যমুনা কিনারে

ছলিহু পুরুব ভোরে ন জাএব পিআ মোরে

ছলিহু পুরুব ভোরে ন জাএব পিআ মোরে
পানিক সুতলি ধনি কলহই।
খনে একে জাগলি রোঅএ লাগলি
পিআ গেল নিজ কর মুদলী দই।।
দিনে দিনে তনু সেখ দিবস বরিস লেখ
সুন কাহ্ন তোহ বিনু জৈসনি রমনী।।
পরক বেদন দুখ ন বুঝএ মুরুখ
পুরুস নিরাপন চপল মতী।
রভস পললি বোল সত কএ তহ্নি লেল
কি করতি অনাইতি পললি জুবতি।।

অন্তঃকথন:
মিলনরজনী পূর্ণতা পাওয়ার আগেই, রাধারানীর মানের প্রকৃত অর্থ বুঝতে না পেরে কৃষ্ণ চলে গেছেন। রাধারানীকে ঘুমন্ত রেখে চলে গেলেন কানাই, আক্ষেপ ভিন্ন রাধারানীর আর গতি কি! বড় মনঃকষ্টে রাধিকা বলছেন, আগে আমার বড় ভ্রম ছিল, আমি ভেবে নিয়েছিলাম যে প্রিয় বুঝি ভোর বেলা আমাকে ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু কি হল হায়! ধনি কলহ করে পালঙ্কে গিয়ে শুয়ে থাকলো কিছু সময় পরে ঘুম ভাঙলে দেখে প্রিয় নিজের আঙটি খুলে রেখে চলে গেছেন! কানাই, তোমার বিরহে দিন বছর মাস গুনতে গুনতেই রমণীর শরীর পাত হল! এসব কথা বলেই বা কি লাভ, মূর্খ কখনো পরের মনোবেদনা অনুভব করতে পারে না, পুরুষ স্বভাবতই চঞ্চলমতি, পুরুষ কখনো নিজের হয় না! হায় রভসের সময় আমি ঠাট্টা করে যা বলেছি মাধব তা সত্যি বলে ভেবে নিলেন, এখন দেখো যুবতী কেমন নিরাশ্রয় হয়ে পড়ল! পদটির তৃতীয় পংক্তি তে ‘পানিক সুতলি ধনি কলহই’ এই পাঠ গ্রহণ করে বিমানবিহারী ও খগেন্দ্রনাথ অর্থ করেছেন ‘ধনি কলহ করিয়া ভিজা জায়গায় যাইয়া শুইল।’ নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত একই পাঠে ‘পানিক সুতা’ র অর্থ লক্ষ্মী ধরে অনুবাদ করেছেন, ‘পূর্ব্বে ভ্রম ছিল যে লক্ষ্মীর সহিত তাহার কলহ হইলেও প্রিয়তম (মাধব) চলিয়া যাইবে না’। দুটি অর্থের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকার কারণে আমরা পালি-প্রাকৃতে সুপন্ডিত সুভদ্র ঝার বিদ্যাপতির পদাবলীর অনুবাদের সাহায্য নিই। সেখানে দ্বিতীয় পংক্তির পাঠ সুভদ্রা করেছেন ‘পালক সুতলি কলহই’। তিনি অনুবাদ করেছেন lying over a coach she was bewailing. অর্থাৎ তিনি পালক শব্দের অর্থ করেছেন পালঙ্ক। এই অর্থটিই আমাদের পদটির নিরিখে সর্বাপেক্ষা প্রযোজ্য মনে হওয়ায় আমরা এই অর্থটিই গ্রহণ করেছি।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী