শ্রীশ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের সূচক-কীর্ত্তন
(অগ্রহায়ণ-কৃষ্ণা-ত্রয়োদশী তিথি)
—- ০ —
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
“নিত্যানন্দ-লীলাধাম,এই,–সুখময় সপ্তগ্রাম
মহাতীর্থ ত্রিবেণীর তীরে।”
এই,–সুখময় সপ্তগ্রাম

প্রভু-নিত্যানন্দের লীলাধাম—এই,–সুখময় সপ্তগ্রাম
আনন্দের নিত্যধাম—এই,–সুখময় সপ্তগ্রাম

‘‘মহাতীর্থ ত্রিবেণীর তীরে।’’
সেই ত’ ত্রিবেণী তীর্থ

যাঁহা,—গঙ্গা যমুনা সরস্বতী মিলিত—সেই ত’ ত্রিবেণী তীর্থ

‘‘শ্রীযমুনা শ্রীভাগীরথী,স্রোতস্বতী শ্রীসরস্বতী,
বহে যাঁহা মিলিত ত্রিধারে।।’’

যেন,—বিহরিছে রূপন্তরে

তারুণ্য-কারুণ্য-লাবণ্যামৃতধারা—যেন,–বিহরিছে রূপান্তরে
যমুনা ভাগীরথী সরস্বতী—যেন,–বিহরিছে রূপান্তরে
লীলার অনুকূল হয়ে—যেন,—বিহরিছে রূপান্তরে
যমুনা ভাগীরথী সরস্বতী—যেন-বিহরিছে রূপান্তরে

‘‘বহে যাঁহা মিলিত ত্রিধারে।’’

যেন,–তিন নাম ধরে বিহরে

মহাভাব-প্রেম-রস—যেন,–তিন নাম ধরে বিহরে
বিলাসীকে সুখ দিবার তরে—যেন,–তিন নাম ধরে বিহরে
সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রস—যেন,–তিন নাম ধরে বিহরে
মহাভাব-প্রেম-রস-ঘনাকৃতি—যেন,–তিন নাম ধরে বিহরে

‘‘বহে যাঁহা মিলিত ত্রিধারে।।
যাঁহা সপ্তঋষিবর, করি’ তপ সুদুশ্চর,
আরাধিয়া গোবিন্দ-চরণ।
বসি’ ত্রিবেণীর তটে, হরি স্মরি’ অকপটে,
সিদ্ধি পাইলা প্রেম মহাধন ।।
সেই সপ্তগ্রাম পুরে, সুবর্ণ-বণিক-ঘরে,
ব্রজের সেই সুবাহু-গোপাল।
উদ্ধারিতে ত্রিভুবন, নাম ধরি’ উদ্ধারণ,
প্রকটিল ভকত-ভূপাল।।’’
এবে উদ্ধারণ নাম ধরে

ব্রজের সুবাহু-গোপাল যে—এবে উদ্ধারণ নাম ধরে
ত্রিভুবন উদ্ধারিতে—এবে উদ্ধারণ নাম ধরে

না হবে বা কেন রে

উদ্ধারণ-দ্বারে ত্রিভুবন উদ্ধার—না হবে বা কেন রে

ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে

ত্রিভুবনের কিবা কথা—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে
প্রতি নিতাই-কিঙ্করে—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে

[মাতন]

‘‘পিতা যাঁর সদাশয়, শ্রীকর দত্ত মহাশয়,
মাতা ভদ্রাবতী সর্ব্বোত্তমা।
ব্রজের গোপাল যাঁর, পুত্ররূপে পরচার,
কে কহিবে তাঁর ভাগ্যসীমা।।’’

প্রাণ-ভরে জয় দাও

ঠাকুর,–উদ্ধারণের পিতামাতার—প্রাণ-ভরে জয় দাও
শ্রীকরদত্ত-ভদ্রাবতীর—প্রাণ-ভরে জয় দাও

[মাতন]

‘‘আশৈশব সর্ব্বকালে, হরি বলি’ আঁখিজলে,
ভাসে নিশিদিশি উদ্ধারণ।


কোথা কৃষ্ণ-রাম বলি,’’

ব্রজের সুবাহু-গোপাল-স্বভাবে

‘‘কোথা কৃষ্ণ-রাম বলি, কাঁদে সদা ফুলি ফুলি,
অদর্শনে মন উচাটন।।’’

কোথা গেলে প্রাণের ভাই

সুবাহু-স্বভাবে ডাকে সদাই—কোথা গেলে প্রাণের ভাই
আরে আমার রাম-কানাই—কোথা গেলে প্রাণের ভাই[মাতন]

‘‘ব্রজের বলাই শ্রীগোবিন্দ, হইল নিতাই গৌরাঙ্গ,
কলিজীবে কৃতার্থ কারণ।’’

শ্রী,–বলরাম নিত্যানন্দ

শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য,–শ্রী,–বলরাম নিত্যানন্দ
‘‘নবদ্বীপে অবতরি,’’

ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ

মধুর-নদীয়ারূপে প্রকট—ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ

‘‘নবদ্বীপে অবতরি, প্রেম দিলা বিশ্বভরি’,
সঙ্গে সব নিজ-ব্রজজন।।
যত গোপ গোপীগণ, তাঁরা—এবে, মহান্তেরগণ,
প্রেম-বিতরণ-লীলাকালে।
যে দ্বাদশ গোপাল, সখ্য-প্রেমে মাতোয়াল,
জনমিলা শ্রীগৌড়মণ্ডলে।।’’

মধুর রস আস্বাদিবে বলে

প্রেম-পুরুষোত্তম লীলায়—মধুর রস আস্বাদিবে বলে

‘‘সুবাহু শ্রীউদ্ধারণ, তাঁর,–অধম উদ্ধারে পণ,
সপ্তগ্রামে সতত নিবাস।
বণিক-কুল-পাবন, নিত্যানন্দ-প্রাণধন,’’

বণিক-কুল-পাবন

আমার ঠাকুর-উদ্ধারণ-বণিক-কুল-পাবন
শ্রীনিত্যানন্দ-প্রাণধন—বণিক-কুল-পাবন

‘‘অদর্শনে করে হা হুতাশ।।’’

অদর্শনে হা-হুতাশ করে

ব্রজের,–কানাই-বলাই-ধনের—অদর্শনে হা-হুতাশ করে
উদ্ধারণ সুবাহু-স্বভাবে—অদর্শনে হা-হুতাশ করে

‘‘শ্রীগৌরাঙ্গ-নিতাই-সনে, নবদ্বীপে সঙ্কীর্ত্তনে,
প্রেম-বন্যায় জগত ভাসায়।
পারিষদ-প্রিয়জনে, আকর্ষিলা প্রাণে প্রাণে,
নিজগণ যতেক যথায়।।
প্রেমসিন্ধু-আকর্ষণে, ভক্ত-নদনদীগণে,
প্রেমোচ্ছাসে ধাইয়া মিলিল।
মহানদ উদ্ধারণ, তাতে,–প্রেম-ঊর্ম্মি অগণন,
সেও,–গৌরলীলার্ণওব ঝাঁপ দিল।।
নিতাই-তরঙ্গ-সনে ,নাচে প্রেম-সঙ্কীর্ত্তনে,
উচ্ছাসেতে অবনী ভাসিল।
ভক্ত-হংস সে সাগরে, কেউ বা ডুবে কেউ সাঁতারে,
প্রেমানন্দ-পাথার ছুটিল।।
নবদ্বীপ পরিহরি’, কাঙ্গাল সাজি’ গৌরহরি,
নীলাচলে যবে বাস কৈলা।
নিতাই গদাই উদ্ধারণ, অভিরাম-আদিগণ,
সে লীলার নিত্য সাথী হৈলা।।
নিত্যানন্দে আজ্ঞা দিলা, গৌড়দেশে পাঠাইলা,
অবিচারে প্রেম বিলাইতে।
অভিরাম গদাধর, উদ্ধারণ পুরন্দর,
প্রিয়জন দিলা তাঁর সাথে।।’’

কেঁদে বল্লেন নিতাই-এর হাতে ধরি’

নিরজনে প্রেমসিন্ধু গৌরহরি—কেঁদে বল্লেন নিতাই-এর হাতে ধরি’
নিভৃত-গম্ভীরায় বসি’—কেঁদে বল্লেন নিতাই-এর হাতে ধরি’

যাও নিতাই ত্বরা করি’

নাম-প্রেম দাও বিশ্ব ভরি’—যাও নিতাই ত্বরা করি’

[মাতন]
যেন,–কাকেও বঞ্চিত করো না

আমার,–কলিজীব বড়ই দুঃখী—যেন,–কাকেও বঞ্চিত করো না

জগৎ মাতাও গিয়া

অবিচারে নাম-প্রেম দিয়া—জগৎ মাতাও গিয়া

আমার,–বিশ্বম্ভর-নাম পূর্ণ কর

নাম-প্রেম দিয়ে বিশ্ব ভর—আমার,–বিশ্বম্ভর-নাম পূর্ণ কর

[মাতন]
আমার এ নাম,–সার্থক হবে তোমা হতে

আমার, যতেক কার্য্য তোমা-দ্বারে—আমার এ নাম,–সার্থক হবে তোমা হতে

আনন্দ আর ধরে না

স্বভাব-করুণ নিতাই চাঁদের—আনন্দ আর ধরে না

সহজেই জীবের দুঃখে দুঃখী
তাতে,–পেলেন আবার গৌর-আজ্ঞা

অবিচারে নাম-প্রেম বিলাতে—তাতে,–পেলেন আবার গৌর-আজ্ঞা

আনন্দে আজ্ঞা শিরে ধরি’

‘‘আসি’ পানীহাটী-গ্রামে, শ্রীরাঘব-ভবনে,
গণ-সহ প্রভু নিত্যানন্দ।
গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরি’, আরম্ভিলা জগভরি’,
অযাচিত দান প্রেমানন্দ।।’’

প্রথম নাম প্রেম-প্রচার

পূণ্যভূমি-পানীহাটীতে—প্রথম নাম-প্রেম-প্রচার
গৌর-আজ্ঞায় নিতাইচাঁদের—প্রথম নাম-প্রেম-প্রচার

‘‘সঙ্গে সহচরগণ, অলৌকিক আচরণ,
সবে মত্ত ব্রজের গোপাল।’’

আপনি যেমন সঙ্গী তেমন

আমার প্রভু নিত্যানন্দ—আপনি যেমন সঙ্গী তেমন

‘‘নয়নে হেরয়ে যারে, প্রেম বিলায়ে অবিচারে,
পাত্রাপাত্র নাহি কালাকাল।।’’

পানীহাটীতে মধুর বিহার

আমার প্রভু-নিত্যানন্দের—পানীহাটীতে মধুর বিহার

তিন-মাস কৈলা স্থিতি

সঙ্কীর্ত্তন-আনন্দে—তিন-মাস কৈলা স্থিতি

দাস-রঘুনাথের কৈলা কৃপাদণ্ড

চিঁড়া-দধি-মহোৎসব-ছলে—দাস-রঘুনাথে কৈলা কৃপাদণ্ড

স্থাবর-জঙ্গমে মাতাইলা

শ্রীগৌরাঙ্গ-নাম-প্রেমে—স্থাবর-জঙ্গমে মাতাইলা

ফুটাইলা কদম্বের ফুল

জাম্বিরের গাছে নিতাই—ফুটাইলা কদম্বের ফুল
রাঘব-পণ্ডিতের ঘরে—ফুটাইলা কদম্বের ফুল

সেই কথা কৈলা সত্য
আমি থাকি সেই-খানে

শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি—আমি থাকি সেই খানে
আমার,–নিতাই নাচে যেই-খানে—আমি থাকি সেই-খানে

এই কথা কৈল সত্য
জানাইলা গৌর-আগমনে

নিতাই-সুন্দর ইঙ্গিতেতে—জানাইলা গৌর-আগমনে
দ্রোণ-পুষ্পের গন্ধ-ছলে—জানাইলা গৌর-আগমনে

প্রাণগৌর এসেছেন নীলাচল হতে

নিতাই,–জানাইলেন নিজগণে—প্রাণগৌর এসেছেন নীলাচল হতে
তোমাদের কীর্ত্তনে আকৃষ্ট হয়ে—প্রাণগৌর এসেছেন নীলাচল হতে

তাঁর গলে দ্রোণ-ফুলের মালা

তাই গন্ধ পেয়েছ তোমরা—তাঁর গলে দ্রোণ-ফুলের মালা

পানীহাটীতে নিগূঢ়-বিহার

অতিগূঢ়-নিত্যানন্দের—পানীহাটীতে নিগূঢ়-বিহার

পানীহাটী হতে নিতাই-সুন্দর

আইলেন,–দাস-গদাধরের ঘরে—পানীহাটী হতে নিতাই-সুন্দর

করিলেন নিগূঢ়-বিহার

এঁড়িয়াদহ-গ্রামে—করিলেন নিগূঢ়-বিহার
এঁড়িয়াদহে দাস-গদাধর-সনে—করিলেন নিগূঢ়-বিহার

দান-লীলা কৈলেন নিতাই

দাস-গদাধরের গোপীভাব দেখি’—দান-লীলা কৈলেন নিতাই

দাস-গদাধর-গৃহ হতে
আইলেন প্রভু খড়দহে

‘‘গিয়া খড়দহ-গ্রামে শ্রীপুরন্দর-ভবনে,
প্রেম প্রকাশয়ে নিরন্তর।
প্রেম-সুখে মত্ত করি’ আবাল-বৃদ্ধ-নরনারী,
বিহরয়ে নিতাই-সুন্দর।।’’

বিহরে আমার নিতাই-সুন্দর

এই সুরধুনীর তীরে তীরে—বিহরে আমার নিতাই-সুন্দর
প্রেম-ভাবোদ্দাম-সঙ্গী লয়ে—বিহরে আমার নিতাই-সুন্দর

অবিচারে নাম-প্রেম বিলায়

গৌর-প্রেমে মাতা নিত্যানন্দ-রায়—অবিচারে নাম-প্রেম বিলায়

এইরূপে বিহার করতে করতে

এই গঙ্গা-তীর দিয়া—এইরূপে বিহার করতে করতে

এই সেই পুণ্যভূমি সপ্তগ্রাম

নিতাই-সুন্দরের বিশিষ্ট-বিহার-স্থান—এই সেই পুণ্যভূমি সপ্তগ্রাম

[মাতন]

‘‘আসি এই সপ্তগ্রাম-পুরে, এই উদ্ধারণ-ঘরে,
প্রেম-সুখে সতত বিহরে।’’

এই ত’ উদ্ধারণের ঘর

নিত্যানন্দের বিলাসের ঘর—এই ত’ উদ্ধারণের ঘর

প্রেম-সুখে নিতাই বিহরে

এই,–সপ্তগ্রামে উদ্ধারণ-ঘরে—প্রেম-সুখে নিতাই বিহরে

‘‘প্রেম গর গর মন, সেবা, করে উদ্ধারণ,
কত প্রেম-পরিপাটী করে।।’’

গৌর-প্রেমের মুরতির সেবা করে

ঠাকুর-উদ্ধারণ প্রেম-ভরে—গৌর-প্রেমের মূরতির সেবা করে

‘‘নিত্যানন্দ-জীবন, ঠাকুর-শ্রীউদ্ধারণ,
অনুক্ষণ আজ্ঞার কিঙ্কর।
নিত্যানন্দ-স্বরূপের, পাইলা সেবা-অধিকার,
ভাগ্যবন্ত কে বা সম তার।।’’

ঠাকুর,–উদ্ধারণ কত ভাগ্য ধরে

গৌর-সেবা-বিগ্রহের সেবা করে—ঠাকুর,–উদ্ধারণ কত ভাগ্য ধরে

‘‘সদা কায়-বাক্য-মনে, সেবয়ে নিতাই-ধনে,
হৃ’দে ধরি’ সে রাঙ্গা-চরণ।
অকৈতবে উদ্ধারণ, নিত্যানন্দ-স্মরণ,
সে যে,–জন্মে জন্মে নিত্যানন্দগণ।।
নিত্যানন্দ প্রাণেশ্বর, নিত্য তাঁর কিঙ্কর,
উদ্ধারণ আপনারে মানে।’’

গরব করে বলে রে

নিতাই আমার প্রাণেশ্বর—গরব করে বলে রে
‘নিতাই আমার প্রাণেশ্বর’—
আমি তাঁর নিত্য-কিঙ্কর—নিতাই আমার প্রাণেশ্বর

[মাতন]
গরব করে বলে রে
আমার কুলের দেবা নিতাই

শ্রীমুখে বলেছেন চৈতন্য-গোসাঞি—আমার কুলের দেবা নিতাই

[মাতন]

‘‘সদা স্বপ্ন জাগরণে, নিতাই বিনা নাহি জানে,
মত্ত সদা নিতাই-গুণ গানে।।
যতেক বণিকগণ, উদ্ধারিলা উদ্ধারণ,
নিত্যানন্দ-ধন দিয়া দান।’’

বণিকগণে কৈলা তারণ

বণিক-কুল-পাবন উদ্ধারণ—বণিকগণে কৈলা তারণ

[মাতন]

ভজাইয়া নিতাই-চরণ—বণিকগণে কৈলা তারণ

[মাতন]
বণিক-কুলে জন্মেছ যারা

ঠাকুর,–উদ্ধারণের শরণ লও—বণিক-কুলে জন্মেছ যারা
‘ঠাকুর,–উদ্ধারণের শরণ লও’—
নিতাই বলে ধনী হও—ঠাকুর,–উদ্ধারণের শরণ লও

[মাতন]
প্রাণভরে বল সবাই

জয় ঠাকুর উদ্ধারণ—প্রাণভরে বল সবাই

[মাতন]

‘জয় ঠাকুর উদ্ধারণ’—
বণিক-কুল-পাবন উদ্ধারণ—বণিকগণে কৈলা তারণ

[মাতন]

‘‘যত সপ্তগ্রাম-বাসী, প্রেমানন্দে যায় ভাসি’,
করে গৌর-কৃষ্ণ-গুণ গান।।
বণিক তারণ-তরে, নিত্যানন্দ অবতারে,
বণিকেরে প্রেমভক্তি দিলা।
সবে আত্মসাৎ করি, দয়াল নিতাই-হরি,
বণিক-কুল কৃতার্থ করিলা।।
এই,–সর্ব্ব-সপ্তগ্রাম-পুরে, বণিকের ঘরে ঘরে,
নিত্যানন্দ কীর্ত্তনে বিহরে।’’

প্রভু নিতাই বিহরে

এই সপ্তগ্রামে প্রতি-বণিক-ঘরে—প্রভু নিতাই বিহরে

‘‘যতেক বণিকগণ, নিত্যানন্দ-শ্রীচরণ,
সর্ব্বভাবে সমাশ্রয়ে করে।।’’

ভাবাবেশে গান করে

সপ্তগ্রাম বাসী বণিকগণ—ভাবাবেশে গান করে
নিতাইচাঁদের কৃপা পেয়ে—ভাবাবেশে গান করে
উদ্ধারণের চরণ হৃদে ধরে—ভাবাবেশে গান করে

‘‘নিতাই কুলের দেবা,’’

আমার,-কুল-দেবতা নিতাই রে
বণিককুল বলে গরব করে—আমার,–কুল-দেবতা নিতাই রে

‘‘নিতাই কুলের দেবা, গুণ গাই করি সেবা,
নিতাই বিনে নাহি জানি আন রে।’’

এই ত’ নিতাই-সেবার উপাদান

নিরন্তর গৌর-গুণ গান—এই ত’ নিতাই-সেবার উপাদান

‘‘সাধন-ভজন যত, আছয়ে অনেক মত,
মুঁই সে মূরখ অগেয়ান।’’

কিছুই ত’ জানি না

সাধন ভজন কারে বলে—কিছুই ত’ জানি

সাধন ভজন জানি না

আমি মূর্খ অজ্ঞান—সাধন ভজন জানি না
জানি কেবল নিতাই-সোণা—সাধন ভজন জানি না

জানতে হয় তো এই জানি

‘‘জানি মুঁই নিত্যানন্দ রায়।’’

জানতে হয় তো নিতাই জানি

সাধন-ভজন আর কিছুই না জানি—জানতে হয় তো নিতাই জানি

বল্লে কেউ বল্লতে পারে

কেন এত গরব তোমাদের—বল্লে কেউ বল্লতে পারে
সাধন-ভজন জান তাতে—বল্লে কেউ বল্লতে পারে

গরবের কথা বলি ভাই রে

আবেশে বণিক-কুল বলে—গরবের কথা বলি ভাই রে
আবেশে বণিক-কুল বলে—গরবের কথা বলি ভাই রে

‘‘বণিক-কুলের নাথ, শ্রীচৈতন্য-মুখের বাত,’’

নিতাই মোদের কুলের দেবা

শ্রীগৌরাঙ্গ-শ্রীমুখের কথা—নিতাই মোদের কুলের দেবা
এ গরব কি যায় গো রাখা—নিতাই মোদের কুলের দেবা

‘‘জানিয়া পড়িনু পহুঁ-পায়।।’’

অন্য উপায় নাই জেনে

বণিক-কুলের নিতাই বিনে—অন্য উপায় নাই জেনে

‘‘একথা অন্যথা নবে, অবশ্য করুণা হবে,
যদি হই বণিকের সুত।’’

অবশ্য নিতাই-করুণা হবে

যদি,–জন্মে থাকি বণিক-কুলে—অবশ্য নিতাই-করুণা হবে

নিতাই ধরে আনবে কেশে

বলবান্‌,–কুলের দেবা নিতাই যাদের—নিতাই ধরে আনবে কেশে
যদিও,–যাই কোথায় দুর্দ্দৈব বশে—নিতাই ধরে আনবে কেশে
তাঁর নিজ-পদ-পাশে—নিতাই ধরে আনবে কেশে

[মাতন]
নিতাই-কৃপা পাব নিশ্চিত

যদি হই বণিকের সুত—নিতাই-কৃপা পাব নিশ্চিত

আমরি কি গরবের কথা
গরব করে বল দেখি ভাই

বণিককুলে জন্মেছ যারা—গরব করে বল দেখি ভাই
আমাদের কুলের দেবা নিতাই—গরব করে বল দেখি ভাই

[মাতন]
নিশ্চয় গৌর-কৃপা হবে

বণিক-কুলে জন্ম মোদের—নিশ্চয় গৌর-কৃপা হবে

এ-কথা,—বল ভাই গরব করে

এসেছি ঐ,–গরব-মাখা-কথা শুনতে—এ-কথা,–বল ভাই গরব করে

ঐ,–গরব-মাখান-কথা শুনে

সাধ হয় আমাদের প্রাণে প্রাণে—ঐ,–গরব-মাখান-কথা শুনে

যদি,–বণিক-কুলে জন্ম পেতাম

গরব কর বলে বেড়াতাম—যদি,–বণিক-কুলে জন্ম পেতাম্

গরব করে বলে বেড়াতাম্‌

আমাদের কুলের দেবা নিতাই—গরব করে বলে বেড়াতাম্‌

কতদিনে সেই দিন হবে

জনম পাব বণিক-কুলে—কতদিনে সেই দিন হবে

বলে বেড়াব গরব করে

নিতাই কুলের দেবা বলে—বলে বেড়াব গরব করে

[মাতন]

‘‘দেখিতে নিতাইচাঁদে, তবে কেন প্রাণ কাঁদে,
বলিতে ঠাকুর অবধূত।।’’

কেন প্রাণ কেঁদে উঠে

নাম শুনিলে দেখবার লাগি’—কেন প্রাণ কেঁদে উঠে
যদি,–প্রাণে প্রাণে সম্বন্ধ না থাকে—কেন প্রাণ কেঁদে উঠে
যদি,–চির-সম্বন্ধ না থাকে—কেন প্রাণ কেঁদে উঠে
যদি,–চির-সম্বন্ধ না থাকে’—
ঠাকুর-অবধুত-সনে—যদি,–চির-সম্বন্ধ না থাকে

কেন প্রাণ কেঁদে উঠে
ব্যাকুল হয়ে বলে রে
এ ত’ অতি-সত্য-কথা
নিতাই বণিক-কুলের দেবা

সপ্তগ্রামবাসী বণিক-কুল-বলে—নিতাই বণিক-কুলের দেবা

‘‘বসুধা-জাহ্নবা-প্রাণ, ধন হে নিতাইচাঁদ,
করুণা করহ এইবার।
দিয়েছি চরণে ভার,’’

ভার দিয়েছি ঐ চরণে

তুমি কুলের দেবা জেনে—ভার দিয়েছি ঐ চরণে
শ্রীচৈতন্য-মুখের কথা শুনে—ভার দিয়েছি ঐ চরণে
ভজি না আর কিছু তোমা বিনে—ভার দিয়েছি ঐ চরণে[মাতন]

‘‘দিয়েছি চরণে ভার, কর বা না কর পার,
এ দাস বল্লভ কহে সার।।’’

ভার দিয়ে খালাস হলাম

তুমি একমাত্র গতি মোদের—ভার দিয়ে খালাস হলাম
যাতে সুখ হয় তাই কর—ভার দিয়ে খালাস হলাম্

‘‘যতেক বণিকগণ, নিত্যানন্দ-শ্রীচরণ,
সর্ব্বভাবে সমাশ্রয় করে।।
বণিকের কৃষ্ণভজন, দেখি কত জগজন,
সবে চমৎকার পায় মনে।
নিত্যানন্দ-কৃপা-গুণে, ধনী বণিক প্রেমধনে,
অধম-মূর্খ করিলা তারণে।।
ক্ষুধা তৃষ্ণা নিদ্রা ভয়, জীব-ধর্ম্ম পাইল লয়,
রাত্রি দিন ভেদ জ্ঞান গেল।
সদা হরি-সঙ্কীর্ত্তনে, সর্ব্বদিকে অনুক্ষণে,
স্থাবর জঙ্গম মত্ত হৈল।।’’

স্থাবর জঙ্গম প্রেমে মাতায়

সপ্তগ্রামে নিত্যানন্দ-রায়—স্থাবর জঙ্গম প্রেমে মাতায়

‘‘সদা প্রেমাবেশময়, প্রভু নিত্যানন্দ-রায়,
কে বিহ্বল না হয় তা’ হেরি’।
অন্যের আছুক দায়, যবন লোটায় পায়,
মুখে বলি’ রাম কৃষ্ণ হরি।।’’

নিতাই-গুণে মাতল সকলে

ম্লেচ্ছ,–যবনাদি সপ্তগ্রামপুরে—নিতাই গুণে মা’ত্‌ল সকলে

যবনেও নাচে গায়

নিতাইচাঁদের করুণায়—যবনেও নাচে গায়
গৌরহরি বোল বলে—যবনেও নাচে গায়

[মাতন]
সপ্তগ্রাম প্রেমে ভাসে

প্রেমের মুরতি নিতাই-কৃপাবেশ—সপ্তগ্রাম প্রেমে ভাসে

‘‘যবনের দুনয়নে, প্রেমধারা দরশনে,
সুব্রাহ্মণ আপনা ধিক্কারে।
হেন নিতাই না ভজিয়া, পাষাণ সমান হিয়া,
তাপানলে সদা প্রাণ পুড়ে।।’’

তাপানলে মলাম পুড়ে

নিতাই না ভজন করে—তাপানলে মলাম পুড়ে

‘‘সপ্তগ্রামে অবিরত, কীর্ত্তন-বিহার যত,
শতবর্ষে নারি বর্ণিবারে।
পূরবে নদীয়াপুরে, যে হইল ঘরে ঘরে,
তাই পুনঃ সপ্তগ্রামপুরে।।’’

নবদ্বীপে যেমন গৌর-বিহার
সপ্তগ্রামে তেমনি নিতাই-এর বিহার
এই,–সপ্তগ্রামে নিতাই-এর বিহার তেমন

নদীয়ার প্রাণ-গৌরের যেমন—এই,–সপ্তগ্রামে নিতাইএর বিহার তেমন

তাই এই,–‘‘সপ্তগ্রামের রজঃকণা,হৃদে ধরি নিতাই-সোণা,
পদস্পর্শে পরশ হইল।’’

প্রাণে প্রাণে কর ধারণা

হৃদে ধরি’ শ্রীগুরু-চরণ দুখানা—প্রাণে প্রাণে কর ধারণা
যদি,–ভাগ্যবলে এলে সপ্তগ্রামে—প্রাণে প্রাণে কর ধারণা

পেয়েছে নিতাই-করুণা

সপ্তগ্রামের প্রতি রজঃকণা—পেয়েছে নিতাই-করুণা
নিতাই-এর,–অভয়-চরণ হৃদে ধরে—পেয়েছে নিতাই-করুণা [মাতন]

প্রেম পেয়ে হইল পরশমণি

সপ্তগ্রামের প্রতিধূলি—প্রেম পেয়ে হইল পরশমণি
হৃদে ধরি’ নিতাই-গুণমণি—প্রেম পেয়ে হইল পরশমণি [মাতন]

ভাগ্যবতী সপ্তগ্রাম-ভূমি
হৃদয়ে ধরেছ তুমি

প্রাণ-গৌরাঙ্গ-বিলাসের ভূমি—হৃদয়ে ধরেছ তুমি

‘‘নিতাই-প্রিয় উদ্ধারণ, অদভূত আচরণ,
একদিন নিতাই-অজ্ঞাতে।
অড়হর-ডালের কাঠি, রোপিলেন খুঁদি মাটি,
আপনার গৃহ-প্রাঙ্গণেতে।।
অতি অপরূপ-কথা, তখনি মাধবী-লতা,
উপজিয়া অঙ্গণ ছাইল।
পত্রপুষ্প শোভাময়, ভ্রমর গুঞ্জরে তায়,
জগজন-মন মাতাইল।।’’

অপরূপ সৃজন রে

অড়হর,—ডালের কাঠি মাধবী হল—অপরূপ সৃজন রে

[মাতন]
অদ্যাপিও বিরাজিছে

এই সেই মাধবীলতা-কুঞ্জ-অদ্যাপিও বিরাজিছে
সেই লীলার সাক্ষীরূপেতে—অদ্যাপিও বিরাজিছে

মাধবীকুঞ্জ কর দরশন

নিতাইএর ভক্ত-বাৎসল্যের নিদর্শন—মাধবীকুঞ্জ কর দরশন

[মাতন]

‘‘বিরোধী ব্রাহ্মণগণ’’

এই সপ্তগ্রামবাসী

‘‘বিরোধী ব্রাহ্মণগণ’’ বুঝিলেন উদ্ধারণ,
সামান্য মানব মাত্র নয়।
নিত্যানন্দ-অন্ন-পাকে, তারই অধিকার থাকে,
হেন শক্তি যে জনের হয়।।’’

উদ্ধারণ সামান্য মানব নয়

নিত্যানন্দের,–রন্ধন-সেবা-অধিকার পায়—উদ্ধারণ সামান্য মানব নয়

‘‘নিজ-গৃহ-সরোবরে, সুখে সন্তরণ করে,
নিত্যানন্দ-সনে উদ্ধারণ।
নিতাই-চরণ হইতে, নূপুর খসি’ পড়ে তাতে,
নূপুর-কুণ্ড হইল প্রচারণ।।’’

এই যে এখানে সাক্ষী দিছে

শ্রীনূপুর-কুণ্ড বলে—এই যে এখানে সাক্ষী দিছে

‘‘প্রভু-নিত্যানন্দ-সাথে, উপনীত অম্বিকাতে,
সূর্য্যদাস-পণ্ডিতের ঘরে।
চৈতন্যের আজ্ঞায়, নিত্যানন্দ-লাগি’ চায়,
বসুধা-জাহ্নবা-দুহিতারে।।
শুনি’ তথা ব্রাহ্মণ, জিজ্ঞাসেন একজন,
শ্রীপাদের কিবা পরিচয়।
সঙ্গে নাহি ব্রাহ্মণ, নিতি নিতি রন্ধন,
স্বপ্নাকে কি সর্ব্বদাই হয়।।
শুনি’ নিত্যানন্দ-রায়, কৌতুকে কহয়ে তায়,
কখন বা আমি পাক করি।
না পারিলে উদ্ধারণ, করি পাক সমাপন,
অন্ন-ব্যঞ্জন রাখয়ে উতারি।।
শুনি’ সেই বিপ্র কয়, এই বৈষ্ণব কেবা হয়,
কি পরিচয় কোথায় বসতি।
প্রভু কহে উদ্ধারণ, সুবর্ণ-বণিক হন,
দত্ত খ্যাতি সপ্তগ্রামে স্থিতি।।
শুনি’ হাসি’ বিপ্র কয়, এই অবধূত-রায়,
কিবা তার জাতির পরিপাটী।
উদ্ধারণ সোণার বেণে, রন্ধনেতে প্রতিদিনে,
যার ডালে সদা দেয় কাঠি।।
পরিহাস করি’ কয়, গৌরীদাস মহাশয়,
সুকুলীন-জামাতা পাইলা।
সমাজ-বিরোধী হেরি,’ সূর্য্যদাস শঙ্কা করি’,
নিত্যানন্দে কন্যা নাহি দিলা।।
বিরহে বসুধা প্রাণ, করিলেন বিসর্জ্জন,’’

আজকার নয় গো
নিত্য সম্বন্ধ আছে

প্রভু-নিত্যানন্দ সনে—নিত্য সম্বন্ধ আছে

‘‘বিরহে বসুধা প্রাণ, করিলেন বিসর্জ্জন,
দাহ লাগি’ চিতায় চড়াইলা।
হেনকালে আচম্বিতে, উদ্ধারণ লয়ে সাথে,
প্রভু-নিতাই তথায় আইলা।।
হরিনাম-মন্ত্র দিলা, বসুধারে বাঁচাইলা,
দেখি’,–সূর্যদাস আনন্দে মগন।
বেদবিধি-বিধানেতে, মহা-সমারোহ-মতে,
বসুধা-জাহ্নবা কৈল দান।।’’

ভাবাবেশে উদ্ধারণ গায়
আমার নিত্যানন্দ-রায়

বসুধা-জাহ্নবা-প্রাণ—আমার নিত্যানন্দ-রায়,

[মাতন]

‘‘অনন্যে নিতাই গতি, উদ্ধারণ-গুণ-রীতি,
কার সাধ্য কহে তাঁর লীলা।
কন্যারূপে গঙ্গা যাঁরে, পিতা সম্বোধন করে,
শঙ্খ পরি’ হস্ত দেখাইলা।।’’

পিতা-সম্বোধন করে

ভাগিরথী উদ্ধারণে—পিতা-সম্বোধন কর

[মাতন]
কি বলব উদ্ধারণের লীলা

‘‘নৈহাটী নিকট গ্রাম, উদ্ধারণপুর নাম,
তথায় গঙ্গা উর্দ্ধে বাহু তুলি।
জগজনে জানাইলা, উদ্ধারণে খ্যাত কৈলা,
নিতাই-সখা-সূত্রে পিতা বলি।।’’

উদ্ধারণ গুণের খনি

কি বলব গুণ কত বা জানি—উদ্ধারণ গুণের খনি

‘‘বিনয়ী বিদ্বান ধনী, বদান্য দয়ার খনি,
বিষয়-বিরক্ত উদাসীন।
অকৈতব অকিঞ্চন, অখিল আপন-জন,
ভক্তি-ভরে তৃণাদপি দীন।।
সৎশাস্ত্রে সদালাপে, সঙ্কীর্ত্তনে সদা যাপে,
আনন্দেতে দিবস-যামিনী।
রাই-কানু কণ্ঠহারা, গৌরাঙ্গ নয়ন-তারা,
যার,– প্রাণের প্রাণ নিতাই গুণমণি।।
ভক্তগণ নিজ-জন, নবদ্বীপ নিকেতন,
নীলাচল বৃন্দাবন বাস।
গোবর্দ্ধনে গোচারণে, যমুনা পুলিস বন,
যথা নিতি ভোজন-বিলাস।।
অনাস্বাদ্য অপূরণ, মনোরথ আস্বাদন,
সর্ব্ব-বাঞ্ছাসিদ্ধি সুখোল্লাস।
রাধাকৃষ্ণ একঅঙ্গ, অপরূপ শ্রীগৌরাঙ্গ,
সঙ্গে সদা সঙ্কীর্ত্তন-রাস।।
প্রভু-নিত্যানন্দ-সনে, প্রেম-ধর্ম্ম নিশিদিনে,
গৌর-গুণ-কীর্ত্তন নর্ত্তন।
গৌর-প্রেমে গরগর, ঝরে আঁখি ঝরঝর,
প্রেমানন্দ-সাগরে মজ্জন।।
এই,–ষড়ভুজ শ্রীগৌরাঙ্গ, নিজ-গৃহে প্রেমরঙ্গ,
স্বহস্তে করয়ে সেবন।
নিত্য নিত্যানন্দ-ধনে, সেবা করে স-যতনে,
নিতাই-প্রেমে পরিপূর্ণ মন।।
প্রভু-নিত্যানন্দ-সনে, সর্ব্ব তীর্থ পর্য্যটনে,
কত অতীর্থেরে তীর্থ কৈলা।’’

সেই ভূমি তীর্থ হৈল

যে ভূমি,–নিতাই-পদেরজঃ পেল—সেই ভূমি তীর্থ হৈল

‘‘প্রেম-সুখে নিতাই-সনে, সখ্য-রস অস্বাদনে,
নিশিদিশি যাঁর প্রেমখেলা।।
ভ্রমি’ সর্ব্ব-বৃন্দাবন, বিরহে ব্যাকুল মন,
বংশীবটে হইলা অদর্শন।
পৌষ-কৃষ্ণা-ত্রয়োদশীতে, লুকাইলা আচম্বিতে,
শূন্য হইল অখিল-ভুবন।।
ঠাকুর-শ্রীউদ্ধারণ, উদ্ধারিলা জগজন,
দিয়া নিত্যানন্দ-প্রেমধন।
দীন-দ্বিজ-দূরাচারে, কৃপা কর অবিচারে,
নিতাই-পদে বাঁধি দাও প্রাণ।।’’

কোথা বা লুকালে

নিতাই-প্রিয় উদ্ধারণ—কোথাও বা লুকালে

সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা
দেখিতে ত’ পাই নাই

তখন জনম হয় নাই—দেখিতে ত’ পাই নাই

বিহরিলে এই সপ্তগ্রামপুরে

প্রভু-নিতাই সঙ্গে করে—বিহরিলে এই সপ্তগ্রামপুরে
বণিকের ঘরে ঘরে—বিহরিলে এই সপ্তগ্রামপুরে
গৌর-নাম-প্রেম দান করে—বিহরিলে এই সপ্তগ্রামপুরে

[মাতন]
হয় নাই মোদের নয়ন-গোচর

আমাদের দুর্দ্দৈব-দোষে—হয় নাই মোদের নয়ন-গোচর
নিতাই-সনে সে মধুর-বিহার—হয় নাই মোদের নয়ন-গোচর

নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

সেই লীলা-অদর্শন-শেল-নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

শ্রীগুরুদেবের কথা সঙরি’
আজ,-এসেছি বড় আশা করি’

দগ্ধ-হৃদয় জুড়াবার লাগি’—আজ,–এসেছি বড় আশা করি’

শ্রীমুখে বলেছেন শ্রীগুরুদেব
নিতাই-গৌর-লীলা ত্রিকাল-সত্য

তাঁর,–গণের খেলা তেমনি নিত্য—নিতাই-গৌর-লীলা ত্রিকাল-সত্য

সেই কথা বুকে ধরে
আজ,–এসেছি আশা লয়ে প্রাণে

ঠাকুর-উদ্ধরণ তোমার ঘরে—আজ,–এসেছি আশা লয়ে প্রাণে
শ্রীগুরু,–কৃপা-প্রেরণা আনলে টেনে—আজ,–এসেছি আশা লয়ে প্রাণে
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে,–আজ,–এসেছি আশা লয়ে প্রাণে

ঠাকুর-উদ্ধারণ কোথা তুমি

এই ত’ তোমার বসতি—ভূমি—ঠাকুর-উদ্ধারণ কোথা তুমি

নিদর্শন এই যে পড়ে আছে

তোমা-সনে নিতাইচাঁদের প্রীতির—নিদর্শন এই যে পড়ে আছে
মাধবী-লতার কুঞ্জ-নিদর্শন এই যে পড়ে আছে

নূপুর-কুণ্ড সাক্ষী দিছে

নিতাইচাঁদের বিহার তোমার সনে—নূপুর-কুণ্ড সাক্ষী দিছে

অদ্যাপিত করছ খেলা

রঙ্গিয়া,–নিতাই-সনে শ্রীভূমিতে—অদ্যাপিও করছ খেলা

কোথা বা লুকায়ে আছ

এই,–মাধবী-কুঞ্জে নিতাই লয়ে—কোথা বা লুকায়ে আছ

কোথা,–গূঢ়রূপে বিহরিছ

ওহে ঠাকুর উদ্ধারণ—কোথা,–গূঢ়রূপে বিহরিছ
অতিগূঢ়-নিতাই-সনে—কোথা,–গূঢ়রূপে বিহরিছ

বড় সাধ দেখব বলে

নিতাইচাঁদের,–গূঢ়-লীলা তোমার ঘরে—বড় সাধ দেখব বলে

জগতে ত’ সবাই জানে

সেবক থাকে না সেব্য বিনে—জগতে ত’ সবাই জানে

কিন্তু কিবা করবে
প্রত্যাখ্যান কৈলেন

প্রাণের প্রাণ শ্রীগৌরাঙ্গ—প্রত্যাখ্যান কৈলেন
জগদানন্দ-স্বরূপের সেবা—প্রত্যাখ্যান কৈলেন

কারো সেবা নিলেন না

নীলাচলে গৌরহরি—কারো সেবা নিলেন না

বলিলেন নিতাইচাঁদে

দুটী,–হাতে ধরে কেঁদে কেঁদে—বলিলেন নিতাইচাঁদে

যাও নিতাই ত্বরা করে

আমার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করতে—যাও নিতাই ত্বরা করে
‘আমার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করতে’—
নাম-প্রেম বিতরিয়ে—আমার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করতে

যাও নিতাই ত্বরা করে
মনো দুঃখে নিতাই কাঁদে
আমি,–কেমন করে থাকব

এ-সব-সেবা আমারই ত’—আমি,–কেমন করে থাকব

এদের দ্বারে ত’ সামান্য সেবা
আমার ত’ স্বভাব বটে

নিরন্তর বিশেষ-সেবা—আমার ত’ স্বভাব বটে

আমি,–কেমন করে থাকব

গৌর,–সেবা যদি না নিল—আমি,–কেমন করে থাকব

সে সেজেছে আজ সন্ন্যাসী

যারে,–কত সাজে সাজিয়েছি—সে সেজেছে আজ সন্ন্যাসী
আমি তা কেমন করে দেখি—সে সেজেছে আজ সন্ন্যাসী

থাকি বা কেমন করে

নিরন্তর বিশেষ-সেবা ছেড়ে—থাকি বা কেমন করে

এলেন নিতাই গৌড়-মণ্ডলে

গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে—এলেন নিতাই গৌড়-মণ্ডলে

সদাই দুঃখী অন্তরে

সেব্য ছেড়ে আছে দূরে—সদাই দুঃখী অন্তরে

গৌরাঙ্গ-নাম উচ্চারয়ে

নিতাই আমার ভাবাবেশে—গৌরাঙ্গ-নাম উচ্চরয়ে
নাম-প্রেম প্রচার-কাজে—গৌরাঙ্গ-নাম উচ্চারয়ে

অমনি প্রাণে জেগে উঠে

গৌর সেবা নিল না বলে—অমনি প্রাণে জেগে উঠে

মনে মনে ভাবলেন নিতাই

বিরহে ব্যাকুল সদাই—মনে মনে ভাবলেন নিতাই
কেমনে বা প্রাণ জুড়াই—মনে মনে ভাবলেন নিতাই

এত ভাবি’ নিতাই-সুন্দর
মনে মনে স্থির করলেন
এ দেহ ত’ আমার নয়

এ-যে গৌরাঙ্গে অর্পিত দেহ—এ দেহ ত’ আমার নয়

মন-সাধে সাজাব

এ-যে আমার গৌর-দেহ—মনে-সাধে সাজাব
গৌরের মনোরম-সাজে—মন-সাধে সাজাব
মনের তাপ মিটাব—মন-সাধে সাজাব

মন-সাধ পূর্ণ কৈলেন

প্রাণ-গৌরাঙ্গ-সেবায়—মন-সাধ পূর্ণ কৈলেন
উদ্ধারণ তোমার ঘরে—মন-সাধ পূর্ণ কৈলেন

সাজলেন গৌরের রসের সাজ

যত গৌর-ভূষণ অঙ্গে পরে—সাজলেন গৌরের রসের সাজ
গৌর-সেবা-বিগ্রহ নিতাই—সাজলেন গৌরের রসের সাজ
গৌরের নানা-বেশ-ভূষা পরে—সাজলেন গৌরের রসের সাজ

আপনি সেজে গৌরের সাজে

নিতাই বলেন তোমায় ডেকে—আপনি সেজে গৌরের সাজে

দেখ দেখ উদ্ধারণ

আমার,–বিলাসী গোরা সেজেছে কেমন—দেখ দেখ উদ্ধারণ

[মাতন]
একবার দেখাও হে

ত্রিকাল-সত্য নিতাই-বিহার—একবর দেখাও হে
সপ্তগ্রামে তোমার ঘরে—একবার দেখাও হে
সেই-স্বরূপে নিতাই-চাঁদে—একবার দেখাও হে

যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে

নিজ-বাস-ভবনে—যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে

বঞ্চিত করো না

নিমন্ত্রণ করে এনে—বঞ্চিত করো না

বড় তাপ লাগবে তোমায়

যথাযুক্ত সেবা না করলে—বড় তাপ লাগবে তোমায়

বড় তাপ পাবে প্রাণে

অতিথি বিমুখ হলে—বড় তাপ পাবে প্রাণে
আমরা,–বঞ্চিত হয়ে ফিরে গেলে—বড় তাপ পাবে প্রাণে

সেই দুঃখ লাগছে প্রাণে

আমরা,–না দেখি দুঃখ নাই—সেই দুঃখ লাগছে প্রাণে
তুমি বড় দুঃখী হবে—সেই দুঃখ লাগছে প্রাণে

তাই বলি একবার দেখাও
সেই লীলা একবার দেখাও

তোমার দুঃখ দেখতে নারব—সেই লীলা একবার দেখাও

গৌরময় নিতাইএর খেলা

একবার দেখাও সেই-লীলা—গৌরময় নিতাইএর খেলা

গৌর-সাজে নিতাই-সাজা
কথা যে কইছ না

নামে যে কলঙ্ক হবে—কথা যে কইছ না

উদ্ধারণ নিত্যানন্দ-দাস
নিতাই-দাসের এই ত’ স্বভাব

একা ভোগ করতে নারে—নিতাই-দাসের এই ত’ স্বভাব

ভোগ করায় দীন-জনে

আপন-ভোগ ত্যাগ করে—ভোগ করায় দীন-জনে

কথা যে কইছ না

নিজেই নিয়ে মেতে আছ—কথা যে কইছ না

ভয় নাই আমরা নিয়ে যাব না

তোমার নিতাই তোমার থাকবে—ভয় নাই আমরা নিয়ে যাব না

কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখবো

ভাল বাসতে জানি না—কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখবো
শুধু একবার দেখব—কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখবো

নিতাই আমার প্রেম-পিয়ারা

গৌর-প্রেমে তনু গড়া—নিতাই আমার প্রেম-পিয়ারা

[মাতন]
দেখাও ঠাকুর উদ্ধারণ

তোমার,–অতিগূঢ় নিতাই-ধন—দেখাও ঠাকুর উদ্ধারণ

সেই মুরতি দেখাও হে
সেই গূঢ়-লীলা হেরে

হৃদে ধরি সদাই ঝুরি—সেই গূঢ়-লীলা হেরে

গৌর-জড়িত নিতাই মানি

প্রাণে প্রাণে ভোগ করি—গৌর-জড়িত নিতাই মানি

আমার ঠাকুর অবধূত

অভিন্ন-চৈতন্য-তনু—আমার ঠাকুর অবধূত

গরব করে বলি ফুকারি

ঠাকুর,–বৃন্দাবনের চরণ হৃদে ধরি’—গরব করে বলি ফুকারি’

আমার,–মহাপ্রভু নিত্যানন্দ

শ্রীগৌর-সেবা বিগ্রহ—আমার,–মহাপ্রভু নিত্যানন্দ
অভিন্ন-শ্রীচৈতন্য—আমার,–মহাপ্রভু নিত্যানন্দ

ঠাকুর উদ্ধারণ দয়া কর
প্রাণে প্রাণে জাগায়ে দাও

নিতাইচাঁদের এই গূঢ়-রহস্য—প্রাণে প্রাণে জাগায়ে দাও

যেন,–আন নাহি জানি মনে

নিতাই-আবৃত-গৌর বিনে—যেন,–আন নাহি জানি মনে

[মাতন]
যেন,–প্রাণভরে গান করি

জগদগুরু-নিতাই হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণভরে গান করি

আমরা নিতাই মহা-উদ্ধারণ

বণিক-কুল-পাবন—আমার নিতাই মহা-উদ্ধারণ
ঠাকুর,–উদ্ধারণের প্রাণধন—আমার নিতাই মহা-উদ্ধারণ

[মাতন]
হা,–পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব

নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—হা,–পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব

সঙ্গে করে এনেছিলেন

এই,–সপ্তগ্রামে উদ্ধারণ-ঘরে—সঙ্গে করে এনেছিলে
নিতাই-বিহারভোগ করাতে—সঙ্গে করে এনেছিলে

নিশ্চয় এসেছ তুমি

ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—নিশ্চয় এসেছ তুমি

একবার দেখাও মোদের

গৌর-সাজা নিতাইচাঁদ—একবার দেখাও মোদের

হৃদি-পটে এঁকে নেব

পাগলা-প্রভু তোমার আনুগত্যে—হৃদি-পটে এঁকে নেব
প্রাণভরে বলবো—হৃদি-পটে এঁকে নেব
প্রাণভরে বলবে—হৃদি-পটে এঁকে নেব

প্রাণভরে বল নিতাই নিতাই

নিতাইএর,–বিহারভূমিতে এসেছ সবাই—প্রাণভরে বল নিতাই নিতাই

‘‘নিতাই নিতাই নিতাই নিতাই নিতাই বল ভাই।

ঠাকুর,– উদ্ধারণের প্রাণ নিতাই নিতাই বল ভাই।।’’
‘‘নিতাই নিতাই নিতাই নিতাই নিতাই বল ভাই।
বণিক-কুলের দেবা নিতাই নিতাই বল ভাই।।’’

[মাতন]
গৌরহরি-হরিবোল

নিত্যানন্দ-আনন্দে—গৌরহরি-হরিবোল

‘‘নিতাই-গৌর-হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল হরিবোল।’’

[মাতন]

শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ