(গুরুপূর্ণিমা)
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
(১)
বিষাদ ভাবয়ে মনে মনে।’’
শ্রীরূপের বৈরাগ্যকালে—শ্রীসনাতন বন্দীশালে
সনাতন বন্দীশালে—আক্ষেপিছেন এইভাবে
মো অধমে না কৈলা স্মরণে।।’’
শ্রীরূপেরে করুণা করি’—তুমি,–ত্রাণ কৈলা গৌরহরি
আমি,–বন্দী হইলাম বন্দীশালে—আমাকে না স্মরণ কৈলে
গৌরহরি দয়া করে—রূপেরে উদ্ধার কৈলে
সংসার-পারাবার হতে—রূপেরে উদ্ধার কৈলে
এ-অধমে কি ভুলে গেলে—রূপের উদ্ধার কৈলে
ঘুচিত মায়ার বন্ধনে—যদি পড়িতাম তোমার স্মরণে
অপার,—করুণা-বারিধি গৌরহরি—না না প্রভু,—
আমার,–কর্ম্মফল ভোগ করছি
তোমার কোন দোষ নাই ছিঃ ছিঃ –আমার,–কর্ম্মফল ভোগ করছি
আপন-দোষে বঞ্চিত আমি—আমার,–কর্ম্মফল ভোগ করছি
আমায়, —‘‘রাখিয়াছে কারাগারে ফেলি’।।’’
কোন দোষ নাই তোমার—নিজ-কর্ম্মে নিজে বাঁধা
অধিকার নাই ছিঁড়ে যাবার—নিজ-কর্ম্মে নিজে বাঁধা
‘‘আপনে করুণা-পাশে, দৃঢ় করি ধরি’ কেশে,
চরণ-নিকটে লেহ তুলি।।’’
বন্দীশালে ব্যাকুল হয়ে—বিলাপিছেন সনাতন
বন্দীশালে সনাতন কাঁদে—আর আমার কেউ নাই হে
গৌরহরি তোমা বিনে—আর আমার কেউ নাই হে
এই-সংসার,–কূপ হতে তুলে নিতে—আর আমার কেউ নাই হে
দারুণ,–সংসার-কূপ হতে তুলতে—আর আমার কেউ নাই হে
করুণ-স্বরে সনাতন কাঁদে—আর আমার কেউ নাই হে
পতিতপাবনে তুমি বিনে—আর আমার কেউ নাই হে
গৌরহরি দয়া করি’—চরণ-নিকটে লেহ তুলি’
আর আমায় রেখো না ফেলি’—চরণ-নিকটে লেহ তুলি’
তুমি,–সকলই জান তবু জানাই—আমার,–সেই দশা হয়েছে প্রভু
হা গৌর প্রাণ গৌর—সেই দশা হয়েছে আমার
সম্মুখে সাধিল ব্যাধ বাণ।
কাতরে হরিণী ডাকে, পড়িয়া বিষম পাকে,’’
আমার,–সেই দশা হয়েছে প্রভু
আমার সেই,–হরিণীর দশা হয়েছে প্রভু
আমার,–সেই হরিণীর দশা হয়েছে
আমার যাবার,–উপায় নাই কোন-দিকে—আমার,–সেই-হরিণীর দশা হয়েছে
আমায়,–এ-বিপদে উদ্ধার কর—আমার,–সেই হরিণীর দশা হয়েছে
আমায়,–এ-বিপদে উদ্ধারিতে—গৌর,–তোমা বিনে কে আছে জগতে
‘‘জগাই মাধাই হেলে, বাসুদেব অজামিলে,
অনায়াসে করিলা উদ্ধার।’’
সেই ভরসায় দাবী করি—পতিত-উদ্ধার প্রভু তুমি
তোমা বিনে নাহি হেন আর।।’’
আমার,–আর কেউ নাই গৌরহরি
এ-বিপদে ত্রাণকারী—আমার,–আর কেউ নাই গৌরহরি
তোমা বিনে ও করুণা-বারিধি—আমার,–আর কেউ নাই গৌরহরি
সনাতন বন্দীশালে—এইরূপে বিলাপিছেন
এইরূপে বন্দীশালে—বিলাপিছেন সনাতন
পাত্রী দিলা রূপের লিখন।’’
সনাতন কাঁদে কাতরে—আর কি প্রভু রইতে পারে
শ্রীরূপের পত্রী-দ্বারে—সনাতনে আকর্ষিলেন
সংসারে অনিত্যতা-সূচক—শ্রীরূপের পত্রী-দ্বারে
যদুপতেঃ ক্ক গত মধুপুরী
এই সেই পত্রীর মর্ম্ম
ত্বরা করি’ আইস হে
নশ্বর জগত বটে—ত্বরা করি’ আইস হে
কৃষ্ণ-ভজন কর্ত্তব্য জীবের—ত্বরা করি’ আইস হে
এ-সংসার-পারাবারের—অনিত্যতা-বার্ত্তা জানায়ে
এ-রাধাবল্লভ-দাসে, মনে হইল আশ্বাসে,’’
শ্রীরূপের পত্রী পেয়ে—আশ্বাস হল সনাতন মনে
শ্রীগৌরাঙ্গের আজ্ঞা জেনে—আশ্বাস হল সনাতন মনে
(২)
পাত্সার উজীর হৈয়াছিলা।।’’
শ্রীরূপের পত্রী পাইয়া, বন্দী হইতে পলাইয়া,’’
গৌরহরি ডেকেছেন তারে—আর কি সনাতন রইতে পারে
‘গৌরহরি ডেকেছেন, তারে’—
শ্রীরূপের পত্রী-দ্বারে—গৌরহরি ডেকেছেন তারে
তার কি বন্ধন থাকতে পারে
গৌরহরি ডেকেছেন যারে—তার কি বন্ধন থাকতে পারে
গৌর বেঁধেছে যারে নয়ন কোণে—বেঁধে রাখবে তারে কোন-বন্ধনে
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের পাগল—আর কি রহিতে পারে
কাশীপুরে গৌরাঙ্গ ভেটিলা।।’’
প্রভু গিয়াছিলেন বৃন্দাবন—শুনিয়াছিলেন সনাতন
ঝারিখণ্ড-পথ দিয়ে—গিয়াছিলেন বৃন্দাবন
মিলিয়াছেন শ্রীরূপের সাথে
প্রয়াগে ত্রিবেণী-তীরে—মিলিয়াছেন শ্রীরূপের সাথে
ফিরিতেছেন নীলাচলে
এত শুনি সনাতন
পাগল হয়ে ছুট্লেন পথে
মুক্ত হয়ে বন্দী হতে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে
প্রাণ-গৌরাঙ্গ-অনুরাগে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে
দীনহীন-কাঙ্গালের বেশে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—পাগল হয়ে ছুটলেন পথে
কতক্ষণে প্রভুর দেখা পাই—মনে মনে গণে সদাই
আহার নাই নিদ্রা নাই—সনাতন দেহ-স্মৃতি নাই
প্রাণ-গৌরাঙ্গ-অনুরাগে—অনশনে শীর্ণ তনু
আহার নাই নিদ্রা নাই—চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল
দুনয়নে বহে শতজল—চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল
দুনয়নে বহে ধারা অবিরল—চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল
সোণার গৌর প্রভু বল-ে-চলেছে গৌর-প্রেমের পাগল
হা,–গৌর বলে কাঁদতে কাঁদতে—উপনীত কাশীধামে
অজ্ঞাত-আকর্ষণে—উপনীত কাশীধামে
সনাতনে কাশীধামে—কে যেন নিল টেনে
ব্রজপুরী হতে কাশীপুরী—এসেছেন প্রাণ-গৌরহরি
প্রাণে প্রাণে টান পড়েছে—বুঝি,–সেই টানে আপনি গেছে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের আকর্ষণে—সনাতন,–উপনীত কাশীধামে
প্রভু আছেন এইখানে
প্রভু আছেন কাশীধামে
শ্রী,–চন্দ্রশেখর—আচার্য্যের ঘরে—প্রভু আছেন কাশীধামে
শ্রী,-চন্দ্রশেখর-আচার্য্যের ভবন—ত্বরা করি’ গেলেন সনাতন
করবে বলে প্রাণ-গৌর দরশন—ত্বরা করি’ গেলেন সনাতন
শ্রী,–চন্দ্রশেখর-আচার্য্যের ঘরের—বসিলেন গিয়া দ্বারদেশে
প্রাণ-গৌর-চরণ স্মরিয়ে—বসিলেন গিয়া দ্বারদেশে
হঠাৎ,–প্রাণ যেন কেমন হল
প্রাণে প্রাণে টান পড়িল তাই—হঠাৎ,–প্রাণ যেন কেমন হল
তার প্রাণের সনাতন এসেছে—জানলেন প্রভু প্রাণে প্রাণে
এসেছে আমার সনাতন—জানলেন প্রভু প্রাণে প্রাণে
আজ্ঞা দিলেন একজনে
যাও যাও ত্বরা করে
এই ঘরের দুয়ারে—যাও যাও ত্বরা করে
কে সেথা বসে আছে—দেখে এস দ্বাদেশে
এক-বৈষ্ণব বুঝি বসে আছে—দেখে এস দ্বারদেশে
ত্বরা করি’ দেখ গিয়ে—এক-বৈষ্ণব আছে বসিয়ে
ত্বরায় দেখ বাহিরে গিয়ে—এক-বৈষ্ণব আছে বসিয়ে
বার্ত্তাবহ গেলেন ত্বরা করে—মহাপ্রভুর আজ্ঞা পেয়ে
এক ফকীর দীনবেশে—দেখিলেন বসে আছে
আসি’,–নিবেদিলেন প্রভুর কাছে
বৈষ্ণব নয় এক দরবেশ আছে—আসি’,–নিবেদিলেন প্রভুর কাছে
এক দরবেশ বসে আছে—আসি’,–নিবেদিলেন প্রভুর কাছে
তার,–নিরন্তর ভাবাবেশে—দ্বারে আছে এক দরবেশ
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—ভাসে দুটী নয়ন-জলে
জানিলেন প্রভু প্রাণে প্রাণে
এ আমারই সনাতন বটে
আসিয়াছে কাঙাল সেজে—এ আমারই সনাতন বটে
সনাতন আসিয়াছে দুয়ারে—আর কি প্রভু রইতে পারে
আগুসরি গেলেন ছুটে
হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে—আগুসরি গেলেন ছুটে
সনাতনে মিলিবার তবে—আপনি আসিলেন বর্হিদ্বারে
এস’ আমার সনাতন বলে—বাহু পসারি’ ছুটিলেন প্রভু
চিনিতে পারিলেন
আমার প্রভুর কণ্ঠস্বর—চিনিতে পারিলেন
সম্মুখে সেই প্রাণের ঠাকুর—অমনি চেয়ে দেখলেন
সনাতন নিজ-প্রাণনাথে—দূরে হতে দেখতে পেয়ে
এতদিনে দয়া হল কি বলে—ব্যাকুল হয়ে উঠল কেঁদে
‘‘ছেঁড়া বস্ত্র অঙ্গে-মলি’’
নিকটে যাইতে অঙ্গ হালে।।’’
ভাসে নয়ন জলে
শ্রীগৌরাঙ্গ-বদন চেয়ে—বয়ান ভাসে নয়নজলে
এত অনুরাগ না হলে—মুখের কথায় কি গৌর মিলে
দুই গুচ্ছ তৃণ করি’, একগুচ্ছ দন্তে ধরি,’’
প্রাণ-গৌরাঙ্গগণের দৈন্যের—বালাই লয়ে মরে যাই
গরব করে বলতে পারি—গৌরবর্ণের নিজস্বধন
ভক্তিরাজ্যের দৈন্যরতন—গৌরগণের নিজস্বদন
প্রাণ-গৌরাঙ্গের দাস বিনে—এ দৈন্য কি আর জগতে আছে
গৌরহরি বশ এই দৈন্যেতে—এ দৈন্য কি আর জগতে আছে
পড়িলা গৌরাঙ্গ-পদতলে।।’’
কোন অপরাধ নাই তবু—যেন,–চির অপরাধীর মত
পেয়েও সদা মানে অভাব—গৌরদাসের এই ত’ স্বভাব
ভাসি’ দুটী নয়নজলে—পড়িল গৌর-পদতলে
দরবেশ-রূপ দেখি, প্রভুর সজল আঁখি’’,
সনাতনের বেশ দেখি’—প্রভুর ছল ছল আঁখি
আমার প্রাণ সনাতন—আইস আইস আইস বলে।
অমিয়া মাখান বোলে—আইস আইস আইস বলে।
প্রেমভরা নেত্রে হেরে—আইস আইস আইস বলে
ভাসি দুটী নয়নজলে—আইস আইস আইস বলে
‘‘সনাতনে করে কোলে,’’
আইস সনাতন আইস বলে—করুণা-বাহু পসারিয়ে
প্রভু আমার,–সনাতনে যায় করিতে কোলে—করুণা-বাহু পসারিয়ে
মো অধমে স্পর্শ কি লাগিয়া।।
অস্পৃশ্য পামর দীন, দূরাচার মন্দ হীন,
নীচ-সঙ্গে নীচ ব্যবহার।
এহেন পামর-জনে, স্পর্শ প্রভু কি কারণে,
যোগ্য নহে তোমা স্পর্শিবার।।’’
আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
কাতরে সনাতন বলে—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
অস্পৃশ্য পামর মুঞি—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
যবন-সেবী পামর আমি—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
আমি অস্পৃশ্য বিষয়-সেবী—আমি,–তোমা’ স্পর্শের যোগ্য নই
দৈন্য-ভূষণে ভূষিত অনুক্ষণ—আমার পরাণ গৌরাঙ্গগণ
প্রাণ-গৌরগণ যত দৈন্য-ভূষণে সদা ভূষিত
তারা আপনাকে হীন মানে
জগৎ তাদের সর্ব্বোত্তম দেখে—কিন্তু,–তারা আপনাকে হীন মানে
জগজীবে সর্ব্বোত্তম দেখে—আর,–তারা আপনাকে হীন মানে
প্রাণ-গৌরগণ-সবাকার-দৈন্য সদাই অলঙ্কার
গৌরহরি সনাতনের—মানিলেন না কোন বারণ
বাহু পসারি’ গৌরহরি—সনতনে করেন কোলে
গৌরহরি সনাতনে—বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে
তুমি কর দৈন্য সম্বরণ—প্রভু বলেন শুন সনাতন
তোমার দৈন্যে মোর ফাটে মন—তুমি কর দৈন্য সম্বরণ
আমার,–সনাতন আসবে কতক্ষণে—চেয়েছিলাম তোমার পথ-পানে
‘আমার,–সনাতন আসবে কতক্ষণে’—
চেয়েছিলাম তোমার পথ-পানে
অপরূপ গৌরাঙ্গ-লীলা
নিজ-জন-শ্রীসনাতন-দ্বারে—প্রভু দেখাবেন জগতেরে
ত্যাগ বৈরাগ্য কারে বলে—প্রভু দেখাবেন জগতেরে
লজ্জিত হইলা সনাতন।’’
প্রভুর ভাল নাহি লাগছে
আমার গায়ে ভোট-কম্বল আছে—প্রভুর ভাল নাহি লাগছে
ভোট—কম্বল আমার গায়—প্রভুরে নাহিক ভায়
এ-রাজ্যের এ-রীতি নয়—তাই, প্রভুরে নাহিক ভায়
আমার অঙ্গে ভোট-কম্বল হয়—এ ত’ বৈরাগ্যের চিহ্ন নয়
ভোট-কম্বল রাখি গায়—মহাপ্রভুর ইচ্ছা নয়
প্রভুর আশায় জানিয়া—সুরধুনীর তীরে গিয়া
বৈরাগ্যের অনুকূল-বেশ—‘‘ছেঁড়া এক কন্থা লঞা,’’
প্রভু-স্থানে পুনঃ আগমন।।’’
তার,–ভোগ-শেষ রাখেন না আর
কৃপাদিঠে যারে হেরে একবার—তার,–ভোগ-শেষ রাখেন না আর
প্রিয়-শ্রীসনাতন-দ্বারে—প্রভু জানাইলেন জগতেরে
ভোগ-শেষ থাকলে পরে—আমায় কেউ পেতে নারে
আমার মন বুঝেছে সনাতন—প্রভুর আনন্দিত মন
প্রভুর মন বুঝে করে কাজ—তারাই ত’ গৌরাঙ্গদাস
গৌর-পরিচয় দিয়ে—নামে কলঙ্ক রটালাম
শিক্ষা করাইলা সনাতনে।
প্রভু কহে রূপ-সনে, দেখা হবে বৃন্দাবনে’’
ও প্রাণের সনাতন—ত্বরা করি’ যাও ব্রজে
শ্রীরূপে সঙ্গে লইয়া—লুপ্ত-ব্রজ উদ্ধার কর গিয়া
প্রভুর এই বাক্য শুনে—ব্যাথা যে লাগিল প্রাণে
বিরহ হইবে জেনে—ব্যথা যে লাগিল প্রাণে
যাবার কালে চরণ ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হা গৌর প্রাণ গৌর—আর,–কতদিনে দেখতে পাব
হা গৌর প্রাণ গৌর—আর কি দেখতে পাব হে
গৌর-আজ্ঞা ধরি’ মাথে—যায় সনাতন ব্রজের পথে
হা গৌর বলে কাঁদতে কাঁদতে—যায় সনাতন ব্রজের পথে
গৌরমুখচন্দ্র-পানে—যায় যায় ফিরে চায়
প্রাণ—গোরাচাঁদের বদন হেরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কতদিনে দেখতে পাব বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
পদ আগু ফেলতে পিছে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
প্রাণ ত’ যেতে নাহি চায়—কেমনে বল চলবে পা
ছেড়ে প্রাণের গৌরাঙ্গসোণা—প্রাণ ত’ যেতে চায় না
‘‘কভু কাঁদে কভু হাসে, কভু প্রেমানন্দে ভাসে,’’
প্রভু বলেছেন ব্রজে যেতে—তাই প্রেমানন্দে ভাসে
কভু ভিক্ষা কভু উপবাস।’’
গৌর বলে সদাই কাঁদে—দেহস্মৃতি নাই রে
পরিধানে ছেঁড়া বহির্ব্বাস।।’’
পরিধানে ছেঁড়া কাঁথা বহির্ব্বাস—পরিচয় দেয় লোকের পাশ
আমি শ্রীচৈতন্যের দাস—পরিচয় দেয় লোকের পাশ
কেহ,–পরিচয় জিজ্ঞাসিলে বলে—আমি শ্রীচৈতন্যের দাস
লোকে জিজ্ঞাসিলে বলে—আমি শ্রীচৈতন্যের দাস
লোকে জিজ্ঞাসিলে বলে মুঞি, চৈতন্যের দাস রে।।’’
আদর্শ চৈতন্যদাস
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন—আদর্শ চৈতন্যদাস
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন—আদর্শ গৌরঙ্গদাস
নামে কলঙ্ক রটালাম—দাস সেজে লোক ভাঁড়ালাম
দাস বলে পরিচয় দিয়ে—নামে কলঙ্ক রটালাম
বেশে কাঙ্গাল সাজলাম বটে—মন ত’ কাঙ্গাল হল না রে
বৃন্দাবন-মাধুরী দেখে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
পাঠাইলে ব্রজপুরে—বলে,–এ কি কৃপা কৈলে মোরে
আমায় দেখাইলে ব্রজ-মাধুরী—তোমার,–অহৈতুকী-কৃপার যাই বলিহারি
ও করুাবারিধি গৌরহরি—তোমার,–অহৈতুকী-কৃপার যাই বলিহারি
রূপ-সঙ্গে হইল মিলন।’’
রূপ-সনাতনের ব্রজে মিলন-রঙ্গ—না জানি সে কি আনন্দ
কহে রূপ গদগদ বচন।’’
গৌর-কৃপা স্মঙরিয়া—আনন্দ আর ধরে না রে
গুণনিধি-রূপ-গোসাঞির—আনন্দ ধরে না মনে
পাইয়া শ্রীসনাতনে—আনন্দ ধরে না মনে
‘পাইয়া শ্রীসনাতনে’—
শ্রীগৌরাঙ্গ-কৃপা-বলে—পাইয়া শ্রীসনাতনে
মুখে কথা সরে না রে
শ্রীসনাতনে প্রভুর কৃপা হেরে—মুখে কথা সরে না রে
গৌর-গুণ স্মরণ করে—মুখে কথা সরে না রে
হা নাথ হা নাথ বলি’ ডাকে।’’
রূপ সনাতন ব্রজবনে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে
রূপ সনাতন দুইজনে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে
নিরজনে বসি’ দুজনে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে
পরস্পর গলা ধরে—কাঁদে রে গৌরাঙ্গ-গুণে
রূপ সনাতন গলা ধরি’—কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’
প্রাণ-গৌরাঙ্গের আজ্ঞা-ক্রমে—তাদের,–দেহ আছে বটে ব্রজবনে
তাদের,–প্রাণ আছে গৌর-চরণে—তাদের,–দেহ আছে বটে ব্রজবনে
ব্রজে তাদের বসতি বটে—কিন্তু,–ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
ব্রজের,–যুগল-বিলাসে ডুবে থেকে—ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
সেই চিত্র স্মরণ করে—ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
‘সেই নীলাচলে দেখে এসেছে—সেই চিত্র স্মরণ করে
গৌর তাদের সর্ব্বস্ব-ধন
এই মনোবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে
শ্রীরূপের চৈতন্যাষ্টকে—এই মনোবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে
রূপ সনাতন গলা ধরি’—কাঁদে গৌর-গুণ স্মঙরি’
আমার,–সোণার গৌরাঙ্গ-প্রভু—আর কি দেখতে পাব হে
প্রাণ-গৌরাঙ্গ তোমায়—আর কি দেখতে পাব হে
হরিবোলা রসের বদন—আর কি দেখতে পাব হে
‘‘ব্রজপুরে ঘরে ঘরে, মাধুকরী ভিক্ষা করে,’’
রাজভোগ দূরে পরিহরি—করেন,–ব্রজবনে মাধুকরী
তাদেরই চরিত্র তাদের পরিচয়—ব্রজে—মাধুকরী মেগে খায়
করব ব্রজে মাধুকরী
ষড়রস-ভোজন হরিহরি—করব ব্রজে মাধুকরী
যে-প্রার্থনা কৈলেন ঠাকুর-নরোত্তম—এর আদর্শ শ্রীরূপ সনাতন
এইরূপে কতদিনে থাকে।।
তাহা ছাড়ি’ কুঞ্জে কুঞ্জে, ভিক্ষা করি’ পুঞ্জে পুঞ্জে
ফলমূল করয়ে ভক্ষণ।’’
লুপ্ত-ব্রজ উদ্ধার-তরে—প্রভু,–পাঠায়েছেন দুইজনে
নিজ-শক্তি সঞ্চারিয়ে—প্রভু,–পাঠায়েছেন দুইজনে
গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে—ব্রজবনে বিহরে
আমায় পাঠায়েছেন প্রভু
ব্রজের,–লুপ্তধন উদ্ধার লাগি’—আমায় পাঠায়েছেন প্রভু
কোথা’ কোন-লীলা-ভূমি—আমি ত’ তা’ কিছু জানি না
ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
গৌর আজ্ঞা শিরে ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদের রে
গোসাঞি ব্রজবনে ফিরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদের রে
প্রভু পাঠায়েছেন মোরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদের রে
কোথা’ বা আছ হে
ওহে কৃষ্ণের লীলাস্থলী—কোথা’ বা আছ হে
তোমরা,–কোথা বা আছ হে কৃপা করে দাও পরিচয়
লীলাস্থলী তোমরা কে কোথায়—কৃপা করে দাও পরিচয়
তোমাদের প্রকাশের তরে—প্রভু পাঠায়েছেন আমাদের
তোমাদের প্রকাশের তরে—প্রভু পাঠায়েছেন মোরে
তোমাদের,–প্রকাশ-তরে প্রভু দিয়েছেন আজ্ঞা—কৃপা করে পরিচয় দাও তোমরা
নৈলে,–কেমনে প্রভু-আজ্ঞা পালন কর্ব—কৃপা করে পরিচয় দাও তোমরা
কিম্বা সাক্ষাৎ দাও দরশন—কৃপা করে করাও স্ফুরণ
এইরূপে ব্রজবনে ফিরে
দুই গোসাঞি অতি-কাতরে—এইরূপে ব্রজবনে ফিরে
ফলমূল ভক্ষণ করে
কেবল,–দেহরক্ষা করবার তরে—ফলমূল ভক্ষণ করে
‘কেবল,–দেহ রক্ষা করবার তরে’—
প্রভুর আজ্ঞা পালন করতে হবে—কেবল,–দেহ রক্ষা করবার তরে
‘‘উচ্চৈঃস্বরে আর্ত্তনাদে রাধাকৃষ্ণ বলি’ কাঁদে,
এইরূপে থাকে কতদিন।।’’
দেখা দিলেন বিগ্রহরূপে
মদনমোহন-স্বরূপে—দেখা দিলেন বিগ্রহরূপে
চারিদণ্ড নিদ্রা বৃক্ষতলে।
এমন করে,—তিলে তিলে না ভজিলে—শুধু,–মুখের কথায় কি গৌর মিলে
এমন করে না ডাকিলে—শুধু,—মুখের কথায় কি গৌর মিলে
অবসর নাহি এক তিলে।।
কখনও বনের শাক, অলবণে করি’ পাক,
মুখে দেন দুই এক গ্রাস।’’
সনাতনের বৈরাগ্যের—এমনও নিদর্শন আছে
মদনেমাহনের নিত্যভোগে—এমনও নিদর্শন আছে
শ্রীসনাতনের বৈরাগ্য প্রচার—আঙ্গাকড়ি নাম তার
এক দুই তিন উপবাস।।’’
বিরহ জাগিলে পরে—থাকেন গোসাঞি অনশনে
কন্টকে বাজায়ে কভু পাশ।
এ রাধাবল্লভ-দাস, বড় মনে অভিলাষ,
কবে হব তাঁর দাসের দাস।।’’
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ তোমরা—সব,–কোথা’ বা লুকালে
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—একে একে সব কোথা’ লুকালে
আমাদের,–কাল-কলির কবলে ফেলে—প্রাণ-গৌর লয়ে কোথা’ লুকালে
আমাদের,–দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই গো—কার কাছে রেখে গেলে
মুখ মলিন দেখি’ দুঃখ জানি’—শুধাইতে কেউ নাই গো
মলিন-মুখ দেখি’ বাহু পসারি’—কোলে নিতে কেউ নাই গো
কেন বাপ কি হয়েছে বলে—কোলে নিতে কেউ নাই গো
গৌর-কথা বলে শুনে—জুড়াইবার ঠাঁই নাই গো
‘গৌর-কথা বলে শুনে’—
দগ্ধ-হৃদয়ে শান্তকারী—গৌর-কথা বলে শুনে
জুড়াইবার উপায় নাই
গৌর-কথা,—বলবার শুনবার প্রাণ নাই—জুড়াইবার উপায় নাই
একে একে পলাল সবাই—গৌর-কথা,–বলবার শুনবার প্রাণ নাই
প্রাণারাম গৌরাঙ্গ-কথা—শুনতে পাই না বলতে পাই না
কারে বলব দুঃখের কথা—শুনতে পাই না বলতে পাই না
হা,—নরহরি মুকুন্দ মুরারি।
সঙ্গে স্বরূপ রামানন্দ, হরিদাস প্রেমকন্দ,
দামোদর পরমানন্দ পুরী।।
ভাই রে,—যে সব করিলা লীলা,’’
সেই সুরধনী আর, এই সিন্ধু-কূলে—মধুর নদীয়া আর নীলাচলে
তাহা মুঞি না পাইনু দেখিতে।’’
প্রাণ-গৌরাঙ্গের, প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না রে
‘প্রেমোন্মত্তকারী লীলা’—
ঝারিখণ্ড-পথে ব্রজে যেতে—প্রেমোন্মত্তকারী লীলা
দেখায়ে স্বরূপ জাগান-রূপ—সবার জাগাল স্বরূপ
প্রেমে একাকার করা লীলা—কৈ—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘প্রেমে একাকার করা লীলা’—
দেখায়ে স্বরূপ জাগান-আকার-প্রেমে একাকার করা লীলা
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘কীর্ত্তন-নটন-লীলা’—
সুরধুনীর তীরে তীরে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
সুরধুনী-পুলিনে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
আমার,–চিতচোর প্রাণগৌরাঙ্গের—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–সীতানাথের আনানিধির—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–নদীয়া-বিনোদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–প্রাণ-শচীদুলালিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়ার—গমন-নটন-লীলা
সংকীর্ত্তন,—কেলিরস-বিনোদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
সংকীর্ত্তন,—রাসরস-উন্মাদিয়ার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার, –নবদ্বীপ-পুরন্দরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রসময়-গৌরকিশোরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীরূপ-হৃৎকেতন-গোরার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–শ্রীসনাতনের গতি-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–লোকনাথের হৃদ্বিহারীর—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গোপাল-ভট্টের প্রাণগৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—শ্রীজীব-জীবন-গৌরাঙ্গের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–দাস-রঘুনাথের সাধনের ধনের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—সার্ব্বভৌমের চৈতন্যদাতার—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—রাজা-প্রতাপরুদ্রের ত্রাণকারির—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–গজপতি-উদ্ধারণের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,–রামরায়ের চিতচোরের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—স্বরূপের সর্ব্বস্বধনের—গমন-নটন-লীলা
ওগো আমার,—নিতাই-পাগল করা-গোরার—গমন-নটন-লীলা
ও—‘‘গমন-নটন-লীলা,’’
নাটুয়া মুরতি গৌর আমার—চলে যেতে নেচে যায়
আমার প্রাণগৌরাঙ্গের,–নাটুয়া-মুরতি নটন-গতি—চলে যেতে নেচে যায়
মহা,–ভাবনিধি-গৌরাঙ্গ আমার—চলে যেতে নেচে যায়
ভাবনিধি-গোরা,—ভাব-হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যায়
রসের গোরা,–চলে যেতে নেচে যায়—সঙ্গীতেতে কথা কয়
ওগো আমার,–রসের গোরা চিতচোরা—সঙ্গীতেতে কথা কয়
নদীয়া-বিনোদ-গৌরাঙ্গের—গমনে নটন, বচনে গান
শচীদুলাল-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমনই নটন, বচনই গান
কে দেখেছে কে শুনেছে কোথায়—চলতে নাচে বলতে গায়
রসময়—গৌরাঙ্গ-রায়—চলতে নাচে বলতে গায়
পঞ্চমরাগ জিনি’ যেন,—কত-শত-কোকিল কুহরিছে
যেন, –অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
জগত,–অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
গৌরহরি হরি বলিছে—যেন,—অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
একবার,–হরিবোলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি-মন হরিছে
ভাবনিধি যার পানে চাইছে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ছে
ভাবেতে অবশ হয়ে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ছে
রসের গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–বিলাসি-গৌরাঙ্গ নাচে
যে,–ঢলে পড়ে তারে বুকে ধরে—আমার,–বিলাসি-গৌরাঙ্গ নাচে
ও,–‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ,’’
ওগো আমার,–রঙ্গিয়া-প্রাণগৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
ওগো আমার,–অনঙ্গ-মোহন-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
রঙ্গের মন্দির-গোরার—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
‘রঙ্গের মন্দির গোরা’—
নবীন-কামের কোঁড়া—রঙ্গের মন্দির গোরা
ও, —‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ,’’
শর,–বরিষণের নাহি অবসর—প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর
নিজ,–পারিষদ-উপর শর—বরষিছে নিরন্তর
নিরন্তর শর-বরিষণে—পারিষদ হইল জর জর
মহা,-ভাবনিধি-প্রাণ-গৌরাঙ্গ-অভাবের সঙ্গ করে না
কম্প-অশ্রু-পুলকাদি—ভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ
অন্তরঙ্গ-ভাবুক-সঙ্গে—নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ
আরে আরে আরে আমার—গৌর-কিশোর-বর
আরে,–আরে আমার—গৌর-কিশোর-বর
আরে,–আরে আমার—গৌর-কিশোর-বর
রসে তনু ঢর ঢর—গৌর-কিশোর-বর
‘রসে তনু ঢর ঢর’—
শ্রী,—নবদ্বীপ-পুরন্দর—রসে তনু ঢর ঢর
কারে বলব দুঃখের কথা—দেখা শুনা হল না
গমনে নটন বচনে গান—দেখা শুনা হল না
তাহা মুঞি না পাইনু দেখিতে।’’
পাষাণ-গলান-লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘পাষাণ-গলান-লীলা’—
মধুর-শ্রীনীলাচলে—পাষাণ-গলান-লীলা
জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—পাষাণ-গলান-লীলা
আমার,–চিতচোর-প্রাণগৌরাঙ্গের—পাষাণ-গলান-লীলা
কিছুই পাই নাই
তখন,–ভাগ্যে জনম হয় নাই—কিছুই দেখতে পাই নাই
কিছুই দেখতে পেলাম না—কার কাছে কাঁদব দুঃখের কান্না
পাষাণেতে পদচিহ্ন—দেখলাম কেবল লীলার সাক্ষী
দেখলাম না সে কমল আঁখি—দেখলাম কেবল লীলার সাক্ষী
ওযে’,–লীলায় শিলা গলেছে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
এই,–জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
পাষাণে শ্রীপদচিহ্ন—সেই-লীলার সাক্ষী দিছে
আরে আরে আরে আমার
পরাণের পরাণ আমার
‘‘শ্রীলজগন্নাথ-আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে
নীচে পরি’ ভাব-রত্ন-সাজ।।’’
ভাবনিধি-শচীসূত-ভাব-ভূষণে বিভূষিত
করিছেন জগন্নাথ দরশন
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বে দাঁড়ায়ে—করিছেন জগন্নাথ দরশন
ভাবনিধি গৌর আমার—রাধিকা-ভাবিত-মতি
জগন্নাথের বদন চেয়ে—রাধিকা-ভাবিত-মতি
জগন্নাথের বদন চেয়ে—স্বর্ণ-বর্ণ হল বিবর্ণ
জগন্নাথ বলতে নারে—জ জ জ জ গ গ করে
কম্প অশ্রু পুলক সঘর্ম্ম।
এই সপ্ত সাত্ত্বিক-ভাব, আর দুই অনুভাব,
হাস্য নৃত্য সব প্রেমধর্ম্ম।।’’
সাত্ত্বিক-বিকার যত—গৌর-অঙ্গে হল বেকত
নানা,–ভাবাবলি-ভূষণেতে—গৌর-অঙ্গ বিভূষিত
অবিরল-নয়ন-ধারার—বিরাম নাই, বিরাম নাই
যেন,–শ্রাবণ-মেঘের ধারা—বিরাম নাই, বিরাম নাই
প্রাণগৌরাঙ্গের নয়ন-ধারা—যেন,–পিচ্কারী-জলযন্ত্র-ধারা
এক এক ধারায় শত শত ধারা—যেন,–পিচ্কারী-জলযন্ত্র-ধারা
অবিরল-নয়ন-ধারায়—ভাসিল রে মুখ-কমল
মুখকমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদয়-কমলে
হৃদয়-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ-কমলে
চরণ-কমল পাখালিয়ে—নিম্ন-খাল পূর্ণ কৈল
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বদেশের—নিম্ন-খাল পূর্ণ কৈল
শ্রীগৌরাঙ্গের নয়ন-ধারায়—নিম্ন-খাল পূর্ণ কৈল
সেই গৌরের পদ-পরশে—পাষাণ গলিয়া গেল
প্রাণ-ভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ-গলান গোরা
সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা
হায়রে,–‘‘তখনে না হইল জন্ম,’’
ভাই রে,–দুঃখের কথা কারে বা বলব—‘‘তখনে না হইল জন্ম’’
যখন হল প্রকট-বিহার—তখন জনম হল না মোদের
এখন,–সেই জনম দিলি যদি—তখন,–কেন জনম দিলি না বিধি
তখন কেন না জনম দিলি—আমরা,–দেখলে তোর কি ক্ষতি ছিল
অকূল-পাথার শ্রীগৌরাঙ্গ—প্রেম-পাথারে সাঁতার দিতাম
নিতাই-তরঙ্গে নেচে নেচে—প্রেম-পাথারে সাঁতার দিতাম
দুর্ব্বসনা-তরঙ্গময়-সংসার—সাঁতার ভুলে ডুবে যেতাম
গৌর আমায় ধর বলে—সাঁতার ভুলে ডুবে যেতাম
সেই-লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গের,–লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
তুষানলের মত ধিকিধিকি—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
আমরা,–হেসে খেলে বেড়াইছি বটে—পাঁজর পুড়ে ঝাঁজর হল
কারে বা দেখাব বল—পাঁজর পুড়ে ঝাঁজর হল
ভূগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।’’
তোমরা সব কোথা লুকালে
হা,–পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—তোমরা সব কোথা লুকালে
আমাদের,–কালকলির কবলে ফেলে—তোমরা সব কোথা লুকালে
আমাদের,–কার কাছে রেখে গেলে—দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই গো
আমরা,–কত না খুঁজেছি
ভাই ভাই মিল ব্রজবনে গিয়ে—কত না খুঁজেছি
তোমাদের বসতি-স্থানে গিয়ে—আমরা,–কত না ডেকেছি
কোথা আছ,–প্রভু রূপ সনাতন বলে—আমরা,–কত না ডেকেছি
কোথা আছ,–ভট্টযুগ শ্রীজীব গোসাঞি বলে—আমরা,–কত না ডেকেছি
কোথা আছ—লোকনাথ ভূগর্ভ গোসাঞি বলে—আমরা,–কত না ডেকেছি
আমরা,–কত না খুঁজেছি—কত না ডেকেছি
শ্রী,–রাধাকুণ্ড-তীরে গিয়ে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ দাস-গোসাঞি বলে—আমরা,–কত না কেঁদেছি
এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর—কোথায় আছ দাস-গোসাঞি
কেউ ত’ দেখা দিলে না
তখন,–মনে মনে অনুমান করলাম
বৃন্দাবনে তোমাদের দেখা না পেয়ে—তখন
ইষ্টগোষ্ঠী করবার তরে—গিয়েছ তোমরা সবাই মিলে
দাস-রঘুনাথের কাছে—গিয়েছ তোমরা সবাই মিলে
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—অনুমানে গেলাম সবাই মিলে
কোথায় দাস-গোসাঞি বলে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
একবার দেখা দাও বলে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর—একবার দেখা দাও
কোথা বা কাঁদছ
কবিরাজের গলা ধরে—কোথা বা কাঁদছ
গুঞ্জামালা,–গিরিধারী বুকে ধরে—কোথা বা কাঁদছ
কোথা গৌর গৌর বলে—কোথা বা কাঁদছ
এ সকল প্রভু মিলি,’ যে সব করিলা কেলি,
বৃন্দাবন ভক্তগণ-সাথ।।’’
হায় রে—কিছুই পেলাম না রে
প্রাণ,–গৌর লীলা তার গণের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
সবে হৈল অদর্শন—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
পরাণ-গৌরাঙ্গ-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
গৌরাঙ্গের,–ভকত-বাৎসল্য-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
এই হরিদাসের সমাধি—ভকত-বাৎসল্যের সাক্ষী
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–ভকত-বাৎসল্য লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না
ভাই রে তোমরা কর দর্শন—এই ত তার নিদর্শন
ভক্ত-বাৎসল্য—লীলার—প্রত্যক্ষ নিদর্শন
শ্রীহরিদাসের সমাধি—প্রত্যক্ষ নিদর্শন
সিংহদ্বারে আঁচল পেতে—ভিক্ষা করি’ উৎসব কৈলেন
শ্রীহস্তেতে সমাধি দিলেন—ভিক্ষা করি’ উৎসব কৈলেন
এই ত তোমার,–ভক্ত-বাৎসল্যের নিদর্শন—কোথা’ প্রাণ শচীনন্দন
এই শ্রী,–হরিদাসের সমাধি—দেখছি কেবল লীলার সাক্ষী
দেখতে পেলাম না সে কমল-আঁখি—দেখছি কেবল লীলার সাক্ষী
আজও সেই-লীলা হতেছে—শ্রীগুরু বাক্য হৃদে ধরে
এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—এলাম আমার-ভাই ভাই মিলে
বড় আশায় বুক বেঁধে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
এই মধুর-নীলাচলে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
সেই,—লুকান-খেলা দেখব বলে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
শ্রীগুরুদেবের পিছে দাঁড়ায়ে—বড় সাধ ছিল দেখব বলে
রথের আগে গৌরের নটন-রঙ্গ—বড় সাধ ছিল দেখব বলে
নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
কারে বলব দুঃখের কথা—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
শ্রীগুরু-মুখে শুনেছি মোরা—আজও হতেছে সেই লীলা
রথ-যাত্রায় নীলাচলে—এসেছি সেই আশা করে
রথযাত্রাকালে ভাই ভাই মিলে—এসেছি সেই আশা করে
রামরায় স্বরূপ লইয়া। নিজ-ভাব কহে উঘাড়িয়া।।
মোর কি হইবে হেন দিনে। সে কথা কি শুনিব শ্রবণে।।
পুনঃ কিয়ে জগন্নাথ-দেবে। গুণ্ডিচা-মন্দিরে চলি’ যাবে।।
প্রভু মোর সাত সম্প্রদায়। করিবে কীর্ত্তন উভরায়।।
মহানৃত্য-কীর্ত্তন-বিলাস। সাত ঠাঁই হইবে প্রকাশ।।’’
হায় রে,–‘‘মোর কি এমন দশা হব। সে লীলা কি নয়নে হেরিব।।’’
এসেছিলাম ভাই ভাই মিলে
বড় সাধ দেখব বলে
রথের আগে গৌর-নর্ত্তন—বড় সাধ দেখব বলে
রাধা-প্রেমের কত বল তাই—দেখে রূপ সনাতন
‘রাধা-প্রেমের কত বল’—
নাগরে নাগরী কৈল—রাধা-প্রেমের কত বল
গায় রায়-রামানন্দ, মুকুন্দ মাধবানন্দ,’’
ভাবনিধির ভাব জেনে
চেয়ে,–মহাভাব-প্রকটিত-বদন-পানে—ভাবনিধির ভাব জেনে
‘‘গায় রায়-রামানন্দ, মুকুন্দ মাধবনন্দ
বাসুঘোষ গোবিন্দ শঙ্কর।।
বামে নাচে প্রিয় গদাধর।
নাচিতে নাচিতে প্রভু, আউলাইয়া পড়ে কভু,
আবেশে ধরয়ে দুঁহার কর।।
নিত্যানন্দ-মুখ হেরি’, বলে পহুঁ হরি হরি,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে উচ্চৈঃস্বরে।
স্মঙরি শ্রীবৃন্দাবন, প্রাণ করে উচাটন,’’
জগন্নাথের বদন হেরে—এই-ভাবে ভোরা গোরা
আপন-পরাণ-ধনে—যেন,–পেয়েছে নব-বৃন্দাবনে
প্রভাস-মিলনে যেন—পেরেছে নব-বৃন্দাবনে
আক্ষেপে করিছেন উক্তি
তথাপি আমার মন হরে বৃন্দাবন হে।।’’
তাই,–‘‘স্মঙরি শ্রীবৃন্দাবন, প্রাণ করে উচাটন,
আবেশে ধরয়ে রাযের করে।।’’
স্বরূপ-রামরায়ের,–বদন-পানে চেয়ে বলে—এ-দাসীরে কৃপা কর
বলে,–বৃন্দাবনে কর লীলা—এ-দাসীরে সদয় হও
রথের আগে কত খুঁজিলাম—দেখিতে ত’ পেলাম না
কেঁদে কেঁদে ফিরে এলাম—দেখিতে ত’ পেলাম না
দেখিতে ত’ পেলাম না
রথের আগে কত খুঁজলাম—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
কোথা’,–প্রভু রূপ সনাতন বলে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
কোথা’,–দাঁড়ায়ে দেখছ গৌর-নটন—কোথা’ প্রভু রূপ সনাতন
চিতচোর-প্রাণগৌরাঙ্গে—কোথা’ দাঁড়ায়ে দেখছ
হতাশ-প্রাণে ফিরে এসেছি
কেউ ত’ কথা কইলে না
দেখা দিলে না দেখালে না—কেউ ত’ কথা কইলে না
নীলাচলে এলে—এই হরিদাসের স্থানে—বসতি কর তোমরা দুজনে
তোমাদের,–একই ভাব তিন-জনের—তাই,–বসতি কর একস্থানে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায় এসেছে দুজনে—আছ ত’ এখানে
দেখাও প্রাণ-শচীনন্দন
কোথা’ প্রভু রূপ সনাতন—দেখাও প্রাণ-শচীনন্দন
সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা
কিছুই দেখতে পেলাম না
প্রাণ,–গৌর-লীলা তার-গণের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
‘‘সবে হৈলা অদর্শন,’’
ভাই রে,–আমাদের দুর্ভাগ্য—দোষে—
যারা গৌর-কথা শুনাইতে ছিল—তাঁরা,–একে একে সবে লুকাইল
আঁখি,–তারা হারাল জ্যোতি হারাল,–আঁখি আর,–কেমন করে
আঁখি,–তারা-গৌরগণ হারাল
দর্শনশক্তি-গৌর হারাল—আঁখি,–তারা-গৌরগণ হারাল
না না,–সে আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল
গৌর-লীলা,–দর্শনে যে বঞ্চিত হল—তার,–আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল
গৌরগণের—দর্শনে যে বঞ্চতি হল—তার,–আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল
নয়ন-রঞ্জন সব লুকাল
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গগণ—নয়ন-রঞ্জন সব লুকাল
আঁখি অন্ধ হওয়াই ভাল
‘‘কাহারে কহিব দুঃখ,’’
আমি,–গুরু-গৌরাঙ্গ-বৈমুখী প্রাণ—আমার,–মুখ কেউ দেখো না
দেখলে আমার মত হবে—আমার মুখ কেউ দেখো না
গৌরলীলা আর গুরুলীলা—দুই-লীলায় বঞ্চিত আমি
‘‘আছি যেন মরা পশু পাখী।।’’
দেখতে মানুষের আকার বটে—কিন্তু আমায়,–মনুষ্যত্বের গন্ধ নাই রে
একদিনে কি প্রাণ থাকত
তা হলে,–এক-তিল কি প্রাণ থাকত
যদি মনুষ্যত্ব থাকত—তা হলে,–এক-তিল কি প্রাণ থাকত
সে সুখ হতে বঞ্চিত হয়ে—এক-তিল কি প্রাণ থাকত
প্রাণ-গৌর-লীলায় বঞ্চিত হয়ে—এক-তিল কি প্রাণ থাকত
সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে—এক-তিল কি প্রাণ থাকত
সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে,’—
অদোষ-দরশী শ্রীগুরুদেবের—সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে
পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে
যদি আমি মানুষ হতাম—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে
হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে
অন্ন জল বিষ খাই, কৈ,–মরিয়া নাহিক যাই,’’
একে একে সবাই ছেড়ে গেছে—এখনও অন্ন জল রুচিছে
একে একে সবাই ছেড়ে গেছে’—
আমার বলতে যারা ছিল—একে একে সবাই ছেড়ে গেছে
আমার বলতে যারা ছিল’—
যারা মুখ দেখে দুঃখ বেছে নিত—আমার বলতে যারা ছিল
যারা ভাল বাসবে তারা গেল চলে—আমার বলতে যারা ছিল
শ্রীগুরু –গৌরাঙ্গগণ—একে একে সবাই ছেড়ে গেছে
সকল সুখের আশা ফুরায়েছে—একে একে সবাই ছেড়ে গেয়ে
ধিক্ ধিক্ নিলাজ পরাণ।’’
একে একে সবাই ছেড়ে গেছে—এ ছার-জীবনে শতধিক রে
ওরে রে নিলাজ-পরাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
ওরে,–গুরু-গৌর-বৈমুখী প্রাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
একে একে,–সবে যদি গেল ছেড়ে—আর,–কি সুখে বা আছ রে
সে’ সুখে বঞ্চিত হয়ে—আর,–কি সুখে বা আছ রে
বঞ্চিত হয়ে সে’ সুখ হতে—আর,–কি সুখে বা আছ রে
‘বঞ্চিত হয়ে সে’ সুখ হতে—
এখন,–পড়ে পড়ে মায়ার লাথি খেতে—বঞ্চিত হয়ে সে সুখ হতে
বাসনার কিঙ্কর হয়ে এখন,–পড়ে পড়ে মায়ার লাথি খেতে—
আর,–কি সুখে বা আছ রে
ওরে রে কৃতঘ্ন পরাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
ওরে রে কৃতঘ্ন পরাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
গেলেই ত’ ভাল রে
এখনও ভালে ভালে—গেলেই ত’ ভাল রে
‘এখনও ভালে ভালে’—
না জানি কি আছে কপালে—এখনও ভালে ভালে
প্রাণ তোরে মিনতি করি
তবে যদি যাও সেই ভাল।।’’
হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—নিশিদিশি ডাক রে
ওরে রে কৃতঘ্ন পরাণ—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
‘অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি’—
অদোষ-দরশী শ্রীগুরুদেবের—অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেবের –অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি
কি বলব তোমার গুণের কথা
হা শ্রী গুরুদেব—কি বলব তোমার গুণের কথা
জোর করে তুলে আনিলে
কৃপারজ্জু কেশে বেঁধে—জোর করে তুলে আনিলে
বিষয়-সংসার-কূপ হতে—জোর করে তুলে আনিলে
এই রথযাত্রাকালে—নীলাচলে নিয়ে এলে
কোথা নীলাচল কে জগন্নাথ—কিছুই ত’ জানতাম না।
এই নীলাচলে গৌরের কিবা লীলা—কিছুই ত’ জানতাম না
সংসার-কূপ হতে তুলে—সঙ্গে করে লয়ে এলে
রথযাত্রায় নীলাচলে—সঙ্গে করে লয়ে এলে
ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—গৌরলীলা জানাইলে
অমূল্য-নিধি দান কৈলা
এই শ্রী,–হরিদাসের সমাধি-সেবা—অমূল্য-নিধি দান কৈলা
জেনেও সম্পূর্ণ অযোগ্যতা—অমূল্য—নিধি দান কৈলা
মায়ার লাথি খাওয়া স্বভাব জেনেও—মায়া-গুরুর সেবা দিলে
হা শ্রীগুরুদেব,–অহৈতুকী-কৃপাকরী—তোমার কৃপার যাই বলিহারি
ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে—দেখাবে বলে বলেছিলে
এসে অবধি খুঁজে বেড়ালাম—তুমি,–লুকাইয়ে করছ খেলা
প্রাণ-গৌর লয়ে এই নীলাচলে—লুকাইয়ে করেছ খেলা
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—একবার দেখা দাও
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও
হৃদিপটে এ্যাঁকে লব
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদিপটে এ্যাঁকে লব
ভাই ভাই একপ্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াব
যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি
তোমার অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি—যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি
তোমার চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণভরে গান করি
তোমার,–কৃপাদত্ত-নামাবলী—যেন,–প্রাণভরে গান করি
কন্ঠহার কর রে
শ্রীগুরু-দত্ত নামাবলী—কণ্ঠহার কর রে
পাগল প্রভু হৃদে ধরে—পাগল হয়ে গাও রে
ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে গাওরে
জপ হরে কৃষ্ণ হরে নাম।।’’
প্রেমসে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু-নিতাই-শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত-শ্রীরাধারাণী-কী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন শ্রীনিতাই-চাঁদ-কী জয় !
করুণাসিন্ধু গৌরভক্তবৃন্দ-কী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তন-কী জয় !
খোল-করতাল-কী জয় !
শ্রীনবদ্বীপ-ধাম কী জয় !
শ্রীনীলাচল-ধাম-কী জয় !
শ্রীবৃন্দাবন-ধাম-কী জয়!
চারি-ধাম-কী-জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয় !
শ্রীশ্রীহরিদাস ঠাকুর মহারাজ-কী জয়!
শ্রীশ্রীসনাতন গোস্বামিপাদ-কী জয় !
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব-কী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন—
শিশু-পশ—পালক বালক-জীবন শ্রীমদ্ রাধারমণ-কী জয় !
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল।’’