‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
রামচন্দ্র-কবিরাজের ভ্রাতা—শ্রীগোবিন্দ-দাস জয়
কবিরাজ খ্যাতি যাঁর—শ্রীগোবিন্দ-দাস জয়
জন্ম যাঁর শ্রীখণ্ডেতে, মাতামহ-আলয়েতে,
যাঁরে কৃপা করে ভগবতী।।
শুন সে অপূর্ব্ব-কথা, কবিরাজ-জন্ম যথা,
দেবীবরে দামোদর ঘরে।
শক্তি-উপাসনা-তত্ত্ব, করিবারে প্রকাশিত,
নিজে দেবী যেন ভঙ্গী করে।।
চৈতন্য-পার্ষদবর, চিরঞ্জীব গুণধর,
দামোদর-সেনের জামাতা।
সুনন্দা বিবাহ করি,’ কুমার-নগর ছাড়ি,’
খণ্ডে বাস ভক্ত-সঙ্গে যথা।।
ফাল্গুনী পবিত্রা অতি, শুক্লাত্রয়োদশী তিথি,
তনয়া-প্রসব-দুঃখ শুনি’।
দামোদর দেবী-ঘরে, নেত্র-হস্ত-ভঙ্গী-দ্বারে,
দেখায় দেবীর যন্ত্রখানি।।
যন্ত্রোদক পান-অন্তে, মাতা হৈলা সুস্থ-চিতে,
যাহাতে গোবিন্দ জনমিলা।
মাতামহ-সঙ্গ হইতে দেবী-কৃপা বিধিমতে,
নিরন্তর আজন্ম লভিলা।।
পিতা-মাতামহ গণ, ক্রমে হৈল অদর্শন,
সহ রামচন্দ্র জ্যেষ্ঠ-ভ্রাতা।
কুমার-নগরে আসি,’ নিজ-পিতাগৃহে বসি,
সেবা করি’ সুখী কৈলা মাতা।।
রামচন্দ্র-প্রিয়তম, ঠাকুর শ্রীনরোত্তম,
শ্রীখেতুরি-গ্রামেতে বসতি।
তার সন্নিকট-স্থানে, তেলিয়া-বুধরী-গ্রামে,
বাস মনে করয়ে যুকতি।।
দুই ভাই যুক্তি করি,’ পূর্ব্বাবাস পরিহরি,
গঙ্গা-পদ্মা-মধ্যস্থানে আইলা।
গোবিন্দ মন্দির করি, পূজে শক্তি শ্রীশঙ্করী,
বুধরীতে যিঁহ খ্যাতা হইলা।।
গোবিন্দের ভক্তিগণে, সাক্ষাৎ-দর্শন-দানে,
দেবী তাঁরে কৃতার্থ করিলা।’’
গোবিন্দের ভক্তিগণে—সাক্ষাৎ দেবী দর্শন দিলা
রামচন্দ্র-প্রাণধন, শ্রীআচার্য্য-শ্রীচরণ,
গোবিন্দের হৃদয়ে উদিলা।।
একদিন দৈবক্রমে, তেলিয়া-বুধরী–গ্রামে,
একবিপ্র-বৈষ্ণব আসিয়া।
গোবিন্দের গৃহ-দ্বারে, কৈল সেবা অঙ্গীকারে,
তাঁর ধর্ম্মমত না জানিয়া।।
তিঁহ বিপ্রে সমাদরে, লৈয়া নিজ-দেবী-ঘরে,
সন্ধ্যা-পূজা করিবারে দিলা।
দেবী-পূজা-সজ্জ দেখি’, বিপ্র মনে মহাসুখী,
শালগ্রামে সব নিবেদিলা।।’’
শালগ্রামে সমর্পিল
দেবী-পূজার সজ্জ যত—শালগ্রামে সমর্পিল
দেবীর পূজারী পরে আসি’ নিত্য পূজা করে,
সেই দ্রব্য দেবীরে অর্পিলা।।’’
শালগ্রামের প্রসাদী-দ্রব্য—দেবীকে অর্পণ কৈলা
ব্রাহ্মণ নাহিক জানে, মাতা তুষ্টা হৈলা মনে,
প্রেমভরে প্রসাদ পাইলা।।
নিশিযোগে গোবিন্দেরে, কহে মাতা স্নেহভরে,
আজি মোরে বড় সুখ দিলে।’’
আজ,–আমায় যে সুখ দিলে—এমন-সুখ কখনও দাও নাই
বিষ্ণুর প্রসাদী-অন্ন, পাইয়া আজ হইনু ধন্য,
হেন কোনদিন নাহি মিলে।।’’
এমন-দিন কখনও হয় নাই—বিষ্ণুর প্রসাদ পেয়ে ধন্য হলাম
শুনিয়া সকল-কথা, গোবিন্দ কহেন মাতা,
কিবা কহ বুঝিতে না পারি।’’
কৃপা-উপাসনার রীতি—অনুভব কর ভাই রে
যাতে পরতত্ত্ব স্থিতি—এই ত’ উপাসনার রীতি
কিবা কহ বুঝিতে না পারি।
তুমি ত’ ঈশ্বরী মাতা, তোমার ঈশ্বর কোথা,
মূলতত্ত্ব কহ গো বিচারি’।।
তখন,–দেবী কহে ভঙ্গী করি’ ,পরম-ঈশ্বর হরি,
পরাৎপর যিঁহ সর্ব্বসার।
চিচ্ছক্তি জীবশক্তি, বহিরঙ্গা মায়াশক্তি,
তিনশক্তি প্রধান তাঁহার।।
যোগমায়া চিচ্ছক্তি, বিশুদ্ধ-সত্ত্ব পরিণতি,
আমি তাঁর দাসী অভিমান।
আমার অংশিনী যেই, মায়াশক্তি হয় সেই,
এই মার তত্ত্বের বাখ্যান।।
কৃষ্ণ-অবধারামৃত-লাগি’, সদা আমি অনুরাগী,
শ্রীপুরুষোত্তমে কৈনু বাস।’’
আমি,–নীলাচলে বাস করি—অধরামৃত পাবার লাগি’
আমি,–বিমলারূপেতে রহি, ইহাতে সন্দেহ নাহি,
নিত্য করি প্রসাদের আশ।।
এইরূপে নিজ-তত্ত্ব, শাস্ত্রে সিদ্ধান্ত যত,
গোবিন্দেরে সকলই কহিলা।
শুনিয়া মাতার বাণী, হৃদয়ে আশ্চর্য্য মানি,’
মৌনধরি’ গোবিন্দ রহিলা।।’’
কৃপা করে জানাইলে—এ কি-অপরূপ-রহস্য
আরও অপরূপ শুন, গোবিন্দ-ভকতিগুণ,
দেবীর বাৎসল্য যাতে জানি।
গোবিন্দেরে বুঝাইতে, কত না যতন চিতে,
বারবার কহয়ে বাখানি।।
গৃহো্দ্যানে পুষ্প দেখি,’ রামচন্দ্র মনে সুখী,
কৃষ্ণপদে মানসে অর্পিলা।
গোবিন্দ উদ্যানে গিয়া, সেই ফল তুলি’ লইয়া,
দেবীপদে দিবারে চলিলা।।
হস্ত প্রসারণ করি’, লইয়া অঞ্জলিভরি,’
কহে দেবী গোবিন্দের প্রীতে।’’
কহে দেবী গোবিন্দেরে—এ কি-কর এ কি-কর
পদে যোগ্য নহে কোন-রীতে।।’’
শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদী-ফুল—এ-যে আমার মস্তক-ভূষণ
পদে যোগ্য নহে হেন ধন—এ-যে আমার মস্তক-ভূষণ
শরীরেতে গ্রহণী অস্বাস্থ্য।
ব্যাধি-ঘোরে পোড়ে মন, সদা মন উচাটন,
মরণ-সময় উপনীত।।
শ্রীকৃষ্ণ-চরণ কর সার।’’
নিরাময় হবে তোমার—শ্রীকৃষ্ণ-চরণ কর সার
গুরু কহে সেই হয়, নারায়ণ বিনে নয়,
তেঁহ ভবসিন্ধু-কর্ণধার।।
গোবিন্দ আকুল হইয়া, পত্রী দিলা পাঠাইয়া,
রামচন্দ্র-আচার্য্যের স্থানে।
রামচন্দ্র পত্রী পাইয়া, আচার্য্যেরে সঙ্গে লইয়া,
উপনীত আপন-ভবনে।।
আচার্য্য-রামচন্দ্রে, হেরিয়া গোবিন্দ কাঁদে,
শক্তি নাই প্রণাম করিতে।
কষ্টে দুইখানি কর, তুলিয়া মস্তকোপর,
স্তুতি করে গদগদ-চিতে।।
আপনা-ধিক্কার শুনি’, শ্রীআচার্য্য-গুণমণি,
‘‘গোবিন্দেরে মন্ত্র-দীক্ষা দিলা।।’’
কৃষ্ণ তোমায় কৃপা কৈলা—আর কিছু ভয় নাই তোমার
ভব-দেহ দুই-রাগ গেলা।।’’
ভবরোগ দেহরোগ—দুই-ব্যাধি শান্তি হইলা
আচার্য্যের কৃপা পাইয়া—দুই-ব্যাধি শান্তি হইলা
পাইয়া ভকতি-জল, উপজিল প্রেমফল,
কৃষ্ণ-লীলামৃত-রসময়।
গোবিন্দ-মূখারবিন্দে, ধারা বহে শতছন্দে,
‘‘পদ শুনি আচার্য্য তন্ময়।।’’
শ্রীআচার্য্যের কৃপাবলে—পদস্ফূর্ত্তি হৈল তাঁর
কৃষ্ণলীলামৃতে মজি, গৌরপদে-রত্নরাজি,
তুলিয়া গাঁথিলা তার মালা।
পরিয়া ভকতগণ, আনন্দিত অনুক্ষণ’
জুড়াইলা হৃদয়ের জ্বালা।।
শ্রীল রূপ সনাতন বিচ্ছেদে আকুল মন,
বৃন্দাবনে ভকত-সমাজ।
নিজকৃত গীত দিয়া, সে সবারে জীয়াইয়া,
জগতে বিদিত কবিরাজ।।
শ্রীজীব-গোপালভট্ট, আস্বাদিয়া গীতামৃত,’’
শ্রীআচার্য্য-কৃপায় স্ফুরিত—শ্রীগোবিন্দ-দাস-কৃত
আলিঙ্গন কৈলা বারে বারে।
সেই,–শ্রীগোবিন্দ-কবিরাজ, জ্যেষ্ঠ-রামচন্দ্র-সাথ,
করুণা কি করিবে আমারে।।’
’
শ্রীআচার্য্যের কৃপাপাত্র—এইবার আমায় দয়া কর
শ্রীআচার্য্যের কৃপাপাত্র—গোবিন্দদাস শ্রীরামচন্দ্র
যেন,–গৌর-গোবিন্দ-লীলা স্ফূর্ত্তি পায়—এই কৃপা কর হে
‘গৌর-গোবিন্দ-লীলা স্ফূর্ত্তি পায়’—
শ্রীগুরু-আজ্ঞায় নাম জপে—গৌর-গোবিন্দ-লীলা স্ফূর্ত্তি পায়
প্রাণভরে বল ভাই
শ্রীরামচন্দ্র শ্রীগোবিন্দদাস—শ্রীশ্রীনিবাস শ্রীনরোত্তম
পাগল হয়ে বেড়াই সদা
ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে বেড়াই সদা
গুরু-কৃপাদত্ত-নাম গানে—পাগল হয়ে বেড়াই সদা
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
গৌরহরি-বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’