শ্রীশ্রী মন্মহাপ্রভুর শ্রীপাদ-পদ্মের নিকট কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।

শ্রীশ্রীজগন্নাথের শ্রীমন্দিরে

(১)

‘‘শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শচীসূত গুণধাম।
এই ধ্যান, এই জপ এই লব নাম।।’’

আমার শচীসূত গুণধাম

প্রাণভরে গাও ভাইরে—আমার শচীসূত গুণদাম
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—আমার শচীসূত গুণধাম

হলেন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য

অদ্বয় ব্রহ্ম শ্রীনন্দনন্দন—হলেন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য

হল,–শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম
কলিতে গৌরাঙ্গ নাম
রাম শ্যাম গৌরাঙ্গ নাম

মর্যাদা, লীলা, প্রেম পুরুষোত্তম—রাম শ্যাম গৌরাঙ্গ নাম

মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র
লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র

প্রেম পুরুষোত্তম শ্রীগৌরাঙ্গ—লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র

এই কলিতে গৌরাঙ্গ নাম

ত্রেতায় রাম দ্বাপরে শ্যাম—এই কলিতে গৌরাঙ্গ নাম

(মাতন)
হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
বড় অপরূপ রহস্য ভাইরে

নিগূঢ় গৌরাঙ্গ-লীলার—বড় অপরূপ রহস্য ভাইরে

চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল

অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দের—চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল

আমি তারে তৈছে ভজ্‌ব

যে আমারে যৈছে ভজ্‌বে—আমি তারে তৈছে ভজ্‌ব

ভজনের প্রতিদান দিব

যে আমায় যেমন করে ভজ্‌বে—আমি তার,–ভজনের প্রতিদান দিব

কিন্তু,–সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হল

ব্রজগোপিকার ভজনে—সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হল

প্রতিদান দিতে নারিল

ব্রজগোপিকার ভজনের—প্রতিদান দিতে নারিল

বলতে হল না পারয়েহহম্‌
ঋণী হয় ভাগবতে কয়
হইল ইচ্ছার উদ্গম
বলে,–কে আমায় মুগ্ধ করে

আমি তো ভুবন-মোহন—বলে,–কে আমায় মুগ্ধ করে

আমি উহায় আস্বাদিব

‘‘কৈছন রাধাপ্রেমা, কৈছন মধুরিমা,
কৈছন সুখে তিঁহ ভোর রে।।’’

শ্রীরাধিকার প্রেম কেমন
সেই প্রেমের মাধুরী কেমন
সেই প্রেমে কিবা সুখ

‘‘এ তিন বাঞ্ছিত ধন, ব্রজ নহিল পূরণ,
কি করিবে না পাইয়া ওর রে।।’’

কিছুতেই আস্বাদিতে নারিল

কতই না চেষ্টা করিল—কিছুতেই আস্বাদিতে নারিল

‘‘তখন,–ভাবিয়া দেখিল মনে, শ্রীরাধার স্বরূপ বিনে,
এ বাসনা পূর্ণ কভু নয় রে ।।’’

আমা হতে হবে না

এই,–আশ্রয় জাতীয় সুখাস্বাদন—আমা হতে হবে না

আমায়,–বিভাবিত হতে হবে

আশ্রয়জাতীয় ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
মহাভাব স্বরূপিণীর ভাবে—বিভাবিত হতে হবে

‘‘তাই,–রাধাভাব কান্তি ধরি, রাধাপ্রেমে গুরু করি,
নদীয়াতে করল উদয় রে।।’’

হলেন গৌরাঙ্গ শ্রীহরি

রাধাভাব কান্তি হরি—হলেন গৌরাঙ্গ শ্রীহরি

(মাতন)
হল,–শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম

দিতে,–রাধাপ্রেমের প্রতিদান—হল,–শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম

(মাতন)
বলরাম নিত্যানন্দ

বিলাসের তনু—বলরাম নিত্যানন্দ

এই কলিতে নিত্যানন্দ নাম

ত্রেতায় লক্ষ্মণ, দ্বাপরে বলরাম—এই কলিতে নিত্যানন্দ নাম

মহাবিষ্ণু শ্রীঅদ্বৈত

পরতত্ত্ব নির্দ্দেশক স্বরূপ—মহাবিষ্ণু শ্রীঅদ্বৈত

সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ

অভিন্নব্রজ নবদ্বীপে—সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
প্রচারিতে নিজ নাম ধর্ম্ম—সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
‘প্রচারিতে নিজ নাম ধর্ম্ম’—
আস্বাদিতে রাধাপ্রেম ধর্ম্ম—প্রচারিতে নিজ নাম ধর্ম্ম

নবদ্বীপে অবতীর্ণ

ব্রজ-গোপ গোপী সনে—নবদ্বীপে অবতীর্ণ—
প্রচারিতে নিজ নামমহিমা—শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ
‘প্রচারিতে নিজ নামমহিমা’—
আস্বাদিতে নিজ মাধুর্য্য সীমা—প্রচারিতে নিজ নামমহিমা

শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ
করিলেন নামপ্রেমের প্রচার

নিত্যানন্দ হরিদাস দ্বারে—করিলেন নামপ্রেমের প্রচার

নাম-প্রেমে প্রচার কালে
করিলেন কাজী দলন

করি নগর সংকীর্ত্তন—করিলেন কাজী দলন

জগাই মাধাই করিলেন উদ্ধার
জগাই-মাধাইকে করিলেন নিজজন

তদের দুর্ব্বৃত্ততা ঘুচাইয়ে—জগাই-মাধাইকে করিলেন নিজজন

জগাই-মাধাই উদ্ধার হল
আমনি প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল

প্রেমাবতার গৌরহরির—অমনি প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল

চলিলেন প্রভু নদীয়া ছাড়ি
সাজিলেন সন্ন্যাসী

কলিহত জীবের লাগি’—সাজিলেন সন্ন্যাসী

হলেন নীলাচলবাসী
কাশীমিশ্র্রালয়ে বসতি

রাধাভাবে বিভাবেত দিবারাতি—কাশীমিশ্রালয়ে বসতি

নিগূঢ় গৌরাঙ্গলীলা

এই মধুর নীলাচলে—নিগূঢ় গৌরাঙ্গলীলা

চার ব্রহ্মের বিহার ভূমি

মধুর নীলাচল মানি—চার ব্রহ্মের বিহার ভূমি

(মাতন)
অচল ব্রহ্ম জগন্নাথ
সচল ব্রহ্ম গৌরহরি
দুই স্বরূপের দুই দান

কলি-জীবের দুঃখ ঘুচাবার লাগি’—দুই স্বরূপের দুই দান

অচল দেন অধরামৃত

সচল দেন নাম-প্রেমামৃত—অচল দেন অধরামৃত

(মাতন)
অপরূপ রহস্য ভাইরে

মধুর শ্রীনীলাচলে—অপরূপ রহস্য ভাইরে

গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়

তার সম্বন্ধ তত্ত্ব সকলি নিগূঢ়—গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়

গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়
তার বিহার-ভূমি নিগম-নিগূঢ়
ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ

যেখানে গৌর স্বরূপ প্রকট-ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
‘যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট’—
মহারাস-বিলাসের পরিণতিতে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
আমি তুমি ভুলে গিয়ে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট

সেই নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ

নবদ্বীপ-রূপে বেকত—সেই নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ

সেই নদীয়ার নিভৃত উদ্যান

ধরে নীলাচল নাম—সেই নদীয়ার নিভৃত উদ্যান

সেই উদ্যানের ঘর চোরা

সে যে নিভৃত-গম্ভীরা—সেই উদ্যানের ঘর চোরা

সেই চোরা কুটীর গম্ভীরাতে

অমূল্য রতন প্রাণগৌর থাকেন—সেই চোরা কুটীর গম্ভীরাতে

মধুর গৌরাঙ্গ—বিহার

মধুর শ্রীনীলাচলে—মধুর গৌরাঙ্গ-বিহার

জাগিয়া রজনী পোহায়

গম্ভীরা ভিতরে প্রাণ গোরারায়—জাগিয়া রজনী পোহায়

কাঁদিয়া রজনী পোহায়

রাধাভাবে প্রাণ গোরারায়—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
স্বরূপ রামরায়ের কন্ঠ ধরি’—কাঁদিয়া রজনী পোহায়(মাতন)

গৌরকিশোরী ভাসে নয়নজলে

বঁধু কই এল না এল না বলে—গৌরকিশোরী ভাসে নয়নজলে

(মাতন)
ভোগ করে দিবানিশি

রাধাভাবে মত্ত গোরাশশী—ভোগ করে দিবানিশি

‘‘চণ্ডীদাস বিদ্যাপতি, রায়ের নাটক গীতি,
কর্ণামত শ্রীগীত গোবিন্দ।
স্বরূপ রামানন্দ সনে, প্রভু মোর রাত্রিদিনে,
গায় শুনে পরম আনন্দ।।’’

হা কৃষ্ণ বলে কাঁদে সদা

আপনি হইয়া রাধা—হা কৃষ্ণ বলে কাঁদে সদা

[মাতন]
কি বলিব লীলার কথা

‘‘একদিন শয়ন মন্দিরে গোরারায়।
শ্রীকৃষ্ণের বিরহ ভরে, মন্দিরে রহিতে নারে,
বাহিরে যাইতে মন ধায়।’’

সেই দশা হল রে

ভাব নিধি প্রাণ গৌরাঙ্গের—সেই দশা হল রে

‘‘শ্রীকৃষ্ণের বিরহে রাধা, যেন উৎকণ্ঠিতা সদা,
শ্রীকৃষ্ণ বেণু শুনি বনে যান।
সেই মত আচম্বিতে, বংশী পাইয়া শুনিতে,
সে হেতু বাহিরে যেতে চান।।’’
তিন দ্বার আছে রুদ্ধ, তিন ভিত্তি উচ্চ ঊর্দ্ধ,
তাহা লঙ্ঘে আবেশের বলে।
তেলেঙ্গা গাভীর মাঝে, দেখি’ গোরা রসরাজে,
পড়ি আছে শ্বাস নাহি চলে ।।’’

সবাই ব্যাকুলিত চিত

গম্ভীরায় নাই শচীসূত—সবাই ব্যাকুলিত চিত

স্বরূপাদি ইতি উতি চায়

প্রভু আমদের গেল কোথায়—স্বরূপাদি ইতি উতি চায়

‘‘ভাব বোঝা নাহি যায়, প্রভু দেখি কূর্ম্মপ্রায়,
অঙ্গ সব সঙ্কুচিত অঙ্গে।
অন্বেষিয়া ভক্তগণ, দীপ জ্বালি দরশন,
করে কূর্ম্মাকৃতি শ্রীগৌরাঙ্গে।।’’

অপরূপ গৌরাঙ্গলীলা

মধুর শ্রীনীলাচলে—অপরূপ গৌরাঙ্গলীলা

এসেছেন গৌরাঙ্গরূপ ধরে

অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দ-এসেছেন গৌরাঙ্গরূপ ধরে
রাধাভাব কান্তি করি অঙ্গীকারে—এসেছেন গৌরাঙ্গরূপ ধরে

একদিন আমার গৌরহরি
করিছেন জগন্নাথ দর্শন

গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বে দাঁড়ায়ে—করিছেন জগন্নাথ দর্শন

‘‘গৌর সুন্দর নটরাজ।
শ্রীল জগন্নাথ আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে,
নাচে পরি’ ভাব-রত্ন-সাজ।।
বৈবর্ণ স্তব্ধতা আর, গদগদ বাক্যোচ্চার,
হাস্য নৃত্য সব প্রেম-ধর্ম্ম।’’

গৌরের শ্রীঅঙ্গে হল বেকত

সাত্ত্বিক বিকার যত—গৌরের শ্রীঅঙ্গে হল বেকত

বিরাম নাই বিরাম নাই

অবিরল নয়ন-ধারার—বিরাম নাই বিরাম নাই

যেন পিচকারী জলযন্ত্র ধারা

এক এক ধারায় শত শত ধারা—যেন পিচকারী জল যন্ত্রধারা

ভাসিল রে মুখকমল

অবিরাম নয়ন-ধারায়—ভাসিল রে মুখকমল

পড়িল হৃদ্‌ কমলে

মুখ কমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদ্‌ কমলে
হৃদি কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ কমলে
চরণ কমল পাখালিয়ে—নিম্নখাল পূর্ণ কৈল
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বদেশের—নিম্নখাল পূর্ণ হল

পাষাণ গলিয়া গেল

সেই গৌরের পদ পরশে—পাষাণ গলিয়া গেল

(মাতন)
পাষাণ গলানো গোরা

প্রাণ ভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ গলানো গোরা

(মাতন)
পাষাণ গলানো গোরা

প্রভু নিতাই পাগল করা—পাষাণ গলানো গোরা

(মাতন)
এখনও তার নিদর্শন আছে

এই পাষাণে শ্রীপদচিহ্ন—এখনও তার নিদর্শন আছে

আজও লীলার সাক্ষী আছে

লীলায় শিলা গলেছে—আজও লীলার সাক্ষী আছে

হায়,–কিছুই দেখিতে পেলাম না

সেই পাষাণে গলানো লীলা—হায়,–কিছুই দেখিতে পেলাম না
প্রাণ গৌরাঙ্গের কীর্ত্তন নটন লীলা—হায়,–কিছুই দেখিতে পেলাম না
‘কীর্ত্তন নটন লীলা’—
শ্রীজগন্নাথের রথের আগে—কীর্ত্তন নটন লীলা

কিছুই দেখিতে পেলাম না

সচল অচলের খেলা—কিছুই দেখিতে পেলাম না

সচল অচলের খেলা
দুজনে দুজনায় ভোগ করে

সচল আর অচল—দু’জনে দু’জনায় ভোগ করে

গৌর নাচে রাধাভাবে

পরাণ পাইনু বলে,–গৌর নাচে রাধাভাবে

(মাতন)
আস্বাদে যুগল-মাধুরী

জগন্নাথ হেরি’ গৌরহর—আস্বাদে যুগল-মাধুরী

জগন্নাথের আগে গৌর নেচে যায়

দেখি’ মুগ্ধ জগন্নাথ শ্যামরায়—জগন্নাথের আগে গৌর নেচে যায়

কখনও তো দেখে নাই

জগন্নাথ বংশীধারী—কখনও তো দেখে নাই
রাধা সঙ্গে মিলিলে কি মাধুরী—কখনও তো দেখে নাই

জগন্নাথ ভাবে অচল হ’ল
হায়,–দেখিতে তো পেলাম না

সচল অচলের খেলা—হায়,–দেখিতে তো পেলাম না

নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

সেই লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

দগ্ধ হিয়া জুড়াব বলে
এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে

ত্রিকাল সত্য লীলায় দেখ্‌ব বলে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে

বড় সাধ ছিল মনে
গৌর দেখ্‌ব নয়নভরে

ভক্ত-সন্মিলন-দিনে-গৌর দেখ্‌ব নয়নভরে
ঝালি—সমর্পম-দিনে—গৌর দেখ্‌ব নয়নভরে
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন-দিনে—গৌর দেখ্‌ব নয়নভরে
শ্রীজগন্নাথের রথের আগে—গৌর দেখ্‌ব নয়নভরে

গৌর নাচে রথের আগে

পরাণনাথ পাইনু বলে—গৌর নাচে রথের আগে

(মাতন)
বড় সাধ ছিল মনে
গৌর দেখ্‌ব নয়নভরে

পাগলা প্রভুর আনুগত্যে—গৌর দেখ্‌ব নয়নভরে

কিন্তু,–রথযাত্রা শেষ হল

দর্শন আশা না মিটিল—কিন্তু,–রথযাত্রা শেষ হল

আজ,–প্রাণে বড় আশা জেগেছে

এই জগন্নাথের মন্দিরে এসে—আজ,–প্রাণে বড় আশা জেগেছে

একবার দেখাও হে

ওহে ও শ্রীজগন্নাথ—একবার দেখাও হে
তোমার সেই,–চিতচুরি করা মুরতিখানি—একবার দেখাও হে
‘তোমার সেই,–চিত চুরিকরী মুরতিখানি’—
যা দেখে রথে মুগ্ধ হয়েছিলে—তোমার সেই,–চিত চুরি করা মুরতিখানি

একবার দেখাও হে

বড় আশা করে এসেছি মোরা—একবার দেখাও হে
শ্রীগৌড়মণ্ডল হতে,–বড় আশা করে এসেছি মোরা—একবার দেখাও হে

বলিলে তুমি বলতে পার

আমাকে দেখে কি সাধ মিটে না—বলিলে তুমি বল্‌তে পার

আমি যে,–নবকৈশোর নটবর

গোপবেশ রেণুকর—আমি যে,–নবকিশোর নটবর

(মাতন)
তা তুমি কি জান না
আমরা যে সব নদীয়াবাসী

তোমার,–গৌরস্বরূপ ভালবাসি—আমরা যে সব নদীয়াবাসী

একবার দেখাও হে

ওহে ও জগন্নাথ—একবার দেখাও হে
সেই চিতচোরা মুরতিখানি—একবার দেখাও হে
চিতচোরা মুরতিখানি—একবার দেখাও হে

(মাতন)
হা পরমকরুণ শ্রীগুরুদেব
কিছুই তো জান্‌তাম না

সংসার-অন্ধকূপে পড়েছিলাম—কিছুই তো জানতাম না
কোথা নীলাচল কে জগন্নাথ—কিছুই তো জান্‌তাম না
ওই,–নীলাজচল গৌরের কিবা লীলা—কিছুই তো জানতাম না

সঙ্গে করে নিয়ে এলে

সংসার-কূপ হতে তুলে—সঙ্গে করে নিয়ে এলে
এই,–রথযাত্রায় এই নীলাচলে—সঙ্গে করে নিয়ে এলে

আজ লুকাইয়ে করিছ খেলা

প্রাণের নিতাই গৌর লয়ে—আজ লুকাইয়ে করিছ খেলা

যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে

আমাদের অধিকার নাই নিজগুণে—যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে

আজ একবার দেখা দাও

যার নাম শুনায়ে ঘরের বাহির করেছ—আজ একবার দেখা দাও

আজ,–গৌর সনে দেখা দাও

এই জগন্নাথের জগমোহনে—আজ,–গৌর সনে দেখা দাও
হা,–পরমকরুণ শ্রীগুরুদেব,–আজ,–গৌর সনে দেখা দাও

(মাতন)
হৃদি পটে এঁকে লব

শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদি পটে এঁকে লব

পাগল হয়ে কেঁদে বেড়াব

ভাই ভাই ভাই মিলে—দেশ বিদেশে কেঁদে বেড়াব

যারে দেখ্‌ব তারে বলব

ম্লেচ্ছ যবনাদি নর নারী—ঘরে দেখ্‌ব তারে বলব
তোমার,–কৃপাদত্ত নামাবলী—যারে দেখ্‌ব তারে বল্‌ব

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(মাতন)

নিতাই গৌর রাধে শ্যাম—জগন্নাথ বলরাম

[মাতন]

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।
বোল হরিবোল, গৌরহরি বোল।।

(২)

‘‘শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাই গৌরহরি বোল।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

এই ত কলিযুগের মহামন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এই ত পরিত্রাণের মূলমন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

কলিযুগোচিত এই নাম-ধর্ম্ম

ও যে বেদের নিগূঢ়-মর্ম্ম—কলিযুগোচিত এই নাম-ধর্ম্ম

কলিযুগোচিত এই নাম-ধর্ম্ম

‘‘চারিবেদ চৌদ্দ শাস্ত্র, আঠার পুরাণ তন্ত্র,
গীতা আদি করিয়া মন্থন।’’

এই,—হরে কৃষ্ণ নামের প্রকাশ
জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

এ নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

অভেদ নাম নামী

নামাচিন্তামণি কৃষ্ণ—অভেদ নাম নামী
‘নামচিন্তামণি কৃষ্ণ’—
চৈতন্য রসবিগ্রহ—নামচিন্তামণি কৃষ্ণ

অভেদ নাম নামী
জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

এ নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

নাম বই আর সাধন নাই রে

অদ্বয় ব্রহ্ম নন্দনন্দন পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দ পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
সচ্চিদানন্দনঘন মুরতি দেখ্‌তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সচ্চিদানন্দনঘন মুরতি দেখ্‌তে—
নিত্য নবকৈশোর নটবর—সচ্চিদানন্দঘন মুরতি দেখ্‌তে
গোপবেশ বেণুকর—সচ্চিদানন্দঘন মুরতি দেখ্‌তে

এই,– নাম বই আর সাধন নাই রে

পরিপূর্ণ কৃষ্ণ প্রাপ্তি করতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
আ’মরি,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে’—
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দে—সমন্ধের বন্ধনে বাঁধতে
ব্রজবাসিগণের মত—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে
পুত্র সখা প্রাণপতি—এই,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে

এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে

কৃষ্ণ বশ করে অধীন করতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে

অপরূপ নাম-সঙ্কীর্ত্তনের মহিমা

‘‘খাইতে শুইতে নাম যথ তথা লয় রে।
কাল দেশ নিয়ম নাই সর্ব্ব সিদ্ধি হয় রে।।’’

পূরে ভাই মনস্কাম

হেলায় শ্রদ্ধায় নিলে নাম—পূরে ভাই মনস্কাম

অপরূপ নাম—সঙ্কীর্ত্তনের মহিমা

‘‘নাম-সঙ্কীর্ত্তন হইতে পাপ সংসার নাশন রে।
চিত্তশুদ্ধি সর্ব্বভক্তি সাধন উদ্গম রে।।
কৃষ্ণ-প্রমোদ্গম প্রেমামৃত আস্বাদন রে।
কৃষ্ণপ্রাপ্তি সেবামৃত সমুদ্রে মজ্জন রে।।’’


অপরূপ নাম—সঙ্কীর্ত্তনের মহিমা পাপ হরে আর আপ হরে
মধুর,–হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—পাপ হরে আর তাপ হরে

পাপ তাপ সব পলায় দূরে

যদি কেউ,–নাম বল্‌ব মনে করে—আগে তার,–পাপ তাপ সব পলায় দূরে
সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে অন্ধকার-রাশির মত—আগে তার,–পাপ তাপ সব

পলায় দূরে
পাপ হরে আর তাপ হরে
চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে

মধুর,–হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
অনাদিকালের,–দুর্ব্বাসনা—মালিন্য ক্ষালন করে—চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে

অজ্ঞানতা যায় রে দূরে

ভুক্তি মুক্তি বাসনারূপ—অজ্ঞানতা যায় রে দূরে

তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে

চতুর্ব্বিধা মুক্তি অষ্টসিদ্ধি—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
আমায় গ্রহণ কর কর বলে—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে

ফিরেও তো চায় না রে

নামরসে যে মজেছে—সে,–ফিরেও তো চায় না রে

কেন বা ফিরে চাইবে বল

‘‘কৃষ্ণদাস অভিমানে যে আনন্দ সিন্ধু রে।
কোটি কোটি,–ব্রহ্মানন্দ তার আগে নহে এক বিন্দু রে।।’’

তারাই ত আদি ব্রহ্মজ্ঞানী

ব্রহ্মার,–মানসপুত্র সনক সনাতন আদি—তারাই ত আদি ব্রহ্মজ্ঞানী

তাদের ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল রে

শ্রীকৃষ্ণের,–পদস্থিত চন্দন—তুলসীর গন্ধে—তাদের ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল রে

দাস হতে বাসনা হল

তাদের,–ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল—দাস হতে বাসনা হল

অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
ভব-মহাদামাগ্নি নির্ব্বাপণ করে
ত্রিতাপ—জ্বালা যায় রে দূরে

মধুর,–হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—ত্রিতাপ-জ্বালা যায় রে দূরে
আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক, আধিভৌতিক—ত্রিতাপ—জ্বালা যায় রে দূরে

সর্ব্ব অমঙ্গল হরে

ভুবনমঙ্গল নাম গানে—সর্ব্ব অমঙ্গল হরে

সকল মঙ্গল উদয় করে

কৃষ্ণ-প্রাপ্তির অনুকূল—সকল মঙ্গল উদয় করে

শ্রীকৃষ্ণপদে উন্মুখ করে

যত,–বহির্ম্মুখ—চিত্তবৃত্তি—শ্রীকৃষ্ণপদে উন্মুখ করে
প্রাকৃত,–ভোগ বাসনা হতে তুলে লয়ে—শ্রীকৃষ্ণপদে উন্মুখ করে

শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়

কায় মন বাক্য দ্বারায় শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
সর্ব্ব সাধন-শকতি দিয়ে—শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
‘সর্ব্ব সাধন-শকতি দিয়ে’—
হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—সর্ব্ব সাধন-শকতি দিয়ে

(মাতন)
শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে

প্রেমামৃত সিঞ্চন করে—সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে

ভাবভূষণে ভূষিত করে

হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—ভাবভূষণে ভূষিত করে
কম্পঅশ্রু পুলকাদি—নানা,–ভাবভূষণে ভূষিত করে

গোপীভাবামৃতের লুব্ধ করে

ভাবভূষণে ভূষিত করে—গোপীভাবামৃতে লুব্ধ করে

রাধাদাসী অভিমান দেয় রে
প্রাকৃত,–দেহাভিমান যায় রে দূরে

দারুণ,–সংসার বন্ধনের একমাত্র কারণ—প্রাকৃত,–দেহাভিমান যায় রে দূরে

এই,–দেহাভিমান যায় রে দূরে
রাধাদাসী অভিমান দেয় রে

প্রাকৃত-দেহাভিমান ঘুচাইয়ে—রাধাদাসী অভিমান দেয় রে

রাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি করায়

ব্রজে গোপীদেহ দিয়ে—রাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি করায়

(মাতন)
হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
হল,–শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম
কলিতে গৌরাঙ্গ নাম

ত্রেতায় রাম দ্বাপরে শ্যাম—কলিতে গৌরাঙ্গ নাম

(মাতন)
হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
অপরূপ রহস্য ভাই রে

নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলার—অপরূপ রহস্য ভাই রে

চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল

অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দের—চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল

আমি তারে তৈছে ভজ্‌ব

যে আমারে যৈছে ভজ্‌বে—আমি তারে তৈছে ভজব

ভজনের প্রতিদান দিব

যে আমায় যেমন করে ভজ্‌বে—আমি তার,–ভজনের প্রতিদান দিব

সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইল

ব্রজগোপীকার ভজনে—সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইল

প্রতিদান দিতে নারিল

ব্রজগোপিকার ভজনের—প্রতিদান দিতে নারিল

বলতে হল ন পারয়েঽহম্‌
ঋণী হয় ভাগবতে কয়
হইল ইচ্ছার উদ্‌গম

‘‘কৈছন রাধাপ্রেমা, কৈছ মধুরিমা,
কৈছন সুখে তিঁহ ভোর রে।
এ তিন বাঞ্ছিত ধন, ব্রজে না হৈল পূরণ,
কি করিব না পাইয়া ওর রে।।’’

শ্রীরাধিকার প্রেম কেমন
সে প্রেমের মাধুরী কেমন
সেই প্রেমে কিবা সুখ

‘‘এ তিন বাঞ্ছিত ধন, ব্রজে না হৈল পূরণ,
কি করিবে না পাইয়া ওর রে।।
তাই,–ভাবিয়া দেখিল মনে, শ্রীরাধার স্বরূপ বিনে,
‘‘এ বাসনা পূর্ণ কভু নয় রে ।’’

আমা হতে হবে না

এ তিন বাঞ্ছিত পূরণ—আমা হতে হবে না
আমি তো লীলার বিষয় বটি—আমা হতে হবে না
আশ্রয়-জাতীয় সুখাস্বাদন—আমা হতে হবে না

আমায়,–বিভাবিত হতে হবে

আশ্রয় জাতীয় ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
মহাভাব-স্বরূপিণীর ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে

‘‘তাই,–রাধাভাব কান্তি ধরি, রাধাপ্রেম গুরু করি,
নদীয়াতে করল উদয় রে ।।’’

হলেন গৌরাঙ্গ শ্রীহরি

রাধাভাব কান্তি হরি’—হলে গৌরাঙ্গ শ্রীহরি

(মাতন)
শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম

দিতে,–রাধাপ্রেমের প্রতিদান—শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম

(মাতন)
হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
বলরাম নিত্যানন্দ

বিলাসের তনু—বলরাম নিত্যানন্দ

কলিতে নিত্যানন্দ নাম

ত্রেতায় লক্ষণ দ্বাপরে বলরাম—কলিতে নিত্যানন্দ নাম

(মাতন)
বলরাম নিত্যানন্দ
সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ

অভিন্নব্রজ শ্রীনবদ্বীপে—সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
ব্রজগোপ গোপী সনে—নবদ্বীপে অবতীর্ণ
প্রচারিতে এই নাম ধর্ম্ম—নবদ্বীপে অবতীর্ণ
‘প্রচারিতে এই নাম ধর্ম্ম,–
আস্বাদিতে রাধাপ্রেমমর্ম্ম—প্রচারিতে এই নাম ধর্ম্ম

শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ

‘প্রচারিতে নিজ নাম-মহিমা’—
আস্বাদিতে নিজ মাধুর্য্য-সীমা—প্রচারিতে নিজ নাম-মহিমা

শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ

‘‘করুণাসিন্ধু অবতার রে।’’


শ্রীনিতাই গৌরাঙ্গ আমার—করুণাসিন্ধু অবতার

‘‘নিজগুণে গাঁথি, নাম চিন্তামণি,
জগজনে পরাওল হার রে ।।’’

যারে তারে পরাইল

নাম-চিন্তামণির মালা গেঁথে –যারে তারে পরাইল
গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—যারে তারে পরাইল
‘গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—’
দন্তেতৃণ গলবাসে করজোড়ে—গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে

যারে তারে পরাওল

নিজ,–নাম-চিন্তামণির মালা গেঁথে—যারে তার পরাওল

ডাকে,–আয় কলিহতজীব
পেয়েছ সাধের মানব-জনম

চৌরাশীলক্ষযোনি করে ভ্রমণ—পেয়েছ সাধের মানব-জনম

এ ত’,–ভোগবিলাসের জনম নয় রে
এ ত’,–রিপুসেবায় জনম নয় রে

শৃগাল কুক্কুরের মত—এ ত’,–রিপুসেবার জনম নয় রে

এ যে—শ্রীহরিভজনের জনম

সুদুর্ল্লভ মানব-জনম—এ যে,–শ্রীহরিভজনের জনম

দেবতারাও বাঞ্ছা করে

ভজন-যোগ্য এই মানবদেহ—দেবতারাও বাঞ্ছা করে

কেন,–এমন জনম হেলায় হারাও
ধর নামের মালা পর

ত্রিতাপ হর—ধর নামের মালা পর

নামের মালা কণ্ঠে পর
পর হরি-নামের মালা

আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলে—পর হরি-নামের মালা
এবার,–গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে বলে—পর হরি-নামের মালা
বলে,–ও কলিহতজীব—পর হরি—নামের মালা
দূরে যাবে ত্রিতাপজ্বালা—পর হরি-নামের মালা
যাবে জ্বালা পাবে নন্দলালা—পর হরি-নামের মালা
হয়ে ব্রজবালা পাবে নন্দলালা—পর হরি-নামের মালা

(মাতন)
আ’মরি কি করুণা রে

করুণার বালাই লয়ে মরে যাই—আ’মরি কি করুণা রে

আপনি যেচে বলে দিচ্ছে

কলিজীবের দ্বারে দ্বারে—আপনি যেচে বলে দিচ্ছে
আপনার প্রাপ্তির উপায়—আপনি যেচে বলে দিচ্ছে

আপনি যেচে বলে দিচ্ছে

‘‘নিজগুণে গাঁথি, নাম-চিন্তামণি,
জগজনে পরাওল হার রে।।
কলিতিমিরাকুল, অখিল লোক দেখি’,
বদন-চাঁদ পরকাশ রে।’’

বদনচাঁদের প্রকাশ কর্‌লেন

কলিতিমিরে জগৎ আচ্ছন্ন দেখি’—বদনচাঁদের প্রকাশ কর্‌লেন
কলিঘোর,–অমানিশা বিনাশিতে—বদনচাঁদের প্রকাশ কর্‌লেন

‘‘লোচনে প্রেমে সুধারস বরিষণে,
জগজনতাপ বিনাশ রে।’’

সকল তাপ দূর করিলেন

কলিহত-পতিত-জীবের—সকল তাপ দূর করিলেন
নিজ-নামে কেঁদে কাঁদাইয়ে—সকল তাপ দূর করিলেন
হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে—সকল তাপ দূর করিলেন
‘হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে’—
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে

(মাতন)
সকল তাপ দূর করিলেন
আপনার নামে আপনি কাঁদে

আপনি কি মধুর তাই—আপনার নামে আপনি কাঁদে

এবার মনে সাধ উঠেছে

রসময় শ্রীগৌরাঙ্গের—এবার মনে সাধ উঠেছে

এবার আমি আস্বাদিব

আমি কত মধুর তাই—এবার আমি আস্বাদিব
আমার,–নাম রূপ গুণ লীলা—এবার আমি আস্বাদিব

আপনার নামে আপনি কাঁদে

নামের মাধুরী আস্বাদিতে—আপনার নামে আপনি কাঁদে

(মাতন)
সকল তাপ দূর করিলেন

হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে—সকল তাপ দূর করিলেন
গবাসী নরনারীর—সকল তাপ দূর করিলেন

নরনারীর কিবা কথা
বনের পশু কেঁদে লুটায়

মধুর গৌরাঙ্গলীলায়—বনের পশু কেঁদে লুটায়

সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়

নিজহিংসা স্বভাব ভুলি’—সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
ঝারিখণ্ডপথে গৌর যায়—সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়

(মাতন)
কেন কাঁদে সিংহ ব্যাঘ্র
আমার মনে এই ত জাগে

শ্রীগুরুদেবের প্রেরণায়—আমার মনে এই ত জাগে

স্বরূপ জাগান লীলা

নিগূঢ় গৌরাঙ্গলীলা—স্বরূপ জাগান লীলা

জাগাইতে এসেছে

জীবের,–নিত্য রাধাদাসী-স্বরূপ—জাগাইতে এসেছে
গৌরাঙ্গরূপ ধরে—জাগাইতে এসেছে

স্বরূপ জেগে উঠেছে

ভাবনিধি গৌরাঙ্গ হেরে—স্বরূপ জেগে উঠেছে
নিত্য রাধাদাসী—স্বরূপ জেগে উঠেছে

চিনতে পেরেছে

এই রাধারমণ বলে—চিনতে পেরেছে

ঢাকা গেছে কালবরণ

এই ত প্রাণের রাধাবরণ—ঢাকা গেছে কালবরণ
সাক্ষী দিচ্ছে বাঁকা নয়ন—ঢাকা গেছে কালবরণ
রাই অঙ্গ ছটা লেগে—ঢাকা গেছে কাল বরণ

কেন দেখি দণ্ডধারী

এ কি অপরূপ হেরি—কেন দেখি দণ্ডধারী

রাই-প্রেমে ঋণী হয়েছে

পড়েছে মনে পড়েছে—রাইপ্রেমে ঋণী হয়েছে

তাই হয়েছে দণ্ডধারী

প্রেম ঋণ সুধ্‌বে বলে—তাই হয়েছে দণ্ডধারী
দেখে যা লো ও কিশোরী—তাই হয়েছে দণ্ডধারী
‘দেখে যা লো ও কিশোরী’—
তোর,–বঁধু হয়েছে দণ্ডধারী—দেখে যা লো ও কিশোরী
তোর,–ঋণের দায়ে দণ্ডধারী—দেখে যা লো ও কিশোরী

(মাতন)
তাই হয়েছে দণ্ডধারী
ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে তারা
বলে,–চল প্রাণের রাধারমণ

যার ধন তার দিই—বলে,–চল প্রাণের রাধারমণ

তার ঠাঁই মেগে লব

চল প্রাণের রাধারমণ—তার ঠাঁই মেগে লব

‘‘জগজন-তাপ বিনাশ রে।।’’

কি বল্‌ব করুণার কথা

আমার প্রাণ গৌরহরির—কি বল্‌ব করুণার কথা

‘‘ভকত কলপতরু, অন্তরে অন্তরু,
রোপলি ঠামহি ঠাম রে।’’

স্থানে স্থানে রোপণ করলেন

নিজভক্ত-কল্পতরু—স্থানে স্থানে রোপন করলেন

ভক্তগণের জন্ম দিলেন

যত বহির্ম্মুখ দেখে নিজ—ভক্তগণের জন্ম দিলেন

ভকত-কলপতরু, অন্তরে অন্তরু,
রোপলি ঠামছি ঠাম রে।
তছু পদতল, অবলম্বনে পন্থিক,
পূরণ নিজ নিজ কাম রে।।’’

ছায়ায় বসে জুড়াইল

ভক্ত-কল্পতরু,–ছায়ায় বসে জুড়াইল
ত্রিতাপে তাপিত জীব তার—ছায়ার বসে জুড়াইল
দারুণ,–সংসার-তাপে শ্রান্ত পথিক—তার,–ছায়ায় বসে জুড়াইল
শ্রীগুরু-কল্পতরুর—ছায়ায় বসে জুড়াইল
‘শ্রীগুরু-কল্পতরুর’—
ভক্তরূপী—শ্রীগুরু-কল্পতরুর

ছায়ায় বসে জুড়াইল
তাপ জুড়াইবার আর উপায় নাই

শ্রীগুরু-পদাশ্রয় বিনে ভাই—তাপ জুড়াবার আর উপায় নাই

(মাতন)

‘‘মহৎ কৃপা বিনে কোন কার্য্যসিদ্ধি নয় রে।
কৃষ্ণ-কৃপা বিনে কোন কার্য্যসিদ্ধি নয় রে।
কৃষ্ণ-কৃপা দূরে রহু সংসার না যায় ক্ষয় রে।।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব রে।
গুরু-কৃষ্ণ-প্রসাদে পায় ভক্তিলতা বীজ রে।।’’

দুইরূপে করেন কৃপা

অন্তর্য্যামী আর ভক্তশ্রেষ্ঠ—দুইরূপে করেন কৃপা

অন্তর্য্যামীরূপে করেন প্রেরণা

গুরুরূপে জানান উপাসনা—অন্তর্য্যামীরূপে করেন প্রেরণা(মাতন)

‘‘পূরল নিজ নিজ কাম রে।।’’

কি বলব করুণার কথা

আমার প্রাণ গৌরহরির—কি বলব করুণার কথা

‘‘ভাব-গজেন্দ্রে, চঢ়াওল অকিঞ্চনে,
ঐছন পহুঁক বিলাস রে।’’

কলিহত-জীবে দিল

যা চতুর্দ্দশভুবনে অভাব—তাই,–কলিহত-জীবে দিল
যা গোলোকে গোপনে ছিল—তাই,–কলিহত—জীবে দিল
যা ব্রহ্মাদিরও সুদুর্ল্লভ—কলিহত-জীবে দিল
পঞ্চমপুরুষার্থ প্রেমা—কলিহত-জীবে দিল
যা,–আপনাকে বশ করে অধীন করা—কলিহত-জীবে দিল

যারে তারে যেচে দিল

গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—যারে তারে যেচে দিল

বলে,–ধর কলিজীব প্রেম নাও রে
আমি,–বাঁধা পড়্‌তে এসেছি রে

প্রেমবন্ধনে বাঁধ মোরে—বাঁধা পড়্‌তে এসেছি রে

আ’মরি কি আত্মদান

প্রেমবন্ধনে বাঁধ মোরে—আ’মরি কি আত্মদান

শুনেছ কি কোন-কালেতে

কত কত অবতার হয়েছে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
সেধে যেচে প্রেম দিতে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
সেধে যেছে আপনা দিতে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
সেধে যেচে বাঁধা পড়্‌তে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
আ’মরি কি আত্মদান—শুনেছ কি কোন-কালেতে

যাইরে দানের বলিহারি

প্রেমাবতার গৌরহরির—যাইরে দানের বলিহারি

(মাতন)

‘‘ঐছন প্রভুক বিলাস রে।’’

কি বলব করুণার কথা

আমার প্রাণ গৌরহরির—কি বল্‌ব করুণার কথা

যে,–বিষয়বিষ পীতেছিল
তার,—নাম অমিয়া পিয়াইল

বিষয়,–বিষভাণ্ড কেড়ে লয়ে,–তারে,–নাম অমিয়া পিয়াইল
তারে,–বাহু পসারিয়া হিয়ায় ধরিয়া—নাম অমিয়া পিয়াইল

নিজ সেবায় লুব্ধ কৈল

নিজ,–নাম অমিয়া পিয়াইয়া—তারে,–নিজ সেবায় লুব্ধ কৈল

দিল নিজ সেবা-অধিকার

মায়ার,–লাথি খাওয়া স্বভাব যার—তারে,–দিল নিজ সেবা-অধিকার

কি বল্‌ব করুণার কথা
সে বলে আমি রাধাদাসী

যার,–গলায় ছিল মায়ার ফাঁসি—সে বলে আমি রাধাদাসী

(মাতন)
প্রাণ-কেঁদে কেঁদে উঠ্‌ছে

প্রাণ গৌরলীলা সঙরি—প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠছে

সাজিলেন সন্ন্যাসী

গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—সাজিলেন সন্ন্যাসী
হয়ে,–তিনবাঞ্ছাপূর্ত্তি-অভিলাষী—সাজিলেন সন্ন্যাসী

হলেন এই নীলচলবাসী

কাশীমিশ্র্রাবাসে বসতি—হলেন এই নীলাচলবাসী
কাশীমিশ্রাবাসে বসতি’—
অন্তরঙ্গ-ভক্ত-সংহতি—কাশীমিশ্র্রাবাসে বসতি

হলেন এই নীলাচলবাসী
বিভাবিত দিবারাতি

ব্রজের অপূর্ণ সাধ-পূরাইতে—বিভাবিত দিবারাতি
মহাভাব-স্বরূপিণীর ভাবে—বিভাবিত দিবারাতি

জাগিয়া রজনী পোহায়

গম্ভীরা-ভিতরে গোরারায়—জাগিয়া রজনী পোহায়
স্বরূপ-রামরায়ের কণ্ঠ ধরি’—জাগিয়া রজনী পোহায়

কাঁদিয়া রজনী পোহায়

সখী,–কৃষ্ণ এল না এল না বলে—কাঁদিয়া রজনী পোহায়

কাঁদিয়া রজনী পোহায়
কিছুই দেখতে পেলাম না রে

প্রেমপুরুষোত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা—কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না রে
পাষাণ-গলান-লীলা—কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না রে
‘পাষাণ-গলান-লীলা—
চিতচোর প্রাণ গৌরাঙ্গের—পাষাণ-গলান-লীলা

এই ত তার নিদর্শন
প্রত্যক্ষ দেখ ভাই
সেই লীলার সাক্ষী দিছে

পাষাণেতে পদচিহ্ন—সেই লীলার সাক্ষী দিছে

‘‘গৌরসুন্দর নটরাজ।
শ্রীল জগন্নাথ আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে,
নাচে পরি’ ভাবরত্ন-সাজ।।’’

ভাবভূষণে বিভূষিত

ভাবনিধি শচীসুত—ভাবভূষণে বিভূষিত

একদিন আমার গৌরহরি
করিছেন জগন্নাথ দরশন

গরুড়স্তম্ভের পার্শ্বে দাঁড়াইয়ে—করিছেন জগন্নাথ দরশন

রাধিকা-ভাবিত-মতি

ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার—রাধিকা-ভাবিত-মতি

জগন্নাথের বদন চেয়ে
রাধিকা-ভাবিত-মতি

‘‘বৈবর্ণ স্তব্ধতা আর, গদ গদ বাক্যোচ্চার,’’

স্বর্ণ বর্ণ হল বিবর্ণ

জগন্নাথের বদন চেয়ে—স্বর্ণ বর্ণ হল বিবর্ণ

জ জ জ জ গ গ করে

জগন্নাথ বলতে নারে—জ জ জ জ গ গ করে

‘‘কম্প অশ্রু পুলক সঘর্ম্ম।
এই সপ্ত সাত্ত্বিকভাব, আর দুই অনুভাব,
হাস্য নৃত্য সব প্রেমধর্ম্ম।।’’

গৌর-অঙ্গে হল বেকত

সাত্ত্বিক বিকার যত—গৌর-অঙ্গে হল বেকত

বিরাম নাই বিরাম নাই

অবিরল নয়ন-ধারার—বিরাম নাই বিরাম নাই
শ্রাবণ-মেঘের ধারার—বিরাম নাই বিরাম নাই

ভাসিল রে মুখ-কমল

অবিরল নয়ন-ধারায়—ভাসিল রে মুখ-কমল
মুখকমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদ্‌-কমলে
হৃদ্‌-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ-কমলে
চরণ-কমল পাখালিয়ে—নিম্নখাল পূর্ণ হইল
গরুড়স্তম্ভের পার্শ্ব-দেশের—নিম্নখাল পূর্ণ হইল
প্রাণ-গৌরাঙ্গের নয়ন-ধারায়—নিম্নখাল পূর্ণ হইল

পাষাণ গলিয়া গেল

সেই গৌরের পদপরশে—পাষাণ গলিয়া গেল

পাষাণ-গলান-গোরা

প্রাণভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ-গলান-গোরা

(মাতন)
কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না রে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের মধুর-লীলা—কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না রে
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে ত পেলাম না রে
তখন জনম হল না রে—দেখিতে ত পেলাম না রে
‘তখন জনম হল না রে’—
যখন হল প্রকট বিহার—তখন জনম হল না রে
‘যখন হল প্রকট বিহার’—
এই মধুর-নীলাচলে—যখন হল প্রকট বিহার

তখন জনম হল না রে
কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না

কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না

নিশি দিশি জ্বলছে হিয়া

লীলা-অদর্শন-শেল—নিশি দিশি জ্বলছে হিয়া

বড় সাধে এলাম নীলাচলে

শ্রীগুরুদেবের মুখের কথা সঙরি—বড় সাধে এলাম নীলাচলে

শ্রীমুখে বলেছেন শ্রীগুরুদেব

‘‘অদ্যাপিও সেই লীলা করে গৌররায় রে।’’

আজও হতেছে সেই লীলা

শ্রীগুরুদেব বলেছেন—আজও হতেছে সেই লীলা

এলাম আমরা নীলাচলে

বড় আশায় বুক বেঁধে—এলাম আমরা নীলাচলে
ভাই ভাই ভাই মিলে—এলাম আমরা নীলাচলে

বড় সাধ দেখ্‌ব বলে

এই রথযাত্রায় গৌরাঙ্গ-বিহার—বড় সাধ দেখ্‌ব বলে

বড় সাধ মনে মনে

‘‘নীলাচলে যব মঝুনাথ।
দেখিব আপনি জগন্নাথ।।
রামরায় স্বরূপ লইয়া।
আমার গৌরাঙ্গ-কিশোরী,–রামরায় স্বরূপ লইয়া।
নিজভাব কহে উঘাড়িয়া।।’’

শুন শুন প্রাণ-সহচরী

স্বরূপ-রামরায়ের করি ধরি’ বলে—শুন শুন প্রাণ-সহচরী
জগন্নাথের রথের আগে দাঁড়ায়ে বলে—শুন শুন প্রাণ-সহচরী

এই সেই প্রাণের বংশীধারী

জগন্নাথ দেখায়ে বলে—এই সেই প্রাণের বংশীধারী
যার লার্গি’ ঝুরে মরি—এই সেই প্রাণের বংশীধারী

(মাতন)

‘‘নিজভাব কহে উঘাড়িয়া।।
আর,– মোর কি হইব হেন দিনে।
সে কথা কি শুনিব শ্রবণে।।
হায়,– প্রভু মোর সাত সম্প্রদায়।
হেরিব কীর্ত্তন উভরায়।।
মহানৃত্য-কীর্ত্তন-বিলাস।
সাত ঠাঁই হইবে প্রকাশ।।
হায়,– মোর কি এমন দশা হব।
সে লীলা কি নয়নে হেরিব।।’’

বড় সাধ লয়ে এলাম নীলাচলে

ভাই ভাই ভাই মিলে—বড় সাধ লয়ে এলাম নীলাচলে

‘‘নাচে শচীনন্দন, দেখে রূপসনাতন,’’

দেখে রূপসনাতন

জগন্নাথের রথের আগে—দেখে রূপসনাতন
‘জগন্নাথের রথের আগে’—
গৌর নাচে রাধাভাবে—জগন্নাথের রথের আগে

তাই,–দেখে রূপসনাতন

নাচে শচীনন্দন—তাই,–দেখে রূপসনাতন
রাধাপ্রেমের কত বল—তাই,–দেখে রূপসনাতন
‘রাধাপ্রেমের কত বল’—
রমণ রমণী হলৈ—রাধাপ্রেমের কত বল
নাগরে নাগরী কৈল—রাধাপ্রেমের কত বল(মাতন)

দেখে রূপসনাতন

‘‘গান করে স্বরূপ-দামোদর’’

ভাব-অনুকূল করে গানে

হেরে,–ভাবের বিকাশ বদনপানে—ভাব-অনুকুল করে গানে
ভাবনিধির মন জেনে—ভাব-অনুকূল করে গানে
ভাবনিধির মনোবৃত্তি জেনে—ভাব-অনুকূল করে গানে
চেয়ে,–ভাবের বিকাশ বদনপানে—ভাব-অনুকূল করে গানে
সুখ দিতে গৌরাঙ্গধনে—ভাব-অনবুকূল করে গানে

(মাতন)

‘‘গায় রায় রামানন্দ, মুকুন্দ মাধবানন্দ,
বাসুঘোষ গোবিন্দ শঙ্কর।।
প্রভুর দক্ষিণ পাশে, নাচে নরহরিদাসে,
বামে নাচে প্রিয় গদাধর।
নাচিতে নাচিতে প্রভু আউলাইয়া পড়ে কভু,
আবেশে ধরয়ে দোঁহার কর।।
নিত্যানন্দ মুখ হেরি, বলে প্রভু হরি হরি,
হা,–কৃষ্ণ কৃষ্ণ ডাকে উচ্চৈঃ স্বরে’’

এই ভাব গৌরাঙ্গমনে
এই ভাব ভাবনিধির মনে
পেয়েছি নব-বৃন্দাবনে

রথে জগন্নাথ হেরি’ মানে—যেন,–পেয়েছি নব-বৃন্দাবনে

তাই করে আক্ষেপ উক্তি

‘‘সেই তুমি সেই আমি সে নব-সঙ্গম হে।
তথাপি আমার মন হরে বৃন্দাবন হে।।’’

করে ধরে বলে গোরা

আবেশে ধরয়ে রায়ের করে—করে ধরে বলে গোরা
রাধিকা-ভাবিত গোরা—রায়ের,–হাতে ধরে বলে গোরা

শুন শুন ও বিশাখে
বলে কয়ে লয়ে চল

প্রাণবঁধুকে বৃন্দাবনে—বলে কয়ে লয়ে চল

(মাতন)
বড় সাধে এলাম নীলাচলে

সেই গৌর দেখ্‌ব বলে—বড় সাধে এলাম নীলাচলে
‘সেই গৌর দেখ্‌ব বলে—
জগন্নাথের রথের আগে—সেই গৌর দেখ্‌ব বলে

(মাতন)
বড় সাধে এলাম নীলাচলে
দেখিতে ত’ পেলাম না

রথযাত্রা শেষ হল—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘রথযাত্রা শেষ হল—
প্রাণ গৌর দেখ্‌তে পেলাম না—রথযাত্রা শেষ হল

(মাতন)
দুঃখের কথা কারে বা বলব
গেলাম কাশীমিশ্র-ঘরে

মনোবেদনা হৃদে ধরে—গেলাম কাশীমিশ্র-ঘরে
মনে মনে এই ভাব লয়ে—গেলাম কাশীমিশ্র-ঘরে

সবাই ত’ এসেছেন

ত্রিকালসত্য-লীলায়—সবাই ত’ এসেছেন
পরাণ গৌরাঙ্গগণ-সবাই ত’ এসেছেন

এসেছেন সব নদীয়াবাসী

শ্রীশচীমাতার আজ্ঞা লয়ে—এসেছেন সব নদীয়াবাসী
শ্রীসীতানাথের সনে—এসেছেন সব নদীয়াবাসী

এসেছেন বসু রামানন্দ

কুলীন-গ্রামী সঙ্গে লয়ে—এসেছেন বসু রামানন্দ

এসেছেন সেন শিবানন্দ

নিজগণ সঙ্গে লয়ে—এসেছেন সেন শিবানন্দ

এসেছেন ঠাকুর নরহরি

খণ্ডবাসী সঙ্গে করি’—এসেছেন ঠাকুর নরহরি

এসেছেন রাঘব পণ্ডিত

দময়ন্তী-দত্ত ঝালি লয়ে—এসেছেন রাঘব পণ্ডিত

সবাই আছেন গৌরের কাছে
তাদের কাছে গেলে সন্ধান পাব
সবাই মিলে গেলাম

এই মনে সাধ করি’—সবাই মিলে গেলাম

কোথা বা আছ হে

কোথা শান্তিপুরনাথ—কোথা বা আছ হে

প্রাণ-গৌর লয়ে কোথা আছ
কোথা আছ রাঘব পণ্ডিত

কোথা আছ সেন শিবানন্দ—কোথা আছ রাঘব পণ্ডিত

প্রাণ,–গৌর লয়ে কোথা আছ

এই কাশীমিশ্রালয়ে—প্রাণ,–গৌর লয়ে কোথা আছ

কোথা আছ পণ্ডিত বক্রেশ্বর

কোথা আছ কাশীমিশ্র—কোথা আছ পণ্ডিত বক্রেশ্বর

কেউ ত’ সাড়া দিলে না

কত না ডাকলাম—কেউ ত’ সাড়া দিলে না

কত ব্যাকুল হয়ে ডাকলাম

এলাম গম্ভীরা-দ্বারে—কত ব্যাকুল হয়ে ডাকলাম
কোথা স্বরূপ রামরায় বলে—কত ব্যাকুল হয়ে ডাকলাম
‘কোথা স্বরূপ রামরায় বলে—
গৌর লয়ে আছ কোথায়—কোথা স্বরূপ রামরায় বলে

(মাতন)
কেউ ত’ দিলে না সাড়া

দেখালে না প্রাণ গৌর—কেউ ত’ দিলে না সাড়া
হুতাশ হয়ে ফিরে এলাম—কেউ ত’ দিলে না সাড়া

এসেছি বড় আসা করে

নীলাচলনাথ তোমার কাছে—এসেছি বড় আশা করে
একবার দেখাও হে—এসেছি বড় আশা করে

একবার দেখাও হে

ও নীলাচলনাথ—একবার দেখাও হে
চিতচোরা সেই গৌরমূরতি—একবার দেখাও হে
আমাদের,–চিতচোরা তোমার গৌর-মূরতি—একবার দেখাও হে
সেই গৌর-মূরতি—একবার দেখাও হে
‘সেই গৌর মূরতি’—
যে মূরতি দেখে তুমিও মুগ্ধ—সেই গৌর-মূরতি

একবার দেখাও হে

রথে চলতে চলতে হয়েছিলে অচল—একবার দেখাও হে

দেখাও সেই গৌর-মূরতি

যে মূরতি দেখে তুমিও মুগ্ধ—দেখাও সেই গৌর-মুরতি
রাধাভাবদ্যুতি-সুবলিত—দেখাও সেই গৌর-মূরতি

আমরা যে নদীয়াবাসী

গৌররূপ যে ভালবাসি—আমরা যে নদীয়াবাসী(মাতন)

একবার দেখা দাও

ওহে নীলাচলনাথ—একবার দেখা দাও
ওহে বলরাম নিত্যানন্দ—একবার দেখা দাও
চিতচোরা গৌর লয়ে—একবার দেখা দাও
এই জগমোহন—একবার দেখা দাও
এই গরুড়স্তম্ভের পার্শ্বদেশে—একবার দেখা দাও
মধুর-নটন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও

(মাতন)
কেউ যে কথা কইছ না

তবে কি গৌর দেখাবে না—কেউ যে কথা কইছ না

কেবা গৌর দেখাবে

কার কাছে যাব রে—কেবা গৌর দেখাবে
কে এমন বান্ধব আছে—কেবা গৌর দেখাবে
আমাদের এই জগমাঝে—আমার বল্তে আর কে আছে
সুখের সুখী দুঃখের দুঃখী—আমার বল্তে আর কে আছে

কোথায় আছ,–পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব
কিছুই ত’ জানতাম না

কেবা জগন্নাথ কোথা নীলাচল—কিছুই ত’জানতাম না

কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন

এই রথযাত্রা-কালে—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
দারুণ,–সংসার-কূপ হতে তুলে লয়ে—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
গৌর-লীলা জানাইলেন—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
‘গৌর-লীলা জানাইলেন—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
‘গৌরলীলা—জানাইলেন’—
এই রথযাত্রায়—গৌর-লীলা জানাইলেন
ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—গৌর-লীলা জানাইলেন

ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে

দেখাবে বলে বলেছিলে—ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে

একবার দেখা দাও

লুকাইয়ে কর্ছ খেলা—একবার দেখা দাও
এনেছ যদি কৃপা করে—একবার দেখা দাও
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও
‘কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে’—
দেখা দাও প্রাণগৌর-সঙ্গে—কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে

(মাতন)
হৃদিপটে এঁকে লব

শ্রীগুরুগৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদিপটে এঁকে লব

পাগল হয়ে বেড়াব

ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে বেড়াব
গৌরপ্রেমের পাগল হয়ে—দেশ বিদেশে বেড়াব

যারে দেখ্ব তারে বল

‘‘একবার—‘‘গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।’
শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাইগৌরহরিবোল।।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ