শ্রীশ্রী স্বপ্নবিলাস কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি


শ্রীশ্রীরাধারমণ বাগে


(১৩৩২ সাল, ২৫শে মাঘ সোমবার দশমী, প্রাতঃ ৬-৮।।০ পর্য্যন্ত)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌরহরি বোল।
ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’ [মাতন]

( ১ )

একদিন,–‘‘নিধুবনে দুহুঁজনে, আ’মরি,–চৌদিকে সখীগণে,
শুতিয়াছে রসের আলসে।
চকিতে চন্দ্রমুখী, উঠিলেন স্বপ্ন দেখি রে,
কাঁদি কাঁদি কহেন বঁধূ-পাশে।।’’


বলে,–‘‘উঠ উঠ প্রাণনাথ,’’

পরাণ-বঁধু গা তোল হে

বলে,–‘‘উঠ উঠ প্রাণনাথ আজ,–কি দেখিলাম অকস্মাৎ
এক যুবা গৌর-বরণ।’’

পরাণ,–বঁধু হে আমি স্বপনে দেখলাম

এক,–গৌর-বরণ যুবা পুরুষ—পরাণ, বঁধু হে আমি স্বপনে দেখলাম

‘‘কি বা তার রূপ ঠাম, জিনি কত-কোটি-কাম হে,’’

এমন রূপ ত’ কভু দেখি নাই হে

জনমিয়ে এই বৃন্দাবনে—এমন রূপ ত’ কভু দেখি নাই হে

‘‘কি বা তার রূপ ঠাম, জিনি কত-কোটি-কাম হে,
ও সে,–রসরাজ রসের সদন।।


অশ্রু-কম্প-পুলকাদি,’’

কাঁচাসোনা-গৌর-অঙ্গে

আ’মরি—‘‘অশ্রু-কম্প-পুলকাদি, নানা,–ভাব-ভূষা নিরবধি,
ও-সে—নাচে গায় মহামত্ত হইয়া।
‘‘নিরুপম-রূপ দেখি, জুড়াইল মোর আঁখি হে,’’

এমন,–রূপ ত’ কভু দেখি নাই হে
অখিল-লাবণ্য-মাধুর্য্য-ধাম

আ’মরি,–কি বা সে রূপের ঠাম—অখিল,–লাবণ্য-মাধুর্য্য-ধাম

[মাতন]

‘নিরুপণ-রূপ দেখি, জুড়াইল মোর আঁখি হে,
আজু—মন ধায় তাহারে দেখিয়া।।’’

পরাণ,–বঁধু হে আমি সাধে কি কাঁদি

সে,–রূপে আমার মন মজেছে—পরাণ,–বঁধু হে আমি সাধে কি কাঁদি

আজু,–মন ধায় তাহারে দেখিয়া।।

আজ,–কেন এমন হল বঁধু

আমাদের,–কিশোরী কেঁদে আকুল হয়ে বলে—আজ,–কেন এমন হল বঁধু
কেন,–পরপুরুষে মতি গেল—আজ,–কেন এমন হল বঁধু

আজু,–মন ধায় তাহারে দেখিয়া।।


নব –জলধর-রূপ,’’

তোমার এই,–‘‘নব-জলধর-রূপ, রসময় রসকূপ,
ইহা বই না হেরি নয়নে।
আজ,–তবে কেন বিপরীত, হেন হৈল আচম্বিত হে,’’

কেন,–পরপুরুষে স্বপনে দেখলাম

তোমা বিনে আন জানি না—কেন,–পরপুরুষে স্বপনে দেখলাম
আমি জনম ধরিয়ে,–তোমা বিনে আন জানি না—কেন,–পরপুরুষে

স্বপনে দেখলাম

‘‘কহ নাথ ইহার কারণে।।
চতুর্ভুজ-আদি কত, বনের দেবতা যত,
দেখিয়াছি এই বৃন্দাবনে।
তাহে তিরপিত মন, নাহি ভেল কদাচন হে,
সে,–গৌরাঙ্গ হরিল মোর মনে।।’’

আজ,–কেন এমন হল বঁধু

আমাদের,–কিশোরী কেঁদে আকুল হয়ে বলে—আজ,–কেন এমন হল বঁধু
কেন,–পরপুরুষে মতি গেল—আজ,–কেন এমন হল বঁধু

কেন,–পরপুরুষে মতি গেল

আমি,–তোমা বিনে আন জানি না—কেন,–পরপুরুষে মতি গেল

পরাণ,–বঁধু হে আমি সাধে কি কাঁদি

ও-সে,–গৌররূপে আমার মন ভুলেছে—পরাণ,–বঁধু হে আমি

সাধে কি কাঁদি [মাতন]

‘‘এতেক কহিতে ধনী,’’

হায় আমার কি হল রে

কেন,–পরপুরুষে মতি গেল—হায় আমার কি হল রে

‘‘এতেক কহিতে ধনী,’’ অমনি,–মুর্চ্ছা প্রায় ভেল জানি,
বিদগধ রসিক-নাগর।
কোলেতে করিয়া গোরী, মুখ চুম্বে বেরি বেরি রে,’’

নাগর,–মনে মনে গণে রে

কিশোরীরে কোলে করি’—নাগর,–মনে মনে গণে রে
এই,–প্রেম আমায় গৌর করবে—নাগর,–মনে মনে গণে রে

‘‘কোলেতে করিয়া গোরী, মুখ চুম্বে বেরি বেরি রে,
হেরিয়া জগদানন্দ ভোর।।

আ’মরি,–বালাই লয়ে মরে যাই রে

শ্রীরাধা-গোবিন্দ-প্রেমের—আ’মরি,–বালাই লয়ে মরে যাই রে

শ্যাম,–নাগর বলেন মধুর স্বরে

কিশোরীর ঐ দশা দেখে—শ্যাম,–নাগর বলেন মধুর-স্বরে

মিছামিছি তুমি কেঁদ না রাধে

সে ত’ পরপুরুষ নয় গো –মিছামিছি তুমি কেঁদ না রাধে

———–

(২)

‘‘যে দেখিলা গৌর-স্বরূপ।
সো নহি আন, কেবল তুয়া প্রেম হে,
মোহে করব তেন রূপ।।’’

এবার আমি গৌর হব
এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব

রাধে তোমার,–প্রেমঋণ শোধিবারে—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব

‘‘মোহে করব তেন রূপ।।
কৈছন তুয়া প্রেমা, আর,–কৈছন মধুরিমা,
কৈছন সুখে তুঁহু ভোর।’’

রাধে তোমার প্রেম কেমন
তোমার,–প্রেমের মাধুরী কেমন
সেই প্রেমে কি বা সুখ

‘‘এ তিন বাঞ্ছিত-ধন ব্রজে নহিল পুরণ হে,’’

কিছুতেই আস্বাদিত নারিলাম

আমি,–কতই না চেষ্টা করিলাম—কিছুতেই আস্বাদিতে নারিলাম

‘‘এ তিন বাঞ্ছিত-ধন, ব্রজে নাহিল পূরণ হে,
কি করিব না পাইয়া ওর।।


তখন,–ভাবিয়া দেখিনু মনে,’’

আমা হতে হবে না হে

আমি ত’—সেই রসের বিষয় বটি—আমা হতে হবে না হে
আশ্রয়-জাতীয়-সুখ-আস্বাদন—আমা হতে হবে না হে

আমায়,–বিভাবিত হতে হবে

তোমার,–আশ্রয়-জাতীয়-ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে

তখন,–‘‘ভাবিয়া দেখিনু মনে, রাধে,–তোমারি স্বরূপ বিনে
আমার,–এ বাসনা পূর্ণ কভু নয়।
তাই,–তুয়া ভাব-কান্তি ধরি, তুয়া প্রেম গুরু করি’ হে
আসি—নদীয়াতে করব উদয়।।’’

এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব

সে ত’ পরপুরুষ নয় গো—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
তিন-বাঞ্ছা পুরাইতে—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
রাধে তোমার,–ভাব-কান্তি অঙ্গীকার করি’—এবার,–আমি যে

গৌরাঙ্গ হব [মাতন]
এবার আমি,–নদীয়াতে করব উদয়।।’’
তাই—পরীক্ষা করে দেখিলাম

আমার,–বাসনা পূরণ হবে কি না—তাই—পরীক্ষা করে দেখিলাম
আমার,–গৌর হওয়া হবে কি না—তাই,–পরীক্ষা করে দেখিলাম

এবার,–জানিলাম বাসনা পূরণ হবে

আমার,–গৌররূপে তোমার মন মজেছে—তাই এবার,–জানিলাম বাসনা পূরণ হবে

তাই আমি,–নদীয়াতে করব উদয়।।
সাধিব মনের সাধা, আমার,–ঘুচিবে সকল-বাধা,
ঘরে ঘরে বিলাব প্রেমধন।’’


এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
মিছামিছি তুমি কাঁদে না রাধে—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
তোমার,–প্রেমধন বিলাইব—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব [মাতন]

‘‘ঘরে ঘরে বিলা’ব প্রেমধন।’’

তখন,–কিশোরী কেঁদে বলেন কাতরে

শ্যাম-নাগরের ঐ কথা শুনি—তখন,–কিশোরী কেঁদে বলেন কাতরে

এ-কি,–নিদারুণ-কথা বললে বঁধু

———

( ৩ )

বঁধু হে,–‘‘শুনইতে কাঁপই দেহা।’’

এ-কি নিদারুণ-কথা বঁধু

শুনে প্রাণ কেঁদে উঠল—এ-কি নিদারুণ-কথা বঁধু
তুমি ব্রজ ছেড়ে যাবে—এ-কি নিদারুণ-কথা বঁধু

‘‘তুহুঁ ব্রজ-জীবন, তুয়া বিনু কৈছন হে,
ব্রজপুর বাঁধব থেহা।।’’

কেমন করে ধৈর্য্য ধরবে

তুমি ব্রজ ছেড়ে গেলে—কেমন করে ধৈর্য্য ধরবে
ওহে ব্রজের জীবন,–তুমি ব্রজ ছেড়ে গেলে—ব্রজবাসী, কেমন করে ধৈর্য ধরবে

‘‘ব্রজপুর বাঁধব থেহা।।’’
জল বিনু মীন, আর,–ফণী মণি বিনু,
তেজয়ে আপন-পরাণ।’’

জল বিনে কি মীন বাঁচে

মণি ছাড়া কি ফণী বাঁচে—আর,–জল বিনে কি মন বাঁচে

‘‘তেজয়ে আপন-পারণ।
তিল আধ তুঁহারি, দরশ বিনু তৈছন হে,
ব্রজপুর গতি তুঁহু জান।।’’

কেউ ত’ প্রাণে বাঁচবে না হে

তুমি ব্রজ ছেড়ে গেলে—ব্রজবাসী,–কেউ ত’ প্রাণে বাঁচবে না হে
এ,–‘‘সকল সমাাধি,’’

এই সাধের ব্রজের খেলা

এ,–‘‘সকল সমাধি, আবার,–কোন সিধি সাধবি,
পাওবি কোন হি সুখ।’’

আবার কোন খেলা খেলবে

এই ব্রজজনে বধি—আবার কোন খেলা খেলবে

‘‘পাওবি কোন হি সুখ।’’
কিয়ে আনজন, তুয় মরম হি জানব হে,
তছু লাগি বিদরয়ে বুক।।
এই—বৃন্দাবন-কুঞ্জ নিকুঞ্জহি নিবসয়ি,
তুহুঁ বর-নাগর-কান।
অহনিশি তুহাঁরি, দরশ বিনু ঝুরব হে,
তেজব সবহুঁ পরাণ।।
অগ্রজ-সঙ্গে, রঙ্গে যমুনা-তটে,
সখা-সঙ্গে করবি বিলাস।
পরিহরি মুঝে কিয়ে, প্রেম প্রকাশবি হে,’’

বঁধু,–আমাকেও কি ছেড়ে যাবে

আমাদের,–কিশোরী কেঁদে আকুল হয়ে বলে—বঁধু—আমাকেও কি ছেড়ে যাবে
তোমার,–তিন-বাঞ্ছা পুরাইতে—বঁধু,–আমাকেও কি ছেড়ে যাবে

‘‘পরিহরি মুঝে কিয়ে, প্রেম প্রকাশিব হে,
না বুঝয়ে বলরাম দাস।।’’

তখন,–শ্যামসুন্দর বলেন মধুর-স্বরে
মিছামিছি তুমি কেঁদ না রাধে

———

( ৪ )

‘‘শুন শুন সুন্দরি মঝু অভিলাষ।’’
ব্রজপুর-প্রেম করব পরকাশ।।
এই,–ব্রজপুর পরিহরি কবহুঁ না যাব।’’

ব্রজ ছেড়ে কোথাও যাব না রাই

আমি যেখানে ব্রজ সেখানে—ব্রজ ছেড়ে কোথাও যাব না রাই

আমি,–‘‘কবহুঁ না যাব।
ব্রজ বিনা প্রেম না হোয়ব লাভ।।
গোপ গোপাল সব-জন মেলি।’’

কাকেও ছেড়ে যাব না রাই—

‘‘গোপ গোপাল সব-জন মেলি।’’

কাকেও ছেড়ে যাব না রাই

সকলেই আমার সঙ্গে যাবে—কাকেও ছেড়ে যাব না রাই

‘‘গোপ গোপাল সব-জন মেলি।
নদীয়া-নগর-পর করবহুঁ কেলি।।’’

আবার,–নদীয়ায় করব নব-কেলি

এই সব ব্রজজন মেলি—আবার-নদীয়ায় করব নব-কেলি

[মাতন]

‘‘নদীয়া-নগর-পর করবহুঁ কেলি।।


আহা,–তনু তনু মেলি’’

আমি,–একা গৌর হব না রাই

তোমাকে ছেড়ে কোথা যাব—আমি,–একা গৌর হব না রাই

‘‘তনু তনু মেলি’’


রাধে,–তোমাতে আর আমাতে—‘‘তনু তনু মেলি’’

দুজেন মিলে গৌর হব

রাধে,–তোমাতে আর আমাতে—দুজন মিলে গৌর হব

‘‘তনু তনু মেলি হই এক-ঠাম।
অবিরত বদনে বোলব হরিনাম।।’’

দুজনে মিলে গৌর হব

তোমায় ছেড়ে কোথায় যাব—দুজনে মিলে গৌর হব
‘হরি’ বোলব বলাইব—দুজনে মিলে গৌর হব

[মাতন]

‘‘অবিরত বদনে বোলব হরিনাম।।
ব্রজপুর-ভাবে পূরব মনস্কাম।
অনুভবি জানল দাস বলরাম।।’’

——-

( ৫ )

‘‘এত শুনি বিধুমুখী, অমনি,–মনে হয়ে অতি-সুখী,
কহে শুন প্রাণনাথ তুমি ।
কহিলে সকল তত্ত্ব, বুঝিনু স্বপন সত্য হে,
সেই-রূপ দেখিব যে আমি।।’’

আমি,–সেই মূরতি একবার দেখব

স্বপনে,–দেখা দিয়ে মন চুরি করেছে—আমি,–সেই মূরতি একবার দেখব

‘‘সেই-রূপ দেখিব যে আমি।।
‘‘আমাকে যে সঙ্গে লবে, দুই তনু এক হবে,
এ,–অসম্ভব হইবে কেমনে।’’

আ’মরি,–বালাই লয়ে মরে যাই রে

ব্রজের বিশুদ্ধ-প্রেমার—আ’মরি,–বালাই লয়ে মরে যাই রে

ঐশ্বর্য্য জানে না রে

কেবলার গণ কৃষ্ণের—ঐশ্বর্য্য জানে না রে

আর ত কিছু জানে না রে

আমাদের,–নন্দনন্দন বিনে তারা—আর ত কিছু জানে না রে
অমাদের,–যশোদাদুলাল বিনে—আর ত কিছু জানে না রে
কেবলার গণ কৃষ্ণের—আর ত কিছু জানে না রে

নিজ-সম্বন্ধ মানে না রে

ঐশ্বর্য্য দেখিলে কৃষ্ণে—নিজ-সম্বন্ধ মানে না রে

এ-যে, –বড় অসম্ভব কথা

ওহে বঁধূ,–দুই কেমন করে এক হবে—এ-যে,–বড় অসম্ভব কথা
দুই দেহ এক হবে—এ-যে,–বড় অসম্ভব কতা

‘‘চূড়া-ধড়া কোথা থোবে, বাঁশী কোথা লুকাইবে হে,
এই,–কাল গৌর হইবে কেমনে।।
এত শুনি কৃষ্ণচন্দ্র, অমনি,–কৌস্তভের প্রতিবিম্বে,
দেখাইলা শ্রীরাধার অঙ্গ।
আপনি তাহে প্রবেশিলা, দুই তনু এক হৈলা হে,’’

দুজনে মিলে গৌর হল

প্রাণ-রাধা-রাধারমণ—দুজনে মিলে গৌর হল

[মাতন]

মহাভাব-রসরাজ—দুজনে মিলে গৌর হল

[মাতন]

আহা,–‘‘ভাব-প্রেমময় সব অঙ্গ।।
নিধুবনে এই কয়ে, দুই তনু এক হয়ে,
আসি,–নদীয়াতে করল উদয়।
বাহিরে জীব উদ্ধারণ,আর,–অন্তরে রস আস্বাদন,
ব্রজবাসী-সখা-সখী-সঙ্গে।
বৈষ্ণবদাসের মন, হেরি রাঙ্গা-শ্রীচরণ,
না ভাসিলাম সে সুখ-তরঙ্গে।।’’

কিছুই দেখতে পেলাম না রে

এই,–নবদ্বীপের নব-কেলি—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
গৌর-গোবিন্দ-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
সেই,–প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারি-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
সে,–কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে

কীর্ত্তন-নটন-লীলা

সুরধুনী-পুলিনে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
ও,–‘‘গমন নটন-লীলা’’,
সীতানাথের আনানিধির—গমন নটন-লীলা
আমার,–নদীয়া-বিনোদিয়ার—গমন নটন-লীলা
আমার,–প্রাণ-শচীদুলালিয়ার—গমন নটন-লীলা
আমার,–নিতাই-পাগল-করা-গোরার-গমন নটন-লীলা

[মাতন]

গদাধর-নরহরির কাঁধে হাত দিয়া—গমন নটন-লীলা
সুরধূনী-পুলিনে—গমন নটন-লীলা
সার্ব্বভৌমের চৈতন্য-দাতার-গমন নটন-লীলা
রাজা,–প্রতাপরুদ্রের ত্রাণ কারীর—গমন নটন-লীলা
অমোঘের প্রাণ-দাতার—গমন নটন-লীলা
স্বরূপের সবর্বস্ব-ধনের—গমন নটন-লীলা
রামরায়ের চিতচোরের—গমন নটন-লীলা
শ্রী,–সনাতনের গতি-গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
শ্রীরূপ-হৃৎকেতন-গোরার—গমন নটন-লীলা
দাস,–রঘুনাথের সাধনের ধনের—গমন নটন-লীলা
শ্রী,–লোকনাথের হৃদ্‌বিহারীর—গমন নটন-লীলা
প্রকাশানন্দের নয়নানন্দের—গমন নটন-লীলা
নদীয়া-ভূমির সুসম্পদ—গমন নটন-লীলা
নবদ্বীপের সুসম্পদ—গমন নটন-লীলা

চলে যেতে নেচে যায়

রসময় গৌরাঙ্গ-রায়—চলে যেতে নেচে যায়
নাটুয়া-মূরতি নটন-গতি—চলে যেতে নেচে যায়
ভাব হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যায়
ভাবনিধি গোরা,–ভাবহিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যায়

হেলে দুলে প্রাণ-গৌর নাচে

নিতাই নাচে কাছে কাছে—হেলে দুলে প্রাণ-গৌর নাচে

নিতাই নাচে কাছে কাছে

হেম-দণ্ড-বাহু পসারিয়ে—নিতাই নাচে কাছে কাছে
প্রাণ,–গৌর ঢলে পড়ে পাছে—তাই,–নিতাই নাচে কাছে কাছে

‘‘গমন নটন-লীলা, আহা,–বচন সঙ্গীত-কলা’’

সঙ্গীতেতে কথা কয়

চলে যেতে নেচে যায়—সঙ্গীতেতে কথা কয়

গমনে নটন বচনে গান

শচীদুলাল-প্রাণগৌরাঙ্গের—গমনে নটন বচনে গান
নদীয়াবিনোদ-প্রাণগেৌরাঙ্গের—গমনই নটন বচনই গান

চলতে নাচে বলতে গায়

কে দেখেছে কে শুনেছে কোথায়—চলতে নাচে বলতে গায়
রসময় গৌরাঙ্গ-রায়—চলতে নাচে বলতে গায়

[মাতন]
সঙ্গীতেতে কথা কইছে

চলে যেতে নেচে যেছে—সঙ্গীতেতে কথা কইছে
ওগো আমার—রসের গোরা চিতচোরা—সঙ্গীতেতে কথা কইছে

যেন,–কত-শত-কোকিল কুহরিছে

পঞ্চ ম-রাগ জিনি—যেন,–কত-শত-কোকিল কূহরিছে

না না তাতেও তুলনা হয় না
যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে

জগৎ অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
আমার,–গৌরহরি ‘হরি’ বলিছে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে

ও,–‘‘গমন নটন-লীলা, বচন সঙ্গীত-কলা,
মধুর চাহনি আকর্ষণ।’’

তার আঁখি-মন হরে

একবার যারে হেরে—তার আঁখি-মন হরে
একবার যারে হেরে’—
গৌর—‘হরি’ বলে নেচে নেচে—একবার যারে হেরে

[মাতন]
তার আঁখি-মন হরে
তারই আঁখি-মন হরিছে

‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি-মন হরিছে
‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে’—
রসের গোরা নেচে নেচে—‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে [মাতন]

তারই আঁখি-মন হরিছে
সে অমনি ঢলে পড়িছে

ভাবেতে অবশ হয়ে—সে অমনি ঢলে পড়িছে
আমার,–ভাবনিধি যার পানে চাইছে—সে ভাবাবেশে ঢলে পড়িছে
অপরূপ গৌরাঙ্গ-রঙ্গ

আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–রসিয়া গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,—বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে

যে ঢলে,–পড়ে তারেবুকে ধরে—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে

[মাতন]
নাচে গৌরাঙ্গ নাগর-বর

কীর্ত্তন-কেলিরস-তৎপর-নাচে গৌরাঙ্গ নাগর-বর

[মাতন]

ও,–‘‘রঙ্গে বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ’’

প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া

আমার,–রঙ্গিয়া-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
আমার,–অনঙ্গমোহন-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
রঙ্গের মন্দির-গোরার—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
রঙ্গের মন্দিরে গোরা’—
নবীন-কামের কোঁড়া—রঙ্গের মন্দির গোরা

[মাতন]
প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া

ও,–‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ,’’

অভাবের সঙ্গ করে না

আমার,–ভাবনিধি প্রাণ-গৌরাঙ্গ—অভাবের সঙ্গ করে না

ভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ

কম্প, অশ্রু,পুলকাদি—ভাব ভূষণ ভুষিত অঙ্গ

নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ

অন্তরঙ্গ-ভাবুক-সঙ্গে—নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ

আ’মরি,–‘‘রসময় দেহের গঠন।’’

আমার,–গৌর কিশোর-বর

আরে আরে আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
আ-রে আমার-গৌর কিশোর-বর
আরে আমার চিতচোর-গৌর কিশোর-বর
রসে তনু ঢর ঢর—গৌর কিশোর-বর
অখিল-মরম-চোর –গৌর কিশোর-বর
শ্রী,–নবদ্বীপ-পুরন্দর—গৌর কিশোর-বর

[মাতন]
কিছুই ভাল লাগে না রে

তার আর এ সংসারে—কিছুই ভাল লাগে না রে
প্রাকৃত-ভোগ-সুখ—বিলাস—কিছুই ভালো লাগে না রে

নিশিদিশি গুণেতে ঝুরে
তাঁর,–পাঁজর ঝাঁঝর হয়ে যায় রে

গৌর,–গুণ স্মঙরি গুমরি গুমরি—তার,–পাঁজর ঝাঁঝর হয়ে যায় রে

সে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে

ছার,–কুলে তিলাঞ্জলি দিয়ে—সে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে

দেশ-বিদেশে বেড়ায় রে

দীন-হীন-কাঙ্গালের বেশে—দেশে-বিদেশে বেড়ায় রে

যারে দেখে তার পায়েতে ধরে

ম্লেচ্ছ-যবন-আদি করি’-যারে দেখে তার পায়েতে ধরে

বলে,–দয়া করে বলে দাও

ওগো আমি,–কেমন করে গৌর পাব—বলে,–দয়া করে বলে দাও

না জানি সে কতই সুখ

গৌর-প্রেম কাঙ্গাল হওয়া—না জানি সে কতই সুখ

কিছুই অনুভব ত হল না রে

কাঙ্গাল হওয়াগ কত-সুখ—কিছুই অনুভব ত’ হল না রে
কেবল,–সাজ সেজে লোক ভাঁড়ালাম—কিছুই অনুভব ত’ হল না রে

ভ্রমিয়ে বেড়াই দেশ-বিদেশে

কপট-বৈষ্ণবেরে বেশে—ভ্রমিয়ে বেড়াই দেশ-বিদেশে

একদিনও ত ভজলাম না রে

নিষ্কপটে গোর-পহুঁ—একদিনও ত’ ভজলাম না রে

ভুলেও একবার বললাম না রে

আমি তোমার হলাম বলে—ভুলেও একবার বললাম না রে
‘আমি তোমার হলাম বলে’—
যা কর গৌরাঙ্গ হে—আমি তোমার হলাম বলে

[মাতন]
ভুলেও একবার বললাম না রে
কিছুই অনুভব ত হল না রে
না জানি সে কতই সুখ
নৈলে,—কেন বা হবে রে
কিসের অভাব ছিল ভাই

শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনের—কিসের অভাব ছিল ভাই
দাস-রঘুনাথের—কিসের অভাব ছিল ভাই

ও,–‘‘যাঁর গুণে ঝুরি ঝুরি শ্রীরূপ-সনাতন। রে !
সকল-ঐশ্বর্য্য ছাড়ি গেলা বৃন্দাবন।। রে !!
যাঁর গুণে ঝুরি ঝুরি রঘুনাথ-দাস। রে !
ইন্দ্র-সম-রাজ্য ছাড়ি শ্রীরাধাকুণ্ডে বাস।।’’ রে !!

নিশিদিশে কাঁদে রে

শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে বসে,–নিশিদিশি কাঁদে রে
হা,–সোনার গৌর প্রভু বলে—নিশিদিশি কাঁদে রে

তারাই ত’ গৌরাঙ্গ-দাস
তারা,-আদর্শ গৌরাঙ্গ-দাস
আমরা,–নামে কলঙ্ক রটালাম

দাস বলে পরিচয় দিয়ে—আমরা,–নামে কলঙ্ক রটালাম

[মাতন]
কারও দেখা পেলাম না রে
সে দাস কৈ সে প্রভু কৈ

সে মধুর-লীলা কৈ—সে দাস কৈ সে প্রভু কৈ

[মাতন]
কারও দেখা পেলাম না রে

কারে বলব দুখের কথা—কারও দেখা পেলাম না রে

কিছুই দেখতে পেলাম না রে

শ্রী,–‘‘গৌরাঙ্গের সহচর শ্রীবাসাদি গদাধর,
নরহরি মুকুন্দ মুরারি।
সঙ্গে স্বরূপ রামানন্দ, হরিদাস প্রেমকন্দ,
দামোদর পরমানন্দ পুরী।।
যে সব করিলা লীলা,’’


নদীয়া আর নীলাচলে—‘‘যে সব করিলা লীলা’’
‘নদীয়া আর নীলাচলে’—
সুরধুনী আর সিন্ধু-কুলে—নদীয়া আর নীলাচলে

‘‘যে সব করিলা লীলা, শুনিতে গলয়ে শিলা,
তাহা মুঞি না পাইনু দেখিতে।
তখনে না হৈল জন্ম, এবে ভেল ভববন্ধ,
সে না শেল রহি গেল চিতে।।’’

নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

সেই লীলা-অর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
পাঁজর পুড়ে ঝাঁঝর হল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ,–লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

হা,–‘‘প্রভু সনাতন রূপ, রঘুনাথ ভট্টযুগ,
ভূগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।
এ সকল প্রভু মেলি, যে সব করিলা কেলি,
বৃন্দাবনে ভক্তগণ-সাথ।।’’

কিছুই দেখতে পেলাম না রে

এবে,–‘‘ সবে হইলা অদর্শন’’,

কোথা বা লুকালে

প্রাণ-গৌরগণ তোমরা—কোথা বা লুকালে

আমরা,–কত না কেঁদেছি

ভাই ভাই মিলে ব্রজবনে গিয়ে—আমরা—কত না কেঁদেছি
তোমাদের বসতি-স্থানে গিয়ে—আমরা, কত না কেঁদেছি

কত না ডেকেছি

হা,–শ্রীরূপ শ্রীসনাতন বলে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ,–ভট্টযুগ শ্রীজীব গোসাঞি বলে—কত না ডেকেছি
হা,–ভূগর্ভ শ্রীলোকনাথ বলে—কত না ডেকেছি
শ্রী,–রাধাকুণ্ড-তীরে গিয়ে—কত না ডেকেছি
কোথায় আছ দাস-গোসাঞি বলে—কত না ডেকেছি

কেউ ত’ দেখা দিলে না

কেঁদে কেঁদে,–হতাশ হয়ে ফিরে এলাম—কেউ ত’ দেখা দিলে না

এবে,—সবে হইলা অদর্শন, শূন্য ভেল ত্রিভুবন,
অন্ধ ভেল সবাকার আঁখি।
হায় রে,–কাহারে কহিব দুঃখ, না দেখাব ছার-মুখ’’,

আমাদের,–মুখ কেউ দেখ না

আমরা,–গুরু-গৌরাঙ্গ-বৈমুখী—আমাদের,–মুখ কেউ দেখ না

[মাতন]

আর,–‘‘কাহারে কহিব দুঃখ, না দেখাব ছার-মুখ,
আছি যেন মরা-পশু-পাখী।।’’

আমাদের,–মনুষ্যত্বের গন্ধ নাই রে

কেবল,–দেখতে মানুষের আকার বটে—কিন্তু আমাদের,–মনুষত্বের

গন্ধ নাই রে
মানুষ হলে ভালবাসা থাকত
তা হলে,–একতিল কি প্রাণ থাকত

যদি আমরা মানুষ হতাম—তা হলে,—একতিল কি প্রাণ থাকত

একতিল কি প্রাণ থাকত

সে সুখে বঞ্চিত হয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত
সে,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত
শ্রীগুরুদেবের,–সুখময়-সঙ্গ হারাইয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত
সে,–ভালবাসায় বঞ্চিত হয়ে—একতিল কি প্রাণ থাকত

পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে

যদি মনুষ্যত্ব থাকত—পিছে পিছে প্রাণ যেতে চলে
হা গুরু-গৌরাঙ্গ বলে—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে

[মাতন]

‘‘আছি যেন মরা-পশু-পাখী।।
অন্ন-জল-বিষ খাই, তবু,—মরিয়া নাহিক যাই,
ধিক্‌ ধিক্ নিলাজ পরাণ।’’

আর,–কি সুখে বা আছ রে

ওরে রে নিলাজ পরাণ—আর,–কি সুখে বা আছ রে
শ্রী,–গুরু-গৌর-বৈমুখী প্রাণ—আর কি সুখে বা আছ রে
সে সুখ হতে বঞ্চিত হয়ে—আর,–কি সুখে বা আছ রে
এখন,–পড়ে পড়ে মায়ার লাথি খেতে—আর,–কি সুখে বা আছ রে

এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে

এখন ভালয় ভালয়—এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে
তোমার,–একে একে সবাই ছেড়ে গেলে—এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে
হা গুরু-গৌরাঙ্গ বলে—এখন,–গেলেই ত’ ভাল রে

[মাতন]
প্রাণ তোরে মিনতি করি

‘‘যতক্ষণ এই দেহে থাক, হা গুরু—গৌর বলে ডাক,

তবে যদি যাও সেই ভাল।।’’

নিশিদিশি ডাক রে

হা গুরু-গৌরাঙ্গ বলে—নিশিদিশি ডাক রে

নিশিদিশি কাঁদ রে

শ্রীগুরু—গৌরাঙ্গ-গুণ স্মঙরি—নিশিদিশি কাঁদ রে
তাঁদের,–অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি—নিশিদিশি কাঁদ রে

ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে

ওরে রে কৃতঘ্ন পরাণ—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
অহৈতুকী-কৃপা – স্মঙরি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে
অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি’—
অদোষদরশী—শ্রীগুরুদেবের—অহৈতুকী-কৃপা স্মঙরি

ব্যাকুল হয়ে কাঁদ রে

‘‘যে আনিল প্রেমধন করুণা প্রচুর।
হেন প্রভু কোথা গেলা আচার্য্য-ঠাকুর।।
কাঁহা গেলা স্বরূপ কাঁহা সনাতন।
কাঁহা দাস রঘুনাথ শ্রীজীব জীবন।।
কাঁহা গেলা ভট্টযুগ কাঁহা কবিরাজ।
এক-কালে কোথা লুকালে গোরা নটরাজ।।’’

কোথায় লুকাইয়ে করছে খেলা

তোমার,–নিত্যালীলার ভূমি নদীয়ায়—কোথায় লুকাইয়ে করছে খেলা
আমাদের,–আঁখিতে মায়ার ঠুলি দিয়ে—কোথায় লুকাইয়ে করছ খেলা

তোমার যেন নিত্য খেলা
আমাদের তাতে কি সম্বন্ধ
কেন বা জানাইলে

শ্রীগুরুরূপে দেখা দিয়ে—কেন,–লীলার সন্ধান জানাইলে

দেখাব বলে লুকাইলে
কেন তোমার এ দাগাবাজী
আমরা,–ভুলেছিলাম ভালই ছিলাম
কেন করলে এই দাগাবাজী
কেন,–অমিয়া-পাথারের খবর দিলে

যদি,–একবিন্দু পীতে নাহি দিলে—কেন,–অমিয়া-পাথারের খবর দিলে

কোথা,–লুকাইয়ে করছ খেলা

আপন-খেলার সাথী লয়ে—কোথা,–লুকাইয়ে করছ খেলা
এই মধুর-নদীয়ায়—কোথা,–লুকাইয়ে করছ খেলা

যদিও না হই খেলার সাথী

খেলা,–দেখতে কি কিছু দোষ আছে—যদিও না হই খেলার সাথী

একবার কি দেখাবে না

হা শ্রীগুরুদেব—একবার কি দেখাবে না
হা,–পাগলা প্রভু রাধারমণ—একবার কি দেখাবে না

কার সঙ্গে যাব মোরা

তোমার মধুর-খেলা দেখতে—কার সঙ্গে যাব মোরা

কোথা বা যাব রে
কোথা গিয়ে জুড়াইব

এই দগ্ধ-হৃদয়—বল,–কোথা গিয়ে জুড়াইব

আর,–জুড়াইবার ঠাঁই নাই

একমাত্র নামাশ্রয় বিনে—আর, জুড়াইবার ঠাঁই নাই

আয়,–প্রাণভরে কাঁদি রে

ভাই ভাই হয়েছি কক ঠাঁই—আয়,—প্রাণভরে কাঁদি রে

‘‘শয়নে গৌর, স্বপনে গৌর, গৌর নয়ন-তারা।’’

পাগলের চিতচোরা—‘‘গৌর নয়ন-তারা।’’
‘‘জীবনে গৌর, মরণে গৌর, গৌর গলার হারা।।
কহনা গৌর-কথা ও ভাই, কহনা গৌর-কথা।’’
আমার,–আর কিছু লাগে না ভাল

যার,–যা ভাল লাগে সে তাই বল—আমার,–আর কিছু লাগে না ভাল

বল বল ভাই ‘গৌর’ বল

ভাই রে তোদের পায়ে পড়ি—বল বল ভাই ‘গৌর’ বল

আমার,–‘গৌর’ বলা হল না রে

বলব বলে সাধ ছিল—আমার,–‘গৌর’ বলা হল না রে
দিনে দিনে ত দিন ফুরাল—আমার,–‘গৌর’ বলা হল না রে
আমার,–দুর্ব্বাসনা গেল না—আমার,–‘গৌর’ বলা হল না রে
আমার,–কপটতা গেল না—আমার,–‌ ‘গৌর’ বলা হল না রে
আমার,–অভিমান গেল না—আমার,–‘গৌর’ বলা হল না রে
আমার,–পরচর্চ্চা গেল না—আমার,–‘গৌর’ বলা হল না রে

বল বল ভাই ‘গৌর’ বল

‘‘গৌর-নাম, অমিয়া-ধাম, পিরীতি-মুরতি-দাতা।।’’

গৌরের ত’ নাম নয় রে
মূরতিমন্ত নাম বটে

‘‘গৌর-নাম, অমিয়া-ধাম, পিরীতি-মূরতি-দাতা।।
গৌর বিহনে, না বাঁচি পরাণে, গৌর করিলাম সার।’’

খুঁজে খুঁজে হলাম সারা

যেদিন হতে নাম শুনেছি—খুঁজে খুঁজে হলাম সারা
নদীয়া-নীলাচলে আর বৃন্দাবনে—খুঁজে খুঁজে হলাম সারা

কই,–দেখা দিলে না চিতচোরা

‘‘গৌর বিহনে, না বাঁচি পরাণে গৌর করিলাম সার।’’

তোমরা কি কেউ বলতে পার
দয়া করে বলে দাও গো

ভাগ্যবান গঙ্গাতীর-বাসী—দয়া করে বলে দাও গো

তোমাদের,–হাত-ধরা সে রসের গোরা
তোমরা,–দেখাইলে দেখাতে পার

তোমাদের,–হাত-ধরা সে রসের গোরা—তোমরা,–দেখাইলে দেখাতে পার

দয়া করে একবার দেখাও দেখি
ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

তোমাদের গৌর তোমাদের থাকবে—ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না

আমরা,–গৌর লয়ে কি বা করব
আমরা,–কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখব

ভালবাসতে জানি না—আমরা,–কি দিয়ে তারে বেঁধে রাখব

একবার দেখব

চিতচোরা-মূরতিখানি—একবার দেখব

হৃদিপটে এঁকে নিব

সঙ্কীর্ত্তন-নাটুয়া-মূরতি—হৃদিপটে এঁকে নিব

পাগল হয়ে বেড়াইব

আমরা,–গৌর-প্রেমের পাগল হয়ে—দেশবিদেশে বেড়াইব
আমরা,–গৌর-প্রেমের কাঙ্গাল হয়ে—দেশবিদেশে বেড়াইভ

যারে দেখব তারেই বলব

বল বল ভাই গৌর বল—যারে দেখব তারেই বলব

দয়া করে একবার দেখাও
কই,–কেউ ত’ কথা কইছ না
কোথা বা যাব রে

‘‘গৌর বিহনে, না বাঁচি পরাণে, গৌর করিলাম সার।’’

যাতে সুখ হয় সে তাই করুক

দেখা দিক বা কাঁদায়ে মারুক—যাতে সুখ হয় সে তাই করুক

‘‘গৌর করিলাম সার।
গৌর বলিতে, জনম যাউক, কিছু না চাহিয়ে আর।।’


এই কৃপা কর সকলে গৌর দেখতে—না পাই তাতে দুঃখ নাই মোদের
দেখবার অধিকার নাই—গৌর দেখতে,–না পাই তাতে দুঃখ নাই মোদের

এই কৃপা কর সকলে

বালক-বৃদ্ধ-নরনারী—এই কৃপা কর সকলে

‘‘গৌর বলিতে, জনম যাউক, কিছু না চাহিয়ে আর।।’’

যেন,–গৌর বলে মরতে পারি

এই,–কৃপা কর গো নরনারী—যেন,–গৌর বলে মরতে পারি
কাঙ্গাল এই কৃপা ভিখারী—যেন,–গৌর বলে মরতে পারি

[মাতন]
যেন,–গৌর বলে মরতে পারি

এবার,–গৌর ত’ পেলাম না—যেন,–গৌর বলে মরতে পারি

নাম যেন ভুলি না

দুর্ব্বাসনা-ঘাত-প্রতিঘাতে—নাম যেন ভুলি না

যেন,–গৌর বলে মরতে পারি

শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–গৌর বলে মরতে পার

[মাতন]

‘‘গৌর-গমন, গৌর-গঠন, গৌর-মুখের হাসি।’’


যেন,–চাঁদ ফেটে ঝরে আমিয়া-রাশি—‘‘গৌর-মুখের হাসি।’’
যেন ষোলকলা,–চাঁদ ফেটে ঝরে অমিয়া-রাশি—‘‘গৌর মুখের হাসি।’’

‘‘গৌর-বচন, অমিয়া-সিঞ্চন, মরমে রহল পশি।।’’

কতদিনে শুনতে পাব

ওগো,–সে ভাগ্য কি আমার হবে—কতদিনে শুনতে পাব
হৃৎকর্ণ-রসায়ন-কথা—কতদিনে শুনতে পাব

‘‘গৌর-বচন, অমিয়া-সিঞ্চন, মরমে রহল পশি।।
গৌর-শব্দ, গৌর-সম্পদ, যাহার হৃদয়ে জাগে।।’’

জগ-মাঝে সেই ত’ ধনী

যার,–হৃদে জাগে গোরা গুণমণি—জগ-মাঝে সেই ত’ ধনী

[মাতন]
‘‘যাহার হৃদয়ে জাগে।

নরহরি-দাস, অনুগত তার, চরণে শরণ মাগে।।’’

দাস করে পদে রাখ গো

যে,–গৌর-ধনে হয়েছে ধনী—দাস করে পদে রাখ গো

উচ্ছিষ্ট-ভোজী হয়ে থাকব
পদধূলি ভূষণ করব
নিশিদিশি শুনতে পাব

প্রাণরাম গৌরাঙ্গ-কথা—নিশিদিশি শুনতে পাব

পাগল হয়ে বেড়াইব

গৌর-প্রেমের কাঙ্গাল হয়ে—দেশবিদেশে বেড়াইব

যারে দেখব তারেই বলব

‘‘ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’ [মাতন]



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ