শ্রীশ্রীরামহরিদাস বাবাজী মহারাজের সূচক-কীর্ত্তন

(ভাদ্র-শুক্লাচতুর্থী তিথি)


—- ০ —-

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।


গৌরচন্দ্র কীর্ত্তনের কিঞ্চিৎ বিশেষ—
‘‘প্রেমসিন্ধু গোরারায়,’’……………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………….
‘‘লীলারস সংঙ্কীর্ত্তন’’
………………………………………………………………………………………………
………………………………………………………………………………………………

সে পরিণতি ভোগ করে

মহারাস-বিলাসের পরিণতি ভোগ করে
……………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………..
………………………………………………………………………………………………..

পরিণতি ভোগ করে

নিগূঢ়-গম্ভীরা-লীলার—পরিণতি ভোগ করে

শ্রীরামরায় দেখে,–আবির্ভাব এক নব-মুরতি

অভিন্ন-স্বরূপে—আবির্ভাব এক নব-মুরতি

পরস্পর বিভিন্ন স্বভাব
গৌর-স্বরূপে ভোগীর স্বভাব

নিতাই-স্বরূপে ভোগ দেওয়া স্বভাব—গৌর-স্বরূপে ভোগীর স্বভাব

গৌর-স্বরূপে নেওয়া স্বভাব
নিতাই-স্বরূপে দেওয়া স্বভাব
সে যে আমার নিতাই মুরতি

অভিন্ন-চৈতন্য-তনু—সে যে আমার নিতাই মুরতি

দেখতে দেখতে দেখে অপরূপ

দুই-মুরতি জড়াজড়ি—দেখতে দেখতে দেখে অপরূপ

[মাতন]
অপরূপ সে মিলন-রঙ্গ

বিলাস বিবর্ত্ত বিলাস-রঙ্গ—অপরূপ সে মিলন-রূপ

রামরায় মুরছিত

সেই মিলন-রঙ্গ দেখে—রামরায় মুরছিত

দুই দেখে একরূপ

মহাভাব আর রসরাজ—দুই দেখে একরূপ
শ্বেতচাঁপা কনকচাঁপা—দুই দেখে একরূপ

দুই-মূরতি মিলিত
দুই তো যুগল বটে

গৌর যুগল নিতাই যুগল—দুই তো যুগল বটে
এক বিষয় আর আশ্রয়—দুই তো যুগল বটে

একের নিরন্তর ভোগ-লালসা

গৌর-স্বরূপে রাধাকৃষ্ণের—একের নিরন্তর ভোগ-লালসা

নিরন্তর পূরার আশা

নিতাই-স্বরূপে রাধাকৃষ্ণ—নিরন্তর পূরার আশা

তাই তো হয় এই উক্তি

মহাজনের শ্রীমুখে—তাই তো হয় এই উক্তি
‘‘পূরায় চৈতন্য-কাম আমার নিত্যানন্দ রাম।।’’

[মাতন]
নিতাই চৈতন্য নাম

নিতাই আশ্রয় গৌর বিষয়—নিতাই চৈতন্য নাম

আহা,–‘‘লীলারস সংকীর্ত্তন, বিকশিত পদ্মবন,’’ পূর্ব্ববৎ–


—-০—-

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।


‘‘শান্তিপুর সীতানাথ, তথা কোটি দণ্ডবৎ,
রামহরি যথা জনমিলা।’’

শ্রীশান্তিপুরে দণ্ডবৎ

শ্রীসীতানাথের বিহারভূমি—শ্রীশান্তিপুরে দণ্ডবৎ
প্রভু,–রামহরির জন্মভূমি—শ্রীশান্তিপুরে দণ্ডবৎ

‘‘রামহরি যথা জনমিলা।
কৃষ্ণ-অনুরাগ-ভরে, গরগর-অন্তরে,
একদিন কৃষ্ণ দেখা পাইলা।।’’

আমার প্রভু রামহরি

শ্রীকৃষ্ণৃ-দেখা পাইলা—আমার প্রভু রামহরি

‘‘পুনঃ কৃষ্ণ-অন্তর্দ্ধান, না হেরি বিদরে প্রাণ,’’

দেখা দিয়া লুকালে কোথায়

প্রাণের কালমাণিক আমার—দেখা দিয়া লুকালে কোথায়

প্রভু আমার,–‘‘অনুরাগে নবদ্বীপে ধায়।
সিদ্ধ-জগন্নাথদাস’’

গৌর-নিষ্ঠার আদর্শ-স্বরূপ

‘‘সিদ্ধ জগন্নাথ-দাস, মিলিয়া তাহার পাশ,
প্রাণের পিপাসা নিবেদয়।।
তেঁহ প্রেমভক্তি দিয়ে,’’

আইস বলি’ আলিঙ্গিয়ে

‘‘তেঁহ প্রেমভক্তি দিয়ে, বৈরাগ্য-বেশ ধরায়ে,
বৈষ্ণবের কর্ত্তব্য শিক্ষা দেন।
নরহরি-পরিবার, রাধিকা-বিলাস-ঠাকুর
তাঁর কাছে দীক্ষিত করেন।।’’

গোরারসে ডুবাইতে

ঠাকুর-নরহরির আনুগত্যে—গোরারসে ডুবাইতে

‘‘উভয়ের কৃপা পাইয়া, প্রেমে উনমত হইয়া,’’

শ্রীরাধিকা-বিলাস-ঠাকুর

সিদ্ধ-জগন্নাথদাস—আর,–শ্রীরাধিকা-বিলাস-ঠাকুর

সিদ্ধ-জগন্নাথ-দাস
তাঁর,–আবেশেতে পরকাশ

মধুর-শ্রীখণ্ডপুরে,–তাঁর,–আবেশেতে পরকাশ

শ্রীখণ্ড-গ্রামে বসতি দোঁহার

অধিকাংশ সময়—শ্রীখণ্ড-গ্রামে বসিতি দোঁহার

সিদ্ধ-শ্রীচৈতন্যদাস

সিদ্ধ-শ্রীজগন্নাথদাস—আর,–সিদ্ধ-শ্রীচৈতন্যদাস

অনেক সময় শ্রীখণ্ডে বাস
একদিন দুজনে ভাবাবেশে

পরস্পরের স্বরূপ প্রকাশ করছেন—একদিন দুজনে ভাবাবেশে

জগন্নাথদাস মহারাস করলে

বলছেন সিদ্ধ-চৈতন্যদাস—জগন্নাথদাস মহারাস করলে

চিনি আমি তোমায় ভাল চিনি
আমার কাছে লুকান চলবে না
সিদ্ধ জগন্নাথদাস বলছেন

ভাবাবেশে ঢুলি ঢুলি—সিদ্ধ জগন্নাথদাস বলছেন

জানি আমি ভাল জানি

ঠাকুর-নরহরির আবেশ-অবতার—জানি আমি ভাল জানি

সিদ্ধ-চৈতন্যদাস বলছেন
আমিও তোমায় ভাল জানি

দাস-রঘুনাথের আবেশ তুমি—আমিও তোমায় ভাল জানি
‘‘উভয়ের কৃপা পাইয়া,’’

ঠাকুর-শ্রীরাধিকা-বিলাস সিদ্ধ-জগন্নাথদাস

‘‘উভয়ের কৃপা পাইয়া, প্রেমে উনমত হইয়া,
গেলেন মধুর-বৃন্দাবনে।
হা গৌরাঙ্গ গৌরাঙ্গ বলি’, প্রেমে কাঁদি’ ফুলি ফুলি,’’

দোঁহার কৃপা-বলে হয়ে বলী
হা গৌরাঙ্গ গৌরাঙ্গ বলি’

মধুর-ব্রজবনে বুলে—হা গৌরাঙ্গ গৌরাঙ্গ বলি’

আমার প্রভু রামহরি
আমার প্রভুর প্রভু রামহরি

‘‘উৎকণ্ঠিত হয়ে ফিরে বনে।।
মত্ত-কুঞ্জর-সম, গতি অতি-মনোরম,’’

গোরারস-পানে হয়ে বিভোর
আমার প্রভু রামহরি
আবেশে বলেন দাস-বিশ্বম্ভর

ভক্ত-কুঞ্জর-মনোরমে—আবেশে বলেন দাস-বিশ্বম্ভর

মত্ত-কুঞ্জর-সম, গতি অতি-মনোরম,’’
কভু হেসে রহে স্থিরমতি।’’

যেন সম্মুখে দাঁড়ায়ে আছে

প্রভু-রামহরি দেখে—যেন সম্মুখে দাঁড়ায়ে আছে
প্রাণ-সর্ব্বস্ব-গৌরকিশোর—যেন সম্মুখে দাঁড়ায়ে আছে

তাই,–প্রভু-রামহরি বলে হেসে

দূরে কেন এস বুকে—তাই,–প্রভু-রামহরি বলে হেসে

কভু হেসে রহে স্থিরমতি।’’
কভু বাহু পাসরিয়ে, কি যেন ধরে হৃদয়ে,
কভু বা ঢলিয়া পড়ে ক্ষিতি।।’’

পেয়েছি আর ছাড়ব না বলে

নরহরির চিতচোর-গৌর—পেয়েছি আর ছাড়ল না বলে

প্রাণ-গৌরস্বরূপ তার সম্মুখে ফিরে

তাই,–বাহু পসারি’ হৃদে ধরে—প্রাণ-গৌরস্বরূপ তার সম্মুখে ফিরে

নিরন্তর কৃষ্ণ স্ফূর্ত্তি

তাই,–বাহু পসারিয়া ধরে—নিরন্তর কৃষ্ণ স্ফূর্ত্তি
তাই,–বাহু পসারিয়া হৃদে ধরে—নিরন্তর কৃষ্ণ স্ফূর্ত্তি

‘‘কভু বা ঢলিয়া পড়ে ক্ষিতি।।
একদা মাথুর—লীলা, শুনি শোক’ উপজিলা,
যমুনায় ধায় মরিবারে।’’

হা হা প্রাণনাথ বলি’

‘‘যমুনায় ধায় মরিবারে।
প্রাণনাথ-বিরহে, হিয়া স্থির নাহি রহে,
ভাসি’ যায় নয়নের ধারে।।
গিয়ে যমুনার তীরে, মূর্চ্ছিত হইয়া পড়ে,’’

এই যে ছিলে কোথা লুকালে

হা প্রাণ রাধারমণ—এই যে ছিলে কোথা লুকালে

‘‘সম্বিত পাইয়া শির ভাঙ্গে।
কভু কয় মনোসাধে, রাই জয় জয় রাধে রাধে,
কৃষ্ণ সম্মিলনে শ্রীগৌরাঙ্গে।।’’

নিকুঞ্জেতে এ কি রঙ্গ

আয় তোরা দেখে যা গো—নিকুঞ্জেতে এ কি রঙ্গ

[মাতন]

রাই কানু মিলে হল গৌরাঙ্গ—নিকুঞ্জেতে এ কি রঙ্গ

‘‘ইহা কহি’ গুরু মোর, গোরারসে হয়ে ভোর,’’

আবেশ বলেন দাস-বিশ্বম্ভর

‘‘ইহা কহি’ গুরু মোর, গোরারসে হয়ে ভোর,
কটি দুলাহয়ে কহে গোরা।’’

নদীয়া-নাগরী-আবেশে

আমার প্রভু রামহরি—নদীয়া-নাগরী আবেশে

নাগরী-ভাবেতে ভোরা

নরহরির আনুগত্যে—নাগরী-ভাবেতে ভোরা

আর কি আমরা শুনতে পাব

‘‘কটি দুলাহয়ে কহে গোরা।
গোরা গোরা গোরা গোরা, সে রমণীর চিতচোরা,
সে ধরা পড়ে কাঁসারি পাড়া।।
মোর প্রভু রামহরি, গৌরপ্রেমে আগরী,
ভাবিনীর ভাবে তিঁহ ভোরা।’’

সে ভাবিনী নদীয়া-নাগরী
‘‘ভাবিনীর ভাবে তিঁহ ভোরা।
কি মধুর হসন,’’
সদাই মুখ হাসি-মাখা

গৌর-অনুরাগে মাতা—সদাই মুখ হাসি-মাখা

যে দেখেছে সেই ত’ জানে

গোরারূপে ভোরা-মূরতি—যে দেখেছে সেই ত’ জানে

‘‘কি মধুর হসন, কি মধুর ভাষণ,
যাঁর,–মধুর-ঈক্ষণে ভুলে গোরা।।’’

গৌর-প্রেমে আগরী

আমার ঠাকুর-রামহরি—গৌর-প্রেমে আগরী

সদাই,–নদীয়া-নাগরী-ভাবে ভোরা

কীর্ত্তনেতে হয়ে ভোরা—সদাই,–নদীয়া-নাগরী-ভাবে ভোরা;

তাই,–এই গরব হৃদয়ে ভরা

আমার ঈক্ষণে ভুলে গোরা—তাই,–এই গরব হৃদয়ে ভরা

‘‘মধুর-ঈক্ষণে ভুলে গোরা।।
নয়নে নলিনীর আভা, পুলকে শ্রীঅঙ্গ শোভা,
গৌর-প্রণয়-রসে গড়া।’’

গৌর-প্রণয়-রসে গড়া

আমার প্রভু রামহরি—গৌর-প্রণয়-রসে গড়া

প্রভু আমার,–‘‘গৌর-প্রণয়-রসে গড়া।
নবীন-রসিয়া গোরা, যার রসে সদা ভোরা,
সে ভাবের তরুণী মনোহরা।।
নিকষিত ‘গোরা’ নাম, শ্রীবদনে অবিরাম,
স্থূলকণ্ঠী মধুর-ঢুলিত।’’

প্রভু রামহরি তোমার
শ্রীবদনে অবিরাম নাম

নিকষিত ‘গোরা’ নাম—শ্রীবদনে অবিরাম নাম

আর কি শুনতে পাব না

অনুরাগে মাখা ‘গোরা’ নাম—আর কি শুনতে পাব না
‘‘প্রেমে মত্ত কুতুহলী,’’

হয়ে গর গর মাতোয়ারা

বলিতে,–গোরা গোরা গোরা গোরা—হয়ে গর গর মাতোয়ারা

‘‘প্রেমে মত্ত কুতুহলী, কত ভাব-কলা-কেলি,
শ্রীঅঙ্গে হইত বিকশিত।।’’

যে দেখেছে সেই ত’ জানে

আমার প্রভু-রামহরি-দাসে—যে দেখেছে সেই ত’ জানে

আর কি দেখতে পাব না

ভাব-কলা-কেলি-বলিত-মুরতি—আর কি দেখতে পাব না
ভাব-কলা-কেলি-রঙ্গ—আর কি দেখতে পাব না

‘‘কভু বা বড়াই করি, বিলসই নরহরি,
কহিতে হে প্রভু রামহরি।’’

হইতে গৌর-প্রেমে মাতা

নরহরি-গৌর-বিলাস-কথায়—হইতে গৌর-প্রেমে মাতা

ভাবাবেশে কহিতে ফুকারি’

নরহরি-গৌরাঙ্গ-বিলাস হেরি’—ভাবাবেশে কহিতে ফুকারি’
বিলসই নরহরি—ভাবাবেশে কহিতে ফুকারি’

বিলসই নরহরি

রসিয়া-গৌরাঙ্গ পাই’—বিলসই নরহরি

‘‘শিবানন্দ জগানন্দ, বাসু বসু রামানন্দ,
এই সব প্রেমের নাগরী।।
মুকুন্দ শ্রীনরহরি, রঘুনন্দন মুরারী,
মোর চিরঞ্জীব সুলোচন।
সবে মেলি’ কুতূহলী, করে গোরা রসকেলি,
কহিতে গো এ-সব-বচন।।’’

নাগরী-ভাবে ভোরা রামহরি

নরহরি-গৌরাঙ্গ-বিলাস হেরি’—নাগরী-ভাবে ভোরা রামহরি

‘‘কহিতে গো এ-সব-বচন।।
দাস-শ্রীচৈতন্য সিদ্ধ, নাগরী-ভাবে বিশুদ্ধ,
তা হইতে ঐ স্রোত প্রচলন।’’

দাস-শ্রীচৈতন্য সিদ্ধ

ঠাকুর-নরহরির আবেশ-মুরতি—দাস-শ্রীচৈতন্য সিদ্ধ

যিনি আবেশে করতেন বসতি

শ্রীখণ্ডে নাগরী-সংহতি—যিনি আবেশে করতেন বসতি

নিশিদিশি গোঙাতেন

শ্রীখণ্ড-নাগরী-সঙ্গে—নিশিদিশি গোঙাতেন
গৌরাঙ্গ-বিলাস—কথা-রঙ্গে—নিশিদিশি গোঙাতেন

‘‘তা হইতে এই স্রোত প্রচলন।’’

আগে কেউ ত’ জানত না

এই রস-রহস্য—আগে কেউ ত’ জানত না
শ্রীচৈতন্য-দাস হতে প্রকাশ হল—আগে কেউ ত’ জানত না

‘‘তা হইতে এই-স্রোত প্রচলন।
কহিতে এ-সব-রঙ্গ, গোরা-রস-তরঙ্গ,
হৃদয়ে হইতে উদ্দীপন।।
হা নিতাই হা নিতাই বলি,’’

প্রধানা-নাগরী বলি’

গোরা-রস-নাগরের—প্রধানা—নাগরী বলি’

ভাবাবেশে বলতে তুমি

নিতাই-রমণ-গোরা—ভাবাবেশে বলতে তুমি

‘‘হা নিতাই হা নিতাই বলি’, কভু কাঁদি’ ফুলি ফুলি,
নিজ-বুকে মারিতে চাপড়।
নিতাই বলি’ উচ্চৈঃস্বরে, নাচিতে গো দর্পভরে,
প্রেম হেরে সকলে ফাঁপর।।
পরিধেয় বহির্ব্বাস, না হইত তল্লাস,
খসিয়া পড়িত প্রেমাবেশে।’’

নিতাই-রহস্য বলবার-কালে

দেহ-স্মৃতি থাকত না তোমার—নিতাই-রহস্য বলবার-কালে

নিতাই বলে নাচতে নাচতে

কটির বসন পড়ত খসে—নিতাই বলে নাচতে নাচতে

বহির্ব্বাস পড়ত খুলে

নিতাই-গৌরাঙ্গ-বিলাস বলতে—বিহর্ব্বাস পড়তে খুলে

‘‘খসিয়া পড়িত প্রেমাবেশে।’’

আর কি দেখতে পাব হে

সেই গৌর-প্রেমে বিহ্বল-মূরতি—আর কি দেখতে পাব হে

ভাবাবেশে বলতে তুমি

কত-গুণের ঠাকুর-রামহরি—ভাবাবেশে বলতে তুমি

ও,–নিতাই মোর সরবস, তুমি বাড়াও গোরারস,
গৌরসুখী কর সর্ব্বরসে।।’’

আর কেউ নাই প্রভু

তুমি বিনে সুখ দিতে—আর কেউ নাই প্রভু

আর কেবা আছে জগতে

প্রাণের নিতাই তোমা বিনে—আর কেবা আছে জগতে
গোরা-রসরাজে সুখ দিতে—আর কেবা আছে জগতে

ও,–‘‘নিতাই মোর সরবস, তুমি বাড়াও গোরারস,
গৌর-সুখী কর সর্ব্বরসে।।’’

তুমি যে রসের খনি
রসের গোরা যখন যে রস চায়
রসের গোরা তখন সে রস পায়
রসের গোরা যখন যে রস চায়
রসের গোরা যখন যে-রস বাসনা করে

তুমি,–সেই-রস তখন যোগাও তারে—রসের গোরা যখন যে-রস বাসনা করে

নিতাই,–তুমি’ত সকল-রসের খনি

সুখী করিতে গোরা-গুণমণি—নিতাই,–তুমি’ ত সকল-রসের খনি

‘‘গৌর সুখী কর সর্ব্ব-রসে।।’’

পুরাও তুমি গৌরাঙ্গ-কাম

গৌরের,–অভিলষিত-আশ্রয়-ধাম—পুরাও তুমি গৌরাঙ্গ-কাম

বলতে,–কক্ষে কক্ষতালি দিয়ে

ঠাকুর-রামহরি গরব করে—বলতে,–কক্ষে কক্ষতালি দিয়ে

বিহরে গোরা নিতাই-সঙ্গে

সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রঙ্গে—বিহরে গোরা নিতাই-সঙ্গে

[মাতন]
নিত্যানন্দে রমে গোরা

চৌদ্দমাদল বাজাইয়ে—নিত্যানন্দে রমে গোরা

‘‘গৌর-সুখী কর সর্ব্ব-রসে।।
গৌরাঙ্গ-বিলাস-ভূমি, প্রভুনিত্যানন্দ তুমি,
অশেষ-বিশেষে সুখ দাও।’’

শ্রীগৌরাঙ্গ-বিলাস-ভূমি

নিতাই তোমার তনুখানি—শ্রীগৌরাঙ্গ-বিলাস-ভূমি

‘‘অশেষ-বিশেষে সুখ দাও।’’

তখন,–সেই রস তাঁরে যোগাও

গোরা-যখন যে-রস চায়—তখন,–সেই রস তাঁরে যোগাও

আর কিছু পেতে বাকী থাকে না

নিতাই তোমায় হিয়ায় ধরলে—আর কিছু পেতে বাকী থাকে না

‘‘কে বুঝিবে তুঁয়া তত্ত্ব, বেদে নাহি পায় অন্ত,
কইতে নিতাই সবার প্রাণ হও।।’’

গৌরের নাই স্বতন্ত্র অস্তিত্ব

হা নিতাই তোমা বিনে—গৌরের নাই স্বতন্ত্র অস্তিত্ব

কইতে নিতাই সবার প্রাণ হও।।’’
বলতে কভু সীতানাথ, তুমি হে অনাথের নাথ,
নিতাই-গৌর আনিলা জগতে।’’


নৈলে, কেবা পেত রে
সীতানাথ,–তোমার কৃপা না হলে—নৈলে, কেবা পেত রে

‘‘ধন্য ধন্য সীতানাথ, তোমার নিজ-প্রাণনাথ,
কুণ্ঠিত না হও কারে দিতে।।’’

তুমি,–বিলাইলে জগতে

সীতানাথ তোমার প্রাণনাথে—তুমি,–বিলাইলে জগতে

‘‘ধন্য জীবের ভাগ্যোদয়, গৌর-প্রাণনাথ পায়,
সীতানাথ তব করুণায়।’’

গৌর-প্রাণনাথ পায়

সীতানাথ তোমার করুণায়—গৌর-প্রাণনাথ পায়

‘‘কইতে কভু গদাধর, তুয়া প্রেম চমৎকার,
যাতে বশীভূত গোরারায়।।
গদাধর তুমি সত্য, প্রকৃতি প্রধান-ভূত
কায়ব্যূহ নদীয়া-নাগরী।
তুমি সকলের কুল, তব কায়ব্যূহ মূল,
তোমার—প্রেমের রমণী নরহরি।।
যাঁহার চপল-দিঠে, মধুরিম-বাণী মিঠে,
গোরাশশী-শ্রুতিযুগ-হারী।
হেন নরহরি-সনে, বিলসই রাত্রিদিনে,
রমণী-রমণ গৌরহরি।।
কখনও বা হা শ্রীবাস, পূরাহ আমার আশ,
দেখাও তব অঙ্গনের নাটুয়া।
প্রিয়-পরিকর-সনে, রস-গীতি-আলাপনে,
নাচিবেক গোরা-বিনোদিয়া।।
ঘুচিবে মায়ার নাট, দেখিয়ে প্রেমের হাট,
দেখায় মোরে করিয়ে করুণা।
গৌর-ভক্তবৃন্দ-প্রতি, কভু স-বিনয়-উক্তি,
দেহ মোরে পদধূলি-কণা।।
সার্ব্বভৌম রামানন্দ, কোথা শ্রীপ্রবোধানন্দ,
গোরারস-সিদ্ধান্তের খনি।
কোথা মোর হরিদাস, গৌর তব প্রেমে বশ,
প্রাপ্তিকালে হৃদে ধর জানি।।
স্বরূপ সনাতন রূপ, রঘুনাথ ভট্টযুগ,
কোথা মোর শ্রীজীব জীবন।
শ্রীনিবাস রামচন্দ্র, নরোত্তম শ্যামানন্দ,
কোথা সব প্রেম-নিকেতেন।।
কোথা মাধব মুকুন্দ, বাসু ঘোষ শ্রীগোবিন্দ
গৌর-গুণ করাহ শ্রবণ।
নদীয়া-নাগরী-রস, বিস্তারিলা কি-সরস
কোথা সেই ঠাকুর লোচন।

কহিতে এ-সব-কথা প্রেমেতে অথির।
সাত্ত্বিক-ব্যাপিত-তনু ঝরিত আঁখিনীর।।
গোরা-রস-তত্ত্ব-কথা কইতে কভু সুখে।
না শুনিয়ে সেই কথা রহি মন-দুঃখে।।
গোরা-রস-সিন্ধু-মাঝে নিতাই-তরঙ্গে।
নরহরি বিলসই সে রহস্য-রঙ্গ।।
রসরাজ-মহাভাব গৌরাঙ্গ-স্বরূপ।
তাঁর শক্তি গদাধর ভাব-অনুরূপ।
সিদ্ধ জগন্নাথদাসের গণে নেহারিয়া।’’

প্রেম হুঙ্কার করিতে

সিদ্ধ জগন্নাথের গণ হেরে—প্রেম হুঙ্কার করিতে

মালসাট্ মারি’ বলতে
চারি ধামে উড়েছে

সিদ্ধ—জগন্নাথের জয়-পতাকা—চারিধামে উড়েছে

‘‘সিদ্ধ-জগন্নাথ-দাসের গণে নেহোরিয়া।
গৌর-কথা শুনাইতে পাশে বসাইয়া।।’’

ভাবাবেশে করতে কোলে

আমার জগন্নাথের গণ বলে—ভাবাবেশে করতে কোলে

আর কি কোলে করবে না

তেমনি করে আয় ভাই বলে—আর কি কোলে করবে না

আর কি শুনাবে না

নিগূঢ়-গৌর-লীলাকথা—আর কি শুনাবে না

‘‘রসময়-অক্ষর সব দিতে গো শিখাইয়ে।
কভু কোলে করিতে গো প্রেমাকুল হয়ে।।
কীর্ত্তনের কালে যেই দিতে তো অক্ষর।
শুনিয়া বৈষ্ণবগণের আনন্দ অন্তর।
মর্ম্মভেদী-বাক্য শুনি’ ঢুলিয়া পড়িত।
হাহাকার-রবে আঁখি-নীরেতে ভাসিত।।
সবারে মধুর-ভাষে তুষিতে পিরীতে।
সবার হিয়া দরবিত তোমার প্রেমেতে।।
অপ্রকট-কালে যাহা কহিলে গো বাণী।
সে কথা সঙরি কার না বিদরে পরাণী।।
শ্রীবাস-প্রাঙ্গণে নাচে গৌরাঙ্গ-সুন্দর।
চতুর্দ্দিকে সুশোভিত প্রিয়-পরিকর।।
সবে গৌর-বিলাসিনীর ভাবেতে ভরিয়া।
গোরামুখ হেরি, নাচে রসেতে মাতিয়া।।
এ-কথা কহিতে তুমি হইলে অদর্শন।
স্ব-স্বরূপে সেই রাসে হলে নিমগণ।।
পাষাণ হইতে পাষাণ মোর এই হিয়া।
হায় রে কঠিন প্রাণ না যায় ফাটিয়া।।
পুনঃ কি দেখিতে পাব সে মধুর-মূরতি।
পুনঃ কি শুনিতে পাব সিদ্ধান্ত-যূকতি।।
আর কে শুনাবে মধুর-গোরা-রস-লীলা।
ভাগ্য-দোষে সে প্রেমার হাট ভাঙ্গি’ গেলা।।
কথায় সে মাধুরী লহু লহু ভাষ।
কত না মধুর সে রসের উল্লাস।।
খেতে খেতে মধুর-ভাষে আয় আয় বলে।
অধরামৃত হাতে আর কে দিবে তুলে।।
স্নেহের নাহিক সীমা প্রেমের মূরতি।
প্রসাদ-পাইবার-কালে বালকের রীতি।।
প্রসাদ তুলিতে মুখে অর্দ্ধেক পড়িত।
সর্ব্বাঙ্গ হইত তব প্রসাদে ভূষিত।।
সকলে দেখিয়া তাহা প্রেমেতে ভাসিত।
অনুভব নহে সেই প্রেমের কি রীত।।
তোমার বিরহ-বিষে জারে তনু-মনে।
তব কথামৃত বিনে জুড়াব কেমনে।।
চির-সন্তাপিতের শান্তি কোথা আর নাই।
শান্তির আলয় তুমি কোথা তোমা পাই।।
অন্ন-জল তেয়াগিলে মৃত্যু নাহি হয়।
তব কৃপা বিনু মোর নাহিক উপায়।।
গুহ্যাতিগুহ্য-কথা কে শুনাবে আর।
তোমার অভাবে এবে হেরি অন্ধকার।।
গোরারসে ডগমগি অথির আশ্রয়।
সেই প্রেমে নাচাইতে আমা সবাকায়।।
জীয়ন্তে মরিয়া আছি, শুষ্ক-কাষ্ঠ-প্রায়।
তোমা-মায়া সব পদদলিত করয়।।
এ-দুঃখ সহিতে পারি যদি পুনঃ পাই।
এ-মহা-যন্ত্রণা হইতে তা’ হলে এড়াই।।
হাহা গুরু রামহরি তুমি প্রাণধন।
নিতাই গৌর সীতানাথ তোমার জীবন।।
হাহা প্রভু রামহরি তুমি মোর ধরম।
গদাধর-গৌর-বিলাস তোমার মরম।।
হাহা মোর রামহরি দীনের জীবন।
নরহরি-গৌর তোমার হয় প্রাণধন।।
নরহরি হয় তোমার প্রেমের রমণী।
গৌরবিলাস-রসে সে যে উন্মাদিনী।।
শ্রীগৌরাঙ্গ-তরঙ্গিণী হইয়া আপনি।
সেবিছ প্রাণের যুগল গোরা-উন্মাদিনী।।
গৌরগরবিণীগণ-সঙ্গে আছ সুখে।
করুণা করিয়া লহ মুঞি আছি দুঃখে।।
গোরারস-রঙ্গিণীদের সেঙ্গেতে রহিয়ে।
গোরারস-আস্বাদনে আছ গো মাতিয়ে।।
গৌর-ভাবিনী-গণ-সঙ্গে কর বাস।
সে স্বরূপ ধরাইয়ে লহ নিজ-পাশ।।
চির-সন্তাপিত হিয়া তবে সে জুড়ায়।
কহে এই দীনহীন লহ দয়াময়।।’’

প্রাণ কেঁদে উঠছে

প্রভু-রামহরির গুণ সঙরি’—প্রাণ কেঁদে উঠছে

আর কি দেখতে পাব না

কুসুম-সরোবরে নির্জ্জন-বনে—আর কি দেখতে পাব না
গৌরভক্তি-অন্তরঙ্গ-সঙ্গে—আর কি দেখতে পাব না
মাধব-হরিচরণ-সনে—আর কি দেখতে পাব না
প্রাণ-রাধারমণ-সনে—আর কি দেখতে পাব না

আর কি শুনতে পাব না

চৈতন্য-মঙ্গল-গান—আর কি শুনতে পাব না
রসকেলি-বিলাস-রঙ্গ—আর কি শুনতে পাব না

আর কি দেখতে পাব না

গৌর-সনে মিলন-রঙ্গ—আর কি দেখতে পাব না
গৌরাঙ্গ-সম্ভোগ-রঙ্গ—আর কি দেখতে পাব না

আর কি দেখতে পাব না

হা প্রভু রামহরি—আর কি দেখতে পাব না
বিনোদ-কুঞ্জে নিভৃতঘরে—আর কি দেখতে পাব না
‘বিনোদকুঞ্জে নিভৃতঘরে’—
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে—বিনোদকুঞ্জে নিভৃতঘরে

চারিদিকে বসেছেন ঘিরে

নিগূঢ়-কথা-প্রসঙ্গে—চারিদিকে বসেছেন ঘিরে

করিছেন,–নিকুঞ্জ-কথা-রস-প্রসঙ্গ
বসেছেন সব ক্ষীরখণ্ড

হতেছে ইষ্ট-গোষ্ঠী-প্রসঙ্গ—বসেছেন সব ক্ষীরখণ্ড

যত অন্তরঙ্গ বৈষ্ণবগণ

হরিচরণ, মাধব, রাধারমণ—যত অন্তরঙ্গ বৈষ্ণবগণ

নিকুঞ্জ-কথা-রস-প্রসঙ্গে
প্রকাশ হয়েছে গৌর-কথা

নিকুঞ্জ-কথা-রস-প্রসঙ্গে—প্রকাশ হয়েছে গৌর-কথা

আবেশেতে করছেন গান

প্রভু শ্রীরঘুনন্দন—আবেশেতে করছেন গান
হঠাৎ আমরা শুনতে পেলাম
বিনোদকুঞ্জ-সম্মুখে—হঠাৎ আমরা শুনতে পেলাম

ব্যাকুল হয়ে ছুটে গেলাম
ভিতরে কাহারো যাবার নয়

ইষ্টগোষ্ঠী-প্রসঙ্গে—ভিতরে কাহারো যাবার নয়

পড়িলাম তোমার কৃপাদিঠে

আয় ভাই আয় বলে—পড়িলাম তোমার কৃপাদিঠে

মনে বড় ভয় পেলাম
কেমন করে যাব আমি

ঐ অন্তরঙ্গ-সঙ্গে—কেমন করে যাব আমি
আমার যাবার অধিকার নাই—কেমন করে যাব আমি

অমনি তখন করিলেন ইঙ্গিত

প্রাণের ঠাকুর রাধারমণ—অমনি তখন করিলেন ইঙ্গিত

ছুটে গেলাম তোমার কোলে
বাহু পসারিয়ে কোলে করলে

আয় ভাই আয় বলে—বাহু পসারিয়ে কোলে করলে

কি জানি কি কীর্ত্তন করালে

তখন,–জানি নাই শুনি নাই কীর্ত্তন-রহস্য—কি জানি কি কীর্ত্তন করালে
‘কৃপাশক্তি সঞ্চারিয়ে’—কি জানি কীর্ত্তন করালে
‘কৃপাশক্তি সঞ্চারিয়ে’—
পিঠে এক চাপড় দিয়ে—কৃপাশক্তি সঞ্চারিয়ে
আয় ভাই আয় বলে—কৃপাশক্তি সঞ্চারিয়ে

কি জানি কি কীর্ত্তন করালে
আর কি দেখতে পাব না

সেই প্রমোন্মত্ত-মূরতিতে—আর কি দেখতে পাব না
শ্রীহরিচরণ-মাধব-সনে—আর কি দেখতে পাব না
প্রাণ-রাধারমণ-সনে—আর কি দেখতে পাব না
প্রভু-রঘুনন্দন-সঙ্গে—আর কি দেখতে পাব না
গুরুগৌর-গোষ্ঠী-সঙ্গে—আর কি দেখতে পাব না
গৌরকথা-প্রসঙ্গে—আর কি দেখতে পাব না

আর কি ডেকে নিবে না

আয় ভাই আয় বলে—আর কি ডেকে নিবে না
‘আয় ভাই আয় বলে’—
শ্রীরাধারমণ-সঙ্গে—আয় ভাই আয় বলে

আর কি ডেকে নিবে না
আর কি কীর্ত্তন করাবে না

ডেকে নিয়ে কোলে করে—আর কি কীর্ত্তন করাবে না
বল ভাই বল বলে—আর কি কীর্ত্তন করাবে না
‘বল ভাই বল বলে’—
পিঠেতে চাপড় দিয়ে—বল ভাই বল বলে

আর কি কীর্ত্তন করাবে না

নিজ মনোবৃত্তি সঞ্চারিয়ে—আর কি কীর্ত্তন করাবে না
গৌরাঙ্গ-রহস্য-কথা—আর কি কীর্ত্তন করাবে না
‘গৌরাঙ্গ-রহস্য-কথা’—
নিকুঞ্জ-রাসরসের পরিণতি—গৌরাঙ্গ-রহস্য-কথা

আর কি কীর্ত্তন করাবে না

হা প্রভু রামহরি—আর কি কীর্ত্তন করাবে না
আর কি দেখতে পাব না দাস-গোস্বামীর প্রসঙ্গ উঠলে
গৌর-কথা কইতে কইতে—দাস-গোস্বামীর প্রসঙ্গ উঠল

ভাই রে,–যার গুণে ঝুরি ঝুরি
ভাই রে,–যার গুণে ঝুরি ঝুরি
ভাই রে,–যার গুণে ঝুরি ঝুরি

ভাই রে,–‘‘যার গুণে ঝুরি ঝুরি শ্রীরূপ সনাতন রে।
সকল ঐশ্বর্য্য ছাড়ি গেলা বৃন্দাবন রে।।
ভাই রে,–যার গুণে ঝুরি ঝুরি শ্রীরঘুনাথ-দাস রে।
ইন্দ্র-সম-রাজ্য ছাড়ি রাধাকুণ্ডে বাস রে।।’’

তরুতলে কৈলা বাস

অতুল-ঐশ্বর্য্য বাম-পদে ঠেলে—তরুতলে কৈলা বাস

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

এই-রাধাকুণ্ড-তীরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কৃষ্ণদাস-কবিরাজের গলা ধরি’—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বলে,–বল বল কবিরাজ
আর কি আমি দেখতে পাব

সোনার গৌরাঙ্গ প্রভু—আর কি আমি দেখতে পাব

বলে,–এই দেখ কবিরাজ

গুঞ্জা-গিরিধারী দেখায়ে বলে—বলে,–এই দেখ কবিরাজ

এই আমার,–প্রভুর গলার গুঞ্জামালা

এই শিলা প্রভুর বক্ষে ছিলা—এই আমার,–প্রভুর গলার গুঞ্জামালা

[মাতন]
কৃপা করি’ প্রভু দিয়াছিল।
এই তোমার যুগল-সেবা

বলে,–ধর ধর রঘুনাথ—এই তোমার যুগল-সেবা
গুঞ্জা রাধা গিরিধারী কৃষ্ণ—এই তোমার যুগল-সেবা

[মাতন]
এই কথা বলতে বলতে
গুঞ্জা-গিরিধারী বুকে ধরে
বাহু পসারি’ জড়ায়ে ধরে
ভাবাবেশে বলে রে
বলে,—আর ছেড়ে দিব না

পেয়েছি তোমায় চিতচোর—বলে,–আর ছেড়ে দিব না

গৌর-অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে

গুঞ্জা গিরিধারী বুকে ধরে—গৌর-অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে

সেই ত’ গুণের রঘুনাথ
এই ত’ সেই কুণ্ডতীর
কোথায় আছ রঘুনাথ
দাস-গোসাঞি কোথায় তুমি

এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর-দাস-গোসাঞি কোথায় তুমি

[মাতন]
এই কথা শুনে তুমি

হা প্রভু রামহরি—এই কথা শুনে তুমি

পাগল হয়ে ছুটবে তুমি

কুণ্ডতীরে কোথা রঘুনাথ বলে—পাগল হয়ে ছুটবে তুমি
কীর্ত্তন শুনে ব্যাকুল হয়ে—পাগল হয়ে ছুটবে তুমি

[মাতন]

মুখে বলি’ এই বুলি—পাগল হয়ে ছুটবে তুমি

এই সেই রাধাকুণ্ড-তীর

কোথা আছ রঘুনাথ—এই সেই রাধাকুণ্ড-তীর

[মাতন]
আর কি দেখতে পাব না

সেই,–প্রেমোন্মত্ত-মুরতিখানি—আর কি দেখতে পাব না

ফিরায়ে আনলে তোমায়

বৈষ্ণবগণ সকলে—ফিরায়ে আনলে তোমায়
কত না যতন করে—ফিরায়ে আনলে তোমায়

আসি সেই গৃহে বসি’
বলিলে আমায় কোলে করি’
এই আমাদের প্রাপ্তি ভাই
নিজ-ভাষায় বললে তুমি
তবেই মেরে দিয়েছিস্‌

যদি স্থায়ী করতে পারিস—তবেই মেরে দিয়েছিস,

ইঙ্গিতেতে জানাইলে
এই আমাদের পূর্ণ-প্রাপ্তি

গৌরগণের বিরহ—এই আমাদের পূর্ণ-প্রাপ্তি

তখনও কিছু বুঝি নাই

সে-সঙ্কীর্ত্তনের কি রহস্য—তখনও কিছু বুঝি নাই

হয়েছিল স্ফূরিত

ভাবময়-অক্ষর কত—হয়েছিল স্ফূরিত
‘ভাবময়-অক্ষর কত’—
জানি নাই শুনি নাই—এমন,–ভাবময়-অক্ষর কত

হয়েছিল স্ফুরিত

কৃপাশক্তি-সঞ্চারিত—হয়েছিল স্ফুরিত

প্রেমে হয়েছিল পাগল

নিজ,–ভোগ্য-কথা প্রকাশ করে—প্রেমে হয়েছিল পাগল

আমি কিছু বুঝি নাই
সেইদিন বুঝিলাম
যেদিন,–বৃন্দাবনে নিয়ে গেলে

এই গঙ্গতীর হইতে—যেদিন,–বৃন্দাবনে নিয়ে গেলে
নিজ,–প্রিয়জনে আদেশ দিয়ে,–যেদিন,–বৃন্দাবনে নিয়ে গেলে
‘নিজ,–প্রিয়জনে আদেশ দিয়ে
রামে লয়ে এস বলে—নিজ,–প্রিয়জনে আদেশ দিয়ে

যেদিন,–বৃন্দাবনে নিয়ে গেলে
বৃন্দাবনে যাবার কালে

কলিকাতা-মহানগরী হইতে—বৃন্দাবনে যাবার কালে

প্রাণে প্রাণে জানাইলে

ফাঁকি দিয়ে লুকাইবে—প্রাণে প্রাণে জানাইলে

দেখা দিতে ডেকেছে

এইবার শেষ—দেখা দিতে ডেকেছে

বৃন্দাবনে নিয়ে গিয়ে
ছুটে এসে কোলে নিয়ে
আদর করে বললে
তাই তোরে ডেকেছি ভাই

সেই কীর্ত্তন শুনব বলে—তাই তোরে ডেকেছি ভাই

তেমনি করে শুনব
যেমন করে শুনেছিলাম

শ্রীকুণ্ড-তীরে বিনোদ-কুঞ্জে—যেমন করে শুনেছিলাম
তেমনি করে শুনব তখন বুঝতে পারলাম
সে কীর্ত্তনের কি গুরুত্ব—তখন বুঝতে পারলাম

একদিন কীর্ত্তন করালে

বংশীবটে কালাবাবুর কুঞ্জে—একদিন কীর্ত্তন করালে
নিজ-শক্তি সঞ্চারিয়ে—একদিন কীর্ত্তন করালে

কেবল বিরহ স্ফুরণ

কৃপা করে করালে কীর্ত্তন—কেবল বিরহ স্ফুরণ

বিরহ কীর্ত্তন শুনি’ \
হইলে তুমি ভাবাবিষ্ট
সঙ্কীর্ত্তন শেষ হইলে
মহাপ্রসাদ ভোজন করাইলে
পাইলাম নিদর্শন

তুমি হবে অদর্শন—পাইলাম নিদর্শন

প্রসাদ ভোজন করায়ে
নিজ-বাসায় পাঠায়ে দিলে
বুঝতে ত’ পারলাম না

তোমার অন্তরের কি দশা—বুঝতে ত’ পারলাম না
‘তোমার অন্তরের কি দশা’—
বিরহ-কীর্ত্তন শুনে—তোমার অন্তরের কি দশা

বুঝতে ত’ পারলাম না
প্রভাতে উঠে শুনতে পেলাম
আমাদের বিদায় দিয়ে
রাত্রি দ্বিতীয়-প্রহরে
হইলেন ভাবিবষ্ট

কেবল গোঁ গোঁ শব্দ—হইলেন ভাবাবিষ্ট
‘কেবল গোঁ গোঁ শব্দ’—
আর কোন শব্দ নাই—কেবল গোঁ গোঁ শব্দ

গিয়ে দেখলাম সেইরূপ
এইরূপ গেল দুইদিন
মনে মনে ভাবলাম

প্রত্যক্ষ হল বুঝি অনুমান—মনে মনে ভাবলাম

কিন্তু,–তিনদিনে বাহ্য প্রকাশিলেন
সুস্থভাব দেখাইলেন
আগেতে বলেছিলেন
শুন শুন ভাই রাম
যাব আমি নবদ্বীপে

নিশ্চয় বলছি—যাব আমি নবদ্বীপে

এখন সুস্থভাব দেখাইয়ে
আদর করে ডেকে বললে
নদে যাওয়া হল না

এবার রাম আমার—নদে যাওয়া হল না

যাও যাও ত্বরা করে

হরিদাসের উৎসব কর গিয়ে—যাও যাও ত্বরা করে

ফাঁকি দিতে পাঠায়েছিলে

স্তোকবাক্য দিয়ে—ফাঁকি দিতে পাঠয়েছিলে

তার কয়েক দিন পরে
প্রভাতে উঠি বললেন

আপনার সেবকরে—প্রভাতে উঠি বললেন

ত্বরা করি’ দাও প্রসাদ
আমায় যে যেতে হবে

গৌরের মহাসঙ্কীর্ত্তনে—আমার যে যেতে হবে

এই বলে প্রসাদ খেতে খেতে
ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে

সৌভাগ্য-চতুর্থীদিনে—ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে

সৌভাগ্য-চতুর্থী
কে তোমার এ নাম দিল

দুর্ভাগ্য ঘটাইলে—কে তোমার এ নাম দিল
‘দুর্ভাগ্য ঘটাইলে’—
সর্ব্বস্ব কেড়ে নিলে—দুর্ভাগ্য ঘটাইলে
আমাদের আগে সরায়ে দিয়ে—দুর্ভাগ্য ঘটাইলে

জুড়াইবার উপায় নাই
আর কি দেখা দিবে না
গিয়ে মধুর বৃন্দাবনে

লয়ে যাও নিজগুণে—গিয়ে মধুর বৃন্দাবনে
একবার চেয়ে দেখ
আমাদের কি দুর্দ্দশা—একবার চেয়ে দেখ
কি দশায় আছি মোরা—একবার চেয়ে দেখ
‘কি দশায় আছি মোরা’—
তোমাদের সঙ্গ হারায়ে—কি দশায় আছি মোরা

একবার চেয়ে দেখ
আর কিছু জাগে না প্রাণে
দেখতে সাধ হয় নয়নে

সেই গৌরপ্রেমে গড়া মুরতিরে—দেখতে সাধ হয় নয়নে

আর কি দেখা দিবে না
কোথাও ত’ যাও নাই
তোমরা সবে আজ ব্রজে

শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রসঙ্গেতে—তোমরা সবে আজ ব্রজে

নিজগুণে দেখা দিও

কৃপা করে ব্রজে লয়ে যেও—নিজগুণে দেখা দিও

সকল-সুখে বঞ্চিত মোরা

——

অতঃপর মহাজনী আক্ষেপ-কীর্ত্তন—

‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর,’’…………..ইত্যাদি


………………………………………………………………..
………………………………………………………………..

ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে

গুরুগণের গুণ সঙরি’—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে

আয় ভাই তাদের নাম গাই

মিলেছি সব ভাই ভাই –আয় ভাই তাদের নাম গাই

প্রাণভরে গাও রে
জয় জগদ্বন্ধু, রাধারমণ

রামহরি, মাধব, হরিচরণ—জয় জগদ্বন্ধু, রাধারমণ

[মাতন]

সঙ্গে প্রভু রঘুনন্দন—জয় জগদ্বন্ধু, রাধারমণ

[মাতন]
কুসুম-সরোবরে মধুর-মিলন

জগদ্বন্ধু, প্রাণ-রাধারমণ—কুসুম-সরোবরে মধুর-মিলন
রামহরি, মাধব, হরিচরণ—কুসুম-সরোবরে মধুর-মিলন
গুণের প্রভু রঘুনন্দন—কুসুম-সরোবরে মধুর-মিলন

সরোবরে সম্মিলন

চৌতারা—উপরে বসে—সরোবরে সম্মিলন
সবাই বলে কুসুম-বন—সরোবরে সম্মিলন

সবে মিলে কৃপা কর
এই কৃপা কর প্রভু রামহরি
যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই সদা

ভাই ভাই একপ্রাণে—যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই সদা
আমাদের,–পাগলা প্রভু হৃদে ধরে—যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই সদা
‘পাগলা প্রভু হৃদে ধরে’—
তোমার প্রিয় চরণদাস—পাগলা প্রভু হৃদে ধরে

যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই সদা

তাঁর মুখোদ্‌গীর্ণ নাম গানে—যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই সদা
যেন,–প্রাণভরে গাই সকলে
যে কদিন এ দেহ থাকে—যেন,–প্রাণভরে গাই সকলে
তোমার,–চরণদাসের চরণ হৃদে ধরে—যেন,–প্রাণভরে গাই সকলে
তাঁর কৃপাদত্ত-নামাবলী—যেন,–প্রাণভরে গাই সকলে

আর এক আশা প্রাণে জাগছে
দেখতে পাব কি প্রাণ-গৌরাঙ্গে

হরিদাসের নির্য্যাণ-উৎসবে গিয়ে—দেখতে পাব কি প্রাণ-গৌরাঙ্গে

দেখতে পাব কি নয়নভরি’

সিংহদ্বারে গৌর ভিখারী—দেখতে পাব কি নয়নভরি’
‘সিংহদ্বারে গৌর ভিখারী’—
হরিদাসের প্রেমে বাঁধা-পড়ি’—সিংহদ্বারে গৌর ভিখারী

[মাতন]
দেখতে পাব কি নয়নভরি’

পরিবেষ্টা গৌরহরি—দেখতে পাব কি নয়নভরি’
ঠাকুর-হরিদাসের উৎসবে—দেখতে পাব কি নয়নভরি’

আশীষ-বাণী কি শুনতে পাব

প্রাণ-গৌরাঙ্গের শ্রীমুখে—আশীষ-বাণী কি শুনতে পাব

হা শ্রীগুরুদেব
কৃপা করে লয়ে যেও

শ্রীহরিদাস-ঠাকুরের উৎসবে—কৃপা করে লয়ে যেও
প্রাণগৌর দেখাইও—কৃপা করে লয়ে যেও

প্রাণে প্রাণে ভোগ করায়ো

অতিগূঢ় নির্য্যাণ-লীলা—প্রাণে প্রাণে ভোগ করায়ো
ভক্তের বাসনা পূরণ-লীলা—প্রাণে প্রাণে ভোগ করায়ো
প্রাণ-গৌরাঙ্গের নিগূঢ়-ভোগ—প্রাণে প্রাণে ভোগ করায়ো

তোমা-সনে প্রাণগৌর দেখি’
হৃদিপটে এঁকে নেব

শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদিপটে এঁকে নেব
প্রাণভরে গাইব

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’


গৌরহরি-বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’


—– ০ —–



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ