(আশ্বিন-শুক্লাদ্বাদশী)
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
গৌরপ্রিয় রঘুনাথভট্টের—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
তাঁর—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
তুলনা দিবার নাহি ঠাঁই।।’’
গৌরপ্রিয় রঘুনাথভট্ট—তাঁর পরিচয় শুন ভাই
বারাণসী ছিল যাঁর বাস।।’’
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমপাত্র—তপন-মিশ্রের পুত্র
গোসাঞি রঘুনাথ ভট্ট—তপন-মিশ্রের পুত্র
পরাণ-গৌরাঙ্গ-সনে—যাঁর গৃহে সনাতনের মিলন
গৌরের,–বৃন্দাবন হতে ফিরবারকালে—যাঁর গৃহে সনাতনের মিলন
মধুর-নীলাচল হতে—বৃন্দাবনে যাতায়াতের পথে
নিজ-গৃহে পেয়ে গৌরচন্দ্রে—পদ সেবে পরমানন্দে
সেদিন হতে রঘুনাথের—আর কিছু ভাল লাগে না
করিলেন পিতার সেবনে।’’
কবে পাব চৈতন্য-চরণে—সদাই জাগে মনে মনে
কতক্ষণে যাব রে
নিতাই-গৌর-চরণে শরণ লব—কতক্ষণে যাব রে
গৃহে করে পিতার সেবনে—গৌর-নাম জপে নিশি-দিনে
মন,–বাঁধা পড়েছে গৌর-চরণে—গৌর-নাম জপে নিশি-দিনে
কবে পাব চৈতন্য-চরণে—নাম জপে আর বলে মনে
ঠাঁই দিবেন শ্রীচরণে—কৃপা হবে কতদিনে
রঘুনাথ,–নিশি-দিশি জপে মনে—কবে,–ঠাঁই দিবেন শ্রীচরণে
আমায়,–কৃপা হবে কতদিনে—কবে,–ঠাঁই দিবেন শ্রীচরণে
নিশি-দিশি মনে জপে—কবে যাব নীলাচলে
প্রাণ-গৌর দেখব নয়ন-ভরে—কবে যাব নীলাচলে
গৃহে করে পিতার সেবা—আর,–নিশি-দিশি এই জপমালা
এইরূপে,–
তাঁর অপ্রকট হৈলে, আসি’ পুনঃ নীলাচলে,
রহিলেন প্রভুর-চরণে।।’’
গৌর-দরশন পেয়ে—পড়িলেন লোটাইেয়
তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে—পড়িল গৌর-পদতলে
নিজ-দাসে করি’ কোলে—প্রাণে-গৌর ভাসে নয়ন-জলে
পাঠাইয়া দিলা বৃন্দাবনে।’’
রূপ-সনাতনের সঙ্গ পাবে—যাও রঘুনাথ যাও ব্রজে
নীলাচল ছেড়ে আসবার কালে—ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে
প্রভুর যুগল-চরণ ধরে—ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে
গৌরের,–রসের বদন পানে চেয়—ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে
ঐ হরিবোলা রসের বদন,–আর,–কতদিনে দেখতে পাব
প্রভুর,–চরণ দুই হৃদে ধরে—কাঁদতে কাঁদতে আইলা ব্রজে
মুখে,–হা গৌর প্রাণ-গৌর বলে—কাঁদতে কাঁদতে আইলা ব্রজে
রঘুনাথ বলেন কাতরে—প্রভু পাঠাইয়ে দিলেন মোরে
মধুর-নীলাচল হতে—প্রভু পাঠায়ে দিলেন মোরে
তোমাদের সঙ্গ-সুখ-লাগি’—প্রভু পাঠায়ে দিলেন মোরে
‘‘দুই গোসাঞি তাঁরে পাইয়া, পরম আনন্দ হইয়া,’’
শ্রীরূপ সনাতন—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
ভট্ট-রঘুনাথে বুকে ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
প্রাণ-গৌর-গুণ গাও বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
শ্রীরূপ-সনাতন ভট্ট-রঘুনাথ-সনে—নিরজনে কাঁদে ব্রজবনে
সঙরি গৌর-লীলা-গুণে—নিরজনে কাঁদে ব্রজবনে
পরস্পর গলা ধরে—নিরজনে কাঁদে ব্রজবনে
গৌরের,–নীলাচল-লীলা সঙরিয়ে—নিরজনে কাঁদে ব্রজবনে
রাধাকৃষ্ণ-প্রেমরসে ভাসে
অশ্রু পুলক কম্প,’’
মহাভাব-নিধি হৃদে ধরে
‘‘অশ্রু পুলক কম্প, নানা-ভাবাবেশে অঙ্গ,
রাধাকৃষ্ণ-কথার উল্লাসে।।
সকল-বৈষ্ণব-সঙ্গে, যমুনা-পুলিন-রঙ্গে,
একত্র হইয়া প্রেম-সুখে।
শ্রীমদ্ভাগবত-কথা, অমৃত-সমান গাথা,
নিরবধি শুনে যাঁর মুখে।।’’
পিয়ায় ভাগবতামৃত—সেই ত’ রঘুনাথ ভট্ট
‘পিয়ায় ভাগবতামৃত’—
পরাণ-গৌরাঙ্গগণে—পিয়ায় ভাগবতামৃত
শুনান ভাগবত-কথা
অমৃত সমান-গাথা—শুনান ভাগবত-কথা
শ্রীভাগবত-কথা শুনে—প্রেম-সুখে সবে ভাসে
সুস্বর-অমৃতময়-বাণী।
পশু-পক্ষী পুলকিত, যাঁর মুখে কথামৃত,
শুনিতে পাষাণ হয় পানি।।’’
রঘুনাথ-মুখে ভাগবত শুনি’—পাষাণ গলে হয় পানি
রঘুনাথ-ভট্ট-গোসাঞি—কত’—গুণের গুণমণি
তাঁর মুখে ভাগবত শুনে—পানি বহে পাষাণে
শ্রীগোসাঞি ভট্ট-রঘুনাথ।
এ রাধাবল্লভ বলে, পড়িনু বিষয়-ভোলে,
কৃপা করি’ কর আত্মসাৎ।।’’
রঘুনাথ-ভট্ট গোসাঞি—এইবার আমায় কৃপা কর
প্রাণ-গৌর-গোবিন্দ-কথায়—কৃপা করি’ মাতাও আমায়
নিজ-গুণে কর কৃপা করি’—যেন,–প্রাণে প্রাণে সদা ঝুরি
গৌরের,–বারাণসী-বিহার সঙরি’—যেন,–প্রাণে প্রাণে সদা ঝুরি