নাগর আপনি হৈলা বণিকিনী
কৌতুক করিয়া মনে।
চুয়া যে চন্দন অমলা বন্টন
যতন করিয়া আনে।।
কেশর যাবক কস্তূরী দ্রাবক
আনিল বেণীর জড়।
সোন্ধা সুকুম্কম্ কর্পূর চন্দন
আনিল মুথা শিকড় ।।
থাকিলে করিয়া আনিল ভরিয়া
উপরে বসন দিয়া।।
মিছামিছি করি ফেরে বাড়ী বাড়ী
বৈসে ভানু দ্বারে গিয়া।।
”চুয়া কে লইবে” ফুকরি কহয়ে
আইলা দাসী যে তবে ।
”মোদের মহলে আনি দেহ” বলে
”অনেক লইতে হবে।।”
থালিতে ধরিয়া আসিল লইয়া
যেখানে নাগরী বসি।
চূয়া যে চন্দন করয়ে রচন
বেণানী মনেতে খুসি।
”চন্দন চুবক লইবে কতেক
জানিতে চাহি যে আমি।।”
”সকলি লইব বেতন সে দিব
যতেক আনহ তুমি।।”
আমলকী হাতে দিল সে মাখে
ঘসিতে লাগিল কেশ।
ঘষিতে ঘসিতে শ্রম যে হইল
সুমধুর বাণী। কহে সে বেণানী
”আমি যে মাখায়ে ভালে।
মোরে বল সখি খানিক আমলকী
মাখায়ে দিয়ে ত চুলে।।”
বলিয়া বেণানী বসিয়া আপনি
চুয়া মাখাবার তরে।
চুল যে ছাড়িয়া হাত নামাইয়া
মাখায় কুচের পরে।।
পরশে নাগরী হইলা আগরী
পড়িলা বেণানী কোড়ে।
নিদ যে আইল অতি সুখ হইল
সব শ্রম গেল দূরে।।
বেণানী বলে ”গেল সে বেলে
যাইতে চাহিয়ে ঘরে।”
উঠিয়া নাগরী বসন সম্বরি
বলে ”কি লাগিবে মোরে।।”
বট আনিবারে কহিলা সখীরে
শুনিয়ে নাগররাজে।
কহে,”না লইব আর ধন নিব
না কহি তোামারে লাজে।।”
”কহনা কেনে কি আছে মনে
শুনিতে চাহি যে আমি।
থাকিলে পাইবে নহিলে যাইবে
নিশ্চয় কহিল বাণী।।”
”হিয়ার ভিতরে রেখেছ যতনে
বড়ই ধন যে সেহ।
কৃপা যে করিয়া বাস উঘারিয়া
সে ধন আমারে দেহ।।”
তখন নাগরী বুঝিল চাতুরী
হাসিল আপন মনে।
গন্ধের বেতন হইল এমন
”কর সমাধান বুঝিলাম কান
আর না বলিহ মোরে।
এতেক গুণে রাখহ প্রাণে
কেবা শিখাইল তোরে।।
পরের নারী আশ যে করি
ফিরয়ে আপন মনে।
কোথা বা হয়েছে কোথা বা পেয়েছে
না দেখি যে কোন স্থানে।।”
চণ্ডীদাস কয় কত ঠাঁই হয়
যাহাতে যাহাতে বনে।
যৌবন ধনে কেবা বা মানে
সোঁপে যে প্রাণেতে প্রাণে ।।