শ্রীশ্রী রাধাষ্টমী কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(ভাদ্র শুক্লা অষ্টমী)

শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাই গৌরহরি বোল।
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(১)

আজ,–‘‘প্রিয়ার জনম,- দিবস আবেশে,
আনন্দে ভরল তনু।’’

মহাভাবনিধি গৌরহরি

অশেষ-বিশেষে রস আস্বাদনকারী—মহাভাবনিধি গৌরহরি

আজ হইল ললিতা-সুন্দরী

আস্বাদিতে রাধা-জন্মতিথি—আজ হইল ললিতা-সুন্দরী

গদারাধার জন্মলীলা আস্বাদে

শ্রীললিতা-ভাবে বিভোর হয়ে—গদারাধার জন্মলীলা আস্বাদে

‘‘নদীয়া-নগরে, বৃষভানুপুরে,
উদয় করল জনু।।’’

নদীয়া হল বৃষভানুপুর

প্রাণ-গৌরাঙ্গের ভোগাবেশে—নদীয়া হল বৃষভানুপুর

‘‘গদাধর-মুখে, হেরি পুনঃ পুনঃ
নাচে গোরা নটরায়।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

রাধা-গদাধরের বদন হেরে—আনন্দ আর ধরে না রে
শ্রীরাধার জন্মতিথি স্মরণ করে—আনন্দ আর ধরে না রে

গৌর নাচে আনন্দ-মনে

হেরি গদাধর-বদনে—গৌর নাচে আনন্দ-মনে

মনে মনে বলে রে

গদাধর-বদন হেরে—মনে মনে বলে রে

আজ তোমার জন্মতিথি

ও আমার প্রাণ-কিশোরী—আজ তোমার জন্মতিথি
আজ ভাদ্রশুক্লাষ্টমী—আজ তোমার জন্মতিথি

‘‘ভাব অনুভব, করি সঙ্গী সব’’

সবার স্বভাব জেগে উঠ্‌ল রে

ভাবনিধির ভাবাবেশ দেখে—সবার স্বভাব জেগে উঠ্‌ল রে

সবাই হল গোপনারী

মহাভাবনিধির বদন হেরি—সবাই হল গোপনারী
নদীয়া হল বৃষভানুপুরী—সবাই হল গোপনারী

দাঁড়াইল গদাধরে ঘেরি

সবাই হয়ে ব্রজে-সহচরী—দাঁড়াইল গদাধরে ঘেরি

পরস্পর সবাই বলে
কর মঙ্গল আচরণ

আজ আমাদের রাইএর জনম—কর মঙ্গল আচরণ

‘‘নদীয়া-নগরে; বৃষভানুপূরে,
মহামহোৎসব গায়।।’’

রাধা-জন্মলীলা গান করে

ভাবনিধিকে সুখ দিবার তরে—রাধা-জন্মলীলা গান করে

‘‘দধির সহিত, হলদি মিলিত,
কলসে কলসে ঢালি।’’

জন্মতিথি প্রকট করে

ভাবনিধিকে ভোগ দিবার তরে—জন্মতিথি প্রকট করে

‘‘প্রিয়গণ নাচে, নানা কাচ কাচে,
ঘন দিয়া হুলাহুলি।।’’

সবে,–অনুকূল সাজ সাজ্‌ল রে

শ্রীরাধার জন্ম—উৎসবে—সবে,–অনুকূল সাজ সাজল রে

সবাই,–উলু উলু ধ্বনি করে

ভানুপুর-নারী-স্বভাবে—সবাই,–উলু উলু ধ্বনি করে
শ্রীরাধার জন্মদিন জেনে—সবাই,–উলু উলু ধ্বনি করে

তাইতে তারা উলু দিতেছে

রাধাসঙ্গিনী-দাসীর স্বভাব জেগেছে—তাইতে তারা উলু দিতেছে
স্বভাব না জাগ্‌লে উলু কেন দিবে—তাইতে তারা উলু দিতেছে

‘‘গৌরাঙ্গ-নাগর, রসের সাগর,
ভাবের তরঙ্গ তায়।’’

নানা-ভাবের তরঙ্গ উঠে

মহাভাবনিধি-গৌরাঙ্গে—নানা-ভাবের তরঙ্গ উঠে
অশেষ-বিশেষে লীলা আস্বাদিতে—নানা-ভাবের তরঙ্গ উঠে

‘‘জগৎ ভাসিল, এ হেল আনন্দে,
এ দাস বল্লবী গায়।।’’

আজ,–সবাই ভাস্‌ল আনন্দেতে

নদীয়া-বৃষভানুপুরে—আজ,–সবাই ভাস্‌ল আনন্দেতে
কিশোরী-কিঙ্করী-ভাবে—আজ,–সবাই ভাস্‌ল আনন্দেতে

(২)

‘‘ভাদ্র-শুক্লাষ্টমী তিথি,’’

যাই রে তিথির বালাই যাই রে

‘‘ভাদ্র-শুক্লাষ্টমী তিথি’’—যাই রে তিথির বালাই যাই রে

‘‘ভাদ্র-শুক্লাষ্টমী তিথি, বিশাখা-নক্ষত্র তথি,’’

তিথি-নক্ষত্রের বলিহারী

যার,-যোগে আইলা ভানুদুলারী—তিথি-নক্ষত্রের বলিহারী

‘‘শ্রীমতী-জনম সেই কালে।
মধ্যদিন গত রবি, দেখিয়া বালিকা-ছবি,
জয় জয় দেই কুতূহলে।।’’

সবাই,–উলু উলু জয় দেয় রে

রাধিকা-বালিকা-ছবি হেরে—সবাই,–উলু উলু জয় দেয় রে
বৃষভানুপুরের নারী সবে—সবাই,–উলু উলু জয় দেয় রে

নয়নে,–ধারা বহে কুলু কুলু

সবাই,–ধ্বনি করে উলু উলু—নয়নে,–ধারা বেহ কুলু কুলু

‘‘বৃষভানুপুরে, প্রতি ঘরে ঘরে,
জয় রাধে শ্রীরাধে বলে।’’

বৃষভানুপুরে উঠ্‌ল রোল

জয় রাধে শ্রীরাধে বোল—বৃষভানুপুরে উঠ্‌ল রোল

বলে,–জয় জয় ভানুদুলারী

অসামান্য-রূপমাধুরী—বলে—জয় জয় ভানুদুলারী
বুঝি,–লাবণ্য এল মূরতি ধরি—বলে,–জয় জয় ভানুদুলারী

‘‘কন্যার চাঁদমুখ দেখি, রাজা হইল মহাসুখী

আনন্দ আর ধরে না রে

বৃষভানুর অন্তরে—আনন্দ আর ধরে না রে
কন্যার চাঁদমুখ হেরে—আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘কন্যার চাঁদমুখ দেখি, রাজা হইল মহাসুখী,
দান দেই ব্রাহ্মণ-সকালে।।’’

তোমরা,–আশীর্ব্বাদ কর সেব

তনয়া,–চিরজীবী হয়ে থাকে—তোমরা,–আশীর্ব্বাদ কর সবে

‘‘নানা-দ্রব্য হস্তে করি, নগরের যত নারী,
আইলা সবে কীর্ত্তিদা-মন্দিরে।’’

সবে,–ধেয়ে আইলা কীর্ত্তিদা-মন্দিরে

হ্লাদিনীর আগমনে,–আনন্দ সবার মনে—সবে,–ধেয়ে আইল কীর্ত্তিদা-মন্দিরে
বৃষভানু-বালিকা দেখবার তরে—সবে,–ধেয়ে আইল কীর্ত্তিদা-মন্দিরে

‘‘অনেক-পুণ্যের ফলে, দৈব হইলা অনুকূলে,
এ হেন বালিকা মিলে তোরে।।’’

এ হেন বালিকা পেলে

ভাগ্যবতী ও কীর্ত্তিদে—এ হেন বালিকা পেলে
অনেক,–পুণ্যফলে দৈববলে—এ হেন বালিকা পেলে

এ হেন বালিকা নাহি মিলে

মহা,–পুণ্যবতী না হইলে—এ হেন বালিকা নাহি মিলে

মোদের,–‘‘মনে হেন লয়, এই ত’ মানুষ নয়’’

এত রূপ কি মানুষের হয়

এ যে দিখে,–অখিল-মাধুর্য্যের আলয়—এত রূপ কি মানুষের হয়

‘‘কোন্‌ ছলে কেবা জনমিলা।’’

এ যে আনন্দের মুরতি মানি

তোর বালিকা কীর্ত্তিদারাণী—এ যে আনন্দের মূরতি মানি

বুঝি,–আনন্দ এল প্রকট হয়ে

ও কীর্ত্তিদা তোর তনয়-রূপে—বুঝি,–আনন্দ এল প্রকট হয়ে
না জানি কারে বা আনন্দ দিতে—বুঝি,–আনন্দ এল প্রকট হয়ে

‘‘ঘনশ্যাম-দাস কয়, না করিহ সংশয়,
কৃষ্ণ-প্রিয়া সদয় হইলা।।’’

এ ত নয় সামান্য বালিকা

এ যে কৃষ্ণ-প্রাণাধিকা—এ ত সামান্য বালিকা

প্রকট ভানুতনয়া-রূপে

আনন্দ-ঘনে আনন্দ দিতে—প্রকট ভানুতনয়া-রূপে

(৩)

‘‘এ তোর বালিকা, চাঁদের কলিকা,’’

এ ত তোর নয় বালিকা

ভাগ্যবতী ও-কীর্ত্তিদা—এ ত তোর নয় বালিকা
এ যে,–অকলঙ্ক-চাঁদের কলিকা—এ ত তোর নয় বালিকা

এ বালিকা নয় চাঁদের কলি

দিনে দিনে উঠ্‌বে ফুটি—এ বালিকা নয় চাঁদের কলি

‘‘এ তোর বালিকা, চাঁদের কলিকা,’’
দেখিয়া জুড়ায়ে আঁখি।
হেন মনে লয়ে, সদাই হৃদয়ে,
পসরা করিয়া রাখি।।

মনে হয়,–রাখি হৃদয়-পসরা করে

তোর এই,–চাঁদের কলিকা বালিকারে—মনে হয়,–রাখি হৃদয়-পসরা করে

‘‘শুন বৃষভানু-প্রিয়ে।
কি হেন করিয়া, কোলেতে রেখেছ,
এ হেন সোণার ঝিয়ে।।’’

একা ভোগে কি আশ মিটে

এ হেন নিধি পেয়ে—একা ভোগে কি আশ মিটে

আমাদের মনে হয় কোলে করি

চাঁদের কলিকা তোমার দুলারী—আমাদের মনে হয় কোলে করি

দে আমাদের কোলেদে গো

‘‘তড়িত জিনিয়া, বদন সুন্দর,’’

ও-মা তোর বালিকা-বদন

যেন তড়িৎ হয়েছে ঘন—ও-মা তোর বালিকা-বদন

এ যে স্থির-বিজুরী সত্য

তড়িতের ধর্ম্ম হয়েছে নষ্ট—এ যে স্থির বিজুরী সত্য

তড়িত ত চঞ্চল বটে

তোর তনয়াতে স্থির হয়েছে—তড়িত ত চঞ্চল বটে

‘‘তড়িত জিনিয়া, বদন সুন্দর,
মুখে হাসি আছে আধা।’’

স্বাভাবিক হাসি লেগে আছে

তড়িত জিনিয়া সুন্দর-মুখে—স্বাভাবিক হাসি লেগে আছে

‘‘গণকে যে নাম, সে নাম রাখুক,
আমরা রাখিলাম রাধা।।’’

বলে দিছে ওর নাম রাধা

ওর মুখের হাসি আধা—বলে দিছে ওর নাম রাধা

আমরা, –তাই নাম রাখলাম রাধা

দেখি,–ওর মুখের হাসি আধা—আমরা,–তাই নাম রাখলাম রাধা

‘‘স্বরূপ লক্ষণ, অতি বিলক্ষণ,
তুলনা দিব বা কিয়ে।’’

জগতে কিছু নাই তুলনা দিবার

ও কীর্ত্তিদা তোর বালিকার—জগতে কিছু নাই তুলনা দিবার

‘‘মহাপুরুষের প্রেয়সী হইবে,
সোঙরিয়া যদি জীয়ে।।’’

মহাপুরুষের প্রেয়সী হবে

তোর,–তনয়া যদি বেঁচে থাকে—মহাপুরুষের প্রেয়সী হবে
স্বরূপ-লক্ষণে মনে হতেছে—মহাপুরুষের প্রেয়সী হবে
প্রাণে প্রাণে—কে যেন বলে দিছে—মহাপুরুষের প্রেয়সী হবে

‘‘দুহিতা বলিয়া, দুঃখ না ভাবিহ,
ইহোঁ উদ্বারিবে বংশ।
জ্ঞানদাস কহে, শুনেছি কমলা,
ইহাঁরা অংশের অংশ।।’’

কমলা ইহার অংশের অংশ

সাধু-মুখে শুনেছি আমরা—কমলা ইহাঁর অংশের অংশ

এই যে বৃষভানু-নন্দিনী

সর্ব্ব-লক্ষ্মীময়ী ঠাকুরাণী—এই য়ে বৃষভানু-নন্দিনী

সর্ব্ব,–লক্ষ্মীময়ী ঠাকুরাণী

বৃষভানু-রাজনন্দিনী—সর্ব্ব,–লক্ষ্মীময়ী ঠাকুরাণী

কীর্ত্তিদা তোর তনয়া মানি

সর্ব্ব,–লক্ষ্মীময়ী ঠাকুরাণী—কীর্ত্তিদা তোর তনয়া মানি

(৪)

‘‘বৃষভানুপুরে আজ, আনন্দ হইল।’’

আজ,–বৃষভানুপুরে আনন্দ

এসেছেন,–আনন্দ হয়ে মূর্ত্তিমন্ত—আজ,–বৃষভানুপুরে আনন্দ

আজ তাই,–ভানুপুরে আনন্দ মানি

আজ,–আসিয়াছেন হ্লাদিনী—আজ তাই,–ভানুপুরে আনন্দ মানি

‘‘বৃষভানুপুরে আজ, আনন্দ হইল।’’

আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

আজ,–মূর্ত্তিমতী হ্লাদিনীর আগমনে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
বৃষভানুপুরে ঘরে ঘরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
বৃষভানুজার আগমনে—আনন্দের পাথার বায় যায় রে

‘‘ভাগ্যবতী কীর্ত্তিদা, দুহিতা প্রসবিল।।’’
সুধীর বিজুরী জিনি, অঙ্গের বরণ।’’

আজ,–আবির্ভূতা ধীর-বিজুরী

আজ,–ভানুদুলারী নাম ধরি—আজ,–আবির্ভূতা ধীর-বিজুরী

‘‘কত চাঁদ জিনি মুখ, মুদিত নয়ন।।’’

দারুণ-বিধির এ কি সৃজন

এমন সুন্দরীর অন্ধ নয়ন—দারুণ বিধির এ কি সৃজন

কেন অন্ধ করেছে

এত সৌন্দর্য্য দিয়ে—কেন অন্ধ করেছে
বুঝি কিছ রহস্য আছে—কেন অন্ধ করেছে

ওর,–গড়া বিধির অদ্ভুত সৃজন

কীর্ত্তিদা তোর বালিকা-বদন—ওর,–গড়া বিধির অদ্ভুত সৃজন
এত সৌন্দর্য্য তার মুদিত নয়ন—ওর,–গড়া বিধির অদ্ভুত সৃজন

একঠাঁই করেছে

জগতে সৌন্দর্য্য সব—একঠাঁই করেছে
ভানুদুহিতা-রূপেতে—একঠাঁই করেছে

এত,–সৌন্দর্য্য তায় মুদিত নয়ন

এর,–বুঝি কিছু আছে কারণ—এত,–সৌন্দর্য্য তায় মুদিত নয়ন

বুঝি কিছু রহস্য আছে

কেন আঁখি মুদা আছে—বুঝি কিছু রহস্য আছে
অবশ্য ইহার রহস্য আছে।

‘‘কত চাঁদ জিনি মুখ, মুদিত নয়ন।।
অপরূপ শুনি যায়, সবে দেখিবারে।।’’

জন্মিয়াছে বৃষভানু-রাজার

অপরূপ-রূপের পাথার—জন্মিয়াছে বৃষভানু-রাজার
জগতের সৌন্দর্য্য-ভাণ্ডার—জন্মিয়াছে বৃষভানু-রাজার
শুভক্ষণে কন্যা-জন্মিয়াছে বৃষভানু-রাজার

‘‘অপরূপ শুনি যায়, সবে দেখিবারে।
নানা উপহার লইয়া, যৌতুক ব্যবহারে।।
দেবকন্যা আসে যেন, ব্রাহ্মণীর বেশে।’’

আসে,–ব্রজবাসিনী ব্রাহ্মণী-বেশে

দেবকন্যা,–বালিকা দেখিবার আশে—আসে,–ব্রজবাসিনী ব্রাহ্মণী-বেশে
নৈলে,–দেখ্‌বে কোন্‌ অধিকারে—আসে—ব্রজবাসিনী ব্রাহ্মণী-বেশে

বালিকা,–দেখাইবার নাই অধিকার

বিনা ব্রজবণিতা—বালিকা,–দেখাইবার নাই অধিকার

দেখ্‌তে ত কেউ পায় না

ব্রজবাসীর আনুগত্য বিনা—দেখতে ত কেউ পায় না

‘‘আসিয়া দেখয়ে রূপ, মনের হরিষে।।’’

বালিকা,–রূপ দেখে মনের হরিষে

দেবকন্যা আসি ব্রাহ্মণী-বেশে—বালিকা,–রূপ দেখে মনের হরিষে

তারা,–আঁখি ফিরাইতে নারে

কন্যার চাঁদ-বদন হেরে—তারা—আঁখি ফিরাইতে নারে

মনে মনে গণে রে

এ কি অপরূপ রূপ রে—মনে মনে গণে রে

‘‘যোগমায়া আসিয়া, কহিল যশোদারে।’’

পথপানে আছে চেয়ে

যা,–যোগমায়া পৌর্ণমাসী—পথপানে আছে চেয়ে
ব্রজবিলাসিনী আস্‌বে কবে—পথপানে আছে চেয়ে
‘ব্রজবিলাসিনী আস্‌বে কবে’—
কতদিনে মিলাব শ্যাম-নবঘনে—ব্রজবিলাসিনী আস্‌বে কবে

মা,– যোগমায়ার প্রাণ কাঁদ্‌ছে সদাই

দেখিবারে,–মেঘ বিজুরী একঠাঁই—মা,–যোগমায়ার প্রাণ কাঁদছে সদাই

শুনি অপরূপ-রূপের কথা

ভাগ্যবতী কীর্ত্তিদাসুতার—শুনি অপরূপ-রূপের কথা

ভাবিছেন মনে মনে
তবে কি এল রে

হ্লাদিনী মূরতি ধরে—তবে কি এল রে
একবার দেখে আসি গিয়ে—তবে কি এল রে

প্রাণে প্রাণে জান্‌তে পেয়ে

রাই রসবতী এসেছে—প্রাণে প্রাণে জান্‌তে পেয়ে

প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল রে

শ্যাম-নবঘনে মিলবার তরে—প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল রে
তাই,–‘‘যোগমায়া আসিয়া, কহিল যশোদারে।’’

যশোমতী চল চল

নিজ-তনয়ে কোলে কর—যশোমতী চল চল

চল যাই দেখি গিয়া

কেমন অপরূপ তনয়া—চল যাই দেখি গিয়া
বৃষভানু-পুরে,–অপরূপ কীর্ত্তিদাসুতায়—চল যাই দেখি গিয়া

‘‘পুত্রকোলে যশোবতী যায় দেখিবারে।।’’

বুঝি বা,–মনে হল যশোদার

নন্দরাজ-বৃষভানুর প্রতিজ্ঞা—বুঝি বা,–মনে হল যশোদার
বিবাহ দিব,–আমার তনয় তোমার তনয়ায়—বুঝি বা,–মনে হল যশোদা তাই বুঝি মনে হল

তাই,–‘‘পুত্রকোলে যশোমতী যায় দেখিবারে।।’’

যাই একবার দেখে আসি

‘‘কৃষ্ণ কোলে লইয়া রাণী দাঁড়ায় সম্মুখে।’’

যশোদা দাঁড়াল কীর্ত্তিদা আগে

বৃষভানু-মহলে এসে—যশোদা দাঁড়াল কীর্ত্তিদা আগে
নিজপুত্র কোলে করে—যশোদা দাঁড়াল কীর্ত্তিদা আগে

বালক,–স্বভাবতঃ চঞ্চল বটে
কোল হতে যায় নেমে

রাধিকা-অঙ্গ-পরশ-আশে—কোল হতে যায় নেমে

বুঝি,–মলয়-পবন সহায় হল

অঙ্গ-গন্ধ নাশায় পশিল বুঝি,–মলয়-পবন সহায় হল

অমনি,–বালিকার নাশায় পশিল

শ্রীকৃষ্ণ-অঙ্গ-গন্ধ—অমনি,–বালিকার নাশায় পশিল

‘‘নয়ন মেলিয়া রূপ দেখে অনিমিখে।।’’

মলয়-পবন বলে দিলে

লীলা-শক্তির ইঙ্গিতে—মলয়-পবন বলে দিলে
মা,–যোগমায়ার ইঙ্গিতে—মলয়-পবন বলে দিলে

আর কেন আঁখি মুদে

যারে দেখ্‌বে দেখ তাকে—আর কেন আঁখি মুদে

রাধিকার,–আঁখির বুঝি সঙ্কল্প ছিল

প্রথমে,–আনের মুখ না দেখিব—রাধিকার,–আঁখির বুঝি সঙ্কল্প ছিল
বিনা আমার শ্যাম-নবঘন,–রাধিকার,–আঁখির বুঝি সঙ্কল্প ছিল

যেমনি,–যশোদা-দুলাল এল সম্মুখে

মায়ের কোল হতে নেমে—যেমনি,–যশোদা-দুলাল এল সম্মুখে
তাঁর অঙ্গ-পরশ-আশে—যেমনি,–যশোদা-দুলাল এল সম্মুখে

অমনি আঁখি জানতে পেল

আমার,–দেবতার মূরতি কাছে এল—অমনি আঁখি জানতে পেল

আঁখি এখন খুলে গেল

এতক্ষণ বুজে ছিল—আঁখি এখন খুলে গেল
তার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হল—তাই,–আঁখি এখন খুলে গেল

শ্রীরাধিকা চেয়ে দেখ্‌ল

কৃষ্ণ তারে পরশিল—শ্রীরাধিকা চেয়ে দেখ্‌ল
শ্রীকৃষ্ণ-অঙ্গ-পরশ গেল—শ্রীরাধিকা চেয়ে দেখ্‌ল

আর আঁখি রইলনা আঁধা

কৃষ্ণ-দরশ-লাগি ছিল মুদা—আর আঁখি রইল না আঁধা

তাই নয়ন মুদিত ছিল

আর কাকেও দেখ্‌বে না বলে—তাই ত নয়ন মুদিত ছিল

আনে দেখা ত তার স্বভাব নয়
ও-নয়নের স্বভাব নয়
দেখ্‌বে না সে আনের বদন
আন দেখ্‌ব না নয়নে

বংশী-গানামৃত-ধাম বিনে—আন দেখ্‌বে নয়নে

‘‘নয়ন মেলিয়া রূপ দেখে অনিমিখে।।’’

আঁখি হল পলক হারা

পেয়ে তার নয়ন-তারা—আঁখি হল পলক হারা

সরে না রাধিকার নয়ন-তারা

বদন হেরে হয়েছে ভোরা—সরে না রাধিকার নয়ন-তারা

‘দোঁহে দোঁহার ঈষৎ ইঙ্গিত শুভক্ষণে।।’’

ইচ্ছা করে হয় নাই

এই প্রথম নয়ন মিলন—ইচ্ছা করে হয় নাই
কেউ যেন ঘটায়েছে—ইচ্ছা করে হয় নাই

সেই ত ঘটায়েছে

যে,–সঙ্গে করে এনেছে—সেই ত ঘটায়েছে

কিছু জানে না তারা দু’জনা

সব,–যোগমায়ার ঘটনা—কিছু জানে না তারা দু’জনা

মা,–যোগমায়ার ঘটনা

আর কেউ জানে না—মা,–যোগমায়ার ঘটনা

বসে বসে ভাবছিল

লীলা-শক্তি যোগমায়া—বসে বসে ভাবছিল

কতদিনে সাধ পূর্ণ হবে
আজ সাধ মিটিল

পূর্ব্বরাগ ঘটিল—আজ সাধ মিটিল
‘পূর্ব্বরাগ ঘটিল’—নয়নে নয়নে মিলন—পূর্ব্বরাগ ঘটিল

কি আনন্দ যোগমায়ার মনে

এই,–পহিলহি মিলনে—কি আনন্দ যোগমায়ার মনে

‘দোঁহে দোঁহার ঈষৎ শুভক্ষণে।
যদুনন্দন-দাস নব-পূর্ব্বরাগ ভণে।।’’

এ যে,–পহিলহি রাগ রে

শ্রীরাধাগোবিন্দ-লীলার—এ যে,–পহিলহি রাগ রে
নয়নে নয়নে মিলন—এ যে,–পহিলহি রাগ রে
‘নয়নে নয়নে মিলন’—
বৃষভানু-দুলালী নন্দ-দুলালের—নয়নে নয়নে মিলন

এ যে,–পহিলহি রাগ রে

মা,–যোগমায়া ঘটাইল—এ যে,–পহিলহি রাগ রে

দিনে দিনে বাড়বে

অবধি ত কেউ পাবে না—দিনে দিনে বাড়্‌বে
নব নব নব হয়ে—দিনে দিনে বাড়্‌বে

‘‘আজু,–কি আনন্দ ব্রজ-ভরিয়া রে।’’
ও,–ব্র্জ-ভরিয়া রে ! ব্রজ-ভরিয়া রে !!
‘‘আজু,–কি আনন্দ ব্রজ-ভরিয়া রে।
নববাস-ভূষা পরি, ধাওত গোপনারী রে,’’

আনন্দ আর ধরে না রে

বৃষভানু-পুরে-নারীর—আনন্দ আর ধরে না রে
কীর্ত্তিদা-নন্দিনী হেরে—আনন্দ আর ধরে না রে
চলে যেতে নেচে যায় রে—আনন্দ আর ধরে না রে

নাচত গোপনারী

বালিকা-বদন হেরি—নাচত গোপনারী

রহিতে না পারে ধৃতি ধরিয়া রে।।
কিবা অপরূপ-সাজে, প্রবেশে ভবন-মাঝে রে,’’

হৈ হৈ হৈ রবে

‘‘গোপগণ কাঁধে ভার করিয়া রে।
বৃষভানু-নৃপমণি, আপনা মানয়ে ধনী রে,
বালিকা-বদন-বিধু হেরিয়া রে।।’’

আনন্দ আর ধরে না রে

অমূল্য-রতন পেয়ে—আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘সুভানু সুচন্দ্র-ভানু, ধরিতে নারয়ে তনু রে,
নাচে সব গোপ তায় ঘেরিয়া রে।’’

সবার,–আনন্দ আর ধরে না রে

আনন্দময়ীর আগমনে—সবার,–আনন্দ অরা ধরে না রে

আনন্দ-সিন্ধু উথলিল

কেউ ভাসিল কেউ ডুবিল—আনন্দ-সিন্ধু উথলিল

‘‘বাজে বাদ্য নানাভাতি, গীত গায় প্রেমে মাতি রে,
বসন উড়ায় ফিরে ফিরিয়া রে।।
ঘৃত দধি দুগ্ধ সহ, হরিদ্রা-সলিল কেহ রে,
ঢালে কারু মাথে ছল করিয়া রে।
মুখরার সাধ কত, করয়ে মঙ্গল তত রে,


কৌতুক দেখয়ে নব-হরিয়া রে।।
আজু,–কি আনন্দ ব্রজ-ভরিয়া রে ।
ও,–ব্রজ-ভরিয়া রে ! ব্রজ-ভরিয়া রে !!
আজু,–কি আনন্দ ব্রজ-ভরিয়া রে।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাই-গৌরহরি বোল।



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ