শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রীবৃন্দাবন-ভ্রমণ-লীলা কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রীবৃন্দাবন-ভ্রমণ-লীলা
বা
শ্রীগৌরাঙ্গের ব্রজলীলা


(কার্ত্তিকী পূর্ণিমা বা রাসপূর্ণিমা)


‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।’’


ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
জপ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।’’

আমাদের,–সীতানাথের আনানিধি—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–প্রাণশচী-দুলালিয়া—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–গদাধরের প্রাণবঁধয়া—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়া—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–প্রভু-নিতাই-পাগলকরা—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।।’’
‘‘মাতি,–শ্রীরাধাভাবে, আজ,–ব্রজবনে বিহরই গো,’’
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।।’’

আমাদের,–শ্রীরূপ-হৃদকেতন—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–শ্রীসনাতনের গতি—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–শ্রীগোপালভট্টের পরাণ—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–শ্রীগোপালভট্টের পরাণ—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–দাস-রঘুনাথের সাধনের ধন—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–শ্রীরঘুনাথভট্টের পরাণ —ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–শ্রীলোকনাথের হৃদ্‌বিহারী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–শ্রীজীব-জীবনধন—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–স্বরূপ-রামারায়ের চিতচোরা—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘স্বরূপ-রামরায়ের চিতচোরা—’

রাধাভাবে ভোরা গোরা—স্বরূপ-রামরায়ের চিতচোরা
[মাতন]
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।।
‘‘মাতি,–শ্রীরাধাভাবে আজ,–ব্রজবনে বিহরই গো।’’
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।।’’

বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিহরে,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।।

‘‘গোরা,–হরি হরি হরি বলে, নেচে যায় বাহু তুলে গো,’’


আমাদের,–বিরহিণী প্রাণগোরা—হরি হরি হরি বলে
মহা,–ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার—হরি হরি হরি বলে
গৌরাঙ্গ-কিশোরী আমার—হরি হরি হরি বলে

মহা,–ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার
হরি হরি বোলে গোরা

রাধিকার ভাবে ভোরা—হরি হরি বোলে গোরা

[মাতন]
হেলে দুলে যায় রে

ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার—হেলে দুলে যায় রে
‘ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার’—
বিংশতি-ভাবে ভোরা—ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার

হেলে দুলে যায় রে
শ্রীঅঙ্গ হয়েছে ভারি

বিংশতি-ভাব-ভূষণ পরি—শ্রীঅঙ্গ হয়েছে ভারি

হেলে দুলে যায় গো

রাধা,–ভাবে ভোরা প্রাণ গোরা–হেলে দুলে যায় গো
‘রাধা,–ভাবে ভোরা প্রাণ গোরা’—
তাতে,–বিংশতি-ভাব-ভূষণ পরা—রাধা,-ভাবে ভোরা প্রাণগোরা

হেলে দুলে যায় গো

আমাদের—প্রাণ গোরা রায়—হেলে দুলে যায় গো
বিংশতি-ভাব-হিল্লোলে—নেচে যায় হরিবোলে
গৌরাঙ্গ-কিশোরী আমার—নেচে যায় হরিবোলে

গোরা আজ,–‘‘হরি হরি হরি বলে, নেচে যায় বাহু দুলে গো’’

বলে,–কোথা লুকালে প্রাণের হরি

গৌরাঙ্গ-কিশোরী বলে—কোথা লুকালে প্রাণের হরি
এই,–কিশোরীর মন করে চুরি—কোথা লুকালে প্রাণের হরি

এ ত’ হরি বলা নয় রে

আমার,–গৌর-কিশোরী করে হরি হরি—এ ত’ হরি বলা নয় রে

বলে,–প্রাণবঁধু পাব কোথায়

গৌর-কিশোরী করে হায় হায়—বলে,–প্রাণবঁধু পাব কোথায়

[মাতন]

‘‘হরি হরি হরি বলে,’’
বিরহিমী ভানুনন্দিনী—‘‘হরি হরি হরি বলে’’

নেচে যায় বাহু তুলে গো,’’

‘‘ব্রজ,–বনের মাধুরী হেরি আনন্দ বাঢ়য় গো।’’
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিহরে,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়


‘‘আজ,–উনমত গোরা রায়,’’
কৃষ্ণ-বিরহিণী-ভাবে ভোরা—‘‘আজ,–উনমত গোরা রায়,’’
কৃষ্ণ-বিরহিণী উন্মাদিনী—‘‘আজ,–উনমত গোর রায়,’’

‘‘আজ,–উনমত গোরা রায়, পথাপথ নাহি ভায় গো,
বলভদ্র কৃষ্ণদাস পিছু পিছু ধায় গো।’’


‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
‘‘হেমদণ্ড-বাহু তুলি,’’
কনক-পুতলী গোরা—‘‘হেমদণ্ড-বাহু তুলি’’
বিরহিণী গৌর কিশোরী—‘‘হেমদণ্ড-বাহু তুলি’’

‘‘হেমদণ্ড বাহু তুলি, বলে সদা হরি হরি গো,
স্থাবর-জঙ্গম গোরা প্রেমেতে মাতায় গো।’’

আজ,–ব্রজে বিহরে গৌরহরি

স্থাবর,–জঙ্গম-প্রেমোন্মত্তকারী—আজ,–ব্রজে বিহরে গৌরহরি

স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে মাতায়

প্রেমের মুরতি গোরা রায়—স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে মাতায়

স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে ভাসায়

প্রেমসিন্ধু গোর রায়—স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে ভাসায়
আমাদের প্রাণ গোরা রায়—স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে ভাসায়

(ঝুমুর)

“ও আমাদের,– প্রাণ গোরা রায়।”


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিহরে,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিরহিণী ভাবে ভোরা—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিরহিণীর ভাবে ভোরা—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘নিজে গোপী-প্রাণপতি, রাধিকা-ভাবিত মতি গো,
প্রেমের বিবর্ত্ত-স্রোতে ভাসিয়া বেড়ায় গো।।’’

বিবর্ত্তেস্রোতে ভাসিয়া বেড়ায়

বিবর্ত্ত-স্বরূপ প্রাণ-গোরা-রায়-বিবর্ত্তস্রোতে ভাসিয়া বেড়ায়

‘‘প্রেমের বিবর্ত্তস্রোতে ভাসিয়া বেড়ায় গো।’’
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের প্রাণ গোরা রায়

‘‘শ্রীযমুনার তীর-গতা, যত-বৃক্ষ-তরু-লতা গো,
দেখি প্রভু প্রেমে মত্ত মূরছি পড়য় গো।’’

প্রেমে মত্ত প্রভু মূরছি পড়ে

বাহু পসারি বলভদ্র ধরে—প্রেমে মত্ত প্রভু মূরছি পড়ে

বলভদ্র বাহু পসারি ধরে

বিরহিণী প্রাণগৌর,–ব্যাকুল হয়ে মূরছি পড়ে—বলভদ্র বাহু পসারি ধরে

ক্ষণে ডাকে উচ্চৈঃস্বরে
প্রভু নিতাই কোথায় আছ

কৃষ্ণ,–বিরহে মাতা গৌরাঙ্গে রাখ—প্রভু নিতাই কোথায় আছ

‘‘দেখি প্রভু প্রেমে মত্ত মূরছি পড়য় গো।’’
‘‘কালিন্দীর শ্যাম-নীর, দেখি প্রভু নহে স্থির গো,’’

অমনি,–কালিয়-দমনে মনে পড়ল
কালাচাঁদকে মনে পড়ল

কালিন্দীর কাল-নীর হেরে—কালাচাঁদকে মনে পড়ল

‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের প্রাণ গোরা রায়
বিহরে,–বিরহিণী উন্মাদিনী ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘কালিন্দীর কাল-নীর, দেখি প্রভু নহে স্থির গো,
কালিন্দীর কাল-জলে নিপতিত হয় গো।’’

বলে,–কোথায় আমার কালসোণা

বল বল ও যমুনা—বলে,–কোথায় আমার কালসোণা

ঝাঁপ দেয় কালিন্দী জলে

কোথা কালিয়-দমন বলে—ঝাঁপ দেয় কালিন্দীর জলে

[মাতন]

‘‘কালিন্দীর কাল-জলে নিপতির হয় গো।’’
‘‘বলভদ্র ভট্টাচার্য্য, কৃষ্ণদাস বিপ্র আর্য্য গো,
যমুনার জল হইতে প্রভুকে তোলয় গো।’’

বাহু পসারি ধরে কোলে

যমুনার,–জল হইতে প্রভুকে তোলে—বাহু পসারি ধরে কোলে

[মাতন]

‘‘যমুনার জল হইতে প্রভুক তোলয় গো।’’

ব্যাকুল হয়ে ডাকে রে

প্রভু,–নিতাই কোথায় আছ বলে,–ব্যাকুল হয়ে ডাকে রে

প্রভু নিতাই কোথায় আছ

বিরহিণী গৌরাঙ্গে রাখ—প্রভু নিতাই কোথায় আছ

কোথায় আছ নিত্যানন্দ-রায়

প্রভুর,–বিরহ-ভার ধরা না যায়—কোথায় আছ নিত্যানন্দ-রায়

‘‘শ্রীযমুনার জল হইতে প্রভুকে তোলয় গে।।’’
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ—বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘দেখি মধুর বৃন্দাবন,প্রেমেতে ঘূর্ণিত মন গো,’’


রাধা,–ভাবে ভোরা প্রাণ গোর—‘‘দেখি মধুর বৃন্দাবন’’
‘‘প্রেমেতে ঘূর্ণিত মন গো,’’

মহা,–ভাবনিধি প্রাণগৌরাঙ্গের

কিশোরী-ভাবেতে ভোরা—মহা,–ভাবনিধি প্রাণগৌরাঙ্গের

‘‘দেখি মধুর বৃন্দাবন, প্রেমেতে ঘূর্ণিত মন গো’’

আজ,–আস্বাদিতে এসেছে

কুঞ্জবিহারী রাধাভাব ধরি—আজ,–আস্বাদিতে এসেছে

আস্বাদিছে ব্রজমাধুরী

কুঞ্জবিহারী রাধাভাব ধরি—আস্বাদিছে ব্রজমাধুরী

‘‘বনের মাধুরী দেখি রোদন করয় গো।’’

অপরূপ ব্রজবনের মাধুরী

গৌরাঙ্গ-কিশোরী বলে—অপরূপ ব্রজবনে মাধুরী

তাতে,–বিরহিণী গৌর-কিশোরী

অপরূপ ব্রজ,–বনের মাধুরী হেরি—তাতে,–বিরহিণী গৌর-কিশোরী

বলে,–কোথায় আছ বংশীধারী

অপরূপ,–বনের মাধুরী হেরি—বলে,–কোথায় আছ বংশীধারী

দু’নয়নে বহে বারি

বৃন্দাবনের মাধুরী হেরি—দুনয়নে বহে বারি
বলে,–কোথা প্রাণের বংশীধারী—দু’নয়নে বহে বারি

‘বনের মাধুরী হেরি রোদন করয় গো।’’
‘‘ও আমাদের,–প্রাণের গোরা রায়।।’’


বিহরে—ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘পুলকাশ্রু পূর্ণ গায়, ভাবাবেশে চলি যায় গো’’

মহা,–ভাবনিধি ভাবেতে ভোরা

সর্ব্ব-অঙ্গ ভাবভূষা পরা—মহা,–ভাবনিধি ভাবেতে ভোরা

‘‘পুলকাশ্রু পূর্ণ গায়, ভাবাবেশে চলি যায় গো।’’
হেমকাশ্রু বাহু তুলি হরি বলি ধায় গো।’’

ও ত হরি বলা নয় গো

কোথা,–প্রাণ-বঁধূ বলে হায় হায় করে—ও ত হরি বলা নয় গো

বিরহেতে হায় হায় করে

বিরহিণী গৌর-কিশোরী—বিরহেতে হায় হায় করে
কোথা প্রাণ-বঁধূ বলে—বিরহিতে হায় হায় করে

ও ত হরি বলা নয় গো

‘‘হেমদণ্ড বাহু তুলি হরি ধায় গো।’’
ও আমাদের –‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহার,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোর রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘পসারিয়া বাহু-উর, আলিঙ্গয়ে লতা-তরু গো,’’


কৃষ্ণ,–বিরহিণী গৌর-কিশোরী,–‘‘পসারিয়া বাহু-উর,
উন্মাদিনী গৌর আমার—‘‘পসারিয়া বাহু-উর,’’

উন্মাদিনী গৌর আমার

অঙ্গ-সঙ্গ-বিলাসিনী—উন্মাদিনী গৌর আমার

‘‘পসারিয়া বাহু-উর, আলিঙ্গয়ে লতা-তরু গো,

আলিঙ্গয়ে লতা-তরুগণে

যেন,–অঙ্গ-সঙ্গ-বাসনা মনে—আলিঙ্গয়ে লতা-তরুগণে
পসারিয়া দুই বাহ—আলিঙ্গয়ে লতাতরুগণে

বলে,–বল ব্রজের তরুলতা

শ্যামবঁধু গেল কোথা—বলে,–বল ব্রজরে তরুলতা
সেই,–বনমালী পাব কোথা—বলে,–বল ব্রজের তরুলতা

‘‘যুক্তকণ্ঠে কাঁদিয়া আকুল গোর রায় গো।
‘‘ও আমাদের—প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘বংশীবট-ধীরসমীরে প্রবেশিয়া ধীরে ধীরে গো,
বলে,–‘‘কহ কহ কৃষ্ণ কোথা বাঁশরী বাজায় গো।’’

ও বংশীবট বল বল

বংশীধারী কোথা গেল—ও বংশীবট বল বল

বংশীবট বল দয়া করে

কোথা গেল,–বংশীধারী বংশী ধরে—বংশীবট বল দয়া করে

বলে,–‘‘কহ কহ কৃষ্ণ কোথা বাঁশরী বাজায় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘এই—গোপীশ্বর নিকটে আসি, করযোড়ে গোরাশশী গো,
কাতরে প্রার্থনা করি কর কি কহয় গো ।‘’

বল বল প্রভু গোপীশ্বর

কোথা,–ব্রজবিহারী প্রাণেশ্বর—বল বল প্রভু গোপীশ্বর

কৃপা করি মিলায়েছিলে

তোমরা দুজনে মিলে—কৃপা করি মিলায়ে ছিলে

দিয়েছিলে তোমারা দুইজনে

প্রাণপতি কৃষ্ণধনে—দিয়েছিলে তোমরা দুইজনে

তোমরা দুজনে দিয়েছিলে;

কোন দোষে কেড়ে নিলে—তোমরা দুজনে দিয়েছিলে

হারায়েছি এই ব্রজপুরে

নিজ-দোষে প্রাণেশ্বরে—হারায়েছি এই ব্রজপুরে

মিলায়ে দাও গোপীশ্বর

কোথা প্রাণ প্রাণেশ্বর—মিলায়ে দাও গোপীশ্বর

করযোড়ে মিনতি করি

মিলায়ে দাও বংশীধারী—করয়োড়ে মিনতি করি

মিলায়ে দাও বংশীধারী

ওগো তোমাদের পায়ে পড়ি—মিলায়ে দাও বংশীদারী
করয়োড়ে এই মিনতি করি—মিলায়ে দাও বংশীধারী

আবার মিলাও নিজগুণে

চিতচোর কৃষ্ণধনে—আবার মিলাও নিজগুণে

‘‘কাতরে প্রার্থনা করি কত কি কহয় গো।’’
ও আমাদের,-‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের ,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘যমুনা পুলিনে যাইয়া, পড়ে মূরছিত হইয়া গো
প্রেমোবেশে ব্রজে পড়ি গড়াগড়ি যায় গো।’’

আজ, পুলিন-রজের সৌভাগ্য বাঢ়ায়

পুলিন পেয়েছে বলে—আজ,–পুলিন-রজের সৌভাগ্য বাঢ়ায়

ব্রজে,–কখনও ত এক ঘটে নাই

জড়াজড়ি পায় নাই—ব্রজে,–কখনও ত এক ঘটে নাই

বুকে ধরিতে পায় নাই

তুই মিলে এক হয়ে—বুকে ধরিতে পায় নাই

আজ,–পুলিনের সৌভাগ্য বাঢ়ায়

মূরছি দিয়ে গড়াগড়ি—আজ,–পুলিনের সৌভাগ্য বাঢ়ায়;
রজে দিয়ে গড়াগড়ি—আজ,–পুলিনের সৌভাগ্য বাঢ়ায়

আজ,–পুলিনের সৌভাগ্য ভারী

রজে দেয় গড়াগড়ি—আজ,–পুলিনের সৌভাগ্য ভারী

রজে পড়ি গড়ি যায়

কোথা প্রাণ শ্যামরায়—রজে পড়ি গড়ি যায়

‘‘প্রেমাবেশে রজে পড়ি গড়াগড়ি যায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘আনন্দাশ্রু বহি যায়, গঙ্গার প্রবাহ প্রায় গো’’

গঙ্গার সৌভাগ্য বাঢ়ায়

ভাবনিধিকে বুকে ধরে—গঙ্গার সৌভাগ্য বাঢ়ায়
নয়ন-ধারা-ছলে বুকে ধরে—গঙ্গার সৌভাগ্য বাঢ়ায়

আবার,–এ আনন্দ কোথা হতে এল

এই যে এখুনি,–বিরহে ব্যাকুল হয়েছিল –আবার,–এ আনন্দ

কোথা হতে এল
বুঝি কৃষ্ণ পেয়েছে

রজে গড়াগড়ি দিয়ে—বুঝি কৃষ্ণ পেয়েছে

বুঝি বিরহে মিলন হয়েছে

রাসস্থলী দিয়েছে—বুঝি বিরহে মিলন হয়েছে
‘‘তাই—অনন্দাশ্রু বহি যায়, গঙ্গার প্রবাহ প্রায় গো,
স্থাবর জঙ্গম গোরা প্রেমেতে ভাসায় গো।’’

যেন,–যায় প্রেমে মত্তকরী

বিরহিণী গৌর-কিশোরী—যেন,–যায় প্রেমে মত্তকরী

ব্রজ ভাসে প্রেমের বন্যায়

মহা,–ভাবনিধি নয়ন-ধারায়—ব্রজ ভাসে প্রেমের বন্যায়

স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে ভাসায়

প্রেমসিন্ধু গোরারায়—স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে ভাসায়

‘‘স্থাবর জঙ্গম গোরা প্রেমেতে ভাসায় গো।’’
ও আমাদের,–‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

ব্রজবনে বিরহিণী

কৃষ্ণ-অন্বেষণকারিণী—ব্রজবনে বিরহিণী
প্রাণবঁধু-অন্বেষণকারিণী—ব্রজবনে বিরহিণী
শ্যামবঁধু-অন্বেষণকারিণী—ব্রজবনে বিরহিণী

বুকে ধরে হারায়েছে

বনে বনে খুঁজে বেড়াইছে—বুকে ধরে হারায়েছে
ও সে—মূরতিমন্ত প্রেমৌবচিত্ত—বুকে ধরে হারায়েছে

মূরতিমন্ত প্রেমবৈচিত্ত

শ্রীগৌরাঙ্গ মূরতি আমার—মুরতিমন্ত প্রেমেবৈচিত্ত
মিলনে বিরহ বিরহে মিলন—মুরতিমন্ত প্রেমবৈচিত্ত

তাই,–খুঁজে খুঁজে বেড়াইছে

বুকে ধরে হারায়েছে—তাই,–খুঁজে খুঁজে বেড়াইছে
এই,–বৃন্দাবনের বনে বনে—তাই, খুঁজে খুঁজে বেড়াইছে

আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী,–ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘ধেনুগণ বনে চরে, দেখিয়া আনন্দ-ভরে গো।’’

বল বল ব্রজের ধেনু

কোথায়া গেল কালা-কানু—বল বল ব্রজের ধেনু

বল,–ব্রজবিহারী কোথায় গেল

এই যে তোমাদের চরাইতেছিল—বল,–ব্রজবিহারী কোথায় গেল

‘‘ধেনুগণ বনে চরে, দেখিয়া আনন্দ-ভরে গো,’’

দেখি,–আনন্দ আর ধরে না রে

পাছে,–আছে বলে গোষ্ঠবিহারী—দেখি,–আনন্দ আর ধরে না রে

পাছে আছে আমার গোষ্ঠবিহারী

বলে,–ঐ যে চরিছে বাছুরী—পাছে আছে আমার গোষ্ঠবিহারী

বলে,–চরায় প্রাণ বংশীধারী,

ঐখানে নিজ ধেণু-বৎস—বলে,–চরায় প্রাণ বংশীধারী

ঐখানে,–আছে প্রাণ গোষ্ঠবিহারী

ঐ যে,–চরিছে বনে বাছুরী—ঐখানে,–আছে প্রাণ গোষ্ঠবিহারী

বনে আছে গোষ্ঠবিহারী

চল যাই দেখ্‌ব নয়ন-ভরি-বনে আছে গোষ্ঠবিহারী

‘‘ধেনুগণ বনে চরে, দেখিয়া আনন্দ-ভরে গো,
ঢলি পড়ে ভূমিতলে উনমত প্রায় গো।।’’


ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘সুমেরুর শৃঙ্গ যৈছে, পবনে ভাঙ্গিল তৈছে গো,
পৃথিবীতে পড়ি প্রভু গড়াগড়ি যায় গো।।’’

ব্রজভূমির সৌভাগ্য বাঢ়ায়

আজ,–জড়াজড়ি গড়াগড়ি দেয়—ব্রজভূমির সৌভাগ্য বাঢ়ায়
গৌর মূরতি হৃদে ধরা—ব্রজভূমির ভাগ্যে হয় নাই

‘‘পৃথিবীতে পড়ি প্রভু গড়াগড়ি যায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী ও আমদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘প্রভুর শ্রীঅঙ্গ দেখি, গাভীগণ বেঢ়য়ে আসি গো,’’

অঙ্গ-গন্ধে মত্ত হয়ে

প্রভুর শ্রীঅঙ্গ দেখি—অঙ্গ –গন্ধে মত্ত হয়ে

পেয়ে,–অঙ্গ-গন্ধ দেখি শ্যাম-অঙ্গ

এই ত বনমালী বলে—পেয়ে,–অঙ্গ-গন্ধে দেখি শ্যাম-অঙ্গ

‘‘প্রভুর শ্রীঅঙ্গ দেখি, গাভীগণ বেঢ়য়ে আসি গো,’’

তাদের –দুনয়নে বারি ঝরে

গোরারসের বদন হেরে—তাদের–দুনয়নে বারি ঝরে

অঙ্গ হেরে নয়ন ঝরে

কখনও দেখে নাই বুঝি তাই—অঙ্গ হেরে নয়ন ঝরে

তাদের,–দুনয়নে বহে বারি

হেরি ঐ,–নবরসের মাধুরী—তাদের,–দুনয়নে বহে বারি
গোরারসের বদন হেরি—তাদের,–দুনয়নে বহে বারি

এই,–মূরতি ত কখনও দেখে নাই

বৃন্দাবনের ধেনুগণ—এই,–মূরতি ত কখনও দেখে নাই

কেমন করে দেখবে বল

নিভৃত,–নিকুঞ্জের ধন পথে লোটায়—কেমন করে দেখবে বল

হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ করে

দুনয়নে বারি ঝরে– হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ করে

নিজ-ভাষায় গাভী বলে

এতদিন কোথায় ছিলে বলে—নিজ-ভাষায় গাভী বলে

‘‘বাৎসল্যেতে গাভীগণ শ্রীঅঙ্গ চাটয় গো।’’

তাদের স্বভাব জাগিয়া উঠল

গৌর-অঙ্গ দেখি শ্যাম-অঙ্গ দেখল—তাদের স্বভাব জাগিয়া উঠল

এই ত আমাদের শ্যাম বটে

বলে,–আমাদের লয়ে চল গোঠে—এই ত আমাদের শ্যাম বটে

‘‘বাৎসল্যেতে গাভীগণ শ্রীঅঙ্গ চাটয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের—প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘সু্স্থ হইয়া প্রভু পরে, তাদের অঙ্গ কণ্ডুয়ন করে গো,
প্রভু-সঙ্গ ছাড়ি ধেনু কেহ নাহি যায় গো।।’’

কেমন করে যাবে বল
তাঁকে ছেড়ে,–কেমন করে কোথায় যাবে

তাঁদের,–প্রাণ-ধনকে সম্মুখে পেয়েছে—তাঁকে ছেড়ে,–কেমন করে

কোথায় যাবে
বল,–কেমন করে ছেড়ে যাবে
বল,–কেমন করে যাবে ছেড়ে
নবঘন-শ্যামমূরতি,–তারা ব্রজে দেখে ছিল
এবে হইল অভিনব দরশন

এ যে,–রাইয়ের বরণ শ্যামের গঠন—এবে হইল অভিনব দরশন
রাই,–কিশোরীমণি-ঢাকা বংশীবদন—এবে হইল অভিনব দরশন
রাই-সম্পুটে,–নবঘন ব্রজের জীবন—এবে হইল অভিনব দরশন

তারা,–আপন আপন ভাষায় বলে

গাভীগণ,–পরস্পরের মুখ হেরে—তারা,–আপন আপন ভাষায় বলে

আজ,–দেখি এ কি অপরূপ

হয়ে মিশামিশি,–রাইকানু একরূপ—আজ,–দেখি এ কি অপরূপ

ধেনু যায় গোরার পাছে

হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ করে—ধেনু যায় গোরার পাছে

‘‘প্রভু-সঙ্গ ছাড়ি ধেনু কেহ নাহি যায় গো।’’
ও আমাদের –‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের;–প্রাণে গোরা রায়

‘‘গাভীগণের প্রীতি হেরে, আনন্দে অবশ হয়ে গো,
গাভীগণের কণ্ঠ ধরি রোদন করয় গো।’’

কৃষ্ণ,–বিরহিণী গৌর-কিশোরী

গাভীগণের কণ্ঠধরি—কৃষ্ণ,–বিরহিণী গৌর-কিশোরী

গাভীগণের কণ্ঠধরি

বলে,–কোথা প্রাণ বংশীধারী—গাভীগণের কণ্ঠধরি

বল বল ব্রজের ধেনু

কোথা আছে তোমাদের প্রাণের কানু—বল বল ব্রজের ধেনু

‘‘গাভীগণের কণ্ঠ ধরি রোদন করয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘গৌরাঙ্গ-হরিকে দেখে, ময়ূর-ময়ূরী সুখে গো’’,

গৌরাঙ্গ-হরিকে দেখে
ব্রজবনে সবার স্বভাব জেগেছে
যুগলরূপে নাচ্‌ছে

অন্তকৃষ্ণ-বহিগৌর-যুগল হেরে—যুগলরূপে নাচ্‌ছে

ব্রজবনে এই ত স্বভাব

ময়ূর-ময়ূরাগণের,–ব্রজবনে এই ত স্বভাব

তারা,–কখনও যুগল হয় না

যুগল দরশন বিনা—তারা,–কখনও যুগল হয় না
জড়াজড়ি না দেখিলে তারা,–কখনও যুগল হয় না

তাই,–উচ্চ পুচ্ছ করি নাচ্‌ছে

যুগলে জড়াজড়ি দেখে—তাই,–উচ্চ পুচ্ছ করি নাচছে
গৌরাঙ্গে যুগল-মাধুরী দেখছে—তাই,–উচ্চ পুচ্ছ করি নাচ্‌ছে
রাইকানু,–জড়াজড়ি মুরতি দেখে—তাই,–উচ্চ পুচ্ছ করি নাচ্‌ছে

‘‘উর্দ্ধ-পুচ্ছে নাচি নাচি প্রভুকে বেঢ়য় গে।’’

এ ত ব্রজবনে বিহার নয়

রাধাভাবে মাতি গোরার—এ ত ব্রজবনে বিহার নয়

যা পায় নাই তাই দেয়

ব্রজের,–বৃক্ষলতা-পশুপাখীগণ—যা পায় নাই তাই দেয়

যুগলমাধুরী ভোগ দেয়

এ ত,–ব্রজবনে বিহার নয়—যুগলমাধুরী ভোগ দেয়

তারা,–কখনও তো দেখে নাই

বৃক্ষলতা-পশুপাখী—তারা,–কখনও তো দেখে নাই
হয়ে মিশামিশি,–রাইকানু জড়াজড়ি—তারা,–কখনও তো দেখে নাই

রাইকানু জড়াজড়ি

নিভৃত-নিকুঞ্জের স্বরূপ—রাইকানু জড়াজড়ি

তারা,–কখনও তো দেখে নাই

স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা-আদি করি—তারা,–কখনও তো দেখে নাই

‘‘উর্দ্ধেপুচ্ছে নাচি নাচি প্রভুকে বেঁঢ়য় গো’’

প্রভুকে বেড়ি নাচ সবে

হেরি ঐ,–নবস্বরূপ নব-উৎসবে—প্রভুকে বেড়ি নাচে সবে

তারা,–মনে মনে মনে
গণে এমন,–রূপ ত কভু দেখি নাই জীবনে

রাই-সঙ্গে,–কানু মিলিলে কি মাধুরী হয়—এমন,–রূপ ত কভু দেখি

নাই জীবনে
আজ,–বিহরিছে ব্রজবনে

দুই মিলে নবরূপ ধরে—আজ,–বিহরিছে ব্রজবনে

তারা তো কখনও যেতে নারে
তাই,–ময়ূর-ময়ূরী নাচে ঊর্দ্ধপুচ্ছে

তারা,–অঙ্গসৌরভ পেয়েছে—তাই,–ময়ূর-ময়ূরী নাচে ঊর্দ্ধপুচ্ছে

জড়জড়ি মুরতি দেখে

শ্যাম,–নব-মেঘের কোলে রাই-সৌদামিনী—জড়াজড়ি মূরতি দেখে

তারা,–যুগল হয়ে সবাই নাচে

এখনও,–যদি যুগল দেখতে পায়—তারা,–যুগল হয়ে সবাই নাচে

তাই ময়ূর-ময়ূরী নাচে

এখনও,–যদি যুগল দেখতে পাই বলে—তাই ময়ূর-ময়ূরী নাচে

তাই যুগল হয়ে নাচে

যুগল-কিশোরের মিলন দেখে—তাই যুগল হয়ে নাচে

তাই নাচে ময়ূর—ময়ূরী

দেখি,–গৌর-স্বরূপে যুগল-মাধুরী—তাই নাচে ময়ূর-ময়ূরী

নাচে তারা যুগল হেরে

ময়ূর-ময়ূরী ঊর্দ্ধপুচ্ছ করে—নাচে তারা যুগল হেরে

কেকা রবে ময়ূর-ময়ূরী বলে

এতদিন,–প্রাণ বঁধু কোথায় ছিলে—কেকা রবে ময়ূর-ময়ূরী বলে

‘‘উর্দ্ধ পুচ্ছে নাচি নাচি প্রভুকে বেঢ়য় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘দেখি প্রভু আচম্বিতে, ঢলি পড়ে পৃথিবীতে গো,’’

অমনি বাসনা জেগে উঠল

ময়ূর-ময়ূরী যুগল দেখে—অমনি বাসনা জেগে উঠল
মিলিবারে প্রাণবঁধু-সনে—অমনি বাসনা জেগে উঠল

যুগল হতে সাধ বাঢ়ল চিতে

যুগল হয়েও—যুগল হতে সাধ বাঢ়ল চিতে

‘‘দেখি প্রভু আচম্বিতে, ঢলি পড়ে পৃথিবীতে গো,
নয়নের জলে ব্রজের ধূলি ভিজি যায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ—বিহরিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–কৃষ্ণ-বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
‘‘গর্জ্জিয়া উন্মত্ত প্রায়,’’
রাধা,–ভাবে ভোরা প্রাণ গোরা,–‘‘গর্জ্জিয়া উন্মত্ত প্রায়,’’

এই ত দাঁড়ায়ে আছে বল

আমার,–চিতচোর প্রাণ গোরা—এই ত দাঁড়ায়ে আছে বল
ময়ূরের কণ্ঠ দেখি—এই ত দাঁড়ায়ে আছে বলে

ঐ যে,–পরাণবঁধূ দাঁড়ায়ে আছে বলে
আমার,–শ্যামবঁধূ দাঁড়ায়ে আছে বলে

ভাবাবেশে বলে—আমার,–শ্যাম-বঁধূ দাঁড়ায়ে আছে বলে

ভাবাবেশে,–বঁধূ ধরিতে যায় চলে

যে,–বঁধূ দাঁড়ায়ে আছে বলে—ভাবাবেশে,–বঁধূ ধরিতে যায় চলে

‘‘গর্জ্জিয়া উন্মত্ত প্রায়, ময়ূর ধরিতে যায় গো,’’

ময়ূর ধরিতে যায় চলে

নীলকণ্ঠ হেরি শ্যাম মনে করি—ময়ূর ধরিতে যায় চলে
এই ত পেয়েছি বলে—ময়ূর ধরিতে যায় চলে

ধেয়ে যায় ময়ূরের কাছে

আমার বঁধূ পেলাম বলে—ধেয়ে যায় ময়ূরের কাছে
মযূরের কণ্ঠ হেরি—ধেয়ে যায় ময়ূরের কাছে

বলে—ঐ ত প্রাণের শ্যামরায়

ময়ূর ধরিতে যায়—বলে,–ঐ ত প্রাণের শ্যামরায়

‘‘বলভদ্র কৃষ্ণদাস প্রবুকে ধরয় গো।’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বলভদ্র কৃষ্ণদাস—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

হা নিতাই কোথা তুমি

প্রভুর,–বিরহ-তাপ সহিতে নারি—হা নিতাই কোথা তুমি

প্রাণ নিতাই কোথায় আছ

মহাভাবনিধি,–প্রাণগৌরাঙ্গ রাখ—প্রাণ নিতাই কোথায় আছ

কোথায় আছ নিত্যানন্দরায়

বিরহিণীর,–ভাবের ভার যে ধরা না যায়—কোথায় আছ নিত্যানন্দরায়

‘‘বলভদ্র কৃষ্ণদাস প্রভুকে ধরয় গো।’’
ও আমাদের,–ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়


ব্রজে বিহরে,– কৃষ্ণৃ-বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
‘‘রাসস্থলী দর্শন করে,’’

বলে,–কোথায় আমার রাসবিহারী

এই ত রাসস্থলী হেরি—বলে,–কোথায় আমার রাসবিহারী

এই ত,–দেখা দিলে কোথা লুকালে

ও,–রাসবিহারী প্রাণ হামারী—এই ত,–দেখো দিলে কোথা লুকালে
‘‘রাসস্থলী দর্শন করে,

বলে,–কোথায় আমার রাসবিহারী

এই ত রাসস্থলী হেরি—বলে,–কোথায় আমার রাসবিহারী

এই ত,–দেখা দিলে কোথা লুকালে

ও,–রাসবিহারী প্রাণ হামারী—এই ত,–দেখা দিলে কোথা লুকালে

‘‘রাসস্থলী দর্শন করে, প্রেমে মূরছিত হয়ে গো।
চেতন পাইয়া পুনঃ গড়াগড়ি য়ায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–কৃষ্ণ বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘কাঁপে অঙ্গ থর থর ভাবে রুদ্ধ কণ্ঠস্বর গো,
পশুপাখী কাঁদে দেখি পাষাণে গলয় গো।’’

তারা,-মনে মনে মনে গণে
এ কি অপরূপ লীলা হেরি
যাই রে লীলার বলিহারি

মিলনে বিরহ হেরি—যাই রে লীলার বলিহারি

পশুপাখী কাঁদে দেখি পাষাণ গলয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোর রায়
ব্রজে বিহরে,–কৃষ্ণ-বিহরিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘কোথা কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি, ভাবাবেশে পড়ে ঢলি গো,
ভট্টাচার্য্য প্রভু তুলি কোলেতে করয় গো।’’

কোথায়,–আছ আমার নিতাই-সোণা

প্রভুর ভার যে ধরা যায় না–কোথায়,–আছ আমার নিতাই-সোণা

‘‘ভট্টাচার্য্য প্রভু তুলি কোলেতে করয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরারায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–কৃষ্ণ-বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–কৃষ্ণ-বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘ক্ষণেক চেতন পাইয়া, বলে তার পানে চাইয়া গো,
বল সখী মোর কৃষ্ণ প্রাণনাথ কোথায় গো।’’

সবাইকে দেখে গোপনারী

মহা,–ভাবনিধি গৌরকিশোরী—সবাইকে দেখে গোপনারী

‘‘বল সখী মোর কৃষ্ণ প্রাণনাথ কোথায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজে বিহরে,–কৃষ্ণ-বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘এত বলি চলে ধাইয়া, সম্মুখে তমাল পাইয়া গো,’’

বলে ঐ যে,–শ্যামবঁধূ দাঁড়ায়ে আছে

সম্মুখে তমাল দেখে—বলে ঐ যে,–শ্যামবঁধু দাঁড়ায়ে আছে

এতদিন কোথায় ছিলে বলে

ও,–পরাণ বঁধু আমায় ভুলে—এতদিন কোথায় ছিলে বলে
ওরে আমার পরাণ বঁধু—এতদিন কোথায় ছিলে বলে

এতক্ষণ কোথায় ছিলে

নাচতে নাচতে পালায়ে গেলে—এতক্ষণ কোথায় ছিলে
শ্যাম-তমালে হেরি বলে—এতক্ষণ কোথায় ছিলে

প্রেম-রাজ্যের এই ত স্বভাব

বিন্দুকে সিন্ধু দেখে—প্রেম-রাজ্যের এই ত স্বভাব

রাসে—নাচ্‌তে নাচ্‌তে লুকায়ে ছিলে
আইস আমার পরাণ-বঁধূ

‘‘হেমলতা-ভুজ দিয়া তাহারে বেঢ়য় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘কোকিলের ধ্বনি শুনি, চমকি গোরা ভাবখানি গো,
বলে,–শুন শুন ঐ কৃষ্ণ বাঁশরী বাজায় গো।’’

বিরহিণী গৌরকিশোরী
শ্যামের বাঁশরী শুনে
শ্যামের বংশীধ্বনি মানি

কোকিলের ধ্বনি শুনি—শ্যামের বংশীধ্বনি মানি

‘‘বলে,–শুন শুন ঐকৃষ্ণ বাঁশরী বাজায় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ মোরা রায়’’


বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
‘‘মূরছিত হইয়া পড়ে ভট্টাচার্য্য কোলে করে গো,’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বলভদ্র কৃষ্ণদার—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
প্রভু নিতাই কোথায় আছ বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

কোথায় আছ নিত্যানন্দরায়

প্রভুর,–বিরহ ভাব ধরা না যায়—কোথায় আছ নিত্যানন্দরায়

‘‘বস্ত্রাঞ্চল দিয়া প্রভুর চাঁদ-মুখ মুছায় গো।’’

প্রভুর,–চাঁদবদন মুছে বস্ত্রাঞ্চলে

ভট্টাচার্য্য করি কোলে—প্রভুর,–চাঁদমুখ মুছে বস্ত্রাঞ্চলে

‘‘বস্ত্রাঞ্চল দিয়া প্রভুর চাঁদ-মুখ মুছায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোর রায়।’’

বিহরে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদরে,–প্রাণ গোরা রায়
ব্রজ বিহরে কৃষ্ণবিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘চেতন পাইয়া বলে, এই ছিলে কোথায় গেলে গো,
দেখা দাও প্রাণনাথ লুকায়ে কোথায় গো।’’

রাধা,–ভাবে ভোরা প্রাণ গোরা

‘‘দেখা দাও প্রাণনাথ লুকালে কোথায় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহারে,–ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী– ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘ডাল হতে শুক শারি, প্রভু-হস্তে পড়ে উড়ি গো,’’

দেখে,–রাইকানু জড়াজড়ি

আমার গৌরাঙ্গ-মাধুরী—দেখে,–রাইকানু জড়াজড়ি
দেখে ব্রজের শুক-শারি—দেখে,–রাইকানু জড়াজড়ি
তাদের,–আনন্দ আর ধরে না এ যে ছিল নিকুঞ্জ-ভিতরে
আর ব্রজের পথে পথে ফিরে—এ যে ছিল নিকুঞ্জ-ভিতরে

আবেশে বলে শুকশারি
আজ,–কি দেখিনু গৌরাঙ্গ-মাধুরী
একদিন হয়েছিল নিধুবনে

যারে দেখেছিলাম একক্ষণে—একদিন হয়েছিল নিধুবনে
যুগলের সে অপূর্ব্ব-মাধুরী—একদিন হয়েছিল নিধুবনে

এখন বিহরিছে ব্রজবনে

নিত্য-যুগল গৌররূপে—এখন বিহরিছে ব্রজবনে

এ কি হেরি গৌরাঙ্গ-মাধুরী

এ যে,–রাই-সম্পুটে বংশীধারী—এ কি হেরি গৌরাঙ্গ-মাধুরী

‘‘রাধাকৃষ্ণ-শ্লোক পড়ি প্রভুকে শুনায় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


‘‘সে বোল শুনিয়া কাণে,’’
পরাণ গৌরাঙ্গ আমার,–‘‘সে বোল শুনিয়া কাণে,’’
মহা,–ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার,–‘‘সে বোল শুনিয়া কাণে,’’
রাধা,–ভাবে ভোরা প্রাণ গোরা,–‘‘সে বোল শুনিয়া কাণে,’’

‘‘সে বোল শুনিয়া কাণে, আনন্দ-বিস্ময়-মনে গো,’’

আনন্দ-বিস্ময়-মনে

যুগলের,–নাম-রূপ-গুণ-লীলা শুনে—আনন্দ-বিস্ময়-মনে
শুকশারির,–মুখে দোঁহার গুণ শুনে—আনন্দ-বিস্ময়-মনে

‘‘সে দোঁহার পানে চাইয়া কত কি বোলয় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’
‘‘বৃক্ষলতা-আদি করি,ভাবোন্মত্তা গৌর হেরি গো।’’
মধুধারা-ছলে তারা রোদন করয় গো।’’

মধুধারা,–বর্ষণ-ছলে রোদন করে

বৃন্দাবনের তরুলতা—মধুধারা,–বর্ষণ-ছলে রোদন করে
মহা,–ভাবনিধি গৌর হেরে—মধুধারা,–বর্ষণ-ছলে রোদন করে
এতদিন কোথা ছিলে বলে—মধুদারা,–বর্ষণ-ছলে রোদন করে

‘‘মধুধারা-ছলে তারা রোদন করয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


‘‘তা সবার প্রীতি হেরে, অতি-আনন্দ-অন্তরে গো,
প্রত-বৃক্ষলতা প্রভু আলিঙ্গন করয় গো।’’

ও তো,–আলিঙ্গন করা নয়

জড়াজড়ি ভোগ করে—ও তো,–আলিঙ্গন করা নয়

কখনও তো পায় নাই

পৃথক পৃথক পেয়েছে বটে—কখনও তো পায় নাই
জড়াজড়ি আলিঙ্গন—কখনও তো পায় নাই

ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার
আলিঙ্গন করে প্রতি-বৃক্ষলতা

বলে,–তোমরা ত তাঁর পেয়েছ দেখা—আলিঙ্গন করে প্রতি-বৃক্ষলতা

প্রতি-বৃক্ষলতা আলিঙ্গন করে

প্রাণবঁধুর সঙ্গ পেয়েছে মনে করে-প্রিত-বৃক্ষলতা আলিঙ্গন করে

‘‘প্রতি-বৃক্ষলতা প্রভু আলিঙ্গন করয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে’—ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
চলে,–শ্যাম-বিরহ-উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিহরে,–শ্যাম-বিরহ-উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আমাদের,–প্রভু-নিতাই-পাগলকরা—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
‘‘কুঞ্জ দেখি মূরছিত,’’
বিরহিণী গৌর আমার-‘‘কুঞ্জ দেখি মূরছিত’’
বিরহিণী গৌর-কিশোরী—‘‘কুঞ্জ দেখি মুরছিত,’’

ভাবাবেশে পড়ল ধরায়

কোথায় নিকুঞ্জ-বিহারী বোলে—ভাবাবেশে গড়ল ধরায়

কোথায় নিকুঞ্জ-বিহারী

এই ত নিভৃত-নিকুঞ্জ হেরি—কোথায় নিকুঞ্জ-বিহারী

গৌর উদয় কুঞ্জ-দ্বারে

কোথায় নিকুঞ্জ-বিহারী বলে—গৌর উদয় কুঞ্জ-দ্বারে

‘‘কুঞ্জ দেখি মূরছিত, ধরণীতে নিপতিত গো,
নেত্রে ধারা মুখে প্রভুর ফেণ বহি যায় গো।’’

ও তো ফেণ নয় গো

প্রেমের ফূয়ারা বহে—ও তো ফেন নয় গো

‘‘নেত্রে ধারা মুখে প্রভুর ফেণ বহি যায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ-প্রেম-পাগলিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
বিহরে,–ব্রজপুরে যমুনা-তীরে,–ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘হরিণ আসিয়া সুখে, ফেণ পিয়ে প্রভু-মুখে গো,’’

ফেণ নয় সে প্রেম বটে
সৌভোগ্যের সীমা নাই রে

যুগলের অধরামৃত পান করে—সৌভাগ্যের সীমা নাই রে

‘‘নেত্রজল পক্ষীগণ সুখে আসি খায় গো।’’

প্রেমসুখে ভাসি যায় তারা

যুগল-অধরামৃত পিয়ে—প্রেমসুখে ভাসি যায় তারা

‘‘নেত্রজল পক্ষীগণ সুখে আসি খায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।’’


‘‘মৃগমৃগীর গলা ধরি, কাঁদেন গৌরাঙ্গ-হরি গো,’’

কোথায় আছে দেখাও হে

চিতচোর-বংশীধারী—কোথায় আছে দেখাও হে

‘‘মৃগের পুলক-নয়নে অশ্রধারা বয় গো।’’

সবাই,–যুগল-প্রেমের অধিকারী

ব্রজের,–পশু-পাখী-গুল্মলতাদি-করি—সবাই যুগল প্রেমের অধিকারী

মৃগমৃগী প্রেমে বিভোর

গৌরাঙ্গ-পরশ পেয়ে—মৃগমৃগী প্রেমে বিভোর

‘‘মৃগের পুলকগ-নয়নে অশ্রুধারা বয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণে গোরা রায়।।’’


‘‘হাসে কাঁদে নাচে পড়ে, হরি বলে উচ্চৈঃস্বরে গো,’’

মহা,–ভাব-উন্মাদনার ভরে
ও তো হরি বলা নয় গো

বিরহেতে হায় হায় করে—ও তো হরি বলা নয় গো

‘‘নিকুঞ্জের দ্বারে আসি মহাতাপ উদয় গো।’’

এই ত নিভৃত-নিকুঞ্জ হেরি

কোথা প্রাণের বংশীধারী—এই ত নিভৃত-নিকুঞ্জ হেরি

‘‘নিকুঞ্জের দ্বারে আসি মহাতাপ উদয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


কৃষ্ণ-প্রেমে পাগলিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
আজ,–ভাবিনীর ভাবে ভোরা—ও আমাদের, প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ-বিরহ-বিধুরা—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ-বিরহ-অধীরা—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

হা কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি কাঁদে

কান্নার প্রতিদান দিতে—হা কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি কাঁদে

‘‘কুঞ্জে কুঞ্জে অন্বেষিয়া, ফিরে ব্যাকুলিত হইয়া গো,
হইলেন কাহাকে দেখি আনন্দ-হৃদয় গো।’’

ভাবাবেশে গৌরকিশোরী

হেরি প্রাণের বংশীদারী—ভাবাবেশে গৌরকিশোরী

‘‘হইলেন কাহাকে দেখি আনন্দ-হৃদয় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে,-ব্রজবনে বিরহিণী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়
কৃষ্ণ,–বিরহিণী উন্মাদিনী—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘‘সর্ব্বত্র প্রচ্ছন্নভাবে, সেবা করি কতরূপে গো,’’


সেবাশক্তি নিতাই আমার,–‘‘সর্ব্বত্র প্রচ্ছন্নভাবে,’’
সেবাবিগ্রহ নিতাই আমার
মহা,-ভাবনিধি প্রাণগৌরাঙ্গের –সেবাবিগ্রহ নিতাই আমার

‘সর্ব্বত্র প্রচ্ছন্নভাবে, সেবা করি কতরূপে গে,
আমলী-তলাতে হইল বেকত নিতাই গো।’’

আর কি নিতাই রইতে পারে

প্রাণ,–গৌর-কিশোরীর বিরহ দেখি—আর কি নিতাই রইতে পারে
‘প্রাণ,–গৌর-কিশোরীর বিরহ দেখি’—
সেবক নিতাই মহাদুঃখী—প্রাণ,–গৌর-কিশোরীর বিরহ দেখি

চাঁদ,–নিতাই আমার সকলি জানে

প্রাণগৌরাঙ্গের,–যখন যে ভাব উঠে মন—চাঁদ,–

নিতাই আমার সকলি জানে
আসি দাঁড়াইল সম্মুখে

বিরহ—শান্তির অনুকূলরূপে—আসি দাঁড়াইল সম্মুখে
‘বিরহ-শান্তির অনুকূপরূপে’—
বিরহিণী গৌর-কিশোরীর—বিরহ-শান্তির অনুকূলরূপে

আসি দাঁড়াইল সম্মুখে
জড়ায়ে ধরিল গৌরহরি
বাহু পসারি কৈলা কোলে

বিরহিণী গৌর-কিশোরীকে—বাহু পসারি কৈলা কোলে
আইস,–আইস প্রাণ আইস বলে—বাহু পসারি কৈলা কোলে

‘‘আমলী-তলাতে হইল বেকত নিতাই গো।’’
‘‘ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়।’’


‘‘আমলী-তলাতে আসি, বসিলেন গোরাশশী গো,’’

বিরহিণী কেমন করে বসে

বিরহ-শান্তি না হইলে—বিরহিণী কেমন করে বসে

বিরহিণী কেমনে বলবে

বিরহেতে কৃষ্ণ খুঁজছে—বিরহিণী কেমনে বসবে

তাঁরে বুঝি পেয়েছে

যাঁরে,–বনে বনে খুঁজতেছিল—তাঁরে বুঝি পেয়েছে

আজ তাঁরে পেয়েছে

নিতাইকে বুকে ধরে—আজ তাঁরে পেয়েছে

গৌর,–বিরহিণীর বিরহ শান্তি হল

নিতাইচাঁদ সম্মুখে পেল—গৌর,–বিরহিণীর বিরহ শান্তি হল

‘‘আমলী-তলাতে আসি বসিলেন গোরাশশী গো,
শ্রীযমুনার শোভা দেখি মহাসুখোদয় গো।’’

আনন্দ আর ধরে না

রাস,–রজনীতে যমুনা হেরি—আনন্দ আর ধরে না

‘‘শ্রীযমুনার শোভা দেখি মহাসুখোদয় গো।।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়


‘‘কৃষ্ণলীলার পুরাতন, আমলীবৃক্ষ মনোরম গো,’’
এত বলি বৃক্ষ ধরি আলিঙ্গন করয় গো।’’

বৃক্ষ ধরি আলিঙ্গন করে

তার,–অঙ্গ-পরশ পেয়েছে বলে—বৃক্ষ ধরি আলিঙ্গন করে

অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে

আমলী-তরু জড়ায়ে ধরে—অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে
বিরহিণী গৌর-কিশোরী—অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে
আমলীকে বুকে ধরে—অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে

আমলীবৃক্ষে গৌর করে কোলে
বিরহিণী করে কোলে

কৃষ্ণলীলা দেখেছে বলে—বিরহিণী করে কোলে

‘‘এত বলি বৃক্ষ ধরি আলিঙ্গন করয় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’
‘‘শ্রীযমুনার দরশনে,অতীব আনন্দ-মনে গো।
গণসহ গোরা বৃক্ষ-মূলেতে বৈসয় গো।’’

অতীব-আনন্দ-মনে

শ্রীযমুনা দরশনে-অতীব-আনন্দ-মনে
বসিলেন গোরা গণ-সনে—অতীব-আনন্দ-মনে

বসিলেন গোরা গণ-সনে

বৃক্ষ-মূল করি অবলম্বনে—বসিলেন গোরা গণ-সনে

‘‘গণসহ গোরা বৃক্ষমূলেতে বৈসয় গো।
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।’’
‘‘অতীব-আনন্দ-চিতে, ভ্রমে রাস-রজনীতে গো,
হয়ে রাস-সরে উনমত আননেআদ নাচয় গো।’’

অমনি—ভাবনিধির মনে জাগল

রাস-রজনী হেরে–অমনি,–ভাবনিধির মনে জাগল
পূর্ণিমার চাঁদ হেরে—অমনি, –ভাবনিধির মনে জাগল
বিবর্ত্তদশায়—অমনি, –ভাবনিধির মনে জাগল

আমি আজ রাস করিব

এই তো দেখি রাস-রজনী—আমি আজ রাস করিব
ভাবনিধির মনে জাগল—আমি আজ রাস করিব

কারে লয়ে রাস করিবে
নূতন নূতন স্বরূপ চাই

নবস্বরূপ বনেছে তাই—নূতন নূতন স্বরূপ চাই

কার সঙ্গে রাস করিবে

এ যে অপূর্ণ-পূর্ণলীলা—কার সঙ্গে রাস করিবে,

বুঝি,–তাদের লয়ে রাস করিবে

যারা রাস পেয়েছিল—বুঝি,–তাদের লয়ে রাস করিবে

এবার,–শুধু তাদের নিয়ে নয়
এবার,–রাই কানু মিলেছে
আসিয়াছে বিষয় আবেশ
হয়ে গেছে রাসবিহারী

রাস-রজনী হেরি’—হয়ে গেছে রাসবিহারী
মহাভাবে মাতা স্বরূপ—হয়ে গেছে রাসবিহারী

গৌর হয়েছে রাসবিহারী

বিবর্ত্তদশায়—গৌর হয়েছে রাসবিহারী
রাস-রজনী হেরি’—গৌর হয়েছে রাসবিহারী

আজ গৌর রাস করবে

যারা,–রাস পায় নাই তাদের সঙ্গে—আজ গৌর রাস করবে

কয়জনে বা পেয়েছিল

মধুর-বৃন্দাবনে রাস—কয়জনে বা পেয়েছিল

তারাই ত রাস পেয়েছিল

জনকতক,–বাছাবাছি ব্রজনারী—তারাই ত রাস পেয়েছিল

তারাই ত বাদ পড়েছিল

যত পুরুষ দেহধারী—তারাই ত বাদ পড়েছিল
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—তারাই তা বাদ পড়েছিল

কার সঙ্গে রাস করিবে
নবরসের সঙ্গী চাই

রাসবিহারী রাস করিবে—নবরসের সঙ্গী চাই

এ যে,–নিগূঢ় গৌরাঙ্গ-লীলা
অপূর্ণ সাধ পূর্ণ করবে
যারা,–ব্রজে আছে তারা সঙ্গে আছে
তাদের সঙ্গে রাস করিবে

এবার,–অপূর্ণ পূর্ণ হবে—তাদের সঙ্গে রাস করিবে

যারা,–ব্রজে রাস পায় নাই

স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা-আদি করি’—এবার,–তাদের লয়ে রাস করিবে
ব্রজের যত,–স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—এবার,–তাদের লয়ে রাস করিবে

এই ত রহস্য বটে
সকলেই রাধার বিভূতি
ব্যাপক হল বৃন্দাবন

রাধার,–বিভূতিতে ব্রজবন—ব্যাপক হল বৃন্দাবন

বৃন্দাবন রাধার ব্যাপ্তি

ব্যাপক রাধা—বৃন্দাবন রাধার ব্যাপ্তি

ব্যাপক রাধা,–তার, বৃন্দাবন ব্যাপ্তি বটে
সকলই ত রাধার ব্যাপ্তি

বৃন্দাবনের স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা-আদি করি’—সকলই ত রাধার ব্যাপ্তি
একলা,–পুরুষ কৃষ্ণ আর সব প্রকৃতি—সকলই ত রাধার ব্যাপ্তি
বৃন্দাবনের,–সবাই তার অংশ বিভূতি—সকলই ত রাধার ব্যাপ্তি

সবাই,–শ্রীকৃষ্ণের সেবাপরায়ণ

ব্রজের যত স্থাবর-জঙ্গম—সবাই,–শ্রীকৃষ্ণের সেবাপরায়ণ

তাদের,–স্বরূপ-আবরণ ঘুচে গেল

বৃন্দাবনের যত স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা-পশুপাখী—তাদের,–

স্বরূপ-আবরণ ঘুচে গেল
সবার স্বরূপ জাগল

স্বরূপ জাগান স্বরূপ দেখে—সবার স্বরূপ জাগল

সবাই হল গোপনারী

যত,–তরুলতা পশুপাখী-সবাই হল গোপনারী

বৃন্দাবনে রাস করে
গৌর,–রাসবিহারী রাস করে

বিবর্ত্ত গৌর—গৌর,–রাসবিহারী রাস করে
সবাকারে গোপী করে—গৌরস—রাসবিহারী রাস করে
‘সবাকারে গোপী করে’—
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—সবাকারে গোপী করে

গৌর,–রাসবিহারী রাস করে
গৌরহরি রাস করে

যারা,–পায় নাই তাদের গোপী করে—গৌরহরি রাস করে

বিহরে গোরা রাসবিহারী

নিজ,–পারিষদ গোপী সঙ্গে করি’-বিহরে গোরা রাসবিহারী
রাস-রজনী-হেরি’—বিহরে গোরা রাসবিহারী

সবাই,– রাসরসে উনমত

গৌরাঙ্গ-নটন হেরি’—সবাই,–রাসরসে উনমত

গোরা,–হেলে দুলে প্রেমতরঙ্গে
যায় রে গোরা রাসবিহারী

স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা গোপী করি’—যায় রে গোরা রাসবিহারী
এই ব্রজের,–গুল্মলতা গোপী করি’—যায় রে গোরা রাসবিহারী

একলা পুরুষ গৌরহরি

বিবর্ত্ত-বিলাস-রঙ্গে—একলা পুরুষ গৌরহরি
স্থাবরজঙ্গম,–গুল্মলতা সবাই নারী—একলা পুরুষ গৌরহরি

হেলে দুলে প্রেমতরঙ্গে

গুল্মলতা,–স্থাবর-জঙ্গম-সঙ্গে—হেলে দুলে প্রেমতরঙ্গে

তাদের স্বরূপ জাগাইয়ে

আপনস্বরূপ দেখাইয়ে—তাদের স্বরূপ জাগাইয়ে

গৌর,-রাসবিহারী রাস করে

ব্রজজনে গোপী করে—গৌর,–রাসবিহারী রাস করে

রাস করে গৌর রাসবিহারী

স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা গোপী করি’—রাস করে গৌর রাসবিহারী

‘‘হয়ে রাসরসে উনমত আনন্দে নাচয় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


বিহরে রাস,–রজনীতে গোপী-সঙ্গে—ও আমাদের,–প্রাণ গোপ রায়
স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা গোপী করি’—ও আমাদের,–প্রাণ গোপ রায়
রাস,–রজনীতে রাস করে—ও আমাদের,–প্রাণ গোরা রায়

‘গৌরাঙ্গের নটন দেখি,’ স্থাবর-জঙ্গম মহাসুখী গো,
হেলে দুলে প্রেমতরঙ্গে আনন্দে নাচয় গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।’’

নাচে, রসের গোরা হেলে দুলে
নাচে গোরা,–রাসবিহারী হেলে দুলে

নব নব গোপী মেলে—নাচে গোরা,–রাসবিহারী হেলে দুলে

‘‘হেলে দুলে প্রেমতরঙ্গে আনন্দে নাচয়ে গো।’’
ও আমাদের—‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’
‘‘স্থাবর-জঙ্গম-সঙ্গে নাচে গোরা প্রেমতরঙ্গে গো,
রাস-রজনীর শোভা কোটিগুণ বাঢ়য় গো।’’

এই মধুর-বৃন্দাবনে
সকলই যে রাধার শক্তি

বৃন্দাবন যে রাধার ব্যাপ্তি—সকলই যে রাধার শক্তি

সকলই রাধার ব্যাপক হয়

ব্রজভূমি ব্যাপকময়—সকলই রাধার ব্যাপক হয়
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—সকলই রাধার ব্যাপক হয়

সবাই গোপীভাব জাগায়ে

স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—সবার গোপীভাব জাগায়ে

সবাই আবরণে ছিল
গুপত ব্যাকত হইল

গুপত গৌরাঙ্গ-লীলায়—গুপত ব্যাকত হইল

গৌর-স্বরূপের সার্থকতা হল

বৃক্ষলতা গোপা হল—গৌর-স্বরূপের সার্থকতা হল
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা গোপী হল—গৌর-স্বরূপেরে সার্থকতা হল

বিহরে গোরা রাস-রঙ্গে
বিহরে,–রসের গোরা রাস-রঙ্গে

রাস-রজনীতে বিহরে—রসের গোরা রাস-রঙ্গে
স্থাবর-জঙ্গম-গোপী-সঙ্গে—বিহরে,–রসের গোরা রাস-রঙ্গে

সবাকার,–গোপী-স্বভাব জাগাইতে
যায় তরে,–গৌর-স্বরূপ এসেছে
এসেছে গৌরাঙ্গ-রূপেতে

সবাকার,–গোপীভাব জাগাইতে—এসেছে গৌরাঙ্গ-রূপেতে

‘‘রাস-রজনীতে শোভা কোটিগুণ বাঢ়য় গো।’’
“ও আমাদের প্রাণ গোরা রায়।।”
‘‘গৌর আসি ব্রজপুরে, রাসরসের বন্যা করে গো’’


এই ব্রজ,–রাস-রসের পরিণতি
গৌর আসি’ ব্রজে রাস-রঙ্গে


‘‘স্থাবর-জঙ্গম গোরা ভাবেতে ডুবায় গো।’’

সবাই গোপীভাবে মাতা

স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—সবাই গোপীভাবে মাতা

‘‘স্থাবর-জঙ্গম গোরা ভাবেতে ডুবায় গো।’’
ও আমাদের,–‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’


‘‘নিধুবন নিকটে আসি, আনন্দেতে গোরাশশী গো,
হেমদণ্ড বাহু তুলি উন্মত্ত নাচয় গো।’’


‘‘নিধুবন নিরখিয়া, পূর্ব্বলীলা স্মঙরিয়া গো,
ভাবের আবেশে গোরা উল্লসিত হয় গো।’’
ও আমাদের,‘‘প্রাণ গোরা রায়।।’’

সেই গৌর এল রে
আজ,–সেই গৌর ব্রজে এলো

প্রাণ কিশোরী,–যাঁরে স্বপ্নে দেখে ছিল—আজ,–সেই গৌর ব্রজে এলো

আজ,–সেই গৌর ব্রজে বিহরে

যাঁরে স্বপ্নে দেখেছিল—আজ,–সেই গৌর ব্রজে বিহরে
যাঁরে স্বপ্নে দেখিছিল’—
আমাদের প্রাণকিশোরী—যাঁরে স্বপ্নে দেখেছিল
এই,–নিধুবনে স্বপ্নে দেখেছিল—যাঁরে স্বপ্নে দেখেছিল

দেখে মুগ্ধ হয়েছিলে
শ্যাম—নাগরের কাছে বলেছিল

আমাদের প্রাণকিশোরী—শ্যাম,–নাগরের কাছে বলেছিল

হা—পরাণ বঁধু এ কি হলো
আমি,–স্বপনেতে দেখলাম

এক,–গৌরবর্ণ যুবা পুরুষ—আমি,–স্বপনেতে দেখলাম

আমার চিত চুরি কৈল

সেই,–গৌরবর্ণ যুবা পুরুষ—আমার চিত চুরি কৈল

প্রাণকিশোরী,–কেঁদে আকুল হয়ে বলে

হায়,–পরাণ বঁধূ আমার কি হলো—প্রাণকিশোরী, –কেঁদে আকুল

হয়ে বলে
কেন,—পরপুরুষে মতি গেল
আমি,–তোমা বিনে আন জানি না

শয়নে স্বপনে জাগরণে—আমি,–তোমা বিনে আন জানি না

কেন,–আন-পুরুষে স্বপনে দেখলাম

আমি তোমা হারাইয়ে—কেন,–আন-পুরুষে স্বপনে দেখলাম

গৌর-স্বরূপ দেখাইল

কিশোরীর মন শান্তির লাগি—গৌর-স্বরূপ দেখাইল

গৌরাঙ্গ স্বরূপ হলো

প্রাণকিশোরীর সঙ্গে মিলে—গৌরাঙ্গ স্বরূপ হলো

এই ত নিধুবনের কথা
সেই গৌর এলো রে

যে,–কিশোরীর মন চুরি কৈল—সেই গৌর এলো রে

প্রাণভরে বল ভাই
চিতচোরা প্রাণগোরা
ওগো আমাদের প্রাণগোরা

রাই-কিশোরীর চিতচোরা-ওগো আমাদের প্রাণগোরা

রসময় প্রাণগোরা

রাই-কিশোরীর চিতচোরা—রসময় প্রাণগোরা

সেই,–প্রাণগৌর ব্রজে এলো

এই নিধুবনে যে,–কিশোরীর চিত চুরি কৈল—সেই,–

প্রাণগৌর ব্রজে এলো
প্রাণগৌর এলো রে

‘‘নিধুবন নিরখিয়া, পূর্ব্বলীলা স্মঙরিা রে,
ভাবের আবেশে গোরা উল্লসিত হয় গো।’’

আজ,–সেই গৌর এলো রে

যে,–কিশোরীর মন চুরি করেছিল—আজস—সেই গৌর এলো রে

প্রাণগৌর এলো রে

শ্রীরূপ-হৃদকেতন—প্রাণগৌর এলো রে

প্রাণগৌর ব্রজে এলো

শ্রীসনাতনের গতি—প্রাণগৌর ব্রজে এলো

প্রাণগৌর ঘরে এলো

শ্রীগোপালভট্টের পরাণ—প্রাণগৌর ঘরে এলো
‘শ্রীগোপালভট্টের পরাণ’—
রাধারমণ-গৌরাঙ্গ—শ্রীগোপালভট্টের পরাণ

প্রাণগৌর এল রে
শ্রীগোপালভট্টের পরাণ—প্রাণগৌর এল রে
প্রাণগৌর ব্রজে এলো

শ্রীগোপালভট্টের পরাণ—প্রাণগৌর ব্রজে এলো

প্রাণগৌর এল রে

শ্রীলোকনাথের হৃদবিহারী—প্রাণগৌর এল লে
শ্রীজীব-জীবন-ধন—প্রাণগৌর এল রে

প্রাণগৌর ব্রজে বিহরে

স্থাবর-জঙ্গম,–গুল্মলতা গোপী করে—প্রাণগৌর ব্রজে বিহরে

ব্রজে বিহরে,–প্রাণ গোরা রায়

স্থাবর-জঙ্গম প্রেমে মাতায়—ব্রজে বিহরে,–প্রাণ গোরা রায়

প্রাণগৌর ব্রজে এলো

মহা,–রাস-রসের পরিণতি—প্রাণগৌর ব্রজে এলো

প্রাণগৌর ব্রজে বিহরে

মহাভাব,–প্রেমরস-ঘনাকৃতি—প্রাণগৌর ব্রজে বিহরে
মহা,–রাস-বিলাসের পরিণতি—প্রাণগৌর ব্রজে বিহরে

ব্রজে বিহরে প্রাণগোরা

প্রাণকিশোরীর চিতচোরা—ব্রজে বিহরে প্রাণগোরা

প্রাণগৌর এলো রে

শ্রীযমুনাত তীরগতা—প্রাণগৌর এলো রে

প্রাণগৌর এলো রে

দাস,–রঘুনাথের সাধনের ধন—প্রাণগৌর এলো রে
শ্রীরঙুনাথভট্টের পরাণ—প্রাণগৌর এলো রে
স্বরূপের সরবর—প্রাণগৌর এলো রে
রামরায়ের চিতচোরা—প্রাণগৌর এলো রে
প্রকাশানন্দের নয়নানন্দ—প্রাণগৌর এলো রে
সার্ব্বভৌমের চৈতন্যদাতা—প্রাণগৌর এলো রে

প্রাণগৌর এলো ঘরে
গোরা,–রাসবিহারী এলো রে

রাস-রসের বন্যা করে—গোরা,–রাসবিহারী এলো ঘরে
স্থাবর-জঙ্গম গোপী করে—গোরা,–রাসবিহারী এলো ঘরে

প্রাণগৌর রাস করে
জয় জয় গোরা-রাসবিহারী

স্থাবর,–জঙ্গম কৈল গোপনারী—জয় জয় গোরা-রাসবিহারী
স্থাবর,-জঙ্গম-প্রেমোন্মত্তকারী—জয় জয় গোরা-রাসবিহারী

বল ভাই সবে গরব কোরে

শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—বল ভাই সবে গরব কোরে

জগভরি সকলি নারী

একলা পুরুষ গৌরহরি—জগভরি সকলি নারী

বল সবে প্রাণভরি

রাসরজনী হেরি’, ব্রজে,–রাস কৈলা গৌরহরি—বল সবে প্রাণভরি’

এই নাম আমাদের এত দিল
শ্রীগুরুদেব দিয়েছেন
সন্ধান ত জানতাম না
কৃপা করে বলে দিলেন

শ্রীগুরুদেব নিজগুণে—কৃপা করে বলে দিলেন

এই নাম কর,–নাম সকলি দিবে
প্রাণভরে গাইব

শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত এই নাম—প্রাণভরে গাইব

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ