যমুনা কিনারে

শুন শুন শুন আমার বচন

শুন শুন শুন আমার বচন
কহিছে মরম সখী।
আঁখি আড় কভু না হও তাহার
শুনহ কমলমুখি।।
রাই বলে বড় আছে ওই ভয়
পরাণ না হয় স্থির ।
মনের বেদনা বুঝে কোন জন
এ বুক মেলয়ে চির।।
স্বতন্তর নই গুরু পরিজনা
তাহারে আছয়ে ডর।
যেন বেড়াজালে সফরি সলিলে
তেমতি আমার ঘর।।
নহে বা শ্যামের অতি কুতূহলে
হেরি ও বদন সদা।
সবার মাঝারে কুলকলঙ্গিনী
সব জন বলে রাধা।।
সে সব কলঙ্ক পরিবাদ যত
সৌরভ করিয়া নিনু ।
এত দিন যত পাড়ার পরশী
তাতে তিলাঞ্জলি দিনু।।
চণ্ডীদাস কহে সে শ্যাম তোমার
তুমি সে তাহার প্রিয়া।
মিছাই বচন লোকের সূচনা
আমি ভাল জানি ইহা।।

অন্তঃকথন:
গোষ্ঠলীলা পর্যায়ের এই পদটি সখী ও শ্রীরাধিকার উক্তি-প্রত্যুক্তিতে বর্ণিত হয়েছে । ‘শোনো গো, শোনো আমার কথা, বলছে তোমার মর্মসখী। তার আঁখির আড়াল কখনো হয়ো না, শোনো কমলমুখী’। রাই বলে, ‘এই ভয় তো আছেই, পরাণ যে স্থির হয় না। কে বুঝবে আমার মনের ব্যথা। এ বুক চিরলে মিলিয়ে দেখতে পাবে। স্বতন্তর নই যে আমি, গুরুজন পরিবৃতা হয়ে রয়েছি, তাই বড় ভয় হয়। জালের বেড়ায় আটক সফরির যেমন দশা, তেমনি যে আমার ঘর। নইলে কি আর সর্বদা শ্যামের ও মুখখানি দেখতে থাকি অতি কৌতূহলে। সকলে যে বলে রাধা কুলের কলঙ্ক- কুলকলঙ্কিনী। সে সব কলঙ্ক, যত অববাদ --- সকলই সৌরভ মনে করে গ্রহণ করলাম। পাড়ার যত পড়শি তাদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করলাম’। চণ্ডীদাস বলে, ‘শ্যাম যে তোমার। আর তুমি তার প্রিয়া। লোকের মিথ্যা বচন আমি ভালোই জানি’।

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:জয়শ্রী
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী