ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম’’।।
শ্রীঅদ্বৈত-প্রেম-ধাম—ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
গদাই-শ্রীবাস-প্রাণারাম—ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম-জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
ভাইরে আমার,–প্রেমাবতার গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
নীলাচলবিহারী গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
পরতত্ত্বসীমা গৌরহরির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
তার,–সেবাবিগ্রহ নিত্যানন্দ-জগৎসেব্য আমার গৌরচন্দ্র
গৌরসেবা মূরতি ধরে—নিত্যানন্দরূপে বিহরে
শ্রীনিত্যানন্দ ব্যাপকরূপে—প্রাণবিশ্বম্ভরের সেবা করে
অনন্ত-সেবক-রূপে—প্রাণবিশ্বম্ভরের সেবা করে
ভাব-অনুকূলরূপ ধরে—প্রাণবিশ্বম্ভরের সেবা করে
গৌর-সেবা বিগ্রহ—জয় জয় নিত্যানন্দ-দেহ
জয় গদাধর-শ্রীজগদানন্দ-প্রাণ।।’
’
ভাইরে যাঁর গৌরচন্দ্র-নাম—শ্রীঅদ্বৈত-শ্রীবাস-প্রিয়ধাম
গদাধর-পণ্ডিতের প্রাণ—শ্রীঅদ্বৈত-শ্রীবাস-প্রিয়ধাম
জয় দামোদর-স্বরূপের প্রাণধন।।
জয় বক্রেশ্বর-পণ্ডিতের প্রিয়কারী।
জয় জয় দ্বারপাল-গোবিন্দরে নাথ।
জীব প্রতি কর’ প্রভু ! শুভ দৃষ্টিপাত।।’’
প্রেমাবতার গৌরহরি—জীবে কর শুভদৃষ্টি
করি’ তোমার প্রেমবৃষ্টি—জীবে কর শুভদৃষ্টি
ও প্রেমাবতার গৌরহরি—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে
ওহে প্রাণ বিশ্বম্ভর—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে
অনন্ত-জগৎ-পানে—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে
এই ত্রিতাপদগ্ধ-জগৎ-পানে—একবার,–চাও হে কৃপা-নয়ন-কোণে
দেহমতে নিত্যানন্দ নবদ্বীপপুরে।
বিহরেন প্রেমভক্তি-আনন্দ-সাগরে।।
নিরবধি ভক্ত-সঙ্গে করেন কীর্ত্তন।
কৃষ্ণ-নৃত্য-গীত হইল সবার ভজন।।’’
নিতাই ইঙ্গিত কর্ছেন
পানিহাটী গ্রামে নিজগণে—নিতাই ইঙ্গিত করছেন
তোমাদের কীর্ত্তন শুনিতে—গৌর আইলা নীলাচল হতে
কোন কৃষ্ণ জানাইছেন
নিরন্তর কৃষ্ণ-কীর্ত্তন কর বলে—কোন্ কৃষ্ণ জানাইছেন
নিরন্তর মাতো সবে
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বলে—নিরন্তর মাতো সবে
নিরন্তর কর গান
চৈতন্যকৃষ্ণের নাম—নিরন্তর কর গান
তারই ত উদ্গার হয়
প্রাণে প্রাণে যা ভোগ হয়—তারই ত উদ্গার হয়
শ্রীনিত্যানন্দ-হৃদে—গৌরহরি করেন বিহার
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বিনা—কেমনে আন বলবে তার রসনা
একবার গৌরহরিবোল—নিতাই যারে দেখে তারে বলে
গোপ-শিশুগণ-সঙ্গে প্রতি ঘরে ঘরে।
যেন ক্রীড়া করিলেন গোকুল-নগরে।।
সেই-মত গোকুলের আনন্দ প্রকাশি’।
কীর্ত্তন করেন নিত্যানন্দ সুবিলাসী।।’’
হৃদে ধরি’ গৌরাঙ্গ-বিলাসী—বিহরে নিত্যানন্দ সুবিলাস
গৌরচন্দ্র দেখিতে হইল ইচ্ছা তান্।।’’
প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্তে’—যদিও,–নিতাইচাঁদে আছে মানা
‘প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্তে’—নিতাইচাঁদে আছে মানা
‘প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্তে’—
গৌড়ের প্রচার-কার্য্য ছেড়ে—প্রতিবৎসর নীলাচলে আস্তে
‘গৌড়ের প্রচার-কার্য্য ছেড়ে’—
প্রাণের প্রাণ গৌরহরির—গৌড়ের প্রচার-কার্য্য ছেড়ে
নিতাই মানা মানে না
স্বাভাবিক প্রেমের স্বভাবে—নিতাই মানা মানে না
গৌর না দেখিলে রহিতে পারে না—তাই নিতাই মানা মানে না
‘‘আই-স্থানে করিলেন সন্তোষে বিদায়।’’
তোর পদধূলি শিরে দিয়া—দে মা আমার বিদায় দে
দেখতে তোর প্রাণ-দুলালে—আমি,–যাব মধুর—নীলাচলে
ধনী হয়ে তোর পদধূলে—আমি,–যাব মধুর—নীলাচলে
বুকে যে উৎকণ্ঠা বাড়ায়—গৌরহরির মানা নয়
গৌর যার হৃদে আছে—সে এক-পা চলিতে নারে
গৌর-ইচ্ছা না হইলে—সে এক-পা চলিতে নারে
প্রাণধরে সদাই টানে—তাইতে প্রভু মানা করে
‘‘নীলাচলে চলিলেন চৈতন্য-ইচ্ছায়।।’’
মুখে গৌর-গৌর নয়নে জল—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
প্রাণগৌর দেখ্ব বলে—নীলাচলে যায় হেলে দুলে
ওগো—আমার প্রভু নিত্যানন্দ—আপনি যেমন সঙ্গী তেমন
প্রতি নিতাই-কিঙ্করে—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে
প্রাণ-নিতাই হৃদে ধরে—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে
বিনা নাম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—নিতাই-মুখে নাহি অন্য
কায়-মন-বাক্যে গৌর বিনা—নিতাই আমার আন জানে না
প্রাণারাম গৌরাঙ্গ-নাম বিনা—নিতাই আমার আন জানে না
গৌরাঙ্গ-বিলাসী নিতাই—স্বপনেও না জানে অন্য
গৌর-প্রেমের পাগল নিত্যানন্দ—স্বপনেও না জানে অন্য
বিনা প্রাণ-শ্রীচৈতন্য-স্বপনেও না জানে অন্য
হুঙ্কার, গর্জ্জন, নৃত্য, আনন্দ-ক্রন্দন।’’
আমার,–নিতাইচাঁদের অলঙ্কার—শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের বিকার
নিরবধি করে সব পারিষদ-গণ।।’’
পেয়ে গৌর-প্রেমবল—আপনি পাগল সব সঙ্গী পাগল
গৌর-গৌর বলে কেবল—আপনি পাগল সব সঙ্গী পাগল(মাতন)
আইলেন নীলাচলে কথোক-দিবসে।।
কমল-পুরেতে আসি’ প্রাসাদ দেখিয়া
পড়িলেন নিত্যানন্দ মূর্চ্ছিত হইয়া।।’’
দূর হতে দেখি’ শ্রীমন্দিরের ধ্বজা—নিতাইচাঁদের দু’নয়নে ধারা
মনে গণে নিতাই আমার—গৌর দেখ্তে পাব আবার
ঐ যে মন্দির দেখা যায়—গৌর দেখ্তে পাব আবার
বলি’,–হা প্রাণ-শচীসূত-হইলা নিতাই মূরছিত
ঐ ত মন্দির দেখা যায়—গৌর তুমি আছ কোথায়
‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ বলি’ করেন হুঙ্কার।।
আসিয়া রহিলা এক পুষ্পের উদ্যানে।’’
লীলার প্রথম হতে দেখা যায়—লুকিয়ে থাকা স্বভাব তার
গৌর-সঙ্গে প্রথম-মিলনে—নদীয়ায় আসি’ ছিলেন গোপনে
নন্দন-আচার্য্যের ভবনে—নদীয়ায় আসি’ ছিলেন গোপনে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের ইচ্ছাক্রমে—নদীয়ায় আসি’ ছিলেন গোপনে
নিজ-সেব্য নিতাই-ধনে—গৌর রাখিতে চান গোপনে
‘‘কে বুঝে তাঁহার ইচ্ছা শ্রীচৈতন্য বিনে।’’
পরস্পর তারা বিনে—তাদের রহস্য কেবা জানে
নিতাই চৈতন্য অভিন্ন—দোঁহে জানে দোঁহার মর্ম্ম
বিহার লাগি হয় ভিন্ন—নিতাই চৈতন্য অভিন্ন
প্রীতি টানতে লাগল নিজ-স্থানে—কি হবে থাকলে গোপনে
টান পড়্ল প্রাণে প্রাণে—গৌরহরি জান্লেন তাহা
নিতাই আসিয়াছে নীলাচল-ধামে—গৌরহরি জান্লেন তাহা
গৌরহরি মনে গণে—নিতাই আসিয়া রয়েছে গোপনে
আমি খোঁজ লব এই তার মনে—নিতাই আসিয়া রয়েছে গোপনে
মিলিতে তার অতিগূঢ়-নিত্যানন্দ—একেশ্বর আইলা গৌরচন্দ্র
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
এঁদের গোপনে মিলন স্মঙরিয়ে—অনুভব কর ভাই রে
নিতাই গৌরাঙ্গ-ধন—তারা কারা বটে দুইজন
এঁদের কেন হয় গুপতে মিলন—তারা কারা বটে দুইজন
যখনি এঁরা মিলে দুইজনে—দ্বিতীয় না থাকে সেইখানে
কি রহস্য কেবা জানে—দ্বিতীয় না থাকে সেইখানে
সে মিলন কেউ পায় না দেখা—দুজনে মিলে একা একা
নিতাই-সনে করতে দেখা—গৌর আমার আইলেন একা
সেই-স্থানে বিজয় হইলা গৌরচন্দ্র।।’’
টেনে আন্ল নিতাই সোণা—ও ত গৌর এল না
প্রাণ ধরে আকর্ষণ—নিতাইয়ের নাম বুঝি তাই সঙ্কর্ষণ
প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল বহুতর।।’’
ভোগ করিতে এসেছে
অশেষ-বিশেষ আপনাকে—ভোগ করিতে এসেছে
নিত্যানন্দ-পরিক্রমা করি’—ভোগ করে প্রাণ গৌরহরি
নিজ-পরিক্রমার কি মাধুরী—ভোগ করে প্রাণ গৌরহরি
হৃদে ধরি’ প্রাণ-বিশ্বম্ভর—নিত্যানন্দ ধ্যান-পর
তাই তারে পরিক্রমা করে
নিজ-পরিক্রমার মাধুরী ভোগের তরে—তাই তারে পরিক্রমা করে
আপনি আপনায় করতে পরিক্রমা—এ-সুযোগ কখনও পাবে না
নিতাই-চাঁদের বুকে আছে গৌর সোণা—আজ,–আপনি করে
ভোগের স্বরূপ গৌর বটে
আজ,–আপনি করে আপনার পরিক্রমা—ভোগের স্বরূপ গৌর বটে
অশেষ-বিশেষে নিজ-মাধুরী–ভোগের স্বরূপ গৌর বটে
নিত্যানন্দ ঘিরি ঘিরি—আজ দেখে নিজ-মাধুরী
‘‘শ্লোক বন্দে নিত্যানন্দ-মহিমা বর্ণিয়া।’
কেমন সুখ হয় সেবকের গুণ-গানে—সেব্য বিনে কেবা জানে
স্তুতি-ছলে নিতাই-ধনে—আজ জানাইছেন জগজনে
বড় আনন্দ গৌরাঙ্গ মনে—আজ জানাইছেন জগজনে
শ্রীমুখের শ্লোক শুন নিত্যানন্দ-স্তুতি।
যে শ্লোক পড়িলে হয় নিত্যানন্দে রতি।।’’
নিতাইচাঁদের মহিমা—শ্রীমুখে বলেন গৌরহরি
তথাপি ‘ব্রহ্মার বন্দ্য’ বলে গৌরচন্দ্র।।’’
ব্রহ্মা তারে বন্দনা করে—যদি,–মদিরা-যবনী নিতাই ধরে
যদিও,–যবনী-মদিরার হয় সঙ্গ—নিতাই তথাপি ব্রহ্মার বন্দ্য
শ্রীমুখে বলেন গোরারায়—নিত্যানন্দ-শক্তি নষ্ট না হয়
যবন-মদিরা পরশ হলে—নিতাই-শক্তির হানি নাই কোন-কালে
একদিকে নিতাই-স্বরূপ ধর্ম্ম
আর একদিকে ভবিষ্যৎ কথন—একদিকে নিতাই-স্বরূপ বর্ণন
একদিকে নিতাই-তত্ত্ব বলছেন—আর দিকে,–ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত করছেন
কালে কালে এই প্রচারে—যদি নিতাইএ আবরণ পড়ে
নিতাই-স্বরূপে আবরণ বলে—শক্তি হানি নাহি হবে
প্রভু এই শ্লোক-দ্বারে—সাবধান করাইছেন
নিতাই—বন্দনা-ছলে জগজনে—সাবধান করাইছেন
মনে যদি এত-আবরণ পড়ে
নিত্যানন্দ-স্বরূপেতে—যদি এত-আবরণ পড়ে
সহজে ধরা নাহি দিব—নিতাই আবরণেই থাকবে
নিজ থাকি আবরণে—প্রচারিত প্রাণ-গৌরধনে
নিত্যানন্দ-প্রদক্ষিণ করে গৌরহরি।।’’
এ-সুযোগ আর ছাড়ব না
এমন দিন আর হবে না—এ-সুযোগ আর ছাড়ব না
প্রাণগৌর পরিক্রমা করে তারে—নিতাই জানিলেন অন্তরে
প্রাণে প্রাণে জানলেন নিতাই—এসেছে আমার প্রাণের ঠাকুর
কি আনন্দ হৈল, তাহা না যায় বর্ণন।।’’
কি আনন্দ হইল নিতাইএর মনে
আনন্দ-ঘন গৌর দশনে—কি আনন্দ হইল নিতাইএর মনে
আনন্দই ভাল জানে—আনে জান্বে কেমনে
ভোগী জানে আর ভোগ জানে—আনে জান্বে কেমনে
যে নিত্যানন্দ হৃদে ধরে—সেই ত’ জানিতে পারে
নিতাই বল্ছেন এই হরি হয়—ও ত হরি বলা নয়
এই চিতচোর গৌরহরি—অবশ্য করিবে চুরি
ধরা পড়েছে চিতচোর নয়নানন্দ—তাইতে নিতাইএর প্রেমানন্দ
নীলাচল-ভূমির সৌভাগ্য বাঢ়ায়—ও তো আছাড় পড়া নয়
ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমির—আনন্দ আর ধরে না
গৌর-প্রেমের মূরতি হৃদে ধরে—আনন্দ আর ধরে না
দুঁহে দণ্ডবৎ হই পড়েন দু হারে।।’’
দোঁহে দণ্ডবৎ করে—দুই-জনেই প্রদক্ষিণ করে
যে হৃদে ধরে সেই ত জান—কে কার উপাস্য কেবা জানে
পরস্পর হৃদে ধরে—দুই-জনেই মহামত্ত
নিতাই-হৃদে গৌরাঙ্গ—গৌরাঙ্গ-হৃদে নিতাই
দুজনাই মহামত্ত—পরস্পর হৃদে ধরে
ভোগী ভোগ পরস্পর—দোঁহে দোঁহায় ভোগ করে
মহাভাব প্রেম রসের মিলন—এত নয় আলিঙ্গন
পরস্পর গলা ধরে—দোঁহে ভাসে নয়ন-জলে
তুব মিলনে মহাসুখ পায়—যদিও অভিন্ন তনু হয়
আস্বাদিতে বিরহ-মাধুরী—তার লাগি হয় ছাড়াছাড়ি
দোঁহে গড়াগড়ি যায়—আজ,–নীলাচলের সৌভাগ্য বাঢ়ায়
হৃদয়ে ধরেছ তুমি—ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমি
ধরে,–নিতাই-গৌর-জড়িত মূরতি-খানি—ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমি
ও,–ভাগ্যবতী নীলাচল-ভূমি—তোমায় যাই বলিহারি
বুকে ধরেছ নিতাই-গৌর-জড়াজড়ি—তোমায় যাই বলিহারি
মহাভাব-রসবাজ—তোমার বুকে বিহরে আজ
কি অদ্ভুত প্রীতি সে করেন দুই-জনে।
পূর্ব্বে যেন শুনিঞাছি শ্রীরাম-লক্ষণে।।’’
নব-নব-মিলন কেবল—কেবল আস্বাদনের লাগি’ রে
নিজ-নিজ-মহিমা—জগতে জানাবার তরে
অশ্রু, কম্প, হাস্য, মূর্চ্ছা, পুলক, বৈবর্ণ্য।
কৃষ্ণভক্তি-বিকারের যত আছে মর্ম্ম।।
ইহা বই দুই-শ্রীবিগ্রহে আর নাঞি।’’
গৌরের যত নিতাইএর তত—দোঁহার শ্রীঅঙ্গ ভাব-ভূষণে বিভূষিত
কি অদ্ভুত প্রেমভক্তি হইল প্রকাশ।
নয়ন ভরিয়া দেখে যে একান্তদাস।।
তবে কথোক্ষণে প্রভু জোড়হস্ত করি’।
নিত্যনন্দ-প্রতি স্তুতি করে গৌরহরি।।
মুখে নিতাই-গুণ-গাথা—না জানি সে কত সুধা
নিত্যানন্দ-স্তুতি-ছলে—জগতে জানায় রে
তাঁর অতিগূঢ় নিত্যানন্দ—জগতে জানায় রে
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—প্রাণে প্রাণে ধর ভাই
অপরূপ-রহস্য-কথা—প্রাণে প্রাণে ধর ভাই
চেয়ে নিতাইচাঁদের পানে—গৌর বলেন শ্রীবদনে
ইঙ্গিতেতে গৌরহরি—আপন কথা বল্ছেন
তোমার রূপ আমার রূপ মানি—আমার নামের রূপ মানি
যত কিছু তোমার শ্রীঅঙ্গে অলঙ্কার।
সত্য সত্য সত্য ভক্তিযোগ-অবতার।।’’
তোমার পরশে নিজেরে করিতে ধন্য—ভক্তিযোগ অবতীর্ণ
নববিধা-ভক্তি ধরি আছ নিজসুখে।’’
ভক্তি বলতে যার নাম—তোমার শ্রীঅঙ্গে মূর্ত্তিমান্
অলঙ্কার-রূপ ধরে—তোমার অঙ্গে সেবা করে
তোমার শ্রীঅঙ্গে অলঙ্কার—ভক্তিযোগ অবতার
তোমা হৈতে সভার হইল বিমোচন।।’’
উদ্ধারিতে পতিত-সবার—নিতাই তোমার অবতার
ওহে নিতাই গুণমণি—পতিতের বন্ধু তুমি
ওহে নিতাই তুমি বিনে—এমন কার প্রাণ কাঁদে
পতিত-দূর্গতি দেখে—এমন কার প্রাণ কাঁদে
আমার প্রতিজ্ঞা—তোমা হতে রক্ষা হল
তাহা বাঞ্ছে সুর-সিদ্ধ-মুনি-যোগেশ্বরে।।
‘স্বতন্ত্র’ করিয়া বেদে যে কৃষ্ণেরে কহে।
‘হেন কৃষ্ণ পার’ তুমি করিতে বিক্রয়ে।।’’
কৃষ্ণ পরতত্ত্ব-সীমা—তোমার হাতে বেচা কেনা
ব্রজের সেই কালসোণা—তোমার হাতে বেচা কেনা
মূর্ত্তিমন্ত তুমি কৃষ্ণরস-অবতার।।’’
অতিগূঢ় নিতাই-ধনে—জানাইলেন নিজগুণে
যদি গৌর না জানায় নিজগুণে—কেমনে বা জান্বে আনে
গৌরহরি নিজ-নিতাই-ধনে—আজ,–জানাইছেন নিজ-জনে
নিত্যানন্দ-স্তুতি-ছলে—আজ,–জানাইছেন নিজ-জনে
কৃষ্ণরস মূর্ত্তিমন্ত—তুমি বট নিত্যানন্দ
কৃষ্ণরস যারে বলে—বিহরিছে মূরতি ধরে
ওহে নিতাই তোমারূপে—বিহরিছে মূরতি ধরে
এ-যে অতি গোপনকারী লীলা—আবরণ দিয়ে বল্ছেন
আপন স্বরূপের রহস্য কথা—আবরণ দিয়ে বল্ছেন
ওহে ও নিতাই আমার—তুমি আমার রসের অবতার
ওহে ও নিত্যানন্দ—তুমি আমার রস মূর্ত্তিমন্ত
অহর্নিশ কৃষ্ণগুণ তোমার শ্রীমুখে।।
কৃষ্ণচন্দ্র তোমার হৃদয়ে নিরন্তর।
তোমার বিগ্রহ কৃষ্ণ-বিলাসের ঘর।।
আপনার মহিমা—আপনি ত বল্বে না
আমার ক্রীড়ার বসতি-ভূমি—ইঙ্গিতেতে বল্ছেন প্রভু
নিতাই তোমার স্বরূপখানি—আমার ক্রীড়ার বসতি-ভূমি
ভাগ্যবান কলিজীবে—আজ,–জানাইছেন নিজগুণে
নিতাই-মহিমা বর্ণন-ছলে—আজ,–জানাইছেন নিজগুণে
আমার গূঢ়-বিলাসের ঘর—প্রাণ-নিত্যানন্দ-কলেবর
সত্যসত্য প্রভুকৃষ্ণ না ছাড়েন তাঁরে।।’’
সেইত প্রীতি করে আমারে
নিতাই তোমারে যে প্রীতি করে—সেইত প্রীতি করে আমারে
তোমারে যে প্রীতি করে—আমি বাঁধা তারি প্রেম-ডোরে
তোমারে যে প্রীতি করেছে—আমার হাতে সে পড়েছে
বলিতে লাগিলা অতি করিয়া বিনয়।।
প্রভু হই তুমি যে আমারে কর স্তুতি
এ তোমার বাৎসল্য ভক্তের প্রতি অতি।।
প্রদক্ষিণ কর, কিবা কর নমস্কার।
কিবা মার, কিবা রাখ, যে ইচ্ছা তোমার।।
রাখ যে ইচ্ছা তোমার—আমি যে একান্ত তোমার
তুমি কেবল তোমার সুখ চাই—যাতে সুখ পাবে কর তাই
কিবা নাহি দেখ তুমি দিব্য-দরশনে।।
মন প্রাণ সভার ঈশ্বর প্রবু ! তুমি।
তুমি যে করাও সেইরূপ করি আমি।।’’
যেমন নাচাও তেমনি নাচি
তোমার কৌতুকে হয়ে রাজি—যেমন নাচাও তেমনি নাচি
কেবল তোমার প্রীতির লাগি’—যেমন নাচাও তেমনি নাচি
যখন নাচাও যেমনরূপে—নাচি তোমার কৌতুকে
আপনেই ঘুচাইয়া এরূপ করিলা।।
তাড়, খাড়ু, বেত্র, বংশী, শিঙ্গা, ছান্দডোরি।
ইহা সে ধরিয়ে আমি মনি—ধর্ম্ম ছাড়ি।।
আচার্য্যাদি তোমার যতেক প্রিয়গণ।
সভারেই দিলা তপ—ভক্তি আচরণ।।
মুনি-ধর্ম্ম ছাড়াইয়া কি কৈলে আমারে।।
ব্যবহারি-জন দেখি সভে হাস্য করে।।’’
ওহে প্রাণের দেবতা—শুন হে মরম-কালা
সবাই আমার পাগল বলে—আমায় এ-কি কর্লে
অলঙ্কার পরি বলে—আমায় পাগল বলে নিন্দা করে
আমি কেন পরি অলঙ্কার—কেবা জানে মরম তার
প্রাণ-গৌর তোমা বিনে আর—কেবা জানে মরম তার
শুন হে মরমী—তুমি,–সকলি জান তবু বলি
তোমারই অলঙ্কার পরি–সাধে কি অলঙ্কার পরি
নিরন্তর অশেষ-বিশেষে—সেবা করাই স্বভাব আমার
ন্যাসিবেশ ধরে এবার—তুমি কর না সেবা অঙ্গীকার
তুমি ভূষণ পর না—ভাল ত’ লাগে না
সেবা ছাড়া রইতে নারি
তাই মনে মনে ভাবি—সেবা ছাড়া রইতে নারি
এ ত’ তোমারীই হয়—এ-দেহ ত আমার নয়
এ দেহ সাজাই যদি—কেউ তো মানা কর্বে না
আমার এ-দেহ সাজায়ে—তাই আমি সাজাই তোমারে
তোমার যত অলঙ্কার—তাই আমি সাজাই তোমারে
গৌরাঙ্গ-সাজাই মনে করে—নিতাই আমার অলঙ্কার পরে
তোমার নর্ত্তক আমি নাচাও যেরূপে।
সেইরূপে নাচি আমি তোমার কৌতুকে।।
কি নিগ্রহ অনুগ্রহ তুমি সে প্রমাণ।
বৃক্ষদ্বারে কর প্রভু তোমারই সে নাম।।
প্রভু বোলে ‘তোমার যে দেহে অলঙ্কার।’
নববিধা-ভক্তি বই কিছু নহে আর।।’’
তোমর অঙ্গের অলঙ্কার—নববিধা-ভক্তির আধার
এই যে তোমার সর্ব্বকাল অলঙ্কার।।
নাগ-বিভূষণ যেমন ধরেন শঙ্করে।
তাহা নাহি সর্ব্বজনে বুঝিবারে পারে।।
পরমার্থে মহাদেব—অনন্ত-জীবন।
নাগ-ছলে অনন্ত ধরেন সর্ব্বক্ষণ।।’’
অনন্তদেব ছাড়া রইতে নারি—নাগ-ছলে দেহে ধরে
যতেক নিন্দয়ে তার হয় কার্য্য-বাধ।।
মূঞি ত তোমার অঙ্গে ভক্তিরস বিনে।
অন্য নাহি দেখো কাঁহো কায়-বাক্য-মনে।।
নন্দগোষ্ঠে বসি তুমি বৃন্দাবন-সুখে।
ধরিয়াছ অলঙ্কার আপন কৌতুকে।
ইহা দেখি যে-সুকৃতি চিত্তে পায় সুখ।
সে অবশ্য দেখিবেক কৃষ্ণের শ্রীমুখ।।’’
সে দিখেবে আমার মুখ
যে তোমারে পায় সুখ–সে দেখিবে আমার মুখ
সর্ব্বকাল এই রূপ তোমার শ্রীঅঙ্গ।।
যতেক বালক দেখি তোমার সংহতি।
শ্রীদাম-সুদাম-প্রায় লয় মোর মতি।।
বৃন্দাবন ক্রীড়ার যতেক শিশুগণ।
সকল তোমার সঙ্গে—লয় মোর মন।।’’
তোমার অঙ্গ যত মূর্ত্তি ধরে—তোমার সঙ্গে বিহরে
সর্ব্বদেহে দেখি সেই নন্দগোষ্ঠ-ভক্তি।।
এতেকে যে তোমারে, তোমার সেবকরে।
প্রীতি করে, সত্যসত্য সে করে আমারে।।’’
তোমারে যে ভালবাসে—আমি বাঁধা তা’রি প্রেম-পাশে
তোমার দাসে যে ভালবাসে—আমি বাঁধ তারি প্রেম-পাশে(মাতন)
কিরূপে কহেন কথা কে জানয়ে অন্ত।।
কথোক্ষণে দুই-প্রভু বাহ্য প্রকাশিয়া।
বসিলেন নিভৃতে পুষ্পের বনে গিয়া।।
ঈশ্বরে পরমেশ্বরে হইল কি কথা।
বেদে সে ইহার তত্ত্ব জানেন সর্ব্বথা।।
নিত্যানন্দে চৈতন্যে যখনে দেখা হয়।
প্রায় আর কেহ নাহি থাকে সে সময়।।
কি করেন আনন্দবিগ্রহ দুইজনে।
চৈতন্য-ইচ্ছায় কেহো না থাকে তখনে।।’’
অতিগূঢ় দুইজনে—মিলে সদা নিরজনে
কি সম্বন্ধ নিতাই গৌরাঙ্গ ধরে—প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাইরে
আর কেউ থাকে না সেখানে—মিলন হলে কোন দুইজনে
ভোগ্য ভোক্তা মিল্লে পরে—কেউ সেখানে রইতে নারে
একান্তে সে আসিয়া দেখেন ন্যাসিমণি।।
আপনারে যেন প্রভু না করেন ব্যক্ত।
এইমত লুকায়েন নিত্যানন্দ-তত্ত্ব।।
সুকোমল দুর্ব্বিজ্ঞেয় ঈশ্বর-হৃদয়।
বেদে শাস্ত্রে ব্রহ্মা শিব সব এই কয়।।
না জানি না বুঝি মাত্র সবে গায় গাথা।
লক্ষ্মীরো এই সে বাক্য, অন্যের কি কথা।।
এই মতভাবরঙ্গে চৈতন্য-গোসাঞি।।
এক কথা না কহেন একজন-ঠাঞি।।
হেন সে তাঁহার রঙ্গ,–সভেই মানেন।
‘আমার অধিক প্রীত কারো না বাসেন।।
আমারে সে কহেন সকল গোপ্য-কথা।
মুনিধর্ম্ম করি কৃষ্ণ ভজিব সর্ব্বথা।।
বেত্র, বংশী, বর্হা, গুঞ্জামালা, ছাঁদডোরি।
ইহা ধরিলেন কেনে মুনিধর্ম্ম ছাড়ি।।
কেহো বোলে, মুনিধর্ম্ম যতেক প্রকার।
বৃন্দাবনে গোপক্রীড়া—অধিক সভার।।
গোপ-গোপী-ভক্তি—সর্ব্ব-তপস্যার ফল।
যাহা বাঞ্ছে ব্রহ্মা-আদি ঈশ্বর-সকল।
অতি কৃপাপাত্র সে গোকুল-ভক্তি পায়।
যে ভক্তি বন্দেন প্রভু শ্রীউদ্ধবরায়।।
এইমত যে বৈষ্ণব করেন বিচার।
সর্ব্বত্রেই গৌরচন্দ্র করেন স্বীকার।।
অন্যেহন্যে বাজায়েন আনন্দ ইচ্ছায়।
হেন রঙ্গী মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গরায়।।
কৃষ্ণের কৃপায় সভে আনন্দে বিহ্বল।
কখনো কখনো বাজে আনন্দ-কন্দল।।
ইহাতে যে এক ঈশ্বরের পক্ষ হৈয়া।
আর ঈশ্বরেরে নিন্দে সে-ই অভাগিয়া।।
ঈশ্বরের অভিন্ন—সকল ভক্তগণ।
দেহের যেহেন বাহু আঙ্গুলি চরণ।।
তথাপিহ সর্ব্ব-বৈষ্ণবের এই কথা।
সভার ঈশ্বর-কৃষ্ণচৈতন্য সর্ব্বথা।।
নিয়ন্তা পালক স্রষ্টা অবিজ্ঞাততত্ত্ব।
সভে মেলি এইমাত্র গায়েন মহত্ত্ব।।
আবির্ভাব হৈতেছেন যে সব শরীরে।
তাঁ’ সভার অনুগ্রহে ভক্তি-ফল ধরে।।
সর্ব্বজ্ঞতা সর্ব্বশক্তি দিয়াও আপনে।
অপরাধে শান্তিও করেন ভাল-মনে।।
ইতিমধ্যে সকলে বিশেষ দুই প্রতি।
নিত্যানন্দ-অদ্বৈতেরে না ছাড়েন স্তুতি।।
কোটি অলৌকিক যদি এ’দুই করেন।
তথাপিহ গৌরচন্দ্র কিছু না বলেন।।
এইমত কথোক্ষণ পরানন্দ করি।
অবধূতচন্দ্র-সঙ্গে গৌরাঙ্গ শ্রীহরি।।
তবে নিত্যানন্দ-স্থানে করিয়া বিদায়।
বাসায় আইলা প্রভু শ্রীগৌরাঙ্গরায়।।
নিত্যানন্দস্বরূপো পরম-হর্ষ-মনে।
আনন্দে চলিলা জগন্নাথ-দরশনে।।’’
পিছে দেখে জগন্নাথ—আগে গৌর প্রাণনাথ
ইহার শ্রবণে সর্ব্ব-বন্ধ-বিমোচন।।
জগন্নাথ দেখি মাত্র নিত্যানন্দরায়।।
আনন্দে বিহ্বল হই গড়াগড়ি যায়।।
আছাড় পড়েন প্রভু প্রস্তর-উপরে।
শতজনে ধরিলেও ধরিতে না পারে।।’’
বিশ্বোদরে যেজন ধরে—তারে কে ধরিতে পারে
সভা’ দেখি নিত্যানন্দ করেন ক্রন্দন।।
সভার গলার মালা ব্রাহ্মণে আনিঞা।
পুনঃপুনঃ দেন সভে প্রভাব জানিঞা।।
নিত্যানন্দ দেখি যত জগন্নাথদাস।
সভার জন্মিল অতি-পরম-উল্লাস।।
যে জন না চিনে, সে জিজ্ঞাসে কারো ঠাঁই।
সভে কহে এই কৃষ্ণচৈতন্যের ভাই।।’’
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের ভাই—এই অবধূত গোসাঞি
ইহার যে নাম নিতাই—এই অবধূত গোসাঞি
এত প্রেম-বিকার কারে মিলে—শ্রীচৈতন্য ভাই না হলে
আপনার পরিচয় শুনে—আনন্দ আর ধরে না
সিঞ্চিলা সভার অঙ্গ প্রেমানন্দ-জলে।।
তবে জগন্নাথ হেরি হর্ষ সর্ব্ব-গণে।
আনন্দে চলিলা গদাধর-দরশনে।।
গদাধরের দরশনে—আইলা নিতাই এইখানে
ইহা কহিবারে শক্তি ঈশ্বরে সে ধরে।।’’
যে প্রীতি নিতাই গদাই দুইজনে—প্রাণের প্রাণ গৌর জানে
গৌর বিনে আনে নাহি জানে—প্রাণের প্রাণ গৌর জানে
নিতাই-গদাধরে গাঢ় প্রীতি—না হবে না কেন রে
গদাধর রাই-কিশোরী—নিতাই অনঙ্গ-মঞ্জরী
আছেন, যেহেন নন্দকুমার সাক্ষাত।।’’
বিগ্রহরূপ ধরি’—হয় নন্দকুমার সাক্ষাৎ
গদাধর-ভবনে গোপীনাথ—হয় নন্দকুমার সাক্ষাৎ
যদি সাক্ষাৎ নন্দকুমার না হবে—কেন কোলে কর্বে তবে
আমার গৌরাঙ্গ-কিশোরী—কেন কোলে কর্বে তবে
এ মোহন-গোপীনাথে—কেন কোলে কর্বে তবে
শ্রীনন্দনন্দন বিনে—গৌর-রাধার মন মজ্বে কেনে
রাধাভাবে হয়ে বিহ্বলে—আমার প্রাণনাথ বলে
অতিপাষণ্ডীও সে বিগ্রহ দেখি’ ভুলে।।
দেখি শ্রীমুরলীমুখ অঙ্গের ভঙ্গিমা।
নিত্যানন্দ-আনন্দ-অশ্রুর নাহি সীমা।।’’
গোপীনাথের বদন হেরে—নিতাইচাঁদের নয়ন ঝুরে
আনন্দ-অশ্রু উথলি পড়ে—নিতাইচাঁদের নয়ন ঝুরে
ভাগবত-পাঠ ছাড়ি আইলা সত্বর।।’’
শ্রীভাগবত-পঠনে—গদাধর ছিলেন গোপনে
প্রাণে প্রাণে জানি নিতাই-আগমন—পণ্ডিত-গোসাঞি আইলা সেইক্ষণে
গলা ধরি লাগিলেন করিতে ক্রন্দন ।।
এই গোপীনাথের আগে—দোঁহে ভাসে নয়ন-নীরে
নিতাই গদাই গলা ধরে—দোঁহে ভাসে নয়ন-নীরে
গদাধর নিত্যানন্দ—মিলন-রঙ্গ দেখে মনে হয়
সহোদরা দুইজনে—যেন মিলেছে বহুদিন-পরে
শ্রীরাধা অনঙ্গ মিলন—শ্রীগুরু-প্রেরণায় এই বলে মন
অনঙ্গ-মঞ্জরী আইলা জানি—আইলা গদা-রাধা ত্বরা-করি
‘অনঙ্গ-মঞ্জরী আইলা জানি’—
প্রাণের কনিষ্ঠা ভগিনী—অনঙ্গ-মঞ্জরী আইলা জানি
দোঁহে দোহায় নিল কোলে
ভাসিয়া নয়ন-জলে—দোঁহে দোহায় নিল কোলে
কেবল লোকশিক্ষার লাগি—এ বাহিরের ব্যবহার
নিতাই-গদাই-রহস্য জগৎ–নৈলে কেমন করে জানিত
মহিমা বর্ণন-ছলে দোঁহে না বলিত—নৈলে কেমন করে জানিত
কেহো বোলে, আজি হইল জনম সফল।।
বাহ্যজ্ঞন নাহি দুই-প্রভুর শরীরে।
দুই-প্রভু ভাসে ভক্তি-আনন্দ-সাগরে।।’’
নিতাই গদাই মিলনে—আনন্দের পাথার বয়ে যার
দেখি চতুর্দ্দিগে পড়ি কান্দে সর্ব্বদাস।।’’
নিতাই-গদাই-প্রীতি হেরে—সবাই ভাসে নয়ন-নীরে
দেখি গদাই-নিতাই-মিলনে—গৌরগণের আনন্দ মন
একের অপ্রিয় আরে সম্ভাষা না করে।।
গদাধরদেবের সংকল্প এইরূপ।
নিত্যানন্দ-নিন্দকের না দেখেন মুখ।।’’
যে জন নিত্যানন্দ-বিমুখ—গদাধর দেখেন না তার মুখ
দেখাও না দেন তারে পণ্ডিত-গোসাঞি।।’’
নিতাইএ যার প্রীতি নাই—তারে দেখা না দেন পণ্ডিতগোসাঞি
নিতাইচাঁদে যে প্রীতি না করে—পণ্ডিত-গোসাঞি দেখা দেন না তারে
নিতাই-অনঙ্গে প্রীতি না হলে—কারেও কি গদাই-রাধা মিলে
রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই
নিতাই-কৃপা বিনে ভাই—রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই
বসিলেন চৈতন্যমঙ্গল-সংকীর্ত্তনে।।’’
নিতাই গদাই গলা ধরে—গৌর-গুণ কীর্ত্তন করে
পণ্ডিত-গোসাঞি প্রাণেশ্বরে—পারেন না ত বলিতে
গৌর-গুণ গৌর-সম্মুখে—পারেন না ত বলিতে
প্রভু ব্যাথা পান পাছে—পারেন না ত বলিতে
নিতাইচাঁদে পেয়ে একঠাঁই—আজ সে সুযোগ পেয়েছে গদাই
নিরজনে বসে এই টোটায়—প্রাণভরে গৌর-গুণ গায়
দুইজনে নিতাই-গদাই—প্রাণভরে গৌর-গুণ গায়
এই কালে এই উদ্যানে—মেতে গৌর-গুণ-গানে
নিতাই-গদাই-মুখে গৌরকথা—না জানি সে কি অমিয়া
গো গো গো করে—গৌরাঙ্গ বলিতে নারি
নিমন্ত্রণ করিলেন, আজি ভিক্ষা ইথি।।’’
নিতাইকে নিমন্ত্রণ করে—প্রাণে প্রাণে ডাকে রে
গদাধর প্রাণ-গৌরাঙ্গে—প্রাণে প্রাণে ডাকে রে
তোমার নিতাই এসেছে—একবার আসবে কি
‘তোমার নিতাই এসেছে’—
তারে নিমন্ত্রণ করেছি—তোমার নিতাই এসেছে
‘তারে নিমন্ত্রণ করেছি’—
গোপীনাথের প্রসাদ পেতে—তারে নিমন্ত্রণ করেছি
নিতাই ত খাবে না
তোমার অধরামৃত বিনা—নিতাই ত খাবে না
গৌর তোমার সঙ্গ বিনে—নিতাই কর্বে না ভোজনে
গোপীনাথের প্রসাদ পেতে—একবার এস নিতাই-প্রীতে
বহুলোক সংঘট্ট হয় পাছে—ডাক্তে ভয় পাই প্রকাশ্যেতে
বাহ্যে ডাক্লে প্রকাশ করে—সবাই আস্বে তোমার সাথে
সেবা করে সুখ পাই না
একা না পেলে আশ মিটে না—সেবা করে সুখ পাই না
নিরজনে কর্ব সেবা—মনে বড় হয়েছে আসা
সেবা করব আশা-মিটায়ে—একা একা এস হে
তাইতো ভিতরে ডাকি বাহিরে ছেড়ে—তোমায়,–একলা পেতে সাধ আমাদের
নিতাই আমার গদাধরে—স্বাভাবিক প্রীতির স্বভাবে
চাউল আনেন নাই গদাধরের জন্য—মনের কথা কিন্তু আছে গোপনে
প্রাণগৌরঙ্গে খাওয়াবার তরে—নিতাই তণ্ডুল এনেছে যতন করে
প্রাণগৌরাঙ্গের ভোগের তরে—দিলেন গদাধরের করে
গৌরসেবার দ্রব্য এবে—সবাই ত দেন গৌরাঙ্গেরে
গৌরগণ গৌড়দেশ হতে—সবাই ত দেন গৌরাঙ্গেরে
গৌর-সেবার দ্রব্য এনে—নিতাই দিলেন গদাধর-করে
কি অদ্ভুত রহস্য এতে—অনুভব কর ভাইরে
গৌর বড় ভালবাসে
গদাধরের হাতে খেতে—গৌর বড় ভালবাসে
গদাধরের রন্ধন-করা-দ্রব্য—গৌরহরির চির প্রিয়
গদাধরের রন্ধন-করা-দ্রব্য—গৌরহরি আস্বে আপনে
বড় সুখ পায় তার রন্ধনে—গৌরহরি আস্বে আপনে
নিতাই ভাল জানে অন্তরে—গদাধর-রন্ধন আনবে তারে
বাঁধি তারে প্রেমডোরে—গদাধর-রন্ধন আনবে তারে
গদাই কে দিলে গৌর খাবে—চাউল দিলেন নিতাই এই অনুভবে
গোপীনাথ-লাগি আনিঞাছেন গৌড় হৈতে।।’’
গোপীনাথে দেওয়া মাত্র ছলা—এ কিন্তু নয় মনের কথা
গোপীনাথ ভোগে তাই দিয়েছে
গোপীনাথ-সেবায় গদাধর আছে—গোপীনাথের ভোগে তাই দিয়েছে
গোপীনাথ-প্রসাদ গদাধর-রন্ধন—গৌর নিশ্চয় করবে গ্রহণ
গদাধর খাওয়াইবেন গৌরাঙ্গেরে—তাই দিয়েছে গোপীনাথের ভোগে
গদাধর টোটাগোপীনাথে আছে—তাই দিয়েছে গোপীনাথের ভোগে
নিতাই আমার — দুই আনি দিলা গদাধরের গোচর।।’’
‘গদাধর এ তণ্ডুল,
প্রেমে অঙ্গকরে টলমল—মধুর-স্বরে নিতাই বলে
শ্রীগোপীনাথেরে দিয়া করিবা ভোজন।।’’
নিতাইচাঁদের আছে মনে
গদাধর খাওয়াবে গৌরাঙ্গধনে—নিতাইচাঁদের আছে মনে
দয়া করে এস হে
ওহে আমার প্রাণগৌর—দয়া করে এস হে
তোমার গদাধরের প্রীতে—দয়া করে এস হে
নয়নে ত এমত তণ্ডুল দেখি নাঞি।।
এ তণ্ডুল গোসাঞি ! কি বৈকুণ্ঠে থাকিয়া ।
আনিঞা আছেন গোপীনাথের লাগিয়া।।
লক্ষ্মীমাত্র এ তণ্ডুল করেন রন্ধন।
কৃষ্ণ সে ইহার ভোক্তা, তবে ভক্তগণ।।’’
নিতাই-দত্ত-তণ্ডুল দরশনে—গদাধরের পড়েছে মনে
সেই হরিবোলা রসের বদনে—গদাধরের পড়েছে মনে
গৌরকে খাওয়াবার তরে—সাধ জেগে উঠেছে প্রাণে
তবে ত বাঞ্ছা পূর্ণ হয়
যদি গৌরহরি আসে আমার আলয়—তবে ত বাঞ্ছা পূর্ণ হয়
প্রাণে প্রাণে গদাধর বলে—তবে আমার রন্ধন সফল হবে
গৌর-সেবায় লাগে যবে—তবে আমার রন্ধন সফল হবে
বস্ত্র লই গেলা গোপানাথের গোচর।।
আমার নিতাইচাঁদের বস্ত্র—কত আদরের ধন রে
দিব্যবস্ত্র দান করে—এ যে বিপরীত রীতি রে
দিলেন দেখিয়া শোভা ভাসেন আনন্দে।।’’
গোপীনাথ কর অঙ্গীকার
অনঙ্গের প্রীতি-উপহার—গোপীনাথ কর অঙ্গীকার
পেয়ে নিতাইচাঁদের দত্ত-বসন—গোপীনাথের আনন্দ মন
নিতাই ত তার সাজ বটে—সাজ্বে বল কার সাজে
সেবা-বিগ্রহ নিত্যানন্দ—চিরকাল নিতাই সাজায় তারে
নিতাই-দত্ত-বসন পেয়ে—আনন্দ আর ধরে নারে
দেখি,–নিতাই-দত্ত-বসন গোপীনাথ-অঙ্গে—গদাধর আনন্দে ভাসে
গোপীনাথে বস্ত্র পরানো—মনে মনে ভোগ করে
মধুর-শ্রীব্রজলীলায়—নিতাই তার রন্ধনের কার্য্য
শ্রীনন্দালয়ে গিয়ে—নিতাই তার রন্ধনের কার্য্য
শ্যামবঁধু সুখ পাবে বলে—নিতাই তার রন্ধনের কার্য্য
আপনে টোটায় শাক তুলিতে লাগিলা।।’’
একবার আসবে কি
হা গৌর প্রাণ গৌর—একবার আসবেকি
নিতাইচাঁদের ভোজন-কালে—একবার আসবে কি
টোটায় গিয়ে শাক্ তোলে—গদাধর ভাসে নয়ন-জলে
গৌর-সেবা কি হবে বলে—গদাধর ভাসে নয়ন-জলে
লীলা-শক্তির প্রেরণায়—আপনি হইয়াছে প্রকাশ
গৌর-সেবা কর্বে বোলে—আপনি হইয়াছে প্রকাশ
তেঁতুলি বৃক্ষের যত পত্র সুকোমল।
তাহা আনি বাটি তথি দিলা লোণ জল।।
তার এক ব্যঞ্জন করিলা অম্ল নাম।
রন্ধন করিয়া গদাধর ভাগ্যবান্।।
ভোগের আয়োজন করে গদাধর—নয়ন-ধারা বহে অবিরল
প্রাণ-গৌরাঙ্গ—প্রীতি—প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাইরে
প্রেমের ঠাকুর গৌর আমার—প্রেম-সিন্ধু অবতার
প্রেমাভুখা গোরা রসময়—উপচারের বাধ্য নয়
গদা-রাধা ভোগ লাগিয়ে—প্রাণে প্রাণে ডাকে রে
আমার গৌরাঙ্গ-গোপীনাথ—একবার এস হে
তোমার নিত্যানন্দের প্রীতে—একবার এস হে
এস প্রাণ-শচীনন্দন—বড় সাধে করেছি রন্ধন
এস প্রাণগৌর সুন্দর—টোটায় কাঁদে গদাধর
প্রাণে প্রাণে টানে রে
পরাণ-গৌরাঙ্গ-ধনে—প্রাণে প্রাণে টানে রে
একা নয় বুঝি দুইজনে—প্রাণে প্রাণে টানে রে
নিতাই-গদাই দুইজনে—প্রাণে প্রাণে টানে রে
গৌর একবার এস বলে—দুজনারই প্রাণ কাঁদছে
গৌর বিনে জানে না আন—দু’জনেই গৌরগত প্রাণ
শয়নে স্বপনে জাগরণে—জানে না তারা গৌর বিনে
গদাই ডাকে এই বলে
একবার এস হে
হা নিতাইএর প্রাণ গৌরহরি—একবার এস হে
নিতাইচাঁদের প্রীতির টানে—একবার এস হে
একা একা নিরজনে—এস গোপীনাথ-অঙ্গনে
তোমার অবধূতের উপচার—এসে কর অঙ্গীকার
আমি এনেছি কত সাধ করে
প্রাণগৌর তোমার সেবার তরে—আমি এনেছি কত সাধ করে
গৌড় হতে মাথায় করে—আমি এনেছি কত সাধ করে
সুগন্ধি-সূক্ষ্ম-তণ্ডুল—আমি এনেছি কত সাধ করে
তার রন্ধনে তোমার প্রীতি জেনে—দিয়েছি গদাধরের করে
গদাধরের রন্ধন প্রীতে—একবার আস্বে কি
বাহিরের ভাব করি গোপন—দুইজনে ডাকে প্রাণে প্রাণে
গুপত-গৌরাঙ্গ-লীলা—এ যে গোপনে গোপনে মেলা
হেন-কালে গৌরচন্দ্র আসিয়া মিলিলা।।’’
প্রাণের নিতাই-গদাই ডাকে তারে—আর কি গৌর রইতে পারে
গৌর বাঁধা যাদের প্রেমডোরে—আর কি গৌর রইতে পারে
যাদের হাতে তার বেচা-কেনা—ডাকে তারে সেই অনঙ্গ-রাধা
আর কি,–রইতে পারেগৌর কালসোণা—ডাকে তারে সেই অনঙ্গ-রাধা
গদাই-নিতাই অনুরাগ-ভরে—প্রাণে প্রাণে ডাক্ছে তার
পড়েছে দুই-আকর্ষণে—কেমনে ধৈর্য্য ধর্বে প্রাণে
গদাধর-নিত্যানন্—প্রেমে—কেমনে—ধৈর্য্য ধর্বে প্রাণে
নিতাই-গদাই-ডাকে বাঁধা পড়ি—আইলা প্রাণের গৌরহরি
প্রাণে প্রাণে ডেকেছে দুইজনে—প্রাণ-গৌর এল সেই টানে টানে
গদাধর গোপীনাথে ভোগ লাগায়—টোটার দ্বারদেশে গোরারায়
নিতাই-গদাই-এর প্রেমের বলে—গৌর উপনীত সেই কালে
‘‘গদাধর ও গদাধর’’
প্রেম-বন্ধনে বেঁধে এনেছে তাকে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
প্রাণে প্রাণে গুপ্ত-ডাকে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
গুপ্ত-ডাকে গোপনে এসে—এই টোটায় দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
অমিয়া-মাখান-বলে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
‘গদাধর ও গদাধর’ বলে—এই টোটার দ্বারে প্রাণগৌর ডাকে
গৌর আমার,–‘ও গদাধর’ বলে ডাকে—যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরে
এই টোটার দ্বারে প্রেমস্বরে—গৌর আমার,–‘ও গদাধর’ বলে ডাকে
‘গদাধর’ বচন—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ
গৌর-মুখে ‘ও গদাধর’ বুলি—কি মাধুর্য্য পদাবলী
কি অমৃতময় বুলি—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উঠল উথলি
আমার নিতাই-তরঙ্গ-আঘাতে –যেন,–গৌরপ্রেমসিন্ধু উথলিল
‘আমার নিতাই-তরঙ্গ-আঘাতে’—
প্রাণে প্রাণে প্রাণভরা ডাকে—আমার নিতাই-তরঙ্গ-অঘাতে
‘প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ভরা ডাকে’—
একবার,–এস প্রাণ গৌর বলে—প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ভরা ডাকে
গদাধর-অনুরাগ-বাতাঘাতে—প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ভরা ডাকে
অমিয়া-সিন্ধু উথলিল মানি
গৌরমুখে নিকসিল ‘ও গদাধর’ বাণী—অমিয়া-সিন্ধু উথলিল মানি
প্রেমের ধারা বয়ে যায় রে—কি প্রীতি-মাখান ডাক রে
‘প্রেমের ধারা বয়ে যায় রে’—
আজ,–প্রীতির অভিনব-অনুরাগে—প্রেমের ধারা বয়ে যায় রে
যেন,–ব্রজের অপূর্ণ-সাধ মিটাইছে
‘রাধা রাধা’ বলে আশ না মিটেছে—যেন,–ব্রজের অপূর্ণ-সাধ মিটাইছে
তাই,–‘গদাধর ও গদাধর’ বলে ডেকে—ব্রজের অপূর্ণ সাধ মিটাইছে
গৌর-মুখে ‘ও গদাধর’ নাম—কি মাধুর্য্যামৃত ধাম
এই সেই গোপীনাথের ভবন—আজ সেই দিন রে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায় আজ—নিশ্চয় ডাকিতেছে গোরা
বিজয় হইলা গৌরচন্দ্র কুতূহলী।।
গদাধর ! গদাধর ! ডাকে গৌরচন্দ্র।’’
গৌর ডাকে টোটার দ্বারে—আর কি গদাই রইতে পারে
‘গৌর ডাকে টোটার দ্বারে’—
‘ও গদাধর’ বলে মধুর-দ্বারে—গৌর ডাকে টোটার দ্বারে
‘ও গদাধর’ বলে মধু-দ্বারে,’—
সে এসে ডাক্ছে তারে—‘ও গদাধর’ বলে মধু-স্বরে
প্রাণের প্রাণ ডাকছে তারে—‘ও গদাধর বলে’ মধুর-স্বরে
প্রাণনাথ ডাকছে তারে—‘ও গদাধর বলে’ মধুর-স্বরে
প্রাণেশ্বর ডাকছে তারে—ও গদাধর বলে মধুর-স্বরে
‘ও গদাধর’ বলে কত আদর করে—গৌর ডাকে টোটার দ্বারে
এই টোটার দ্বারে এই দ্বার-পানে—গদাধর আইলা ব্যাকুল-প্রাণে
গৌরমুখে আপন নাম শুনে—গদাধর আইলা ব্যাকুল-প্রাণে
আমার,–প্রাণগৌর এসেছে জেনে—গদাধর আইলা ব্যাকুল প্রাণে
পেয়ে বঁধুরে আপন ভবনে—আনন্দ আর ধরে না মনে
বাসনা পূরণ হল বলে—ধারা বহে দু’নয়নে
আমি কি না হই নিমন্ত্রণের ভিতর ?’’
অভিমান-গর্ব্ব-মাখান—আ’মরি কি প্রীতির ভাষা
যুগল-উজ্জ্বল-রসে রসা—আ’মরি কি প্রীতির ভাষা
মাধুর্য্যামৃত-রসে রসা—-আ’মরি কি প্রীতির ভাষা
বাণীর ভাণ্ডারে নাইক এমন—আ’মরি কি মধুর ভাষণ
গর্ব্ব-প্রীতি-অভিমান-মাখান—আ’মরি কি মধুর ভাষণ
শুনে জুড়ায় কর্ণ-মন—আ’মরি কি মধুর ভাষণ
করেছে,–চুপি চুপি ভোগের আয়োজন
গোপনে পেয়ে নিতাই-ধন—করেছ,–চুপি চুপি ভোগের আয়োজন
আমায় না জানায়ে দুইজনে—এ কি খেলা কর গোপনে
এ কি প্রীতি-ব্যবহার—আমি কি তোমাদের কেউ নই
টোটাগোপীনাথের দ্বারে—বয়ে গেল প্রেমের পাথার
এত ভাষা নয় শুদ্ধ প্রেমে—আ’মরি কি ভাষা রে
আ’মরি কি প্রেমের ভাষা—না জানি সে কতই সুধা
নিতাই-গদাই আমার অভিন্ন তত্ত্ব—ইঙ্গিতে বলেন শচীসূত
তোমা দু’জনায় লয়ে—আমার যে আমিত্ব
আমি তোমা-দু’জনার—সেবা-সুখে সদা রই
না দিলেও তোমরা, বলেতে আমি খাই।।’’
তোমাদের দ্রব্যে আমার—না দিলেও আছে অধিকার
জোর করে খাবার—না দিলেও আছে অধিকার
জোর করে টেনে নিয়ে—প্রীতি আমারে ভোগ করায়
আমার ভাগ আছ বলে—তাই খাই জোর করে
সহজে নিতাই-দ্রব্যে—আমার অধিকার আছে
ভালদ্রব্য পেলে না দিয়ে আমায়—নিতাই কখনও খায় না
একে,–‘‘নিত্যানন্দ-দ্রব্য, তাতে,–গোপীনাথের প্রসাদ।
তোমার রন্ধন, মোর ইথে আছে ভাগ।।’’
তোমার রন্ধন আমার ভোগ্য—চিরকাল এই সত্য
তোমার রন্ধনের দ্রব্য আমার—চিরকাল খাওয়া স্বভাব
এই তিন সম্বন্ধে—আমি,–নিশ্চয় ভাগ পেতে পারি
আমার,–অবশ্য ভাগ আছে বলে—তাই,–এসেছি তোমরা না ডাকিলে
তোমরা দুজনে ডাক নাই—আমার,–ভাগ আছে এসেছি তাই
দায়ভাগ-সূত্রে—প্রীতি টেনে এনেছে আমারে
কেন তবে লুকালে আমাকে—তিন-সত্ত্বে আমার দাবী আছে
গদাধর-গৌরাঙ্গের—আ’মরি কি প্রেমের ভাষা
গৌর-মুখে প্রীতির বচন—অমিয়ার বর্ষণ রে
প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলাকারী—জয় জয় গৌরহরি
মগ্ন হইলেন সুখ-সাগর-ভিতর।।’’
পূর্ণ হল মনের বাসনা—আনন্দ আর ধরে না
নিত্যানন্দ-গদাধরের–মন-সাধ পূর্ণ হল
প্রাণে প্রাণে যা চেয়েছিল—মন-সাধ পূর্ণ হল
পেয়ে,–প্রাণে প্রাণে প্রাণ-ধনে—আনন্দ আর ধরে না মনে
সেবার শ্রম সফল হল জেনে—ধারা বহে দু’নয়নে
থুইলেন গৌরচন্দ্র-প্রভুর গোচর।।’’
এ যে আস্বাদনের লীলা রে—আপনি আস্বাদ করে
আপন-অধরামৃত—আপনি আস্বাদ করে
ভক্তি করি প্রভু পুনঃপুনঃ অন্ন বন্দে।।’’
গৌরহরি আনন্দ-ভরে—প্রসাদ বন্দনা করে
অন্ন লই তিনে ভুঞ্জি একত্র বসিয়া।।
আজ বহুদিন পরে—যদি সুযোগ হয়েছে
না জানি কোন্ শুভযোগে—যদি সুযোগ হয়েছে
নিরজনে তিনজনার মিলন—সুযোগ হয়েছে সংঘটন
নিত্যানন্দ-স্বরূপের তণ্ডুলের প্রীতে।
বসিলেন মহাপ্রভু ভোজন করিতে।।’’
গৌরাঙ্গ-ভোজন-লীলায়—প্রেমের পাথার বয়ে যায়
সন্তোষে ঈশ্বর অন্ন-ব্যঞ্জন প্রশংসে।।
প্রভু বোলে এ ‘অন্নের গন্ধেও সর্ব্বথা।
কৃষ্ণ-ভক্তি হয়, ইথে নাহিক অন্যথা।।’’
আমি ত এমন কভু নাহি খাই শাক।।
গদাধর ! কি তোমার বিচিত্র রন্ধন।
তেঁতুলি-পাতের কর, এমত ব্যঞ্জন।।
বুঝিলাঙ—‘বৈকুণ্ঠে রন্ধন কর তুমি।
তবে আর আপনারে লুকাও বা কেনি।।
এইমত মহানন্দে হাস্য-পরিহাসে।
ভোজন করেন তিন-প্রভু প্রেমরসে।।’’
তিন-জনের প্রেমালাপের—বালাই লয়ে মরে যাই
গৌরচন্দ্র ঝাট না কহেন কারো স্থানে।।’’
এ-তিনে,–জানায় যারে দয়া করে—সেই সে জানিতে পারে
চলিলেন, পত্র লুট কৈল ভক্তগণ।।’’
মহাপ্রভুর ভোজনান্তে—আসিয়াছেন ভক্তগণ
ক্রমে ক্রমে সংবাদ পেয়ে—আসিয়াছেন ভক্তগণ
এ আনন্দ-ভোজন যে পঢ়ে যেবা শুনে।
কৃষ্ণ-ভক্তি কৃষ্ণ পায় সেই সব জনে।।
গদাধর শুভদৃষ্টি করেন যাহারে।
সেই সে জানয়ে নিত্যানন্দ-স্বরূপেরে।।’’
গদাধরের কৃপা বিনে—কেউ,–চিন্তে নারে নিতাই-ধনে
অন্তরঙ্গ-স্বরূপে—কেমন করে চিন্বে বল
গদাধরের কৃপা না হলে—কেমন করে চিন্বে বল
লওয়ায়েন গদাধর জানে সে-ই জনে।।’’
নিত্যানন্দ-কৃপা যারে—সেইত গদাই চিন্তে পারে
রহিলেন গৌরচন্দ্র-সঙ্গে কুতূহলে।।
তিনজন একত্র থাকেন নিরন্তর।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, নিত্যানন্দ, গদাধর।।
জগন্নাথো একত্র দেখেন তিনজনে।
আনন্দে বিহ্বল সবে মাত্র সঙ্কীর্ত্তনে।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নিত্যানন্দ চান্দ জান।
বৃন্দাবন দাস তছু পদযুগে গান।।’’
ত্রিকাল-সত্য গৌর-লীলায়—আজ সেই দিন রে
এই সেই মধুর টোটা
মধুর শ্রীনীলাচলে—এই সেই মধুর টোটা
মোহন শ্রীগোপীনাথের—এই সেই মধুর টোটা
গদাধরের বসতি-স্থান—এই সেই মধুর টোটা
এই সেই লীলাকাল—এই সেই লীলাভুমি
ত্রিকাল-সত্য-লীলায় গৌর দেখ্তে—এসেছেন আমার প্রভু নিতাই
একমান চাউল আর রঙ্গিন-বস্ত্র
দিয়াছেন পণ্ডিত-গোস্বামিকে
নিতাইচাঁদের প্রীতি করে—দিয়াছেন পণ্ডিত-গোস্বাামিকে
নিতাইচাঁদের প্রীতি জেনে—গদাধর রন্ধন করেছেন প্রীতে
টোটা হতে শাক তুলে—করেছেন এক ব্যঞ্জন
সুকোমল আম্লী তুলি—আর এক ব্যঞ্জন করেছেন
এই যে পেতেছি তার নিদর্শন
টোটা আমোদ করেছে
গদাধর-রান্নার সৌগন্ধে—টোটা আমোদ করেছে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—টোটা আমোদ করেছে
ভোগের আয়োজন হতেই—প্রাণে প্রাণে ডেকেছেন
নিতাই-গদাই দুইজনে—প্রাণে প্রাণে ডেকেছেন
এস গোপীনাথ-অঙ্গণে—এস প্রাণগোর নিরজনে
নিতাই-গদাই-এর প্রেম-আকর্ষণে—এসেছেন প্রভু দুজনার ডাকে
ভোগ অর্পণ হলে—ডেকেছেন এই টোটার দ্বারে
প্রাণগৌর’ও গদাধর’ বলে—ডেকেছেন এই টোটার দ্বারে
কেন কেন গদাধর
গোপনে করেছ ভোগের আয়োজন
আমি কি তোমাদের কেউ নই
বড় সাধে এসেছি
শ্রীগুরু-কৃপা-আকর্ষণে—বড় সাধে এসেছি মোরা
আজ,–সেই উৎসবের দিন জেনে—বড় সাধে এসেছি মোরা
শ্রুতি-রসায়ন-রাগ—শুনিব শ্রবণে
গৌর-মুখে গদাধর ডাক—শুনিব শ্রবণে
তার শ্রীমুখের ডাক শুনে
আগুসারি গিয়াছেন
পণ্ডিত-গোসাঞি আনন্দেতে—আগুসারি গিয়াছেন
অভ্যর্থনা করে এনে—বসায়েছেন যতন করে
ভোজন লাগি আসন দিয়ে—বসায়েছেন যতন করে
এই গোপীনাথের জগমোহনে-–বসায়েছেন যতন করে
নিতাই গৌরাঙ্গ গদাই—বসেছেন তিনজনে
প্রসাদ ভোজনে—বসেছেন তিনজনে
গদাধর-রন্ধন-মহিমা করি বর্ণন—আনন্দে করেছেন ভোজন
পত্র লুট করেছেন ভক্তগণ
সেই ভোজন রঙ্গ দেখতে—আমরা কি পাব না
হা প্রাণ-গৌরাঙ্গগণ—এক কণিকা কি পাব না
নিতাই-গৌর-গদাই-এর অধরামৃতের—এক কণিকা কি পাব না
জগদ্-গুরু নিত্যানন্দ—দাও মোদের ফেলালব
ও মোহন-গোপীনাথ—এক কণিকা কি দিবে না
ও মোহন-গোপীনাথ অধরামৃতের—এক কণিকা কি দিবে না
গৌরকে ত রেখেছ লুকায়ে—কণিকায়ও কি বঞ্চিত করবে
চিতচোর প্রাণগৌর—লুকায়ে রেখেছ
গৌর দেখ্ব বলে নীলাচলে এসে—খুঁজে খুঁজে হলাম সারা
ভাই ভাই ভাই মিলে—খুঁজে খুঁজে হলাম সারা
ভক্ত-সম্মিলন-দিনে—কত না খুঁজেছি
ঝালি সমর্পণ কালে—কত না খুঁজেছি
গুণ্ডিচা মার্জ্জন কালে—কত না খুঁজেছি
জগন্নাথের রথের আগে—কত না খুঁজেছি
কে যেন বলিলেন প্রাণে
যাও গোপীনাথ-ভবনে
গোপীনাথ লুকায়ে রেখেছে
বড় ভাল লেগেছে তাই—গোপীনাথ লুকায়ে রেখেছে
গোপীনাথের গৌর-লুকান—অনুভব কর ভাই
প্রাণগৌর-স্বরূপ তার—চিতচোরা মুরতি বটে
ভাবিনী-ভাবিত আপন-স্বরূপ দেখে—আপনি মুগ্ধ হয়েছে
গৌরাঙ্গ-স্বরূপ দেখে—নাগরালী ভুলে গেছে
গোপীনাথ নাগরী-ভাবে—বিভাবিত হয়েছে
গৌর-নাগর বুকে ধরেছে—গোপীনাথ আলী হয়েছে
নাগরে করিল আলী—এমনি গৌরের নাগরালী
এ যে নাগরীর নাগরালী—এমনি গৌরের নাগরালী
দেখি’ মহা-অনুরাগে মাতি—রাধা-অঙ্গে মিলিত নিজ-মূরতি
গৌরাঙ্গ-ধনে অন্তরে—গোপীনাথ লুকায়ে রেখেছে
শুনেছিও লোক-মুখে
তুমি রেখেছ গৌর-লুকায়ে—শুনেছিও লোকমুখে
একবার দেখাও হে
তোমার চিতচোরা-মূরতি গৌরহরি—একবার দেখাও হে
তোমার ঊরুদেশে রয়েছে প্রকাশ
প্রাণ-গৌরাঙ্গের রূপের ছটা—তোমার ঊরুদেশে রয়েছে প্রকাশ
গৌর তুমি রেখেছ লুকায়ে—ঊরুতে তার চিহ্ন আছে
তোমার ভারি-ভুরি ধরা পড়েছে—ঊরুতে তার চিহ্ন আছে
তোমার নিগূঢ়-স্বরূপের ভোজন-রঙ্গ
অভিন্ন-তনু নিতাই-সঙ্গে—তোমার নিগূঢ়-স্বরূপের ভোজন-রঙ্গ
ভাল কি লাগছে না
আমার কি স্বরূপ দেখে—ভাল কি লাগছে না
নিত্য-নব-কিশোর নটবর—ভাল কি লাগছে না
গোপবেশ বেণুকর—ভাল কি লাগছে না
আমরা যে সব নদীয়াবাসী
তোমার গৌররূপ যে ভালবাসি—আমরা যে সব নদীয়াবাসী
নিরন্তর,–দেখতে সাধ জড়াজড়ি—ভাল লাগে না ছাড়াছাড়ি
পণ্ডিত-গোসাঞি কোথা তুমি
এই তো তোমার বসতি-ভূমি—পণ্ডিত-গোসাঞি কোথা তুমি
এই গোপীনাথের জগমোহনে—একবার দেখা দাও
নিতাই-গৌর-সনে ভোজন-রঙ্গে—একবার দেখা দাও
তুমি আর কোথা যাবে
গোপীনাথ এখানে আছে—তুমি আর কোথা যাবে
এই গোপীনাথের সেবা—তোমাকেই ত দিয়েছেন
একবার দেখা দাও
কোথা আছ প্রভু নিতাই—একবার দেখা দাও
নিতাই-গৌরাঙ্গ-গদাই—একবার দেখা দিও
তিন-কুটীরীতে—প্রকাশ্যেতে দেখা দিছ
শ্রীবিগ্রহ-রূপেতে –প্রকাশ্যেতে দেখা দিছ
শ্রীবিগ্রহ-রূপেতে—সবাই ত দেখছে
কেউ যে কথা কইছ না
গোপনে সবাই বিরাজিছ—কেউ যে কথা কইছ না
আর কার কাছে যাব
আর আমার কেবা আছে
আমার বলতে জগমাঝে—আর আমার কেবা আছে
আমাদের মুখে মলিন দেখে—কার প্রাণ কেঁদে উঠে
ওগো আমার ব্যথার ব্যথী
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—ওগো আমার ব্যথার ব্যথী
নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—ওগো আমার ব্যথার ব্যথী
দেখাবে বলে টেনে এনে—লুকায়ে করছ খেলা
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—তুমি ত তাদের সঙ্গে আছ
এই গোপীনাথের অঙ্গনে—একবার দেখাও গো
গুপত-ভোজন-রঙ্গ—একবার দেখাও গো
নিতাই-গৌরাঙ্গ-গদাই—একবার দেখাও গো
তোমার কৃপা ইঙ্গিতে—নিতাই-গৌর-গদাই-বিহার দেখে
ভাই ভাই এক-প্রাণে—প্রাণ-ভরে গাই মোরা
অনঙ্গ-কানাই-রাই—নিতাই-গৌরাঙ্গ-গদাই
গদাধর কিশোরী রাই—নিতাই অনঙ্গ গৌর কানাই
নিতাই-গদাই-প্রাণনাথ—গৌরাঙ্গ গোপীনাথ
নিতাই-রমণ গোরা—গোপীনাথের চিতচোরা
নিতাই-গদাই-চিতচোরা—গোপীনাথের হৃদয়ে বিলাসী গোরা
গৌরহরি হরিবোল—নিতাই-গৌর-গদাই-মিলন হল