রমণী-মোহন বিলসিতে মন
হইল মরমে পুনি।
গিয়া বৃন্দাবনে বসিলা যতনে
রমিতে বরজ ধনী।।
মধুর মুরলী পূরে বনমালী
রাধা রাধা বলি গান।
একাকী গভীর বনের ভিতর
বাজায় কতেক তান।।
অমিয়া নিছনি বাজিছে সঘন
মধুর মুরলী গীত।
অবিচল কুল রমণী সকল
শুনিয়া হরল চিত।।
শ্রবণে যাইয়া রহল পশিয়া
বেকত বাজিছে বাঁশী।
আইস আইস বলি ডাকয়ে মুরলী
যেন ভেল সুখরাশি।।
আনন্দ অবশ পুলক মানস
সুকুমারী ধনী রাধে।
গৃহকর্ম্ম যত হৈল বিসরিত
সকল করিল বাধে।।
রাইএর অগ্রেতে যতেক রমণী
কহয়ে মধুর বাণী।
ঐ ঐ শুন কিবা বাজে তান
কেমন করিছে প্রাণী।।
সহিতে না পারি মুরলীর ধ্বনি
পশিল হিয়ার মাঝে।
বরজ-তরুণী হইল বাউরী
হরিল কুলের লাজে।।
কেহ পতি সনে আছিল শয়নে
ত্যজিয়া তাহার সঙ্গ।
কেহ বা আছিল সখীর সহিত
কহিতে রভস রঙ্গ।।
কেহ বা আছিল দুগ্ধ আবর্ত্তনে
চুলাতে রাখি বেশালি।
ত্যজি আবর্ত্তন হই আগুয়ান
ঐছন সে গেল চলি।।
কেহ শিশু লয়ে কোলেতে করিয়ে
দুগ্ধ করায় পান।
শিশু ফেলি ভূমে চলি গেল ভ্রমে
শুনি মুরলীর গান।।
কেহ বা আছিল শয়ন করিয়া
নয়নে আছিল নীদ।
যেমন চোরাই হরণ করিল
মানসে কাটিল সিঁদ।।
কেহ বা আছিল রন্ধন করিতে
তেমতি চলিয়া গেল।
কৃষ্ণমুখী হৈয়া মুরলী শুনিয়া
সব বিসরিত ভেল।।
সকল রমণী ধাইল অমনি
কেহ কাহা নাহি মানে।
যমুনার কূলে কদম্বের মূলে
মিলল শ্যামের সনে।।
ব্রজনারীগণে দেখিয়া তখনে
হাসিয়া নাগর রায়।
রাস-বিলসন করিল রচন
দ্বিজ চণ্ডীদাস গায়।।