যমুনা কিনারে

প্রভাত হইল সবাই জাগিল

প্রভাত হইল সবাই জাগিল
গুরুবিত জনা।
গৃহ কাজ যত সব সমাধিয়া
আন পথে আনাগোনা।।
গৃহ মাঝে গিয়া দেখি এল ধেয়া
শ্যামের চূড়ার মালা।
নীল অতসীর ফুল তাহে ছিল
তা দেখি হইল জ্বালা ।।
আর কাল জাদ তা দেখি বিষাদ
উঠিল বিরহ আগি।।
নয়ন অঞ্জন মুছিল তখন
হইয়া বিরহ রাগি।।
খেলে শ্যাম রায় পথ পানে চায়
গৃহ কাজে নাহি মন।
কখন হরষ কখন বিরস
কি বলিতে কিবা কন।।
সময় হইল গোঠে যায় পাল
মনেতে পড়িয়া গেল।
পুরুষ রঙ্গেতে করিতে বেকত
তাহার লাগিয়া ভেল।।
কল কল শুনি রাই বিনোদিনী
গবাক্ষে বদন দিয়া।
চণ্ডীদাস কহে কানু হেমমালা
তুরিতে দেখহ গিয়া।।

অন্তঃকথন:
গোষ্ঠলীলার এই পদে বর্ণিত হয়েছে শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস। প্রভাত হল। সকল গুরুজন জেগে উঠলেন একে একে। গৃহকাজ যত ছিল সব সারা হল। আন পথে আনাগোনা করতে লাগলেন, আবার ফিরে এলেন গৃহে। শ্যামের চূড়ার মালা দেখে বেরিয়ে এলেন এক দৌড়ে। চূড়ার মালায় নীল অতসীর ফুল দেখে বহুগুণ বেড়ে গেল বিরহজ্বালা। আর কৃষ্ণের অঙ্গের আবরণ দেখে বিরহ যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে লাগলেন। বিরহ-রাগে মুছে ফেললেন চোখের কাজল। শ্যামকে খেলতে দেখে কেবলই ফিরে ফিরে চেয়ে দেখেন পথের দিকে। গৃহ কাজে মন নেই আজ। কখন আনন্দ কখনও বিষাদ- কি বলতে কি যে বলেন। এদিকে গোষ্ঠে যাবার সময় হল। শ্যামের মনে পড়ে গেল গোচরণে যাবার কথা। সঙ্গীদের সঙ্গে রঙ্গ করতে করতে শ্যাম চলেছেন গোষ্ঠে। তাদের কলতান শুনে বিনোদিনী রাই গবাক্ষ গরাদে মুখ রেখে চেয়ে রইলেন ব্যাকুল আগ্রহে। চণ্ডীদাস বলেন, ঐ যে চলেছে কানাই, দ্রুত গিয়ে তাকে দেখ।

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী