শ্রীশ্রী সনাতন—গোস্বামিপাদের সূচক-কীর্ত্তন

(গুরুপূর্ণিমা)

শ্রীশ্রীহরিদাস-ঠাকুর-মঠ

——০——

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(১)

আহা, — ‘‘রূপের বৈরাগ্য কালে, সনাতন বন্দীশালে
বিষাদ ভাবয়ে মনে মনে।’’

শ্রীসনাতন বন্দীশালে

শ্রীরূপের বৈরাগ্যকালে—শ্রীসনাতন বন্দীশালে

[মাতন]

‘‘বিষাদ ভাবয়ে মনে মনে।’’

আক্ষেপিছেন এই ভাবে

সনাতন বন্দীশালে—আক্ষেপিছেন এইভাবে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বলে,– ‘‘রূপেরে করুণা করি’, ত্রাণ কৈলা গৌরহরি,
মো অধমে না কৈলা স্মরণে।।’’

ত্রাণ কৈলা গৌরহরি

শ্রীরূপেরে করুণা করি’—তুমি,–ত্রাণ কৈলা গৌরহরি

‘‘মো অধমে না কৈলা স্মরণে।।’’

আমাকে না স্মরণ কৈলে

আমি,–বন্দী হইলাম বন্দীশালে—আমাকে না স্মরণ কৈলে

‘‘মো অধমে না কৈলা স্মরণে।।’’

রূপেরে উদ্ধার কৈলে

গৌরহরি দয়া করে—রূপেরে উদ্ধার কৈলে
সংসার-পারাবার হতে—রূপেরে উদ্ধার কৈলে
এ-অধমে কি ভুলে গেলে—রূপের উদ্ধার কৈলে

যদি পড়িতাম তোমার স্মরণে

ঘুচিত মায়ার বন্ধনে—যদি পড়িতাম তোমার স্মরণে

না না প্রভু,–তোমার কোন দোষ নাই

অপার,—করুণা-বারিধি গৌরহরি—না না প্রভু,—

তোমার কোনও দোষ নাই
আমার,–কর্ম্মফল ভোগ করছি

তোমার কোন দোষ নাই ছিঃ ছিঃ –আমার,–কর্ম্মফল ভোগ করছি
আপন-দোষে বঞ্চিত আমি—আমার,–কর্ম্মফল ভোগ করছি

‘‘মোর কর্ম্ম দোষ ফাঁদে, হাতে পায়ে গলে বাঁধে,
আমায়, —‘‘রাখিয়াছে কারাগারে ফেলি’।।’’

নিজ-কর্ম্মে নিজে বাঁধা

কোন দোষ নাই তোমার—নিজ-কর্ম্মে নিজে বাঁধা
অধিকার নাই ছিঁড়ে যাবার—নিজ-কর্ম্মে নিজে বাঁধা

আমায়,— ‘‘রাখিয়াছে কারাগারে ফেলি।’’
‘‘আপনে করুণা-পাশে, দৃঢ় করি ধরি’ কেশে,
চরণ-নিকটে লেহ তুলি।।’’

বিলাপিছেন সনাতন

বন্দীশালে ব্যাকুল হয়ে—বিলাপিছেন সনাতন

আর আমার কেউ নাই হে

বন্দীশালে সনাতন কাঁদে—আর আমার কেউ নাই হে
গৌরহরি তোমা বিনে—আর আমার কেউ নাই হে
এই-সংসার,–কূপ হতে তুলে নিতে—আর আমার কেউ নাই হে
দারুণ,–সংসার-কূপ হতে তুলতে—আর আমার কেউ নাই হে
করুণ-স্বরে সনাতন কাঁদে—আর আমার কেউ নাই হে
পতিতপাবনে তুমি বিনে—আর আমার কেউ নাই হে

চরণ-নিকটে লেহ তুলি’।।

চরণ-নিকটে লেহ তুলি’

গৌরহরি দয়া করি’—চরণ-নিকটে লেহ তুলি’
আর আমায় রেখো না ফেলি’—চরণ-নিকটে লেহ তুলি’

[মাতন]
আমার,–সেই দশা হয়েছে প্রভু

তুমি,–সকলই জান তবু জানাই—আমার,–সেই দশা হয়েছে প্রভু

সেই দশা হয়েছে আমার

হা গৌর প্রাণ গৌর—সেই দশা হয়েছে আমার

‘‘পশ্চাতে অগাধ জল, দুই পাশে দাবানল,
সম্মুখে সাধিল ব্যাধ বাণ।
কাতরে হরিণী ডাকে, পড়িয়া বিষম পাকে,’’

কোন-দিকে পথ নাই
আমার,–সেই দশা হয়েছে প্রভু
আমার সেই,–হরিণীর দশা হয়েছে প্রভু
আমার,–সেই হরিণীর দশা হয়েছে

আমার যাবার,–উপায় নাই কোন-দিকে—আমার,–সেই-হরিণীর দশা হয়েছে
আমায়,–এ-বিপদে উদ্ধার কর—আমার,–সেই হরিণীর দশা হয়েছে

‘‘এইবার কর পরিত্রাণ।।’’

গৌর,–তোমা বিনে কে আছে জগতে

আমায়,–এ-বিপদে উদ্ধারিতে—গৌর,–তোমা বিনে কে আছে জগতে

আমায়,–‘‘এইবার কর পরিত্রাণ।।
‘‘জগাই মাধাই হেলে, বাসুদেব অজামিলে,
অনায়াসে করিলা উদ্ধার।’’

পতিত-উদ্ধার প্রভু তুমি

সেই ভরসায় দাবী করি—পতিত-উদ্ধার প্রভু তুমি

‘‘এ-দুঃখে-সমুদ্র-ঘোরে নিস্তার করহ মোরে,
তোমা বিনে নাহি হেন আর।।’’

আর আমার কেউ নাই
আমার,–আর কেউ নাই গৌরহরি

এ-বিপদে ত্রাণকারী—আমার,–আর কেউ নাই গৌরহরি
তোমা বিনে ও করুণা-বারিধি—আমার,–আর কেউ নাই গৌরহরি

[মাতন]
এইরূপে বিলাপিছেন

সনাতন বন্দীশালে—এইরূপে বিলাপিছেন

বিলাপিছেন সনাতন

এইরূপে বন্দীশালে—বিলাপিছেন সনাতন

‘‘হেনকালে একজনে, অলখিতে সনাতনে,
পাত্রী দিলা রূপের লিখন।’’

আর কি প্রভু রইতে পারে

সনাতন কাঁদে কাতরে—আর কি প্রভু রইতে পারে

সনাতনে আকর্ষিলেন

শ্রীরূপের পত্রী-দ্বারে—সনাতনে আকর্ষিলেন

শ্রীরূপের পত্রী-দ্বারে

সংসারে অনিত্যতা-সূচক—শ্রীরূপের পত্রী-দ্বারে

এইরূপে পত্রী লেখা
যদুপতেঃ ক্ক গত মধুপুরী
এই সেই পত্রীর মর্ম্ম
ত্বরা করি’ আইস হে

নশ্বর জগত বটে—ত্বরা করি’ আইস হে
কৃষ্ণ-ভজন কর্ত্তব্য জীবের—ত্বরা করি’ আইস হে

অনিত্যতা-বার্ত্তা জানায়ে

এ-সংসার-পারাবারের—অনিত্যতা-বার্ত্তা জানায়ে

‘‘পত্রী দিলা রূপের লিখন।
এ-রাধাবল্লভ-দাসে, মনে হইল আশ্বাসে,’’

আশ্বাস হল সনাতন মনে

শ্রীরূপের পত্রী পেয়ে—আশ্বাস হল সনাতন মনে
শ্রীগৌরাঙ্গের আজ্ঞা জেনে—আশ্বাস হল সনাতন মনে

সনাতন—‘‘পত্রী পড়ি’ করিলা গোপন।।’’

(২)

‘‘শ্রীরূপের বড় ভাই, সনাতন গোসাঞি
পাত্‌সার উজীর হৈয়াছিলা।।’’

বাদশা শ্রীহোসেনসার

“পাতসার উজীর হৈয়াছিল।
শ্রীরূপের পত্রী পাইয়া, বন্দী হইতে পলাইয়া,’’

আর কি সনাতন রইতে পারে

গৌরহরি ডেকেছেন তারে—আর কি সনাতন রইতে পারে
‘গৌরহরি ডেকেছেন, তারে’—
শ্রীরূপের পত্রী-দ্বারে—গৌরহরি ডেকেছেন তারে

আর কি সনাতন রইতে পারে
তার কি বন্ধন থাকতে পারে

গৌরহরি ডেকেছেন যারে—তার কি বন্ধন থাকতে পারে

বেঁধে রাখবে তারে কোন-বন্ধনে

গৌর বেঁধেছে যারে নয়ন কোণে—বেঁধে রাখবে তারে কোন-বন্ধনে

আর কি রহিতে পারে

শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের পাগল—আর কি রহিতে পারে

[মাতন]

‘‘শ্রীরূপের পত্রী পাইয়া, বন্দী হইতে পলাইয়া,
কাশীপুরে গৌরাঙ্গ ভেটিলা।।’’

শুনিয়াছেন সনাতন

প্রভু গিয়াছিলেন বৃন্দাবন—শুনিয়াছিলেন সনাতন

গিয়াছিলেন বৃন্দাবন

ঝারিখণ্ড-পথ দিয়ে—গিয়াছিলেন বৃন্দাবন

ফিরিয়াছেন ব্রজ হতে
মিলিয়াছেন শ্রীরূপের সাথে

প্রয়াগে ত্রিবেণী-তীরে—মিলিয়াছেন শ্রীরূপের সাথে

পাঠাইয়েছেন তারে ব্রজপুরে
ফিরিতেছেন নীলাচলে
এত শুনি সনাতন
পাগল হয়ে ছুট্‌লেন পথে

মুক্ত হয়ে বন্দী হতে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে
প্রাণ-গৌরাঙ্গ-অনুরাগে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে
দীনহীন-কাঙ্গালের বেশে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে

[মাতন]
মনে মনে গণে সদাই

কতক্ষণে প্রভুর দেখা পাই—মনে মনে গণে সদাই

সনাতনের দেহ-স্মৃতি নাই

আহার নাই নিদ্রা নাই—সনাতন দেহ-স্মৃতি নাই

অনশনে শীর্ণ তনু

প্রাণ-গৌরাঙ্গ-অনুরাগে—অনশনে শীর্ণ তনু

চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল

আহার নাই নিদ্রা নাই—চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল
দুনয়নে বহে শতজল—চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল
দুনয়নে বহে ধারা অবিরল—চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল
সোণার গৌর প্রভু বল-ে-চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল

[মাতন]
উপনীত কাশীধামে

হা,–গৌর বলে কাঁদতে কাঁদতে—উপনীত কাশীধামে
অজ্ঞাত-আকর্ষণে—উপনীত কাশীধামে

কে যেন নিল টেনে

সনাতনে কাশীধামে—কে যেন নিল টেনে

এসেছেন প্রাণ-গৌরহরি

ব্রজপুরী হতে কাশীপুরী—এসেছেন প্রাণ-গৌরহরি

বুঝি,–সেই টানে আপনি গেছে

প্রাণে প্রাণে টান পড়েছে—বুঝি,–সেই টানে আপনি গেছে

সনাতন,–উপনীত কাশীধামে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের আকর্ষণে—সনাতন,–উপনীত কাশীধামে

সেথা পরস্পর শুনতে পেলেন
প্রভু আছেন এইখানে
প্রভু আছেন কাশীধামে

শ্রী,–চন্দ্রশেখর—আচার্য্যের ঘরে—প্রভু আছেন কাশীধামে

তখন,–ত্বরা করি’ গেলেন সনাতন

শ্রী,-চন্দ্রশেখর-আচার্য্যের ভবন—ত্বরা করি’ গেলেন সনাতন
করবে বলে প্রাণ-গৌর দরশন—ত্বরা করি’ গেলেন সনাতন

বসিলেন গিয়া দ্বারদেশে

শ্রী,–চন্দ্রশেখর-আচার্য্যের ঘরের—বসিলেন গিয়া দ্বারদেশে
প্রাণ-গৌর-চরণ স্মরিয়ে—বসিলেন গিয়া দ্বারদেশে

ভিতরে ছিলেন প্রাণগৌরাঙ্গ
হঠাৎ,–প্রাণ যেন কেমন হল

প্রাণে প্রাণে টান পড়িল তাই—হঠাৎ,–প্রাণ যেন কেমন হল

জানলেন প্রভু প্রাণে প্রাণে

তার প্রাণের সনাতন এসেছে—জানলেন প্রভু প্রাণে প্রাণে
এসেছে আমার সনাতন—জানলেন প্রভু প্রাণে প্রাণে

আদেশিলেন একজনে
আজ্ঞা দিলেন একজনে
যাও যাও ত্বরা করে

এই ঘরের দুয়ারে—যাও যাও ত্বরা করে

দেখে এস দ্বারদেশে

কে সেথা বসে আছে—দেখে এস দ্বাদেশে
এক-বৈষ্ণব বুঝি বসে আছে—দেখে এস দ্বারদেশে

এক-বৈষ্ণব আছে বসিয়ে

ত্বরা করি’ দেখ গিয়ে—এক-বৈষ্ণব আছে বসিয়ে
ত্বরায় দেখ বাহিরে গিয়ে—এক-বৈষ্ণব আছে বসিয়ে

মহাপ্রভুর আজ্ঞা পেয়ে

বার্ত্তাবহ গেলেন ত্বরা করে—মহাপ্রভুর আজ্ঞা পেয়ে

দেখিলেন বসে আছে

এক ফকীর দীনবেশে—দেখিলেন বসে আছে

ফিরিয়া সে বলিল বার্ত্তা
আসি’,–নিবেদিলেন প্রভুর কাছে

বৈষ্ণব নয় এক দরবেশ আছে—আসি’,–নিবেদিলেন প্রভুর কাছে
এক দরবেশ বসে আছে—আসি’,–নিবেদিলেন প্রভুর কাছে

দ্বারে আছে এক দরবেশে

তার,–নিরন্তর ভাবাবেশে—দ্বারে আছে এক দরবেশ

ভাসে দুটী নয়ন-জলে

হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—ভাসে দুটী নয়ন-জলে

ত্বরা করি’ ডাক তারে
জানিলেন প্রভু প্রাণে প্রাণে
এ আমারই সনাতন বটে

আসিয়াছে কাঙাল সেজে—এ আমারই সনাতন বটে

আর কি প্রভু রইতে পারে

সনাতন আসিয়াছে দুয়ারে—আর কি প্রভু রইতে পারে

এত বলি গৌরহরি
আগুসরি গেলেন ছুটে

হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে—আগুসরি গেলেন ছুটে

আপনি আসিলেন বহির্দ্বারে

সনাতনে মিলিবার তবে—আপনি আসিলেন বর্হিদ্বারে

বাহু পসারি ছুটিলেন প্রভু

এস’ আমার সনাতন বলে—বাহু পসারি’ ছুটিলেন প্রভু

স্বর শুনি’ সনাতন
চিনিতে পারিলেন

আমার প্রভুর কণ্ঠস্বর—চিনিতে পারিলেন

অমনি চেয়ে দেখলেন

সম্মুখে সেই প্রাণের ঠাকুর—অমনি চেয়ে দেখলেন

দূর হতে দেখতে পেয়ে

সনাতন নিজ-প্রাণনাথে—দূরে হতে দেখতে পেয়ে

ব্যাকুল হয়ে উঠল কেঁদে

এতদিনে দয়া হল কি বলে—ব্যাকুল হয়ে উঠল কেঁদে

‘‘কাশীপুরে গৌরাঙ্গ ভেটিলা।।’’
‘‘ছেঁড়া বস্ত্র অঙ্গে-মলি’’

আমার প্রভু সনাতনের

‘‘ছেঁড়া বস্ত্র অঙ্গে মলি, হাতে নখ মাথে চুলি
নিকটে যাইতে অঙ্গ হালে।।’’

আমার প্রভু সনাতনের বয়ান
ভাসে নয়ন জলে

শ্রীগৌরাঙ্গ-বদন চেয়ে—বয়ান ভাসে নয়নজলে

‘‘নিকটে যাইতে অঙ্গ হালে।’’
মুখের কথায় কি গৌর মিলে

এত অনুরাগ না হলে—মুখের কথায় কি গৌর মিলে

‘‘নিকটে যাইতে অঙ্গ হালে।
দুই গুচ্ছ তৃণ করি’, একগুচ্ছ দন্তে ধরি,’’

বালাই লয়ে মরে যাই

প্রাণ-গৌরাঙ্গগণের দৈন্যের—বালাই লয়ে মরে যাই

গৌরগণের নিজস্বধন

গরব করে বলতে পারি—গৌরবর্ণের নিজস্বধন
ভক্তিরাজ্যের দৈন্যরতন—গৌরগণের নিজস্বদন

এ দৈন্য কি আর জগতে আছে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের দাস বিনে—এ দৈন্য কি আর জগতে আছে
গৌরহরি বশ এই দৈন্যেতে—এ দৈন্য কি আর জগতে আছে

‘‘দুই গুচ্ছ তৃণ করি’, এক গুচ্ছ দন্তে ধরি’,
পড়িলা গৌরাঙ্গ-পদতলে।।’’

যেন,–চির অপরাধীর মত

কোন অপরাধ নাই তবু—যেন,–চির অপরাধীর মত

গৌরদাসের এই ত’ স্বভাব

পেয়েও সদা মানে অভাব—গৌরদাসের এই ত’ স্বভাব

পড়িল গৌর-পদতলে

ভাসি’ দুটী নয়নজলে—পড়িল গৌর-পদতলে

[মাতন]

‘‘পড়িলা গৌরাঙ্গ-পদতলে।।
দরবেশ-রূপ দেখি, প্রভুর সজল আঁখি’’,

প্রভুর ছল ছল আখিঁ

সনাতনের বেশ দেখি’—প্রভুর ছল ছল আঁখি

‘‘বাহু পসারিয়া আইসে ধাইয়া।’’

আইস আইস আইস বলে

আমার প্রাণ সনাতন—আইস আইস আইস বলে।
অমিয়া মাখান বোলে—আইস আইস আইস বলে।
প্রেমভরা নেত্রে হেরে—আইস আইস আইস বলে
ভাসি দুটী নয়নজলে—আইস আইস আইস বলে

‘‘বাহু পসারিয়া আইসে ধাইয়া।’’
‘‘সনাতনে করে কোলে,’’

করুণা-বাহু পসারিয়ে

আইস সনাতন আইস বলে—করুণা-বাহু পসারিয়ে
প্রভু আমার,–সনাতনে যায় করিতে কোলে—করুণা-বাহু পসারিয়ে

‘‘সনাতনে করে কোলে, কাতরে গোসাঞি বলে,
মো অধমে স্পর্শ কি লাগিয়া।।
অস্পৃশ্য পামর দীন, দূরাচার মন্দ হীন,
নীচ-সঙ্গে নীচ ব্যবহার।
এহেন পামর-জনে, স্পর্শ প্রভু কি কারণে,
যোগ্য নহে তোমা স্পর্শিবার।।’’

সনাতন বলেন কাতরে
আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু

কাতরে সনাতন বলে—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
অস্পৃশ্য পামর মুঞি—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু

আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু

যবন-সেবী পামর আমি—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু

আমি—তোমা’ স্পর্শের যোগ্য নাই

আমি অস্পৃশ্য বিষয়-সেবী—আমি,–তোমা’ স্পর্শের যোগ্য নই

আমার পরাণ গৌরাঙ্গগণ

দৈন্য-ভূষণে ভূষিত অনুক্ষণ—আমার পরাণ গৌরাঙ্গগণ

দৈন্য-ভূষণে সদা ভূষিত

প্রাণ-গৌরগণ যত দৈন্য-ভূষণে সদা ভূষিত

সেই দৈন্য স্বভাবেতে
তারা আপনাকে হীন মানে

জগৎ তাদের সর্ব্বোত্তম দেখে—কিন্তু,–তারা আপনাকে হীন মানে
জগজীবে সর্ব্বোত্তম দেখে—আর,–তারা আপনাকে হীন মানে

দৈন্য সদাই অলঙ্কার

প্রাণ-গৌরগণ-সবাকার-দৈন্য সদাই অলঙ্কার

সেই স্বভাবে সনাতন বলে

‘‘যোগ্য নহে তোমা স্পর্শিবার।।’’

মানিলেন না কোন বারণ

গৌরহরি সনাতনের—মানিলেন না কোন বারণ

সনাতন করেন কোলে

বাহু পসারি’ গৌরহরি—সনতনে করেন কোলে

বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে

গৌরহরি সনাতনে—বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে

প্রভু বলেন শুন সনাতন

তুমি কর দৈন্য সম্বরণ—প্রভু বলেন শুন সনাতন

তুমি কর দৈন্য সম্বরণ

তোমার দৈন্যে মোর ফাটে মন—তুমি কর দৈন্য সম্বরণ

চেয়েছিলাম তোমার পথ-পানে

আমার,–সনাতন আসবে কতক্ষণে—চেয়েছিলাম তোমার পথ-পানে
‘আমার,–সনাতন আসবে কতক্ষণে’—

ঐ যে,–রূপ গেল ব্রজবনে—আমার,–সনাতন আসবে কতক্ষণে
চেয়েছিলাম তোমার পথ-পানে
অপরূপ গৌরাঙ্গ-লীলা

‘‘ভোট-কম্বল দেখি’ গায় প্রভু পুনঃ পুনঃ চায়,’’

প্রভু দেখাবেন জগতেরে

নিজ-জন-শ্রীসনাতন-দ্বারে—প্রভু দেখাবেন জগতেরে
ত্যাগ বৈরাগ্য কারে বলে—প্রভু দেখাবেন জগতেরে

তাই মহাপ্রভুর এই রীত

‘‘ভোট-কম্বল দেখি’ গায়, প্রভু পুনঃ পুনঃ চায়,
লজ্জিত হইলা সনাতন।’’

প্রাণে প্রাণে জানিলেন
প্রভুর ভাল নাহি লাগছে

আমার গায়ে ভোট-কম্বল আছে—প্রভুর ভাল নাহি লাগছে

প্রভুরে নাহিক ভায়

ভোট—কম্বল আমার গায়—প্রভুরে নাহিক ভায়
এ-রাজ্যের এ-রীতি নয়—তাই, প্রভুরে নাহিক ভায়

এ ত’ বৈরাগ্যের চিহ্ন নয়

আমার অঙ্গে ভোট-কম্বল হয়—এ ত’ বৈরাগ্যের চিহ্ন নয়

মহাপ্রভুর ইচ্ছা নয়

ভোট-কম্বল রাখি গায়—মহাপ্রভুর ইচ্ছা নয়

‘‘লজ্জিত হইলা সনাতন।’’


‘‘গৌড়ীয়ারে ভোট দিয়া’’,

সুরধুনীর তীরে গিয়া

প্রভুর আশায় জানিয়া—সুরধুনীর তীরে গিয়া

‘‘গৌড়ীয়ারে ভোট দিয়া ছেঁড়া এক কন্থা লঞা,’’
বৈরাগ্যের অনুকূল-বেশ—‘‘ছেঁড়া এক কন্থা লঞা,’’
প্রভু-স্থানে পুনঃ আগমন।।’’

করুণাসিন্ধু গৌর-অবতার
তার,–ভোগ-শেষ রাখেন না আর

কৃপাদিঠে যারে হেরে একবার—তার,–ভোগ-শেষ রাখেন না আর

প্রভু জানাইলেন জগতেরে

প্রিয়-শ্রীসনাতন-দ্বারে—প্রভু জানাইলেন জগতেরে

আমার কেউ পেতে নারে

ভোগ-শেষ থাকলে পরে—আমায় কেউ পেতে নারে

‘‘প্রভু-স্থানে পুনঃ আগমন।।’’

প্রভুর আনন্দিত মন

আমার মন বুঝেছে সনাতন—প্রভুর আনন্দিত মন

তারাই ত’ গৌরাঙ্গদাস

প্রভুর মন বুঝে করে কাজ—তারাই ত’ গৌরাঙ্গদাস

নামে কলঙ্ক রটালাম

গৌর-পরিচয় দিয়ে—নামে কলঙ্ক রটালাম

‘‘গৌরাঙ্গ করুণা করি’ রাধাকৃষ্ণ-নাম মাধুরী,
শিক্ষা করাইলা সনাতনে।
প্রভু কহে রূপ-সনে, দেখা হবে বৃন্দাবনে’’

ত্বরা করি’ যাও ব্রজে

ও প্রাণের সনাতন—ত্বরা করি’ যাও ব্রজে

লুপ্ত-ব্রজ উদ্ধার কর গিয়া

শ্রীরূপে সঙ্গে লইয়া—লুপ্ত-ব্রজ উদ্ধার কর গিয়া

ব্যাথা যে লাগিল প্রাণে

প্রভুর এই বাক্য শুনে—ব্যাথা যে লাগিল প্রাণে
বিরহ হইবে জেনে—ব্যথা যে লাগিল প্রাণে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

যাবার কালে চরণ ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

আর,–কতদিনে দেখতে পাব

হা গৌর প্রাণ গৌর—আর,–কতদিনে দেখতে পাব

আর কি দেখতে পাব হে

হা গৌর প্রাণ গৌর—আর কি দেখতে পাব হে

[মাতন]
যায় সনাতন ব্রজের পথে

গৌর-আজ্ঞা ধরি’ মাথে—যায় সনাতন ব্রজের পথে
হা গৌর বলে কাঁদতে কাঁদতে—যায় সনাতন ব্রজের পথে

যায় যায় ফিরে চায়

গৌরমুখচন্দ্র-পানে—যায় যায় ফিরে চায়

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

প্রাণ—গোরাচাঁদের বদন হেরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কতদিনে দেখতে পাব বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
পদ আগু ফেলতে পিছে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

কেমনে বল চলবে পা

প্রাণ ত’ যেতে নাহি চায়—কেমনে বল চলবে পা

প্রাণ ত’ যেতে চায় না

ছেড়ে প্রাণের গৌরাঙ্গসোণা—প্রাণ ত’ যেতে চায় না

‘‘প্রভু-আজ্ঞায় করিলা গমনে।।
‘‘কভু কাঁদে কভু হাসে, কভু প্রেমানন্দে ভাসে,’’

তাই প্রেমানন্দে ভাসে

প্রভু বলেছেন ব্রজে যেতে—তাই প্রেমানন্দে ভাসে

‘‘কভু কাঁদে কভু হাসে, কভু প্রেমানন্দে ভাসে,’’
কভু ভিক্ষা কভু উপবাস।’’

দেহস্মৃতি নাই রে

গৌর বলে সদাই কাঁদে—দেহস্মৃতি নাই রে

‘‘ছেঁড়া কাঁথা নেড়া মাথা, মুখে-কৃষ্ণ-গুণগাথা,
পরিধানে ছেঁড়া বহির্ব্বাস।।’’

পরিচয় দেয় লোকের পাশ

পরিধানে ছেঁড়া কাঁথা বহির্ব্বাস—পরিচয় দেয় লোকের পাশ
আমি শ্রীচৈতন্যের দাস—পরিচয় দেয় লোকের পাশ

[মাতন]

কেহ,–পরিচয় জিজ্ঞাসিলে বলে—আমি শ্রীচৈতন্যের দাস

[মাতন]

লোকে জিজ্ঞাসিলে বলে—আমি শ্রীচৈতন্যের দাস

[মাতন]

‘‘ছেঁড়া কাঁথা নেড়া মাথা পরা বহির্ব্বাস রে।
লোকে জিজ্ঞাসিলে বলে মুঞি, চৈতন্যের দাস রে।।’’

[মাতন]
তারাই ত’ চৈতন্যদাস
আদর্শ চৈতন্যদাস

শ্রীরূপ শ্রীসনাতন—আদর্শ চৈতন্যদাস

আদর্শ গৌরাঙ্গদাস

শ্রীরূপ শ্রীসনাতন—আদর্শ গৌরঙ্গদাস

দাস সেজে লোক ভাঁড়ালাম

নামে কলঙ্ক রটালাম—দাস সেজে লোক ভাঁড়ালাম

নামে কলঙ্ক রটালাম

দাস বলে পরিচয় দিয়ে—নামে কলঙ্ক রটালাম

[মাতন]
মন ত’ কাঙ্গাল হল না রে

বেশে কাঙ্গাল সাজলাম বটে—মন ত’ কাঙ্গাল হল না রে

‘‘গিয়া গোসাঞি সনাতন, প্রবেশিলা বৃন্দাবন,’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বৃন্দাবন-মাধুরী দেখে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বলে,–এ কি কৃপা কৈলে মোরে

পাঠাইলে ব্রজপুরে—বলে,–এ কি কৃপা কৈলে মোরে

তোমার,–অহৈতুকী-কৃপার যাই বলিহারি

আমায় দেখাইলে ব্রজ-মাধুরী—তোমার,–অহৈতুকী-কৃপার যাই বলিহারি
ও করুাবারিধি গৌরহরি—তোমার,–অহৈতুকী-কৃপার যাই বলিহারি

‘‘গিয়া গোসাঞি সনাতন, প্রবেশিলা বৃন্দাবন,
রূপ-সঙ্গে হইল মিলন।’’

না জানি সে কি আনন্দ

রূপ-সনাতনের ব্রজে মিলন-রঙ্গ—না জানি সে কি আনন্দ

অপরূপ সে মিলন-রঙ্গ

‘‘ঘর্ম্ম অশ্রু নেত্রে পড়ে, সনাতনের পদ ধরে,
কহে রূপ গদগদ বচন।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

গৌর-কৃপা স্মঙরিয়া—আনন্দ আর ধরে না রে

আনন্দ ধরে না মনে

গুণনিধি-রূপ-গোসাঞির—আনন্দ ধরে না মনে
পাইয়া শ্রীসনাতনে—আনন্দ ধরে না মনে
‘পাইয়া শ্রীসনাতনে’—
শ্রীগৌরাঙ্গ-কৃপা-বলে—পাইয়া শ্রীসনাতনে

আনন্দ ধরে না মনে
মুখে কথা সরে না রে

শ্রীসনাতনে প্রভুর কৃপা হেরে—মুখে কথা সরে না রে
গৌর-গুণ স্মরণ করে—মুখে কথা সরে না রে

‘‘কহে রূপ গদগদ বচন।।’’


‘‘গৌরাঙ্গের যত গুণ, কহে রূপ সনাতন,
হা নাথ হা নাথ বলি’ ডাকে।’’

কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে

রূপ সনাতন ব্রজবনে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে
রূপ সনাতন দুইজনে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে
নিরজনে বসি’ দুজনে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে
পরস্পর গলা ধরে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে

কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’

রূপ সনাতন গলা ধরি’—কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’

তাদের,–দেহ আছে বটে ব্রজবনে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের আজ্ঞা-ক্রমে—তাদের,–দেহ আছে বটে ব্রজবনে
তাদের,–প্রাণ আছে গৌর-চরণে—তাদের,–দেহ আছে বটে ব্রজবনে

ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে

ব্রজে তাদের বসতি বটে—কিন্তু,–ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
ব্রজের,–যুগল-বিলাসে ডুবে থেকে—ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
সেই চিত্র স্মরণ করে—ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
‘সেই নীলাচলে দেখে এসেছে—সেই চিত্র স্মরণ করে

ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
গৌর তাদের সর্ব্বস্ব-ধন
এই মনোবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে

শ্রীরূপের চৈতন্যাষ্টকে—এই মনোবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে

‘‘হা নাথ হা নাথ বলি’ ডাকে।’’

কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’

রূপ সনাতন গলা ধরি’—কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’

বলে,–আর কি দেখতে পাব হে

আমার,–সোণার গৌরাঙ্গ-প্রভু—আর কি দেখতে পাব হে
প্রাণ-গৌরাঙ্গ তোমায়—আর কি দেখতে পাব হে

[মাতন]

হরিবোলা রসের বদন—আর কি দেখতে পাব হে

‘‘হা নাথ হা নাথ বলি’ ডাকে।
‘‘ব্রজপুরে ঘরে ঘরে, মাধুকরী ভিক্ষা করে,’’

করেন,–ব্রজবনে মাধুকরী

রাজভোগ দূরে পরিহরি—করেন,–ব্রজবনে মাধুকরী

ব্রজে,–মাধুকরী মেগে খায়

তাদেরই চরিত্র তাদের পরিচয়—ব্রজে—মাধুকরী মেগে খায়

নরোত্তম কৈলেন প্রার্থনা
করব ব্রজে মাধুকরী

ষড়রস-ভোজন হরিহরি—করব ব্রজে মাধুকরী

এর আদর্শ শ্রীরূপ সনাতন

যে-প্রার্থনা কৈলেন ঠাকুর-নরোত্তম—এর আদর্শ শ্রীরূপ সনাতন

‘‘ব্রজপুরে ঘরে ঘরে, মাধুকরী ভিক্ষা করে,
এইরূপে কতদিনে থাকে।।
তাহা ছাড়ি’ কুঞ্জে কুঞ্জে, ভিক্ষা করি’ পুঞ্জে পুঞ্জে
ফলমূল করয়ে ভক্ষণ।’’

প্রভু,–পাঠায়েছেন দুইজনে

লুপ্ত-ব্রজ উদ্ধার-তরে—প্রভু,–পাঠায়েছেন দুইজনে
নিজ-শক্তি সঞ্চারিয়ে—প্রভু,–পাঠায়েছেন দুইজনে

ব্রজবনে বিহরে

গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে—ব্রজবনে বিহরে

সনাতন মনে মনে গণে
আমায় পাঠায়েছেন প্রভু

ব্রজের,–লুপ্তধন উদ্ধার লাগি’—আমায় পাঠায়েছেন প্রভু

আমি ত’ তা’ কিছু জানি না

কোথা’ কোন-লীলা-ভূমি—আমি ত’ তা’ কিছু জানি না

ভ্রমে,—গোসাঞি ব্রজের বনে বনে
ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

গৌর আজ্ঞা শিরে ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদের রে
গোসাঞি ব্রজবনে ফিরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদের রে
প্রভু পাঠায়েছেন মোরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদের রে

কোথা আছ,–কৃষ্ণের লীলাস্থলী
কোথা’ বা আছ হে

ওহে কৃষ্ণের লীলাস্থলী—কোথা’ বা আছ হে
তোমরা,–কোথা বা আছ হে কৃপা করে দাও পরিচয়
লীলাস্থলী তোমরা কে কোথায়—কৃপা করে দাও পরিচয়

প্রভু পাঠায়েছেন আমাদের

তোমাদের প্রকাশের তরে—প্রভু পাঠায়েছেন আমাদের

প্রভু পাঠায়েছেন মোরে

তোমাদের প্রকাশের তরে—প্রভু পাঠায়েছেন মোরে

কৃপা করে পরিচয় দাও তোমরা

তোমাদের,–প্রকাশ-তরে প্রভু দিয়েছেন আজ্ঞা—কৃপা করে পরিচয় দাও তোমরা
নৈলে,–কেমনে প্রভু-আজ্ঞা পালন কর্‌ব—কৃপা করে পরিচয় দাও তোমরা

কৃপা করে করাও স্ফুরণ

কিম্বা সাক্ষাৎ দাও দরশন—কৃপা করে করাও স্ফুরণ

এইরূপে ভ্রমে ব্রজবনে
এইরূপে ব্রজবনে ফিরে

দুই গোসাঞি অতি-কাতরে—এইরূপে ব্রজবনে ফিরে

মন নাই আহারেতে
ফলমূল ভক্ষণ করে

কেবল,–দেহরক্ষা করবার তরে—ফলমূল ভক্ষণ করে
‘কেবল,–দেহ রক্ষা করবার তরে’—
প্রভুর আজ্ঞা পালন করতে হবে—কেবল,–দেহ রক্ষা করবার তরে

ফলমূল ভক্ষণ করে

‘‘ফলমূল করয়ে ভক্ষণ।’’
‘‘উচ্চৈঃস্বরে আর্ত্তনাদে রাধাকৃষ্ণ বলি’ কাঁদে,
এইরূপে থাকে কতদিন।।’’

ব্যাকুল-ক্রন্দনের ফলে
দেখা দিলেন বিগ্রহরূপে

মদনমোহন-স্বরূপে—দেখা দিলেন বিগ্রহরূপে

‘‘কতদিন অন্তর্ম্মনা, ছাপ্পান্নদণ্ড ভাবনা,
চারিদণ্ড নিদ্রা বৃক্ষতলে।

শুধু,–মুখের কথায় কি গৌর মিলে

এমন করে,—তিলে তিলে না ভজিলে—শুধু,–মুখের কথায় কি গৌর মিলে
এমন করে না ডাকিলে—শুধু,—মুখের কথায় কি গৌর মিলে

‘‘স্বপ্নে রাধাকৃষ্ণ দেখে, নাম-গানে সদা থাকে,’’

তাদের,—বৃথা নিদ্রা নয় ভাই

‘‘স্বপ্নে রাধাকৃষ্ণ দেখে নাম-গানে সদা থাকে,
অবসর নাহি এক তিলে।।
কখনও বনের শাক, অলবণে করি’ পাক,
মুখে দেন দুই এক গ্রাস।’’

এমনও নিদর্শন আছে

সনাতনের বৈরাগ্যের—এমনও নিদর্শন আছে
মদনেমাহনের নিত্যভোগে—এমনও নিদর্শন আছে

আঙ্গাকড়ি নাম তার

শ্রীসনাতনের বৈরাগ্য প্রচার—আঙ্গাকড়ি নাম তার

‘‘ছাড়ি’ ভোগ-বিলাস, তরুতলে কৈলা বাস,
এক দুই তিন উপবাস।।’’

থাকেন গোসাঞি অনশনে

বিরহ জাগিলে পরে—থাকেন গোসাঞি অনশনে

‘‘সূক্ষ্ণ-বস্ত্র বাজে গায়, এবে ধুলায় লোটায় কায়,
কন্টকে বাজায়ে কভু পাশ।
এ রাধাবল্লভ-দাস, বড় মনে অভিলাষ,
কবে হব তাঁর দাসের দাস।।’’

তোমরা,–কোথা’ বা লুকালে

পরাণ-গৌরাঙ্গগণ তোমরা—সব,–কোথা’ বা লুকালে

একে একে সব কোথা’ লুকালে

পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—একে একে সব কোথা’ লুকালে
আমাদের,–কাল-কলির কবলে ফেলে—প্রাণ-গৌর লয়ে কোথা’ লুকালে

আমাদের,–কার কাছে রেখে গেলে

আমাদের,–দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই গো—কার কাছে রেখে গেলে

শুধাইতে কেউ নাই গো

মুখ মলিন দেখি’ দুঃখ জানি’—শুধাইতে কেউ নাই গো

কোলে নিতে কেউ নাই গো

মলিন-মুখ দেখি’ বাহু পসারি’—কোলে নিতে কেউ নাই গো
কেন বাপ কি হয়েছে বলে—কোলে নিতে কেউ নাই গো

জুড়াইবার ঠাঁই নাই গো

গৌর-কথা বলে শুনে—জুড়াইবার ঠাঁই নাই গো
‘গৌর-কথা বলে শুনে’—
দগ্ধ-হৃদয়ে শান্তকারী—গৌর-কথা বলে শুনে

জুড়াইবার ঠাঁই নাই গো
জুড়াইবার উপায় নাই

গৌর-কথা,—বলবার শুনবার প্রাণ নাই—জুড়াইবার উপায় নাই
একে একে পলাল সবাই—গৌর-কথা,–বলবার শুনবার প্রাণ নাই

শুনতে পাই না বলতে পাই না

প্রাণারাম গৌরাঙ্গ-কথা—শুনতে পাই না বলতে পাই না
কারে বলব দুঃখের কথা—শুনতে পাই না বলতে পাই না

কারে বল্‌ব দুঃখের কথা

‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর, শ্রীবাসাদি গদাধর,
হা,—নরহরি মুকুন্দ মুরারি।
সঙ্গে স্বরূপ রামানন্দ, হরিদাস প্রেমকন্দ,
দামোদর পরমানন্দ পুরী।।


ভাই রে,—যে সব করিলা লীলা,’’

মধুর নদীয়া আর নীলাচলে

সেই সুরধনী আর, এই সিন্ধু-কূলে—মধুর নদীয়া আর নীলাচলে

‘‘যে সব করিলা লীলা, শুনিতে গলয়ে শিলা,
তাহা মুঞি না পাইনু দেখিতে।’’

কিছুই দেখতে পেলাম না রে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের, প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না রে
‘প্রেমোন্মত্তকারী লীলা’—
ঝারিখণ্ড-পথে ব্রজে যেতে—প্রেমোন্মত্তকারী লীলা

সবার জাগাল স্বরূপ

দেখায়ে স্বরূপ জাগান-রূপ—সবার জাগাল স্বরূপ

কৈ,–দেখিতে ত’ পেলাম না

প্রেমে একাকার করা লীলা—কৈ—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘প্রেমে একাকার করা লীলা’—
দেখায়ে স্বরূপ জাগান-আকার-প্রেমে একাকার করা লীলা

কৈ,–দেখিতে ত’ পেলাম না

কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘কীর্ত্তন-নটন-লীলা’—
সুরধুনীর তীরে তীরে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
সুরধুনী-পুলিনে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
আমার,–চিতচোর প্রাণগৌরাঙ্গের—কীর্ত্তন-নটন-লীলা

‘‘ও,—‘‘গমন-নটন-লীলা,’’


ওগো আমার,–সীতানাথের আনানিধির—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–নদীয়া-বিনোদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–প্রাণ-শচীদুলালিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়ার—গমন-নটন-লীলা
সংকীর্ত্তন,—কেলিরস-বিনোদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
সংকীর্ত্তন,—রাসরস-উন্মাদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার, –নবদ্বীপ-পুরন্দরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রসময়-গৌরকিশোরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীরূপ-হৃৎকেতন-গোরার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীসনাতনের গতি-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–লোকনাথের হৃদ্‌বিহারীর—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গোপাল-ভট্টের প্রাণগৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—শ্রীজীব-জীবন-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–দাস-রঘুনাথের সাধনের ধনের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—সার্ব্বভৌমের চৈতন্যদাতার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—রাজা-প্রতাপরুদ্রের ত্রাণকারির—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গজপতি-উদ্ধারণের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রামরায়ের চিতচোরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—স্বরূপের সর্ব্বস্বধনের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—নিতাই-পাগল করা-গোরার—গমন-নটন-লীলা

[মাতন]

ও—‘‘গমন-নটন-লীলা,’’

চলে যেতে নেচে যায়

নাটুয়া মুরতি গৌর আমার—চলে যেতে নেচে যায়
আমার প্রাণগৌরাঙ্গের,–নাটুয়া-মুরতি নটন-গতি—চলে যেতে নেচে যায়
মহা,–ভাবনিধি-গৌরাঙ্গ আমার—চলে যেতে নেচে যায়
ভাবনিধি-গোরা,—ভাব-হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যায়

ও,–‘‘গমন-নটন-লীলা বচন-সঙ্গীতকলা,’’

সঙ্গীতেতে কথা কয়

রসের গোরা,–চলে যেতে নেচে যায়—সঙ্গীতেতে কথা কয়
ওগো আমার,–রসের গোরা চিতচোরা—সঙ্গীতেতে কথা কয়

গমনে নটন বচনে গান

নদীয়া-বিনোদ-গৌরাঙ্গের—গমনে নটন, বচনে গান

গমনই নটন, বচনই গান

শচীদুলাল-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমনই নটন, বচনই গান

চলতে নাচে বলতে গায়

কে দেখেছে কে শুনেছে কোথায়—চলতে নাচে বলতে গায়
রসময়—গৌরাঙ্গ-রায়—চলতে নাচে বলতে গায়

[মাতন]
সঙ্গীতেতে কথা কয়
যেন,—কত-শত-কোকিল কুহরিছে

পঞ্চমরাগ জিনি’ যেন,—কত-শত-কোকিল কুহরিছে

না না তাতে তুলনা হয় না
যেন, –অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে

জগত,–অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
গৌরহরি হরি বলিছে—যেন,—অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে

[মাতন]

ও,–‘‘মধুর-চাহনি আকর্ষণ।।’’

তারই আঁখি-মন হরিছে

একবার,–হরিবোলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি-মন হরিছে

সে অমনি ঢলে পড়ছে

ভাবনিধি যার পানে চাইছে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ছে
ভাবেতে অবশ হয়ে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ছে

অপরূপ গৌরাঙ্গ-রঙ্গ
রসের গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–বিলাসি-গৌরাঙ্গ নাচে

যে,–ঢলে পড়ে তারে বুকে ধরে—আমার,–বিলাসি-গৌরাঙ্গ নাচে

[মাতন]

ও,—‘‘মধুর-চাহনি আকর্ষণ।’’
ও,–‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ,’’

প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া

ওগো আমার,–রঙ্গিয়া-প্রাণগৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
ওগো আমার,–অনঙ্গ-মোহন-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
রঙ্গের মন্দির-গোরার—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
‘রঙ্গের মন্দির গোরা’—
নবীন-কামের কোঁড়া—রঙ্গের মন্দির গোরা

[মাতন]
প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া

ও, —‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ,’’

প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গশর

শর,–বরিষণের নাহি অবসর—প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর

শর,–বরষিছে নিরন্তর

নিজ,–পারিষদ-উপর শর—বরষিছে নিরন্তর

পারিষদ হইল জর জর

নিরন্তর শর-বরিষণে—পারিষদ হইল জর জর

‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ,’’

অভাবের সঙ্গ করে না

মহা,-ভাবনিধি-প্রাণ-গৌরাঙ্গ-অভাবের সঙ্গ করে না

ভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ

কম্প-অশ্রু-পুলকাদি—ভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ

নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ

অন্তরঙ্গ-ভাবুক-সঙ্গে—নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ

‘‘রসময় দেহেরি গঠন।। রে !’’

গৌর-কিশোর-বর

আরে আরে আরে আমার—গৌর-কিশোর-বর
আরে,–আরে আমার—গৌর-কিশোর-বর
আরে,–আরে আমার—গৌর-কিশোর-বর
রসে তনু ঢর ঢর—গৌর-কিশোর-বর
‘রসে তনু ঢর ঢর’—
শ্রী,—নবদ্বীপ-পুরন্দর—রসে তনু ঢর ঢর

[মাতন]
দেখা শুনা হল না

কারে বলব দুঃখের কথা—দেখা শুনা হল না
গমনে নটন বচনে গান—দেখা শুনা হল না

[মাতন]
কিছুই দেখতে পেলাম না রে

‘‘যে সব করিলা লীলা, শুনিতে গলয়ে শিলা,’’
তাহা মুঞি না পাইনু দেখিতে।’’

দেখিতে ত’ পেলাম না

পাষাণ-গলান-লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘পাষাণ-গলান-লীলা’—
মধুর-শ্রীনীলাচলে—পাষাণ-গলান-লীলা
জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—পাষাণ-গলান-লীলা
আমার,–চিতচোর-প্রাণগৌরাঙ্গের—পাষাণ-গলান-লীলা

দেখিতে ত’ পেলাম না
কিছুই পাই নাই

তখন,–ভাগ্যে জনম হয় নাই—কিছুই দেখতে পাই নাই

কার কাছে কাঁদব দুঃখের কান্না

কিছুই দেখতে পেলাম না—কার কাছে কাঁদব দুঃখের কান্না

দেখলাম কেবল লীলার সাক্ষী

পাষাণেতে পদচিহ্ন—দেখলাম কেবল লীলার সাক্ষী
দেখলাম না সে কমল আঁখি—দেখলাম কেবল লীলার সাক্ষী

অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে

ওযে’,–লীলায় শিলা গলেছে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
এই,–জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে

সেই-লীলার সাক্ষী দিছে

পাষাণে শ্রীপদচিহ্ন—সেই-লীলার সাক্ষী দিছে

পাষাণ-গলান-লীলা

‘‘গৌর-সুন্দর নটরাজ।’’

আরে আমার
আরে আরে আরে আমার
পরাণের পরাণ আমার

‘‘গৌর-সুন্দর নটরাজ।’’
‘‘শ্রীলজগন্নাথ-আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে
নীচে পরি’ ভাব-রত্ন-সাজ।।’’

ভাব-ভূষণে বিভূষিত

ভাবনিধি-শচীসূত-ভাব-ভূষণে বিভূষিত

একদিন আমার—গৌরহরি
করিছেন জগন্নাথ দরশন

গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বে দাঁড়ায়ে—করিছেন জগন্নাথ দরশন

রাধিকা-ভাবিত-মতি

ভাবনিধি গৌর আমার—রাধিকা-ভাবিত-মতি
জগন্নাথের বদন চেয়ে—রাধিকা-ভাবিত-মতি

করিছেন জগন্নাথ দরশন

‘‘বৈবর্ণ স্তব্ধতা আর, গদগদ বাক্যেচ্চার,’’

স্বর্ণ-বর্ণ হল বিবর্ণ

জগন্নাথের বদন চেয়ে—স্বর্ণ-বর্ণ হল বিবর্ণ

জ জ জ জ গ গ করে

জগন্নাথ বলতে নারে—জ জ জ জ গ গ করে

‘‘বৈবর্ণ স্তব্ধতা আর, গদগদ বাক্যোচ্চারে,
কম্প অশ্রু পুলক সঘর্ম্ম।
এই সপ্ত সাত্ত্বিক-ভাব, আর দুই অনুভাব,
হাস্য নৃত্য সব প্রেমধর্ম্ম।।’’

গৌর-অঙ্গে হল বেকত

সাত্ত্বিক-বিকার যত—গৌর-অঙ্গে হল বেকত

গৌর-অঙ্গ বিভূষিত

নানা,–ভাবাবলি-ভূষণেতে—গৌর-অঙ্গ বিভূষিত

বিরাম নাই, বিরাম নাই

অবিরল-নয়ন-ধারার—বিরাম নাই, বিরাম নাই
যেন,–শ্রাবণ-মেঘের ধারা—বিরাম নাই, বিরাম নাই

যেন,–পিচ্‌কারী—জলযন্ত্র-ধারা

প্রাণগৌরাঙ্গের নয়ন-ধারা—যেন,–পিচ্‌কারী-জলযন্ত্র-ধারা
এক এক ধারায় শত শত ধারা—যেন,–পিচ্‌কারী-জলযন্ত্র-ধারা

ভাসিল রে মুখ-কমল

অবিরল-নয়ন-ধারায়—ভাসিল রে মুখ-কমল

পড়িল হৃদয়-কমলে

মুখকমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদয়-কমলে
হৃদয়-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ-কমলে
চরণ-কমল পাখালিয়ে—নিম্ন-খাল পূর্ণ কৈল
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বদেশের—নিম্ন-খাল পূর্ণ কৈল
শ্রীগৌরাঙ্গের নয়ন-ধারায়—নিম্ন-খাল পূর্ণ কৈল

পাষাণ গলিয়া গেল

সেই গৌরের পদ-পরশে—পাষাণ গলিয়া গেল

পাষাণ-গলান গোরা

প্রাণ-ভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ-গলান গোরা

[মাতন]
কিছুই দেখতে পেলাম না রে
সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা

হায়রে,–‘‘তখনে না হইল জন্ম,’’

ভাই রে,–দুঃখের কথা কারে বা বলব

ভাই রে,–দুঃখের কথা কারে বা বলব—‘‘তখনে না হইল জন্ম’’

‘‘তখনে না হইল জন্ম, এবে ভেল ভব-বন্ধ,’’

তখন জনম হল না মোদের

যখন হল প্রকট-বিহার—তখন জনম হল না মোদের

তখন,–কেন জনম দিলি না বিধি

এখন,–সেই জনম দিলি যদি—তখন,–কেন জনম দিলি না বিধি

আমরা,–দেখলে তোর কি ক্ষতি ছিল

তখন কেন না জনম দিলি—আমরা,–দেখলে তোর কি ক্ষতি ছিল

প্রেম-পাথারে সাঁতার দিতাম

অকূল-পাথার শ্রীগৌরাঙ্গ—প্রেম-পাথারে সাঁতার দিতাম
নিতাই-তরঙ্গে নেচে নেচে—প্রেম-পাথারে সাঁতার দিতাম

সাঁতার ভুলে ডুবে যেতাম

দুর্ব্বসনা-তরঙ্গময়-সংসার—সাঁতার ভুলে ডুবে যেতাম
গৌর আমায় ধর বলে—সাঁতার ভুলে ডুবে যেতাম

‘‘সে না শেল রহি গেল চিতে।।’’

নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

সেই-লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গের,–লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
তুষানলের মত ধিকিধিকি—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

পাঁজর পুড়ে ঝাঁজর হল

আমরা,–হেসে খেলে বেড়াইছি বটে—পাঁজর পুড়ে ঝাঁজর হল
কারে বা দেখাব বল—পাঁজর পুড়ে ঝাঁজর হল

হা,–‘‘প্রভু সনাতন রূপ রঘুনাথ ভট্টযুগ,
ভূগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।’’

তোমরা সব কোথা বা গেলে
তোমরা সব কোথা লুকালে

হা,–পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—তোমরা সব কোথা লুকালে
আমাদের,–কালকলির কবলে ফেলে—তোমরা সব কোথা লুকালে

দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই গো

আমাদের,–কার কাছে রেখে গেলে—দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই গো

আমরা—কত না ডেকেছি
আমরা,–কত না খুঁজেছি

ভাই ভাই মিল ব্রজবনে গিয়ে—কত না খুঁজেছি

আমরা,–কত না ডেকেছি

তোমাদের বসতি-স্থানে গিয়ে—আমরা,–কত না ডেকেছি
কোথা আছ,–প্রভু রূপ সনাতন বলে—আমরা,–কত না ডেকেছি
কোথা আছ,–ভট্টযুগ শ্রীজীব গোসাঞি বলে—আমরা,–কত না ডেকেছি
কোথা আছ—লোকনাথ ভূগর্ভ গোসাঞি বলে—আমরা,–কত না ডেকেছি
আমরা,–কত না খুঁজেছি—কত না ডেকেছি
শ্রী,–রাধাকুণ্ড-তীরে গিয়ে—কত না ডেকেছি

আমরা,–কত না কেঁদেছি

কোথায় আছ দাস-গোসাঞি বলে—আমরা,–কত না কেঁদেছি

কোথায় আছ দাস-গোসাঞি

এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর—কোথায় আছ দাস-গোসাঞি

[মাতন]
কত না ডেকেছি
কেউ ত’ দেখা দিলে না
তখন,–মনে মনে অনুমান করলাম

বৃন্দাবনে তোমাদের দেখা না পেয়ে—তখন

গিয়েছি তোমরা সবাই মিলে

ইষ্টগোষ্ঠী করবার তরে—গিয়েছ তোমরা সবাই মিলে
দাস-রঘুনাথের কাছে—গিয়েছ তোমরা সবাই মিলে

অনুমানে গেলাম সবাই মিলে

শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—অনুমানে গেলাম সবাই মিলে

ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম

কোথায় দাস-গোসাঞি বলে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
একবার দেখা দাও বলে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম

একবার দেখা দাও

এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর—একবার দেখা দাও

[মাতন]
দাস-গোসাঞি দেখা দাও
কোথা বা কাঁদছ

কবিরাজের গলা ধরে—কোথা বা কাঁদছ
গুঞ্জামালা,–গিরিধারী বুকে ধরে—কোথা বা কাঁদছ
কোথা গৌর গৌর বলে—কোথা বা কাঁদছ

কেউ ত দেখা দিলে না

‘‘ভূগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।
এ সকল প্রভু মিলি,’ যে সব করিলা কেলি,
বৃন্দাবন ভক্তগণ-সাথ।।’’

কারো দেখা পেলাম না রে
হায় রে—কিছুই পেলাম না রে

প্রাণ,–গৌর লীলা তার গণের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
সবে হৈল অদর্শন—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
পরাণ-গৌরাঙ্গ-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
গৌরাঙ্গের,–ভকত-বাৎসল্য-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে

ভকত-বাৎসল্যের সাক্ষী

এই হরিদাসের সমাধি—ভকত-বাৎসল্যের সাক্ষী

[মাতন]
দেখিতে ত’ পেলাম না

প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–ভকত-বাৎসল্য লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না

এই ত তার নিদর্শন

ভাই রে তোমরা কর দর্শন—এই ত তার নিদর্শন

প্রত্যক্ষ নিদর্শন

ভক্ত-বাৎসল্য—লীলার—প্রত্যক্ষ নিদর্শন
শ্রীহরিদাসের সমাধি—প্রত্যক্ষ নিদর্শন

ভিক্ষা করি’ উৎসব কৈলেন

সিংহদ্বারে আঁচল পেতে—ভিক্ষা করি’ উৎসব কৈলেন
শ্রীহস্তেতে সমাধি দিলেন—ভিক্ষা করি’ উৎসব কৈলেন

কিছুই দেখতে পেলাম না
কোথা প্রাণ শচীনন্দন

এই ত তোমার,–ভক্ত-বাৎসল্যের নিদর্শন—কোথা’ প্রাণ শচীনন্দন

দেখছি কেবল লীলার সাক্ষী

এই শ্রী,–হরিদাসের সমাধি—দেখছি কেবল লীলার সাক্ষী
দেখতে পেলাম না সে কমল-আঁখি—দেখছি কেবল লীলার সাক্ষী

শ্রীগুরু-বাক্য হৃদে ধরে

আজও সেই-লীলা হতেছে—শ্রীগুরু বাক্য হৃদে ধরে

দগ্ধ-হৃদয় জুড়াব বলে
এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে

শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—এলাম আমার-ভাই ভাই মিলে
বড় আশায় বুক বেঁধে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
এই মধুর-নীলাচলে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
সেই,—লুকান-খেলা দেখব বলে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে

বড় সাধ ছিল দেখব বলে

শ্রীগুরুদেবের পিছে দাঁড়ায়ে—বড় সাধ ছিল দেখব বলে
রথের আগে গৌরের নটন-রঙ্গ—বড় সাধ ছিল দেখব বলে

বড় সাধ দেখব বলে
নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

কারে বলব দুঃখের কথা—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

আজও হতেছে সেই লীলা

শ্রীগুরু-মুখে শুনেছি মোরা—আজও হতেছে সেই লীলা

এসেছি সেই আশা করে

রথ-যাত্রায় নীলাচলে—এসেছি সেই আশা করে
রথযাত্রাকালে ভাই ভাই মিলে—এসেছি সেই আশা করে

বড় সাধ দেখব বলে

ও,– ‘‘নীলাচলে যব মঝুনাথ। দেখিব আপনে জগন্নাথ।।
রামরায় স্বরূপ লইয়া। নিজ-ভাব কহে উঘাড়িয়া।।
মোর কি হইবে হেন দিনে। সে কথা কি শুনিব শ্রবণে।।
পুনঃ কিয়ে জগন্নাথ-দেবে। গুণ্ডিচা-মন্দিরে চলি’ যাবে।।
প্রভু মোর সাত সম্প্রদায়। করিবে কীর্ত্তন উভরায়।।
মহানৃত্য-কীর্ত্তন-বিলাস। সাত ঠাঁই হইবে প্রকাশ।।’’

জগন্নাথের রথের আঘে

হায় রে,–‘‘মোর কি এমন দশা হব। সে লীলা কি নয়নে হেরিব।।’’

এই,—আশা করে মনে মনে
এসেছিলাম ভাই ভাই মিলে
বড় সাধ দেখব বলে

রথের আগে গৌর-নর্ত্তন—বড় সাধ দেখব বলে

ও,– ‘‘নাচে শচীনন্দন, দেখে রূপ সনাতন,’’

দেখে রূপ সনাতন

রাধা-প্রেমের কত বল তাই—দেখে রূপ সনাতন
‘রাধা-প্রেমের কত বল’—
নাগরে নাগরী কৈল—রাধা-প্রেমের কত বল

[মাতন]
তাই,–দেখে রূপ সনাতন

‘‘গান করে স্বরূপ দামোদর।
গায় রায়-রামানন্দ, মুকুন্দ মাধবানন্দ,’’


ভাবনিধির ভাব জেনে

চেয়ে,–মহাভাব-প্রকটিত-বদন-পানে—ভাবনিধির ভাব জেনে
‘‘গায় রায়-রামানন্দ, মুকুন্দ মাধবনন্দ
বাসুঘোষ গোবিন্দ শঙ্কর।।

প্রভুর দক্ষিণ-পাশে, নাচে নরহরি দাসে,
বামে নাচে প্রিয় গদাধর।
নাচিতে নাচিতে প্রভু, আউলাইয়া পড়ে কভু,
আবেশে ধরয়ে দুঁহার কর।।
নিত্যানন্দ-মুখ হেরি’, বলে পহুঁ হরি হরি,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে উচ্চৈঃস্বরে।
স্মঙরি শ্রীবৃন্দাবন, প্রাণ করে উচাটন,’’

এই-ভাবে ভোরা গোরা

জগন্নাথের বদন হেরে—এই-ভাবে ভোরা গোরা

যেন,–পেয়েছে নব-বৃন্দাবনে

আপন-পরাণ-ধনে—যেন,–পেয়েছে নব-বৃন্দাবনে
প্রভাস-মিলনে যেন—পেরেছে নব-বৃন্দাবনে

পেয়েও আশা মিটছে না
আক্ষেপে করিছেন উক্তি

‘‘সেই তুমি সেই আমি সে নব-সঙ্গম হে।
তথাপি আমার মন হরে বৃন্দাবন হে।।’’
তাই,–‘‘স্মঙরি শ্রীবৃন্দাবন, প্রাণ করে উচাটন,
আবেশে ধরয়ে রাযের করে।।’’

বলে,–এ-দাসীরে কৃপা কর

স্বরূপ-রামরায়ের,–বদন-পানে চেয়ে বলে—এ-দাসীরে কৃপা কর

এ-দাসীরে সদয় হও

বলে,–বৃন্দাবনে কর লীলা—এ-দাসীরে সদয় হও

[মাতন]
দেখিতে ত’ পেলাম না

রথের আগে কত খুঁজিলাম—দেখিতে ত’ পেলাম না
কেঁদে কেঁদে ফিরে এলাম—দেখিতে ত’ পেলাম না

কারে বলব দুঃখের কথা
দেখিতে ত’ পেলাম না
ব্যাকুল হয়ে কত ডা’কলাম

রথের আগে কত খুঁজলাম—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
কোথা’,–প্রভু রূপ সনাতন বলে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম

কোথা প্রভু রূপ সনাতন

কোথা’,–দাঁড়ায়ে দেখছ গৌর-নটন—কোথা’ প্রভু রূপ সনাতন

কোথা’ দাঁড়ায়ে দেখছ

চিতচোর-প্রাণগৌরাঙ্গে—কোথা’ দাঁড়ায়ে দেখছ

কোন সাড়া পেলাম না
হতাশ-প্রাণে ফিরে এসেছি
কেউ ত’ কথা কইলে না

দেখা দিলে না দেখালে না—কেউ ত’ কথা কইলে না

বসতি কর তোমরা দুজনে

নীলাচলে এলে—এই হরিদাসের স্থানে—বসতি কর তোমরা দুজনে

বসতি কর একস্থানে

তোমাদের,–একই ভাব তিন-জনের—তাই,–বসতি কর একস্থানে

আছ ত’ এখানে

ত্রিকাল-সত্য-লীলায় এসেছে দুজনে—আছ ত’ এখানে

একবার দেখাও হে
দেখাও প্রাণ-শচীনন্দন

কোথা’ প্রভু রূপ সনাতন—দেখাও প্রাণ-শচীনন্দন

কারে বলব দুঃখের কথা
সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা
কিছুই দেখতে পেলাম না

প্রাণ,–গৌর-লীলা তার-গণের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
‘‘সবে হৈলা অদর্শন,’’
ভাই রে,–আমাদের দুর্ভাগ্য—দোষে—

‘‘সবে হৈলা অদর্শন,’’ ‘‘শুন্য ভেল ত্রিভুবন,’’

একে একে সবে লুকাইল

যারা গৌর-কথা শুনাইতে ছিল—তাঁরা,–একে একে সবে লুকাইল

‘‘অন্ধ ভেল সবাকার আঁখি।’’

আঁখি আর,–কেমন করে দেখবে বল

আঁখি,–তারা হারাল জ্যোতি হারাল,–আঁখি আর,–কেমন করে

দেখবে বল
আঁখি,–তারা-গৌরগণ হারাল

দর্শনশক্তি-গৌর হারাল—আঁখি,–তারা-গৌরগণ হারাল

আঁখি আর,–কেমন করে দেখবে বল
না না,–সে আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল

গৌর-লীলা,–দর্শনে যে বঞ্চিত হল—তার,–আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল
গৌরগণের—দর্শনে যে বঞ্চতি হল—তার,–আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল

দেখবার কি আছে আর দেখবে বল
নয়ন-রঞ্জন সব লুকাল

শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গগণ—নয়ন-রঞ্জন সব লুকাল

আঁখি মিলে কিবা দেখব
আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল

‘‘কাহারে কহিব দুঃখ,’’

ব্যাথার ব্যথী কে বা আছে

‘‘কাহারে কহিব দুঃখ, না দেখাব ছার মুখ,’’

আমার,–মুখ কেউ দেখো না

আমি,–গুরু-গৌরাঙ্গ-বৈমুখী প্রাণ—আমার,–মুখ কেউ দেখো না
দেখলে আমার মত হবে—আমার মুখ কেউ দেখো না

দুই-লীলায় বঞ্চিত আমি

গৌরলীলা আর গুরুলীলা—দুই-লীলায় বঞ্চিত আমি
‘‘আছি যেন মরা পশু পাখী।।’’

আমার,–মনুষ্যত্বের গন্ধ নাই রে

দেখতে মানুষের আকার বটে—কিন্তু আমায়,–মনুষ্যত্বের গন্ধ নাই রে

মানুষ হলে ভালবাসা থাকত
একদিনে কি প্রাণ থাকত
তা হলে,–এক-তিল কি প্রাণ থাকত

যদি মনুষ্যত্ব থাকত—তা হলে,–এক-তিল কি প্রাণ থাকত
সে সুখ হতে বঞ্চিত হয়ে—এক-তিল কি প্রাণ থাকত
প্রাণ-গৌর-লীলায় বঞ্চিত হয়ে—এক-তিল কি প্রাণ থাকত
সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে—এক-তিল কি প্রাণ থাকত
সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে,’—
অদোষ-দরশী শ্রীগুরুদেবের—সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে

এক-তিল কি প্রাণ থাকত
পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে

যদি আমি মানুষ হতাম—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে
হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে

[মাতন]

‘‘আছি যেন মরা পশু পাখী।।
অন্ন জল বিষ খাই, কৈ,–মরিয়া নাহিক যাই,’’

এখনও অন্ন জল রুচিছে

একে একে সবাই ছেড়ে গেছে—এখনও অন্ন জল রুচিছে
একে একে সবাই ছেড়ে গেছে’—
আমার বলতে যারা ছিল—একে একে সবাই ছেড়ে গেছে
আমার বলতে যারা ছিল’—
যারা মুখ দেখে দুঃখ বেছে নিত—আমার বলতে যারা ছিল
যারা ভাল বাসবে তারা গেল চলে—আমার বলতে যারা ছিল

একে একে সবাই ছেড়ে গেছে

শ্রীগুরু –গৌরাঙ্গগণ—একে একে সবাই ছেড়ে গেছে
সকল সুখের আশা ফুরায়েছে—একে একে সবাই ছেড়ে গেয়ে

এখনও অন্ন জল রুচিছে

‘‘অন্ন জল বিষ খাই, কৈ,–মরিয়া নাহিক যাই,
ধিক্‌ ধিক্ নিলাজ পরাণ।’’

এ ছার-জীবনে শতধিক রে

একে একে সবাই ছেড়ে গেছে—এ ছার-জীবনে শতধিক রে

আর,–কি সুখে বা আছ রে

ওরে রে নিলাজ-পরাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
ওরে,–গুরু-গৌর-বৈমুখী প্রাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
একে একে,–সবে যদি গেল ছেড়ে—আর,–কি সুখে বা আছ রে
সে’ সুখে বঞ্চিত হয়ে—আর,–কি সুখে বা আছ রে
বঞ্চিত হয়ে সে’ সুখ হতে—আর,–কি সুখে বা আছ রে
‘বঞ্চিত হয়ে সে’ সুখ হতে—
এখন,–পড়ে পড়ে মায়ার লাথি খেতে—বঞ্চিত হয়ে সে সুখ হতে
বাসনার কিঙ্কর হয়ে এখন,–পড়ে পড়ে মায়ার লাথি খেতে—

বঞ্চিত হয়ে সে’ সুখ হতে
আর,–কি সুখে বা আছ রে

ওরে রে কৃতঘ্ন পরাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে

গেলেই ত’ ভাল রে

ওরে রে কৃতঘ্ন পরাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
গেলেই ত’ ভাল রে
এখনও ভালে ভালে—গেলেই ত’ ভাল রে
‘এখনও ভালে ভালে’—
না জানি কি আছে কপালে—এখনও ভালে ভালে

এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে
প্রাণ তোরে মিনতি করি

‘‘যতক্ষণ এই দেহে থাক, হা গুরু গৌর বলে ডাক,
তবে যদি যাও সেই ভাল।।’’

নিশিদিশি ডাক রে

হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—নিশিদিশি ডাক রে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে

ওরে রে কৃতঘ্ন পরাণ—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
‘অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি’—
অদোষ-দরশী শ্রীগুরুদেবের—অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেবের –অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি

ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
কি বলব তোমার গুণের কথা

হা শ্রী গুরুদেব—কি বলব তোমার গুণের কথা

বিষয়-বিষ-কূপে ডুবে ছিলাম
জোর করে তুলে আনিলে

কৃপারজ্জু কেশে বেঁধে—জোর করে তুলে আনিলে
বিষয়-সংসার-কূপ হতে—জোর করে তুলে আনিলে

নীলাচলে নিয়ে এলে

এই রথযাত্রাকালে—নীলাচলে নিয়ে এলে

কিছুই ত’ জানতাম না

কোথা নীলাচল কে জগন্নাথ—কিছুই ত’ জানতাম না।
এই নীলাচলে গৌরের কিবা লীলা—কিছুই ত’ জানতাম না

সঙ্গে করে লয়ে এলে

সংসার-কূপ হতে তুলে—সঙ্গে করে লয়ে এলে
রথযাত্রায় নীলাচলে—সঙ্গে করে লয়ে এলে

গৌরলীলা জানাইলে

ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—গৌরলীলা জানাইলে

আবার,–অপ্রকটে করিছ কত কৃপা
অমূল্য-নিধি দান কৈলা

এই শ্রী,–হরিদাসের সমাধি-সেবা—অমূল্য-নিধি দান কৈলা
জেনেও সম্পূর্ণ অযোগ্যতা—অমূল্য—নিধি দান কৈলা

মায়া-গুরুর সেবা দিলে

মায়ার লাথি খাওয়া স্বভাব জেনেও—মায়া-গুরুর সেবা দিলে

তোমার কৃপার যাই বলিহারি

হা শ্রীগুরুদেব,–অহৈতুকী-কৃপাকরী—তোমার কৃপার যাই বলিহারি

দেখাবে বলে বলেছিলে

ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে—দেখাবে বলে বলেছিলে

লুকাইয়ে করছ খেল।

এসে অবধি খুঁজে বেড়ালাম—তুমি,–লুকাইয়ে করছ খেলা
প্রাণ-গৌর লয়ে এই নীলাচলে—লুকাইয়ে করেছ খেলা

একবার দেখা দাও

পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—একবার দেখা দাও
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও

দেখা দাও প্রাণ-গৌর-সঙ্গে
হৃদিপটে এ্যাঁকে লব

শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদিপটে এ্যাঁকে লব

[মাতন]
পাগল হয়ে বেড়াব

ভাই ভাই একপ্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াব

এই কৃপা কর হে
যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি

তোমার অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি—যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি

যেন,–প্রাণভরে গান করি

তোমার চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণভরে গান করি
তোমার,–কৃপাদত্ত-নামাবলী—যেন,–প্রাণভরে গান করি

যারে দেখি তারে বলি
কন্ঠহার কর রে

শ্রীগুরু-দত্ত নামাবলী—কণ্ঠহার কর রে

পাগল হয়ে গাও রে

পাগল প্রভু হৃদে ধরে—পাগল হয়ে গাও রে
ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে গাওরে

যারে দেখব তারে বলব

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে নাম।।’’

[মাতন]

‘‘গৌরহরি বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।’’ [মাতন]


প্রেমসে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু-নিতাই-শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত-শ্রীরাধারাণী-কী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন শ্রীনিতাই-চাঁদ-কী জয় !
করুণাসিন্ধু গৌরভক্তবৃন্দ-কী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তন-কী জয় !
খোল-করতাল-কী জয় !
শ্রীনবদ্বীপ-ধাম কী জয় !
শ্রীনীলাচল-ধাম-কী জয় !
শ্রীবৃন্দাবন-ধাম-কী জয়!
চারি-ধাম-কী-জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয় !
শ্রীশ্রীহরিদাস ঠাকুর মহারাজ-কী জয়!
শ্রীশ্রীসনাতন গোস্বামিপাদ-কী জয় !
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব-কী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন—
শিশু-পশ—পালক বালক-জীবন শ্রীমদ্‌ রাধারমণ-কী জয় !
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ