‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শ্রীশ্রীজগন্নাথের শ্রীমন্দিরে
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শচীসূত গুণধাম।
এই ধ্যান, এই জপ এই লব নাম।।’’
প্রাণভরে গাও ভাইরে—আমার শচীসূত গুণদাম
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—আমার শচীসূত গুণধাম
অদ্বয় ব্রহ্ম শ্রীনন্দনন্দন—হলেন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
কলিতে গৌরাঙ্গ নাম
রাম শ্যাম গৌরাঙ্গ নাম
মর্যাদা, লীলা, প্রেম পুরুষোত্তম—রাম শ্যাম গৌরাঙ্গ নাম
লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র
প্রেম পুরুষোত্তম শ্রীগৌরাঙ্গ—লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র
ত্রেতায় রাম দ্বাপরে শ্যাম—এই কলিতে গৌরাঙ্গ নাম
বড় অপরূপ রহস্য ভাইরে
নিগূঢ় গৌরাঙ্গ-লীলার—বড় অপরূপ রহস্য ভাইরে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দের—চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল
যে আমারে যৈছে ভজ্বে—আমি তারে তৈছে ভজ্ব
যে আমায় যেমন করে ভজ্বে—আমি তার,–ভজনের প্রতিদান দিব
ব্রজগোপিকার ভজনে—সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হল
ব্রজগোপিকার ভজনের—প্রতিদান দিতে নারিল
ঋণী হয় ভাগবতে কয়
হইল ইচ্ছার উদ্গম
বলে,–কে আমায় মুগ্ধ করে
আমি তো ভুবন-মোহন—বলে,–কে আমায় মুগ্ধ করে
কৈছন সুখে তিঁহ ভোর রে।।’’
সেই প্রেমের মাধুরী কেমন
সেই প্রেমে কিবা সুখ
কি করিবে না পাইয়া ওর রে।।’’
কতই না চেষ্টা করিল—কিছুতেই আস্বাদিতে নারিল
এ বাসনা পূর্ণ কভু নয় রে ।।’’
এই,–আশ্রয় জাতীয় সুখাস্বাদন—আমা হতে হবে না
আশ্রয়জাতীয় ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
মহাভাব স্বরূপিণীর ভাবে—বিভাবিত হতে হবে
নদীয়াতে করল উদয় রে।।’’
রাধাভাব কান্তি হরি—হলেন গৌরাঙ্গ শ্রীহরি
দিতে,–রাধাপ্রেমের প্রতিদান—হল,–শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম
বিলাসের তনু—বলরাম নিত্যানন্দ
ত্রেতায় লক্ষ্মণ, দ্বাপরে বলরাম—এই কলিতে নিত্যানন্দ নাম
পরতত্ত্ব নির্দ্দেশক স্বরূপ—মহাবিষ্ণু শ্রীঅদ্বৈত
অভিন্নব্রজ নবদ্বীপে—সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
প্রচারিতে নিজ নাম ধর্ম্ম—সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
‘প্রচারিতে নিজ নাম ধর্ম্ম’—
আস্বাদিতে রাধাপ্রেম ধর্ম্ম—প্রচারিতে নিজ নাম ধর্ম্ম
ব্রজ-গোপ গোপী সনে—নবদ্বীপে অবতীর্ণ—
প্রচারিতে নিজ নামমহিমা—শ্রীনবদ্বীপে অবতীর্ণ
‘প্রচারিতে নিজ নামমহিমা’—
আস্বাদিতে নিজ মাধুর্য্য সীমা—প্রচারিতে নিজ নামমহিমা
করিলেন নামপ্রেমের প্রচার
নিত্যানন্দ হরিদাস দ্বারে—করিলেন নামপ্রেমের প্রচার
করিলেন কাজী দলন
করি নগর সংকীর্ত্তন—করিলেন কাজী দলন
জগাই-মাধাইকে করিলেন নিজজন
তদের দুর্ব্বৃত্ততা ঘুচাইয়ে—জগাই-মাধাইকে করিলেন নিজজন
আমনি প্রাণ কেঁদে উঠ্ল
প্রেমাবতার গৌরহরির—অমনি প্রাণ কেঁদে উঠ্ল
সাজিলেন সন্ন্যাসী
কলিহত জীবের লাগি’—সাজিলেন সন্ন্যাসী
কাশীমিশ্র্রালয়ে বসতি
রাধাভাবে বিভাবেত দিবারাতি—কাশীমিশ্রালয়ে বসতি
এই মধুর নীলাচলে—নিগূঢ় গৌরাঙ্গলীলা
মধুর নীলাচল মানি—চার ব্রহ্মের বিহার ভূমি
সচল ব্রহ্ম গৌরহরি
দুই স্বরূপের দুই দান
কলি-জীবের দুঃখ ঘুচাবার লাগি’—দুই স্বরূপের দুই দান
সচল দেন নাম-প্রেমামৃত—অচল দেন অধরামৃত
মধুর শ্রীনীলাচলে—অপরূপ রহস্য ভাইরে
তার সম্বন্ধ তত্ত্ব সকলি নিগূঢ়—গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়
তার বিহার-ভূমি নিগম-নিগূঢ়
ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
যেখানে গৌর স্বরূপ প্রকট-ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
‘যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট’—
মহারাস-বিলাসের পরিণতিতে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
আমি তুমি ভুলে গিয়ে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
নবদ্বীপ-রূপে বেকত—সেই নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
ধরে নীলাচল নাম—সেই নদীয়ার নিভৃত উদ্যান
সে যে নিভৃত-গম্ভীরা—সেই উদ্যানের ঘর চোরা
অমূল্য রতন প্রাণগৌর থাকেন—সেই চোরা কুটীর গম্ভীরাতে
মধুর শ্রীনীলাচলে—মধুর গৌরাঙ্গ-বিহার
গম্ভীরা ভিতরে প্রাণ গোরারায়—জাগিয়া রজনী পোহায়
রাধাভাবে প্রাণ গোরারায়—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
স্বরূপ রামরায়ের কন্ঠ ধরি’—কাঁদিয়া রজনী পোহায়(মাতন)
বঁধু কই এল না এল না বলে—গৌরকিশোরী ভাসে নয়নজলে
রাধাভাবে মত্ত গোরাশশী—ভোগ করে দিবানিশি
কর্ণামত শ্রীগীত গোবিন্দ।
স্বরূপ রামানন্দ সনে, প্রভু মোর রাত্রিদিনে,
গায় শুনে পরম আনন্দ।।’’
আপনি হইয়া রাধা—হা কৃষ্ণ বলে কাঁদে সদা
শ্রীকৃষ্ণের বিরহ ভরে, মন্দিরে রহিতে নারে,
বাহিরে যাইতে মন ধায়।’’
ভাব নিধি প্রাণ গৌরাঙ্গের—সেই দশা হল রে
শ্রীকৃষ্ণ বেণু শুনি বনে যান।
সেই মত আচম্বিতে, বংশী পাইয়া শুনিতে,
সে হেতু বাহিরে যেতে চান।।’’
তিন দ্বার আছে রুদ্ধ, তিন ভিত্তি উচ্চ ঊর্দ্ধ,
তাহা লঙ্ঘে আবেশের বলে।
তেলেঙ্গা গাভীর মাঝে, দেখি’ গোরা রসরাজে,
পড়ি আছে শ্বাস নাহি চলে ।।’’
গম্ভীরায় নাই শচীসূত—সবাই ব্যাকুলিত চিত
প্রভু আমদের গেল কোথায়—স্বরূপাদি ইতি উতি চায়
অঙ্গ সব সঙ্কুচিত অঙ্গে।
অন্বেষিয়া ভক্তগণ, দীপ জ্বালি দরশন,
করে কূর্ম্মাকৃতি শ্রীগৌরাঙ্গে।।’’
মধুর শ্রীনীলাচলে—অপরূপ গৌরাঙ্গলীলা
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দ-এসেছেন গৌরাঙ্গরূপ ধরে
রাধাভাব কান্তি করি অঙ্গীকারে—এসেছেন গৌরাঙ্গরূপ ধরে
করিছেন জগন্নাথ দর্শন
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বে দাঁড়ায়ে—করিছেন জগন্নাথ দর্শন
শ্রীল জগন্নাথ আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে,
নাচে পরি’ ভাব-রত্ন-সাজ।।
বৈবর্ণ স্তব্ধতা আর, গদগদ বাক্যোচ্চার,
হাস্য নৃত্য সব প্রেম-ধর্ম্ম।’’
সাত্ত্বিক বিকার যত—গৌরের শ্রীঅঙ্গে হল বেকত
অবিরল নয়ন-ধারার—বিরাম নাই বিরাম নাই
এক এক ধারায় শত শত ধারা—যেন পিচকারী জল যন্ত্রধারা
অবিরাম নয়ন-ধারায়—ভাসিল রে মুখকমল
মুখ কমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদ্ কমলে
হৃদি কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ কমলে
চরণ কমল পাখালিয়ে—নিম্নখাল পূর্ণ কৈল
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বদেশের—নিম্নখাল পূর্ণ হল
সেই গৌরের পদ পরশে—পাষাণ গলিয়া গেল
প্রাণ ভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ গলানো গোরা
প্রভু নিতাই পাগল করা—পাষাণ গলানো গোরা
এই পাষাণে শ্রীপদচিহ্ন—এখনও তার নিদর্শন আছে
লীলায় শিলা গলেছে—আজও লীলার সাক্ষী আছে
সেই পাষাণে গলানো লীলা—হায়,–কিছুই দেখিতে পেলাম না
প্রাণ গৌরাঙ্গের কীর্ত্তন নটন লীলা—হায়,–কিছুই দেখিতে পেলাম না
‘কীর্ত্তন নটন লীলা’—
শ্রীজগন্নাথের রথের আগে—কীর্ত্তন নটন লীলা
সচল অচলের খেলা—কিছুই দেখিতে পেলাম না
দুজনে দুজনায় ভোগ করে
সচল আর অচল—দু’জনে দু’জনায় ভোগ করে
পরাণ পাইনু বলে,–গৌর নাচে রাধাভাবে
জগন্নাথ হেরি’ গৌরহর—আস্বাদে যুগল-মাধুরী
দেখি’ মুগ্ধ জগন্নাথ শ্যামরায়—জগন্নাথের আগে গৌর নেচে যায়
জগন্নাথ বংশীধারী—কখনও তো দেখে নাই
রাধা সঙ্গে মিলিলে কি মাধুরী—কখনও তো দেখে নাই
হায়,–দেখিতে তো পেলাম না
সচল অচলের খেলা—হায়,–দেখিতে তো পেলাম না
সেই লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
ত্রিকাল সত্য লীলায় দেখ্ব বলে—এলাম আমরা ভাই ভাই মিলে
গৌর দেখ্ব নয়নভরে
ভক্ত-সন্মিলন-দিনে-গৌর দেখ্ব নয়নভরে
ঝালি—সমর্পম-দিনে—গৌর দেখ্ব নয়নভরে
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন-দিনে—গৌর দেখ্ব নয়নভরে
শ্রীজগন্নাথের রথের আগে—গৌর দেখ্ব নয়নভরে
পরাণনাথ পাইনু বলে—গৌর নাচে রথের আগে
গৌর দেখ্ব নয়নভরে
পাগলা প্রভুর আনুগত্যে—গৌর দেখ্ব নয়নভরে
দর্শন আশা না মিটিল—কিন্তু,–রথযাত্রা শেষ হল
এই জগন্নাথের মন্দিরে এসে—আজ,–প্রাণে বড় আশা জেগেছে
ওহে ও শ্রীজগন্নাথ—একবার দেখাও হে
তোমার সেই,–চিতচুরি করা মুরতিখানি—একবার দেখাও হে
‘তোমার সেই,–চিত চুরিকরী মুরতিখানি’—
যা দেখে রথে মুগ্ধ হয়েছিলে—তোমার সেই,–চিত চুরি করা মুরতিখানি
বড় আশা করে এসেছি মোরা—একবার দেখাও হে
শ্রীগৌড়মণ্ডল হতে,–বড় আশা করে এসেছি মোরা—একবার দেখাও হে
আমাকে দেখে কি সাধ মিটে না—বলিলে তুমি বল্তে পার
গোপবেশ রেণুকর—আমি যে,–নবকিশোর নটবর
আমরা যে সব নদীয়াবাসী
তোমার,–গৌরস্বরূপ ভালবাসি—আমরা যে সব নদীয়াবাসী
ওহে ও জগন্নাথ—একবার দেখাও হে
সেই চিতচোরা মুরতিখানি—একবার দেখাও হে
চিতচোরা মুরতিখানি—একবার দেখাও হে
কিছুই তো জান্তাম না
সংসার-অন্ধকূপে পড়েছিলাম—কিছুই তো জানতাম না
কোথা নীলাচল কে জগন্নাথ—কিছুই তো জান্তাম না
ওই,–নীলাজচল গৌরের কিবা লীলা—কিছুই তো জানতাম না
সংসার-কূপ হতে তুলে—সঙ্গে করে নিয়ে এলে
এই,–রথযাত্রায় এই নীলাচলে—সঙ্গে করে নিয়ে এলে
প্রাণের নিতাই গৌর লয়ে—আজ লুকাইয়ে করিছ খেলা
আমাদের অধিকার নাই নিজগুণে—যদি,–কৃপা করে এনেছ টেনে
যার নাম শুনায়ে ঘরের বাহির করেছ—আজ একবার দেখা দাও
এই জগন্নাথের জগমোহনে—আজ,–গৌর সনে দেখা দাও
হা,–পরমকরুণ শ্রীগুরুদেব,–আজ,–গৌর সনে দেখা দাও
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদি পটে এঁকে লব
ভাই ভাই ভাই মিলে—দেশ বিদেশে কেঁদে বেড়াব
ম্লেচ্ছ যবনাদি নর নারী—ঘরে দেখ্ব তারে বলব
তোমার,–কৃপাদত্ত নামাবলী—যারে দেখ্ব তারে বল্ব
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
নিতাই গৌর রাধে শ্যাম—জগন্নাথ বলরাম
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।
বোল হরিবোল, গৌরহরি বোল।।
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
এই ত কলিযুগের মহামন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এই ত পরিত্রাণের মূলমন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
ও যে বেদের নিগূঢ়-মর্ম্ম—কলিযুগোচিত এই নাম-ধর্ম্ম
গীতা আদি করিয়া মন্থন।’’
জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এ নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
নামাচিন্তামণি কৃষ্ণ—অভেদ নাম নামী
‘নামচিন্তামণি কৃষ্ণ’—
চৈতন্য রসবিগ্রহ—নামচিন্তামণি কৃষ্ণ
জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এ নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
অদ্বয় ব্রহ্ম নন্দনন্দন পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দ পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
সচ্চিদানন্দনঘন মুরতি দেখ্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সচ্চিদানন্দনঘন মুরতি দেখ্তে—
নিত্য নবকৈশোর নটবর—সচ্চিদানন্দঘন মুরতি দেখ্তে
গোপবেশ বেণুকর—সচ্চিদানন্দঘন মুরতি দেখ্তে
পরিপূর্ণ কৃষ্ণ প্রাপ্তি করতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
আ’মরি,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে’—
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দে—সমন্ধের বন্ধনে বাঁধতে
ব্রজবাসিগণের মত—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে
পুত্র সখা প্রাণপতি—এই,–সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধতে
কৃষ্ণ বশ করে অধীন করতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
কাল দেশ নিয়ম নাই সর্ব্ব সিদ্ধি হয় রে।।’’
হেলায় শ্রদ্ধায় নিলে নাম—পূরে ভাই মনস্কাম
চিত্তশুদ্ধি সর্ব্বভক্তি সাধন উদ্গম রে।।
কৃষ্ণ-প্রমোদ্গম প্রেমামৃত আস্বাদন রে।
কৃষ্ণপ্রাপ্তি সেবামৃত সমুদ্রে মজ্জন রে।।’’
অপরূপ নাম—সঙ্কীর্ত্তনের মহিমা পাপ হরে আর আপ হরে
মধুর,–হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—পাপ হরে আর তাপ হরে
যদি কেউ,–নাম বল্ব মনে করে—আগে তার,–পাপ তাপ সব পলায় দূরে
সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে অন্ধকার-রাশির মত—আগে তার,–পাপ তাপ সব
পাপ হরে আর তাপ হরে
চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
মধুর,–হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
অনাদিকালের,–দুর্ব্বাসনা—মালিন্য ক্ষালন করে—চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
ভুক্তি মুক্তি বাসনারূপ—অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
চতুর্ব্বিধা মুক্তি অষ্টসিদ্ধি—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
আমায় গ্রহণ কর কর বলে—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
নামরসে যে মজেছে—সে,–ফিরেও তো চায় না রে
কোটি কোটি,–ব্রহ্মানন্দ তার আগে নহে এক বিন্দু রে।।’’
ব্রহ্মার,–মানসপুত্র সনক সনাতন আদি—তারাই ত আদি ব্রহ্মজ্ঞানী
শ্রীকৃষ্ণের,–পদস্থিত চন্দন—তুলসীর গন্ধে—তাদের ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল রে
তাদের,–ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল—দাস হতে বাসনা হল
ভব-মহাদামাগ্নি নির্ব্বাপণ করে
ত্রিতাপ—জ্বালা যায় রে দূরে
মধুর,–হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—ত্রিতাপ-জ্বালা যায় রে দূরে
আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক, আধিভৌতিক—ত্রিতাপ—জ্বালা যায় রে দূরে
ভুবনমঙ্গল নাম গানে—সর্ব্ব অমঙ্গল হরে
কৃষ্ণ-প্রাপ্তির অনুকূল—সকল মঙ্গল উদয় করে
যত,–বহির্ম্মুখ—চিত্তবৃত্তি—শ্রীকৃষ্ণপদে উন্মুখ করে
প্রাকৃত,–ভোগ বাসনা হতে তুলে লয়ে—শ্রীকৃষ্ণপদে উন্মুখ করে
কায় মন বাক্য দ্বারায় শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
সর্ব্ব সাধন-শকতি দিয়ে—শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
‘সর্ব্ব সাধন-শকতি দিয়ে’—
হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—সর্ব্ব সাধন-শকতি দিয়ে
সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে
প্রেমামৃত সিঞ্চন করে—সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে
হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—ভাবভূষণে ভূষিত করে
কম্পঅশ্রু পুলকাদি—নানা,–ভাবভূষণে ভূষিত করে
ভাবভূষণে ভূষিত করে—গোপীভাবামৃতে লুব্ধ করে
প্রাকৃত,–দেহাভিমান যায় রে দূরে
দারুণ,–সংসার বন্ধনের একমাত্র কারণ—প্রাকৃত,–দেহাভিমান যায় রে দূরে
রাধাদাসী অভিমান দেয় রে
প্রাকৃত-দেহাভিমান ঘুচাইয়ে—রাধাদাসী অভিমান দেয় রে
ব্রজে গোপীদেহ দিয়ে—রাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি করায়
হল,–শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম
কলিতে গৌরাঙ্গ নাম
ত্রেতায় রাম দ্বাপরে শ্যাম—কলিতে গৌরাঙ্গ নাম
অপরূপ রহস্য ভাই রে
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলার—অপরূপ রহস্য ভাই রে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দের—চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল
যে আমারে যৈছে ভজ্বে—আমি তারে তৈছে ভজব
যে আমায় যেমন করে ভজ্বে—আমি তার,–ভজনের প্রতিদান দিব
ব্রজগোপীকার ভজনে—সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইল
ব্রজগোপিকার ভজনের—প্রতিদান দিতে নারিল
ঋণী হয় ভাগবতে কয়
হইল ইচ্ছার উদ্গম
কৈছন সুখে তিঁহ ভোর রে।
এ তিন বাঞ্ছিত ধন, ব্রজে না হৈল পূরণ,
কি করিব না পাইয়া ওর রে।।’’
সে প্রেমের মাধুরী কেমন
সেই প্রেমে কিবা সুখ
কি করিবে না পাইয়া ওর রে।।
তাই,–ভাবিয়া দেখিল মনে, শ্রীরাধার স্বরূপ বিনে,
‘‘এ বাসনা পূর্ণ কভু নয় রে ।’’
এ তিন বাঞ্ছিত পূরণ—আমা হতে হবে না
আমি তো লীলার বিষয় বটি—আমা হতে হবে না
আশ্রয়-জাতীয় সুখাস্বাদন—আমা হতে হবে না
আশ্রয় জাতীয় ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
মহাভাব-স্বরূপিণীর ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
নদীয়াতে করল উদয় রে ।।’’
রাধাভাব কান্তি হরি’—হলে গৌরাঙ্গ শ্রীহরি
দিতে,–রাধাপ্রেমের প্রতিদান—শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম
বলরাম নিত্যানন্দ
বিলাসের তনু—বলরাম নিত্যানন্দ
ত্রেতায় লক্ষণ দ্বাপরে বলরাম—কলিতে নিত্যানন্দ নাম
সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
অভিন্নব্রজ শ্রীনবদ্বীপে—সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
ব্রজগোপ গোপী সনে—নবদ্বীপে অবতীর্ণ
প্রচারিতে এই নাম ধর্ম্ম—নবদ্বীপে অবতীর্ণ
‘প্রচারিতে এই নাম ধর্ম্ম,–
আস্বাদিতে রাধাপ্রেমমর্ম্ম—প্রচারিতে এই নাম ধর্ম্ম
‘প্রচারিতে নিজ নাম-মহিমা’—
আস্বাদিতে নিজ মাধুর্য্য-সীমা—প্রচারিতে নিজ নাম-মহিমা
শ্রীনিতাই গৌরাঙ্গ আমার—করুণাসিন্ধু অবতার
জগজনে পরাওল হার রে ।।’’
নাম-চিন্তামণির মালা গেঁথে –যারে তারে পরাইল
গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—যারে তারে পরাইল
‘গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—’
দন্তেতৃণ গলবাসে করজোড়ে—গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে
নিজ,–নাম-চিন্তামণির মালা গেঁথে—যারে তার পরাওল
পেয়েছ সাধের মানব-জনম
চৌরাশীলক্ষযোনি করে ভ্রমণ—পেয়েছ সাধের মানব-জনম
এ ত’,–রিপুসেবায় জনম নয় রে
শৃগাল কুক্কুরের মত—এ ত’,–রিপুসেবার জনম নয় রে
সুদুর্ল্লভ মানব-জনম—এ যে,–শ্রীহরিভজনের জনম
ভজন-যোগ্য এই মানবদেহ—দেবতারাও বাঞ্ছা করে
ধর নামের মালা পর
ত্রিতাপ হর—ধর নামের মালা পর
পর হরি-নামের মালা
আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলে—পর হরি-নামের মালা
এবার,–গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে বলে—পর হরি-নামের মালা
বলে,–ও কলিহতজীব—পর হরি—নামের মালা
দূরে যাবে ত্রিতাপজ্বালা—পর হরি-নামের মালা
যাবে জ্বালা পাবে নন্দলালা—পর হরি-নামের মালা
হয়ে ব্রজবালা পাবে নন্দলালা—পর হরি-নামের মালা
করুণার বালাই লয়ে মরে যাই—আ’মরি কি করুণা রে
কলিজীবের দ্বারে দ্বারে—আপনি যেচে বলে দিচ্ছে
আপনার প্রাপ্তির উপায়—আপনি যেচে বলে দিচ্ছে
জগজনে পরাওল হার রে।।
কলিতিমিরাকুল, অখিল লোক দেখি’,
বদন-চাঁদ পরকাশ রে।’’
কলিতিমিরে জগৎ আচ্ছন্ন দেখি’—বদনচাঁদের প্রকাশ কর্লেন
কলিঘোর,–অমানিশা বিনাশিতে—বদনচাঁদের প্রকাশ কর্লেন
জগজনতাপ বিনাশ রে।’’
কলিহত-পতিত-জীবের—সকল তাপ দূর করিলেন
নিজ-নামে কেঁদে কাঁদাইয়ে—সকল তাপ দূর করিলেন
হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে—সকল তাপ দূর করিলেন
‘হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে’—
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে
আপনার নামে আপনি কাঁদে
আপনি কি মধুর তাই—আপনার নামে আপনি কাঁদে
রসময় শ্রীগৌরাঙ্গের—এবার মনে সাধ উঠেছে
আমি কত মধুর তাই—এবার আমি আস্বাদিব
আমার,–নাম রূপ গুণ লীলা—এবার আমি আস্বাদিব
নামের মাধুরী আস্বাদিতে—আপনার নামে আপনি কাঁদে
হরিবোলে কেঁদে কাঁদাইয়ে—সকল তাপ দূর করিলেন
গবাসী নরনারীর—সকল তাপ দূর করিলেন
বনের পশু কেঁদে লুটায়
মধুর গৌরাঙ্গলীলায়—বনের পশু কেঁদে লুটায়
নিজহিংসা স্বভাব ভুলি’—সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
ঝারিখণ্ডপথে গৌর যায়—সিংহ ব্যাঘ্র কেঁদে লুটায়
আমার মনে এই ত জাগে
শ্রীগুরুদেবের প্রেরণায়—আমার মনে এই ত জাগে
নিগূঢ় গৌরাঙ্গলীলা—স্বরূপ জাগান লীলা
জীবের,–নিত্য রাধাদাসী-স্বরূপ—জাগাইতে এসেছে
গৌরাঙ্গরূপ ধরে—জাগাইতে এসেছে
ভাবনিধি গৌরাঙ্গ হেরে—স্বরূপ জেগে উঠেছে
নিত্য রাধাদাসী—স্বরূপ জেগে উঠেছে
এই রাধারমণ বলে—চিনতে পেরেছে
এই ত প্রাণের রাধাবরণ—ঢাকা গেছে কালবরণ
সাক্ষী দিচ্ছে বাঁকা নয়ন—ঢাকা গেছে কালবরণ
রাই অঙ্গ ছটা লেগে—ঢাকা গেছে কাল বরণ
এ কি অপরূপ হেরি—কেন দেখি দণ্ডধারী
পড়েছে মনে পড়েছে—রাইপ্রেমে ঋণী হয়েছে
প্রেম ঋণ সুধ্বে বলে—তাই হয়েছে দণ্ডধারী
দেখে যা লো ও কিশোরী—তাই হয়েছে দণ্ডধারী
‘দেখে যা লো ও কিশোরী’—
তোর,–বঁধু হয়েছে দণ্ডধারী—দেখে যা লো ও কিশোরী
তোর,–ঋণের দায়ে দণ্ডধারী—দেখে যা লো ও কিশোরী
ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে তারা
বলে,–চল প্রাণের রাধারমণ
যার ধন তার দিই—বলে,–চল প্রাণের রাধারমণ
চল প্রাণের রাধারমণ—তার ঠাঁই মেগে লব
আমার প্রাণ গৌরহরির—কি বল্ব করুণার কথা
রোপলি ঠামহি ঠাম রে।’’
নিজভক্ত-কল্পতরু—স্থানে স্থানে রোপন করলেন
যত বহির্ম্মুখ দেখে নিজ—ভক্তগণের জন্ম দিলেন
রোপলি ঠামছি ঠাম রে।
তছু পদতল, অবলম্বনে পন্থিক,
পূরণ নিজ নিজ কাম রে।।’’
ভক্ত-কল্পতরু,–ছায়ায় বসে জুড়াইল
ত্রিতাপে তাপিত জীব তার—ছায়ার বসে জুড়াইল
দারুণ,–সংসার-তাপে শ্রান্ত পথিক—তার,–ছায়ায় বসে জুড়াইল
শ্রীগুরু-কল্পতরুর—ছায়ায় বসে জুড়াইল
‘শ্রীগুরু-কল্পতরুর’—
ভক্তরূপী—শ্রীগুরু-কল্পতরুর
তাপ জুড়াইবার আর উপায় নাই
শ্রীগুরু-পদাশ্রয় বিনে ভাই—তাপ জুড়াবার আর উপায় নাই
কৃষ্ণ-কৃপা বিনে কোন কার্য্যসিদ্ধি নয় রে।
কৃষ্ণ-কৃপা দূরে রহু সংসার না যায় ক্ষয় রে।।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব রে।
গুরু-কৃষ্ণ-প্রসাদে পায় ভক্তিলতা বীজ রে।।’’
অন্তর্য্যামী আর ভক্তশ্রেষ্ঠ—দুইরূপে করেন কৃপা
গুরুরূপে জানান উপাসনা—অন্তর্য্যামীরূপে করেন প্রেরণা(মাতন)
আমার প্রাণ গৌরহরির—কি বলব করুণার কথা
ঐছন পহুঁক বিলাস রে।’’
যা চতুর্দ্দশভুবনে অভাব—তাই,–কলিহত-জীবে দিল
যা গোলোকে গোপনে ছিল—তাই,–কলিহত—জীবে দিল
যা ব্রহ্মাদিরও সুদুর্ল্লভ—কলিহত-জীবে দিল
পঞ্চমপুরুষার্থ প্রেমা—কলিহত-জীবে দিল
যা,–আপনাকে বশ করে অধীন করা—কলিহত-জীবে দিল
গিয়ে,–আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে—যারে তারে যেচে দিল
আমি,–বাঁধা পড়্তে এসেছি রে
প্রেমবন্ধনে বাঁধ মোরে—বাঁধা পড়্তে এসেছি রে
প্রেমবন্ধনে বাঁধ মোরে—আ’মরি কি আত্মদান
কত কত অবতার হয়েছে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
সেধে যেচে প্রেম দিতে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
সেধে যেছে আপনা দিতে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
সেধে যেচে বাঁধা পড়্তে—শুনেছ কি কোন-কালেতে
আ’মরি কি আত্মদান—শুনেছ কি কোন-কালেতে
প্রেমাবতার গৌরহরির—যাইরে দানের বলিহারি
আমার প্রাণ গৌরহরির—কি বল্ব করুণার কথা
তার,—নাম অমিয়া পিয়াইল
বিষয়,–বিষভাণ্ড কেড়ে লয়ে,–তারে,–নাম অমিয়া পিয়াইল
তারে,–বাহু পসারিয়া হিয়ায় ধরিয়া—নাম অমিয়া পিয়াইল
নিজ,–নাম অমিয়া পিয়াইয়া—তারে,–নিজ সেবায় লুব্ধ কৈল
মায়ার,–লাথি খাওয়া স্বভাব যার—তারে,–দিল নিজ সেবা-অধিকার
সে বলে আমি রাধাদাসী
যার,–গলায় ছিল মায়ার ফাঁসি—সে বলে আমি রাধাদাসী
প্রাণ গৌরলীলা সঙরি—প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠছে
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—সাজিলেন সন্ন্যাসী
হয়ে,–তিনবাঞ্ছাপূর্ত্তি-অভিলাষী—সাজিলেন সন্ন্যাসী
কাশীমিশ্র্রাবাসে বসতি—হলেন এই নীলাচলবাসী
কাশীমিশ্রাবাসে বসতি’—
অন্তরঙ্গ-ভক্ত-সংহতি—কাশীমিশ্র্রাবাসে বসতি
বিভাবিত দিবারাতি
ব্রজের অপূর্ণ সাধ-পূরাইতে—বিভাবিত দিবারাতি
মহাভাব-স্বরূপিণীর ভাবে—বিভাবিত দিবারাতি
গম্ভীরা-ভিতরে গোরারায়—জাগিয়া রজনী পোহায়
স্বরূপ-রামরায়ের কণ্ঠ ধরি’—জাগিয়া রজনী পোহায়
সখী,–কৃষ্ণ এল না এল না বলে—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
কিছুই দেখতে পেলাম না রে
প্রেমপুরুষোত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা—কিছুই দেখ্তে পেলাম না রে
পাষাণ-গলান-লীলা—কিছুই দেখ্তে পেলাম না রে
‘পাষাণ-গলান-লীলা—
চিতচোর প্রাণ গৌরাঙ্গের—পাষাণ-গলান-লীলা
প্রত্যক্ষ দেখ ভাই
সেই লীলার সাক্ষী দিছে
পাষাণেতে পদচিহ্ন—সেই লীলার সাক্ষী দিছে
শ্রীল জগন্নাথ আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে,
নাচে পরি’ ভাবরত্ন-সাজ।।’’
ভাবনিধি শচীসুত—ভাবভূষণে বিভূষিত
করিছেন জগন্নাথ দরশন
গরুড়স্তম্ভের পার্শ্বে দাঁড়াইয়ে—করিছেন জগন্নাথ দরশন
ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার—রাধিকা-ভাবিত-মতি
রাধিকা-ভাবিত-মতি
জগন্নাথের বদন চেয়ে—স্বর্ণ বর্ণ হল বিবর্ণ
জগন্নাথ বলতে নারে—জ জ জ জ গ গ করে
এই সপ্ত সাত্ত্বিকভাব, আর দুই অনুভাব,
হাস্য নৃত্য সব প্রেমধর্ম্ম।।’’
সাত্ত্বিক বিকার যত—গৌর-অঙ্গে হল বেকত
অবিরল নয়ন-ধারার—বিরাম নাই বিরাম নাই
শ্রাবণ-মেঘের ধারার—বিরাম নাই বিরাম নাই
অবিরল নয়ন-ধারায়—ভাসিল রে মুখ-কমল
মুখকমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদ্-কমলে
হৃদ্-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ-কমলে
চরণ-কমল পাখালিয়ে—নিম্নখাল পূর্ণ হইল
গরুড়স্তম্ভের পার্শ্ব-দেশের—নিম্নখাল পূর্ণ হইল
প্রাণ-গৌরাঙ্গের নয়ন-ধারায়—নিম্নখাল পূর্ণ হইল
সেই গৌরের পদপরশে—পাষাণ গলিয়া গেল
প্রাণভরে বল ভাই তোরা—পাষাণ-গলান-গোরা
প্রাণ-গৌরাঙ্গের মধুর-লীলা—কিছুই দেখ্তে পেলাম না রে
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে ত পেলাম না রে
তখন জনম হল না রে—দেখিতে ত পেলাম না রে
‘তখন জনম হল না রে’—
যখন হল প্রকট বিহার—তখন জনম হল না রে
‘যখন হল প্রকট বিহার’—
এই মধুর-নীলাচলে—যখন হল প্রকট বিহার
কিছুই দেখ্তে পেলাম না
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখ্তে পেলাম না
লীলা-অদর্শন-শেল—নিশি দিশি জ্বলছে হিয়া
শ্রীগুরুদেবের মুখের কথা সঙরি—বড় সাধে এলাম নীলাচলে
শ্রীগুরুদেব বলেছেন—আজও হতেছে সেই লীলা
বড় আশায় বুক বেঁধে—এলাম আমরা নীলাচলে
ভাই ভাই ভাই মিলে—এলাম আমরা নীলাচলে
এই রথযাত্রায় গৌরাঙ্গ-বিহার—বড় সাধ দেখ্ব বলে
দেখিব আপনি জগন্নাথ।।
রামরায় স্বরূপ লইয়া।
আমার গৌরাঙ্গ-কিশোরী,–রামরায় স্বরূপ লইয়া।
নিজভাব কহে উঘাড়িয়া।।’’
স্বরূপ-রামরায়ের করি ধরি’ বলে—শুন শুন প্রাণ-সহচরী
জগন্নাথের রথের আগে দাঁড়ায়ে বলে—শুন শুন প্রাণ-সহচরী
জগন্নাথ দেখায়ে বলে—এই সেই প্রাণের বংশীধারী
যার লার্গি’ ঝুরে মরি—এই সেই প্রাণের বংশীধারী
আর,– মোর কি হইব হেন দিনে।
সে কথা কি শুনিব শ্রবণে।।
হায়,– প্রভু মোর সাত সম্প্রদায়।
হেরিব কীর্ত্তন উভরায়।।
মহানৃত্য-কীর্ত্তন-বিলাস।
সাত ঠাঁই হইবে প্রকাশ।।
হায়,– মোর কি এমন দশা হব।
সে লীলা কি নয়নে হেরিব।।’’
ভাই ভাই ভাই মিলে—বড় সাধ লয়ে এলাম নীলাচলে
জগন্নাথের রথের আগে—দেখে রূপসনাতন
‘জগন্নাথের রথের আগে’—
গৌর নাচে রাধাভাবে—জগন্নাথের রথের আগে
নাচে শচীনন্দন—তাই,–দেখে রূপসনাতন
রাধাপ্রেমের কত বল—তাই,–দেখে রূপসনাতন
‘রাধাপ্রেমের কত বল’—
রমণ রমণী হলৈ—রাধাপ্রেমের কত বল
নাগরে নাগরী কৈল—রাধাপ্রেমের কত বল(মাতন)
হেরে,–ভাবের বিকাশ বদনপানে—ভাব-অনুকুল করে গানে
ভাবনিধির মন জেনে—ভাব-অনুকূল করে গানে
ভাবনিধির মনোবৃত্তি জেনে—ভাব-অনুকূল করে গানে
চেয়ে,–ভাবের বিকাশ বদনপানে—ভাব-অনুকূল করে গানে
সুখ দিতে গৌরাঙ্গধনে—ভাব-অনবুকূল করে গানে
বাসুঘোষ গোবিন্দ শঙ্কর।।
প্রভুর দক্ষিণ পাশে, নাচে নরহরিদাসে,
বামে নাচে প্রিয় গদাধর।
নাচিতে নাচিতে প্রভু আউলাইয়া পড়ে কভু,
আবেশে ধরয়ে দোঁহার কর।।
নিত্যানন্দ মুখ হেরি, বলে প্রভু হরি হরি,
হা,–কৃষ্ণ কৃষ্ণ ডাকে উচ্চৈঃ স্বরে’’
এই ভাব ভাবনিধির মনে
পেয়েছি নব-বৃন্দাবনে
রথে জগন্নাথ হেরি’ মানে—যেন,–পেয়েছি নব-বৃন্দাবনে
তথাপি আমার মন হরে বৃন্দাবন হে।।’’
আবেশে ধরয়ে রায়ের করে—করে ধরে বলে গোরা
রাধিকা-ভাবিত গোরা—রায়ের,–হাতে ধরে বলে গোরা
বলে কয়ে লয়ে চল
প্রাণবঁধুকে বৃন্দাবনে—বলে কয়ে লয়ে চল
সেই গৌর দেখ্ব বলে—বড় সাধে এলাম নীলাচলে
‘সেই গৌর দেখ্ব বলে—
জগন্নাথের রথের আগে—সেই গৌর দেখ্ব বলে
দেখিতে ত’ পেলাম না
রথযাত্রা শেষ হল—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘রথযাত্রা শেষ হল—
প্রাণ গৌর দেখ্তে পেলাম না—রথযাত্রা শেষ হল
গেলাম কাশীমিশ্র-ঘরে
মনোবেদনা হৃদে ধরে—গেলাম কাশীমিশ্র-ঘরে
মনে মনে এই ভাব লয়ে—গেলাম কাশীমিশ্র-ঘরে
ত্রিকালসত্য-লীলায়—সবাই ত’ এসেছেন
পরাণ গৌরাঙ্গগণ-সবাই ত’ এসেছেন
শ্রীশচীমাতার আজ্ঞা লয়ে—এসেছেন সব নদীয়াবাসী
শ্রীসীতানাথের সনে—এসেছেন সব নদীয়াবাসী
কুলীন-গ্রামী সঙ্গে লয়ে—এসেছেন বসু রামানন্দ
নিজগণ সঙ্গে লয়ে—এসেছেন সেন শিবানন্দ
খণ্ডবাসী সঙ্গে করি’—এসেছেন ঠাকুর নরহরি
দময়ন্তী-দত্ত ঝালি লয়ে—এসেছেন রাঘব পণ্ডিত
তাদের কাছে গেলে সন্ধান পাব
সবাই মিলে গেলাম
এই মনে সাধ করি’—সবাই মিলে গেলাম
কোথা শান্তিপুরনাথ—কোথা বা আছ হে
কোথা আছ রাঘব পণ্ডিত
কোথা আছ সেন শিবানন্দ—কোথা আছ রাঘব পণ্ডিত
এই কাশীমিশ্রালয়ে—প্রাণ,–গৌর লয়ে কোথা আছ
কোথা আছ কাশীমিশ্র—কোথা আছ পণ্ডিত বক্রেশ্বর
কত না ডাকলাম—কেউ ত’ সাড়া দিলে না
এলাম গম্ভীরা-দ্বারে—কত ব্যাকুল হয়ে ডাকলাম
কোথা স্বরূপ রামরায় বলে—কত ব্যাকুল হয়ে ডাকলাম
‘কোথা স্বরূপ রামরায় বলে—
গৌর লয়ে আছ কোথায়—কোথা স্বরূপ রামরায় বলে
দেখালে না প্রাণ গৌর—কেউ ত’ দিলে না সাড়া
হুতাশ হয়ে ফিরে এলাম—কেউ ত’ দিলে না সাড়া
নীলাচলনাথ তোমার কাছে—এসেছি বড় আশা করে
একবার দেখাও হে—এসেছি বড় আশা করে
ও নীলাচলনাথ—একবার দেখাও হে
চিতচোরা সেই গৌরমূরতি—একবার দেখাও হে
আমাদের,–চিতচোরা তোমার গৌর-মূরতি—একবার দেখাও হে
সেই গৌর-মূরতি—একবার দেখাও হে
‘সেই গৌর মূরতি’—
যে মূরতি দেখে তুমিও মুগ্ধ—সেই গৌর-মূরতি
রথে চলতে চলতে হয়েছিলে অচল—একবার দেখাও হে
যে মূরতি দেখে তুমিও মুগ্ধ—দেখাও সেই গৌর-মুরতি
রাধাভাবদ্যুতি-সুবলিত—দেখাও সেই গৌর-মূরতি
গৌররূপ যে ভালবাসি—আমরা যে নদীয়াবাসী(মাতন)
ওহে নীলাচলনাথ—একবার দেখা দাও
ওহে বলরাম নিত্যানন্দ—একবার দেখা দাও
চিতচোরা গৌর লয়ে—একবার দেখা দাও
এই জগমোহন—একবার দেখা দাও
এই গরুড়স্তম্ভের পার্শ্বদেশে—একবার দেখা দাও
মধুর-নটন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও
তবে কি গৌর দেখাবে না—কেউ যে কথা কইছ না
কার কাছে যাব রে—কেবা গৌর দেখাবে
কে এমন বান্ধব আছে—কেবা গৌর দেখাবে
আমাদের এই জগমাঝে—আমার বল্তে আর কে আছে
সুখের সুখী দুঃখের দুঃখী—আমার বল্তে আর কে আছে
কিছুই ত’ জানতাম না
কেবা জগন্নাথ কোথা নীলাচল—কিছুই ত’জানতাম না
এই রথযাত্রা-কালে—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
দারুণ,–সংসার-কূপ হতে তুলে লয়ে—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
গৌর-লীলা জানাইলেন—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
‘গৌর-লীলা জানাইলেন—কৃপা করে সঙ্গে আন্লেন
‘গৌরলীলা—জানাইলেন’—
এই রথযাত্রায়—গৌর-লীলা জানাইলেন
ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—গৌর-লীলা জানাইলেন
দেখাবে বলে বলেছিলে—ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে
লুকাইয়ে কর্ছ খেলা—একবার দেখা দাও
এনেছ যদি কৃপা করে—একবার দেখা দাও
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও
‘কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে’—
দেখা দাও প্রাণগৌর-সঙ্গে—কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে
শ্রীগুরুগৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদিপটে এঁকে লব
ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে বেড়াব
গৌরপ্রেমের পাগল হয়ে—দেশ বিদেশে বেড়াব
শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাইগৌরহরিবোল।।’’