শ্রীশ্রী নন্দ-মহোৎসব কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌরহরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’

(১)

‘‘পূরব জনম, দিবস দেখিয়া, আবেশে গৌররায়।’’

মহাভাবনিধি গৌর আমার

অশেষ-বিশেষে,–নিজভাব আস্বাদিতে অবতার—মহাভাবনিধি গৌর আমার

গৌর-স্বরূপে এসেছে এবার

অখিল-রসামৃতময়-মুরতি নন্দকুমার—গৌর-স্বরূপে এসেছে এবার

আজ মনে সাধ উঠেছে

পূরব জনম দিবস দেখে—আজ মনে সাধ উঠেছে
নিজ-জন্মলীলা আস্বাদিতে’—
পূরব জনম দিবস দেখে—নিজ-জন্মলীলা আস্বাদিতে
বিভাবিত হয়ে অনুকূল-ভাবে—নিজ-জন্মলীলা আস্বাদিতে

আজ মনে সাধ উঠেছে
আজ,–আস্বাদিতে পূরব জন্মলীলা
আজ,–আস্বাদিতে পূরব জন্মলীলা

কিশোরী-ভাবিত-মতি গোর—আস্বাদিছে পূরব জন্মলীলা

পূরব জনম আস্বাদিছে
অশেষ বিশেষে আস্বাদিছে

মহাভাবে হয়ে ভোরা—অশেষ-বিশেষে আস্বাদিছে

জনম-তিথি আস্বাদিছে

আমাদের,–প্রাণগৌর মহাভাবের নিধি—জনম-তিথি আস্বাদিছে

‘‘আজ নিজগণ লৈয়া, হরষিত হৈয়া’
নন্দ-মহোৎসব গায়।।’’

হয়েছে দোঁহে একঠাঁই

কেবলভাব আস্বাদিতে—হয়েছে দোঁহে একঠাঁই

‘‘নন্দ-মহোৎসব গায়।’’


ভাবিনীর ভাবে গৌর আমার—‘‘নন্দ-মহোৎসব গায়।’’

সবাই হইলা,–গোপীভাবে বিভাবিত

পরাণ-গৌরাঙ্গগণ যত—সবাই হইলা,–গোপীভাবে বিভাবিত

সবাই,–গোপীভাবে মাতোয়ারা

দেখি’,–রাধাভাবে ভোরা গোরা—সবাই,–গোপীভাবে মাতোয়ারা

‘‘খোল করতাল, বাজায়ে রসাল,
কীর্ত্তন জনমলীলা।’’

আস্বাদিছে অবতরি

অশেষ-বিশেষে,–নিজ-লীলা-মাধুরী—আস্বাদিছে অবতরি

আজ,–নবভাবে নবলীলা

মহাভাবনিধি প্রকটিলা—আজ,–নবভাবে নবলীলা

আপন-লীলা আপনি গায় রে

আপন,–লীলা—মাধুরী আস্বাদিতে—আপন-লীলা আপনি গায় রে
যাইরে লীলার বালাই যাইরে—আপন-লীলা আপনি গায় রে
বিভাবিত হয়ে রাধাভাবেতে—আপন-লীলা আপনি গায় রে

বঁধুর,–জন্মলীলা গাইতে গাইতে
বঁধুর,–জন্মলীলা গাইতে গাইতে

বিভাবিত হল তারি ভাবেতে—বঁধুর,–জন্মলীলা গাইতে গাইতে

স্বভাব জাগিল নীলমণির

বঁধুর,–জন্মলীলা কীর্ত্তন শুনি’—স্বভাব জাগিল নীলমণির

‘‘আবেশে আমার, গৌরাঙ্গ সুন্দর,
গোপবেশ নিরমিলা।।’’

আজ,–গোপবেশে গৌর সাজিলা

আস্বাদিতে নিজ পূরব জন্মলীলা—আজ,–গোপবেশে গৌর সাজিলা

গোপবেশে গৌর নাচে

জন্মলীলা আস্বাদিতে—গোপবেশে গৌর নাচে

না জানি সে কতই মধুর

গোপবেশ গৌর-বিধুর—না জানি সে কতই মধুর

‘‘গোপবেশ নিরমিলা।।’’


গৌর আমার—‘‘গোপবেশ নিরমিলা।’’

[মাতন]

‘‘ঘৃত ঘোল দধি, গোরস হলদি,
অবনী মাঝরে ঢালি।’’

আজ,–হইল যেন নন্দালয়

আমার কাশীমিশ্রালয়—আজ,–হইল যেন নন্দালয়
গৌরাঙ্গের,–গোপবেশের সঙ্গে সঙ্গে—আজ,–হইল যেন নন্দালয়

‘‘কাঁধে ভার করি, তাহার উপরি,
নাচে গোরা বনমালী।।’’

গুপত স্বরূপ হইল বেকত
আজ,–গোপবেশে প্রাণ-গৌর নাচে

কত-মতে কাঁধে ভার করি—আজ,–গোপবেশে প্রাণ-গৌর নাচে

গোপবেশে গৌর নাচে

আজ কাশীমিশ্রালয়ে—গোপবেশে গৌর নাচে
গোপবেশে,–পূর্ব্ব জন্মলীলা আস্বাদিতে—গোপবেশে গৌর নাচে
গুপত বেকত করে—গোপবেশে গৌর নাচে
কাঁধে দধিভার করে—গোপবেশে গৌর নাচে
নন্দোৎসব-প্রেমোল্লাসে—গোপবেশ গৌর নাচে

আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে

গৌর নাচে গোপবেশে—আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে

আজ,–নীলাচল হইল ব্রজপুরী

গোপবেশে নাচে গৌরহরি—আজ,–নীলচল হইল ব্রজপুরী
কাশীমিশ্রালয় নন্দপুরী—আজ,–নীলাচল হইল ব্রজপুরী

সবার স্বরূপ জাগায়ে দিল

প্রাণ-গৌরাঙ্গের গোপবেশ—সবার স্বরূপ জাগায়ে দিল
গৌর প্রিয়-পরিকর-গণের—সবার স্বরূপ জাগায়ে দিল
ভাবনিধির ভোগের অনুকূল—সবার স্বরূপ জাগায়ে দিল

সবে হল,–পূরব-ভাবে উনমত

দেখি,–গোপবেশে শচীসুত—সবে হল,–পূরব-ভাবে উনমত

সবে হল গোপভাবাবিষ্ট

গৌরাঙ্গের ভাব-মত—সবে হল গোপভাবাবিষ্ট

‘‘করেতে লগুড়, নিতাই সুন্দর,
আনন্দ-আবেশে নাচে।’’

বলাই-স্বভাব উঠ্‌ল জেগে

নিতাই-চাঁদের,–গৌরের গোপবেশ দেখে—বলাই-স্বভাব উঠ্‌ল জেগে

ভাবনিধির ভাব পুষ্টি করে

নিতাই,–সময় জেনে সেবা করে—ভাবনিধির ভাব পুষ্টি করে
লগুড় করে নেচে ফিরে—ভাবনিধির ভাব পুষ্টি করে

নিতাই-বলাই লগুড় করে নাচে

গোরা-বনমালীর বদন হেরে—নিতাই-বলাই লগুড় করে নাচে
আমার,–ভেইয়া রে কানাইয়া রে বলে—নিতাই-বলাই লগুড় করে নাচে

সবারই স্বভাব জাগ্‌ল রে

‘‘রামাই মহেশ, রাম গৌরদাস,
নাচে তার পাছে পাছে।।’’

সবার,–গোপস্বভাব জেগে উঠ্‌ল

গোপবেশে প্রাণ-গৌরাঙ্গ দেখে—সবার,–গোপস্বভাব জেগে উঠ্‌ল

তাদের,–পূরব-স্বভাব জেগে উঠ্‌ল রে

নিতাই-বলরামের আনুগত্যে—তাদের,–পূরব-স্বভাব জেগে উঠ্‌ল রে

হইল সবে ব্রজের রাখাল

গোপাল স্বভাব জাগ্‌ল সবার—হইল সবে ব্রজের রাখাল

কেউ সুবল কেউ মধুমঙ্গল

কেউ বা শ্রীদাম কেউ বা সুদাম—কেউ সুবল কেউ মধুমঙ্গল

নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে

তার আনুগত্যে স্বভাব জেগেছে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে

নাচে তার পাছে পাছে

গোপবেশে হৈ হৈ হৈ ব’লে–নাচে তার পাছে পাছে

নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে

হৈ হৈ হৈ রবে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে
গোরা-বনমালীর বদন চেয়ে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে
আরে রে ভেইয়া বলে—নিতাই-আনুগত্যে সবাই নাচে

‘‘হেরিয়া যতেক, নীলাচল-লোক,
প্রেমের পাথারে ভাসে।’’

পরস্পর সবাই বলে

সগণে গৌরের ভাব দেখে—পরস্পর সবাই বলে
নীলাচল-বাসী যত—পরস্পর সবাই বলে

আনন্দ আর ধরে না রে

নীলাচলে ব্রজমাধুরী হেরে—আনন্দ আর ধরে না রে

মনে মনে গণে রে

নীলাচল-বাসী সবে—মনে মনে গণে রে

এ যে প্রকট-স্বভাব দেখি

এরা সবে তারাই নাকি—এ যে প্রকট-স্বভাব দেখি

এই গোপভাব কোথায় পেল

এর আগে কি গোয়ালা ছিল—এই গোপভাব কোথায় পেল

এরা,–পূর্ব্বে বুঝি গোপ ছিল

নৈলে,–এ স্বভাব কোথায় পেল—এরা,–পূর্ব্বে বুঝি গোপ ছিল

এসেছে ছদ্মরূপ ধরি’

এরাই তারাই মনে করি—এসেছে ছদ্মরূপ ধরি’

শচীদুলাল যেন যশোদাদুলাল

সঙ্গীগণ যেন ব্রজবাল—শচীদুলাল যেন যশোদাদুলাল

নীলাচল কি ব্রজ হল গো

এ কি দেখি অপরূপ—নীলাচল কি ব্রজ বল গো

কোথা আছে কিছু বুঝ্‌তে নারে

নীলাচল-বাসী আনন্দেতে—কোথা আছে কিছু বুঝ্‌তে নারে
নীলাচলে কি ব্রজপুরে—কোথা আছে কিছু বুঝ্‌তে নারে

তারা মনে করে এ অভিনয় হেরি

এ ত নীলাচল নয় ব্রজপুরী—তারা মনে করে এ অভিনয় হেরি

এ নীলাচল নয় বৃন্দাবন

কাশীমিশ্রালয় নয় নন্দভবন—এ নীলাচল নয় বৃন্দাবন

নীলাচল ব্রজ কেন না হবে

যাঁহা কৃষ্ণ তাঁহা ব্রজ-নীলাচল ব্রজ কেন না হবে
এ ত গুপ্ত-ব্রজ বটে—নীলাচল ব্রজ কেন না হবে

শুধু,–এই মনে হওয়া নয়

কাশীমিশ্রালয় যেন নন্দালয়—শুধু,—এই মনে হওয়া নয়

স্বরূপ জেগে উঠ্‌ল সবারি

ভাগ্যবান্‌ নীলাচলবাসীর—স্বরূপ জেগে উঠ্‌ল সবারি
গৌরাঙ্গের গোপরূপ হেরি’—স্বরূপ জেগে উঠল সবারি

তারা—দেখে গোরায় কালশশী

হয়ে সবে ব্রজবাসী—তারা,–দেখে গোরায় কালশশী

তারা,–ডুব্‌ল ব্রজলীলা-পাথারে

গৌরের গোপবেশ হেরে—তারা,–ডুব্‌ল ব্রজলীলা-পাথারে
গোপবেশে হৈ হৈ করে—তারা,–ডুব্‌ল ব্রজলীলা-পাথারে

‘‘হেরিয়া যতেক, নীলাচল-লোক,
প্রেমের পাথারে ভাসে।’’

নীলাচলবাসী অন্য নয় গো

তারা ত গোপের গণ বটে—নীলাচলবাসী অন্য নয় গো
‘তারা ত গোপের গণ বটে’—
গোপস্বভাব আছে তাদের কাছে—তারা ত গোপের গণ বটে
নীলাচল গুপ্ত-ব্রজ বটে—তারা ত গোপের গণ বটে
‘নীলাচল গুপ্ত-ব্রজ বটে’—
নৈলে,–এ লীলা বা প্রকাশ হবে কেনে—নীলাচল গুপ্ত-ব্রজ বটে

‘‘দেখিয়া বিভোর, আনন্দ সাগর,
এ জগমোহন দাসে।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

এ জগমোহন-দাসের—আনন্দ আর ধরে না রে
জগমোহন-লীলা হেরে—আনন্দ আর ধরে না রে
‘জগমোহন-লীলা হেরে’—
জগমোহন-গৌরাঙ্গের—জগমোহন-লীলা হেরে

আনন্দ আর ধরে না রে
জগমোহন আনন্দে ভাসে

মোহনের মোহন-লীলা হেরে—জগমোহনের আনন্দ ভাসে

জগমোহনের আনন্দ ভারি

হেরি’ নীলাচলে ব্রজ-মাধুরী—জগমোহনের আনন্দ ভারি

(মাতন)

(২)

‘‘কৃষ্ণ-জন্ম-যাত্রাদিনে নন্দমহোৎসব।’’

আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে

কৃষ্ণ-জন্ম-যাত্রাদিনে—আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে
ভাগ্যবান্‌ কাশীমিশ্রের ঘরে—আজ,–কি আনন্দ নীলাচলে

আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

নন্দমহোৎসব-লীলায়—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
ত্রিকাল-সত্য—লীলায় শ্রীনীলাচল-পুরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
‘ত্রিকাল-সত্য-লীলায় শ্রীনীলাচল-পূরে’—
ভাগ্যবান্‌ কাশীমিশ্রের ঘরে—ত্রিকাল-সত্য-লীলায় শ্রীনীলাচলপরে(মাতন)

আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

‘‘গোপবেশ হইলা প্রভু লৈয়া ভক্তসব।।’’

আপন-জন্মলীলা আস্বাদিতে

গৌর সাজ্‌ল গোপবেশেতে—আপন-জন্মলীলা আস্বাদিতে

গৌর সাজ্‌ল গোপসাজে

কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদিতে—গৌর সাজ্‌ল গোপসাজে
নিজ-ভক্তগণ-সাথে—গৌর সাজ্‌ল গোপসাজে

হৈল ব্রজ-গোপের আকার

নিজগণ-সঙ্গে গৌর আমার—হৈল ব্রজ-গোপের আকার

ও ত সাজা নয় স্বাভাবের বিকার

তাই করিছে ব্রজগোপ ব্যবহার—ও ত সাজা নয় স্বভাবের বিকার

‘‘দধি-দুগ্ধ-ভার সবে নিজ-কান্ধে করি।’’

গোপবেশে সেজেছে সবে

সাজা নয় স্বভাব-বলে—গোপবেশে সেজেছে সবে

‘‘দধি-দুগ্ধ-ভার সবে নিজ-কান্ধে করি।
মহোৎসব-স্থানে আইলা বলি হরি হরি।।’’

আইলা,–সগণে আমার গৌরহরি
নীলাচলবাসী উঠ্‌ল শিহরি

প্রাণগৌরের গোপবেশে হেরি’—নীলাচলবাসী উঠ্‌ল শিহরি

কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে

গৌর আমার গোপবেশে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে
নীলাচল-ব্রজপুরে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে
নীলাচল-ব্রজপুরে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে
কাশীমিশ্রালয়ে-নন্দলয়ে—কৃষ্ণ-জন্মলীলা আস্বাদে

(মাতন)

‘‘কানাই খুটিয়া আছে নন্দবেশ ধরি।’’

শুধু বেশ ধরা নয়

কানাই-ঘুটিয়া নন্দ হয়—শুধু বেশ ধরা নয়

তারা ত সব ব্রজজন

পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—তারা ত সব ব্রজজন

সবাই ত এসেছে

ব্রজজন-গৌরগণ-রূপে—সবাই ত এসেছে

না না তা নয়
ব্রজজনের স্বভাব আছে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের গণের মাঝে—ব্রজজনের স্বভাব আছে

তাই স্বভাব জেগে উঠেছে

আবরণ ভেদ করি—তাই স্বভাব জেগে উঠেছে
গৌরের গোপবেশ দেখে—তাই স্বভাব জেগে উঠেছে

সবাই ত এসেছে

প্রাণের প্রাণ কৃষ্ণ-সনে—সবাই ত এসেছে
ব্রজবাসী গোপগোপী—সবাই ত এসেছে

এরা ত তারাই বটে
আজ জাগিল পূরব-স্বভাব

দেখি’ গৌরের গোপভাব—আজ জাগিল পূরব-স্বভাব

তাদের শুধু নয় গোপসাজ

ভিতরের ভাব বাইরে প্রকাশ—তাদের শুধু নয় গোপসাজ

(মাতন)
সবাই ত এসেছে

অপূর্ণ রস আস্বাদিতে—সবাই ত এসেছে
অপূর্ণ সাধ মিটাইতে—সবাই ত এসেছে
অনুকূল সময় জেনে—সবাই ত এসেছে
মহা-ভাবনিধিকে সুখ দিতে—সবাই ত এসেছে

‘‘কানাই-খুটিয়া আছে নন্দবেশ ধরি।’’

আমি নন্দ মনে হয়েছে

স্বভাব জেগে উঠেছে—আমি নন্দ মনে হয়েছে

আজ,–আমার গোপালের জন্মতিথি

‘‘জগন্নাথ-মাহিতি হইয়াছে ব্রজেশ্বরী।’’

মনে করে আমি ব্রজেশ্বরী

জগন্নাথ-মাহিতি—মনে করে আমি ব্রজেশ্বরী

আমার নন্দন মনে ভাব

জগন্নাথ-মাহিতি যশোমতী-ভাবে—আমার নন্দন মনে ভাবে
গোপবেশে গৌর হেরে—আমার নন্দন মনে ভাবে

এ ভাবত ধারকরা নয়

সবার প্রাণে ভাব আছে—এ ভাবত ধারকরা নয়

আস্বাদিতে এসেছে

লীলা অনুভব করিতে—আস্বাদিতে এসেছে

স্তন হতে দুগ্ধ ঝরে

জগন্নাথ-মাহিতির ব্রজেশ্বরী—আবেশে—স্তন হতে দুগ্ধ ঝরে
গৌর-বদন পানে চেয়ে—স্তন হতে দুগ্ধ ঝরে
ধেয়ে,–কোলে করি মনে করে—স্তন হতে দুগ্ধ ঝরে

আর ত কেউ বলতে নারে

এরা সাজে সাজা বলে—আর ত কেউ বলতে নারে

সাক্ষাৎ নন্দ যশোদা দেখে

কানাই খুটিয়া জগন্নাথ মাহিতীরে—সাক্ষাৎ নন্দ যশোদা হেরে

এ ত ভাব হওয়া নয়

সত্য সত্য তাই বটে—এত ভাব হওয়া নয়

ব্রজেশ্বরীর স্বভাব আছে

এ ত ভাব হওয়া নয়—ব্রজেশ্বরীর স্বভাব আছে
জগন্নাথ-মাহিতির কাছে—ব্রজেশ্বরীর স্বভাব আছে

‘‘আপনে শ্রীপ্রতাপরুদ্র আর মিশ্র কাশী।
সার্ব্বভৌম আর পরিছা পাত্র তুলসী।।’’

সবারি স্বভাব জেগেছে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের গোপবেশে দেখে—সবারি স্বভাব জেগেছে

সবাই,–স্ব স্ব ভাবে উনমত

দেখি,–গোপবেশে শচীসুত—সবাই,–স্ব স্ব ভাবে উনমত

‘‘ইহা সবা লইয়া প্রভু করে নৃত্যরঙ্গ।’’

আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

নীলাচলে কাশী-মিশ্রালয়ে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
গোপবেশে গৌর সগণে নাচে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

আজ নীলাচলে কি আনন্দ
আজ কি আনন্দ নীলাচলে

নন্দমহোৎসব-দিনে—আজ কি আনন্দ নীলাচলে

নীলাচল ভাসালে

মহাভাবনিধি গৌর আমার—নীলাচল ভাসালে
আপনার ভোগ-ছলে—নীলাচল ভাসালে

প্রাণে প্রাণে ভোগ করালে

মধুর-শ্রীব্রজলীলা—প্রাণে প্রাণে ভোগ করালে
ভাগ্যবান্‌ নীলাচল-বাসীকে—প্রাণে প্রাণে ভোগ করালে
ভাবনিধি ভাব স্বভাব দিয়ে—প্রাণে প্রাণে ভোগ করালে

আজ করে প্রভু নৃত্যরঙ্গ

নন্দমহোৎসব-লীলায়—আজ করে প্রভু নৃত্যরঙ্গ
সবার জাগিল ভাব অন্তরঙ্গ—আজ করে প্রভু নৃত্যরঙ্গ

(মাতন)

‘‘দধি-দুগ্ধ-হরিদ্রাজলে ভরে সবার অঙ্গ।’’

আজ সকলেই উনমত

লয়ে শচীদুলাল-নন্দসুত—আজ সকলেই উনমত

যেন,–রয়েছে সরে নন্দমহলে

আজ,–সবার মনে হতেছে—যেন,–রয়েছে সবে নন্দমহলে
নন্দমহোৎসবে মেতে—যেন,–রয়েছে সবে নন্দমহলে

দেহস্মৃতি নাইক সবার

গোপভাবে করিছে ব্রজবিহার—দেহ স্মৃতি নাইক সবার

(মাতন)
দেখি,–‘‘অদ্বৈত কহে সত্য কহি না করিহ কোপ।’’
আনন্দ আর ধরে না রে

সীতানাথের অন্তরে—আনন্দ আর ধরে না রে
গুপত বেকত দেখে—আনন্দ আর ধরে না রে

সীতানাথের মনে এই বাসনা

জানুক সব জগজনা—সীতানাথের মনে এই বাসনা
গৌর আমার ব্রজের কালসোণা—সীতানাথের মনে এই বাসনা

গৌর-রূপে সেই এসেছে

জগবাসী জানুক সকলে—গৌর-রূপে সে এসেছে
যার সন্ধান পায় না বেদে—গৌর-রূপে সেই এসেছে
‘ধার সন্ধান পায় না বেদে’—
কেবল নেতি নেতি বলে—যার সন্ধান পায় না বেদে

গৌর-রূপে সেই এসেছে
সে ত বটে শচীনন্দন

অদ্বয়ব্রহ্ম-নন্দনন্দন—সেই ত বটে শচীনন্দন

(মাতন)
তারে,–আন্‌লাম কত কেঁদে কেঁদে

অনশনে গঙ্গাতীরে বসে—তারে,–আন্‌লাম কত কেঁদে কেঁদে

এনে কি ফল হল বল

যদি,–কেউ তারে না চিনিল—এনে কি ফল বল বল

সদাই প্রাণ কাঁদ্‌ছে

গৌর-আনা-ঠাকুর সীতানাথের—সদাই প্রাণ কাঁদছে

আমার,–আনাই ত বিফল হল

মদনগোপালে গৌররূপে—আমার,–আনাই ত বিফল হল
যদি,–জগৎ তারে না চিনিল—আমার,–আনাই ত বিফল হল

সীতানাথের এই বাসনা
জগভরি হোক্‌ ঘোষণা

গৌর পরতত্ত্ব-সীমা—জগভরি হোক্‌ ঘোষণা

জানুক জগজীব সবে

গৌররূপে ব্রজের কানাই খেলে—জানুক জগজীব সবে

জানুক সবাই জগভরি

গৌর ব্রজের বংশীধারী—জানুক সবাই জগভরি

সবাই,–বঝুক্‌ ভজুক্‌ গৌরসোণা

তবে,–পূর্ণ হবে আমার উপাসনা—সবাই,–বুঝুক্‌ ভজুক্‌ গৌরসোণা

(মাতন)
আর কেবা জানাবে

যে এনেছে সে না জানালে—আর কেবা জানাবে

প্রথম হতে সীতানাথ
জগজনে গৌর জানায়

সীতানাথ প্রতি-লীলার সহায়—জগজনে গৌর জানায়

সেই ত অদ্বৈত-শক্তি বটে

গৌর পরিচয় দেয় গৌর-পরিকর-কাছে—সেইত অদ্বৈত-শক্তি বটে
‘গৌর পরিচয় দেয় গৌর-পরিকর-কাছে’
এই সেই,–তোমাদের খেলার সাথী বলে—গৌর পরিচয় দেয়

গৌর-পরিকর-কাছে
নৈলে,–কেমন করে খেলা জাগ্‌বে

যারে লয়ে খেলবে তারে না চিনিলে—নৈলে,–কেমন করে খেলা জাগবে

সীতানাথ ত জানায় রে

প্রতিকূল-ব্যবহারে—সীতানাথ ত জানায়ে রে
বিপরীত-ভাব ধরে—সীতানাথ ত জানায় রে
এই সেই প্রভু বলে—সীতানাথ ত জানায় রে
গৌর বনমালী বটে—সীতানাথ ত জানায় রে

এর আগে জানায়েছে

ভক্তি-বিরুদ্ধ ব্যাখ্যা করে—এর আগে জানায়েছে

প্রাণে প্রাণে তার এই কথা
যদি,–আমার প্রভু এসে থাকে

আমার,–গঙ্গাজল তুলসী দেওয়া সেবা নিবে–যদি,–আমার প্রভু এসে থাকে

প্রথম হতেই বিপরীত রীতি
সীতানাথ ত জানাইল

নৈলে কেবা জান্‌ত বল—সীতানাথ ত জানাইল
‘নৈলে কেবা জান্‌ত বল’—
সেই,–জানাতে পারে যার আনানিধি—নৈলে কেবা জান্‌ত বল
‘সেই,–জানাতে পারে যার আনানিধি’—
মদনগোপাল গৌরকৃতি –সেই,–জানাতে পারে যার আনানিধি
‘মদনগোপাল গৌরকৃতি’—
লয়ে রাধা-ভাব-কান্তি—মদনেগাপাল গৌরাকৃতি

সেই,–জানাতে পারে যার আনানিধি
গৌরগুণ সেই ভাল জানে

যে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে অনশনে—গৌরগুণ সেই ভাল জানে

একা জেনে শান্তি নাই প্রাণে
তাই,–জানাতে সাধ জগজনে

নৈলে—কলঙ্ক হবে শান্তিপুরনাথে-নামে—তাই,–জানাতে সাধ জগজনে

প্রাণে প্রাণে ভোগ হোক সবার

সীতানাথের মনে এই সাধ—প্রাণে প্রাণে ভোগ হোক্‌ সবার
গৌর পরতত্ত্ব-সার—প্রাণে প্রাণে ভোগ হোক্‌ সবার

সীতানাথের বাসনা চিতে

নিজ,—আনানিধি বিদিত করতে—সীতানাথের বাসনা চিতে
প্রাণগৌর-আনা-ঠাকুর—সীতানাথের বাসনা চিতে
সবাই,—জানুক আমার গৌরসোণা—সীতানাথের বাসনা চিতে
সবাই,—জানুক গৌর পরতত্ত্ব-সীমা-সীতানাথের বাসনা চিতে

আমার,—গৌর পরতত্ত্ব-সীমা

অখিল-রসামৃতময়-মূরতি—আমার,–গৌর পরতত্ত্ব-সীমা

সেই ত এসেছে

বেদে যারে কিম্‌ বলে’—
সেই ত,–মূরতি এসেছে—বেদে যারে কিম্‌ বলে

আমার,–সীতানাথের এই বাসনা

গুপত করিবে ঘোষণা—আমার,–সীতানাথের এই বাসনা
নীলমণি-ঢাকা কাঁচাসোণা—আমার,–সীতানাথের এই বাসনা

সীতানাথের বাসনা মনে

সবাই মজুক্‌ গৌরগুণ-গানে—সীতানাথের বাসনা মনে

(মাতন)
প্রাণে প্রাণে সীতানাথ বলে
আর থেকো না গুপত

নিজ-স্বরূপ কর বেকত—আর থেকো না গুপত

(মাতন)
জগজীবের হোক্‌ অনুভূতি

তুমি,–মহাভাব-প্রেমরস-বারিধি—জগজীবেরে হোক্‌ অনুভূতি

আজ,–সীতানাথের মনেতে উল্লাস

গৌরের দেখি ব্রজভাবের বিলাস—আজ,–সীতানাথের মনেতে উল্লাস

আজ মেনে হল প্রকাশ

প্রাণগৌর যে মদনগোপাল—আজ মেনে হল প্রকাশ

সীতানাথ আমার ভঙ্গী করে

গৌরকে পরিস্ফুট কর্‌বার তরে—সীতানাথ আমার ভঙ্গী করে

‘‘অদ্বৈত কহে সত্য কহি না করিহ কোপ।
লগুড় ফিরাইতে পার তবে জানি গোপ।।’’

শুধু,–সাজ সাজ্‌লে মান্‌ব না

তুমি যে গোয়ালা বলে—শুধু,–সাজ সাজ্‌লে মান্‌ব না

গোপ বলে মান্‌ব না সাজে

সাজের পরিচেয় দিতে হবে কাজে—গোপ বলে মানব না সাজে

এমন সাজ্‌ ত অনেকে সাজে

কিন্তু,–মিলে না ত কাজে কাজে—এমন সাজ ত অনেকে সাজে

তবে,–মানব তোমায় গোপ বলে

স্বভাবের বিকাশ কর ব্যবহারে—তবে,–মান্‌ব তোমায় গোপ বলে
স্বভাব প্রকট করে দেখাতে হবে—তবে,–মানব তোমায় গোপ বলে
গোপরে স্বভাব দেখাতে হবে—তবে মানব তোমায় গোপ বলে

স্বভাব দেখাইতে হবে

শুধু,–সাজিলে গোয়ালা মানব না—স্বভাব দেখাইতে হবে

‘‘লগুড় ফিরাইতে পার তবে জানি গোপ।।’’

আর কি প্রভু রইতে পারে

তবে বাসনানা পূরায়ে—আর কি প্রভু রইতে পারে
‘তার বাসনা না পূরায়ে’—
এসেছে যার প্রেম-হুঙ্কারে—তার বাসনা না পূরায়ে

আর কি প্রভু রইতে পারে
এসেছে বিশ্বম্ভর-নাম ধরে

তার বাসনা পূরাবার তরে—এসেছে বিশ্বম্ভর-নাম ধরে
আপনায় ভজায়ে বিশ্ব ভরে—এসেছে বিশ্বম্ভর-নাম ধরে

আর কি প্রভু রইতে পারে
আর কি,–গুপ্ত হয়ে রইতে পারে

গৌর,–জগতে ব্যক্ত অদ্বৈত-দ্বারে—আর কি,–গুপ্ত হয়ে রইতে পারে

সেই,–তাঁরে এনেছে কেঁদে কেঁদে

জগজীবে দেখাইতে—সেই,–তাঁরে এনেছে কেঁদে কেঁদে

‘‘তবে লগুড় লইয়া প্রভু ফিরাইতে লাগিলা।’’

স্বভাব জাগায়ে দিল

সীতানাথ যে পৌর্ণমাসী—স্বভাব জাগায়ে দিল
ভাবের খেলা খেল্‌তে লাগ্‌লে—স্বভাব জাগায়ে দিল

‘‘বার বার আকাশে তুলি লুফিয়া ধরিলা।।’’

গোপভাব হইল বিভোর

সীতানাথ-বচনে গৌরকিশোর—গোপভাবে হইল বিভোর

গৌর আমার লগুড় ফিরায়

সীতানাথের পানের চায়—গৌর আমার লগুড় ফিরায়
‘সীতানাথের পানে চায়’—
আড় নয়নে ইঙ্গিতে কয়—সীতানাথের পানে চায়

গৌর আমার লগুড় ফিরায়
দেখ দেখ দেখ নাড়া

আমি সত্য গোপ কি না—দেখ দেখ দেখ নাড়া
সাজে গোয়ালা কি কাজে গোয়ালা—দেখ দেখ দেখ নাড়া

সীতানাথের পানে চেয়ে ইঙ্গিত করে

আমি,–গোপ কি না দেখ ভাল করে—সীতানাথের পানে চেয়ে ইঙ্গিত করে

‘‘শিরের উপরে পৃষ্ঠে সম্মুখে দুই পাশে।’’

দেখায় অসেষে বিশেষে

আজ,–গোপ-ভাব প্রকট করি’—দেখায় অশেষে বিশেষে

প্রভু আমার গোপভাব প্রকাশে

পূরাইতে,–সীতানাথের আভিলাষে প্রভু আমার গোপভাব প্রকাশে

তাইতে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে

আপনার লাগি’ আনে নাই—তাইতে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে
জগতে ভোগ করাবে বলে—তাইতে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে

আনন্দ আর ধরে না

গোপভাবের বিকাশ দেখি’—আনন্দ আর ধরে না

‘‘পাদ-মধ্যে ফিরায় লগুড় দেখি লোক হাসে।।’’

আজ,–পরিচয় দিতেছেন অশেষ-বিশেষে

গোপভাব করি বিকাশে—পরিচয় দিতেছেন অশেষ-বিশেষে
আমি সত্য ব্রজের গোপ বলে—পরিচয় দিতেছেন অশেষে-বিশেষে

‘‘আলাত-চক্রের প্রায় লগুড় ফিরায়।
দেখি সবলোক চিত্তে চমৎকার পায়।।’’

মনে মনে সবাই বলে

স্বভাবের পরিচয় দেখে—মনে মনে সবাই বলে

একি অপরূপ দেখি

সেজে গুজে এত হয়নি—একি অপরূপ দেখি

সেজে গুজে কি এত হয়

যদি,–নিজ-স্বভাব না থাকে—সেজে গুজে কি এত হয়

দিয়ে স্বভাবের পরিচয়

গোপবেশে গৌর আমার—দিয়ে স্বভাবের পরিচয়

(মাতন)
নিশ্চয়,–গৌর আগে গোয়ালা ছিল

ব্যবহারে জানা গেল—নিশ্চয়, গৌর আগে গোয়ালা ছিল
নৈলে,–এ স্বভাব কোথায় পেল—নিশ্চয়,–গৌর আগে গোয়ালা ছিল

এত হয় কি অভ্যাস-ফলে

পূর্ব্ব-স্বভাব না থাকিলে—এত হয় কি অভ্যাস-ফলে

না না ছিল না আগে

ভিতরেতে গোপ আছে—না না ছিল না আগে

গৌরের শুধু গোপ সাজা নয়

স্বভাবেতে গোয়ালা হয়—গৌরের শুধু গোপ সাজা নয়

এ নিশ্চয় গোয়ালা হয়

নৈলে,–ইথে কি এমন স্বভাব পায়—এ নিশ্চয় গোয়ালা হয়

নৈলে এমন ব্যবহার কি ঘটে

স্বভাব না থাকিলে ঘটে—নৈলে এমন ব্যবহার কি ঘটে

দেখিয়া গৌরের রীতি

মনে হয় এই জাতরতি—দেখিয়া গৌরের রীতি

বলে সবে এই শচীসুত

তা ছাড়া অন্য নয়—বলে সবে এই শচীসুত

‘‘এই মত নিত্যানন্দ ফিরায় লগুড়।’’

বলরাম-স্বভাবে উনমত

জানি ভাইয়ের অভিমত-বলরাম-স্বভাবে উনমত
প্রাণের ভাইকে সুখ দিতে চিতে—বলরাম-স্বভাবে উনমত

‘‘কে জানিবে তাঁহা দোঁহার গোপভাব গূঢ়।।’’

এবার,–আস্বাদিতে এসেছে

নিজ-স্বরূপ গোপন করে—এবার,–আস্বাদিতে এসেছে

সেই ত জানিতে পারে

নিতাই-গৌরের গূঢ় গোপভাব—সেই ত জানিতে পারে
নিতাই-গৌরাঙ্গের গূঢ় লীলা—সেই ত জানিতে পারে

দোঁহার,–গূঢ় গোপভাব জানিতে পারে

সীতানাথের কৃপা যারে—দোঁহার,–গূঢ় গোপভাব জানিতে পারে
তাদের যে হৃদে ধরে’—দোঁহার,–গূঢ় গোপভাব জানিতে পারে
‘তাদের যে হৃদে ধরে’—
শ্রীগুরু-কৃপাবলে,–তাদের যে হৃদে ধরে

দোঁহার,–গূঢ় গোপভাব জানিতে পারে
যারে জানায় সেই তো জানে

কৃপা করে নিজগুণে—যারে জানায় সেই তো জানে

সেই তো জানিতে পারে
আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে

ভাগ্যবান্‌ নীলাচল-বাসিগণে—আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে
সীতানাথের ইঙ্গিত-ক্রমে—আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে
আপন আস্বাদন-ছলে—আজ,–জানাইছেন নিজ-গুণে

জানাল নীলাচলবাসী

গৌর ব্রজের কালশশী—জান্‌ল নীলাচল বাসী

‘‘প্রতাপরুদ্রের আজ্ঞায় পড়িছা তুলসী।’’

পুরস্কার দিতে হবে

গোপভাবের বলিহারি যাই—পুরস্কার দিতে হবে

বুঝি,–গূঢ়রূপে আসছেন

নিতাই,–কারেও কিছু না বলি—বুঝি,–গূঢ়রূপে আসছেন

যাইরে,–গোপভাবের বলিহারি

আমি হইলাম তোমার পাগড়ী—যাইরে গোপভাবের বলিহারি

‘‘জগন্নাথের প্রসাদ এক বস্ত্র লইয়া আসি।।
বহুমূল্য বস্ত্র প্রভুর মস্তকে বাঁধিল।’’

এ যে,–গোয়ালার মাথায় পাগ হল

এ ত বস্ত্র বাঁধা নয় গো—এ যে,–গোয়ালার মাথায় পাগ হল
আরও ভাব পুষ্ট হল—এ যে,–গোয়ালার মাথায় পাগ হল

বেশের যেন অভাব ছিল

পরিকর তা পূরণ কৈল—বেশের যেন অভাব ছিল
‘পরিকর তা পূরণ কৈল’—
ভাগ্যবান্‌ রাজা প্রতাপরুদ্র—পরিকর তা পূরণ কৈল
লীলাশক্তির প্রেরণা পেল—পরিকর তা পূরণ কৈল

গোপ-জাতি স্বভাব বটে

মাথায় তারা পাগ বাঁধে—গোপ-জাতির স্বভাব বটে

এ-অঙ্গের হানি ছিল

এবার,–গোপবেশ পূর্ণ হল—এ-অঙ্গের হানি ছিল

‘‘আচার্য্যাদি প্রভুর সবগণে পরাইল।।’’

খাঁটি খাঁটি গোয়ালা হল

পাগ বাঁধা অভাব ছিল—খাঁটি খাঁটি গোয়ালা হল

‘‘কানাই খুঁটিয়া জগন্নাথ দুইজন।’’

হয়ে আছে আবিষ্ট

নন্দ-যশোমতী-ভাবে—হয়ে আছে আবিষ্ট
দেখি গৌরের গোপবেশ—হয়ে আছে আবিষ্ট

কিছু স্মৃতি নাই তাদের

নীলাচলে কি ব্রজে আছে—কিছু স্মৃতি নাই তাদের

মনে মনে এই ভোগ

যেন নন্দালয়ে আছে—মনে মনে এই ভোগ
‘যেন নন্দালয়ে আছে’—
নন্দ-মহোৎসব দেখ্‌ছে—যেন নন্দালয়ে আছে

[মাতন]
নন্দ-যশোদার স্বভাবেতে

‘‘আবেশে বিলাইল ঘরে ছিল যত ধন।।’’

উনমত হল বাৎসল্যেতে

নন্দ-যশোমতী-স্বভাবেতে—উনমত হল বাৎসল্যেতে

আবেশে সব বিলাইল

ঘরে যত ধন ছিল—আবেশে সব বিলাইল

কর-যোড়ে প্রার্থনা করে
সবে আশীর্ব্বাদ কর গো

যত সব নরনারী—সবে আশীর্ব্বাদ কর গে
পুত্র চিরজীবী হউক্‌ বলে—সবে আশীর্ব্বাদ কর গো
এইমত খেলা করুক—সবে আশীর্ব্বাদ কর গো

কুশলে থাকুক্‌ পুত্র-রতন

তোমরা সবে আশীর্ব্বাদ কর—কুশলে থাকুক্‌ পুত্র-রতন

আশীর্ব্বাদ কর সবে

তনয় চিরজীবী হয়ে থাক্‌–আশীর্ব্বাদ কর সবে

কি হবে সামান্য ধন

ঘিরে থাকুক পুত্র-রতন—কি হবে সামান্য ধন

ধন কড়ি নাহি গণি

ঘরে থাকুক নীলমণি—ধন কড়ি নাহি গণি

‘‘দেখি মহাপ্রভু বড় সন্তোষ পাইল।
পিতামাতা জ্ঞানে দোঁহাকে নমস্কার কৈল।।’’

আনন্দের পাথার বয়ে যায়

নীলাচলে—নন্দ-মহোৎসবে-লীলায়—আনন্দের পাথার বয়ে যায়

বালাই লয়ে মরে যাই

মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলার—বালাই লয়ে মরে যাই

বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার

এইকালে,–ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
নীলাচলে,–কৃষ্ণ-জন্মোৎসব-লীলায়—বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
গোপবেশে নাচে গোরারায়—বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার

গৌর নাচিছে,–নিজগণ সঙ্গে করি

গৌড়মণ্ডলবাসী নীলাচলবাসী—গৌর নাচিছে,–নিজগণ সঙ্গে করি

সবাই ত গিয়াছে

গৌড়মণ্ডলবাসী—সবাই ত গিয়াছে
রথযাত্রায় নীলাচলে—সবাই ত গিয়াছে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের কাছে আছে

চাতুর্ম্মাস্যে সবে—প্রাণ-গৌরাঙ্গের কাছে আছে

তাদের,–সবার সনে বিহরিছে

কৃষ্ণৃ-জন্মলীলা আস্বাদিছে—তাদের,–সবার সনে বিহরিছে

আজ,–উনমত নীলাচলপুরী

এই,–ত্রিকাল-সত্য-লীলা হেরি—আজ,–উনমত নীলাচলপুরী
বালক বৃদ্ধ পুরুষ নারী—আজ,–উনমত নীলাচলপুরী
দেখি নীলাচলে ব্রজ-মাধুরী—আজ,–উনমত নীলাচলপুরী

আজ কি আনন্দ ব্রজপুরে

মধুর-গোকুলপুরে—আজ কি আনন্দ ব্রজপুরে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—আজ কি আনন্দ ব্রজপুরে

(৩)

‘‘নিদেঁ অচেতন রাণী কিছু নাহি জানে।‘’

মধর-শ্রীবৃন্দাবনে

শ্রীনন্দ-রাজমহলে—মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে

‘‘নিদেঁ অচেতন রাণী কিছু নাহি জানে।
চেতন পাইয়া পুত্র দেখিল নয়ানে।।’’

আনন্দে আর ধরে না রে

যশোমতীর অন্তরে—আনন্দ আর ধরে না রে
নীলমণি কোলে পেয়ে—আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘ব্রজরাজ বলি রাণী ডাকে ধীরে ধীরে।

আইস হে ত্বরা করি

কোথা আছ ব্রজরাজ—আইস হে ত্বরা করি

‘‘ব্রজরাজ বলি রাণী ডাকে ধীরে ধীরে।
শুনিয়া আইল নন্দ সূতিকা-মন্দিরে।।
হরল গোয়ান দেখি আপন তনয়।’’

ব্রজরাজ মনে করে

আপন তনয় হেরে—ব্রজরাজ মনে করে

এত রূপ কি হয় মানুষের

কেবা আইল পুত্র-স্থলে—এত রূপ কি হয় মানুষের

কিসে বা তুলনা দিব

‘‘লাখ পূর্ণিমার চাঁদ জিনিয়া উদয়।‘’

এ কি দেখি অপরূপ তনয়

অখিল-লাবণ্য-মাধুরী-আলয়—এ কি দেখি অপরূপ তনয়

বুঝি মূরতি ধরেছে

অখিল-রস পুত্ররূপে—বুঝি মূরতি ধরেছে

‘‘উপনন্দ, অভিনন্দ, সুনন্দ, নন্দন।
একে একে আসি সবে ভরিল ভুবন।।’’

শুনি অপূর্ব্ব—বালকের কথা

ব্রজ ভরে পড়ল সাড়া—শুনি অপূর্ব্ব-বালকের কথা

‘‘যে যায় দেখিতে পুনঃ আসিতে না পারে।’’

আঁখি পালটিতে নারে

বালকের রূপ হেরে—আঁখি পালটিতে নারে

বিধাতারে নিন্দা করে

যত পিয়ে পিয়াস বাড়ে—বিধাতারে নিন্দা করে

দারুণ-বিধি সৃজন জানে না
তারে কি দেয় দুটি নয়ন

যে দেখিবে নন্দনন্দন-বদন—তারে কি দেয় দুটি নয়ন

সবে,–অনিমিখে বদন হেরে

কেহ,–ফিরে আসতে নারে ঘরে—সবে,–অনিমিখে বদন হেরে
সবার,– আঁখি-পাখী পড়ে রূপ-ফাঁদে
দেখি,–নন্দদুলাল-বদন-চাঁদে—সবার,–আঁখি-পাখী পড়ে রূপ-ফাঁদে

সবার নয়ন করল আকর্ষণ

ভুবনমোহন নন্দনন্দন—সবার নয়ন করল আকর্ষণ

‘‘জগন্নাথ দাস দেখি ধৈরয না ধরে।’’

জগন্নাথ-দাসের মনে হয়

বুকে ধরি ঐ তনয়—জগন্নাথ-দাসের মনে হয়

(৪)

‘‘যোগমায়া ভগবতী দেবী পৌর্ণমাসী।’’

আনন্দ আর ধরে না

মা যোগমায়ার মনে—আনন্দ আর ধরে না
বাসনা পূরণের সূচনা দেখে—আনন্দ আর ধরে না

বৃন্দাবনে বসে আছে
কবে আসবে দুইজনে

মিলিবে নিকুঞ্জবনে—কবে আসবে দুইজনে

নয়ন-ভরে দেখ্‌ব

মধুর এই ব্রজবিহার—নয়ন-ভরে দেখ্‌ব

আশা করে বসে আছে

কত-দিনে হবে বলে—আশা করে বসে আছে

আনন্দ আর ধরে না

বাসনা পূরণের সূচনা দেখে—আনন্দ আর ধরে না

‘যোগমায়া ভগবতী দেবী পৌর্ণমাসী।
দেখিল যশোদাপুত্র নন্দগৃহে আসি।।’’

দেবার মনে ছিল বাসনা

কতদিনে দেখ্‌ব কালসোণা—দেবীর মনে ছিল বাসনা

আজ আইলেন নন্দভবনে

বাঞ্ছা পূরণ মন জেনে—আজ আইলেন নন্দভবনে

‘‘সবে সাবধান করে যশোদারে কহে।
বহুপুণ্যে এ হেন বালক মিলে তোহে।’’

তোমার ভাগ্যের সীমা নাহি

ও যশোমতী রাণী—তোমার ভাগ্যের সীমা নাহি

এ পুত্র-রত্ন পেয়েছ কোলে

না জানি,–কত-কালের পুণ্য-ফলে—এ পুত্র-রত্ন পেয়েছ কোলে

রেখো গো অতি-যতনে

তোমার এই হৃদয়-ধনে—রেখো গো অতি –যতনে
এ রত্ন,–বড় যতনের ধন বটে—রেখো গো অতি-যতনে

‘‘বহু আশীর্ব্বাদ কৈলা হরষিত হৈয়া।’’

মনে মনে বলে রে

যোগমায়া পৌর্ণমাসী—মনে মনে বলে রে

বাড় তুমি দিনে দিনে

লীলা কর ব্রজভূমে—বাড় তুমি দিনে দিনে

‘‘রূপ নিরখয়ে সুখে একদিঠে চাইয়া।।’’

বহুদিন হতে ছিল উপবাসী

যোগমায়ার চকোর-আঁখি—বহুদিন হতে ছিল উপবাসী
ঐ চাঁদ-মুখ না দেখি’—বহুদিন হতে ছিল উপবাসী

আজ নয়ন পড়ল বাঁধা

দেখি’ বালক-মুখ-চাঁদা—আজ নয়ন পড়্‌ল বাঁধা

বলে,–একবার চেয়ে দেখ্‌রে নন

আনন্দ-ঘন নন্দনন্দন—বলে,–একবার চেয়ে দেখ্‌রে নয়ন

আজ,–আনন্দ আর ধরে না

বাসনা পূরণের দেখি সুচনা—আজ,–আনন্দ আর ধরে না

আশা করে বসে আছে

কবে যুগল আসি খেল্‌বে—আশা করে বলে আছে
মধুর,–ব্রজবিহার দেখ্‌ব বলে—আশা করে বসে আছে
যুগল-সেবা-সম্ভার সাজায়ে—আশা করে বসে আছে

আজ,–যোগমায়া মনে মনে গণে

চেয়ে নন্দনন্দন-বদন-পানে—আজ,–যোগমায়া মনে মনে গণে

কতদিনে দেখা দিবে

ও রসময় তুমি এলে—কতদিনে দেখা দিবে
ভানুদুলালী-সনে—কতদিনে দেখা দিবে

কবে সাধ পূর্ণ হবে

রস এলে ভাব আসবে—করে সাধ পূর্ণ হবে

কবে মিলাইব দুই-জনে

স্থির-বিজুরী শ্যাম-নবঘনে—কবে মিলাইব দুইজনে
এই বৃন্দাবনে নিকুঞ্জবনে—কবে মিলাইব দুইজনে

কবে করব দরশন

ভাব রসের সম্মিলন—কবে কর্‌ব দরশন

কবে দেখ্‌ব নয়ন-ভরি

মেঘ বিজুরী জড়াজড়ি—কবে দেখ্‌ব নয়ন-ভরি’

(৫)

‘‘স্বর্গে দুন্দুভি বাজে নাচে দেবগণ।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

দেবলোকে দেবগণের—আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘জয় জয় হরিধ্বনি ভরিল ভুবন।।
নন্দের মন্দিরে গোয়ালা আইল ধাইয়া।
হাতে নড়ী কাঁধে ভার নাচে থৈয়া থৈয়া।।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

গোকুলে গোয়ালা-ঘরে—আনন্দ আর ধরে না রে

আজ,–আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

গোকুলেতে নন্দালয়ে—আজ,– আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
পাইয়া প্রাণ-গোবিন্দে—আজ,–আনন্দের পাথার বয়ে যায রে

‘‘দধি ঘৃত নবনীত গোরস হলদি।
আনন্দ-আবেশে ঢালে নাহিক অবধি।।
গোয়ালা গোয়ালা মেলি করে হুড়াহুড়ি।’’

আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

গোকুলপুরে নন্দের ঘরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

‘‘হাতে নড়ী করি’ নাচে যত বুড়াবুড়ী।।
গোকুলের লোক সব বাল বৃদ্ধ নারী।
নয়নে বহয়ে ধারা শিশুমুখ হেরি।।’’

আজ,–উথলিল আনন্দ-সিন্ধু

দেখি’ বালক-মুখ-ইন্দু—আজ,–উথলিল আনন্দ-সিন্ধু

‘‘লক্ষ লক্ষ ধেনু গাভী অলঙ্কৃত করি’।
ব্রাহ্মণে করয়ে দান যত ইচ্ছা ভরি।।’’

বলে,–আশীর্ব্বাদ কর গো

তনয় চিরজীবী হোক্‌–বলে,–আশীর্ব্বাদ কর গো

‘‘দেহ দেহ বাণী বই নাহি আর বোল।
সঘনে সবাই বলে হরি হরি বোল।।’’

আনন্দে বলে হরি হরি

আজ সব ব্রজবাসী—আনন্দে বলে হরি হরি
নন্দলাল-বদন হেরি—আনন্দে বলে হরি হরি

আজ,–গোকুলপুরে উঠ্‌ল রোল

হরি হরি হরি বোল আজ,–গোকুলপুরে উঠ্‌ল রোল

আজ,–বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার

নন্দালয়ে কৃষ্ণ-জন্মলীলা—আজ,–বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার
তাতে,–ব্রজজন সব দিতেছে সাঁতার—আজ,–বয়ে যায় রে প্রেমের পাথার

(৬)

‘‘রোহিণী-নাচিছে সুখে ব্রজবধূ লইয়া।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

আজ রোহিণীর মনে—আনন্দ আর ধরে না রে
আনন্দঘনে ঘরে পেয়ে—আনন্দ আর ধরে না রে
রামের দোসর হল জেনে—আনন্দ আর ধরে না রে

সুখে খেলা করবে এবে

দুই ভাই এই আঙ্গিনাতে—সুখে খেলা করবে এবে
দেখ্‌ব আমি নয়ন-ভরে—সুখে খেলা করবে এবে

‘‘পিছে পিছে বলরাম ফিরয়ে ধাইয়া।।’’

এ আনন্দ কেবা জানে

যে আনন্দ আজ বলাইয়ের মনে—এ আনন্দ কেবা জানে
হেরব চাঁদ-বদনে—এ আনন্দ কেবা জানে

বলরাম আনন্দ ফিরে পিছে

মায়ের আঁচল করে ধরে—বলরাম আনন্দে ফিরে পিছে

আজ,–আনন্দ আর ধরে না রে

ভাইয়ের চাঁদ-মুখ হেরে—আজ,–আনন্দ আর ধরে না রে

তাই,–স্বাভাবিক আনন্দের বিকাশ

যেন,–পূরণ হল কি অভাব—তাই,–স্বাভাবিক আনন্দের বিকাশ
শ্যামে হেরিয়া রামের—তাই,–স্বাভাবিক আনন্দের বিকাশ

‘‘অঙ্গুলি ইঙ্গিত করি দেখাইছে মায়েরে।’’

স্পষ্ট ত বলিতে নারে

প্রাণের কথা জানায় ইঙ্গিতে—স্পষ্ট ত বলিতে নারে

তার ব্যবহার বলে দিছে

তার,–পরিচয় যেন কত-কালের—তার ব্যবহার বলে দিছে
‘তার,–পরিচয় যেন কত-কালের’—
প্রাণের যশোদাদুলাল—সনে—তার,–পরিচয় যেন কত-কালের

তার ব্যবহার বলে দিছে
শুধু নয় তার পরিচিত

প্রাণের যশোদাসুত—শুধু নয় তার পরিচিত
তার,–প্রাণ হতে অধিক প্রিয়—শুধু নয় তার পরিচিত

‘‘অঙ্গুলি ইঙ্গিত করি দেখায় মায়েরে।
আবেশে জানাল যাবে সূতিকা-মন্দিরে।।’’

ভাইয়ের ভাবে মাতোয়ারা
দূরে কি রাম রইতে পারে

প্রাণের প্রাণ শ্যাম ছেড়ে—দূরে কি রাম রইতে পারে
প্রাণ-রঞ্জন সূতিকা-ঘরে—দূরে কি রাম রইতে পারে
সঙ্কর্ষণে শ্যাম আকর্ষণ করে—দূরে কি রাম রইতে পারে

‘‘পদ লটপাটি বলাই পড়ে সেই ঠাঁই।।’’

পদ লটপটি পড়ে বলাই

ভেইয়ার প্রেমে মাতাল সদাই—পদ লটপটি পড়ে বলাই

এ ত নয় বালকের স্বভাব

পদ লটপটি পড়া—এ ত নয় বালকের স্বভাব
জানাইছে প্রেমের ব্যবহার—এ ত নয় বালকের স্বভাব

বলাই,–চলে যেতে ঢলে পড়ে

ভাইয়ের প্রেমে বিভোর হয়ে—বলাই,–চলে যেতে ঢলে পড়ে
স্বাভাবিক-প্রেমার ভরে—বলাই,–চলে যেতে ঢলে পড়ে

আবেশে পড়ে ধরণী-বুকে

ভেইয়ার প্রেমার ভরে—আবেশে পড়ে ধরণী-বুকে
ধরণীর বলাই আমার—আবেশে পড়ে ধরণী-বুকে
ধরণীর সৌভাগ্য বাড়াইতে—আবেশে পড়ে ধরণী-বুকে

‘‘ধরণী ধরিয়া উঠে বলে ভাই ভাই।।’’

প্রাণে প্রাণে বলে বলাই

এতদিনে কোথায় ছিলি ভাই—প্রাণে প্রাণে বলে বলাই

‘‘ক্ষণে হাসে ক্ষণে কাঁদে করতালি দিয়া।’’

স্বাভাবিক-প্রেমের উদয় হল

প্রেমের বিকার প্রকাশ পেল—স্বাভাবিক-প্রেমের উদয় হল

‘‘বরজ-বালক-সঙ্গে বেড়ায় নাচিয়া।।’’

বলাই নাচে হেলে দুলে

আধ আধ বোল বলেবলাই নাচে হেলে দুলে
ভাই কানাই পেয়েছি বলে—বলাই নাচে হেলে দুলে

নাচে বলাই রঙ্গিয়া

ভেইয়ার মুখ নিরখিয়া—নাচে বলাই রঙ্গিয়া
মুখে বলে ভেইযা ভেইয়া—নাচে বলাই রঙ্গিয়া

‘‘দেখি আঁখি তিরপিত ভেল সবাকার।
ভাসল নটবর আনন্দ-পাথার।।’’

আনন্দ-পাথারে সাঁতারে

নটবর শ্যাম-সুন্দরে হেরে—আনন্দ-পাথারে সাঁতারে
নটবরদাস আনন্দে হেরে—আনন্দ-পাথারে সাঁতারে

(৭)

‘‘সুতিকা-মন্দিরে যাই আনন্দে বলাই।
দু’নয়নে বহে ধারা ভাই পানে চাই।।’’

বলাই ঝোরে অঝোরে

ভাইয়ের চাঁদ-বদন হেরে—বলাই ঝোরে অঝোরে

দুনয়নে বহে ধারা

ভাইয়ের ভাবে মাতোয়ারা—দু’নয়নে বহে ধারা
‘ভাইয়ের ভাবে মাতোয়ারা’—
ওযে,–বলাইয়ের সহজ ধারা—ভাইয়ের ভাবে মাতোয়ারা

দু’নয়নে বহে ধারা

‘‘যশোমতী ধরিয়া দক্ষিণ-কোলে নিল।’’

যশোমতী নিল বলাইকে কোলে

আয় বাপ আয় বলে—যশোমতী নিল বলাইকে কোলে
আইস বাপ আইস বলে—যশোমতী নিল বলাইকে কোলে
যেন,–পেল রাণী দুই-ছেলে—যশোমতী নিল বলাইকে কোলে

যাইরে শোভার বালাই যাই

যশোমতী কোলে কানাই বলাই—যাইরে শোভার বালাই যাই

‘‘বসিয়া রাণার কোলে দুলিতে লাগিল।।’’

ভাইয়ে ভাবে গরগর

আমার বলাই-সুন্দর—ভাইয়ের ভাবে গরগর

ভাবভরে বলাই দোলে

বসি যশোমতীর কোলে—ভাবভরে বলাই দোলে
চেয়ে ভাই-এর বদন-কমলে—ভাবভরে বলাই দোলে
ভাইয়ের মাধুরী হেরে—ভাবভরে বলাই দোলে

ও ত,–বলাইয়ের নয় দোলন

ও ত,–স্বাভাবিক প্রেমের লক্ষণ—ও ত,–বলাইয়ের নয় দোলন

‘‘ভাই এর চাঁদ-মুখ-পানে এ দিঠে চায়।’’

ভাইয়ের বদন,–সুধাপানে হইল বিভোর

বলরামের আঁখি-চকোর-সুধাপানে হইল বিভোর

পিপাসিত ছিল রে

বলাইয়ের চকোর-আঁখি—পিপাসিত ছিল রে
ঐ,–চাঁদ-মুখের সুধা পীতে—পিপাসিত ছিল রে

বলাইয়ের,–আঁখি—পলক পড়ে না রে

ভাইয়ের,–অলকাবৃত-বদন হেরে—বলাইয়ের,–আঁখি-পলক পড়ে না রে

বলাই,–আন্‌ দেখে না নয়নে

বংশীগানামৃত-ধাম বিনে—বলাই,–আন দেখে না নয়নে
‘বংশীগানামৃত-ধাম বিনে’—
লাবণ্যামৃত-জন্মস্থান—বংশীগানামৃত-ধাম বিনে

বলাই,–আন দেখে না নয়নে

‘‘আধ আধ বলে কিছু না বুঝিল মায়।।’’

ও ত,–বালকের আধ বোল নয় গো

ও ত,–প্রেমের গদগদ-ভাব—ও ত,–বালকের আধ বোল নয় গো

ভাবের বোল যে আধ আধ

বলতে বলতে হয় স্তব্ধ—ভাবের বোল যে আধ আধ

সে,–ভাবের ভাষা বুঝে না আনে

সে রসের রসিক বিনে—সে,–ভাবের ভাষা বুঝে না আনে

দু’জনের ভাষা দু’জনের বুঝে

সেবা-বিগ্রহের ভাষা সেব্যই বুঝে—দু’জনের ভাষা দু’জনের বুঝে

আধ-বোলে যেন বলাই বলে

সে বোল কেবল ভাই-ই বুঝে—আধ-বোলে যেন বলাই বলে

কো-কো-কোথা ছিলে

তোমার এই,–বলাই-দাদারে ছেড়ে—কো-কো-কোথা ছিলে

এই,–দাদাকে কেমনে ভুলে ছিলে

আধ আধ বোলে বলাই বলে—এই,–দাদাকে কেমনে ভুলে ছিলে

আর থেকো না ভাই কোন-কালে

আধ-বাণীতে যেন বলাই বলে—আর থেকো না ভাই কোন-কালে
আমার ঘোর আঁধারে ফেলে—আর থেকো না ভাই কোন-কালে

আর যেন হয়ো না

আমার চোখের আড়াল—আর যেন হয়ো না

‘‘আনন্দে অচেতন ভেল সব-ব্রজবাসী।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

বরজ-জনের মনে—আনন্দ আর ধরে না রে
বলরামের ভাব দেখে—আনন্দ আর ধরে না রে

সকলের মনে আনন্দ-তরঙ্গ

দেখি বলরামের রঙ্গ–সকলের মনে আনন্দ-তরঙ্গ

সবার,–আনন্দের আর সীমা নাই

দেখি,–শ্বেত শ্যাম দুই ভাই—সবার—আনন্দের আর সীমা নাই
‘দেখি,–শ্বেত শ্যাম দুই ভাই’—
যশোমতী-কোলে কানাই বলাই—দেখি,–শ্বেত শ্যাম দুই ভাই

সবার,–আনন্দের আর সীমা নাই

‘‘বিজুরী উজোর ভেল দুঁহু-মুখের হাসি।।’’

নয়নে নয়নে জবার হল

আধ বোলে পরিচয় হল—নয়নে নয়নে জবাব হল
তারাই বুঝ্‌ল তারাই বুঝ্‌ল—নয়নে নয়নে জবাব হল

দোঁহার চাঁদ-মুখ হাসি

দোঁহে,–দোহায় দেখি আনন্দ অতি—দোঁহার চাঁদ-মুখে হাসি
যেন,–চাঁদ ফেটে ঝরে অমিয়া রাশি—দোঁহার চাঁদ-মুখে হাসি

‘‘ক্ষণে অচেতন ভেল যশোমতী মাই।’’

আনন্দে অচেতন রাণী

কানাই-বলাই-রঙ্গ দেখি—আনন্দে অচেতন রাণী
দেখি দোঁহার প্রেম-রীতি—আনন্দে অচেতন রাণী

আনন্দে যশোমতী মাতা

দেখি,–শ্বেত-শ্যামের মুখ-হাসির ছটা—আনন্দে যশোমতী মাতা

‘‘পুনঃ ডাকে যশোমতী আইস হেথাই।।’’

হেথা আইস আইস আবার

তোমায়,–কাছে দেখ্‌লে বালক সুখ পায়—হেথা আইস আইস আবার

‘‘এ বৈষ্ণবদাস কহে মনের হরিষে।
জন্ম-নিত্যলীলা প্রভু করিলা প্রকাশে।’’

(৮)

‘‘জয় জয় ধ্বনি, ব্রজ-ভরিয়া রে।
ব্রজ ভরিয়া রে, ব্রজ-ভরিয়া রে ।।
জয় জয় ধ্বনি ব্রজ-ভরিয়া রে।


উপনন্দ অভিনন্দ, সুনন্দ নন্দন নন্দ রে,’’

আনন্দ আর ধরে না রে

নন্দন পেয়ে ঘরে—আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘সবে মিলি নাচে বাহু তুলিয়া রে।।
যশোধর যশোদেব, সুদেব আদি গোপ সব রে,
সবে নাচে আনন্দে ভুলিয়া রে ।’’

সবাই নাচে আনন্দ-ভরে

নন্দনন্দন-বদন হেরে—সবাই নাচে আনন্দ-ভরে

‘‘নাচে রে নাচে রে নন্দ, সঙ্গে লৈয়া গোপবৃন্দ রে’’,

আনন্দ আর ধরে না

নন্দন পাইয়া নন্দের—আনন্দ আর ধরে না

‘‘হাতে লাঠি কাঁধে ভার করিয়া রে।।’’

নন্দ নাচে আনন্দেতে

লাঠি হাতে ভার কাঁধে—নন্দ নাচে আনন্দতে
দেখি বালক-মুখচাঁদে—নন্দ নাচে আনন্দতে

‘‘ক্ষণে নাচে ক্ষণে গায়, সূতিকা-গৃহেতে ধায়,
ফিরয়ে বালক-মুখ হেরিয়া রে।
দধি দুগ্ধ ভারে ভারে, ঢালয়ে অবনী-পরে রে,
কেহ শিরে ঢালে দধি ভুলিয়া রে।।
লগুড় লইয়া করে, আওল ধীরে ধীরে রে,
নন্দের জননী নাচে বরীয়সী বুড়িয়া রে।’’

বুড়ীর,–আনন্দ আর ধরে না রে

নাতির চাঁদ-বদন হেরে—বুড়ীর,–আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘যত বৃদ্ধৃ-গোপ-নারী, জয়কার ধ্বনি করি রে,
আশীষ করয়ে শিশু-বেড়িয়া রে।।’’

হয়ে থাক শিশু চিরজীবী

বালাই লয়ে আমরা মরি—হয়ে থাক্‌ শিশু চিরজীবী

‘‘ভোর হৈল গোপ সব, অপরূপ নন্দোৎসব রে,
এ দাস শিবাই নাচে ফিরিয়া রে।।’’

আনন্দ আর ধরে না

নন্দের মন্দিরে আজ—আনন্দ আর ধরে না
নীচে সব গোয়ালা—আনন্দ আর ধরে না

সবাই মিলে জয় দাও গো

‘‘নন্দকী আনন্দ ভেও জয় কানাইয়া লাল কী।
হাতী দিয়া ঘোড়া দিয়া আউর দিযা পাল্‌কী।।’’

জয় কানাইয়া লাল কী

হাতী ঘোড়া পালকী—জয় কানাইয়া লাল কী

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌরহরি বোল।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ