যমুনা কিনারে

দেখিলোঁ প্রথম নিশী সপন সুন তোঁ বসী

দেখিলোঁ প্রথম নিশী সপন সুন তোঁ বসী
সব কথা কহিআরোঁ তোহ্মারে হে।
বসিআঁ কদমতলে সে কৃষ্ণ করিল কোলে
চুম্বিল বদন আহ্মারে হে।।
এ মোর নিস্ফল জীবন এ বড়ায়ি ল।
সে কৃষ্ণ আনিআঁ দেহ মোরে হে।।ধ্রু।।
লেপিআঁ তনু চন্দনে বলিআঁ তবেঁ বচনে
আড়বাঁশী বাএ মধুরে।
চাহিল মোরে সুরতী না দিলোঁ মো আনুমতী
দেখিলোঁ মো দুঅজ পহরে।।
তিঅজ পহর নিশী মোঞঁ কাহ্নাঞিঁর কৌলে
নেহানিলোঁ তাহার বদনে।
ঈসত বদন করী মন মোর নিল হরী
বেআকুলী ভয়িলোঁ মদনে।।
চঊঠ পহরে কাহ্ন করিল অবাধ পান
মোর ভৈল রতিরস আশে।
দারুণ কোকিল নাদে ভাঁগিল আহ্মার নিন্দে
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে।।

অন্তঃকথন:
এই গানটি শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধা বিরহের গান। রাধার অন্তরে মদনানল জ্বালিয়ে কৃষ্ণ উধাও।তাঁর বিরহে রাধিকা উন্মাদিনিপ্রায় ঘুরে ফেরেন। বড়াই কে কাতর অনুনয় করেন কৃষ্ণকে এনে দিতে। কৃষ্ণের দেখা মেলেনা। এই গানে রাধিকা তাঁর স্বপ্ন দর্শনের কথা বড়াইকে ব্যক্ত করছেন। স্বপ্নে শ্রীমাধব ধরা দেন কিন্তু বাস্তবে তাঁর দেখা মেলে না। শ্রীমতির বিরহজ্বালা দ্বিগুন হয়ে ওঠে। রাধিকা বড়াইকে বলছেন তিনি রাত্রি প্রথম প্রহরে স্বপ্ন দেখলেন কৃষ্ণ কদমতলায় বসে তাঁকে কোলে করে তাঁর মুখ চুম্বন করছেন। বড়াইকে রাধা হাহাকার করে বলছেন, বড়াই কৃষ্ণ বিহনে আমার জীবন নিস্ফল, তুমি যেখান থেকে পারো আমায় কৃষ্ণকে এনে দাও। রাধারানী বলছেন,স্বপ্নে মদনমোহন আমার অঙ্গে চন্দন লেপন করে দিলেন, তিনি মধুর আড়বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, আমার কাছে তিনি রতিদান চাইলেন, কিন্তু আমিই সম্মত হলাম না। বড়াই, আমি রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরেও এই স্বপ্ন দেখলাম। তৃতীয় প্রহরে আমি দেখলাম, আমি কানাই এর কোলে বসে তাঁর পানে চেয়ে আছি। কানাই আমার পানে চেয়ে মধুর হেসে আমার মন হরণ করল। মদনশরে আমি আকুলিতা হয়ে উঠলাম। আর চতুর্থ প্রহরের স্বপ্নে কানু আমার অধর পান করলেন। আমার মনে যখন রতি আশ যেগে উঠল, তখনই দারণ কোকিল রবে আমার নিদ্রা ভঙ্গ হল। অর্থাৎ হায় ভাগ্য। স্বপ্নেও তাঁর সঙ্গে আমার মিলন হল না। এই গানটির স্বপ্ন বর্ননার মধ্যে সমগ্র শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধিকার প্রেম মনস্তত্ত্বের একটি সারীভূত রূপ খুঁজে পাওয়া যায়। যখন কৃষ্ণ আকুল হয়ে শ্রীমতির প্রেম ভিক্ষা করছিলেন তখন রাধিকা সাড়া দেননি। ধীরে ধীরে মধুসূদনের প্রেমস্পর্শে তাঁর মন জাগরিত হয়। অর্ধস্ফুট কলিকা পূর্ণ পুষ্পে মুকুলিত হয়ে ওঠে। আর তখনি মদনাহত রাধিকাকে পাগল করে কৃষ্ণ অন্তর্হিত। এবার কৃষ্ণের ভূমিকা শ্রীমতী পালন করছেন, বিরহকাতরা খুঁজে ফিরছেন মাধব কে। এই অসম্পূর্ণ মিলন আর্তিই সমগ্র বৈষ্ণব পদাবলীর ও মূল মন্ত্র।

পদকর্তা:বড়ু চন্ডীদাস
রাগ:বেলাবলী
তাল:কুড়ুক্ক
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী