শ্রীশ্রী টোটা-গোপীনাথের শ্রীমন্দিরে কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।

‘‘শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম’’।।

ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম

শ্রীঅদ্বৈত-প্রেম-ধাম—ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
গদাই-শ্রীবাস-প্রাণারাম—ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম

জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম-জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

‘‘জয় জয় শ্রীবৈকুণ্ঠনাথ গৌরচন্দ্র।’’

প্রাণভরে জয় দাও ভাই

ভাইরে আমার,–প্রেমাবতার গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
নীলাচলবিহারী গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
পরতত্ত্বসীমা গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই

‘‘জয় জয় শ্রীসেবাবিগ্রহ নিত্যানন্দ।।’’

জগৎসেব্য আমার গৌরচন্দ্র

তার,–সেবাবিগ্রহ নিত্যানন্দ-জগৎসেব্য আমার গৌরচন্দ্র

নিত্যানন্দরূপে বিহরে

গৌরসেবা মূরতি ধরে—নিত্যানন্দরূপে বিহরে

প্রাণবিশ্বম্ভরের সেবা করে

শ্রীনিত্যানন্দ ব্যাপকরূপে—প্রাণবিশ্বম্ভরের সেবা করে
অনন্ত-সেবক-রূপে—প্রাণবিশ্বম্ভরের সেবা করে
ভাব-অনুকূলরূপ ধরে—প্রাণবিশ্বম্ভরের সেবা করে

জয় জয় নিত্যানন্দ-দেহ

গৌর-সেবা বিগ্রহ—জয় জয় নিত্যানন্দ-দেহ

(মাতন)

‘‘জয় জয় অদ্বৈত-শ্রীবাস-প্রিয়ধাম।
জয় গদাধর-শ্রীজগদানন্দ-প্রাণ।।’

সে যে,–শ্রীঅদ্বৈত-শ্রীবাস-প্রিয়ধাম

ভাইরে যাঁর গৌরচন্দ্র-নাম—শ্রীঅদ্বৈত-শ্রীবাস-প্রিয়ধাম
গদাধর-পণ্ডিতের প্রাণ—শ্রীঅদ্বৈত-শ্রীবাস-প্রিয়ধাম

‘‘জয় শ্রীপরমানন্দ-পুরীর জীবন।
জয় দামোদর-স্বরূপের প্রাণধন।।
জয় বক্রেশ্বর-পণ্ডিতের প্রিয়কারী।
জয় জয় দ্বারপাল-গোবিন্দরে নাথ।
জীব প্রতি কর’ প্রভু ! শুভ দৃষ্টিপাত।।’’

জীবে কর শুভদৃষ্টি

প্রেমাবতার গৌরহরি—জীবে কর শুভদৃষ্টি
করি’ তোমার প্রেমবৃষ্টি—জীবে কর শুভদৃষ্টি

একবার—চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে

ও প্রেমাবতার গৌরহরি—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে
ওহে প্রাণ বিশ্বম্ভর—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে
অনন্ত-জগৎ-পানে—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে
এই ত্রিতাপদগ্ধ-জগৎ-পানে—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে

গৌর হে,–‘‘জীব প্রতি কর প্রভু ! শুভদৃষ্টিপাত।
দেহমতে নিত্যানন্দ নবদ্বীপপুরে।
বিহরেন প্রেমভক্তি-আনন্দ-সাগরে।।
নিরবধি ভক্ত-সঙ্গে করেন কীর্ত্তন।
কৃষ্ণ-নৃত্য-গীত হইল সবার ভজন।।’’

একবার কৃষ্ণ বল ভাই
নিতাই ইঙ্গিত কর্‌ছেন

পানিহাটী গ্রামে নিজগণে—নিতাই ইঙ্গিত করছেন

গৌর আইলা নীলাচল হতে

তোমাদের কীর্ত্তন শুনিতে—গৌর আইলা নীলাচল হতে

নিরন্তর কৃষ্ণ-কীর্ত্তন কর
কোন কৃষ্ণ জানাইছেন

নিরন্তর কৃষ্ণ-কীর্ত্তন কর বলে—কোন্‌ কৃষ্ণ জানাইছেন

তারপর আবার বল্লেন
নিরন্তর মাতো সবে

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বলে—নিরন্তর মাতো সবে

ইঙ্গিতে বলিলেন নিতাই
নিরন্তর কর গান

চৈতন্যকৃষ্ণের নাম—নিরন্তর কর গান

নিতাই কেমন করে বলে আন
তারই ত উদ্গার হয়

প্রাণে প্রাণে যা ভোগ হয়—তারই ত উদ্গার হয়

গৌরহরি করেন বিহার

শ্রীনিত্যানন্দ-হৃদে—গৌরহরি করেন বিহার

কেমনে আন বলবে তার রসনা

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বিনা—কেমনে আন বলবে তার রসনা

নিতাই যারে দেখে তার বলে

একবার গৌরহরিবোল—নিতাই যারে দেখে তারে বলে

গৌর—‘‘কৃষ্ণ-নৃত্য-গীত হইল সবার ভজন।।
গোপ-শিশুগণ-সঙ্গে প্রতি ঘরে ঘরে।
যেন ক্রীড়া করিলেন গোকুল-নগরে।।
সেই-মত গোকুলের আনন্দ প্রকাশি’।
কীর্ত্তন করেন নিত্যানন্দ সুবিলাসী।।’’

বিহরে নিত্যানন্দ সুবিলাসী

হৃদে ধরি’ গৌরাঙ্গ-বিলাসী—বিহরে নিত্যানন্দ সুবিলাস

‘‘ইচ্ছাময় নিত্যানন্দ চন্দ্র ভগবান।
গৌরচন্দ্র দেখিতে হইল ইচ্ছা তান্।।’’

যদিও,–নিতাইচাঁদে আছে মানা

প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্‌তে’—যদিও,–নিতাইচাঁদে আছে মানা
‘প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্‌তে’—নিতাইচাঁদে আছে মানা
‘প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্‌তে’—
গৌড়ের প্রচার-কার্য্য ছেড়ে—প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্‌তে

নিতাইচাঁদে আছে মানা

‘গৌড়ের প্রচার-কার্য্য ছেড়ে’—
প্রাণের প্রাণ গৌরহরির—গৌড়ের প্রচার-কার্য্য ছেড়ে

নিতাইচাঁদে আছে মানা
নিতাই মানা মানে না

স্বাভাবিক প্রেমের স্বভাবে—নিতাই মানা মানে না
গৌর না দেখিলে রহিতে পারে না—তাই নিতাই মানা মানে না
‘‘আই-স্থানে করিলেন সন্তোষে বিদায়।’’

দে মা আমায় বিদায় দে

তোর পদধূলি শিরে দিয়া—দে মা আমার বিদায় দে

আমি,–যাব মধুর—নীলাচলে

দেখতে তোর প্রাণ-দুলালে—আমি,–যাব মধুর—নীলাচলে
ধনী হয়ে তোর পদধূলে—আমি,–যাব মধুর—নীলাচলে

বিদায় দে ‘মা’ কুতূহলে

‘‘নীলাচলে চলিলেন চৈতন্য-ইচ্ছায়।।’’

গৌরহরির মানা নয়

বুকে যে উৎকণ্ঠা বাড়ায়—গৌরহরির মানা নয়

সে এক-পা চলিতে নারে

গৌর যার হৃদে আছে—সে এক-পা চলিতে নারে
গৌর-ইচ্ছা না হইলে—সে এক-পা চলিতে নারে

তাইতে প্রভু মানা করে

প্রাণধরে সদাই টানে—তাইতে প্রভু মানা করে
‘‘নীলাচলে চলিলেন চৈতন্য-ইচ্ছায়।।’’

চলিল গৌর-প্রেমের পাগল

মুখে গৌর-গৌর নয়নে জল—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল

নীলাচলে যায় হেলে দুলে

প্রাণগৌর দেখ্‌ব বলে—নীলাচলে যায় হেলে দুলে

‘‘পরমবিহ্বল পারিষদগণ-সঙ্গে।’’

আপনি যেমন সঙ্গী তেমন

ওগো—আমার প্রভু নিত্যানন্দ—আপনি যেমন সঙ্গী তেমন

ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে

প্রতি নিতাই-কিঙ্করে—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে
প্রাণ-নিতাই হৃদে ধরে—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে

‘‘আইলেন শ্রীচৈতন্য-নাম-গুণ-রঙ্গে।।’’

আমার,–নিতাই-মুখে নাহি অন্য

বিনা নাম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—নিতাই-মুখে নাহি অন্য

নিতাই আমার আন জানে না

কায়-মন-বাক্যে গৌর বিনা—নিতাই আমার আন জানে না
প্রাণারাম গৌরাঙ্গ-নাম বিনা—নিতাই আমার আন জানে না

স্বপনেও না জানে অন্য

গৌরাঙ্গ-বিলাসী নিতাই—স্বপনেও না জানে অন্য
গৌর-প্রেমের পাগল নিত্যানন্দ—স্বপনেও না জানে অন্য
বিনা প্রাণ-শ্রীচৈতন্য-স্বপনেও না জানে অন্য

‘‘আইলেন শ্রীচৈতন্য-নাম-গুণ-রঙ্গে।।
হুঙ্কার, গর্জ্জন, নৃত্য, আনন্দ-ক্রন্দন।’’

শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের বিকার

আমার,–নিতাইচাঁদের অলঙ্কার—শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের বিকার

‘‘হুঙ্কার, গর্জ্জন, নৃত্য, আনন্দ-ক্রন্দন।
নিরবধি করে সব পারিষদ-গণ।।’’

আপনি পাগল সব সঙ্গী পাগল

পেয়ে গৌর-প্রেমবল—আপনি পাগল সব সঙ্গী পাগল
গৌর-গৌর বলে কেবল—আপনি পাগল সব সঙ্গী পাগল(মাতন)

‘‘এইমত সর্ব্বপথ প্রেমানন্দ-রসে।
আইলেন নীলাচলে কথোক-দিবসে।।
কমল-পুরেতে আসি’ প্রাসাদ দেখিয়া
পড়িলেন নিত্যানন্দ মূর্চ্ছিত হইয়া।।’’

নিতাইচাঁদের দু’নয়নে ধারা

দূর হতে দেখি’ শ্রীমন্দিরের ধ্বজা—নিতাইচাঁদের দু’নয়নে ধারা

গৌর দেখ্‌তে পাব আবার

মনে গণে নিতাই আমার—গৌর দেখ্‌তে পাব আবার
ঐ যে মন্দির দেখা যায়—গৌর দেখ্‌তে পাব আবার

হইলা নিতাই মূরছিত

বলি’,–হা প্রাণ-শচীসূত-হইলা নিতাই মূরছিত

বলে,–গৌর তুমি আছ কোথায়

ঐ ত মন্দির দেখা যায়—গৌর তুমি আছ কোথায়

‘‘নিরবধি নয়নে বহয়ে প্রেম-ধার।
‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ বলি’ করেন হুঙ্কার।।
আসিয়া রহিলা এক পুষ্পের উদ্যানে।’’

লুকিয়ে থাকা স্বভাব তার

লীলার প্রথম হতে দেখা যায়—লুকিয়ে থাকা স্বভাব তার

নদীয়ায় আসি’ ছিলেন গোপনে

গৌর-সঙ্গে প্রথম-মিলনে—নদীয়ায় আসি’ ছিলেন গোপনে
নন্দন-আচার্য্যের ভবনে—নদীয়ায় আসি’ ছিলেন গোপনে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের ইচ্ছাক্রমে—নদীয়ায় আসি’ ছিলেন গোপনে

গৌর রাখিতে চান গোপনে

নিজ-সেব্য নিতাই-ধনে—গৌর রাখিতে চান গোপনে
‘‘কে বুঝে তাঁহার ইচ্ছা শ্রীচৈতন্য বিনে।’’

তাদের রহস্য কেবা জানে

পরস্পর তারা বিনে—তাদের রহস্য কেবা জানে

দোঁহে জানে দোঁহার মর্ম্ম

নিতাই চৈতন্য অভিন্ন—দোঁহে জানে দোঁহার মর্ম্ম
বিহার লাগি হয় ভিন্ন—নিতাই চৈতন্য অভিন্ন

‘‘নিত্যানন্দ-বিজয় জানিঞা গৌরচন্দ্র।’’

কি হবে থাকলে গোপনে

প্রীতি টানতে লাগল নিজ-স্থানে—কি হবে থাকলে গোপনে

গৌরহরি জানলেন তাহা

টান পড়্‌ল প্রাণে প্রাণে—গৌরহরি জান্‌লেন তাহা
নিতাই আসিয়াছে নীলাচল-ধামে—গৌরহরি জান্‌লেন তাহা

নিতাই আসিয়া রয়েছে গোপনে

গৌরহরি মনে গণে—নিতাই আসিয়া রয়েছে গোপনে
আমি খোঁজ লব এই তার মনে—নিতাই আসিয়া রয়েছে গোপনে

‘‘একেশ্বর আইলেন ছাড়ি’ ভক্তবৃন্দ।।’’

একেশ্বর আইলা গৌরচন্দ্র

মিলিতে তার অতিগূঢ়-নিত্যানন্দ—একেশ্বর আইলা গৌরচন্দ্র

অনুভব কর ভাই রে

শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
এঁদের গোপনে মিলন স্মঙরিয়ে—অনুভব কর ভাই রে

তাঁরা কারা বটে দুইজন

নিতাই গৌরাঙ্গ-ধন—তারা কারা বটে দুইজন
এঁদের কেন হয় গুপতে মিলন—তারা কারা বটে দুইজন

দ্বিতীয় না থাকে সেইখানে

যখনি এঁরা মিলে দুইজনে—দ্বিতীয় না থাকে সেইখানে
কি রহস্য কেবা জানে—দ্বিতীয় না থাকে সেইখানে

দুজনে মিলে একা একা

সে মিলন কেউ পায় না দেখা—দুজনে মিলে একা একা

গৌর আমার আইলেন একা

নিতাই-সনে করতে দেখা—গৌর আমার আইলেন একা

‘‘ধ্যানানন্দে যেখানে আছেন নিত্যানন্দ।
সেই-স্থানে বিজয় হইলা গৌরচন্দ্র।।’’

ও ত গৌর এল না

টেনে আন্‌ল নিতাই সোণা—ও ত গৌর এল না

নিতাইয়ের নাম বুঝি তাই সঙ্কর্ষণ

প্রাণ ধরে আকর্ষণ—নিতাইয়ের নাম বুঝি তাই সঙ্কর্ষণ

‘‘প্রভু আসি’ দেখে নিত্যানন্দ ধ্যানপর
প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল বহুতর।।’’

বড় ভোগী গৌর আমার
ভোগ করিতে এসেছে

অশেষ-বিশেষ আপনাকে—ভোগ করিতে এসেছে

ভোগ করে প্রাণ গৌরহরি

নিত্যানন্দ-পরিক্রমা করি’—ভোগ করে প্রাণ গৌরহরি
নিজ-পরিক্রমার কি মাধুরী—ভোগ করে প্রাণ গৌরহরি

নিত্যানন্দ ধ্যানপর

হৃদে ধরি’ প্রাণ-বিশ্বম্ভর—নিত্যানন্দ ধ্যান-পর

নিতাই-হৃদে আছে নিজে
তাই তারে পরিক্রমা করে

নিজ-পরিক্রমার মাধুরী ভোগের তরে—তাই তারে পরিক্রমা করে

এ-সুযোগ কখনও পাবে না

আপনি আপনায় করতে পরিক্রমা—এ-সুযোগ কখনও পাবে না

আজ,–আপনি করে আপনার পরিক্রমা

নিতাই-চাঁদের বুকে আছে গৌর সোণা—আজ,–আপনি করে

আপনার পরিক্রমা
ভোগের স্বরূপ গৌর বটে

আজ,–আপনি করে আপনার পরিক্রমা—ভোগের স্বরূপ গৌর বটে
অশেষ-বিশেষে নিজ-মাধুরী–ভোগের স্বরূপ গৌর বটে

আজ দেখে নিজ—মাধুরী

নিত্যানন্দ ঘিরি ঘিরি—আজ দেখে নিজ-মাধুরী
‘‘শ্লোক বন্দে নিত্যানন্দ-মহিমা বর্ণিয়া।’

সেব্য বিনে কেবা জানে

কেমন সুখ হয় সেবকের গুণ-গানে—সেব্য বিনে কেবা জানে

আজ জানাইছেন জগজনে

স্তুতি-ছলে নিতাই-ধনে—আজ জানাইছেন জগজনে
বড় আনন্দ গৌরাঙ্গ মনে—আজ জানাইছেন জগজনে

‘‘প্রদক্ষিণ করে প্রভু প্রেম-পূর্ণ হৈয়া।।
শ্রীমুখের শ্লোক শুন নিত্যানন্দ-স্তুতি।
যে শ্লোক পড়িলে হয় নিত্যানন্দে রতি।।’’

শ্রীমুখে বলেন গৌরহরি

নিতাইচাঁদের মহিমা—শ্রীমুখে বলেন গৌরহরি

‘‘মদিরা-যবনী যদি ধরে নিত্যানন্।
তথাপি ‘ব্রহ্মার বন্দ্য’ বলে গৌরচন্দ্র।।’’

যদি,–মদিরা-যবনী নিতাই ধরে

ব্রহ্মা তারে বন্দনা করে—যদি,–মদিরা-যবনী নিতাই ধরে

নিতাই তথাপি ব্রহ্মার বন্দ্য

যদিও,–যবনী-মদিরার হয় সঙ্গ—নিতাই তথাপি ব্রহ্মার বন্দ্য

নিত্যানন্দ-শক্তি নষ্ট না হয়

শ্রীমুখে বলেন গোরারায়—নিত্যানন্দ-শক্তি নষ্ট না হয়

নিতাই-শক্তির হানি নাই কোন-কালে

যবন-মদিরা পরশ হলে—নিতাই-শক্তির হানি নাই কোন-কালে

এই শ্লোকের দুই-মর্ম্ম
একদিকে নিতাই-স্বরূপ ধর্ম্ম

আর একদিকে ভবিষ্যৎ কথন—একদিকে নিতাই-স্বরূপ বর্ণন

ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত করছেন

একদিকে নিতাই-তত্ত্ব বলছেন—আর দিকে,–ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত করছেন

যদি নিতাইএ আবরণ পড়ে

কালে কালে এই প্রচারে—যদি নিতাইএ আবরণ পড়ে

শক্তি হানি নাহি হবে

নিতাই-স্বরূপে আবরণ বলে—শক্তি হানি নাহি হবে

সাবধান করাইছেন

প্রভু এই শ্লোক-দ্বারে—সাবধান করাইছেন
নিতাই—বন্দনা-ছলে জগজনে—সাবধান করাইছেন

যেন অবজ্ঞা করো না
মনে যদি এত-আবরণ পড়ে

নিত্যানন্দ-স্বরূপেতে—যদি এত-আবরণ পড়ে

নিতাই আবরণের থাক্‌বে

সহজে ধরা নাহি দিব—নিতাই আবরণেই থাকবে

প্রচারিতে প্রাণ-গৌরধনে

নিজ থাকি আবরণে—প্রচারিত প্রাণ-গৌরধনে

‘‘এই শ্লোক পড়ি প্রভু প্রেম-বৃষ্টি করি’।
নিত্যানন্দ-প্রদক্ষিণ করে গৌরহরি।।’’

যেন প্রাণে প্রাণে বলছেন
এ-সুযোগ আর ছাড়ব না

এমন দিন আর হবে না—এ-সুযোগ আর ছাড়ব না

‘‘নিত্যানন্দ—স্বরূপো জানি সেইক্ষণে।’’

নিতাই জানিলেন অন্তরে

প্রাণগৌর পরিক্রমা করে তারে—নিতাই জানিলেন অন্তরে

‘‘উঠিলেন ‘হরি’ বলি পরম-সম্ভ্রমে।।’’

এসেছে আমার প্রাণের ঠাকুর

প্রাণে প্রাণে জানলেন নিতাই—এসেছে আমার প্রাণের ঠাকুর

(মাতন)
দেখি ধ্যানফল সম্মুখেতে

‘‘দেখি’ নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্রের বদন।
কি আনন্দ হৈল, তাহা না যায় বর্ণন।।’’

আনে জান্‌বে কেমনে
কি আনন্দ হইল নিতাইএর মনে

আনন্দ-ঘন গৌর দশনে—কি আনন্দ হইল নিতাইএর মনে

আনে জান্‌বে কেমনে

আনন্দই ভাল জানে—আনে জান্‌বে কেমনে
ভোগী জানে আর ভোগ জানে—আনে জান্‌বে কেমনে

সেই ত’ জানিতে পারে

যে নিত্যানন্দ হৃদে ধরে—সেই ত’ জানিতে পারে

‘‘হরি বলি’ সিংহনাদ লাগিলা করিতে।’’

ও ত হরি বলা নয়

নিতাই বল্‌ছেন এই হরি হয়—ও ত হরি বলা নয়

অবশ্য করিবে চুরি

এই চিতচোর গৌরহরি—অবশ্য করিবে চুরি

তাইতে নিতাইএর প্রেমানন্দ

ধরা পড়েছে চিতচোর নয়নানন্দ—তাইতে নিতাইএর প্রেমানন্দ

‘‘প্রেমানন্দে আছাড় পড়েন পৃথিবীতে।।’’

ও তো আছাড় পড়া নয়

নীলাচল-ভূমির সৌভাগ্য বাঢ়ায়—ও তো আছাড় পড়া নয়

আনন্দ আর ধরে না

ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমির—আনন্দ আর ধরে না
গৌর-প্রেমের মূরতি হৃদে ধরে—আনন্দ আর ধরে না

‘‘দুইজনে প্রদক্ষিণ করেন দুঁহারে।
দুঁহে দণ্ডবৎ হই পড়েন দু হারে।।’’

দুই-জনেই প্রদক্ষিণ করে

দোঁহে দণ্ডবৎ করে—দুই-জনেই প্রদক্ষিণ করে

কে কার উপাস্য কেবা জানে

যে হৃদে ধরে সেই ত জান—কে কার উপাস্য কেবা জানে

দুই-জনেই মহামত্ত

পরস্পর হৃদে ধরে—দুই-জনেই মহামত্ত

গৌরাঙ্গ-হৃদে নিতাই

নিতাই-হৃদে গৌরাঙ্গ—গৌরাঙ্গ-হৃদে নিতাই

পরস্পর হৃদে ধরে

দুজনাই মহামত্ত—পরস্পর হৃদে ধরে

দোঁহে দোঁহায় ভোগ করে

ভোগী ভোগ পরস্পর—দোঁহে দোঁহায় ভোগ করে

‘‘ক্ষণে দুই-প্রভু করে প্রেম-আলিঙ্গন।’’

এত নয় আলিঙ্গন

মহাভাব প্রেম রসের মিলন—এত নয় আলিঙ্গন

‘‘ক্ষণে গলা ধরি’ করে আনন্দ-ক্রন্দন।।’’

দোঁহে ভাসে নয়ন-জলে

পরস্পর গলা ধরে—দোঁহে ভাসে নয়ন-জলে

যদিও অভিন্ন তনু হয়

তুব মিলনে মহাসুখ পায়—যদিও অভিন্ন তনু হয়

তার লাগি’ হয় ছাড়াছাড়ি

আস্বাদিতে বিরহ-মাধুরী—তার লাগি হয় ছাড়াছাড়ি

‘‘পরানন্দে গড়াগড়ি যায় দুইজন।

আজ,–নীলাচলের সৌভাগ্য বাঢ়ায়

দোঁহে গড়াগড়ি যায়—আজ,–নীলাচলের সৌভাগ্য বাঢ়ায়

ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমি

হৃদয়ে ধরেছ তুমি—ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমি
ধরে,–নিতাই-গৌর-জড়িত মূরতি-খানি—ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমি

তোমায় যাই বলিহারি

ও,–ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমি—তোমায় যাই বলিহারি
বুকে ধরেছ নিতাই-গৌর-জড়াজড়ি—তোমায় যাই বলিহারি

তোমার বুকে বিহরে আজ

মহাভাব-রসবাজ—তোমার বুকে বিহরে আজ

‘‘মহামত্ত-সিংহ-জিনি দুহাঁর গর্জ্জন।।
কি অদ্ভুত প্রীতি সে করেন দুই-জনে।
পূর্ব্বে যেন শুনিঞাছি শ্রীরাম-লক্ষণে।।’’

কেবল আস্বাদনের লাগি’ রে,

নব-নব-মিলন কেবল—কেবল আস্বাদনের লাগি’ রে

‘‘দুইজনে শ্লোক পঢ়ি বর্ণেন দুঁহারে।’’

জগতে জানাবার তরে

নিজ-নিজ-মহিমা—জগতে জানাবার তরে

‘‘দুঁহারেই দুঁহে জোড়হস্তে নমস্করে।।
অশ্রু, কম্প, হাস্য, মূর্চ্ছা, পুলক, বৈবর্ণ্য।
কৃষ্ণভক্তি-বিকারের যত আছে মর্ম্ম।।
ইহা বই দুই-শ্রীবিগ্রহে আর নাঞি।’’

দোঁহার শ্রীঅঙ্গ ভাব-ভূষণে বিভূষিত

গৌরের যত নিতাইএর তত—দোঁহার শ্রীঅঙ্গ ভাব-ভূষণে বিভূষিত

‘‘সব করে করায়েন চৈতন্য-গোসাঞি।।
কি অদ্ভুত প্রেমভক্তি হইল প্রকাশ।
নয়ন ভরিয়া দেখে যে একান্তদাস।।
তবে কথোক্ষণে প্রভু জোড়হস্ত করি’।
নিত্যনন্দ-প্রতি স্তুতি করে গৌরহরি।।

না জানি সে কত সুধা

মুখে নিতাই-গুণ-গাথা—না জানি সে কত সুধা

(মাতন)

‘‘নিত্যানন্দ-প্রতি স্তুতি করে গৌরহরি।।’’

জগতে জানায় রে

নিত্যানন্দ-স্তুতি-ছলে—জগতে জানায় রে
তাঁর অতিগূঢ় নিত্যানন্দ—জগতে জানায় রে

প্রাণে প্রাণে ধর ভাই

শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—প্রাণে প্রাণে ধর ভাই
অপরূপ-রহস্য-কথা—প্রাণে প্রাণে ধর ভাই

শ্রীমুখে বল্‌ছেন গৌরহরি

‘‘নাম রূপে তুমি নিত্যানন্দ মূর্ত্তিমন্ত।।’’

গৌর বলেন শ্রীবদনে

চেয়ে নিতাইচাঁদের পানে—গৌর বলেন শ্রীবদনে

‘‘নাম রূপে তুমি নিত্যানন্দ মূর্ত্তিমন্ত।’’

আপন কথা বলছেন

ইঙ্গিতেতে গৌরহরি—আপন কথা বল্‌ছেন

আমার নামের রূপ মানি

তোমার রূপ আমার রূপ মানি—আমার নামের রূপ মানি

‘‘শ্রীবৈষ্ণবধাম—তুমি ঈশ্বর অনন্ত।।
যত কিছু তোমার শ্রীঅঙ্গে অলঙ্কার।
সত্য সত্য সত্য ভক্তিযোগ-অবতার।।’’

ভক্তিযোগ অবতীর্ণ

তোমার পরশে নিজেরে করিতে ধন্য—ভক্তিযোগ অবতীর্ণ

‘‘স্বর্ণ-মুক্তা-রূপা-কসা-রুদ্রাক্ষাদি-রূপে।
নববিধা-ভক্তি ধরি আছ নিজসুখে।’’

তোমার শ্রীঅঙ্গে মুর্ত্তিমান্‌

ভক্তি বলতে যার নাম—তোমার শ্রীঅঙ্গে মূর্ত্তিমান্‌

তোমার অঙ্গে সেবা করে

অলঙ্কার-রূপ ধরে—তোমার অঙ্গে সেবা করে

ভক্তিযোগ অবতার

তোমার শ্রীঅঙ্গে অলঙ্কার—ভক্তিযোগ অবতার

‘‘নীচজাতি পতিত অধম যত জন।
তোমা হৈতে সভার হইল বিমোচন।।’’

নিতাই তোমার অবতার

উদ্ধারিতে পতিত-সবার—নিতাই তোমার অবতার

পতিতের বন্ধু তুমি

ওহে নিতাই গুণমণি—পতিতের বন্ধু তুমি

এমন কার প্রাণ কাঁদে

ওহে নিতাই তুমি বিনে—এমন কার প্রাণ কাঁদে
পতিত-দূর্গতি দেখে—এমন কার প্রাণ কাঁদে

তোমা হতে রক্ষা হল

আমার প্রতিজ্ঞা—তোমা হতে রক্ষা হল

‘‘যে ভক্তি দিয়াছ তুমি বণিক্‌-সভারে।
তাহা বাঞ্ছে সুর-সিদ্ধ-মুনি-যোগেশ্বরে।।
‘স্বতন্ত্র’ করিয়া বেদে যে কৃষ্ণেরে কহে।
‘হেন কৃষ্ণ পার’ তুমি করিতে বিক্রয়ে।।’’

তোমার হাতে বেচা কেনা

কৃষ্ণ পরতত্ত্ব-সীমা—তোমার হাতে বেচা কেনা
ব্রজের সেই কালসোণা—তোমার হাতে বেচা কেনা

‘‘তোমার মহিমা জানিবার শক্তি কার।
মূর্ত্তিমন্ত তুমি কৃষ্ণরস-অবতার।।’’

জানাইছেন নিজগুণে

অতিগূঢ় নিতাই-ধনে—জানাইলেন নিজগুণে

কেমনে বা জানবে আনে

যদি গৌর না জানায় নিজগুণে—কেমনে বা জান্‌বে আনে

আজ,–জানাইছেন নিজ-জনে

গৌরহরি নিজ-নিতাই-ধনে—আজ,–জানাইছেন নিজ-জনে
নিত্যানন্দ-স্তুতি-ছলে—আজ,–জানাইছেন নিজ-জনে

তুমি বট নিত্যানন্দ

কৃষ্ণরস মূর্ত্তিমন্ত—তুমি বট নিত্যানন্দ

বিহরিছে মূরতি ধরে

কৃষ্ণরস যারে বলে—বিহরিছে মূরতি ধরে
ওহে নিতাই তোমারূপে—বিহরিছে মূরতি ধরে

আবরণ দিয়ে বলছেন

এ-যে অতি গোপনকারী লীলা—আবরণ দিয়ে বল্‌ছেন
আপন স্বরূপের রহস্য কথা—আবরণ দিয়ে বল্‌ছেন

তুমি আমার রসের অবতার

ওহে ও নিতাই আমার—তুমি আমার রসের অবতার

তুমি আমার রস মূর্ত্তিমন্ত

ওহে ও নিত্যানন্দ—তুমি আমার রস মূর্ত্তিমন্ত

‘‘বাহ্য নাহি জান তুমি সংকীর্ত্তন-সুখে।
অহর্নিশ কৃষ্ণগুণ তোমার শ্রীমুখে।।
কৃষ্ণচন্দ্র তোমার হৃদয়ে নিরন্তর।
তোমার বিগ্রহ কৃষ্ণ-বিলাসের ঘর।।

আপনি ত বিল্‌বে না

আপনার মহিমা—আপনি ত বল্‌বে না

ইঙ্গিতেতে বল্‌ছেন প্রভু

আমার ক্রীড়ার বসতি-ভূমি—ইঙ্গিতেতে বল্‌ছেন প্রভু

আমার ক্রীড়ার বসতি-ভূমি

নিতাই তোমার স্বরূপখানি—আমার ক্রীড়ার বসতি-ভূমি

আজ,–জানাইছেন নিজগুণে

ভাগ্যবান কলিজীবে—আজ,–জানাইছেন নিজগুণে
নিতাই-মহিমা বর্ণন-ছলে—আজ,–জানাইছেন নিজগুণে

প্রাণ নিত্যানন্দ-কলেবর

আমার গূঢ়-বিলাসের ঘর—প্রাণ-নিত্যানন্দ-কলেবর

‘‘অতএব তোমারে যে জনেপ্রীতি করে।
সত্যসত্য প্রভুকৃষ্ণ না ছাড়েন তাঁরে।।’’

ইঙ্গিতে বললেন গৌরহরি
সেইত প্রীতি করে আমারে

নিতাই তোমারে যে প্রীতি করে—সেইত প্রীতি করে আমারে

আমি বাঁধা তারি প্রেম-ডোরে

তোমারে যে প্রীতি করে—আমি বাঁধা তারি প্রেম-ডোরে

আমার হাতে সে পড়েছে

তোমারে যে প্রীতি করেছে—আমার হাতে সে পড়েছে

‘‘তবে কথোক্ষণে নিত্যানন্দ মহাশয়।
বলিতে লাগিলা অতি করিয়া বিনয়।।
প্রভু হই তুমি যে আমারে কর স্তুতি
এ তোমার বাৎসল্য ভক্তের প্রতি অতি।।
প্রদক্ষিণ কর, কিবা কর নমস্কার।
কিবা মার, কিবা রাখ, যে ইচ্ছা তোমার।।

আমি যে একান্ত তোমার

রাখ যে ইচ্ছা তোমার—আমি যে একান্ত তোমার

যাতে সুখ পাবে কর তাই

তুমি কেবল তোমার সুখ চাই—যাতে সুখ পাবে কর তাই

‘‘কোন বা বক্তব্য প্রভু ! আছে তোমা-স্থানে।
কিবা নাহি দেখ তুমি দিব্য-দরশনে।।
মন প্রাণ সভার ঈশ্বর প্রবু ! তুমি।
তুমি যে করাও সেইরূপ করি আমি।।’’

আমি তোমার খেলার পুতুল
যেমন নাচাও তেমনি নাচি

তোমার কৌতুকে হয়ে রাজি—যেমন নাচাও তেমনি নাচি
কেবল তোমার প্রীতির লাগি’—যেমন নাচাও তেমনি নাচি

নাচি তোমার কৌতুকে

যখন নাচাও যেমনরূপে—নাচি তোমার কৌতুকে

‘‘আপনেই মোরে তুমি দণ্ড ধরাইলা।
আপনেই ঘুচাইয়া এরূপ করিলা।।
তাড়, খাড়ু, বেত্র, বংশী, শিঙ্গা, ছান্দডোরি।
ইহা সে ধরিয়ে আমি মনি—ধর্ম্ম ছাড়ি।।
আচার্য্যাদি তোমার যতেক প্রিয়গণ।
সভারেই দিলা তপ—ভক্তি আচরণ।।
মুনি-ধর্ম্ম ছাড়াইয়া কি কৈলে আমারে।।
ব্যবহারি-জন দেখি সভে হাস্য করে।।’’

শুন হে মরম-কালা

ওহে প্রাণের দেবতা—শুন হে মরম-কালা

আমায় এ-কি কর্‌লে

সবাই আমার পাগল বলে—আমায় এ-কি কর্‌লে

আমায় পাগল বলে নিন্দা করে

অলঙ্কার পরি বলে—আমায় পাগল বলে নিন্দা করে

কেবা জানে মরম তার

আমি কেন পরি অলঙ্কার—কেবা জানে মরম তার
প্রাণ-গৌর তোমা বিনে আর—কেবা জানে মরম তার

তুমি,–সকলি জান তবু বলি

শুন হে মরমী—তুমি,–সকলি জান তবু বলি

সাধে কি অলঙ্কার পরি

তোমারই অলঙ্কার পরি–সাধে কি অলঙ্কার পরি

সেবা করাই স্বভাব আমার

নিরন্তর অশেষ-বিশেষে—সেবা করাই স্বভাব আমার

তুমি কর না সেবা অঙ্গীকার

ন্যাসিবেশ ধরে এবার—তুমি কর না সেবা অঙ্গীকার

ভাল ত’ লাগে না

তুমি ভূষণ পর না—ভাল ত’ লাগে না
সেবা ছাড়া রইতে নারি
তাই মনে মনে ভাবি—সেবা ছাড়া রইতে নারি

এ-দেহ ত আমার নয়

এ ত’ তোমারীই হয়—এ-দেহ ত আমার নয়

কেউ তো মানা কর্‌বে না

এ দেহ সাজাই যদি—কেউ তো মানা কর্‌বে না

তাই আমি সাজাই তোমারে

আমার এ-দেহ সাজায়ে—তাই আমি সাজাই তোমারে
তোমার যত অলঙ্কার—তাই আমি সাজাই তোমারে

নিতাই আমার অলঙ্কার পরে

গৌরাঙ্গ-সাজাই মনে করে—নিতাই আমার অলঙ্কার পরে

‘‘ব্যবহারি-জন দেখি’ সভে হাস্য করে।।
তোমার নর্ত্তক আমি নাচাও যেরূপে।
সেইরূপে নাচি আমি তোমার কৌতুকে।।
কি নিগ্রহ অনুগ্রহ তুমি সে প্রমাণ।
বৃক্ষদ্বারে কর প্রভু তোমারই সে নাম।।
প্রভু বোলে ‘তোমার যে দেহে অলঙ্কার।’
নববিধা-ভক্তি বই কিছু নহে আর।।’’

নববিধা-ভক্তির আধার

তোমর অঙ্গের অলঙ্কার—নববিধা-ভক্তির আধার

‘‘শ্রূবণ-কীর্ত্তন-স্মরণাদি নমস্কার।
এই যে তোমার সর্ব্বকাল অলঙ্কার।।
নাগ-বিভূষণ যেমন ধরেন শঙ্করে।
তাহা নাহি সর্ব্বজনে বুঝিবারে পারে।।
পরমার্থে মহাদেব—অনন্ত-জীবন।
নাগ-ছলে অনন্ত ধরেন সর্ব্বক্ষণ।।’’

নাগ-ছলে দেহে ধরে

অনন্তদেব ছাড়া রইতে নারি—নাগ-ছলে দেহে ধরে

‘‘না বুঝিয়া নিন্দে’ তান চরিত্র অগাধ।
যতেক নিন্দয়ে তার হয় কার্য্য-বাধ।।
মূঞি ত তোমার অঙ্গে ভক্তিরস বিনে।
অন্য নাহি দেখো কাঁহো কায়-বাক্য-মনে।।
নন্দগোষ্ঠে বসি তুমি বৃন্দাবন-সুখে।
ধরিয়াছ অলঙ্কার আপন কৌতুকে।
ইহা দেখি যে-সুকৃতি চিত্তে পায় সুখ।
সে অবশ্য দেখিবেক কৃষ্ণের শ্রীমুখ।।’’

আচরি বলেন শচীসূত
সে দিখেবে আমার মুখ

যে তোমারে পায় সুখ–সে দেখিবে আমার মুখ

‘‘বেত্র, বংশী, শিঙ্গা, গুঞ্জাহার, মাল্য, গন্ধ।
সর্ব্বকাল এই রূপ তোমার শ্রীঅঙ্গ।।
যতেক বালক দেখি তোমার সংহতি।
শ্রীদাম-সুদাম-প্রায় লয় মোর মতি।।
বৃন্দাবন ক্রীড়ার যতেক শিশুগণ।
সকল তোমার সঙ্গে—লয় মোর মন।।’’

তোমার সঙ্গে বিহরে

তোমার অঙ্গ যত মূর্ত্তি ধরে—তোমার সঙ্গে বিহরে

‘‘সেই ভাব সেই কান্তি সেই সর্ব্বশক্তি।
সর্ব্বদেহে দেখি সেই নন্দগোষ্ঠ-ভক্তি।।
এতেকে যে তোমারে, তোমার সেবকরে।
প্রীতি করে, সত্যসত্য সে করে আমারে।।’’

আমি বাঁধা তারি প্রেম-পাশে

তোমারে যে ভালবাসে—আমি বাঁধা তা’রি প্রেম-পাশে
তোমার দাসে যে ভালবাসে—আমি বাঁধ তারি প্রেম-পাশে(মাতন)

‘‘স্বানুভাবানন্দে দুই মুকুন্দ অনন্ত।
কিরূপে কহেন কথা কে জানয়ে অন্ত।।
কথোক্ষণে দুই-প্রভু বাহ্য প্রকাশিয়া।
বসিলেন নিভৃতে পুষ্পের বনে গিয়া।।
ঈশ্বরে পরমেশ্বরে হইল কি কথা।
বেদে সে ইহার তত্ত্ব জানেন সর্ব্বথা।।
নিত্যানন্দে চৈতন্যে যখনে দেখা হয়।
প্রায় আর কেহ নাহি থাকে সে সময়।।
কি করেন আনন্দবিগ্রহ দুইজনে।
চৈতন্য-ইচ্ছায় কেহো না থাকে তখনে।।’’

মিলে সদা নিরজনে

অতিগূঢ় দুইজনে—মিলে সদা নিরজনে

প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাইরে

কি সম্বন্ধ নিতাই গৌরাঙ্গ ধরে—প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাইরে

মিলন হলে কোন দুইজনে

আর কেউ থাকে না সেখানে—মিলন হলে কোন দুইজনে

কেউ সেখানে রইতে নারে

ভোগ্য ভোক্তা মিল্‌লে পরে—কেউ সেখানে রইতে নারে

‘‘নিত্যানন্দ-স্বরূপো প্রভুর ইচ্ছা জানি।
একান্তে সে আসিয়া দেখেন ন্যাসিমণি।।
আপনারে যেন প্রভু না করেন ব্যক্ত।
এইমত লুকায়েন নিত্যানন্দ-তত্ত্ব।।
সুকোমল দুর্ব্বিজ্ঞেয় ঈশ্বর-হৃদয়।
বেদে শাস্ত্রে ব্রহ্মা শিব সব এই কয়।।
না জানি না বুঝি মাত্র সবে গায় গাথা।
লক্ষ্মীরো এই সে বাক্য, অন্যের কি কথা।।
এই মতভাবরঙ্গে চৈতন্য-গোসাঞি।।
এক কথা না কহেন একজন-ঠাঞি।।
হেন সে তাঁহার রঙ্গ,–সভেই মানেন।
‘আমার অধিক প্রীত কারো না বাসেন।।
আমারে সে কহেন সকল গোপ্য-কথা।
মুনিধর্ম্ম করি কৃষ্ণ ভজিব সর্ব্বথা।।
বেত্র, বংশী, বর্হা, গুঞ্জামালা, ছাঁদডোরি।
ইহা ধরিলেন কেনে মুনিধর্ম্ম ছাড়ি।।
কেহো বোলে, মুনিধর্ম্ম যতেক প্রকার।
বৃন্দাবনে গোপক্রীড়া—অধিক সভার।।
গোপ-গোপী-ভক্তি—সর্ব্ব-তপস্যার ফল।
যাহা বাঞ্ছে ব্রহ্মা-আদি ঈশ্বর-সকল।
অতি কৃপাপাত্র সে গোকুল-ভক্তি পায়।
যে ভক্তি বন্দেন প্রভু শ্রীউদ্ধবরায়।।
এইমত যে বৈষ্ণব করেন বিচার।
সর্ব্বত্রেই গৌরচন্দ্র করেন স্বীকার।।
অন্যেহন্যে বাজায়েন আনন্দ ইচ্ছায়।
হেন রঙ্গী মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গরায়।।
কৃষ্ণের কৃপায় সভে আনন্দে বিহ্বল।
কখনো কখনো বাজে আনন্দ-কন্দল।।
ইহাতে যে এক ঈশ্বরের পক্ষ হৈয়া।
আর ঈশ্বরেরে নিন্দে সে-ই অভাগিয়া।।
ঈশ্বরের অভিন্ন—সকল ভক্তগণ।
দেহের যেহেন বাহু আঙ্গুলি চরণ।।
তথাপিহ সর্ব্ব-বৈষ্ণবের এই কথা।
সভার ঈশ্বর-কৃষ্ণচৈতন্য সর্ব্বথা।।
নিয়ন্তা পালক স্রষ্টা অবিজ্ঞাততত্ত্ব।
সভে মেলি এইমাত্র গায়েন মহত্ত্ব।।
আবির্ভাব হৈতেছেন যে সব শরীরে।
তাঁ’ সভার অনুগ্রহে ভক্তি-ফল ধরে।।
সর্ব্বজ্ঞতা সর্ব্বশক্তি দিয়াও আপনে।
অপরাধে শান্তিও করেন ভাল-মনে।।
ইতিমধ্যে সকলে বিশেষ দুই প্রতি।
নিত্যানন্দ-অদ্বৈতেরে না ছাড়েন স্তুতি।।
কোটি অলৌকিক যদি এ’দুই করেন।
তথাপিহ গৌরচন্দ্র কিছু না বলেন।।
এইমত কথোক্ষণ পরানন্দ করি।
অবধূতচন্দ্র-সঙ্গে গৌরাঙ্গ শ্রীহরি।।
তবে নিত্যানন্দ-স্থানে করিয়া বিদায়।
বাসায় আইলা প্রভু শ্রীগৌরাঙ্গরায়।।
নিত্যানন্দস্বরূপো পরম-হর্ষ-মনে।
আনন্দে চলিলা জগন্নাথ-দরশনে।।’’

আগে দেখি গৌর প্রাণনাথ

পিছে দেখে জগন্নাথ—আগে গৌর প্রাণনাথ

‘‘নিত্যানন্দ-চৈতন্যে যে হৈল দরশন।
ইহার শ্রবণে সর্ব্ব-বন্ধ-বিমোচন।।
জগন্নাথ দেখি মাত্র নিত্যানন্দরায়।।
আনন্দে বিহ্বল হই গড়াগড়ি যায়।।
আছাড় পড়েন প্রভু প্রস্তর-উপরে।
শতজনে ধরিলেও ধরিতে না পারে।।’’

তারে কে ধরিতে পারে

বিশ্বোদরে যেজন ধরে—তারে কে ধরিতে পারে

‘‘জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা সুদর্শন।
সভা’ দেখি নিত্যানন্দ করেন ক্রন্দন।।
সভার গলার মালা ব্রাহ্মণে আনিঞা।
পুনঃপুনঃ দেন সভে প্রভাব জানিঞা।।
নিত্যানন্দ দেখি যত জগন্নাথদাস।
সভার জন্মিল অতি-পরম-উল্লাস।।
যে জন না চিনে, সে জিজ্ঞাসে কারো ঠাঁই।
সভে কহে এই কৃষ্ণচৈতন্যের ভাই।।’’

এই অবধূত গোসাঞি

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের ভাই—এই অবধূত গোসাঞি
ইহার যে নাম নিতাই—এই অবধূত গোসাঞি

শ্রীচৈতন্যে ভাই না হলে

এত প্রেম-বিকার কারে মিলে—শ্রীচৈতন্য ভাই না হলে

“নিত্যানন্দস্বরূপো সভারে করি কোলে।”

আনন্দ আর ধরে না

আপনার পরিচয় শুনে—আনন্দ আর ধরে না

‘‘নিত্যানন্দস্বরূপো সভারে করি কোলে।
সিঞ্চিলা সভার অঙ্গ প্রেমানন্দ-জলে।।
তবে জগন্নাথ হেরি হর্ষ সর্ব্ব-গণে।
আনন্দে চলিলা গদাধর-দরশনে।।

আইলা নিতাই এইখানে

গদাধরের দরশনে—আইলা নিতাই এইখানে

‘‘নিত্যানন্দ-গদাধরে যে প্রীত অন্তরে।
ইহা কহিবারে শক্তি ঈশ্বরে সে ধরে।।’’

প্রাণের প্রাণ গৌর জানে

যে প্রীতি নিতাই গদাই দুইজনে—প্রাণের প্রাণ গৌর জানে
গৌর বিনে আনে নাহি জানে—প্রাণের প্রাণ গৌর জানে

না হবে বা কেন রে

নিতাই-গদাধরে গাঢ় প্রীতি—না হবে না কেন রে

নিতাই অনঙ্গ-মঞ্জরী

গদাধর রাই-কিশোরী—নিতাই অনঙ্গ-মঞ্জরী

‘‘গদাধর-ভবনে মোহন গোপীনাথ।
আছেন, যেহেন নন্দকুমার সাক্ষাত।।’’

হয় নন্দকুমার সাক্ষাৎ

বিগ্রহরূপ ধরি’—হয় নন্দকুমার সাক্ষাৎ
গদাধর-ভবনে গোপীনাথ—হয় নন্দকুমার সাক্ষাৎ

কেন কোলে কর্‌বে তবে

যদি সাক্ষাৎ নন্দকুমার না হবে—কেন কোলে কর্‌বে তবে
আমার গৌরাঙ্গ-কিশোরী—কেন কোলে কর্‌বে তবে
এ মোহন-গোপীনাথে—কেন কোলে কর্‌বে তবে

গৌর-রাধার মন মজ্‌বে কেনে

শ্রীনন্দনন্দন বিনে—গৌর-রাধার মন মজ্‌বে কেনে

‘‘আপনে চৈতন্য তানে করিয়াছেন কোলে।’’

আমার প্রাণনাথ বলে

রাধাভাবে হয়ে বিহ্বলে—আমার প্রাণনাথ বলে

‘‘আপনে চৈতন্য তানে করিয়াছেন কোলে।
অতিপাষণ্ডীও সে বিগ্রহ দেখি’ ভুলে।।
দেখি শ্রীমুরলীমুখ অঙ্গের ভঙ্গিমা।
নিত্যানন্দ-আনন্দ-অশ্রুর নাহি সীমা।।’’

নিতাইচাঁদের নয়ন ঝুরে

গোপীনাথের বদন হেরে—নিতাইচাঁদের নয়ন ঝুরে
আনন্দ-অশ্রু উথলি পড়ে—নিতাইচাঁদের নয়ন ঝুরে

‘‘নিত্যানন্দ-বিজয় জানিঞা গদাধর।’’

প্রাণে প্রাণে পড়ল টান

‘‘নিত্যানন্দ-বিজয় জানিঞা গদাধর।
ভাগবত-পাঠ ছাড়ি আইলা সত্বর।।’’

গদাধর ছিলেন গোপন

শ্রীভাগবত-পঠনে—গদাধর ছিলেন গোপনে

পণ্ডিত-গোসাঞি আইলা সেইক্ষণে

প্রাণে প্রাণে জানি নিতাই-আগমন—পণ্ডিত-গোসাঞি আইলা সেইক্ষণে

‘‘দুঁহে মাত্র দেখিয়া দুঁহার শ্রীবদন।
গলা ধরি লাগিলেন করিতে ক্রন্দন ।।

দোঁহে ভাসে নয়ন-নীরে

এই গোপীনাথের আগে—দোঁহে ভাসে নয়ন-নীরে
নিতাই গদাই গলা ধরে—দোঁহে ভাসে নয়ন-নীরে

(মাতন)
মিলন-রঙ্গ দেখে মনে হয়

গদাধর নিত্যানন্দ—মিলন-রঙ্গ দেখে মনে হয়

যেন মিলেছে বহুদিন-পরে

সহোদরা দুইজনে—যেন মিলেছে বহুদিন-পরে

শ্রীগুরু-প্রেরণায় এই বলে মন

শ্রীরাধা অনঙ্গ মিলন—শ্রীগুরু-প্রেরণায় এই বলে মন

আইলা গদা-রাধা ত্বরা-করি

অনঙ্গ-মঞ্জরী আইলা জানি—আইলা গদা-রাধা ত্বরা-করি
‘অনঙ্গ-মঞ্জরী আইলা জানি’—
প্রাণের কনিষ্ঠা ভগিনী—অনঙ্গ-মঞ্জরী আইলা জানি

আইলা গদা-রাধা ত্বরা করি
দোঁহে দোহায় নিল কোলে

ভাসিয়া নয়ন-জলে—দোঁহে দোহায় নিল কোলে

‘‘অন্যোহন্যে দুই প্রভু করে নমস্কার।’’

এ বাহিরের ব্যবহার

কেবল লোকশিক্ষার লাগি—এ বাহিরের ব্যবহার

‘‘অন্যোহন্যে দুঁহে কহে মহিমা দুঁহার।।’’

নৈলে কেমন করে জানিত

নিতাই-গদাই-রহস্য জগৎ–নৈলে কেমন করে জানিত
মহিমা বর্ণন-ছলে দোঁহে না বলিত—নৈলে কেমন করে জানিত

‘‘কেহো বোলে, আজি হইল লোচন নির্ম্মল।
কেহো বোলে, আজি হইল জনম সফল।।
বাহ্যজ্ঞন নাহি দুই-প্রভুর শরীরে।
দুই-প্রভু ভাসে ভক্তি-আনন্দ-সাগরে।।’’

আনন্দের পাথার বয়ে যায়

নিতাই গদাই মিলনে—আনন্দের পাথার বয়ে যার

‘‘হেন সে হইল প্রেমভক্তির প্রকাশ।
দেখি চতুর্দ্দিগে পড়ি কান্দে সর্ব্বদাস।।’’

সবাই ভাসে নয়ন-নীরে

নিতাই-গদাই-প্রীতি হেরে—সবাই ভাসে নয়ন-নীরে

গৌরগণের আনন্দ মন

দেখি গদাই-নিতাই-মিলনে—গৌরগণের আনন্দ মন

‘‘কি অদ্ভুত প্রীতি নিত্যানন্দ-গদাধরে।
একের অপ্রিয় আরে সম্ভাষা না করে।।
গদাধরদেবের সংকল্প এইরূপ।
নিত্যানন্দ-নিন্দকের না দেখেন মুখ।।’’

গদাধর দেখেন না তার মুখ

যে জন নিত্যানন্দ-বিমুখ—গদাধর দেখেন না তার মুখ

‘‘নিত্যানন্দস্বরূপেরে প্রীতি যার নাঞি।
দেখাও না দেন তারে পণ্ডিত-গোসাঞি।।’’

তারে দেখা না দেন পণ্ডিতগোসাঞি

নিতাইএ যার প্রীতি নাই—তারে দেখা না দেন পণ্ডিতগোসাঞি

পণ্ডিতগোসাঞি দেখা দেন না তারে

নিতাইচাঁদে যে প্রীতি না করে—পণ্ডিত-গোসাঞি দেখা দেন না তারে

কারেও কি গদাই-রাধা মিলে

নিতাই-অনঙ্গে প্রীতি না হলে—কারেও কি গদাই-রাধা মিলে

তাই বলেছেন ঠাকুর নরোত্তম
রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই

নিতাই-কৃপা বিনে ভাই—রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই

‘‘তবে দুই-প্রভু স্থির হই একস্থানে।
বসিলেন চৈতন্যমঙ্গল-সংকীর্ত্তনে।।’’

গৌর-গুণ কীর্ত্তন করে

নিতাই গদাই গলা ধরে—গৌর-গুণ কীর্ত্তন করে

পারেন না ত বলিতে

পণ্ডিত-গোসাঞি প্রাণেশ্বরে—পারেন না ত বলিতে
গৌর-গুণ গৌর-সম্মুখে—পারেন না ত বলিতে
প্রভু ব্যাথা পান পাছে—পারেন না ত বলিতে

আজ সে সুযোগ পেয়েছে গদাই

নিতাইচাঁদে পেয়ে একঠাঁই—আজ সে সুযোগ পেয়েছে গদাই

প্রাণভরে গৌর-গুণ গায়

নিরজনে বসে এই টোটায়—প্রাণভরে গৌর-গুণ গায়
দুইজনে নিতাই-গদাই—প্রাণভরে গৌর-গুণ গায়

মেতে গৌর-গুণ-গানে

এই কালে এই উদ্যানে—মেতে গৌর-গুণ-গানে

না জানি সে কি অমিয়া

নিতাই-গদাই-মুখে গৌরকথা—না জানি সে কি অমিয়া

গৌরাঙ্গ বলিতে নারে

গো গো গো করে—গৌরাঙ্গ বলিতে নারি

‘‘তবে গদাধরদেব নিত্যানন্দ-প্রতি।
নিমন্ত্রণ করিলেন, আজি ভিক্ষা ইথি।।’’

প্রাণে প্রাণে ডাকে রে

নিতাইকে নিমন্ত্রণ করে—প্রাণে প্রাণে ডাকে রে
গদাধর প্রাণ-গৌরাঙ্গে—প্রাণে প্রাণে ডাকে রে

একবার আস্‌বে কি

তোমার নিতাই এসেছে—একবার আসবে কি
‘তোমার নিতাই এসেছে’—
তারে নিমন্ত্রণ করেছি—তোমার নিতাই এসেছে
‘তারে নিমন্ত্রণ করেছি’—
গোপীনাথের প্রসাদ পেতে—তারে নিমন্ত্রণ করেছি

তোমার নিতাই এসেছে
নিতাই ত খাবে না

তোমার অধরামৃত বিনা—নিতাই ত খাবে না

নিতাই কর্‌বে না ভোজনে

গৌর তোমার সঙ্গ বিনে—নিতাই কর্‌বে না ভোজনে

একবার এস নিতাই-প্রীতে

গোপীনাথের প্রসাদ পেতে—একবার এস নিতাই-প্রীতে

ডাক্‌তে ভয় পাই প্রকাশ্যেতে

বহুলোক সংঘট্ট হয় পাছে—ডাক্‌তে ভয় পাই প্রকাশ্যেতে

সবাই আসবে তোমার সাথে

বাহ্যে ডাক্‌লে প্রকাশ করে—সবাই আস্‌বে তোমার সাথে

প্রাণে আশ মিটে না তাতে
সেবা করে সুখ পাই না

একা না পেলে আশ মিটে না—সেবা করে সুখ পাই না

মনে বড় হয়েছে আশা

নিরজনে কর্‌ব সেবা—মনে বড় হয়েছে আসা

একা একা এস হে

সেবা করব আশা-মিটায়ে—একা একা এস হে

তোমায়,–একলা পেতে সাধ আমাদের

তাইতো ভিতরে ডাকি বাহিরে ছেড়ে—তোমায়,–একলা পেতে সাধ আমাদের

‘‘নিত্যানন্দ গদাধরভিক্ষার কারণে।’’

স্বাভাবিক প্রীতির স্বভাবে

নিতাই আমার গদাধরে—স্বাভাবিক প্রীতির স্বভাবে

‘‘একমন চাউল আনিঞাছেন যতনে।।’’

মনের কথা কিন্তু আছে গোপনে

চাউল আনেন নাই গদাধরের জন্য—মনের কথা কিন্তু আছে গোপনে

নিতাই তণ্ডুল এনেছে যতন করে

প্রাণগৌরঙ্গে খাওয়াবার তরে—নিতাই তণ্ডুল এনেছে যতন করে

দিলেন গদাধরের করে

প্রাণগৌরাঙ্গের ভোগের তরে—দিলেন গদাধরের করে

সবাই ত দেন গৌরাঙ্গেরে

গৌরসেবার দ্রব্য এবে—সবাই ত দেন গৌরাঙ্গেরে
গৌরগণ গৌড়দেশ হতে—সবাই ত দেন গৌরাঙ্গেরে

নিতাই দিলেন গদাধর-করে

গৌর-সেবার দ্রব্য এনে—নিতাই দিলেন গদাধর-করে

অনুভব কর ভাইরে

কি অদ্ভুত রহস্য এতে—অনুভব কর ভাইরে

নিতাই জানে প্রাণে প্রাণে
গৌর বড় ভালবাসে

গদাধরের হাতে খেতে—গৌর বড় ভালবাসে

গৌরহরির চির প্রিয়

গদাধরের রন্ধন-করা-দ্রব্য—গৌরহরির চির প্রিয়

গৌরহরি আসবে আপনে

গদাধরের রন্ধন-করা-দ্রব্য—গৌরহরি আস্বে আপনে
বড় সুখ পায় তার রন্ধনে—গৌরহরি আস্বে আপনে

গদাধর-রন্ধন আন্বে তারে

নিতাই ভাল জানে অন্তরে—গদাধর-রন্ধন আনবে তারে
বাঁধি তারে প্রেমডোরে—গদাধর-রন্ধন আনবে তারে

চাউল দিলেন নিতাই এই অনুভবে

গদাই কে দিলে গৌর খাবে—চাউল দিলেন নিতাই এই অনুভবে

‘‘অতি সূক্ষ্ম শুক্ল দেবযোগ্য সর্ব্বমতে।
গোপীনাথ-লাগি আনিঞাছেন গৌড় হৈতে।।’’

এ কিন্তু নয় মনের কথা

গোপীনাথে দেওয়া মাত্র ছলা—এ কিন্তু নয় মনের কথা

আনিঞাছে তণ্ডুল গৌরের তরে
গোপীনাথ ভোগে তাই দিয়েছে

গোপীনাথ-সেবায় গদাধর আছে—গোপীনাথের ভোগে তাই দিয়েছে

গৌর নিশ্চয় করবে গ্রহণ

গোপীনাথ-প্রসাদ গদাধর-রন্ধন—গৌর নিশ্চয় করবে গ্রহণ

তাই দিয়েছে গোপীনাথের ভোগে

গদাধর খাওয়াইবেন গৌরাঙ্গেরে—তাই দিয়েছে গোপীনাথের ভোগে
গদাধর টোটাগোপীনাথে আছে—তাই দিয়েছে গোপীনাথের ভোগে

‘‘আর একখানি বস্ত্র—রঙ্গিম সুন্দর।
নিতাই আমার — দুই আনি দিলা গদাধরের গোচর।।’’


‘গদাধর এ তণ্ডুল,

মধুর-স্বরে নিতাই বলে

প্রেমে অঙ্গকরে টলমল—মধুর-স্বরে নিতাই বলে

প্রেমভাষে নিতাই বলে

‘‘গদাধর এ তণ্ডুল করিয়া রন্ধন।
শ্রীগোপীনাথেরে দিয়া করিবা ভোজন।।’’

নিতাই কহে ভাব করি গোপনে
নিতাইচাঁদের আছে মনে

গদাধর খাওয়াবে গৌরাঙ্গধনে—নিতাইচাঁদের আছে মনে

মনে মনে গণে রে
দয়া করে এস হে

ওহে আমার প্রাণগৌর—দয়া করে এস হে
তোমার গদাধরের প্রীতে—দয়া করে এস হে

‘‘তণ্ডুল দেখিয়া হাসে পণ্ডিতগোসাঞি।।
নয়নে ত এমত তণ্ডুল দেখি নাঞি।।
এ তণ্ডুল গোসাঞি ! কি বৈকুণ্ঠে থাকিয়া ।
আনিঞা আছেন গোপীনাথের লাগিয়া।।
লক্ষ্মীমাত্র এ তণ্ডুল করেন রন্ধন।
কৃষ্ণ সে ইহার ভোক্তা, তবে ভক্তগণ।।’’

গদাধরের পড়েছে মনে

নিতাই-দত্ত-তণ্ডুল দরশনে—গদাধরের পড়েছে মনে
সেই হরিবোলা রসের বদনে—গদাধরের পড়েছে মনে

সাধ জেগে উঠেছে প্রাণে

গৌরকে খাওয়াবার তরে—সাধ জেগে উঠেছে প্রাণে

প্রাণে প্রাণে বলছেন
তবে ত বাঞ্ছা পূর্ণ হয়

যদি গৌরহরি আসে আমার আলয়—তবে ত বাঞ্ছা পূর্ণ হয়

তবে আমার রন্ধন সফল হবে

প্রাণে প্রাণে গদাধর বলে—তবে আমার রন্ধন সফল হবে
গৌর-সেবায় লাগে যবে—তবে আমার রন্ধন সফল হবে

‘‘আনন্দে তণ্ডুল প্রশংসেন গদাধর।
বস্ত্র লই গেলা গোপানাথের গোচর।।

কত আদরের ধন রে

আমার নিতাইচাঁদের বস্ত্র—কত আদরের ধন রে

এ যে বিপরীত রীতি রে

দিব্যবস্ত্র দান করে—এ যে বিপরীত রীতি রে

‘‘দিব্য-রঙ্গ-বস্ত্র গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে।
দিলেন দেখিয়া শোভা ভাসেন আনন্দে।।’’

গদাধর,–বস্ত্রহাতে মনে মনে বল্‌ছেন
গোপীনাথ কর অঙ্গীকার

অনঙ্গের প্রীতি-উপহার—গোপীনাথ কর অঙ্গীকার

গোপীনাথের আনন্দ মন

পেয়ে নিতাইচাঁদের দত্ত-বসন—গোপীনাথের আনন্দ মন

সাজ্‌বে বল কার সাজে

নিতাই ত তার সাজ বটে—সাজ্‌বে বল কার সাজে

চিরকাল নিতাই সাজায় তারে

সেবা-বিগ্রহ নিত্যানন্দ—চিরকাল নিতাই সাজায় তারে

আনন্দ আর ধরে না রে

নিতাই-দত্ত-বসন পেয়ে—আনন্দ আর ধরে নারে

গদাধর আনন্দে ভাসে

দেখি,–নিতাই-দত্ত-বসন গোপীনাথ-অঙ্গে—গদাধর আনন্দে ভাসে

‘‘তবে রন্ধনের কার্য্য করিতে লাগিলা।’’

মনে মনে ভোগ করে

গোপীনাথে বস্ত্র পরানো—মনে মনে ভোগ করে

নিতাই তার রন্ধনের কার্য্য

মধুর-শ্রীব্রজলীলায়—নিতাই তার রন্ধনের কার্য্য
শ্রীনন্দালয়ে গিয়ে—নিতাই তার রন্ধনের কার্য্য
শ্যামবঁধু সুখ পাবে বলে—নিতাই তার রন্ধনের কার্য্য

আজ সেই স্বভাবে রন্ধন করে

‘‘তবে রন্ধনের কার্য্য করিতে লাগিলা।
আপনে টোটায় শাক তুলিতে লাগিলা।।’’

মনে মনে বলে রে
একবার আসবে কি

হা গৌর প্রাণ গৌর—একবার আসবেকি
নিতাইচাঁদের ভোজন-কালে—একবার আসবে কি

(মাতন)
গদাধর ভাসে নয়ন-জলে

টোটায় গিয়ে শাক্‌ তোলে—গদাধর ভাসে নয়ন-জলে
গৌর-সেবা কি হবে বলে—গদাধর ভাসে নয়ন-জলে

‘‘কেহো বোনে নাহি দৈবে হইয়াছে শাক।’’

আপনি হইয়াছে প্রকাশ

লীলা-শক্তির প্রেরণায়—আপনি হইয়াছে প্রকাশ
গৌর-সেবা কর্‌বে বোলে—আপনি হইয়াছে প্রকাশ

‘‘তাহা তুলি আনিঞা করিলা এক পাক।।
তেঁতুলি বৃক্ষের যত পত্র সুকোমল।
তাহা আনি বাটি তথি দিলা লোণ জল।।
তার এক ব্যঞ্জন করিলা অম্ল নাম।
রন্ধন করিয়া গদাধর ভাগ্যবান্‌।।

নয়ন-ধারা বহে অবিরল

ভোগের আয়োজন করে গদাধর—নয়ন-ধারা বহে অবিরল

প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাইরে

প্রাণ-গৌরাঙ্গ—প্রীতি—প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাইরে

প্রেম-সিন্ধু অবতার

প্রেমের ঠাকুর গৌর আমার—প্রেম-সিন্ধু অবতার

উপচারের বাধ্য নয়

প্রেমাভুখা গোরা রসময়—উপচারের বাধ্য নয়

‘‘গোপীনাথ-অগ্রে নিঞা ভোগ লাগাইলা।’’

প্রাণে প্রাণে ডাকে রে

গদা-রাধা ভোগ লাগিয়ে—প্রাণে প্রাণে ডাকে রে

একবার এস হে

আমার গৌরাঙ্গ-গোপীনাথ—একবার এস হে
তোমার নিত্যানন্দের প্রীতে—একবার এস হে

বড় সাধে করেছি রন্ধন

এস প্রাণ-শচীনন্দন—বড় সাধে করেছি রন্ধন

টোটায় কাঁদে গদাধর

এস প্রাণগৌর সুন্দর—টোটায় কাঁদে গদাধর

শুধু গদাধরের ডাক নয়
প্রাণে প্রাণে টানে রে

পরাণ-গৌরাঙ্গ-ধনে—প্রাণে প্রাণে টানে রে
একা নয় বুঝি দুইজনে—প্রাণে প্রাণে টানে রে
নিতাই-গদাই দুইজনে—প্রাণে প্রাণে টানে রে

দু’জনারই প্রাণ কাঁদ্‌ছে

গৌর একবার এস বলে—দুজনারই প্রাণ কাঁদছে

দু’জনেই গৌরগত প্রাণ

গৌর বিনে জানে না আন—দু’জনেই গৌরগত প্রাণ

জানে না তারা গৌর বিনে

শয়নে স্বপনে জাগরণে—জানে না তারা গৌর বিনে

তাই,–ডাকে তারা প্রাণে প্রাণে
গদাই ডাকে এই বলে
একবার এস হে

হা নিতাইএর প্রাণ গৌরহরি—একবার এস হে
নিতাইচাঁদের প্রীতির টানে—একবার এস হে

এস গোপীনাথ-অঙ্গনে

একা একা নিরজনে—এস গোপীনাথ-অঙ্গনে

এসে কর অঙ্গীকার

তোমার অবধূতের উপচার—এসে কর অঙ্গীকার

নিতাই ডাকে এই বলে
আমি এনেছি কত সাধ করে

প্রাণগৌর তোমার সেবার তরে—আমি এনেছি কত সাধ করে
গৌড় হতে মাথায় করে—আমি এনেছি কত সাধ করে
সুগন্ধি-সূক্ষ্ম-তণ্ডুল—আমি এনেছি কত সাধ করে

দিয়েছি গদাধরের করে

তার রন্ধনে তোমার প্রীতি জেনে—দিয়েছি গদাধরের করে

একবার আস্‌বে কি

গদাধরের রন্ধন প্রীতে—একবার আস্‌বে কি

দুইজনে ডাকে প্রাণে প্রাণে

বাহিরের ভাব করি গোপন—দুইজনে ডাকে প্রাণে প্রাণে

এ যে গোপনে গোপনে মেলা

গুপত-গৌরাঙ্গ-লীলা—এ যে গোপনে গোপনে মেলা

‘‘গোপীনাথ-অগ্রে নিয়া ভোগ লাগাইলা
হেন-কালে গৌরচন্দ্র আসিয়া মিলিলা।।’’

আর কি গৌর রইতে পারে

প্রাণের নিতাই-গদাই ডাকে তারে—আর কি গৌর রইতে পারে
গৌর বাঁধা যাদের প্রেমডোরে—আর কি গৌর রইতে পারে

ডাকে তারে সেই অনঙ্গ-রাধা

যাদের হাতে তার বেচা-কেনা—ডাকে তারে সেই অনঙ্গ-রাধা
আর কি,–রইতে পারেগৌর কালসোণা—ডাকে তারে সেই অনঙ্গ-রাধা

প্রাণে প্রাণে ডাক্‌ছে তারে

গদাই-নিতাই অনুরাগ-ভরে—প্রাণে প্রাণে ডাক্‌ছে তার

কেমনে ধৈর্য্য ধর্‌বে প্রাণে

পড়েছে দুই-আকর্ষণে—কেমনে ধৈর্য্য ধর্‌বে প্রাণে
গদাধর-নিত্যানন্—প্রেমে—কেমনে—ধৈর্য্য ধর্‌বে প্রাণে

আইলা প্রাণের গৌরহরি

নিতাই-গদাই-ডাকে বাঁধা পড়ি—আইলা প্রাণের গৌরহরি

প্রাণ-গৌর এল সেই টানে টানে

প্রাণে প্রাণে ডেকেছে দুইজনে—প্রাণ-গৌর এল সেই টানে টানে

টোটার দ্বারদেশে গোরারায়

গদাধর গোপীনাথে ভোগ লাগায়—টোটার দ্বারদেশে গোরারায়

গৌর উপনীত সেইকালে

নিতাই-গদাই-এর প্রেমের বলে—গৌর উপনীত সেই কালে
‘‘গদাধর ও গদাধর’’

এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে

প্রেম-বন্ধনে বেঁধে এনেছে তাকে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
প্রাণে প্রাণে গুপ্ত-ডাকে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে

এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে

গুপ্ত-ডাকে গোপনে এসে—এই টোটায় দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
অমিয়া-মাখান-বলে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
‘গদাধর ও গদাধর’ বলে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে

যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরে

গৌর আমার,–‘ও গদাধর’ বলে ডাকে—যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরে

গৌর আমার,–‘ও গদাধর’ বলে ডাকে

এই টোটার দ্বারে প্রেমস্বরে—গৌর আমার,–‘ও গদাধর’ বলে ডাকে

যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ

‘গদাধর’ বচন—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ

কি মাধুর্য্য পদাবলী

গৌর-মুখে ‘ও গদাধর’ বুলি—কি মাধুর্য্য পদাবলী

যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উঠ্‌ল উথলি

কি অমৃতময় বুলি—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উঠল উথলি

যেন,–গৌরপ্রেমসিন্ধু উথলিল

আমার নিতাই-তরঙ্গ-আঘাতে –যেন,–গৌরপ্রেমসিন্ধু উথলিল
‘আমার নিতাই-তরঙ্গ-আঘাতে’—
প্রাণে প্রাণে প্রাণভরা ডাকে—আমার নিতাই-তরঙ্গ-অঘাতে

যেন,–গৌরপ্রেমসিন্ধু উথলিল

‘প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ভরা ডাকে’—
একবার,–এস প্রাণ গৌর বলে—প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ভরা ডাকে
গদাধর-অনুরাগ-বাতাঘাতে—প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ভরা ডাকে

‘গৌর-মুখে গদাধর বুলি নিকসিল
অমিয়া-সিন্ধু উথলিল মানি


গৌরমুখে নিকসিল ‘ও গদাধর’ বাণী—অমিয়া-সিন্ধু উথলিল মানি

কি প্রীতি-মাখান ডাক্ রে

প্রেমের ধারা বয়ে যায় রে—কি প্রীতি-মাখান ডাক রে
‘প্রেমের ধারা বয়ে যায় রে’—
আজ,–প্রীতির অভিনব-অনুরাগে—প্রেমের ধারা বয়ে যায় রে

কি প্রীতি-মাখানে ডাক রে
যেন,–ব্রজের অপূর্ণ-সাধ মিটাইছে

‘রাধা রাধা’ বলে আশ না মিটেছে—যেন,–ব্রজের অপূর্ণ-সাধ মিটাইছে
তাই,–‘গদাধর ও গদাধর’ বলে ডেকে—ব্রজের অপূর্ণ সাধ মিটাইছে

কি মাধুর্য্যামৃত ধাম

গৌর-মুখে ‘ও গদাধর’ নাম—কি মাধুর্য্যামৃত ধাম

আজ সে দিন রে

এই সেই গোপীনাথের ভবন—আজ সেই দিন রে

নিশ্চয় ডাকিতেছে গোরা

ত্রিকাল-সত্য-লীলায় আজ—নিশ্চয় ডাকিতেছে গোরা

কেউ কি শুন্‌তে পেতেছ তোমরা

‘‘প্রসন্ন শ্রীমুখে ‘হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ বলি।
বিজয় হইলা গৌরচন্দ্র কুতূহলী।।
গদাধর ! গদাধর ! ডাকে গৌরচন্দ্র।’’

আর কি গদাই রইতে পারে

গৌর ডাকে টোটার দ্বারে—আর কি গদাই রইতে পারে
‘গৌর ডাকে টোটার দ্বারে’—
‘ও গদাধর’ বলে মধুর-দ্বারে—গৌর ডাকে টোটার দ্বারে
‘ও গদাধর’ বলে মধু-দ্বারে,’—
সে এসে ডাক্‌ছে তারে—‘ও গদাধর’ বলে মধু-স্বরে
প্রাণের প্রাণ ডাকছে তারে—‘ও গদাধর বলে’ মধুর-স্বরে
প্রাণনাথ ডাকছে তারে—‘ও গদাধর বলে’ মধুর-স্বরে
প্রাণেশ্বর ডাকছে তারে—ও গদাধর বলে মধুর-স্বরে

গৌর ডাকে টোটার দ্বারে

‘ও গদাধর’ বলে কত আদর করে—গৌর ডাকে টোটার দ্বারে

গদাধর আইলা ব্যাকুল-প্রাণে

এই টোটার দ্বারে এই দ্বার-পানে—গদাধর আইলা ব্যাকুল-প্রাণে
গৌরমুখে আপন নাম শুনে—গদাধর আইলা ব্যাকুল-প্রাণে
আমার,–প্রাণগৌর এসেছে জেনে—গদাধর আইলা ব্যাকুল প্রাণে

আনন্দ আর ধরে না মনে

পেয়ে বঁধুরে আপন ভবনে—আনন্দ আর ধরে না মনে

‘সম্ভ্রমে বন্দেন গদাধর পদদ্বন্দু।।’’

ধারা বহে দু’নয়নে

বাসনা পূরণ হল বলে—ধারা বহে দু’নয়নে

আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘হাসিয়া বোলেন প্রভু কেন গদাধর
আমি কি না হই নিমন্ত্রণের ভিতর ?’’

আ’মরি কি প্রীতির ভাষা

অভিমান-গর্ব্ব-মাখান—আ’মরি কি প্রীতির ভাষা
যুগল-উজ্জ্বল-রসে রসা—আ’মরি কি প্রীতির ভাষা
মাধুর্য্যামৃত-রসে রসা—-আ’মরি কি প্রীতির ভাষা

আ’মরি কি মধুর ভাষণ

বাণীর ভাণ্ডারে নাইক এমন—আ’মরি কি মধুর ভাষণ
গর্ব্ব-প্রীতি-অভিমান-মাখান—আ’মরি কি মধুর ভাষণ
শুনে জুড়ায় কর্ণ-মন—আ’মরি কি মধুর ভাষণ

আমি কি তোমাদের কেউ নই
করেছে,–চুপি চুপি ভোগের আয়োজন

গোপনে পেয়ে নিতাই-ধন—করেছ,–চুপি চুপি ভোগের আয়োজন

এ কি খেলা কর গোপনে

আমায় না জানায়ে দুইজনে—এ কি খেলা কর গোপনে

আমি কি তোমাদের কেউ নই

এ কি প্রীতি-ব্যবহার—আমি কি তোমাদের কেউ নই

বয়ে গেল প্রেমের পাথার

টোটাগোপীনাথের দ্বারে—বয়ে গেল প্রেমের পাথার

আ’মরি কি ভাষা রে

এত ভাষা নয় শুদ্ধ প্রেমে—আ’মরি কি ভাষা রে

না জানি সে কতই সুধা

আ’মরি কি প্রেমের ভাষা—না জানি সে কতই সুধা

‘‘আমি ত তোমরা দুই হৈতে ভিন্ন নাহি।’’

ইঙ্গিতে বলেন শচীসূত

নিতাই-গদাই আমার অভিন্ন তত্ত্ব—ইঙ্গিতে বলেন শচীসূত

আমার যে আমিত্ব

তোমা দু’জনায় লয়ে—আমার যে আমিত্ব

সেবাসুখে সদা রই

আমি তোমা-দু’জনার—সেবা-সুখে সদা রই

‘‘আমি ত তোমার দুই হৈতে ভিন্ন নাহি।
না দিলেও তোমরা, বলেতে আমি খাই।।’’

না দিলেও আছে অধিকার

তোমাদের দ্রব্যে আমার—না দিলেও আছে অধিকার
জোর করে খাবার—না দিলেও আছে অধিকার

প্রীতি আমারে ভোগ করায়

জোর করে টেনে নিয়ে—প্রীতি আমারে ভোগ করায়

তাই খাই জোর করে

আমার ভাগ আছ বলে—তাই খাই জোর করে

একে,–‘‘নিত্যানন্দ-দ্রব্য, তাতে,–গোপীনাথের প্রসাদ।’’

আমার অধিকার আছে

সহজে নিতাই-দ্রব্যে—আমার অধিকার আছে

নিতাই কখনও খায় না

ভালদ্রব্য পেলে না দিয়ে আমায়—নিতাই কখনও খায় না
একে,–‘‘নিত্যানন্দ-দ্রব্য, তাতে,–গোপীনাথের প্রসাদ।
তোমার রন্ধন, মোর ইথে আছে ভাগ।।’’

চিরকাল এই সত্য

তোমার রন্ধন আমার ভোগ্য—চিরকাল এই সত্য

চিরকাল খাওয়া স্বভাব

তোমার রন্ধনের দ্রব্য আমার—চিরকাল খাওয়া স্বভাব

আমি,–নিশ্চয় ভাগ পেতে পারি

এই তিন সম্বন্ধে—আমি,–নিশ্চয় ভাগ পেতে পারি

তাই,–এসেছি তোমরা না ডাকিলে

আমার,–অবশ্য ভাগ আছে বলে—তাই,–এসেছি তোমরা না ডাকিলে

আমার,–ভাগ আছে এসেছি তাই

তোমরা দুজনে ডাক নাই—আমার,–ভাগ আছে এসেছি তাই

প্রীতি টেনে এনেছে আমারে

দায়ভাগ-সূত্রে—প্রীতি টেনে এনেছে আমারে

তিন-সত্ত্বে আমার দাবী আছে

কেন তবে লুকালে আমাকে—তিন-সত্ত্বে আমার দাবী আছে

আ’মরি কি প্রেমের ভাষ্য

গদাধর-গৌরাঙ্গের—আ’মরি কি প্রেমের ভাষা

অমিয়ার বর্ষণ রে

গৌর-মুখে প্রীতির বচন—অমিয়ার বর্ষণ রে

জয় জয় গৌরহরি

প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলাকারী—জয় জয় গৌরহরি

(মাতন)

‘‘কৃপা-বাক্য শুনি নিত্যানন্দ গদাধর।
মগ্ন হইলেন সুখ-সাগর-ভিতর।।’’

আনন্দ আর ধরে না

পূর্ণ হল মনের বাসনা—আনন্দ আর ধরে না

মন-সাধ পূর্ণ হল

নিত্যানন্দ-গদাধরের–মন-সাধ পূর্ণ হল
প্রাণে প্রাণে যা চেয়েছিল—মন-সাধ পূর্ণ হল

আনন্দ আর ধরে না মনে

পেয়ে,–প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ধনে—আনন্দ আর ধরে না মনে

ধারা বহে দু’নয়নে

সেবার শ্রম সফল হল জেনে—ধারা বহে দু’নয়নে

‘‘সন্তোষে প্রসাদ আনি দেব-গদাধর।
থুইলেন গৌরচন্দ্র-প্রভুর গোচর।।’’

আপনি আস্বাদ করে

এ যে আস্বাদনের লীলা রে—আপনি আস্বাদ করে
আপন-অধরামৃত—আপনি আস্বাদ করে

‘‘সর্ব্ব টোটা ব্যাপিলেক অন্নের সুগন্ধে।
ভক্তি করি প্রভু পুনঃপুনঃ অন্ন বন্দে।।’’

প্রসাদ বন্দনা করে

গৌরহরি আনন্দ-ভরে—প্রসাদ বন্দনা করে

‘‘প্রভু বোলে তিনভাগ সমান করিয়া।
অন্ন লই তিনে ভুঞ্জি একত্র বসিয়া।।

যদি সুযোগ হয়েছে

আজ বহুদিন পরে—যদি সুযোগ হয়েছে
না জানি কোন্ শুভযোগে—যদি সুযোগ হয়েছে

সুযোগ হয়েছে সংঘটন

নিরজনে তিনজনার মিলন—সুযোগ হয়েছে সংঘটন

‘‘অন্ন লই তিনে ভুঞ্জি একত্র বসিয়া।।
নিত্যানন্দ-স্বরূপের তণ্ডুলের প্রীতে।
বসিলেন মহাপ্রভু ভোজন করিতে।।’’

প্রেমের পাথার বয়ে যায়

গৌরাঙ্গ-ভোজন-লীলায়—প্রেমের পাথার বয়ে যায়

‘‘দুই প্রভু ভোজন করেন দুই পাশে।
সন্তোষে ঈশ্বর অন্ন-ব্যঞ্জন প্রশংসে।।
প্রভু বোলে এ ‘অন্নের গন্ধেও সর্ব্বথা।
কৃষ্ণ-ভক্তি হয়, ইথে নাহিক অন্যথা।।’’

প্রেমস্বরে প্রাণগৌর বলে

‘‘গদাধর ! কি তোমার মনোহর পাক।
আমি ত এমন কভু নাহি খাই শাক।।
গদাধর ! কি তোমার বিচিত্র রন্ধন।
তেঁতুলি-পাতের কর, এমত ব্যঞ্জন।।
বুঝিলাঙ—‘বৈকুণ্ঠে রন্ধন কর তুমি।
তবে আর আপনারে লুকাও বা কেনি।।
এইমত মহানন্দে হাস্য-পরিহাসে।
ভোজন করেন তিন-প্রভু প্রেমরসে।।’’

বালাই লয়ে মরে যাই

তিন-জনের প্রেমালাপের—বালাই লয়ে মরে যাই

‘‘এ-তিন-জনার প্রীতি এ-তিনে সে জানে।
গৌরচন্দ্র ঝাট না কহেন কারো স্থানে।।’’

সেই সে জানিতে পারে

এ-তিনে,–জানায় যারে দয়া করে—সেই সে জানিতে পারে

‘‘কতোক্ষণে প্রভু-সব করিয়া ভোজন।
চলিলেন, পত্র লুট কৈল ভক্তগণ।।’’

আসিয়াছেন ভক্তগণ

মহাপ্রভুর ভোজনান্তে—আসিয়াছেন ভক্তগণ
ক্রমে ক্রমে সংবাদ পেয়ে—আসিয়াছেন ভক্তগণ

‘‘চলিলেন, পত্র লুট কৈল ভক্তগণ।।
এ আনন্দ-ভোজন যে পঢ়ে যেবা শুনে।
কৃষ্ণ-ভক্তি কৃষ্ণ পায় সেই সব জনে।।
গদাধর শুভদৃষ্টি করেন যাহারে।
সেই সে জানয়ে নিত্যানন্দ-স্বরূপেরে।।’’

কেউ,–চিন্তে নারে নিতাই-ধনে

গদাধরের কৃপা বিনে—কেউ,–চিন্তে নারে নিতাই-ধনে

কেমন করে চিন্‌বে বল

অন্তরঙ্গ-স্বরূপে—কেমন করে চিন্‌বে বল
গদাধরের কৃপা না হলে—কেমন করে চিন্‌বে বল

‘‘নিত্যানন্দ-স্বরূপো যাহারে প্রীত-মনে।
লওয়ায়েন গদাধর জানে সে-ই জনে।।’’

সেইত গদাই চিন্‌তে পারে

নিত্যানন্দ-কৃপা যারে—সেইত গদাই চিন্‌তে পারে

‘‘হেন মতে নিত্যানন্দ-প্রভু নীলাচলে।
রহিলেন গৌরচন্দ্র-সঙ্গে কুতূহলে।।
তিনজন একত্র থাকেন নিরন্তর।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, নিত্যানন্দ, গদাধর।।
জগন্নাথো একত্র দেখেন তিনজনে।
আনন্দে বিহ্বল সবে মাত্র সঙ্কীর্ত্তনে।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নিত্যানন্দ চান্দ জান।
বৃন্দাবন দাস তছু পদযুগে গান।।’’

আজ সেই দিন রে

ত্রিকাল-সত্য গৌর-লীলায়—আজ সেই দিন রে

এই সেই মধুর নীলাচল
এই সেই মধুর টোটা

মধুর শ্রীনীলাচলে—এই সেই মধুর টোটা
মোহন শ্রীগোপীনাথের—এই সেই মধুর টোটা

এই সেই গোপীনাথের অঙ্গন

গদাধরের বসতি-স্থান—এই সেই মধুর টোটা

এই সেই লীলাভূমি

এই সেই লীলাকাল—এই সেই লীলাভুমি

এসেছেন আমার প্রভু নিতাই

ত্রিকাল-সত্য-লীলায় গৌর দেখ্‌তে—এসেছেন আমার প্রভু নিতাই

আসিয়াছেন নিতাই আমার
একমান চাউল আর রঙ্গিন-বস্ত্র
দিয়াছেন পণ্ডিত-গোস্বামিকে

নিতাইচাঁদের প্রীতি করে—দিয়াছেন পণ্ডিত-গোস্বাামিকে

গদাধর রন্ধন করেছেন প্রীতে

নিতাইচাঁদের প্রীতি জেনে—গদাধর রন্ধন করেছেন প্রীতে

করেছেন এক ব্যঞ্জন

টোটা হতে শাক তুলে—করেছেন এক ব্যঞ্জন

আর এক ব্যঞ্জন করেছেন

সুকোমল আম্লী তুলি—আর এক ব্যঞ্জন করেছেন

করেছেন গোপীনাথে ভোগ অর্পণ
এই যে পেতেছি তার নিদর্শন
টোটা আমোদ করেছে

গদাধর-রান্নার সৌগন্ধে—টোটা আমোদ করেছে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—টোটা আমোদ করেছে

প্রাণে প্রাণে ডেকেছেন

ভোগের আয়োজন হতেই—প্রাণে প্রাণে ডেকেছেন
নিতাই-গদাই দুইজনে—প্রাণে প্রাণে ডেকেছেন

এস প্রাণগৌর নিরজনে

এস গোপীনাথ-অঙ্গণে—এস প্রাণগোর নিরজনে

এসেছেন প্রভু দুজনার ডাকে

নিতাই-গদাই-এর প্রেম-আকর্ষণে—এসেছেন প্রভু দুজনার ডাকে

ডেকেছেন এই টোটার দ্বারে

ভোগ অর্পণ হলে—ডেকেছেন এই টোটার দ্বারে
প্রাণগৌর’ও গদাধর’ বলে—ডেকেছেন এই টোটার দ্বারে

বলেছেন কত প্রীতির ভাষা
কেন কেন গদাধর
গোপনে করেছ ভোগের আয়োজন
আমি কি তোমাদের কেউ নই
বড় সাধে এসেছি

শ্রীগুরু-কৃপা-আকর্ষণে—বড় সাধে এসেছি মোরা
আজ,–সেই উৎসবের দিন জেনে—বড় সাধে এসেছি মোরা

শুনিব শ্রবণে

শ্রুতি-রসায়ন-রাগ—শুনিব শ্রবণে
গৌর-মুখে গদাধর ডাক—শুনিব শ্রবণে

এসেছেন ডেকেছেন
তার শ্রীমুখের ডাক শুনে
আগুসারি গিয়াছেন

পণ্ডিত-গোসাঞি আনন্দেতে—আগুসারি গিয়াছেন

বসায়েছেন যতন করে

অভ্যর্থনা করে এনে—বসায়েছেন যতন করে
ভোজন লাগি আসন দিয়ে—বসায়েছেন যতন করে
এই গোপীনাথের জগমোহনে-–বসায়েছেন যতন করে

বসেছেন তিনজনে

নিতাই গৌরাঙ্গ গদাই—বসেছেন তিনজনে
প্রসাদ ভোজনে—বসেছেন তিনজনে

আনন্দে করেছেন ভোজন

গদাধর-রন্ধন-মহিমা করি বর্ণন—আনন্দে করেছেন ভোজন

ভোজন সারি করেছেন আচমন
পত্র লুট করেছেন ভক্তগণ
আমরা কি পাব না

সেই ভোজন রঙ্গ দেখতে—আমরা কি পাব না

এক কণিকা কি পাব না

হা প্রাণ-গৌরাঙ্গগণ—এক কণিকা কি পাব না
নিতাই-গৌর-গদাই-এর অধরামৃতের—এক কণিকা কি পাব না

দাও মোদের ফেলালব

জগদ্‌-গুরু নিত্যানন্দ—দাও মোদের ফেলালব

এক কণিকা কি দিবে না

ও মোহন-গোপীনাথ—এক কণিকা কি দিবে না
ও মোহন-গোপীনাথ অধরামৃতের—এক কণিকা কি দিবে না

কণিকায়ও কি বঞ্চিত কর্‌বে

গৌরকে ত রেখেছ লুকায়ে—কণিকায়ও কি বঞ্চিত করবে

লুকায়ে রেখেছ

চিতচোর প্রাণগৌর—লুকায়ে রেখেছ

খুঁজে খুঁজে হলাম সারা

গৌর দেখ্‌ব বলে নীলাচলে এসে—খুঁজে খুঁজে হলাম সারা
ভাই ভাই ভাই মিলে—খুঁজে খুঁজে হলাম সারা

কত না খুঁজেছি

ভক্ত-সম্মিলন-দিনে—কত না খুঁজেছি
ঝালি সমর্পণ কালে—কত না খুঁজেছি
গুণ্ডিচা মার্জ্জন কালে—কত না খুঁজেছি
জগন্নাথের রথের আগে—কত না খুঁজেছি

গৌর দেখতে পেলাম না
কে যেন বলিলেন প্রাণে
যাও গোপীনাথ-ভবনে
গোপীনাথ লুকায়ে রেখেছে

বড় ভাল লেগেছে তাই—গোপীনাথ লুকায়ে রেখেছে

অনুভব কর ভাই

গোপীনাথের গৌর-লুকান—অনুভব কর ভাই

চিতচোরা মুরতি বটে

প্রাণগৌর-স্বরূপ তার—চিতচোরা মুরতি বটে

আপনি মুগ্ধ হয়েছে

ভাবিনী-ভাবিত আপন-স্বরূপ দেখে—আপনি মুগ্ধ হয়েছে

নাগরালী ভুলে গেছে

গৌরাঙ্গ-স্বরূপ দেখে—নাগরালী ভুলে গেছে

বিভাবিত হয়েছে

গোপীনাথ নাগরী-ভাবে—বিভাবিত হয়েছে

গোপীনাথ আলী হয়েছে

গৌর-নাগর বুকে ধরেছে—গোপীনাথ আলী হয়েছে

এমনি গৌরের নাগরালী

নাগরে করিল আলী—এমনি গৌরের নাগরালী
এ যে নাগরীর নাগরালী—এমনি গৌরের নাগরালী

রাধা-অঙ্গে মিলিত নিজ-মূরতি

দেখি’ মহা-অনুরাগে মাতি—রাধা-অঙ্গে মিলিত নিজ-মূরতি

গোপীনাথ লুকায়ে রেখেছে

গৌরাঙ্গ-ধনে অন্তরে—গোপীনাথ লুকায়ে রেখেছে

এই বার্ত্তা পেয়েছি প্রাণে প্রাণে
শুনেছিও লোক-মুখে

তুমি রেখেছ গৌর-লুকায়ে—শুনেছিও লোকমুখে

আজ,–তাই এসেছি তোমার দ্বারে
একবার দেখাও হে

তোমার চিতচোরা-মূরতি গৌরহরি—একবার দেখাও হে

লুকায়ে রাখতে পার নাই তুমি
তোমার ঊরুদেশে রয়েছে প্রকাশ

প্রাণ-গৌরাঙ্গের রূপের ছটা—তোমার ঊরুদেশে রয়েছে প্রকাশ

ঊরুতে তার চিহ্ন আছে

গৌর তুমি রেখেছ লুকায়ে—ঊরুতে তার চিহ্ন আছে
তোমার ভারি-ভুরি ধরা পড়েছে—ঊরুতে তার চিহ্ন আছে

একবার দেখাও হে
তোমার নিগূঢ়-স্বরূপের ভোজন-রঙ্গ

অভিন্ন-তনু নিতাই-সঙ্গে—তোমার নিগূঢ়-স্বরূপের ভোজন-রঙ্গ

বললে তুমি বলতে পার
ভাল কি লাগছে না

আমার কি স্বরূপ দেখে—ভাল কি লাগছে না
নিত্য-নব-কিশোর নটবর—ভাল কি লাগছে না
গোপবেশ বেণুকর—ভাল কি লাগছে না

তুমি কি তা জান না
আমরা যে সব নদীয়াবাসী

তোমার গৌররূপ যে ভালবাসি—আমরা যে সব নদীয়াবাসী

ভাল লাগে না ছাড়াছাড়ি

নিরন্তর,–দেখতে সাধ জড়াজড়ি—ভাল লাগে না ছাড়াছাড়ি

একবার দেখাও হে
পণ্ডিত-গোসাঞি কোথা তুমি

এই তো তোমার বসতি-ভূমি—পণ্ডিত-গোসাঞি কোথা তুমি

একবার দেখা দাও

এই গোপীনাথের জগমোহনে—একবার দেখা দাও
নিতাই-গৌর-সনে ভোজন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও

তুমি ত এইখানে আছ
তুমি আর কোথা যাবে

গোপীনাথ এখানে আছে—তুমি আর কোথা যাবে

তোমাকেই ত দিয়েছেন

এই গোপীনাথের সেবা—তোমাকেই ত দিয়েছেন

নিশ্চয় এখানে আছ
একবার দেখা দাও

কোথা আছ প্রভু নিতাই—একবার দেখা দাও
নিতাই-গৌরাঙ্গ-গদাই—একবার দেখা দিও

প্রকাশ্যেতে দেখা দিছ

তিন-কুটীরীতে—প্রকাশ্যেতে দেখা দিছ
শ্রীবিগ্রহ-রূপেতে –প্রকাশ্যেতে দেখা দিছ

সবাই ত দেখছে

শ্রীবিগ্রহ-রূপেতে—সবাই ত দেখছে

একবার সাক্ষাৎ দেখা দাও
কেউ যে কথা কইছ না

গোপনে সবাই বিরাজিছ—কেউ যে কথা কইছ না

তবে কি দেখা দিবে না
আর কার কাছে যাব
আর আমার কেবা আছে

আমার বলতে জগমাঝে—আর আমার কেবা আছে

কার প্রাণ কেঁদে উঠে

আমাদের মুখে মলিন দেখে—কার প্রাণ কেঁদে উঠে

ওগো তুমি কোথায় গো
ওগো আমার ব্যথার ব্যথী

পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—ওগো আমার ব্যথার ব্যথী
নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—ওগো আমার ব্যথার ব্যথী

লুকায়ে করছ খেলা

দেখাবে বলে টেনে এনে—লুকায়ে করছ খেলা

তুমি ত তাদের সঙ্গে আছ

ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—তুমি ত তাদের সঙ্গে আছ

একবার দেখাও গো

এই গোপীনাথের অঙ্গনে—একবার দেখাও গো
গুপত-ভোজন-রঙ্গ—একবার দেখাও গো
নিতাই-গৌরাঙ্গ-গদাই—একবার দেখাও গো

নিতাই-গৌর-গদাই-বিহার দেখে

তোমার কৃপা ইঙ্গিতে—নিতাই-গৌর-গদাই-বিহার দেখে

প্রাণ-ভরে গাই মোরা

ভাই ভাই এক-প্রাণে—প্রাণ-ভরে গাই মোরা

নিতাই-গৌরাঙ্গ-গদাই

অনঙ্গ-কানাই-রাই—নিতাই-গৌরাঙ্গ-গদাই

নিতাই অনঙ্গ গৌর কানাই

গদাধর কিশোরী রাই—নিতাই অনঙ্গ গৌর কানাই

গৌরাঙ্গ গোপীনাথ

নিতাই-গদাই-প্রাণনাথ—গৌরাঙ্গ গোপীনাথ

গোপীনাথের চিতচোরা

নিতাই-রমণ গোরা—গোপীনাথের চিতচোরা

গোপীনাথের হৃদয়ে বিলাসী গোরা

নিতাই-গদাই-চিতচোরা—গোপীনাথের হৃদয়ে বিলাসী গোরা

নিতাই-গদাই-গৌর-মিলন হল

গৌরহরি হরিবোল—নিতাই-গৌর-গদাই-মিলন হল

(মাতন)

গৌরহরিবোল হরিবোল হরিবোল হরিবোল।।

(মাতন)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌরহরিবোল।।



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ