যমুনা কিনারে

সুসর বাঁশরি নাদ শুণিআঁ বড়ায়ি

সুসর বাঁশরি নাদ শুণিআঁ বড়ায়ি
রান্ধিলোঁ যে সুনহ কাহিনী।
আম্বল ব্যঞ্জনে মো বেশোআর দিলেঁ।
সাকে দিলোঁ কানাসোআঁ পাণী।।
রান্ধনের জুতী হারয়িলোঁ বড়ায়ি
সুণিআঁ বাঁশীর নাদে।।ধ্রু।।
নান্দের নন্দন কাহ্ন আড়বাঁশী নদে।।ধ্রু।।
যেন রএ পঞ্জরের শুআ।
তা সুণিআঁ ঘৃতে মো পরলা বুলিআঁ
ভাজিলো এ কাঁচা গুআ।।
সেইত বাঁশীর নাদ সুনিআঁ বড়ায়ি
চিত্ত মোর ভৈল আকুল।
ছোলঙ্গ চিপিআঁ নিমঝোলে খেপিলোঁ।
বিণি জলে চড়াইলোঁ চাউল।।
যমুনার তীরে কদম তরুতলে
তহি বসি কাহ্ন বাএ বাঁশে।
তাক আণিআঁ বড়ায়ি রাখহ পরাণ
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে।।

অন্তঃকথন:
এটি একটি অপূর্ব গান। প্রেমে পড়ে আকূল শরীর আর বেয়াকুল মন নিয়ে এক ঘরের বৌ এর যে কি দশা হতে পারে, কেমন করে যেন নারীর মনের মধ্যে ঢুকে বড়ু চন্ডীদাস জেনে ফেলেছেন সেটা। আর রাধার জবানিতে সেই কথাই তিনি শোনাচ্ছেন এই গানে। শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির ধ্বনি রাধাকে পাগল করে তুলেছে। তাঁর মন আর তাঁর বশে নেই। সে মন দাসখত লিখে দিয়েছে বংশীবাদকের শ্রীচরণে। আর তাই আনমনা শ্রীমতীর সকল কাজে কেবলই ভুলের সংখ্যা বাড়ে। রাধা বড়াইকে সেই ভুলের বৃত্তান্ত শোনাচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের বংশীখন্ডের এই গানে। রাধা বড়াইকে বলছেন, বড়াই গো, সুমধুর সেই বংশীধ্বনি শুনে কি রাঁধন আমি রাঁধলাম সে কাহিনী বলি শোনো। অম্বল ব্যঞ্জনে আমি দিলাম ঝাল মশলা আর শাকের হাঁড়িতে আমি এত জল ঢাললাম যে সে হাঁড়ি কানা অবধি ভরে উঠল। বড়াই গো, বাঁশির শব্দ শুনে আমার রান্নার জুত হারিয়ে গেল। নন্দনন্দন যে আড়বাঁশি বাজান তার সুর শুনলে মনে হয় পিঞ্জরে বদ্ধ শুকপাখি গান গাইছে। রাধারানী বলছেন,সেই সুর শুনে দেখো আমি পটল ভেবে কাঁচা সুপুরি ঘিয়ে ভেজে ফেলেছি।বুঝে দেখ বড়াই সেই বাঁশির ধ্বনি শুনে চিত্ত আমার কেমন আকূল। আমি তিক্ত নিমের ঝোলে লেবুর রস দিয়ে ফেলেছি, আর জল ছাড়াই হাঁড়িতে ভাত চাপিয়েছি। বড়াই, ওই যমুনার তীরে কানাই বাঁশি বাজাচ্ছেন। তাকে আমার কাছে এনে দাও তুমি। তাকে না পেলে আমি যে আর বাঁচবো না। তাকে এনে তুমি আমার প্রাণ বাঁচাও। সামান্যা এক নারীর মত রাধার এই আর্তি আমাদের হৃদয় পূর্ণ করে তোলে। ভক্তি রস এ গানে বাস্তবের রসে সিক্ত হয়ে মধুময় হয়ে উঠেছে !

পদকর্তা:বড়ু চন্ডীদাস
রাগ:কোড়া
তাল:একতালী
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী