‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের আদর্শ মূরতি—শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু
শ্রীসীতানাথের প্রেম-অবতার—শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু
শ্রীঅদ্বৈতের দ্বিতীয় প্রকাশ—শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু
অদ্বৈত অদ্বৈত আস্বাদিতে—প্রকট শ্যামানন্দরূপে
মাতা শ্রীদুরিকা পিতা শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল।।
ধারেন্দা-বাহাদুরর-পুরেতে পূর্ব্বস্থিতি।
শিষ্টলোক কহে শ্যামানন্দ-জন্মতিথি।।
কোন মতে মণ্ডলের নাহি প্রতিবন্ধ।
পুত্র-কন্যা গত হৈলে হৈলে শ্যামনন্দ।।
জন্মিলেন শ্যামানন্দ অতি শুভক্ষণে।
যে দেখে বারেক তার মহানন্দ মনে।।’’
দেখি’ বদন শ্যামানন্দ—সবার মনে আনন্দ
এখন দুঃখীয়া নাম রহুক ইহার।।
মাতাপিতা দুঃখসহ পালন করিল।
এই হেতু দুঃখী নাম প্রথমে হইল।।
দিনে দিনে বাড়ে দেখি’ সবার উল্লাস।
পরম-অদ্ভুত চেষ্টা হইল প্রকাশ।।
কখন না যায় অন্য-বালকের মেলে।
ব্যকরণ-আদি-পাঠ হইল অল্পকালে।।
গৌরনিত্যানন্দাদ্বৈতগণের চরিত।
বৈষ্ণবের মুখে শুনে হইয়া সাবহিত।।’’
নিতাই-গৌর-সীতানাথের গুণ বিনা—আর কিছু ভাল লাগে না
নদীরপ্রবাহ প্রায় ঝরে দু’নয়ন।।’’
নিতাই গৌর সীতানাথ—তিন-প্রভুর গুণ গায়
স্বাভাবিক স্বভাবে—তিন-প্রভুর গুণ গায়
ভাসে দুটী-নয়ন-ধারায়—তিন-প্রভুর গুণ গায়
পিতামাতা-সেবায় অত্যন্ত সাবধান।।
পিতা-মাতা পুত্রে যোগ্য দেখিযা কহয়।
কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা লহ যথা মনে লয়।।’’
দীক্ষা-গ্রহণের কথা শুনে—প্রাণ কেঁদে উঠল
যা আছে তার প্রাণে প্রাণে—দীক্ষা গ্রহণ করবে সেইখানে
গৌরাঙ্গ-বিহার-কথা শুনি’—সদাই প্রাণ কাঁদছে
কিছুই দেখতে পেলাম না বলে—সদাই প্রাণ কাঁদছে
গৌরাঙ্গ-বিহার-কথা শুনি’—সদাই প্রাণ কাঁদছে
কিছুই দেখতে পেলাম না বলে—সদাই প্রাণ কাঁদছে
আর ত’ মন থাকে না রে—নিশিদিশি গৌর-গুণে ঝুরে
যার,–প্রাণ কেঁদেছে গৌর-গুণে—সে,–আর কি ঘরে রইতে পারে
তাই,–‘‘গৃহ পরিহরি দূরে,’’
স্বপ্নাদেশে প্রাণ-গৌরহরির—পূর্ব্বে ইঙ্গিত পেয়েছেন
গৌরীদাস-পণ্ডিতের শিষ্য—তোমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য
হৃদয়চৈতন্য-পদে বিকাও গিয়ে—যাও ত্বরায় অম্বিকাপুরে
পাগল হয়ে ছুটলেন
আইলেন প্রভুর ভবনে।।’’
অম্বিকার পথে যেতে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
প্রভু হৃদয়চৈতন্য—অঙ্গীকার করবেন কি
কতক্ষণে দেখতে পাব
শ্রীগুরুদেবের চরণ—কতক্ষণে দেখতে পাব
প্রভু হৃদয়চৈতন্য—কতক্ষণে দেখতে পাব
ঠাকুর হৃদয়চৈতন্য—জেনেছেন প্রাণে প্রাণে
শ্যামানন্দ আসিছে এখানে—জেনেছেন প্রাণে প্রাণে
কতক্ষণে আসবে শ্যামানন্দ বলে—তাই,–পথ-পানে চেয়ে আছে
‘‘হৃদয়চৈতন্য দেখি,’’
তাঁর হৃদে বিহরে চৈতন্য—তাই নাম হৃদয়চৈতন্য
বহুদিন দেখা হয় না—কিন্তু যেন,–কতকালের পরিচয়
নিত্য সম্বন্ধ তার তাই—অঝোরে নয়ন ঝরে
স্বাভাবিক-অনুরাগে—অঝোরে নয়ন ঝরে
এই ত’ আমার প্রভু বলে—অঝোরে নয়ন ঝরে
‘এই ত’ আমার প্রভু বলে’—
সর্ব্বাভীষ্টদাতা—এই ত’ আমার প্রভু বলে
ভূমিতে পড়য়ে লোটাইয়া।’’
তোমার কৃপা-আকর্ষণ-বলে—তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে
সংসার-কূপ-হতে তুলে—টেনে এনেছ নিজ-বলে
চিরদাস পড়ে চরণতলে—দেখ প্রভু নয়ন মেলে
‘‘শিরে ধরি’ সে-চরণ,’’
শ্রীগুরু–হৃদয়চৈতন্য–চরণ–তাহার সর্ব্বস্বধন
শ্রীগুরুপদে-আত্ম-সমর্পণ—প্রাণে প্রাণে আগেই হয়েছিল
বলে,–অঙ্গীকার কর নিজগুণে
যদি,–টেনে এনেছ নিজ-কৃপা-বলে—বলে,–অঙ্গীকার কর নিজগুণে
ঐ-চরণে শরণ নিলাম—আর আমার কেউ নাই হে
অঝোরে ঝুরিয়া—হৃদয়চৈতন্য-পানে চাইয়া
কত অপরাধী যেন—ভক্তির স্বভাব-দৈন্যে
বাহু পসারি’ কৈল কোলে—এস এস আমার বাপ বলে
শ্যামানন্দ তাঁর নিত্যদাস হয়—এ ত,–নূতন শিষ্য করা নয়
নিতাই-চৈতন্যে সমর্পিল।।’’
এ যে তোমাদের নিত্যকিঙ্কর—দোঁহে প্রভু কর অঙ্গীকার
‘‘শ্রীহৃদয়চৈতন্যের দায় উপজিল।
দুঃখী নাম পূর্ব্বে কৃষ্ণদাস নাম থুইল।।
দুঃখীকৃষ্ণদাস নাম হইল বিদিত।
নিজ-ইষ্ট-সেবায় হইল নিয়োজিত।।’’
ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের—কি বলব সে সেবার কথা
শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের—আদর্শ শ্রীশ্যামানন্দ
সঙরিলে প্রাণ কেঁদে উঠে—কি বলব সে নিষ্ঠার কথা
কি বলব শ্যামানন্দ-রীতি—শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনে যথাবিধি
প্রাণপ্রিয়-শ্যামানন্দে—আদেশিলেন হৃদয়চৈতন্য
‘ফুলবাটীতে জল দিতে’—
প্রভুনিতাই—প্রাণগৌরাঙ্গের—ফুলবাটীতে জল দিতে
এই সেবা দিলেন তারে
পুষ্পবাটীতে জল সেচন—এই সেবা দিলেন তারে
জল সেচন করে শ্যামানন্দ
মাথায় লয়ে মৃৎকুম্ভ—জল সেচন করে শ্যামানন্দ
আর,–নাই তার কোন লক্ষ্য—জল সেচন করে শ্যামানন্দ
আর কিছুতেই নাই মন—অপূর্ব্ব সে আজ্ঞা-পালন
ভাসি’ দুটী-নয়ন-নীরে—যায় শ্যামানন্দ গঙ্গাতীরে
হা নিতাই গৌরাঙ্গ বলে—যায় শ্যামানন্দ গঙ্গাতীরে
মস্তকে তার গঙ্গা-কুম্ভ—নয়ন-জলে ভাসে শ্যামানন্দ
মুখে হা প্রভু হৃদয়চৈতন্য—নয়ন-জলে ভাসে শ্যামানন্দ
মাথায় মৃৎকুম্ভ করি’—আনিয়া সে গঙ্গাবারি
নিতাই-গৌরের ফুল-বাটীতে—নিরন্তর করে সেচন
দেহ-স্মৃতি নাই শ্যামানন্দের-আজ্ঞা-পালনে উনমত
পান-ভোজনের চেষ্টা নাই—আহার-নিদ্রার আবেশ নাই
জল সেচন করে সদাই—আহার-নিদ্রার আবেশ নাই
মাথায় মৃৎকুম্ভ লয়ে—জল বহন করতে করতে
তাতে হল পোকার জন্ম
কুম্ভ-জলে পচে পচে–তাতে হল পোকার জন্ম
শ্রীগুরু–আজ্ঞা–পালনে রত
জল–সেচনে আবিষ্ট—শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনে রত
শ্যামানন্দের অপূর্ব্ব ব্যবহার-দেখিলেন হৃদয়চৈতন্য
কৃপাসিদ্ধ করলেন তারে
শ্যামানন্দের সেবা-নিষ্ঠা দেখে—কৃপাসিদ্ধ করলেন তারে
এ ত’ যোগ্য দেহ বটে
গোস্বামীগণের আজ্ঞা-পালনের –এ ত’ যোগ্য দেহ বটে
গেলে মধুর-বৃন্দাবনে
গোস্বামীগণের চরণে–গেলে মধুর–বৃন্দাবনে
এ ত যোগ্য আধার বটে
গোস্বামীগণের কৃপা পাবার—এ ত’ যোগ্য আধার বটে
ভক্তি যাজন করবার—এ ত’ যোগ্য আধার বটে
অচিরে দুঃখী-কৃষ্ণদাসে—পাঠাইব ব্রজবনে
গোস্বামীগণের চরণে–পাঠাইব ব্রজবনে
শ্রীগৌরাঙ্গগণের কৃপা—শুধু কি মুখের কথায় মিলে
এমন,–গুরু-আজ্ঞা-পালন না করিলে—শুধু কি মুখের কথায় মিলে
হৃদয়চৈতন্য কৃষ্ণদাসে—তাই,–পাঠাইলেন বৃন্দবনে
তার,–গুরু-আজ্ঞা-পালন-গুণে—তাই,–পাঠাইলেন বৃন্দবনে
তার,–গোস্বামীগণের সেবাযোগ্য-দেহ জেনে—তাই,–পাঠাইলেন বৃন্দবনে
হৃদয়চৈতন্য বলেন মধুর-স্বরে—ত্বরায় যাও ব্রজবনে
ও বাপ দুঃখী-কৃষ্ণদাস—ত্বরায় যাও ব্রজবনে
মিল গোস্বামীগণের সনে—ত্বরায় যাও ব্রজবনে
যাও শ্যামানন্দ ব্রজপুরে—গোস্বামীগণের,–কৃপালাভ কর গিয়ে
গোস্বামীগণের গ্রন্থগণ—কর গিয়া আস্বাদন
কর গ্রন্থ অধ্যয়ন—ভক্তি-রীতি জানি’ কর ভজন
শ্রীজীবগোস্বামীর চরণে—আশ্রয় লও গিয়ে
মিলিবে তোমার মনঃসাধা—তার,–আশ্রয় নিয়ে থাক সদা
ব্রজে যাবার আজ্ঞা শুনে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হৃদয়চৈতন্য-চরণে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
‘অনিমিখে বন-পানে চেয়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
‘অনিমিখে বদন-পানে চেয়ে’—
তাই প্রভু-হৃদয়চৈতন্যের—অনিমিখে বদন-পানে চেয়ে
কেমন করে থাকব প্রভু
চরণ-সেবায় বঞ্চিত হয়ে—কেমন করে থাকব প্রভু
ও চাঁদ-বদন না হেরে—কেমনে বাঁচব প্রাণে
তোমার আজ্ঞা শিরে ধরি’—যাব তোমার চরণ ছাড়ি’
বল আবার,–কতদিনে হেরব বদন-মাধুরী—যাব তোমার চরণ ছাড়ি’
ঐ প্রেমময় রসের বদন—কতদিনে দেখতে পাব
ঐ—অভয়-চরণ দুখানি—কতদিনে দেখতে পাব
কাতরে শ্যামানন্দ বলে—আর কি দেখতে পাব হে
হা প্রভু হৃদয়চৈতন্য—আর কি দেখতে পাব হে
ঠাকুর-হৃদয়চৈতন্যের—আনন্দ আর ধরে না
কৃপা পাবার আধার জেনে—আনন্দ আর ধরে না
কৃপা পাবে এই নিষ্ঠা-মনে—বলেন,–যাও বাপু বৃন্দাবনে
‘‘প্রভু নিতাই চৈতন্য,’’
চেয়ে দোঁহার বদন-পানে—বলে দুঃখী প্রাণে প্রাণে
শ্রীগুর-আজ্ঞা করিতে পালনে—চলিলাম বটে বৃন্দাবনে
যেন,–হৃদে থাকে শ্রীগুর-চরণ—এই কৃপা কর দুইজন
প্রভু-হৃদয়চৈতন্য-চরণ—সদা যেন হৃদে জাগে
সর্ব্বস্ব শ্রীগুরু-চরণে—সদা যেন হৃদে জাগে
হৃদে ধরি’ শ্রীগুরু-চরণ—যেন করতে পারি আজ্ঞা-পালন
আমার নাই কিছু অন্য সাধন—যেন করতে পারি আজ্ঞা-পালন
যাত্রাকালে আজ্ঞামালা দিল।।’’
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে
‘‘শ্যামানন্দ পথে চলে,
অম্বিকাপুর হতে—যায় যায় ফিরে চায়
হৃদয়চৈতন্য-বদন-পানে—যায় যায় ফিরে চায়
শ্যামানন্দ,–ভাসে দুটি-নয়ন-জলে
শ্রীগুরুদেবের-সঙ্গ হারা হলাম বলে—শ্যামানন্দ,–ভাসে দুটী-নয়ন-জলে
কতদিনে দেখতে পাব বলে—শ্যামানন্দ,–ভাসে দুটী-নয়ন-জলে
শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালন তরে—আজ,–শ্যামানন্দ ব্রজে চলে
সোঙারিয়া প্রভুর গুণগণ।’’
পথে যেতে শ্যামানন্দ—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
শ্রীগুরু,–হৃদয়চৈতন্যের গুম সঙরিয়ে’—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
শ্রীগুরুদেবের কৃপা সঙরি’—শ্যামানন্দের দু’নয়নে বহে বারি
পাঠাইলে ব্রজপুরে—বলে,–এ কি কৃপা কৈলে মোরে
শ্রীগোস্বামীগণের চরণে—পাঠাইলেন বৃন্দাবনে
আমি কি যোগ্য ব্রজে যাবার—কি অহৈতুকী-কৃপা তোমার
বহুতীর্থ করিলা ভ্রমণ।।’’
সর্ব্বত্র মাগিল প্রেমভক্তি-মহাধন।।
শ্রীগৌড়মণ্ডল বলি’ করয়ে ফুৎকার।
মুখ বুক বাহিয়া পড়য়ে অশ্রুধার।।’’
আর কি দেখা দিবে মোরে
হা গৌড়মণ্ডল-ভূমি—আর কি দেখা দিবে মোরে
লইতে সে সব নাম কাঁদে নিরন্তর।।’’
দেখতে ত’ দিলে না
হা পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—দেখতে ত’ দিলে না
পরাণ-গৌরাঙ্গ-বিহার—দেখতে ত’ দিলে না
এই ত’ সেই বিহার-ভূমে—বিহার দেখতে পেলাম না
এই,–কৃপা কর গৌরাঙ্গগণ
যেন,–আমার মনঃসাধ হয় পূরণ—এই,–কৃপা কর গৌরাঙ্গগণ
কেবল তার সুখের লাগি’—যেন,–গুরু-আদেশ পালন করতে পারি
শ্রীগৌড়মণ্ডলে কৃপা করুন আমারে।।’’
শ্রীগৌড়মণ্ডলের কৃপা—তাইতে প্রার্থনা করে
শ্রীগৌড়মণ্ডলের কৃপা হলে—নিতাই-গৌরের চরণ মিলে
বহুতীর্থ করিলা ভ্রমণ।।’’
শ্যামানন্দ ব্রজের পথে—কাঁদতে কাঁদতে যায় রে
ভাসি’ দুটী-নয়ন-ধারে—কাঁদতে কাঁদতে যায় রে
প্রভু,–পাঠালেন বটে বৃন্দাবনে—বলে,–দেখতে ত’ পাব না
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনে—বলে,–দেখতে ত’ পাব না
তাঁরা,–করেছেন লীলা—সঙ্গোপন—বলে,–দেখতে ত’ পাব না
শ্রীজীব-গোসাঞি মহাশয়—দিবেন কি মোরে পদাশ্রয়
আনন্দে ধরিতে নারে থেহা।’’
হা প্রভু হৃদয়চৈতন্য—বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে হে
আমা-হেন-অযোগ্য—ব্রজপুরী দেখাইলে
তোমার কৃপার বালাই যাই—কোথায় আমায় আনিলে হে
আমি,–নরকের কৃমি ছিলাম—কোথায় আমায় আনিলে হে
রাধাগোবিন্দের বিহারভূমি—আমি কি দর্শনের যোগ্য
হা শ্রীগুরুদেব—বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে মোরে
আমায়,–ব্রজরজ পরশ করালে—বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে মোরে
গিয়া গিরিগোবর্দ্ধনে, কৈলা যা আছিল মনে,
শ্রীরাধাকুণ্ডের তটে আসি’।’’
এই ত’ সেই কুণ্ডতীর—প্রাণ কেঁদে উঠল রে
‘এই ত’ সেই কুণ্ডতীর’—
মধ্যাহ্ন-বিহার-ভূমি—এই ত’ সেই কুণ্ডতীর
অমনি প্রাণে জাগিল
এই,–কুণ্ডতীরে করেন বাস
গৌরপ্রিয় রঘুনাথ-দাস—এই,–কুণ্ডতীরে করেন বাস
আমার এমন কি ভাগ্য হবে—দাস-গোস্বামী কি কৃপা করবেন মোরে
শ্যামানন্দ রাধাকুণ্ড-তীরে—এত বলি’ কাঁদে রে
দাস-গোস্বামীর অনুগত—দেখিলেন দাস-ব্রজবাসী
তাঁর প্রেমোন্মত্ততা—দেখিলেন দাস-ব্রজবাসী
এ,–কে এল গৌর-প্রেমের পাগল
নিশ্চয় গৌর-পরিকর হবে
নৈলে এ-প্রেম কোথা পাবে—নিশ্চয় গৌর-পরিকর হবে
রঘুনাথ-দাস-গোসাঞির কাছে—দাস-ব্রজবাসী তারে লয়ে গেলেন
লোটাইয়া পড়িল চরণে
কতশত-ধারা বহে দুনয়নে—লোটাইয়া পড়িল চরণে
দীনে কৃপা কর বলে—লোটাইয়া পড়িল চরণে
শ্রীদাস-গোস্বামী গুণরাশি।।’’
প্রেমবাহু পসারিয়ে—দাস-গোস্বামী তুলিলেন তার
ডাকি’ কাছে বসাইলেন
তার সাত্বিক বিকার দেখে
মধুর-স্বরে জিজ্ঞাসিলেন
কে বাপু তুমি বটে
তোমার পরিচয় বল—কে বাপু তুমি বটে
বিনয়-বচনে শ্যামানন্দ-নিজ-পরিচয় দিলেন
গৌরদাসের গণ বলে—নিজ-পরিচয় দিলেন
অহৈতুকী-কৃপার বলে—শ্রীচরণে স্থান দিয়েছেন মোরে
হৃদয়চৈতন্য-ঠাকুর—শ্রীচরণে স্থান দিয়েছেন মোরে
অম্বিকানগরবাসী—আমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য
গৌরীদাস-পণ্ডিতের শিষ্য—আমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য
ডাকিলেন প্রেমস্বরে
কুণ্ডবাসী দাস-গোসাঞি—ডাকিলেন প্রেমস্বরে
আইস বাপু আইস বলে—ডাকিলেন প্রেমস্বরে
বহুদিন হতে সাধ ছিল—আইস বাপু তোমায় দেখি
জেনে রঘুনাথ শ্যামানন্দে—বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে
ব্রজবনে বাস কর গিয়া
শ্রীজীবের পদাশ্রয় লৈয়া—ব্রজবনে বাস কর গিয়া
তেঁহ কৃপা কৈলা বাৎসল্যেতে
গৌরীদাসের গণ জেনে—বাৎসল্য উপজিল মনে
বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে
আইস বাপু আইস বলে—বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে
গোস্বামি-গ্রন্থ পড়াইলেন
হৃদয়চৈতন্য-কৃপা হইতে।।’’
শ্রীজীবগোস্বামীর কৃপা পেয়ে—সব মনোরথ পূর্ণ হল
হৃদয়চৈতন্যের কৃপায়—সব মনোরথ পূর্ণ হল
হৃদয়চৈতন্যের কৃপাবল—শ্যামানন্দের সাধনের সম্বল
শ্রীগুর-কৃপা না হইলে—কোন ফল বা কারে মিলে
শ্রীগুরু-হৃদয়চৈতন্যের কৃপা—মন দিয়ে শুন ভাই
ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দে—বৃন্দাবনে পাঠাইয়ে
দুঃখী-কৃষ্ণদাস-শিষ্যে সঁপিনু তোমারে।।’’
তোমাদের কৃপা পাবার—যোগ্য-আধার জেনে
কতদিন-পরে পুনঃ পাঠাইবে এথা।।
শ্যামানন্দে কহিয়া পাঠান নিরন্তর ।
শ্রীজীবে জানিবে তুমি আমার সোসর।।
সাবধান হবে ভক্তিরত্ন উপার্জ্জনে।
অপরাধ নহে যেন বৈষ্ণবের স্থানে।।’’
বৈষ্ণব-অপরাধ হতে—সদাই সাবধান হবে
গুরু-অনুগ্রহে শ্যামানন্দ ভাগ্যবান।।’’
ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের –নিশিদিশি হা-হুতাশ
শ্রীজীব-পদাশ্রয়ে বাস—নিশিদিশি হা-হুতাশ
শ্রীজীবের চরণে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
আমি কি গৌরাঙ্গ পাব—বল বল শ্রীজীব-গোসাঞি
শ্রীজীব-গোস্বামীর কাছে গিয়ে—হৈল,–অপূর্ব্ব-মিলন কিছুদিনে
শ্রীনিবাস-নরোত্তম-সনে—হৈল,–অপূর্ব্ব-মিলন কিছুদিনে
গৌরের,–প্রকট-লীলার অদর্শনে—নিশিদিশি হিয়া জ্বলছিল
প্রাণপ্রিয়-সঙ্গ পেল—দগ্ধহৃদয় শান্ত হল
অপূর্ণ-সাধ পূর্ণ হল
বহুদিনে সাধ ছিল
যে-দিন হতে নাম শুনেছিল
শ্রীনিবাস-নরোত্তমের—যে-দিন হতে নাম শুনেছিল
এঁদের সঙ্গ পাব কতদিনে—সে-দিন হতে সাধ ছিল মনে
শ্রীনিবাস-নরোত্তম দুইজনে—পূর্ব্বে এসেছেন বৃন্দাবনে
স্বাভাবিক-প্রেমের টানে—পথ-পানে চেয়েছিলেন
শ্রীনিবাস নরোত্তম শ্যামানন্দে—তিন-জনে হৈল মিলন
বিনে এক তনু মন—তিন-জনে হৈল মিলন
নিতাই গৌর সীতানাথ—তিন-শক্তি একঠাঁই
মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে-তিন-শক্তি একঠাঁই
আবেশ-অবতারে—এবার হল দ্বিতীয় মিলন
ব্রজবনে শ্রীজীবগোস্বামীর কাছে—এবার হল দ্বিতীয় মিলন
নিতাই গৌর সীতানাথের-এবার হল দ্বিতীয় মিলন
পূর্ব্ব-অবতারে—এমন মিলন বুঝি হয় নাই
ব্রজবনে তিন-শক্তির—হৈল অপূর্ব্ব মিলন
অপূর্ণ পূর্ণ-অশে—হৈল অপূর্ব্ব মিলন
শ্রীজীব-গোস্বামি-চরণে—এ-তিনজনের মিলনে
নিরজনে কাঁদেন তিনজনে
মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে—নিরজনে কাঁদেন তিনজনে
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন বলে—নিরজনে কাঁদেন তিনজনে
হা গৌর গৌরগণ বলে—তাঁদের,–অঝোরে নয়ন ঝুরে
কোথা শ্রীরূপ-সনাতন—বলে,–কোথা প্রাণ-শচীনন্দন
‘‘ভ্রমিলা দ্বাদশ-বন,’’
হৃদে ধরি’ গুরুকৃপা-ধনে—ভ্রময়ে দ্বাদশ-বনে
সঙরি’ শ্রীগুরুধনে—ভ্রময়ে দ্বাদশ-বনে
কিন্তু,–শান্তি নাই কোন-মতে—ব্রজবনে ভ্রমিছে বটে
দেখতে ত’ পেলাম না
ব্রজবনে গৌরাঙ্গ-বিহার—দেখতে ত’ পেলাম না
ব্রজবনে কৃষ্ণ-অন্বেষণ—দেখতে ত’ পেলাম না
‘ব্রজবনে কৃষ্ণ-অন্বেষণ’—
বিরহিণী গৌর-কিশোরীর—ব্রজবনে কৃষ্ণ-অন্বেষণ
কেউ ত’ দেখা দিলে না
কৃপা করে আনলে বটে—কেউ ত’ দেখা দিলে না
গৌরপ্রিয়-শ্রীরূপ-সনাতন—কেউ ত’ দেখা দিলে না
হৈলা অতি-নিপুণ সেবায়।’’
যে নিপুণ-সেবার বলে
শ্যামানন্দ নাম মিলে
নুপুর-তিলক ভালে—শ্যামানন্দ নাম দিলে
শ্যামানন্দের সেবা-অধিকার—অদ্ভুত প্রসঙ্গ ভাই
ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের—প্রাণে প্রাণে আশা জাগিল
নিধুবন-সেবা করে
সম্মার্জ্জনী করে ধরে—নিধুবনে-সেবা করে
রাধাদাসী-ভাব অন্তরে—নিধুবনে-সেবা করে
মানসেতে শ্যামানন্দ—নিধুবন—সেবা করে
নিকুঞ্জবন মার্জ্জন—শ্যামানন্দের নিত্য-সেবা
শ্রীজীব-গোস্বামীর আজ্ঞা-মতে—নিতুই গিয়ে ঝাড়ু দেয়
কতদিনে দেখতে পাব
এই নিকুঞ্জে যুগল-বিহার—কতদিনে দেখতে পাব
অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
শ্যামানন্দের চরিত্র—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের কি ফল—অনুভব কর ভাই রে
অকপটে শ্রীগুরু-সেবার ফল—অনুভব কর ভাই রে
শ্যামানন্দের ভাগ্যের সীমা—মন দিয়ে শুন ভাই
কুঞ্জে নৃত্যগীত করে বিবিধ-তরঙ্গে।।
রাধিকার নৃত্য তাহে অত্যন্ত-প্রচুর।
খসিয়া পড়য়ে বাম-পদের নূপুর।’’
অপরূপ-নৃত্যরসে—বাম-পায়ের নূপুর খসে পড়ল
শ্যামানন্দে কৃপার তরে এই ভঙ্গী কৈল।।
প্রাতে রাই নিজে গৃহে প্রবেশ হইলা।
নূপুর না দেখি’ পায়ে চমৎকার পাইলা।।’’
কোথা নূপুর আছে খুঁজিতে—যাও ললিতে তুরিতে
নূপুর বুঝি আছে সেইখানে—ত্বরায় যাও কুঞ্জবনে
নূপুর খুঁজিতে কুঞ্জে আইলা শীঘ্র করি’।।
এথা শ্যামানন্দ প্রাতে কুঞ্জ-সেবায় আইলা।
নূপুরের জ্যোতি দেখি’ মূর্চ্ছিত হইলা।।’’
শ্যামানন্দ দেখে বিস্ময়-মনে—বন আলোকিত হয়েছে
নূপুরের জ্যোতিতে—বন আলোকিত হয়েছে
হায় এ কি দেখলাম বলে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে
নূপুর করিয়া হস্তে মস্তকে ধরিলা।।’’
কিশোরীর পদের নূপুর বটে—মনে অনুভব কৈলা
আনন্দ আর ধরে না
নূপুর চূম্বয়ে ধরে হৃদয়-কমল।।’’
গরবিণীর নূপুর-পরশে—অষ্ট-সাত্ত্বিক-ভাবের প্রকাশ
যে পরশ পেয়েছে
মহাভাব-স্বরূপিণীর—যে পরশ পেয়েছে
কে বা হবে না
কবে মোরে রাধাকৃষ্ণ দিবে দরশন।।’’
সেই নূপুর বুকে ধরে—শ্যামানন্দের নয়ন ঝুরে
অঙ্গের ভূষণ দেখাইলা—বলে,–কেন দেখা না দিলা
বধূর নূপুর মোর পাইয়াছ তুমি।।
যমুনার জল নিতে বধূ এসেছিল।
স্বভ্রমে নূপুর কুঞ্জে খসিয়া পড়িল।।
শ্যামানন্দ কহে বটে পাহিয়াছি আমি।
কিন্তু তোমার নূপুর নয় শুন ঠাকুরাণী।।
নূপুর দেখিয়া মূঞি মূর্চ্ছিত হইনু।
নূপুর ছুঁইেত প্রেম-সমুদ্রে ডুবিনু।।
মনুষ্যের নূপুর ছুঁইতে প্রেম নাহি হয়।
শ্রীরাধার নূপুর এই জানিহ নিশ্চয়।।’’
শ্রীগুরু-কৃপা-প্রেরণাতে—জেনেছি—পরশেতে প্রেম পেয়ে
এ শ্রীরাধিকার নূপুর বটে—জেনেছি—পরশেতে প্রেম পেয়ে
আমার শ্যামা-প্যারীর—এ যে রাই-কিশোরীর
শ্রীরাধার নূপুর-পরশ বিনা—প্রেম ত’ কভু হয় না
নৈলে,–স্পর্শে ভাব কেন উপজিবে—এ,–মহাভাবময়ীর নূপুর হবে
নৈলে কেন,–স্পর্শে হল প্রেমোদয়—এ,—প্রেমময়ীর নূপুর নিশ্চয়
এ যার নূপুর হবে—আমি তার পায়ে পরাব
এ যে শ্রীগুরু-কৃপা কেবল—এ বা কিসের বল বলো।
তোমারে যে আমি হইল সুপ্রসন্ন মন।।
কি বর মাগিবে মাগ তোমারে সে দিব।
বাঞ্ছাসিদ্ধ করিয়া নূপুর লইয়া যাব।।
তোমারে প্রসন্ন হৈলা বৃষভানু-সুতা।
নূপুর পাইলে হাতে বুঝিয়ে সর্ব্বথা।।’’
যাঁর নূপুর তাঁর কৃপা না হলে—আনে কি পাইতে পারে
শ্রীরাধা-কৃপা যারে হয়—নূপুরের,–সেই ত’ দরশ পরশ পায়
ভানুসুতার কৃপা যারে—সেই ত’ পরশিতে পারে
কে তুমি তোমার রূপ দেখিব যে আমি।।’’
শ্রীরাধার গণ না হলে—আনে কেন আসবে
তাঁর নূপুর অন্বেষণে—কেন আসবে অন্যজনে
তোমার পরিচয় না পাইলে—আমি,–নূপুর ত’ দিব না
রূপ দেখে মেনে নিব—শুধু পরিচয়ে মানব না
নিজ-পরিচয় দিলেন হাসি’ হাসি’—তখন শ্রীললিতা দেবী
নূপুর খুঁজতে এসেছি—আমি হই রাধাদাসী
এত বলি’ নিজরূপ দেখাইল সর্ব্বথা।।’’
শ্রীললিতা অনুরাধা—নিজরূপ দেখাইলা
মূর্চ্ছিত হই শ্যামানন্দ ভূমিতে পড়িলা।।’’
ললিতার রূপ দরশনে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে
হায় কি দেখলাম বলে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে
জয় প্রভু হৃদয়চৈতন্য বলে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে
দেখি,’—ললিতার রূপ অদভুত—শ্যামানন্দ মূরছিত
প্রণময়ে শ্যামানন্দ সাশ্রুলোচন।।
প্রেমে অঙ্গ গদগদ বাক্য নাহি স্ফুরে।
পুলকাঙ্গ প্রেম-অশ্রু ঝর্ ঝর্ ঝরে।।
ললিতা কহেন বর মাগ কৃষদাস।
কোন্-বাঞ্ছা হয় তোমার মনে অভিলাষ।।
শ্যামানন্দ কহে আর কি বর মাগিব।
তব দাসী হঞা রাধাকৃষ্ণকে সেবিব।।
শুনি’ ললিতা দেবীপ্রসন্না হইলা।
‘রাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি হউ’ কহিতে লাগিলা।।
এই নিত্য মন্ত্র তুমি করহ গ্রহণ।
স্মরণ করিলে হবে রাধিকা দর্শন।।’’
এই মন্ত্রের—রাধার হবে দর্শন
আনন্দিত হঞা তাঁর চরণে পড়িলা।।
শ্যামানন্দ-মাথে তিঁহ পদ তুলি’ দিলা।
কোলে করি’ তবে বহু আশীর্ব্বাদ কৈলা।।
‘নূপুর পাইয়া তার কপালে ছোঁয়াইলা।।’’
ললাটে নূপুর-স্পর্শে তিলক হইয়া।’’
শ্রীললিতার কৃপা হতে—শ্যামানন্দের নূপুর-তিলক
ললিতা কহে পাইলে তুমি শ্যামাপদদ্বন্দ্ব।
আজি হইতে তোমার নাম হইল শ্যামানন্দ।।”
পাইলে শ্যামাপদদ্বন্দ্ব—তোমার নাম শ্যামানন্দ
এত বলি’ শ্রীললিতা চলিলা তুরিতে।।’’
ললিতা-দিদি কোথা গেলে
যদি,–দেখা দিলে কৃপা-বলে—ললিতা-দিদি কোতা গেলে
নূপুর লইয়া করে—বলে-ললিতা-দিদি কোথা গেলে
কাঞ্চন-বরণ হৈল রূপে জগমোহ।।’’
আপন-বরণ ধরাইল—শুধু পরশ করা নয়
গুপতে কহিল তাঁরে সব বিবরণে।।
শ্যামানন্দ কহে পড়ি’ শ্রীজীবের পদে।
আপনে কৈলে কৃপা শ্রীললিতারূপে।।’’
শ্রীজীব কেবল তোমার কৃপায়—এই ত’ আমার মহালাভ
নিকুঞ্জ-সেবায় আদেশ কৈলে—তাইতে আমায় কৃপা কৈলে
শ্যামানন্দের আচরণে—অনুভব কর ভাই রে
একমাত্র গুরু-কৃপায় হয়—এ ত’ সাধনের ফল নয়
গৌর-গোবিন্দ পাবার—একমাত্র বল বটে
শ্রীগুরুদেবের কৃপা—একমাত্র বল বটে
করহ করুণা দিঠে মুঞি দীনহীন।।
শুনি’ তারে কোলে করি’ শ্রীজীব-গোসাঞি।
কহিল বিক্রীত আজি হৈনু তব ঠাঞি।।’’
শ্যামানন্দে বলেন শ্রীজীব-গোসাঞি—আমি,–তোমার কাছে বিকাইলাম
শ্যামানন্দ তোমার হলাম—আমি,–তোমার কাছে বিকাইলাম
পাইলে শ্যামা-পদদ্বন্দ্ব—তুমি,–ভাগ্যবান শ্যামানন্দ
শ্যামানন্দ কহে তোমার প্রেমে হৈনু বন্দী।।’’
শ্রীজীবগোসাঞি তোমার কৃপায়—আমায়,–রাধারাণী কৃপা হয়
শ্রীরাধিকা-চরণের নূপুর মিলে
অকপটে শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনে—শ্রীরাধিকা-চরণের নূপুর মিলে
এই তিলক লয়ে—অনেক বিবাদ উঠেছিল
শ্রীগৌড়মণ্ডলে—অনেক বিবাদ উঠেছিল
ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দ-সনে—গৌরীদাস-পণ্ডিতের পরিচয়ে
শ্যামানন্দের নূপুর তিলক
এই নিয়ে বিবাদ উঠেছিল
খ্যাতি পড়ে গিয়েছিল
শ্যামানন্দ গুরুত্যাগী বলে—খ্যাতি পড়ে গিয়েছিল
তিলক মুছাবার লাগি’—কতই না চেষ্টা কৈল
আরও তিলক উজ্জ্বল হয়
তাতে হৈল দৈববাণী
বৃথা-চেষ্টা পরিহর
এ যে,–শ্রীরাধারাণীর কৃপার তিলক—বৃথা চেষ্টা পরিহর
ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের—গুণ কি বা বলব রে
শ্রীগোস্বামীগণের আজ্ঞায়।।
পাষণ্ডী-অসুরগণে, মাতাইলা গোরাগুণে,
কারে বা না কৈল প্রেম দান।’’
শ্যামানন্দ নিজ-কৃপা-বলে—গৌরপ্রেমে ভাসাইল উৎকলে
শ্রীগোস্বামীগণের আজ্ঞায়।।
পাষণ্ডী-অসুরগণে, মাতাইলা গোরাগুণে,
কারে বা না কৈল প্রেম দান।’’
শ্যামানন্দ নিজ-কৃপা-বলে—গৌরপ্রেমে ভাসাইল উৎকলে
কে বা না পাইল পরিত্রাণ।।
কে জানিবে তাঁর তত্ত্ব, সদা সঙ্কীর্ত্তনে মত্ত,’’
শ্রী অদ্বৈত-অবতার—সেই ত’ শ্যামানন্দ এবার
নিজ-পরিকর-সঙ্গে বিলসে পরম-রঙ্গে,
উৎকলে সুখের নাহি সীমা।।’’
শ্যামানন্দের প্রেমাবেশে—উৎকল সুখেতে ভাসে
কি বা সে মূরতি মনোহর।’’
আমার ঠাকুর শ্যামানন্দ—শ্রীঅদ্বৈত-আবেশ-মূরতি
নরহরি কহে কভু, রসিকানন্দের প্রভু,
হবে কি এ-নয়ন-গোচর।।’’
রসিকানন্দে প্রভু—শ্যামানন্দ কৃপা কর
শ্যামানন্দের বিরহে—ব্যাকুল হয়ে রসিকানন্দ কাঁদে
হা ঠাকুর শ্যামানন্দ—কোথা বা লুকালে
হেন প্রভু কোথা গেল করে অনাথিন।।’’
শ্যামানন্দের অদর্শনে—রসিকানন্দ কেঁদে লুটায়
বলি’,–হা শ্যামানন্দ গেলে কোথায়—রসিকানন্দ কেঁদে লুটায়
শ্যামানন্দ প্রভু কোথা গেলা—হায়,–বিধি মোরে কি করিলা
এবে শূন্য হল মোর সকল সংসার।’’
রসিকানন্দ কেঁদে বরে—আঁধার দেখিয়ে দিনে
প্রভু শ্যামানন্দ বিনে—আঁধার দেখিয়ে দিনে
কার সঙ্গে দেশে দেশে বুলিব ভ্রমিয়া।।’’
নিতাই-গৌর-প্রসঙ্গে—বেড়াইব কার সঙ্গে
কে মোরে লইয়া যাবে শ্রীবৃন্দাবন।।
আর না দেখিব সে চরণ দু’খানি।
এত বলি’ রসিকানন্দ লুটায় ধরণী।।
রসিকের অনুরাগ কহনে না যায়।
যাঁর অনুরাগ শুনি’ পাষাণ মিলায়।।
মোরে দয়া কর প্রভু শ্যামানন্দ-রায়।
দয়ার ঠাকুর তুমি ত্রিভুবনে গায়।।’’
মিলেছি,–ভাই ভাই এক-ঠাঁই—আয়,–প্রাণভরে গাই ভাই
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—আয়,–প্রাণভরে গাই ভাই
জয়,–শ্রীনিবাস নরোত্তম রামচন্দ্র—জয়,–শ্যামানন্দ রসিকানন্দ
যেন,–বিকাই শ্রীগুরু-পদতলে
অবিচারে ভাই ভাই মিলে—যেন,–বিকাই শ্রীগুরু-পদতলে
শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের—শকতি দাও হে
অবিচারে শ্রীগুরুদেবের—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি
তোমাদের চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি
কারে বলব দুঃখের কথা—সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা
তখন জনম হল না—দেখিতে ত’ পেলাম না
প্রাণ,–গৌর-লীলা তার আবেশের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
অতঃপর মহাজনী আক্ষেপ—কীর্ত্তন—
‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর,’’………….ইত্যাদি—
হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে
নিশিদিশি জ্বলছিলাম
কোন-লীলা দেখতে নাহি পেলাম—নিশিদিশি জ্বলছিলাম
হা নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—কৃপা করে দেখা দিলে
এই কালে নীলাচলে—সঙ্গে করে লয়ে গেলে
ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—গৌরলীলা জানাইলে
কিন্তু,–ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে—দেখাবে বলে বলেছিলে
শ্রীমুখে বলেছ তুমি
ত্রিকাল-সত্য গৌরলীলা—শ্রীমুখে বলেছ তুমি
সেই কথা সঙরিয়ে—আজ প্রাণ কেঁদে উঠছে
এই ত’ যাবার সময় জেনে—আজ প্রাণ কেঁদে উঠছে
‘এই ত’ যাবার সময় জেনে’—
ত্রিকাল-সত্য-লীলায় গৌরগণের—এই ত’ যাবার সময় জেনে
শ্রীসীতানাথ-সনে নীলাচলে—এই ত’ যাবার সময় জেনে
কে আমাদের লয়ে যাবে
রথযাত্রা আগত প্রায়—কে আমাদের লয়ে যাবে
আমরা,–আশা করে বলে আছি—কে আমাদের লয়ে যাবে
‘আমরা,–আশা করে বসে অছি’—
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—‘আমরা,–আশা করে বসে আছি
আপন বলতে এ-জগমাঝে—আর আমাদের কে বা আছে
পাগলা প্রভু শ্রীরাধারমণ—ওগো আমার ব্যথার ব্যথী
যোগ্যতা অযোগ্যতা না মেনে—লয়ে যেও নিজ-গুণে টেনে
ভক্ত-সম্মিলন-লীলা—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও
ঝালি-সমর্পণ-লীলা—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন-লীলা—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও
রথাগ্রে কীর্ত্তন-রঙ্গ—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও
পাগলা—প্রভু তোমার পিছে থেকে—ভোগ করিব প্রাণভরে
ঠাকুর শ্রীশ্যামানন্দ—এই কৃপা কর হে
শ্রীগুরু-আনুগত্যে—যেন ভোগ করতে পারি
রথের আগে গৌর-নটন-মাধুরী—যেন ভোগ করতে পারি
হৃদে ধরি’ সেই মাধুরী—যেন ভোগ করতে পারি
‘হৃদে ধরি’ সে মাধুরী’—
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-নটন—হৃদে ধরি’ সেই মাধুরী
যারে দেখি তারে বলি
জপ হর কৃষ্ণ হবে রাম।।’’
গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’