‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।’’
এ তিন ভুবন-মাঝে—অবনী মণ্ডল সাজে
শোক দুঃখ তাপ ত্রয়, যাঁর নামে শান্ত হয়,’’
শোক দুঃখ তাপত্রয়—যাঁর নামে শান্ত হয়
শান্তিপুর আর সীতানাথ—বিহারভূমি,–বিহারীর একই স্বভাব
সীতানাথে যে গুণ বিরাজে—শান্তিপুরে সেই গুণ আছে
শোক দুঃখ তাপত্রয়—শান্তিপুর নামে শান্ত হয়
লইলে শান্তিপুর নাম—ত্রিতাপ জ্বালার হয় বিরাম
কুবের পণ্ডিত তায়, শুদ্ধ সত্ত্ব দ্বিজরায়,’’
কুবের পণ্ডিত তায়—শুদ্ধ সত্ত্ব দ্বিজরায়
এই—শান্তিপুরে করে স্থিতি, কৃষ্ণপূজা করে নিতি,’’
শুদ্ধ সত্ত্ব দ্বিজ কুবের পণ্ডিত—কৃষ্ণপূজা করে নিতি
শান্তিপুরে করে স্থিতি—কৃষ্ণপূজা করে নিতি
মহাভাগবত কুবের পণ্ডিত—কৃষ্ণপূজা করে নিতি
লয়ে নিজগৃহিণী নাভাদেবী—কৃষ্ণপূজা করে নিতি
জগৎ পিতা কৃষ্ণচন্দ্র—বলে,–জগজনে কৃপা কর
তোমার,–ভক্তিধনে করে ধনী—জগজনে কর ধনী
কলিহত জীব দেখি, মনেতে দুরুণ দুঃখী,’’
কলিহত জীব দেখি’—হয়ে–মনেতে দারুণ দুঃখী
কলিহত জীব দেখি’—ব্যাকুল,–হয়ে ডাকেন কুবের পণ্ডিত
কলিজীবের,–দুঃখ দূর কর বলে—ব্যাকুল,–হয়ে ডাকেন কুবের পণ্ডিত
কুবের পণ্ডিত নাভাদেবী—ভক্তিহীন অবনী দেখি
দেখিয়া জগতরে গতি—মনে দুঃখ পায় অতি
জগজনের দুঃখ,–দূর কর কৃষ্ণচন্দ্র বলে—
ব্যাকুল,–প্রাণে ডেকেছেন কুবের পণ্ডিত
কলিজীবের দুঃখ দূর করিতে—ভগবান আরাধনা করে
প্রাণনাথ-কৃষ্ণের কাছে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
জীবে সুমতি দাও বলে –ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কলিজীবের মঙ্গল কর—বলে,–প্রাণকৃষ্ণ রক্ষা কর
জীবের দুঃখ দূর কর—বলে,–প্রাণকৃষ্ণ রক্ষা কর
মহাবিষ্ণু হৈলা অধিষ্ঠান।’’
করিতে জীবের উত্তম বিধান—মহাবিষ্ণু হৈলা অধিষ্ঠান
‘করিতে জীবের উত্তমবিধান’—
পঞ্চম পুরুষার্থ দিয়ে দান—করিতে জীবের উত্তমবিধান
কুবের পণ্ডিতের আরাধনে—মহাবিষ্ণু অধিষ্ঠান হইলা
নাভাদেবীর গর্ভমাঝে—মহাবিষ্ণু অধিষ্ঠান হইলা
জগজীবে শান্তি দিতে—মহাবিষ্ণু অধিষ্ঠান হইলা
নিজ,–জগৎ রক্ষা করবার তরে—মহাবিষ্ণু মনে করে
অহৈতুকী-কৃপার বসে—মহাবিষ্ণু মনে করে
চিরকালের অনর্পিত—এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে
ভক্তি,-পাবে না কেউ যোগ্যতাবলে—তাই এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে
আমার,–বলবান প্রভুর দ্বারে—এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে
‘আমার,–বলবান প্রভুর দ্বারে’—
স্বেচ্ছাময় বেদবিধির পার—আমার,–বলবান প্রভুর দ্বারে
এই,–জগৎ উদ্ধারে সঙ্কল্প করে—এবার,–ভক্তি দিব অবিচারে
মাঘমাস শুভ-ক্ষণে, তাই,–শুক্লাসপ্তমীর দিনে,’’
এই,–মাখাশুক্লা সপ্তমী তিনিথ—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যাতে,–মহাবিষ্ণু অবতীর্ণ—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
গৌর,–আনা ঠাকুর এল যাতে—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
কুবের পণ্ডিতের আরাধনে—আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরে
কলিহত-জীবে শান্তি দিতে—আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরে
এই শুক্লা সপ্তমীদিনে—আইলা শান্তিপুরাধিপ
নাশিতে,–কলিঘোর পাপতামসৃ—আইলা শান্তিপুরাধিপ
জ্বালায়ে অপূর্ব্ব শান্তিদীপ—আইলা শান্তিপুরাধিপ
চির,–শান্তি দিতে জগজীবে—আইলা,–মহাবিষ্ণু শান্তিপুরে
‘চির-শান্তি দিতে জগজীবে’—
পরমবস্তু নির্দ্দেশিতে—ধনী করে প্রেমধনেতে
‘পরমবস্তু নির্দ্দেশিতে’—
আনি,–পরতত্ত্ব-সীমা জগতে—নির্দ্দোশিতে
‘আনি,–পরতত্ত্ব-সীমা জগতে’—
মধুরে,–নদীয়াতে গৌরাঙ্গরূপেতে—আনি,–পরতত্ত্ব-সীমা জগতে
এই,–কলিহত-পতিতজীবে—চিরশান্তি দান করি এই আশায়
শ্রীকৃষ্ণ-ভকতিদ্বারে—চিরশান্তি দান করি এই আশায়
জানাইতে পরম বিষয় আশ্রয়—অবতীর্ণ হৈলা মহাশয়
জানাইতে পরম বিষয় আশ্রয়’—
…. পরতত্ত্ব নাহি হয়—জানাইতে পরম বিষয় আশ্রয়
দেখি’ হরষিত মতি, হইলা পণ্ডিত অতি,’’
পুত্র-মুখ-ইন্দু হেরে—আনন্দসিন্ধু উথলিল
পুত্রের শান্তিময়-মুখ হেরে—কুবের পণ্ডিত মনে গণে
ধরিয়া আমার সুতরূপ—বুঝি,–হইলা প্রকট শান্তিদীপ
ঘুচাইতে জীবের মোহান্ধকূপ-বুঝি,–হইলা প্রকট শান্তিদীপ
দেখি’ নিজ-তনয়-বদন—কুবের পণ্ডিতের আনন্দমন
দেখি’ নিজ-তনয়-বদন’—
অখিল-শান্তির সদন—দেখি’ নিজ-তনয়-বদন
মহাভাগবত কুবের পণ্ডিতের—আনন্দ আর ধরে নারে
নিজ-তনয়-বদন হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে
আনন্দদাতার বদন হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে
আনন্দাশ্রু বেয়ে পড়ে—আনন্দ আর ধরে নারে
কি লাগিয়া কেহ নাহি জানে।।’’
আচম্বিতে জগবাসীর মনে—আজ,–আনন্দ জনমিল আপনে
মহাবিষ্ণু,–জগৎকর্ত্তার আগমনে—জগজীবের আনন্দ মনে
কারণ কেহ কিছু না জানে—জগজীবের আনন্দ মনে
শান্তিদাতার হল আগমন—তাই ত জীবের আনন্দ মন
‘শান্তিদাতার হল আগমন’—
করিতে শান্তি বিতরণ,–শান্তিদাতার হল আগমন
সূচনা হইল মনে
শান্তিপুর-নাথের আগমনে—সূচনা হইল মনে
আনন্দঘনের আগমনে—সূচনা হইল মনে
পতিত-পাষাণ্ড-দীনহীনে।।’’
কলিহত,–পতিতজীবে শান্তি দিতে—আইলা,–শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরেতে
দাতা-সীতানাথ আইলা—আর,–কলিজীবের ভয় নাইরে
আইলা,–পতিত-দুর্গতিত্রাতা—আর,–কলিজীবের ভয় নাইরে
‘আইলা,–পতিত-দুর্গতিত্রাতা’—
মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা—আইলা,–পতিত-দুগতিত্রাতা
আর পতিতের ভয় কিবা—আইলা,–পতিত-দুর্গতিত্রাতা
শান্তিপুর-নাথের কৃপাপ্রভাবে—দীনহীন-পতিত উদ্ধার হবে
গৌর-আনা-ঠাকুর এল—আর পতিতের ভয় কি বল
‘গৌর-আনা-ঠাকুর এল’—
পতিত-পাবন-অবতার—গৌর-আনা-ঠাকুর এল
দেখিয়া পুত্রের মুখ।’’
ভাগ্যবন্ত কুবের পণ্ডিতের—আনন্দসিন্ধু উথলিল
দেখি’ পুত্র-মুখ-ইন্দু—আনন্দসিন্ধু উথলিল
দেখি’ পুত্র-মুখ-ইন্দু—আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
নিজ-পুত্র,–শান্তিপুর-নাথ হেরে—আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
আপন,–তনয়—বদনচাঁদ হেরে—আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
বাঢ়য়ে মনের সুখ।’’
দেখিয়া পুত্রের মুখ—বাঢ়য়ে মনের সুখ
বদন-কমল-শোভা।’’
বদন নয় যেন কমল ফুটেছে
যে দেখে তাপ জুড়ায়ে যায় রে
বদন-কমল হেরি’—যে দেখে তাপ জুড়ায়ে যায় রে
আজানুলম্বিত, বাহু সুবলিত,
জগজন-মন-লোভা।।
নাভী সুগভীর, পরম সুন্দর,
নয়ন কমল-জিনি।’’
কমল-নয়ন-কোণে একবার—যার পানে চায় যে জুড়ায়ে যায়
সকল সন্তাপ দূরে পলায়—যার পানে চায় সে জুড়ায়ে যায়
তাপিত-জনের বিশ্রামস্থান—ও ত নয় রাতুল চরণ
জিনি কত বিধুমণি।।’’
যেন চাঁদ খানি খানি
ও চরণ-নখ-মণি—যেন চাঁদ খানি
আমার সীতানাথের অঙ্গে
‘‘মহাপুরুষের, চিহ্ন মনোহর,
দেখিয়া বিস্মিত সবে।’’
কুবের পণ্ডিতের অন্তরে—আনন্দ আর ধরে নারে
কুবের পণ্ডিতের ভাগ্যবশে— আইলা অপরূপ রূপ
মহাপরুষের চিহ্নযুত–দেখি মনে মনে গণে
পুত্ররূপে মহাপুরুষ আইলা—দেখি’ মনে মনে গণে
কুরের পণ্ডিতের ঘরে—এ কেবা এল রে
লক্ষণেতে দেখা যায়—এ ত সামান্য বালক নয়
জগতে যারে শান্তি বলে—বুঝি,–মূরতি ধরে এসেছে
শান্তি এল বুঝি মূরতি ধরে—দেখে অশান্তি গেল দূরে
ভাগ্যবান কুবের পণ্ডিতের—এ ত সামান্য পুত্র নয় গো
অবধূত চিহ্নযুত—পুত্ররূপে মহাপুরুষ আইলা
জগত-উদ্ধার-তরে—জন্মিয়াছে কুবেরের ঘরে
সবাই দেখিয়া বলে—আইল,–অপরূপ বালকরূপে
কুবের পণ্ডিতের ঘরে—আইল,–অপরূপ বালকরূপে
‘কুবের পণ্ডিতের ঘরে’—
মহাপুরুষরূপ ধরে—কুবের পণ্ডিতের ঘরে
ত্রিজগৎ তারিবার তরে—আইল,–অপরূপ বালকরূপে
এই পুত্রের প্রভাবে—কলিহত জীব উদ্ধার হবে
যত পুরনারী, শিশুমুখ হেরি,
আনন-সাগরে ভাসে।’’
শান্তিপুর-নারী যত—আনন্দেতে উনমত
শিশুমুখচন্দ্র হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে
যত পুরনারীর মনে—আনন্দ আর ধরে নারে
তারা,–উলু উলু ধ্বনি করে—আনন্দ আর ধরে নারে
দেখি’ বালক-মুখ-ইন্দু—উথলিল আনন্দ-সিন্ধু
শত শত ধারে নয়ন-দ্বারে—আনন্দ উথলি পড়ে
কুবের—তনয়-বদন হেরে—আনন্দ উথলি পড়ে
নিরখয়ে অনিমিষে।।’’
কুবের-তনয়-বদন হেরে—আঁখির পলক পড়ে না গো
ত্বরাকরি পুনঃপুনঃ গিয়া দেখে—একবার দেখে আশ মিটে নারে
আঁখি ফিরাইতে নারে—ত দেখে তত সাধ বাড়ে
ঘরে,–যাবার কথা ভুলে যায় রে—যত দেখে তত সাধ বাড়ে
অনিমিখে শিশু বদরন হেরে’—তখন,–বিধাতারে নিন্দা করে
যত,–অনুরাগিণী শান্তিপুর-নারী—তখন,–বিধাতারে নিন্দা করে
যে হেরিবে কুবের-তনয়—তারে কি দুটিী নয়ন দেয় গো
যে দেখিবে এই বালক-বদন—তারে কি দেয় দুটী নয়ন
যদি ঐ রূপ দেখিত বারেক—বিধি,–এমন সৃজন করত নারে
তাতে আবার নিমিষ দিল
দেখে আশ মিটে নারে
যত পিয়ে পিয়াস বাড়ে
চাঁদের সুধা আঁখির দ্বারে–যত পিয়ে পিয়াস বাড়ে
–একবার শিশুমুখ হেরে–কোটি আঁখি বাঞ্ছা করে
কহে এহেন, সুত যার।
তার ভাগ্য সীমা, কি দিব উপমা,
ভুবনে কে সম তার।।”
–এ হেন তনয় পেয়েছে –সে ত’ অতি ভাগ্যবতী
ভাগ্যবতী নাভাদেবী–তোমার সৌভাগ্য কিসে বা গণি
ঘুমে,–হয়েছ এ-হেন বালক -জননী–তোমার সৌভাগ্য কিসে বা গণি ;
কহে গদগদ ভাষা।”
বালকের গুণ বলতে বলতে –প্রেমে কণ্ঠ রোধ হল রে
আর ত তারা বলতে নারে–প্রেমে কণ্ঠ রোধ হল রে
বালক-রূপ দেখতে দেখতে –তারা সবে মনে করে
তাদের দু’নয়নে বারি ঝরে–তারা সবে মনে করে
দেখে ত আশ মিট্ত নারে–তবে হিয়া জুড়াত রে
যদি বারেক পেতাম কোলে–তবে হিয়া জুড়াত রে
দাস বৈষ্ণবের আশা।।”
আইলা, -শান্তিপুরনাথ শান্তিপুরে –জগত বুঝাবার তরে
জগৎ উদ্ধার করবার তরে –আইলা–মহাবিষ্ণু শান্তিপুরে
এই,–কুবের -তনয়-প্রভাবে–অনায়াসে জগৎ উদ্ধার হবে
জগতের তারণ-কারণ–এ বালকের আগমন
এই বালক-কৃপা-বলে–জগৎ উদ্ধারিবে হেলে
প্রাকৃত-বিষয়ে সকলে মত্ত
নাহি কৃষ্ণনাম-তত্ত্ব–প্রাকৃত-বিষয়ে সকলে মত্ত
বলবান্ কলিরাজে-মাতাইল বিষয়-বিষে
নাহি কৃষ্ণ -নাম-রসে–মাতাইল বিষয়-বিষে
কলিরাজের শাসনে জীব– অভিমানে মত্ত হল
পুরুষাকারে মত্ত হল–দৈব-দৃষ্টি দূরে গেল
ভক্তিশূন্য জগৎ দেখে’–তাই প্রাণ কেঁদে উঠিল
মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তার–তাই প্রাণ কেঁদে উঠিল
অবশ্য কর্ত্তব্য গেল ভুলে–কর্ত্তব্য বোধ হল অকর্ত্তব্যে
কে আমি কি কর্ত্তব্য আমার–কেউ ত ভাবে না একবার
কেন তাপত্রয় জারে আমায়–কেউ ত ভাবে না একবার
কেবল করে আমার আমার–কেউ ত ভাবে না কর্ত্তব্য আপনার
পুত্র-কলত্রাদি-ভোগ–নিজ কর্ত্তব্য স্থির কৈল
নিজ কন্যাপুত্রোৎসবে–নিরবধি মত্ত সবে
এই কর্ত্তব্য মনে করে–নিরবধি মত্ত সবে
নিজ স্বরূপ পাসরিয়ে–অনিত্যেতে মত্ত সবে
যক্ষ পূজে মদ্য-মাৎসে নানামতে জীব হিংসে”
কায়মনোবাক্যে শ্রীকৃষ্ণভজন–অবশ্য-কর্ত্তব্যের বিস্মরণ
দেখিয়া করুণা করি, কমলাক্ষ নাম ধরি,”
জগজীবের দুর্দ্দশা জানি মনে–চাইলা আপন-জগৎ-পানে
মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা–চাইলা আপন-জগৎ-পানে
কলিজাবের দশা দেখে’–অমনি, –প্রাণ কেঁদে উঠ্ল রে
মহাবিষ্ণু জগৎ-কর্ত্তার–অমনি,–প্রাণ কেঁদে উঠ্ল রে
কুবের,–নাভাদেবীর আরাধনা-ফলে–অমনি,–প্রাণ কেঁদে উঠ্ল রে
জগতের দুর্গতি দেখে–অমনি,–প্রাণ কেঁদে উঠ্ল রে
নন্দনন্দন দেখাবার তরে–মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে
জগজীবে শান্তি দিতে–মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে
‘জগজীবে শান্তি দিতে’–
তাদের ভ্রম ঘুচাইয়ে –জগজীবে শান্তি দিতে
কমলাক্ষ নাম ধরে–মহাবিষ্ণু আইলা শান্তিপুরে
নিজ-জগতের দুর্দ্দশা দেখি’–আইলা, –মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা
দেখাইব এই অঙ্গীকার।।”
করিয়া এই অঙ্গীকার–মহাবিষ্ণু হৈলা অবতার
আমার প্রভু নন্দকুমার–করাব জীবের নয়ন-গোচর
বেদে যারে কিম্ বলে–স্বরূপে আমি দেখাব তারে
‘বেদে যারে কিম্ বলে’–
অনাদি অনন্ত–বেদে যারে কিম্ বলে
বেদে যারে রস বলে –স্বরূপে আমি দেখাব তারে
নিত্য,–নবকৈশোর নটবর, –এই,–স্বরূপে আমি দেখাব তারে
অখিল-রসামৃতময়–এই, –স্বরূপে আমি দেখাব তারে
আনি,–আমার প্রভু নন্দসুত–শুধু,–দেখাব নয় ভোগ করাব
‘আনি,–আমার প্রভু নন্দসুত’–
সাঙ্গোপাঙ্গ সমন্বিত–আনি,–আমার প্রভু নন্দসুত
অবতীর্ণ হৈল শান্তিপুরে
আনিব দেখাব সঙ্কল্প করে–অবতীর্ণ হৈল শান্তিপুরে
‘আনিব দেখাব সঙ্কল্প করে’–
সাঙ্গোপাঙ্গে মদনগোপালে–আনিব দেখাব সঙ্কল্প করে
মহাবিষ্ণু আইলা সাঙ্গোপাঙ্গে
জগজীবে–নন্দনন্দন দেখাইতে–মহাবিষ্ণু আইলা সাঙ্গোপাঙ্গে
তাই,–সর্ব্ব-আগে আগুয়ান, জীবেরে করিতে ত্রাণ,
শান্তিপুরে করিলা প্রকাশ।”
মনে করি এই অভিলাষে–সীতানাথ হইলা প্রকাশে
বিহারভূমি প্রস্তুত করবার আশে–সীতানাথ হইলা প্রকাশে
আমার প্রাণের মদনগোপাল–নৈলে–কোথা এসে নাচ্বে
বিহারভূমি প্রস্তুত না হলে –কোথা এসে নাচ্বে
শান্তিপুরে করিলা প্রকাশ।
সকল দুষ্কৃতি যাবে, সবে কৃষ্ণ-প্রেম পাবে,
কহে দীন বৈষ্ণবের দাস।।”
জীবে,–প্রেমধনে করিতে ধনী–আইলা, –শ্রীঅদ্বৈত গুণমণি
প্রভু,–সীতানাথের করুণাতে–সবে কৃষ্ণপ্রেম পাবে
প্রাণ গৌর দিতে প্রেম দিতে–সীতানাথ আইলা শান্তিপুরে
গৌর-আনা-ঠাকুর সীতানাথের–প্রাণভরে জয় দাও
কেমনে ধরিতু দে।”
যদি, –সীতানাথ না আসিত–কলিজীবের গতি কিবা হত
গৌরাঙ্গ আনিত কে।।”
গৌরাকৃতি মদনগোপালে–কেঁদে কেঁদে কে আন্ত রে
অনশনে গঙ্গাতীরে বসে–কেঁদে কেঁদে কে আনত রে
গঙ্গাজল-তুলসী করে–কেঁদে কেঁদে কে আন্ত রে
গর্জ্জন-হুঙ্কার করে–কেঁদে কেঁদে কে আন্ত রে
‘গর্জ্জন-হুঙ্কার করে’–
আমার,–প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে–গর্জ্জন-হুঙ্কার করে
গোলোক সম্পুট শূন্য করে–কেঁদে কেঁদে কে আন্ত রে
যদি সীতানাথ না আনিত–কেবা গৌর দেখাইত
রাইকানু মিলিত মুরতি–প্রাণ গৌর কেবা দেখাইত
গৌরাঙ্গ আনিত কে।।
গৌরাকৃতি, মদনগোপাল,
জগতে দেখাত কে।।”
নিকুঞ্জ-বিলাস-বৈভব–কে দেখাত জগতেরে
রাধাকৃষ্ণ,–প্রণয়-বিকৃতি-আকৃতি–কে দেখা’ত গৌর-মূরতি
যুগল,–উজ্জ্বল -রস-নির্য্যাস–কে দেখাত গৌর-মূরতি
মহা,–রাসরসের পরিণতি–কে দেখাত গৌর-মূরতি
রাইকানু একাকৃতি –কে দেখা’ত গৌর-মূরতি
স্বর্ণপঞ্চালিকা ঢাকা নীলমণি–কে দেখাত গৌরমণি
যদি,–দয়ানিধি, সীতানাথ না আনিত–কে দেখাত মধুর গৌরদেহ
নিত্যমিলনে নিত্যবিরহ –কে দেখাত মধুপর গৌরদেহ
মুরতিমন্ত প্রেমবৈচিত্ত্য–কে দেখাত প্রাণের শচীসুত
পরস্পর,–বুকে ধরে আত্মহারা–কে দেখাত চিতচোরা গোরা
বিলাস-বিবর্ত্ত-রঙ্গে ভোরা–কে দেখাত চিতচোরা গোরা
সীতানাথের কথা কইতে কইতে –প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্ছে
আজ তার,–আগমন দিন জেনে–প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্ছে
আজ তোমার আসবার দিন
মাঘীশুক্লা সপ্তমীতিথি–আজ তোমার আস্বার দিন
শান্তিপুরাধীশ শান্তিদীপ-এসেছিলে এই-দিনে
শান্তিধাম শান্তিপুরে–এসেছিলে এই-দিনে
জীবে শান্তি দিবার তরে–এসেছিলে এই-দিনে
ঐ গঙ্গাতীরে নির্জ্জন বলে–ডেকেছিলে অতিকাতরে
আমার,–প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে –ডেকেছিলে অতিকাতরে
আমার, –প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে’–
জীবের দশা বড়ই মলিন–আমার,–প্রাণ কৃষ্ণ এস বলে
শ্রীগুরুমুখে শুনেছি মোরা
তোমার সে ডাকার কথা-শ্রীগুরুমুখে শুনেছি মোরা
সুরধুনী-সন্নিধানে।
আঁখি মুদি রহে, প্রেমে নদী বহে,
বসন তিতিল ঘামে।।
নিজ পহুঁ মনে, ঘন গরজনে,
উঠে জোড়ে জোড়ে লম্ফ।
ডাকে বাহু তুলি, কাঁদে ফুলি ফুলি
দেহে বিপরীত কম্প।।
শ্রীঅদ্বৈত-হুঙ্কারে, সুরধুনী-তীরে,
আইলা নাগর-রাজ।”
সীতানাথ তোমার চোখের জলে–গৌর আইলা নদেপুরে
এলেন,–বলরাম নিত্যানন্দ–আইলা, –শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
যারা যারা খেলার সাথী–সবাই ত এল হে
তোমার প্রেম-আকর্ষণে –সবাই ত এল হে
নাম-সঙ্কীর্ত্তন-রঙ্গ-হৈল খেলার আরম্ভ
ভাগ্যবন্ত-শ্রীবাস-গৃহে-হৈল খেলার আরম্ভ
ভাগ্যবন্ত-শ্রীবাস-গৃহে’–
যাঁর –কান্না শুনে ডেকেছিলে তুমি–সেই, –ভাগ্যবন্ত-শ্রীবাস-গৃহে
দেখ্তে দেখ্তে ভেসে গেল
প্রেমবন্যায় ভেসে গেল
অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ–প্রেমবন্যায় ভেসে গেল
স্থাবর-জঙ্গম প্রেম পেল-প্রেমবন্যায় ভেসে গেল
তোমার, –প্রাণের প্রাণ গোপ্যধনে–দেখিতে পেল জগজনে
মাতিল সব জগজনে
মহাভাব,–প্রেমরস -সুধা-পানে–মাতিল সব জগজনে
বড়ই দুঃখে জ্বলছে হিয়া
কেউ ত ভজ্ল না
তোমার,–আনানিধি নিতাই-গৌরসোণা–কেউ ত ভজ্ল না
দুঃখ জানবার আর কে আছে–তাই,–দুঃখ জানাই তোমার কাছে
তোমার,–গৌর-নাম -সুধা-রস–যেদিন হতে পিয়ায়েছ
জগজীবে ভোগ করে
হরিনাম-সুধারস-জগজীবে ভোগ করে
তাই জানাই তোমার কাছে
কেবা পেতে পারে
তোমার,–আনানিধি তুমি না দিলে–কেবা পেতে পারে
আজ তোমার আস্বার দিন
নিশ্চয় এসেছ তুমি–আজ তোমার আস্বার দিন
আর লুকায়ে থেকো না
একবার এস হে
তুমি বটে এসেছিলে
শান্তিপুর-নাথ নাম পেয়েছিলে
কিন্তু,– তোমার আসা সফল হয় নাই
তোমার নাম সার্থক হয় নাই–কিন্তু,–তোমার আসা সফল হয় নাই
তোমার, –গৌরধনে বিমুখ হয়ে–অশান্তি-অনলে জগত জ্বলে
তোমার শান্তিপুর-নাথ–নামে যে কলঙ্ক হল
জগত যে অশান্তিতে ভর্ল–নামে যে কলঙ্ক হল
যাদের,–তুমি গৈর দেখায়েছিলে–তারাই ঐ নাম দিয়েছিলে
শান্তিপুর-নাথ বলে–আমরা তোমায় কেন বলব
তোমার,–নামের মহিমা দেখাও আগে–শান্তিপুর-নাথ বলব তবে
শান্তিপুর-নাথ নাম সফল কর–তেমনি করে আবার এল
এবার,–গঙ্গাতীরে বসলে হবে না
আর,–শান্তিপুর আস্তে হবে না–এবার,–গঙ্গাতীরে বসলে হবে না
কেউ ত তোমার পর নয়
জগৎ যদি তোমার হয়–কেউ ত তোমার পর নয়
‘জগৎ যদি তোমার হয়’–
ওহে, –মহাবিষ্ণু জগৎকর্ত্তা–জগৎ যদি তোমার হয়
কেউ ত তোমার পর নয় প্রতিহৃদে বস হে
ত্রিতাপ-দগ্ধ–প্রতিহৃদে বস হে
গঙ্গতীরে বসে যেমন ডেকেছিলে–তেমনি করে ডাক হে
জীবের প্রতি হৃদে বসে–তেমনি করে ডাক হে
জীবের দুঃখে দুঃখা হয়ে–তেমনি করে ডাক হে
এস গৌর এস বলে–তেমনি করে ডাক হে
এই বল সীতানাথ ডাক
জগৎ-জীবের প্রতিহৃদে বস–এই বলে সীতানাথ ডাক
আমাদের ক্ষুদ্র প্রাণ লয়ে–আমরা কত না ডাক্ছি
তাইতে ডাকি তোমারে
তোমার,–ডাক শুনে রইতে নার্রে–তাইতে ডাকি তোমারে
নিদ্রা ভঙ্গ হইল মোর নাড়ার-হুঙ্কারে রে।।
সীতানাথ তোমা বিনা–আর কেবা দিবে নাড়া
এস প্রাণগৌর আবার–তাই বলি, –তেমনি করে ডাক আবার
তারেও ডেকে আন
গৌরের অভিন্ন-তনু–তারেও ডেকে আন
ডাক্তে বা হবে কেন
এসেছে ত তোমার ঘরে
ত্রিকালসত্য-লীলায়–এসেছে ত তোমার ঘরে
এখনও ত আছে হে–এসেছে ত তোমার ঘরে
পেয়েছ তা তোমার ঘরে–বল দেখি জোর করে
তুমি, —অভিমান করতে পার–অভিমান করে বল
তোমার বিশ্বম্ভর নাম–পূর্ণ ত হয় নাই
নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরাব বলে–প্রতিজ্ঞা করেছিলেন
জগৎ যে রণে মাকা–যে প্রতিজ্ঞা রইল কোথা
প্রতিজ্ঞা পূর্ণ কৈ হল –নামে যে কলঙ্ক রট্ল
তোমার,–আজ্ঞা পালন হল কৈ
তোমাকেই ত দিয়াছেন ভার
বিশ্বম্ভর গৌর আমার–তোমাকেই ত দিয়াছেন ভার
নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরিবার–তোমাকেই ত দিয়াছেন ভার
যাও নিতাই আবার যাও
গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে–যাও নিতাই আবার যাও
নাম-প্রেমে জগৎ মাতাও–যাও নিতাই আবার যাও
চল বিশ্ব পূর্ণ করবে
তোমার গৌর-নাম-প্রেমে–চল বিশ্ব পূর্ণ করবে
শাখারূপে দুইবাহু–এস মিলে দুইজনে
শাখারূপে দুইবাহু’–
শ্রীচৈতন্য-কল্পতরুর–শাখারূপে দুইবাহু
জগৎ ভাসাও গৌর-প্রেমে–এস মিলে দুইজনে
ও গুণের অদ্বৈত সোণা–পূরাও মোদের এই বাসনা
সকল সুখেই বঞ্চিত মোরা
তখন জনম দাও নাই
যখন খেললে গৌর এনে–তখন জনম দাও নাই
‘যখন খেল্লে গৌর এনে’–
প্রভু-নিত্যানন্দ-সনে–যখন খেল্লে গৌর এনে
নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
সেই লীলা-আদর্শন-শেল–নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
এখন আর সে বেদনা–কিন্তু,–ব্যথা করে মানি না
গৌরহরির,–মুখের কথা স্মঙরি–আশাপথ চেয়ে আছি
সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম রে।।”
বল বল সীতানাথ–সেদিনের আর ক’দিন বাকী
প্রতিহৃদে দেখাও বিশ্বম্ভর–সেই কথা পূর্ণ কর
আর কিছু চাই না–পুরাও কেবল এ বাসনা
পাবার অধিকার নাই–চাই না তোমার গৌর চাই না
গৌর লয়ে বুঝি আছ মেতে –একবার দেখ চেয়ে
তেমনি করে কৃপাদিঠে–একবার দেখ চেয়ে
অশান্ত-জগৎ-পানে–একবার দেখ চেয়ে
পুরুষকারে মত্ত সবে–নানা,–তাপ পায় কলিজীবে
তোমার,–জগজীবের দুঃখ –তুমিও সইতে নারে
দৈবে তাদের দৃষ্টি দাও–তাদের,–পুরুষকার ঘুচায়ে দাও
এই বাসনা পুরাও হে
ঘরে ঘরে সবাই ঝুরুক
সীতানাথ তোমার কৃপায়–ঘরে ঘরে সবাই ঝুরুক
হা নিতাই গৌর বলে–ঘরে ঘরে সবাই ঝুরুক
অনুরাগে সবাই বলছে
ম্লেচ্ছ যবনাদি নরনারী–অনুরাগে সবাই বলছে
মরমে মরিয়া যেন থাকি।
সাধ হয় নিরন্তর, হেমকান্তি কলেবর,
সতত হিয়ার মাঝে রাখি।।
তিলেক না দেখি তায়, পাঁজর ধসিয়া যায়,
ধৈরয ধরিতে নাহি পারি।।
অনুরাগের ডুরি দিয়া, অন্তরে কি করে সিয়া,
না জানি তার কতই ধার ধারি।।
সুরধুনী-কূলে গিয়া, কুল দিব ভাসাইয়া,
অনল জ্বালিয়া দিব লাজে।
গৌরাঙ্গ সম্মুখে করি, ‘হেরিব নয়ন ভরি’,
দিন যায় মিছামিছি কাজে।।”
যদি, –কৃপা করে এনেছ টেনে–এই বাসনা পূরাও হে,
‘যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে’–
তোমার,–আবির্ভাব দিনে তোমার ঘরে–যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে–এই
যখন,–জোর করে এনেছ টেনে
ইচ্ছা করে আসি নাই–যখন, –জোর করে এনেছ টেনে–এই
তাইতে এই আবদারকরি
এই বাসনা পূরাও হে
গরব করে বলি মোরা
ঘরে ঘরে দেখি প্রেমের কান্না–গরব করে বলি মোরা
কে আনিল কেবা দিরল কোথা বা ছিল রে।।
সীতানাথ আনিল, নিতাই দিল, ব্রজে ছিল রে।।”
জয় সীতানাথ বলিহারি
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রকটকারী–জয় সীতানাথ বলিহারি
গৌর আনি দেখালে সাক্ষাৎ–জয় শান্তিপুর-নাথ
জগজীবে শান্তি-দাতা–জয় সীতানাথ গৌর-ডাকা
প্রাণ যে কেঁদে উঠ্ছে–একবার এস হে
প্রাণের রাধাবিনোদ ঠাকুর–একবার এস হে
তেমনি করে মাত হে
থেকো না আর লুকায়ে–তেমনি করে মাত হে
কোথা সীতানাথ বলে–তেমনি করে মাত হে
সীতানাথ গৌরাঙ্গ-দাতা–বল, –জয় জয় কুলের দেবতা
অদ্বৈত শ্রীগৌরাঙ্গ-দাতা–বল,–জয় জয় কুলের দেবতা
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে–প্রাণভরে গাও ভাই
সীতানাথের অনানিধি–জয়, –নিতাই গৌর গুণনিধি
নিতাই-সীতানাথ-প্রেমানন্দে–জয় গৌর-হরিবোল