‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
মধুর শ্রীনীলাচলে—মধুর গৌরাঙ্গ-লীলা
পাষাণ-গলান-লীলা—মধুর গৌরাঙ্গ-লীলা
নীলাচলে প্রাণগৌরাঙ্গের—পাষাণ-গলান-লীলা
আলালনাথের শ্রীমন্দিরে—পাষাণ-গলান-লীলা
রাধিকা-ভাবিত-মতি—ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার
অন্তরঙ্গ-ভক্ত-সংহতি—নীলাচলে সদাই বসতি
নিরন্তর শ্রীকৃষ্ণবিরহে বিভোর রে।।’’
রাধিকা-ভাবিত-মতি গৌর আমার—স্নান-যাত্রার পরদিনে
রাধা-ভাবে ভোরা গোরা আমার—স্নান-যাত্রার পরদিনে
জগন্নাথে কৃষ্ণ মানে—জগন্নাথের অদর্শনে
বিরহ-বিধুরা কিশোরী গোরা—এসেছিলেন এই আলালনাথে
এই প্রস্তর-খণ্ডের উপরি—করেছিলেন দণ্ডবৎ
গৌর-হিয়ার বিরহ-তাপে—পাষাণ গলিয়া গিয়াছিল
বিরহ-অনলে গলে—পড়েছিল সর্ব্বাঙ্গ-চিহ্ন
পাষাণ গলিয়া গিয়া— এই সেই সর্ব্বাঙ্গ চিহ্ন
প্রাণভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ-গলান গোরা
এই রথযাত্রা-কালে—ভাই ভাই মিলে এলাম নীলাচলে
শ্রীনীলাচলে প্রকট-বিহার—দেখিতে তো পাই নাই মোরা
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা—দেখিতে তো পাই নাই মোরা
প্রাণগৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে তো পাই নাই মোরা
প্রাণগৌরাঙ্গের,–পাষাণ-গলান-লীলা—দেখিতে তো পাই নাই মোরা
সেই,–লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
দগ্ধ-হৃদয় জুড়াব বলে—এলাম আমরা বুক বেঁধে
শ্রীগুরু-মুখের কথা সঙরি—এলাম আমরা বুক বেঁধে
কোন কোন ভাগ্যবানে দেখিবারে পায় রে।।’’
মধুর শ্রীনীলাচলে—আজও হতেছে সেই লীলা
শ্রীগুরুদেবের,–সেই কথা হৃদে ধরে—তাই,–এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
শ্রীরথযাত্রায় নীলাচলে—তাই,–এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
রথের আগে মধুর বিহার—বড় সাধ দেখব বলে
দেখিব আপনি জগন্নাথ।।
রামরায় স্বরূপ লইয়া।
নিজভাব কহে উঘাড়িয়া।।
মোর কি হইবে হেন দিনে।
সে কথা কি শুনিব শ্রবণে।।
পুনঃ কিয়ে জগন্নাথ দেবে।
গুণ্ডিচা-মন্দিরে চলি যাবে।।
প্রভু মোর সাত সম্প্রদায়।
করিবে কীর্ত্তন উভরায়।।
মহানৃত্য-কীর্ত্তন-বিলাস।
সাত ঠাঁই হইবে প্রকাশ।।
সে লীলা কি নয়নে হেরিব।।’’
জগন্নাথের রথের আগে—সাধ ছিল দেখ্ব বলে
গৌর-নটন দেখ্ব বলে—সাধ ছিল দেখ্ব বল
গান করে স্বরূপ দামোদর।
গায় রায় রামানন্দ, মুকুন্দ মাধবনন্দ,
বাসুঘোষ গোবিন্দ শঙ্কর।।
প্রভুর দক্ষিণ-পাশে, নাচে নরহরি দাসে,
বামে নাচে প্রিয় গদাধর।
নাচিতে নাচিতে প্রভু, আউলাইয়া পড়ে কভু,
আবেশে ধরয়ে দোঁহার কর।।
নিত্যানন্দ-মুখ হেরি, বলে প্রভু হরি হরি,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ ডাকে উচ্চৈঃস্বরে।
সঙরি শ্রীবৃন্দাবন, প্রাণ করে উচাটন,
আবেশে ধরয়ে রায়ের করে।।’’
শ্রীগৌরাঙ্গের,–রথের আগে মধুর বিহার—বড় সাধ দেখব বলে
ভাই ভাই মিলে কত খুঁজলাম—দেখিতে তো পেলাম না
রথের আগে সেই মূরতি—দেখিতে তো পেলাম না
রথযাত্রা শেষ হোলো—তার দেখা তো পেলাম না
প্রভু,–পাষাণ-গলান-মূরতি—একবার দেখাও হে
‘সেই,–পাষাণ-গলান-মূরতি—
সেই,–রাধাভাবদ্যুতি-সুবলিত—সেই,–পাষাণ-গলান মূরতি
তোমায়,–করয়োড়ে মিনতি করি—একবার দেখাও হে
সেই,–রাধাভাবে ভোরা গোরা—একবার দেখাও হে
প্রাণগৌর কোথা গেল—প্রভু,–আলালনাথ বল বল
এই পাষাণ গলাইয়া—প্রাণগৌর কোথা গেল
প্রভু,–আলালনাথ বল বল—প্রাণগৌর কোথা গেল
তুমি,–ভাগ্যবান কি ভাগ্যবতী—আমি,–অনুভবে পাই নাই
হৃদে,–ধরিতে গোরা-রসভূপে—তুমি,–এসেছিলে পাষাণ-রূপে (মাতন)
গৌরাঙ্গ-রসভূপে—আর হৃদয়ে কেবা ধরে
বিলাসের তনু বিনা—আর হৃদয়ে কেবা ধরে
প্রাণগৌর হৃদে ধরিবার—আর কার অধিকার
তুমি বিলাসের মুরতি—প্রভু নিত্যানন্দ আমার
গৌরলীলা হবে জানি—আমার নিতাই গুণমণি
হৃদে,–ধরিতে গোরা-রসভূপে—এসেছিলেন পাষাণ-রূপে
গৌরের,–দারুণ-বিরহ-তাপ—নৈলে,–আর কেবা ধরবে
তুমি এসে পাষাণ-রূপে—তাই,–ধরেছ গোরা-রসভূপে
অতি-সুকোমল ভূমি—দেখিতে তো পাষাণ বটে
গৌরাঙ্গ-বিলাসের ভূমি—অতি-সুকোমল তুমি
তাইতে ধরেছ চিহ্ন—তোমার,–কোমল হৃদয় গলে গিয়াছে
গৌরের,–বিরহ-তাপের বল দেখাতে—প্রকাশ হয়েছ পাষাণ-রূপে
পাষাণ গলিয়া গেল—দেখ,–বিরহ—তাপের কত বল
কিছুই তো জানতাম না
কেবা গৌর তাঁর কিবা লীলা—কিছুই তো জানতাম না
‘কেবা গৌর তাঁর কিবা লীলা’—
কোথা বা নীলাচল—কেবা গৌর তাঁর কিবা লীলা
সঙ্গে করে লয়ে এলে
এই রথযাত্রা-কালে—সঙ্গে করে লয়ে এলে
সঙ্গে করে লয়ে এলে—গৌর-লীলা জানাইলে
নীলাচরে গূঢ়-বিহার—কৃপা করে ইঙ্গিত করলে
আলালনাথের গূঢ়-বিহার—কৃপা করে ইঙ্গিত করলে
‘আলালনাথের গূঢ়-বিহার’—
বিরহ-আবেশে গোরার—আলালনাথের গূঢ়-বিহার
নিতাই-বুকে গোরার শয়ন—আলালনাথেব গূঢ়-বিহার
একবার দেখাও হে
যদি এনেছ কৃপা করে—তবে,–একবার দেখাও হে
নিতাই-বুকে গোরার শয়ন—একবার দেখাও হে
নিতাই গৌর জড়াজড়ি—দেখাও যুগল-মাধুরী
‘নিতাই গৌর জড়াজড়ি’—
আলাননাথের শ্রীমন্দিরে—নিতাই গৌর জড়াজড়ি
বিলাস-বিবর্ত্ত-বিলাসরঙ্গ—অনুভব করাও হে
নিতাই-বুকে গোরার শয়ন—অনুভব করাও হে
‘নিতাই-বুকে গোরার শয়ন’—
বিলাস-বিবর্ত্ত-বিলাসরঙ্গ—নিতাই-বুকে গোরার শয়ন
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—একবার দেখাও হে
নিতাই গৌর জড়াজড়ি—দেখাও যুগল-মাধুরী
এই যুগল-মাধুরী—হৃদি-পটে এঁকে নেবো
এই নিতাই গৌর জড়াজড়ি—হৃদি-পটে এঁকে নেবো
তোমার কৃপা সঙরিয়ে—হৃদি-পটে এঁকে নেবো
ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে বেড়াব
হা নিতাই গৌরাঙ্গ বলে—পাগল হয়ে বেড়াব
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’