যমুনা কিনারে

মাধব সুমুখি মনোরথ পুর

মাধব সুমুখি মনোরথ পুর।
তুঅ গুনে লুবুধি আইলি এত দূর।।
জে ঘর বাহর হোইতেঁ ফেদাএ।
সাহস তকর কহএ নহি জাএ।।
পথ পীছর এক রয়নি অন্ধার।
কুচ-জুগ-কলসে জমুনা ভেলি পার।।
বারিদ বরিস সগর মহি পূল।
সহসহ চউদিস বিসধর বুল।।
ন গুনলি এহনি ভয়াউনি রাতি।
জীবহু চাহি অধিক কী সাতি।।
ভনই বিদ্যাপতি দুহু মন বোধ।
কমল ন বিকস ভমর অনুরোধ।।

অন্তঃকথন:
রাধারানী দুস্তর বরষা রাত্রি পার করে এসেছেন মাধব মিলনে। দূতী মাধবকে অনুরোধ করছেন রাধারানীর সকল মনোবাসনা পূর্ণ করতে কারণ যত কষ্ট রাধিকা স্বীকার করেছেন এই অভিসারে তা আর কেউ করতে পারত না। দূতী বলছেন, মাধব সুন্দরীর মনোরথ পূর্ণ কর, সে কেবল তোমার গুণে লুব্ধ হয়ে এতদূর এসেছে। যে ঘরের বাইরে যেতে ভয় পায়, তাকে এই আসতে যে কতদূর সাহস দেখাতে হয়েছে তা বলে ওঠা যায় না। এসে রাত্রি ঘোর আঁধার তার ওপর পিচ্ছিল পথ, সবার ওপরে ভয়ংকরী যমুনা, তোমার কথা ভেবে রাই কুচযুগকলসে ভর করে সে যমুনাও পার হল। আকাশে মেঘ বর্ষণ করছে, সারা পৃথিবী জলে পূর্ণ, চারদিকে বিষধর সরীসৃপ বিচরণ করছে, তবু দেখ রাই এমন ভয়ঙ্কর রাতও মানল না। এমন রাতে যে জীবনও যেতে পারত মাধব, আর জীবন খোয়ানোর চেয়ে বড় শাস্তি আর কি আছে? দেখ অভিসারের জন্য রাধারানী জীবনত্যাগ করতেও প্রস্তুত। বিদ্যাপতি দূতীর কথা শুনে বলছেন, চিন্তা কোরো না, দুজনে মনে বুঝেছেন, ভ্রমরের অনুরোধে কমল কি বিকশিত হয় না? রাধামাধবের প্রণয়ও বিকশিত হবেই।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী