যমুনা কিনারে

স্বজনি, ও ধনী কে কহ বটে

স্বজনি, ও ধনী কে কহ বটে।
গোরচনা গোরী নবীনা কিশোরী
নাহিতে দেখিনু ঘাটে।।
শুন হে পরান সুবল সাঙ্গাতি
কো ধনী মাজিছে গা।
যমুনার তীরে বসি তার নীরে
পায়ের উপরে পা।।
অঙ্গের বসন করেছে আসন
এলায়ে দিয়াছে বেণী।
উচ কুচ মূলে হেম কার দোলে
সুমেরুশিখর জিনি।।
সিনিয়া উঠিতে নিতম্ব তটীতে
পড়েছে চিকুর রাশি।
কাঁদিয়ে আঁধার কলঙ্ক চাঁদার
শরণ লইল আসি।।
কিবা সে দুগুলি শঙ্খ ঝলমলি
শরু শরু শশিকলা।
সাঁজেতে উদয় সুধু সুধাময়
দেখিয়ে হইনু ভোলা।।
চলে নীল শাড়ী নিঙ্গাড়ি নিঙ্গাড়ি
পরাণ সহিত মোর।
সেই হৈতে মোর হিয়া নহে থির
মনমথ জ্বরে ভোর।।
কহে চণ্ডীদাসে বাশুলী আদেশে
শুনহে নাগর চন্দা।
সে যে বৃষভানু রাজার নন্দিনী
নাম বিনোদিনী রাধা।।

অন্তঃকথন:
কৃষ্ণের পূর্বরাগের এই পদটিতে স্নানরতা সিক্তবসনা রাধার রূপটি চিত্রিত হয়েছে। কৃষ্ণ তাঁর সখাকে বলছেন, সখা, বলতো কে এই মেয়ে? গোরোচনা সদৃশ দীপ্যমান নবীন এক গৌরী কিশোরীকে যমুনার ঘাটে যে স্নান করতে দেখলাম। সাঙাত সুবল, তুমি আমার প্রাণের বন্ধু, আমার কথাগুলো শোনো। সেই যুবতী সুন্দরী গাত্র মার্জনা করছিল। যমুনার কূলে নীল জলে বসে পায়ের উপর পা তুলে। অঙ্গের বসনখানি বিছিয়েছে মাটিতে। সে যে এলিয়ে দিয়েছে তার বেণী। সুমেরু শিখরের চেয়ে সুন্দর তার উচ্চ কুচযুগ মূলে শোভা পায় হেম হারখানি। স্নান সেরে উঠতেই তার নিতম্ব তটে এলিয়ে পড়ল সিক্ত চিকুর রাশি। তার সেই কেশের কালোরঙের কাছে বুঝি লজ্জা পেয়েছে আঁধার। তাইতো সে চাঁদের গায়ে কলঙ্ক হয়ে মুখ লুকিয়েছে। কি বলব সখা, তার শঙ্খ জোড়া যেন অতি ক্ষীণ শশিকলা। অমানিশার দুর্ভোগ কাটিয়ে শুক্লপক্ষের প্রথম তিথিতে নক্ষত্রহীন সন্ধ্যাকাশে যেন উদিত হয়েছেন একা সুধাময়। আহা! কি যে সে অপূর্ব শোভা,আপনাকে ভুলিলাম আমি। সে যে চলে গেল সখা, নীল শাড়ি নিঙাড়ি নিঙাড়ি। তার সঙ্গে গেল আমার পরাণটাও। সেই থেকে বঁধু, মোর পরাণ আর ক্ষনিকের জন্যেও শান্ত হয় না। মন্মথ যে আমাকে অনুক্ষণ বিহ্বল করে রেখেছে। পদকর্তা চণ্ডীদাস দেবী বাশুলীর উপাসক। সেই বাশুলী দেবীর আদেশে তিনি নাগর কানাইকে বললেন, ও যে বৃষভানু রাজার নন্দিনী, বিনোদিনী রাধা।

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:ধানুষী
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী