(পৌষ-শুক্লা তৃতীয়া)
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শ্রীজীব-গোসাঞি আমার—গৌর-প্রেমরত্ন-সাগর
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনের ভ্রাতুষ্পুত্র—গৌর-প্রেমরত্ন-সাগর
প্রিয়-অনুপমের পুত্র—গৌর-প্রেমরত্ন-সাগর
প্রভু নিতানন্দের কৃপায়—গৌর-প্রেম-রত্ন-সাগর
মুঞি ত পামর-জনে, বড় সাধ করি মনে,
তুয়া গুণ গাইবার তরে।।’’
হা প্রভু শ্রীজীব গোসাঞি—এই কৃপা কর মোরে
যেন,–তোমার গুণ স্ফুরে অন্তরে—এই কৃপা কর মোরে
শ্রী,–রাম-পদে দৃঢ় যাঁর মতি।
তাঁহার তনয় জীব, সর্ব্বশাস্ত্রে, সুপণ্ডিত,
প্রকাশিল শ্রীরূপ-সংহতি।।’’
রূপ-সনাতন ছাড়ি গেলা—আর ঘরে থাকব না
সে-সঙ্গ-প্রসঙ্গ হারাইয়ে—শূন্য,–গৃহে কেন থাকব বল
কি বিকাব গৌর-চরণে—আমার,–কাজ কি এই প্রাকৃত-ধনে
পাব রূপ-সনাতনে—আমি বিকাব গৌর-চরণে
শ্রীজীব-গোসাঞি আমার—নিশিদিশি ঝুরে রে
নিরজনে বসি’ বসি’—নিশিদিশি ঝুরে রে
শ্রীরূপ-সনাতনের গুণ স্মঙরি—নিশিদিশি ঝুরে রে
বলে,–কবে গিয়ে শরণ লব
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনের—কবে গিয়ে শরণ লব
শ্রীরূপ-সনাতনের কাছে—কবে গিয়ে শরণ লব
ব্যাকুল হয়ে শ্রীজীব কাঁদে—কবে যাব সেই-পথে
শ্রীরূপ,–সনাতন গেছেন যেই-পথে—কবে যাব সেই-পথে
সবাই গেছেন যে-পথে—কবে যাব সেই-পথে [মাতন]
বলে,–এই-কৃপা কর প্রাণগৌর
যাবার আমার আশা নাই—বলে,–এই-কৃপা কর প্রাণগৌর
তোমার,–কৃপা পাবার যোগ্য নই—বলে,–এই কৃপা কর প্রাণগৌর
কবে শ্রীরূপ-সনাতন পাব—এই-কৃপা কর প্রাণগৌর
চলিলা শ্রীনবদ্বীপ-পুরী।’’
(শ্রীভক্তিরত্নাকর ১ম তরঙ্গ :–
রামকেলি আইলা যাইতে বৃন্দাবনে।।
গণসহ সনাতন-রূপে কৃপা করি’।
রামকেলি হৈতে যাত্রা কৈলা গৌরহরি।।
শ্রীজীবাদি সঙ্গোপনে প্রভুরে দেখিল।
অতি—প্রাচীনের মুখে এ সব শুনিল।।
শ্রীজীব-চরিত্র কেবা বুঝিবারে পারে।
প্রভু-রূপ-মাধুরী সদাই চিন্তা করে।।
শ্রীজীব বালককালে বালকের সনে।
শ্রীকৃষ্ণে সম্বন্ধ বিনা খেলা নাহি জানে।।
কৃষ্ণ-বলরাম-মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিয়া।
করিতেন পূজা পুষ্প-চন্দনাদি দিয়া।।
কৃষ্ণ বলরাম বিনা কিছুই না ভায়।
একাকী ও দোঁহে লইয়া নির্জ্জনে খেলায়।।
শয়ন-সময়ে দোঁহে রাখয়ে বক্ষতে।
মাতাপিতা কৌতুকেও না পারে লইতে।।
যে হইতে গোস্বামী গেলেন বৃন্দাবনে।
সেই হইতে শ্রীজীবের কিবা হৈল মনে।।
নিরন্তর শ্রীজীবের এই চিন্তা মনে।
ঘর হৈতে বাহির হইব কতক্ষণে।।
একদিন একাকী বসিয়া সান্ধ্যাকালে।
শ্রীনাম-কীর্ত্তনে সিকত হয় নেত্রজলে।।
করয়ে যতন ধৈর্য্য ধরিতে না পারে।
দুই বাহু উর্দ্ধে তুলি’ কহে বারে বারে।।
ওহে প্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নিত্যানন্দ।
ওহে করুণাসিন্ধু শ্রীঅদ্বৈতচন্দ্র।।
ওহে কৃপাময় প্রভুর শ্রীপ্রিয়গণ।
মো-হেন পতিতে কর কৃপার ভাজন।।’’
কর নিজ-কৃপার ভাজন—হা ভুবন-পাবন গৌরগণ
নিশি শেষ হৈল নিদ্রা নাহিক নয়নে।।
শ্রীভকতবৎসল প্রভু, প্রভুর ইচ্ছায়।
শ্রীজীব দেখয়ে স্বপ্ন কিঞ্চিৎ নিদ্রায়।।
রামকেলি-গ্রামে যৈছে দেখিল স্বপনে।
সেইরূপ দেখে গৌরচন্দ্র গণসনে।।
সঙ্কীর্ত্তন-মধ্যে নৃত্য করে গৌররায়।
ব্রহ্মার দুর্ল্লভ-প্রেমে জগৎ মাতায়।।
লক্ষ লক্ষ লোক ধাইয়া আইসে চারিপাশে।
হরি হরি ধ্বনি হয় এ তুমি আকাশে।।
ঐছে দেখা দিয়া প্রভু হৈলা অন্তর্দ্ধান।
স্বপ্নভঙ্গে জীবের ব্যাকুল হৈল প্রাণ।।’’
কাঁদিয়া শ্রীজীব বলে—দেখা দিয়ে কোথা লুকালে
শ্রীজীব দেখয়ে কিবা অপূর্ব্ব স্বপন।।
হইলা প্রত্যক্ষ প্রভু কৃষ্ণ বলরাম।
শ্যাম শুক্ল রূপ দোঁহে আনন্দের ধাম।।
দোঁহার অদ্ভুত বেশ কন্দর্প-মোহন।
অঙ্গের ভঙ্গীতে মত্ত করে ত্রিভুবন।।
তাহে ধৈর্য্য ধরে ঐছে নাহি কোন জন।।
শ্রীজীবের মনে মহা হৈল চমৎকার।
অনিমিষ-নেত্রে শোভা দেখয়ে দোহাঁর।।
ভাসয়ে দীঘল দুটী নয়নের জলে।
লুটাইয়া পড়ে দুই প্রভু-পদতলে।।
করুণা-সমুদ্র গৌর-নিত্যানন্দ-রায়।।
পাদপদ্ম দিলেন জীবের মাথায়।।
পরম-বাৎসল্যে পুনঃ করে আলিঙ্গন।
কহিল অমৃতময় প্রবোধ-বচন।।
শ্রীগৌর-সুন্দর মহাপ্রেমাবিষ্ট হৈয়া।
প্রভু নিত্যানন্দ-পদে দিল সমর্পিয়া।।
নিত্যানন্দ শ্রীজীবে কহয়ে বার বার।
এই মোর প্রভু হোক সর্বস্ব তোমার।।
ঐছে প্রভু-অনুগ্রহে পুনঃ প্রণমিতে।
দোঁহে অদর্শন দেখি, নারে স্থির হৈতে।।’’
দেখা দিয়ে কোথা লুকালে
প্রভু নিতাই প্রাণ গৌরাঙ্গ—দেখা দিয়ে কোথা লুকালে
অধ্যয়ন-ছলে নবদ্বীপে যাত্রা কৈলগ।।
নবদ্বীপ প্রবেশিতে এই ধ্বনি হইল।
সনাতন-শ্রীরূপের ভ্রাতুষ্পুত্র আইল।।
শ্রীজীব বিহ্বল হইয়া করয়ে গমন।
সেই পথে আইসে বৈষ্ণব কতজন।।
শ্রীজীবে দেখিয়া সবে মনের উল্লাসে।
শীঘ্র গেলা শ্রীপণ্ডিত-শ্রীবাস-আবাসে।।
নিত্যানন্দ প্রভু তথা প্রিয়গণ সঙ্গে।
বসিয়া আছেন মহাপ্রেমানন্দ-রঙ্গে।।
শ্রীবাস-পণ্ডিতে প্রভু হাসিয়া কহয়।
শ্রীজীব আসিবে মোর মনে হেন লয়।।
প্রভু-আগে সে বৈষ্ণব কহে ধীরে ধীরে।
শ্রীজীব আইলা প্রভু ভবন-বাহিরে।।
শুনি নিত্যানন্দ প্রভু আনন্দিত হৈলা।
শ্রীজীবেরে শীঘ্র লোকদ্বারে আনাইলা।
শ্রীজীব অধৈর্য্য হৈলা প্রভুর দর্শনে।
নিবারিতে নারে অশ্রুধারা দু’নয়নে।।’’
পড়িল চরণ-যুগে ধরি’।।’’
চরণ-যুগ ধরি’ বলে—বল বল প্রভু নিতাই
অগতির গতিদাতা—বল বল প্রভু নিতাই
জগত-তারণ-কারণ-ধাম—বল নিত্যানন্দরাম
বাসনা জাগিছে মনে—বলতে আমার লাজ-বাসে
প্রার্থনা জাগিছে মনে—বলতে আমার লাজ-বাসে
আমি কি গৌরাঙ্গ পাব—বল নিত্যানন্দরাম
শ্রীরূপ-সনাতনের আনুগত্যে—আমি কি গৌরাঙ্গ পাব[মাতন]
শ্রীজীব-গোসাঞি আমার—মনে মনে এই ত’ গণে
পরাণ-গৌরাঙ্গ পাবার—আমি ত’ যোগ্য নই
শ্রীরূপ-সনাতন—যদি,–কৃপা করে দেন সঙ্গ
আমি ধনী হব গৌর-ধনে—তবে তাঁদের সঙ্গ-গুণে
নিতাই,–মস্তকে চরণ দিয়া, দুই বাহু পসারিয়া’’
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনের পরিচয়ে—দায়ভাগ-সূত্রে দাবী আছে
উঠাইয়া করিলেন কোলে।’’
স্বাভাবিক-প্রীতির স্বভাবে—বাহু পসারি’ কৈল কোলে
আইস বাপ জীব আইস বলে—বাহু পসারি’ কৈল কোলে
আমার প্রভু নিত্যানন্দ—প্রেমে গদগদ স্বরে
শ্রী,–রূপ-সনাতনের সম্বন্ধ স্মঙরি—প্রেমে গদগদ স্বরে
শ্রীজীবে কোলে করে—প্রেমে গদগদ স্বরে
গৌর-কৃপা স্মঙরিয়ে—নিতাই ভাসে নয়নজলে
সবংশে উদ্ধরিলে—গৌর-কৃপা স্মঙরিয়ে
শ্রীজীব,–‘‘প্রেমে গদগদ হঞা,’’
প্রেমের মূরতির আলিঙ্গন পাইয়া
শ্রীজীব,–
আমি,–তোমা-স্পর্শের যোগ্য নই—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
কাঁদিতে কাঁদিতে কিছু বলে।।
প্রভু নিত্যানন্দ নাম, জগতের পরিত্রাণ,
সব-জীবে আনন্দ করিলা।’’
জগৎ-তারণ-কারণ-ধাম—জয় প্রভু নিত্যানন্দরাম
প্রেমে জগৎ কৈলে প্লাবন—নিতাই তুমি ভুবন-পাবন
মো-হেন পতিত-জনে, কৃপা কৈলা নিজ-গুণে,
ব্রহ্মার দুর্ল্লভধন দিলা।।’’
ব্রহ্মার দুর্ল্লভ-প্রেম-ধন—চাই নাই তুমি যেচে দিলে
অহৈতুকী-কৃপা-বলে—ব্রহ্মার দুর্ল্লভ-প্রেম দিলে
অস্পৃশ্যে স্পর্শ করে—ব্রহ্মার দুর্ল্লভ-প্রেম দিলে
শ্রীজীবের দৈন্য-বাণী শুনে—প্রেম-স্বরে নিতাই বলে
শ্রীজীবেরে করি’ কোলে—প্রেম-স্বরে নিতাই বলে
ওহে আমার প্রাণের শ্রীজীব-দৈন্য সম্বরণ কর
রূপ-সনাতনের সম্বন্ধে—তুমি আমার প্রিয় হতেও প্রিয়।
ও বাপ শ্রীজীব ব্যাকুল হয়ো না—তোমার আবার কিসের ভাবনা
শুন শুন বাপ শ্রীজীব—তোমায় কর্ত্তব্য বলি
তোমার,–কর্ত্তব্য নির্দ্ধারণ আছে
আমি কিবা উপদেশ দিব—তোমার,–কর্ত্তব্য নির্দ্ধারণ আছে
মহাপ্রভু তোমার গণে—দিয়েছেন বাস ব্রজবনে
পাঠিয়েছেন প্রাণ গৌরহরি—গিয়েছেন তোমার পিতৃব্যগণে
মধুর শ্রীবৃন্দাবনে—গিয়াছেন তোমার পিতৃব্যগণে
শীঘ্র তুমি যাহ বৃন্দাবন।’’
প্রভু দিয়াছেন তোমাদের গণে—কর ব্রজভূমে বসতি
কাল-বিলম্ব না করে—তুমিও যাও ব্রজপুরে
পিতৃব্যদ্বয়ের অনুক্রমে—তুমিও যাও ব্রজপুরে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের ইচ্ছাক্রমে—তুমিও যাও ব্রজপুরে
পরম-করুণ গৌরহরি—নির্দ্দেশ করে দিয়েছেন
ওহে শ্রীজীব তোমার কর্ত্তব্য—নির্দ্দেশ করে দিয়েছেন
রূপ-সনাতনে ব্রজে পাঠায়ে—নির্দ্দেশ করে দিয়েছেন,
রূপ-সনাতন গেছে যে-পথে—তোমারও ত’ সেই-পথ
শ্রীমুখের আজ্ঞা পাইয়া, আনন্দ হইল হিয়া,’’
ব্রজপুরে করিল গমন।।’’
মন-সাধ পুরাইলে—জয় গৌরহরি বলে
অনুপমের তনয় জীব—হইলা,–সর্ব্ব-শাস্ত্রে সুপণ্ডিত
শ্রীরূপের কৃপা-শিক্ষা পেয়ে—হইলা,–সর্ব্ব-শাস্ত্রে সুপণ্ডিত
রূপ-সনাতনের সঙ্গ হারাইয়ে—আর কি ঘরে রইতে পারে
শ্রীরূপ-সনাতন গেল ছেড়ে—আর কি রইতে পারে ঘরে
নিতাইচাঁদের করুণায়—শ্রীজীব-গোসাঞি ব্রজে যায়
গোস্বামীগণের চরিত্রে—অনুভব করে ভাই রে
একমাত্র নিতাই-কৃপা-বল—ব্রজে যাবার এই ত’ সম্বল
চরিত্র অনুশীলন কর—সবাই গেলেন ব্রজপুরে
এত-শকতি কোথায় মিলে—মূলে নিতাই-করুণা না হইলে
শ্রী,–রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই
শ্রী,–নিতাই-কৃপা বিনে ভাই—শ্রী,–রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই
নিতাই-কৃপা-আজ্ঞা ধরি’ শিরে—আজ,–শ্রীজীব-গোসাঞি চলে ব্রজপুরে
‘নিতাই-কৃপা-আজ্ঞা ধরি’ শিরে’—
অভিন্ন-চৈতন্য-তনু—নিতাই-কৃপা-আজ্ঞা ধরি’ শিরে
ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
নিতাই-বদন-পানে চেয়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
গৌর-প্রেমের মুরতিখানি—আর কি দেখতে পাব হে
ফিরে ফিরে নিতাই-বদন চায়—শ্রীজীব-গোসাঞি ব্রজে যায়
এইরূপে পথে চলি’ যায়।’’
গুণনিধি শ্রীজীব-গোসাঞি—ব্রজে যাবার পথে চলে
হা নিতাই প্রাণ নিতাই বলে—ব্রজে যাবার পথে চলে
ব্রজে যাবার পথে যেতে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
আমায় ব্রজবনে পাঠাইলা—হা নিতাই এ কি কৃপা কৈলা
শ্রীজীব ব্রজের পথে যায়—ভাসে দুটী নয়ন-ধারায়
নিতাই-কৃপা ধরি’ হিয়ায়—ভাসে দুটী নয়ন-ধারায়
ব্রজে যাবার পথে যেতে—মনে মনে গণে রে
শ্রীরূপ-সনাতনের দর্শন পাব—কতক্ষণে ব্রজে যাব[মাতন]
প্রাণ মোর রাখ মহাশয়।।’’
শ্রীজীবের স্বাভাবিক-প্রীতির—বালাই লয়ে মরে যাই
শ্রীরূপ-সনাতন-প্রতি—শ্রীজীবের স্বাভাবিক-প্রীতি
মনে মনে এই ত’ গণে
আমি ত’ যোগ্য নাই
পরাণ-গৌরাঙ্গ পাবার—আমি ত’ যোগ্য নই
শ্রীরূপ সনাতন—যদি,–কৃপা করে দেন সঙ্গ
আমি,–ধনী হব গৌরাঙ্গ-ধনে—তবে তাঁদের সঙ্গ-গুণে
শ্রীরূপ-সনাতনের দর্শনোৎকন্ঠায়—পলকে প্রলয় গণে
শ্রীরূপ-সনাতনের অদর্শনে—পলকে প্রলয় গণে
ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করে
নিতাই-প্রিয় শ্রীজীব-গোসাঞি—ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করে
অনুরাগে ব্রজের পথে চলে—ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করে
হা প্রভু রূপ সনাতন—ত্বরায় লয়ে চল বৃন্দাবন
প্রাণ রাখ দিয়া দরশন—ত্বরায় লয়ে চল বৃন্দাবন
কভু করু জল-পান, কভু চানা চর্ব্বণ,’’
শ্রীরূপ-সনাতনের দর্শন উৎকণ্ঠায়—আহার-নিদ্রায় আবেশ নাই
ব্যাকুল-প্রাণে কাঁদে সদাই—আহার-নিদ্রায় আবেশ নাই
কেবল,–শ্রীরূপ-সনাতনের দর্শন-আশা—শ্রীজীবের নাই ক্ষুৎ-পিপাসা
দেহেতে আবেশ নাই—কেবল,–অভ্যাসেতে, ভোজন-পান
এত অনুরাগ না হইলে—শুধু কি,–মুখের কথায় নিধি মিলে
কতদিনে মথুরা পাইলা।
দেখি শোভা মধুপুরী,’’
হা নিতাই এ কি কৃপা কৈলে
মধুপুরীতে নিয়ে এলে—হা নিতাই এ কি কৃপা কৈলে
মধুপুরী-মাধুরী দেখাইলে—হা নিতাই এ কি কৃপা কৈলে
যাওয়া যায় শ্রীব্রজপুরে
এ-স্বভাব প্রাণে জাগলে পরে—যাওয়া যায় শ্রীব্রজপরে
ধীরে ধীরে বিশ্রান্তি আইলা।।’’
মধুপুরী হেরে প্রেমে পুলকিত—বিশ্রামঘাটে উপনীত
মধুপুরী প্রবেশ করি’—বিশ্রামঘাটে উপনীত
যমুনার জল পান করে—আর,–কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করে
যেন,–দেখা পাই দুইজনার—আমার,–বাসনা পূরণ কর যমুনা
সেই রাত্রে তাঁহা কৈল বাস।’’
ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কতক্ষণে নিশি প্রভাত হবে
মধুর-বৃন্দাবনে যাব—কতক্ষণে নিশি প্রভাত হবে
নিশি-পরভাতে উঠি’—যাব মধুর-বৃন্দাবনে
দেখব রূপ-সনাতনে—যাব মধুর-বৃন্দাবনে
‘‘প্রাতে আইলা বৃন্দাবনে,’’
বৃন্দাবনে প্রবেশিয়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কোথা প্রভু রূপ সনাতন
বলে,–প্রভু সব পুরাইলা আশ।’’
শ্রীরূপ-সনাতনের দেখা মিলিল—আমার,–সকল আশা পূর্ণ হল
ভাসি’ দুটী নয়ন-জলে—লুটাইয়া পড়ল পদে
শ্রীরূপ-সনাতনের পদে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
তোমাদের ক্রীতদাস এসেছে বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কৃপা করে টেনে আনলে বলে—ব্যকুল হয়ে কাঁদে রে
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতন—দুজনে ভাসে নয়ন-নীরে
শ্রীজীবেরে কোলে করে—দুজলে ভাসে নয়ন-নীরে
নিতাই-কৃপা মনে করে—দুজনে ভাসে নয়ন-নীরে
শ্রীজীবেরে দর্শন করি’—শ্রী,–রূপ-সনাতন কাঁদেন দুজনে
শ্রীজীবেরে দেখে নয়নে—শ্রী,–রূপ-সনাতন কাঁদেন দুজনে
স্মঙরি শ্রীগৌরাঙ্গ-ধনে—শ্রী, শ্রী,–রূপ-সনাতন কাঁদেন দুজনে
প্রাণে প্রাণে বলে দুজন—জয় প্রভু শচীনন্দন
শ্রীজীবে মিলাইলে রূপ সনাতন—জয়,–ভুবন-পাবন শচীনন্দন
কত-গুণের শ্রীজীব-গোসাঞি
নানাগ্রন্থ অধ্যয়ন করে
শ্রীরূপ-সনাতনের সঙ্গ পেয়ে—নানাগ্রন্থ অধ্যয়ন করে
শ্রীরূপ-সনাতনের কৃপা-বলে—নানাগ্রন্থ অধ্যয়ন করে
ব্রজ-নিত্য-লীলা-রসপূর।’’
এমন,–লীলারস-পরিপাটী—নৈলে কেবা জানত রে
গ্রন্থাকারে না প্রকাশিলে—নৈলে কেবা জানত রে
মহারত্ন-গ্রন্থারাজি—শ্রীজীব-দ্বারে প্রকাশ পেলেন
ব্রজ-নিত্য-লীলা—রসপূর—মহারত্ন-গ্রন্থরাজি
জান কি গোসাঞির অভিমত
ব্রজলীলা-গ্রন্থ-প্রকাশের কি মর্ম্ম—জান কি গোসাঞির অভিমত
গৌর-রহস্য ভোগ করুক
কলিহত-জীব জানুক বুঝুক—গৌর-রহস্য ভোগ করুক
ব্রজ-লীলায় না ডুবিলে—গৌর কেমন করে বুঝবে বল
সেখানে ডুবতে পেলে—তবে ত এখানে উঠবে
প্রকাশিল গ্রন্থরূপে
ব্রজলীলা-রহস্য—প্রকাশিল গ্রন্থরূপে
কেন ভাসল নয়ন-জলে
গোসাঞি যত ব্রজবনে—কেন ভাসল নয়ন-জলে
আর কি দেখতে পাব বলে—কেন ভাসল নয়ন-জলে
আর কি দেখতে পাব বলে’—
সোণার গৌরাঙ্গ প্রভু—আর কি দেখতে পাব বলে
পড়ি’ শুনি’ ভক্ত হৈলা শূর।।’’
ভাব অলঙ্কৃত সব অঙ্গ।
পড়িতে শ্রীভাগবত, ধৈরয না ধরে চিত,
সাত্ত্বিকে ব্যাপিত সব অঙ্গ।।’’
স্মঙরিতে প্রাণ কেঁদে উঠে—কি বলব গোসাঞির কথা
সব দেশ জয় করে—এক দিগ্বিজয়ী আইলেন ব্রজে
জয়পত্রী নিবার আশে—এক দিগ্বিজয়ী আইলেন ব্রজে
তবেই হব সর্ব্বজয়ী
যদি জয়পত্রী পাই
শ্রীরূপ-সনাতনের ঠাঁই—যদি জয়পত্রী পাই
গেলেন দুই-গোসাঞির কাছে
শ্রীরূপ-সনাতন গুণমণি
তার মনের বাসনা জানি
লিখে দিলেন বিজয়-বাণী
কোন বিচার না করি’—লিখে দিলেন বিজয়-বাণী
স্বাভাবিক দৈন্য-স্বভাবে—লিখে দিলেন বিজয়—বাণী
দিগ্বিজয়ী ভাবলেন মনে
জয়পত্রী দিলা লিখে
শ্রীরূপ-সনাতন দুই জনে—জয়পত্রী দিলা লিখে
পরাজিত হবার ভয়ে—জয়পত্রী দিলা লিখে
চলিছেন যমুনার তীরে
শ্রীরূপ-সনাতনের নিন্দা করে—চলিছেন যমুনার তীরে
যমুনার স্নান করে—তখন—আসছিলেন শ্রীজীব গোসাঞি
অভিমানে বলছেন দিগ্বিজয়ী
বড়,–আশা করে এলাম বৃন্দাবনে
শ্রীরূপ-সনাতন বড় পণ্ডিত শুনে—বড়,–আশা করে এলাম বৃন্দাবনে
আমার প্রভাব জানতে পেরে—কিন্তু,–তাঁরা জয়পত্র দিলেন লিখে
আপনার পূজ্য গুরুজনের—এই নিন্দা-বাক্য শুনে
শ্রীজীব-গোসাঞি দূর হতে—এই নিন্দা-বাক্য শুনে
আর প্রাণে সইল না
শ্রীরূপ-সনাতনের নিন্দা—আর প্রাণে সইল না
আগুসরি গিয়ে কাছে—সম্বোধিয়ে দিগ্বিজয়ীরে
দাসানুদাস আমি বটে
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনের—দাসানুদাস আমি বটে
দিগ্বিজয়ী বল্লেন অভিমানে
জয়পত্র দিয়েছেন লিখে
শ্রীরূপ-সনাতন বিচারের ভয়ে—জয়পত্র দিয়েছেন লিখে
তুমি বালক বৈ ত’ নও—তোমা-সনে কিবা বিচার করব
এক শ্লোক পড়ি’ দিগ্বিজয়ী
করিলেন তার বহু-অর্থ
তাঁর কথা শেষ হলে
অন্য অর্থ স্থাপন করলেন
শ্রীজীব-গোসাঞি সেই শ্লোকে—অন্য অর্থ স্থাপন করলেন
দ্বিগ্বিজয়ীর অর্থ খণ্ডন করে—অন্য অর্থ স্থাপন করলেন
শ্রীজীবের সনে বিচার—দিগ্বিজয়ী গেলেন হেরে
মনে বড় দুঃখ পেয়ে—চলে গেলেন যমুনা তীরে
দিগ্বিজয়ী হেঁট-মাথে—চলে গেলেন যমুনা তীরে
প্রাণে প্রাণে জেনেছেন
দিগ্বিজয়ী-পরাজয়-কথা—প্রাণে প্রাণে জেনেছেন
দৈন্যের বাধা হল বলে—বড় দুঃখ পেয়েছেন
বলিলেন ভর্ৎসনা-বাক্য
এ কি ব্যবহার তোমার
কেন দৈন্যে আঘাত দিলে
দিগ্বিজয়ী-পরাজয় করে—কেন দৈন্যে আঘাত দিলে
তৃণাদপি-পথে—তুমি কলঙ্ক রটায়েছে
অমানীরে মান-দান—এই ত’ শ্রীগৌরাঙ্গের বাণী
প্রভুর শ্রীমুখের আজ্ঞা—তুমি অবহেলা করিলে
দিগ্বিজয়ীকে দুঃখ দিয়ে—তুমি অবহেলা করিলে
তোমার,–মুখ আমি দেখব না
প্রভুর আজ্ঞা হেলা করলে—তোমার,–মুখ আমি দেখব না
হলেন যেন বজ্রহত
চলে গেলেন বিষাদ-মনে
নিজ-অপরাধ মেনে সেইক্ষণে—চলে গেলেন বিষাদ-কীর্ত্তন
যমুনার-তীরে নন্দঘাটে—চলে গেলেন বিষাদ-মনে
ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
হায়,–আমার কি গতি হবে
শ্রীগুরুদেব ত্যাগ করিলেন—হায়,–আমার কি গতি হবে
কতদিনে কৃপা হবে বলে—নিশিদিশি কাঁদছেন
কিন্তু,–কার্য্যের বিরাম নাই
আজ্ঞা পালন ছাড়েন নাই—কিন্তু,–কার্য্যের বিরাম নাই
রজ তুলে খাইতেন
রজ-মাত্র আহার তার
আর কোন কিছু নয়—রজ-মাত্র আহার তাঁর
পরস্পর শুনতে পেলেন
গোসাঞি শ্রীসনাতন—পরস্পর শুনতে পেলেন
শ্রীজীবের বৃত্তান্ত—পরস্পর শুনতে পেলেন
জীবের প্রতি রূপের ব্যবহারে—বড় ব্যথা পেয়েছেন
একদিন কথাচ্ছলে
শুধালেন রূপ-গোসাঞি রে
বল বল ভাই বল
কিবা স্থির করেছ
জীবের পক্ষে কর্ত্তব্য—কিবা স্থির করেছ
জীবে দয়া সর্ব্বশ্রেষ্ঠ শাস্ত্রেতে বাখানে।।’’
শ্রীসনাতন গোসাঞি—তখন,–সুযোগ পেয়ে বলছেন,
এই ধর্ম্ম যদি হয়
জীবে দয়া কেন নয়—এই ধর্ম্ম যদি হয়
শ্রীসনাতনের মনোবৃত্তি—বুঝিলেন শ্রীরূপ গোসাঞি
শ্রীজীবের করে দণ্ড—শ্রীরূপ ছিলেন মর্ম্মাহত
শ্রীসনাতন গোসাঞি—পাছে আবার কিছু বলেন
লোক পাঠায়ে দিলেন
শ্রীজীবেরে আনবার তরে—লোক পাঠায়ে দিলেন
বাহু পসারিয়া কৈলেন কোলে
আইস আমার জীব বলে—বাহু পসারিয়া কৈলেন কোলে
তৃণাদপি হৃদে ধর—প্রভুর আজ্ঞা পালন কর
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন—জীবে,–দুইজনে কৈলেন কোলে
এ কেবল জীব-শিক্ষার তরে—এ দণ্ড নয় শ্রীজীব-গোসাঞিরে
শ্রীজীব-গোস্বামীর চরিত্র—অনুভব কর ভাই
দিগ্বিজয়ী-বিজয়—অভিমানে করেন নাই
শ্রীগুরুদেবের নিন্দা—অসহ্য হয়ে ছিল
দিগ্বিজয়ী সঙ্গে—তাই বিচার করেছিলেন
কত অপরাধ করছি
একবার ভেবে দেখ—কত অপরাধ করছি
শ্রীজীবের যদি হয় এই দণ্ড—আমাদের হবে কিবা দণ্ড
তৃণাদপি শ্লোকেতে পড়ে গেল বাদ।।’’
শ্রীজীব-চরিত্র স্মঙরি—অনুভব কর ভাই
পথ ছেড়ে কোথায় চলেছি—অনুভব কর ভাই
বৃ্ন্দাবন-বিহার সদাই।
গোলোক-সম্পুট করি’, তাহাতে সে প্রেম ধরি’,
সম্বরণ করিল গোসাঞি।।’’
গোলোক-সম্পুট করি’—শ্রীগোপালচম্পূ প্রকাশিলা
শ্রীজীব-গোস্বামীর আশায়—অনুভব কর ভাই রে
রাধাগোবিন্দের নিগূঢ় বিহার—নিগূঢ় শ্রীব্রজলীলা
পুরুষ অভিমান থাকতে—এ লীলা,–আলোচনার অধিকার নাই
গোপীভাব-লুব্ধ চিত্ত না হলে—এ লীলা,–আলোচনার অধিকার নাই
যারে,–বলতে নিষেধ তার ভয়ে—তাই,–অতি-আবরণে রাখলেন
‘যারে,–বলতে নিষেধ তার ভয়ে’—
নিকুঞ্জ-রহস্য—যারে—বলতে নিষেধ তার ভয়ে
কৃপণের ধনের মত—তাই,–অতি-আবরণে রাখলেন
গোলক-সম্পূট করি’—অতি-আবরণে রাখলেন
পাছে বাদী বিচার করে বলে—তাই,–অতি-আবরণে রাখলেন
রস-পিপাসুর ভোগের লাগি’—তাই—অতি—আবরণে রাখলেন
শ্রীরাধাকৃষ্ণ-যুগল-বিহার—পাছে প্রাকৃত মনে করে বলে
শ্রীগৌর-মনোবৃত্তি পরকীয়া-ধনে—পাছে মনে করে বলে
যুগল-লীলারহস্য—রাখিলেন অতি-গোপনে
শ্রীগুরুগণের কৃপা-ইঙ্গিতে—রাখিলেন অতি-গোপনে
স্বকীয়ার আবরণে—রাখিলেন অতি-গোপনে
অনধিকারীকে বাঁচাবার তরে—রাখিলেন অতি-গোপনে
রস-পিপাসুর পিপাসা বাড়াইতে—রাখিলেন অতি-গোপনে
রস,–লুব্ধের লোভ বাড়াইবার লাগি’—রাখিলেন অতি-গোপনে
মাধুরী বিশেষ প্রকাশিতে—রাখিলেন অতি-গোপনে
‘মাধুরী বিশে, প্রকাশিতে’—
রস-লুব্ধের লোভ বাড়াইতে—মাধুরী বিশেষ প্রকাশিতে
নিগূঢ়-ব্রজলীলা-রহস্য—সম্পুটেতে রাখিলেন
শুদ্ধ-পরকীয়া-মত—সম্পুটেতে রাখিলেন
চাবি দিয়া গোলক—সম্পুটেতে রাখিলেন
আবরণ ভেদ করে—আস্বাদিবে লুব্ধ-জনে
যে অধিকারী সে গ্রহণ করবে—অনধিকারী ধরতে নারবে
‘‘শ্রীগোপাল চম্পু’’ পড়ে—যেন বিচার করো না
শ্রীজীব-গোস্বামী স্বকীয়াবাদী—যেন বিচার করো না
গুণনিধি শ্রীজীব-গোসাঞি—নিজ,–মনোবৃত্তি প্রকাশ কৈলেন
বিশ্বনাথ-চক্রবর্ত্তী-দ্বারে—নিজ,–মনোবৃত্তি প্রকাশ কৈলেন
নিজ,–মনোবৃত্তি প্রকাশিতে—শ্রীজীব প্রকট বিশ্বনাথ-রূপে
বিশ্বনাথ-চক্রবর্ত্তী আমার—শ্রীজীবের অবতার
শ্রীজীব প্রকট বিশ্বনাথ-রূপে—নিজ,–মনোবৃত্তি প্রকাশিতে
বিশ্বনাথ-রূপ ধরে—নিজ,–মনোবৃত্তি প্রকাশ করে
শ্রীজীব-মনোবৃত্তি মূর্ত্তি-রূপে—বিহরে বিশ্বনাথ-রূপে
শ্রীজীব-মনোবৃত্তি মূর্ত্তি ধরে—শ্রী,–বিশ্বনাথ-রূপে বিহরে
শ্রীজীব-মনোবৃত্তি-রূপ—বিশ্বনাথ রসকূপ
শ্রীগুরুদেবের এই ত’ বিচার—এই জান ভাই সারোদ্ধার
শ্রীজীব জীবন-প্রাণধন।
বহু জন্ম পুণ্য করি’, দুর্ল্লভ জনম ধরি’,
পাইয়াছি শ্রীজীবচরণ।।
শ্রীজীব করুণাসিন্ধু, স্পর্শি তার একবিন্দু ,
প্রেমরত্ন পাবার লাগিয়া
কহে রঘুনাথ-দাস, তুয়া অনুগত আশ,
রাখ মোরে পদছায়া দিয়া।।’’
প্রাণ,–গৌর-প্রিয় শ্রীজীব-গোসাঞি—এইবার মোরে দয়া কর
প্রাণ-গৌরাঙ্গের অতিপ্রিয়—শ্রীজীব-গোসাঞি দয়া কর
যুগল-উজ্জ্বরস—আস্বাদনে দাও অধিকার
রূপ,–সনাতনের পদ করি সার—আস্বাদনে দাও অধিকার
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—আস্বাদনে দাও অধিকার
অতঃপর—‘‘কোথা বা লুকালে’’ ইত্যাদি মহাজনী আক্ষেপ-কীর্ত্তন।
.. .. … … … ..
.. .. … … … ..
মহাজনী-আক্ষেপ কীর্ত্তনের কিঞ্চিৎ বিশেষ :–
গৌর,–হরি বলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি মন হরিছে
‘হরি বলে যার পানে চাইছে’—
রসের গোরা হেলে দুলে—হরি বলে যার পানে চাইছে
গৌর—হরি বলে চেয়ে অভাব ঘুচায়ে—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
স্বরূপ জাগান স্বরূপ গোরা—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
শচীদুলাল গৌরহরি—চিত চুরি করেছে আমার
খোল-করতালে নাম গুণ শুনায়ে—ঘরের বাহির করেছে মোরে
ভুগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।’’
ছুটে ছুটে যাই মোরা
দগ্ধ হৃদয় জুড়াব বলে—ছুটে ছুটে যাই মোরা
শ্রীগুরু-বাক্য হৃদে ধরে—ছুটে ছুটে যাই মোরা
আজও হতেছে সেই লীলা
ত্রিকালসত্য গৌরলীলা—আজও হতেছে সেই-লীলা
যখন যেখানে যে লীলাকাল—তাই যাই দেখবার আছে
তাই আমরা ছুটে গেলাম
বার্ত্তা দিলেন ব্রজবাসী—তাই আমরা ছুটে গেলাম
‘বার্ত্তা দিলেন ব্রজবাসী’—
ব্রজে আসবেন গোরাশশী— বার্ত্তা দিলেন ব্রজবাসী
‘ব্রজে আসবেন গোরাশশী’—
কার্ত্তিক-পৌর্ণমাসী দিনে—ব্রজে আসবেন গোরাশশী
তাই আমরা গেলাম ছুটে
ত্রিকালসত্য লীলা জেনে—তাই আমরা গেলাম ছুটে
শ্রীবৃন্দাবনের বনে বনে—কত না খুঁজলাম
কেঁদে কেঁদে কত সুধালাম
বৃ্ন্দাবনের কল্পতরুদের—কেঁদে কেঁদে কত সুধালাম
বল বিহরিছে কোথা—বল ব্রজের তরুলতা
সেই বিরহিণী প্রাণ-গোরারে—পাব আমরা কোথায় গেলে
কৃষ্ণ-বিরহিণীর ভাবে ভোরা—আমরা কোথায় গেলে
বৃন্দাবনের বনে বনে—সে যে,–খুঁজে খুঁজে বেড়াইছে
যারে আপনার কাছে দেখে –তারেই ত’ সুধাইছে
কোথা গেলে প্রাণ-কৃষ্ণ পাব—দয়া করে বলে দাও
কোথা গেলে সেই গৌর পাব—দয়া করে মোদের বলে দাও
তখন,–মনে মনে অনুমান করলাম
যাই আমরা তাঁদের কাছে
যাঁরা সঙ্গে ব্রজে আছে—যাই আমরা তাঁদের কাছে
তাঁদের বসতি-স্থানে গিয়ে—কত ব্যাকুল হয়ে ডাকলামগ
ভট্ট-যুগ শ্রীজীব-গোসাঞি—কোথা প্রভু রূপ সনাতন
ভূগর্ভ শ্রীলোকনাথ—তোমরা সব,–কোথা’ বা আছ হে
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—তোমরা সব,–কোথা বা আছ হে
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—একবার দেখা দাও
প্রাণগৌর দেখালে না—কেউ ত’ দেখা দিলে না
কেউ বুঝি নাই বৃন্দাবনে
সকলে,–গিয়াছেন গিরি-গোবর্দ্ধনে—কেউ বুঝি নাই বৃ্ন্দাবনে
গিয়াছেন গিরি—গোবর্দ্ধনে’—
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—গিয়াছেন গিরি-গোবর্দ্ধনে
শ্রীদাস-গোস্বামীর কাছে—গিয়াছেন রাধাকুণ্ড-তীরে
ইষ্ট-গোষ্ঠী করবার তরে—গিয়াছেন রাধাকুণ্ড-তীরে
সবাই মিলে গেলাম ছুটে
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—সবাই মিলে গেলাম ছুটে
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
নিরজনে আছ ভজনে
লয়ে প্রাণ-গৌর-ধনে—নিরজনে আছ ভজনে
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—একবার দেখা দাও
তাঁর দেখা ত’ পেলাম না
যাঁকে দেখতে বৃন্দাবনে এলাম—তাঁর দেখা ত’ পেলাম না
… … … … …
… … … … …