শ্রীশ্রী গোপালগুরু গোস্বামীর সূচক-কীর্ত্তন

(কার্ত্তিক শুক্লা নবমী তিথি)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।

আহা—‘‘আরে মোর গোপাল-গুরু, ভকতি-কল্পতরু,’’

আ’মরি,–ভকতি-কল্পতরু

আরে মোর গোপাল-গুরু—ভকতি-কল্পতরু

‘‘শ্রীমকরধ্বজ নাম যাঁহার।


শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য যাঁকে,’’

আচরিয়ে শিখান যাঁর কার্য্য
যিনি,—আচরিয়ে ধর্ম্ম শিখাইলেন
সেই জগদ্‌গুরু জগদ্বন্ধু

আচরিয়ে শিখান যাঁর কার্য্য—সেই জগদ্‌গুরু জগদ্বন্ধু

‘‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য যাঁকে, গোপাল বলিয়া ডাকে,’’

বাৎসল্যে,–‘গোপাল’ বলিয়া ডাকে

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য যাঁকে—‘গোপাল বলিয়া ডাকে
সহজ-বাৎসল্য-আবেশে—‘গোপাল’ বলিয়া ডাকে

‘‘দেখি’ শিশু-চরিত্র উদার।।
শ্রীগৌরাঙ্গের সেবারসে, সদাই আনন্দে ভাসে,’’

গোপাল,–সদাই আনন্দে ভাসে

প্রাণগৌরাঙ্গের সেবারসে—গোপাল,–সদাই আনন্দে ভাসে

‘‘গোরা বিনু নাহি জানে আন।’’

সে,–গৌর বিনে আন না জানে

সদা,–অনুরাগে যাঁর প্রাণে টানে—সে,–গৌর বিনে আন না জানে

সে,–গোরা বিনে আন নাহিক জানে

গোরা গতি যাঁর জীবনে মরণে—সে,—গোরা বিনে আন নাহিক জানে

সদাই জাগে যাঁর প্রাণে প্রাণে

মহা-রাসবিলাসের পরিণতি—সদাই জাগে যাঁর প্রাণে প্রাণে
‘মহা-রাসবিলাসের পরিণতি’—
মহাভাব প্রেমরস একাকৃতি—মহা-রাসবিলাসের পরিণতি

সদাই জাগে যাঁর প্রাণে প্রাণে

‘‘গোরা বিনু নাহি জানে আন।
তিলেক না দেখি যাঁরে, ধৈরষ ধরিতে নারে,’’

পলকে প্রলয় গণে

গোরামুখ-অদর্শনে—পলকে প্রলয় গণে

‘‘গোরা যেন, গোপালের প্রাণ।।’’

আমার,—গপালের প্রান গোরা

বিলাস-বিবর্ত্ত-রসের পরিণতি—গোপালের প্রান গোরা

“গোরা যেন গোপালের প্রাণ।।”
গোপাল প্রভু প্রতি, শিক্ষা দিল এক রীতি,’’

না জানি কোন-আবেশে

প্রভু-প্রেমাবেশে—না জানি কোন-আবেশে
মহাভাবনিধি-গৌর-প্রেরণায়—না জানি কোন-আবেশে

গোপাল কি বলিতে পারে

জগদ্‌গুরুকে শিক্ষা-পাত্র—গোপাল কি বলিতে পারে

‘‘গোপাল প্রভুর প্রতি, শিক্ষা দিল এক রীতি,
প্রভু প্রেমাবেশে ঢুলি ঢুলি।’’

আনন্দ আর ধরে না

প্রাণের প্রাণ-শ্রীগৌরাঙ্গের—আনন্দ আর ধরে না

আপনি বলায়েছেন তারে

জগতকে শিক্ষা দিবার তরে—আপনি বলায়েছেন তারে

আনন্দ আর ধরে না রে

গোপালের মুখে শিক্ষার বাণী শুনে’—আনন্দ আর ধরে না রে

আনন্দিত গৌর-গুণমণি

গোপালের মুখে শিক্ষার বাণী শুনি’—আনন্দিত গৌর-গুণমণি

“প্রভু প্রেমাবেশে ঢুলি
‘‘কহে সবে আরে আরে,”

প্রভু প্রেমাবেশে ঢুলি

গোপালের রীতি দেখি’- প্রভু প্রেমাবেশে ঢুলি

“কহে সবে আরে আরে, আজ হইতে গোপালেরে,
সবে,—ডাকিবা গোপাল-গুরু বলি’।।”

গোপালের মুখে শিক্ষার বাণী শুনি

তারে গুরু করি মানি—গোপালের মুখে শিক্ষার বাণী শুনি

সবে,—“ডাকিবা গোপাল-গুরু বলি।”
আচরিয়ে শিখাইলেন

জগদ্‌গুরু গৌরহরি—আচরিয়ে শিখাইলেন

তারেই গুরু করি’ মানিবে

যাঁর মুখে,–অনুকূল শিক্ষার বাণী শুনিবে—তারেই গুরু করি’ মানিবে

নৈলে কেমন করে বলে
নৈলে এ,–শিক্ষা-বাণী কেমন করে বলে

জগদ্‌গুরুর প্রেরণা না হলে—নৈলে এ,–শিক্ষা-বাণী কেমন করে বলে
সবে,–‘‘ডাকিরা গোপাল-গুরু বলি’।।

গোপালে করুণা দেখি,’ সবার সজল আঁখি,
সুখের সমুদ্র উথলিল।’’

সকলের আনন্দ মনে

আনন্দময়ের বাণী শুনে—সকলের আনন্দ মনে

সবাই উচ্চৈঃস্বরে বলে
সবাই প্রেমস্বরে বলে
আমরি কি উদার প্রভু
গোপালে গুরু করি’ মানে

গোপাল-মুখে শিক্ষা-বাণী শুনে—গোপালে গুরু করি’ মানে

বালাই লয়ে মরে যাই

প্রাণ-গৌরাঙ্গের উদারতার—বালাই লয়ে মরে যাই

‘‘সুখের সমুদ্র উথলিল।
সবে কহে অনুপাম, শ্রীগোপাল-গুরু নাম,
প্রভু-দত্ত জগতে ব্যাপিল।।’’

জগ-মাঝে ব্যক্ত হইল

প্রভু,–গোপালের গুরু করি’ মানিল—জগ-মাঝে ব্যক্ত হইল

জগ-মাঝে প্রচার হল

শ্রীগোপাল-গুরু নাম—জগ-মাঝে প্রচার হল

ব্যক্ত গোপাল-গুরু নাম

যাঁরে,–গুরু মানিল গৌরধাম—ব্যক্ত গোপাল-গুরু নাম

[মাতন]
আপনি,–আচরিয়ে ধর্ম্ম শিখাবে বলে

প্রভু আমার,–গোপালেরে গুরু বলে—আপনি,–আচরিয়ে ধর্ম্ম

শিখাবে বলে

‘‘প্রভুদত্ত জগতে ব্যাপিল।।’’

প্রাচীন এই কথা আছে

ভকতি-রাজ্যেতে—প্রাচীন এই কথা আছে

প্রাচীন এই ভাষা আছে
জন্মে জন্মে গুরু সেই

এক অক্ষর শিখায় যেই—জন্মে জমে গুরু সেই

[মাতন]
এ কথা যে প্রাণে না মানিল

সে জগদ্‌গুরু হেলা কৈল—এ কথা যে প্রাণে না মানিল

[মাতন]
এই বাক্যে যার হেলা

তার,–অতি কঠিন ভক্তি-পথে চলা—এই বাক্যে যার হেলা

[মাতন]

‘‘প্রভু দত্ত জগতে ব্যাপিল।।
গোপালের গুরুভক্তি, কহিতে নাহিক শক্তি,
যাতে,–সদাই প্রসন্ন বক্রেশ্বর।’’

গোপালের সেবা-রীতে

বক্রেশ্বর প্রসন্ন চিতে—গোপালের সেবা-রীতে

শ্রীগুরু-বক্রেশ্বর-সেবার ফল
অকপটে বক্রেশ্বর-সেবার ফল

গোপাল-গুরু নাম হল—অকপটে বক্রেশ্বর-সেবার ফল

যাতে,–‘‘সদাই প্রসন্ন বক্রেশ্বর।
মহামত্ত নৃত্যগীতে, নাহিক উপমা দিতে,
সর্ব্ব-চিত্তাকর্ষে কলেবর।।
দেখিল সকল ঠাঁই, এমন দয়ালু নাই,
কেবা না জগতে যশ ঘোষে।
সবে কৈল প্রেমপাত্র, কেবল বঞ্চিত মাত্র,
নরহরি নিজ-কর্ম্ম-দোষে।।’’

আমি কেবল বঞ্চিত হলাম

আপনার কর্ম্মদোষে—আমি কেবল বঞ্চিত হলাম
প্রেমধন না পাইলাম—আমি কেবল বঞ্চিতি হলাম[মাতন]

‘‘আরে মোরে আরে মোর কুলের ঠাকুর।
কোথা লুকাইলে প্রভু হইয়া নিঠুর।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—প্রভুর প্রাণ-প্রিয়-পাত্র।
যাঁর কৃপাকটাক্ষেতে ব্রহ্মাণ্ড পবিত্র।।
কোথা প্রভু বক্রেশ্বর-শিষ্য-অন্তরঙ্গ।
যাঁর সঙ্গে বাড়ে সদা প্রেমের তরঙ্গ।।
শ্রীগৌরাঙ্গ-সেবা-রসে সদা যেঁহো ভাসে।
শ্রীচৈতন্য-প্রেম লাভ যাঁর কৃপালেশে।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বিনা অন্য নাহি জানে।
গোরারূপ সদা হেরে শয়নে স্বপনে।।
গৌর দেখে গোপালেরে প্রাণের সমান।
ক্ষণে,–গৌর না দেখিলে গোপাল করে অভিমান।।
অন্যস্থান দূরে থাকুক গৌর গেলে বহির্দ্দেশে।
বিচ্ছেদের ভয়ে গোপাল দাঁড়ায় প্রভুর পাশে।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-জিহ্বা সদা কৃষ্ণ বলে।
দেখে গোপাল প্রভু জিহ্বা ধরিয়াছেন করে।।
গৌর জলশৌচ করি’ আইলা তার পাশে।
গৌর-করে জল ঢালে গোপাল মৃদু-মৃদু হাসে।।
গৌর বলে কি রে গোপাল হাসিতেছ কেনে।
বল্ বল্ কি-ভাব তোর উঠিল রে মনে।।
গোপাল মুচকি-হাসি’ বলে প্রভুর প্রতি।
না বুঝিয়ে মহাপ্রভু তোমার এই রীতি।।
বহির্দ্দেশ কালে কেন জিহ্বা ধরে করে।
সেই কথা মনে করি’ হাসি না সম্বরে।।
গৌর বলেন আরে গোপাল কি করিব মুঞি।
মোর জিহ্বা অবিরত কৃষ্ণ উচ্চারই।।
বহির্ভূমিকালে কেমনে লব কৃষ্ণ-নাম।
সেই লাগি এ জিহ্বারে ধরি ততক্ষণ।।
গোপল হাসিয়া বলে প্রভু হে সেকালে।
প্রাণ যদি চলে যায় কেবা কৃষ্ণ বলে।।
প্রেমাবেশে প্রভু গোপালেরে কোলে করি’।
নেত্র-জলে অঙ্গ সিঞ্চে আপনা পাসরি।।
শির চুম্বি করে স্পর্শি আশীর্ব্বাদ করি’।
আবেশে গৌরাঙ্গ বলে গুরু তু হামারি।।
ভক্ত-পাশে ভাবাবেশে বলে ঢুলি ঢুলি।
আজ হইতে সবাই ডেকো গোপাল-গুরু বলি’।।
গোপালে করুণা দেখি’ সবাই হরি বলে।
সুখসিন্ধু উথলিল ভাসে নেত্র-জলে।।
সবে বলে প্রভু-দত্ত শ্রীগোপাল-গুরু নাম।
এ-নাম কীর্ত্তনে সত্য যাবে কৃষ্ণ-ধাম।।
প্রভু-কৃপা শুনি’ কোটীগুণে প্রীতি করে।
গোপাল হইল প্রাণ গৌর-পরিকরে।।
প্রভু-কৃপা দেখি’ বক্রেশ্বর মুগ্ধ অতি।
ভুবনমোহনরূপ হেমপুঞ্জদ্যুতি।।
বারেক যে দেখে তার চিত্তবৃত্তি হরে।
প্রভু-দত্ত নাম জপে হরে কৃষ্ণ হরে।।
সঙ্কীর্ত্তনে গোপালের নৃত্য মনোহর।
গৌরচন্দ্র সুখে বারম্বার দেয় কোর।।
গৌর-প্রেমে মাতি’ কভু গৌর-গুণ গায়।
নিষেধ করিলে গোপাল নিষেধ না শুনয়।।
শ্রীবাস বলেন তুমি ভক্ত-সুখে পাও সুখ।
নিষেধ করিলে গোপাল পাবে মনে দুঃখ।।
গোপাল বলে প্রভু তুমি ভাল রঙ্গ কৈলে।
অতি,– দীন-হীন-বালকে তুমি গুরু বলাইলে।।
তোমার ভক্তগণ মোরে গুরুবুদ্ধি করে।
কেহ কেহ আসি’ মোরে দণ্ডবৎ করে।।
কেহ বলে আসিতেছেন অভিরাম-ঠাকুর।
দেখ বাঁচে কি না বাঁচে এ-গোপাল-গুরু।।
সেহ না কি ব্রজের সখা মহা-তেজোবন্ত।
পরীক্ষা করিতে না কি করে দণ্ডবৎ।।
কেহ মরে কেহ বহু-ভাগ্যবলে তরে।
এ-কথা শুনিয়া মোর কাঁপয়ে অন্তরে।।
আমি মরি’ তাতে মোর কোন দুঃখ নাই।
এই দুঃখ চাঁদ-মুখ না দেখিব মুঞি।।
বহির্দ্দেশ-কালে তোমায় কে বা দিবে জল।
তুমি হও কৃষ্ণ-নামে সদাই পাগল।।
মরুক মরুক গোপাল ইথে তোমার সুখ।
এত বলি’ নেত্রজলে ভাসে মুখ-বুক।।
তার আর্ত্তি দেখি’ গৌর কৃপাস্নেহ-ভরে।
স্বপদাব্জ তুলে দিল তার ললাট-উপরে।।
হরিপদাকৃতি তিলক সেইদিন হৈতে।
ধারণ করিল গোপাল নিজ-কপালেতে।।
মহাপ্রভুর মহাকৃপা গোপালের প্রতি।
দেখি ভক্তগণের বাড়ে ক্ষণে ক্ষণে আর্ত্তি।।
গোপালেরে যত কৃপা কে বা কত গণে।
গৌর গোপাল কিবা একই পরাণে।।
শিশুকাল হৈতে গোপাল প্রভু-সঙ্গে স্থিতি।
গৌর-সুখদুঃখে গোপালের সুখদুঃখ নিতি।।
কৃষ্ণমিলন স্ফুর্ত্তি গোরার ভোগ যতক্ষণ।
আনন্দ-সায়রে গোপাল মজে ততক্ষণ।।
বিপ্রলম্ভরস গোরার ভোগ যতকাল।
প্রভুমুখ হেরি’ গোপাল কাঁদিয়া পাগল।।
ভাব শান্তে গৌর দেখে গোপাল অধীর।
কোলে করি’ গোপালেরে প্রভু করে স্থির।।
গোরাচাঁদ না ভুঞ্জিলে গোপাল নাহি খায়।
প্রভু তার প্রীতে ভুঞ্জে বিরহ-বেদনায়।।
শ্রীঅভিরাম ঠাকুর হেনকালে ক্ষেত্রে আইলা।
মহাপ্রভুর গুরু বলি’ গোপালে পরীক্ষিলা।।
আবেশে দণ্ডবৎ করে কিছু না হইলা।
গৌরশক্তি গোপালেতে অভিরাম বুঝিলা।।
জগতের পিতা গৌর ভকত-বৎসল।
ভক্তসুখে সদা সুখী শচীর দুলাল।।
নীলাচলে নানালীলা করে ভক্ত-সঙ্গে।
দেখি গোপালের বাড়ে সে প্রেম-তরঙ্গে।।
শ্রীহরিদাস ঠাকুরের বহুকৃপা পাইলা।
এ গোপাল ভক্তগণের প্রাণাধিক হইলা।
শ্রীবক্রেশ্বর সর্ব্বশক্তি করিলা সঞ্চার।
গোপাল গুরু ‘‘মঞ্জুমেধা’’ মঞ্জরী ব্রজের।।
গৌর জানিলেন গোপাল ধরে মহাশক্তি।
মনে সমর্পিলা তারে গম্ভীরা ধরতি।।
অল্পকালে গোপাল-গুরু পাইলা মহাশোক।
শ্রীগুরু-গৌর-অন্তর্দ্ধানে ফাটে সদা বুক।।
হাহাকার করি’ কাঁদে পাগলের প্রায়।
স্বরূপের অন্তর্দ্ধানে গোপালের প্রাণ রাখা দায়।।
প্রাণ রক্ষা লাগি’ গদাধর-পাশে যায়।
তাঁর দশা দেখি গোপাল-গুরু মূর্চ্ছা পায়।।
মহা-আর্ত্তে কাঁদি বলে গোপীনাথ এ কি কৈলা।
মোর প্রভু গোরাচাঁদ কোথা লুকাইলা।।
মহাশোকে গদাধর আয় আয় বলে।
গদাধরের,–অনাহারে কণ্ঠরোধ অঙ্গ নাহি চলে।।
গোপাল কেঁদে বলে তুমি ছাড়িয়া কি যাবে।
তোর গোরাচাঁদ কি গো ফিরি’ না আসিবে।।
তোমরা গেলে কেমনে বাঁচে নিলাজ-পরাণ।
শিরে করাঘাত করি’ গোপাল হৈলা অগেয়ান।।
নাহি চলে কর তবু কোলেতে ধরিলা।
প্রাণনাথ-সেবা কর বহু-আস্বাদিলা।।
ও প্রাণ-গোপাল প্রাণে বাঁচিয়া থাকহ।
মোর প্রভু-কৃপা-বলে জগত তারহ।।
যত সেবা কৈলে যত পাইলে কৃপাবল।
আমি তোর কাছে ঋণী হইরে গোপাল।।
তাঁর বিরহে প্রাণ কি বাঁচে এতক্ষণ।
প্রতীক্ষা সে মাত্র শ্রীনিবাস আগমন ।।
না হও বাতুল রাখ প্রভুর সম্পত্তি।
তোর দ্বারে উদ্ধারিবে মোর প্রভু ক্ষিতি।।
নদে ব্রজ অভিন্ন সে শ্রীগম্ভীরা ঘর।
রক্ষা কর ওরে গোপাল হই অধীশ্বর।।
গোপাল বলে শূন্য-পুরে কেমনে রহিব।
সে গম্ভীরা হেরি’ কৈছে পরাণে বাঁচিব।।
সে বচন শুনি’ গদাধর অসম্ভাল।
গোপাল করিয়া কোলে ভাসে নেত্রজল।।
কষ্টে ধৈর্য্য ধরি’ বলে গোপাল ধৈর্য্য ধর।
মিলিবে সে রাধাকান্ত তোর প্রাণেশ্বর।।
ভুবনমোহনরূপ যুগল-মাধুরী
ভাবাবেশে সদা সেব সেই বংশীধরী।।
সেব গুরু তুঙ্গবিদ্যা সখী-আনুগত্যে।
নদে ব্রজে দেখা মোদের সঙ্গে এ দেহান্তে।।
গোপাল বলে রাধাকান্ত গৌরাঙ্গ কি হবে।
সেই রূপে কি আর মোরে দেখা দিবে।।
মহাভাবে বিভূষিত হয়ে গদাধর।
গোপালেরে বক্ষে ধরি’ করয়ে ফুৎকার।।
ভাবে বলে দেখিবে তাতে চিতচোর।
যেই কৃষ্ণ সেই গৌর সন্দেহ না কর।।
গোপাল কাঁদিয়া বলে ধরি’ পদতলে।
এই বাক্য মোর প্রতি তোমার কি না চলে।।
কেমনে ত্যজিব ভুবনমোহন গোপীনাথে।
তোমার প্রাণনাথে যে রাখিলা নিজ-সাথে।।
তোমা লাগি মহাপ্রভু এই লীলা কৈলা।
তুমি ইঁহার সেবা ত্যজি বিরহে ডুবিলা।।
দেখ,– গোপীনাথের শ্রীমুখ হইল মলিন।
আমি ত দেখিলাম নেত্রে ইঁহার অশ্রুচিন।।
তোমার প্রাণনাথ বারে বারে আলিঙ্গিলা।।
রাধাভাবাবেশে কভু বামে দাঁড়াইলা।।
স্বরূপ-রামানন্দ-সনে পূর্ব্বভাবাবেশে।
জান ত হে আসে এই গোপীনাথ-পাশে।।
আমি আসি তার পাছে কোন কোন দিনে।
প্রভুভাবে জানি তুমি রহ সে গোপনে।।
স্বরূপ রামরায় গায় সে মিলন-পদ।
গোপীনাথের এই লুটে ব্রজের সম্পদ।।
ভাব শান্তে ফিরিবার-কালে তোমায় ডাকে।
গদাধর ও গদাধর বলে প্রেমকণ্ঠে।।
সম্মুখে না আইস তুমি বল মান-বশে।
গদাধর তোমারমপর বঞ্চিত এ-রসে।।
গৌর বলে মান ত্যজ নিহ আমি পর।
যখন যে ভাবে নাচায় নহি স্বতন্তর।।
এত বলি’ গৌর আসি’ করে আলিঙ্গন।
প্রেমজলে ভাসি কর চরণ-বন্দন।।
কত ইষ্টগোষ্ঠী বসি’ এই বৃক্ষতলে।
দেখ তার সাক্ষী পাখী কাঁদে তরু-ডালে।।
দেখ হে কাঁদিয়া গর্জ্জে আকুল সাগর।
বন্য পশু পাখী কাঁদে কিবা নারী নর।।
গৃহবাস হইল সবার শ্মশান সমান।
শ্মশানবাসী হইতে সবাকারই মন।।
জগন্নাথের মুখ দেখি’ বুক ফাটি’ যায়।
বলাইচাঁদের দুঃখ দেখ বর্ণন না যায়।।
বিমলা কমলা কাঁদে সে শিব পার্ব্বতী।
দেখ সিংহাসন ত্যজি’ লুটয়ে ধরতি।।
উছলিল শোকবন্যা দুঃখ পারাবার।
তব মুখ দেখি আশা কুল পাইবার।।
সহজে সমর্থা তুমি মহাভাবময়ী।
পূর্ব্বে মাথুর-বিরহে সব আছ সহি।।
কৃষ্ণ-সুখে সুখী হয়ে প্রাণ রক্ষা কৈলে।
গৌর সুখে সুখী হয়ে রহ ধরাতলে।।
গদধর বলে তোর সুসত্য বচন।
এই গোপীনাথ মোর শ্রীশচীনন্দন।।
জানিলে কি হবে গোপাল ধৈর্য্য নাহি ধরে।
এ গদাধর গোরাচাঁদের বিদিত সংসারে।।
হউক অভিন্ন মোর গৌরনিষ্ঠ-প্রাণ।
আরে গোপাল আর প্রাণ না যায় ধারণ।।
জানত গোপাল মোর বন্ধু যবে ব্রজে চলে।
গোপীনাথ-সেবা মুঞি ত্যজিনু অবহেলে।।
গৌর বিনু গদাধর বাঁচিতে না পারে।
তে কারণে গেলাম সঙ্গে রহি দূরে দূরে।।
লোকশিক্ষা লাগি’ তার এই অবতার।
ভাল না লাগিল তার মোর এই ব্যবহার।।
সেকালে বিচার-শক্তি নাহি রে গোপাল।
রূপ-গুণে মুগ্ধ আমি প্রেমেতে পাগল।।
ফিরিয়া ফিরিয়া কিন্তু চাহে বারে।
কি বলিবে আমি থাকি তার বহু দূরে।।
আমি জানি ব্রজে আমার ভাবে বিভোর হবে।
মোর ভাবে ডুবি প্রাণনাথেরে খুঁজিবে।।
আমি সঙ্গে থাকি ত বিরহ নহে স্ফূর্ত্তি।
স্ব-স্বরূপ জাগে ভুলে আমার প্রকৃতি।।
আমি ব্রজে গেলে তার প্রাণ-রক্ষা হবে।
সে লাগি—মো’ প্রতিজ্ঞা তার কথা না শুনিব কবে।।
কি বলিব সে গোপাল জানিল অন্তর।
চতুরের শিরোমণি সে শচীর কুমার।।
সে কারণে হইয়াছে এই অবতার।
জানিল তাহাতে বাধা পড়িবে বিস্তব।।
এ লাগিয়া ব্রজ-যাত্রায় আমি তা কন্টক।
মোর প্রাণ রক্ষার্থে নিল নগর কটক।।
মনে আছে ফিরাইবে (তাই) না নিলা বেশী-দূরে।
সহ্য নহে পদব্রজে আমি যাব ক্ষেত্রপুরে।।
মহানন্দাকূলে যখন হইনু উপনীত।
আরে গোপাল অকস্মাৎ ধরি’ মোর হাত।।
বলে মনোবাঞ্ছা সিদ্ধি হল ত এবার।
পুনরুত্তি না করিহ শপথি আমার।।
মোর লাগি’ গোপীনাথ-সেবা ত্যাগ কৈলে।
মোর লাগি’ ক্ষেত্র-সন্ন্যাস দিলে রসাতলে।।
মোর সুখ চাহ যদি ক্ষেত্রপুরে যাহ।
মোর সুখ চাহ যদি সে পদ সেবহ।।
এই লাগি’ ব্রজ হইতে হইল কঠিন।
সার্ব্বভৌম্য-ভট্টাচার্য্যে বলিল বচন।।
ইহারে সঙ্গে লইয়া যাহ ক্ষেত্রপুর।
তোমারে সঁপিল মোর প্রাণ-গদাধর।।
ছিন্ন-তরু-প্রায় পড়িলাম নদীকূলে।
জানি না রে গোপাল কেমন করে গেল চলে।।
বহুক্ষণ পরে মোর হইল চেতন।
সার্ব্বভৌম কৈল বহু আশ্বাস-বচন।।
সে তো ব্রজে গে মোর মথুরা হৈল স্ফূর্ত্তি।
সে নদী-বন মনে হৈল (মোর) বৃন্দাবনে স্থিতি।।
মনে হইল পড়ে থাকি সার্ব্বভৌম না শুনে।
না জানি কেমন করে আনিল ক্ষেত্র-ধামে।।
শুন রে গোপাল বলি অতি গূঢ়-কথা।
মনে হইল আমি যথা মোর বন্ধু তথা।।
ফিরিবার কালে যেন মোর সঙ্গে আসে।
মোর মুখ-পানে চেয়ে মৃদু মৃদু হাসে।।
আমি বলি কি হে ব্রজ-যাত্রা সিদ্ধি হল।
সেহ-বলে লোক-শিক্ষা-লাগি’ এহো ছল।।
আমি বলি তবে কেন সেবা ছাড়াইলে।
তেঁহো বলে তোমার নিষ্ঠা জনুক সকলে।।
আমি বলি তবে কেন মোরে কাঁদাইলে।
সে বলে কাঁদিতাম কত (তোমায়) ত্যজি ব্রজে গেলে।।
আমি বলি শপথ কর আমায় না ত্যজিবে।
সে বলে গদাই ত্যজি’ গৌর রহে কবে।।
কে বলে সন্ন্যাস-বেশ আমার বঁধুর।
দেখি রে চাঁচর-কেশ মাধুর্য্যের পুর ।।
এই-মতে আইনু গোপীনাথের ভবনে।
দেখি দাঁড়াইয়া আছে শ্রীশচীনন্দনে।।
শ্রীগৌরগোবিন্দরূপ ত্রিভুবন মোহে।
শ্রীকরে মুরলী মৃদু মৃদু কথা কহে।।
কোটি-কাম-দর্প হরে তা’ কটাক্ষশরে।
কার সাধ্য আছে ধৈর্য্য ধরে এ-সংসারে।।
কি বলিব মুঞি মোরে করে আকর্ষণ।
সার্ব্বভৌম আছে মোর হৈল বাহ্যজ্ঞান।।
নেত্র-কটাক্ষে বন্ধুরে ইঙ্গিত করিনু।
পুনঃ শ্যামরূপ দেখি’ সেবিকা হইনু।।
গোপাল বলয়ে ওগো দুঃখ পরিহর।
এই তব প্রাণগৌর গোপীনাথে সেবা কর।।
যদি জীবে ডুবাইলে রস-পারাবারে।
পুনঃ না জরিহ এই মায়ান্ধ-সায়রে।।
গদাই বলে ও গোপাল হলি কি পাগল।
সে-কায়া ত্যজি এ-ছায়া কোথায় রবে বল।।
আমি না গেলে রে সে কি থাকিতে পারিবে।
আর এ-যুগে কি পুনঃ প্রকট হবে।।
গোপাল বলে তবে জীবের দশা কি হইবে।
পূর্ব্বমত মায়া পুনঃ গলায় বাঁধিবে।।
গদাই বলে আছে প্রভুর প্রেম-অবতার।
নরোত্তম-সহ বিশ্ব করিবে উদ্ধার।।
প্রভু ভাসাইল কৃষ্ণ-নাম-প্রেম-রসে।
ইঁহ ডুবাইবে গৌর-ভাবসিন্ধু-রসে।।
তোরাও করিবি বহু-জীবের উদ্ধার।
তোর গৌর-নাম-প্রেমে ভরিবে সংসার।।
মধ্যে মধ্যে আসিবে রে আর পরিকর।
মোর,– গৌর-রস-বৃষ্টি-শূন্য না হবে সংসার।।
গোপাল দেখে গদাই-অগ্রে শ্রীভাগবত।
নেত্রজলে ভাসি’ সব-বর্ণ হয় লুপ্ত।।
তা’ দেখি গোপাল-প্রাণ করে টলমল।
গদাই আশ্বাসি’ কত পুছে নেত্র-জল।।
তার সুখ লাগি’ পড়িতাম ভাগবত।
মোর চিত্তেন্দ্রিকায় তার রসে উনমত।।
স্বপ্নেও যদি কেহ মোর গৌরচন্দ্র বলে।
সে আমার আমি তার শুন হে গোপালে।।
মোর গৌরচন্দ্র-পদে বৈমুখী যে জন।
ভজুক সে রাধাকৃষ্ণ নহে প্রিয়তম।।
নিতাই-চন্দ্রের পদে (যার) নাহিক বিশ্বাস।
ভজিলেও গৌরচন্দ্রে নহে তার দাস।।
নিতাই-চন্দ্রের পদে যে জন বৈমুখী।
তার মুখ দর্শনে কোটি-প্রায়শ্চিত্ত লিখি।।
শ্রীনিতাইএর তণ্ডুল রন্ধন গোপীনাথের ভোজন।
সেধে গৌর এসে ভুঞ্জে তা’ কৈল বর্ণন।।
যে কদিন আছি গোপাল থেকো মোর পাশে।
নিরন্তর ডুবাইও গৌর-সুধা-রসে।
তোর মুখে তার নাম বড়ই মধুর।
মৌর,–গৌর-নাম মোর কর্ণে শুনাও প্রচুর।।
যাবৎ গদাই-স্থিতি গোপাল রহে পাশে।
শ্রীগদাধরের কৃপা লভ্য অশেষ-বিশেষে।।
প্রভু-ইচ্ছা-বশে গোপাল সব সহ্য কৈল।
গৌর-কৃপায় বলী হয়ে জগত তারিল।।
লভিল সে ভুবনমোহন-রাধাকান্ত।
অন্য-লোক বহু দেখি’ পাষণ্ড মূর্চ্ছিত।।
গন্তীরায় অধীশ্বর গৌর-কৃপা-বলে।
শিষ্য-উপশিষ্যগণে জগত ছাইলে।।
অপ্রকটে,–মধ্যে মধ্যে গম্ভীরাতে দেখে শচীসূতে।
সিদ্ধদেহ আরোপিয়া সেবে রাধাকান্তে।।
অশেষ তাহার গুণ কে করে বর্ণন।
কৃতার্থ হইবার আশে স্পর্শি এক কণ।।
এই মত নানালীলা কৈল নীলাচলে।
আসি’ উপনীত হৈল তিরোভাবকালে।।
তাঁর ধ্যানচন্দ্র শিষ্য গুণের সাগর।
নাম শুনায়ে প্রভু-সেবা করে নিরন্তর।।
অপ্রকট হৈলা গোসাঞি গৌর গৌর বলে।
সবে ক্ষেত্রবাসী ভাসে শোকের সায়রে।।
সে ধাত্রী-নবমীতে সেই দেহে আইলা বৃন্দাবন।
বংশীবটে পাঁপড়ি-তরুমূলে করয়ে ভজন।।
ব্রজবাসী সেই দিনে দর্শন পাইল।
অত্যাশ্চর্য্য-কথা এই জগতে ব্যাপিল।।
বৃন্দাবনে সেই-দেহে ভজে ব্রজে মাতি’।
প্রেমকল্পতরু বলে এ বিশ্বে খেয়াতি।।
দয়া কর প্রভু ধ্যানচন্দ্রের ঈশ্বর।
তব রাধাকান্তদাসে ভক্তি দান কর।।’’

আমি কেবল বঞ্চিত হলাম

আপনার কর্ম্মদোষে—আমি কেবল বঞ্চিত হলাম
প্রেমধন না পাইলাম—আমি কেবল বঞ্চিত হলাম

[মাতন]
সবে,–কোথা বা লুকালে

হা,–পরাণ-গৌরাঙ্গগণ তোমরা—সবে,–কোথা বা লুকালে

সবে,–একে একে কোথা লুকালে

আমাদের,–কাল-কলির কবলে ফেলে—সবে,–একে একে কোথা লুকালে

প্রাণ,—গৌর লয়ে কোথা লুকালে
আমাদের,–কার কাছে রেখে গেলে

আমাদের আর,–দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই গো—আমাদের,–কার কাছে রেখে গেলে

আর,–কারে বলব দুঃখের কথা

—-০—-

অতঃপর : — আহা, –‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর,’’ ইত্যাদি মহাজনী আক্ষেপ কীর্ত্তন

… … … … …
… … … … …
… … … … …


কিঞ্চিৎ বিশেষ :–

‘‘সে না শেল রহিগেল চিতে।।’’

নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

ও সেই,–লীলা অদর্শন শেলে—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

পাঁজর পুড়ে ঝাঁজর হল

আর কারে বা দেখাব বল—পাঁজর পুড়ে ঝাঁজর হল

হা,–‘‘প্রভু সনতন রূপ, রঘুনাথ ভট্টযুগ,


তোমরা কোথায় আছ,–ভূগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।’’

তোমরা,–কোথা বা আছ হে
ব্রজবনে তোমাদের নিত্য বসতি

ত্রিকাল-সত্য-লীলায় এই—ব্রজবনে তোমদের নিত্য বসতি

তোমরা,–কোথায় বা আছ হে
প্রাণে প্রাণে ভোগ করিছ

নিত্য-লীলার আবরণে—প্রাণে প্রাণে ভোগ করিছ

তোমরা,—কোথাও ত’ যাও নাই
প্রভুর আজ্ঞা পালন করিছ

মধুর-বৃন্দাবনে আছ—প্রভুর আজ্ঞা পালন করিছ

এক নিবেদন জেগেছে প্রাণে

ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—এক নিবেদন জেগেছে প্রাণে
‘ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে’—
চিতচোর-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে

এক নিবেদন জেগেছে প্রাণে
ত্রিকাল-সত্য গৌর-লীলা
এই ত’ আগমন-কাল
এই ত’ আগত প্রায়

প্রাণ-গৌরাঙ্গের আগমন-কাল—এই ত’ আগত প্রায়

প্রাণ-গৌরাঙ্গের আগমন-কাল

এই মধুর-বৃন্দাবনে—প্রাণ-গৌরাঙ্গের আগমন-কাল

এই ত’ সমাগত প্রায়
বৃন্দাবনে আগমন-কাল

ঝারিখণ্ডে প্রেমে মাতায়ে—বৃন্দাবনে আগমন-কাল
‘ঝারিখণ্ডে প্রেমে মাতয়ে’—
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্ম-লতা-পশু-পাখী-ঝারিখণ্ডে প্রেমে মাতারে

বৃন্দাবনে আগমন-কাল
এই ত’ সমাগত প্রায়
এই আগত পৌর্ণমাসী
এসেছিলেন প্রাণ-গৌরহরি

বিরহ আবেশে—এসেছিলেন প্রাণ-গৌরহরি
প্রাণ-কৃষ্ণ অন্বেষণ করিতে—এসেছিলেন প্রাণ-গৌরহরি
আপন-মনোরথ পূরাইতে—এসেছিলেন প্রাণ-গৌরহরি

এই ত’ সমাগত প্রায়
এক নিবেদন শ্রীচরণে
যদি,–নিজগুণে এনেছ টেনে

কৃপারজ্জু গলায় বেঁধে—যদি—নিজগুণে এনেছ টেনে
‘কৃপারজ্জু গলায় বেঁধে’—
বহুদিন পরে—কৃপারজ্জু গলায় বেঁধে

যদি,–নিজ-গুণে এনেছ টেনে
একবার দেখাবে কি

প্রাণ-গৌরাঙ্গের ব্রজবিহর—একবার দেখাবে কি

দেখব আমরা নয়ন-ভরি’

ভাই ভাই ভাই মিলে—দেখব আমরা নয়ন-ভরি’
শ্রীগুরুদেবের আনুগত্য—দেখব আমরা নয়ন-ভরি’
‘বিরহিণী গৌর-কিশোরী—দেখব আমরা নয়ন-ভরি’
বলভদ্র-কৃষ্ণদাস-সঙ্গে—বিরহিণী গৌর-কিশোরী

দেখব আমরা নয়ন-ভরি’
একবার দেখাইও

হা প্রভু রূপ সনাতন—একবার দেখাইও

যদি,–নিজ-গুণে এনেছ টেনে

সম্পূর্ণ অযোগ্য জেনেও—যদি,–নিজ-গুণে এনেছ টেনে

একবার ভোগ করিতে দিও

শ্রীগুরুদেবের আনুগত্যে—একবার ভোগ করিতে দিও
এই ব্রজবনে গৌরাঙ্গ-বিহার—একবার ভোগ করিতে দিও
বার বার আসি’ কেঁদে ফিরে যাই—একবার ভোগ করিতে দিও

কৃপা করে আন আকর্ষণ করে
আমরা,–কত না খুঁজেছি

আমরা,–ভাই ভাই মিলে এই ব্রজবনে—আমরা,–কত না খুঁজেছি

কত না ডেকেছি

তোমাদের বসতি-স্থানে গিয়ে—কত না ডেকেছি
কোথায় ওহে সনাতন বলে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ রূপ-সনাতন বলে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ,–ভট্টযুগ শ্রীজীব-গোসাঞি বলে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ,–রঘুনাথ ভূগর্ভ লোকনাথ বলে—কত না ডেকেছি

ডেকে ডেকে পাই না সাড়া
তখন—মনে মনে অনুমান করেছি
বুঝি,–সবাই মিলে গিয়েছ তোমরা

শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—বুঝি,–সবাই মিলে গিয়েছ তোমরা
দাস-গোস্বামীর কাছে—বুঝি,–সবাই মিলে গিয়েছ তোমরা
ইষ্টগোষ্ঠী করবার তরে—বুঝি,–সবাই মিলে গিয়েছ তোমরা

গিয়েছি আমরা শ্রীকুণ্ড-তীরে
কেঁদে কেঁদে কত ডেকেছি
এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর

দাস-গোসাঞি কোথায় আছ—এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর

[মাতন]
কোথা বা লুকায়ে আছ

প্রাণে প্রাণে ভোগ করিছ—কোথা বা লুকায়ে আছ

ব্যাকুল হয়ে কাঁদছ

পরস্পর গলা ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদছ
আর কি দেখতে পাব বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদছ

আর কি দেখা দিবে না

আমার,–চিতচোর গৌরাঙ্গ-সোণা—আর কি দেখা দিবে না

[মাতন]
কোথা বসে কাঁদছ

পরস্পর গলা ধরে—কোথা বসে কাঁদছ
সোণার গৌরাঙ্গ-প্রভু বলে—কোথা বসে কাঁদছ

দাস-গোসাঞি কোথা তুমি

এই ত’ তোমার বসসিভূমি—দাস-গোসাঞি কোথা তুমি
এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর-দাস-গোসাঞি কোথা তুমি

কোথা বসে কাঁদছ

গিরীধারী বুকে ধরে—কোথা বসে কাঁদছ
কবিরাজের গলা ধরে—কোথা বসে কাঁদছ
‘কবিরাজের গলা ধরে’—
গিরিধারী বুকে ধরে—কবিরাজের গলা ধরে

কোথা বসে কাঁদছ

এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর—কোথা বসে কাঁদছ

[মাতন]

গৌরাঙ্গের,–নীলাচল-কথা কইতে কইতে—কোথা বসে কাঁদছ

বল বল কবিরাজ
আর কি আমি দেখতে পাব

চিতচোর প্রাণ-গৌর—আর কি আমি দেখতে পাব

[মাতন]
আমরা,–কেঁদে কেঁদে ফিরে এসেছি

কারোও দেখা পাই নাই—আমরা,–কেঁদে কেঁদে ফিরে এসেছি

যদি এনেছ কৃপা করে
একবার দেখা দাও
এসেছি আমরা ব্রজপুরে

বড়-আশা বুকে ধরে—এসেছি আমরা ব্রজপুরে

ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে

প্রাণের প্রাণ-শ্রীগৌরাঙ্গের—ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে

এসেছি আমরা ব্রজবনে

বড় সাধ দেখব বলে—এসেছি আমরা ব্রজবনে
বড় সাধ দেখব বলে—
ব্রজবনে গৌরাঙ্গ-বিহার—বড় সাধ দেখব বলে

দুঃখের কথা কারে বা বলব
সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা

হার রে,–

‘‘এ সকল প্রভু মেলি, যে সব করিল কেলি,
হায়,–বৃন্দাবনে ভক্তগণ-সাথ।।’’

আছ বটে সে সব স্মৃতি

কেবল,–দেখতে পাই নাই সেই প্রেমের মুরতি—আছে বটে সে সব স্মৃতি
এবে,–‘‘সবে হৈলা অদর্শন,’’
ভাই রে,–আমাদের দুর্ভাগ্যদোষে—এবে,–‘‘সবে হৈলা অদর্শন,’’

তোমরা,–লুকাইয়ে করছ খেলা

যাও নাই কোথাও—তোমরা—লুকাইয়ে করছ খেলা
‘যাও নাই কোথাও’—
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—যাও নাই কোথাও

খেলা,–দেখতেও কি কিছু দোষ আছে

আমরা,–নাই বা হলাম খেলার সাথী—খেলা,—দেখতেও কি কিছু দোষ আছে

হায় হায়,–কারে বলব দুঃখের কথা

এবে,—‘‘সবে হৈলা অদর্শন, শূন্য ভেল ত্রিভুবন,
অন্ধ ভেল সবাকার আঁখি।’’


… … … … …
… … … … …
… … … … …

ও,–‘‘কাহারে কহিব দুঃখ, না দেখাব ছারমুখ,’’
আমার মুখ কেউ দেখ না

আমি,–শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বৈমুখী—আমার,–মুখ কেউ দেখ না

‘‘আছি যেন মরা পশু-পাখী।।’’

মনুষ্যত্বের গন্ধ নাই রে

দেখিতে মানুষের আকার বটে—কিন্তু, মনুষ্যত্বের গন্ধ পাই রে

মানুষ হলে ভালবাসা থাকত
একতিল কি প্রাণ থাকত

সে সুখে বঞ্চিত হয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত
সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত
‘সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে’ –
পরমকরুণ-শ্রীগুরুগণের—সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে
এই মধুর-ব্রজবন—সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে

একতিল কি প্রাণ থাকত
পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে

… … … … …
… … … … …

প্রাণভরে গাও রে

শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে— প্রাণভরে গাও রে
মিলে,—ভাই ভাই এক-প্রাণে—প্রানভরে গাও রে

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’


বল জয় গোপাল-গুরু

শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেম-কল্পতরু—বল জয় গোপাল-গুরু

[মাতন]

গৌরহরি-বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ