[১৩৫২ সাল ১৬ই কার্ত্তিক শুক্রবার বহরমপুর খাগড়ায় বিভুতিবাবুর উৎসবে অষ্ট-প্রহরের দিনে]
‘‘ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
জপ,–রাম রাম হরে হরে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
রমে রামে মনোরমে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
শ্রীরাধারমণ রাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এ-নাম,–অখিল-রসের ধাম-জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
‘এ-নাম,–অখিল-রসের ধাম’—
অভেদ নাম নামী—এ-নাম,–অখিল-রসের ধাম
‘অভেদ নাম নামী’—
এ-নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
মহামন্ত্র,–নামে করেন অবস্থান
এ-নাম,–ব্রজলীলা-রস-ধাম—মহামন্ত্র,–নামে করেন অবস্থান
পূবর্বরাগ হইতে সম্ভোগ সমৃদ্ধিমান্–মহামন্ত্র,–নামে করেন অবস্থান
ব্রজলীলা-রস-পূর—মহামন্ত্র মহাশূর
অদ্বয়-ব্রহ্ম নন্দনন্দন পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
অনাদির আদি গোবিন্দ পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
পরিপূর্ণ কৃষ্ণ-প্রাপ্তি করতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে’—
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দে—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
ব্রজবাসীগণের মত—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
পুত্র, সখা, প্রাণপতি এই—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
কৃষ্ণ বশ করে অধীন কর্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
ইথে—কাল দেশ নিয়ম নাই সর্ব্বসিদ্ধি হয়।। রে !!
হেলায় শ্রদ্ধায় নিলে নাম—পূরে ভাই মনস্কাম
‘হেলায় শ্রদ্ধায় নিলে নাম’ –
শ্রীগুরু-পদাশ্রয়ে—হেলায় শ্রদ্ধার নিলে নাম
স্বভাব জাগায়ে দেয় রে সুখে
শ্রীগুরু,–পদাশ্রয়ে এই নাম-আশ্রয়ে—স্বভাব জাগায়ে দেয় রে সুখে
পরিপূর্ণ কৃষ্ণ-ভোগের—স্বভাব জাগায়ে দেয় রে সুখে
নামে,–বুক ভরে যায় অভাব মিটায়—স্বভাব জাগায়ে দেয় রে সুখে
চিত্তশুদ্ধি সর্ব্বভক্তি-সাধন উদ্গম।। রে !!
কৃষ্ণ-প্রেমোদ্গম প্রেমামৃত-আস্বাদন। রে !
কৃষ্ণ-প্রাপ্তি সেবামৃত-সমুদ্রে মজ্জ।।’’ রে !!
অভাব ঘুচায়ে স্বভাব দিয়ে—যুগল-সেবা,–সুখ-সমুদ্রে ডুবায়ে দেয় রে
বলেছেন শ্রীকবিরাজ
এই নামের পরিচয়—দিয়েছেন শ্রীকবিরাজ
পাপী হয়ে তত পাপ করিতে না পারে।। রে !!
হেন কৃষ্ণ-নাম যদি লয় বহুবার। রে !
তথাপি না হয় প্রেম না বহে অশ্রুধার।। রে !!
তবে জানি অপরাধ আছয়ে প্রচুর।। রে !
কৃষ্ণ-নাম-বীজ তাহে না হয় অঙ্কুর।।’’ রে !!
অপরাধ থাকিতে—প্রেম দান করেন না
কবিরাজের কথা শুনে
হতাশ আসে প্রাণে—কবিরাজের কথা শুনে
আপরাধ থাক্তে কৃষ্ণ-নামে—প্রেম ত’ পাব না
কেমন করে প্রেম পাব—তবে কি উপায় কর্ব
কৃষ্ণদাস কবিরাজ—বলেছেন আশ্বাস-বাণী
নাম লইতে প্রেম হয় বহে অশ্রুধার।। রে !!
কবিরাজ গুণমণি—দিয়েছেন এই আশ্বাস-বাণী
কলিহত-জীবের তরে—দিয়েছেন এই আশ্বাস-বাণী
আয় ভাই আশ্রয় করি
অদোষদরশী প্রভু—আয় ভাই আশ্রয় করি
নিতাই-গৌর-চরণ হয়—পতিতের একমাত্র আশ্রয়
আজ,–মিলেছি সব ভাই ভাই—আয়,–প্রাণভরে গুণ গাই
শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—আজ,–মিলেছি সব ভাই ভাই
এই পদাঙ্কিত-ভূমিতে—আজ,–মিলছি সব ভাই ভাই
ভাগ্যবতী-সুরধুনী-তীরে—এ-যে পদাঙ্কিত ভূমি রে
আমার,–প্রভুনিতাই—প্রাণগৌরাঙ্গের—এ-যে পদাঙ্কিত-ভূমি রে
আজ,–মিলেছি সব ভাই ভাই—আয়,–প্রাণভরে গুণ গাই
পতিতের একমাত্র গতি—আয় ভাই আমরা নিতাই-গুণ গাই
যার নাম বিশ্বম্ভর—পরতত্ত্ব—সীমা প্রাণ-গৌর
অভিন্ন-তনু-নিত্যানন্দ-দ্বারে—বিতরিলেন নিজ-নাম-প্রেম
আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—প্রচারিলেন নিজ-প্রেমধর্ম্ম
প্রেমাবতার গৌরহরি—প্রচারিলেন নিজ-প্রেমধর্ম্ম
অভিন্ন-তনু-নিত্যানন্দ-দ্বারে—প্রচারিলেন নিজ-প্রেমধর্ম্ম
জগদ্গুরু শ্রীনিত্যানন্দ—আয় সেই,–নিতাই-পদ করি আশ্রয়
সে-যে অখণ্ড-প্রেমের খনি—আমার নিতাই গুণমণি
আমি,–কি জানি গুণ কত বা বাখানি—আমার নিতাই গুণমণি
আমার আমার আমার আমার—আমার নিতাই গুণমণি
আমার নিতাই গুণমণি—যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে গিয়ে—যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
দন্তে,–তৃণ ধরি’ করি যোড়পাণি—যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
দুনয়নে,–বহে ধারা যেন সুরধুনী—যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
তার,–গৌর-প্রেম গঢ়া কলেবর—ভাই রে আমার নিতাই সুন্দর
আমার নিতাই আমার নিতাই—নিতাই আমার,–গোরা-রসে গরগর
জানে না নিতাই আপনি কি পর
গৌর-প্রেম,–মদিরা-পানে হয়ে বিভোর—জানে না নিতাই আপনি কি পর
প্রেম-দিঠে চেয়ে আয় আয় বলে—আচণ্ডালে ধেয়ে কর কোল
তোর,-পাপ-তাপের বোঝা নিয়ে-বলে,-বিনামূলে আমি হব তোর
একবার,–মুখে বল ভাই গৌর গৌর –বলে,–বিনামূলে আমি হব তোর
নিতাইচাঁদের,–দুনয়নে বহে অবিরত লোর—নিতাই আমার,–
শ্রীচৈতন্য-চাঁদের চকোর
আমার নিতাই আমার নিতাই—শ্রীচৈতন্য-চাঁদের চকোর
আমার নিতাই আমার নিতাই—গোরা-পদ্মে মত্ত-মধুকর
প্রেম-মধু-পানে সদাই বিভোর—গোরা-পদ্মে মত্ত-মধুকর
আমার আমার আমার আমার—ভাই রে,–আমার নিতাই নয়ন-তারা
তার,–গৌর-প্রেমে তনু গড়া—ভাই রে,–আমার নিতাই নয়ন-তারা
দুনয়নে বহে শত ধারা—নিতাই আমার,–গৌর-প্রেমে পাগল পারা
গৌর-প্রেম,–মদিরা-পানে হয়ে ভোরা—গৌর-প্রেমে দিক্বিদিক্ হারা
ভাই রে,–নিতাই রঙ্গিয়া আমার
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেম-বিনোদিয়া—ভাই রে,–নিতাই রঙ্গিয়া আমার
আমরি,–গোরা-রসে রসিয়া—ভাই রে,–নিতাই রঙ্গিয়া আমার
আমরি,–গৌর-প্রেমে উন্মাদিয়া—ভাই রে,–নিতাই রঙ্গিয়া আমার
গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—নিশিদিশি বেড়ায় কাঁদিয়া
এই সুরধুনীর কূল দিয়া—নিশিদিশি বেড়ায় কাঁদিয়া
আচণ্ডালে গৌর ভজাইয়া—নিশিদিশি বেড়ায় কাঁদিয়া
আমার,–নিতাই কাঁদে ফুলিয়া ফুলিয়া
বাহু পসারি, আচণ্ডালে কোলে তুলিয়া—আমার,–নিতাই কাঁদে ফুলিয়া ফুলিয়া
আয় আয় বলি, পতিতেরে বুকে ধরিয়া—আমার,–নিতাই কাঁদে ফুলিয়া ফুলিয়া
কত শত, –ধারা বহে মুখ-বুক-বহিয়া—আমার,–
আমার প্রভু নিত্যানন্দ
আমার আমার আমার আমার—আমার প্রভু নিত্যানন্দ
অখণ্ড-পরমানন্দ—আমার প্রভু নিত্যানন্দ
ঐ গরবে বুক ভরা—আমার,–প্রভুর প্রভু নিত্যানন্দ
নিতাই-দাসের দাস মুঞি—ঐ গরবে বেড়াই সদাই
আমি,–কি জানি গুণ কত বা বাখানি—আমার নিতাই গুণমণি
শ্রীগুরু কৃপার খনি—যা’ বলায় তাই বলি বাণী
নৈলে,–নিতাই-গুণ কি বা জানি—যা বলায় তাই বলি বাণী
অনন্ত-ব্রহ্মাণ্ড নিতাইএর প্রকাশ
নিতাইএর সত্তায় জগতের সত্তা—অনন্ত –ব্রহ্মাণ্ড নিতাইএর প্রকাশ
নিতাইএর সত্তায় জগতের সত্তা—এ-ত’,–নিতাই-চাঁদের স্থূলতত্ত্ব
তাই বল্ছেন ঠাকুর-বৃন্দাবন
আমার নিতাই-রহস্য-কথা—বলছেন ঠাকুর-বৃন্দাবন
বৃন্দাবন বলিছেন বাণী
যা বলান্ গৌর-গুণমণি—বৃন্দাবন বলিছেন বাণী
আতি-গূঢ় নিতাই-রহস্য—নৈলে,–কে বা জানে কে বা বল্বে
শ্রীচৈতন্য যারে জানায় সে জানিতে পারে।। রে !!
অতি-গূঢ় নিতাই-রহস্য—বলিছেন প্রভু শ্রীচৈতন্য
ঠাকুর-বৃন্দাবনের মুখে—বলিছেন প্রভু শ্রীচৈতন্য
নৈলে,–নিতাই-কথা কে বা পায়
এই,–গুঢ়-কথা কে বা পায়
বল্ছেন ঠাকুর-বৃন্দাবন
নিতাই-কথা সেই ত’ কয়
যে নিতাইএর অভিন্ন-তনু হয়—নিতাই-কথা সেই ত’ কয়
যার বুকে নিতাই বিলসয়—নিতাই-কথা সে ত কয়
ঠাকুর-বৃন্দাবনের মুখে—জানাইছেন প্রাণ-গৌরহরি
অতি-গূঢ় নিতাই-রহস্য—জানাইছেন প্রাণ-গৌরহরি
গৌরাঙ্গ-বিলাসের তনু—চাঁদ,–নিতাই আমার সকলি জানে
গৌরাঙ্গে সুখ দিবার লাগি—যখন যেমন তেমনি হয় রে
ভাবনিধিকে ভোগ দিবার তরে—যখন যেমন তেমনি হয় রে
শ্রীসেবা-বিগ্রহ নিতাই—যখন যেমন তেমনি হয় রে
গৌরাঙ্গ-সুখের খনি নিতাই—যখন যেমন তেমনি হয় রে
প্রাণগৌর যখন মানিনী হয়—নিতাই—নাগর হয়ে তার পায়ে ধরে রে
‘প্রাণগৌর যখন মানিনী হয়’—
ভাবিনীর ভাবাবেশে—প্রাণ-গৌর যখন মানিনী হয়
গললগ্নীকৃত-বাসে—নিতাই,–নাগর হয়ে তার পায়ে ধরে রে
অপরাধ ক্ষমা কর বলে—নিতাই,–নাগর হয়ে তার পায়ে ধরে রে
‘অপরাধ ক্ষমা কর বলে’—
দাস দোষী তা কি বা কর্বে—অপরাধ ক্ষমা কর বলে
আবার,–কখন গিয়ে দাঁড়ায় বামে
চাঁদ,–নিতাই আমার সকলি জানে—আবার,–কখন গিয়ে দাঁড়ায় বামে
সকল রসের গুরু।। রে !
যে যাহা চায়, তারে তাহা দেয়,
বাঞ্ছা-কল্পতরু।। রে !!
রাধার সমান, কৃষ্ণে করে মান,
সতত থাকয়ে সঙ্গে। রে !
নিশিদিশি নাই, ফিরয়ে সদাই,
কৃষ্ণকথা-রসে-রঙ্গে।। রে !!
বসি বাম-পাশে, মৃদু মৃদু হাসে,
প্রাণনাথ বলি ডাকে।।’’ রে !!
কতই না গরব করে—আমার,–প্রাণনাথ বলি ডাকে রে
চেয়ে,–আড়-নয়নে গৌর-পানে—আমার,–প্রাণনাথ বলি ডাকে রে
‘চেয়ে,–আড়-নয়নে গৌর-পানে’—
আধ-বদনে ঘোমটা টেনে—চেয়ে,–আড়-নয়নে গৌর-পানে
প্রধানা-নাগরী নিতাই—আমার,–প্রাণনাথ বলি ডাকে রে
‘প্রধানা-নাগরী নিতাই’—
রসরাজ-গৌরাঙ্গ-নাগরের—প্রধানা-নাগরী নিতাই
তেমতি করিয়া থাকে।।’’ রে !!
‘‘নাগর নিতাই, নাগরী নিতাই, নিতাই-কথা সে কয়।।’’ রে !!
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
নিতাই-চাঁদের অতি-গূঢ়ত্ব—অনুভব কর ভাই রে
নিতাই-চাঁদের অতি-গূঢ়ত্ব—শ্রীমুখে বলিলেন শচীসুত
পানিহাটি—গ্রামে বসে—আবেশে প্রাণ-গৌর ভাষে
‘‘রাঘব তোমারে আমি নিজ-গোপ্য কই। হে !
আমার দ্বিতীয় নাই নিত্যানন্দ বই।।’’ হে !!
আবেশে বলেন লোচন মুখে—প্রাণ,–গৌরের এই কথা ধরে বুকে
অভিন্ন-চৈতন্য-তনু—আমার,–নিতাই-সুন্দর হয়
আগে,–গৌর-স্বরূপ অনুভব কর
তবে নিতাই বুঝ্তে পার্বে—আগে,–গৌর-স্বরূপ অনুভব কর
তার অভিন্ন-তনু নিতাই
তবে নিতাই কে বা হল
প্রাণ খুলে ভাই বল—তবে নিতাই কে বা হল
রাই-কানু-মিলিত-মূরতি— সেই গৌরের যদি অভিন্ন হয়
তোমরা বললে বলতে পার
দুই যদি রাধাকৃষ্ণ
পরস্পরের কি বা ক্রিয়া
গৌরাঙ্গ-স্বরূপ ভোক্তা
রাই-কানু-মিলিত–গৌরাঙ্গ-স্বরূপ ভোক্তা
গৌর-স্বরূপে রাধাকৃষ্ণ—নিরন্তর ভোগ করে
নিতাই-স্বরূপে রাধাকৃষ্ণ—গৌর-স্বরূপে ভোগ দেয় রে
আর কি কেউ আছে জগতে
যুগল বিনা যুগলে সুখ দিতে—আর কি কেউ আছে জগতে
ঠাকুর-বৃন্দাবনের মুখে—তাই বলছেন শ্রীচৈতন্য
নিত্যানন্দ-রহস্য—তাই বলছেন শ্রীচৈতন্য
‘‘সাধন নিতাই, ভজন নিতাই, নিতাই নয়ন-তারা।’’ রে !
আমার,–নিতাই নয়ন-তারা রে
যা’ বিহনে হই দিশে হারা—আমার,–নিতাই নয়ন-তারা রে
শ্রীগৌড়মণ্ডল-বাসী—সবে মিলে কৃপা কর গো
গৌর-পদাঙ্কিত-ভূমি-নিবাসী—সবে মিলে কৃপা কর গো
এই ভূমি-নিবাসী নর-নারী—সবে মিলে কৃপা কর গো
দেখ্ব আমি আঁখি মেলে
শ্রীগুরু-কৃপা-বলে—দেখ্ব আমি আঁখি মেলে
জগভরি আমার নিতাই খেলে—দেখ্ব আমি আঁখি মেলে
‘জগভরি আমার নিতাই খেলে’—
বিলাসী গৌর করি কোলে—জগভরি আমার নিতাই খেলে
শ্রী,–রাধার মাধুরী, অনঙ্গ-মঞ্জরী, নিতাই নিতু সে সেবে। রে !
কোটি শশধর, বদন সুন্দর, সখা-সখী বলদেবে।।’’ রে !!
‘‘নিতাই-সুন্দরে, যোগপীঠে ধরে, রত্ন-সিংহাসন সেজে।’’ রে !!
রত্ন-সিংহাসন সেজে—ভাই রে আমার নিতাই সে-যে
সেবিতে গোরা-রসবাজে—সেজেছে নিতাই কত-সাজে
সকলই যে নিতাই আমার—সেজেছে নিতাই কত-সাজে
গৌরের যত সেব্য-দ্রব্য—সেজেছে নিতাই কত-সাজে
ব্রজমণ্ডল এই গৌড়মণ্ডল—বিহার,–ভূমিরূপে নিতাই আমার
বিলাসী গৌর খেল্বে বলে—বিহার,–ভূমিরূপে নিতাই আমার
শ্রীযমুনা এই সুরধুনী—স্ত্রোতস্বিনী রূপে নিতাই আমার
স্নান, পান, কেলি কর্বে বলে—স্রোতস্বিনীরূপে নিতাই আমার
মণিমন্দির নিতাই আমার
গৌর-গোবিন্দ বিলসিবে বলে—মণিমন্দির নিতাই আমার
গৌর-গোবিন্দ বিলসিবে বলে—পুষ্প-শয্যা নিতাই আমার
গৌর-গোবন্দি শুতিবে বলে—পুষ্প-শয্যা নিতাই আমার
গৌরের যত সেব্য-দ্রব্য—সকলই যে নিতাই আমার
বসন, ভূষণ, ভোজ্য, পেয়—সকলই যে নিতাই আমার
নিতাই অনন্ত-রূপ ধরে—প্রাণ-গৌরাঙ্গের সেবা করে
নিতাই-বুকে গোরার শয়ন—নিতাই ওড়ন নিতাই পাড়ন
অপরূপ রহস্য-কথা
একবার ভাই কর রে স্মরণ
হৃদে ধরি শ্রীগুরু-চরণ—একবার ভাই কর রে স্মরণ
নিতাই-চাঁদের খেলা—একবার ভাই কর রে স্মরণ
আলালনাথে গূঢ় লীলা—একবার ভাই কর রে স্মরণ
রাধিকা-ভাবিত-মতি গৌর
স্নান-যাত্রার পরদিনে
জগন্নাথ-শ্যামের অদর্শনে
অতি-ব্যাকুলিত-মনে
বিরহ-বিধুরা গৌর-কিশোরী-অতি-ব্যাকুলিত-মনে
প্রাণে প্রাণে জানিলেন
সেবা-শকতি নিত্যানন্দ—প্রাণে প্রাণে জানিলেন
প্রাণ-গৌর যাবেন যেখানে—প্রাণে প্রাণে জানিলেন
কে ধর্বে এই বিরহ-ভাব
ধরণী যে ফেটে যাবে
ফেটে যাবে জ্বলে যাবে
অস্তিত্ব লোপ হবে—জ্বলে পুড়ে খাক্ হবে
সেবা-বিগ্রহ শ্রীনিত্যানন্দ—তাই,–আগে হতে ছুট্লেন
সবাকার অলখিতে—গেলেন শ্রীআলালনাথে
আলালনাথের সিংহদ্বারে—হইলেন বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড
দেখিতে কঠিন স্বভাবে কোমল—হইলেন বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড
গৌরের দণ্ডবতের পরিমাণ—হইলেন বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড
বিরহ,–ভাবের ভার ধরিবার লাগি—হইলেন বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড
শ্যামের বিরহিণী—ভাবাবেশে গৌর গিয়ে
আলালনাথের দ্বারে গিয়ে—করিলেন দণ্ডবৎ
প্রস্তর,–খণ্ডরূপী নিতাই-বুকে—করিলেন দণ্ডবৎ
গৌরাঙ্গ-বক্ষ-পরশে—গলে গেল রে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের বিরহ-তাপে—পাষাণ গলিয়া গেল
বিরহিণী-গৌর হৃদে ধরে—পাষাণ গলিয়া গেল
দণ্ডবৎ-চিহ্ন-রইল—পাষাণ গলিয়া গেল
আলালনাথের সিংহদ্বারে—অদ্যাপি তার নিদর্শন আছে
প্রস্তর গলিয়া বিশেষ-ভাবে—সর্ব্বাঙ্গ-চিহ্ন পড়িয়াছে
শ্রীকৃষ্ণ-বিরহিণী—গৌর বিলসিল সুখে
প্রস্তর,–খণ্ডরূপী নিতা-বুকে—গৌর বিলসিল সুখে
ত
কি বলব নিতাই-রহস্য
যা বলায় তাই ত’ বলি বাণী
শ্রীগুরুদেব মহাদানী—যা’ বলায় তাই ত’ বলি বাণী
রসের,–খনি হয়েও রসের কাঙ্গাল—এ রহস্য বলেছেন লোচন
অনুভব কর ভাই রে
রসের,–খনি কেন কাঙ্গাল হয়—অনুভব কর ভাই রে
রস,–দিয়ে দিয়ে ওর না পেয়ে—রসের,–খনি হয়েও রসের কাঙ্গাল
‘রস,–দিয়ে দিয়ে ওর না পেয়ে’—
রসদাতা নিতাই—রস,–দিয়ে দিয়ে ওর না পেয়ে
রস-পিপাসু প্রাণ গৌরাঙ্গ—রস,–দিয়ে দিয়ে ওর না পেয়ে
রস,–দিয়ে দিয়ে ওর না পেয়ে—আপন-মনে গণে নিতাই
রস-রাজ্যের এই ত’ স্বভাব
পূর্ণ হয়েও মানে অভাব—রস-রাজ্যের এই ত’ স্বভাব
আমাতে আর রস নাই
কই,–পিপাসা ত’ মিটে নাই
রস-পিপাসু প্রাণ গৌরাঙ্গের—কই,–পিপাসা ত’ মিটে নাই
কোথা গেলে রস পাব—কেমনে পিয়াস মিটাব
রসের ভাণ্ডার হয়েও—রসের কাঙ্গাল হইল নিতাই
ও-ত’,–নাম-প্রেম-প্রচার নয়
সে-ত’ বাহিরের কথা
নাম-প্রেম-প্রচার হয়
এই লীলার আনুসঙ্গে—নাম-প্রেম-প্রচার হয়
অনুসঙ্গে নাম-প্রেম-দান
উদ্দেশ্য,-নিজ-মাধুরী-আস্বাদন—আনুসঙ্গে নাম-প্রেম-দান
আমার নিতাই-চাঁদের—ও-ত’,–নাম-প্রেম-দান নয়
জগজীবের দ্বারে দ্বারে—নিতাই রস ভিক্ষা করে
জগ-মাঝে সেই-রস—নিতাই কোথায় পাবে বল
সেই ত’ সেই রস পায়
যে দেখে নিত্যানন্দ-রায়—সেই ত’ সেই রস পায়
‘যে দেখে নিত্যানন্দ-রায়’—
যারে দেখে নিত্যানন্দ-রায়—যে দেখে নিত্যানন্দ—রায়
আমার নিতাই চেয়ে দেখে
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—আমার নিতাই চেয়ে দেখে
আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
এ-ত, রস ভিক্ষা হয়—এ-ত’—নাম-প্রেম-প্রচার নয়
বলে,–দে-রে আমায় রস দে-রে
দিব রস,–রস-পিপাসু-গৌরাঙ্গ-রে—বলে, দে-রে আমায় রস দে-রে
বসন নিতাই, ভূষণ নিতাই, বিলসে সখীর মাঝে।।’’ রে !!
ঠাকুর-বৃন্দাবন বলেন—নিতাই বিলসে সখীর মাঝে
নিগূঢ় নিতাই-রহস্য—অনুভব কর ভাই রে
বলেছেন চৈতন্য-গোসাঞি
ঠাকুর-বৃন্দাবনের শ্রীমুখে—বলেছেন চৈতন্য-গোসাঞি
নিতাই-নিগূঢ়-রহস্য—বলেছেন চৈতন্য-গোসাঞি
নিতাই আমার কে হয়
সখীগণের মাঝে কার বসতি
তা হলে নিতাই আমার শ্রীমতী—সখীগণের মাঝে কার বসতি
ঠাকুর-বৃন্দাবন কয়—এ-ত’ আমার কথা নয়
কি কহিব আর, নিতাই সবার, আঁখি-মুখ-সর্ব্ব-অঙ্গ।’’ রে !!
তা-ত নয় তা-ত নয়
আঁখি-মুখ-সবর্ব-অঙ্গ
নিতাই হয় প্রাণ-গৌরাঙ্গের—আঁখি-মুখ-সবর্ব-অঙ্গ
নিতাই-উপাদানে গৌর গঠিত—এই কথা সুনিশ্চিত
নিতাই নিতাই, নিতাই নিতাই, নিতাই নূতন-রঙ্গ।।’ রে !!
ঠাকুর-বৃন্দাবনের মুখে—এ-ত’ নয় ভাই ছন্দ-মিলন
পাঁচবার নিতাই কথন—এ-ত’ নয় ভাই ছন্দ-মিলন
এ-ত’ নয় ভাই ছন্দ-মিলন—নিতাই-নিগূঢ়-রহস্য-বর্ণন
পঞ্চ তত্ত্বময়—আমার—নিতাই-সুন্দর হয়
পঞ্চ রসের খনি—আমার নিতাই গুণমণি
নিগূড়—গৌরাঙ্গ-লীলায়—চাঁদ,–নিতাই আমার নূতন–রঙ্গ
প্রাণ,–গৌরহরিরসর্ব্ব-অঙ্গ—চাঁদ,–নিতাই আমার নূতন-রঙ্গ
এ-যে,–গৌর-বিলাসিনীর বুকে গাঁথা—এ-কি,–কইবার কথা কইব কোথা
রঙ্গিয়া-গৌরাঙ্গ সুখ দিতে—নিতাই আমার নূতন-রঙ্গ
আর সব তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ—নিতাই,–অন্তরঙ্গ-খেলার অঙ্গ
নিতাই বলিয়া, দু’বাহু তুলিয়া, চলিব বরজ-পুরে।’’ রে !
যেখানে হল ব্রজপুর—নিতাই বলে যাব সেখানে
ব্রজ পূর্ণ হল যেখানে—নিতাই বলে যাব সেখানে
যেখানে,–অপূর্ণ-সাধ হল পূর্ণ—সেই ত পূর্ণ-ব্রজ বটে
‘যেখানে,–অপূর্ণ-সাধ হল পূর্ণ’—
প্রাণ-রাধা-রাধারমণের—যেখানে,–অপূর্ণ-সাধ হল পূর্ণ
পূর্ণ-ব্রজ নদীয়া বটে
যেখানে যুগল এক ঘটে—পূর্ণ-ব্রজ নদীয়া বটে
যেখানে,–একাধারে যুগ-মাধুরী—সেই ত’ পূর্ণ-ব্রজপুরী
কখনও নয় ছড়াছড়ি-যেখানে,–নিরন্তর জড়াজড়ি
যেখানে,–মূরতিমন্ত প্রেমবৈচিত্ত্য—পূর্ণ-ব্রজ নদীয়া ত’
যেখানে,–নিত্য-মিলনে নিত্য-বিরহ-পূর্ণ-ব্রজ নদীয়া সেই
ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ—প্রকটরূপে মধুর-নদীয়া
যেখানে,–গৌর-স্বরূপ বনেছিল
মহা,–রাসরসের পরিণতিতে—যেখানে,–গৌর-স্বরূপ বনেছিল
দুই-জনে এক হয়ে—যেখানে,–গৌর-স্বরূপ বনেছিল
সেখানে কিন্তু খেলা নাই—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
মধুর,–নদীয়া তার খেলার ভূমি—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
নিত্য-মিলনে নিত্য-বিরহ-নদীয়াতে অহরহ
নয়ন-ভরে দেখব
পরিণতি-স্বরূপের খেলা—নয়ন ভরে দেখ্ব
সঙ্কীর্ত্তন-রাসরঙ্গ—নয়ন ভরে দেখ্ব
যাতে,–সব হইল একাকার—দেখব গৌরাঙ্গ-বিহার
একা,–পুরুষ কৃষ্ণ আর সব নারী—যাতে,–সেই কথা সার্থক হল
জগজীবের,–আবরণ খুলে গেল—সবাই হইল গোপনারী
হলাদিনী বৃত্তি জীব—জীব নিত্য রাধাদাসী
গৌরের,–সঙ্কীর্ত্তন-রাসরঙ্গে—সেই স্বরূপ জাগিল
স্বরূপ-জাগান –স্বরূপ হেরি—সবাই হইল গোপনারী
একলা পুরুষ গৌরহরি—সবাই হইল গোপনারী
মধুর-নদীয়া-লীলায়—বিশ্বম্ভর-নাম পূর্ণ হল
নয়ন-ভরে দেখব
শ্রীগুরু-আনুগত্যে—নয়ন-ভরে দেখ্ব
সেই মধুর-গৌরাঙ্গ-বিহার—নয়ন-ভরে দেখ্ব
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’