শ্রীশ্রীঅদ্বৈত প্রভুর জন্মলীলা কীর্ত্তন

(মাঘী শুক্লা সপ্তমী তিথি)


‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।’’


‘‘এ তিন ভুবন-মাঝে, অবনী মণ্ডল সাজে,’’

অবনী মণ্ডল সাজে

এ তিন ভুবন-মাঝে—অবনী মণ্ডল সাজে

‘‘তাহে পুনঃ অতি অনুপাম রে।
শোক দুঃখ তাপ ত্রয়, যাঁর নামে শান্ত হয়,’’

যাঁর নামে শান্ত হয়

শোক দুঃখ তাপত্রয়—যাঁর নামে শান্ত হয়

‘‘হেন সেই শান্তিপুর গ্রাম রে।।’’

বিহারভূমি,–বিহারীর একই স্বভাব

শান্তিপুর আর সীতানাথ—বিহারভূমি,–বিহারীর একই স্বভাব

শান্তিপুরে সেই গুণ আছে

সীতানাথে যে গুণ বিরাজে—শান্তিপুরে সেই গুণ আছে

শান্তিপুর নামে শান্ত হয়

শোক দুঃখ তাপত্রয়—শান্তিপুর নামে শান্ত হয়

ত্রিতাপ জ্বালার হয় বিরাম

লইলে শান্তিপুর নাম—ত্রিতাপ জ্বালার হয় বিরাম

‘‘হেন সেই শান্তিপুর গ্রাম রে ।।
কুবের পণ্ডিত তায়, শুদ্ধ সত্ত্ব দ্বিজরায়,’’

শুদ্ধ সত্ত্ব দ্বিজরায়

কুবের পণ্ডিত তায়—শুদ্ধ সত্ত্ব দ্বিজরায়

‘‘নাভাদেবী তাঁহার গৃহিণী
এই—শান্তিপুরে করে স্থিতি, কৃষ্ণপূজা করে নিতি,’’

কৃষ্ণপূজা করে নিতি

শুদ্ধ সত্ত্ব দ্বিজ কুবের পণ্ডিত—কৃষ্ণপূজা করে নিতি
শান্তিপুরে করে স্থিতি—কৃষ্ণপূজা করে নিতি
মহাভাগবত কুবের পণ্ডিত—কৃষ্ণপূজা করে নিতি
লয়ে নিজগৃহিণী নাভাদেবী—কৃষ্ণপূজা করে নিতি

বলে,–জগজনে কৃপা কর

জগৎ পিতা কৃষ্ণচন্দ্র—বলে,–জগজনে কৃপা কর

জগজনে কর ধনী

তোমার,–ভক্তিধনে করে ধনী—জগজনে কর ধনী

‘‘ভক্তিহীন দেখিয়া অবনী।।
কলিহত জীব দেখি, মনেতে দুরুণ দুঃখী,’’

হয়ে,–মনেতে দারুণ দুঃখী

কলিহত জীব দেখি’—হয়ে–মনেতে দারুণ দুঃখী

ব্যাকুল,–হয়ে ডাকেন কুবের পণ্ডিত

কলিহত জীব দেখি’—ব্যাকুল,–হয়ে ডাকেন কুবের পণ্ডিত
কলিজীবের,–দুঃখ দূর কর বলে—ব্যাকুল,–হয়ে ডাকেন কুবের পণ্ডিত

ভক্তিহীন অবনী দেখি

কুবের পণ্ডিত নাভাদেবী—ভক্তিহীন অবনী দেখি

মনে দুঃখ পায় অতি

দেখিয়া জগতরে গতি—মনে দুঃখ পায় অতি

তাই,–‘‘ভক্ত্যে আরাধয়ে ভগবান্।।’’

ব্যাকুল—প্রাণে ডেকেছেন কুবের পণ্ডিত

জগজনের দুঃখ,–দূর কর কৃষ্ণচন্দ্র বলে—
ব্যাকুল,–প্রাণে ডেকেছেন কুবের পণ্ডিত

ভগবান আরাধনা করে

কলিজীবের দুঃখ দূর করিতে—ভগবান আরাধনা করে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

প্রাণনাথ-কৃষ্ণের কাছে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
জীবে সুমতি দাও বলে –ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বলে,–প্রাণকৃষ্ণ রক্ষা কর

কলিজীবের মঙ্গল কর—বলে,–প্রাণকৃষ্ণ রক্ষা কর
জীবের দুঃখ দূর কর—বলে,–প্রাণকৃষ্ণ রক্ষা কর

‘‘সেই আরাধনা কাজে, নাভাদেবী-গর্ভমাঝে,
মহাবিষ্ণু হৈলা অধিষ্ঠান।’’

মহাবিষ্ণু হৈলা অধিষ্ঠান

করিতে জীবের উত্তম বিধান—মহাবিষ্ণু হৈলা অধিষ্ঠান
‘করিতে জীবের উত্তমবিধান’—
পঞ্চম পুরুষার্থ দিয়ে দান—করিতে জীবের উত্তমবিধান

মহাবিষ্ণু অধিষ্ঠান হইলা

কুবের পণ্ডিতের আরাধনে—মহাবিষ্ণু অধিষ্ঠান হইলা
নাভাদেবীর গর্ভমাঝে—মহাবিষ্ণু অধিষ্ঠান হইলা
জগজীবে শান্তি দিতে—মহাবিষ্ণু অধিষ্ঠান হইলা

মহাবিষ্ণু মনে করে

নিজ,–জগৎ রক্ষা করবার তরে—মহাবিষ্ণু মনে করে
অহৈতুকী-কৃপার বসে—মহাবিষ্ণু মনে করে

এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে

চিরকালের অনর্পিত—এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে
ভক্তি,-পাবে না কেউ যোগ্যতাবলে—তাই এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে
আমার,–বলবান প্রভুর দ্বারে—এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে
‘আমার,–বলবান প্রভুর দ্বারে’—
স্বেচ্ছাময় বেদবিধির পার—আমার,–বলবান প্রভুর দ্বারে

এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে

এই,–জগৎ উদ্ধারে সঙ্কল্প করে—এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে

‘‘মহাবিষ্ণু হৈলা অধিষ্ঠান।।
মাঘমাস শুভ-ক্ষণে, তাই,–শুক্লাসপ্তমীর দিনে,’’

যাইরে তিথির বালাই যাইরে

এই,–মাখাশুক্লা সপ্তমী তিনিথ—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যাতে,–মহাবিষ্ণু অবতীর্ণ—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
গৌর,–আনা ঠাকুর এল যাতে—যাইরে তিথির বালাই যাইরে

‘‘অবতীর্ণ-হৈলা মহাশয় হে।’’

আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরে

কুবের পণ্ডিতের আরাধনে—আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরে
কলিহত-জীবে শান্তি দিতে—আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরে

আইলা শান্তিপুরাধিপ

এই শুক্লা সপ্তমীদিনে—আইলা শান্তিপুরাধিপ
নাশিতে,–কলিঘোর পাপতামসৃ—আইলা শান্তিপুরাধিপ
জ্বালায়ে অপূর্ব্ব শান্তিদীপ—আইলা শান্তিপুরাধিপ

আইলা,–মহাবিষ্ণু শান্তিপুরে

চির,–শান্তি দিতে জগজীবে—আইলা,–মহাবিষ্ণু শান্তিপুরে
‘চির-শান্তি দিতে জগজীবে’—
পরমবস্তু নির্দ্দেশিতে—ধনী করে প্রেমধনেতে
‘পরমবস্তু নির্দ্দেশিতে’—
আনি,–পরতত্ত্ব-সীমা জগতে—নির্দ্দোশিতে
‘আনি,–পরতত্ত্ব-সীমা জগতে’—
মধুরে,–নদীয়াতে গৌরাঙ্গরূপেতে—আনি,–পরতত্ত্ব-সীমা জগতে

চিরশান্তি দান করি এই আশায়

এই,–কলিহত-পতিতজীবে—চিরশান্তি দান করি এই আশায়
শ্রীকৃষ্ণ-ভকতিদ্বারে—চিরশান্তি দান করি এই আশায়

‘‘অবতীর্ণ হৈলা মহাশয়।’’


জানাইতে পরম বিষয় আশ্রয়—অবতীর্ণ হৈলা মহাশয়
জানাইতে পরম বিষয় আশ্রয়’—
…. পরতত্ত্ব নাহি হয়—জানাইতে পরম বিষয় আশ্রয়

‘‘অবতীর্ণ হৈলা মহাশয় হে।
দেখি’ হরষিত মতি, হইলা পণ্ডিত অতি,’’

আনন্দসিন্ধু উথলিল

পুত্র-মুখ-ইন্দু হেরে—আনন্দসিন্ধু উথলিল

কুবের পণ্ডিত মনে গণে

পুত্রের শান্তিময়-মুখ হেরে—কুবের পণ্ডিত মনে গণে

বুঝি,–হইলা প্রকট শান্তিদীপ

ধরিয়া আমার সুতরূপ—বুঝি,–হইলা প্রকট শান্তিদীপ
ঘুচাইতে জীবের মোহান্ধকূপ-বুঝি,–হইলা প্রকট শান্তিদীপ

কুবের—পণ্ডিতের আনন্দমন

দেখি’ নিজ-তনয়-বদন—কুবের পণ্ডিতের আনন্দমন
দেখি’ নিজ-তনয়-বদন’—
অখিল-শান্তির সদন—দেখি’ নিজ-তনয়-বদন

কুবের পণ্ডিতের আনন্দ-মন

‘‘নয়নে আনন্দধারা বয়।।’’

আনন্দ আর ধরে নারে

মহাভাগবত কুবের পণ্ডিতের—আনন্দ আর ধরে নারে
নিজ-তনয়-বদন হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে
আনন্দদাতার বদন হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে
আনন্দাশ্রু বেয়ে পড়ে—আনন্দ আর ধরে নারে

‘‘আচম্বিতে জগজনে, আনন্দ পাইয়া মনে,
কি লাগিয়া কেহ নাহি জানে।।’’

আজ,–আনন্দ জনমিল আপনে

আচম্বিতে জগবাসীর মনে—আজ,–আনন্দ জনমিল আপনে

জগজীবের আনন্দ মনে

মহাবিষ্ণু,–জগৎকর্ত্তার আগমনে—জগজীবের আনন্দ মনে
কারণ কেহ কিছু না জানে—জগজীবের আনন্দ মনে

তাই ত জীবের আনন্দ মন

শান্তিদাতার হল আগমন—তাই ত জীবের আনন্দ মন
‘শান্তিদাতার হল আগমন’—
করিতে শান্তি বিতরণ,–শান্তিদাতার হল আগমন

তাই ত জীবের আনন্দ মন
সূচনা হইল মনে

শান্তিপুর-নাথের আগমনে—সূচনা হইল মনে
আনন্দঘনের আগমনে—সূচনা হইল মনে

‘‘এ বৈষ্ণবদাসে বলে, উদ্ধার হইবে হেলে,
পতিত-পাষাণ্ড-দীনহীনে।।’’

আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরেতে

কলিহত,–পতিতজীবে শান্তি দিতে—আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরেতে

আর,–কলিজীবের ভয় নাইরে

দাতা-সীতানাথ আইলা—আর,–কলিজীবের ভয় নাইরে
আইলা,–পতিত-দুর্গতিত্রাতা—আর,–কলিজীবের ভয় নাইরে
‘আইলা,–পতিত-দুর্গতিত্রাতা’—
মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা—আইলা,–পতিত-দুগতিত্রাতা
আর পতিতের ভয় কিবা—আইলা,–পতিত-দুর্গতিত্রাতা

দীনহীন-পতিত উদ্ধার হবে

শান্তিপুর-নাথের কৃপাপ্রভাবে—দীনহীন-পতিত উদ্ধার হবে

আর পতিতের ভয় কি বল

গৌর-আনা-ঠাকুর এল—আর পতিতের ভয় কি বল
‘গৌর-আনা-ঠাকুর এল’—
পতিত-পাবন-অবতার—গৌর-আনা-ঠাকুর এল

আর পতিতের ভয় কি বল

‘‘কুবের পণ্ডিত, অতি হরষিত,
দেখিয়া পুত্রের মুখ।’’

আনন্দসিন্ধু উথলিল

ভাগ্যবন্ত কুবের পণ্ডিতের—আনন্দসিন্ধু উথলিল
দেখি’ পুত্র-মুখ-ইন্দু—আনন্দসিন্ধু উথলিল

‘‘দেখিয়া পুত্রের মুখ।’’

আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে

দেখি’ পুত্র-মুখ-ইন্দু—আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
নিজ-পুত্র,–শান্তিপুর-নাথ হেরে—আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
আপন,–তনয়—বদনচাঁদ হেরে—আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে

‘‘করি জাতকর্ম্ম, যে আছিল ধর্ম্ম,
বাঢ়য়ে মনের সুখ।’’

বাঢ়য়ে মনের সুখ

দেখিয়া পুত্রের মুখ—বাঢ়য়ে মনের সুখ

জাতকর্ম্ম করে আর বদন হেরে

‘‘সব সুলক্ষণ, বরণ কাঞ্চন,
বদন-কমল-শোভা।’’

বদন নয় প্রস্ফুটিত কমল
বদন নয় যেন কমল ফুটেছে
যে দেখে তাপ জুড়ায়ে যায় রে

বদন-কমল হেরি’—যে দেখে তাপ জুড়ায়ে যায় রে

‘‘বদন-কমল-শোভা।
আজানুলম্বিত, বাহু সুবলিত,
জগজন-মন-লোভা।।
নাভী সুগভীর, পরম সুন্দর,
নয়ন কমল-জিনি।’’

যার পানে চায় সে জুড়ায়ে যায়

কমল-নয়ন-কোণে একবার—যার পানে চায় যে জুড়ায়ে যায়
সকল সন্তাপ দূরে পলায়—যার পানে চায় সে জুড়ায়ে যায়

‘‘অরুণ চরণ, নখ দরপণ,’’

ও ত নয় রাতুল চরণ

তাপিত-জনের বিশ্রামস্থান—ও ত নয় রাতুল চরণ

‘‘অরুণ-চরণ, নখ দরপণ,
জিনি কত বিধুমণি।।’’


যেন চাঁদ খানি খানি
ও চরণ-নখ-মণি—যেন চাঁদ খানি

‘‘মহাপুরুষের, চিহ্ন মনোহর,’’
আমার সীতানাথের অঙ্গে
‘‘মহাপুরুষের, চিহ্ন মনোহর,
দেখিয়া বিস্মিত সবে।’’

আনন্দ আর ধরে নারে

কুবের পণ্ডিতের অন্তরে—আনন্দ আর ধরে নারে

আইলা অপরূপ সুত

কুবের পণ্ডিতের ভাগ্যবশে— আইলা অপরূপ রূপ

দেখি’ মনে মনে গণে

মহাপরুষের চিহ্নযুত–দেখি মনে মনে গণে
পুত্ররূপে মহাপুরুষ আইলা—দেখি’ মনে মনে গণে

এ কেবা এল রে

কুরের পণ্ডিতের ঘরে—এ কেবা এল রে

এ ত সামান্য বালক নয়

লক্ষণেতে দেখা যায়—এ ত সামান্য বালক নয়

বুঝি,–মূরতি ধরে এসেছে

জগতে যারে শান্তি বলে—বুঝি,–মূরতি ধরে এসেছে

দেখে অশান্তি গেল দূরে

শান্তি এল বুঝি মূরতি ধরে—দেখে অশান্তি গেল দূরে

‘ইঁহার প্রভাবে, জগত তরিবে’’

এ ত সামান্য পুত্র নয় গো

ভাগ্যবান কুবের পণ্ডিতের—এ ত সামান্য পুত্র নয় গো

পুত্ররূপে মহাপুরুষ আইলা

অবধূত চিহ্নযুত—পুত্ররূপে মহাপুরুষ আইলা

জন্মিয়াছে কুবেরের ঘরে

জগত-উদ্ধার-তরে—জন্মিয়াছে কুবেরের ঘরে

আইল,–অপরূপ বালকরূপে

সবাই দেখিয়া বলে—আইল,–অপরূপ বালকরূপে
কুবের পণ্ডিতের ঘরে—আইল,–অপরূপ বালকরূপে
‘কুবের পণ্ডিতের ঘরে’—
মহাপুরুষরূপ ধরে—কুবের পণ্ডিতের ঘরে

আইল,–অপরূপ বালকরূপে

ত্রিজগৎ তারিবার তরে—আইল,–অপরূপ বালকরূপে

কলিহত জীব উদ্ধার হবে

এই পুত্রের প্রভাবে—কলিহত জীব উদ্ধার হবে

‘‘হেন বুঝি অনুভবে।।
যত পুরনারী, শিশুমুখ হেরি,
আনন-সাগরে ভাসে।’’

আনন্দেতে উনমত

শান্তিপুর-নারী যত—আনন্দেতে উনমত

আনন্দ আর ধরে নারে

শিশুমুখচন্দ্র হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে
যত পুরনারীর মনে—আনন্দ আর ধরে নারে
তারা,–উলু উলু ধ্বনি করে—আনন্দ আর ধরে নারে

উথলিল আনন্দসিন্ধু

দেখি’ বালক-মুখ-ইন্দু—উথলিল আনন্দ-সিন্ধু

আনন্দ উথলি পড়ে

শত শত ধারে নয়ন-দ্বারে—আনন্দ উথলি পড়ে
কুবের—তনয়-বদন হেরে—আনন্দ উথলি পড়ে

‘‘না ধরয়ে হিয়া, পুনঃ পুনঃ গিয়া,
নিরখয়ে অনিমিষে।।’’

আঁখির পলক পড়ে না গো

কুবের-তনয়-বদন হেরে—আঁখির পলক পড়ে না গো

একবার দেখে আশ মিটে নারে

ত্বরাকরি পুনঃপুনঃ গিয়া দেখে—একবার দেখে আশ মিটে নারে

যত দেখে তত সাধ বাড়ে

আঁখি ফিরাইতে নারে—ত দেখে তত সাধ বাড়ে
ঘরে,–যাবার কথা ভুলে যায় রে—যত দেখে তত সাধ বাড়ে

তখন,–বিধাতারে নিন্দা করে

অনিমিখে শিশু বদরন হেরে’—তখন,–বিধাতারে নিন্দা করে
যত,–অনুরাগিণী শান্তিপুর-নারী—তখন,–বিধাতারে নিন্দা করে

তারে কি দুটী নয়ন দেয় গো

যে হেরিবে কুবের-তনয়—তারে কি দুটিী নয়ন দেয় গো

তারে কি দেয় দুটী নয়ন

যে দেখিবে এই বালক-বদন—তারে কি দেয় দুটী নয়ন

বিধি,–এমন সৃজন করত নারে

যদি ঐ রূপ দেখিত বারেক—বিধি,–এমন সৃজন করত নারে

সবে দিল দুটী আঁখি
তাতে আবার নিমিষ দিল
দেখে আশ মিটে নারে
যত পিয়ে পিয়াস বাড়ে

চাঁদের সুধা আঁখির দ্বারে–যত পিয়ে পিয়াস বাড়ে

কোটি আঁখি বাঞ্ছা করে

–একবার শিশুমুখ হেরে–কোটি আঁখি বাঞ্ছা করে

”তাহার মাতারে, করে পরিহারে,
কহে এহেন, সুত যার।
তার ভাগ্য সীমা, কি দিব উপমা,
ভুবনে কে সম তার।।”

সে ত’ অতি ভাগ্যবতী

–এ হেন তনয় পেয়েছে –সে ত’ অতি ভাগ্যবতী

তোমার সৌভাগ্য কিসে বা গণি

ভাগ্যবতী নাভাদেবী–তোমার সৌভাগ্য কিসে বা গণি
ঘুমে,–হয়েছ এ-হেন বালক -জননী–তোমার সৌভাগ্য কিসে বা গণি ;

”এতেক বচন, সব নারীগণ,
কহে গদগদ ভাষা।”

প্রেমে কণ্ঠ রোধ হল রে

বালকের গুণ বলতে বলতে –প্রেমে কণ্ঠ রোধ হল রে
আর ত তারা বলতে নারে–প্রেমে কণ্ঠ রোধ হল রে

তারা সবে মনে করে

বালক-রূপ দেখতে দেখতে –তারা সবে মনে করে
তাদের দু’নয়নে বারি ঝরে–তারা সবে মনে করে

তবে হিয়া জুড়াত রে

দেখে ত আশ মিট্‌ত নারে–তবে হিয়া জুড়াত রে
যদি বারেক পেতাম কোলে–তবে হিয়া জুড়াত রে

”জাগত তারণ, বুঝিল কারণ,
দাস বৈষ্ণবের আশা।।”

জগত বুঝাবার তরে

আইলা, -শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরে –জগত বুঝাবার তরে

আইলা,–মহাবিষ্ণু শান্তিপুরে

জগৎ উদ্ধার করবার তরে –আইলা–মহাবিষ্ণু শান্তিপুরে

অনায়াসে জগৎ উদ্ধার হবে

এই,–কুবের -তনয়-প্রভাবে–অনায়াসে জগৎ উদ্ধার হবে

এ বালকের আগমন

জগতের তারণ-কারণ–এ বালকের আগমন

জগৎ উদ্ধারিবে হেলে

এই বালক-কৃপা-বলে–জগৎ উদ্ধারিবে হেলে

”নাহি কৃষ্ণনাম-তত্ত্ব, বিষয়ে সকলে মত্ত,”

নশ্বর-বিষয়ে সকলে মত্ত
প্রাকৃত-বিষয়ে সকলে মত্ত

নাহি কৃষ্ণনাম-তত্ত্ব–প্রাকৃত-বিষয়ে সকলে মত্ত

মাতাইল বিষয়-বিষে

বলবান্‌ কলিরাজে-মাতাইল বিষয়-বিষে
নাহি কৃষ্ণ -নাম-রসে–মাতাইল বিষয়-বিষে

অভিমানে মত্ত হল

কলিরাজের শাসনে জীব– অভিমানে মত্ত হল

দৈব-দৃষ্টি দূরে গেল

পুরুষাকারে মত্ত হল–দৈব-দৃষ্টি দূরে গেল

”ভক্তিশূন্য হইল অবনী।”

তাই প্রাণ কেঁদে উঠিল

ভক্তিশূন্য জগৎ দেখে’–তাই প্রাণ কেঁদে উঠিল
মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তার–তাই প্রাণ কেঁদে উঠিল

”কলিকাল-সর্প-বিষে, দগ্ধ জীব মিথ্যারসে,”

কর্ত্তব্য বোধ হল অকর্ত্তব্যে

অবশ্য কর্ত্তব্য গেল ভুলে–কর্ত্তব্য বোধ হল অকর্ত্তব্যে

”না চিন্তয়ে কেবা সে আপনি।।”

কেউ ত ভাবে না একবার

কে আমি কি কর্ত্তব্য আমার–কেউ ত ভাবে না একবার
কেন তাপত্রয় জারে আমায়–কেউ ত ভাবে না একবার

কেউ ত ভাবে না কর্ত্তব্য আপনার

কেবল করে আমার আমার–কেউ ত ভাবে না কর্ত্তব্য আপনার

”নিজ কন্যাপুত্রোৎসবে, নিরবধি মত্ত সবে”

নিজ কর্ত্তব্য স্থির কৈল

পুত্র-কলত্রাদি-ভোগ–নিজ কর্ত্তব্য স্থির কৈল

নিরবধি মত্ত সবে

নিজ কন্যাপুত্রোৎসবে–নিরবধি মত্ত সবে
এই কর্ত্তব্য মনে করে–নিরবধি মত্ত সবে

অনিত্যেতে মত্ত সবে

নিজ স্বরূপ পাসরিয়ে–অনিত্যেতে মত্ত সবে

”নাহি অন্য শুভ কর্ম্ম লেশ।
যক্ষ পূজে মদ্য-মাৎসে নানামতে জীব হিংসে”

অবশ্য-কর্ত্তব্যের বিস্মরণ

কায়মনোবাক্যে শ্রীকৃষ্ণভজন–অবশ্য-কর্ত্তব্যের বিস্মরণ

”এইমত হইল সর্ব্বদেশ।
দেখিয়া করুণা করি, কমলাক্ষ নাম ধরি,”

চাইলা আপন-জগৎ-পানে

জগজীবের দুর্দ্দশা জানি মনে–চাইলা আপন-জগৎ-পানে
মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা–চাইলা আপন-জগৎ-পানে

অমনি,–প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল রে

কলিজাবের দশা দেখে’–অমনি, –প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল রে
মহাবিষ্ণু জগৎ-কর্ত্তার–অমনি,–প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল রে
কুবের,–নাভাদেবীর আরাধনা-ফলে–অমনি,–প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল রে
জগতের দুর্গতি দেখে–অমনি,–প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল রে

আজি হৈলা, –‘মহাবিষ্ণু গৌড়ে অবতার।”

মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে

নন্দনন্দন দেখাবার তরে–মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে
জগজীবে শান্তি দিতে–মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে
‘জগজীবে শান্তি দিতে’–
তাদের ভ্রম ঘুচাইয়ে –জগজীবে শান্তি দিতে

মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে

কমলাক্ষ নাম ধরে–মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে

আইলা, –মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা

নিজ-জগতের দুর্দ্দশা দেখি’–আইলা, –মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা

”সাঙ্গোপাঙ্গ সমান্বতে, প্রেম-সিন্ধুনন্দসুতে,
দেখাইব এই অঙ্গীকার।।”

মহাবিষ্ণু হৈলা অবতার

করিয়া এই অঙ্গীকার–মহাবিষ্ণু হৈলা অবতার

করাব জীবের নয়ন-গোচর

আমার প্রভু নন্দকুমার–করাব জীবের নয়ন-গোচর

স্বরূপে আমি দেখাব তারে

বেদে যারে কিম্‌ বলে–স্বরূপে আমি দেখাব তারে
‘বেদে যারে কিম্‌ বলে’–
অনাদি অনন্ত–বেদে যারে কিম্‌ বলে

স্বরূপে আমি দেখাব তারে

বেদে যারে রস বলে –স্বরূপে আমি দেখাব তারে
নিত্য,–নবকৈশোর নটবর, –এই,–স্বরূপে আমি দেখাব তারে
অখিল-রসামৃতময়–এই, –স্বরূপে আমি দেখাব তারে

শুধু,–দেখান নয় ভোগ করাব

আনি,–আমার প্রভু নন্দসুত–শুধু,–দেখাব নয় ভোগ করাব
‘আনি,–আমার প্রভু নন্দসুত’–
সাঙ্গোপাঙ্গ সমন্বিত–আনি,–আমার প্রভু নন্দসুত

শুধু,–দেখাব নয় ভোগ করাব
অবতীর্ণ হৈল শান্তিপুরে

আনিব দেখাব সঙ্কল্প করে–অবতীর্ণ হৈল শান্তিপুরে
‘আনিব দেখাব সঙ্কল্প করে’–
সাঙ্গোপাঙ্গে মদনগোপালে–আনিব দেখাব সঙ্কল্প করে

অবতীর্ণ হৈল শান্তিপুরে
মহাবিষ্ণু আইলা সাঙ্গোপাঙ্গে

জগজীবে–নন্দনন্দন দেখাইতে–মহাবিষ্ণু আইলা সাঙ্গোপাঙ্গে

”দেখাইব এই অঙ্গীকার।।
তাই,–সর্ব্ব-আগে আগুয়ান, জীবেরে করিতে ত্রাণ,
শান্তিপুরে করিলা প্রকাশ।”

সীতানাথ হইলা প্রকাশে

মনে করি এই অভিলাষে–সীতানাথ হইলা প্রকাশে
বিহারভূমি প্রস্তুত করবার আশে–সীতানাথ হইলা প্রকাশে

নৈলে,–কোথা এসে নাচ্‌বে

আমার প্রাণের মদনগোপাল–নৈলে–কোথা এসে নাচ্‌বে
বিহারভূমি প্রস্তুত না হলে –কোথা এসে নাচ্‌বে

তাই,–”সর্ব্ব-আগে আগুয়ান, জীবেরে করিতে ত্রাণ,
শান্তিপুরে করিলা প্রকাশ।
সকল দুষ্কৃতি যাবে, সবে কৃষ্ণ-প্রেম পাবে,
কহে দীন বৈষ্ণবের দাস।।”

আইলা শ্রীঅদ্বৈত গুণমণি

জীবে,–প্রেমধনে করিতে ধনী–আইলা, –শ্রীঅদ্বৈত গুণমণি

সবে কৃষ্ণপ্রেমে পাবে

প্রভু,–সীতানাথের করুণাতে–সবে কৃষ্ণপ্রেম পাবে

সীতানাথ আইলা শান্তিপুরে

প্রাণ গৌর দিতে প্রেম দিতে–সীতানাথ আইলা শান্তিপুরে

প্রাণভরে জয় দাও

গৌর-আনা-ঠাকুর সীতানাথের–প্রাণভরে জয় দাও

যদি,–”অদ্বৈত না হত, কি মেনে হইত,
কেমনে ধরিতু দে।”

কলিজীবের গতি কিবা হত

যদি, –সীতানাথ না আসিত–কলিজীবের গতি কিবা হত

”হা কৃষ্ণ বলিয়া, কাঁদিয়া কাঁদিয়া,
গৌরাঙ্গ আনিত কে।।”

কেঁদে কেঁদে কে আন্‌ত রে

গৌরাকৃতি মদনগোপালে–কেঁদে কেঁদে কে আন্‌ত রে
অনশনে গঙ্গাতীরে বসে–কেঁদে কেঁদে কে আনত রে
গঙ্গাজল-তুলসী করে–কেঁদে কেঁদে কে আন্‌ত রে
গর্জ্জন-হুঙ্কার করে–কেঁদে কেঁদে কে আন্‌ত রে
‘গর্জ্জন-হুঙ্কার করে’–
আমার,–প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে–গর্জ্জন-হুঙ্কার করে

কেঁদে কেঁদে কে আনত রে

গোলোক সম্পুট শূন্য করে–কেঁদে কেঁদে কে আন্‌ত রে

কেবা গৌর দেখাইত

যদি সীতানাথ না আনিত–কেবা গৌর দেখাইত

প্রাণ গৌর কেবা দেখাইতে

রাইকানু মিলিত মুরতি–প্রাণ গৌর কেবা দেখাইত

”হুঙ্কার করিয়া, আসন টলাইয়া,
গৌরাঙ্গ আনিত কে।।
গৌরাকৃতি, মদনগোপাল,
জগতে দেখাত কে।।”

কে দেখাত জগতেরে

নিকুঞ্জ-বিলাস-বৈভব–কে দেখাত জগতেরে

কে দেখা’ত গৌর-মূরতি

রাধাকৃষ্ণ,–প্রণয়-বিকৃতি-আকৃতি–কে দেখা’ত গৌর-মূরতি
যুগল,–উজ্জ্বল -রস-নির্য্যাস–কে দেখাত গৌর-মূরতি
মহা,–রাসরসের পরিণতি–কে দেখাত গৌর-মূরতি
রাইকানু একাকৃতি –কে দেখা’ত গৌর-মূরতি

কে দেখাত গৌর–গুণমণি

স্বর্ণপঞ্চালিকা ঢাকা নীলমণি–কে দেখাত গৌরমণি

কে দেখা’ত মধুর গৌরদেহ

যদি,–দয়ানিধি, সীতানাথ না আনিত–কে দেখাত মধুর গৌরদেহ
নিত্যমিলনে নিত্যবিরহ –কে দেখাত মধুপর গৌরদেহ

কে দেখাত প্রাণের শচীসুত

মুরতিমন্ত প্রেমবৈচিত্ত্য–কে দেখাত প্রাণের শচীসুত

কে দেখাত চিতচোরা গোরা

পরস্পর,–বুকে ধরে আত্মহারা–কে দেখাত চিতচোরা গোরা
বিলাস-বিবর্ত্ত-রঙ্গে ভোরা–কে দেখাত চিতচোরা গোরা

প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্‌ছে

সীতানাথের কথা কইতে কইতে –প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্ছে
আজ তার,–আগমন দিন জেনে–প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্ছে

হা শান্তিপুর-নাথ
আজ তোমার আসবার দিন

মাঘীশুক্লা সপ্তমীতিথি–আজ তোমার আস্‌বার দিন

এসেছিলে এই-দিনে

শান্তিপুরাধীশ শান্তিদীপ-এসেছিলে এই-দিনে
শান্তিধাম শান্তিপুরে–এসেছিলে এই-দিনে
জীবে শান্তি দিবার তরে–এসেছিলে এই-দিনে

ডেকেছিলে অতিকাতরে

ঐ গঙ্গাতীরে নির্জ্জন বলে–ডেকেছিলে অতিকাতরে
আমার,–প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে –ডেকেছিলে অতিকাতরে
আমার, –প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে’–
জীবের দশা বড়ই মলিন–আমার,–প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে

ডেকেছিলে অতিকাতরে
শ্রীগুরুমুখে শুনেছি মোরা

তোমার সে ডাকার কথা-শ্রীগুরুমুখে শুনেছি মোরা

শুনেছি তোমার সে ব্যবহার

”জয় জয় অদভুত, সো পহুঁ অদ্বৈত,
সুরধুনী-সন্নিধানে।
আঁখি মুদি রহে, প্রেমে নদী বহে,
বসন তিতিল ঘামে।।
নিজ পহুঁ মনে, ঘন গরজনে,
উঠে জোড়ে জোড়ে লম্ফ।
ডাকে বাহু তুলি, কাঁদে ফুলি ফুলি
দেহে বিপরীত কম্প।।
শ্রীঅদ্বৈত-হুঙ্কারে, সুরধুনী-তীরে,
আইলা নাগর-রাজ।”

গৌর আইলা নদেপুরে

সীতানাথ তোমার চোখের জলে–গৌর আইলা নদেপুরে

আইলা,–শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য

এলেন,–বলরাম নিত্যানন্দ–আইলা, –শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য

সবাই ত এল হে

যারা যারা খেলার সাথী–সবাই ত এল হে
তোমার প্রেম-আকর্ষণে –সবাই ত এল হে

হৈল খেলার আরম্ভ

নাম-সঙ্কীর্ত্তন-রঙ্গ-হৈল খেলার আরম্ভ
ভাগ্যবন্ত-শ্রীবাস-গৃহে-হৈল খেলার আরম্ভ
ভাগ্যবন্ত-শ্রীবাস-গৃহে’–
যাঁর –কান্না শুনে ডেকেছিলে তুমি–সেই, –ভাগ্যবন্ত-শ্রীবাস-গৃহে

হৈল খেলার আরম্ভ
দেখ্‌তে দেখ্‌তে ভেসে গেল
প্রেমবন্যায় ভেসে গেল

অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ–প্রেমবন্যায় ভেসে গেল
স্থাবর-জঙ্গম প্রেম পেল-প্রেমবন্যায় ভেসে গেল

দেখিতে পেল জগজনে

তোমার, –প্রাণের প্রাণ গোপ্যধনে–দেখিতে পেল জগজনে

শুধু কেবল দেখা নয়
মাতিল সব জগজনে

মহাভাব,–প্রেমরস -সুধা-পানে–মাতিল সব জগজনে

সেই একদিন আর এই একদিন
বড়ই দুঃখে জ্বলছে হিয়া
কেউ ত ভজ্‌ল না

তোমার,–আনানিধি নিতাই-গৌরসোণা–কেউ ত ভজ্‌ল না

তাই,–দুঃখ জানাই তোমার কাছে

দুঃখ জানবার আর কে আছে–তাই,–দুঃখ জানাই তোমার কাছে

যে-দিন হতে পিয়ায়েছ

তোমার,–গৌর-নাম -সুধা-রস–যেদিন হতে পিয়ায়েছ

সে-দিন হতে প্রাণে জাগে
জগজীবে ভোগ করে

হরিনাম-সুধারস-জগজীবে ভোগ করে

আশা ত মিট্‌ল না
তাই জানাই তোমার কাছে
কেবা পেতে পারে

তোমার,–আনানিধি তুমি না দিলে–কেবা পেতে পারে

এই কর সীতানাথ
আজ তোমার আস্‌বার দিন

নিশ্চয় এসেছ তুমি–আজ তোমার আস্‌বার দিন

এই নিবেদন শ্রীচরণে
আর লুকায়ে থেকো না
একবার এস হে
তুমি বটে এসেছিলে
শান্তিপুর-নাথ নাম পেয়েছিলে
কিন্তু,– তোমার আসা সফল হয় নাই

তোমার নাম সার্থক হয় নাই–কিন্তু,–তোমার আসা সফল হয় নাই

অশান্তি-অনলে জগত জ্বলে

তোমার, –গৌরধনে বিমুখ হয়ে–অশান্তি-অনলে জগত জ্বলে

নামে যে কলঙ্ক হল

তোমার শান্তিপুর-নাথ–নামে যে কলঙ্ক হল
জগত যে অশান্তিতে ভর্‌ল–নামে যে কলঙ্ক হল

তারাই ঐ নাম দিয়েছিলে

যাদের,–তুমি গৈর দেখায়েছিলে–তারাই ঐ নাম দিয়েছিলে

আমরা তোমায় কেন বলব

শান্তিপুর-নাথ বলে–আমরা তোমায় কেন বলব

শান্তিপুর-নাথ বলব তবে

তোমার,–নামের মহিমা দেখাও আগে–শান্তিপুর-নাথ বলব তবে

তেমনি করে আবার এস

শান্তিপুর-নাথ নাম সফল কর–তেমনি করে আবার এল

একবার এসে বস হে
এবার,–গঙ্গাতীরে বসলে হবে না

আর,–শান্তিপুর আস্‌তে হবে না–এবার,–গঙ্গাতীরে বসলে হবে না

এস প্রতিহৃদে বস
কেউ ত তোমার পর নয়

জগৎ যদি তোমার হয়–কেউ ত তোমার পর নয়
‘জগৎ যদি তোমার হয়’–
ওহে, –মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা–জগৎ যদি তোমার হয়
কেউ ত তোমার পর নয় প্রতিহৃদে বস হে
ত্রিতাপ-দগ্ধ–প্রতিহৃদে বস হে

তেমনি করে ডাক হে

গঙ্গতীরে বসে যেমন ডেকেছিলে–তেমনি করে ডাক হে
জীবের প্রতি হৃদে বসে–তেমনি করে ডাক হে
জীবের দুঃখে দুঃখা হয়ে–তেমনি করে ডাক হে
এস গৌর এস বলে–তেমনি করে ডাক হে

এস গৌর আবার এস
এই বল সীতানাথ ডাক

জগৎ-জীবের প্রতিহৃদে বস–এই বলে সীতানাথ ডাক

আমার কত না ডাক্‌ছি

আমাদের ক্ষুদ্র প্রাণ লয়ে–আমরা কত না ডাক্‌ছি

সাড়া ত পাই না
তাইতে ডাকি তোমারে

তোমার,–ডাক শুনে রইতে নার্‌রে–তাইতে ডাকি তোমারে

শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি

”শুতিয়া আছিনু মুঁই ক্ষীরোদ-সাগরে রে।
নিদ্রা ভঙ্গ হইল মোর নাড়ার-হুঙ্কারে রে।।

আর কেবা দিবে নাড়া

সীতানাথ তোমা বিনা–আর কেবা দিবে নাড়া

তাই বলি,–তেমনি করে ডাক আবার

এস প্রাণগৌর আবার–তাই বলি, –তেমনি করে ডাক আবার

আর এক কথা বলি
তারেও ডেকে আন

গৌরের অভিন্ন-তনু–তারেও ডেকে আন

অভিমান করে বল তারে
ডাক্‌তে বা হবে কেন
এসেছে ত তোমার ঘরে

ত্রিকালসত্য-লীলায়–এসেছে ত তোমার ঘরে
এখনও ত আছে হে–এসেছে ত তোমার ঘরে

বল দেখি জোর করে

পেয়েছ তা তোমার ঘরে–বল দেখি জোর করে

অভিমান করে বল

তুমি, —অভিমান করতে পার–অভিমান করে বল

পূর্ণ ত হয় নাই

তোমার বিশ্বম্ভর নাম–পূর্ণ ত হয় নাই

প্রতিজ্ঞা করেছিল

নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরাব বলে–প্রতিজ্ঞা করেছিলেন

সে প্রতিজ্ঞা রইল কোথা

জগৎ যে রণে মাকা–যে প্রতিজ্ঞা রইল কোথা

নামে যে কলঙ্ক রট্‌ল

প্রতিজ্ঞা পূর্ণ কৈ হল –নামে যে কলঙ্ক রট্‌ল

কৈ কৈ অবধূত
তোমার,–আজ্ঞা পালন হল কৈ
তোমাকেই ত দিয়াছেন ভার

বিশ্বম্ভর গৌর আমার–তোমাকেই ত দিয়াছেন ভার
নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরিবার–তোমাকেই ত দিয়াছেন ভার

কৈ তা হল কৈ
যাও নিতাই আবার যাও

গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে–যাও নিতাই আবার যাও
নাম-প্রেমে জগৎ মাতাও–যাও নিতাই আবার যাও

চল নিতাই আবার চল
চল বিশ্ব পূর্ণ করবে

তোমার গৌর-নাম-প্রেমে–চল বিশ্ব পূর্ণ করবে

এস মিলে দুইজনে

শাখারূপে দুইবাহু–এস মিলে দুইজনে
শাখারূপে দুইবাহু’–
শ্রীচৈতন্য-কল্পতরুর–শাখারূপে দুইবাহু

এস মিলে দুইজনে

জগৎ ভাসাও গৌর-প্রেমে–এস মিলে দুইজনে

পূরাও মোদের এই বাসনা

ও গুণের অদ্বৈত সোণা–পূরাও মোদের এই বাসনা

প্রাণে আছে অনেক বেদনা
সকল সুখেই বঞ্চিত মোরা
তখন জনম দাও নাই

যখন খেললে গৌর এনে–তখন জনম দাও নাই
‘যখন খেল্‌লে গৌর এনে’–
প্রভু-নিত্যানন্দ-সনে–যখন খেল্‌লে গৌর এনে

তখন জনম দাও নাই
নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

সেই লীলা-আদর্শন-শেল–নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

কিন্তু ,– ব্যথা করে মানি না

এখন আর সে বেদনা–কিন্তু,–ব্যথা করে মানি না

আশাপথ চেয়ে আছি

গৌরহরির,–মুখের কথা স্মঙরি–আশাপথ চেয়ে আছি

শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি

”এই ,–পৃথিবীর মধ্যে আছে যত দেশ গ্রাম রে।
সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম রে।।”

সেদিনের আর ক’দিন বাকী

বল বল সীতানাথ–সেদিনের আর ক’দিন বাকী

সেই কথা পূর্ণ কর

প্রতিহৃদে দেখাও বিশ্বম্ভর–সেই কথা পূর্ণ কর

পূরাও কেবল এই বাসনা

আর কিছু চাই না–পুরাও কেবল এ বাসনা

চাই না তোমার গৌর চাই না

পাবার অধিকার নাই–চাই না তোমার গৌর চাই না

একবার দেখ চেয়ে

গৌর লয়ে বুঝি আছ মেতে –একবার দেখ চেয়ে
তেমনি করে কৃপাদিঠে–একবার দেখ চেয়ে
অশান্ত-জগৎ-পানে–একবার দেখ চেয়ে

নানা,–তাপ পায় কলিজীবে

পুরুষকারে মত্ত সবে–নানা,–তাপ পায় কলিজীবে

তুমিও সইতে নার

তোমার,–জগজীবের দুঃখ –তুমিও সইতে নারে

তাদের, –পুরুষকার ঘুচায়ে দাও

দৈবে তাদের দৃষ্টি দাও–তাদের,–পুরুষকার ঘুচায়ে দাও

বলুক সবাই গলা ধরে
এই বাসনা পুরাও হে
ঘরে ঘরে সবাই ঝুরুক

সীতানাথ তোমার কৃপায়–ঘরে ঘরে সবাই ঝুরুক
হা নিতাই গৌর বলে–ঘরে ঘরে সবাই ঝুরুক

যেখানে যাব দেখ্‌তে পাব
অনুরাগে সবাই বলছে

ম্লেচ্ছ যবনাদি নরনারী–অনুরাগে সবাই বলছে

”দণ্ডে দণ্ডে তিলে তিলে, গোরারূপ না হেরিলে,
মরমে মরিয়া যেন থাকি।
সাধ হয় নিরন্তর, হেমকান্তি কলেবর,
সতত হিয়ার মাঝে রাখি।।
তিলেক না দেখি তায়, পাঁজর ধসিয়া যায়,
ধৈরয ধরিতে নাহি পারি।।
অনুরাগের ডুরি দিয়া, অন্তরে কি করে সিয়া,
না জানি তার কতই ধার ধারি।।
সুরধুনী-কূলে গিয়া, কুল দিব ভাসাইয়া,
অনল জ্বালিয়া দিব লাজে।
গৌরাঙ্গ সম্মুখে করি, ‘হেরিব নয়ন ভরি’,
দিন যায় মিছামিছি কাজে।।”

এই বাসনা পূরাও হে
যখন জোর করে এনেছ টেনে

যদি, –কৃপা করে এনেছ টেনে–এই বাসনা পূরাও হে,
‘যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে’–
তোমার,–আবির্ভাব দিনে তোমার ঘরে–যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে–এই

এই বাসনা পূরাও হে
যখন,–জোর করে এনেছ টেনে

ইচ্ছা করে আসি নাই–যখন, –জোর করে এনেছ টেনে–এই

এনেছ টেনে কাণে ধরি’
তাইতে এই আবদারকরি
এই বাসনা পূরাও হে
গরব করে বলি মোরা

ঘরে ঘরে দেখি প্রেমের কান্না–গরব করে বলি মোরা

”এমন সুন্দর গৌরাঙ্গ কে আনিল রে।
কে আনিল কেবা দিরল কোথা বা ছিল রে।।
সীতানাথ আনিল, নিতাই দিল, ব্রজে ছিল রে।।”

প্রাণভরে জয় দিই
জয় সীতানাথ বলিহারি

শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রকটকারী–জয় সীতানাথ বলিহারি

জয় শান্তিপুর-নাথ

গৌর আনি দেখালে সাক্ষাৎ–জয় শান্তিপুর-নাথ

জয় সীতানাথ গৌর-ডাকা

জগজীবে শান্তি-দাতা–জয় সীতানাথ গৌর-ডাকা

একবার এস হে

প্রাণ যে কেঁদে উঠ্‌ছে–একবার এস হে
প্রাণের রাধাবিনোদ ঠাকুর–একবার এস হে

আসিয়া মাত হে
তেমনি করে মাত হে

থেকো না আর লুকায়ে–তেমনি করে মাত হে
কোথা সীতানাথ বলে–তেমনি করে মাত হে

বল,–জয় জয় কুলের দেবতা

সীতানাথ গৌরাঙ্গ-দাতা–বল, –জয় জয় কুলের দেবতা
অদ্বৈত শ্রীগৌরাঙ্গ-দাতা–বল,–জয় জয় কুলের দেবতা

প্রাণভরে গাও ভাই

শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে–প্রাণভরে গাও ভাই

জয়,–নিতাই গৌর গুণনিধি

সীতানাথের অনানিধি–জয়, –নিতাই গৌর গুণনিধি

জয় গৌর-হেরিবোল

নিতাই-সীতানাথ-প্রেমানন্দে–জয় গৌর-হরিবোল

”গৌর-হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।”

জগৎভরি উঠুক রোল

”নিতাই-গৌর-হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল হরিবোল।।”



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ