শ্রীশ্রী গোপালভট্ট-গোস্বামিপাদের সূচক-কীর্ত্তন

(আষাঢ়-কৃষ্ণা পঞ্চমী)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।


—- ০—-

আহা,–

‘‘আরে মোর প্রেমালয়,পরম-করুণাময়’’

পরম-করুণাময়

আরে মোর প্রেমালয়—পরম-করুণাময়
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমালয়—পরম-করুণাময়

‘‘শ্রীগোপালভট্ট যে আমার।
সকল সদ্‌গুণখনি বিপ্রবংশ-শিরোমণি,
শ্রীবেঙ্কটভট্টের কুমার।।’’

শ্রীবেঙ্কটভট্টের কুমার

শ্রীগোপালভট্ট আমার—শ্রীবেঙ্কটভট্টের কুমার

[মাতন]

‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের প্রিয় অতি,অদ্ভুত ভজন-রীতি,
জগতে বিদিত কীর্ত্তি যাঁর।
অল্পকালে মহাভক্তি,কে বুঝিতে পারে শক্তি
সদা কৃষ্ণ-রসে মাতোয়ার।।
দক্ষিণ-ভ্রমণকালে,প্রভু চারিমাস ছলে,
ত্রিমল্ল-বেঙ্কট-গৃহে স্থিতি।


গোপাল,–

তথি নিজ-নাথে পাঞা,পরন আনন্দ হঞা,
পিতার আজ্ঞায় সেবে নিতি।।’’


‘‘শ্রীবৈষ্ণব এক শ্রীবেঙ্কটভট্ট নাম।
প্রভুর নিমন্ত্রণ কৈল করিয়া সম্মান।।
নিজ-ঘরে লৈয়া কৈল পাদ-প্রক্ষালন।
সে জল বংশের সহ করিল ভক্ষণ।।
শ্রীগোপালভট্ট হন শ্রীবেঙ্কট-তনয়।
প্রভু-পাদোদক-পানে হৈল প্রেমোদয়।।’’

পাদোদক পান করে

প্রেমাবতার-শ্রীগৌরাঙ্গের—পাদোদক পানকরে

নাচে গোপাল প্রেমভরে

পাদোদক পান করে—নাচে গোপাল প্রেমভরে

‘‘করয়ে যতন কত স্থির হৈতে নারে।
বিপুল-পুলক অঙ্গে ঝলমল করে।।’’


প্রভু-পাদোদক পানে

‘‘বিপুল-পুলক অঙ্গে ঝলমল করে।।
কিবা গোপালের শোভা সর্ব্বাঙ্গ সুন্দর।’’

গৌর আমার,–আপন-বরণ ধরাল

সৌন্দর্য্যের সার-মাধুর্য্যের পার—গৌর আমার,–আপন-বরণ ধরাল

গোপাল হৈল অতি-সুন্দর

পিয়ে গৌর-পাদোদক—গোপাল হৈল অতি-সুন্দর

‘‘কিবা গোপালেরশোভা সর্ব্বাঙ্গ-সুন্দর।
জিনিয়া চম্পক চারুবর্ণ মনোহর।।
কিবা মুখপদ্ম দীর্ঘ নয়ন-যুগল।
কিবা ভুরু ভাল নাসা তিলক-উজ্জ্বল।।
শ্রুতিযুগ গণ্ড কিবা গ্রীবার বলনি।
কিবা বাহু বক্ষ পীন ক্ষীণ মাজাখানি।।
কিবা জানু জঙ্ঘাযুগ চরণ-ললাম।
পরিধেয় বসন ভূষণ অনুপম।।
তিলে তিলে গোপালের বাড়য়ে সৌন্দর্য।’’

গোপালের সৌন্দর্য্য বাড়ে

গৌর-পাদোদক পান করে—গোপালের সৌন্দর্য্য বাড়ে

[মাতন]

‘‘তিলে তিলে গোপালের বাড়য়ে সৌন্দর্য্য।
দেখিয়া অদ্ভুত তেজঃকেবা ধরে ধৈর্য্য।।
নিজ-গৃহ শ্রীগোপাল প্রাণনাথে পাইয়া।
পিতার আজ্ঞায় সেবে মহা-হৃষ্ট হইয়া।।’’

অদ্ভুত গোপালের রীত

গৌর-সেবায় স্বাভাবিক প্রীত—অদ্ভুত গোপালের রীত

প্রাণ-গৌরাঙ্গের নিত্য-কিঙ্কর

বেঙ্কট-তনয় গোপাল হয়—প্রাণ-গৌরাঙ্গের নিত্য-কিঙ্কর

সেবা করে স্বাভাবিক-প্রীতে

নিজ-গৃহে পাইয়া প্রাণনাথে—সেবা করে স্বাভাবিক-প্রীতে
নিজ-পিতার আজ্ঞাক্রমে-সেবা করে স্বাভাবিক প্রীতে

গোপালের আনন্দ নাহিক ধরে

মন-সাধে সেবা করে—গোপালের আনন্দ নাহিক ধরে

‘‘গোপালের গৌরাঙ্গ-সেবায় দেখি’ প্রীত।
শ্রীবেঙ্কটভট্ট হৈলা মহা-উল্লসিত।।
গোপলে সঁপিল গৌরচন্দ্রের চরণে।
দিবারাত্রি আনন্দে গোঙায় প্রভু-সনে।।’’

কি বলব গোপালের চরিত

মহা,–‘‘প্রভুর সন্ন্যাস গোপালেরে নাহি ভায়।
গোপাল,–নির্জ্জনে যাইয়া খেদ করয়ে সদায়।’’

খেদে গোপাল অন্তরে

প্রভুর সন্ন্যাস-বেশ হেরে—খেদে গোপাল অ্ন্তরে

গোপালভট্টের ভাল লাগে না

প্রাণ-গৌরাঙ্গের সন্ন্যাসী-বেশ—গোপালভট্টের ভাল লাগে না

‘‘বিধাতার প্রতি কহে গদগদ ভাষে।
ওরে বিধি কেন জন্মাইলি দূর-দেশে।।
প্রভুর,– নদীয়া-বিহার-সুখে করিয়া বঞ্চিত।
ওরে বিধি,–দেখাইলি প্রভুর এ-বেশ বিপরীত।।’’

হায় বিধি কি করিলি
দেখিতে ত’ নাহি দিলি

ওরে নিদারুণ বিধি—দেখিতে ত’ নাহি দিলি
নদীয়া-বিহারে বঞ্চিত কৈলি—দেখিতে ত’ নাহি দিলি

[মাতন]

চাঁচর-কেশ নাটুয়া-বেশ—দেখিতে ত’ নাহি দিলি
চাঁচর-কেশে মোহন-বেশ—দেখিতে ত’ নাহি দিলি

দেখিতে ত’ পেলাম না

ধবল-পাটের জোড়-পরা—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘ধবল-পাটের জোড়-পরা’—
তাতে—রাঙা রাঙা পাড় দেওয়া—ধবল-পাটের জোড়-পরা

দেখিতে ত’ পেলাম না

রসময়-নাটুয়া-গোরা—দেখিতে ত’ পেলাম না
চাঁচর-চুলে চাঁপা গোঁজা—দেখিতে ত’ পেলাম না

হায় বিধি কি করিলি

নদীয়া-বিহার-সুখে বঞ্চিত কৈলি—হায় বিধি কি করিলি

[মাতন]
নদীয়া,–বিহার-সুখে বঞ্চিত হলাম

গৌর-কিশোর দেখতে নারলাম—নদীয়া,–বিহার-সুখে বঞ্চিত হলাম

‘‘ব্রজেন্দ্রনন্দন প্রাণনাথ রাধিকার।
করাইলা তাঁহারে সন্ন্যাসে অঙ্গীকার।।’’

হায় বিধি কি করিলি

নির্জ্জনে,–গোপাল খেদ করে অতি—হায় বিধি কি করিলি

‘‘করাইলা তাঁহারে সন্ন্যাস অঙ্গীকার।।
এত কহি’ ভাসে দুই নেত্রের ধারায়।
তেজয়ে নিশ্বাস দীর্ঘ অগ্নিশিখা প্রায়।।
পুনঃ কহে বিধিরে করিব কিবা রোষ।
জানিনু কেবল এ আপন-কর্ম্মদোষ।।’’

দেখতে পেলাম না সে বিলাসে

আপনার কর্ম্মদোষে—দেখতে পেলাম না সে বিলাসে

‘‘ঐছে কত কহিয়া রহিল মৌন ধরি’।
গোপালের অন্তর জানিলা গৌরহরি।।
অকস্মাৎ গোপালের নিদ্রা আকর্ষিল।
স্বপ্নছলে নবদ্বীপ প্রত্যক্ষ হইল।।
দেখয়ে প্রভুর তথায় অদ্ভুত বিহার।
প্রভু সঙ্গে বিলসে সুখের নাহি পার।।
নিত্যানন্দাদ্বৈত প্রেমাবেশে কোলে কৈল।’’

এস বাপ গোপাল বলে
আইস গোপাল আইস বলে

শ্রীঅদ্বৈত কৈলা কোলে—আইস গোপাল আইস বলে

[মাতন]

‘‘নিত্যানন্দাদ্বৈত প্রেমাবেশে কোলে কৈল।
না জানি কি কহিতেই নিদ্রাভঙ্গ হইল।।
গোপাল ব্যাকুল হইয়া চায় চারি-ভিতে।’’

গোপাল ভাসে নয়ন-জলে

হা,–নিতাই গৌর সীতানাথ বলে—গোপাল ভাসে নয়ন-জলে

[মাতন]
এই যে ছিলে কোথা গেলে

মধুর-নদীয়া-বিহারে—এই যে ছিলে কোথা গেলে

দেখা দিয়ে কোথায় লুকালে

হা শচীনন্দন গৌরহরি—দেখা দিয়ে কোথা লুকালে

[মাতন]

চাঁচরকেশে মোহনবেশে—দেখা দিয়ে কোথা লুকালে

[মাতন]

‘‘গোপাল ব্যাকুল হইয়া চায় চারি-ভিতে।
চলয়ে প্রভুর আগে নারে স্থির হৈতে।।
গোপাল আইল জানি উল্লাস অশেষ।
প্রভু হইলা শ্যামল সুন্দর গোপবেশ।।
দেখয়ে গোপাল শোভা রহিয়া নির্জ্জনে।
সুবর্ণ-বরণ অঙ্গ হৈল সেইক্ষণে।।
ভুবন মোহয়ে সে না রূপের ছটায়।
চাঁচর-কেশের ঝুঁটা পিঠেতে লুটায়।।
চন্দন-তিলক ভালে ভুরু কাম-ফণি।
সতীধর্ম্ম হবে দীর্ঘ-নয়ন-চাহনি।।
কতশত শারদ-চাঁদের মদ নাশে।
কি নব-ভঙ্গীতে হাসি অমিয়া বরিষে।।
পরিধেয় ত্রিকচ্ছ-বসন অনুপম।
ভূষণে ভূষিত অঙ্গ ভঙ্গী মনোরম।।
মালতীর মালা গলে দোলে অনিবার।
দেখি’ গোপালের মনে হৈল চমৎকার।।’’

গোপালের আশা পূর্ণ হল

নদীয়া,–বিহার-স্বরূপ গৌর দেখা দিল—গোপালের আশা পূর্ণ হল

‘‘চরণে পড়িয়া পুনঃ চাহে প্রভুপানে।
সন্ন্যাসীর শিরোমণি দেখে সেইক্ষণে।।’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

যদি,–দেখা দিলে কোথা লুকালে—ব্যাকুলহয়ে কাঁদে রে

[মাতন]

‘‘প্রভু গৌরচন্দ্র গোপালেরে স্থির করি’।
উপদেশ কৈল যৈছে কহিতে না পারি।
পুনঃ কহে অচিরে যাইবে বৃন্দাবন।
মিলিবে দুল্লর্ভরত্ন রূপ সনাতন।।
মোর মনোবৃত্তি দোঁহে প্রকাশ করিব।
তোমার শিষ্যের দ্বারে জগৎ ব্যাপিব।।
এতবলি গোপালেরে করি প্রভু কোলে।
গোপালের অঙ্গ শিক্ত কৈল নেত্র-জলে।।
কহিল এ সব কথ রাখিও গোপনে।
হইল পরমানন্দ গোপালের মনে।।
গোপালের গৌরাঙ্গ-সেবায় দেখি প্রীত।
শ্রীবেঙ্কটভট্ট হৈল মহা হরষিত।।
গোপালে সঁপিল গৌরচন্দ্রের চরণে।
দিবারাত্র আনন্দে গোঁয়ায় প্রভু-সনে।।
চারিমাস পরে প্রবু করিব গমন।
ইহা মনে করিতে অধৈর্য্য তিনজন।।’’


‘‘শচীসুত গৌরহরি, পরম করুণা করি’,
প্রিয়-ভট্ট-গোপালের তরে।
প্রেমামৃত পিয়াইয়া, নিজ-তত্ত্ব জানাইয়া।
ভাসাইলা আনন্দ-সাগরে।।
পুনঃ প্রভু গৌরহরি, ভট্টের করেতে ধরি’,
কহে কিছু মধুর বচন।
তুয়া প্রেমাধীন আমি, শীঘ্র ব্রজে যাবে তুমি,
তাঁহা পারে রূপ সনাতন।।
শুনিয়াপ্রভুর বাণী, বিচ্ছেদ হইবে জানি,
তিলেক ধৈর্য্য নাহি বাঁধে।’’

বিরহ উঠল জেগে

শ্রীমুখের কথা শুনে—বিরহ উঠল জেগে

কেমন করে থাকব রে

গোপালভট্ট মনে গণে—কেমন করে থাকব রে
গৌরাঙ্গ হারাইয়ে—কেমন করে থাকব রে

[মাতন]
কেমন করে থাকব ঘরে

শ্রীগোপাল কেঁদে বলে—কেমন করে থাকব ঘরে
প্রভু,–তুমি যদি যাবে চলে—কেমন করে থাকব ঘরে

[মাতন]

‘‘মুখে নাহি সরে কথা, সদাই অন্তরে ব্যথা,
ও রাঙা-চরণে পড়ি কাঁদে।।’’

আর কি দেখতে পাব হে

হা গৌর প্রাণ গৌর—আর কি দেখতে পাব হে
ঐ,–হরিবোলা রসের বদন—আর কি দেখতে পাব হে

[মাতন]

‘‘পুনঃ প্রভু গৌরহরি, প্রিয়-ভট্টে কোলে করি’,
সিঞ্চাইলা নয়নের জলে।’’

প্রাণ,–গৌর ভাসে নয়ন-জলে

প্রিয়,–গোপালেরে করি’ কোলে—প্রাণ,–গৌর ভাসে নয়ন-জলে

‘‘কতরূপে প্রবোধিয়া, ভট্ট-মুখ-পানে চাঞা,
কাতর-অন্তরে প্রভু চলে।।
শ্রীবেঙ্কট ত্রিমল্লেরে, আশ্বাসিয়া বারে বারে,’’


‘ত্রিমল্ল বেঙ্কট শ্রীপ্রবোধানন্দ তিনে।
বিচারয়ে প্রভু বিনা রহিব কেমনে।।
মো-সবার সঙ্গে পরিহাস কে করিবে।
কাবেরী-স্নানেতে সঙ্গে কেবা লৈয়া যারে।।’’

কার,–সঙ্গে যাব কাবেরী-স্নানে

কেমনে,–থাকব প্রাণ-গৌর বিনে,–কার,–সঙ্গে যাব কাবেরী-স্নানে

‘‘রঙ্গানাথে কেবা আর করিবে সঙ্কীর্ত্তন।’’

কে বিহরিবে রঙ্গনাথের আগে

কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—কে বিহরিবে রঙ্গনাথের আগে

দেখতে কি পাব না আর

রঙ্গনাথের আগে নাটুয়া-গোরায়—দেখতে কি পাব না আর

‘‘কে দিবে অধমে সে দুর্ল্লভ-ভক্তিধন।।
আসিবে অসংখ্য লোক কাহার দর্শনে।’’

কে,–আসবে এই দীনের ঘরে

প্রভু ছেড়ে গেলে পরে—কে,–আসবে এই দীনের ঘরে

এই,–দীনের ঘরে কেউ আসবে না

চলে গেলে গৌরাঙ্গ-সোণা—এই,–দীনের ঘরে কেউ আসবে না

‘‘আসিবে অসংখ্য লোক কাহার দর্শনে।
এ সব ভবন শূন্য হবে প্রভু বিনে।।’’

আঁধার হবে এই ঘর

গেলে নবদ্বীপ-সুধাকর—আঁধার হবে এই ঘর

[মাতন]
কেমন করে থাকব রে

গৌর-শূন্য এই ঘরে—কেমন করে থাকব রে

[মাতন]
এই,–শূন্য ভবনে থাকব কেমনে

না হেরি’ সে রসের বদনে—এই,–শূন্য-ভবনে থাকব কেমনে

[মাতন]

‘‘ঐছে কত কহে নেত্রে বহে অশ্রুধার।
মনের উদ্বেগ যত না করে প্রচার।।’’
‘‘শ্রীবেঙ্কট-ত্রিমল্লেরে, আশ্বাদিয়া বারে বারে,
দক্ষিণ ভ্রমণে প্রভু গেলা।
হেথা কতদিন পরি, গৃহসুখ পরিহরি,
শ্রীগোপালভট্ট ব্রজে আইলা।।’’

তারে কে বাঁধিতে পারে

গৌর-কৃপা হয়েছে যারে—তারে কে বাঁধিতে পারে

পাগল হয়ে ছুটল রে

শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের পাগল—পাগল হয়ে ছুটল রে
মাতা-পিতার অদর্শনে—পাগল হয়ে ছুটল রে
গৌর-আজ্ঞা হৃদে ধরে—পাগল হয়ে ছুটল রে
মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে—পাগল হয়ে ছুটল রে

‘‘ শ্রীগোপালভট্ট ব্রজে আইলা।।
প্রভু আসি পুরুষোত্তমে, যবে গেলা বৃন্দাবনে,
তাঁহা হৈতে আসিবার কালে।
পথে-রূপ-সনাতনে,’’

প্রয়াগে আর কাশীধামে

‘‘পথে রূপ-সনাতনে, শিক্ষা দিয়া দুইজনে,
তবে প্রভু গেলা নীলাচলে।।
রূপ আর সনাতন, যবে আইলা বৃন্দাবন,
ভট্ট গোসাঞি মিলিলা সবায়।
প্রভু-প্রিয় লোকনাথ, মিলিলা সবার সাথ,
সবে মিলি গৌর-গুণ গায়।।’’

গোপাল গায় গৌরাঙ্গ-গুণে

রূপ-সনাতন-লোক-সনে—গোপাল গায় গৌরাঙ্গ-গুণে

গলা ধরে কাঁদে রে
গোপালের গলা ধরে কাঁদে

শ্রী,–রূপ সনাতন লোকনাথ—গোপালের গলা ধরে কাঁদে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

গোপালভট্ট কোলে লয়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

[মাতন]

প্রাণ-গৌরাঙ্গ-গুণ স্মঙরি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

কাঁদে প্রভু রূপ-সনাতন

গোপালভট্টে কোলে করে—কাঁদে প্রভু রূপ-সনাতন
তাঁরে গৌর-কৃপা করে স্মরণ-কাঁদে প্রভু রূপ-সনাতন

[মাতন]
লোকনাথ গৌর-গুণে ঝুরে

গোপালভট্টে কোলে করে—লোকনাথ গৌর-গুণে ঝুরে

[মাতন]
কাঁদে রে চারিজনে

লোকনাথ রূপ সনাতন গোপাল—কাঁদে রে চারিজনে
পরস্পর গলা ধরে—কাঁদে রে চারিজনে
ব্রজের নির্জ্জন-বনে—কাঁদে রে চারিজনে
স্মঙরি গৌরাঙ্গ-গুণে—কাঁদে রেচারিজনে

[মাতন]
‘‘সবে মিলি গৌর-গুণ গায়।।

হেথা,–নীলাচলে শ্রীগৌরাঙ্গ, বিহরে ভকত-সঙ্গ,
শুনিলা শ্রীভট্ট ব্রজে গেলা।
মহাপ্রভু প্রেম ভরে, শ্রীগোপালভট্ট তরে,
ডোর বহির্ব্বাস পাঠাইলা।।’’


‘‘সন্ন্যাসীর শিরোমণি প্রভু গৌররায়।
ভক্তগণ-প্রতি কহে মধুর-ভাষায়।।
বহুদিন ব্রজের সংবাদ না পাইয়া।
না জানিয়ে আমার কেমন করে হিয়া।।
অবশ্য চাহিয়ে তথা পত্রী পাঠাইতে।
এত কহিতেই পত্রী আইলা ব্রজ হৈতে।।
লিখিলেন পত্রীতে শ্রীরূপ-সনাতন।
গোপালভট্টের বৃন্দাবন আগমন।।
শুনি মহাপ্রভুর আনন্দ হৈল অতি।
গোপালের কথা কিছু কহে সবা প্রতি।।
দক্ষিণ ভ্রমণে অতি আনন্দ-অন্তরে।
চারিমাস রহিনু বেঙ্কটভট্ট-ঘরে।।
গোপালভট্ট বেঙ্কটভট্টের নন্দন।
অল্পকালে সকল শাস্ত্রেতে বিচক্ষণ।।
পাইয়া পিতার আজ্ঞা গোপাল উল্লাসে।
করিল আমার সেবা অশেষ-বিশেষে।।
পরম-দয়ালু কৃষ্ণ তারে কৃপা কৈলা।
সেই এই গোপালভট্ট বৃন্দাবনে আইলা।।
প্রাণের সমান মোর রূপ সনাতন।
তাহার গমন মাত্রে লিখিলা লিখন।।
শুনিয়া প্রভুর অতি-মধুর-বচন।
পরম-আনন্দে পূর্ণ হৈলা ভক্তগণ।
রূপ-সনাতন-গুণে প্রভু মগ্ন হৈয়া।
বৃন্দাবনে পত্রী পাঠায়েন যত্ন পাইয়া।।
লিখয়ে পত্রীতে প্রিয় রূপ-সনাতনে।
পাইয়া আনন্দ গোপালের আগমনে।।
নিজ-ভ্রাতা-সম-ভট্ট-গোপালে জানিবে।’’

যত্ন করে কাছে রেখো

ডোর বহির্ব্বাস তারে দিও—যত্ন করে কাছে রেখো[মাতন]

‘‘নিজ-ভ্রাতা-সম ভট্ট-গোপালে জানিবে।
মধ্যে মধ্যে শুভ সমাচার পাঠাইবে।’’

চিত্ত চঞ্চল হয় আমার

না পেলে তোমাদের সমাচার—চিত্ত চঞ্চল হয় আমার

আ’মরি কি প্রীতি-ব্যবহার

নিজগণ-প্রতি গৌরের আমর—আ’মরি কি প্রীতি-ব্যবহার

‘‘মধ্যে মধ্যে শুভ-সাচার পাঠাইবে।।
যে যে গ্রন্থবর্ণিলা বণিবা যত আর।
অচিরে সে সব হবে সর্ব্বত্র প্রচার।।
গ্রন্থরত্ন বিতরণ করিবেন যেঁহ।
বুঝি কৃষ্ণ-ইচ্ছায় প্রকট হৈল তিঁহ।।
ঐছে পত্রী পরিধেয় বস্ত্রাদিক দিয়া।
শীঘ্র সে-মনুষ্যে পাঠাইলা হৃষ্ট হৈয়া।।
তিঁহ বৃন্দাবনে গোস্বামীর পাশ গেলা।
শ্রীডোর কৌপীন বহির্ব্বাস পত্রী দিলা।।’’


‘‘সবা-সহ-সনাতন, ডোর বহির্ব্বাস ধন,
পাইয়া আনন্দ উছলিল।’’

কি আনন্দ বৃন্দাবনে

পেয়ে ডোর বহির্ব্বাস-ধনে—কি আনন্দ বৃন্দাবনে

‘‘কেহ নাচে কেহ গায়, কেহ প্রেমে গড়ি যায়,’’

সবাই প্রেমে মত্ত হল

রূপ সনাতনলোকনাথ গোপাল—সবাই প্রেমে মত্ত হল
ডোর-বহির্ব্বাস-ছলে গৌরাঙ্গ পেল—সবাই প্রেমে মত্ত হল

[মাতন]
সবারই নয়নে আনন্দ-ধারা

স্মঙরি প্রাণ-গৌর-কৃপা—সবারই নয়নে আনন্দ-ধারা

‘‘কেহ নাচে কেহ গায়, কেহ প্রেমে গড়ি যায়,
চারিদিকে ক্রন্দন উঠিল।।’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

রূপ সনাতন লোকনাথ গোপাল—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

[মাতন]
সবাই ভাসে নয়ন-জলে

হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—সবাইভাসে নয়ন-জলে

সবাই কাঁদে ফুকারি’

ডোর বহির্ব্বাস শিরে ধরি’—সবাই কাঁদে ফুকারি’
প্রাণ-গৌর-কৃপা স্মঙরি—সবাই কাঁদে ফুকারি’

সবারই নয়নে বারি

প্রাণ-গৌর-কৃপা স্মঙরি—সবারই নয়নে বারি

[মাতন]
ব্রজের পশু-পাখী কাঁদে

তাঁদের কাতর ক্রন্দন শুনে—ব্রজের পশু-পাখী কাঁদে

‘‘চারিদিকে ক্রন্দন উঠিল।।
কতক্ষণে স্থির হঞা,’’

শ্রীলোকনাথ রূপ সনাতন

‘‘কতক্ষণে স্থির হঞা, ডোর বহির্ব্বাস লঞা,
সমর্পিলা গোপাল-ভট্টেরে।’’

ধর ধর ধর গোপাল

প্রভুর দত্ত ডোর-বহির্ব্বাস—ধর ধর ধর গোপাল

ধর গোপাল কর গ্রহণ

প্রভুর ডোর-বহির্ব্বাস-ধন—ধর গোপাল কর গ্রহণ
তোমার তরে করেছেন প্রেরণ—ধর গোপাল কর গ্রহণ

[মাতন]
প্রভু,–তোমার তরে করেছেন প্রেরণ

তোমার,–প্রেম-সেবায় হয়ে আছেন মগন—প্রভু,–তোমার তরে

করেছেন প্রেরণ
এই,–ধর লও কৃপার দান

আমার প্রেমাবতার-গৌরের—এই,–ধর লও কৃপার দান

‘‘সমর্পিল গোপাল-ভট্টেরে।
ডোর-বহির্ব্বাস-ধন, পাইয়া আনন্দ মন,
নিয়ম করিয়া সেবা করে।।’’

কি বলব সে সেবার কথা
অঝোরে নয়ন ঝুরে

প্রভুর ডোর-বহির্ব্বাস হেরে—অঝোরে নয়ন ঝুরে

দুনয়নে বারি ঝরে
একবার ধরে শিরে

প্রভুর,–প্রসাদী ডোর-বহির্ব্বাস—একবার ধরে শিরে
ভাসি’ দুটী নয়ন-নীরে—একবার ধরে শিরে
আরবার বুকে ধরে—একবার ধরে শিরে

[মাতন]
গৌর,–অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে

ডোর-বহির্ব্বাস বুকে ধরে—গৌর,–অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে
ডোর-বহির্ব্বাস হৃদে ধরে—প্রভুর,–অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে[মাতন]

মনে মনে এই ত’ গণে
পেয়েছে গৌর-অঙ্গ-সঙ্গ

এই ভাগ্যবান পরিধেয়—পেয়েছে গৌর-অঙ্গ-সঙ্গ

পেয়েছে গৌরাঙ্গ-পরশ

এই ডোর-বহির্ব্বাস-ধন—পেয়েছে গৌরাঙ্গ-পরশ

সেই,–অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে

রসময়-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—সেই,–অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে
ডোর-বহির্ব্বাস হৃদে ধরে—সেই,–অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে

শুধু,–অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ নয়
বিন্দুতে সিন্ধু ভোগ করে

প্রেমরাজ্যের স্বভাবেতে—বিন্দুতে সিন্ধু ভোগ করে

পরিপূর্ণ ভোগ করে

অঙ্গ-সঙ্গ-অনুভবে—পরিপূর্ণ ভোগ করে

বাহু পসারি’ জড়ায়ে ধরে

যেন,–পেয়েছে প্রাণ-গৌরাঙ্গের—বাহু পসারি জড়ায়ে ধরে

ভাবাবেশে বলে রে

পেয়েছি,–আর ত’ ছেড়ে দিব না—ভাবাবেশে বলে রে

ভাবাবেশে গোপাল বলে

ডোর বহির্ব্বাস বুকে ধরে—ভাবাবেশে গোপাল বলে

আর ত’ ছেড়ে দিব না

পেয়েছি তোমায় গৌর-সোণা—আর ত’ ছেড়ে দিব না

বলে,–পেয়েছি তোমায় চিতচোর

বুকে ধরে বহির্ব্বাস-ডোর—বলে,–পেয়েছি তোমায় চিতচোর

আবার,–পরক্ষণেই অভাব জাগে

এই বিচিত্রতা গৌররাজ্যের—আবার,–পরক্ষণেই অভাব জাগে

গৌর-সঙ্গ মনে পড়ে

ডোর-বহির্ব্বাস বুকে ধরে—গৌর-সঙ্গ মনে পড়ে
দাক্ষিণাত্যে নিজ-ঘরে—গৌর-সঙ্গ মনে পড়ে

তখনই ব্যাকুল হয়ে কাঁদে
ব্যাকুল হয়ে কাঁদেরে
আর কি তোমায় তেমনি পাব

হা,–চিতচোর প্রাণ-গৌর—আর কি তোমায় তেমনি পাব

[মাতন]
আর কি দেখতে পাব হে

হা,–চিতচোর প্রাণ-গৌর—আর কি দেখতে পাব হে

[মাতন]

‘‘নিয়ম করিয়া সেবা করে।।
শ্রী–গৌরাঙ্গের গুণ-গানে, দিবানিশি নাহি জানে,
শ্রীরূপ-সভায় সদা স্থিতি।
গোসাঞি শ্রীসনাতন, সঙ্গে সুখ অনুক্ষণ,
কে বুঝিবে দোঁহার পিরীতি।।
গোসাঞির বৈরাগ্য যত, তাহা বা কহিব কত,
যাঁর প্রেমাধীন জানাইতে।
শ্রীরাধারমণ-লীলা, আপনে প্রকট হৈলা,
শ্রীশালগ্রাম-শিলা হইতে।।’’

গোপালভট্টের জাগিল প্রাণে
যদি হতেন শ্রীবিগ্রহরূপী

এই শ্রীশালগ্রাম-মূরতি—যদি হতেন শ্রীবিগ্রহরূপী

সাজাইতাম প্রাণভরে

শ্রীঅঙ্গ-সমূহেতে—সাজাইতাম প্রাণভরে
নানা-আভরণ দিয়ে—সাজাইতাম প্রাণভরে

শ্রীগোপালভট্টের প্রীতি

রাধারমণ,–হলেন প্রকট শিলা হতে—শ্রীগোপালভট্টের প্রীতে

সবাই প্রাণে জেনো ভাই
ও ত’ একলা কৃষ্ণ নয়

নামে আছে ওর পরিচয়—ও ত’ একলা কৃষ্ণ নয়

তাইতে রাধারমণ নাম

রাধা সনে মিলিত রমণ-শ্যাম—তাইতে রাধারমণ নাম

শুধু নয় মিলিত
শ্রীরাধারমণ নাম তখন

শ্রীরাধা-দ্বারে রমিত যখন—শ্রীরাধারমণ নাম তখন
‘শ্রীরাধা-দ্বারে রমিত যখন’—
বিবর্ত্ত-বিলাস-রঙ্গে—শ্রীরাধা-দ্বারে রমিত যখন

শ্রীরাধারমণ নাম তখন
শ্রীরাধারমণ নাম তাই রটে

রাই-সম্পুটে শ্যাম বটে—শ্রীরাধারমণ নাম তাই রটে

রাধারমণ বটে গৌরাঙ্গ

প্রাণে প্রাণে ভোগ কর—রাধারমণ বটে গৌরাঙ্গ

তাইতে প্রিয়াজী নাই

অতিগূঢ় কথা ভাই—তাইতে, প্রিয়াজী নাই
শ্রীরাধারমণ-পাশে ভাই—তাইতে প্রিয়াজী নাই

তাইতে প্রিয়াজী পাশে নাই

রাধা-সনে জড়িত আছে সদাই—তাইতে প্রিয়াজী পাশে নাই

গৌর হইলা রাধারমণ-রূপ

গোপাল-ভট্টের প্রাণ-স্বরূপ—গৌর হইলা রাধারমণ-রূপ

জড়িত মূরতি ভোগ করে

ভট্টগোসাঞি রাধারমণ হেরে—জড়িত মূরতি ভোগ করে

‘‘সেবায় পরমানন্দ বাড়ে ক্ষণে ক্ষণে।
শ্রীগৌরচন্দ্রের সেবা সদা পড়ে মনে।।’’

গৌর-সেবা ভোগ করে

রাধারমণের সেবা করে—গৌর সেবা ভোগ করে

‘‘নিজ-গৃহে পিতার আজ্ঞায় গোরাচান্দে।
সেবিলেন স্মঙরি ধৈরয নাহি বান্ধে।।
হইয়া বিহ্বল ভাসে নেত্রের ধারায়।
ঘন ঘন শ্রীরাধারমণ-পানে চায়।।
গোপালের প্রেমাধীন শ্রীরাধারমণ।
শ্রীগৌরসুন্দর-মূর্ত্তি হৈলা সেইক্ষণ।।’’

তাই বলি,–শ্রীরাধারমণ শ্রীগৌরাঙ্গ

শ্রীগুণমঞ্জরী শ্রীগোপালভট্ট—শ্রীরাধারমণ শ্রীগৌরাঙ্গ

[মাতন]
গোপালভট্ট সেবে সদায়

প্রাণ-রাধারমণ-গোরায়—গোপালভট্ট সেবে সদায়

[মাতন]

‘‘শ্রীরাধারমণ-লীলা, আপনে প্রকট হৈলা
শ্রীশালগ্রাম-শিলা হইতে।’’

গোপাল—ভট্টের প্রেমে প্রকট হৈলা

শালগ্রাম হইতে রাধারমণ—গোপাল,–ভট্টের প্রেমে প্রকট হৈলা

[মাতন]
শ্রীরাধারমণ প্রকট হৈলা

শ্রীগোপালভট্টের প্রেমে—শ্রীরাধারমণ প্রকট হৈলা
শ্রীশালগ্রাম-শিলা হৈতে—শ্রীরাধারমণ প্রকট হৈলা

[মাতন]

‘‘শ্রীরাধারমণ বিনে, অন্য কিছু নাহি জানে,
শ্রীরাধারমণ প্রাণ যাঁর।।’’

গৌর-স্বরূপ ভোগ করে

শ্রীরাধারমণ-মূরতি হেরে—গৌর-স্বরূপ ভোগ করে

‘‘সদা গৌর-গুণে মত্ত, বাখানে ভকতি তত্ত্ব,
হেনকি বৈরাগ্য হবে আর।
সদা বাস বৃন্দাবনে, কভু কুণ্ডে গোবর্দ্ধনে,
কভু বরষাণ নন্দীশ্বরে।
কভু বা যাবটে গিয়া, পূর্ব্ব-বাস নিরখিয়া,
ভাসে মহা আনন্দ-সাগরে।।
শ্রীগোকুল মহাবনে, কভু রহে নির্জ্জনে,
কভু প্রিয় লোকনাথ পাশ।
এইরূপ ফিরে রঙ্গে, সেহ ব্রজবাসী-সঙ্গে,
ভক্তিদানে পরম উল্লাস।
গুণ কি বলিব আর, কৃপা কর এইবার
শ্রীনিবাস-আচার্য্যের প্রভু।
নরহরি অকিঞ্চন, ও পদে সঁপিলা মন,
এ অধমে না ছাড়বে কভু।।’’

গোপালভট্ট কৃপা কর

শ্রীনিবাস-আচর্য্যের প্রভু—গোপালভট্ট কৃপা কর[মাতন]

… … … … …
… … … … …
… … … … …


অতঃপর ‘কোথা বা লুকালে’ ইত্যাদি মহাজনী-আক্ষেপ-কীর্ত্তন।

… … … … …
… … … … …
… … … … …


মহাজনী আক্ষেপ কীর্ত্তনের কিঞ্চিৎ বিশেষ: —

… … … … …
… … … … …


‘‘তাহা মুঞি না পাইনু দেখিতে।’’

দেখিতে ত’ পেলাম না

প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে ত’ পেলাম না
এই মহানগরীতে—দেখিতে ত’ পেলাম না

প্রাণ কেঁদে উঠছে

সেই কীর্ত্তনরঙ্গ স্মঙরিয়ে—প্রাণ কেঁদে উঠছে

এ যে,–সঙ্কীর্ত্তন-রঙ্গভূমি

এই,–মহানগরী কটকভূমি—এ যে,–সঙ্কীর্ত্তন-রঙ্গভূমি
প্রভুনিতাই-প্রাণগৌরাঙ্গের—এ যে,–সঙ্গীর্ত্তন-রঙ্গভূমি

হায় রে,–কিছুই দেখতে পেলাম না
ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে

অহৈতুকী কৃপা স্মঙরি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
‘অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি’—
অদোষদরশী শ্রীগুরুদেবের—অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হা শ্রীগুরুদেব
কিছুই ত জানতাম না

সংসার-কূপে ডুবে ছিলাম—কিছুই ত’ জানতাম না

নিজগুণে টেনে তুলিলে

কৃপারজ্জু কেশে বেঁধে—নিজগুণে টেনে তুলিলে

নীলাচলে লয়ে গেলে

শ্রীরথযাত্রা-কালে—নীলাচলে লয়ে গেলে

-গৌরলীলা জানাইলে

ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—গৌরলীলা জানাইলে

দেখাবে বলে বলেছিলে
ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে
শ্রীমুখেতে বলেছিলে

ত্রিকালসত্য গৌরলীলা—শ্রীমুখেতে বলেছিলে

সেই কথা বুকে ধরে
গিয়েছিলাম ভাই ভাই মিলে

শ্রী,–রথযাত্রায় নীলাচলে—গিয়েছিলাম ভাই ভাই মিলে

বড় সাধ দেখব বলে

গৌরনটন রথের আগে—বড় সাধ দেখব বলে

দেখতে ত পেলাম না

দেখা ত’ দিলে না—দেখতে তপেলাম না

হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি
এই কৃপা কর হে

নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—এই কৃপা কর হে

ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদি

তোমার চরণ হৃদে ধরি’—ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদি
হানিতাই-গৌরাঙ্গ বলি’—ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদি

এই কৃপা কর মোরে

কটক-ভূমি-নিবাসী সবে—এই কৃপা কর মোরে

তোমার,–ভাগ্যবান্ ভাগ্যবতী

বিহার ভূমিতে পেয়েছ বসতি—তোমরা,–ভাগ্যবান ভাগ্যবতী

এ যে পদাঙ্কিত-ভূমি

এই পূণ্যভূমি কটক-নগরী—এ যে পদাঙ্কিত-ভূমি

নেচে নেচে গেছে চলে

এই ভূমির উপর দিয়ে—নেচে নেচে গেছে চলে
প্রভু নিতাই প্রাণ গৌরাঙ্গ—নেচে নেচে গেছে চলে
নীলাচল গৌড়ের যাতায়াতে—নেচে নেচে গেছে চলে

এর,–বুকের উপর দিয়ে গেছে

সাঙ্গোপাঙ্গে গৌর নেচে—বুকের উপর দিয়ে গেছে

তাই,–বড় প্রিয় ছিল পাগলের

পদাঙ্কিত-ভূমি বলে—তাই,–বড় প্রিয় ছিল পাগলের

পাগল আমার,–বিহরিলেন এই নগরে

নিতাই-গৌরাঙ্গ-বিহার হৃদে ধরে-পাগল আমার,–বিহরিলেন এই নগরে

করিলেন কত কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গ

এই ভূমে,–নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—করিলেন কত কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গ

স্ব-সৌভাগ্য কর স্মরণ

বিহার-ভূমিতে পেয়েছে জনম’—
এই গুরু-গৌরাঙ্গের—বিহার-ভূমিতে পেয়েছ জনম

স্ব-সৌভাগ্য কর স্মরণ
সবে মিলে কৃপা কর
যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি

প্রকট-লীলার অদর্শনে—যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি
‘প্রকট-লীলার অদর্শনে’—
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গের—প্রকট-লীলার অদর্শনে

যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি

সেই বিহার হৃদে ধরি’—যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গের গুণ স্মঙরি’—যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি

নিশিদিশি কাঁদ রে

হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—নিশিদিশি কাঁদ রে

দেখাইলেন দয়া করে

পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—দেখাইলেন দয়া করে
এই মহানগরীতে-দেখাইলেন দয়া করে
নামে সর্ব্বশক্তি আছে—দেখাইলেন দয়া করে
‘নামে সর্ব্বশক্তি আছে’—
নামে তরু নাচে মরা বাঁচে—নামে সর্ব্বশক্তি আছে
নামেতে পাষাণ গলে—নামে সর্ব্বশক্তি আছে

দেখাইলেন দয়া করে
তবু,–বিশ্বাস ত’ হল না রে

দেখাইলাম বটে এই চোখে—তবু,–বিশ্বাস ত’ হল না রে
‘দেখাইলাম বটে এই চোখে’—
দেখাইলেন দয়া করে—দেখলাম বটে এই চোখে

তবু,–বিশ্বাস ত’ হল না রে

জনম চলে যায় বিফলে—তবু,–বিশ্বাস ত’ হল না রে

হা শ্রীগুরুদেব
কৃপা করে সকলই দিলে

হারাইয়েছি সব দুর্দ্দৈবদোষে—কৃপা করে সকলই দিলে

বিশ্বাস ত’ নাই আমাদের

যা,–আচরণ করে শিখাইলে—বিশ্বাস ত’ নাই আমাদের
‘যা—আচরণ করে শিখাইলে’—
নামে সর্ব্বশক্তি আছে—যা,–আচরণ করে শিখাইলে

বিশ্বাস ত’ নাই আমাদের
নামে কলঙ্ক রটালাম

তোমার পরিচয় দিয়ে—নামে কলঙ্ক রটালাম

ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও

দেখাও নামের শকতি দেখাও—ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও

আবার এসে জানাও জগতে

নামে সর্ব্বশক্তি আছে—আবার এসে জানাও জগতে
নামেতে যে মরা বাঁচে—আবার এসে জানাও জগতে

নামেতে তরু নাচে মরা বাঁচে

পাষাণ গলিয়া যায়—নামে তরু নামে মরা বাঁচে

সর্ব্বশক্তি-বিকাশ দেখে

শ্রীনামসঙ্কীর্ত্তনের—সর্ব্বশক্তি—বিকাশ দেখে

নামগানে সবাই যাক মেতে
সবে মিলে দয়া কর
যেন,–পাগল হয়ে গাইতে পারি

নামে সর্ব্বশক্তি আছে জানি’—যেন,–পাগল হয়ে গাইতে পারি
শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত নামাবলী—যেন,–পাগল হয়ে গাইতে পারি
‘শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত নামাবলী’—
তাঁর ভোগের স্ফূর্ত্তি—শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত নামাবলী

যেন,–পাগল হয়ে গাইতে পারি

পাগলা প্রভু হদে ধরি’—যেন,–পাগল হয়ে গাইতে পারি

দগ্ধ-হৃদয় জুড়াইবার উপায়

একমাত্র শ্রীনামাশ্রয়—দগ্ধ-হৃদয় জুড়াইবার উপায়

যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি

শ্রীগুরুচরণ-হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি

পাগল হয়ে বেড়াই মোরা
যারে দেখি তারে বলি

ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ