যমুনা কিনারে

সুন্দরি হে তোঁ সুবুধি সেয়ানি

সুন্দরি হে তোঁ সুবুধি সেয়ানি।
মরী পিয়াস পিয়াবহ পানি।।
কে তোঁ থিকাহ ককর কুল জানি।
বিনু পরিচয় নহি দিব পিঢ়ি পানী।।
থিকহুঁ বিওগ ভরসি সংসার।।
আবহ বৈসহ পিব লহ পানি
জে তোঁ খোজবহ সে দিব আনি।।
সসুর ভৈঁসুর মোর গেলাহ বিদেস ।
স্বামিনাথ গেল ছথি তনিক উদেস।।
সাসূ ঘর আহ্নরি নৈন নহিঁ সূঝ।
বালক মোর বচন নহিঁ বুঝ।।
ভণহি বিদ্যাপতি অপরূপ নেহ।
জেহন বিরহ হো তেহন সিনেহ।।

অন্তঃকথন:
এক পথিক প্রেমিক পুরুষ, অচেনা সুন্দরী নারীর কাছে জলের ছলে প্রেম প্রার্থনা করছে। সে বলছে, সুন্দরী তুমি বুদ্ধিমতী, চতুরা, আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো, আমি যে পিপাসায় মরে যাচ্ছি, জল দান করে আমার প্রাণ বাঁচাও! মেয়েটি সত্যিই বুদ্ধিমতী, কারণ এই কথা শুনে সে বলছে, তুমি কে, কোথা থেকে আসছো, তুমি কোন কুলের মানুষ এসব পরিচয়য় না জানলে আমি তোমায় বসতে জায়গাও দেবো না, জলও দেবো না। তখন পথিক আত্মপরিচয় দিয়ে বলছে, আমি রাজার কুমার, স্ত্রী বিয়োগ ঘটেছে সেই দুঃখে সংসারে ভ্রমণ করে ফিরছি। মেয়েটি যখন জানতে পারলো যে পুরুষটি উচ্চবংশের এবং তার স্ত্রী ও নেই, তখন তার কিছু দিতেই কোনো আপত্তি রইলো না। সে অত্যন্ত খুশি হয়ে পথিককে বলছে, এসো এসো, বস জলপান করো। শুধু জল কেন, তুমি যা চাইবে আমি তাই এনে দেবো! এর পর জলের অছিলায় পুরুষটি যা চাইছে তার জন্য পরিবেশ যে অনুকূল সেকথা বোঝাতে সে বলছে, আমার ঘরে ভয় পাবার মতো পুরুষ মানুষ কেউই নেই, শ্বশুর আর ভাসুর বিদেশে গেছেন আমার স্বামীও তাঁদের সন্ধানে গেছেন। ঘরে থাকার মধ্যে শ্বাশুড়ী আর আমার ছেলে। তো সেই শ্বাশুড়ী অন্ধ, চোখে কিছু দেখে না, আর ছেলে, সে তো বাচ্ছা কোনো কথাই বোঝে না! অর্থাৎ, কেউই কিছু জানতেও পারবে না বুঝতেও পারবে না। আমাদের গোপন মিলন গোপনই রইবে। বিদ্যাপতি সব শুনে বলছেন, অপূর্ব প্রেম, যেমন বিরহ, তেমনই স্নেহ! এই পদটি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ নয়, সাধারণ পরকীয়া প্রেমের পদ। এই জাতীয় পরকীয়া প্রেমরসাত্মক কবিতার একটি ধারা সংস্কৃত সাহিত্য থেকেই প্রচলিত ছিল, লৌকিক সাহিত্যে তো এর বিস্তার ছিলোই। বিদ্যাপতি রচিত এই রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কহীন পরকীয়া প্রেমের পদগুলি পাঠ করলে বোঝা যায় যে এর ওপরে প্রাথমিক ভিত্তি করেই রাধাকৃষ্ণ পরকীয়া প্রেমের পদগুলি রচিত হয়েছিল। রসমাধুর্য্য ছাড়াও রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মূল কাঠামোটি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে এই পদগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী