শ্রীশ্রীমন্মহাপ্রভুর শান্তিপুরে আগমন কীর্ত্তন
শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি

(শ্রীশ্রীচৈতন্য-চরিতামৃতের মধ্যলীলার তৃতীয়-পরিচ্ছেদ।)

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।’’

‘‘জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ।’’

প্রাণভরে জয় দাও ভাই

আমার,–প্রাণের প্রাণ গৌরহরির প্রাণভরে জয় দাও ভাই
প্রেমাবতার ন্ন্যাসি-চূড়ামণির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই

প্রাণগৌর আমার প্রেমাবতার

আপনি আপনার,–প্রেম আস্বাদিয়ে করেন প্রচার—

প্রাণগৌর আমার প্রেমাবতার

‘‘জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ।’’

শ্রী,–সেবা-বিগ্রহের জয় দাও ভাই
শ্রী,–গৌর-সেবাবিগ্রহের জয় দাও ভাই

মহাপ্রভু নিত্যানন্দ—শ্রী,–গৌর-সেবাবিগ্রহের জয় দাও ভাই

মহাপ্রভু নিত্যানন্দ

অভিন্ন-চৈতন্যতনু—মহাপ্রভু নিত্যানন্দ

তাঁরা,–প্রাণভরে জয় দাও ভাই

‘‘জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ।
জয়াদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌরভক্তবৃন্দ।।’’

আমার,–সীতানাথের জয় দাও

নিতাই-গৌর-আনা-ঠাকুর—আমার,–সীতানাথের জয় দাও

‘‘চব্বিশবৎসর শেষ যেই মাঘ-মাস।
তার শুক্লপক্ষে প্রভু করিলা সন্ন্যাস।।’’

সাজিল সন্ন্যাসি-সাজেতে

‘‘সন্ন্যাস করি’ প্রেমাবেশে চলিলা বৃ্ন্দাবন।
রাঢ়দেশে তিন দিন করিলা ভ্রমণ।।’’

রাঢ়ে ভ্রমেণ গৌরহরি

শ্রী,–নিত্যানন্দ-ভূমি স্মঙরি’—রাঢ়ে ভ্রমেণ গৌরহরি
ব্রজে যাবার ছলা করি’—রাঢ়ে ভ্রমেণ গৌরহরি
রাঢ়দেশ ধন্য করি’—রাঢ়ে ভ্রমেণ গৌরহরি

‘‘এক শ্লোক পড়ি’ প্রভু ভাবের আবেশে।
ভ্রমিতে পবিত্র কৈল সব-রাঢ়দেশে।।
প্রভু কহে সাধু এই ভিক্ষুর বচন।
মুকুন্দ-সেবন-ব্রত কৈল নির্দ্ধারণ।।
পরামাত্মানিষ্ঠা মাত্র বেশ ধারণ।
মুকুন্দ-সেবায় হয় সংসারতারণ।।
সেই বেশ কৈল, এবে বৃন্দাবন গিয়া।
কৃষ্ণ-নিষেবণ করি নিভৃতে বসিয়া।’’

এই ত হয় বেশের কারণ

ব্রজে নিভৃতে কৃষ্ণ-ভজন—এই ত হয় বেশের কারণ

‘‘এত বলি চলে প্রভু প্রেমোন্মাদের চিহ্ন।
দিক্‌ বিদিক্‌ জ্ঞান নাহি চলে রাত্রিদিন।।’’

চলেছে কৃষ্ণ-অন্বেষণে

বিরহিণী গৌরকিশোরী—চলেছে কৃষ্ণ-অন্বেষণে
দিবারাত্রি নাহি জানে—চলেছে কৃষ্ণ-অন্বেষণে

‘‘নিত্যানন্দ আচার্য্যরত্ন মুকুন্দ তিনজন।
প্রভু পাছে পাছে তিনে করেন গমন।।’’

পাগল হয়ে ছুটেছে

হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—পাগল হয়ে ছুটেছে

‘‘যেই যেই প্রভু দেখে সেই সব লোক।
প্রেমাবেশে হরি বলে খণ্ডে দুঃখ শোক।।’’

সেই হয় প্রেমে মাতোয়ারা

যে দেখে প্রেমময়-গোরা—সেই হয় প্রেমে মাতোয়ারা

তারা,–মুখে হরিনাম আপনি স্ফুরে

যে দেখে প্রাণ-বিশ্বম্ভরে—তার,–মুখে হরিনাম আপনি স্ফুরে

‘‘গোপ-বালক সব প্রভুকে দেখিয়া।
‘হরি হরি’ বলি উঠে উচ্চ করিয়া।।’’

সবাই বলে হরি হরি

প্রাণ,–গৌরহরির বদন হেরি’—সবাই বলে হরি হরি

ও ত,–হরি হরি বলা নয়
স্বভাব জেগে উঠেছে

ব্রজবালকের—স্বভাব জেগে উঠেছে
ব্রজবিহারী দেখেছে তাই—স্বভাব জেগে উঠেছে

বলে,–ঐ হরি ঐ হরি

আমাদের বংশীধারী—ঐ হরি ঐ হরি

‘‘শুনি’ তা সবার নিকট গেলা গৌরহরি।
বোল বোল বলে সবার শিরে হস্ত ধরি।।’’

ও ত,–শিরে হাত দেওয়া নয়

স্বরূপ জাগায়ে দিল—ও ত,–শিরে হাত দেওয়া নয়

বলে,–বল বল হরি হরি

দগ্ধ-প্রাণ শীতল করি—বলে,–বল বল হরি হরি

‘‘তা সবারে স্তুতি করে তোমরা ভাগ্যবান্‌।
কৃতার্থ করিলে মোরে শুনাঞা হরিনাম।।
গুপ্তে তা সবারে আনি ঠাকুর-নিত্যানন্দ।
শিখাইয়া সবাকারে করিলা প্রবন্ধ।।

প্রাণ যে কাঁদছে

স্বভাব-করুণ নিতাই-চাঁদের—প্রাণ যে কাঁদছে
গৌরগণের দুঃখ স্মঙরিয়ে—প্রাণ যে কাঁদছে
নদেরবাসীর দশা স্মঙরিয়ে—প্রাণ যে কাঁদছ
‘নদেবাসীর দশা স্মঙরিয়ে’—
প্রাণগৌরের অদর্শনে—নদেরবাসীর দশা স্মভরিয়ে

সবাই ত হয়েছে পাগল

বিনা প্রভু-শচীদুলাল—সবাই ত হয়েছে পাগল

নিশিদিশি মরছে ঝুরে

না দেখি’ প্রাণ-গৌরাঙ্গের—নিশিদিশি মরছে ঝুরে

তাদের দশা স্মঙরিয়ে
শচীমায়ের দশা স্মঙরিয়ে
প্রাণ যে কাঁদছে

জগৎ-প্রাণ নিতাইচাঁদের—প্রাণ যে কাঁদছে

প্রাণে প্রাণে বলছেন
তাদের শান্তি দিতে হবে
কেমনে দেখাইব

প্রাণ-গৌর লয়ে তাদের—কেমনে দেখাইব

মনে মনে ভাবলেন
কৌশলে লয়ে যাব

শান্তিপুরে সীতানাথের ঘরে—কৌশলে লয়ে যাব

লয়ে যাব গৌরবনে

শান্তিপুরে অদ্বৈত-ভবনে—লয়ে যাব গৌরধনে
ডাকি—আনি নদীয়াবাসীগণে—লয়ে যাব গৌরধনে

সবাই পাবে পরাণে

দেখি’ গৌর-বদনে—সবাই পাবে পরাণে

এই কথা মনে করে

‘‘শিখাইল সবাকারে করিয়া প্রবন্ধ।।
বৃন্দাবন পথ প্রভু পুছেন তোমারে।
গঙ্গাতীরে-পথ তবে দেখাইও তাঁরে।।
তবে প্রভু পুছিলেন সব শিশুগণ।
কহ দেখি কোন-পথে যাব বৃন্দাবন।।

কোন-পথে যাব বৃন্দাবন

শুধায় প্রাণ-শচীনন্দন—কোন-পথে যাব বৃন্দাবন
দয়া করে বল রাখালগণ—কোন-পথে যাব বৃন্দাবন

‘‘শিশু সব গঙ্গাতীর-পথ দেখাইল।
সেই পথে আবেশে প্রভু গমন করিল।।
আচার্য্যেরত্নেরে কহে নিত্যানন্দ-গোসাঞি।
শীঘ্র যাহ তুমি অদ্বৈত-আচার্য্যের ঠাঞি।
প্রভু লইয়া যাব আমি তাঁহার মন্দিরে।’’

পরাণ বাঁচাবার তরে

বিরহে,–মৃত প্রায় গৌরগণের—পরাণ বাঁচাবার তরে

প্রভু লইয়া যাব আমি তাহার মন্দিরে।
সাবধানে রহেন যেন নৌকা লঞা তীরে।।’’

আমি,–তার ঘরে লয়ে যাব

প্রাণের প্রাণ-গৌরহরি—আমি,–তার ঘরে লয়ে যাব

প্রাণগৌরাঙ্গের হবে বিলাস

গৌর-আগমনে সবার সনে—প্রাণগৌরাঙ্গের হবে বিলাস

‘‘তবে নবদ্বীপে তুমি কারহ গমন।
শচী সহ লঞা আইস সব ভক্তগণ।।’’

তা সবার হিয়া জ্বলে

গৌর-অদর্শনানলে—তা সবার হিয়া জ্বলে

বিরহেতে কাঁদছে

আহার নিদ্রা ত্যাগ করে—বিরহেতে কাঁদছে

সব,–হয়ে গেছে মৃত প্রায়

না দেখি’ প্রাণ-গোরারায়—সব,–হয়ে গেছে মৃত প্রায়

‘‘তাঁরে পাঠাইলা নিত্যানন্দ-মহাশয়।
মহাপ্রভুর আগে আসি দিল পরিচয়।।
প্রভু কহে শ্রীপাদ তেমার কোথাকে গমন।
শ্রীপাদ কহে তোমার সঙ্গে যাব বৃন্দাবন।।
প্রভু কহে কত দূরে আছে বৃন্দাবন।’’

আবেশে গৌরহরি বলে

‘‘বল নিতাই কতদূরে আছে বৃন্দাবন।
(কোথা,–কেশীঘাট বংশীবট নিকুঞ্জকানন।।)
‘‘তিঁহ কহেন কর এই যমুনা দর্শন।।
এত বলি’ আনিল তাঁরে গঙ্গা-সন্নিধানে।
আবেশে প্রভুর হৈল গঙ্গায় যমুনা জ্ঞানে।।’’

সেইখানে গঙ্গা যমুনা

যেখানে আমার গৌর সোণা—সেইখানে গঙ্গা যমুনা

গৌর-গোবিন্দ ছেড়ে রইতে পারে না

ভাগ্যবতী গঙ্গা-যমুনা—গৌরগোবিন্দ ছেড়ে রইতে পারে না

‘‘আবেশে প্রভুর হইল গঙ্গায় যমুনা জ্ঞানে।।
অহো ভাগ্য ! যমুনার পাইল দরশন।
এত বলি’ যমুনার করেন স্তবন।।
এত বলি নমস্করি কৈল গঙ্গাস্নান।
এক কৌপীন নাহি দ্বিতীয় পরিধান।।
হেন কালে আচার্য্য গোসাঞি নৌকাতে চড়িঞা।
আইল নূতন কৌপীন বহির্ব্বাস লঞা।।
আগে আসি রহিলা আচার্য্য নমস্কার করি।
আচার্য্যে দেখি বলে গোসাঞি মনে সংশয় করি।।
তুমি ত অদ্বৈত গোসাঞি হেথা কেন আইলা।
আমি বৃন্দাবনে তুমি কেমনে জানিলা।।
আচার্য্য কহে তুমি যাঁহা তাঁহা বৃন্দাবন।
মোর ভাগ্যে গঙ্গাতীরে তোমার আগমন।।
প্রভু কহে নিত্যানন্দ আমারে বঞ্চিলা।
গঙ্গাতীরে আনি মোরে যমুনা কহিলা।।’’

না না প্রভু,–নিতাই তোমায় না বঞ্চিলা

তোমার,–নিজগণের প্রাণ বাঁচাইলা—না না প্রভু—নিতাই তোমায় না বঞ্চিলা

‘‘আচার্য্য কহে মিথ্যা নহে শ্রীপাদ বচন।
যমুনাতে স্নান তুমি করিলা এখন।।
গঙ্গায় যমুনা বহে বইয়া একধার।’’

গুপত বাসনা তার

ভাগ্যবতী যমুনার—গুপত বাসনা তার
দেখিতে গৌরাঙ্গ-বিহার—গুপত বাসনা তার
তাই,–গঙ্গাসনে একধার—গুপত বাসনা তার

‘‘পশ্চিমে যমুনা বহে পূর্ব্বে গঙ্গাধার।।
পশ্চিমে যমুনা বহে তাঁহা কৈলা স্নান।
আর্দ্র কৌপীন ছাড় কর শুষ্ক পরিধান।।’’

অঝোরে নয়ন ঝুরে

আজ,–শান্তিপুর-নাথের—অঝোরে নয়ন ঝুরে
ডোর কৌপীন লয়ে করে—অঝোরে নয়ন ঝুরে

মনে মনে ভাবে রে
ডোর-কৌপীন পরাতে হল

রসরাজ-প্রাণ-গৌরাঙ্গে—ডোর-কৌপীন পরাতে হল
‘রসরাজ-প্রাণ-গৌরাঙ্গে’—
যারে সাজাইতাম কত সাজে—সেই,–রসরাজ—প্রাণ-গৌরাঙ্গে

ডোর-কৌপীন পরাতে হল

‘‘প্রেমাবেশে তিন দিন আছে উপবাস।
আজ মোর ঘরে ভিক্ষা, চল মোর বাস।।’’

যদি,–কৃপা করে দর্শন দিলে

চল প্রভু মোর ঘরে—যদি,–কৃপা করে দর্শন দিলে

‘‘একমু্ষ্টি অন্ন মুঞি করিয়াছি পাক।
শুকা রুখ ব্যঞ্জন কৈল সূপ আর শাক।।
এত বলি নৌকায় চড়াঞা নিল নিজ-ঘরে।
পাদ প্রক্ষালন কৈল আনন্দ অন্তরে।।’’

আনন্দ,–সীতানাথের অন্তরে

প্রাণনাথে পাইয়া ঘরে—আনন্দ,–সীতানাথের অন্তরে

‘‘প্রথমেই পাক করিয়াছেন আচার্য্যাণী।
বিষ্ণু-সমর্পণ কৈল আচার্য্য আপনি।।
তিন ঠাঁই ভোগ বাড়াইল সম করি’।
কৃষ্ণের ভোগ বাড়াইল ধাতপাত্রোপরি।।
বত্রিশা আঁটিয়া কলার আঙ্গটিয়া পাতে।
দুই ঠাঁই ভোগ বাড়াইল ভালমতে।।
মধ্যে পীত ঘৃতসিক্ত শাল্যান্নের স্তুপ।
চারিদিকে ব্যঞ্জন-ডোঙ্গা আর মুদ্‌গসূপ।।
বাস্তক-শাক পাক বিবিধ-প্রকার।
পটোল কুষ্মাণ্ড-বড়ি মানকচু আর।।
চৈ মরিচ সুক্তা দিয়া সব ফলমূলে।
অমৃত-নিন্দন পঞ্চবিধ তিক্ত ঝালে।।
কোমল নিম্বপত্র-সহ ভাজা বার্ত্তাকী।
ফুলবড়ি ভাজা আর কুষ্মাণ্ড মানচাকি।।
নারিকেল-শস্য ছানা শর্করা মধুর।
মোচাঘণ্ট দুগ্ধ-কুষ্মাণ্ড সকল প্রচুর।।
মধুরাম্ল বড়া-অম্ল, অম্ল পাঁচ ছয়।
সকল ব্যঞ্জন কৈল লোকে যত হয়।।
মুদ্গ-বড়া মাষবড় কলা-বড়া মিষ্টা।
ক্ষীরপুলি নারিকেলপলি যত পীঠাইষ্ট।।
বত্রিশা আঁটিয়া কলার ডোঙ্গা বড় বড়।
চলে হালে নাহি ডোঙ্গা অতি বড় বড়।।
পঞ্চাশ পঞ্চাশ ডোঙ্গা ব্যঞ্জন পুরিয়া।
তিন ভোগের আশে পাশে রাখিল ধরিয়া।।
সঘৃত পায়স নব মৃৎকণ্ডিকা ভরিয়া।
তিন পাত্রে ঘনাবর্ত্ত দুগ্ধ রাখে ত ধরিয়া।।
সঘৃত পায়স নব মৃৎকুণ্ডিকা ভরিয়া।
তিন পাত্রে ঘনাবৃত্ত’ দুগ্ধ রাখে ত ধরিয়া।।
দুগ্ধ চিড়া কলা আর দুগ্ধ লক্‌লকী।
যতেক করিল তাহা কহি না শকি।।

মনসাথে করেছেন রন্ধন

শ্রীসীতামাই—মনসাধে করেছেন রন্ধন
প্রাণগৌর করিবেন ভোজন—মনসাধে করেছেন রন্ধন

‘‘দুই পাশে ধরিল সব মৃৎকুণ্ডিকা ভরি’।
চাঁপাকলা দধি সন্দেশ কহিতে না পারি।।
অন্ন-ব্যঞ্জন উপরে দিল তুলসী মঞ্জরী।
তিন জলপাত্রে সুবাসিত জল ভরি’।।
তিন ভভ্রপীঠ তার উপরে বসন।
কৃষ্ণের ভোগ সাক্ষাৎ কৃষ্ণে করায় ভোজন।।
আরতির কালে দুই প্রভু বোলাইল।
প্রভু-সঙ্গে সবে আসি’ আরতি দেখিল।।
আরতি করিয়া কৃষ্ণে করাইল শয়ন।
আচার্য্য আসি’ প্রভুরে কৈল নিবেদন।।
গৃহের ভিতরে প্রভু করহ গমন।
দুই ভাই আইলা তবে করিতে ভোজন।।
মুকুন্দ হরিদাস দুই প্রভু বোলাইল।
যোড়হাতে দুইজনে কহিতে লাগিল।।
মুকুন্দ কহে মোর কিছু কৃত্য নাহি সারে।
পাছে মুঞি প্রসাদ পাব তুমি যাহ ঘরে।।
হরিহাস বলে মুঞি পাপিষ্ঠ অধম।
বাহিরে এক মুষ্টি পাছে করিমু ভোজন।।
দুই প্রভুলঞা আচার্য্য গেলা ভিতর ঘর।
প্রসাদ দেখিয়া প্রভুর আনন্দ অন্তর।।
বলে—ঐছে অন্ন যে কৃষ্ণকে করায় ভোজন।
জন্মে জন্মে শিরে ধরি তাঁহার চরণ।।
প্রভু জানে তিন ভোগ কৃষ্ণের নৈবেদ্য।
আচার্য্যের মনঃকথা নহে প্রভুর বেদ্য।।
প্রভু কহে বৈস তিনে করিয়ে ভোজন।
আচার্য্য কহে আমি করিব পরিবেশন।।
কোনস্থানে বসিব, আর আন দুই পাত।
অল্প করি’ তাহে আনি’ দেহ ব্যঞ্জন ভাত।।
আচার্য্য কহ বৈস দোঁহে পিঁড়ির উপরে।
এত বলি হাতে ধরি’ বসাইল দোঁহারে।।
প্রভু কহে সন্ন্যাসীর ভক্ষ্য নহে উপকরণ।
ইঁহা খাইলে কৈছে হবে ইন্দ্রিয়-বারণ।।
আচার্য্য কহে ছাড় তুমি আপনার চুরি।
আমি জানি তোমার সন্ন্যাসের ভারিভুরি।।
ভোজন করহ ছাড় বচন চাতুরী।
প্রভু কহে এত অনন খাইতে না পারি।।
আচার্য্য বলে অকপটে করহ আহার।
যদি খাইতে না পার রহিবেক আর।।
প্রভু কহে এত অন্ন নারিব খাইতে।
সন্ন্যাসীর ধর্ম্ম নহে উচ্ছিষ্ট রাখিতে।।
আচার্য্য কহে নীলাচলে খাও চুয়ান্নবার।
একবারে অন্ন খাও শত শত ভার ।।
তিনজনার ভক্ষ্যপিণ্ড তোমার এক গ্রাস।
তার লেখায় এই অন্ন নহে পঞ্চগ্রাস।।
মোর ভাগ্যে মোর গৃহে তোমার আগমন।
ছাড়হ চাতুরী প্রভু করহ ভোজন।।

যদি,–ভাগ্যে এলে মোর ঘরে

কর ভোজন চাতুরী ছেড়ে—যদি,–ভাগ্যে এলে মোর ঘরে

আনন্দে ভোজন কর

ছাড় ছাড় চাতুরী ছাড়—আনন্দে ভোজন কর

‘‘এত বলি’ জল দিল দুই গোসাঞির হাতে।
হাসিয়া লাগিলা দোঁহে ভোজন করিতে।।
নিত্যানন্দ কহে কৈল তিন উপবাস।
আজি পারনা করিতে মনে ছিল বড় আশ।।
আজিহ উপবাস হৈল আচার্য্য-নিমন্ত্রণে।
অর্দ্ধপেট না ভরিবেক এই গ্রাসেক অন্নে।।
আচার্য্য কহে, হও তুমি তৈর্থিক সন্ন্যাসী।
কভু ফল মূল খাও কভু উপবাসী।।
দরিদ্র ব্রাহ্মণ ঘরে পাইলা মুষ্টিকান্ন।
ইহাতে সন্তুষ্ট হও ছাড় লোভ মন।।’’

বালাই লয়ে মরে যাই

নিতাই-অদ্বৈত-প্রীতি-ভাষণের—বালাই লয়ে মরে যাই

‘‘নিত্যানন্দ কহে যবে কৈলে নিমন্ত্রণ।
তত দিবে চাহি যত করিতে ভোজন।।
‘শুনি নিত্যানন্দের কথা ঠাকুর অদ্বৈত।
কহিলেন তাঁরে কিছু পাইয়া পীরিত।।’’

আবেশে অদ্বৈত কহে

‘‘ভ্রষ্ট অবধূত তুমি উদর পূরিতে।
সন্ন্যাস লইয়াছ বুঝি ব্রাহ্মণ দণ্ডিতে।।

সন্ন্যাসী সেজেছে

ব্রাহ্মণে দণ্ড, দিবার লাগি—সন্ন্যাসী সেজেছ

বালাই লয়ে মরে যাই

নিতাই-অদ্বৈতের প্রেম-কলহের—বালাই লয়ে মরে যাই

নিতাই-অদ্বৈতের প্রেম-কলহ

যে শুনে প্রেম পাবে সেহ—নিতাই-অদ্বৈতের প্রেম-কলহ

তুমি খাইতে পার দশ বিশ মনের অন্ন।
আমি তাহা কাঁহা পাব দরিদ্র ব্রাহ্মণ।।
যে পাঞাছ মুষ্টিকান্ন তাহা খাঞা উঠ।।’’
পাগলাই না করিহ না ছাড়াইহ ঝুট।।’’

সীতানাথের মনের বাসনা

দেখতে পাগলা নিতাই-সোণা—সীতানাথের মনে বাসনা

তাই,–নিষেধ ছলে করতে বলা

‘‘এইমত হাস্যরসে করেন ভোজন।
অর্দ্ধ অর্দ্ধ খাঞা প্রভু ছাড়েন ব্যঞ্জন।।
সেই ব্যঞ্জন আচার্য্য পুনঃ করেন পূরণ।
এইমত পুনঃ পুনঃ পরিবেশে ব্যঞ্জন।।
দোনা ব্যঞ্জনে ভরি করে প্রভুকে প্রার্থনা।
প্রভু বলেন আর কত করিব ভোজন।।
আচার্য্য কহে যে দিয়াছি তাহা না ছাড়িবা।
এখন যে দিয়ে তার অর্দ্ধেক খাইবা।।’’

এত বল আর কার আছে

মহাবলী অদ্বৈত বিনে—এত বল আর কার কাছে
‘মহাবলী অদ্বৈত বিনে’—
যে,–আসন নাড়াইয়ে—এনেছে—সেই,–মহাবলী অদ্বৈত বিনে

এত বল আর কার আছে

‘‘নানা যত্নে দৈন্যে প্রভুকে করাইলা ভোজন।
আচার্য্যের ইচ্ছা প্রভু করিলা পূরণ।।

এ ত সামান্য বাসনা পূরণ
অবতীর্ণ নদীয়াতে

অদ্বৈত-বাঞ্ছা পূরাইতে—অবতীর্ণ নদীয়াতে
নাম-প্রেমে বিশ্ব ভর্‌বে বোলে—অবতীর্ণ নদীয়াতে

‘‘নিত্যানন্দ কহে মোর পেট না ভরিল।
লঞা যাহ তোর অন্ন কিছু না খাইলা।।
এত বলি’ একগ্রাস ভাত হাতে লঞা।
উঝালি ফেলিল আগে যেন ক্রুদ্ধ হঞা।।
ভাত দুই চারি লাগিল আচার্য্যের অঙ্গে
ভাত অঙ্গে লঞা আচার্য্য নাচে বড় রঙ্গে।।
অবধূতের ঝুটা লাগিল মোর অঙ্গে।
পরম পবিত্র মোরে কৈল এই ঢঙ্গে।।’’

এ ত ঝুটা ফেলা নয়

আবেশে অদ্বৈত কয়—এ ত ঝুটা ফেলা নয়
করিল মোরে প্রেমময়—এ ত ঝুটা ফেলা নয়

অদ্বৈত নাচে প্রেমোল্লাসে

অবধূতের ঝুটা-পরশে—অদ্বৈত নাচে প্রেমোল্লাসে

বলে,–আজ আমি ধন্য হলাম

অবধূতের—ঝূটা পরশ পেলাম—বলে,–আজ আমি ধন্য হলাম
অদ্বৈত,–নাচে প্রেমে হেলে দুলে
পবিত্র হলাম বলে—অদ্বৈত,–নাচে প্রেমে হেলে দুলে

নিগূঢ় গৌরাঙ্গ-লীলা
আস্বাদিতে এসেছে

তিনজনে গূঢ়রাস—আস্বাদিতে এসেছে

তিনজনে এক তনু-মন

নিতাই গৌর সীতানাথ—তিনজনে এক তনু-মন
রস আস্বাদিতে আগমন—তিনজনে এক তনু-মন
বলে,–তোরে নিমন্ত্রণ করি’ পাইনু তার ফল।’

কি প্রেমময় ভাষা রে
এ ভাষার,–গৌরগণের বুকে বাসা

আমরি কি প্রীতির ভাষা—এ ভাষার,–গৌরগণের বুকে বাসা

শুধু শুনলে হবে না

প্রাণে প্রাণে মেনে নিতে হবে—শুধু শুনলে হবে না

চৈতন্যে-বৃক্ষের মূল দুই-শাখা

অদ্বৈত নিতাই দুইজনে—চৈতন্য-বৃক্ষের মূল দুই-শাখা

বলতে গেলে গৌরের দই হস্ত

প্রভু নিতাই শ্রীঅদ্বৈত—বলতে গেলে গৌরের দুই হস্ত

যারে জানায় সেই ত জানে

এ দোঁহে কৃপাগুণে—যারে জানায় সেই ত জানে
এ দোঁহার যে প্রীতি মনে—যারে জানায় সেই ত জানে

‘‘তোরে নিমন্ত্রণ করি’ পাইনু তার ফল।
তোর জাতি কুল নাহি সহজে পাগল।।’’

আমরি কি ব্যাজস্তুতি

অদ্বৈতের নিত্যানন্দ-প্রতি-আমরি কি ব্যাজস্তুতি

শুনি,–প্রাণ উঠে প্রেমে মাতি’

অদ্বৈতের স্তুতি নিত্যানন্দ-প্রতি—শুনি,–প্রাণ উঠে প্রেমে মাতি’

‘‘আপনার সমান মোরে করিবার তরে।
ঝুটা দিলে বিপ্র বলি’ ভয় না করিলে।।’’
আমার অঙ্গে ঝুটা দিলে

আপন-স্বভাব ধরাবে বলে—আমার অঙ্গে ঝুটা দিলে

ঝুটা দিলে মোর অঙ্গেতে

আপনর মত পাগল করিতে—ঝুটা দিলে মোর অঙ্গেতে

‘‘নিত্যানন্দ কহে, এই কৃষ্ণের প্রসাদ।
ইহাকে ঝুটা কহিলে, কৈলে অপরাধ।।’’

শাস্ত্রেতে আছে বর্ণন

মহাপ্রসাদ প্রসঙ্গে—শাস্ত্রেতে আছে বর্ণন

‘‘স্পর্শ-দোষে মহাপ্রসাদ নষ্ট নাহি হয়।
নষ্ট-দোষ ঘটাইলে নিজে নষ্ট হয়।।’’

তাই বলছেন নিতাইচাঁদ

‘‘ইহাকে ঝুটা কৈলে তুমি কৈলে অপরাধ।।
শতেক সন্ন্যাসী যদি করাহ-ভোজন।
তবে এই অপরাধ হইবে খণ্ডন।।
আচার্য্য কহে কভু না করিব সন্ন্যাসী-নিমন্ত্রণ।
সন্ন্যাসী নাশিলে মোর সব স্মৃতি-ধর্ম্ম।।’’

সন্ন্যাসী মোর সব নিল

জাতি-ধর্ম্ম সব গেল—সন্ন্যাসী মোর সব নিল
বেদধর্ম্ম ছাড়াইল—সন্ন্যাসী মোর সব নিল

‘‘এত বলি’ দুইজনে করাইল আচমন।
উত্তম শয্যাতে লঞা করাইল শয়ন।।
লবঙ্গ এলাচি আর উত্তম রসবাস।
তুলসী-মঞ্জরী-সহ দিল মুখবাস।
সুগন্ধি-চন্দনে লিপ্ত কৈল কলেবর।
সুগন্ধি-মালা আনি দিল হৃদয়-উপর।।’’

দিল,–মালা গোরা-বুকের উপরে

মালারূপে যেন অদ্বৈত বিহরে—দিল,–মালা গোরা-বুকের উপরে

‘‘আচার্য্য করিতে চাহে পাদ-সম্বাহন।
সঙ্কুচিত হইয়া প্রভু কহেন বচন।।
বহু নাচাইলে আমায় করহ ভোজন।।
তবে ত আচার্য্য সঙ্গে লঞা দুইজনে।
করিল ইচ্ছায় ভোজন যে আছিল মনে।।

সীতানাথের সাধ ছিল চিতে

গৌর-অধরামৃত আস্বাদিতে—সীতানাথের সাধ ছিল চিতে

আজ সে বাসনা পূর্ণ করে

প্রাণনাথে পেয়ে ঘরে—আজ সে বাসনা পূর্ণ করে

সীতানাথ আনন্দে মত্ত

পেয়ে,–প্রাণগৌর-অধরামৃত—সীতানাথ আনন্দে মত্ত

‘‘শান্তিপুরের লোক শুনি’ প্রভুর আগমন।
দেখিতে আইলা লোক প্রভুর চরণ।।’’

ডাকিতে কি হয় ভ্রমরে

কমল ফুটিলে পরে—ডাকিতে কি হয় ভ্রমরে

মধু-লোভে আপনি আসে

ডাকতে হয় না গিয়ে পাশে—মধু-লোভে আপনি আসে

গন্ধ পেয়ে অলি ছুটে

ফুল,–আপন-মনে আপনি ফুটে—গন্ধ পেয়ে অলি ছুটে
বার্ত্তা দিতে হয় না—গন্ধ পেয়ে অলি ছুটে

‘‘হরি হরি বলে লোক আনন্দিত হঞা।
চমৎকার হইল প্রভুর সৌন্দর্য্য দেখিয়া।।

সবাই বলে হরি হরি
সাধে কি বলে হরি হরি
তাদের,–মন যে হয়েছে চুরি

গৌরাঙ্গ-নব-মাধুরী হেরি’—তাদের,–মন যে হয়েছে চুরি
তাইতে বলে হরি হরি

‘‘গৌর-দেহ-কান্তি সূর্য্য-জিনিয়া উজ্জ্বল।
অরুণ-বসন তাহে করে ঝলমল।।

তাতেই জগজন-মন মজে

যখন যে সাজে সাজে—তাতেই জগজন-মন মজে

‘‘আইসে যায় লোক সব নাহি সমাধান।
লোকের সংঘটে দিন হৈল অবসান।।
সন্ধ্যাতে আচার্য্য আরম্ভিল সংকীর্ত্তন।
আচার্য্য নাচেন প্রভু করেন দর্শন।।

কে বা বল নাচায় তারে
আপনি যে নাচাইছে

গৌর হৃদয়ে উদয় হয়ে—আপনি যে নাচাইছে

আস্বাদে নিজ-নটন-মাধুরী

অদ্বৈতের নটন হেরি’—আস্বাদে নিজ-নটন-মাধুরী

‘‘নিত্যানন্দ প্রভু বলে আচার্য্য ধরিয়া।’’

অদ্বৈত–বুকে গৌর বিহরে

তাই নিতাই অদ্বৈতে ধরে—অদ্বৈত-বুকে গৌর বিহরে

নিতাই নাচে অদ্বৈত পাছে

পাছে,–গৌর ঢলে পড়ে এই অনুভবে—নিতাই নাচে অদ্বৈত পাছে

জগতে কে আছে ধরিতে

অদ্বৈত-হৃদে গৌর নাচে—জগতে কে আছে ধরিতে
অদ্বৈত নাচে ধরি’ গৌর হৃদে –জগতে কে আছে ধরিতে
বিনা প্রভু নিতাই-চাঁদে—জগতে কে আছে ধরিতে

তাই,–‘‘নিত্যানন্দ প্রভু বুলে আচার্য্য ধরিয়া।’’

আনন্দ আর ধরে না

জগজন-প্রাণ নিতাই-চাঁদের—আনন্দ আর ধরে না
অদ্বৈতের আনন্দ দেখি’—আনন্দ আর ধরে না

নিত্যানন্দ মহাসুখী

অদ্বৈতের আনন্দ দেখি’—নিত্যানন্দ মহাসুখী

‘‘নিত্যানন্দ প্রভু বুলে আচার্য্য ধরিয়া।
হরিদাস পাছে নাচে হরষিত হইয়া।।’’

আনন্দ আর ধরে না

ঠাকুর শ্রীহরিদাসের—আনন্দ আর ধরে না

প্রত্যক্ষ দেখছেন

ঠাকুর শ্রীহরিদাস—প্রত্যক্ষ দেখছেন

শুধু ঘরে আসে নাই
গৌরের,–শুধু নয় অদ্বৈত-গৃহে আসা

সীতানাথ-বুকে করেছে বাসা—গৌরের,–শুধু নয় অদ্বৈত-গৃহে আসা

তাই হরিদাস নাচেন সুখে

অদ্বৈতে গৌর-বিলাস দেখে—তাই হরিদাস নাচেন সুখে

অদ্বৈত-বুকে গৌর করেছে
বাসা স্বভাব জাগায়ে দিয়েছে

তার হৃদয়ে উদয় হয়ে—স্বভাব জাগায়ে দিয়েছে
‘তার হৃদয়ে উদয় হয়ে’—
স্বরূপ-জাগান গৌর-স্বরূপ—তার হৃদয়ে উদয় হয়ে

স্বভাব জাগায়ে দিয়েছে

সম্পূর্ণামঞ্জরীর—স্বভাব জাগায়ে দিয়েছে
আর বুড়া নাঢ়া নাই—স্বভাব জাগায়ে দিয়েছে

আজ,–সেই স্বভাবে নাচে রে

সীতানাথ ভাবাবেশে—আজ,–সেই স্বভাবে নাচে রে

সম্পূর্ণা-মঞ্জরী-আবেশে অদ্বৈত নাচে

আজ,–প্রাণনাথ ঘরে পাইনু বলে—সম্পূর্ণা-মঞ্জরী-আবেশে অদ্বৈত নাচে

আজ,–সেই স্বভাবে গান করে

‘‘কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।’’

সম্পূর্ণা রাধাভাব-তাদাত্ম্যের বলে

শ্রীরাধা-উক্তি-কথা বলে—সম্পূর্ণা রাধাভাব-তাদাত্ম্যের বলে

বলে,–কি কব আনন্দ ওর

ওরে আমার প্রাণসখি—বলে,–কি কব আনন্দ ওর
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর—বলে,–কি কব আনন্দ ওর

অদ্বৈত নাচে প্রেমে বিভোর

বলে,–চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর—অদ্বৈত নাচে প্রেমে বিভোর

সীতানাথের কিবা কথা
সে ত তার নিজজন

চিরদিনের সঙ্গের সাথী—সে ত তার নিজজন

সীতানাথের কিবা কথা
স্বভাব জাগাতে এসেছে

গৌরাঙ্গ-স্বরূপ এবার—স্বভাব জাগাতে এসেছে
ব্রহ্মাণ্ডবাসী-নরনারীর—স্বভাব জাগাতে এসেছে

আজ,–বয়ে যায় আনন্দের পাথার

শান্তিপুরে সীতানাথের ঘরে—আজ,–বয়ে যায় আনন্দের পাথার

‘‘এই ধূয়া গাই হর্ষে করেন নর্ত্তন।
স্বেদ কম্প পুলকাশ্রু হুঙ্কার গর্জ্জন।।’’

লীলায়,–যোগামায়া শ্রীঅদ্বৈত

ভাব-ভূষণে বিভুষিত—লীলায়,–যোগমায়া শ্রীঅদ্বৈত

‘‘ফিরি ফিরি কভু প্রভুর ধরেন চরণ।
চরণে ধরিয়া প্রভুরে বলেন বচন।।
অনেকদিন তুমি মোরে বেড়ালে ভাণ্ডিয়া।
ঘরে পাইয়াছি এবে রাখিব বাঁধিয়া।।’’

অনেক দিন ভাঁড়ালে মোরে

এবার বাঁধিয়া রাখিব ঘরে—অনেক দিন ভাঁড়ালে মোরে

আর ছেড়ে নাহি দিব

ঘরে পেয়েছি বেঁধে রাখ্‌ব—আর ছেড়ে নাহি দিব

‘‘এত বলি আচার্য্য আনন্দে করেন নর্ত্তন।
প্রহরেক রাত্রি আচার্য্য কৈল সঙ্কীর্ত্তন।।
প্রেমের উৎকণ্ঠা প্রভুর নাহি কৃষ্ণ-সঙ্গ।
বিরহে বাড়িল প্রেমে-জ্বালার তরঙ্গ।।’’

অদ্বৈত-মুখের ধূয়া শুনি’

ভোগের স্বভাব জাগিয়া উঠিল—অদ্বৈত-মুখের ধুযা শুনি’

সীতানাথ নাচে পাইনু বলে

প্রাণগৌর বলে কোথা পাব গেলে-সীতানাথ নাচে পাইনু বলে

‘‘ব্যাকুল হইয়া প্রভু ভূমিতে পড়িলা।
গোসাঞি দেখিয়া আচার্য্য নৃত্য সম্বরিলা।।
প্রভুর অন্তর মুকুন্দ জানে ভালমতে।
ভাবের সদৃশ পদ লাগিলা গাইতে।।
আচার্য্য উঠাইল প্রভুকে করিতে নর্ত্তন।
পদ শুনি প্রভুর অঙ্গ না যায় ধরণ।।
অশ্রু কম্প পুলক স্বেদ গদগদ বচন।
ক্ষণে উঠে ক্ষণে পড়ে ক্ষণেকে রোদন।।’’

মুকু্দ এই পদ গান করে

‘ভাবনিধির ভাব জেনে’—মুকুন্দ এই পদ গান করে
‘ভাবনিধির ভাব জেনে’
চেয়ে রসের বদন পানে—ভাবনিধির ভাব জেনে

মুকুন্দ এই পদ গান করে

‘‘হা হা প্রাণে প্রিয়সখি কিনা হৈল মোরে।
কানু-প্রেম-বিষানলে তনু মন জারে।।
রাত্রি দিনে পোড়ে মন সোয়াথ না পাঙ
যাঁহা গেলে কানু পাঙ তাঁহা উড়ি’ যাঙ।।
এই পদ গায় মুকুন্দ সুমধুর স্বরে
শুনিয়া প্রবুর চিত্ত হইল কাতরে।।
নির্ব্বেদ বিষাদমর্ষ চাপল্য গর্ব্ব দৈন্য।
জর্জ্জর হল প্রভু ভাবের প্রহারে।
ভূমিতে পড়িল স্বাস নাহিক শরীরে।।
দেখিা চিন্তিত হইলা সব ভক্তগণ।
আচম্বিতে উঠে প্রভু করিয়া গর্জ্জন।।
বোলবোল বলি’ নাচে আনন্দে বিহ্বল।
বুঝন না যায় ভাব-তরঙ্গ প্রবল।।
নিত্যানন্দ সঙ্গে বুলে প্রভুকে ধরিয়া।’’

কে বা ধরবে বল আর

প্রাণগৌরাঙ্গের,—প্রেমাবেশের ভার—কেবা ধরবে বল আর

‘‘আচার্য্য হরিদাস বুলে পাছেতে নাচিয়া।।
এইমত প্রহরেক নাচে প্রভু রঙ্গে।
কভু হর্ষ কভু বিষাদ ভাবের তরঙ্গে।।
তিন দিন উপবাসে করিয়া ভোজন।
উদ্দণ্ড-নৃত্যে প্রভুর হৈল পরিশ্রম।।
তিঁহত না জানে প্রেমে ভাবাবিষ্ট হইয়া।
নিত্যানন্দ মহাপ্রভুকে রাখিল ধরিয়া।।’’

প্রাণে প্রাণে নিতাই বলে
ভাব সম্বরণ কর

ও প্রাণ বিশ্বম্ভর—ভাব সম্বরণ কর
আর জগতে কেবা ধরে
প্রেমাবিষ্ট-বিশ্বম্ভরে—আর জগতে কেবা ধরে
শ্রী,–সেবা-বিগ্রহ-নিতাই বিনে—আর জগতে কেবা ধরে

‘‘আচার্য্য গোসাঞি তবে রাখিল কীর্ত্তন।
নানা সেবা করি’ প্রভুকে করাইল শয়ন।।
এইমত দশ দিন ভোজন কীর্ত্তন।
একরূপে করি’ কৈল প্রভুর সেবন।।
প্রভাতে আচার্য্যরত্ন দোলায় চড়াইয়া।।
ভক্তগণ সঙ্গে আইলা শচীমাতা লইয়া।।’’

ধেয়ে আইলা,–আই-শচী শান্তিপুরে

প্রাণের,–নিমাই-বদন দেখবার তরে—ধেয়ে আইল,–আই-শচী শান্তিপুরে

‘‘নদীয়া নগরের লোক স্ত্রী বালক বৃদ্ধ।
সব লোক আইলা, হৈল সঙ্ঘট্ট সমৃদ্ধ।।’’

আইলা সবে শান্তিপুরে

প্রাণ-গৌর আগমন শুনে –আইলা সবে শান্তিপুরে
নদের নিমাই দেখ্‌বার তরে—আইলা সবে শান্তিপুরে

‘‘ধাওল নদীয়ার লোক গৌরাঙ্গ দেখিতে।
আনন্দে আকুল চিত না পারে চলিতে।।
প্রাতঃকৃতও করি’ করে নাম সঙ্কীর্ত্তন।
শচী লইয়া আইলা আচার্য্য অদ্বৈত-ভবন।।
শচী আগে পড়িলা প্রভু দণ্ডবৎ হৈয়া।’’

ও মা, মা, মা বলে

‘‘শচী-আগে পড়িলা প্রবু দণ্ডবৎ হৈয়া।
কাঁদিতে লাগিল শচী কোলেতে করিয়া।।’’

শচীমাতা ভাসে নয়ন-জলে

প্রাণ-নিমাইয়ে করি’ কোলে—শচীমাতা ভাসে নয়ন-জলে

প্রাণ-নিমাইয়ে কৈল কোলে

স্বাভবিক বাৎসল্য-বলে—প্রাণ-নিমাইয়ে কৈল কোলে
আয়-বাপ নিমাই আয় বলে—প্রাণ-নিমাইয়ে কৈল কোলে

আন-স্বরূপ নাহি দেখে

যা আছে বুকে তাই দেখে চোখে—আন-স্বরূপ নাহি দেখে

মায়ের চোখে আছে লেগে

নদীয়া-বিহারী-স্বরূপ—মায়ের চোখে আছে লেগে

স্বভাবেতে তাই দেখে

বাৎস্যবতী শচীমাতা—স্বভাবেতে তাই দেখে
যা লেগে আছে তাঁর চোখে—স্বভাবেতে তাই দেখে

‘‘দোঁহার দর্শনে দোঁহে হইয়া বিহ্বল।
কেশ না দেখিয়া শচী হইলা বিকল।।’’

স্বভাবেতে নাহি দেখে

চাঁচর কেশের অদর্শন—স্বভাবেতে নাহি দেখে
তটস্থ হইয়া দেখে—স্বভাবেতে নাহি দেখে

স্বভাবে দেখে নদীয়া-বিলাসী

তটস্থ হয়ে দেখে গৌর সন্ন্যাসী—স্বভাবে দেখে নদীয়া—বিলাসী

দেখি’ চাঁচর-কেশের অদর্শন


শচীমাতার ব্যাকুল মন—দেখি’ চাঁচর-কেশের অদর্শন

ধারা বহে দু’নয়নে

‘‘অঙ্গ মুছে, মুখ চুম্বে, করে নিরীক্ষণ।
দেখিতে না পায় অশ্রু ভরিল নয়ন।।
কাঁদিয়া কহেন শচী, বাছারে নিমাই।
বিশ্বরূপ সম না করিহ নিঠুরাই।।
সন্ন্যাসী হইয়া পুনঃ না দিল দর্শন।
তুমি তৈছে কৈলে মোর হইবে মরণ।।
প্রভু ত কাঁদিয়া কহে শুন মোর আই।
তোমার শরীর এই, মোর কিছু নাই।।
তোমার পালিত দেহ, জন্ম তোমা হৈতে।
কোটি জন্মে তোমার ঋণ না পারি শোধিতে।।’’

জানাইছেন জগভরি’

জগদ্‌গুরু-গৌরহরি—জানাইছেন জগভরি’
মাতৃঋণ সর্ব্বোপরি—জানাইছেন জগভরি’

এই শিক্ষা হৃদে ধর

জগদ্‌গুরু-গৌরহরি—এই শিক্ষা হৃদে ধব
শিক্ষার অনুকূল আচরণ কর–এই শিক্ষা হৃদে ধর

‘‘জানি বা না জানি’ কৈল যদ্যপি সন্ন্যাস।
তথাপি তোমারে কভু না হব উদাস।।’’

হবে মোর সর্ব্বনাশ

তোমারে হইলে উদাস—হবে মোর সর্ব্বনাশ

যত ভক্তগণ প্রাণে প্রাণে

বুকে রেখো এই বচনে—হবে মোর সর্ব্বনাশ
যত ভক্তগণ প্রাণে প্রাণে
বুকে রেখো এই বচনে—যত ভক্তগণ প্রাণে প্রাণে

‘‘তুমি যাঁহা কহ মুঞি তাঁহাই রহিব।
তুমি যেই আজ্ঞা দেহ সেই ত করিব।।
এত বলি’ পুনঃ পুনঃ করে নমস্কার।
তুষ্ট হঞা আই কোলে করে বারবার।।’’

প্রাণ-গৌরাঙ্গে করে কোলে

আরে আরে,–আরে বাপ নিমাই বলে—প্রাণ-গৌরাঙ্গে করে কোলে

‘‘তবে আই লইয়া আচার্য্য গেলা অভ্যন্তর।
ভক্তগণে মিলিতে প্রভু হইলা সত্বর।।
একে একে মিলিলা প্রভু সব ভক্তগণে।
সবার মুখ দেখি’ করে দৃঢ় আলিঙ্গনে।।’’

প্রেমাবতার গৌর আমার

প্রাণের প্রাণ সবাকার—প্রেমাবতার গৌর আমার

সবারে ধরেন বুকে

নাম ধরে ডেকে ডেকে—সবারে ধরেন বুকে

‘‘কেশ না দেখিয়া ভক্ত যদ্যপি পায় দুঃখ
সৌন্দর্য্য দেখিতে তবু পায় মহাসুখ’’

বল,–কেন গৌরগণ সুখ পায়

গৌরের সন্ন্যাসীরূপ দেখে—বল,–কেন গৌরগণ সুখ পায়

তারা,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করিছে
সে ত একা গৌর নয়

নিতাই জড়িত আছে—সে ত একা গৌর নয়

ও ত সন্ন্যাস বেশ নয়

বেশরূপে নিতাই হয়—ও ত সন্ন্যাস বেশ নয়

এবে,–কৃষ্ণচৈতন্য নামধারী

নিতাই-জড়িত প্রাণ-গৌরহরি—এবে,–কৃষ্ণচৈতন্য নামধারী

ফুটে যে উঠেছে

জড়িত-মাধুরী—ফুটে যে উঠেছে

তাইতে এত সুখ পায়
কখনও ত দেখে নাই

নিতাই জড়িত গৌর—কখনও ত দেখে নাই

‘‘বাহ্যে দুঃখী, দেখি’ গৌর সন্ন্যাসী।
অন্তরে সুখী, দেখি’ নিতাই আছে মিশি।।’’
‘‘শ্রীবাস রামাই বিদ্যানিধি গদাধর।
গঙ্গাদাস বক্রেশ্বর মুরারি শুক্লান্বর।।
বুদ্ধিমন্তখান নন্দন শ্রীধর বিজয়।
বাসুদেব দামোদর মুকুন্দ সঞ্জয়।।
কত নাম লব যত নবদ্বীপবাসী।
সবারে মিলিলা প্রভু কৃপাদৃষ্ট্যে হাসি’।।’’

এত,–হেসে কৃপাদৃষ্টি নয়

সবারে,–নদীয়া-বিহারী রূপ দেখায়—এ ত,–হেসে কৃপাদৃষ্টি নয়

‘‘আনন্দে নাচয়ে সবে বলি’ হরি হরি।’’

আনন্দ সবারি মন

পাইয়া সে হারাধরেন—আনন্দ সবারি মনে

পাব আশা ছিল না মনে

পাইল নিতাইচাঁদের গুণে—পাব আশা ছিল না মনে

সীতানাথের ঘরে প্রাণগৌর খেলে

নিতাইচাঁদের প্রেম-কৌশলে—সীতানাথের ঘরে প্রাণগৌর খেলে
দেখে,–আই-সঙ্গে নদীয়াবাসী সকলে—সীতানাথের ঘরে প্রাণগৌর খেলে

প্রেমময় নিত্যানন্দ-রায়

কৌশলেতে গৌর দেখায় নিত্যানন্দ-রায়

তাইতে আমার নিতাই-রতন

গৌরগণের প্রাণধন—তাইতে আমার নিতাই-রতন

কে পেয়েছে গৌরধনে

গরব করে বলতে পারি-–কে পেয়েছে গৌরধনে
আমার,–নিতাইচাঁদের কৃপা বিনে—কে পেয়েছে গৌরধনে

তাই,–অনুভবি ঠাকুর বৃন্দাবন কন

নিতাই মহাপ্রভু বলে বচন—তাই,–অনুভবি ঠাকুর বৃন্দাবন কন

আজ অপরূপ মিলন রে

শান্তিপুরে সীতানাথের ঘরে—আজ অপরূপ মিলন রে
গৌরগণের-সঙ্গে প্রাণগৌরাঙ্গের—আজ অপরূপ মিলন রে
নিতাইচাঁদের কৃপাবলে—আজ অপরূপ মিলন রে

আনন্দ আর ধরে না

‘‘আনন্দে নাচয়ে সবে বলি’ হরি হরি।
আচার্য্য-মন্দির হইল শ্রীবৈকুষ্ঠপুরী।।’’

কবিরাজ রাখেন হৃদে পুরি’

আপন-মনে কথা-কবিরাজ রাখেন হৃদে পুরি’

বলছেন,–জগজনের মুখ হেরি’

শান্তিপুর বৈকুণ্ঠপুরী—বলছেন,–জগজনের মুখ হেরি’

কবিরাজেয় মনের কথা

শান্তিপুর,–বৈকুণ্ঠ নয় নদীয়াপুরী—কবিরাজের মনের কথা

‘‘যত লোক আইল মহাপ্রভুকে দেখিতে।
নানা গ্রাম হইতে আর নবদ্বীপ হৈতে।।
সবাকারে বাসা দিল ভক্ষ্য অন্ন পান।
বহুদিন আচার্য্য সবার কৈল সমাধান।।
আচার্য্য গোসাঞির ভাণ্ডার অক্ষয় অব্যয়।’’
সেই,–শান্তিপুর নাম ধরে

জড়াজড়ি-মুরতি যেখানে বিহরে—সেই শান্তিপুর নাম ধরে

তার,–কখনও কি অভাব হয়

প্রভু যারে শিব কয়—তার,–কখনও কি অভাব হয়

তার অভাব হবে কৈছে

যার ঘরে অন্নপূর্ণা আছে—তার অভাব হবে কৈছে

‘‘যত দ্রব্য ব্যয় করে তত দ্রব্য হয়।।
সেইদিন হৈতে শচী করেন রন্ধন।
ভক্তগণ লইয়া প্রভু করেন ভোজন।।
দিনে আচার্য্যের প্রীতি প্রভুর দর্শন।
রাত্রে লোক দেখে প্রভুর নর্ত্তন কীর্ত্তন।।
কীর্ত্তন করিতে প্রভুর হয় ভাবোদয়।
স্তম্ভ কম্প পুলকাশ্রু গদগদ প্রলয়।।’’

এ ত,–আছাড় খেয়ে পড়া নয়

শান্তিপুর-ভূমির সৌভাগ্য বাড়ায়—এ ত,–আছাড় খেয়ে পড়া নয়

‘‘ঘন ঘন পড়ে প্রভু আছাড় খাইয়া।
দেখি’ শচীমাতা কহে রোদন করিয়া।।
চূর্ণ হৈল হেন বাসো নিমাই কলেবর।
হা হা করি’ বিষ্ণুপাশে মাগে এই বর।।
বাল্যকাল হৈতে তোমার যে কৈলু সেবন।
তার এই ফল মোরে দেহ নারায়ণ।।
যে কালে নিমাই পড়ে ধরণী-উপরে।
ব্যথা যেন নাহি লাগে নিমাই-শরীরে।।’’

কেন বা ব্যথা লাগবে

বাৎসল্যের এই কথা বটে—কেন বা ব্যথা লাগবে
হাত বাড়ায়ে রয়েছে
সেবাশক্তি নিতাই আমার—হাত বাড়ায়ে রয়েছে
সদাই তার সঙ্গে আছে—হাত বাড়ায়ে রয়েছে
পড়বে বুকে ধরবে বলে—হাত বাড়য়ে রয়েছে

‘‘এইমত শচীদেবী বাৎসল্যে বিহ্বল।
হর্ষ ভয় দৈন্যভাবে হইলা বিকল।।
শ্রীবিনাস আদি যত বিপ্রভক্তগম।
প্রভুকে ভিক্ষা দিতে হৈল সবাকার মন।।
শুনি’ সবাকারে করেন মিনতি।
মুঞি নিমাইর দর্শন আর পাব কতি।।
তোমা সবা-সনে হবে অন্যত্র মিলন।
মুঞি অভাগিণীর এইমাত্র দরশন।।
যাবৎ আচার্য্য ঘরে নিমাইর অবস্থান।
মুঞি ভিক্ষা দিব সবারে এই মাগো দান।।
শুনি’ ভক্তগণ কহে করি’ নমস্কার।
মাতার যে ইচ্ছা সেই সম্মত সবার।।
মাতার ব্যগ্রতা দেখি’ প্রভুর ব্যগ্র মন।
ভক্তগণ একত্র করি’ বলিল বচন।।
তোমা সবার আজ্ঞা বিনে চলিলা বৃন্দাবন।
যাইতে নারিল, বিঘ্ন কৈল নিবর্ত্তন।।
যদ্যপি সহসা আমি করিয়াছি সন্ন্যাস।
তথাপি তোমা-সবা হৈতে নহিব উদাস।।
তোমা-সেবা ন ছাড়িব যাবৎ আমি জীব।
মাতারে তাবৎ আমি ছাড়িতে নারিব।।
(তবে) সন্ন্যাসীর ধর্ম্ম নহে সন্ন্যাস করিয়া।
নিজ-জন্মস্থানে রহে কুটুম্ব লইয়া।।
কেহ যেন এই বোলে না করে নিন্দন।
সেই যুক্তি কর যাতে রহে দুই ধর্ম্ম।।
শুনিয়া প্রভুর এই মধুর বচন।
শচীপাশে আচার্য্যাদি করিলা গমন।।
প্রভুর নিবেদেন তারে সকল কহিলা।
শুনি’ শচী জগন্মাতা কহিতে লাগিলা।।
তিহোঁ যদি ইঁহা রহে তবে মোর সুখ।
তার নিন্দা হয় যদি সেই মোর দুঃখ।
তাতে এই যুক্তি ভাল মোর মনে লয়।
নীলাচলে রহি যদি দুই কার্য্য হয়।।
নীলাচলে নবদ্বীপে যৈছে দুই ঘর।’’

দুই প্রভুর ঘর বটে

শচী তত্ত্ব কন আনুষঙ্গে—দুই প্রভুর ঘর বটে

নদে নীলাচলে ভিন্ন নয়

গৌরাঙ্গ-বিহারের দুইটি ঘর হয়—নদে নীলাচলে ভিন্ন নয়

নদে নীলাচল দুই ঘর

যেথা বিহরে গোরা-রসিকবর—নদে নীলাচল দুই ঘর
সদর আর অন্দর—নদে নীলাচল দুই ধর

ঘরে নীলাচল নাম

গুপত খেলারস্থান—ধরে নীলাচল নাম
তিন,–বাঞ্ছা-পূর্ত্তি—লীলাস্থান—ধরে নীলাচল নাম
নদীয়ার নিভৃত উদ্যান—ধরে নীলাচল নাম

‘‘নীলাচলে নবদ্বীপে যৈছে দুই ঘর।
লোক-গতাগতি বার্ত্তা পাব নিরন্তর।।
তুমি সব করিতে পার গমনাগমন।
গঙ্গাস্নানে কভু হবে তাঁর আগমন।।
আপনার দুঃখ সুখ তাহা নাহি গণি।
তাঁর যেই সুখ সেই নিজ-সুখ মানি।।
শুনি’ ভক্তগণ তাঁরে করেন স্তবন।
বেদ-আজ্ঞা যৈছে মাতা তোমার বচন।।
ভক্তগণ প্রভু আগে আসিয়া কহিল ।
শুনিয়া প্রভুর মনে আনন্দ হইল।।

আজ,–কি আনন্দ শান্তিপুরে

ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—আজ—কি আনন্দ শান্তিপুরে
অদ্বৈত—আচার্য্যের ঘরে—আজ,–কি আনন্দ শান্তিপুরে

এসেছেন প্রাণ গৌরহরি
মিলিলেন সব ভক্তগণ

চারিদিক্‌ হতে এসে—মিলিলেন সব ভক্তগণ

করিলেন আনন্দ-কীর্ত্তন

লয়ে,–প্রাণের প্রাণ শচীনন্দন—করিলেন আনন্দ-কীর্ত্তন

অধরামৃত কৈলেন ভোজন
দূরে গেল মনের ব্যথা

দেখি’ মুখ শুনি’ মধুর-কথা—দূরে গেল মনের ব্যথা

আজ,–বহিতেছে প্রেমের পাথার

শান্তিপুরে সীতানাথের ঘরে—আজ,–বহিতেছে প্রেমের পাথার

একবার দেখাও হে

হা শান্তিপুর-নাথ—একবার দেখাও হে

তুমি ত আনলে ডেকে

জগজীবে দেখাবে বলে—তুমি ত আনলে ডেকে

দয়া কর সীতানাথ

এ-দীনে কর দৃষ্টিপাত—দয়া কর সীতানাথ

প্রতিহৃদে জাগায়ে দাও

এইদিনে,–তোমার গৃহে গৌরাঙ্গ-বিহার—প্রতিহৃদে জাগায়ে দাও
ম্লেচ্ছ,–যবনাদি-নরনারীর—প্রতিহৃদে জাগায়ে দাও

সবাই,–হৃদে ধরি ঝুরে মরি

তোমার গৃহে গৌরাঙ্গ-বিহার—সবাই,–হৃদে ধরি ঝুরে মরি
শ্রীগুরু-পদাশ্রয়ে—সবাই,–হৃদে ধরি ঝুরে মরি

প্রেমস্বরে গান করি

‘‘এমন সুন্দর গৌরাঙ্গ কে আনিল রে।
কে আনিল কেবা দিল কোথা বা ছিল রে।।
সীতানাথ আনিল নিতাই দিল ব্রজেতে ছিল রে।।’’


কেবা পেত রে
যদি,–সীতানাথ না আনিত—কেবা পেত রে
‘‘যদি,–সীতানাথ না আনিত—কেবা পেত রে

‘যদি,–‘‘অদ্বৈত না হত, কি মেনে হইত, কেমন ধরিতু দে।
ব্রজের নিকুঞ্জ, বিলাস বৈভব, আনিয়া দেখাত কে।’’

প্রাণভরে জয় দাও ভাই

গৌর-আনা ঠাকুরের—প্রাণভরে জয় দাও ভাই

জয়,–জয় সীতানাথ বলিহারি

নিতাই গৌর জানালে জগভরি’—জয়,–জয় সীতানাথ বলিহারি

বল,–জয় জয় গৌরহরি

সীতানাথের গৃহ-বিহারী—বল,–জয় জয় গৌরহরি

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শ্রীঅদ্বৈত-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ