যমুনা কিনারে

রোপলহ পহু লহু লতিকা আনি

রোপলহ পহু লহু লতিকা আনি।
পরতহ জতনে পটবিতহ পানি।।
তঁই অরথিত উপচিত ভেলি সে।
তোহেঁ বিসরলি ভল বোলত কে।।
মাধব বুঝল তোহর অনুরোধ।
হেরিতহু কএলহ নয়ন নিরোধ।।
একহু ভবন বসি দরসন বাধ।
কিছু ন বুঝিঅ পহু কী অপরাধ।।
সুপুরুস বচন সবহুঁ বিধি ফূর।
অমরখে বিমরখ ন করিঅ দূর।।
ভনই বিদ্যাপতি এহু রস জান।
রাএ-সিবসিংঘ লখিমা দেই রমান।

অন্তঃকথন:
এই পদটি আক্ষেপানুরাগের। রাধারানীকে প্রেমজালে বেঁধে, বহু যত্নে মিলনান্তে এখন মাধব ভুলেছেন তাঁকে! এ যাতনা কি করে সইবেন রাই আমাদের! না পাওয়ার জ্বালা অপেক্ষা এই পেয়ে হারানোর বেদনা যে দ্বিগুণতর! মাধবের প্রতি শ্রীমতীর আক্ষেপ তাই শতধারে বয়ে যায়! বহু বেদনায় শ্রীমতী বলছেন, প্রভু তুমি ক্ষুদ্র লতিকা এনে রোপন করলে, বহু যত্নে প্রত্যহ সেই লতিকায় জল সেচন করলে! তোমার সেই যত্নে, তোমারই প্রার্থনায় সেই লতা দিনে দিনে বেড়ে উঠল! এখন তুমিই যদি তাকে ভুলে যাও তাহলে কে ভালো বলবে বল? অর্থাৎ রাধারানী বলতে চাইছেন হে মাধব তোমারই আকাঙ্ক্ষায় আমার মনে প্রেমের লতিকা বেড়ে উঠল, তুমিই আমায় প্রেমরসে সিক্ত করলে, এখন তুমিই যদি আমায় ভোল তাহলে আমার কি উপায়! অন্তরে আশা জাগানোর পর তোমার এই বিস্মৃতি কেউ কি ভালো বলবে বলো? আক্ষেপ করে শ্রীমতী বলছেন, মাধব তোমার অনুরাগের স্বরূপ বুঝতে পারলাম, আমাকে দেখামাত্র তুমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলে! একই গৃহে বাস করা সত্ত্বেও আমি তোমার দর্শন পাই না! শ্রীমতী বুঝতে পারছেন না কোন দোষে তাঁর এত বড় শাস্তি হল! তাই তিনি বলছেন, প্রভু আমার কি অপরাধ কিছুই তো বুঝে পাই না! সুপুরুষের বচন সবই তো বিধি পূর্ণ করেন! ( তোমারও তো সব সাধ পূর্ণ হয়েছে!) তাহলে কেন এমন মুখ ফিরিয়ে আছো? ক্রোধ তো দুঃখ দূর করতে পারে না! অর্থাৎ তোমার যদি দুঃখের কোন কারণ ঘটে থাকে তাহলে এমন রাগ করে আছো কেন? রাগ করে থাকলে কি দুঃখ দূর হয় মাধব! এই ভাবে শ্রীমতী কাতর অনুনয়ে মাধবের ভুলে থাকার কারণ বুঝতে চাইছেন, কারণ মাধব বিহনে তাঁর যে জীবন বৃথা! মিলন অপেক্ষা বিরহের এই আক্ষেপে শ্রীমতীর প্রেমাকাঙ্ক্ষা যেন আরো তীব্রতর স্বরে বেজে উঠেছে! বিদ্যাপতি বলছেন আক্ষেপের এই তিক্ত মধুর রস সম্যক রূপে বোঝেন লখিমা দেবীর রমণ রাজা শিবসিংহ।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী