ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
এই মধুর-নীলাচলে—মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলা
কিশোরী-ভাবিত-মতি—ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার
আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা
গুণ্ডিচায় জগন্নাথ পেয়ে—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোবা
এই জগমোহন দাঁড়াইয়ে—করিছেন আক্ষেপ-উক্তি
আক্ষেপ-অনুরাগে ভোর—আমার,–গৌরাঙ্গ-কিশোরী
নিজ-পারিষদগণ সাথ।।
বিভোর হইয়া গোপীভাবে।
কহে কিছু করিয়া আক্ষেপে।।’’
গুণ্ডিচায় জগন্নাথ হেরি’—আমার,–গৌরাঙ্গ-কিশোরী
জগন্নাথের বদন হেরি’—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা
তোমার অদর্শনে প্রাণে মরি—ওহে আমার পরাণ-বঁধু
উলটিয়া না চাহ তুমি ফিরি।।’’
আমি তোমায় না দেখিলে মরি—তুমি ফিরেও তো চাও না
আমার তোমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে
‘‘করিলে পিরীতিময় ফাঁদ।’’
আকাশের চাঁদ হাতে দিলে—প্রথম মিলন-কালে
আকাশের চাঁদ হাতে দিলে—সরলা অবলা পেয়ে হে
হাতে দিলা আকাশেরই চাঁদ।।’’
কিশোরী আমি তোমারই বলে—আকাশের চাঁদ হাতে দিলে
‘কিশোরী আমি তোমারই বলে’—
আমি আর কারো নই—কিশোরী আমি তোমারই বলে
এবে তোমা দেখিতে সন্দেশ।
কহে গোরা হইয়া আবেশ।।’’
তখন,–আমায় খুঁজে বেড়াইতে তুমি—এখন,–খুঁজেও দেখা পাই না হে
আমার তেমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে
তখন তুমি,–খুঁজে খুঁজে বেড়াতে—তোমায়,–খুঁজেও দেখা পাই না হে
আমার দর্শন লাগি’—তখন তুমি বনে বনে ফিরিতে
আমার কেশের বেশের লাগি’—বনে বনে ফুল তুলিতে
পরশিত—বায়ু পরশের লাগি’—অনুকূল-পথে দাঁড়াইতে
আমি,–যদি নাহিতাম আগিলা-ঘাটে—তুমি,–পিছিলা-ঘাটে নাহিতে হে
পরশিত-বারি পরশের লাগি’—তুমি,–পিছিলা-ঘাটে নাহিতে হে
বসনে বসন মিলিবে বলে—এক-রজকে দিতে হে
আমার,–তেমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে
কহে গোরা হইয়া আবেশে।।’’
বলিতে বলিতে নয়ন-ধারায়—মুখ বুক ভেসে যায়
বঁধু কেন এমন হলে বলে—মুখ বুক ভেসে যায়
গৌর ভাবে নয়ন-জলে—বলে,–বঁধু কেন এমন হলে
আমার,–তেমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে
আমি,–কার কিবা করেছিলেন—কেবা বাদ সাধ্লে
আমার,–বঁধুকে পর করে দিলে—কেবা বাদ সাধ্লে
ছল ছল অরুণ নয়ান।
সরস-বিরস বয়ান।।’’
এই জগমোহনে দাঁড়াইয়ে—নয়ন-ধারায় ভেসে যায়
বঁধু কেন এমন হলে বলে—নয়ন-ধারায় ভেসে যায়
সরস-বিরস বয়ান।।
অপরূপ গৌরাঙ্গ-বিলাস।’’
এই গুণ্ডিচা-মন্দিরে—এই জগন্নাথের আগে
কহে কিছু নরহরি দাস।।’’
ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা
এই জগন্নাথের বদন হেরে—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা
অবলার প্রাণ নিতে নাহি তোমা হেন।।’’
সরলা-অবলা বধিতে—বঁধু,–তুমি বড় ভাল জান হে
রাতি কৈনু দিবস, দিবস কৈনু রাতি।’’
রাতি দিবস, দিবস রাতি কৈনু—বঁধু,–তুমি আমার হবে বলে
বুঝিতে নারিনু বঁধু ! তোমার পিরীতি।।
ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর।
পর কৈনু আপন, আপন কৈনু পর।।’’
ঘর বন, বন ঘর কৈনু—বঁধু তোমায় পাব বলে
‘ঘর বন, বন ঘর কৈনু’—
পর আপন, আপন পর কৈনু—ঘর বন, বন ঘর কৈনু,
এখন,–তুমি যদি বঁধু মোরে নিদারুণ হও।’’
পর আপন, আপন পর করেছি—তোমার লাগি বন ঘর করেছি
মরিব তোমার আগে দাঁড়াইয়া রও।।’’
বঁধু, তুমি যদি নিদারুণ হলে—এ প্রাণ আর রাখিব না হে
বাশুলি আদেশে দ্বিজ-চণ্ডীদাসে কয়।
পরের লাগিয়া কি আপন পর হয়।।’’
গৌরাঙ্গ-কিশোরী আমার—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা
জগন্নাথের আগে দাঁড়ায়ে—এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি
ডাকিয়া সুধায় মোরে হেন জন নাই।।
অনুক্ষণ গৃহে মোরে গঞ্জয়ে সকলে।’’
আমি,–কেমন ঘরে বাস করি—পরাণ বঁধু তুমি তো সকলি জান
নিশ্চয় জানিনু মুই ভুখিমু গরলে।’’
তোমা লাগি’ সহি গুরু-গঞ্জনা-বঁধু,–তুমি যদি চেয়ে দেখিলে না
সব ছেড়ে তোমার শরণ নিলাম—বঁধু,–তুমি যদি বিমুখ হলে
মোর আগে দাঁড়াও বঁধু দেখি চাঁদমুখ।’’
এ পরাণ আর না রাখিব—তোমার মুখ দেখি’ প্রাণ ত্যজিব
ও মুখের লাগি সবই গেছে—তোমার মুখ দেখি’ প্রাণ ত্যজিব
খাইতে সোয়াস্তি নাই নাহি টুটে ভুখ্।
কে মোর ব্যথিত আছে কারে কব দুঃখ।।’’
কে আমার ব্যথিত আছে—আমার দুঃখের কথা কারে বলিব
পরের লাগি কেবা প্রাণ ছাড়িবারে চায়।।’’
গৌরাঙ্গ-কিশোরী আমার—এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি
এই গুণ্ডিচায় জগন্নাথের আগে—এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি
এই সেই জগন্নাথ—এই সেই গুণ্ডিচা—মন্দির
আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা—কোথায় আমরা প্রাণগোরা
হা গৌর প্রাণ গৌর—আজ একবার দেখা দাও
বড় আশা করে এসেছি মোরা—আজ একবার দেখা দাও
‘বড় আশা করে এসেছি মোরা’—
শ্রীগৌড়মণ্ডল হতে—বড় আশা করে এসেছি মোরা
বড় সাধ দেখ্ব বলে
শ্রীগুরু-মুখে শুনে অবধি—বড় সাধ দেখ্ব বলে
একবার দেখাও হে
কোথা স্বরূপ রামরায়
প্রাণগৌর লয়ে আছ কোথায়—কোথা স্বরূপ রামরায়
ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না
তোমাদের গৌর তোমাদেরই থাক্বে—ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না
চিতচোরা মুরতিখানি—আমরা একবার দেখ্ব
তবে কি গৌর দেখাবে না—কৈ,–কেউ তো কথা কহিলে না
কে,–গৌর সন্ধান বলে দিবে—আর কার কাছে যাব রে
কোথায় আছ শান্তিপুরনাথ—কোথায় আছ আমার প্রভু নিতাই
প্রাণগৌর লয়ে কোথায় আছ—কোথায় আছ আমার প্রভু নিতাই
প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও
কোথায় আমার প্রভুনিতাই—প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও (মাতন)
আর,–কার কাছে যাব রে
কেবা গৌর দেখাইবে—আর, কার কাছে যাব রে
তোমার,–সে মূরতি কোথায় আছে—বল বল নীলাচলনাথ
‘সেই মূরতি কোথায় আছে’—
শ্রীরাধাভাবে বিভাবিত—সেই মূরতি কোথায় আছে
কৈ,–কথা তো কহিছ না
তবে কি গৌর দেখাবে না—কৈ,–কথা তো কহিছ না
আমার বলিতে আর কে আছে
আমাদের এই জগমাঝে—আমার বলিতে আর কে আছে
কোথা প্রাণের রাধারমণ
নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—কোথা প্রাণের রাধারমণ
কে গৌর তার কিবা লীলা—আমরা,–কিছুই তো জান্তাম না
সংসার-কূপ হতে টেনে তুলে—কৃপা করে জানাইলে
ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—প্রাণগৌর-লীলা জানাইলে
এই মধুর—নীলাচলে এনে—গৌরলীলা ভোগ করালে,
ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে—দেখাব বলে বলেছিলে
তোমার প্রাণগৌর লয়ে—লুকাইয়ে কর্ছ খেলা
এই মধুর নীলাচলে—লুকাইয়ে কর্ছ খেলা
প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও
পাগলা প্রভু রাধারমণ—প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও।
শ্রীগুরুগৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদি-পটে এঁকে লব
ভাই ভাই এক প্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াইব
পাগলা প্রভু তোমায় হৃদে ধরে—পাগল লয়ে বেড়াইব
যারে দেখ্ব তারে বল্ব
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘গৌরবরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।’’
বোল হরিবোল, গৌরহরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাইগৌরহরিবোল’’