শ্রীশ্রীমদ্রাধারমণ দেবের তিরোভাব উৎসব ‘নবদ্বীপ’ শ্রীরাধারমণ বাগ।
ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শ্রী,–‘‘শান্তিপুরের বুড়ামালী, বৈকুণ্ঠ-বাগান খালি,
খালি,–করিয়া আনিল এক চারা।’’ রে !
আমাদের,–শান্তিপুরের বুড়ামালী—বৈকুণ্ঠ-বাগান করে খালি
নিতাই-মালীরে পাইয়া, চারা তার হাতে দিয়া,
যতনে রোপিতে কৈল ‘নাঢ়া’।।’’ রে !!
তুমি,–যতনেতে রোপণ করে
আমার,–বড়-মাপের শ্রীচৈতন্য-তরু—তুমি,–যতনেতে রোপনণ করো
এই,–শ্রীনবদ্বীপ রম্যস্থল—এ-যে,–অভিন্ন ব্রজমণ্ডল
আমার,–গুপনিধি নিতাই-মালী,–যতনেতে রোপণ কৈল
সীতানাথের আনা শ্রীচৈতন্য-তরু—নদীয়া-উদ্যানে রোপণ কৈল
গজাইল যত্নে জল ঢালি।। রে !!
পাইয়া ভকতি-জল,নাম প্রেম দুই ফল
প্রসবিল সে তরু সুন্দর।’’ রে !
দুই প্রকার ফল ফলল
অপরূপ,–আমার শ্রীচৈতন্য-তরুতে—দুই প্রকার ফল ফলল
আমরি,–নাম আর প্রেম রূপে—দুই প্রকার ফল ফলল
তারা,–কোলাহল করে নিরস্তর।।’’ রে !!
কৃষ্ণ যাদবায় নমঃ—হরি হরয়ে নমঃ বলি’
যাদবায় মাধবায় নমঃ—হরি হরয়ে নমঃ বলি’
তখন,–আনন্দে নিতাই-মালী, মাথায় লইয়া ডালি’’,
আমার,–শ্রীচৈতন্য-তরু হইতে—নাম-প্রেম-ফল তুলি’
আমার,–গুণনিধি-তরু-মালী—তাহাতে ভরিয়া ডালি
মাথায় লয়ে নাম-প্রেমের ডালি—যেচে বেড়ায় নিতা-মারলী
আয় তোর,–কে নিবি কে নিবি বলি’—যেচে বেড়ায় নিতাই-মালী
এই,–সুরধুনীর কূলে বুলি বুলি—যেচে বেড়ায় নিতাই-মালী
এই,–নদীয়ার পথে বুলি বুলি—যেচে বেড়ায় নিতাই-মালী
নিতাইচাঁদের,–দুনয়নে বহে ধারা অবিরল—বলে,–কে নিবি রে প্রেম-ফল
আমায়,–বিনামূলে কিনিবি রে—বলে,–কে নিবি রে প্রেম-ফল
মুখে,–একবার গৌরহরি বল—বলে,–কে নিবি রে প্রেম-ফল
নাহি জাতি-ভেদাভেদ,সবার মিটিল খেদ’’,
অযাচিত-কৃপাকারী—আমার,–অদোষ-দরশী নিতাই
তার,–জাতি, কুল, অধিকার কিছু না বাছে—নিতাই আমার,–আমার,–যারে দেখে
যারে দেখে আপন কাছে
আজ,–ফলাস্বাদ সকলেতে পায়।।’’ রে !!
যে ফল,–চিরকালের অনর্পিত—আজ,–কলিজীবে সেই প্রেম-ফল খায়
যে ফল,–গোলোকেও গোপনে ছিল—আজ,–কলিজীবে সেই প্রেম-ফল খায়
কঠোর সাধনে,–কেউ যার সন্ধান পায় নাই—আজ,–কলিজীবে সেই প্রেম-ফল খায়
আমার,–নিতাইচাঁদের করুণায়—আজ,–কলিজীবে সেই প্রেম-ফল খায়
মাথায় লয়ে নাম-প্রেমের ডালি—যেচে বেড়ায় নিতাই-মালী
আমার,–গৌর,–প্রেমের মূরতি নিতাই—আমরি,–প্রেমে নাচে প্রেম যাচে
তাতে,–প্রেম বিনে আর কিছু নাই—ওগো আমার,–গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই
প্রেমের মূরতি আমার প্রভু নিত্যানন্দ।।’’ রে !!
এই,–প্রাকৃত-জগতে সবে-কামকে দেখেই প্রেম বলে
প্রেমের অনুভব নাই তাই—প্রেম বলিতে কামকে বুঝে
কৃষ্ণ-সুখ হেতু কার্য্য ধরে প্রেম-নাম।।’’ রে !!
কৃষ্ণ-সুখের একমাত্র উপাদান—সেই প্রেমের মূরতি নিতাই
আমার,–গৌরপ্রেমের মূরতি নিতাই—প্রেমে চলে প্রেমে বলে
প্রেম-হিল্লোলে হেলে দূলে—প্রেমে চলে প্রেমে বলে
প্রেম-বাহু-পসারিয়ে—প্রেমে কোল দেয় আচণ্ডালে
প্রেম-সুরে আয় আয় বলে-প্রেমে কোল দেয় আচণ্ডালে
প্রেম-দিয়ে চেয়ে আয় আয় বলে—প্রেমে কোল দেয় আচণ্ডালে
আয় পতিত আয় বলে –বয়ান ভাসে প্রেম-জলে
আমার,–প্রেমিক নিতাই—প্রেমে নাচে প্রেমে যাচে
পতিতের বন্ধু নিতাই—ধেয়ে যায় পতিতের কাছে
দন্তে তৃণ-গলবাসে—কেঁদে কেঁদে তারে পুছে
আর কে কোথায় পতিত আছে—কেঁদে কেঁদে তারে পুছে
‘‘আর কে কোথায় পতিত আছে’—
পতিত-পাবন নিতাই পুছে—আর কে কোথায় পতিত আছে
পতিতের কাছে নিতাই পুছে—আর কে কোথায় পতিত আছে
ত্বরা করে বল্ বল্–আর কোথায় পতিত আছে
এই,–সুরধুনীর কূলে দাঁড়ায়ে—বাহু তুলে নিতাই ডাকে
এই মধুর নদীয়া—এই সেই সুরধুনী-কূল
ভাগ্যবতী সুরধুনী-কূল—পদাঙ্কিত ভূমি রে
প্রভু-নিতাই-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—পদাঙ্কিত ভূমি রে
পাগলের পারা দিশে হারা—আমার প্রভু নিতাই নাচে
গৌরাঙ্গ-নাম-প্রেম যেচে—আমার প্রভু নিতাই নাচে
এই,–সুরধুনীর কূলে কূলে—পাগলা নিতাই কেঁদে বলে
এই নদীয়ার পথে পথে—পাগলা নিতাই কেঁদে বলে
ভজ প্রাণ শচীদুলালে—পাগলা নিতাই কেঁদে বলে
এই,–সুরধুনীর কূলে দাঁড়ায়ে—বাহু তুলে নিতাই ডাকে
আমার নিতাই ডাকে—আয় কলিহত-জীব
এসেছে রে তোদের তরে
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—এসেছে রে তোদের তরে
শ্রীরাধা-নায়ক নাগর শ্যাম।’’
গোপীজন-বল্লভ-রাধা-নায়ক শ্যাম
‘‘সো শচীনন্দন, নদীয়া-পুরন্দর,’’
নন্দের নন্দন যেই—শচীসুত হইল সেই
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্য-গোসাঞি।।’’ রে !
আমার,–নিতাই কেঁদে কেঁদে বলে—তোমরা,–জান না কি কলিজীব
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হল—তোমরা,–জান না কি কলিজীব
সুর-মুনিগণ-মনো-মোহন-ধাম।।’’
গৌর-কথা কইতে কইতে—আজ,–মাতিল নিতাই রে
গৌরাঙ্গ-প্রেমের ভরে—আজ,–মাতিল নিতাই রে
দুনয়নে শত ধারা—পুলকেতে অঙ্গ ভরা
শ্রীগৌরাঙ্গ-রহস্য—ভাবাবেশে বলে রে
জয় নিজ-প্রেয়সী-ভাব-বিনোদ।’’
দ্বারে দ্বারে,–কেঁদে বলে দয়াল নিতাই—অপরূপ রহস্য ভাই
আমার,–নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলার-অপরূপ রহস্য ভাই
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দের—চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল
যে আমারে যৈছে ভজবে—আমি তারে তৈছে ভজব
যে,–আমায় যেমন করে ভজবে—আমি তার,–ভজনের প্রতিদান দিব
ব্রজ-গোপিকার ভজনে—সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইল
ব্রজ-গোপিকার ভজনের—প্রতিদান দিতে নারিল
বলতে হল ‘‘ন পারয়ে হম্’’
হইল ইচ্ছার উদগম
মহা,–রাস-রসে খেলতে খেলতে—হইল ইচ্ছার উদগম
শ্রীরাধিকার,—প্রেমে-মাধুর্য্যাধিক্য দেখে—হইল ইচ্ছার উদগম
আমি তো ভুবন-মোহন—কে আমায় মুগ্ধ করে
কে আমার মুগ্ধ করছে—আমি উহায় আস্বাদিব
কৈছন সুখে তিঁহো ভোর’’ রে !
সে,–প্রেমের মাধুরী কেমন
সেই প্রেমে কি বা সুখ
কি করিবে না পাইয়া ওর।।’’ রে !!
তখন,–‘‘ভাবিয়া দেখিল মনে, শ্রী,–রাধার স্বরূপ বিনে,
এ বাসনা পূর্ণ কভু নয় ! রে।
তাই,–রাধাভাব-কান্তি ধরি, রাধাপ্রেম গুরু করি,
আসি,–নদীয়াতে করল উদয়।।’ রে !!
কেঁদে বলে দয়াল নিতাই—তোদের ভাগ্যের সীমা নাই
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—এসেছে রে তোদের তরে
‘গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে’—
রাধাভাব-কান্তি লয়ে—গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে
‘‘ব্রজ-তরুণীগণ,- লোচন-মঙ্গল,
এবে,–নদীয়া—বধূগণ-নয়ন-আমোদ।।’’
আমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে
নিরজনে বসে কেঁদে কেঁদে—আমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে
অবিচারে নাম-প্রেম বিলাতে—আমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে
পতিত খুঁজে নাম-প্রেম দিতে—আমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে
আমার নিতাই ডাকে—আয় কলিহত-জীব
পতিত-পাবন নিতাই বলে—আর তোদের ভয় নাই রে
তোদের জন্ম-জন্মার্জিত-পাপ তাপ সব আমি নিব
তোদের,–পাপ-তাপের বোঝা নিব—বিনামূলে বিকাইব
একবার গৌরহরি বোল—বিকাইব প্রেম দিব
আচণ্ডালে ফল বিলাইল। রে !
যে চায় সেই পায়, যে না চায় সেও পায়,’’
ভাই রে,–এমন দাতা আর কেহ নাই—আমার,–দাতা-শিরোমণি নিতাই
অভিমান-শূন্য নিতাই নগরে বেড়ায়।। রে !!
অধম-চণ্ডাল-জনার ঘরে ঘরে গিয়া। রে !
ব্রহ্মার দুর্ল্লভ-প্রেম দিছেন যাচিয়া।। রে !!
যে না লয় তারে যাচে দন্তে তৃণ ধরি।’’ রে !
প্রেম না দিলেই নয়—যেন,–কত দায় ঠেকেছে
করুণার,–বালাই মরে যাই—আমরি কি করুণা রে
নিতাই ভজব কি করুণা ভজব—আমরা,–কারে ভজব বল ভাই রে
যারে তারে যেচে বেড়ায়
যা,–চিরকালের অনর্পিত—তা, যারে তারে যেচে বেড়ায়
যে ধন,–গোলোকে গোপনে ছিল—যারে তারে যেচে বেড়ায়
যে ধন,–ব্রহ্মাদিরও অনুভব ছিল না।–যারে তারে যেচে বেড়ায়
যার সন্ধান কেউ জানত না—যারে তারে যেচে বেড়ায়
যাহা,–সাধনেতেও সুদুর্ল্লভ—যারে তারে যেচে বেড়ায়
কে নিবি কে নিবি বলে—যারে তারে যেচে বেড়ায়
চির,–অনর্পিত প্রেমধন—যারে তারে যেচে বেড়ায়
বলে,–আমারে কিনিয়া লহ ভজ গৌরহরি।।’’ রে !!
নিতাই,–কেঁদে বলে জীবের দ্বারে দ্বারে—আমি,–বিকাইতে এসেছি রে
বয়ান ভাসে নয়ান-নীরে—আমারে কিনে নে রে
নিতাই আমার,–গলবাসে কেঁদে বলে—বিকাইব বিনামূলে
আমায়,–কিনে নে রে গৌরবলে—আমি,–বিকাইব বিনামূলে
আমার নিতাই বলে,–
যে জন গৌরাঙ্গ ভজে সেই আমার প্রাণ।। রে !!
দিন গেলে হা গৌরাঙ্গ যে বলে একবার। রে !
সে জন আমার হয় আমি হই তার।।’’ রে !!
নিতাই—কেঁদে বলে বার বার—সে আমার আমি তার
সে,–হোক না কেন সুদুরাচার—সে আমার আমি তার
যে সে, –কূলে জনম হউকনা তার—সে আমার আমি তার
থাকুক না তার অসদাচার—সে আমার আমি তার
নিতাই,–কেঁদে বলে বার বার—সে আমার আমি তার
যে,–গৌর বলে একবার—সে আমার আমি তার
গৌর-করুণা-রসের খনি—আমার নিতাই গুণমণি
গৌর-করুণা-মূরতি খানি—আমার নিতাই গুণমণি
যবনেও ফল আস্বাদিল।।’’ রে !!
সেই,–সুদুর্ল্লভ-প্রেমধন—আজ,–যবনে পাইয়া খাইয়া নাচে
গৌরহরি বোলে দিয়ে করতালি—যবনে পাইয়া খাইয়া নাচে
ও সে,–প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা-কিছুই দেখতে পেলাম না রে
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
ও সে,–পাষাণ-গলান-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
ও সে,–সঙ্কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
আমার,–সীতানাথের আনানিধির-গমন নটন-লীলা
আমার,–নদীয়া-বিনোদিয়ার—গমন নটন-লীলা
আমার,–প্রাণ-শচীদুলালিয়ার—গমন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়ার—গমন নটন-লীলা
আমার,–গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়া—গমন নটন-লীলা
আমার,–নরহরির চিতচোরের—গামন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীসনাতনের গতি-গৌরাঙ্গের –গমন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীরূপ-হৃৎকেতন-গোরার—গমন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীজীব-জীবন-গোরার—গমন নটন-লীলা
আমার,–দাস-রঘুনাথের সাধনের ধনের—গমন নটন-লীলা
আমার,–লোকনাথের হৃদ্বিহারীর—গামন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীগোপালভট্টের প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীপ্রকাশানন্দের নয়নানন্দের—গমন নটন-লীলা
আমার,–সার্ব্বভৌমের চৈতন্য-দাতার—গমন নটন-লীলা
আমার,–রাজা-প্রতাপরুদ্রের ত্রাণকারীর—গমন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীস্বরূপের সবর্বস্ব-ধনের—গমন নটন-লীলা
আমার,–শ্রীরামরায়ের চিতচোরের—গমন নটন-লীলা
আমার,–নিতাই পাগল করা গোরার—গমন নটন-লীলা
নাটুয়া মূরতি গৌর আমার—চলে যেতে নেচে যায়
নাটুয়া মূরতি নটন-গতি—চলে যেতে নেচে যায়
ভাব-হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যায়
চলে যেতে নেচে যায়—সঙ্গীতেতে কথা কয়
ওগো আমার,–রসের গোরা চিতচোরা,–সঙ্গীতেতে কথা কয়
পঞ্চ ম-রাগ-জিনি-যেন,–কতশত কোকিল কুহরিছে
যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
জগৎ,–অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
আমার,–গৌরহরি হরি বলিছে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
একবার যারে হেরে—তারই আঁখি মন হরে
‘একবার যারে হেরে’—
গৌর’—হরিবোলে নেচে নেচে—একবার যারে হেরে
তার আর,–কিছুই ভাল লাগে না রে
তার আর এ সংসারে—কিছুই ভাল লাগে না রে
প্রাকৃত-ভোগ-সুখ-বিলাস—কিছুই ভাল লাগে না রে
নিশিদিশি গুণেতে ঝুরে
ও সে,–নিরজনে আপন মনে—নিশিদিশি গুণেতে ঝুরে
গুণ স্মঙরি গুমরি গুমরি—পাঁজর ঝাঁঝর হয়ে যায় রে
কূলে তিলাঞ্জলি দিয়ে—পাগল হয়ে বেড়ায় রে
গৌর-প্রেমের কাঙ্গাল বেশে—লাগল হয়ে বেড়ায় রে
যারে দেখে তার পায়েতে পড়ে—পাগল হয়ে বেড়ায় রে
মেচ্ছ-যবনাদি-নরনারী—যারে দেখে তার পায়েতে পড়ে
কেমন করে গৌর পাব—বলে,–দয়া করে বলে দাও
গৌর-প্রেমের পাগল হওয়া—না জানি সে কত সুখ
সাজ সেজে লোক ভাঁড়ালাম—কিছু,–অনুভব ত’ হল না রে
সাজ সেজে লোক ভাঁড়ালাম—প্রাণ ত’ পাগল হল না রে
কপট-বৈষ্ণব-বেশে—ভ্রমিয়ে বেড়াই দেশ-বিদেশে
লাভ, পূজা, প্রতিষ্ঠার আশে—ভ্রমিয়ে বেড়াই দেশ-বিদেশে
নিষ্কপটে গোরা-পহুঁ—কোই,–একদিন ত’ ভজলাম না রে
গৌর,–আমি তোমার হলাম বলে—ভুলেও একবার বললাম না রে
নইলে,–কেন বা হবে রে
কিসের অভাব ছিল ভাই
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনের—কিসের অভাব ছিল ভাই
দাস-রঘুনাথের—কিসের অভাব ছিল ভাই
সকল ঐশ্বর্য্য ছাড়ি গেলা বৃন্দাবন।।’’ রে !!
প্রাণ,–গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরি’—আগে চলি’ গেলা শ্রীরূপ
অতুল,–ঐশ্বর্য্য বাম-পদে ঠেলি’—আগে চলি’ গেলা শ্রীরূপ
বিষাদ ভাবয়ে মনে মনে।
রূপে রে করুণা করি, উদ্ধারিলা গৌরহরি,
মো-অধমে না কৈলা স্মরণে।।’’
সকলই আমার করমের দোষ—তোমার কোনও দোষ নাই প্রভু
রাখিয়াছে কারাগারে ফেলি।
আপন-করুণা-পাশে, দৃঢ় করি’ ধরি’ কেশে,
চরণ-নিকটে লেহ তুলি।।’’
বিলাপিছেন সনাতন—আমার,–সেই দশা হয়েছে প্রভু
সম্মুখে সাধিল ব্যাধ বাণ।
কাতরে হরিণী ডাকে, পড়িয়া বিষম-পাকে,
এইবার কর পরিত্রাণ।।’’
আমায়,–এ বিপদে উদ্ধারিতে—তোমা বিনে আর কেউ নাই প্রভু
পত্রী দিল রূপের লিখন।’’
‘‘পত্রী পড়ি করিলা গোপন।।
মনে আনন্দিত হইয়া—পত্রী পড়ি করিলা গোপন।।’’
পাত্সার উজির হৈয়া ছিলা।
শ্রীরূপের পত্রী পাঞা, বন্দী হইতে পলাইয়া,
কাশীপুরে গৌরাঙ্গ ভেটিলা।।’’
বসিয়াছেন সনাতন
দীন-হীন-কাঙ্গালের বেশে—বসিয়াছেন সনাতন,
তপন-মিশ্রের দ্বারে—বসিয়াছেন সনাতন
ডাকিলেন শ্রীসনাতন
লোক-দ্বারে শ্রীগৌর-সুন্দর—ডাকিলেন শ্রীসনাতন
প্রাণ-গৌরাঙ্গের আজ্ঞা পেয়ে—চলিলেন সনাতন
নিকটে যাইতে অঙ্গ হালে।
দুই গুচ্ছ তৃণ করি, এক গুচ্ছ দন্তে ধরি,
পড়িলা গৌরাঙ্গ-পদতলে।।’’
আইস আইস আইস বলে—সনাতনে করেন কোলে
আমায় তুমি ছোঁয়া না প্রভু
আমি,–তোমা-স্পর্শের যোগ্য নই—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
আমি,–জন্মাবধি যখন-সেবী—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
আমরা,–গরব করে বলতে পারি—এ দৈন্য কি জগতে আছে
প্রাণ,–গৌরদাসের দৈন্যের মত—এ দৈন্য কি জগতে আছে
গৌরদাসর দৈন্যের কাছে—এ দৈন্য কি জগতে আছে
বাহু পসারি করিলেন কোলে
আইস সনাতন বলে—বাহু পসারি’ করিলেন কোলে
লুপ্ত-ব্রজ উদ্ধার কাজে—শক্তি দিয়া পাঠালেন ব্রজে
প্রাণ,–গৌর-আজ্ঞা ধরি’ মাথে—যান সনাতন ব্রজের পথে
গৌর-মুখচন্দ্র-পানে—যায় যায় ফিরে চায়
সোণার গৌরাঙ্গ-প্রভু—আর কি দেখা পাব হে
পরিধানে ছেঁড়া বহির্ব্বাস।’’
তারা,–আদর্শ চৈতন্যের দাস
আমি,–নামে কলঙ্ক রটালাম
দাস বলে পরিচয় দিয়ে,–আমি,–নামে কলঙ্ক রটালাম
ইন্দ্র-সম-রাজ্য ছাড়ি রাধাকুণ্ডে বাস।।’’ রে !!
অতুল,–ঐশ্বর্য্য বাম-পদে ঠেলে—তরুতলে কৈলা বাস
পরিধান,–ছেঁড়া-কাঁথা বহির্ব্বাস—তরুতলে কৈলা বাস
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে পড়ি’—নিশিদিশি হা হুতাশ
কারো দেখা পেলাম না রে
সে দাস কই সে প্রভু কই—কারো দেখা পেলাম না রে
সে মধুর-লীলা কই—সে দাস কই সে প্রভু কই
এই ত’ মধুর নদীয়া
গৌরের নিত্য-লীলা-ভূমি—এই ত’ মধুর নদীয়া
ভাগ্যবান জনে দেখছে
যার,–প্রেম-নেত্রের বিকাশ হয়েছে—সেই,–ভাগ্যবান জনে দেখছে
‘যার,–প্রেম-নেত্রের বিকাশ হয়েছে—
শ্রীগুরু-কৃপায়—যার,–প্রেম-নেত্র্রে বিকাশ হয়েছে
অদ্যাপিও সেই প্রকট-লীলা—সেই,–ভাগ্যবান জনে দেখছে
আরম্ভিলাম নাম-যজ্ঞ—আমরা কেবল দেখব
প্রাণ নিতাই গৌর দেখব—আরম্ভিলাম নাম-যজ্ঞ
সপ্তাহ শেষ হতে গেল—দেখিতে ত’ পেলাম না রে
সেই,–সঙ্কীর্ত্তন-সুলম্পটে—দেখিতে ত’ পেলাম না রে
আর আমাদের কে বা আছে
আমার বলতে এ জগতে—আর আমাদের কে বা আছে
কিছুতেই ত’ জানতাম না
খেলারসে মেতে ছিলাম—কিছুই ত’ জানতাম না
সংসার,–নরক হতে টেনে তুলে—কৃপা করে জানাইলে
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা—কৃপা করে জানাইলে
ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে—দেখাইবে বলে ছিলে
এই মধুর-নদীয়ায়—লুকাইয়ে করছ খেলা
নিতাই গৌরাঙ্গ লয়ে—লুকাইয়ে করছ খেলা
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—একবার দেখা দাও
এই,–সঙ্কীর্ত্তন-যজ্ঞে—একবার দেখা দাও
‘এই,–সঙ্কীর্ত্তন-যজ্ঞে’—
প্রাণ,–নিতাই গৌরাঙ্গ লয়ে—এই,–সঙ্কীর্ত্তন-যজ্ঞে
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও
‘কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে’—
প্রাণ,–নিতাই-গৌর-সঙ্গে—কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে
হৃদিপটে এঁকে নিব
চিতচোরা মূরতি খানি—হৃদিপটে এঁকে নিব
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদিপটে এঁকে নিব
ভাই ভাই এক প্রাণে—প্রাণ ভরে গাইব
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’ [মাতন]