যমুনা কিনারে

হাসি কেহ তবে সব গোপনারী

হাসি কেহ তবে সব গোপনারী
“আর কিবা নিতে আছে।
এ নব যৌবন কুল সমাপন
দিয়াছি তোমার কাছে।।
কায়মন চিতে বিধির বিধান
শরণ লইয়াছি।
আর কিবা চাহ আগে তাহা লহ
আমরা জানিয়াছি।।
তুমি তরু লতা মোরা ফল পাতা
তুলিয়া লইতে কি।
নহে অতি দূর বড় পরিশ্রম
তোমারে বলিব কি।।
এ তিল তুলসী তোমার চরণে
সঁপিয়াছি জাতিকুল।
তোমা বিনে আর কে আছে আমার
তুমি সবাকার মূল।।
তুয়া বিনে আন নাহি কোন জন
আর বা বলিব কেহ।
জনমে জনমে জীবনে মরণে
দিয়াছি আপন দেহ।।
যে কর সে কর আপন বড়াই
আমরা কুলের নারী।
আমরা জানিয়ে তুমি প্রাণপতি
শুনহ প্রাণের হরি।।
ঘরে পরিবাদ কলঙ্ক দুসারি
তোমার কারণে এত।
গুরুর গঞ্জনা লোকের তুলনা
এ সব সহি যে যত।।”
চণ্ডীদাস বলে শুনহ চতুর
রসিক নাগর কান।
পার কর হরি আগে লেহ তরি
ইহাতে নাহিক আন।।

অন্তঃকথন:
পদটি নৌকাখন্ডের অন্তর্গত। সকল গোপ নারী তখন হেসে বলল, 'আর কিইবা দিতে বাকি আছে ! এই নতুন যৌবন, বংশমর্যাদা - সবই যে তোমাকে সমর্পণ করেছি। দেহমনে নিবিষ্ট হৃদয়ে তোমার শরণ নিয়েছি। এই বিধির বিধান। আর কী চাও? এসো তা নাও। আমরা সত্য জেনেছি। তুমি তরুলতা, আমরা তার পত্র-পুষ্প-ফল। তুলে নিলে আর কিবা হবে? অনেক দূর তো নয় ! বড়ই পরিশ্রম হয়েছে, তোমাকে আর কী বলব। এই তিল তুলসী স্বরূপ জাতি কুল তোমাকেই সমর্পণ করেছি। তুমি ছাড়া কেই বা আছে আমার। তুমিই যে সবার উৎস। তুমি ছাড়া আর অন্য কেউ নেই, আর কাকেই বা বলব। জন্ম- জন্মান্তরে, জীবনে- মরণে তোমাকে এ দেহ অর্পণ করেছি। যে করার সে নিজের বড়াই কর। কিন্তু আমরা কুলবতী নারী। আমরা জানি তুমিই প্রাণেশ্বর। আমাদের কথা শোনো প্রাণের হরি। ঘরে পরিজনদের কাছে তোমার কারণে কতই না কলঙ্ক অপবাদ! গুরুজন গঞ্জনা দেন, লোকে অপরের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের নিন্দা করে। কত যে সহ্য করি !'' চণ্ডীদাস বলেন,' শোনো গো চতুর রসিক নাগর কানাই, পার করে দাও। নৌকা আগে তীরে নিয়ে যাও, এর অন্যথা কোরো না।'

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:জয়শ্রী
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী