ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
ভজ ভাই রে—নিতাই গৌর রাধে শ্যাম রাধে
ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম—জপ, –হরে কৃষ্ণ হরে রাম
জপ,–রাম রাম হরে হরে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
রমে রামে মনোরমে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
শ্রীরাধারমণ রাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
ওরে ভাই রে,–এই ত’ কলিযুগের মূলমন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
ঘোর-কলিযুগে,–এই ত’ পরিত্রাণের মূলমন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এ যে,–বেদের নিগূঢ়-মর্ম্ম—কলি,–যুগোচিত এই নাম—ধর্ম্ম
গীতা-আদি করিয়া মন্থন।’’
জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এ নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
‘এ নাম,–অখিল-রসের ধাম’—
আমরি,–অভেদ নাম নামী—এ নাম,–অখিল-রসের ধাম
‘আ’মরি অভেদ নাম নামী’—
আ’মরি,–নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ –অভেদ নাম নামী
আ’মরি,–নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ’—
চৈতন্য-রস-বিগ্রহ—নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ
‘অভেদ নাম নামী’—
এ নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
অদ্বয়-ব্রহ্ম নন্দ-নন্দন পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
অনাদির আদি গোবিন্দ পেতে—এই—নাম বই আর সাধন নাই রে
সচ্চিদানন্দ-ঘন-মূরতি দেখ্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সচ্চিদানন্দ-ঘন-মূরতি দেখ্তে’—
নিত্য,–নব-কৈশোর নটবর—সচ্চ্দিানন্দ-ঘন-মূরতি দেখ্তে
আমরি,–গোপবেশ বেণুকর—সচ্চিদানন্দ-ঘন—মূরতি দেখ্তে
পরিপূর্ণ কৃষ্ণ প্রাপ্তি কর্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
আ’মরি,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
আমরি,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে’—
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দে—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
ও সে,–ব্রজবাসীগণের মত—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
পুত্র, সখা, প্রাণপতি—এই,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
কৃষ্ণ বশ করে অধীন কর্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
কৃষ্ণ-প্রেম কৃষ্ণ দিতে ধরে মহাশক্তি।। রে ! !
তার মধ্যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন।’’ রে !
‘‘নাম-সঙ্কীর্ত্তন হইতে পাপ-সংসার-নাশন। রে !
চিত্তশুদ্ধি সর্ব্বভক্তি-সাধন উদ্গম।। রে !!
কৃষ্ণ-প্রেমোদ্গম প্রেমামৃত-আস্বাদন। রে !
কৃষ-প্রাপ্তি সেবামৃত-সমুদ্রে মজ্জ।।’ রে !!
আরে,–‘‘খাইতে শুইতে নাম যথা তথা লয়। রে !
ইথে,–কাল দেশ নিয়ম নাই সর্ব্বসিদ্ধি হয়।।’’ রে ! !
হেলায় শ্রদ্ধায় নিলে নাম—পুরে ভাই মনস্কাম
পাপ হরে আর তাপ হরে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—পাপ হরে আর তাপ হরে
যদি কেহ,–নাম বল্ব মনে করে—আগেই তার,–পাপ-তাপ সব পলায় দূরে
সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে,–অন্ধকার-রাশির মত—আগেই তার,–পাপ-তাপ
চিত্তদর্পন মার্জ্জন করে
অনাদিকালের,–দুর্ব্বসনা—মালিন্য-পূর্ণ—চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—চিত্তদর্পণের সম্মার্জ্জনী
অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
মধূর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
শ্রী,–ভাগবত-পুরাণ এই ফুকারি কয়
সেই হয় জীবের এক অজ্ঞানতম-ধর্ম্ম।। রে !!
অজ্ঞানতমের নাম কহিয়ে কৈতব। রে !
ধর্ম্ম, অর্থ, মোক্ষ, বাঞ্ছা-আদি এই সব।।’’ রে !!
কৃষ্ণ ভজে চতুবর্বর্গ-বাসনা—ইহাকেই বলে অজ্ঞানতা
যাহা হইতে কৃষ্ণভক্তি হয় অন্তর্দ্ধান।। রে ! !
সে হৃদয়ে কখনও যায় না
যে হৃদয়ে ভুক্তি-মুক্তি-বাসনা-ধৃষ্টা-চণ্ডালিনী থাকে—সে হৃদয়ে কখনও যায় না
শুদ্ধা-সাধবী-ব্রাহ্মাণী ভকতি-দেবী—সে হৃদয়ে কখনও যায় না
ভুক্তি-মুক্তি-বাসনা থাক্তে—শ্রীকৃষ্ণ-ভক্তি লাভ হয় না
ভুক্তি-মুক্তি-বাসনা-রূপ—এই,–অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
চতুবির্বধা-মুক্তি অষ্ট-সিদ্ধি—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
আমায়,–গ্রহণ কর কর বলে—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
হরিনাম-রসে যে মজে—সে,–ফিরেও ত’ চান না রে
‘‘কৃষ্ণদাস-অভিমানে যে আনন্দ-সিন্ধু।
ব্রহ্মানন্দ তার আগে নহে এক-বিন্দু।।’’
তারাই ত’ আদি ব্রহ্মজ্ঞানী
ব্রহ্মার,–মানস-পুত্র সনক-সনাতন-আদি—তারাই ত আদি ব্রহ্মজ্ঞানী
তাদের,–ব্রহ্মাজ্ঞান ছুটে গেল রে
শ্রীকৃষ্ণের—পদস্থিত-চন্দন-তুলসীর গন্ধে—তাদের,–ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল রে
তারা,–ভকতিরসে লুব্ধ হল—তাদের,–ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল
তাদের,–দাস হতে বাসনা হল—তাদের—ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল
তাই বলি,–অরসজ্ঞ-কাক চুষে জ্ঞান-নিম্বফলে। রে !
রসজ্ঞ-কোকিল খায় প্রেমাম্রমুকুলে।। রে !!
রসাল-আম্রমুকুল পেলে—বল,–কে লুব্ধ হয় নিম্বফলে
তাই বলি,–ভব-মহাদাবাগ্নি নিবর্বাপণ করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—ভব-মহাদাবাগ্নি নিবর্বাপণ করে
আধ্যাত্মিক,–আধিদৈবিক, আধিভৌতিক-ত্রিতাপ-জ্বালা যায় রে দূরে
এই,–ভূবন-মঙ্গল-নাম-গানে—সবর্ব-অমঙ্গল হরে
শ্রী,–কৃষ্ণপ্রাপ্তির অনুকূল-সকল-মঙ্গল উদয় করে
যত,–বহির্ম্মুখ-চিত্তবৃত্তি—শ্রী,–কৃষ্ণপদে উন্মুখ করে
প্রাকৃত,–ভোগ-বাসনা হতে তুলে লয়ে–শ্রী,–কৃষ্ণপদে উন্মুখ করে
কায়মনোবাক্য-দ্বারায়—শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
সবর্ব-সাধন-শকতি দিয়ে—শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
‘সবর্ব-সাধন—সবর্ব-সাধন-শকতি দিয়ে
সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে
প্রেমামৃত-সিঞ্চন করে—সবর্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে
কম্প-অশ্রু-পুলকাদি—ভাব-ভূষণে ভূষিত করে
ভাব-ভূষণে ভূষিত করে—গোপী-ভাবামৃতে লুব্ধ করে
দারুণ,–সংসার-বন্ধনের একমাত্র কারণ—এই,–দেহাভিমান যায় রে দূরে
এই প্রাকৃত,–দেহাভিমান ঘুচাইয়ে—রাধাদাসী-অভিমান দেয় রে
এক শক্তিমান্ আর সকলি শক্তি—এই তত্ত্ব জাগায়ে দেয় রে
একা,–পুরুষ কৃষ্ণ আর সব প্রকৃতি—এই তত্ত্ব জাগায়ে দেয় রে
ব্রজে গোপী-দেহ নিয়ে—শ্রীরাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি করায়
মহারাস-বিলাসের—পরিণতি ভোগ করায়
নামের স্বরূপ গৌরাঙ্গ মিলায়—পরিণতি ভোগ করায়
নামের স্বরূপ গৌরাঙ্গ প্রাপ্তি—এই ত’,–নাম-সঙ্কীর্ত্তন ফলশ্রুতি
অদ্বয়-ব্রহ্ম নন্দনন্দন—হলেন,–শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
রাম, শ্যাম, গৌরাঙ্গ নাম
ত্রেতা, দ্বাপর, কলিযুগে—রাম, শ্যাম, গৌরাঙ্গ নাম
ত্রেতাতে রাম, দ্বাপরে শ্যাম—এই,–কলিতে গৌরাঙ্গ নাম
মর্য্যাদা, লীলা, প্রেম পুরুষোত্তম—রাম, শ্যাম, গৌরাঙ্গ নাম
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলার—অপরূপ রহস্য ভাই রে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দের—চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল
যে আমারে যৈছে ভজ্বে—আমি তারে তৈছে ভজ্ব
যে,–আমায় যেমন করে ভজ্বে—আমি তার,–ভজনের প্রতিদান দিব
ব্রজগোপিকার ভজনে—সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইল
ব্রজগোপিকার ভজনের—প্রতিদান দিতে নারিল
বলতে হল,–ন পারয়ে হং
তাই,–হইল ইচ্ছার উদ্গম
রাসরসে খেল্তে খেল্তে—হইল ইচ্ছার উদ্গম
শ্রীরাধিকার,–প্রেম-মাধুর্য্যধিক্য দেখে—হইল ইচ্ছার উদ্গম
আমি ত’ ভুবন-মোহন—কে আমায় মুগ্ধ করে
এ,–কে আমায় মুগ্ধ কর্ছে—আমি উহায় আস্বাদিব
কৈছন-সুখে তিঁহো ভোর।’’ রে !
সে,–প্রেমের মাধুরী কেমন
আর,–সেই প্রেমে কিবা সুখ
‘‘এ তিন বাঞ্ছিত-ধন, ব্রজে নহলি পূরণ,
কি করিবে না পাইয়া ওর।। রে ! !
তখন,–‘‘ভাবিয়া দেখিল মনে, শ্রীরাধার স্বরূপ বিনে,
এ বাসনা পূর্ণ কভূ নয়।’’ রে !
এই,–আশ্রয়-জাতীয়-সুখাস্বাদন—আমা হতে হবে না
আমি ত’ লীলার বিষয় বটি—আমা হতে হবে না
আশ্রয়-জাতীয়-ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
মহা,–ভাব-স্বরূপিণীর ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
তাই,–‘‘রাধাভাব-কান্তি ধরি’,রাধাপ্রেম গুরু করি,
নদীয়াতে করল উদয়।।’ রে !!
দিতে,–রাধাপ্রেমের প্রতিদান—হল,–শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম
বলরাম নিত্যানন্দ
বিলাসের তনু—বলরাম নিত্যানন্দ
ত্রেতায় লক্ষ্মণ, দ্বাপরে বলরাম—এই,–কলিতে নিত্যানন্দ নাম
অভিন্ন-ব্রজ শ্রীনবদ্বীপে—সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
ব্রজ-গোপ-গোপী-সনে—শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ
প্রচারিতে এই নাম-ধর্ম্ম—শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ
‘‘প্রচারিত এই নাম-ধর্ম্ম’—
আস্বাদিতে রাধা-প্রেম-মর্ম্ম—প্রচারিতে এই নাম-ধর্ম্ম
স্বমাধুর্য্য আস্বাদিতে—শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ
‘স্বমাধুর্য্য আস্বাদিতে’—
নিজ-নাম-প্রেম বিতরিতে—স্বমাধুর্য্য আস্বাদিতে
প্রচারিতে নিজ-নাম-মহিমা—শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ
‘প্রচারিতে নিজ-নাম-মহিমা’—
আস্বাদিতে নিজ-মাধুর্য্য-সীমা—প্রচারিতে নিজ-নাম-মহিমা
আ’মরি,–হইল সেই করুণার বিকাশ
যে করুণা,–কোনকালে কেউ পায় নাই—হইল সেই করুণার বিকাশ
যে করুণা,–চিরকালের অনর্পিত—হইল সেই করুণার বিকাশ
যে করুণা,–গোলোকে গোপনে ছিল—হইল সেই করুণার বিকাশ
যে করুণা,–ব্রহ্মাদির অনুভব ছিল না—হইল সেই করুণার বিকাশ
কোটি কল্প কঠোর-সাধনেও,–কেউ যার সন্ধান পায় নাই—হইল সেই করুণার বিকাশ
আমরি,–কলিজীবের সৌভাগ্য-বশে—হইল সেই করুণার বিকাশ
করুণা-বারিধি শ্রীগোবিন্দ-মনে মনে বিচার করিলেন
আমি,–‘‘চিরকাল নাহি করি প্রেমভক্তি দান’’। রে !
আমি,–ভুক্তি, মুক্তি দিয়েছি বটে
অষ্টপ্রকার-সিদ্ধিও দিয়েছি
চতুবির্বধা-মুক্তিও দিয়েছি
জ্ঞান-মিশ্রা-ভক্তিও দিয়েছি
যথাযোগ্য-সাধন-ফলে—জ্ঞান-মিশ্রা-ভক্তিও দিয়েছি
যে ভক্তি আমায়,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধে—সে ভক্তি ত’ কাকেও দেই নাই
যে ভক্তি আমায়,–পুত্র, সখা, প্রাণপতি করে—সে ভক্তি ত’ কা’কেও দেই নাই
যে ভক্তি আমায়,–বশ করে অধীন করে—সে ভক্তি ত কাকেও দেই নাই
‘আমায়,–বশ করে অধীন করে’—
আমার,–ঈশ্বর-অভিমান ঘুচাইয়ে—আমায়,–বশ করে অধীন করে
অতি হীন-জ্ঞানে করেন তাড়ন ভর্ৎসন।। রে !!
সখা শুদ্ধ-সখ্যে করে স্বন্ধে আরোহণ। রে !
বলে,–তুমি কোন, বড়লোক তুমি আমি সম।। রে !!
আর—প্রিয়া যদি মান করি করয়ে ভর্ৎসন। রে !
বেদস্তুতি হইতে তারা হরে মোর মন।। রে ! !
তার প্রেমে বশ আমি (কিন্তু) না হই অধীন।। রে !!
আপনাকে বড় মানে আমাকে সম, হীন। রে
তার প্রেমে বশ আমি হই ত’ অধীন।। রে !
আপনাকে বড় মানে আমাকে সম, হীন। রে !
তার প্রেমে বশ আমি হই ত’ অধীন।। রে !
আমি,–‘‘চিরকাল নাহি করি, (এই) প্রেমভক্তি দান। রে।
এই,–ভক্তি বিনা জগতের নাহি অবস্থান।।’’ রে ।।
যতই সাধন করুক্ না কেন—জীব,–কখনও স্থির হতে নারে
অহৈতুকী-ভক্তির আশ্রয় না পেলে—জীব,–কখনও স্থির হতে নারে
প্রেম-লক্ষণা-ভক্তির আশ্রয় না পেলে—জীব,–কখনও স্থির হতে নারে
ব্রজ-জাতীয়,–সম্বন্ধ-ভক্তির আশ্রয় না পেলে—জীব,–কখনও স্থির হতে নারে
এই,–প্রতিজ্ঞা করিলেন শ্রীগোবিন্দ—আমি,–যারে তারে যেচে দিব
সেই,–অনর্পিত-প্রেমভক্তি—আমি,–যারে তারে যেচে দিব
সেই,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—আমি,–যারে তারে যেচে দিব
‘গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে’—
দন্তে তৃণ গলবাসে করযোড়ে—গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে
আমি,–প্রেম দিব আচণ্ডালে
আমায়,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধা—প্রেম দিব আচণ্ডালে
আমায়,–পুত্র, সখা, প্রাণপতি করা—প্রেম দিব আচণ্ডালে
আমায়,–বশ করে অধীন করা—প্রেম দিব আচাণ্ডালে
আয় আয়,–কে নিবি আমায় কিনিবি বলে—আমি,–প্রেম দিব আচণ্ডালে
আজ,–‘‘তাই হরি ব্রজবিহারী, শ্রীনবদ্বীপে অবতরি;
নাম ধরি গৌরহরি,’’
আমাদের,–শ্রীমতীর শ্রী-হরি’—নাম ধরি গৌরহরি
শ্রীরাধাভাব-কান্তি ধরি—নাম ধরি গৌরহরি
অযাচকে যেচে দেয়, (বলে) কে নিবি কে নিবি আয়;
মার খেয়ে প্রেম বিলায়, কে আছে আর জগতে।’’
এমন করুণার কথা—কেউ কি শুনেছ কোথা
পাপ লয়ে প্রেম যাচে—কে কোথায় শুনেছে
‘পাপ লয়ে প্রেম যাচে’—
কে কোথায়,–পতিত আছে খুঁজে খুঁজে—পাপ লয়ে প্রেম যাচে
কেউ কি শুনেছ কোথায়
মার খেয়ে প্রেম বিলায়—কেউ কি শুনেছ কোথায়
কত কত অবতার হয়েছে—কেউ কি শুনেছ কোথায়
অসুরেরে করিল সংহার। রে !
এবে অস্ত্র না ধরিল, প্রাণে কারে না মারিল,
চিত্ত-শুদ্ধি করিল সবার।।’’ রে ।।
মারার কথা দূরে থাক্—মার খেয়ে প্রেম দিল
মেরেছ মার আবার খাব
মেরেছ কলসীর কাণা
তা বলে কি প্রেম দিব না—মেরেছ কলসীর কাণা
মার খেয়ে প্রেম যাচে—আমার,–নিতাই বিনে আর কে আছে
ও পতিতের বন্ধু—আরে আমার নিতাই রে
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের পাগল—আরে আমার নিতাই রে
নিতাই গৌরাঙ্গ আমার—করুণা-সিন্ধু অবতার। রে !
জগজনে পরাওল হার।।’’ রে ।।
নিজ-নাম—চিন্তামণির মালা গেঁথে—যারে তারে পরাইল
গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—যারে তারে পরাইল
‘গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—
দন্তে—তৃণ গলবাসে করযোড়ে—গিয়ে,–আচণ্ডলের দ্বারে দ্বারে
বলে,–আয় কলিহত-জীব
পেয়েছে সাধের মানব-জনম
চৌরাশী,–লক্ষ যোনি করে ভ্রমণ –পেয়েছ সাধের মানব-জনম
এ-ত’,–রিপু-সেবার জনম নয় রে
শৃগাল-কুকুরের মত—এ-ত’,–রিপু-সেবার জনম নয় রে
শ্রীহরি,–ভজন-যোগ্য এই মানব-দেহ—দেবতারা বাঞ্ছা করে
ধর ধর নামের মালা পর
ত্রিতাপ হর,–হরিনামের মালা পর
হরি,–নামের মালা কণ্ঠে পর রে
বল,–‘‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
বল,–হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।’’
ওরে,–ও কলিহত-জীব—ধর,–পর হরিনামের মালা
দূরে যাবে ত্রিতাপ-জ্বালা—পর,–পর হরিনামের মালা।
যাবে জ্বালা, পাবে নন্দলালা—ধর,–পর হরিনামের মালা
হয়ে,–ব্রজবালা, পাবে নন্দলালা—ধর,–পর হরিনামের মালা
করুণার বালাই লয়ে মরে যাই—আমরি কি করুণা রে
আপনার প্রাপ্তির উপায়—আজ,–আপনি যেচে বলেদিলেন
আপনাকে,–বশ করে অধীন করার উপায়–জজ,-আপনি যেচে বলে দিছেন
জগজনে পরাওল হার।। রে !!
আরে,–কলি-তিমিরাকুল, অখিল-লোক দেখি,
বদন-চাঁদ পরকাশ।’’ রে !
কলিঘোর,–তিমিরে জগৎ আচ্ছন্ন দেখে—বদন-চাঁদের প্রকাশ করলেন
কলিঘোর,–অমানিশা বিনাশিতে—বদন-চাঁদের প্রকাশ করলেন
আরে,–‘‘কলিঘোর-তিমিরে, গরাসল জগজন,
ধরম করম গেল দূর। রে !
অসাধনে চিন্তামণি, বিধি, মিলাওল আনি,
আমার,–‘‘গোরা বড় দয়াল ঠাকুর।।’’ রে !!
আরে,–‘‘কলিঘোর-পাপাচ্ছন্ন অন্ধকার-ময় ! রে।
পূর্ণ-শশধর ভেল চৈতন্য তাহায়।।’’ রে !!
বদন-চাঁদ পরকাশ। রে !
আবার,–‘‘লোচনে প্রেম, সুধারস বরিষণে,
জগজন-তাপ বিনাশ।।’’ রে !!
কলিহত-পতিত-জীবের—সকল-তাপ দূর করিলেন
হরি বলে কেঁদে কাঁদাইয়ে—সকল-তাপ দূর করিলেন
‘হরি বলে কেঁদে কাঁদাইয়ে’—
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—হরি বোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে
জগবাসী-নর-নারীর—সকল-তাপ দূর করিলেন
বনের পশু কেঁদে লুটায়
সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
গৌর,–মুখোদ্গীর্ণ-নামের রোলে—সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
নিজ-হিংস্র-স্বভাব ভুলে—সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
ঝারিখণ্ড-পথে গৌর যায়—দেখে,–সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
এস,–অনুভব করি ভাই রে
গৌরাঙ্গ-নিগুঢ়-লীলা—এস,–অনুভব করি ভাই রে
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—এস,–অনুভব করি ভাই রে
আমার মনে এই জাগিছে
শ্রীগুরুদেবের প্রেরণায়—আমার মনে এই জাগিছে
জীবের,–স্বরূপ জাগাতে এসেছে
জীব নিত্য রাধাদাসী—এই,–স্বরূপ জাগাতে এসেছে
জীবের,–স্বরূপ নিত্য রাধাদাসী—হলাদিনীর বৃত্তি জীব
পশু-আবরণ ঘুঁচে গেছে—আজ,–স্বরূপ জেগে উঠেছে
‘স্বরূপ-জাগান স্বরূপ’—
মধুর-গৌরাঙ্গ-রূপ—স্বরূপ-জাগান স্বরূপ
চিনিতে পেরেছে
প্রাণ-গৌরের,–বাঁকা-আঁখি দেখে—চিনিতে পেরেছে
দেখি,–যোড়া-ভুরু বাঁকা-নয়ন—এ ত’ বটে,–প্রাণের রাধারমণ
হয়েছে মনে হয়েছে
শ্রীরাধার,–প্রেম-ঋণে ঋণী হয়েছে
তাই তার,–ভাব-কান্তি অঙ্গীকরি—ঋণ, শুধিতে এসেছে
আয়,–আয়,–দেখে যা গো ও-কিশোরী
তোর,–প্রেমের দায়ে বঁধূ হল দণ্ডাধারী—আয় আয়,–দেখে যা গো
সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
ঝারিখণ্ড-পথে গৌর যায়—সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
আরে,–‘‘ভকত কলপতরু,অন্তরে অন্তরু,
রোপলি ঠামহি ঠাম।’’ রে।
নিজ ভক্ত-কল্পতরু—স্থানে স্থানে রোপণ কর্লেন
যত বহির্ম্মুখ-দেশে—নিজ,–ভক্তগণের জন্ম দিলেন
আরে,–‘‘তছু-পদতল, অবলম্বনে পন্থিক,
পূরল নিজ নিজ কাম।।’’ রে !!
ভকত-কল্পতরুর—ছায়ায় বসে জুড়াইল
শ্রীগুরু-কল্পতরুর—ছায়ায় বসে জুড়াইল
‘শ্রীগুরু-কল্পতরুর’—
ভকতরূপী—শ্রীগুরু—কল্পতরুর
ভব-পথের শ্রান্ত-পথিক—তার,–ছায়ায় বসে জুড়াইল
সংসার,–বাসনা-শ্রমে শ্রান্ত-পথিক—তার,–ছায়ায় বসে জুড়াইল
শ্রীগুরু-কলপতরুর-ছায়ায় বসে ত্রিতাপ গেল
ভকত-রূপী,-শ্রীগুরু-কল্পতরুর-ছায়ায় ব’সে ত্রিতাপ গেল
যদি তোমরা বল ভাই—কেন ভ্রমণ করে জীব
আরে,–‘‘জীব নিত্য কৃষ্ণদাস তাহা ভুলি গেল। রে !
তে কারণে মায়া-পিশাচী (তার) গলায় বাঁধিল।। রে !!
একবার স্বর্গে তোলে আবার নরকে ডুবায়।’’ রে !
স্বর্গ অপবর্গ ভোগ করায়—সৎ অসৎ কাম্য-কর্ম্ম-ফলে
স্বর্ণ-শৃঙ্খল আর লৌহ-শৃঙ্খল-দুই’ই শৃঙ্খলে বদ্ধ
অপরাধী-জনে যেন রাজা শান্তি দেয়।।’’ রে !!
দুঃখ যাবার উপায় আছে
তার মন্ত্র-উপদেশে মায়া-পিশাচী পলায়।। রে ! !
ভ্রমিতে ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান্ তরে। রে !
নদীর প্রবাহে যৈছে কাষ্ঠ লাগে তীরে।।’’ রে !!
তীর-সংযোগ গুরু-কৃপা
গুরু-কৃষ্ণ-প্রসাদে পায় ভক্তিলতা-বীজ।।’’ রে !!
অন্তর্যামী আর ভক্ত-শ্রেষ্ঠ—দুই-রূপে করেন কৃপা
গুরু-রূপে জানান উপাসনা—অন্তর্যামী-রূপে করেন প্রেরণা
আরে,–‘‘মহৎকৃপা বিনে কোন কার্য্য সিদ্ধি নয়।। রে !
কৃষ্ণা-কৃপা দূরে রহু সংসার না হয় ক্ষয়।।’’ রে !!
শ্রীগুরু-কৃপা বিনা ভাই—তাপ জুড়াবার আর উপায় নাই
শ্রীগুরু-পদাশ্রয় বিনা ভাই—তাপ জুড়াবার আর উপায় নাই
‘‘পূরল নিজ নিজ কাম।’’ রে !!
সকল-সাধ পূর্ণ হল
নাম-প্রেম-ফল পেয়ে—সকল-সাধ পূর্ণ হল
‘‘পূরল নিজ নিজ কাম।।’’ রে !!
আমার প্রাণ গৌরহরির—কি বল্ব করুণার কথা।
আরে,–‘‘ভাব-গজেন্দ্র, চড়াওল অকিঞ্চ নে,
ঐছন পহুঁক বিলাস।’’ রে !
যা’,–চতুর্দ্দশ-ভূবনে অভাব—তাই,–কলিহত-জীবে দিল
পঞ্চম ম-পুরুষার্থ-প্রেমা—তাই,–কলিহত-জীবে দিল।
জগতে ফেলিল ঢাল। রে !
কাঙ্গালে পাইয়া, খাইয়া নাচয়ে
বাজাইয়ে করতালি।।’’ রে !!
বলে,–ধর কলি-জীব প্রেম লও রে
প্রেম-বন্ধনে বাঁধ মোরে
প্রেম-ডুরি হাতে দিয়ে বলে—প্রেম-বন্ধনে বাঁধ মোরে
প্রেম-বন্ধনে বাঁধ মোরে—আমি,–বাঁধা পড়্তে এসেছি রে
থেক’না দূরে রেখ’না দূরে—প্রেম-বন্ধনে বাঁধ মোরে
আর আমারে ঠাকুর করে—তোমরা সবে থেক না দূরে
আমি,–তাই এসেছি গোলোক ছেড়ে
আমার,–ঠাকুরালি ভাল লাগে নাই—আমি,–তাই এসেছি গোলোক ছেড়ে
এবার,–বাঁধা পড়্তে এসেছি রে—প্রেম-বন্ধনে বাঁধ মোরে
করুণার—বালাই লয়ে মরে যাই—আ’মরি কি করুণা রে
কেউ,–শুনেছ কি কোন-যুগেতে
এমনি করে,–সেধে যেচে আপনা দিতে—কেউ,–শুনেছ কি কোন-যুগেতে
সেধে যেচে বাঁধা পড়্তে—কেউ,–শুনেছ কি কোন-কালেতে
যাই রে দানের বলিহারি
প্রেমাবতার গৌরহরির—যাই রে দানের বলিহারি
যে,–বিষয়-বিষ পীতে ছিল
তারে,–নাম-অমিয়া পিয়াইল
যে,–বিষয়-বিষ পীতে ছিল—তারে,–নাম-অমিয়া পিয়াইল
বিষয়,–বিষভাণ্ড কেড়ে লয়ে—তারে,–নাম-অমিয়া পিয়াইল
‘বিষয়,–বিষভাণ্ড কেড়ে লয়ে’—
আয় বলে,–বাহু পসারিয়ে হিয়ায় ধরে—বিষয়,–বিষভাণ্ড কেড়ে লয়ে
যে,-রিপু-সেবায় মত্ত ছিল-তারে,-নিজ-সেবায় লুব্ধ কৈল
মায়ার,–লাথি খাওয়া স্বভাব যার—তারে দিল,–নিজ-সেবা-অধিকার
যে,–মায়াকূপে ছিল ডুবি—তারে কৈল ব্রজ-গোপী
যার,–গলায় ছিল মায়ার ফাঁসি—সে,–বলে আমি রাধাদাসী
আমার,–দুর্দ্দেবের কথা শুন ভাই
গোবিন্দদাস কেঁদে বল্ছেন—আমার,–দুর্দ্দেবের কথা শুন ভাই
সে, ত গৌর-প্রিয় পরিকর—এ-ত’,–গোবিন্দদাসের কথা নয় ভাই
আমাদের,–অভাব-অনুভব করাবার লাগি—আমাদের দশায় দাঁড়ায়ে বল্ছেন
একলি গোবিন্দদাস।।’’ রে।।
সংসার-কালকূট-বিষ-পানে—আমি কেবল জ্বলে মলাম্
জগৎ ভাসল প্রেমের বন্যায়—আমায়,–একবিন্দু পরশ হল না রে
আমি,–অভিমান-মঞ্চে বসে রইলাম—আমায়,–একবিন্দু পরশ হল না রে
‘আমি,–অভিমান-মঞ্চে বসে রইলাম’—
ধনী, মানী, কুলীন, পণ্ডিত—এই,–অভিমান-মঞ্চে বসে রইলাম
আমি—প্রেমধনে বঞ্চিত হলাম্
জগৎ ভাস্ল প্রেমের বন্যায়—আমি,–প্রেমধনে বঞ্চিত হলাম্
গোরা পহুঁ না ভজিলাম—আমি,–প্রেমধনে বঞ্চিত হলাম্
‘গোরা পহুঁ না ভজিলাম’—
ভক্তপদ-ধূলি ভূষণ করে—গোরা পহুঁ না ভজিলাম
শ্রীগুরু-বৈষ্ণবে দিয়ে ফাঁকি—আমি,–প্রেম পেতে রইলাম বাকী
আর কিছু লাগে না ভাল—বল বল ভাই গৌর বল
শ্রীগুরু-চরণ হিয়ায় ধরে—প্রাণ,–গৌর বল জুড়াক্ হিয়া
একমাত্র অনুভবের নিধি—এত-ত’,–বলে বুঝাবার নয় ভাই
সাধক-হিয়ার গুপ্তনিধি—এ-ত,’—বলে বুঝাবার নয় ভাই
শ্রীগুরু-বৈষ্ণবের কৃপায়—ভাবে ভাবে অনুভবের নিধি
গৌর আমার,–রাস-বিলাসের পরিণতি—ভাবে ভাবে অনুভবের নিধি
‘গৌর আমার,–রাস-বিলাসের পরিণতি’—
একাধারে পুরুষ প্রকৃতি—গৌর আমার,–রাস-বিলাসের পরিণতি
প্রাণ,–‘‘গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়-অবতার।। রে !!
অদ্বৈত-আচার্য্য গৌর-গুণ ভাল জানে।’’ রে !
অনশনে গঙ্গাতীরে বসে—যে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে
গঙ্গাজল—তুলসী দিয়ে—যে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে
আমার,–প্রাণ-কৃষ্ণ এস বলে—যে,–কেঁদে কেঁদে এনেছে
‘প্রাণ-কৃষ্ণ এস বলে’—
জীবের দশা বড় মলিন—প্রাণ-কৃষ্ণ এস বলে
সেই,–‘‘অদ্বৈত-আচার্য্য গঊর-গুণ ভাল জানে।।’’ রে !!
আমার,–‘‘প্রভু-নিতাই অবধূত যাঁর গুণ-গানে।।’’ রে !!
গৌর গৌর বলে কেবল—গৌর-গুণে আমার নিতাই পাগল
প্রাণভরে বল্ ভাই তোরা—নিতাই-পাগল-করা গোরা
গৌর-নামে আমার নিতাই উদাসী—তাইতে গৌর ভালবাসি
‘‘যাঁর গুণে ঝুরি ঝুরি’’
ভাই রে,–‘‘যাঁর গুণে ঝুরি ঝুরি’’
কতই গুণের—গৌর আমার রে
সকল-ঐশ্বর্য্য ছাড়ি গেলা বৃন্দাবন।।’’ রে !!
প্রাণ-গৌরাঙ্গের আজ্ঞা পেয়ে—আগে চলি গেলা শ্রীরূপ
বিষাদ ভাবয়ে মনে মনে।
রূপের করুণা করি, উদ্ধারিলা গৌরহরি,
মো-অধমে না কৈলা স্মরণে।।’’
রাখিয়াছে কারাগারে ফেলি।’’
সম্মুখে সাধয়ে ব্যাধ বাণ। হে!
কাতরে হরিণী ডাকে, পড়িয়া বিষম-পাকে,
এইবার কর পরিত্রাণ।।’’ হে !!
এইরূপে বন্দীশালে—বিলাপিছেন সনাতন
পত্রী দিলা রূপের লিখন।’’
‘‘পত্রী পড়ি করিলা গোপন।।’’
মনে আনন্দিত হয়ে—
পাত্সার উজীর হইয়াছিল।
শ্রীরূপের পত্রী পাইয়া, বন্দী হইতে পলাইয়া।
কাশীপুরে গৌরাঙ্গ ভেটল।।’’
দীন-হীন-কাঙ্গাল-বেশে—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
কেবল,–নিশিদিশি কাঁদে রে
হা-গৌর, প্রাণ-গৌর বলে—নিশিদিশি কাঁদে রে
গৌর বলে কাঁদ্তে কাঁদ্তে—উপনীত শ্রীকাশীধামে
জানেন না কার আকর্ষণে—বসিয়াছেন সনাতন
তপন-মিশ্রের দ্বারে—বসিয়াছেন সনাতন
তপন-মিশ্রের ঘরে—ছিলেন-গৌর-সুন্দর
ডাকি আন ত্বরা করি
দ্বারে বসিয়াছে এক বৈষ্ণব—ডাকি আন ত্বরাকরি
আজ্ঞা পেয়ে সনাতন
নিকটে যাইতে অঙ্গ হালে।
দুই-গুচ্ছ তৃণ করি, একগুচ্ছ দন্তে ধরি,
পড়িলা গৌরাঙ্গ-পদতলে।।’’
কোন অপরাধ নাই তবু—যেন,–চির অপরাধীর মত
পেয়েও মনে সদা অভাব—গৌরদাসের এই ত’ স্বভাব
সনাতন করিলেন কোলে
আমার,–আইস সনাতন বলে—সনাতনে করিলেন কোলে
আমায় তুমি ছুঁইও না প্রভু
আমি অস্পৃশ্য যবন-সেবী—আমায় তুমি ছুঁইও না প্রভু
গৌরদাসের দৈন্যের মত—এ দৈন্য কি আর জগতে আছে
মানিলেন না গৌরহরি
সনাতনের কোন বারণ—মানিলেন না গৌরহরি
সনাতন কর দৈন্য সম্বরণ
তোমার,–দৈন্যে আমার ফাটে মন—সনাতন কর দৈন্য সম্বরণ
শক্তি দিয়ে পাঠালেন ব্রজে
লুপ্ত ব্রজ উদ্ধার কাজে—শক্তি দিয়ে পাঠালেন ব্রঁজে
গৌর-আজ্ঞা ধরি মাথে—যান সনাতন ব্রজের পথে
গৌর-মুখচন্দ্র-পানে—যায় যায় ফিরে চায়
হা,–সোণার গৌরাঙ্গ প্রভু—আর কি দেখ্তে পাব হে
হা,–গৌর বলে কাঁদতে কাঁদতে—যান সনাতন ব্রজের পথে
লোকে,–‘‘জিজ্ঞাসিলে বলে মুঁই চৈতন্যের দাস।।’’ রে !!
‘‘জয় রূপ সনাতন ভট্ট-রঘুনাথ। হে !
শ্রীজীব গোপালভট্ট দাস-রঘুনাথ।। হে !!
ভুগর্ভ শ্রীলোকনাথ’’
আমার,-নামে কলঙ্ক রটালাম
দাস বলে পরিচয় দিয়ে—আমরা,–নামে কলঙ্ক রটালাম
মিলিলেন শ্রীরূপের সনে
গিয়া গোসাঞি বৃন্দাবনে—মিলিলেন শ্রীরূপের সনে
বসি নিরজনে ব্রজবনে—রূপ সনাতন কাঁদেন দুজন
স্মঙরি গৌরঙ্গ-গুণে—রূপ সনাতন কাঁদেন দুজনে
অতুল-ঐস্বর্য্য ছাড়ি গেলা বৃন্দাবন।। রে ! !
যার গুণে ঝুরি ঝুরি রঘুনাথ দাস।। রে !
ইন্দ্রসম রাজ্য ছাড়ি রাধাকুণ্ডে বাস।।’’ রে !!
পরিধানে,–ছেঁড়া কাঁথা বহির্ব্বাস—তরুতলে কৈলা বাস
নিশিদিশি হা হুতাশ
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে পড়ে—নিশিদিশি হুতাশ
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে পড়ে—নিশিদিশি কাঁদে রে
এমনি করে,–তিলে তিলে না ভজিলে—শুধু কি,—মুখের কথায় গৌর মিলে
হা,–সোণার গৌরাঙ্গ প্রভু—আর কি দেখা পাব হে
দাসের গুণ কি প্রভুর গুণ—আমরা,–কার গুণ গাইব রে
সে মধুর-লীলা কই—সে দাস কই সে প্রভু কই
সে,–লীলা-অদর্শন—শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
একমাত্র,–নামাশ্রয় বিনা ভাই,–জুড়াবার আর উপায় নাই
তোমরা জুড়াও আমিও জুড়াই –বল বল ভাই গৌর বল
‘‘ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।’’
প্রেম্সে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু নিতাই শ্রীচৈতন্য অদ্বৈত শ্রীরাধারাণী কী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন শ্রীনিতাই চাঁদ্কী জয়।
করুণাসিন্ধু গৌরভক্তবৃন্দকী জয় ! শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয়! খোল-করতালকী জয়!
শ্রীনবদ্বীপ-ধামকী জয় ! শ্রীনীলাচল-ধামকী জয় ! শ্রীবৃন্দাবন-ধামকী জয়।
চারি-ধামকী জয়। চারি-সম্প্রদায়কী জয় ! শ্রীবৃন্দাবন-ধামকী জয়।
চারি-ধামকী জয়। চারি-সম্প্রদায়কী জয়! অনন্ত-কোটি ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবকী জয়!
আপন আপন গুরুদেবকী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন শিশুপশু-পালক বালক-জীবন শ্রীমদ্ রাধারমণকী জয়!