শ্রীশ্রীগোরা অভিসার কীর্ত্তন

(কোজাগরী পূর্ণিমা)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(১)

‘‘নীলাচলে গোরারায় সঙ্গেতে নিতাই।
স্বরূপাদি রামরায় শ্রীবাস রামাই।।
মুরারি মুকুন্দ নরহরি গদাধর।
বাসুদেব বক্রেশ্বর আদি সহচর।।
সঙ্কীর্ত্তনাবেশে রাত্রি দিন নাহি জানে।
কি ভাব উঠয়ে কভু না যায় কথনে।।
যখনে থাকয়ে প্রভু কাশীমিশ্রাবাসে।
নিরন্তর মগ্ন রহে রাধাভাবাবেশে।।
স্বরূপাদি রামরায়ে দেখি সখীবোধে।
ললিতা বিশাখা বলি সদাই সম্বোধে।।
কুটিলার ভয়ে যেন অন্তরে তরাস।
কদাপি নাহিক শুনি মুখে উচ্চভাষ।।
শ্যামের বিচ্ছেদ সদা হিয়া-মাঝে জাগে।
শ্যামগুণ আলাপন সদা ভাল লাগে।।
হেন ভাবে সদা প্রভুর বিবশ হৃদয়।
শারদীয় ঋতু আসি হইল উদয়।।
শারদীয় শুভ্র নিশায় চন্দিকা উজ্জ্বল।
প্রবাহিত সুরভিত বায়ু সুশীতল।।
নেহারি দ্বিগুণ উঠে ভাবের তরঙ্গ।
অবশ হইল মন প্রাণ সর্ব্ব অঙ্গ।।
দেখি সহচরগণ উৎকণ্ঠিত মন।
প্রভুর রক্ষণে সদা করে সুযতনে।।’’

(২)

একদিন,–‘‘অপরাহ্নে গোরাশশী, কাশীমিশ্র-গৃহে বসি,
নখে ক্ষিতে করয়ে লিখন।
বামকরে গণ্ড রাখি, অধোমুখে মনোদুঃখী,
অঝোরে ঝরয়ে দুনয়ন।।
‘‘মলিন দেখিয়া মুখ, বিদারিয়া যায় বুক,
কিসের লাগিয়া প্রভু কাঁদে।
দেখিয়া স্বরূপ আসি, আস্তে আস্তে কাছে বসি,
হৃদয়ে ধৈরয নাহি বাঁধে।।
বস্ত্রাঞ্চলে নেত্রবারি, মুছাইয়া ধীরে ধীরে,
করে কর করিলা ধারণ।
মানি নর্ম্ম-সহচরী, দ্বিগুণ নয়নবারি,
উথলিল না যায় বারণ।।
স্বরূপের গলা ধরি, কাঁদে প্রভু গৌরহরি,
ফুকরি ফুকরি মনোদুঃখে।
বাষ্পে কণ্ঠ হয় রুদ্ধ, বাক্য না নিঃসরে শুদ্ধ,
নীরব থাকয়ে অধোমুখে।।’’

(৩)

‘‘মনের বেদনা, কারে আমি কব, শুনগো ললিতা সই।
শ্যামের বিরহে মনপ্রাণ দহে, কিসে তার দেখা পাই।।
পূরব পিরীতি, তুমি জান সব, মম প্রাণবঁধু কালা।
কেমনে তাহারে, বারেক দেখিয়া, জুড়াই হিয়ার জ্বালা।।
নবজলধর, রসে ঢর ঢর, বরণ চিকন কালা।
অঙ্গের ভূষণ, অমূল্য রতন, মণি মাণিক্যের মালা।।
নয়ন সুচারু, সুভঙ্গিম ভুরু, তেরছ চাহনি তায়।
অঙ্গ নেহারি, কুলবতী নারী, তেজে কুললাজ ভয়।।
অধরে, সুভঙ্গ মুরলী, বরষে ললিত বর।
কুরঙ্গী, শুনি অবশাঙ্গী, ধায় সেইদিকে সব।।
কৃষ্ণ কেশদাম, অতি অনুপাম, তাহে বাঁধিয়াছে চূড়া।
মল্লিকা মালতী, ফুলে নানা-জাতি, চতুর্দ্দিকে আছে বেড়া।।
তথি পরে উচ্চ শিখি-পুচ্ছ, ঈষৎ বামেতে হেলা।
নেহারি কামিনী, আকুল পরাণি, মাঝে গোরাচনা বিন্দু।।
সুনীল কপোল, গগন মাঝারে, বিরাজিত পূর্ণ ইন্দু।।
পরিসর উরে, কিবা শোবা করে, চারু কুসুমের দাম।।
সেরূপ নেহারি, আপনা ধিক্কারি, মুরছিত হয় কাম।।
তারা উতপল, জিনি করতল, ভুজ করিকর জিনি।
চম্পকের কলি, জিনিয়া আঙ্গুলী, নখে কোটি শশী মানি।।
কতনা যতনে, রতন বলয়, পরিধান ভুজরাজে।
আঙ্গুলে অঙ্গুরী, শোভে সারিসারি, অতি সুললিত সাজে।।
পরিহিত নব, পীতবসন, পীত-উত্তরি গলে।
যেন,–নীল জীমুতে, থির বিজুরী, শোভিছে গগনতলে।।
রক্ত কোকনদ, জিনি পদযুগ, রতন নূপুর সাজে।
চঞ্চল-চরণে, হেলিতে দুলিতে, মধুর মধুর বাজে।।
জগমোহনিয়া, ত্রিভঙ্গিম ঠাম, কদম্বতলায় কানু।
রাধে রাধে রাধে, কিবা মনঃসাধে, ডাকিছে মোহন-বেণূ।।
সেরূপ-মাধুরী, আহা মরি মরি জাগিছে হিয়ার মাঝে।
ওই শোন শোন, মোহন-মুরলী, গহন-বিপিনে বাজে।।
আমি কুলবতী, নবীনা যুবতী, কানুর পিরীতি তায়।
হিয়ার মাঝারে, জাগে নিরন্তরে, কহ করি কি উপায়।।
হাস পরিহাস, ললিত বিলাস, তেরছ চাহনি সই।
সঙরি সঙরি, ধৈরয পাসরি, সদাই অধিরা হই।।
শোন শোন ওই, ওগো প্রাণ সই, শ্যামের বাঁশরী রব !
বাজিছে আবার, গৃহেতে এবার, না থাকিব একলব।।
আমি,–চলিলু এখনি, যথা নীলমণি, বিপিনে বাঁশরী বায়।
বিলম্ব না সয়, কি হতে কি হয়, যাবি তোরা যদি আস
বলিতে বলিতে, প্রভু শচীসুতে, রাধাভাবে হই তে
পাগলিনী প্রায়, দ্রুত বেগে ধায়, যথা শ্যাম নটবর
আথেব্যথে উঠি, তখনে স্বরূপ, আঙ্গিনা মাঝারে গিয়া।
দুবাহু পসারি, নেত্রে বহে বারি, রহে পথ আগুলিয়া।।
সম্মুখে তাহারে, দেখি গোরারায়, বলিছে বিনয় বাণী।
কেন গো ললিতে, মন প্রাণাধিকে, নিষেধহ মোরে তুমি।।
আমার,–মনের বেদনা, তুমি সবজান, এখনি ভুলিলে সব
আকুল পরাণি, শুনিনু-যখনি, শ্যামর বাঁশরী রব।।
তোমারে সতত, মম মনোমত, জানিতাম নিরন্তর।
বম কর্ম্মফেরে, নিষ্ঠুরা হইলে, নহে কেন ভাবান্তর।।
আমার পরাণ, করে আনচান, বিনে শ্যাম নীলমণি।
তারে না দেখিয়া পরাণ সংশয়, বাহিরায় হেন মানি।।
এই বাক্য মম হিত কর, তোমাঠাঁঞি ভিক্ষা চাই।
পথ ছাড়ি দেহ, নাহি নিষেধহ, শ্যামের সমীপে যাই।।’’
‘‘যদি হিত চাহ, মোরে না বারিহ, আর না বিলম্ব সয়।
নতুবা অচিরে, পরাণ আমার, রহে কিবা নাহি রয়।।’’

(৪)

‘‘স্বরূপের হাতে ধরি প্রভু গোরারায়।
‘‘কাকুতি মিনতি করি সকাতরে চায়।।
কভু বা বিনয় করি বলে মৃদু বাণী।
কভু বা সাদরে বলে প্রিয়সখী মানি।।
কভু ভয় কভু দুঃখ কভু করে ক্রোধ।
স্তব্ধ হইয়া থাকে স্বরূপ না আইসে প্রবোধ।।
ক্ষণেক চিন্তিয়া মনে স্বরূপ বলয়।
কেমনে যাইবা ধনী নিকুঞ্জ-নিলয়।।
রাজার নন্দিনী তুমি কুলের কামিনী।
দিবসে কেমনে বনে যাবে একাকিনী।।
তাহাতে ব্রজের লোক কি বলিবে শুনি।
পথি মাঝে আলুথালু যেন পাগলিনী।।
বাতুলীর প্রায় দেখি সবে উপহাসি।
কলঙ্ক রটাবে নামে ভাল নাহি বাসি।।
নবনীত সম তব তনু সুকোমল।
প্রখর আতপ তাপে কি হইবে বল।।
পদ্মের কোরক সম কোমল চরণে।
কুশাঙ্কুর বিদ্ধ হবে ব্রজের বিপিনে।।
শুনি স্বরূপের বাণী বলে গোরারায়।
কে না ব্রজে জানে শ্যাম-কলঙ্কিনী রাই।।
যেদিন শ্যামের রূপে মজিয়াছে চিত।
তিলাঞ্জলী কুলে শীলে দিনু সুনিশ্চিত।।
কি মোর কুলের লাজে কিবা লোক ভয়।
এখনি যাইব চলি যথা শ্যামরায়।।
কি মোর শরীরে কাজ এ শূন্যজীবনে।
কেমনে দেখিব আমি মুরলীবদনে।।
বৃথা নিবারণ মোরে না কর ললিতে।
বুঝিতে নারহ কিবা দুঃখ মোর চিতে।।
পায় ধরি বলি সই ছাড় মোরে পথ।
বিলম্ব হইলে জান ঘটিবে বিপদ।।’’

(৫)


মনেতে চিন্তিয়া, যুকতি করিয়া, স্বরূপ বলিছে বাণী।
আছে এত বেলা, না হও উতলা, বলি শুন কমলিনী।।
জটিলা মুখরা, কুটিলা প্রখরা, এখনি লাগাবে দ্বন্দ্ব।
কত না গঞ্জনা, সহিবে যাতনা, এখনি বলিবে মন্দ।।
শুনিতেই মাত্র, প্রভু গোরারায়, জটিলা কুটিলা বোল।
চুপে চুপে গিয়া, গৃহে প্রবেশিয়া, নেত্রে ঘন বহে লোর।।
বিধিরে ধিক্কারি, প্রভু গৌরহরি, বিলাপয় মনে মনে ।
বিধি নিরবোধ, নাহি বোধাবোধ, ভাবাভাব নাহি জানে।।
শ্যাম-রূপরাশি, হেরি দিবানিশি, মনে ছিল বড় সাধ।
মোরে নারীকুলে, জনম করাইয়া, তাহে পাড়িয়াছে বাধ।।
তাহে কুলবতী, নবীনা যুবতী, শাশুড়ী ননদ জ্বালা।
কত ছলা করি, দিবস শর্ব্বরী, হেরিতে চিকন-কালা।।
এবারে মরিয়া, জনম লইব, ধরিব পুরুষ তনু।
যখনে ইচ্ছিব, তখনি দেখিব, যাইয়া নন্দের কানু।।
কাল-ভুজঙ্গিনী, সম ননদিনী, শাশুড়ী ব্যাঘ্রীর পারা।
কতই ঝুরিব, অন্তরে অন্তরে, হেরিতে দুকুল-চোরা।।
গুমরিয়া কাঁদি, মুঞি নিরবধি, ফুকরি কাঁদিতে নারি।
তুষানল যেন, মরম বেদনা, আর না সহিতে পারি।।
বলিতে বলিতে, ছয় উছলিত, গোরার নয়ন-লোর।
অঝোরে ঝরয়, নিবারণ নহে, রাধাভাবে হয় ভোর।।

(৬)

ভাবের আবেগ প্রভুর সহনে না যায়।
দণ্ডে দণ্ডে উঠিয়া আকোশ-পানে চায়।।
মুহূর্ত্তেক শতযুগ-সম করি মানি।
কতক্ষণে অস্তমিত হয় দিনমণি।।
ভিতরে বাহিরে কোথা সোয়াথ না পায়।
কভু অধোমুখে বসি করে হায় হায়।।
কভু অধোমুখে বসি করে হায় হায়।।
কভু পূর্ব্বমত বেগে উঠি চলি যায়।
বহু প্রবোদিয়া স্বরূপ প্রভুরে রহায়।।
কভু উর্দ্ধ্ব’ দৃষ্টে রহে দুই কর্ণ ডারি।
হৃদয় ভরিয়া শুনে শ্যামর বাঁশরী।।
তিলে তিলে শতগুণ বাঢ়ে ব্যাকুলতা।
দেখিয়া স্বরূপে মনে পায় বড় ব্যতা।।
হেনকালে অস্তাচলে গত দিবাকর।
শারদ-প্রদোষ আবির্ভব ধরাতল।।
সন্ধ্যা আগমনের সব পারিষদগণ।
ক্রমে ক্রমে প্রভু পাশে কৈলা আগমন।।
শ্রীপাদ নিতাই আর রায় রামানন্দ।
শ্রীবাসাদি করি যত ছিলা ভক্তবৃন্দ।।
আর যত ভক্তগণ বাহিরে থাকিলা।
গম্ভীরাতে নিত্যানন্দ রামরায় গেলা।।
প্রভুর দেখিয়া ভাব নিতাই উল্লাস।
ধীরে ধীরে দুই জনে বসে প্রভুপাশ।।
দোঁহারে দেখিয়া প্রভুর উৎকণ্ঠা বাঢ়য়।
অনঙ্গ মঞ্জরী বিশাখিকা ভাব হয়।।
আগ্রহে পুছয়ে ‘‘তুমি সব ছিলা কতি।
পরাণ রাখহ মোর করিয়া যুকতি।।
শ্যামের বিচ্ছেদানলে দগ্ধ হয় তনু।
ত্বরায় মিলাহ মোরে নন্দসুত কানু।।
বলিতে বলিতে প্রভুর ভাব উথলিলা।
দোঁহার গলা ধরি উচ্চে কাঁদিতে লাগিলা।।
সখী-কণ্ঠ ধরি কাঁদে আকুল অন্তর।
কাঁহা মোর প্রাণসখা শ্যাম নটবর।।
কাঁহা মোর কানু বলি হয় কণ্ঠরোধ।
সখীগণে মিলি করে প্রভুরে প্রবোধ।।’’

(৭)

‘‘বহুদিন পরে, গোরার অন্তরে, পূরবের ভাবোদয়।
শ্যাম-অভিসারি, যাইতে বিচারি, আনন্দে মাতিয়া রয়।।
বরজ-রমণী, রাই বিনোদিনী, সাজেতে সাজিতে আশ।
নিপুণা সখীরে, আদেশিছে ধীরে, মনে মনে মহোল্লাস।।
ক্রন্দন সম্বরি, বলে গৌরহরি, সখীগণে সম্বোধিয়া।
শ্যাম-অভিসারে, যাইব সত্বরে, দেহ মোরে সাজাইয়া।।
যতন করিয়ে, বেণী বিনাইয়ে, দুলাইহ পৃষ্ঠদেশে।
মালতীরে হারে, তাহে থরে থরে, সাজাইহ চউপাশে।।
কুঙ্কুমের বিন্দু, কপোলে রচহ, সীন্দুরের বিন্দু পাশে।
চন্দনে চর্চ্চিত, কর সর্ব্ব অঙ্গ, পরাইহ শুভ্রবাসে।।
কুসুম রচন, করি আভরণ, সাজাইহ যথাস্থানে।
আমি,–শ্যাম-নটবরে, নবীন-নাগরে, মিলিব গহন-বনে।।
সুবাসিত বারি, সুবর্ণের ঝারি, ভরি লহ মোর সাথে।
তাম্বূলাদি যত, উপহার সব, নই চল অলক্ষিতে।।
এতেক বলিয়া, চলিল উঠিয়া, অভিসারিকার ভাবে।
যেন,–নিকুঞ্জ-ভবনে, শ্যাম-দরশনে, চলে যাই অনুরাগে।।’’

(৮)

‘‘কমলিনী-ভাবে গোরা চলে অভিসারে।
অলক্ষিতে সশঙ্কিতে গমন স-ধীরে।।
কাশী-মিশ্র-বাটী ছাড়ি সমুদ্রের পথে।
অভিসারে যায় গোরা টোটা—গোপীনাথে।।
ভক্তগণ আপনারে সহচরী মানি।
যেন,– রাইয়ের ঘিরিয়া চলে বরজ-রমণী।।
নির্ম্মল শারদ নিশি ফূল্ল চন্দোদয়।
সুশীতল মন্দ মন্দ বহিছে মলয়।।
পুষ্পোদ্যানে চতুর্দ্দিকে কুসুম বিকাশ।
জ্যোৎস্নাময়ী ধরা যেন পরা শুভবাস।।
তপ্ত-স্বর্ণবর্ণ তনু লিপ্ত মলয়জে।
লাজে পূর্ণচন্দ্র বুঝি রাজে ধরামাঝে
অঙ্গের ছটায় দীপ্তি পায় নিশাপতি
মন্থরে চলয়ে শ্যাম-অনুরাগে মরি
দক্ষিণে নিতাই চলে বামেতে স্বরূপ
গোরা অভিসার করে অতি অপরূপ
আগে আগে রামরায় বিশাখার ভাবে
নিকুঞ্জের পথে পথে যায় অনুরাগে।।
চতুর্দ্দিকে ভক্তগণ মণ্ডলী করিয়া।
শ্যামগুণ গাই চলে ধনীরে ঘিরিয়া।।
সমুদ্রের পথে নাহি লোক গতাগতি।
চন্দ্রকরে বালুরাশি শোভা পায় অতি।
সমু্দ্র নিরখি প্রভুর যমুনা ………….
নিতাই-স্বরূপ-গলে তুলি দুই কর।
বিবশ হইয়ে চলে গোরা নটবর।।’’

(৯)

বিমল হেম জিনি, তনু অনুপাম রে,
তাহে শোভে নানা ফুলদাম।
কদম্বকেশর জিনি, একটী পুলক রে,
তার মাঝে বিন্দু বিন্দু ঘাম।।
জিনি মদমত্ত-হাতী, গমন মন্থর অতি,
ভাববেশে ঢুলি ঢুলি যায়।
অরুণ বসন ছবি, যেন প্রভাতের রবি,
গোরা-অঙ্গে লহরী খেলায়।।
চলিতে না পাারে গোরা, চাঁদ গোসাঞি গো,
বলিতে না পারে আধ বোল।
ভাবেতে অবশ হইয়া, হরি হরি বলিয়া,
……….নিত্যানন্দে কোল।।’’

অনঙ্গ মঞ্জরী বোধে
মিলাইয়া দাও বলে
(১0)

ধরায়ে পুছে প্রভু বিশাখিকা সই।
কত দূরে শ্যামের নিকুঞ্জ-নিলয়।।
……… আমি অবশ সর্ব্বাঙ্গ।
…….. পায় গোরা শ্যাম-অঙ্গ-গন্ধ।।
…… যেন পাইলা শরীরে।
……….ধীরে ধীরে।।

(১১)

‘‘ওই গোরারায়—
শ্রীরাধাভাবে, দাঁড়ায়ে গোপীনাথে চায় রে ।।
গিয়ে গোপীনাথ-আগে, দেখে গোরা অনুরাগে রে।
ভাবাবেশে ওষ্ঠাধর ঈষৎ কাঁপয় রে।।
প্রণয়-মানেতে ভোলা, অপাঙ্গে নেহারে কালা রে।
নীরবে দাঁড়ায়ে থাকি, কিছু না বলয়ে রে।।
কভু দৈন্যে করে স্তুতি, বলে তুমি প্রাণপতি হে।
তোমা না দেখিলে মোর জীবন সংশয় হে।।
বিষাদেতে গোরারায়, কভু করে হায় হায় রে ।
মুঞি অভাগিনী নারী, কিসে তোমা পাই হে ।।
নয়নে বহিছে ধারা, বলে কানু চিতচোরা হে ।
আমি,–তব-পদে ক্রীতদাসী, রাখ রাঙ্গা পায় হে।।
আমি নারী পরবশ, তুমি মোর সরবস হে।
হিয়া-মাঝে থুয়ে তোমা, জীবন জুড়াই হে।।
শ্যাম-কলঙ্কের ডালি, মাথে করি বনমালী হে।
মনে হয় সদা, শ্যামকলঙ্কিনী হই হে।।
শ্রেষ্ঠ মানি অনুরাগে, আলিঙ্গহ সভা আগে হে।
কিম্বা অদর্শনে কর ব্যথিত হৃদয় হে।।
কিবা যথা তথা করু,তুমি লম্পটের গুরু হে।
তভু প্রাণনাথ মম, অন্য কেহ নয় হে।।
আত্ম সমর্পণ করি, গোপীনাথে গৌরহরি রে।
রাধাভাবে অনিমিখে, দাঁড়াইয়া রয় রে।।’’

১২

‘‘শ্যাম-রূপ নিরখিতে গোরা নটরায়।
ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিম ঠামে আপনি দাঁড়ায়।।
চঞ্চল অপাঙ্গে বামে পুনঃ পুনঃ হেরে।
দেখিয়া নিতাই ভাব বুঝিল অন্তরে।।
সুবেশ করিয়া শীঘ্র গদাধরে আনি।
বাম পাশে মিলায় নিতাই গুণমণি।।
দেখি ভক্তগণ করে জয় জয় ধ্বনি।
মণ্ডলী করিয়া নৃত্য রচিলা তখনি।।’’

১৩

শোভার,–বলিহারি যাই রে।
গৌর গদাধরে, দাঁড়ায়ে একাধারে ওই রে।।
কণ্ঠে ভুজে মিশামিশি, মোরা তাই ভালবাসি রে।
তড়িতে তড়িতে যেন, জড়িত আছয় রে।।
অপাঙ্গে গৌরাঙ্গ রায়, গদাধরে নেহারয় রে।
দুহুঁ দোঁহা দেখি প্রেমে, আনন্দে মাতয় রে।।
দেখি অপরূপ রূপ, ভক্তগণ রসকূপ রে ।
প্রেমের সাগরে ডুবে, সঙ্গেতে নিতাই রে।।
গদাধর-হৃদি-মাঝে, প্রেম-সরোবর সাজে রে।
তাহে রাজহংস গোরা, সুখে সন্তরায় রে।।
দেখ্‌রে আঁখি আঁখিভরি, গদাধর-গৌরহরি রে।
যুগল-মাধুরী হেরি, মোরা ধন্য হই রে।।
জন্মে জন্মে যেন মোরা, পাই গদাধর-গোরা রে।
ওই,– গদাই-গৌর-যুগল-পদে, পরাণ বিকাই রে।।’’


—০—

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ