‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’
(১)
অশেষ-বিশেষে,–নিজভাব আস্বাদিতে অবতার—মহাভাবনিধি গৌর আমার
অখিল-রসামৃতময়-মুরতি নন্দকুমার—গৌর-স্বরূপে এসেছে এবার
পূরব জনম দিবস দেখে—আজ মনে সাধ উঠেছে
নিজ-জন্মলীলা আস্বাদিতে’—
পূরব জনম দিবস দেখে—নিজ-জন্মলীলা আস্বাদিতে
বিভাবিত হয়ে অনুকূল-ভাবে—নিজ-জন্মলীলা আস্বাদিতে
আজ,–আস্বাদিতে পূরব জন্মলীলা
আজ,–আস্বাদিতে পূরব জন্মলীলা
কিশোরী-ভাবিত-মতি গোর—আস্বাদিছে পূরব জন্মলীলা
অশেষ বিশেষে আস্বাদিছে
মহাভাবে হয়ে ভোরা—অশেষ-বিশেষে আস্বাদিছে
আমাদের,–প্রাণগৌর মহাভাবের নিধি—জনম-তিথি আস্বাদিছে
নন্দ-মহোৎসব গায়।।’’
কেবলভাব আস্বাদিতে—হয়েছে দোঁহে একঠাঁই
ভাবিনীর ভাবে গৌর আমার—‘‘নন্দ-মহোৎসব গায়।’’
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ যত—সবাই হইলা,–গোপীভাবে বিভাবিত
দেখি’,–রাধাভাবে ভোরা গোরা—সবাই,–গোপীভাবে মাতোয়ারা
কীর্ত্তন জনমলীলা।’’
অশেষ-বিশেষে,–নিজ-লীলা-মাধুরী—আস্বাদিছে অবতরি
মহাভাবনিধি প্রকটিলা—আজ,–নবভাবে নবলীলা
আপন,–লীলা—মাধুরী আস্বাদিতে—আপন-লীলা আপনি গায় রে
যাইরে লীলার বালাই যাইরে—আপন-লীলা আপনি গায় রে
বিভাবিত হয়ে রাধাভাবেতে—আপন-লীলা আপনি গায় রে
বঁধুর,–জন্মলীলা গাইতে গাইতে
বিভাবিত হল তারি ভাবেতে—বঁধুর,–জন্মলীলা গাইতে গাইতে
বঁধুর,–জন্মলীলা কীর্ত্তন শুনি’—স্বভাব জাগিল নীলমণির
গোপবেশ নিরমিলা।।’’
আস্বাদিতে নিজ পূরব জন্মলীলা—আজ,–গোপবেশে গৌর সাজিলা
জন্মলীলা আস্বাদিতে—গোপবেশে গৌর নাচে
গোপবেশ গৌর-বিধুর—না জানি সে কতই মধুর
গৌর আমার—‘‘গোপবেশ নিরমিলা।’’
অবনী মাঝরে ঢালি।’’
আমার কাশীমিশ্রালয়—আজ,–হইল যেন নন্দালয়
গৌরাঙ্গের,–গোপবেশের সঙ্গে সঙ্গে—আজ,–হইল যেন নন্দালয়
নাচে গোরা বনমালী।।’’
আজ,–গোপবেশে প্রাণ-গৌর নাচে
কত-মতে কাঁধে ভার করি—আজ,–গোপবেশে প্রাণ-গৌর নাচে
আজ কাশীমিশ্রালয়ে—গোপবেশে গৌর নাচে
গোপবেশে,–পূর্ব্ব জন্মলীলা আস্বাদিতে—গোপবেশে গৌর নাচে
গুপত বেকত করে—গোপবেশে গৌর নাচে
কাঁধে দধিভার করে—গোপবেশে গৌর নাচে
নন্দোৎসব-প্রেমোল্লাসে—গোপবেশ গৌর নাচে
গৌর নাচে গোপবেশে—আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে
গোপবেশে নাচে গৌরহরি—আজ,–নীলচল হইল ব্রজপুরী
কাশীমিশ্রালয় নন্দপুরী—আজ,–নীলাচল হইল ব্রজপুরী
প্রাণ-গৌরাঙ্গের গোপবেশ—সবার স্বরূপ জাগায়ে দিল
গৌর প্রিয়-পরিকর-গণের—সবার স্বরূপ জাগায়ে দিল
ভাবনিধির ভোগের অনুকূল—সবার স্বরূপ জাগায়ে দিল
দেখি,–গোপবেশে শচীসুত—সবে হল,–পূরব-ভাবে উনমত
গৌরাঙ্গের ভাব-মত—সবে হল গোপভাবাবিষ্ট
আনন্দ-আবেশে নাচে।’’
নিতাই-চাঁদের,–গৌরের গোপবেশ দেখে—বলাই-স্বভাব উঠ্ল জেগে
নিতাই,–সময় জেনে সেবা করে—ভাবনিধির ভাব পুষ্টি করে
লগুড় করে নেচে ফিরে—ভাবনিধির ভাব পুষ্টি করে
গোরা-বনমালীর বদন হেরে—নিতাই-বলাই লগুড় করে নাচে
আমার,–ভেইয়া রে কানাইয়া রে বলে—নিতাই-বলাই লগুড় করে নাচে
নাচে তার পাছে পাছে।।’’
গোপবেশে প্রাণ-গৌরাঙ্গ দেখে—সবার,–গোপস্বভাব জেগে উঠ্ল
নিতাই-বলরামের আনুগত্যে—তাদের,–পূরব-স্বভাব জেগে উঠ্ল রে
গোপাল স্বভাব জাগ্ল সবার—হইল সবে ব্রজের রাখাল
কেউ বা শ্রীদাম কেউ বা সুদাম—কেউ সুবল কেউ মধুমঙ্গল
তার আনুগত্যে স্বভাব জেগেছে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে
গোপবেশে হৈ হৈ হৈ ব’লে–নাচে তার পাছে পাছে
হৈ হৈ হৈ রবে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে
গোরা-বনমালীর বদন চেয়ে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে
আরে রে ভেইয়া বলে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে
প্রেমের পাথারে ভাসে।’’
সগণে গৌরের ভাব দেখে—পরস্পর সবাই বলে
নীলাচল-বাসী যত—পরস্পর সবাই বলে
নীলাচলে ব্রজমাধুরী হেরে—আনন্দ আর ধরে না রে
নীলাচল-বাসী সবে—মনে মনে গণে রে
এরা সবে তারাই নাকি—এ যে প্রকট-স্বভাব দেখি
এর আগে কি গোয়ালা ছিল—এই গোপভাব কোথায় পেল
নৈলে,–এ স্বভাব কোথায় পেল—এরা,–পূর্ব্বে বুঝি গোপ ছিল
এরাই তারাই মনে করি—এসেছে ছদ্মরূপ ধরি’
সঙ্গীগণ যেন ব্রজবাল—শচীদুলাল যেন যশোদাদুলাল
এ কি দেখি অপরূপ—নীলাচল কি ব্রজ বল গো
নীলাচল-বাসী আনন্দেতে—কোথা আছে কিছু বুঝ্তে নারে
নীলাচলে কি ব্রজপুরে—কোথা আছে কিছু বুঝ্তে নারে
এ ত নীলাচল নয় ব্রজপুরী—তারা মনে করে এ অভিনয় হেরি
কাশীমিশ্রালয় নয় নন্দভবন—এ নীলাচল নয় বৃন্দাবন
যাঁহা কৃষ্ণ তাঁহা ব্রজ-নীলাচল ব্রজ কেন না হবে
এ ত গুপ্ত-ব্রজ বটে—নীলাচল ব্রজ কেন না হবে
কাশীমিশ্রালয় যেন নন্দালয়—শুধু,—এই মনে হওয়া নয়
ভাগ্যবান্ নীলাচলবাসীর—স্বরূপ জেগে উঠ্ল সবারি
গৌরাঙ্গের গোপরূপ হেরি’—স্বরূপ জেগে উঠল সবারি
হয়ে সবে ব্রজবাসী—তারা,–দেখে গোরায় কালশশী
গৌরের গোপবেশ হেরে—তারা,–ডুব্ল ব্রজলীলা-পাথারে
গোপবেশে হৈ হৈ করে—তারা,–ডুব্ল ব্রজলীলা-পাথারে
প্রেমের পাথারে ভাসে।’’
তারা ত গোপের গণ বটে—নীলাচলবাসী অন্য নয় গো
‘তারা ত গোপের গণ বটে’—
গোপস্বভাব আছে তাদের কাছে—তারা ত গোপের গণ বটে
নীলাচল গুপ্ত-ব্রজ বটে—তারা ত গোপের গণ বটে
‘নীলাচল গুপ্ত-ব্রজ বটে’—
নৈলে,–এ লীলা বা প্রকাশ হবে কেনে—নীলাচল গুপ্ত-ব্রজ বটে
এ জগমোহন দাসে।’’
এ জগমোহন-দাসের—আনন্দ আর ধরে না রে
জগমোহন-লীলা হেরে—আনন্দ আর ধরে না রে
‘জগমোহন-লীলা হেরে’—
জগমোহন-গৌরাঙ্গের—জগমোহন-লীলা হেরে
জগমোহন আনন্দে ভাসে
মোহনের মোহন-লীলা হেরে—জগমোহনের আনন্দ ভাসে
হেরি’ নীলাচলে ব্রজ-মাধুরী—জগমোহনের আনন্দ ভারি
(২)
কৃষ্ণ-জন্ম-যাত্রাদিনে—আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে
ভাগ্যবান্ কাশীমিশ্রের ঘরে—আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে
নন্দমহোৎসব-লীলায়—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
ত্রিকাল-সত্য—লীলায় শ্রীনীলাচল-পুরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
‘ত্রিকাল-সত্য-লীলায় শ্রীনীলাচল-পূরে’—
ভাগ্যবান্ কাশীমিশ্রের ঘরে—ত্রিকাল-সত্য-লীলায় শ্রীনীলাচলপরে(মাতন)
গৌর সাজ্ল গোপবেশেতে—আপন-জন্মলীলা আস্বাদিতে
কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদিতে—গৌর সাজ্ল গোপসাজে
নিজ-ভক্তগণ-সাথে—গৌর সাজ্ল গোপসাজে
নিজগণ-সঙ্গে গৌর আমার—হৈল ব্রজ-গোপের আকার
তাই করিছে ব্রজগোপ ব্যবহার—ও ত সাজা নয় স্বভাবের বিকার
সাজা নয় স্বভাব-বলে—গোপবেশে সেজেছে সবে
মহোৎসব-স্থানে আইলা বলি হরি হরি।।’’
নীলাচলবাসী উঠ্ল শিহরি
প্রাণগৌরের গোপবেশে হেরি’—নীলাচলবাসী উঠ্ল শিহরি
গৌর আমার গোপবেশে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে
নীলাচল-ব্রজপুরে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে
নীলাচল-ব্রজপুরে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে
কাশীমিশ্রালয়ে-নন্দলয়ে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে
কানাই-ঘুটিয়া নন্দ হয়—শুধু বেশ ধরা নয়
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—তারা ত সব ব্রজজন
ব্রজজন-গৌরগণ-রূপে—সবাই ত এসেছে
ব্রজজনের স্বভাব আছে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের গণের মাঝে—ব্রজজনের স্বভাব আছে
আবরণ ভেদ করি—তাই স্বভাব জেগে উঠেছে
গৌরের গোপবেশ দেখে—তাই স্বভাব জেগে উঠেছে
প্রাণের প্রাণ কৃষ্ণ-সনে—সবাই ত এসেছে
ব্রজবাসী গোপগোপী—সবাই ত এসেছে
আজ জাগিল পূরব-স্বভাব
দেখি’ গৌরের গোপভাব—আজ জাগিল পূরব-স্বভাব
ভিতরের ভাব বাইরে প্রকাশ—তাদের শুধু নয় গোপসাজ
অপূর্ণ রস আস্বাদিতে—সবাই ত এসেছে
অপূর্ণ সাধ মিটাইতে—সবাই ত এসেছে
অনুকূল সময় জেনে—সবাই ত এসেছে
মহা-ভাবনিধিকে সুখ দিতে—সবাই ত এসেছে
স্বভাব জেগে উঠেছে—আমি নন্দ মনে হয়েছে
জগন্নাথ-মাহিতি—মনে করে আমি ব্রজেশ্বরী
জগন্নাথ-মাহিতি যশোমতী-ভাবে—আমার নন্দন মনে ভাবে
গোপবেশে গৌর হেরে—আমার নন্দন মনে ভাবে
সবার প্রাণে ভাব আছে—এ ভাবত ধারকরা নয়
লীলা অনুভব করিতে—আস্বাদিতে এসেছে
জগন্নাথ-মাহিতির ব্রজেশ্বরী—আবেশে—স্তন হতে দুগ্ধ ঝরে
গৌর-বদন পানে চেয়ে—স্তন হতে দুগ্ধ ঝরে
ধেয়ে,–কোলে করি মনে করে—স্তন হতে দুগ্ধ ঝরে
এরা সাজে সাজা বলে—আর ত কেউ বলতে নারে
কানাই খুটিয়া জগন্নাথ মাহিতীরে—সাক্ষাৎ নন্দ যশোদা হেরে
সত্য সত্য তাই বটে—এত ভাব হওয়া নয়
এ ত ভাব হওয়া নয়—ব্রজেশ্বরীর স্বভাব আছে
জগন্নাথ-মাহিতির কাছে—ব্রজেশ্বরীর স্বভাব আছে
সার্ব্বভৌম আর পরিছা পাত্র তুলসী।।’’
প্রাণ-গৌরাঙ্গের গোপবেশে দেখে—সবারি স্বভাব জেগেছে
দেখি,–গোপবেশে শচীসুত—সবাই,–স্ব স্ব ভাবে উনমত
নীলাচলে কাশী-মিশ্রালয়ে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
গোপবেশে গৌর সগণে নাচে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
আজ কি আনন্দ নীলাচলে
নন্দমহোৎসব-দিনে—আজ কি আনন্দ নীলাচলে
মহাভাবনিধি গৌর আমার—নীলাচল ভাসালে
আপনার ভোগ-ছলে—নীলাচল ভাসালে
মধুর-শ্রীব্রজলীলা—প্রাণে প্রাণে ভোগ করালে
ভাগ্যবান্ নীলাচল-বাসীকে—প্রাণে প্রাণে ভোগ করালে
ভাবনিধি ভাব স্বভাব দিয়ে—প্রাণে প্রাণে ভোগ করালে
নন্দমহোৎসব-লীলায়—আজ করে প্রভু নৃত্যরঙ্গ
সবার জাগিল ভাব অন্তরঙ্গ—আজ করে প্রভু নৃত্যরঙ্গ
লয়ে শচীদুলাল-নন্দসুত—আজ সকলেই উনমত
আজ,–সবার মনে হতেছে—যেন,–রয়েছে সবে নন্দমহলে
নন্দমহোৎসবে মেতে—যেন,–রয়েছে সবে নন্দমহলে
গোপভাবে করিছে ব্রজবিহার—দেহ স্মৃতি নাইক সবার
সীতানাথের অন্তরে—আনন্দ আর ধরে না রে
গুপত বেকত দেখে—আনন্দ আর ধরে না রে
জানুক সব জগজনা—সীতানাথের মনে এই বাসনা
গৌর আমার ব্রজের কালসোণা—সীতানাথের মনে এই বাসনা
জগবাসী জানুক সকলে—গৌর-রূপে সে এসেছে
যার সন্ধান পায় না বেদে—গৌর-রূপে সেই এসেছে
‘ধার সন্ধান পায় না বেদে’—
কেবল নেতি নেতি বলে—যার সন্ধান পায় না বেদে
সে ত বটে শচীনন্দন
অদ্বয়ব্রহ্ম-নন্দনন্দন—সেই ত বটে শচীনন্দন
অনশনে গঙ্গাতীরে বসে—তারে,–আন্লাম কত কেঁদে কেঁদে
যদি,–কেউ তারে না চিনিল—এনে কি ফল বল বল
গৌর-আনা-ঠাকুর সীতানাথের—সদাই প্রাণ কাঁদছে
মদনগোপালে গৌররূপে—আমার,–আনাই ত বিফল হল
যদি,–জগৎ তারে না চিনিল—আমার,–আনাই ত বিফল হল
জগভরি হোক্ ঘোষণা
গৌর পরতত্ত্ব-সীমা—জগভরি হোক্ ঘোষণা
গৌররূপে ব্রজের কানাই খেলে—জানুক জগজীব সবে
গৌর ব্রজের বংশীধারী—জানুক সবাই জগভরি
তবে,–পূর্ণ হবে আমার উপাসনা—সবাই,–বুঝুক্ ভজুক্ গৌরসোণা
যে এনেছে সে না জানালে—আর কেবা জানাবে
জগজনে গৌর জানায়
সীতানাথ প্রতি-লীলার সহায়—জগজনে গৌর জানায়
গৌর পরিচয় দেয় গৌর-পরিকর-কাছে—সেইত অদ্বৈত-শক্তি বটে
‘গৌর পরিচয় দেয় গৌর-পরিকর-কাছে’
এই সেই,–তোমাদের খেলার সাথী বলে—গৌর পরিচয় দেয়
নৈলে,–কেমন করে খেলা জাগ্বে
যারে লয়ে খেলবে তারে না চিনিলে—নৈলে,–কেমন করে খেলা জাগবে
প্রতিকূল-ব্যবহারে—সীতানাথ ত জানায়ে রে
বিপরীত-ভাব ধরে—সীতানাথ ত জানায় রে
এই সেই প্রভু বলে—সীতানাথ ত জানায় রে
গৌর বনমালী বটে—সীতানাথ ত জানায় রে
ভক্তি-বিরুদ্ধ ব্যাখ্যা করে—এর আগে জানায়েছে
আমার,–গঙ্গাজল তুলসী দেওয়া সেবা নিবে–যদি,–আমার প্রভু এসে থাকে
সীতানাথ ত জানাইল
নৈলে কেবা জান্ত বল—সীতানাথ ত জানাইল
‘নৈলে কেবা জান্ত বল’—
সেই,–জানাতে পারে যার আনানিধি—নৈলে কেবা জান্ত বল
‘সেই,–জানাতে পারে যার আনানিধি’—
মদনগোপাল গৌরকৃতি –সেই,–জানাতে পারে যার আনানিধি
‘মদনগোপাল গৌরকৃতি’—
লয়ে রাধা-ভাব-কান্তি—মদনেগাপাল গৌরাকৃতি
গৌরগুণ সেই ভাল জানে
যে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে অনশনে—গৌরগুণ সেই ভাল জানে
তাই,–জানাতে সাধ জগজনে
নৈলে—কলঙ্ক হবে শান্তিপুরনাথে-নামে—তাই,–জানাতে সাধ জগজনে
সীতানাথের মনে এই সাধ—প্রাণে প্রাণে ভোগ হোক্ সবার
গৌর পরতত্ত্ব-সার—প্রাণে প্রাণে ভোগ হোক্ সবার
নিজ,—আনানিধি বিদিত করতে—সীতানাথের বাসনা চিতে
প্রাণগৌর-আনা-ঠাকুর—সীতানাথের বাসনা চিতে
সবাই,—জানুক আমার গৌরসোণা—সীতানাথের বাসনা চিতে
সবাই,—জানুক গৌর পরতত্ত্ব-সীমা-সীতানাথের বাসনা চিতে
অখিল-রসামৃতময়-মূরতি—আমার,–গৌর পরতত্ত্ব-সীমা
বেদে যারে কিম্ বলে’—
সেই ত,–মূরতি এসেছে—বেদে যারে কিম্ বলে
গুপত করিবে ঘোষণা—আমার,–সীতানাথের এই বাসনা
নীলমণি-ঢাকা কাঁচাসোণা—আমার,–সীতানাথের এই বাসনা
সবাই মজুক্ গৌরগুণ-গানে—সীতানাথের বাসনা মনে
আর থেকো না গুপত
নিজ-স্বরূপ কর বেকত—আর থেকো না গুপত
তুমি,–মহাভাব-প্রেমরস-বারিধি—জগজীবেরে হোক্ অনুভূতি
গৌরের দেখি ব্রজভাবের বিলাস—আজ,–সীতানাথের মনেতে উল্লাস
প্রাণগৌর যে মদনগোপাল—আজ মেনে হল প্রকাশ
গৌরকে পরিস্ফুট কর্বার তরে—সীতানাথ আমার ভঙ্গী করে
লগুড় ফিরাইতে পার তবে জানি গোপ।।’’
তুমি যে গোয়ালা বলে—শুধু,–সাজ সাজ্লে মান্ব না
সাজের পরিচেয় দিতে হবে কাজে—গোপ বলে মানব না সাজে
কিন্তু,–মিলে না ত কাজে কাজে—এমন সাজ ত অনেকে সাজে
স্বভাবের বিকাশ কর ব্যবহারে—তবে,–মান্ব তোমায় গোপ বলে
স্বভাব প্রকট করে দেখাতে হবে—তবে,–মানব তোমায় গোপ বলে
গোপরে স্বভাব দেখাতে হবে—তবে মানব তোমায় গোপ বলে
শুধু,–সাজিলে গোয়ালা মানব না—স্বভাব দেখাইতে হবে
তবে বাসনানা পূরায়ে—আর কি প্রভু রইতে পারে
‘তার বাসনা না পূরায়ে’—
এসেছে যার প্রেম-হুঙ্কারে—তার বাসনা না পূরায়ে
এসেছে বিশ্বম্ভর-নাম ধরে
তার বাসনা পূরাবার তরে—এসেছে বিশ্বম্ভর-নাম ধরে
আপনায় ভজায়ে বিশ্ব ভরে—এসেছে বিশ্বম্ভর-নাম ধরে
আর কি,–গুপ্ত হয়ে রইতে পারে
গৌর,–জগতে ব্যক্ত অদ্বৈত-দ্বারে—আর কি,–গুপ্ত হয়ে রইতে পারে
জগজীবে দেখাইতে—সেই,–তাঁরে এনেছে কেঁদে কেঁদে
সীতানাথ যে পৌর্ণমাসী—স্বভাব জাগায়ে দিল
ভাবের খেলা খেল্তে লাগ্লে—স্বভাব জাগায়ে দিল
সীতানাথ-বচনে গৌরকিশোর—গোপভাবে হইল বিভোর
সীতানাথের পানের চায়—গৌর আমার লগুড় ফিরায়
‘সীতানাথের পানে চায়’—
আড় নয়নে ইঙ্গিতে কয়—সীতানাথের পানে চায়
দেখ দেখ দেখ নাড়া
আমি সত্য গোপ কি না—দেখ দেখ দেখ নাড়া
সাজে গোয়ালা কি কাজে গোয়ালা—দেখ দেখ দেখ নাড়া
আমি,–গোপ কি না দেখ ভাল করে—সীতানাথের পানে চেয়ে ইঙ্গিত করে
আজ,–গোপ-ভাব প্রকট করি’—দেখায় অশেষে বিশেষে
পূরাইতে,–সীতানাথের আভিলাষে প্রভু আমার গোপভাব প্রকাশে
আপনার লাগি’ আনে নাই—তাইতে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে
জগতে ভোগ করাবে বলে—তাইতে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে
গোপভাবের বিকাশ দেখি’—আনন্দ আর ধরে না
গোপভাব করি বিকাশে—পরিচয় দিতেছেন অশেষ-বিশেষে
আমি সত্য ব্রজের গোপ বলে—পরিচয় দিতেছেন অশেষে-বিশেষে
দেখি সবলোক চিত্তে চমৎকার পায়।।’’
স্বভাবের পরিচয় দেখে—মনে মনে সবাই বলে
সেজে গুজে এত হয়নি—একি অপরূপ দেখি
যদি,–নিজ-স্বভাব না থাকে—সেজে গুজে কি এত হয়
গোপবেশে গৌর আমার—দিয়ে স্বভাবের পরিচয়
ব্যবহারে জানা গেল—নিশ্চয়, গৌর আগে গোয়ালা ছিল
নৈলে,–এ স্বভাব কোথায় পেল—নিশ্চয়,–গৌর আগে গোয়ালা ছিল
পূর্ব্ব-স্বভাব না থাকিলে—এত হয় কি অভ্যাস-ফলে
ভিতরেতে গোপ আছে—না না ছিল না আগে
স্বভাবেতে গোয়ালা হয়—গৌরের শুধু গোপ সাজা নয়
নৈলে,–ইথে কি এমন স্বভাব পায়—এ নিশ্চয় গোয়ালা হয়
স্বভাব না থাকিলে ঘটে—নৈলে এমন ব্যবহার কি ঘটে
মনে হয় এই জাতরতি—দেখিয়া গৌরের রীতি
তা ছাড়া অন্য নয়—বলে সবে এই শচীসুত
জানি ভাইয়ের অভিমত-বলরাম-স্বভাবে উনমত
প্রাণের ভাইকে সুখ দিতে চিতে—বলরাম-স্বভাবে উনমত
নিজ-স্বরূপ গোপন করে—এবার,–আস্বাদিতে এসেছে
নিতাই-গৌরের গূঢ় গোপভাব—সেই ত জানিতে পারে
নিতাই-গৌরাঙ্গের গূঢ় লীলা—সেই ত জানিতে পারে
সীতানাথের কৃপা যারে—দোঁহার,–গূঢ় গোপভাব জানিতে পারে
তাদের যে হৃদে ধরে’—দোঁহার,–গূঢ় গোপভাব জানিতে পারে
‘তাদের যে হৃদে ধরে’—
শ্রীগুরু-কৃপাবলে,–তাদের যে হৃদে ধরে
যারে জানায় সেই তো জানে
কৃপা করে নিজগুণে—যারে জানায় সেই তো জানে
আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে
ভাগ্যবান্ নীলাচল-বাসিগণে—আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে
সীতানাথের ইঙ্গিত-ক্রমে—আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে
আপন আস্বাদন-ছলে—আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে
গৌর ব্রজের কালশশী—জান্ল নীলাচল বাসী
গোপভাবের বলিহারি যাই—পুরস্কার দিতে হবে
নিতাই,–কারেও কিছু না বলি—বুঝি,–গূঢ়রূপে আসছেন
আমি হইলাম তোমার পাগড়ী—যাইরে গোপভাবের বলিহারি
বহুমূল্য বস্ত্র প্রভুর মস্তকে বাঁধিল।’’
এ ত বস্ত্র বাঁধা নয় গো—এ যে,–গোয়ালার মাথায় পাগ হল
আরও ভাব পুষ্ট হল—এ যে,–গোয়ালার মাথায় পাগ হল
পরিকর তা পূরণ কৈল—বেশের যেন অভাব ছিল
‘পরিকর তা পূরণ কৈল’—
ভাগ্যবান্ রাজা প্রতাপরুদ্র—পরিকর তা পূরণ কৈল
লীলাশক্তির প্রেরণা পেল—পরিকর তা পূরণ কৈল
মাথায় তারা পাগ বাঁধে—গোপ-জাতির স্বভাব বটে
এবার,–গোপবেশ পূর্ণ হল—এ-অঙ্গের হানি ছিল
পাগ বাঁধা অভাব ছিল—খাঁটি খাঁটি গোয়ালা হল
নন্দ-যশোমতী-ভাবে—হয়ে আছে আবিষ্ট
দেখি গৌরের গোপবেশ—হয়ে আছে আবিষ্ট
নীলাচলে কি ব্রজে আছে—কিছু স্মৃতি নাই তাদের
যেন নন্দালয়ে আছে—মনে মনে এই ভোগ
‘যেন নন্দালয়ে আছে’—
নন্দ-মহোৎসব দেখ্ছে—যেন নন্দালয়ে আছে
নন্দ-যশোমতী-স্বভাবেতে—উনমত হল বাৎসল্যেতে
ঘরে যত ধন ছিল—আবেশে সব বিলাইল
সবে আশীর্ব্বাদ কর গো
যত সব নরনারী—সবে আশীর্ব্বাদ কর গে
পুত্র চিরজীবী হউক্ বলে—সবে আশীর্ব্বাদ কর গো
এইমত খেলা করুক—সবে আশীর্ব্বাদ কর গো
তোমরা সবে আশীর্ব্বাদ কর—কুশলে থাকুক্ পুত্র-রতন
তনয় চিরজীবী হয়ে থাক্–আশীর্ব্বাদ কর সবে
ঘিরে থাকুক পুত্র-রতন—কি হবে সামান্য ধন
ঘরে থাকুক নীলমণি—ধন কড়ি নাহি গণি
পিতামাতা জ্ঞানে দোঁহাকে নমস্কার কৈল।।’’
নীলাচলে—নন্দ-মহোৎসবে-লীলায়—আনন্দের পাথার বয়ে যায়
মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলার—বালাই লয়ে মরে যাই
এইকালে,–ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
নীলাচলে,–কৃষ্ণ-জন্মোৎসব-লীলায়—বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
গোপবেশে নাচে গোরারায়—বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
গৌড়মণ্ডলবাসী নীলাচলবাসী—গৌর নাচিছে,–নিজগণ সঙ্গে করি
গৌড়মণ্ডলবাসী—সবাই ত গিয়াছে
রথযাত্রায় নীলাচলে—সবাই ত গিয়াছে
চাতুর্ম্মাস্যে সবে—প্রাণ-গৌরাঙ্গের কাছে আছে
কৃষ্ণৃ-জন্মলীলা আস্বাদিছে—তাদের,–সবার সনে বিহরিছে
এই,–ত্রিকাল-সত্য-লীলা হেরি—আজ,–উনমত নীলাচলপুরী
বালক বৃদ্ধ পুরুষ নারী—আজ,–উনমত নীলাচলপুরী
দেখি নীলাচলে ব্রজ-মাধুরী—আজ,–উনমত নীলাচলপুরী
মধুর-গোকুলপুরে—আজ কি আনন্দ ব্রজপুরে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—আজ কি আনন্দ ব্রজপুরে
(৩)
শ্রীনন্দ-রাজমহলে—মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে
চেতন পাইয়া পুত্র দেখিল নয়ানে।।’’
যশোমতীর অন্তরে—আনন্দ আর ধরে না রে
নীলমণি কোলে পেয়ে—আনন্দ আর ধরে না রে
কোথা আছ ব্রজরাজ—আইস হে ত্বরা করি
শুনিয়া আইল নন্দ সূতিকা-মন্দিরে।।
হরল গোয়ান দেখি আপন তনয়।’’
আপন তনয় হেরে—ব্রজরাজ মনে করে
কেবা আইল পুত্র-স্থলে—এত রূপ কি হয় মানুষের
অখিল-লাবণ্য-মাধুরী-আলয়—এ কি দেখি অপরূপ তনয়
অখিল-রস পুত্ররূপে—বুঝি মূরতি ধরেছে
একে একে আসি সবে ভরিল ভুবন।।’’
ব্রজ ভরে পড়ল সাড়া—শুনি অপূর্ব্ব-বালকের কথা
বালকের রূপ হেরে—আঁখি পালটিতে নারে
যত পিয়ে পিয়াস বাড়ে—বিধাতারে নিন্দা করে
তারে কি দেয় দুটি নয়ন
যে দেখিবে নন্দনন্দন-বদন—তারে কি দেয় দুটি নয়ন
কেহ,–ফিরে আসতে নারে ঘরে—সবে,–অনিমিখে বদন হেরে
সবার,– আঁখি-পাখী পড়ে রূপ-ফাঁদে
দেখি,–নন্দদুলাল-বদন-চাঁদে—সবার,–আঁখি-পাখী পড়ে রূপ-ফাঁদে
ভুবনমোহন নন্দনন্দন—সবার নয়ন করল আকর্ষণ
বুকে ধরি ঐ তনয়—জগন্নাথ-দাসের মনে হয়
(৪)
মা যোগমায়ার মনে—আনন্দ আর ধরে না
বাসনা পূরণের সূচনা দেখে—আনন্দ আর ধরে না
কবে আসবে দুইজনে
মিলিবে নিকুঞ্জবনে—কবে আসবে দুইজনে
মধুর এই ব্রজবিহার—নয়ন-ভরে দেখ্ব
কত-দিনে হবে বলে—আশা করে বসে আছে
বাসনা পূরণের সূচনা দেখে—আনন্দ আর ধরে না
দেখিল যশোদাপুত্র নন্দগৃহে আসি।।’’
কতদিনে দেখ্ব কালসোণা—দেবীর মনে ছিল বাসনা
বাঞ্ছা পূরণ মন জেনে—আজ আইলেন নন্দভবনে
বহুপুণ্যে এ হেন বালক মিলে তোহে।’’
ও যশোমতী রাণী—তোমার ভাগ্যের সীমা নাহি
না জানি,–কত-কালের পুণ্য-ফলে—এ পুত্র-রত্ন পেয়েছ কোলে
তোমার এই হৃদয়-ধনে—রেখো গো অতি –যতনে
এ রত্ন,–বড় যতনের ধন বটে—রেখো গো অতি-যতনে
যোগমায়া পৌর্ণমাসী—মনে মনে বলে রে
লীলা কর ব্রজভূমে—বাড় তুমি দিনে দিনে
যোগমায়ার চকোর-আঁখি—বহুদিন হতে ছিল উপবাসী
ঐ চাঁদ-মুখ না দেখি’—বহুদিন হতে ছিল উপবাসী
দেখি’ বালক-মুখ-চাঁদা—আজ নয়ন পড়্ল বাঁধা
আনন্দ-ঘন নন্দনন্দন—বলে,–একবার চেয়ে দেখ্রে নয়ন
বাসনা পূরণের দেখি সুচনা—আজ,–আনন্দ আর ধরে না
কবে যুগল আসি খেল্বে—আশা করে বলে আছে
মধুর,–ব্রজবিহার দেখ্ব বলে—আশা করে বসে আছে
যুগল-সেবা-সম্ভার সাজায়ে—আশা করে বসে আছে
চেয়ে নন্দনন্দন-বদন-পানে—আজ,–যোগমায়া মনে মনে গণে
ও রসময় তুমি এলে—কতদিনে দেখা দিবে
ভানুদুলালী-সনে—কতদিনে দেখা দিবে
রস এলে ভাব আসবে—করে সাধ পূর্ণ হবে
স্থির-বিজুরী শ্যাম-নবঘনে—কবে মিলাইব দুইজনে
এই বৃন্দাবনে নিকুঞ্জবনে—কবে মিলাইব দুইজনে
ভাব রসের সম্মিলন—কবে কর্ব দরশন
মেঘ বিজুরী জড়াজড়ি—কবে দেখ্ব নয়ন-ভরি’
(৫)
দেবলোকে দেবগণের—আনন্দ আর ধরে না রে
নন্দের মন্দিরে গোয়ালা আইল ধাইয়া।
হাতে নড়ী কাঁধে ভার নাচে থৈয়া থৈয়া।।’’
গোকুলে গোয়ালা-ঘরে—আনন্দ আর ধরে না রে
গোকুলেতে নন্দালয়ে—আজ,– আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
পাইয়া প্রাণ-গোবিন্দে—আজ,–আনন্দের পাথার বয়ে যায রে
আনন্দ-আবেশে ঢালে নাহিক অবধি।।
গোয়ালা গোয়ালা মেলি করে হুড়াহুড়ি।’’
গোকুলপুরে নন্দের ঘরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
গোকুলের লোক সব বাল বৃদ্ধ নারী।
নয়নে বহয়ে ধারা শিশুমুখ হেরি।।’’
দেখি’ বালক-মুখ-ইন্দু—আজ,–উথলিল আনন্দ-সিন্ধু
ব্রাহ্মণে করয়ে দান যত ইচ্ছা ভরি।।’’
তনয় চিরজীবী হোক্–বলে,–আশীর্ব্বাদ কর গো
সঘনে সবাই বলে হরি হরি বোল।।’’
আজ সব ব্রজবাসী—আনন্দে বলে হরি হরি
নন্দলাল-বদন হেরি—আনন্দে বলে হরি হরি
হরি হরি হরি বোল আজ,–গোকুলপুরে উঠ্ল রোল
নন্দালয়ে কৃষ্ণ-জন্মলীলা—আজ,–বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
তাতে,–ব্রজজন সব দিতেছে সাঁতার—আজ,–বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
(৬)
আজ রোহিণীর মনে—আনন্দ আর ধরে না রে
আনন্দঘনে ঘরে পেয়ে—আনন্দ আর ধরে না রে
রামের দোসর হল জেনে—আনন্দ আর ধরে না রে
দুই ভাই এই আঙ্গিনাতে—সুখে খেলা করবে এবে
দেখ্ব আমি নয়ন-ভরে—সুখে খেলা করবে এবে
যে আনন্দ আজ বলাইয়ের মনে—এ আনন্দ কেবা জানে
হেরব চাঁদ-বদনে—এ আনন্দ কেবা জানে
মায়ের আঁচল করে ধরে—বলরাম আনন্দে ফিরে পিছে
ভাইয়ের চাঁদ-মুখ হেরে—আজ,–আনন্দ আর ধরে না রে
যেন,–পূরণ হল কি অভাব—তাই,–স্বাভাবিক আনন্দের বিকাশ
শ্যামে হেরিয়া রামের—তাই,–স্বাভাবিক আনন্দের বিকাশ
প্রাণের কথা জানায় ইঙ্গিতে—স্পষ্ট ত বলিতে নারে
তার,–পরিচয় যেন কত-কালের—তার ব্যবহার বলে দিছে
‘তার,–পরিচয় যেন কত-কালের’—
প্রাণের যশোদাদুলাল—সনে—তার,–পরিচয় যেন কত-কালের
শুধু নয় তার পরিচিত
প্রাণের যশোদাসুত—শুধু নয় তার পরিচিত
তার,–প্রাণ হতে অধিক প্রিয়—শুধু নয় তার পরিচিত
আবেশে জানাল যাবে সূতিকা-মন্দিরে।।’’
দূরে কি রাম রইতে পারে
প্রাণের প্রাণ শ্যাম ছেড়ে—দূরে কি রাম রইতে পারে
প্রাণ-রঞ্জন সূতিকা-ঘরে—দূরে কি রাম রইতে পারে
সঙ্কর্ষণে শ্যাম আকর্ষণ করে—দূরে কি রাম রইতে পারে
ভেইয়ার প্রেমে মাতাল সদাই—পদ লটপটি পড়ে বলাই
পদ লটপটি পড়া—এ ত নয় বালকের স্বভাব
জানাইছে প্রেমের ব্যবহার—এ ত নয় বালকের স্বভাব
ভাইয়ের প্রেমে বিভোর হয়ে—বলাই,–চলে যেতে ঢলে পড়ে
স্বাভাবিক-প্রেমার ভরে—বলাই,–চলে যেতে ঢলে পড়ে
ভেইয়ার প্রেমার ভরে—আবেশে পড়ে ধরণী-বুকে
ধরণীর বলাই আমার—আবেশে পড়ে ধরণী-বুকে
ধরণীর সৌভাগ্য বাড়াইতে—আবেশে পড়ে ধরণী-বুকে
এতদিনে কোথায় ছিলি ভাই—প্রাণে প্রাণে বলে বলাই
প্রেমের বিকার প্রকাশ পেল—স্বাভাবিক-প্রেমের উদয় হল
আধ আধ বোল বলেবলাই নাচে হেলে দুলে
ভাই কানাই পেয়েছি বলে—বলাই নাচে হেলে দুলে
ভেইয়ার মুখ নিরখিয়া—নাচে বলাই রঙ্গিয়া
মুখে বলে ভেইযা ভেইয়া—নাচে বলাই রঙ্গিয়া
ভাসল নটবর আনন্দ-পাথার।।’’
নটবর শ্যাম-সুন্দরে হেরে—আনন্দ-পাথারে সাঁতারে
নটবরদাস আনন্দে হেরে—আনন্দ-পাথারে সাঁতারে
(৭)
দু’নয়নে বহে ধারা ভাই পানে চাই।।’’
ভাইয়ের চাঁদ-বদন হেরে—বলাই ঝোরে অঝোরে
ভাইয়ের ভাবে মাতোয়ারা—দু’নয়নে বহে ধারা
‘ভাইয়ের ভাবে মাতোয়ারা’—
ওযে,–বলাইয়ের সহজ ধারা—ভাইয়ের ভাবে মাতোয়ারা
আয় বাপ আয় বলে—যশোমতী নিল বলাইকে কোলে
আইস বাপ আইস বলে—যশোমতী নিল বলাইকে কোলে
যেন,–পেল রাণী দুই-ছেলে—যশোমতী নিল বলাইকে কোলে
যশোমতী কোলে কানাই বলাই—যাইরে শোভার বালাই যাই
আমার বলাই-সুন্দর—ভাইয়ের ভাবে গরগর
বসি যশোমতীর কোলে—ভাবভরে বলাই দোলে
চেয়ে ভাই-এর বদন-কমলে—ভাবভরে বলাই দোলে
ভাইয়ের মাধুরী হেরে—ভাবভরে বলাই দোলে
ও ত,–স্বাভাবিক প্রেমের লক্ষণ—ও ত,–বলাইয়ের নয় দোলন
বলরামের আঁখি-চকোর-সুধাপানে হইল বিভোর
বলাইয়ের চকোর-আঁখি—পিপাসিত ছিল রে
ঐ,–চাঁদ-মুখের সুধা পীতে—পিপাসিত ছিল রে
ভাইয়ের,–অলকাবৃত-বদন হেরে—বলাইয়ের,–আঁখি-পলক পড়ে না রে
বংশীগানামৃত-ধাম বিনে—বলাই,–আন দেখে না নয়নে
‘বংশীগানামৃত-ধাম বিনে’—
লাবণ্যামৃত-জন্মস্থান—বংশীগানামৃত-ধাম বিনে
ও ত,–প্রেমের গদগদ-ভাব—ও ত,–বালকের আধ বোল নয় গো
বলতে বলতে হয় স্তব্ধ—ভাবের বোল যে আধ আধ
সে রসের রসিক বিনে—সে,–ভাবের ভাষা বুঝে না আনে
সেবা-বিগ্রহের ভাষা সেব্যই বুঝে—দু’জনের ভাষা দু’জনের বুঝে
সে বোল কেবল ভাই-ই বুঝে—আধ-বোলে যেন বলাই বলে
তোমার এই,–বলাই-দাদারে ছেড়ে—কো-কো-কোথা ছিলে
আধ আধ বোলে বলাই বলে—এই,–দাদাকে কেমনে ভুলে ছিলে
আধ-বাণীতে যেন বলাই বলে—আর থেকো না ভাই কোন-কালে
আমার ঘোর আঁধারে ফেলে—আর থেকো না ভাই কোন-কালে
আমার চোখের আড়াল—আর যেন হয়ো না
বরজ-জনের মনে—আনন্দ আর ধরে না রে
বলরামের ভাব দেখে—আনন্দ আর ধরে না রে
দেখি বলরামের রঙ্গ–সকলের মনে আনন্দ-তরঙ্গ
দেখি,–শ্বেত শ্যাম দুই ভাই—সবার—আনন্দের আর সীমা নাই
‘দেখি,–শ্বেত শ্যাম দুই ভাই’—
যশোমতী-কোলে কানাই বলাই—দেখি,–শ্বেত শ্যাম দুই ভাই
আধ বোলে পরিচয় হল—নয়নে নয়নে জবাব হল
তারাই বুঝ্ল তারাই বুঝ্ল—নয়নে নয়নে জবাব হল
দোঁহে,–দোহায় দেখি আনন্দ অতি—দোঁহার চাঁদ-মুখে হাসি
যেন,–চাঁদ ফেটে ঝরে অমিয়া রাশি—দোঁহার চাঁদ-মুখে হাসি
কানাই-বলাই-রঙ্গ দেখি—আনন্দে অচেতন রাণী
দেখি দোঁহার প্রেম-রীতি—আনন্দে অচেতন রাণী
দেখি,–শ্বেত-শ্যামের মুখ-হাসির ছটা—আনন্দে যশোমতী মাতা
তোমায়,–কাছে দেখ্লে বালক সুখ পায়—হেথা আইস আইস আবার
জন্ম-নিত্যলীলা প্রভু করিলা প্রকাশে।’’
(৮)
ব্রজ ভরিয়া রে, ব্রজ-ভরিয়া রে ।।
জয় জয় ধ্বনি ব্রজ-ভরিয়া রে।
নন্দন পেয়ে ঘরে—আনন্দ আর ধরে না রে
যশোধর যশোদেব, সুদেব আদি গোপ সব রে,
সবে নাচে আনন্দে ভুলিয়া রে ।’’
নন্দনন্দন-বদন হেরে—সবাই নাচে আনন্দ-ভরে
নন্দন পাইয়া নন্দের—আনন্দ আর ধরে না
লাঠি হাতে ভার কাঁধে—নন্দ নাচে আনন্দতে
দেখি বালক-মুখচাঁদে—নন্দ নাচে আনন্দতে
ফিরয়ে বালক-মুখ হেরিয়া রে।
দধি দুগ্ধ ভারে ভারে, ঢালয়ে অবনী-পরে রে,
কেহ শিরে ঢালে দধি ভুলিয়া রে।।
লগুড় লইয়া করে, আওল ধীরে ধীরে রে,
নন্দের জননী নাচে বরীয়সী বুড়িয়া রে।’’
নাতির চাঁদ-বদন হেরে—বুড়ীর,–আনন্দ আর ধরে না রে
আশীষ করয়ে শিশু-বেড়িয়া রে।।’’
বালাই লয়ে আমরা মরি—হয়ে থাক্ শিশু চিরজীবী
এ দাস শিবাই নাচে ফিরিয়া রে।।’’
নন্দের মন্দিরে আজ—আনন্দ আর ধরে না
নীচে সব গোয়ালা—আনন্দ আর ধরে না
হাতী দিয়া ঘোড়া দিয়া আউর দিযা পাল্কী।।’’
হাতী ঘোড়া পালকী—জয় কানাইয়া লাল কী