যমুনা কিনারে

হম জুবতি পতি গেলাহ বিদেস

হম জুবতি পতি গেলাহ বিদেস।
লগ নহি বসএ পড়োসিয়াক লেস।।
সাসু দোসরি কিছুও নহিঁ জান।
আঁখ রতৌঁধি সুনএ নহিঁ কান।।
জাগহ পথিক জাহ জনু ভোর।
রাতি অঁধার গাম বড় চোর।।
ভরমহুঁ ভোঁরি ন দেঅ কোতবার।
কাহু ন কেও নহি করয়ে বিচার।।
অধিপ ন কর অপরাধহু সাতি।
পুরুস মহতে সব হমর সজাতি।।
বিদ্যাপতি কবি এহ রস গাব।
উকুতিহু অবলা ভাব জনাব।।

অন্তঃকথন:
এক প্রোষিতভর্তৃকা একাকিনী রমণী, পছন্দের পথিক পুরুষকে সুযোগ পেয়ে মিলনে আহ্বান জানাচ্ছে। নানা ভাবে নানা কথায় সে প্রেমিক পুরুষটিকে এই গোপন পরকীয় সম্পর্কে সাহস যোগাচ্ছে। সে বলছে, দেখো না আমি যুবতী নারী, তবু আমায় একাই থাকতে হয় স্বামী তো বিদেশে গেছেন। আমার বাড়ির নিকটে কোনো পড়শিও বাস করে না। বাড়িতে শুধু আমি আর আমার শ্বাশুড়ী থাকি, তা সে শ্বাশুড়ীও কানে খাটো, তার ওপর রাতকানা, অন্ধকার নামলে চোখে দেখে না। এইভাবে মেয়েটি নিজের একাকীত্বের কথা বলে পুরুষটিকে প্রেমের বার্তা দিচ্ছে। আর শ্বাশুড়ী রাত কানা বলে রাতে মিলনে কোনো বাধাও পড়বে না তাই বলছে পথিক তুমি জেগে থাকো, ঘুমে বিভোর হয়ে পোড়ো না যেন। অথচ পরক্ষণেই বলছে দেখো কি আঁধার রাত্রি, আর গ্রামে বড়ই চোরের উপদ্রব, যেন চোরের ভয়েই পথিকের জেগে থাকা উচিৎ। কিন্তু তার পরের কথাগুলিতে বোঝা যাচ্ছে সে চোরের কথা বলছে এই বোঝাতে যে এই গ্রামে চোরের কোনো ভয় নেই কারণ কোটাল ভুলেও পাহারা দেয় না, এখানে দোষ করলেও কেউ কারো বিচার করে না। রাজা পর্যন্ত অপরাধীকে শাস্তি দেয় না, আর যত বড় বড় রাজপুরুষ আছেন সবাই আমার স্বজাতি, তাদেরকেও ভয় পাবার কিছু নেই। মেয়েটি যেন বলতে চাইছে আমাদের প্রেম সমাজ নিষিদ্ধ হলেও তার জন্য কোনো দণ্ড তোমায় পেতে হবে না, তাই তুমি নির্ভয়ে এসো। পদটির মধ্যে মেয়েটির কামনার আকুলতা, সেই কামনা সম্পূর্ন খুলে বলার লজ্জা আর সেই কারণে বাকচাতুরীতে প্রেমিকের ভয় দূর করে তাকে কাছে টানার চেষ্টা এই সবকটিই শব্দনৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। ভণিতায় বিদ্যাপতি বলছেন অবলা তার কথার মধ্যে দিয়েই তার গোপন ইচ্ছের প্রকাশ করছে, আর আমি এই রসের গান করছি! এই পদটির সঙ্গে শৃঙ্গার তিলকের একটি পদের সাদৃশ্য দেখা যায় বালা যাহং মনসিজভয়াৎ প্রাপ্তগাঢ়-প্রকম্পা। গ্রামশ্চৌরৈরষমুপহতঃ পান্থ নিদ্রাং জহীহি।। এই পদটি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ নয়, সাধারণ পরকীয়া প্রেমের পদ। এই জাতীয় পরকীয়া প্রেমরসাত্মক কবিতার একটি ধারা সংস্কৃত সাহিত্য থেকেই প্রচলিত ছিল, লৌকিক সাহিত্যে তো এর বিস্তার ছিলোই। বিদ্যাপতি রচিত এই রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কহীন পরকীয়া প্রেমের পদগুলি পাঠ করলে বোঝা যায় যে এর ওপরে প্রাথমিক ভিত্তি করেই রাধাকৃষ্ণ পরকীয়া প্রেমের পদগুলি রচিত হয়েছিল। রসমাধুর্য্য ছাড়াও রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মূল কাঠামোটি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে এই পদগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী