শ্রীশ্রী দণ্ডমহোৎসব কীর্ত্তন

শ্রীপাট পানিহাটিতে শ্রীশ্রীদাস গোস্বামীর দণ্ডমহোৎসব কীর্ত্তন


(জ্যৈষ্ঠ শুক্লা এয়োদশী)


(সপরিকরে শ্রীশ্রীপাদ বাবাজী মহারাজ শ্রীশ্রীগঙ্গাতীরে দাঁড়াইয়া কীর্ত্তন আরম্ভ করিলেন।)


‘‘শ্রীগুরু প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল।’’
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘গৌর-প্রেম-বন্যায় ভাসে পানিহাটি গ্রাম।
রাঘব পণ্ডিতের ঘরে নিত্যানন্দ রাম।।’’

আমার প্রভু নিতাই এসেছে

মধুর নীলাচল হতে—আমার প্রভু নিতাই এসেছে
প্রাণগৌর-আজ্ঞায় নাম-প্রেম বিলাতে—আমার প্রভু নিতাই এসেছে

আমার,–নিতাই এল পানিহাটিতে

গৌর-আজ্ঞায় নাম-প্রেম বিলাতে—আমার,–নিতাই এল পানিহাটিতে
নিজ-প্রিয়গণ-সনে—আমার,–নিতাই এল পানিহাটিতে

চল যাই দেখিতে

নিতাই এল পানিহাটিতে—চল যাই দেখিতে

(শ্রীশ্রীসুরধনীর তীর হইতে শ্রীশ্রীবটবৃক্ষমূলে আসিয়া কীর্ত্তন।)

‘‘জয় জয় শ্রীগৌরসুন্দর সর্ব্বগুরু।’’

প্রাণভরে জয় দাও ভাই

প্রভু নিতাই প্রাণ জগদ্‌গুরু গৌরহরি—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
নিতাই পাগল করা গোরার—প্রাণভরে জয় দাও ভাই

‘‘জয় জয় ভক্তজন-বাঞ্ছাকল্পতরু।’’

প্রাণভরে জয় দাও ভাই
সাঙ্গোপাঙ্গের জয় দাও ভাই

প্রেমাবতার গৌরহরির-সাঙ্গোপাঙ্গের জয় দাও ভাই

‘‘জয় জয় ভক্তজন-বাঞ্ছাকল্পতরু।।
জয় জয় ন্যাসিমণি শ্রীবৈকুণ্ঠনাথ।
জীব-প্রতি কর প্রভু শুভদৃষ্টিপাত।।’’

চাও হে করুণা-নয়নকোণে

প্রেমাবতার গৌর আমার—চাও হে করুণা-নয়নকোণে
করুণা বারিধি গৌর আমার—চাও হে করুণা-নয়নকোণে
অশান্ত-জগত-পানে—চাও হে করুণা-নয়নকোণে

‘‘জীব প্রতি কর প্রভু শুভদৃষ্টিপাত।।
ভক্তগোষ্ঠী সহিতে গৌরাঙ্গ জয় জয়।
জয় জয় শ্রীকরুণাসিন্ধু দয়াময়।।’’
আমার,–করুণা-বারিধি গোরাশশী

নিভৃত-গম্ভীরায় বসি—আমার,–করুণা বারিধি গোরাশশা

‘‘হেন-মতে মহাপ্রভু চৈতন্য নিতাই।
নীলাচলে বসতি করেন দুই ভাই।।
একদনি শ্রীগৌরসুন্দর নরহরি।
নিভৃতে বসিলা নিত্যানন্দে সঙ্গে করি।।
প্রভু বোলে শুন নিত্যানন্দ মহামতি।’’

নিতাই চাঁদের দুটী হাতে ধরে

‘‘সত্বরে চলহ তুমি নবদ্বীপ-প্রতি।।
প্রতিজ্ঞা করিয়াছি আমি নিজমুখে।
মুর্খ নীচ দরিদ্র ভাসাব প্রেমসুখে।।’’

একমাত্র সহায় হে

একা তুমি নিতাই আমার—একমাত্র সহায় হে
নাম-প্রেম-প্রচারের—একমাত্র সহায় হে

বিশ্বম্ভর নাম ধরেছি

অদ্বৈত-প্রেমহুঙ্কার শুনে—বিশ্বম্ভর নাম ধরেছি
নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরব বলে—বিশ্বম্ভর নাম ধরেছি

তুমি একমাত্র সহায়

বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করিবার—তুমি একমাত্র সহায়

‘‘মূর্খ নীচ দরিদ্র ভাসাব প্রেমসুখে।।
তুমিও থাকিলা যদি মুনিধর্ম্ম করি।
আপন উদ্দাম ভাব সব পরিহরি।।
তবে মুর্খ নীচ যত পতিত সংসার।
বোল দেখি আর কে বা করিব উদ্ধার।।
ভক্তিরস দাতা তুমি, তুমি সম্বরিলে।
তবে অবতার বা কি নিমিত্তে করিলে।।’’

যদি,–আপন-ভাব সম্বরিলে

তবে,–আমায় কেন আনিলে—যদি,–আপন-ভাব সম্বরিলে

তবে,–আমায় কেন আনিলে

যদি এম্নি করে বসে থাকবে—তবে,–আমায় কেন আনিলে

‘‘তবে অবতার বা কি নিমিত্তে করিলে।।
এতেকে আমার বাক্য যদি সত্য চাও।
তবে অবিলম্বে তুমি গৌড়দেশে যাও।।’’
‘‘বিরলে নিতাই লইয়া, হাতে ধরি বসাইয়া,
মধুর-কথা কন্ ধীরে ধীরে।’’

প্রাণের প্রাণ গৌরহরি

‘‘মধুর-কথা কন্ ধীরে ধীরে।’’

মুখ মুখ ভেসে যায়

গৌরের,–বলিতে বলিতে দুটী-নয়ন-ধারায়—মুখ বুক ভেসে যায়

ও,—নিতাই আমার কথা রাখ

দুটী,–হাতে ধরে কেঁদে বলছেন প্রভু—ও,–নিতাই আমার কথা রাখ

তুমি ত’ একমাত্র সহায়

‘‘জীবেরে সদয় হৈয়া, হরি নাম লওয়াও গিয়া,
যাও নিতাই সুরধুনীতীরে।।’’
‘‘প্রভু কহে নিত্যানন্দ, সব জীব হইল অন্ধ,
কেহ ত না পাইল হরিনাম।
নিতাই,–এই নিবেদন তোরে, নয়নে দেখিবে যারে
কৃপা করি লওয়াইও নাম।।
কৃতপাপী দুরাচার, নিন্দুক পাষণ্ডী আর,
কেহ যেন বঞ্চিত না হয়।

যেন,–কাকেও বঞ্চিত করো না নিতাই

নিতাইচাঁদের দুটী হাত ধরে বলে—কাকেও বঞ্চিত করো না নিতাই
আমার,–কলির জীব বড় দুঃখী—কাকেও বঞ্চিত করো না নিতাই
আমার,–কলির জীব সদাই দুঃখী—কাকে বঞ্চিত করো না নিতাই

‘‘কৃতপাপী দুরচার, নিন্দুক পাষণ্ডী আর,
কেহ যেন বঞ্চিত না হয়।
শমন বলিয়া ভয়, জীবে যেন নাহি হয়,
সুখে যেন হরিনাম লয়।।’’

কারেও বঞ্চিত করো না নিতাই

আমার,–কলির জীব বড়ই দুঃখী—কারোও বঞ্চিত করো না নিতাই

অবিচারে নাম বিলাও গিয়ে

অদোষ-দরশা হয়ে—অবিচারে নাম বিলাও গিয়ে

কোন,–নিষেধ বিধি দিও না

নাম গ্রহণ করতে যেন—কোন—নিষেধ বিধি দিও না

তাহলে কেউ নাম লবে না
অবিচারে নাম বিলাও গিয়ে

জীবে যে যে দশায় থাকুক না কেন—অবিচারে নাম বিলাও গিয়ে

আপনি বিধি পালন করবে

নামাশ্রয়ে চিত্ত শুদ্ধি হলে—আপনি বিধি পালন করবে

‘‘কুমতি তার্কিক জন, অধম পড়ুয়া-গণ
(তারা) জন্মে জন্মে ভকতি বিমুখ।’’

তারা,–তর্কনিষ্ঠ অভিমানী

অবিদ্যা-মদে অন্ধ তারা—তর্কনিষ্ঠ অভিমানী

দেখো যেন,–তাদের নিতাই বঞ্চিত করো না

তারা অভিমানী বলে যেন—তাদের নিতাই বঞ্চিত করো না

সদাই আমার প্রাণ কাঁদছে

নদীয়া-পড়ুয়া-গণের দশা হেরে—সদাই আমার প্রাণ কাঁদছে

‘‘প্রেমধন দান করি, বালক বৃদ্ধ পুরুষ নারী,
খণ্ডাইও সবাকার দুঃখ।।’’

জীবের,–দরিদ্রতা ঘুচাও গিয়ে
এই জগমাঝে সেই ত দরিদ্র

হউক না কেন,–ধনী-মানী-কুলীন-পণ্ডিত—এই জগমাঝে সেই ত দরিদ্র
যার,–নাই কৃষ্ণ-প্রেমধন—এই জগমাঝে সেই ত দরিদ্র

(মাতন)
জীবের,–দরিদ্রতা ঘুচাও গিয়ে

সেধে যেচে নাম-প্রেম দিয়ে-জীবের দরিদ্রতা ঘুচাও গিয়ে

(মাতন)

‘‘খণ্ডাইও সবাকার দুঃখ।।’’
নাম,–সৎকীর্ত্তন প্রেমরসে, ভাসাইয়া সব দেশে,
পূর্ণ কর সবাকার আশ।’’

আমার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর

যাও যাও নিতাই ত্বরা করি—আমার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর
নাম-প্রেম দিয়ে বিশ্ব ভর—আমার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর

‘‘গৌরাঙ্গ আদেশ পাইয়া, নিতাই বিদায় হইয়া’’

আজ,–আনন্দ আর ধরে না

স্বভাব করুণ নিতাইচাঁদের—আনন্দ আর ধরে না

একে,–সহজেই জীবের দুঃখে দুঃখী

তাতে পেয়েছে গৌর-আজ্ঞা—একে,–সহজেই জীবের দুঃখে দুঃখী

তাতে পেয়েছে গৌর-আজ্ঞা

অবিচারে নাম-প্রেম বিলাতে—তাতে পেয়েছে গৌর-আজ্ঞা

‘‘গৌরাঙ্গ-আদেশ পাইয়া, নিতাই বিদায় হইয়া,
চলিলেন শ্রীগৌড়মণ্ডলে।’’
আপনি যেমন সঙ্গী তেমন

গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—আপনি যেমন সঙ্গী তেমন
গৌর-প্রেমে মত্ত মহাবলী—আপনি যেমন সঙ্গী তেমন

ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে

প্রতি নিতাই-কিঙ্করে—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে
পতিত-পাবন-নিতাই হৃদে ধরে—ব্রহ্মাণ্ড তারিতে পারে

‘‘সঙ্গে ভাই অভিরাম, গৌরদাস গুণধাম,
কীর্ত্তন বিহার কুতুহলে।।
রামাই সুন্দরানন্দ, বাসু আদি ভক্তবৃন্দ,
সতত কীর্ত্তন-রসে ভোলা।
পানিহাটি-গ্রামে আসি, গঙ্গাতীরে পরকাশি,
রাঘবপণ্ডিত-সনে মেলা।।’’
‘‘রামদাস গদাধর দাস মহাশয়।
রঘুনাথ বেজ-ওঝা ভক্তিরসময়।।
কৃষ্ণদাস পণ্ডিত পরমেশ্বর দাস।
পুরন্দর পণ্ডিতের পরম উল্লাস।।
নিত্যানন্দ স্বরূপের যত আপ্তগণ।
নিত্যানন্দ-সঙ্গে সভে করিলা গমন।।’’

হেলে দুলে যায় পাগলা নিতাই
‘‘গজেন্দ্র-গমনে যায়, সকরুণ-দিঠে চায়,’’
যায় রে নিতাই মাতাকরী

গৌরপ্রেমে-মদিরা পান করি—যায় রে নিতাই মাতাকরী

যায়,–বাহুশুণ্ড দোলাইয়া

নিতাইকরী,–পাষণ্ডকদলী দলবে বলে—যায়,–বাহুশুণ্ড দোলাইয়া

যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়

প্রেমিক-নিতাই প্রেমেদিঠে—যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়

যার পানে চায় প্রেমে মাতায়

স্থাবর জঙ্গম গুল্মলতা—যায় পানে চায় প্রেমে মাতায়

(মাতন)

‘‘পদভরে মহী টলমল রে।’’

ধরণী আর ধরতে না রে

আমার,–নিতাইচাঁদের পদভার—ধরণী আর ধরতে না রে

ধরণীর,–আনন্দ আর ধরে না রে

বড় ভাগ্যবতী ধরণী—ধরণীর—আনন্দ আর ধরে না রে
আজ,–ধরণীধরে হৃদে ধরে—আনন্দ আর ধরে না রে

ধরণী প্রেমে টলমল করে

গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই হৃদে ধরে—ধরণী প্রেমে টলমল করে

গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই

শ্রীকৃষ্ণ-প্রেমের মূরতি রাধা—গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই

সেই,–রাইকানু মিলিত গৌর

সেই,–গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই—সেই,–রাইকানু মিলিত গৌর

‘‘পদভরে মহী টলমল রে।’’
গতিমত্ত সিংহ জিনি, কম্পবান্ মেদিনী’’

সিংহগতি চলে যায় রে

আমার,–গৌরপ্রেমের পাগলা নিতাই –সিংহগতি চলে যায় রে
নিতাই আমার,–প্রাণগৌর-সিংহ হৃদে ধরে—সিংহগতি চলে যায় রে

‘‘পাষণ্ডীগণ হেরিয়া বিকল রে।’’

তাদের,–পাষণ্ড-স্বভাব গেল রে দূরে

আমার,–পাষণ্ড-দলন নিতাই হেরে—তাদের পাষণ্ড-স্বভাব গেল রে দূরে

আমার,–নিতাইচাঁদকে দেখে বলে

আজ,–পাষণ্ড স্বভাব ভুলে—আমার,–নিতাইচাঁদকে দেখে বলে

আমার,–নিতাইচাঁদকে দেখে বলে
তাদের,–প্রেমনেত্রের বিকাশ হল রে

গৌর-প্রেমের মুরতি নিতাইচাঁদে হেরে—

–তাদের,–প্রেমনেত্রের বিকাশ হল রে

গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাইচাঁদে হেরে—

–তাদের,–প্রেমনেত্রের বিকাশ হল রে

বলে, ‘‘আওত অবধূত করুণার সিন্ধু রে।।’’

ঐ যে,–হেলে দুলে নেচে আসছে

ঐ পতিতে বন্ধু নিতাই—ঐ যে,–হেলে দুলে নেচে আসছে
আমার গৌর-প্রেমের মূরতি—হেলে দুলে নেচে আসছে

ভাইরে,–আর আমাদের ভাবনা কিসের

আমরা,–হই না কেন মহাপতিত—ভাইরে,–আর আমাদের ভাবনা কিসের

আর পতিতের ভয় কি বল

ঐ যে,–পতিতের বন্ধু নিতাই এল—আর পতিতের ভয় কি বল

আ মরি! কি মধুর-মূরতি

নিতাইচাঁদকে দেখে বলে—আ মরি ! কি মধুর-মূরতি
পাষণ্ডীগণ প্রেমদৃষ্টি পেয়ে বলে—আ মরি কি মধুর-মূরতি
একবার,–চেয়ে দেখ ভাই রে—আ মরি ! কি মধুর-মূরতি

‘‘দেখরে নয়ন ভরি ঐ নিতাই সুন্দর রে।’’
ও যে, গৌরাঙ্গ-প্রণয় রসময় পুরন্দর রে।।
গোরা-রসে গঠিত ঐ নিতাই-কলেবর রে।
গোরা-রস-কমলের মত্ত-মধুকর রে।।
গোরা-রস-চাঁদের চকোর নিত্যানন্দ রে।
জীব-হৃদি-তম-বিনাশের পূর্ণতম-চন্দ্র রে।।’’

হৃদি,–তম বিনাশের পূর্ণচন্দ্র

কলিহত জীব হৃদি—হৃদি,–তম বিনাশের পূর্ণচন্দ্র
মূরতি ধরে আসছে—হৃদি,–তম বিনাশের পূর্ণচন্দ্র
ঐ জগৎগুরু নিত্যানন্দ—হৃদি,–তম বিনাশের পূর্ণচন্দ্র

(মাতন)

বলে,–‘‘আওত অবধূত করুণার সিন্ধুরে।’’

গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই

‘‘চলিলেন নিত্যানন্দ গৌড়দেশ প্রতি।
সর্ব্ব পারিষদগণ করিয়া সংহতি।।
পথে চলিতেই নিত্যানন্দ মহাশয়।
সর্ব্ব পারিষদগণ করিয়া সংহতি।।
পথে চলিতেই নিত্যানন্দ মহাশয়।
সর্ব্ব পারিষদ করিলেন প্রেমময়।।
সবার হইল আত্ম বিস্মৃতি অত্যন্ত।
কার দেহে কত ভাব নাহি হয় অন্ত।।
প্রথমেই বৈষ্ণবাগ্রগণ্য রামদাস।
তান দেহে হইলেন গোপাল প্রকাশ।।
মধ্যপথে রামদাস ত্রিভঙ্গ হইয়া।
আছিলা প্রহর তিন বাহ্য পাসরিয়া।।
হইলা রাধিকা-ভাব গদাধর-দাসে।
‘‘দধি কে কিনিবে’’ বলি মহা অট্টহাসে।।’

তোমরা কি জান না
নিতাইচাঁদের গূঢ় বিহার

আড়িয়াদহে—নিতাইচাঁদের গূঢ় বিহার
দাস-গদাধরের শ্রীপাটে—নিতাইচাঁদের গূঢ় বিহার

গোপীভাবে গদাধরদাস
কুম্ভ কাঁখে করে
বলে দধি কে নিবি গো
সেইকালে আইলা নিতাই
হইলেন আবিষ্ট

দান-লীলাতে—হইলেন আবিষ্ট

বাহু পসারি দান সাধিলেন
গান কৈলেন মাধব-ঘোষ

নিতাইচাঁদের দান-লীলা—গান কৈলেন মাধব-ঘোষ

দান-লীলা হলে পরে

‘‘রঘুনাথ বৈদ্য উপাধ্যায় মহামতি।
হইলেন মূর্ত্তিমতী যে হেন রেবতী।।
কৃষ্ণদাস পরমেশ্বর দাস দুইজন।
গোপাল-ভাবে হৈ হৈ করে সর্ব্বক্ষণ।।’’


‘‘পুরন্দর পণ্ডিত গাছেতে গিয়া চড়ে।
মুঞিরে অঙ্গদ বলি লাফ দিয়া পড়ে।।
এইমত নিত্যানন্দ শ্রীঅনন্তধাম।।
সভারে দিলেন ভাব পরম উদ্দাম।।’’

নিতাই সকল-রসের গুরু

যে যাহা চায় তারে তাহা দেয়—নিতাই সকল-রসের গুরু

‘‘গৌরাঙ্গ-আদেশ পাইয়া, নিতাই বিদায় হইয়া,
চলিলেন শ্রীগৌড়মণ্ডলে।’’


নাম,–প্রেমদানে আজ্ঞা পাইয়া পরম আনন্দ হইয়া,
চলে নিতাই আনন্দ—হিল্লোলে।।’’
‘‘সঙ্গে ভাই অভিরাম, গৌরীদাস গুণধাম,
সতত কীর্ত্তনরসে ভোলা।’’

আপনি যেমন সঙ্গী তেমন

গৌরপ্রেমের পাগলনিতাই—আপনি যেমন সঙ্গী তেমন
সতত, কীর্ত্তনরসে ভোলা।’’

কীর্ত্তন-রসে বিভোর হইয়া
গৌর গৌর বলে সদাই
কাউকে কিছু বলে না

স্বপনেও আমার নিতাইসুন্দর—আর ত কিছু বলে না

বিভোর হয়ে করে গান

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম—বিভোর হয়ে করে গান

‘‘সতত কীর্ত্তনরসে ভোলা।
পানিহাটি গ্রামে আসি, গঙ্গাতীরে পরকাশী,
রাঘব পণ্ডিত-সনে মেলা।’’

আনন্দে বিভোর সবে

‘‘দণ্ডপথ ছাড়ি সবে ক্রোশ দুই চারি।
যায়েন দক্ষিণ বামে আপনা পাসরি।।
কতক্ষণ পথ জিজ্ঞাসেন লোকস্থানে।
বোল ভাই ! গঙ্গাতীরে যাইব কেমনে।।’’
‘‘লোক বলে হায় হায় পথ পাসরিলা।
দুই প্রহরের পথ ফিরিয়া আইলা।।
লোক-বাক্যে ফিরিয়া যায়েন যথাপথ।
পুনঃ পথ ছাড়িয়া যায়েন সেইমত।।
পুনঃ পথ জিজ্ঞাসা করেন লোকস্থানে।
লোক বলে ‘পথ রৈল দশ-ক্রোশ বামে’।।
পুনঃ হাসি সভেই চলেন পথ যথা।
নিজ দেহ না জানে, পথের কা’ কথা।।
যত দেহধর্ম্ম ক্ষুধা তৃষ্ণা ভয় দুঃখ।
কাহারো নাহিক পাই পরানন্দ সুখ।।
পথে যত লীলা করিলেন নিত্যানন্দ।
কে বর্ণিবে কেবা জানে, সকলি অনন্ত।।
হেন মতে নিত্যানন্দ শ্রীঅনন্ত ধাম।’’

আইলা আমার পাগলা নিতাই

এই সুরধুনী-তীরে—আইলা আমার পাগলা নিতাই

‘‘হেন মতে নিত্যানন্দ শ্রীঅনন্ত ধাম।
আইলেন গঙ্গাতীরে পানিহাটি গ্রাম।।’’

নিতাই আইলা পানিহাটিতে

প্রেমোদ্দাম সঙ্গী সাথে—নিতাই আইলা পানিহাটিতে
গৌর-আজ্ঞায় নাম-প্রেম বিলাতে-নিতাই আইলা পানিহাটিতে

নিতাই আইলা পানিহাটিতে
আজ সেই দিন রে

গৌর-আজ্ঞায় নাম-প্রেম-প্রচারের—আজ সেই দিন রে

সেই একদিন আর এই একদিন
দেখিতে ত পেলাম না

প্রকট-নিতাই-চাঁদের বিহার—দেখিতে ত পেলাম না

‘‘আইলেন গঙ্গাতীরে পানিহাটি গ্রাম।।
রাঘবপণ্ডিত-গৃহে সর্ব্বাদ্যে আসিয়া।
রহিলেন সকল পার্ষদগণে লইয়া।।
পরম আনন্দ হইলা রাঘব পণ্ডিত’’।

আজ রাঘবের কি আনন্দ

ঘরে পাইয়া নিত্যানন্দ—আজ রাঘবের কি আনন্দ

‘‘শ্রীমকরধ্বজ কর গোষ্ঠীর সহিত।।
হেনমতে নিত্যানন্দ পানিহাটি গ্রামে।
রহিলেন সকল পার্ষদগণ সনে।।’’

নিতাই আইলা পানিহাটিতে

গৌর-আজ্ঞায় নীলাচল হতে—নিতাই আইলা পানিহাটিতে
গৌর-আজ্ঞায় নাম-প্রেম দিতে—নিতাই আইলা পানিহাটিতে

‘‘নিরন্তর পরানন্দে করেন হুঙ্কার।
বিহ্বলতা বিনা দেহে বাহ্য নাহি যার।।’’

আন নাহি জানে রে

গোরা-রসে ভোরা নিতাই—আন নাহি জানে রে

করে গুণ গান রে

নিরবধি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—করে গুণ গান রে

(মাতন)

‘‘বিহ্বলতা বিনা দেহে বাহ্য নাহি যার।।
নৃত্য করিবার ইচ্ছা হইল অন্তরে।
গায়ন সকল আসি মিলিলা সত্বরে।।’’

এই সেই নৃত্য ভূমি

এই পানিহাটি গ্রাম—এই সেই নৃত্যভূমি
এই সেই গঙ্গাতীর—এই সেই নৃত্যভূমি
এই সেই বটবৃক্ষ রাজ—এই সেই নৃত্যভূমি
নাচে নিতাই গুণমণি—এই সেই নৃত্যভূমি

নাচে নিতাই গুণমণি

গৌর-প্রেমে মত্ত হয়ে—নাচে নিতাই গুণমণি

নিতাই কেঁদে গৌর বলে

এই বটবৃক্ষ-মূলে—নিতাই কেঁদে গৌর বলে

(মাতন)
দেখিতে ত পেলাম না

প্রকট নিতাইচাঁদের বিহার—দেখিতে ত পেলাম না

একদিকে দাস রঘুনাথ
শ্রীরঘুনাথ দাস গোঁসাই
নিতাই আইলা পানিহাটিতে

চারিদিকে পড়ল সাড়া—নিতাই আইলা পানিহাটিতে

রঘুনাথ কাঁদে নিরজনে

কতদিনে দয়া হবে বলে—রঘুনাথ কাঁদে নিরজনে

দুইবার ফিরায়ে দিয়েছেন

শান্তিপুর হতে—দুইবার ফিরায়ে দিয়েছেন

স্থির হও রঘুনাথ

‘‘স্থির হও রঘুনাথ না হও বাতুল।
ক্রমে ক্রমে পায় জীব ভবসিন্ধু-কূল।।
মর্কট—বৈরাগ্য না কর লোক দেখাইয়া।
যথাযোগ্য বিষয় ভুঞ্জ অনাসক্ত হইয়া।।’’

কেঁদে কেঁদে ফিরে এসেছে

মনোদুঃখে রঘুনাথ—কেঁদে কেঁদে ফিরে এসেছে

দিবানিশি কাঁদছেন

নিরজনে গৃহে বসে—দিবানিশি কাঁদছেন
কত দিনে দয়া হবে বলে—দিবানিশি কাঁদছেন

এমন সময় শুনতে পেলেন
রঘুনাথ,–পরস্পরে শুনতে পেলেন
নিতাই এসেছেন পানিহাটিতে

গৌর-আজ্ঞায় নাম-প্রেম বিলাতে—নিতাই এসেছেন পানিহাটিতে

‘‘তবে রঘুনাথ কিছু বিচার করি মনে।
নিত্যানন্দ গোসাঞি পাশ চলিলা আর দিনে।।
পানিহাটি গ্রামে পাইল প্রভুর দর্শন।
কীর্ত্তনীয়া সেবক সঙ্গে আর বহু জন।।
গঙ্গাতীরে বৃক্ষমূলে পিণ্ডার উপরে।’’

এই পিণ্ডার উপরে

এই গঙ্গাতীরে এই বৃক্ষমূলে—এই পিণ্ডার উপরে

এখনও সাক্ষী দিছে

সেই পানিহাটি গ্রাম—এখনও সাক্ষী দিছে
এই সেই বৃক্ষরাজ—এখনও সাক্ষী দিছে

‘‘গঙ্গাতীরে বৃক্ষমূলে পিণ্ডার উপরে।
বসিয়াছেন প্রভু যেন সূর্য্যোদয় করে।।’’

দেখিতে ত পেলাম না

প্রকট নিতাইচাঁদের বিহার—দেখিতে ত পেলাম না

‘‘বসিয়াছেন প্রভু যেন সূর্য্যোদয় করে।।
তলে উপরে বহু-ভক্ত হঞাছে বেষ্টিত।
দেখিয়া প্রভুর প্রভাব রঘুনাথ বিস্মিত।।
দণ্ডবৎ হইয়া পড়িলা কত দূরে।’’

স্বাভাবিক দৈন্য-বলে

আপনায় অযোগ্য মেনে—স্বাভাবিক দৈন্য-বলে

‘‘দণ্ডবৎ হইয়া পড়িলা কতদূরে।
সেবক কহে রঘুনাথ দণ্ডবৎ করে।।’’

ঐ যে অদূরে রঘুনাথ

‘‘শুনি প্রভু কহে চোরা ! দিলি দরশন।’’

কেন চোরা সম্বোধন করিলেন

আমার নিতাইচাঁদ তাঁরে—কেন চোর সম্বোধন করিলেন

কেন রঘুনাথে চোর বলিলেন
কেন তাঁর কি চুরি করেছে
দেখা তা হয় নাই
কেমন করে চুরি করল
এ ত ভিতরের কথা
চুরি করতে গিয়াছিল

তার সর্ব্বস্বধন-চুরি করতে গিয়াছিল
যাঁর ধন তাঁরে না জানায়ে—চুরি করতে গিয়াছিল

তারেই ত চোর বলে

যার ধন তারে না বলে নিলে—তারেই ত চোর বলে

তাই করলেন চোর সম্বোধন

আমার নিতাইচাঁদ—তাই করলেন চোর সম্বোধন

ভোগ করিতে গিয়াছিল

নিতাইচাঁদের বিনা আনুগত্যে—ভোগ করিতে গিয়াছিল
তাই—প্রভু তাঁরে দুইবার—ফিরায়ে দিয়েছিলেন

জগতেরে দেখাইলেন
আমায় ত কেউ পায় না

যত হউক বড় অধিকারী—আমায় ত কেউ পায় না
নিতাইর আনুগত্য বিনা—আমায় ত কেউ পায় না

তাই প্রভু জানাইলেন

‘‘শুনি প্রভু কহে চোরা ! দিলি দরশন।
আয় আয় চোরা তোরে করিব দণ্ডন।।
প্রভু বোলায় তিহঁ নিকটে না করে গমন।
আকর্ষিয়া তাঁর মাথে ধরিল চরণ।।’’

মাথে দিলা শ্রীচরণে

রঘুনাথে নিত্যদাস জেনে—মাথে দিলা শ্রীচরণে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

শ্রীরঘুনাথ দাস—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
নিতাইচাঁদের চরণ ধরে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বলে,–আমি কি গৌরাঙ্গ পাব

বল বল প্রভু নিতাই—আমি কি গৌরাঙ্গ পাব

কে পেয়েছে গৌর-ধনে

কোন কালে কোন গুণে—কে পেয়েছে গৌর-ধনে
প্রভু নিতাই তোমার কৃপা বিনে—কে পেয়েছে গৌর-ধনে

ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে

আসি এই বৃক্ষমূলে—ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে
পড়ে নিতাই-পদতলে—ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে

[মাতন]
ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে
বল বল প্রভু নিতাই

আমি কি গৌরাঙ্গ পাব-ল বল প্রভু নিতাই

ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে

এই বৃক্ষতলে এই গঙ্গা-কূলে ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে
পড়ে,–নিতাইচাঁদের পদতলে—ব্যাকুল হয়ে রঘুনাথ কাঁদে

[মাতন]

‘‘কৌতুকী নিত্যানন্দ সহজে দয়াময়।
রঘুনাথে কহে কিছু হইয়া সদয়।।
নিকটে না আইস চোরা ভাগ দূরে দূরে।
আজি লাগি পাইয়ছি দণ্ডিব তোমারে।।’’

আজ তোমায় দণ্ড করব

আমার ধন,–আমায় না বলে ভোগ করিতে চাও—আজ তোমায় দণ্ড করব

আজ তোমায় দণ্ড করব

‘‘দধি চিড়া ভাল মনে খাওয়াও মোর গণে।’’

এই কৃপা দণ্ড কৈল
সেই দিন হতে প্রচার হল

শ্রীমালসাভোগের প্রথা—সেই দিন হতে প্রচার হল
দধি চড়া মহোৎসব—সেই দিন হতে প্রচার হল

ভোজন করাও আমার গণে

‘‘শুনিয়া আনন্দ হৈল রঘুনাথের মনে।।
সেইক্ষণে নিজ লোক পাঠাইলা গ্রামে।
ভক্ষ্য দ্রব্য লোক সব গ্রাম হইতে আনে।।
চিড়া দধি দুগ্ধ সন্দেশ আর চিনি কলা।
আনি আনি প্রভু আগে সকল ধরিলা।।
মহোৎসব নাম শুনি ব্রাহ্মণ সজ্জন।
আসিতে লাগিল লোক অসংখ্য গণন।।
আর গ্রামান্তর হৈতে সামগ্রী আইল।
শত দুই চারি হোলনা তাঁহা মাগাইল।।
বড় বড় মৃৎকুণ্ডিকা আনাইল পাঁচ সতে।
এক বিপ্র প্রভু লাগি ভিজাইল তাতে।।
এক ঠাঁঞি তপ্ত দুগ্ধে চিড়া ভিজাইয়া।
অর্দ্ধেক ছানিল দধি চিনি কলা দিয়া।।
অর্দ্ধেক ঘনাবর্ত্ত দুগ্ধেতে ছানিল।
চাঁপাকলা চিনি ঘৃত কর্পূর তাতে দিল।।
ধূতি পরি প্রভু যদি পিণ্ডাতে বসিল।
সাত কুণ্ডি বিপ্র তাঁর অগ্রেতে ধরিল।।’’

ব্যাকুল হয়ে ডাকে রে

গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—ব্যাকুল হয়ে ডাকে রে

বলে,–একবার এস হে

হা প্রাণ বিশ্বম্ভর,–একবার এস হে

অঙ্গীকার কর হে

তোমার,–রঘুনাথের কৃপা দণ্ড,–অঙ্গীকার কর হে

‘‘সাত কুণ্ডি বিপ্র তাঁর অগ্রেতে ধরিল।।
চবুতরা উপরে যত প্রভুর নিজগণ।
বড় বড় লোক বসিলা মণ্ডলী বন্ধন।।
রামদাস সুন্দরানন্দ দাস গদাধর।
মুরারি কমলাকর সদাশিব পুরন্দর।।
ধনঞ্জয় জগদীশ পরমেশ্বর দাস।
মহেশ গৌরদাস হোড় কৃষ্ণদাস।।
উদ্ধারণ আদি যত আর নিজজন।’’

ভ্রমর কি থাকে দূরে

কমল ফূটিল পরে,–ভ্রমর কি থাকে দূরে

এসেছেন সব ভক্তগণ

নিতাইচাঁদের প্রকাশেতে,–এসেছেন সব ভক্তগণ

‘‘উপরে বসিলা সব কে করে গণন।।
শুনি পণ্ডিত ভট্টাচার্য্য যত বিপ্র আইলা।
মান্য করি প্রভু সবারে উপরে বসাইলা।।
দুই দুই মৃৎকুণ্ডিকার সবার আগে দিল।
একে দুগ্ধ চিড়া আরে দধি চিড়া কৈল।।
আর যত লোক সব চৌতারা-তলানে।
মণ্ডলীবন্ধে বসিলা তার নাহিক গণনে।।
এক এক জনে দুই দুই হোলনা দেওয়াইল।
দুগ্ধচিড়া দধিচিড়া দুই ভিজাইল।।
কোন কোন বিপ্র উপরে স্থান না পাইয়া।
দুই হোলনায় চিড়া ভিজায় গঙ্গাতীরে গিয়া।।
তীরে স্থান না পাইয়া আর কত জন।
জলে নামি চিড়াদধি করয়ে ভক্ষণ।।
কেহ উপরে কেহ তলে কেহ গঙ্গাতীরে।
বিশজন তিন ঠাঁঞি পরিবেশন করে।।
হেন কালে আইলা তাঁহা রাঘব পণ্ডিত।
হাসিতে লাগিলা দেখি হইয়া বিস্মিত।।
নিসৃকড়ি নানামত প্রসাদ আনিল।
প্রভুরে আগে দিয়া ভক্তগণে বাঁটি দিল।।
প্রভুরে কহে তোমা লাগি ভোগ লাগাইল।
তুমি ইহা উৎসব কর ঘরে প্রসাদ রহিল।।
প্রভু কহে এদ্রব্য দিনে করিয়ে ভোজন।
রাত্রে তোমার ঘরে প্রসাদ করিব ভক্ষণ।।
গোপজাতি আমি বহু গোপগণ সঙ্গে।
বড় সুখ পাই আমি পুলিন-ভোজন-রঙ্গে।।
রাঘবে বসায়ে দুই কুণ্ডী দেয়াইল।
রাঘব বিবিধ চিড়া তাতে ভিজাইল।।
সকল লোকের চিড়া পূর্ণ যবে হৈল।
ধ্যানে তবে প্রভু মহাপ্রভুরে আনিল।।’’

একবার এস হে

এস আমার প্রাণ গৌর,–একবার এস হে
তোমার,–রঘুনাথের দণ্ডমহোৎসবে—একবার এস হে

একবার এস হে

‘‘ধ্যানে তবে প্রভু, মহাপ্রভুরে আনিল।।
মহাপ্রভু আইলা দেখি, নিতাই উঠিলা।।’’

আর কি প্রভু রইতে পারে

নিতাই ডেকেছে তাঁকে—আর কি প্রভু রইতে পারে

‘‘তার লঞা সবার চিড়া দেখিতে লাগিলা।।
সকলকুণ্ডী হোলনার চিড়া এক এক গ্রাস।
মহাপ্রভুর মুখে দেয় করি পরিহাস।।
হাসি মহাপ্রভু আর একগ্রাস লঞা।’’

একলা খেতে ভাল লাগে না

বলে, খাও নিতাই সোনা,–একলা খেতে ভাল লাগে না

‘‘তাঁর মুখে দিয়া খাওয়ান হাসিয়া হাসিয়া।।
এইমত নিতাই বেড়ায় সকল মণ্ডলে।’’

এই তরুতলে এই পীণ্ডার উপরে

এই গঙ্গা তীরে,–এই তরুতলে এই পীণ্ডার উপরে

‘‘এই মত নিতাই বেড়ায় সকল মণ্ডলে।
দাণ্ডাইয়া রঙ্গ দেখে বৈষ্ণব সকলে।।
কি করিয়া বেড়ায় ইঁহো কেহ নাহি জানে।’’

কেউ ত জানতে পারে না

কি করিয়া বেড়ায় নিতাই,–কেউ ত জানতে পারে না

‘‘কি করিয়া বেড়ায় ইঁহো কেহ নাহি জানে।
মহাপ্রভুর দর্শন পায় কোন ভাগ্যবানে।।’’

যারে দেখা দেয় কৃপা করে

সেই তাঁরে দেখতে পারে,–যারে দেখা দেয় কৃপা করে

‘‘মহাপ্রভুর দর্শন পায় কোন ভাগ্যবানে।।
তবে আসি নিত্যানন্দ আসনে বসিলা।
চারি কুণ্ডী আরোয়া চিড়া ডাহিনে রাখিলা।।
আসন দিয়া মহাপ্রভু তাঁহা বসাইল।।’’

আইস আইস বস বলে

ও আমার প্রাণ গৌর—আইস আইস বস বলে

আসন দিয়া মহাপ্রভু তাঁহা বসাইলা।
দুই ভাই তবে চিড়া খাইতে লাগিলা।।
দেখি নিত্যানন্দ প্রভু আনন্দিত হৈলা।
কত কত ভাবাবেশ প্রকাশ করিলা।।
আজ্ঞা দিল হরি বলি করহ ভোজন।
হরি হরি ধ্বনি উঠি ভরিল ভুবন।।
হরি হরি বলি বৈষ্ণব করয়ে ভোজন।
পুলিন ভোজন সবার হইল স্মরণ।।
নিত্যানন্দ প্রভু মহা কৃপালু উদার।
রঘুনাথের ভাগ্যে এত কৈল অঙ্গীকার।।
নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপা জানিবে কোন জন।
মহাপ্রভু আনি করায় পুলিন ভোজন।।
শ্রীরামদাসাদি গোপ প্রেমাবিষ্ট হৈলা।
গঙ্গাতীরে যমুনা-পুলিন জ্ঞান কৈলা।।
মহোৎসব শুনি পশারি নানা গ্রাম হৈতে।
চিড়া দধি সন্দেশ কলা আনিল বেচিতে।।
যত দ্রব্য মূল্য দিয়া তাহারে খাওয়ায়।।
কৌতুক দেখিতে আইল যত যত জন।।
সেই চিড়া দধি কলা করিল ভক্ষণ।।
ভোজন করি নিত্যানন্দ আচমন কৈল।
চারি কুণ্ডীর অবশেষ রঘুনাথে দিল।।
আরি তিন কুণ্ডিকায় যেবা অবশেষ ছিল।
গ্রাস গ্রাস করি বিপ্র সব ভক্তে দিল।।
চন্দন আনিয়া প্রভুর শ্রীঅঙ্গে লেপিল।
পুষ্পমালা বিপ্র আনি প্রভু গলে দিল।।
সেবকে তাম্বূল লঞা করিল অর্পণ।
হাসিয়া হাসিয়া প্রভু করয়ে চর্ব্বণ।।
মালা চন্দন তাম্বূল শেষ যে আছিল।
শ্রীহস্তে প্রভু তাহা সবারে বাঁটি দিল।।
আনন্দিত রঘুনাথ প্রভুর শেষ পাঞা।
আপনার গণ সহিত খাইল বাঁটিয়া।।
এই ত কহিল নিত্যানন্দের বিহার।
চিড়া দধি মহোৎসব খ্যাত নাম যার।।
প্রভু বিশ্রাম কৈল যদি দিন শেষ হইল।
রাঘব মন্দিরে তবে কীর্ত্তন আরম্ভিল।।
ভক্তগণে নাচাইয়া নিত্যানন্দ রায়।
শেষে নৃত্য করে প্রেমে জগৎ ভাসায়।।
মহাপ্রভু তাঁর নৃত্য করেন দর্শন।
সবে নিত্যানন্দ দেখে না দেখে অন্য জন।।
নিত্যানন্দের নৃত্য যেন তাঁহারই নর্ত্তন।
উপমা দিবারে নাহি এ তিন ভুবন।।
নৃত্যের মাধুরী কেবা পারে বর্ণিবারে।
মহাপ্রভু আইসে যাঁর নৃত্য দেখিবারে।।
নৃত্য করি প্রভু যবে বিশ্রাম করিলা।
ভোজনের লাগি পণ্ডিত নিবেদন কৈলা।।
ভোজনে বসিলা প্রভু নিজগণ লঞা।
মহাপ্রভুর আসন ডাহিনে পাতিয়া।।
মহাপ্রভু আসি সেই আসনে বসিলা।
দেখি রাঘবের মনে আনন্দ বাড়িলা।।
দুই ভাই আগে প্রসাদ আনিয়া ধরিলা।
সকল বৈষ্ণবে শেষে পরিবেশন কৈলা।।
নানা প্রকার পায়স পিঠা দিব্য শাল্যন্ন।
অমৃত নিন্দয়ে ঐছে বিবিধ ব্যঞ্জন।।
রাঘবের ঠাকুরের প্রসাদ অমৃতের সার।
মহাপ্রভু যাহা খাইতে আইসে বার বার।।
পাক করি রাঘব যবে ভোগ লাগায়।
মহাপ্রভু লাগি ভোগ পৃথক বাড়ায়।।
প্রতিদিন মহাপ্রভু করেন ভোজন।
মধ্যে মধ্যে প্রভু তাঁরে দেন দরশন।।
দুই ভাইকে রাঘব আনি পরিবেশে।
যত্ন করি খাওয়ায় না রহে অবশেষে।।
কত উপহার আনে হেন নাহি জানি।
রাঘবের গৃহে রান্ধে রাধা-ঠাকুরাণী।।
দুর্ব্বাসারে ঠাঁই তিঁহ পাইয়াছেন বরে।
অমৃত হৈতে তাঁর পাক অধিক মধুরে।।
সুগন্ধি সুন্দর প্রসাদ মাধুর্য্যের সার।
দুই ভাই খাঞা পাইল সন্তোষ অপার।।
ভোজনে বসিতে রঘুনাথে কহে সর্ব্বজন।
পণ্ডিত কহে ইঁহ পাছে করিবেন ভোজন।।
ভক্তগণ আকণ্ঠ ভরি করিল ভোজন।
হরিধ্বনি করি উঠি কৈল আচমন।।
ভোজন করি দুই ভাই কৈল আচমন।
রাঘব আনি পরাইল মাল্য চন্দন।।
বিঁড়া খাওয়াইয়া কৈল চরণ বন্দন।।
ভক্তগণে দিল বিঁড়া মাল্য চন্দন।।
রাঘবের মহাকৃপা রঘুনাথের উপরে।
দুই ভায়ের অবশিষ্ট পাত্র দিল তাঁরে।।
কহিল চৈতন্য প্রভু করিয়াছেন ভোজন।
তাঁর শেষ পাইলে তোমার খণ্ডিল বন্ধন।।
ভক্ত চিত্তে ভক্ত গৃহে প্রভুর সদা অবস্থান।
কভু গুপ্ত কভু ব্যক্ত স্বতন্ত্র ভগবান্।।
সর্ব্বত্র ব্যাপক প্রভু সর্ব্বত্র সদা বাস।
ইহাতে সংশয় যার সেই যায় নাশ।।
প্রভাতে নিত্যানন্দ গঙ্গাস্নান করিয়া।
সেই বৃক্ষমূলে বসিলা নিজগণ লঞা।।
রঘুনাথ আসি কৈল চরণ বন্দন।
রাঘব পণ্ডিত দ্বারা কিছু কৈল নিবেদন।।’’

প্রভু নিতাইচাঁদের লীলা
রঘুনাথ বলেন কাতরে
আমি কি গৌরাঙ্গ পাব,

নিতাইৃ-চরণ ধরি কাঁদি রঘুনাথ বলেন,–আমি কি গৌরাঙ্গ পাব
বল বল প্রভু নিতাই,–আমি কি গৌরাঙ্গ পাব

নিতাইচাঁদের,–পদ ধরি রঘুনাথ কাঁদে

এই বট বৃক্ষ-মূলে—নিতাইচাঁদের,–পদ ধরি রঘুনাথ কাঁদে

আমি কি গৌরাঙ্গ পাব

আমি অস্পৃশ্য বিষয় সেবি—আমি কি গৌরাঙ্গ পাব

গৌর পাবার কোন আশা নাই

একমাত্র তোমার ভরসা নিতাই,–নৈলে,–গৌর পাবার কোন আশা নাই

‘‘অধম পামর মুই হীন জীবাধম।
মোর ইচ্ছা হয় পাঙ চৈতন্যচরণ।।
বামন হইয়া চন্দ্র ধরিবারে চায়।
অনেক যত্ন কৈনু তাতে কভু সিদ্ধ নয়।
যতবার পালাই আমি গৃহাদি ছাড়িয়া।
পিতামাতা দুইজনে রাখেন বান্ধিয়া।।
তোমার কৃপা কৈলে তাঁরে অধমেও পায়।।
তুমি কৃপা কৈলে তাঁরে অধমেও পায়।।
অযোগ্য মুই নিবেদন করিতে করি ভয়।
মোরে চৈতন্য দাও গোঁসাঞি হইয়া সদয়।।
মোর মাথে পদ ধরি করহ প্রসাদ।
নির্ব্বিঘ্নে চৈতন্য পাঙ কর আশীর্ব্বাদ।।
শুনি হাসি কহে প্রভু সব ভক্তগণে।
ইহার বিষয় সুখ ইন্দ্রসুখ সমে।।
চৈতন্য-কৃপাতে সেই নাহি ভায় মনে।
সবে আশীর্ব্বাদ কর পায় চৈতন্যচরণে।।’’

ইঙ্গিত করে এই জানাইলেন

‘‘ভক্তগণ-কৃপা হইতে, পরাণ গৌরাঙ্গ পাইতে,
এইমাত্র কৈল উপায়ে।।’’
‘‘তবে রঘুনাথে প্রভু নিকটে বোলাইলা—’’

আইস আইস আইস বলে

প্রেম দিঠে চেয়ে অমিয়া মাখান বোলে,–আইস আইস আইস বলে

‘‘কৃষ্ণ পাদপদ্ম গন্ধ যেই জন পায়।
ব্রহ্মলোক আদি সুখ তারে নাহি ভায়।।
তবে রঘুনাথে প্রভু নিকটে বোলাইলা।
তাঁর মাথে পদ ধরি কহিতে লাগিলা।।
তুমি করাইলে এই পুলিন ভোজন।
তোমায় কৃপা করি গৌর কৈল আগমন।।
কৃপা করি কৈল চিড়া দুগ্ধ ভোজন।
নৃত্য দেখি রাত্রে কৈল প্রসাদ ভক্ষণ।।
তোমা উদ্ধারিতে গৌর আইল আপনে।
ছুটিল তোমার যত বিঘ্নাদি বন্ধনে।।
স্বরূপের স্থানে তোমা করিবে সমর্পণে।
অন্তরঙ্গ ভৃত্য করি রাখিবে চরণে।
নিশ্চিন্ত হইয়া যাও আপন ভবন।
অচিরে নির্ব্বিঘ্নে পাবে চৈতন্য-চরণ।।
সব ভক্তগণে তাঁরে আশীর্ব্বাদ করাইল।
তাঁ-সবার চরণ রঘুনাথ বন্দিল।।’’

আজ সেই লালার দিন

রঘুনাথের দণ্ডমহোৎসব,–আজ সেই লীলার দিন

এই সেই লীলা ভূমি
ত্রিকাল সত্য তোমার লীলা

হা নিতাই প্রভু নিতাই,–ত্রিকাল সত্য তোমার লীলা।

এসেছি সব ভাই ভাই মিলে

আজ সেই অশায় বুক বেঁধে,–এসেছি সব ভাই ভাই মিলে

এই তোমার লীলার স্থলে

আজ তোমার আগমনের দিনে—এই তোমার লীলার স্থলে

এসেছি সব ভাই ভাই মিলে
একবার দেখা দিবে কি

হা নিতাই প্রভু নিতাই,– একবার দেখা দিবে কি

‘‘প্রভু-আজ্ঞা লঞা বৈষ্ণবের আজ্ঞা লইল।
রাঘব সহিত নিভৃতে যুক্তি করিল।।
যুক্তি করি শত মুদ্রা সোনা তোলা-সাতে।
নিভৃতে দিল প্রভুর ভাণ্ডাবীর হাতে।।
তারে নিষেধিল প্রভুকে এবে না কহিবে।
নিজঘরে যাবে যবে তবে নিবেদিবে।।
তবে রাঘব পণ্ডিত তাঁরে ঘরে লঞা গেলা।
ঠাকুর দর্শন করাঞা মালা-চন্দন দিলা।।
অনেক প্রসাদ দিল পথে খাইবার তরে।
তবে রঘুনাথ দাস কহে পণ্ডিতেরে।।
প্রভুর সঙ্গে যত প্রভুর ভৃত্যাশ্রিত জন।
পূজিতে চাহিয়ে আমি সবার চরণ।।
বিশ পঞ্চদশ বার দশ পঞ্চ দ্বয়।
মুদ্রা দেহ বিচারিয়া যোগ্য যাহা হয়।।
সব লেখা বিচারিয়া রাঘব পাশ দিল।
যার নামে যত রাঘব চিঠি লেখাইলা।।
একশত মুদ্রা আর সোনা তোলাদ্বয়।
পণ্ডিতের আগে দিলা করিয়া বিনয়।।
তাঁর পদধূলি লঞা স্বগৃহে আইলা।
নিত্যানন্দ-কৃপা পাঞা কৃতার্থ মানিলা।।
হেনমতে নিত্যানন্দ পানিহাটি গ্রামে।
রহিলেন সকল পার্ষদগণ-সনে।।
নিরন্তর পরানন্দে করেন হুঙ্কার।
বিহ্বলতা বই দেহে বাহ্য নাহি আর।
নৃত্য করিবার ইচ্ছা হইল অন্তরে।
গায়ক সকল আসি মিলিল সত্বরে।।’’

এই সেই নৃত্যভূমি

এই সেই পানিহাটি গ্রাম—এই সেই নৃত্যভূমি
এই সেই গঙ্গাতীর—এই সেই নৃত্যভূমি
এই সেই বট বৃক্ষরাজ—এই সেই নৃত্যভূমি
নাচে নিতাই গুণমণি—এই সেই নৃত্যভূমি
‘নাচে নিতাই গুণমণি’—
গৌর-প্রেমে মত্ত হয়ে—নাচে নিতাই গুণমণি

এই সেই নৃত্যভূমি
নিতাই কেঁদে গৌর বলে

এই বট বৃক্ষমূলে—নিতাই কেঁদে গৌর বলে

(মাতন)

‘‘সুকৃতি-মাধব-ঘোষ কীর্ত্তনে তৎপর।
হেন কীর্ত্তনীয়া নাহি পৃথিবী ভিতর।।
যাহারে কহেন বৃন্দাবনের গায়ন।
নিত্যানন্দ স্বরূপের মহা প্রিয়তম।।
মাধব গোবিন্দ বাসুদেব তিন ভাই।
গাইতে লাগিলা নাচে ঈশ্বর-নিতাই।।
হেন সে নাচেন অবধূত মহাবল।
পদভরে পৃথিবী করয়ে টলমল।।’’

আনন্দ আর ধরে না

ভাগ্যবতী-ধরণীর—আনন্দ আর ধরে না
ধরণীধরে হৃদে ধরে—আনন্দ আর ধরে না

‘‘নিরবধি হরি বলি করেন হুঙ্কার।
আছাড় দেখিতে লোকে লাগে চমৎকার।।
যারে করেন দৃষ্টি নাচিতে নাচিতে।
সেই প্রেমে ঢলিয়া পড়েন পৃথিবীতে।।’’

যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়

প্রেমিক নিতাই প্রেম দিঠে—যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়
স্থাবর-জঙ্গম গুল্ম-লতা—যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়

‘‘পরিপূর্ণ প্রেমরসময় নিত্যানন্দ।
সংসার তারিতে করিলেন শুভারম্ভ।।
যতেক আছয়ে প্রেমভক্তির বিকার।
সব প্রকাশিয়া নৃত্য করেন অপার।।’’

এই পাণিহাটি গ্রাম

প্রথম প্রেম প্রচারের স্থান—এই পাণিহাটি গ্রাম

‘‘কথোক্ষণে বসিলেন খট্টার উপরে।
আজ্ঞা হইল অভিষেক করিবার তরে।।
রাঘব পণ্ডিত আদি পারিষদগণে।
অভিষেক করিতে লাগিলা সেইক্ষণে।।
সহস্র সহস্র ঘট আনি গঙ্গাজল।
নানাগন্ধে সুবাসিত করিয়া সকল।।
সন্তোষে সভেই দেয় মস্তকোপরি।
চতুর্দ্দিগে সবেই বোলেন হরি হরি।।
সভেই পড়েন অভিষেক মন্ত্রগীত।
পরানন্দে সবেই হইয়া আনন্দিত।।
অভিষেক করাইয়া নূতন বসন।
পরাইয়া লেপিলেন শ্রীঅঙ্গ চন্দন।।
দিব্য দিব্য বনমালা তুলসী সহিতে।
পীন রক্ষঃ পূর্ণ করিলেন নানামতে।।
তবে দিব্য খট্টা সভে করিয়া ভূষিত।
সম্মুখে আনিয়া করিলেন উপনীত।।
খট্টায় বসিয়া মহাপ্রভু নিত্যানন্দ।
ছত্র ধরিলেন শিরে শ্রীরাঘবানন্দ।।
জয়ধ্বনি করিতে লাগিলা ভক্তগণ।
চতুর্দ্দিগে হইল মহা-আনন্দ ক্রন্দন।।
ত্রাহি ত্রাহি সভেই বলেন বাহু তুলি।
কারো বাহ্য নাহি সভে মহাকুতূহলী।।
স্বানুভবানন্দে প্রভু নিত্যানন্দ রায়।
প্রেমদৃষ্টি-বৃষ্টি করি সর্ব্বদিগে চায়।।’’

যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়

আমার প্রভু নিত্যানন্দ রায়—যেদিকে চায় প্রেমে মাতায়

‘‘আজ্ঞা করিলেন শুন রাঘব পণ্ডিত
কদম্বের মালা গাঁথি আনহ ত্বরিত।।
বড় প্রীত আমার কদম্বপুষ্পপ্রতি।
কদম্বের বনে নিত্য আমার বসতি।।
করযোড় করিয়া রাঘবানন্দ কহে।
কদম্ব-পুষ্পের যোগ এ সময়ে নহে।।
প্রভু বলে বাড়ী গিয়া চাহ ভাল মনে।
কদাচিত ফুটিয়া বা থাকে কোন স্থানে।।
বাড়ীর ভিতরে গিয়া চাহেন রাঘব।
বিস্মিত হইয়া দেখি মহা-অনুভব।।
জাম্বীরের বৃক্ষে সব কদম্বের ফুল।
ফুটিয়া আছয়ে অতি পরম অতুল।।
কি অপূর্ব্ব বর্ণ সে-বা কি অপূর্ব্ব গন্ধ।
সে পুষ্প দেখিলে ক্ষয় যায় সর্ব্ববন্ধ।।
দেখিয়া কদম্ব-পুষ্প রাঘব পণ্ডিত।
বাহ্য দূরে গেল হৈল মহা আনন্দিত।।’’

না হবে বা কেন রে
চিন্তামণি ভূমি রে
সকলই দিতে পারে

এই ভূমির তরুগুল্ম—সকলই দিতে পার
গৌর-গোবিন্দের সেবার তরে—সকলই দিতে পারে

সকলই ফুল ফল ধরে

গৌর-গোবিন্দ-ইচ্ছা পূরণ করে—সকলই ফুল ফল ধরে
এই ভূমির তরুলতার সকলই ফুল ফল ধরে
নিতাই-গৌরাঙ্গের সেবার তরে—সকলই ফুল ফল ধরে

(মাতন)

‘‘আপনা সম্বরি মালা গাঁথিয়া সত্বরে।
আনিলেন নিত্যানন্দ-প্রভুর গোচরে।।
কদম্বের-মালা দেখি নিত্যানন্দ রায়।
পরম সন্তোষে মালা দিলেন গলায়।।
কদম্ব-মালার গন্ধে সকল বৈষ্ণব।
বিহ্বল হইয়া দেখি মহা-অনুভব।।
আর মহা আশ্চর্য্য হইল কথোক্ষণে।
অপূ্র্ব্ব দনার গন্ধ পায় সর্ব্বজনে।।
দমনক-পুষ্পের সুগন্ধে মন হরে।
দশদিগ্ ব্যাপ্ত হইল সকল মন্দিরে।।
হাসি নিত্যানন্দ বলে আরে ভাই-সব ।
বোল দেখি কি গন্ধের পাও অনুভব।
করযোড় করি সবে লাগিলা কহিতে।
অপূর্ব্ব দনার গন্ধ পাই চারিদিগে।।’’

সকলেই পাই মোরা

অপূর্ব্ব দনার গন্ধ—সকলেই পাই মোরা

‘‘সভার বচন শুনি নিত্যানন্দ রায়।।
কহিতে লাগিলা গোপ্য পরম কৃপায়।।
প্রভু বলে শুন সবে পরম রহস্য।
তোমরা সকলে ইহা জানিবে অবশ্য।।
চৈতন্য গোঁসাই আজি শুনিতে কীর্ত্তন
নীলাচল হৈতে করিলেন আগমন।।
সর্ব্বাঙ্গে পরিয়া দিব্য দমনক মালা।
একবৃক্ষে অবলম্ব করিয়া রহিলা।।
সেই শ্রীঅঙ্গের দিব্য দমনক গন্ধে।
চতুর্দ্দিগে পূর্ণ হই আছয়ে আনন্দে।
তোমা সভার নৃত্য কীর্ত্তন দেখিতে।
আপন আইসে প্রভু নীলাচল হইতে।।’’

অপরূপ রহস্য ভাই

আমার,–নিগূঢ় গৌরাঙ্গ-লীলার—অপরূপ রহস্য ভাই

গৌর আগমন কারণ কহিলেন নিতাই

আপনা গোপন করি—গৌর আগমন কারণ কহিলেন নিতাই

এসেছিলেন প্রাণের নিতাই

এই দিনে এইখানে – এসেছিলেন প্রাণের নিতাই

এসেছিলেন গৌর-সুন্দর

তাঁর নর্ত্তন দেখিবার লাগি—এসেছিলেন গৌর-সুন্দর

শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি

মধুর নীলাচলে বসে—শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি

ব্যাকুল হয়ে বলে রে

আমি তোমাদের ছাড়া থাকি না—ব্যাকুল হয়ে বলে রে

‘‘শ্রীশচীমাতার রন্ধনে –শ্রীবাস-অঙ্গনে।
শ্রীরাঘব-ভবনে আর নিত্যানন্দ-নর্ত্তনে।।’’

এই চারি ঠাঁই আমি থাকি সর্ব্বথা
আমি থাকি সর্ব্বদা

নিতাই-নর্ত্তনে রাঘব-ভবনে—আমি থাাকি সর্ব্বদা

এখানে আমি থাকি সর্ব্বদা
কিন্তু,–নিতাই আত্ম-গোপন করিলেন

নিজ-গণের কাছে—কিন্তু,–নিতাই আত্ম-গোপন করিলেন
নিজ-গণের মহিমা বাড়াইতে—নিতাই আত্ম-গোপন করিলেন

এই ত বটে গুপ্তকথা
এই ত বটে গুপ্তস্থান
এসেছেন প্রাণ গৌর

তাই নিতাই-নর্ত্তনে এসেছেন প্রাণ গৌর

আশা ত মিটে নাই
দেখিতে ত পায় নাই
নিতাই-নর্ত্তন তাঁর নর্ত্তন
কখনও ত দেখে নাই

নিতাই-নর্ত্তনে কত মাধুরী—কখনও ত দেখে নাই

তাই দেখতে এসেছে

নিতাই—নর্ত্তনে আপন নটন—তাই দেখতে এসেছে

ভোগ করতে এসেছে

নিতাই-নর্ত্তনে আপন নটন-মাধুরী—ভোগ করতে এসেছে
নিতাই-নটন দেখে আপন নর্ত্তন—ভোগ করতে এসেছে

আবরণ দিয়ে বললেন নিতাই

আপনার গোপ্য কথা—আবরণ দিয়ে বললেন নিতাই

সেই লীলা অনুভব কর ভাই

আজ সেই লীলার দিন—সেই লীলা অনুভব কর ভাই
এই সেই লীলার স্থান—সেই লীলা অনুভব কর ভাই
শ্রীগুরুদেবেরে কৃপায়—সেই লীলা অনুভব কর ভাই
যদি মিলেছ সব ভাই ভাই—সেই লীলা অনুভব কর ভাই

এই সেই লীলা-ভূমি

নাচে নিতাই গুণমণি—এই সেই লীলা-ভূমি

নাচে আমার নিতাই-সুন্দর

‘‘তোমা-সভার নৃত্য-কীর্ত্তন দেখিতে।
আপনে আইসে প্রভু নীলাচল হইতে।।’’

প্রাণ খুলে বল ভাই
প্রাণ-গৌর আইলা নীলাচল হইতে

নিতাই-নটন দেখিতে–প্রাণ-গৌর আইলা নীলাচল হইতে
এইদিনে এইখানে—প্রাণ-গৌর আইলা নীলাচল হইতে
নিতাই-চাঁদের নটন দেখিতে—প্রাণ-গৌর আইলা নীলাচল হইতে

গৌর আইলা পানিহাটিতে

নিতাই-নর্ত্তনে আপন নর্ত্তন ভোগ করিতে—গৌর আইলা পানিহাটিতে

পানিহাটিতে আইলা গৌর

এইদিনে এইখানে,–পানিহাটিতে আইলা গৌর
নিতাই-নর্ত্তন দেখিতে—পানিহাটিতে আইলা গৌর

‘‘এতেকে তোমরা সর্ব্ব-কার্য্য পরিহরি।
নিরবধি ‘কৃষ্ণ’ গাও আপনা পাশরি।।’’

অনুভব কর ভাই রে
ইঙ্গিত করে বলছে নিতাই

কোন কৃষ্ণ গাইতে—ইঙ্গিত করে বলছে নিতাই

মন দিয়ে শুন ভাই

‘‘নিরবধি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-চন্দ্র-যশে।
সভার শরীর পূর্ণ হউ প্রেমরসে।।’’

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য

প্রাণভরে বল ভাই—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য

আন কথা বলবে কেনে

গৌরপ্রেমের পাগলা নিতাই—আন কথা বলবে কেনে

প্রাণভরে গাও সবে

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম—প্রাণভরে গাও সবে

‘‘এতবলি হরি বলি করয়ে হুঙ্কার।
সর্ব্বদিগে কৃষ্ণপ্রেম করিলা বিস্তার।।’’

আমার নিতাই যে দিকে চায়

আচণ্ডালে প্রেমে মাতায়—আমার নিতাই যে দিকে চায়
‘‘নিত্যানন্দ-স্বরূপের প্রেমদৃষ্টিপাতে।’’

সবাই হইল আত্মহারা
সবাই প্রেমে মাতল

নিতাই আমার একবার চাইতে—সবাই প্রেমে মাতল

‘‘সভার হইল আত্মবিস্মৃতি দেহেতে।।
শুন শুন আরে ভাই নিত্যানন্দশক্তি।
যেরূপে দিলেন সর্ব্বজগতেরে ভক্তি।।
যে ভক্তি গোপিকাগণের কহে ভাগবতে।
নিত্যানন্দ হইতে তাহা পাইল জগতে।।
নিত্যানন্দ বসিয়া আছেন সিংহাসনে।
সম্মুখে করয়ে নৃত্য পারিষদগণে।।
কেহো গিয়া বৃক্ষের উপর-ডালে চড়ে।
পাতে পাতে বেড়ায় তথাপি নাহি পড়ে।।
কেহোকেহো প্রেমসুখে হুঙ্কার করিয়া।
বৃক্ষের উপরে থাাকি পড়ে লাফ দিয়া।।
কেহো বা হুঙ্কার করি বৃক্ষমূল ধরি।
উপাড়িয়া ফেলে বৃক্ষ বলি হরিহরি।।
কেহো বা গুবাক্‌ বনে যায় বড় দিয়া।
গাছ-পাঁচ-সাত গুয়া একত্র করিয়া।।
হেন সে দেহেতে জন্মিয়াছে প্রেমবল।
তৃণপ্রাণ উপাড়িয়া ফেলায় সকল।।
অশ্রু, কম্প, স্তম্ভ, ঘর্ম্ম, পুলক, হুঙ্কার।
স্বরভঙ্গ, বৈবর্ণ্য, গর্জ্জন, সিংহসার।।
শ্রীআনন্দ মূর্চ্ছা-আদি যত প্রেমভাব।
ভাগবতে কহে যত কৃষ্ণ-অনুরাগ।।
সভার শরীরে পূর্ণ হইল সকল।
হেন নিত্যানন্দ স্বরূপের প্রেমবল।।
যেদিগে দেখেন নিত্যানন্দ মহাশয়।
সেই-দিগে মহা-প্রেমভক্তি-বৃষ্টি হয়।।
যাঁহারে চা’হেন সে-ই প্রেমে মূর্চ্ছা পায়।
বস্ত্র না সম্বরে ভূমে পড়ি গড়ি যায়।
নিত্যানন্দস্বরূপেরে ধরিবারে যায়।
হাসে নিত্যানন্দপ্রভু বসিয়া খট্টায়।।
যত পারিষদ নিত্যানন্দের প্রধান।
সভারে হইল সর্ব্বশক্তি-অধিষ্ঠান।।
সর্ব্বজ্ঞাতা বাক্যসিদ্ধ হইল সভার।
সভেই হইলেন যেন কন্দর্প-আকার।।
সভে যারে পরশ করেন হস্ত দিয়া।
সে-ই হয় বিহ্বল সকল পাসরিয়া।।
এই মত পানিহাটি-গ্রামে তিনমাস।
করে নিত্যানন্দপ্রভু ভক্তির বিলাস।।’’

প্রভু নিতাইচাঁদের লীলা

এই পানিহাটি-গ্রামে—প্রভুনিতাইচাঁদের লীলা

পানিহাটি আইলা নিতাইসুন্দর

চারিদিকে পড়িল সাড়া—পানিহাটি আইলা নিতাইসুন্দর

‘‘তিনমাস কারো বাহ্য নাহিক শরীরে।
দেহ-ধর্ম্ম তিলার্দ্ধোকো কাহারো না স্ফরে।।
তিনমাস কেহো নাহি করিল আহার।
সভে প্রেমসুখে নৃত্য বই নাহি আর।।
পানিহাটিগ্রামে যত হৈল প্রেমসুখ।
চারিবেদে বর্ণিবেন সে সব কৌতুক।।
একোদণ্ডে নিত্যানন্দ করিলেন যত।
তাহা বর্ণিবার শক্তি আছে কার কত।।
ক্ষণেক্ষণে আপনে করেন নৃত্যরঙ্গ।
চুতর্দ্দিগে লই সব পারিষদসঙ্গ।।
কখনো বা আপনে বসিয়া বীরাসনে।
নাচায়েন সকল সেবক জনেজনে।।
একো সেবকের নৃত্যে হেন রঙ্গ হয়।
চতুর্দ্দিগে দেখি যেন প্রেম-বন্যাময়।।
মহাঝড়ে পড়ে যেন কদলক-বন।
এইমত প্রেমসুখে পড়ে সর্ব্বজন ।।
আপনে যে-হেন মহাপ্রভু নিত্যানন্দ।
সেইমত করিলেন সর্ব্ব-ভক্তবৃন্দ।।
নিরবধি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-সঙ্কীর্ত্তন।
করালেন করেন লইয়া সর্ব্বগণ।।
হেন সে লাগিলা প্রেম প্রকাশ করিতে।
সে-ই হয় বিহ্বল যে আইসে দেখিতে।।
যে সেবক যখন যে ইচ্ছা করে মনে।
সে-ই আসি উপসন্ন হয় সেইক্ষণে।।
এইমত পরানন্দ প্রেমসুখরসে।
ক্ষণ হেন কেহো না জানিল তিন-মাসে।।
তবে মহাপ্রভু নিত্যানন্দ কথোদিনে।
অলঙ্কার পরিতে হইল ইচ্ছা মনে।।
ইচ্ছামাত্র সর্ব্ব-অলঙ্কার সেইক্ষণে।
উপসন্ন আসিয়া হৈল বিদ্যমানে।।
সুবর্ণ রজত মরকত মনোহর।
নানাবিধ বহুমূল্য কতেক প্রস্তর।।
মণি সুপ্রবাল পট্টবাস মুক্তাহার।
সুকৃতিসকলে দিয়া করে নমস্কার।।
কথো বা নির্ম্মিত কথো করিয়া নির্ম্মাণ।
পরিলেন অলঙ্কার যেন ইচ্ছা তান।।
দুই-হস্তে সুবর্ণের অঙ্গদ বলয়।
পুষ্ট করি পরিলেন আত্ম-ইচ্ছাময়।।
সুবর্ণমুদ্রিকা রত্নে করিয়া খিচন।
দশ-শ্রীঅঙ্গুলে শোভা করে বিভূষণ।।
কণ্ঠে শোভা করে বহুবিধ দিব্যহার।
মণি মুক্তা প্রবালাদি যত সর্ব্বসার।।
রুদ্রাক্ষ বিরাল-অক্ষ সুবর্ণ রজতে।
বান্ধিয়া ধরিলা কণ্ঠে মহেশের প্রীতে।।
মুক্তা শ্রুতিমূলে শোভে পরম শোভন।।
পাদপদ্মে রজন-নূপুর বিলক্ষণ।
তদুপরি মল্ল শোভে জগতমোহন।।
শুক্ল-পট্ট-নীল-পাত বহুবিধ বাস।
অপূর্ব্ব শোভয়ে পরিধানের বিলাস।।
মালতী মল্লিকা যূথী চম্পকের মালা।
শ্রীবক্ষে করয়ে দোল-আন্দোলন-খেলা।।
গোরাচেনা-সহিত চন্দন দিব্যগন্ধে ।
বিচিত্র করিয়া লেপিয়াছেন শ্রীঅঙ্গে।।
শ্রীমস্তকে শোভিত বিবিধ পট্টবাস।
তদুপরি নানাবর্ণ-মাল্যের বিলাস।।
প্রসন্ন শ্রীমুখ কোটি-শশধর যিনি।
হাসিয়া করেন নিরবধি হরিধ্বনি।।
যে-দিগে চাহেন দুই কমল-নয়নে।
সেইদিগ প্রেমরসে ভাসে সেইক্ষণে।।
রজতের প্রায় লৌহদণ্ড সুশোভন।
দুই-দিগে করি তথি সুবর্ণ বন্ধন।।
নিরবধি সেই লৌহদণ্ড শোভে করে
মুষল ধরিলা যেন প্রভু হলধরে।।
পারিষদো সব ধরিলেন অলঙ্কার।
অঙ্গদ, বলয়, মল্ল, নূপুর, সু-হার।।
শিঙ্গা, বেত্র, বংশী, ছাঁদা ডোরি, গুঞ্জামালা।
সভে ধরিলেন গোপালের অংশ-কলা।।
এই-মত নিত্যানন্দ স্বনুভাবরঙ্গে।
বিহরেণ সকল পার্ষদ করি সঙ্গে।।
তবে প্রভু সকল-পার্ষদগণ মেলি।
ভক্ত-গৃহেগৃহে করে পর্য্যটন-কেলি।।
জাহ্নবীর দুই কূলে যত আছে গ্রাম।
সর্ব্বত্র ফিরেন নিত্যানন্দ জ্যোতির্ধাম।।
দরশন-মাত্র সর্ব্বজীব মুগ্ধ হয়।
নাম তনু দুই নিত্যানন্দরসময়।।
পাষণ্ডীও দেখিলেই মাত্র করে স্তুতি।
সর্ব্বস্ব দিবারে সেইক্ষণে লয় মতি।।
নিত্যানন্দস্বরূপের শরীর মধুর।
সভারেই কৃপাদৃষ্টি করেন প্রচুর।।
কি ভোজনে, কি শয়নে কিবা পর্য্যটনে।
ক্ষণেকো না যায় ব্যর্থ সঙ্কীর্ত্তন বিনে।।
যেখানে করেন নৃত্য কৃষ্ণসঙ্কীর্ত্তন।
তথায় বিহ্বল হয় শতশত জন।।
গৃহস্থের শিশু সব কিছুই না জানে।
তাহারাও মহা-মহা-বৃক্ষ ধরি টানে।।
হুঙ্কার করিয়া বৃক্ষ ফেলে উপাড়িয়া।
‘মুঞি রে গোপাল’ বলি বেড়ায় ধাইয়া।।
হেন সে সামর্থ্য একো শিশুর শরীরে।
শতজনে মিলিয়াও ধরিতে না পারে।।
‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ’ বলি।
সিংহনাদ করে শিশু হই কুতূহলী।।
এইমত নিত্যানন্দ-বালকজীবন।
বিহ্বল করিতে লাগিলেন শিশুগণ।।
মাসেকেও একো শিশু না করে আহার।
দেখিতে লোকের চিত্তে লাগে চমৎকার ।।
হইলেন বিহ্বল সকল-ভক্তবৃন্দ।
সভার রক্ষক হইলেন নিত্যানন্দ।।
পুত্রপ্রায় করি প্রভু সভারে ধরিয়া।
করায়েন ভোজন আপনে হস্ত দিয়া।।
কারেও বা বান্ধিয়া রাখেন নিজ পাশে।
মারেন বান্ধেন—তভু অট্টঅট্ট হাসে।।’’

একবার দেখা দাও

হা নিতাই প্রভু নিতাই—একবার দেখা দাও

নিশ্চয় এসেছ তুমি

তোমার ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—নিশ্চয় এসেছ তুমি
তোমার ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—এই পানিহাটিতে,–নিশ্চয় এসেছ তুমি

নৈলে, এসেছে কার আকর্ষণে

সহস্র-সহস্র নর-নারী-নৈলে,–এসেছে কার আকর্ষণে
কেউ ত নিমন্ত্রণ করে নাই—নৈলে,–এসেছে কার আকর্ষণে

এসেছে শতশত কুলনারী

গৃহকর্ম্ম, কুল, লাজ পরিহরি—এসেছে শতশত কুলনারী
দেহগেহ পাসরি—এসেছে শতশত কুলনারী

দেহ স্বভাব ভুলিল কেমনে

বিনে তোমার আকর্ষণে—দেহ স্বভাব ভুলিল কেমনে

নিশ্চয় এসেছ তুমি
তখন জনম হয় নাই মোদের

যখন প্রকটলীলায় বিহরিলে—তখন জনম হয় নাই মোদের

দেখিতে ত পাই নাই

প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা—দেখিতে ত পাই নাই
‘প্রেম-পুরুষোত্তম লীলা’—
গঙ্গাতীরে এই বৃক্ষমূলে—প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা

দেখিতে ত পাই নাই
একবার দেখা দাও

ত পতিতের বন্ধু নিতাই—একবার দেখা দাও

নিশ্চয় এসেছ তুমি

তোমার ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—নিশ্চয় এসেছ তুমি

তুমি ত সকলি জান
জন্মেছিলাম সেইখানে

তোমার নাম গুণ নাই যেখনে—জন্মেছিলাম সেইখানে

নিজগুণে এনেছ টেনে

বর্হিমুখ-দেশ হতে—নিজগুণে এনেছ টেনে

নিতাই এসেছে পানিহাটিতে
আজ তাঁর আসবার দিন
প্রাণগৌর এসেছে

নিতাই-নটন দেখিতে—প্রাণগৌর এসেছে

দেখিতে ত পাই নাই

নিতাইচাঁদের বিহার—দেখিতে ত পাই নাই

অদ্যাপিও সাক্ষী দিছে

এই-লীলা-দর্শক তরুবর—অদ্যাপিত সাক্ষী দিছে

এই-তরুতলে নিতাই নাচে

গৌরহরি ভজ বলে—এই-তরুতলে নিতাই নাচে

আজ কতশত নরনারী
সবাই,–পাগল হয়ে এসেছে

গৃহ-কর্ম্ম পরিহরি—সবাই,–পাগল হয়ে এসেছে

এসেছে আমার প্রভু নিতাই

পানিহাটিতে প্রেম-বিলাতে—এসেছেন আমার প্রভু নিতাই

সেই অবধি খুঁজে বেড়াইছি

যেদিন হতে তোমার নাম শুনেছি—সেই অবধি খুঁজে বেড়াছি

আর,–কারে বা সুধাবো

কেবা মোদের দেখাইবে—আর,–কারে বা সুধাবো

বল বল ওগো সুরধুরী
বলে দে বলে দে

ভাগ্যবতী সুরধুনী—বলে দে বলে দে
গৌর-গরবিণা সুরধুনী—বলে দে বলে দে

তুমি ত সবই দেখে
শুনেছি শ্রীগুরু-মুখে

‘‘ব্রজরাজ নন্দের কুমার।
আস্বাদিতে প্রেম শ্রীরাধার।।
শ্রীরাধাভাব কান্তি অঙ্গীকরি।
অবতরী শ্রীনবদ্বীপ-পুরী।।
নিজ-পারিষদগণ-সঙ্গে।
বিহরিল সঙ্কীর্ত্তনরঙ্গে।।

তোমারি তীরে গো

গৌর-গরবিণী সুরধুনী—তোমারি তীরে গো

এখনও দেখ্‌ছে

তখন ত দেখ্‌ছে—এখনও দেখ্‌ছ
গৌরের ত্রিকাল-সত্য-লীলা—এখনও দেখ্‌ছ

বল বল ওগো সুরধুনী
কোথা কোথা বিহরে নিতাই-গুণমণি

অভিন্ন-চৈতন্য-তনু নিতাই—কোথা বিহরে নিতাই-গুণমণি

ভাগ্যবতী সুরধুনী
প্রভুনিতাই কোথা বিহরিছে
তখন জনম হয় নাই

যখন প্রকট-বিহার হল—তখন জনম হয় নাই

দেখতে ত পাই নাই নিতাই

যে অবতারে গৌর কৈলা আকর্ষণ—দেখতে ত পাই নাই নিতাই

শ্রীগুরু-মুখে শুনে

গৌরের ত্রিকাল-সত্য-লীলা—শ্রীগুরু-মুখে শুনে

তাই,–আশা করে এসেছি
এই-যে তোমায় খুঁজে এলাম
কত না কাঁদলাম

বীর হাম্বিরের গৃহে গিয়ে—কত না কাঁদলাম
কোথায় আছ শ্রীনিবাস বলে—কত না কাঁদলাম

ব্যাকুল হয়ে ডাকলাম

কোথায় আছ শ্রীনিবাস বলে—ব্যাকুল হয়ে ডাকলাম

দাও তোমার ব্যাকুলতা
পাগল হয়ে খুঁজে বেড়াই
এসেছি বড় আশা করে

ব্যাকুলতা পাবার লাগি—এসেছি বড় আশা করে
তোমার,–অহৈতুকী-কৃপা সঙরি—এসেছি বড় আশা করে

একবার দেখা দাও

হা নিতাই প্রভু নিতাই—একবার দেখা দাও

অনুভব করাও প্রাণে প্রাণে

এই ত তোমার লীলার স্থান—অনুভব করাও প্রাণে প্রাণে
গৌর-আবির্ভাব তোমার নটনে—অনুভব করাও প্রাণে প্রাণে

কোথায় আছ রঘুনাথ

নিতাইচাঁদের পদ ধরি,–কোথায় আছ রঘুনাথ
‘নিতাইচাঁদের পদ ধরি’—
সেই,–পতিত-আশ্রয় চরণ দু’খানি—নিতাইচাঁদের পদ ধরি

কোথায় আছ রঘুনাথ
বড় আশা করে এসেছি

নিতাই-বিহার দেখ্‌ব বলে,–বড় আশা করে এসেছি

প্রাণগৌর-আজ্ঞায় নাম প্রেম বিলাসে
বলে দে সুরধনী

তোমার তীরে প্রকট-বিহার—বলে দে সুরধুনী

কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গ

আমার প্রভুনিতাই-প্রাণগৌরাঙ্গের-কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গ

ভাগ্যবতী তোমার তীরে
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গ
একবার দেখাও গো

ভাগ্যবতী সুরধুনী—একবার দেখাও গো

একবার বলে দাও
বলে দাও বলে দাও

গৌর-গরবিণী সুরধুনী—বলে দাও বলে দাও

প্রাণে প্রাণে বলে দে

কোথা গেলে দেখতে পাব—প্রাণে প্রাণে বলে দে

কোথা গেলে তাঁর দেখা পাব

গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই—কোথা গেলে তাঁর দেখা পাব

যদি বা না দেখতে দিলে

আমাদের অধিকার নাই বলে—যদি বা না দেখতে দিলে

ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

তোমার নিতাই তোমার থাকবে—ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

একবার দেখব

গৌর-প্রেমের মূরতিখানি—একবার দেখ্‌ব

কোথা গেলে দেখতে পাব
প্রভু নিতাই কোথা বিহরিছে

নিজ-পরিকরগণ-সঙ্গে—প্রভুনিতাই কোথা বিহরিছে

একবার বলে দাও
প্রাণে প্রাণে বলে দাও
কথাও কৈলে না

ওগো ও সুরধুনী—কথাও কৈলে না

প্রাণে প্রাণে জানালে না

কতই না সুধাইলাম—প্রাণে প্রাণে জানলে না

বল বল ও তরুবর
ভূমিও লীলার সাক্ষী আছ
তোমারি তলে গো

প্রেমে মাতা মুরতিখানি—তোমারি তলে গো

তুমি ত দেখেছ

ভাগ্যবান্‌ তরুবর—তুমি ত দেখেছ
আজ দেখছ—তুমি ত দেখেছ
তোমার ত্রিকাল-সত্য-লীলায়,–আজও দেখ্‌ছ—তুমি ত দেখেছ

দয়া করে বলে দাও

কোথা গেলে নিতাই পাব—দয়া করে বলে দাও

একবার কি দেখাবে না

নাহি কোন সুকৃতি ভাগ্যহীন মোরা—একবার কি দেখাবে না
আমাদের অযোগ্যতা জেনে—একবার কি দেখাবে না

কথা যে কৈছ না

নিতাই সন্ধান বলে দিলে না—কথা যে কৈছ না

আর আর কাছে যাব

কেবা,–নিতাই সন্ধান বলে দিবে—আর কার কাছে যাব

আর কারে বা সুধাব
বল বল ওগো পানিহাটিবাসা
তোমরা ভাগ্যবান্ ভাগ্যবতী

এই পানিহাটিতে পেয়েছ বসতি—তোমরা ভাগ্যবান্‌ ভাগ্যবতী

কোথা বা বিহরিছে

গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—কোথা বা বিহরিছে

দয়া করে বলে দাও

যদিও আমাদের অধিকার নাই—দয়া করে বলে দাও

ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

তোমাদের নিতাই তোমাদের থাক্‌বে—ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

নিতাই নিয়ে আমরা কিবা কর্‌ব
কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখ্‌ব

দুর্ব্বাসনার কিঙ্কর মোরা—কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখ্‌ব
কপটতার মূরতি মোরা—কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখ্‌ব
অভিমানের খনি মোরা—কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখ্‌ব
ভালবাসিতে জানি না মোরা—কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখ্‌ব

সেই একদিন আর এই একদিন
কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না
এই সেই বিহার-ভূমি

এই সেই গঙ্গাতীর—এই সেই বিহার-ভূমি

এই সেই পানিহাটি গ্রাম
এই সেই তরুবর

তার লীলার সাক্ষী দিতেছেন—এই সে তরুবর

সকল সুখে বঞ্চিত মোরা
তখন জনম হল না

যখন হইল-প্রকট বিহার—তখন জনম হল না

দেখিতে ত পাই নাই

এই পানিহাটিতে-তীরে কেলি—দেখিতে ত পাই নাই
গমনে নটন বচনে গান—দেখিতে ত পাই নাই

শুনেছি শ্রীগুরু-মুখে

ত্রিকাল-সত্য গৌর-লীলা—শুনেছি শ্রীগুরু-মুখে

তাই আমরা ছুটে আসি
আজ হতেছে সেই লীলা
নয়নভরে দেখব মোরা
দেখিতে ত পাই নাই

নিরাশ-প্রাণে ফিরে যাই—দেখিতে ত পাই নাই

কেঁদে কেঁদে ফিরে যাই

এই ভাগ্যবতী-সুরধুনীর তার হতে—কেঁদে কেঁদে ফিরে যাই

একবার কি দেখাবে না
কথা যে কৈছ না

কোন সাড়া পেলাম না—কথা যে কৈছে না

কেঁদে কেঁদে কতবার ফিরে গেছি

এই লীলার সাক্ষী তরুতল হতে—কেঁদে কেঁদে কতবার ফিরে গেছি

একবার দেখ্‌ব

গৌর-প্রেমের মূরতিখানি—একবার দেখ্‌ব
গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই—একবার দেখ্‌ব [মাতন]

সেই গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই
একবার দেখ্‌ব
হৃদি-পটে এঁকে নিব

গৌর-প্রেমের মূরতিখানি—হৃদি-পটে এঁকে নিব

একবার দেখাও গো

ও পানিহাটিবাসী—একবার দেখাও গো

কথা যে কৈলে না

তবে কি নিতাই দেখাবে না—কথা যে কৈলে না

বল বল পানিহাটি-বাসী
বলে দাও বলে দাও

তোমাদের হাতে ধরি পায়ে পড়ি—বলে দাও বলে দাও

কোথায় আমার নিতাইসুন্দর

প্রেমময় কলেবর—কোথায় আমার নিতাইসুন্দর

ত্রিকাল-সত্য গৌরগণ তোমরা

পানিহাটি-গ্রামবাসী—ত্রিকাল-সত্য গৌরগণ তোমরা

দয়া করে বলে দাও
যদি সন্ধান না বলে দিবে
তোমাদের নামেতে কলঙ্ক হবে

ত্রিকালসত্য গৌরগণ তোমরা—তোমাদের নামেতে কলঙ্ক হবে

আমি জানি তোমাদের স্বভাব
শ্রীগুরু-মুখে শুনেছি
একা ভোগ করতে পার না

পাঁচে মিলে ভোগ কর—একা ভোগ করতে পার না

কে যেন বল্‌ছে প্রাণে প্রাণে

নিতাই আছে রাঘব-ভবনে—কে যেন বলছে প্রাণে প্রাণে

ওগো আমার দরদী
ওগো তুমি কোথায় গো

নিতাই-গৌর-সন্ধান দিলে—ওগো তুমি কোথায় গো

নিতাই-গৌর-নাম শুনালে

আপনার গরজে এসে—নিতাই-গৌর-নাম শুনালে

আপন গরজে বলেছিলে

নিতাই-গৌর-নাম শুনালে—আপন গরজে বলেছিলে

ওগো তুমি কোথায় গো

নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—ওগো তুমি কোথায় গো
নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—ওগো তুমি কোথায় গো

ওগো তুমি কোথায়
লুকাইয়ে খেল্‌ছ
নিতাই-চাঁদের সঙ্গে এসেছ

মধুর নীলাচল হতে—নিতাইচাঁদের সঙ্গে এসেছ

ওগো তুমি কোথায়
কৃপা করে বলে দাও
কোথা গেলে নিতাই দেখ্‌তে পাব
কে যেন বল্‌ছে প্রাণে প্রাণে

‘‘যাও তোমরা সবে মিলে রাঘবের ঘরে।
সেথা নিতাই বিহরিছে দেখ্‌বে নয়নভরে।।
চল যাই সবে মিলে রাঘব মন্দিরে।
সেখানে আছে নিতাইসুন্দর দেখ্‌ব প্রাণভরে।’’

চল যাই রাঘবের ঘরে

দেখ্‌তে পাব প্রাণের নিতাইসুন্দরে—চল যাই রাঘবের ঘরে

চল রাঘবের বাড়ী যাই

দেখ্‌তে পাব প্রাণের নিতাই—চল রাঘবের বাড়ী যাই

(শ্রীশ্রীকল্পবৃক্ষের নিকট উত্তমরূপে কীর্ত্তন করিয়া নিম্নোক্ত ধূয়া গাহিতে গাহিতে শ্রীশ্রীরাঘব পণ্ডিতের বাড়ীর শ্রীশ্রীমাধবীকুঞ্জের তলে আসিয়া কীর্ত্তন।)


‘‘চল যাই সবে মিলে রাঘবের ঘরে।
প্রভু নিতাই বিহরিছে দেখ্‌বো নয়নভরে।।’’

এই কী রাঘব-পণ্ডিতের বাড়ী
ব্যাকুল হয়ে ছুটেছে

কতশত নরনারী—পাগল হয়ে ছুটেছে
হা নিতাই প্রাণ নিতাই বলে—পাগল হয়ে ছুটেছে

এই কি রাঘব-পণ্ডিতের ভবন

ছুটেছে সব নরনারীগণ,–এই কী রাঘব-পণ্ডিতের ভবন

রাঘবপণ্ডিত কোথা তুমি

এই ত তোমার বসতি ভূমি—রাঘবপণ্ডিত কোথা তুমি
নিতাই এসেছে তোমার ভবনে—রাঘবপণ্ডিত কোথা তুমি

কোথায় আছ রাঘবপণ্ডিত
পরস্পর এলাম শুনে

নিতাই এসেছে তোমার ভবনে—পরস্পর এলাম শুনে

কোথা লুকায়ে বসে আছ

এই ত মাধবী-কুঞ্জ—কোথা লুকায়ে বসে আছ
তোমার প্রাণের নিতাই লয়ে—কোথা লুকায়ে বসে আছ

[মাতন]
বল বল মাধবীলতা

নিতাই লয়ে রাঘবপণ্ডিত কোথায়—বল বল মাধবীলতা

[মাতন]

আমার নিতাইসুন্দর আছে কোথা—বল বল মাধবীলতা

কোথা লুকায়ে রেখেছ

বল বল মাধবীলতা—কোথা লুকায়ে রেখেছ
বল বল রাঘবপণ্ডিত—কোথা লুকায়ে রেখেছ

একবার দেখা দাও

নিতাই-প্রিয় রাঘবপণ্ডিত—একবার দেখা দাও

পানিহাটি-গ্রামে কত খুঁজলাম
তোমাদের সন্ধান না পাইয়া
নিতাই এসেছেন তোমার এখানে
বড় আশা করে ভাই ভাই মিলে
এলাম মোরা তোমার এখানে
একবার দেখাও হে।

রাঘব তোমার প্রাণের নিতাই—একবার দেখাও হে

‘‘নিতাই দেখ্‌ব বলে এলাম পানিহাটিগ্রামে।
খুঁজিয়া খুঁজিয়া তার না পাইনু সন্ধানে।।’’

একবার দেখাও হে

গৌরপ্রেমের মূরতি নিতাই—একবার দেখাও হে

ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

তোমার নিতাই তোমার থাকবে—ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

একবার দেখ্‌ব

গৌরপ্রেমের মূরতিখানি,–একবার দেখ্‌ব
অধিকার নাই আমাদের তবু,–একবার দেখব

এ কী অহৈতুকী কৃপার স্বভাব

অধিকার নাই তবু দেখ্‌বার সাধ—এ কী অহৈতুকী কৃপার স্বভাব

একবার দেখাও

তোমার প্রেমে বাঁধা নিতাইসুন্দর—একবার দেখাও হে

তুমি ত নিত্যানন্দ-দাস

কিন্তু,–এ কী তোমার কৃপন-স্বভাব—তুমি ত নিত্যানন্দ-দাস

এমন সুন্দর নিতাই পেয়ে

জগজন-লোচন-আনন্দ—এমন সুন্দর নিতাই পেয়ে

রেখেছ কেন লুকায়ে

এই মাধবীলতা কুঞ্জে—রেখেছ কেন লুকায়ে
একা ভোগ কর্‌বার তরে—রেখেছ কেন লুকায়ে

নামে ত কলঙ্ক রটিল

নিতাই-গৌরাঙ্গ-দাসের—নামের ত কলঙ্ক রটিল

ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও

গৌর-দাসের স্বভাব দেখাও—ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও

এসেছে কত আশা করে

সহস্রসহস্র নরনারী—এসেছে কত আশা করে
দেখিত প্রাণ নিতাইসুন্দরে—এসেছে কত আশা করে

[মাতন]
তুমি না রেখেছ লুকাইয়ে

এ কী কৃপণ-স্বভাব তোমার—তুমি না রেখেছ লুকাইয়ে

দেখাও নিতাই-দাসের উদারতা

দেখাইয়ে প্রেম-বিতরণ-ধাতা—দেখাও নিতাই-দাসের উদারতা

(মাতন)
একবার দেখাও হে
ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

তোমার নিতাই তোমারই থাক্‌বে—ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

নিতাই নিয়ে কিবা কর্‌বো

দুর্ব্বসার কিঙ্কর মোরা—নিতাই নিয়ে কেবা কর্‌বো
কপটতার মূরতি মোরা—নিতাই নিয়ে কিবা কর্‌বো
অভিমানের খনি মোরা—নিতাই নিয়ে কিবা কর্‌বো
ভালবাসিতে জানি না মোরা—নিতাই নিয়ে কিবা কর্‌বো

কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখ্‌বো

ভাল বাসিতে জানি না মোরা—কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখ্‌বো

একবার দেখ্‌ব

গৌরপ্রেমের মূরতিখানি—একবার দেখ্‌ব

তাঁর চরণে পড়ে সুধাব
নিতাই আমি ঘোর নারকী

তাই উদ্ধারিতে নার কি—নিতাই আমি ঘোর নারকী,

(মাতন)
না না আমরা উদ্ধার চাই না
বল বল প্রভু নিতাই

সে-দিনের আর ক’দিন বাকী—বল বল প্রভু নিতাই

কতদিনে সত্য হবে

গৌরের মুখের বাণী—কতদিন সত্য হবে

‘‘এই পৃথিবীর মধ্যে আছে যত দেশ গ্রাম রে
সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম রে।।’’

সে-দিনের আর ক’দিন বাকী

হা নিতাই প্রভু নিতাই–সে-দিনের আর ক’দিন বাকী

এলে তুমি পানিহাটিতে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের আজ্ঞা পেয়ে—এলে তুমি পানিহাটিতে

তোমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছেন

আমার প্রাণ-গৌরহরি—তোমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছেন

আমরা কি দেখতে পাব না

সবাই ভজবে গৌরাঙ্গ-সোনা—আমরা কি দেখতে পাব না

আর কিছু চাই না
যেখানে যাব শুনতে পাব

প্রাণ-নিতাই-গৌরাঙ্গ-কথা—যেখানে যাব শুনতে পাব

পুরাও মোদের এই বাসনা

ঘরে ঘরে শুনব গৌরাঙ্গ-প্রেমের কান্না—পুরাও মোদের এই বাসনা

সব হবে একাকার

গৌর-প্রেমে বাঁধা পড়বে—সব হবে একাকার

পরস্পর করবে কোলাকুলি

সবে আত্মপর ভুলে গিয়ে—পরস্পর করবে কোলাকুলি

আত্মপর ভুলে যাবে

সবাই গৌর বলবে—আত্মপর ভুলে যাবে

হা জগৎগুরু নিতাই
আমরা কি দেখতে পাব না

সবাই ভজবে তোমার গৌর-সোনা—অমরা কি দেখতে পাবনা

কৈ তা হল কৈ
দেশে-বিদেশে ঘরে দেখ্‌লাম

শ্রীগুরুরূপে তোমার আজ্ঞা শিরে ধরে—দেশ-বিদেশে ঘুরে দেখলাম

এখনও যে আনেক বাকী
তোমার গৌর-নাম কেউ বলতে চায় না
তাই এলাম এখানে

তোমার প্রথম-প্রচার-স্থানে—তাই এলাম এখানে

চাই না তোমার গৌর চাই না
গৌর পাবার আমাদের অধিকার নাই
কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব

রঘুনাথের সাধ্যনিধি—কোন গুণে গৌরাঙ্গ বাব
রূপ-সনাতনের সাধনের ধন—কোন্‌ গুণে গৌরাঙ্গ পাব

ঘরে ঘরে সবাই ঝুরবে

এই জগবাসা নরনারী—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরবে

আত্মপর ভুলে গিয়ে—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরবে

অনুরাগে সবাই বল্‌বে

জগবাসী নরনারী—অনুরাগে সবাই বলবে

সবাই ত বাঁধা পড়বে

গৌর-সম্বন্ধের বন্ধনে—সবাই ত বাঁদা পড়্‌বে

পরস্পর গলা ধরে

গৌর-সম্বন্ধের বন্ধনে—পরস্পর গলা ধরে

ও,–‘‘দণ্ডে দণ্ডে তিলে তিলে, গোরারূপ না হেরিলে,’’

কোথায় আমার নিতাই-সোণা

জগতে এ স্বরূপ কি দেখাবে না—কোথায় আমার নিতাই-সোণা

যেখানে যাব দেখতে পাব
ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে

গৌর-সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধা পড়ে—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে

‘‘দণ্ডে দণ্ডে তিলে তিলে, গোরারূপ না হেরিলে,
মরমে মরিয়া যেন থাকি।
সাধ হয় নিরন্তর, হেমকান্তি কলেবর,
সতত হিয়ার মাঝে রাখি।।’’

সকলের হৃদে জাগ্‌বে

জগবাসী নর-নারীর—সকলের হৃদে জাগবে
জগৎগুরু নিতাই তুমি জাগালে—সকলের হৃদে জাগবে

জগবাসীর হৃদে কি জাগাবে না

কনক-রুচির গৌর –জগবাসীর হৃদে কি জাগাবে না
সর্ব্বচিত্তৈক চৌর—জগবাসীর হৃদে কি জাগাবে না
প্রকৃতি মধুর দেহ—জগবাসীর হৃদে কি জাগাবে না
পূর্ণ লাবণ্য গেহ—জগবাসীর হৃদে কি জাগাবে না

হা নিতাই প্রভু নিতাই
সে চিত্র কি দেখাবে না

গুণনিধি নিতাই সোণা—সে চিত্র কি দেখাবে না

ঘরে ঘরে সবাই ঝুরবে

‘‘তিলেক না দেখি তায়, পাঁজর ধসিয়া যায়,
ধৈরজ ধরিতে নাহি পারি।’’

ধৈরজ ধরিতে নাহি পারি

এক পলক, –প্রাণগৌর না হেরি—ধৈরজ ধরিতে নাহি পারি

‘‘অনুরাগের ডুরি দিয়া, অন্তরে কি করে সিয়া,
না জানি তার কতই ধারধারী।।’’

অনুরাগে সবাই বলবে

জগবাসী নরনারী-অনুরাগে সবাই বলবে

‘সুরধুনী তীরে গিয়া কুল দিব ভাসাইয়া,’’

ছার কুলে তিলাঞ্জল দিব

গৌর হে যা কর বলে—ছারকুলে তিলাঞ্জলি দিব
ছারকুল বামপদে ঠেলে—ছারকুলে তিলাঞ্জলি দিব

‘‘সুরধুনী তীরে গিয়া, কুল দিব ভাসাইযা,
অনল জ্বালিয়া দিব লাজে।
গৌরাঙ্গ সম্মুখে করি,’ হেরিব নয়ন ভরি,’
দিন যায় মিছামিছি কাজে।।’’

তবে ঘুচবে মনের ব্যথা

নিতাই প্রেম-বিতরণ-ধাতা—তবে ঘুচবে মনের ব্যাথা
ঘরে ঘরে শুনব অনুরাগের কথা—তবে ঘুচবে মনের ব্যাথা

রাঘব পণ্ডিত কোথা তুমি

এইত তোমার বসতি ভূমি—রাঘব পণ্ডিত কোথা তুমি

কোথা লুকায়ে বসে আছ

এইত মাধবী কুঞ্জ—কোথা লুকায়ে বসে আছ
তোমার প্রাণের নিতাই লয়ে—কোথা লুকায়ে বসে আছে

এসেছি মোরা কত আশা করে

আগমন দিন জেনে—এসেছি মোরা কত আশা করে

কোন কথা কৈলে না

ভাগ্যবতী সুরধুনী—কোন কথা কৈলে না

সুধাইলাম তরুবরে

বলে দাও মোদের দয়া করে—সুধাইলাম তরুবরে
পাগলা নিতাই কোথা বিহরে—সুধাইলাম তরুবরে

সুধাইলাম জনে জনে

পানিহাটি-বাসিগণে—সুধাইলাম জনে জনে

কেউ ত সন্ধান দিলে না

আমাদের ব্যাকুলতা দেখে—কেউ ত সন্ধান দিলে না

কে যেন বলল প্রাণে প্রাণে
নিতাই আছে রাঘব-ভবনে

দেখবে যদি যাও সেখানে—নিতাই আছে রাঘব-ভবনে

তাই আশা করে এসেছি

রাঘব পণ্ডিত তোমার ঘরে—তাই আশা করে এসেছি

কোথা লুকায়ে রেখেছ

অতিগূঢ় নিতাই-ধনে—কোথা লুকায়ে রেখেছ

খুঁজে খুঁজে হলাম সারা
দেখিতে তা পেলাম না।
সেদিনের আর কদিন বাকী
এই মাত্র মনে জাগে

যেখানে যাব শুনতে পাব—এই মাত্র মনে জাগে

ঘরে ঘরে সবাই ঝুর্‌ছে

ম্লেচ্ছ যবনাদি নর-নারী—ঘরে ঘরে সবাই ঝুর্‌ছে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে

এই বাসনা পুরাও নিতাই

একবার দেখে মরে যাই—এই বাসনা পুরাও নিতাই

কুড়ায়ে লয়ে দাও আমাদের

জগতের দুর্দ্দৈব-রাশি—কুড়ায়ে রয়ে দাও আমাদের

আমরা এবার থাকি বঞ্চিত

জগ-জীবের দুর্দ্দৈব লয়ে—আমরা এবার থাকি বঞ্চিত

গৌরপ্রেমে জগৎ মাতাও
যেখানে যাব দেখতে পাব
ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে

সোণার গৌর প্রভু বলে—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে

(মাতন)
রাঘব-পণ্ডিত একবার দেখাও

তোমার প্রাণের নিতাইসুন্দর-রাঘব-পণ্ডিত একবার দেখাও

রাঘবের প্রাণ নিতাই

একবার দেখা দাও—রাঘবের প্রাণ নিতাই

(মাতন)
কত আশা মনে জাগছে

কোথা আছ রাঘব-পণ্ডিত—কত আশা মনে জাগছে

প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠছে

লীলার কথা মনে হয়ে—প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠছে

পুরাও মোদের এই বাসনা

ঘরে ঘরে শুনব গৌর-প্রেমের কান্না—পুরাও মোদের এই বাসনা

তবে ঘুচবে মনের ব্যথা
একটি কথা সুধাব
তাই কি তুমি এসেছ

পানিহাটিতে রাঘবের ঘরে—তাই কি তুমি এসেছ

রথযাত্রা আগত প্রায়
প্রাণ গৌরাঙ্গের আজ্ঞা আছে

প্রভু সীতানাথের প্রতি—প্রাণ গৌরাঙ্গের আজ্ঞা আছে
গৌড়দেশের ভক্ত লয়ে,–প্রতিবর্ষে নীলাচলে যেতে—

প্রাণ গৌরাঙ্গের আজ্ঞা আছে
এই ত সেই যাবার সময়
এসেছেন শান্তিপুর-নাথ

গৌড়দেশের ভক্ত লয়ে—এসেছেন শান্তিপুর-নাথ

তুমিও ত যাবে রাঘব

প্রভুর প্রিয় ঝালি লয়ে—তুমিও ত যাবে রাঘব

যাবার অধিকার হয় না

গৌরগণের আনুগত্য বিনে—যাবার অধিকার হয় না

আমাদের কি লয়ে যাবে
ঝালি লয়ে যাব মোরা

দেখতে পাব প্রাণ-গোরা—ঝালি লয়ে যাব মোরা

(মাতন)
যাবেন সকলে নীলাচলে

শ্রীগৌরাঙ্গে মিলিবারে—যাবেন সকলে নীলাচলে

তাই লয়ে যেতে কি এসেছ

রথাগ্রে বিহার দেখতে—তাই লয়ে যেতে কি এসেছ

একবার দেখা দাও

কোথায় আছ রাঘব-পণ্ডিত—একবার দেখা দাও
কোথায় আছ প্রাণ নিতাই—একবার দেখা দাও

(শ্রীশ্রীরাঘব-পণ্ডিতের ঠাকুর মন্দিরের সম্মুখে কীর্ত্তন)
কে যেন বলল প্রাণে প্রাণে
নিতাই বিহরে রাঘব-ভবনে

অপরূপ দেখলাম এসে রাঘব-ভবনে।
নিতাই-রাধা বিহরিছে গোরা শ্যামের বামে।।
অপরূপ দেখলাম এসে রাঘবের ঘরে।
রাধাশ্যাম রূপ ধরে নিতাই গৌরাঙ্গ বিহরে।।’’

নিতাইসুন্দর বিহরিছে

গোপন রাঘবের ঘরে—নিতাইসুন্দর বিহরিছে

অতিগূঢ় নিত্যানন্দ

অভিন্ন-চৈতন্য-তনু—অতিগূঢ় নিত্যানন্দ

রাই-কানু মিলিত গৌর
সেই গৌরের অভিক্ষ-তনু নিতাই
নিতাই রাইকানু মিলিত
বিহরিছে গোপনে
নিতাই গৌর বিহরে রাঘবের ঘরে

রাধাশ্যাম রূপ ধরে—নিতাই গৌর বিহরে রাঘবের ঘরে

নিতাই রাধা গৌর শ্যাম

রাঘবের ঘরে বিহরে—নিতাই রাধা গৌর শ্যাম
হরে কৃষ্ণ হরে রাম—নিতাই রাধা গৌর শ্যাম

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম। মাতন
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’


‘‘গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।’’
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল।।’’

[মাতন]


অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ