শ্রীশ্রী মন্মহাপ্রভুর আক্ষেপানুরাগ কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি


(শ্রীশ্রীগুণ্ডিচা–মন্দিরে)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাইগৌর-হরিবোল
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলা

এই মধুর-নীলাচলে—মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলা

ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার

কিশোরী-ভাবিত-মতি—ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার

এই গুণ্ডিচার জগন্নাথ পেয়ে
আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা

গুণ্ডিচায় জগন্নাথ পেয়ে—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোবা

করিছেন আক্ষেপ-উক্তি

এই জগমোহন দাঁড়াইয়ে—করিছেন আক্ষেপ-উক্তি

‘‘দেখি’ গোরা নীলাচলনাথে।’’

আমার,–গৌরাঙ্গ-কিশোরী

আক্ষেপ-অনুরাগে ভোর—আমার,–গৌরাঙ্গ-কিশোরী

‘দেখি’ গোরা নীলাচলনাথে।
নিজ-পারিষদগণ সাথ।।
বিভোর হইয়া গোপীভাবে।
কহে কিছু করিয়া আক্ষেপে।।’’

আমার,–গৌরাঙ্গ-কিশোরী

গুণ্ডিচায় জগন্নাথ হেরি’—আমার,–গৌরাঙ্গ-কিশোরী

আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা

জগন্নাথের বদন হেরি’—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা

‘‘বলে,–আমি তোমা না দেখিলে মরি।’’

ওহে আমার পরাণ-বঁধু

তোমার অদর্শনে প্রাণে মরি—ওহে আমার পরাণ-বঁধু

‘‘আমি তোমা না দেখিলে মরি।
উলটিয়া না চাহ তুমি ফিরি।।’’

তুমি ফিরেও তো চাও না

আমি তোমায় না দেখিলে মরি—তুমি ফিরেও তো চাও না

কেন এমন বা হল হে

আমার তোমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে
‘‘করিলে পিরীতিময় ফাঁদ।’’

প্রথম মিলন-কালে

আকাশের চাঁদ হাতে দিলে—প্রথম মিলন-কালে

সরলা অবলা পেয়ে হে

আকাশের চাঁদ হাতে দিলে—সরলা অবলা পেয়ে হে

‘‘করিলে পিরীতিময় ফাঁদ ।
হাতে দিলা আকাশেরই চাঁদ।।’’

আকাশের চাঁদ হাতে দিলে

কিশোরী আমি তোমারই বলে—আকাশের চাঁদ হাতে দিলে
‘কিশোরী আমি তোমারই বলে’—
আমি আর কারো নই—কিশোরী আমি তোমারই বলে

আকাশের চাঁদ হাতে দিলে

‘‘হাতে দিলা আকাশের চাঁদ।
এবে তোমা দেখিতে সন্দেশ।
কহে গোরা হইয়া আবেশ।।’’

এখন,–খুঁজেও দেখা পাই না হে

তখন,–আমায় খুঁজে বেড়াইতে তুমি—এখন,–খুঁজেও দেখা পাই না হে

কেন এমন বা হলে হে

আমার তেমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে

তোমায়,–খুঁজেও দেখা পাই না হে

তখন তুমি,–খুঁজে খুঁজে বেড়াতে—তোমায়,–খুঁজেও দেখা পাই না হে

তখন তুমি বনে বনে ফুল ফিরিতে

আমার দর্শন লাগি’—তখন তুমি বনে বনে ফিরিতে

বনে বনে ফুল তুলিতে

আমার কেশের বেশের লাগি’—বনে বনে ফুল তুলিতে

অনুকূল-পথে দাঁড়াইতে

পরশিত—বায়ু পরশের লাগি’—অনুকূল-পথে দাঁড়াইতে

তুমি,–পিছিলা-ঘাটে নাহিতে হে

আমি,–যদি নাহিতাম আগিলা-ঘাটে—তুমি,–পিছিলা-ঘাটে নাহিতে হে
পরশিত-বারি পরশের লাগি’—তুমি,–পিছিলা-ঘাটে নাহিতে হে

এক-রজকে দিতে হে

বসনে বসন মিলিবে বলে—এক-রজকে দিতে হে

কেন এমন বা হলে হে

আমার,–তেমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে

‘‘এবে তোমা দেখিতে সন্দেশ।
কহে গোরা হইয়া আবেশে।।’’

মুখ বুক ভেসে যায়

বলিতে বলিতে নয়ন-ধারায়—মুখ বুক ভেসে যায়
বঁধু কেন এমন হলে বলে—মুখ বুক ভেসে যায়

বলে,–বঁধু কেন এমন হলে

গৌর ভাবে নয়ন-জলে—বলে,–বঁধু কেন এমন হলে

(মাতন)
কেন এমন বা হলে হে

আমার,–তেমন বঁধু—কেন এমন বা হলে হে

কেবা বাদ সাধ্‌লে

আমি,–কার কিবা করেছিলেন—কেবা বাদ সাধ্‌লে
আমার,–বঁধুকে পর করে দিলে—কেবা বাদ সাধ্‌লে

‘‘কহে গোরা হইয়া আবেশ।।
ছল ছল অরুণ নয়ান।
সরস-বিরস বয়ান।।’’

নয়ন-ধারায় ভেসে যায়

গৌরাঙ্গ-কিশোরী আমার—নয়ন-ধারায় ভেসে যায়
এই জগমোহনে দাঁড়াইয়ে—নয়ন-ধারায় ভেসে যায়
বঁধু কেন এমন হলে বলে—নয়ন-ধারায় ভেসে যায়

(মাতন)

‘‘ছল ছল অরুণ নয়ান।
সরস-বিরস বয়ান।।
অপরূপ গৌরাঙ্গ-বিলাস।’’

এই জগন্নাথের আগে

এই গুণ্ডিচা-মন্দিরে—এই জগন্নাথের আগে

‘‘অপরূপ গৌরাঙ্গ-বিলাস।
কহে কিছু নরহরি দাস।।’’

আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা

ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা
এই জগন্নাথের বদন হেরে—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা

‘‘বলে,–কি মোহিনী জান বঁধু কি মোহিনী জান।
অবলার প্রাণ নিতে নাহি তোমা হেন।।’’

বঁধু,–তুমি বড় ভাল জান হে

সরলা-অবলা বধিতে—বঁধু,–তুমি বড় ভাল জান হে

‘‘অবলার প্রাণ নিতে নাহি তোমা হেন।।
রাতি কৈনু দিবস, দিবস কৈনু রাতি।’’

বঁধু,–তুমি আমার হবে বলে

রাতি দিবস, দিবস রাতি কৈনু—বঁধু,–তুমি আমার হবে বলে

‘‘রাতি কৈনু দিবস, দিবস কৈনু রাতি।
বুঝিতে নারিনু বঁধু ! তোমার পিরীতি।।
ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর।
পর কৈনু আপন, আপন কৈনু পর।।’’

বঁধু তোমায় পাব বলে

ঘর বন, বন ঘর কৈনু—বঁধু তোমায় পাব বলে
‘ঘর বন, বন ঘর কৈনু’—
পর আপন, আপন পর কৈনু—ঘর বন, বন ঘর কৈনু,

বঁধু তোমায় পাব বলে।

‘‘পর কৈনু আপন, আপন কৈনু পর।।
এখন,–তুমি যদি বঁধু মোরে নিদারুণ হও।’’

তোমার লাগি’ বন ঘর করেছি

পর আপন, আপন পর করেছি—তোমার লাগি বন ঘর করেছি

‘‘তুমি যদি বঁধু মোরে নিদারুণ হও।
মরিব তোমার আগে দাঁড়াইয়া রও।।’’

এ প্রাণ আর রাখিব না হে

বঁধু, তুমি যদি নিদারুণ হলে—এ প্রাণ আর রাখিব না হে

‘‘মরিব তোমার আগে দাঁড়াইয়া রও।।
বাশুলি আদেশে দ্বিজ-চণ্ডীদাসে কয়।
পরের লাগিয়া কি আপন পর হয়।।’’

আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা

গৌরাঙ্গ-কিশোরী আমার—আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা

এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি

জগন্নাথের আগে দাঁড়ায়ে—এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি

বলে,–‘‘তোমারে বঝাই বঁধু তোমারে বুঝাই।
ডাকিয়া সুধায় মোরে হেন জন নাই।।
অনুক্ষণ গৃহে মোরে গঞ্জয়ে সকলে।’’

পরাণ বঁধু তুমি তো সকলি জান

আমি,–কেমন ঘরে বাস করি—পরাণ বঁধু তুমি তো সকলি জান

‘‘অনুক্ষণ গৃহে মোরে গঞ্জয়ে সকলে।
নিশ্চয় জানিনু মুই ভুখিমু গরলে।’’

বঁধু,–তুমি যদি চেয়ে দেখিলে না

তোমা লাগি’ সহি গুরু-গঞ্জনা-বঁধু,–তুমি যদি চেয়ে দেখিলে না

‘‘এ ছার পরাণে আর কিবা আছে সুখ।’’

বঁধু,–তুমি যদি বিমুখ হলে

সব ছেড়ে তোমার শরণ নিলাম—বঁধু,–তুমি যদি বিমুখ হলে

‘‘এ ছার পারণে আর কিবা আছে সুখ।
মোর আগে দাঁড়াও বঁধু দেখি চাঁদমুখ।’’

তোমার মুখ দেখি’ প্রাণ ত্যজিব

এ পরাণ আর না রাখিব—তোমার মুখ দেখি’ প্রাণ ত্যজিব
ও মুখের লাগি সবই গেছে—তোমার মুখ দেখি’ প্রাণ ত্যজিব

‘‘মোর আগে দাঁড়াও বঁধু দেখি চাঁদমুখ।।
খাইতে সোয়াস্তি নাই নাহি টুটে ভুখ্‌।
কে মোর ব্যথিত আছে কারে কব দুঃখ।।’’

আমার দুঃখের কথা কারে বলিব

কে আমার ব্যথিত আছে—আমার দুঃখের কথা কারে বলিব

‘‘চণ্ডীদাস কহে রাই ইহা না জুয়ায়।
পরের লাগি কেবা প্রাণ ছাড়িবারে চায়।।’’

এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি

গৌরাঙ্গ-কিশোরী আমার—এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি
এই গুণ্ডিচায় জগন্নাথের আগে—এইরূপে করিছেন আক্ষেপ-উক্তি

এই সেই গুণ্ডিচা-মন্দির

এই সেই জগন্নাথ—এই সেই গুণ্ডিচা—মন্দির

কোথায় আমার প্রাণগোরা

আক্ষেপ-অনুরাগে ভোরা—কোথায় আমরা প্রাণগোরা

(মাতন)
আজ একবার দেখা দাও

হা গৌর প্রাণ গৌর—আজ একবার দেখা দাও
বড় আশা করে এসেছি মোরা—আজ একবার দেখা দাও
‘বড় আশা করে এসেছি মোরা’—
শ্রীগৌড়মণ্ডল হতে—বড় আশা করে এসেছি মোরা

আজ একবার দেখা দাও
বড় সাধ দেখ্‌ব বলে

শ্রীগুরু-মুখে শুনে অবধি—বড় সাধ দেখ্‌ব বলে

একবার দেখা দাও
একবার দেখাও হে
কোথা স্বরূপ রামরায়

প্রাণগৌর লয়ে আছ কোথায়—কোথা স্বরূপ রামরায়

একবার দেখাও হে
ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

তোমাদের গৌর তোমাদেরই থাক্‌বে—ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

আমরা একবার দেখ্‌ব

চিতচোরা মুরতিখানি—আমরা একবার দেখ্‌ব

কৈ,–কেউ তো কথা কহিলে না

তবে কি গৌর দেখাবে না—কৈ,–কেউ তো কথা কহিলে না

আর কার কাছে যাব রে

কে,–গৌর সন্ধান বলে দিবে—আর কার কাছে যাব রে

কোথায় আছ আমার প্রভু নিতাই

কোথায় আছ শান্তিপুরনাথ—কোথায় আছ আমার প্রভু নিতাই
প্রাণগৌর লয়ে কোথায় আছ—কোথায় আছ আমার প্রভু নিতাই

একবার দেখা দাও
প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও

কোথায় আমার প্রভুনিতাই—প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও (মাতন)

কৈ,–কেউ তো কথা কহিলে না
আর,–কার কাছে যাব রে

কেবা গৌর দেখাইবে—আর, কার কাছে যাব রে

বল বল নীলাচলনাথ

তোমার,–সে মূরতি কোথায় আছে—বল বল নীলাচলনাথ
‘সেই মূরতি কোথায় আছে’—
শ্রীরাধাভাবে বিভাবিত—সেই মূরতি কোথায় আছে

বল বল নীলাচলনাথ
কৈ,–কথা তো কহিছ না

তবে কি গৌর দেখাবে না—কৈ,–কথা তো কহিছ না

আর,–কার কাছে যাব হে
আমার বলিতে আর কে আছে

আমাদের এই জগমাঝে—আমার বলিতে আর কে আছে

হা,–পরম করুণ শ্রীগুরুদেব
কোথা প্রাণের রাধারমণ

নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—কোথা প্রাণের রাধারমণ

আমরা,–কিছুই তো জান্‌তাম না

কে গৌর তার কিবা লীলা—আমরা,–কিছুই তো জান্‌তাম না

কৃপা করে জানাইলে

সংসার-কূপ হতে টেনে তুলে—কৃপা করে জানাইলে

প্রাণগৌর-লীলা জানাইলে

ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—প্রাণগৌর-লীলা জানাইলে
এই মধুর—নীলাচলে এনে—গৌরলীলা ভোগ করালে,

দেখাব বলে বলেছিলে

ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে—দেখাব বলে বলেছিলে

লুকাইয়ে কর্‌ছ খেলা

তোমার প্রাণগৌর লয়ে—লুকাইয়ে কর্‌ছ খেলা
এই মধুর নীলাচলে—লুকাইয়ে কর্‌ছ খেলা

একবার দেখা দাও
প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও

পাগলা প্রভু রাধারমণ—প্রাণগৌর লয়ে দেখা দাও।

(মাতন)
হৃদি-পটে এঁকে লব

শ্রীগুরুগৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদি-পটে এঁকে লব

পাগল হয়ে বেড়াইব

ভাই ভাই এক প্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াইব
পাগলা প্রভু তোমায় হৃদে ধরে—পাগল লয়ে বেড়াইব

দেশ বিদেশে বেড়াইব
যারে দেখ্‌ব তারে বল্‌ব

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘গৌরবরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।’’
বোল হরিবোল, গৌরহরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাইগৌরহরিবোল’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ