যমুনা কিনারে

প্রথম একাদস দই পহু গেল

প্রথম একাদস দই পহু গেল।
সে হো রে বিতিত মোর কত দিন ভেল।।
ঋতু অবতার বয়স মোর ভেল।
তইও ন পহু মোর দরসন দেল।।
অব ন ধরম সখি বাঁচত মোর।
দিন মদন দুগুন সর জোর।।
চান সুরুজ মোহি সহিও ন হোএ ।
চানন লাগ বিখম সব সোএ।।
ভনহিঁ বিদ্যাপতি গুনবতি নারি।
ধৈরজ ধৈরহু মিলত মুরারি।।

অন্তঃকথন:
রাধারানী সখীর কাছে আক্ষেপ করে বলছেন প্রভু আমাকে কথা দিয়ে গেলেন, যে ফিরে আসবেন কিন্তু সে ফিরে আসার দিনও তো অতীত হয়ে গেল! আমার ষোল বছর বয়স পূর্ণ হয়ে গেল তবু তো কই প্রভু আমায় দর্শন দিলেন না! আর বুঝি আমার ধর্ম রক্ষা হল না। দিনে দিনে মদনের শরাঘাত দ্বিগুণ হয়ে বুকে বাজছে। চন্দ্র সূর্য দুইই অসহ্য বোধ হয়! তাঁকে ছাড়া দিন রাত কিছুই ভালো লাগে না। সুশীতল সুগন্ধি চন্দন অবধি দুঃসহ লাগে। বিদ্যাপতি বলেন, হে গুণবতী নারী, ধৈর্য ধর, মুরারি ঠিক আসবেন। এই পদটি প্রহেলিকা পদ। কিছু শব্দের সরাসরি অর্থ এখানে গ্রহণ করলে সমগ্র পদটির কোনো অর্থ নির্মিত হয় না। প্রথম পংক্তির প্রথম দুই শব্দ ‘প্রথম একাদশ’ বলতে এখানে ব্যঞ্জনবর্ণের প্রথম ও একাদশ বর্ণ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ‘কট’, যার অর্থ ‘কথা’। ‘প্রথম একাদশ দই পহু গেল’ এই সমগ্র পংক্তির অর্থ ‘কথা দিয়ে প্রভু গেলেন’। তৃতীয় পংক্তি তে ‘ঋতু’ বলতে ঋতুর সংখ্যা, অর্থাৎ ৬ বোঝানো হয়েছে, এবং ‘অবতার’ বলতেও অবতারের সংখ্যা অর্থাৎ ১০ বোঝানো হয়েছে। ‘ঋতু অবতার বয়স’ বলতে বোঝানো হয়েছে ৬+১০ অর্থাৎ ১৬ বছর বয়স। বিদ্যাপতি রচিত এই জাতীয় হেঁয়ালিমূলক বা প্রহেলিকা পদ বেশ কিছু পাওয়া যায়।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী