আগে—কেন ব্রজ না পড়িল মাথে

কেমনে বাঁচিবে ভক্তগণ

এই,–চাঁচর-কেশের হবে অদর্শন—কেমনে বাঁচিবে ভক্তগণ
সবে কেঁদে হবে অচেতন—কেমনে বাঁচিবে ভক্তগণ

হায়,–এ কি শুনতে হল বচন

এই,–কেশ মুড়াবে কমললোচন—হায়,–এ কি শুনতে হল বচন
এর চেয়ে ভাল ছিল মরণ—হায়,–এ কি শুনতে হল বচন

[মাতন]
এ কি কঠোর লীলা করবে

এই কেশের অদর্শন হবে—এ কি কঠোর লীলা করবে
এত বলি,–

‘‘প্রভুর শ্রীকেশ-পানে চায়।
কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলে, হায় প্রভু কি বলিলে,
ইহা বলি’ ভূমে গড়ি যায়।।’’

বলে,–এ কি শুনলাম বচন নির্ঘাত

এর চেয়ে,–ভাল ছিল বজ্রাঘাত—বলে,–এ কি শুনলাম বচন নির্ঘাত

‘‘ইহা বলি’ ভূমে গড়ি যায়।।


অদ্ভুত গৌরাঙ্গ-গুণ, আপনি অধৈর্য্য পুনঃ,
প্রিয়-লোকনাথ-হাতে ধরি’।
প্রবোধিয়া কতমত, রাধাকৃষ্ণ-প্রেমামৃত,
পিয়াইল পুনঃ কৃপা করি’।।
লোকনাথ মনে গণি, প্রভুর বচন মানি,
অতিশয় মনোদুঃখী হইয়া।
প্রভু-পদ হৃদে ধরি’, চলিলেন ব্রজপুরী,’’

যায় যায় ফিরে চায়

গৌর-মুখচন্দ্র-পানে—যায় যায় ফিরে চায়

[মাতন]

গৌরের চাঁচর-কেশ-পানে—যায় যায় ফিরে চায়
পদ,–আগে ফেলতে পিছে পড়ে—যায় যায় ফিরে চায়

যায় যায় ফিরে চায়

ঠাকুর শ্রীলোকনাথ—যায় যায় ফিরে চায়
ভাসি’ দুটী-নয়ন-ধারায়—যায় যায় ফিরে চায়

[মাতন]
ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
আর কি দেখতে পাব হে

নদীয়া—বিহারী গৌরহরি—আর কি দেখতে পাব বে

আর কি পাব দরশন

ঐ,–হরিবোল রসের বদন—আর কি পাব দরশন

[মাতন]

‘ঐ,–হরিবোলা রসের বদন’—
শিরে চাঁচর-কেশ শোভন—ঐ,–হরিবোলা রসের বদন

আর কি পাব দরশন
আর কি দেখতে পাব হে

মুরতি কৈশোর কেশ চাঁচর—আর কি দেখতে পাব হে

‘‘প্রভুপদ হৃদে ধরি’, চলিলেন ব্রজপুরী,
সবাকার অনুমতি লইয়া।।’’

সবার কাছে প্রার্থনা করে
এই কৃপা কর সবে

পতিত-পাবন গৌরাঙ্গগণ—এই কৃপা কর সবে
যেন এই,–মুরতি সদা হৃদে জাগে—এই কৃপা কর সবে

যেন,–সদা হৃদে ধরতে পারি

এই,–নদীয়া বিহারী গৌরহরি—যেন,–সদা হৃদে ধরতে পারি

যেন,–হৃদে জাগে নিরন্তর

সবে মিলে এই কৃপা কর—যেন,–হৃদে জাগে নিরন্তর
এই গৌর কিশোর-বর—যেন,–হৃদে জাগে নিরন্তর

‘‘দেখি’ লোকনাথ-গতি প্রভু সে ব্যাকুল অতি,
লোকনাথ-পথ হেরি’ কাঁদে।’’

কতগুণের প্রভু রে

ভক্তবৎসল গৌরহরি—কতগুণের প্রভু রে

বালাই লয়ে মরে যাই

‘ভকত-বাৎসল্য-লীলা’—
যা’—শুনিলে গলয়ে শিলা—ভকত-বাৎসল্য-লীলা;

বালাই লয়ে মরে যাই
কাঁদে গোরা উভরায়

লোকনাথ ব্রজে যায়—কাঁদে গোরা উভরায়

প্রাণগৌর ব্যাকুল হয়ে কাঁদে

লোকনাথের ব্রজে গমন দেখে—প্রাণগৌর ব্যাকুল হয়ে কাঁদে

ততক্ষণ আঁখি নাহি ফিরায়

একপাশে দাঁড়ায়ে গোরারায়—ততক্ষণ আঁখি নাহি ফিরায়
যতক্ষণ লোকনাথে দেখা যায়—ততক্ষণ আঁখি নাহি ফিরায়

গৌরের,–বুক ভাসে নয়ন-ধারায়

লোকনাথ ব্রজে যায়—গৌরের,–বুক ভাসে নয়ন-ধারায়
ব্যাকুল হয়ে কাঁদে গোরারায়—গৌরের,–বুক ভাসে নয়ন-ধারায়

মধুর গৌরাঙ্গ-লীলা

দাস-বিরহে প্রভু কাঁদে—মধুর গৌরাঙ্গ-লীলা

আজ,—তাই প্রভু জানাইছেন

আপনি উপভোগ করিয়া—আজ,–তাই প্রভু জানাইছেন
ভক্ত-বিরহে কত’ দুঃখ—আজ,–তাই প্রভু জানাইছেন

‘‘লোকনাথ-পথ হেরি’ কাঁদে।


প্রিয় গদাধর আদি,’’

প্রভুর ব্যাকুলতা দেখে

লোকনাথের বিরহেতে—প্রভুর ব্যাকুলতা দেখে

‘‘প্রিয়-গদাধর আদি, যত্ন করে নিরবধি,
তথাপিও ধৈর্য্য নাহি বাঁধে।।’’

কেঁদে আকুল গোরারায়

লোকনাথ ব্রজের পথে যায়—কেঁদে আকুল গোরারায়

আমার,–গৌর ভাসে নয়ন-জলে

আমার লোকনাথ লোকনাথ বলে—আমার,–গৌর ভাসে নয়ন-জলে

বলে,–দেখ দেখ তোমরা সবে

লোকনাথ আমায় গেল ফেলে—বলে,–দেখ দেখ তোমরা সবে

হা লোকনাথ বলি’ কাঁদে

ভক্তবৎসল প্রভু আমার—হা লোকনাথ বলি’ কাঁদে

যেমন প্রভু তেমনই দাস

‘‘এথা পথে লোকনাথ, শিরে দিয়া দুই হাত,
কাঁদিয়া কহয়ে বার বার।
গৌরচন্দ্র-মুখ-হাসি, বরিখে অমিয়া-রাশি,
বুঝি না দেখিতে পাব আর।।’’

শিরে হাত দিয়া কাঁদে

লোকনাথ ব্রজের পথে যেতে—শিরে হাত দিয়া কাঁদে

আর দেখতে পাব না বুঝি

অমিয়া বরষি মুখের হাসি—আর দেখতে পাব না বুঝি

আর বুঝি না দেখবে নয়ন

হরিবোলা রসের বদন—আর বুঝি না দেখবে নয়ন

আর কি দেখতে পাব না

শিরে হাত দিয়া কাঁদে—আর কি দেখতে পাব না
হাসিমাখা রসের বদন—আর কি দেখতে পাব না

[মাতন]
হায়,–সকল সুখে বঞ্চিত হলাম

‘‘বুঝি না দেখিতে পাব আর।।
সঙ্গে লইয়া ভক্তগণ, বিহরিবে অনুক্ষণ,
সঙ্কীর্ত্তন-সুখের হিল্লোলে।
মুই অতি অভাগিয়া, দেখিতে না পাব ইহা,
বিধাতা বঞ্চিত কৈল মোরে।।’’

মুই অতি অভাগিয়া

শিরে হাত দিয়া কাঁদে—মুই অতি অভাগিয়া

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে লোকনাথ

শিরে দিয়ে দুই হাত—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে লোকনাথ

আমার ভাগ্যে দেখা হল না

গৌরের সঙ্কীত্তর্ন-লীলা—আমার ভাগ্যে দেখা হল না

হায়,–দারুণ-বিধি কি করিলি

দুর্ভাগ্য-বশে দেখতে না দিলি—হায়,–দারুণ-বিধি কি করিলি
‘দুর্ভাগ্য-বশে দেখতে পা দিলি’—
গৌরের,–সঙ্কীর্ত্তন-রাসকেলি—দুর্ভাগ্য বশে দেখতে না দিলি

হায়,–দারুণ-বিধি কি করিলি
দেখতে বুঝি না পাব আর

গৌরের সঙ্কীর্ত্তন-বিহার—দেখতে বুঝি না পাব আর

‘‘এইরূপ আক্ষেপ মনে, দিবানিশি নাহি জানে,
কতদিনে গেলা বৃন্দাবনে।’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

লোকনাথ ব্রজে গিয়া—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
স্মঙরি গৌরাঙ্গগুণে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

এ কি কৃপা কৈলে গৌরহরি

দেখাইলে ব্রজ-মাধুরী—এ কি কৃপা কৈলে গৌরহরি

[মাতন]

‘‘এথা ভক্তাধীন প্রভু সন্ন্যাস করিয়া।
নীলাচলচন্দ্রে দেখে নীলাচলে গিয়া।।
তথা হৈতে গেলা প্রভু দক্ষিণে-ভ্রমণে।
তাহা শুনি লোকনাথ চলয়ে দক্ষিণে।।’’

প্রাণ কাঁদিছে নিশিদিনে

দেখিতে প্রাণ-গৌরবদনে—প্রাণ কাঁদিছে নিশিদিনে

পাগল হয়ে ছুটল রে

গৌর দক্ষিণে গেছেন শুনে—পাগল হয়ে ছুটল রে
প্রাণ গৌর দেখব বলে—পাগল হয়ে ছুটল রে

তার ত অমনি দশা হয়

গৌর-অনুরাগ যারে পরশয়—তার ত’ অমনি দশা হয়

‘‘দক্ষিণ হইয়া প্রভু আইলা বৃন্দাবন।
লোকনাথ শুনি’ ব্রজে করিলা গমন।।’’


ব্যাকুল হয়ে ফিরে রে
প্রাণ-গৌর-দরশন-আশে—ব্যাকুল হয়ে ফিরে রে

‘‘প্রভু বৃ্ন্দাবন হইয়া প্রয়াগে চলিলা।
লোকনাথ ব্রজে আসি’ ব্যাকুল হইলা।।’’

লোকনাথ রইতে নারে

প্রাণ-গৌর না হেরে—লোকনাথ রইতে নারে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
দেখতে ত’ নাহি পেলাম

দেখব বলে ছুটে এলাম—দেখতে ত নাহি পেলাম

চিত,–চুরি করে দাও না ধরা

হা চিতচোরা প্রাণ-গোরা—চিত,–চুরি করে দাও না ধরা

[মাতন]

‌‘‘প্রভাতে প্রয়াগ যাত্রা করিব এ মনে।
স্বপ্নে প্রভু প্রবোধিয়া রাখিলা বৃন্দাবনে।।’’

স্থির হও লোকনাথ

আমা-দর্শনের ছাড় আশ’—স্থির হও লোকনাথ

আমি,–তাইতে দেখা দিই নাই

আমারে সে চাঁচর-কেশ নাই—আমি,–তাইতে দেখা দিই নাই
আমায়,–দেখে তোমার সুখ হবে না—আমি,–তাইতে দেখা দিই নাই
‘আমায়,–দেখে তোমার সুখ হবে না’—
গেরুয়া-কাপড়-পরা কেশ-মুড়ানা—আমায়,–দেখে তোমার সুখ হবে না

আমি,–তাইতে দেখা দিই নাই
তোমার ভাল ত’ লাগবে না

আমার,—নদীয়া-বিহারী মূরতি বিনা—তোমার ভাল ত’ লাগবে না

এখন,–দেখে তুমি পাবে ক্লেশ

আমার,–নাই সেই চাঁচর-কেশ-এখন,–দেখে তুমি পাবে ক্লেশ

তোমার মনে হবে দুঃখ

দেখিলে মোর সন্ন্যাসী-রূপ—তোমার মনে হবে দুঃখ

তাই,–তুমি আর প্রয়াগে এসো না

আমা-দর্শনের প্রয়াস করো না—তাই,–তুমি আর প্রয়াগে এসো া

থাক তুমি ব্রজপুরী

আমা-দর্শনের প্রয়াস ছাড়ি’—থাক তুমি ব্রজপুরী
তোমার,–দৃষ্ট-মূরতি হৃদে ধরি’—থাক তুমি ব্রজপুরী

স্থির হয়ে ব্রজে থাক

যা দেখেছ তাই বুকে রাখ—স্থির হয়ে ব্রজে থাক

বলিলেন প্রভু ইঙ্গিতে
লোকনাথের চিতচোর

রসময় গৌরকিশোর—লোকনাথের চিতেচোর

লোকনাথের হৃদবিহারী

নদীয়া—বিহারী গৌরহরি—লোকনাথের হৃদবিহারী

লোকনাথ রহে বৃন্দাবনে

শ্রীগৌরাঙ্গ-আজ্ঞা-ক্রমে—লোকনাথ রহে বৃন্দাবনে

নিরন্তর আপেক্ষ করে

লোকনাথ ব্রজে ফিরে—নিরন্তর আক্ষেপ করে

নয়ন-গোচর হবে না আর

হায় হায় হায়—নয়ন-গোচর হবে না আর
গৌরের কীর্ত্তন-নটন-বিহার—নয়ন-গোচর হবে না আর

‘‘এইরূপ আক্ষেপ মনে, দিবানিশি নাহি জানে,
কতদিনে গেলা বৃন্দাবনে।
যমুনা-পুলিন-বনে, কুণ্ড-গিরি-গোবর্দ্ধনে,
দেখি’ প্রেমধারা দুনয়নে।।
পূর্ব্ববাস মনোহর, শ্রীযাবট-নন্দীশ্বর,
বৃষভানুপুর অনুপম।।
আর যত স্থানগণ, তাহে ভ্রমে অনুক্ষণ
তরুতলে বসতি নিয়ম।।’’

লোকনাথ ব্রজে বিহরে

প্রাণ-গৌর হৃদে ধরে—লোকনাথ ব্রজে বিহরে

‘‘প্রেমের তরঙ্গ অতি, নাহি কোন-স্থানে স্থিতি,’’

প্রেম-তরঙ্গ-আঘাতে

‘‘প্রেমের তরঙ্গ অতি, নাহি কোন-স্থানে স্থিতি,
কতদিন পরে বৃ্ন্দাবনে।
শ্রীসুবুদ্ধি-মিশ্র,রূপ, সনাতন ভক্তিভূপ,
মিলিলেন এ-সবার সনে।।’’

আগে ব্রজে আগুয়ান

গৌরগণের মাঝে লোকনাথ—আগে ব্রজে আগুয়ান

পিছে গেলেন রূপ-সনাতন

লোকনাথ আগে আগুয়ান—পিছে গেলেন রূপ-সনাতন

লোকনাথ কাঁদে ব্যাকুল-প্রাণে

রূপ-সনাতনের গলা ধরে—লোকনাথ কাঁদে ব্যাকুল-প্রাণে
ব্রজবনে নিরজনে—লোকনাথ কাঁদে ব্যাকুল-প্রাণে
স্মঙরি’ গৌরাঙ্গ-গুণে—লোকনাথ কাঁদে ব্যাকুল-প্রাণে
সোণার গৌর প্রভু বলে—লোকনাথ কাঁদে ব্যাকুল-প্রাণে

কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’

গৌর-গণের গলা ধরি’—কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’

‘‘নানাভাব পরকাশে, সদা প্রেমানন্দে ভাসে,
শ্রীরাধাবিনোদ প্রাণ যাঁর।’’


‘‘লোকনাথ সদা ব্রজে ভ্রমণ করিয়া।
কৃষ্ণ-লীলাস্থান দেখে আনন্দিত হৈয়া।।
ছত্রবন-পার্শ্বে ওমরাও নামে গ্রাম।
ওথা শ্রীকিশোরীকুণ্ড শোভা অনুপম।।
সে স্থানে কতদিন রহেন নির্জ্জনে।
করিব বিগ্রহ-সেবা এই চেষ্টা মনে।।
জানিলেন প্রভু লোকনাথ উৎকণ্ঠিত।
অন্যরূপে বিগ্রহ লইয়া উপস্থিত।।
শ্রীরাধাবিনোদ নাম কহি সমর্পিলা।
সেই-ক্ষণে তেঁহ তথা অদর্শন হৈলা।।
লোকনাথ গোসাঞি চিন্তয়ে মনে মনে।
কে হেন বিগ্রহ দিয়া গেল কোনখানে।।’’

কেমন করে জানিল

আমার বিগ্রহ-সেবায় মন—কেমন করে জানিল

নিশ্চয়ই আমার চিতচোর

নৈলে,–কেমনে জানিল মনোবৃত্তি মোর—নিশ্চয়ই আমার চিতচোর

‘‘চিন্তায় ব্যাকুল লোকনাথে নিরখিয়া।
শ্রীরাধাবিনোদ তথা কহেন হাসিয়া।।
এই ওমরাও গ্রামে বিপিনে বসতি।
এই যে কিশোরী কুণ্ড এথা মোর স্থিতি।।
তোমার উৎকষ্ঠা দেখি’ ব্যাকুল হইল।
কে মোরে আনিবে, মুঞি আপনি আইল।।’’

আপনি আইলাম আমি

তোমার উৎকণ্ঠা জানি’—আপনি আইলাম আমি

টানিয়া আনিল আমায়

প্রেম-আকর্ষণ তোমার—টানিয়া আনিল আমায়

‘‘শীঘ্র করি’ মোরে কিছু করাও ভক্ষণ।
শুনি’ প্রেমধারা নেত্রে বহে অনুক্ষণ।।
মহাসুখে শীঘ্র পাক করি’ ভুঞ্জাইলা।
পুষ্পশয্যা রচিয়া শয়ন করাইলা।।
পল্লবে বাতাস করিলেন কতক্ষণ।
মনের আনন্দে কৈল পাদ সম্বাহন।।
তনু মনঃ প্রাণ প্রভু-পদে সমর্পিলা।’’

প্রাণে প্রাণে জানিলা

বিগ্রহ-রূপে প্রভু আইলা—প্রাণে প্রাণে জানিলা

লোকনাথ গৌর ভোগ করে

শ্রীরাধাবিনোদ বিগ্রহ হেরে—লোকনাথ গৌর ভোগ করে
লোকনাথের চোখ আন না দেখে—লোকনাথ গৌর ভোগ করে

বলে,–এই ত’ গৌর-মুরতি

একাধারে গৌরহরি—বলে,–এই ত’ গৌর মূরতি

লোকনাথ,–গৌর-মাধুরী ভোগ করে

শ্রীরাধাবিনোদ-মুরতি হেরে—লোকনাথ,–গৌর-মাধুরী ভোগ করে

শ্রীরাধাবিনোদে দেখে গৌর-রূপ

তাঁর,–প্রাণে আছে গৌর-স্বরূপ-শ্রীরাধাবিনোদে দেখে-গৌর-রূপ

‘‘তনু মনঃ প্রাণ প্রভু-পদে সমর্পিলা।
সে মাধুর্য্যামৃত পানে মগ্ন হইলা।।
শীঘ্র করি’ এক ঝোলা নির্ম্মাণ করিলা।
শ্রীরাধাবিনোদের যেন মন্দির হইলা।।
পরম-অদ্ভুত-রূপে ঝোলা হইল আলা।
অনুক্ষণ বক্ষে রাখে যে কণ্ঠমালা।।
গ্রামবাসী কুটীর করিয়া দিতে চায়।
বৃক্ষমূল বিনা লোকনাথে নাহি ভায়।।’’

শুধু কি,–মুখের কথায় গৌর মিলে

এমন করে না ভজিলে—শুধু কি,–মুখের কথায় গৌর মিলে

‘‘পরম বিরক্ত স্বনির্ব্বাহ যাতে হয়।
তাহা সে গ্রহণ-ক্রিয়া অন্যে কি বুঝয়।।
কতদিন রহি কুণ্ডে আইলা বৃন্দাবন।
রাখিলা গোস্বামী সবে করিয়া যতন।।
কতদিন পরম আনন্দে গোঁয়াইল।
তারপর বিচ্ছেদাগ্নি-জ্বালায় ব্যাপিল।।’’

সবার আগে পাঠালেন ব্রজে

গৌরহরি লোকনাথে—সবার আগে পাঠালেন ব্রজে

সব-শেষ-পর্য্যন্ত রাখলেন তাঁরে

পরলীলা প্রকাশ-তরে—সব-শেষ-পর্য্যন্ত রাখলেন তাঁরে

তাই কিছুদিন মিলন-সুখ

পরে বিরহ মহাদুঃখ—তাই কিছুদিন মিলন-সুখ

‘‘সনাতন-রূপ-গুণে কাঁদে দিবারাতি।
প্রভুর ইচ্ছাতে দেহে জীবনের স্থিতি।।’’

নিশিদিন মরছেন জ্বলিয়া

গৌর-গৌরগণের বিরহ সহিয়া—নিশিদিন মরছেন জ্বলিয়া

‘‘হেনই সময়ে নরোত্তম তথা গিয়া।
গুরু-সেবা যথোচিত কৈল হর্ষ হইয়া।।
সেবায় প্রসন্ন হৈয়া দীক্ষা মন্ত্র দিল।
নরোত্তমে কৃপার অবধি প্রকাশিল।।’’

এতদিন রাখলেন লোকনাথে

প্রাণের প্রাণ গৌরহরি—এতদিন রাখলেন লোকনাথে
শুধু,–এই কৃপা করাবার তরে—এতদিন রাখলেন লোকনাথে

‘‘নানাভাব পরকাশে, সদা প্রেমানন্দে ভাসে,
শ্রীরাধাবিনোদ প্রাণ যাঁর।
গৌর-গুণ সঙ্কীর্ত্তনে, উদ্ধারে পতিতজনে,
ত্রিজগতে মহিমা অপার।।
কহে নরহরি দীন, মো বড় বিষয়ী হীন,
হেন জন্ম বিফলে গোঁয়াইনু।
নরোত্তম-প্রাণনাথ, মোরে কর আত্মসাৎ,
তুয়া পদে শরণ লইনু।।’’

দয়া কর লোকনাথ

নরোত্তম প্রাণনাথ—দয়া কর লোকনাথ

[মাতন]
লোকনাথ কৃপা কর
কৃপা কর লোকনাথ

ঠাকুর,–নরোত্তমের প্রাণনাথ—কৃপা কর লোকনাথ

[মাতন]

—-০—-

অতঃপর ‘কোথা বা লুকালে’ ইত্যাদি মহাজনী-আক্ষেপ-কীর্ত্তন।

মহাজনী আক্ষেপ-কীর্ত্তনের কিঞ্চিৎ বিশেষ :–

… … … … …
… … … … …


‘‘ধিক ধিক নিলাজ পরাণ।’’

কি সুখে বা আছ রে

ওরে রে নিলাজ পরাণ—কি সুখে বা আছ রে

কি সুখে বা থাকবে বল
নামীর দেখা ত’ পেলে না

নামের শকতিও আর দেখতে পাবে না—নামীর দেখা ত’ পেলে না

দেখাইলেন এই নগরীতে

পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—দেখাইলেন এই নগরীতে
নামে মৃত-সঞ্জিবনী-শক্তি আছে—দেখাইলেন এই নগরীতে

সে লীলা আর পাবে না দেখতে

একে একে সবাই গেল চলে—সে লীলা আর পাবে না দেখতে

কি সুখে বা থাকবে রে

এখন,–পড়ে পড়ে মায়ার লাথি খেতে—কি সুখে বা থাকবে রে

এখন—গেলেই ত’ ভাল রে

এখনও ভালে ভালে—এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে
‘এখনও ভালে ভালে’—
না জানি কি আছে কপালে—এখনও ভালে ভাল

এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে

যা’ দেখেছ তা’ হৃদে ধরে—এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে
‘যা দেখেছ তা’ হৃদে ধরে’—
শ্রীগুরু গৌরাঙ্গ প্রকাশ—যা’ দেখেছ তা হৃদে ধরে

এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে
প্রাণ তোরে মিনতি করি

‘‘যতক্ষণ এই দেহে থাক, হা গুরু গৌর বলে ডাক,
তবে যদি যাও সেই ভাল।।’’

নিশিদিশি কাঁদ রে

… … … … …
… … … … …

হা শ্রীগুরুদেব
সব হারায়ে ফেলেছি

তুমি’—দয়া করে সব দিয়েছিলে—সব হারায়ে ফেলেছি
নিজ-স্বতন্ত্রতা দোষে—সব হারায়ে ফেলেছি

বিশ্বাস ত হল না

এই চোখে দেখলাম—বিশ্বাস ত হল না
‘এই চোখে দেখলাম’—
কৃপা করে যা’ দেখাইলে—এই চোখে দেখলাম

বিশ্বাস ত’ হল না

নামে সর্ব্বশক্তি আছে—বিশ্বাস ত’ হল না

নামে কলঙ্ক রটলাম

তোমার পরিচয় দিয়ে—নামে কলঙ্ক রটালাম

আমি বটে দুর্দ্দৈব-গ্রস্ত

বলবান প্রভু তুমি ত’ আছ—আমি বটে দুর্দ্দৈব-গ্রস্ত

জোর করে লও তুলে
আবার আমায় দাও মাতায়ে

তোমার,–মুখোদ্‌গীর্ণ-নাম-গানে—আবার আমায় দাও মাতায়ে
‘তোমার,–মুখোদ্‌গীর্ণ-নাম-গানে’—
সাধ্য-সাধন-নির্ণয়-করা—তোমার,–মুখোদ্‌গীর্ণ-নাম-গানে

আবার আমায় দাও মাতায়ে

ভোগ দিয়ে প্রাণে প্রাণে—আবার আমায় দাও মাতায়ে
‘ভোগ দিয়ে প্রাণে প্রাণে’—
নামে সর্ব্বশক্তি আছে—ভোগ দিয়ে প্রাণে প্রাণে

আবার আমায় দাও মাতায়ে
যারে দেখি তারে বলি

ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ