‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
নরোত্তম প্রেমের মূরতি।’’
ও মোর করুণাময়—শ্রীঠাকুর মহাশয়
গৌর-প্রেমের মূরতি হয়—শ্রীঠাকুর মহাশয়
তাঁর পুত্র নরোত্তম বিদিত সর্ব্বত্র।।’’
নরোত্তমের জনমের—বড়ই রহস্য-কথা
তথা রূপ-সনাতন-গোস্বামীর স্থিতি।।
সন্ন্যাস করিয়া প্রভু নীলাচলে গিয়া।
বৃন্দাবনে চলে প্রিয়-ভক্তে প্রবোধিয়া।।
গৌড়দেশ-পথে হইল প্রভুর গমন।
না ছাড়ে প্রভুর সঙ্গ প্রিয়-ভক্তগণ।।
প্রভুর দর্শনে লক্ষ লক্ষ লোক ধায়।
ঐছে রামকেলি আইলা প্রভু গৌর-রায়।।
একদিন প্রভু নিজ-প্রিয়গণ লইয়া।
নাচে সঙ্কীর্ত্তনে মহাপ্রেমে মত্ত হৈলা।।
নিরখিয়া শ্রীখেতুরী-গ্রাম-দিশা-পানে।
অদ্ভুত আনন্দ-ধারা বহে দু’নয়নে।।’’
গৌর ভাসে নয়ন-ধারায়
খেতুরীগ্রাম-পানে-চায়—গৌর ভাসে নয়ন-ধারায়
নরোত্তম বলিয়া ডাকয়ে বারে বারে।
ভক্ত-বাৎসল্যেতে স্থির হইতে না পারে।।’’
রামকেলি-গ্রাম হতে—নরু নরু বলি’ ডাকে
খেতুরী-গ্রামে পানে চেয়ে—নরু নরু বলি’ ডাকে
সঙ্কীর্ত্তন-প্রেমাবেশে—নরু নরু বলি’ ডাকে
রামকেলি হতে গৌর—নরোত্তম আকর্ষিলা
ও নরু বলি’ ডাকিয়া—নরোত্তম আকর্ষিলা
তানে নিজ-প্রেম রাখবে বলে—ডাকে নরু নরু বলে
চেয়ে খেতুরী-গ্রাম-দিশা-পানে—ডাকে নরু নরু বলে
‘চেয়ে খেতুরী-গ্রাম-দিশা-পানে’—
নরুর আবির্ভাব-স্থান সেইখানে—তাই,–চেয়ে খেতুরী-গ্রাম-দিশা-পানে
নরু নরু ডাক শুনে
পরাণ-গৌরাঙ্গ-মুখে—নরু নরু ডাক শুনে
কত না আদর-মাখা—নরু নরু ডাক শুনে
করয়ে হঙ্কার মহা-আনন্দ-হিয়ায়।।’’
অপূর্ণ-লীলা পূর্ণ হবে জেনে—নিতাই-চাঁদের আনন্দ মনে
আনন্দ-কন্দ-নিত্যানন্দের—আনন্দ আর ধরে না
নরোত্তম নাম শুনে—আনন্দ আর ধরে না
প্রাণের প্রাণ-গৌরহরির—শুধু কেবল ডাকা নয়
প্রেমে মত্ত পদ্মাবতী বাঢ়ীতে লাগিল।।
প্রভু কহে পদ্মাবতী ধর প্রেম লহ।
নরোত্তম-নামে প্রেম তারে তুমি দিও।।
নিত্যানন্দ-সহ প্রেম রাখিল তোমা-স্থানে।
যত্ন করি’ ইহা তুমি রাখিবা গোপনে।।’’
দিলাম আমার প্রেম-সম্পতি—এই,–ধর লও পদ্মাবতী
আমার,–নিজ-প্রেম দিলাম তোমারে—রেখো অতি-যতন করে
তোমা-অবগাহনে—আমার,–নরু এলে দিও তারে
শ্রীখেতুরী-গ্রাম-সন্নিকটে—এখনও তার নিদর্শন আছে
পদ্মাবতী-তীরে তমাল-তরু-তলে—এখনও তার নিদর্শন আছে
প্রেমতলী-ঘাট বলে—এখনও তার নিদর্শন আছে
জন্মিলেন নরোত্তম ভক্তি প্রকাশিতে।।
ঐছে ভাগ্যবতী নাই নারায়ণী সম।
যাঁর গর্ভে জন্মিলা ঠাকুর নরোত্তম।।
প্রকটের কালে যে হইল চমৎকার।
বাহুল্যের ভয়ে এথা নাহি বর্ণিবার।।
গৌর নিত্যানন্দাদ্বৈতগণের সহিতে।
নৃত্য কৈলা নারায়ণী দেখিলা সাক্ষাতে।।’’
নরোত্তমের আবির্ভাবকালে—সপার্ষদে গৌর নাচে
নরোত্তমের প্রকটকালে—নিতাই গৌর নাচে হেলে দুলে
জিনিয়া কনক-দেহ-জ্যোতি।।’’
‘‘দিনে দিনে বাড়ে নরোত্তম চন্দ্র-প্রায়।
পুত্র-মুখ দেখি’ মাতা বিহ্বল সদায়।।’’
গৌর-প্রেমের মুরতি পুত্র হেরে—প্রেমধারা বহে দুনয়নে
তাহা এক-মুখে কহিতে কি সাধ্য হয়।
পুত্র-মুখে অন্ন দেন যতন করিয়া।
নাহি খায় অন্ন, রহে মুখ ফিরাইয়া।।
সেই-মুখে দিতে তিঁহ খাইলা হর্ষ হৈয়া।।
এইরূপে হইলেন শ্রীঅন্ন-প্রাশন।
কতদিন-পরে হইল শ্রীচূড়াকরণ।।
নরোত্তমে যেই বিদ্যা যে জন পড়ায়।
তাহার সন্দেহ ঘুচে ঞিহার কৃপায়।।
সর্ব্ব-প্রকারেতে যোগ্য দেখিয়া পুত্রেরে।
বিচার করয়ে সদা আনন্দ-অন্তরে।।’’
গোরা-গুণ শুনি’ সদা ঝুরে।’’
‘‘শ্রীখেতুরী-গ্রামে এক প্রাচীন-ব্রাহ্মণ।
নাম তার কৃষ্ণদাস কৃষ্ণ-পরায়ণ।।
তেঁহো নরোত্তম বিনা নারে স্থির হৈতে।
কৃষ্ণসেবা সারি’ যান দেখিতে নিভৃতে।।
নরোত্তম তাঁরে অতি-আদর করিয়া।
আসনে বসান ভূমে পড়ি প্রণমিয়া।।
প্রভু-ভক্তগণের বৃত্তান্ত নিবেদয়।
তেঁহো সব পৃথক পৃথক করি’ কয়।।
চৈতন্যের আদি-মধ্য-অন্ত্য-লীলামৃত।
ক্রমে শুনাইলা কিছু হৈয়া সাবহিত।।
প্রসঙ্গে কহয়ে শ্রীনিবাসাচার্য্য-কথা।
যেরূপে হইল জন্ম জন্মিলেন যথা ।।
শ্রীনিবাসাচার্য্যের প্রসঙ্গ শুনিতে।
স্বাভাবিক প্রেমের উদয় হল চিতে।।
নরোত্তম ব্যগ্র হইয়া চিন্তে মনে মনে।
না জানি ইহার সঙ্গ পাব কতদিনে।।’’
শ্রীনিবাস সঙ্গে নেবে—কতদিনে কৃপা
না ভায় ভোজন নিশি পোহায় জাগিয়া।।’’
কতদিনে কৃপা হরে
শ্রীনিবাস সঙ্গে নেবে—কতদিনে কৃপা
না ভায় ভোজন নিশি-পোহায় জাগিয়া।।’’
কতদিনে কৃপা হবে
শ্রীনিবাস-সঙ্গ হবে—কতদিনে কৃপা হবে
নরোত্তম-প্রতি বলে হাসি মন্দ মন্দ।।
ওহে নরোত্তম এই-রজনী-প্রভাতে।
গৌরাঙ্গ-গচ্ছিত-প্রেম পাইবে পদ্মাতে।।
প্রভাতে উঠিয়া নরোত্তম পদ্মা-মুখে।
নিত্যানন্দ-আদেশে ছুটিলেন মহাসুখে।।
প্রেমভরে পদ্মাবতী নরোত্তমে পাইয়া।
হাতে তুলি দিল প্রেম আবিষ্ট হইয়া।।’’
গৌর-প্রেম মূর্ত্তিমান হয়ে—নরোত্তমে আলিঙ্গন কৈল
নরোত্তম প্রেমে উনমত হল—নরোত্তমে আলিঙ্গন কৈল
পূর্ব্বে ছিল শ্যামবর্ণ-নরোত্তম হৈল গৌরবর্ণ
গৌরপ্রেম-মদিরা পানে—নরোত্তম হৈল গৌরবর্ণ
পাষাণ গলয়ে তাহা করিলে শ্রবণ।।
হারাইলাম পুত্র মোর কাঁদে পিতামাতা।
রোদন করয়ে দোঁহে হেট করি’ মাথা।।
বলে– ‘‘শুন শুন ওরে বাছা এমন বা কেনি।
কি দুঃখে কাঁদহ বাপু কহ দেখি শুনি।।’’
পদ্মাবতী-স্নানে গেলে
সেই হৈতে প্রাণ মোর এমন হইল।।
কহিতে কহিতে দেহে প্রেম উপজিল।
অশ্রুজলে দেহ-সহিত বসন ভিজিল।।
‘‘ক্ষণে ডাকে প্রাণপাথ গৌরাঙ্গ বলিয়া।
পড়িলা প্রাঙ্গণে আসি আছাড় খাইয়া।।
পুত্রের বৈরাগ্য-ক্রিয়া দেখি’ ক্ষণে ক্ষণে।
কৃষ্ণানন্দ-রায় মহা-চিন্তাযুক্ত মনে।।
সতত রক্ষক রাখিলেন পুত্র-পাশে।
তথাপিহ নিরন্ত চিত্তে শঙ্কা বাসে।।
নরোত্তম বন্দীপ্রায় চিন্তে মনে মনে।
না দেখি উপায় গৃহ ছাড়িব কেমনে।।
উর্দ্ধবাহু করিয়া ডাকয়ে বার বার।
প্রভু গণ-সহ মোরে করহ উদ্ধার।।’’
গণ-সনে প্রাণগৌর আমার—মায়া-বন্ধন ঘুচাও আমার
সংসার-হতে কর পার—মায়া-বন্ধন ঘুচাও আমার
স্বপ্নচ্ছলে সাক্ষাৎ হইলা গৌররায়।।
দুইবাহু পসারি’ করেনি আলিঙ্গন।
স্নেহ-পরিপূর্ণ কহেন মধুর-বচন।।
ওহে নরোত্তম এই দেখ বিদ্যামানে।
ধরিতে নারিয়ে হিয়া তোমার ক্রন্দনে।।
চিন্তা না করিহ শীঘ্র বৃন্দাবন যাবে।
মোর প্রিয়-লোকনাথ-স্থানে শিষ্য হবে।।
ঐছে বহু কহিতেই নিদ্রা হৈল ভঙ্গ।
প্রভু-অদর্শনে বাড়ে দুঃখের তরঙ্গ।।
ব্যাকুল হইয়া ভূমে পড়ি গড়ি যায়।’’
হা,–চিতচোর-চূড়ামণি—এই,–দেখা দিলে কোথা লুকালে
স্বপ্নচ্ছলে প্রভু গণ-সহ দেখা দিয়া।
প্রিয়-নরোত্তমে স্থির কৈল প্রবোধিয়া।।
এথা নরোত্তমের জনক আকস্মাৎ।
রাজকার্য্যে গৌড়ে গেলা বহুলোক-সাথে।।
নরোত্তম জানি শুভক্ষণ সেইক্ষণে।
প্রকারে বিদায় হৈলা জননীর স্থানে।।
পরম-সুবুদ্ধি সর্ব্বমতে বিচারিলা।
রক্ষকে বঞ্চিয়া সঙ্গোপনে যাত্রা কৈলা।।’’
আহার নাই নিদ্রা নাই—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
বৃক্ষতলে পড়ি রহে হৈয়া অচেতন।।
দুগ্ধাভাণ্ড লৈয়া এক-বিপ্র গৌরবর্ণ।
বলেন,–নরোত্তম এই দুগ্ধ করহ ভক্ষণ।।
দুগ্ধ রাখি’ সে ব্রাহ্মণ অন্তর্দ্ধান হৈলা।
পথশ্রমে আন্ত দেহ অতি নিদ্রা গেলা।।
সনাতন রূপ দোঁহে আইলা রাত্রি-শেষে।
বক্ষে হস্ত দিয়া কহে ঘুচিলা সব-ক্লেশে।।
শুন শুন নরোত্তম দুগ্ধ কর পান।
শ্রীচৈতন্য-প্রভু আসি দুগ্ধ কৈল দান।।
তোমা দেখিবারে আইলাম দুই-ভাই।
চল চল নরোত্তম বৃন্দাবন যাই।।
এইকালে নরোত্তমের হইল চেতন।
তিনের বিচ্ছেদে বহু করিলা ক্রন্দন।।’’
হা প্রভু রূপ সনাতন
হা প্রাণ শচীনন্দন—হা প্রভু রূপ সনাতন
সহিতে না পারি দোঁহে নিকটে আইলা।।
সাক্ষাৎ দর্শন পাইল অঙ্গের সৌরভে।
দিক্ নিহারিতে চিত্ত গদগদ-ভাবে।।
সর্ব্বতীর্থ দেখি’ নরোত্তম অল্পদিনে।
মনের উল্লাসে প্রবেশয়ে বৃন্দাবনে।।’’
গমন করিলা ব্রজপুরে।।’’
‘‘প্রথমে শ্রীমথুরা বিশ্রাম-ঘাট গেলা।
শ্রীযমুনা-স্নান করি’ তথাই রহিলা।।
প্রহরেক রাত্রি গেল হইল নির্জ্জন।
প্রেমাবেশে করেন শ্রীনাম-সংকীর্ত্তন।।
হেনই সময় এক-বিপ্র মথুরার।
পরম-বৈষ্ণব তেঁহ অতি শুদ্ধাচার।।
অপূর্ব্ব-সামগ্রী কৃষ্ণে ভোগ লাগাইয়া।
নরোত্তমে ভুঞ্জাইলা স্নেহাবিষ্ট হৈয়া।।
ব্রজের বৃত্তান্ত নরোত্তম জিজ্ঞাসয়।
কাতর-অন্তরে বিপ্র বিবরিয়া কয়।।
রঘুনাথ কাশীশ্বর রূপ সনাতন।
সঙ্গোপন হৈলা শুনি’ করয়ে ক্রন্দন।।’’
হায় হায় কি হল বলে—নরোত্তম লুটায় ভূমিতলে
নরোত্তমে কোলে করি’ কাঁদিলা বিস্তর।।
অনেক প্রসঙ্গে প্রায় রাত্রি শেষ হইল।
প্রভু-ইচ্ছামতে দোঁহে নিদ্রা আকর্ষিল।।
স্বপ্নচ্ছলে দেখা দিলা রূপ সনাতন।
রঘুনাথ-ভট্ট কাশীশ্বর চারিজন।।
কহিলা অমৃতময় প্রবোধ-বচন।
ভাগ্যবন্ত বিপ্র কিছু করিল শ্রবণ।।
হইল প্রভাত নিশি দেখি’ বিপ্রবর।
নরোত্তম লইতে চাহেন নিজঘর।।
নরোত্তম চলে প্রণমিয়া বিপ্র-পায়।’’
যাঁরা আছেন তাঁদের দেখি সত্বর—আমার ভাগ্য ভাল নয়
নরোত্তম চলিতে চিন্তয়ে মনে মনে।
মো-হেন-অযোগ্য আনিলেন বৃন্দাবনে।।’’
আমায়,–বৃন্দাবন দেখাইলে—হা গৌর কি কৃপা করলে
এলাম ত’ বৃন্দাবনে
মো-হন-পতিতে কি করিবেন আত্মসাৎ।।’’
লোকনাথ-পদাশ্রয় পাব—হবে কি মোর এমন-ভাগ্য
শ্রীজীব-গোস্বামী-আদি প্রেমের আলয়।।
এ-সবার পাদপদ্ম ধরিব কি মাথে।
সবে কি করিবে কৃপা মো-হেন-অনাথে।।
শ্রীনিবাস-আচার্য্য প্রেমের মূর্ত্তি যেঁহ।
মো-হেন দীনে কি প্রীতি করিবেন তেঁহ।।
এত কহিতেই নেত্রে বহে প্রেমজল।
চলিতে নারয়ে অঙ্গ করে টলমল।।’’
লোকনাথে আত্ম সমর্পিল।
কৃপা করি’ লোকনাথ, করিলেন আত্মসাৎ,
রাধাকৃষ্ণ-মন্ত্র দীক্ষা দিল।।’’
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের—অপরূপ ব্যবহার
লোকনাথের কৃপা পাবার তরে—অপরূপ ব্যবহার
সঙরিলে প্রাণ কেঁদে উঠে—কি বলব সে সেবার কথা
শিষ্য করব না বলে—লোকনাথের সঙ্কল্প মনে
করেছে আত্ম-সমর্পণ
শ্রীলোকনাথের শ্রীচরণে—করেছে আত্ম-সমর্পণ
প্রাণগৌর ইঙ্গিত পেয়ে—করেছে আত্ম-সমর্পণ
লোকনাথের প্রতিজ্ঞার কথা—ব্রজে আসি’ শুনিলেন
তবে কি সাধ পূর্ণ হবে না
আমি কি কৃপা পাব না—তবে কি সাধ পূর্ণ হবে না
স্বপ্ন ছলে দেখা দিয়ে—প্রভু আমায় আজ্ঞা দিলেন
লোকনাথ-পদাশ্রয় করিতে—ব্রজবনে পাঠাইলেন
অঙ্গীকার কি করবেন না
প্রাণগৌর-প্রিয় প্রভু লোকনাথ—অঙ্গীকার কি করবেন না
অঙ্গীকার করবেন না লোকনাথ-গোসাঞি—নরোত্তমের,–আহার নাই নিদ্রা নাই
প্রভু-লোকনাথের কৃপা পাব কেমনে-নরোত্তম ভাবে মনে মনে
লোকনাথের কৃপা পাবার তব—এক উপায় স্থির করিলেন
শ্রীলোকনাথ-প্রভুর—আরম্ভিলেন শোচ্য-সোব
প্রভু-শ্রীলোকনাথের—শৌচস্থান উপস্কার করে
নিতুই,–নিশাভাগে গোপনে গিয়ে—শৌচস্থান উপস্থার করে
নিদ্রা নাই নরোত্তমের—শৌচস্থান উপস্কার করে
সম্মার্জ্জনী করে ধরে—শৌচস্থান উপকার করে
নরোত্তম কাঁদেন ফুকারি
সম্মার্জ্জনী শিরে ধরি’—নরোত্তম কাঁদেন ফুকারি’
‘সম্মর্জ্জনী শিরে ধরি’—
আর বার বুকে ধরি’—সম্মর্জ্জনী শিরে ধরি’
কতদিনে কৃপা হবে বলি’—নরোত্তম কাঁদেন ফুকারি’
শৌচে যাবার কালে
দেখি’ শৌচস্থান উপকৃত
মনে মনে ভাবিলেন
কে এমন কার্য্য করে
বুঝি কোন ব্রজবাসী
আমায় করেন অপরাধী—বুঝি কোন ব্রজবাসী
সন্ধান নিতে হবে
কে এমন কার্য্য করে—সন্ধান নিতে হবে
অপরাধ হতে বাঁচতে হবে—সন্ধান নিতে হবে
চলিলেন শৌচস্থানে
কারণ-অনুসন্ধান-তরে—চলিলেন শৌচস্থানে
শৌচস্থান উপস্কার করে
কোন-জন সম্মার্জ্জনী-দ্বারে—শৌচস্থান উপস্কার করে
সম্মার্জনী বুকে ধরি’
ব্যাকুল হয়ে কাঁদছেন
কতদিনে কৃপা হবে বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদছেন
ঠাকুর শ্রীলোকনাথ—দূর হতে দেখতে পেয়ে
ডাকিলেন তারে প্রেমস্বরে
কে বট বাপু তুমি
এমন কার্য্য কেন কর—কে বট বাপু তুমি
পড়িলেন শ্রীচরণ-তলে
প্রভু তোমার ক্রীতদাস বলে—পড়িলেন শ্রীচরণ-তলে
লোকনাথ তখনে—চিনিতে পারিলেন
এ ত’ নরোত্তম বলে—চিনিতে পারিলেন
সঙ্কল্পের বাঁধ ভেঙ্গে গেল—অমনি হৃদয় গলে গেল
এস বাপ নরোত্তম বলে—নরোত্তমে কৈলেন কোলে
কোন-সাধনে গুরু-কৃপা মিলে—অনুভব কর ভাই রে
এমন করে সেবা না করিলেন—শুধু-কি,–মুখের কথায় গুরু-কৃপা মিলে
প্রেমের মূরতি নরোত্তমের দ্বারে—গৌরহরি দেখালেন জগতেরে
শ্রীগুরু-কৃপা মিলে কেমন করে—গৌরহরি দেখালেন জগতেরে
শ্রীগুরু-সেবার-আদর্শ শ্রীনরোত্তম
এই আদর্শের চিত্র—হৃদিপটে এঁকে লও
ঠাকুর শ্রীলোকনাথ—নরোত্তমে কৃপা কৈলেন
শুভদিনে দীক্ষা দিয়ে—নরোত্তমে কৃপা কৈলেন
ভক্তিশাস্ত্র অধ্যয়ন করাবারে—সঁপে দিলেন শ্রীজীবের করে
প্রাণের সমান করে স্নেহ।’’
গৌরপ্রেমের মুরতি নরোত্তমে—কে,–ভাল না বেসে থাকতে পারে
তথায় শ্রীঠাকুর-মহাশয় নাম হৈল।।
শ্রীগোপালভট্ট-আদি যত বিজ্ঞবর।
নরোত্তমে জানে সবে প্রাণের সোসর।।’’
প্রাণ এক ভিন্ন মাত্র দেহ।।’’
মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে—আগে এসেছেন শ্রীনিবাস
প্রাণ যে কাঁদছে
কতদিনে মিলব বলে—প্রাণ যে কাঁদছে
বৃন্দাবনে আইলেন নরোত্তম—কিছুদিন হইল মিলন
পরস্পর মিললে—দোঁহার কি আনন্দ মনে
দোঁহে,–দোঁহার সনে মিললেন রঙ্গে—যেন,–দরিদ্র পাইল অমূল্য-ধনে
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনের—শ্রীগ্রন্থপাঠ আরম্ভিলেন
শ্রীজীব—গোস্বামীর স্থানে—শ্রীগ্রন্থপাঠ আরম্ভিলেন
ঠাকুর শ্রীশ্যামানন্দ—কিছুদিন পরে এলেন
শ্রীনিবাস-নরোত্তম-শ্যামানন্দ—নিশিদিশি কাঁদে রে
ব্রজবনে নিরজনে—নিশিদিশি কাঁদে রে
পরস্পর গলা ধরে—নিশিদিশি কাঁদে রে
সঙরি গৌরাঙ্গ-গুণে—নিশিদিশি কাঁদে রে
হা রূপ-সনাতন বলে—নিশিদিশি কাঁদে রে
শ্রীরাধাবিনোদ দেখি,’’
প্রভু-লোকনাথ-সেবারত।
ভক্তি-শাস্ত্র অধ্যয়নে, মহামন্দ বাড়ে মনে,
পূর্ণ হৈল অভিলাষ যত।।’’
কি বলব মানস-স্মরণের কথা
কিছু নিদ্রা যান কিছু বাহ্য-বৃত্তি হন।।
বৃষভানু-সুতা সেই কুঞ্জ-মাঝে আসি’।
নরোত্তম-প্রতি বাক্য কহে হাসি’ হাসি’।।
মধ্যাহ্নে আমার কুঞ্জে কৃষ্ণের মিলন।
তাহাঞি অনেক-সেবা করে সখীগণ।।
চম্পকলতার কুঞ্জে ক্ষীর পাক হন।
আজ হৈতে তোমার সেবা দুগ্ধ আবর্ত্তন।।
মোর এই সুখ যাতে কৃষ্ণ সুখী হন।
চম্পক মঞ্জরী বলি’ দিল তোমার নাম।
উঠিয়া বিচার তবে করে মনে মনে।।
বিচার করিয়া মনে যান প্রভু-স্থানে।
যে দেখিলা ভালমতে করে নিবেদনে।।
কম্প স্বেদ রোদন হইল বহুতর।
বাহ্য পাই গোসাঞির আনন্দ অন্তর।।
ধন্য ধন্য নরোত্তম তুমি ভাগ্যবান।
যাঁর পদ প্রাপ্তি তিঁহ কৈল আজ্ঞাদান।।
আজি হৈতে সেবা কর এই নাম তোর।
ইহাতে যতেক সুখ আনন্দ সে মোর।।
সেবা করে নিতিনিতি পরম—উল্লাসে।
একদিন কি হইল কহি তার শেষে।।
মানসে ঠাকুর করে দুগ্ধ আবর্ত্তন।
দর্শন করেন লীলা আনন্দিত মন।।
শুষ্ক কাষ্ঠ আঁচ দেন উথলে বারে বার।
মনে বিচার করেন কিবা করি প্রতিকার।।
পুনর্ব্বার উথলিব হইল যখন।
হস্ত দিয়া সেই দুগ্ধ করিল রক্ষণ।।
হস্ত পুড়ে গেল বাহ্যে তাহা নাহি জানে।
উতরিয়া সেই দুগ্ধ রাখে সেইখানে।।
বাহ্য পাইলে দেখে হাত পুড়িয়াছে।
হায় হায় করে আর কি বিচার আছে।।
গোসাঞিজীর সেবা হইল মোর বাদ।’’
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের–হাত পোড়াতে দুঃখ নাই
কেমন প্রভুর সেবা করব—মনে মনে এই দুঃখ
তথাপিহ নিবেদিতে আসে প্রভু-স্থানে।
দূর হৈতে গোসাঞি দেখিল নরোত্তমে।।
ওঢ়ন-বস্ত্রে হাত ঢাকা করে পরণাম।
প্রভু কহে নরোত্তম আইস সন্নিধান।।
অনেক কাঁদিল গোসাঞি কোলে করি’ তাঁরে।
কিশোরী-কিশোর কৃপা করিল তোমারে।।’’
নরোত্তমে করি’ কোলে—লোকনাথ ভাসেন নয়নজলে
কিশোরী-কিশোর কৃপা কৈল বলে—লোকনাথ ভাসেন নয়নজলে
লোকনাথ,–
শ্রীগৌড়মণ্ডল প্রবেশিলা।’’
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তম—ব্রজ হতে আসবার কালে
গোস্বামী-গণের আজ্ঞায়—ব্রজ হতে আসবার কালে
লোকনাথের পদ ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হা প্রভু লোকনাথ—আর কি দেখা পাব হে
আনন্দেতে মাতোয়ারা
খেতুরীর গ্রামবাসী—আনন্দেতে মাতোয়ারা
ঠাকুর-নরোত্তমে পাইয়া—আনন্দেতে মাতোয়ারা
ভক্ত-গৃহে ভ্রমণ করিলা।।’’
গৌরগণের দর্শন লাগি—ভ্রমিলেন গৌড়মণ্ডলে
‘গৌরগণের দর্শন লাগি’—
গৌরাঙ্গ-লীলাস্থলী আর—গৌরগণের দর্শন লাগি’
কত না কাঁদিলেন
গৌরলীলা সঙরি’—কত না কাঁদিলেন
প্রকট—গৌরগণ যত—কত কৃপা কৈলেন
কোলে করে কাঁদলেন
এস নরোত্তম বলে—কোলে করে কাঁদলেন
গেলেনে শ্রীনীলাচলে
তথায় পাইলেন দর্শন
প্রকট-গৌরাঙ্গগণের—তথায় পাইলেন দর্শন
তাঁদের কৃপা পেয়ে
খেতুরী-গ্রামে অবস্থান-কালে
প্রভু-লোকনাথের ইঙ্গিতে
প্রাণে জাগল বাসনা
প্রকাশিতে বিগ্রহ-সেবা—প্রাণে জাগল বাসনা
সেবে গৌর শ্রীরাধারমণ।
শ্রীবল্লভীকান্ত নাম, রাধাকান্ত রসধাম,
রাধাকৃষ্ণ শ্রীব্রজমোহন।।
এ-ছয় বিগ্রহ যেন, সাক্ষাৎ বিহরে হেন,
শোভা দেখি কেবা নাহি ভুলে।
প্রিয় রামচন্দ্র সঙ্গে, নরোত্তম মহারঙ্গে,
ভাসে সদা আনন্দ-হিল্লোলে।।
নরোত্তম-গুণ যত, কে তাহা বর্ণিবে কত,
প্রেমবৃষ্টি যাঁর সঙ্কীর্ত্তনে।
শ্রীঅদ্বৈত নিত্যানন্দ , গণ-সহ গৌরচন্দ্র,
নাচয়ে দেখিল ভাগ্যবানে।।
ছয়-বিগ্রহ-প্রতিষ্ঠা-দিনে
ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি—ছয়-বিগ্রহ-প্রতিষ্ঠা-দিনে
গৌর-পৌর্ণমাসীতে খেতুরীতে—বয়েছিল আনন্দের পাথার
বীরচন্দ্র সঙ্গে লয়ে—এসেছিলেন মা জাহ্নবা
সবাই ত’ এসেছিলেন
গৌরগণ যাঁরা প্রকট ছিলেন—সবাই ত’ এসেছিলেন
প্রকট-গৌরগণ যত—হয়েছিলেন সমবেত
কি আনন্দ খেতুরী-গ্রামে—গৌরগণের সমাগমে
বিগ্রহ-প্রচিষ্ঠায় খেতুরী-গ্রামে—মহা মহা সম্মিলন
কি বলব নরোত্তমের কথা
আরম্ভিলেন সঙ্গীর্ত্তন
নিজগণ লয়ে নরোত্তম—আরম্ভিলেন সঙ্কীর্ত্তন
এখন যার গরাণ-হাটি নাম—কৈলেন নব-আবিষ্কৃত-কীর্ত্তন
গৌর প্রকট হৈলা গণ-সনে—নরোত্তমের সঙ্কীর্ত্তনে
প্রকট-অপ্রকট-গণ-সন—গৌর নাচলেন আনন্দ-মনে
নরোত্তমের ভক্তি-গুণে—গৌর নাচলেন আনন্দ-মনে
সঙ্গে যাঁরা ছিল সেখানে—সবাই দেখল নয়নে
প্রকট-অপ্রকট-গণ-সনে—প্রাণগৌর কৈল নর্ত্তনে
তাঁদের সনেও নাচলেন
যাঁরা প্রকট-বিহার দেখে নাই—তাঁদের সনেও নাচলেন
শ্রীনিবাস-নরোত্তমের গণ-সনে—তাঁদের সনেও নাচলেন
শ্রীশ্যামানন্দের গণ-সনে—তাঁদের সনেও নাচলেন
মা-জাহ্নবা নরোত্তম—দিলেন ‘ঠাকুর-মহাশয়’ খ্যাতি
লোমকূপে রক্তোদগম দেখি’—দিলেন ‘ঠাকুর-মহাশয়’ খ্যাতি
সঙ্কীর্ত্তনে প্রেমের বিকার দেখি’—দিলেন ‘ঠাকুর-মহাশয়’ খ্যাতি
নরোত্তমে প্রাণগৌরাঙ্গের—অপূর্ব্ব বিহার রে
এস,–অনুভব করি ভাই
শ্রীখেতুরী-ভূমি-মহিমা—এস,–অনুভব করি ভাই
‘শ্রীখেতুরী-ভূমি-মহিমা’—
ঠাকুর নরোত্তমের বিহার-ভূমি—শ্রীখেতুরী-ভূমি-মহিমা
ধন্য শ্রীখেতুরী-ভূমি
যেথা নাচলেন গৌর-গুণমণি—ধন্য শ্রীখেতুরী-ভূমি
‘যেথা নাচলেন গৌর-গুণমণি’—
প্রকট-অপ্রকট-গণ সঙ্গে করি’—যেথা নাচলেন গৌর-গুণমণি
খেতুরী-ভূমি ভাগ্যবতী
নদীয়া নীলাচল ব্রজ হতেও—খেতুরী-ভূমি ভাগ্যবতী
একসঙ্গে বুকে ধরতে—পায় নাই সব-পরিকরে
নদীয়া নীলাচল ব্রজ—পায় নাই সব-পরিকরে
পরণ-গৌরাঙ্গগণে—পায় নাই সব-পরিকরে
তিন-ভূমির পরিকর-সাথে—গৌরের নৃত্যরঙ্গ খেতুরীতে
প্রকট-অপ্রকট-গণ-সাথে—গৌরের নৃত্যরঙ্গ খেতুরীতে
শ্রীখেতুরীর বক্ষোপরে—তিন-ধামের পরিকর নৃত্য করে
লয়ে গোরা-নটবরে—তিন-ধামের পরিকর নৃত্য করে
খেতুরী-গ্রামে হল—অপরূপ বিহার রে
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই
শ্রীখেতুরী-ভূমি-রহস্য—অনুভব কর ভাই
এই ত’ লীলার রীতি—ভূমি ত’ আগে চলে
বিহারী বিহার করবে বলে—ভূমি ত’ আগে চলে
তার আগে ভূমি সেথা ধায়—যেখানে গৌর গৌরগণ যায়
প্রকট-অপ্রকট-গণ যত—সবাই ত’ এসেছিলেন
নদীয়া নীলাচল ব্রজ হতে—সবাই ত’ এসেছিলেন
শ্রীখেতুরী-ভূমিতে—প্রাণগৌর যখন এসেছেন
নদীয়াবাসী-ভক্ত লয়ে—প্রাণগৌরৈ যখন এসেছেন
যখন,–এসেছেন নীলাচলের গণ
তখন,–তাঁদের সঙ্গে এসেছেন
মধুর-নীলাচলে-ভূমি—তখন,–তাঁদের সঙ্গে এসেছেন
তখন,–তাঁদের সঙ্গে এসেছেন
মধুর শ্রীব্রজভূমি—তখন,–তাঁদের সঙ্গে এসেছেন
ধাম ছাড়া তাঁদের স্বভাব নয়—ধাম ছেড়ে তাঁরা আসেন নাই
শ্রীখেতুরী-ভূমি হয়
নদে নীলাচল ব্রজ সমন্বয়—শ্রীখেতুরী-ভূমি হয়
ঠাকুর-নরোত্তমের বিহার-ভূমি—তিন-ভূমির সমন্বয় মানি
নবদ্বীপ নীলাচল ব্রজ-তিন যেন এক হল
শ্রীখেতুরী নাম ধরিল—তিন যেন এক হল
নদীয়া নীলাচল ব্রজলীলা—প্রকট হইল খেতুরীতে
এ যে বাসনা-পূর্ত্তিকারী লীলা—না হবে বা কেন রে
প্রভু-নিত্যানন্দ আমার—নরোত্তম ধরেছে
গৌরলীলার,–অপূর্ণ-সাধ পূরাইতে—নরোত্তম-রূপ ধরেছে
নদীয়া নীলাচল ব্রজ করল একঠাঁই—নরোত্তম-রূপে বিলসি’ নিতাই
বিলাস-নিতাই-এর সাধ পূরাইতে
তিন-লীলা কৈল এক-স্থানেতে—বিলাস-নিতাই-এর সাধ পূরাইতে
তিন-লীলার মূরতি—ঠাকুর-নরোত্তম মহামতি
সে,–তিন-লীলা একঠাঁই ভোগ করে—যে নরোত্তমে হৃদে ধরে
বলিলেন শেষ-কালে
নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—বলিলেন শেষ-কালে
খেতুরীতে নরোত্তমের—বলিলেন শেষ-কালে
যদি ভোগ করতে চাও
তিন-লীলার সমন্বয়—যদি ভোগ করতে চাও
নিতাই-নরোত্তমের শরণ লও—যদি ভোগ করতে চাও
নিতাই-নরোত্তমের পদাশ্রয়ে—খেতুরী-ভূমির শরণ নিলে
তিন-লীলা ভোগ হয় এককালে—খেতুরী-ভূমির শরণ নিলে
জগদ্-গুরু নিত্যানন্দ—এবার এলেন নরোত্তম-রূপে
তিন-সমন্বয়-লীলা ভোগ করাতে—এবার এলেন নরোত্তম-রূপে
ভোগ করাতে,–লীলা-পরিণতির পরিণতি—ঠাকুর-নরোত্তম ধরে শকতি
শ্রীখেতুরী –ভূমিতে নরোত্তম-অদ্যাপিও বিহরিছে
খেতুরীগ্রামে গিয়ে দেখ—এখনও স্মৃতি জাগাইছে
ঠাকুর-নরোত্তমের সেব্য-বিগ্রহ—এখনও স্মৃতি জাগাইছে
নরোত্তমের প্রেম-লীলার—এখনও স্মৃতি জাগাইছে
বৈষ্ণব-সেবনে যাঁর ধ্বনি।
কি অদ্ভুত দয়াবান কারে বা না করে দান,
নির্ম্মল-ভকতি-চিন্তামণি।।
পাষণ্ডী-অসুরগণে, মাতাইলা গোরা-গুণে,
বিহ্বল হইয়া প্রেমরসে।’’
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের-অদ্ভুত প্রকাশ রে
সর্ব্বেশ্বর গৌরহরি—নিজ-মহিমা প্রকাশ কৈলেন
নদীয়া-বিহারে যা হয় নাই—নিজ-মহিমা প্রকাশ কৈলেন
ঠাকুর-নরোত্তমের দ্বারে—নিজ-মহিমা প্রকাশ কৈলেন
নদীয়া—লীলায় গৌরহরি—যার সূচনা করেছিলেন
জগাই-মাধাই-উদ্ধার-লীলায়—যার সূচনা করেছিলেন
কতশত—জগাই মাধাই উদ্ধার হল
প্রাণ-বিশ্বম্ভরের খেতুরী-লীলায়—কতশত,–জগাই মাধাই উদ্ধার হল
খেতুরীগ্রামে নরোত্তম-নামে—বিশ্বম্ভরের অদ্ভুত প্রকাশ
সে না যশ ঘোষে দেশেদেশে।।
কহে নরহরি দীন, হবে কি এমন দিন,
নরোত্তম-পদে বিকাইব।
সঘনে দু’বাহু তুলি, প্রভু-নরোত্তম বলি,
কাঁদিয়া ধূলায় লোটাইব।।’’
প্রেমভকতি-মহারাজ।’’
গৌরপ্রেমের মুরতি নরোত্তমের—প্রাণ-ভরে জয় দাও ভাই
অভিন্ন-নিত্যানন্দ-দেহ—ঠাকুর-নরোত্তমের জয় দাও
শ্রীনিত্যানন্দের দ্বিতীয় প্রকাশ—ঠাকুর-নরোত্তমের জয় দাও
রামচন্দ্র কবিরাজ।।’’
যেমন রাজা তেমনি মন্ত্রী—সেই রামচন্দ্র-কবিরাজ
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের—যাঁর সঙ্গে প্রসঙ্গ শেষ—আশা
প্রেম-মুকুট-মণি’’
প্রেমভক্তি-মহারাজ—ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের
নরোত্তম-শিরে শোভিত-প্রেমমণিতে গড়া মুকুট
অঙ্গ হি অঙ্গ বিরাজ।’’
ভাবভূষণে বিভূষিত
প্রেমভক্তি-মহারাজ নরোত্তম—ভাবভূষণে বিভূষিত
নৃপ-আসনে, খেতুরী মহা বৈঠত,
সঙ্গ হি ভকত-সমাজ।।’’
ভাই রে তোদের পায়ে পড়ি—একবার গিয়ে দেখে এস
পুণ্যভূমি-খেতুরী গ্রামে—একবার গিয়ে দেখে এস
শ্রীনরোত্তমের বিসাস-স্মৃতি—একবার গিয়ে দেখে এস
খেতুরীগ্রামে ভজন-স্থলী—দেখে এই মনে হয়
নৃপ-আসনোপরি—ঐ যেন বসে আছেন
মন্ত্রী-রামচন্দ্র-সনে—ঐ যেন বসে আছেন
লয়ে ভক্ত-প্রজাগণে—ঐ যেন বসে আছেন
প্রেম-ভক্তির পরাকাষ্ঠা—ঐ যেন বসে আছেন
অনুদিন করত বিচার।’’
বিচার করে স্থির করিলেন
গোস্বামীগণের গ্রন্থরাজি—বিচার করে স্থির করিলেন
পরমানন্দ সুখ-সার।।’’
রাধামাধব-যুগল-উজ্জ্বল-রস—এই ত’ পরমানন্দ সুখ-সার
যুগল-ভজয়ে যাঁরা—পরমানন্দে ভাসে তাঁরা
শ্রীহরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—প্রেমভক্তি,–মহারাজের এই ত’ বিষয়
প্রেমভক্তি-মহারাজ—ঠাকুর-নরোত্তম সদাই মত্ত
সঙ্কীর্ত্তন-বিষয়-রসে—ঠাকুর-নরোত্তম সদাই মত্ত
ধর্ম্মাধর্ম্ম নাহি জান।
যোগ-জ্ঞান-ব্রত, আদি ভয়ে ভাগত,’’
সঙ্কীর্ত্তন-বিষয়-রসে—মহারাজের মত্ততা দেখে
তাঁর আনুগত্যে সবাই মা’তল দেখে—মহারাজের মত্ততা দেখে
ভাগবত-ধর্ম্মের প্রচার দেখে—যোগ জ্ঞান ব্রত দূরে ভাগয়ে
আমাদের,–আর কেউ না দিবে ঠাঁই—বলে—এ দেশ হতে পলায়ে যাই
চল ভাই চল চল—এ-দেশে আর না থাকা ভাল
নাম-প্রেম-ধর্মের প্রচার হল—এ-দেশে আর না থাকা ভাল
বলে,–কেউ ত’ আদর করবে না মোদের
ভাগবত-ধর্ম্মের প্রচার হল—বলে,–কেউ ত’ আদর করবে না মোদের
‘ভাগবত-ধর্ম্মের প্রচার হল’—
পরমানন্দ সুখসার—ভাগবত-ধর্ম্মের প্রচার হল
বলে,–কেউ ত’ আদর করবে না মোদের
আমাদের আশ্রয়—আর ত’ কেউ নিবে না
পঞ্চম-পুরুষার্থ-প্রেমা ফেলে—চতুব্বর্গ-প্রয়াসী কেবা হবে
ধূলায় পড়ে কর্ম্ম,জ্ঞান কাঁদে—চতুব্বর্গ-প্রয়াসী কেবা হবে
ভাগবত-শাস্ত্রগণ, যো দেই ভকতি-ধন,
তাক-গৌরব করু আপ।’’
যা’ ভকতি-সিদ্ধান্ত করে—কার সাধ্য খণ্ডন করে
‘যা’ ভকতি-সিদ্ধান্ত করে’—
প্রেমভক্তি-মহারাজ—যা’ ভকতি-সিদ্ধান্ত করে
গরব করে বলে রে
প্রেমভক্তি-মহারাজ—গরব করে বলে রে
জ্ঞানকাণ্ড কর্ম্মকাণ্ড—সকলই বিষের ভাণ্ড
অমৃত বলিয়া যেবা খায়।
নানা-যোদি সদা ফিরে, কদর্য্য ভক্ষণ করে,
তার জন্ম অধঃপাতে যায়।।’’
পঞ্চম-পুরুষার্থ-প্রেম পাবে—যে আমার,–গৌরপদ আশ্রয় করবে
তাক-গৌরব করু আপ।
সাংখ্য মীমাংসক, তর্কাদিক যত,
কম্পিত দেখি’ পরতাপ।।’’
সাংখ্য মীমাংসক তর্কাদি যত—সকলেই নিরাশ হল
ভাগবত-ধর্ম্মের গৌরব দেখে—সকলেই নিরাশ হল
নাম-সঙ্কীর্ত্তনের প্রভাব দেখে—সকলেই নিরাশ হল
আমাদের আর ঠাঁই নাই বলে—সকলেই নিরাশ হল
অভকত-চৌর, দূর হি ভাগি’ রহু,
নিয়ড়ে নাহি পরকাশ।’’
মহারাজের নজরে পড়লে—প্রেমভক্তি দিবে বলে
মহারাজের দৃষ্টি হতে—তারা,–দূরে দূরে পলায়ে যায় রে
পাছে,–ভক্তি-কারাগারে দেয় বলে—তারা,–দূরে দূরে পলায়ে যায় রে
প্রেমের শৃঙ্খল বেঁধে—পাছে,–ফেলে ভক্তি-কারাগারে
দীন-হীন-জনে, দেয়ল ভকতি-ধনে,
বঞ্চিত গোবিন্দ-দাস।।’’
কতকত শতশত—দীনহীন উদ্ধার হল
দুই-লীলায় বঞ্চিত হলাম
পূর্ব্বলীলা পরলীলা—দুই-লীলায় বঞ্চিত হলাম
অদ্ভুত বিহার রে
খেতুরীতে নরোত্তমের—অদ্ভুত বিহার রে
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের—অদ্ভুত প্রকাশ রে
অগণ্য-পুণ্যের একাধার।
সাধনে সাধক-শ্রেষ্ঠ, দয়াতে অতি গরিষ্ঠ,
ইষ্ট-প্রতি ভক্তি চমৎকার।।
এই পঞ্চম চন্দ্রিকা—ঠাকুর-নরোত্তমের কৃত
সিদ্ধ-প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা
সাধ্য-প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা
সাধন-প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা
চমৎকার-প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা
সূর্য্যমণি চন্দ্রমণি—প্রেমভক্তি চিন্তামণি
ত্রিভুবনে অনুপাম, প্রার্থনা গ্রন্থের নাম,
হাট-পত্তন মধুর কেবল।
রচিলা অসংখ্য পদ, হঞা ভাবে গদগদ,
কবিত্বের সম্পদ সে সব।
যেবা শুনে যেবা পড়ে, যেবা তাই গান করে,
সেই জানে পদের গৌরব।।
সদা সাধু-মুখে শুনি, শ্রীচৈতন্য আসি’ পুনি,
নরোত্তমরূপে জনমিলা।’’
গৌরপ্রেম হল মূর্ত্তিমান—হইলা নরোত্তম নাম
জলেতে ভাসাও পুনঃ শিলা।।’’
যদি,–গৌরপ্রেম পেতে চাও সুখে—ঠাকুর-নরোত্তমের গুণ গাও মুখে
সর্ব্বেশ্বর গৌরহরি—নিজ-মহিমা প্রকাশ কৈলেন
ঠাকুর-নরোত্তমের দ্বারে—নিজ-মহিমা প্রকাশ কৈলেন
নদীয়া-বিহারে যা’ হয় নাই—সেই,–নিজ-মহিমা প্রকাশ কৈলেন
পরতত্ত্ব-সীমা—বিশ্বম্ভরের অদ্ভুত প্রকাশ
খেতুরীগ্রামে নরোত্তম-নামে—বিশ্বম্ভরের অদ্ভুত প্রকাশ
নদীয়া-লীলায় গৌরহরি—যার সূচনা করেছিলেন
জগাই-মাধাই-উদ্ধার-লীলায়—যার সূচনা করেছিলেন
কতশত,–জগাই মাধাই উদ্ধার হল
প্রাণ-বিশ্বম্ভরের খেতুরী-লীলায়—কতশত,–জগাই মাধাই উদ্ধার হল
তারপর দুঃখের দিন
হইলেন অদর্শন
রামচন্দ্র শ্রীনিবাস—হইলেন অদর্শন
খেতুরী-গ্রামেতে বসে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদেন নরোত্তম
শ্রীনিবাস-রামচন্দ্রের বিরহে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদেন নরোত্তম
হায় রে,–কিছুই দেখতে পেলাম না
তখন জনম হল না—হায় রে,–কিছুই দেখতে পেলাম না
গৌরের,–প্রকট-লীলা তার আবেশের খেলা—হায় রে,–কিছুই
বিরহেতে হয় পূর্ণ প্রাপ্তি—অপ্রকট-লীলায় অধিক মাধুরী
সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা
এই-কৃপা কর সবে
যেন,–কাঁদি আমরা ব্যাকুল-প্রাণে
পূর্ব্বলীলা-পরলীলার অদশঁনে—যেন,–কাঁদি আমরা ব্যাকুল-প্রাণে
দগ্ধ-হৃদয় জুড়াইবার—আর অন্য উপায় নাই
হেন প্রভু কোথা গেলা আচার্য্য-ঠাকর।।’’
হা,–শ্রীনিবাস কোথা গেলে বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে নরোত্তম
কাঁহা মোর স্বরূপ রূপ কাঁহা সনাতন।’’
ব্রজবনে লয়ে গেলে—কেউ ত’ দেখা দিলে না
কাঁহা দাস রঘুনাথ শ্রীজীব জীবন।।
কাঁহা মোর ভট্টযুগ কাঁহা কবিরাজ।
এককালে কোথা গেলে গোরা নটরাজ।।
পাষাণে কুটির মাথা অনলে পশিব।
গৌরাঙ্গ গুণের নিধি কোথা গেলে পাব।।
সে-সব সঙ্গীর সনে যে কৈল বিলাস।
সে সঙ্গ না পেয়ে কাঁদে নরোত্তম দাস।।’’
ঠাকুর শ্রীনরোত্তম-ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
শ্রীনিবাস-রামচন্দ্রের বিরহে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হিয়া-মাঝে দিয়া দারুণ ব্যথা।
গুণের রামচন্দ্র ছিলা, সেহ সঙ্গ ছাড়ি গেলা,
শুনিতে না পাই মুখের কথা।
পুনঃ কি এমন হব, রামচন্দ্র সঙ্গ পাব,
এই জন্ম মিছা বহি গেল।
যদি প্রাণ দেহে থাক, রামচন্দ্র বলি’ ডাক,
তবে যদি যাও সেই ভাল।।
স্বরূপ রূপ সনাতন, রঘুনাথ সকরুণ,
ভট্টযুগ দয়া কর মোরে।
আচার্য্য শ্রীশ্রীনিবাস, রামচন্দ্র যাঁর দাস,
পুনঃ না কি মিলিব আমারে।।’’
সবে মিলে কৃপা কর
পরাণ গৌর-প্রিয়গণ-সবে মিলে কৃপা কর
যেন,–শ্রীনিবাসে পাই রামচন্দ্র-সহ—সবে মিলে কৃপা কর
বিষ-শরে কুরঙ্গিণী যেন।
আঁচলে রতন ছিল, কোন ছলে কেবা নিল,
নরোত্তমের হেন দশা কেন।।’’
রামচন্দ্রের সঙ্গ লাগি—ঠাকুর-নরোত্তমের শেষ-প্রার্থনা
রাধাকৃষ্ণ চাইলেন না
শ্রীগুরুদেবও চাইলেন না
চাইলেন ঠাকুর নরোত্তম
তাঁর সঙ্গ বিনা সব শূন্য।
যদি জন্ম হয় পুনঃ, তাঁর সঙ্গ হয় যেন,
তাবে নরোত্তম হয় ধন্য।।’’
প্রার্থনার রহস্য—অনুভব কর ভাই
শ্রীগুরুনিষ্ঠ-ভক্তের-সঙ্গ পেলেই সব হয়
গুরুনিষ্ঠ-ভক্তের সঙ্গ হলে—শ্রীগুরুদেবের কৃপা মিলে
সকলই ত’ আছে তাতে
যে বিকায়েছে গুরুপদে—সকলই ত’ আছে তাতে
গুরু গৌর অভিন্ন—বাঁধা পড়ে সে আধারে
নিতাই গৌর সকলই মিলে—কোন ভাগ্যে তাঁর সঙ্গ হলে
তখন জনম হল না—
ঠাকুর নরোত্তমে হৃদে ধরে—আয়,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদি রে
অতঃপর মহাজনী আক্ষেপ-কীর্ত্তন—
‘‘শ্রীগৌরাঙ্গর সহচর,’’ ইত্যাদি
………………………………………………………………………………………………..
………………………………………………………………………………………………..
ওরে রে কৃতঘ্ন প্রাণ-নিশিদিশি কাঁদ রে
অহৈতুকী-কৃপা সঙরি’—নিশিদিশি কাঁদ রে
‘অহৈতুকী-কৃপা সঙরি’—
অদোষ-দরশী-শ্রীগুরুদেবের—অহৈতুকী-কৃপা সঙরি’
লীলার সন্ধান জানাইলে
অহৈতুকী-কৃপা-স্বভাবে—লীলার সন্ধান জানাইলে
ত্রিকাল-সত্য গৌরলীলা—শ্রীমুখে বলিলেন
পাগল হয়ে যাই ছুটে
সেইখানেতে যাই ছুটে
যখন যেখানে যে লীলাকালে—সেইখানেতে যাই ছুটে
লীলা দেখতে না পেয়ে—কেঁদে কেঁদে ফিরে আসি
গৌর-নটন না দেখতে পেয়ে—একবার কেঁদে ফিরে এসেছি
‘গৌর-নটন না দেখতে পেয়ে’—
শ্রীজগন্নাথের রথের আগে—গৌর-নটন না দেখতে পেয়ে
আবার,–আশায় আশায় গিয়েছিলাম
শ্রীহরিদাস ঠাকুরের নির্য্যাণ-উৎসবে—আবার,–আশায় আশায় গিয়েছিলাম
ভক্তবাৎসল্য-লীলা—বড় সাধ দেখব বলে
বিশ্বম্ভর গৌরহরি—আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
জগন্নাথের সিংহ-দ্বারে—আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
হরিদাসের প্রেমে বাঁধা-পড়ে—আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
পরিবেষ্টা গৌরহরি
ঠাকুর-হরিদাসের নির্য্যাণ-উৎসবে—পরিবেষ্টা গৌরহরি
ভক্ত-বাৎসল্যের যাই বলিহারি—পরিবেষ্টা গৌরহরি
কিন্তু,–দাগা লয়ে ফিরে এসেছি
দেখা ত’ পাই নাই—কিন্তু,–দাগা লয়ে ফিরে এসেছি
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—আবার প্রাণে আশা জাগছে
দেখিব মোরা নয়নে
প্রভু,–প্রবেশিবেন ব্রজবনে
রাস-পূর্ণিমার দিনে—প্রভু,–প্রবেশিবেন ব্রজবনে
বিরহিণী গৌরকিশোরী—ভ্রমিবে ব্রজের বনে বনে
করি’ কৃষ্ণ অন্বেষণে—ভ্রমিবে ব্রজের বনে বনে
স্থাবর-জঙ্গম-পশু-পাখীর কাছে—শুধাইবে কৃষ্ণ-সন্দেশ
সবে মিলে কৃপা কর গো
যেন বৃন্দাবনে যেতে পারি
যেন গিয়ে দেখতে পাই
পরাণ-গৌরঙ্গ-বিহার—যেন গিয়ে দেখতে পাই
গৌরপ্রিয় গোস্বামীগণ—যেন,–নিজ-গুণে দেন দেখা
শ্রীগুরুগণের আনুগত্যে—যেন,–গোস্বামীগণের দেখা পাই
‘শ্রীগুরুগণের আনুগত্যে’—
যাঁরা,–তাঁদের সন্ধান জানায়েছেন—শ্রীগুরুগণের আনুগত্যে
অতবড় আশা ভাল নয়
এই-কৃপা কর সবে
মধুর-বৃন্দাবনে গিয়ে—যেন,–প্রাণগৌর খুঁজতে পারি
গোস্বামীগণের নাম ধরি’—যেন,–ব্যাকুলতা হয়ে কাঁদতে পারি
প্রাণগৌর দেখাও বলে—যেন,–ব্যাকুলতা হয়ে কাঁদতে পারি
ব্যাকুলতা কোথা পাবে
এই কৃপা কর হে
তাঁদের,–নাম ধরে কাঁদতে পারি
ব্যাকুলতার স্বরূপ যাঁরা—তাঁদের,–নাম ধরে কাঁদতে পারি
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরি’—তাঁদের,–নাম ধরে কাঁদতে পারি
পূরিবে সকল-বাসনা—মিললে ব্যাকুলতা-কণা
ভাগবত-ফুকারি’ কয়—বিনিময় বটে গো
লৌল্য তার—একমাত্র মূল্য বটে
আয় তাঁদের,–নাম ধরে কাঁদি ভাই
ব্যাকুলতাময় স্বরূপ যাঁদের—আয় তাঁদের,–নাম ধরে কাঁদি ভাই
রামচন্দ্র শ্যামানন্দ-শ্রীনিবাস নরোত্তম
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তম—এই কৃপা কর হে
শ্রীগুরুসেবা সর্ব্বেত্তম—প্রাণে প্রাণে জানাও হে
তোমার,–নিজ-স্বভাব সঞ্চারিয়ে—শ্রীগুরুসেবা-শকতি দাও
কেমন করে,–গুরুসেবা করতে হয়—প্রাণে প্রাণে জানাও হে
প্রাণে প্রাণে জানাও হে
কেমন করে বিকাতে হয়—প্রাণে প্রাণে জানাও হে
‘কেমন করে বিকাতে হয়’—
অবিচারে শ্রীগুরুপদে—কেমন করে বিকাতে হয়
হা ঠাকুর শ্যামানন্দ—প্রাণে প্রাণে জানাও হে
কেমন করে পালন করতে হয়—প্রাণে প্রাণে জানাও হে
‘কেমন করে পালন করতে হয়’—
অবিচারে শ্রীগুর-আজ্ঞা—কেমন করে পালন করতে হয়
এই,–কৃপা কর শ্রীনিবাস
বিতরি ব্যাকুলতা-কণা—এই,–কৃপা কর শ্রীনিবাস
এই তিন-জনার গুণে—যেন,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে পারি
নরোত্তম রামচন্দ্র শ্যামানন্দ—যেন,–এই তিনের গুণে মেতে থাকি
তোমার চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–এই তিনের গুণে মেতে থাকি
হা শ্রীনিবাস নরোত্তম
রামচন্দ্র শ্যামানন্দ—হা শ্রীনিবাস নরোত্তম
ঠাকুর শ্রীনরোত্তম—এই কৃপা কর হে
শ্রীগুরুচরণ হৃদি ধরি’—যেন,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে পারি
গৌরলীলা-অদর্শনে—যেন,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদ পারি
এই,–কৃপা কর ঠাকুর নরোত্তম
যেন,–গৌর বলে মরতে পারি
গৌর ত’ পেলাম না—গৌর বলে মরতে পারি
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরি’—যেন,–গৌর বলে মরতে পারি
শ্রীগুরুদেবের সুখ সঙরি’—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত-নামাবলী—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’