যমুনা কিনারে

এ সখি এ সখি ন বোলহ আন

এ সখি এ সখি ন বোলহ আন।
তুঅ গুনে’ লুবুধল নিতে আব কান।।
নিতে নিতে নিঅর আব বিনু কাজ।
বেকতেও হৃদয় নুকাবএ লাজ।।
অনতহু জাইত এতহি নিহার।
লুবুধল নয়ন হটএ কে পার।।
সে অতি নাগর তোঞে তসু তূল।
এক নলে গাঁথ দুই জনি ফূল।।
ভনই বিদ্যাপতি কবি কণ্ঠহার।
এক সর মনমথ দুই জিব মার।।

অন্তঃকথন:
রাধামাধবের মিলনে সখীরা অনুঘটক, তাতেই তাঁদের আনন্দ। বৈষ্ণব রসতাত্ত্বিকেরা এর বিশেষ ব্যাখ্যা করেন। তবে তত্ত্ব না জানলেও রসিক হয়ে আমরা দেখতে পাই সখীদের কী নিঃস্বার্থ ঐকান্তিক প্রচেষ্টা যাতে রাধা মাধবের প্রণয় সর্বতোভাবে মিলনে পূর্ণতা পায়! এই পদটিতে যেমন এক কৃষ্ণপক্ষা সখী রাধারানীকে এসে কৃষ্ণের প্রেমের কথা সবিশেষ বলে কৃষ্ণের প্রতি রাধারানীর মনকে আরো অনুরক্ত করে তুলতে চাইছেন! তিনি বলছেন ও সখি ও সখি তুমি আর অন্যকথা বোলো না। অর্থাৎ আমি যে তোমাকে এসে কানাই এর প্রেমের কথা বলছি তুমি তাকে অবিশ্বাস করে অস্বীকার কোরো না! দেখো, তোমার গুণে প্রলুব্ধ হয়ে কানাই নিত্য আসে। বিনাকাজেই নিত্য নিত্য নিকটে আসে। তার হৃদয়ের ভাব ব্যক্ত হয়ে পড়লে লজ্জায় তাকে গোপন করে। যদি সে অন্য কোথাও যায়ও বা, তখনও এদিকেই তাকিয়ে থাকে – লুব্ধ নয়নকে কে বাধা দিতে পারে বল? দেখো সখি, সে নাগরশ্রেষ্ঠ আর তুমিই তার তূল্য, তোমাদের দেখে মনে হয় যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল গাঁথা! পদটির শেষে কবি কণ্ঠহার বিদ্যাপতি মন্তব্য করছেন, মন্মথ যেন এক শরে দুটো জীবন বধ করেছেন!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী