যমুনা কিনারে

বড়ি জুড়ি এহু তককী ছাহরি ঠামে ঠামে রসগাম

বড়ি জুড়ি এহু তককী ছাহরি ঠামে ঠামে রসগাম।
হমে একসরি পিআ দেসান্তর নহী দুরজন নাম।।
পথিক এখানে হেরি সরম
জত বেসাহর কীছু ন মহঘ সবে মিলএহি ঠাম।
সাসু নহী ঘর পরপরিজন ননদ সহজ ভোরি।
এতকু অথিক বিমুখ জাএব অবে অনাইতি মোরি
ভনে বিদ্যাপতি সুনতঞে জুবতি জে পুরপরক আস।

অন্তঃকথন:
এক বিবাহিতা নারী পথিককে প্রেমপ্রস্তাব দিচ্ছে! সে বলছে আহা এখানে কি সুন্দর ছায়া, কি আরামে।এত মধুর স্থানে আমি বড়ই একা, আমার প্রিয় দেশান্তরে গেছে। তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই, স্বামী এখানে নেই, আর কুকথা বলবে এখানে এমন দুষ্টু লোকের নাম পর্যন্ত শোনা যায় না। পথিক তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? তোমার চোখে আমি লজ্জার ছায়া দেখছি। ভালো করে চেয়ে দেখোই না এখানে যা যা বিক্রি হচ্ছে তার কোনটার দামই তেমন বেশি নয়, আর এখানে পাবে না এমন জিনিস নেই! এইভাবে কথার ছলায় বধূটি পথিককে তার সর্বস্ব বিকিয়ে দেবার প্রস্তাব দিয়ে, পুনরায় পথিকের ভয় কাটানোর জন্য বলে, ঘরে আমার শ্বাশুড়ীও নেই, পরিজন যারা আছে আরা কেউ আপনার লোক নয়, ননদিনী আছে বটে কিন্তু সে স্বভাবে খুবই সরল। তোমার তাই অত লজ্জা পাবারও কিছু নেই, ভয় পাবারও কিছু নেই। এখন এত সুযোগ থাকতেও তুমি যদি বিমুখ হও তাহলে তো আমার কিছুই বলার থাকে না! বিদ্যাপতি বলছেন যুবতী তুমি আমার কথা শোনো তোমার আশা পরিপূর্ণ হবে। এই পদটি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ নয়, সাধারণ পরকীয়া প্রেমের পদ। এই জাতীয় পরকীয়া প্রেমরসাত্মক কবিতার একটি ধারা সংস্কৃত সাহিত্য থেকেই প্রচলিত ছিল, লৌকিক সাহিত্যে তো এর বিস্তার ছিলোই। বিদ্যাপতি রচিত এই রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কহীন পরকীয়া প্রেমের পদগুলি পাঠ করলে বোঝা যায় যে এর ওপরে প্রাথমিক ভিত্তি করেই রাধাকৃষ্ণ পরকীয়া প্রেমের পদগুলি রচিত হয়েছিল। রসমাধুর্য্য ছাড়াও রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মূল কাঠামোটি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে এই পদগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী