যমুনা কিনারে

ঝরকা উপরে কৃত্তিকা সুন্দরী

ঝরকা উপরে কৃত্তিকা সুন্দরী
তা সনে সুন্দরী রাখা।
দেখিতে সে খেলা মন ভেল ভোলা
সকলি মানিল বাধা।
হৃদয়ে ভিতরে এ মহীমণ্ডলে
কভুত নাহিক রহে।
এমন মূরতি এ মহীমণ্ডলে
কভুত নাহিক হয়ে।।
হেনরূপ সখি কোথা বা আছিল
কে হেন আনিল নিধি।
কেমন করিয়া এমন বরণ
বসিয়া গড়িল বিধি।।”
হৃদয় মাঝারে পশিল ওরূপ
বিদগধি রাই।
মানস পূরিয়া সরল বেদন
মনের পোড়ান ভেল।
হৃদয় ভিতরে তরল অন্তর
জর জর হৈয়া গেল।।
দেখিতে দেখিতে তুলল নাগরী
মুদল নয়ান দুটি।
রসের আবেশে ঠেকিয়া সুন্দরী
কুলের ভরম ছুটি।।
এই সে পুরুষ রতনে যতনে
যদি বা মিলয়ে মোরে।
তোমাকে কি দিয়া তুষিব হরিষে
কিনিয়া লইবে মোরে ।।
জনমে জনমে তোমারে তুষিব
ঘোষিব তোমার গুণে।
এ বোল বলিয়া পড়িল ঢলিয়া
দ্বিজ চণ্ডীদাস ভনে।।

অন্তঃকথন:
শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগের পদ এটি। গবাক্ষে বসে বাজির খেলা দেখছিলেন রাধা জননী সুন্দরী কৃত্তিকা। অপরূপা রাধাও ছিলেন সঙ্গে। সে খেলা দেখে তার মন যে বিভোর হল, বাধা পড়ল সকল কাজে। এ পৃথিবীর কেউ তো কখনও এ হৃদয়ে স্থান পায়নি। “এমন মূর্তি বুঝি মহীমণ্ডলে কখনও হয়নি। এই রূপ সখী, কোথায় বা ছিল এতদিন, কেবা তাকে নিয়ে এল। বিধাতাই বা কেমন করে গড়লেন এই রূপ”। হৃদয় মাঝারে ওই রূপের অনুপ্রবেশে রাধা যে মুগ্ধ বিবশ হলেন। সরল হৃদয়ে গভীর মনোযোগে রাধা তাই মগ্ন হয়ে গেলেন। মনের বেদনার কথা সে যে বলতে পারে না, শুধু চলে মনের অনন্ত দহন। হৃদয় ভিতরে কোমল তরল অন্তর জর্জরিত হয়ে গেল। দেখতে দেখতে নাগরী রাধা তার মুদ্রিত নয়ন দু’টি তুলে ধরল। রসের আবেশে বড়ই ঠেকেছে সুন্দরী, কুলের লজ্জা-ভরমও যে দূর হল। "এই সেই পুরুষ! যদি রত্ন দিয়ে, যত্ন দিয়ে কোনওভাবে ওকে আমি পাই, তবে সখী, তোমাকে যে কী দিয়ে তুষ্ট করব, তোমার কাছে কেনা হয়ে থাকব। প্রত্যেক জন্মে তোমাকে তোষণ করব, তোমার গুণ ঘোষণা করব"। দ্বিজ চণ্ডীদাস বললেন, একথা বলেই রাধা মূর্ছিত হলেন।

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:কানাড়া
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী

শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ42