(কার্ত্তিক কৃষ্ণা একাদশী তিথি)
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
মধুমতী যাহে পরকাশ।
ঠাকুর-গৌরাঙ্গ-সনে, বিলসয়ে রাত্রিদিনে,
নাম ধরে নরহরি দাস ।।’’
নাম ধরে নরহরি দাস—ব্রজের,–মধুমতী হয়ে পরকাশ[মাতন]
মধুর-মাধুরী অনুপাম।’’
শ্রীরাধিকার সহচরী—সেই ব্রজের মধুমতী
নরহরি নাম ধরে—বিহরে শ্রীখণ্ডপুরে
শ্রীগুরু-প্রেরণায় বলি—শুধু কেবল তাই নয়
প্রাণ মোর যুগল-কিশোর।
অদ্বৈত আচার্য্য বল, গদাধর মোর কুল,
নরহরি বিলসই মোর।।’’
দ্বিতীয় নিত্যানন্দ-তনু—ঠাকুর-নরোত্তম করলেন ইঙ্গিত
নরহরিকে বিলাস বলে—ঠাকুর-নরোত্তম করলেন ইঙ্গিত
যুগল-বিলাস হয়ে মূর্তিমান—ধরে নরহরি নাম
ব্রজের,–নিকুঞ্জ-বিলাস শ্রীখণ্ডেতে—বিহরে নরহরি-রূপে
বিলাসীকে সুখ দিতে দিতে—সাধ উঠেছিল বিলাস-চিতে
আপনাকে আস্বাদিতে—সাধ উঠেছিল বিলাস-চিতে
বিলাস বিলাস আস্বাদিতে
বিহরে বড়ডাঙ্গা-কুঞ্জে
বিলাস-মূরতি নরহরি—বিহরে বড়ভাঙ্গা-কুঞ্জে
বিলাসি-গৌরাঙ্গ-সঙ্গে—বিহরে বড়ডাঙ্গা-কুঞ্জে
অপূর্ণ-সাধ পূরাবে বলে—বিলাস খেলে বিলাসি-কোলে
রাই-কানু-মিলিত-মূরতি—চৈতন্যের কাম কি পূর্ণ হয়
নরহরি বিলাস না হলে—চৈতন্যের কাম কি পূর্ণ হয়
চৈতন্যের কাম পূরাইতে—বিলাস প্রকট নরহরি-রূপে
মধুর-মাধুরী অনুপাম।
অবনীতে অবতরী, পুরুষ-আকৃতি ধরি,’’
ব্যবহার কোথা লুকাবে—পুরুষ-আকৃতি হলে কি হবে
নরহরি-গৌরাঙ্গ-বিলাস—অনুভবী অনুভবে সবে
বিলাস ধরি’ নরহরি নাম—পূরায় চৈতন্যের কাম
ভাব-রসের মহাসংগ্রাম—কে করিবে তার বিরাম
বিলাস নরহরি-রূপে—সুখ দেয় গোরা-রসভূপে
ঠাকুর-নরহরি-দ্বারে—গৌর নিজ-কামনা পূর্ণ করে
মত্ত কৈল গৌরাঙ্গ-নাগরে।’’
মধুমতীর মধু-দান-লীলায়—বুঝি,–পিপাসুর পিয়াস মিটে নাই
বিলাস মধু দান করে—মত্ত করে গোরা—নাগরবরে
সঙ্কীর্ত্তন-রাসোৎসবে—মত্ত করে গোরা—নাগরবরে
বেদবিধি পড়িল ফাঁফরে।।’’
পুরুষাকৃতিতে বিলাস আবার—দেখি,–বেদ-বিধি-পার ব্যবহার
নরহরির মধুদানে—বেদ-বিধি কাঁদে অধোবদনে
যোগপথ করি নাশ ভকতির পরকাশ,
করিল মুকুন্দ-সহোদর।
পাপিয়া শেখর কয়, বিকাইলা রাঙ্গা-পায়,
শ্রীরঘুনন্দন-প্রাণেশবর।।’’
রঘুনন্দন-প্রাণেশ্বর—এইবার আমায় কৃপা কর
গৌরপ্রেম-রমণী নরহরি—এইবার ধন্য কর মোরে
গোরা-রস পিয়াইয়ে—এইবার ধন্য কর মোরে
২
মধুমতী প্রকাশ যাঁহায়।
শ্রীমুকুন্দদাস-সঙ্গে, শ্রীরঘুনন্দন রঙ্গে,
ভক্তিতত্ত্ব জগতে লওয়ায়।।
শুনি মধুমতী নাম, নিত্যানন্দ বলরাম,
সপার্ষদে দিলা দরশন।’’
স্বভাবেই প্রেম-মধু-লুব্ধ—বলরাম নিত্যানন্দ
মধুপান-বাসনা মনে—আইলা শ্রীখণ্ডপুরে
নিজগণ সঙ্গে লয়ে—আইলা শ্রীখণ্ডপুরে
নতি করি’ বন্দিলা চরণ।।
কহে নিত্যানন্দ-রাম শুনে মধুমতী নাম,
আসিয়াছি তৃষিত হইয়া।’’
মধু পান করবাল আশে—আইলাম তোমার পাশে
মধুমতী নাম শুনে—আইলাম তোমার পাশে
তাই,–নাম শুনে ছুটে এলাম—আমার স্বভাব মধুপান
সপার্ষদে প্রেম-মধু পিয়াও—নামের সার্থকতা দেখাও
সেই জল ভাজনে করিয়া।।
আনিয়া ধরিল আগে, মধু স্নিগ্ধ মিষ্ট লাগে,
গণসহ খায় নিত্যানন্দ।
যত জল ভরি’ আনে, মধু হয় ততক্ষণে,
পুনঃ পুনঃ খাইতে আনন্দ।।
মধুমতী-মধু দান, সপার্ষদে করি’ পান,
উনমত অবধৌত রায়।
হাসে কাঁদে নাচে গায়, ভূমে গড়াগড়ি যায়,
উদ্ধবদাস রস গায়।।’’
মধু-পুস্করিণী-রূপে—আজও,–সেই লীলার সাক্ষী দিছে
এখানে,–হয়েছিলেন উনমত
গণসহ নিতাই-গৌরাঙ্গ—এখানে,–হয়েছিলেন উনমত
প্রেমমধু পানে নরহরি দত্ত—এখানে,–হয়েছিলেন উনমত
নরহরি প্রেমমধু দানে—মাতাইলা জগজনে
নিশ্চয় প্রেম পিতে পেতাম
তখন যদি জন্ম পেতাম—নিশ্চয় প্রেম পিতে পেতাম
গৌরপ্রেমের রমণী নরহরি—কোথা বা লুকালে
ঠাকুর,–নরহরি কোথা তুমি—এই ত’ তোমার বিহার-ভূমি
যদি,–বলাৎকারে আনলে টেনে—একবার,–দেখা দাও নিজ-গুণে
সেই মধুদান-লীলা—একবার দেখাও হে
মধুপানে মাতা নিতাই—একবার দেখাও হে
কিছুই দেখতে পেলাম না
প্রেমমধু-পান-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
‘প্রেমমধু—পান—লীলা’—
শ্রীগৌরাঙ্গনাগর-শ্রীনিত্যানন্দের—প্রেমমধু-পান-লীলা
পূর্ব্ব-লীলা পর-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
করিলেন,–রঘুনন্দন শ্রীনিবাসাচার্য্য—নরহরির বিরহ-উৎসব
সে বিরহ-উৎসবের কথা—শুনেছি শ্রীগুরু-মুখে
এই দিনে এই শ্রীখণ্ডেতে—এসেছিলেন প্রাণ-গৌরগণ
ঠাকুর,—নরহরির বিরহোৎসবে—এসেছিলেন প্রাণ-গৌরগণ
প্রভু-নিত্যানন্দ-তনয়—এসেছিলেন প্রভু বীরচন্দ্র
শ্রীকৃষ্ণ মিশ্র শ্রীগোপাল মিশ্র—এসেছিলেন শ্রীঅদ্বৈত-তনয়
সে-কালে যাঁরা প্রকট ছিলেন—সবাই ত’ এসেছিলেন
সবাই,–গিয়েছিলেন শ্রীখেতুরীতে
ছয়-বিগ্রহ-প্রতিষ্ঠা-উপলক্ষে—সবাই,–গিয়েছিলেন শ্রীখেতুরীতে
‘ছয়-বিগ্রহ-প্রতিষ্ঠা-উপলক্ষে’—
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের—ছয়-বিগ্রহ-প্রতিষ্ঠা-উপলক্ষে
খেতুরীর মহোৎসব শেষ করে
আইলেন শ্রীবুধরীতে
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—আইলেন শ্রীবুধরীতে
শ্রীরামচন্দ্রগৃহে—আইলেন শ্রীবুধরীতে
শ্রীকন্টক-নগরেতে—সেখান হতে আইলেন সবে
দাস-গদাধরের উৎসবে—সেখান হতে আইলেন সবে
ঠাকুর,–যদুনন্দনের নিমন্ত্রণে—সেখান হতে আইলেন সবে
শ্রীযদুনন্দন-ঠকুর—করিলেন মহা-মহোৎসব
দাস-গদাধরের আরাধনা-তিথিতে—করিলেন মহা-মহাৎসব
শ্রীযদুনন্দনের প্রীতে—কিছুদিন থাকি’ কণ্টক-নগরে
শ্রীনিবাসাচার্য্যের ঘরে—আইলেন সবে যাজিগ্রামে
শ্রীযাজিগ্রাম হয়ে
আইলেন সবে শ্রীখণ্ডেতে
ঠাকুর,—রঘুনন্দনের আমন্ত্রণে—আইলেন সবে শ্রীখণ্ডেতে
ঠাকুর-নরহরির—লীলা-সঙ্গোপনের তিথি—আজ সেই দিন রে
তখন জনম হল না—হায় রে,—কিছুই দেখতে পেলাম না
সেই লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
যাই আমরা ছুটে ছুটে
শ্রীগুরু-শ্রীমুখের-কথা হৃদে ধরে—যাই আমরা ছুটে ছুটে
ত্রিকাল-সত্য গৌর-গৌরগণের লীলা—শ্রীমুখে বলেছেন শ্রীগুরুদেব
যাই আমরা ছুটে ছুটে
যখন,–যেখানে যে লীলাকাল—যাই আমরা ছুটে ছুটে
মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে—এই যে আমরা গিয়েছিলাম
গৌরের ব্রজে আগমন—বার্ত্ত দিলেন ব্রজজন
কার্ত্তিক-পৌর্ণমাসীতে—বার্ত্তা দিলেন ব্রজজন
বড় সাধ দেখব বলে
মহাভাবে ভোরা-গোরা—বড় সাধ দেখব বলে
পরাণ-গৌরাঙ্গ-বিহার
ব্রজে রাস-রজনীতে—পরাণ-গৌরাঙ্গ-বিহার
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা-সনে—পরাণ-গৌরাঙ্গ-বিহার
সবার স্বরূপ জাগাইয়ে—পরাণ-গৌরাঙ্গ-বিহার
ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
বৃন্দাবনের বনে বনে—ব্যাকুল হয়ে কত ডাকলাম
বিরহিণী গৌর আমার—কোথা বা বিহরিছে
ব্রজের,–তরু, লতা, পশু, পাখী—সবাইকে শুধাইছে
শ্রীকৃষ্ণের-সন্ধান—সবাইকে শুধাইছে
কোথা খেলছ নবরসের খেলা—একবার দেখা দাও
স্থাবর-জঙ্গমের স্বরূপ জাগায়ে—কোথা,–বিলসিছ নবরঙ্গে
কোন সাড়া পেলাম না
মনে মনে ভাবলাম
যাই তাঁদের কাছে যাই
তাঁরা ত’ নিশ্চয়ই ব্রজে আছে
পরাণ-গোস্বামীগণ—তাঁরা ত’ নিশ্চয়ই ব্রজে আছে
তাঁদের বসতিস্থানে গিয়ে—কত না কাঁদলাম
তোমাদের,–সর্ব্বস্ব-নিধি-গৌরাঙ্গে—একবার,—দেখা দিয়ে দেখাও হে
কোন সাড়া পেলাম না—কেউ ত’ দেখা দিলে না
মিলেছেন বুঝি ছয়জনে
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—মিলেছেন বুঝি ছয়জন
পরাণ গৌরাঙ্গ সনে—মিলেছেন বুঝি ছয় জনে
কুণ্ড-তীরে দেখতে গোরা—ভাই ভাই মিলে গেলাম মোরা
দাস গোসাঞি কোথা তুমি
এই ত’ তোমার বিহার-ভূমি—দাস গোসাঞি কোথা তুমি
সঙ্কীর্তন,- রাস-বিলাসি-গৌরাঙ্গের–কোথা দেখছ নব-নব-বিলাস
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—একবার দেখা দাও
তোমাদের,—কাছে গৌর আছে কিনা—একবার কি দেখাবে না
কে যেন বলিল প্রাণে প্রাণে
যাও শ্রীখণ্ডপুরে
গুপতে গৌরাঙ্গ বিহরে
ঠাকুর-নরহরি-ঘরে—গুপতে গৌরাঙ্গ বিহরে
সবাই ত’ এসেছ
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—সবাই ত’ এসেছ
নরহরির তিরোভাব-উৎসবে—সবাই ত’ এসেছ
শ্রীকৃষ্ণ মিশ্র শ্রীগোপাল মিশ্র—কোথা বা আছ হে
হা প্রভু বীরভদ্র—কোথা বা আছ হে
হা যদুনন্দন-ঠাকুর—কোথা বা আছ হে
হা রঘুনন্দন-ঠাকুর—কোথা বা আছ হে
শ্রীনিবাসাচার্য্য প্রভু—তুমিও ত’ এসেছ
সবার আজ্ঞা শিরে ধরে—ভাগবত পাঠ করেছ
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রাঙ্গণে—সবাই,–ব্যাকুল হয়ে কেঁদেছ
আমার,–শচীদুলাল গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
শ্রীখণ্ড-বিহারি-গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
মোহন-নাটুয়া-বেশধারীর—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
নরহরির হৃদ্-বিহারীর—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
ভাই রে আমার,–রসময়-গৌরাঙ্গ-নটের—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
শ্রীসঙ্কীর্ত্তন-সুলম্পটের—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
অভিন্ন-চৈতন্য-তনু—আমার,–নিতাইচাঁদের জয় দাও ভাই
নিতাই-গৌর-আনা-ঠাকুর-সীতানাথের জয় দাও
জয় রত্নাবতী-তনয়—জয় পণ্ডিত গদাধর
গৌর যাঁর প্রাণেশ্বর—জয় পণ্ডিত গদাধর
যাঁর অঙ্গনে কীর্ত্তনরঙ্গ—শ্রীবাস-পণ্ডিতের জয় দাও
যাঁর গৃহ কীর্ত্তন-রঙ্গালয়—শ্রীবাস-পণ্ডিতের জয় দাও
হা পতিত-পাবন গৌরগণ—কর মোর বাসনা পূরণ
এবে যে কহিয়ে শুন হইয়া সদয়।।
শ্রীনিবাস, মহাযত্নে লৈয়া প্রভু-পরিকরগণে।’’
কণ্টক-নগরেতে—এসেছিলেন প্রাণ-গৌরগণ
শ্রীঅদ্বৈত-নিত্যানন্দের গণ—এসেছিলেন প্রাণ-গৌরগণ
ঠাকুর—নরহরির মহোৎসবে—সবাই চলিলেন শ্রীখণ্ডেতে
আগুসরি আসি লৈয়া গেলেন খণ্ডেতে।।’’
আগমন করুন বোলে—কত কি দৈন্য-বচনে
গৌরগণ আসছে বলে—তাদের,–আনন্দের আর সীমা নাই
ঠাকুর-শ্রীনরহরির—মহামহোৎসব দেখিতে
সবারি হউক আনন্দ-গৌরগণের এই হার্দ্দ
দেখ প্রভুগণের কি শোভা প্রেমময়।।’’
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের আলয়—প্রাণগৌরগণ হয়
মো’সবার ভাগ্যে সবে আইল-শ্রীখণ্ডেতে।।’’
দেখিলাম,–গৌরগণ একঠাঁই—আমাদের ভাগ্যের সীমা নাই
বুঝি অকস্মাৎ বা যায়েন দুঃখ দিয়া।।
কেহ কহে ওহে ভাই শীঘ্র না যাইব।
শ্রীখণ্ডেতে প্রেমের সমুদ্র উথলিব।।
অগ্রহায়ণে কৃষ্ণা একাদশী সর্ব্বোপরি।
যাতে অদর্শন শ্রীঠাকুর-নরহরি।।
সেই একাদশীকে আছয়ে দিন চারি।
হবে যে উৎসব তা দেখিবা নেত্রভরি।।’’
শ্রীখণ্ডে মহা-মহোৎসবে—নয়ন-ভরে দেখব
মনুষ্যের কথা কি মাতিব দেবগণে।।
ঐছে পরস্পর কত কহে ঠাঁই ঠাঁই।
শ্রীখণ্ড-নগরেতে লোকের সংখ্যা নাই।।
প্রতিদিন যে উৎসব শ্রীখণ্ড-নগরে।
তাহা না বর্ণিয়ে গ্রন্থ-বাহুল্যের ডরে।।
একাদশী দিনে যে উৎসব অন্ত নাই।
যে শুনিলুঁ তাহা কিছু সংক্ষেপে জানাই।।
একাদশী-প্রাতঃকালে শ্রীরঘুনন্দন।
প্রভু-পরিবারে কৈল আত্ম নিবেদন।।’’
পতিত-পাবন গৌরগণ—তোমারই কর হে
তোমাদেরই এই কার্য্য—তোমরাই কর হে
করাইলা সজ্জা চারু অশেষ-বিশেষে।।
কিবা প্রাঙ্গণের শোভা কহনে না যায়।
যে দেখে বারেক তার নয়ন জুড়ায়।।
সর্ব্ব-মহান্তের তথা হইল আগমন।
শোভায় সবার চিত্ত করে আকর্ষণ।।
চন্দন তিলক ভালে অতি সুললিত।
পরম উজ্জ্বল বাহু বক্ষ নামাঙ্কিত।।
শ্রীসরকার-ঠাকুরের জীবন-গৌরঙ্গে।
দেখিতেই বিপুল-পুলক ভরে অঙ্গে।।’’
নরহরির-চিতচোর—এই ত’ সেই প্রাণগৌর
তাঁরে দেখি মনে মহা কৌতুক বাড়িল।।
কতক্ষণ কৈল দুই-শ্রীমূর্ত্তি দর্শন।’’
দুই-শ্রীমূর্ত্তির দর্শনে—অভাব জাগিল
ঠাকুর-শ্রীনরহরির—অভাব জাগিল
বল বল গৌরহরি
কোথা ঠাকুর-নরহরি—বল বল গৌরহরি
নরহরি কোথা গেল—গোপীনাথ বল বল
করিয়া শ্রীমূর্ত্তি দর্শন—ব্যাকুল হয়ে করে ক্রন্দন
সর্ব্ব-মনোবৃত্তি কহে শ্রীরঘুনন্দনে।।
শ্রীমদ্ভাগবত অদ্য দিবসে শ্রবণ।
রাত্রিযোগে সঙ্কীর্ত্তনানন্দ আস্বাদন।।
শ্রীমদ্ভাগবত পড়িবেন শ্রীনিবাস।
শুনি’ রঘুনন্দনের অধির উল্লাস।।
সেইক্ষণে অপূর্ব্ব আসন করাইলা।
বসিতে সকল মহান্তেরে নিবেদিলা।।
শ্রীপতি শ্রীনিধি আদি যতেক মহান্ত।
বসিলেন আসনে শোভার নাই অন্ত।।
কৃষ্ণমিশ্র গোপাল পরমানন্দ-মনে।
প্রভু বীরভদ্র বসিলেন দিব্যাসনে।।
শ্রীরঘুনন্দন অতিশয় স্নেহাবেশে।
সর্ব্ব-মহান্তের আগে নিল শ্রীনিবাসে।।
সকল মহান্ত শ্রীনিবাসের প্রতি কয়।
শুনিতে তোমার মুখে বড় সাধ হয়।।’’
তোমার মুখে ভাগবত শুনে—ভোগ করিব প্রাণে প্রাণে
গোস্বামীগণের ভাগবত-পঠনে—ভোগ করিব প্রাণে প্রাণে
না কর সঙ্কোচ আমা-সবার বচনে।।
শুনি’ শ্রীনিবাস ভূমে পড়ি প্রণমিয়া।
করয়ে যে দৈন্য ধৈর্য্য ধরে কে শুনিয়া।।
পুনঃ পুনঃ অনুমতি পাইয়া সবার।
বসিলা আসনে শোভা হৈল চমৎকার।।
পুস্তকে অর্পিয়া পুষ্প তুলসী চন্দন।
করয়ে আরম্ভ চারু মঙ্গলাচরণ।।’’
ঠাকুর,–নরহরির উৎসবেতে—শ্রীনিবাস ভাগবত পাঠ করে
উচ্চারয়ে শ্লোক যেন সুধাবৃষ্টি করে।।
শ্রীরাস-বিলাস কথা রসের পাথার।
কহিতে অধৈর্য্য নেত্রে বহে অশ্রুধার।।
বিবিধ প্রকারে প্রতি-পদ্য ব্যাখ্যা করে।
নানা-রাগ প্রভেদ প্রকাশে পদ্য-দ্বারে।।
কি অদ্ভুত কথার মাধুর্য্য ধৈর্য্য নাশে।
উপমার স্থান নাই সে-মধুর-ভাষে।।
মহাবর্ষা প্রায় প্রেম বর্ষে সে কথায়।
সকলে বিহ্বল হর্ষ উথলে হিয়ায়।।
অনিমিখ-নেত্রে চাহে শ্রীনিবাস-পানে।
নিবারিতে নারে অশ্রু ঝরয়ে নয়নে।।
মহান্তগণের হয় যে ভাব বিকার।
তাহা একমুখে কি বর্ণিব মুঁই ছার।।
আত্মবিস্মরিত কেহ মনে মনে কয়।
শ্রীগুরু-অর্পিত শক্তি তেঞি ঐছে হয়।।
কেহ কহে শক্তি সঞ্চারিল বেদব্যাস।
তেঞি অদ্ভুত অদ্ভুত অর্থ করয়ে প্রকাশ।।
কেহ কহে গদাধর পণ্ডিত গোসাঞি।
বুঝি কৃপা-শক্তি পূর্ণ প্রকাশে এথাই।।’’
গদাধরের কৃপা না হলে—এমন,–মধুর কথা কে বলে
গদাধরের কৃপা-শক্তি-বলে—শ্রীনিবাস ভাগবত-কথা বলে
ভাগবত-কথা গদাধর বিনে—আর কেবা আস্বাদ করে
এত মধু কথাতে
গদাধরের কৃপা-হতে—এত মধু কথাতে
ঐছে পাঠ লালিত্য কি তুলনা ইহায়।।
কেহ কহে গৌরপ্রেম-স্বরূপ এ-হন।
এ-মুখে সে বক্তা তেঞি ঐছে আকর্ষণ।।’’
গৌর-প্রেমের মূরতি শ্রীনিবাস—তাই,–মধুর-কথা হয় প্রকাশ
এঁর মুখে মধুর গৌরের ভাষ—তাই,–মধুর-কথা হয় প্রকাশ
গৌর এঁর হৃদে বসে—বহু ব্যাখ্যা প্রকাশে
তাহা কেহ বর্ণিবেন করিয়া বিস্তার।।
প্রভু-পরিকরের কি অদ্ভুত চরিত।
করয়ে শ্রবণ যৈছে উপমা রহিত।।
শ্রীমদ্ভাগবত-কথামৃত আস্বাদনে।
কৈছে দিন যায় তাহা কিছুই না জানে।।
শ্রীনিবাস দেখে দিবা অবসান হৈল।
প্রার্থনা পূর্ব্বক কথামৃত সাঙ্গ কৈল।।
গ্রন্থে প্রণমিয়া অতি দীনতা অন্তরে।
ভুমে পড়ি প্রণমিলা প্রভু-পরিকরে।।
প্রভু-পরিকরগণ হইয়া উল্লাস।
শ্রীনিবাসে ঐছে স্নেহ করয়ে প্রকাশ।।
কেহ শ্রীনিবাস-শিরে শ্রীহস্ত ধরয়।
জুড়াইনু বলি’ নেত্র-জলে সিক্ত হয়।।’’
ঠাকুর-নরহরির তরে—নিশিদিশি হিয়া জ্বলে
তোমার মুখে শুনে ভাগবত—দগ্ধ-হৃদয় শীতল হল
তোমারে বঞ্চিত যে বঞ্চুক তারে বিধি।।
যে লইবে তোমার শরণ সেই ধন্য।
অবশ্য মিলিব তারে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য।।’’
যে লইবে তোমার শরণ—তারে মিলিবে চৈতন্য-ধন
যে তোমার শরণ লবে—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য পাবে
এ মুখ সদাই মনে রহুক আমার।।’’
তোমার ঐ মুখখানি—যেন,–জাগে হৃদে দিবা-যামিনী
তোমা হৈতে জীবের হইবে দুঃখ ক্ষয়।।
কেহ কেহ তোমার বালাই লইয়া মরি।
আইস’হ তোমারে বারেক কোলে করি।।
কোলে লইয়া তিলেক ছাড়িতে না পারে।
মনে হয় রাখে সদা হিয়ার ভিতরে।।’’
হিয়ায় রাখবার ধন বটে—তাই ত’ এ-ভাব ঘটে
ধরিয়া হিয়ায় কহে পূর্ণ হৈল সাধ।।
হৈয়াছে সকল শূন্য তাতে দগ্ধ হিয়া।’’
দাস-গদাধর নরহরি—একে একে ছেড়ে গেছে
দগ্ধ-হৃদয় জুড়াইলা—কথামৃত শুনাইল
সমর্পয়ে শ্রীমূর্ত্তিদ্বয়ের চরণেতে।।
নরহরি-রঘুনন্দনের প্রেমাধীন।
এ দোঁহার গুণে মত্ত হও রাত্রিদিন।।
ভক্তিরস সায়রে ডুবাও হীনজনে।
ঐছে কত কহে অশ্রু ঝরয়ে নয়নে।।
কেহ প্রণমিয়া কহে কৃতার্থ করিলা।
শ্রীমদ্ভাগবত-কথারসে ডুবাইলা।।
কেহ মহা-উল্লাসে রহয়ে মৌন ধরি’।
ঐছে যে অপূর্ব্ব চেষ্টা বর্ণিতে না পারি।।
শ্রীনিবাস-প্রতি এ-প্রকার আচরণ।
দেখে মহানন্দে ভাগ্যবন্ত লোকগণ।।
সর্ব্ব মহান্তের মহা আনন্দ জন্মিলা।
শ্রীরঘুনন্দন-গুণে বিহ্বল হইলা।।
রঘুনন্দনের প্রশংসয়ে বার বার।
সে সব সূযশ বর্ণিবারে শক্তি কার।
রঘুনন্দনের চিত্তে লজ্জা অতিশয়।
আপনা মানয়ে দীন দৈন্য প্রকাশয়।।
এ সকল রীত কি বুঝিবে অন্য-জন।
শ্রীচৈতন্য-কথায় গোঙায় কতক্ষণ।।’’
গৌর-লীলা-কথা বোলে—সবে ভাসে নয়ন-জলে
উঠিলেন সবে শীঘ্র প্রণমি প্রাঙ্গণে।।
শ্রীমূর্ত্তিদ্বয়ের দর্শনেতে হর্ষ হৈলা।
সঙ্কীর্ত্তনারম্ভের উদ্যোগ করাইলা।।
শ্রীরঘুনন্দন নিজগণে নির্দ্দেশিলা।
সবে শীঘ্র গৌরাঙ্গের প্রাঙ্গণে আইলা।।
অবশেষে যে ছিল তা’ সুসজ্জ করিলা।
অতি-যত্নে খোল-করতালাদি রাখিলা।।
হইল প্রস্তুত রঘুনন্দনে কহিলা।
শ্রীরঘুনন্দন প্রভুগণে জানাইলা।।
করিয়া প্রভুর সন্ধ্যা-আরতি দর্শন।
দেখে সঙ্কীর্ত্তন-আরম্ভের প্রয়োজন।।
খোল-করতালাদি অনেক নিরখিয়া।
প্রশংসে সকলে পরম হর্ষ হইয়া।।
দেখয়ে অনেক-পাত্রে সুগন্ধি-চন্দন।
পৃথক পৃথক পাত্রে পুষ্পহারগণ।।
নানা-পুষ্পমালা সে সৌভাগ্য অতিশয়।
অপূর্ব্ব রচনা সর্ব্বচিত্ত আকর্ষয়।।
ঐছে বহু দেখিয়া প্রভুর প্রিয়গণ।
পরস্পর কহে কি অপূর্ব্ব আয়োজন।।
শ্রীরঘুনন্দন কহে করি পরিহার।
প্রসাদী চন্দন মালা কর অঙ্গীকার।।
শুনি’ সর্ব্ব মহান্তের বাড়িল কৌতুক।
পরস্পর পরাইব ইথে মহাসুখ।।
পৃথক পৃথক পাত্রে শ্রীরঘুনন্দন।
শ্রীচন্দন-মালা সবে কৈল সমর্পণ।।
শ্রীপ্রভুর সম্পত্তি খোল-করতাল।
তাহে কেহ অর্পয়ে চন্দন পুষ্পমাল।।
শ্রীচন্দন-মালা শোভে সর্ব্ব মর্দ্দলেতে।
নিরন্তর ব্রহ্মাদি-দেবতা বৈসে যাতে।।
শ্রীযদুনন্দন শ্রীলোচন দুইজন।
লইলেন পুষ্পমালা সুগন্ধি চন্দন।।
দোঁহে কৃষ্ণমিশ্র-েগোপালেরে পরাইয়া।
দেখয়ে অদ্ভুত শোভা নয়ন-ভরিয়া।।
পরম-আনন্দ-মনে শ্রীরঘুনন্দন।
শ্রীবীরভদ্রের অঙ্গে চর্চ্চয়ে চন্দন।।
নানা-পুষ্পমালায় বিচিত্র বেশ কৈল।
দেখিতে সে শোভা সুখ-সমুদ্রে ডুবিল।।
প্রভু-বীরচন্দ্রের ইঙ্গিতে-শ্রীনিবাস।
শ্রীমালা চন্দন লৈয়া গেলা প্রভু-পাশ।।
প্রভু বীরচন্দ্র মালা চন্দন আপনে।
পরাইলা মহাহর্ষে শ্রীরঘুনন্দনে।।
শ্রীরঘুনন্দন স্নেহে বিহ্বল হইলা।
শ্রীমালা চন্দন শ্রীনিবাসে পরাইলা।।
পরস্পর হৈল মালা চন্দন গ্রহণ।’’
প্রসঙ্গ বলিতে—প্রাণ কেঁদে উঠছে
তখন জনম হল না—কিছুই দেখতে পেলাম না
সবে দাঁড়াইল চারু-চন্দ্রাতপ-তলে।’’
প্রভু-পরিকরগণ গুণের আলয়।
গীত নৃত্য বাদ্যে বিশারদ অতিশয়।।’’
তাঁরাই এঁরা এঁরাই তাঁরা—না হবে বা কেন রে
ব্রজে রাস নদে কীর্ত্তন—না হবে বা কেন রে
রাসরসের সঙ্গী যাঁরা—সঙ্কীর্ত্তনে এসেছে তাঁরা
চতুর্দ্দিকে বেড়ি কতশত দীপ জ্বলে।।
পাষাণ্ড-মর্দ্দন-মর্দ্দলের শব্দমাত্রে ।
পুলক ব্যাপিল সব বৈষ্ণবের গাত্রে।।
কিবা সে মধুর ঝাঁজ বাদ্যের চাতুরী।
বাজায় সুছন্দে চারু খমক মঞ্জরী।।
বাদক সকল পাঠাক্ষর উচ্চারয়।
শব্দের ঘটায় যেন সুধাবৃষ্টি হয়।।
গায়ক সকল সে আলাপ-বর্ণ-রীতে।
আলাপয়ে নানা ভাঁতি উপমা কি দিতে।।
করিয়া আলাপ রাগ প্রকট করয়।
কহিতে কি রাগের সৌভাগ্য অতিশয়।।’’
সঙ্কীর্ত্তনের সহায় হয়—রাগের সৌভাগ্য অতিশয়
গমক প্রভেদ প্রকাশয়ে চমৎকার।।
বিবিধ প্রবন্ধে তার প্রভেদ প্রচারে।
আনের কা কথা গন্ধর্ব্বের গর্ব্ব হরে।।
বাড়য়ে সবার বল করিতে কীর্ত্তন।
ষোড়শ-বর্ষের প্রায় হৈলা বৃদ্ধগণ।।
সঙ্কীর্ত্তন-সুখের সমুদ্র উথলিল।
পশু-পক্ষী-মনুষ্য-দেবাদি মুগ্ধ হৈল।।
সঙ্কীর্ত্তন-স্থলেতে লোকের নাই পার।
সবাকার নেত্রে অশ্রুধারা অনিবার।।’’
ঠাকুর-নরহরির উৎসবে—প্রেমের পাথার বয়ে যায়
ভাসে সঙ্কীর্ত্তন-সুখ-সমুদ্র-হিল্লোলে।।
সকল মহান্ত হৈয়া আত্ম-বিস্মরিত।
করয়ে যে নৃত্য তাহে জগৎ মোহিত।।
কৃষ্ণ মিশ্র শ্রীগোপাল দোঁহার নর্ত্তনে।
যে আনন্দ তাহা কি বর্ণিব কবিগণে।।
নাচয়ে শ্রীবীরভদ্র ভঙ্গী সুমধুর।’’
সেই ত’ এসেছে
এবার বীরভদ্ররূপে—সেই ত’ এসেছে
রসময় গৌরাঙ্গ নট—সেই ত’ এসেছে
সংসার করতে অবধূত—কিছুতেই মানে না
এই কথার ইঙ্গিত করে—অবধূতে গৃহী কৈলা
নাম-প্রেম প্রচারিতে—আমি যবে পুত্ররূপে
ঠাকুর-শ্রীবীরভদ্রের—স্বরূপ বর্ণন আছে
বীর-রূপে হইল শ্রীগৌরাঙ্গ অবতর।।’’
‘‘যে দেখে বারেক তার তাপ যায় দূর।।
দেখিয়া অদ্ভুত নৃত্য কহে লোকগণ।
না হৈল অনেক নেত্র হৈল দুনয়ন।।’’
বীরভদ্র-নৃত্য দেখে—আশা ত’ মিটল না
বিধি দিল দুইনয়ন—আশা ত’ মিটল না
অনিমিখ নেত্রে সবে রহয়ে চাহিয়া।।’’
শ্রীবীরভদ্রে হেরে—আঁখি পালটিতে নারে
শুনিলেন নাচে নিত্যানন্দের তনয়।।
কেহ কাহু প্রতি পুছে কি নাম ইঁহার।
তেঁহো কহে বীরভদ্র জগতে প্রচার।।
শুনি অন্ধ উল্লসিত অন্তরে বিচারে।
যে নাম ইঁহার ইঁথে অমঙ্গল হরে।।
ঐছে বিচারিয়া স্ততি করে মনে মনে।
বীর পদ হৈল দুষ্ট-সংহার-কারণে।।
করিতে জীবের মহ অমঙ্গল ক্ষয়।
ভদ্র পদ হৈল তেঞি ওহে দয়াময়।।
বিধাতা করিল অন্ধ না পাই দেখিতে।
যে উচিত হয় প্রভু বিচারহ চিতে।।’’
অন্ধ আমার দুনয়ন—আমি না পাই দরশন
প্রভু তোমার মধুর নর্ত্তন—আমি না পাই দরশন
জানিলেন প্রভু নিত্যানন্দের তনয়।।
সকরুণ হৈয়া চাহে অন্ধগণ প্রতি।
অন্ধ নেত্র পাইল কিংবা অন্ধের সুকৃতি।।’’
প্রভু-বীরভদ্রের কৃপাতে—অন্ধগণ পাইল নেত্রে
এই প্রাণ-গৌরাঙ্গ-আগে—অন্ধগণ পাইল নেত্রে
জয় জয় জয় ধ্বনি ব্যাপিল ভুবন।।’’
অন্ধেরে লোচন-দানকারী—জয় বীরভদ্র বলিহারি[মাতন]
কেমনে অন্ধ নয়ন পেল—বীরভদ্র বল বল
গোরা-গুণ সঙরিতে বিদরে পরাণ।।
প্রভু-পরিকর ধৈর্য্য ধরিতে না পারে।
উর্দ্ধবাহু করিয়া ডাকয়ে উচ্চৈঃস্বরে।।
কোথা গৌরচন্দ্র প্রভু শচীর নন্দন।’’
শ্রীখণ্ডের শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রাঙ্গণে—ব্যাকুল হয়ে সবাই ডাকে
গৌরাঙ্গগণ করি’ ক্রন্দনে—ব্যাকুল হয়ে সবাই ডাকে
শ্রীঅদ্বৈত-নিতাই-তনয়-সনে—ব্যাকুল হয়ে সবাই ডাকে
বিরহানল জাগে বুকে—ব্যাকুল হয়ে সবাই ডাকে
ঠাকুর-নরহরির এই তিরোভাব-দিনে—ব্যাকুল হয়ে সবাই ডাকে
কোথা নিত্যানন্দ-রাম দুঃখীর জীবন।।’’
প্রভু-নিতাই প্রাণ-গৌরাঙ্গ—একবার দেখা দাও
প্রাণ-গৌর লয়ে আছ কোথায়—কোথায় নিত্যানন্দ রায়
পরাণ-গৌরাঙ্গ-সঙ্গে—কোথা বিহরিছ রঙ্গে
প্রাণ-গৌর লয়ে সঙ্গীর্ত্তনে—হা নিতাই,–দেখা দাও এই দুঃখীজনে
জগতে,–দেখাতে এলে আবার কেনে—গৌর লয়ে কোথা লুকালে
তোমার পরাণ-বঁধু-সনে—বিহরিছ কোনখানে
কোথা শ্রীমাধব বাসু মুরারি মুকুন্দ।।
কোথা মোর গদাধর দাস নরহরি।’’
লয়ে যত শ্রীখণ্ডেরগণ—কাঁদেন ঠাকুর রঘুনন্দন
কাঁদেন শ্রীনিবাস যদুনন্দন—কাঁদেন ঠাকুর রঘুনন্দন
দাস-গদাধর নরহরি—কোথা বা বিহরিছ
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—কোথা বা বিহরিছ
এই ত’ তোমার গৌর গুণমণি—ঠাকুর-নরহরি কোথা তুমি
লইয়া এসব নাম কাঁদয়ে ফুকারি।।
গণ-সহ দেখা দেহ গোরা বিনোদিয়া।।’’
গণ-সহ সঙ্কীর্ত্তনে—দেখ দাও নিজ-গুণে
হা-গৌর বিনোদিয়া—প্রাণ রাখ দেখা দিয়া
গৌর দেখা দাও বলিয়া—ভূমিতলে পড়ে লোটাইয়া
বলে,–সগণে গৌর আছ কোথায়—ব্যাকুল হয়ে ধূলয় লুটায়
সগণে গৌর দেখা দাও বলে—সবই লোটায় ভূমিতলে
হইল সবার অঙ্গ ধূলায় ধূসর।।
দারুণ বিয়োগ-ব্যথা বাড়িল প্রচুর।
উঠিল ক্রন্দন রোল ধৈর্য্য গেল দূর।।’’
হা-গৌর প্রাণ-গৌর বলে—উঠিল,–ক্রন্দনরোল চারিদিকে
কি জানি কি রূপে সন্তোষিলেন সবারে।।
শ্রীমহাপ্রভুর এই অলৌকিক লীলা।
দুঃখ হইতে আনন্দ-সমুদ্রে ডুবাইলা।।
কিবা সে আনন্দাবেশ হইল সবার।
কেহ চারু চরণে ধরয়ে বার বার।।
কেহ কারে আলিঙ্গয়ে প্রফুল্ল বয়ান।
আনন্দাশ্রু-জলে পূর্ণ সবার নয়ন।।
পরস্পর বিবিধ-প্রকার সম্বোধয়।
দেখয়ে হইল নিশি প্রভাত সময়।।
মঙ্গল—আরতি দেখি’ উল্লসিত-মনে।
করয়ে প্রণাম সবে প্রভুর প্রাঙ্গণে।।
সে সময়ে করি প্রভু-গণের দর্শন।
চতুর্দ্দিকে হরিবোল বোলে লোকগণ।।’’
প্রভুর গণে দর্শন করি’—বলে সবে হরি হরি
পরস্পর লোকগণ নানা-কথা কয়।।
কেহ কহে অদ্য নিশি শীঘ্র পোহাইল।
নিকরুণ বিধি নিশি বৃদ্ধি না করিল।।
কেহ কহে কিবা মহান্তের আচরণ।
দেখ উপবাস যৈছে তৈছে জাগরণ।।’’
ভক্তি-আচরণ প্রভুর গণে—কেবা জানে প্রভু বিনে
লোটাইয়া পড়ে সিক্ত হইয়া নেত্রজলে।।
দেখিয়া লোকের চেষ্টা প্রভুপ্রিয়গণ।
যে কৃপা করিল তাহা না হয় বর্ণন।।
কহিতে কি মহান্তগণের প্রেমাবেশ।
শ্রীরঘুনন্দনে শ্লাঘা করয়ে অশেষ।।
কেহ কহে শ্রীরঘুনন্দনে প্রীতি যার।
জন্মে জন্মে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বশ তার।।’’
রঘুনন্দনে প্রীতি যার—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বশ তার
অতি দীন হীন দুঃখী জনার জীবন।।
কেহ কহে কি দৈন্য বিষয় নাই হেন।
কেহ কহে কন্দর্পের প্রায় শোভা যেন।।
কেহ কহে রঘুনন্দনের মহাপ্রীতে।
হৈল যে কীর্ত্তনানন্দ উপমা কি দিতে।।
ঐছে কত কহে রঘুনন্দনের কথা।
হেনকালে শ্রীরঘুনন্দন আইলা তথা।।
শুনি’ নিজ-শ্লাঘা চিত্তে লজ্জা অতিশয়।
হইলেন যৈছে তাহা কহিলে না হয়।।
আপনা মানয়ে দীন প্রশংসা না সহে।
করয়ে যে দৈন্য শুনি’ কেবা স্থির রহে।।
রঘুনন্দনের দৈন্য শুনি’ সর্ব্বজনে।
হইলা বিহ্বল অশ্রু ঝরয়ে নয়নে।।
শ্রীরঘুনন্দনে করি’ দৃঢ়-আলিঙ্গন।
কতক্ষণে স্থির হৈলা প্রভু-প্রিয়গণ।।
শ্রীরঘু নন্দন সবা প্রতি নিবেদয়।
শ্রীদ্বাদশী-পারণেতে কৈছে আজ্ঞা হয়।।
সবে কহে একত্রে বসিয়া সর্ব্বজন।
করিব শ্রীগৌরাঙ্গের প্রসাদ সেবন।।
শুনি’ রঘু নন্দনের হৈল হর্ষ হিয়া।
শীঘ্র নানা সামগ্রী করান যত্ন পায়া।।
মহান্ত সকল নিজ নিজ বাসা গেলা।
গণসহ সবে প্রাতঃক্রিয়াদি করিলা।।
এথা নানা-পক্কান্নাদি প্রস্তুত হইল।
পূজারী প্রভুকে শীঘ্র ভোগ সমর্পিল।।
কতক্ষণ পরে প্রভু সময় জানিয়া।
ভোগ সরাইলেন পূজারী হর্ষ হইয়া।।
সর্ব্ব মহান্তেরে আনি’ শ্রীরঘুনন্দন।
করাইল প্রভুর শ্রীভোগের দর্শন।।
প্রভুর ভোগের শোভা কহনে না যায়।
দেখি’ সর্ব্ব মহান্তের উল্লাস হিয়ায়।।
প্রভুর শ্রীআরত্রিক করিয়া দর্শন।
বসিলেন গিয়া যথা করিব ভোজন।।
বসিলেন সবে কিবা অপূর্ব্ব—বন্ধানে।
হইল অদ্ভুত শোভা ভোজনের স্থানে।।
কদলীর পত্র, পাত্রে সুবাসিত বারি।
পরিবেশে কতজন মহা-যত্ন করি’।।
এথ প্রেমভক্তিময় পূজারী যতনে।
প্রভুকে শয়ন করাইলা হর্ষ-মনে।।
প্রভুর চরণে পুনঃ পুনঃ প্রণমিলা।
করিতে পরিবেশন প্রস্তুত হইলা।।
গোধূম-চূর্ণের পূপাদি বহুত হয়।
দুগ্ধের বিকার নানা ফল-মূলাদয়।।
যত্নপূর্ব্বক পাত্রে লৈয়া চলে বহুজনে।
ক্রমে পরিবেশ করয়ে হর্ষ-মনে।।
সর্ব্বত্রেই সর্ব্ব-দ্রব্য দিয়া থরে থরে।
পরিবেশে শ্রীচরণামৃত মহান্তেরে।।
শ্রীরঘুনন্দনে সর্ব্ব-মহান্ত কহয়।
তুমি না বৈসহ ইথে সুখ না জন্ময়।।
‘শুনি দৈন্য করি’ কহে শ্রীরঘুনন্দন।
করুণ ভোজন দেখি’ জুড়াক নয়ন।।
হরিধ্বনি করি’ সবে ভূঞ্জেন কৌতুকে।
দাঁড়াইয়া শ্রীরঘুনন্দন দেখে সুখে।।’’
তাতে রঘুনন্দনের সুখ বটে—মহান্তগণ,–বসেছেন প্রসাদ ভোজনেতে
পংক্তিতে আমার প্রভু নাই দেখে—বিরহেতে বুক ফাটে
গৌরগণের,–প্রসাদ ভোজন দেখে সুখ—নরহরি-বিরহে ফাটে বুক
এক ভোগ লইলেন পৃথক করিয়া।।
শ্রীঠাকুর-নরহরি ছিলা যে নির্জ্জনে।
তথা শ্রীপ্রদাস লইয়া গেলেন আপনে।।’’
ঠাকুর-শ্রীরঘুনন্দনের—নয়ান-জলে বয়ান ভাসে
সঙরি’ নরহরি-গুণে—নয়ান-জলে বয়ান ভাসে
প্রাণে প্রাণে রঘুনন্দন বলে—অঙ্গীকার করবে কি
হা,–প্রাণের ঠাকুর নরহরি—অঙ্গীকার করবে কি
তাতে বসাইলা ধ্যানে দৈন্যে মগ্ন হৈয়া।।’’
এই তোমার আসনে বস—অঙ্গীকার কর বোলে
প্রভু নরহরি তেমনি করে—অঙ্গীকার কর বোলে
তোমার, গৌর-অধরামৃত—অঙ্গীকার কর বোলে
জলপাত্রে প্রসাদী বাসিত জল দিলা।।
এক-পাত্রে প্রসাদী তাম্বুল দিলা আর।’’
শ্রীগৌরাঙ্গ-অধরামৃত—আস্বাদন কর হে
প্রভু,–নরহরি পর গলায়
তোমার,–প্রাণনাথের পুষ্পহার—প্রভু,–নরহরি পর গলায়
প্রাণ-গৌরাঙ্গের প্রসাদ তোমার—নরহরি কর অঙ্গীকার
বাহিরে আসিয়া রহিলেন কতক্ষণ।
সময় জানিয়া চলে দিতে আচমন।।
দ্বার ঘুচাইয়া দেখে প্রভু নরহরি।
আসনে বসিয়া আছে দিব্যরূপ ধরি’।।’’
নরহরির সর্ব্বস্বধন—গুণের ঠাকুর রঘুনন্দন
আর কি ঠাকুর রইতে পারে—সেই রঘুনন্দন ডাকে তারে
রঘুনন্দন—ডাকে তারে করি’ দৈন্য—না এসে কেমনে থাকবে বল
যার প্রীতি,–গোপীনাথে লাড়ু খাওয়াল—না এসে কেমনে থাকবে বল
রঘুনন্দনের প্রেমের বলে—নরহরি প্রকট হলেন
আসনে,–বসে ঠাকুর নরহরি—রঘুনন্দন দেখে নয়ন-ভরি’
কোথায় গেছে সদাই আছে
গৌর লয়ে কুঞ্জে বিলসিছে—কোথায় গেছে সদাই আছে
প্রাণগৌর গৌরপরিকরের—ত্রিকাল-সত্য লীলা রে
অদর্শন হৈতে দুঃখ-সমুদ্রে ডুবিলা।।’’
এই,–দেখা দিয়া কোথা লুকালে
হা-ঠাকুর নরহরি—এই,–দেখা দিয়া কোথা লুকালে
এই ত’ আসনে বসেছিলে—ঠাকুর,–নরহরি কোথা লুকালে
ভূমে পড়ি’ প্রণমিলা সজল-নয়ন।।’’
নরহরি,–আর কি দেখা দিবে বলে—রঘুনন্দন ভাসে নয়ন-জলে
আর বার বুকে ধরে—একবার মাথায় ধরে
তুমি,–বুকে ধরেছ নরহরি-বলে,–আসন তোমার যাই বলিহারি
গৌরাঙ্গ-বিলাসের ঘর-হৃদয়ে বিহার তোমার
গৌরাঙ্গ-বিলাস—তোমার হৃদে বিহরে
দেখয়ে ভোজনে কিবা কৌতুক সবার।
ভুঞ্জে সবে সামগ্রী প্রশংসী বার বার।।
শ্রীরঘুনন্দন কত করিয়া বিনয়।
ভূঞ্জিতে বিশেষ পুনঃ পুনঃ নিবেদয়।।
পরম-আনন্দে সবে করিয়া ভোজন।
পরস্পর কহি কত কৈল আচমন।।
স্নেহাবেশে কহে সবে শ্রীরঘুনন্দনে।
লইয়া সকলে শীঘ্র বঈসহ ভোজনে।।
শ্রীনিবাস-আদি সবে শ্রীরঘুনন্দন।
ভুঞ্জাইয়া যত্নে কৈল আপনি ভোজনে।।
ভুঞ্জয়ে আনন্দে বহুলোক ঠাঁই ঠাঁই।
সবে কহে এহেন উৎসব দেখি নাই।।
হৈল মহামহোৎসব দ্বাদশী-দিবসে।
এ-সকল প্রসঙ্গ ব্যাপিল সর্ব্ব-দেশে।।
শ্রীরঘুনন্দন সর্ব্ব-কার্য্য সমাধিয়া।
গৌরাঙ্গ-প্রাঙ্গণে আইলেন হর্ষ হৈয়া।।
গৌরাঙ্গের উত্থাপন-আরতি দর্শনে।
প্রভু-প্রিয়গণ আইলা গৌরাঙ্গ-প্রাঙ্গণে।।
কতক্ষণ কৃষ্ণলীলা আলাপন কৈলা।
সন্ধ্যা-আরত্রিক দর্শনেতে হর্ষ হৈলা।।
সবে প্রণমিয়া প্রভু-গৌরাঙ্গ-প্রাঙ্গণে।
হইলেন মহামত্ত শ্রীনাম-কীর্ত্তনে।।
দ্বিতীয় প্রহর রাত্রি ব্যাপিত হইল।
কিছুকাল বাসা গিয়া শয়ন করিল।।
এ’-মহোৎসবের কথা শুনে যেই জন।
অনায়াসে হয় তার তাপ বিমোচন।
ওহে ভাই ইথে মনে দেহ নিরন্তর।
না কর অলস সুখ পাইবে বিস্তর।।
শ্রীনিবাস-আচার্য্য-চরণ চিন্তা করি’।
ভক্তি-রত্নাকর কহে দাস নহরহি।।’’
দাঁড়ায়ে গৌরাঙ্গ-অঙ্গনে—তোমরা,–ব্যাকুল হয়ে কেঁদেছিলে
কোথা নিত্যানন্দরাম দুঃখীর জীবন।
প্রাণ-গৌর লয়ে সঙ্কীর্ত্তনে—দেখা দাও এই দুঃখী-জনে
জগতেরে দিতে এলে—আবার,–গৌর লয়ে কোথা লুকালে
তোমার পরাণ-বঁধু-সনে—বিহরিছ কেন-খানে
কোথা শ্রীমাধব বাসু মুররি মুকুন্দ।।
কোথা মোর গদাধর-দাস-নরহরি।’’
শ্রীগৌরাঙ্গ-বিরহে—ব্যাকুল হয়ে ডেকে ডেকে
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রাঙ্গণে—দেখতে ত’ পেয়েছ
চিতচোর-প্রাণগৌরাঙ্গে—দেখতে ত’ পেয়েছে
নিজগণ-সনে কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—দেখতে ত’ পেয়েছ
নরহরি-গৌরাঙ্গ-বিলাস করাও দর্শন—কোথা ঠাকুর রঘুনন্দন
তোমাদের কাছে,–গৌর-সন্ধান সুধাব বলে—বড় সাধে এলাম শ্রীখণ্ডেতে
তোমরা,–যেমন করে দেখতে পেলে—একবার দেখাও হে
একবার দেখাও মোদের
গৌরাঙ্গগণের বিহার—একবার দেখাও মোদের
ঠাকুর নরহরির-উৎসবে—একবার দেখাও মোদের
প্রকট-লীলা দেখা হয় নাই—এখনও দেখতে নাহি পেলাম
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে এলাম—এখনও দেখতে নাহি পেলাম
অতঃপর—‘‘কোথা বা লুকালে’’ ও ‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর’’—ইত্যাদি মহাজনী আক্ষেপ কীর্ত্তন : —
… … … … …
… … … … …
কিঞ্চিৎ বিশেষ :–
ও,–‘‘কাহারে কহিব দুঃখ, না দেখাব ছার মুখ,’’
আমি,–শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বৈমুখী—আমার,–মুখ কেউ দেখ না
আমার মত হবে সে—আমার মুখ দেখবে যে
ও—
আছি যেন মরা পশুপাখী।’’
… … … … …
… … … … …
হা গুরু-গৌরঙ্গ বলে—ব্যাকুল হয়ে ডাক রে
তাঁদের কৃপা স্মরণ করে—ব্যাকুল হয়ে ডাক রে
পরম-করুণ শ্রীগুরুগণ—তোমারাও ত’ আছ গো
গুপত নরহরি-গণ—তোমরাও ত’ আছে গো
গৌরাঙ্গের কীর্ত্তন-রঙ্গে—তোমারাও ত’ আছ গো
আমাদের এই শ্রীখণ্ডগ্রামে—তোমাদের,–প্রীতিই ত’ টেনে আনে
তোমাদের,–সেই প্রীতি-আকর্ষণে—তাই আমরা আসি ছুটে
‘তোমাদের,–সেই প্রীতি-আকর্ষণে—
সম্বন্ধ করে ডেকে বুকে লওয়া—তোমাদের,–সেই প্রীতি-আকর্ষণে
‘সম্বন্ধ করে ডেকে বুকে লওয়া’—
আয় বাপ আয় বলে—সম্বন্ধ করে ডেকে বুকে লওয়া
তাই আমরা যে আসি ছুটে
কৃপা কর নিজ-গুণে
হা শ্রীগুরুগণ-কৃপা কর নিজ-গুণে
বিলাসি-গৌরাঙ্গ-সনে—লুকাইয়ে করছ খেলা
যেন,—মেতে থাকি নিশিদিনে
ভাই ভাই মিলে এক-প্রাণে—যেন,–মেতে থাকি নিশিদিনে
ঠাকুর-নরহরি-গৌরাঙ্গগুণে—যেন,—মেতে থাকি নিশিদিনে
নরহরির-প্রাণ-গোরা
বিলাস-বিবর্ত্ত-রঙ্গে ভোরা—নরহরির প্রাণ-গোরা
নিতাই-রমণ গোরা—নরহরির চিতচোরা
নরহরির প্রাণ নিতাই গৌরাঙ্গ হে।।’’
খণ্ডবাসী চিরজীব আর সুলোচন।।’’
রঘুনন্দনের প্রাণধন—হা ঠাকুর নরহরি
যেন,–গৌরগুণে সদা ঝুরি
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরি—যেন,–গৌরগুণে সদা ঝুরি
শ্রীগুরু-দত্ত নামাবলী—যেন,–প্রাণভরে গান করি
পাগলা প্রভু হৃদে ধরি’—যারে দেখি তারে বলি
ভজ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
নামদাতা নাম এক জেনে—নাম কর প্রাণ পণে
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।