যমুনা কিনারে

কতএ অরুন উদয়াচল উগল

কতএ অরুন উদয়াচল উগল
কতএ পছিম গেল চন্দা।
কতয় ভ্রমর কোলাহলেঁ জাগল
সুখে সুতথু অরবিন্দা।।
কামিনি জামিনি কাঁহা গেলী
চির সময় আগত হরি ভেল পাহুন
আধেউ কেলি ন ভেলী।।
পঞূক পাত অতাপে ন পওলে
ঝামর ন ভেলে দেহা।
কৃপন সঁচিত ধন রহল অখণ্ডিত
কাজর সিন্দুর রেহা।।
অরুনক জোতি অধরে নহি ছড়লে
পলটি ন গঁথলে হারা।
আনহুঁ বোলব সখি তোঁঞে অচেতনি
কী তোর নাহ গমারা।।
বিদ্যাপতি ভন মন নহি পরসন
হিয় চিন্তা বিস্তারা।
পলটি রচব কেলি পিয় সঙ্গ হিল মেলি
দম্পতি উচিত বিহারা।।

অন্তঃকথন:
রাধারানী মাধবের ওপর মান করে ছিলেন, মিলন রজনী পূর্ণতায় ভরে ওঠেনি। তাই সখী রাধারানীকে বলছেন, দেখো রা অরুণ উদয়াচলে উদিত হল, কোথায় চন্দ্র পশ্চিমে ঢলে পড়ল, কোথায় যেন ভ্রমরে কোলাহল করে সুখনিদ্রিত কমলকে জাগিয়ে তুলল! কামিনী, যামিনী কোথায় গেল? কত দীর্ঘকাল পরে হরি এসে তোমার অতিথি হলেন অথচ অর্ধ কেলিও হল না! তোমার দেহ পদ্মপত্র মাধব সূর্যের উত্তাপ পেল না। তোমার দেহ মলিন হল না, কৃপণের জমানো ধনের মত কাজল আর সিঁদুররেখা অক্ষত রয়ে গেল। আদরে তা মুছে গেল না। অরুণের জ্যোতি অধরকে ত্যাগ করেনি , হার অবধি ফিরে গাঁথা হল না। অর্থাৎ, চুম্বনে অধররাগ অন্তরিত হল না, মিলনরণে হার ছিঁড়ে গেল বলে হার গাঁথতেও হল না, এ কেমন মিলন হল? আর যেন এমন না হয় তাই সখী রাধারানীকে মিলনে উত্তেজিত করার জন্য বলছেন, সখী, অপরে বলবে হয় তুই মূঢ়া কিম্বা তোর নাথ মূর্খ! বিদ্যাপতি রাধারানীর মনের অবস্থা বুঝে তাঁর পক্ষ নিয়ে বলছেন, এখন মন প্রসন্ন নেই, হৃদয়ে চিন্তা বিস্তারিত হয়ে রয়েছে। আবার প্রিয়তমের সঙ্গে মিলে কেলি রচনা করবে, তখন দম্পতীর উচিত বিহার হবে!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী