ক্ষণেক রহিয়া চলিয়া উঠিয়া
পণ্ডিত জগদানন্দ।
প্রবেশি নগরে দেখে ঘরে ঘরে
লোক সব নিরানন্দ।।
না মেলে পসার না করে আহার
কারো মুখে নাহি হাসি।
নগরে নাগরী কান্দয়ে গুমরি
থাকয়ে বিরলে বসি।।
দেখিয়া নগর ঠাকুরের ঘর
প্রবেশ করল যাই।
আধমরা হেন ভূমে অচেতন
পড়িয়া আছেন আই।।
প্রভুর রমণী সেই অনাথিনী
প্রভুরে হইয়া হারা।
পড়িয়া আছেন মলিন বসনে
মুদল নয়ানে ধারা।।
দাস দাসী সব আছয়ে নীরব
দেখিয়া পথিক-জন।
সোধাইছে তারে কহ দেখি মোরে
কোথা হৈতে আগমন।
পণ্ডিত কহেন মোর আগমন
নীলাচল পুর হৈতে।
গৌরাঙ্গ সুন্দর পাঠাইল মোরে
তোমা সভারে দেখিতে।।
শুনিয়া বচন সজল নয়ন
শচীরে কহল গিয়া।
আর এক জন চলিল তখন
শ্রীবাস-মন্দিরে ধায়্যা।।
শুনিয়া শ্রীবাস মালিনী উল্লাস
যত নবদ্বীপ-বাসী।
মরা হেল ছিল অমনি ধাইল
পরাণ পাইল আসি।।
মালিনী আসিয়া শচী বিষ্ণুপ্রিয়া
উঠাইল যতন করি।
তাহারে কহিল পণ্ডিত আইল
পাঠাইল গৌরহরি।।
শুনি শচী আই সচকিত চাই
দেখিলেন পণ্ডিতেরে।
কহে তার ঠাঁই আমার নিমাই
আসিয়াছে কত দূরে।।
দেখি প্রেম-সীমা স্নেহের মহিমা
পণ্ডিত কান্দিয়া কয়।
সেই গোরামণি যুগে যুগে জানি
তুয়া প্রেম-বশ হয়।।
হেন নীত রীত গৌরাঙ্গ-চরিত
সভাকারে শুনাইয়া।
পণ্ডিত রহিলা নদীয়া নগরে
সভাকারে সুখ দিয়া।।
চন্দ্রশেখর পশুর সোসর
বিষয়-বিষেতে প্রীত।
গৌরাঙ্গ চরিত পরম অমৃত
তাহাতে না লয় চিত।।