নাপিতানী বলে –“শুনগো সই।
কামালুঁ ইহার বেতন কই।।
কহ তুমি যাই রাইয়ের কাছে।
বেতন লাগি সে বসিয়া আছে।।
যদি কহে তবে নিকটে যাই।
যে ধন দেন তা সাক্ষাতে পাই ।।”
শুনি সখি কহে রাইএর কাছে।
“নাপিতানী বলি আছয়ে নাছে।।”
রাই কহে –“ডাকি আনহ তায়।
কতেক বেতন নাপিতানী চায়।।”
সখী যাই তবে ডাকয়ে –“আইস ।”
রাই বলে–“ঐ দুলিচায় বৈস ।।”
বসিল দুখিনী নাপিতানী শ্যামা।
কহে যে –“বেতন দেহত রামা।।”
“কতেক বেতন হইবে তোর।”
“আমার বেতনের নাহিক ওর।।”
হাসিয়া কহয়ে সুন্দরী রাই।
“হেন নাপিতানী দেখিয়ে নাই।
এমতে ধন যে করেছ কত ?”
সে কহে–“ভুবনে আছয়ে যত।।
এক ধন আছে তোমার ঠাঁই।
সে ধন পাইলে ঘরকে যাই।।
হৃদয়ে কনক-কলস আছে।
মণিময় হার তাহার কাছে।।
তাহার পরশ-রতন দেহ।
দরিদ্র জনারে কিনিয়া লহ।।
দয়া করি দেহ দরিদ্র জনে।
চাইলে না দেয় কৃপণ জনে
কুচ যুগ -গিরি মোর মনহিত।
ইহা দিয়া মোর করহ প্রীত।।
আর যে বেতন দেহ আমার।
পরশ-রতন পাই তোমার।।
হাসিয়া কহয়ে সুন্দরী গোরী।
“ভালে নাপিতানী পরাণ-চোরী।।
পরশ-রতন পাইবা বনে।
এখন চলহ নিজ ভবনে।।”
চণ্ডীদাসে কহে–না কর লাজ।
নাপিতানী নহে, রসিক রাজ।।