(ভাদ্রশুক্লা চতুর্দ্দশী)
এই নাম লইয়া শ্রীশ্রীগম্ভীরায় গমন এবং কীর্ত্তন :—
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শচীসুত গুণধাম।
আমাদের,–এই ধ্যান এই জপ এই লব নাম।।’’
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—শ্রী,–শচীসুত গুণধাম
প্রাণভরে বল ভাই—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের—পরাণের পরাণ—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–সীতানাথের আনানিধি—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–নদীয়া-বিনোদিয়া—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–প্রাণ-শচী-দুলালিয়া—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়া—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়া—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–নরহরির চিতচোর—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–নরহরির চিতচোর—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–শ্রীসনাতনের গতি—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–শ্রীরূপ-হৃৎকেতন—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–শ্রীলোকনাথের হৃদ্বিহারী—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–শ্রীগোপালভট্টের পরাণ—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–ভট্ট-রঘুনাথের প্রাণনাথ—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–শ্রীজীব-জীবনধন—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–দাস-রঘুনাথের সাধনের ধন—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–শ্রী,–প্রকাশানন্দের নয়নানন্দ—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–এই,–কাশীমিশ্রালয়-বাসী—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–শ্রী,–সার্ব্বভৌমের চৈতন্যদাতা—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–অমোঘের প্রাণদাতা—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–রাজা,–প্রতাপরুদ্রের ত্রাণকারী—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
(হা,–রাজা,–প্রতাপরুদ্রের উদ্ধারণ—বল জয় শচীনন্দন)
হা,–স্বরপের সরবস—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–রামরায়ের চিতচোর—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
হা,–কাশীনাথের প্রাণনাথ—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
(হা,–বাণীনাথের প্রাণনাথ—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য)
হা,–এই,–গম্ভীরার গুপ্তনিধি—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
রাধাভাবে বিভাবিত নিরবধি—এই,–গম্ভরার গুপ্তনিধি
রাধাভাবে হয়ে বিভোর—বিহরিছ নিরন্তর
নাই তোমার অবসর—বিহরিছ নিরন্তর
মহাভাব-ভোগের,–নাই তোমার অবসর—বিহরিছ নিরন্তর
ঠাকুর,–হরিদাসের বাসনা-পূরণ-কারী—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমাদের,–প্রভু-নিতাই-পাগলকরা—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
(আমাদের,–শ্রীনিত্যানন্দ-উন্মাদকারী—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য)
আমাদের,–পাগলের প্রাণধন—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
আমার,–পরাণের পারণ—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
(ও,–নাম নয় অমিয়াধাম—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য)
(নিত্যলীলা-রসপুর—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য)
ত্রিকালসত্য গৌরলীলা—শ্রীগুরুমুখে শুনেছি মোরা
এসেছি সেই আশা করে
জেনে,–ত্রিকালসত্য গৌরলীলা—এসেছি সেই আশা করে—
গৌরের,–ভক্তবাঞ্ছা-পূরণের—আজ সেই দিন রে
প্রাণের প্রাণ গৌরহরি—আজ,–বাসনা পূরণের দিন
প্রাণের প্রাণ হরিদাসের—আজ,–বাসনা পূরণের দিন
হা গৌর প্রাণ গৌর—ত্রিকালসত্য তোমার লীলা
প্রাণের প্রাণ গৌরহরি—সেই লীলা ভোগ করায়ো আজ
আজ,–একবার দেখা দাও
হা গৌর প্রাণ গৌর—আজ,–একবার দেখা দাও
(আজ,–হরিদাসের বাসনা পূরণের দিন—আজ,–একবার দেখা দাও)
হা গৌর প্রাণ গৌর—আজ,–একবার দেখা দাও
(আজ,–হরিদাসের বাসনা পূরণের দিন—আজ,–একবার দেখা দাও)
ত্রিকালসত্য-লীলায়—আজ,–হরিদাসের বাসনা পূরণের তিন
শ্রীগুরুমুখে শুনেছি—ত্রিকালসত্য লীলা তোমার
এসেছি বড় আশা করে
(হা,–ভক্ত-বৎসল গৌরহরি—এসেছি বড় আশাকরে)
দেখব বলে আসি মোরা
শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—দেখব বলে আসি মোরা
দগ্ধ-হৃদয় জুড়াব বলে—দেখব বলে আসি মোরা
দেখিতে ত’ নাহি পাই—কিন্তু,–ব্যথা লয়ে ফিরে যাই
ব্যথা লয়ে ফিরে গেছি
শ্রীরথযাত্রায় এসে—ব্যথা লয়ে ফিরে গেছি
আশ পূরণ করবে কি?
ও,–মহাভাব-প্রেমরস-বারিধি—আশা পূরণ করবে কি ?
(তোমার,–ত্রিকালসত্য-লীলায়—তেমনি করে চল প্রভু)
স্বরূপাদি,–প্রিয়গণ সঙ্গে লয়ে—তেমনি কর চলে প্রভু
ঠাকুর,–হরিদাসের বাসনা পুরাইতে—তেমনি করে চল প্রভু
তোমার নিজগণ সঙ্গে—তেমনি করে চল প্রেমতরঙ্গে
তোমার ভক্তবাৎসল্য-লীলা—অনুভবানন্দে গাই মোরা)
তোমার,–ভকতবাৎসল্য-লীলা—প্রাণভরে দেখব মোরা
পাগলা-প্রভুর পিছে থেকে—প্রাণভরে দেখব মোরা
শ্রীগুরুদেবের আনুগত্যে—প্রাণভরে দেখব মোরা
তোমার,–প্রিয়গণ সঙ্গে লয়ে—তেমনি করে চল প্রভু
(ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—যায় প্রভু নিজগণ-সাথে)
ঠাকুর,–হরিদাসের বাসনা পুরাইতে—প্রভু—যায় নিজগণ-সাথে
অন্ত্যলীলার ১১শ পরিচ্ছেদ হইতে কীর্ত্তন
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হর রাম।।
‘‘জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় দয়াময়।’’
(ভাই রে আমার,–প্রেমাবতার—গৌরহরির—একবার,–প্রাণভরে জয় দাও ভাই)
ভক্তবৎসল-গৌরহরির—একবার,–প্রাণভরে জয় দাও ভাই
ভক্তবাঞ্ছাপূর্ণকারী—ভক্তবৎসল—গৌরহরি
জয় হে,– জয় শ্রীনিবাসেশ্বর হরিদাস-নাথ।
জয় হে,– জয় গদাধর-প্রিয় স্বরূপ-প্রাণাথ।।
জয় হে,– জয় কাশীশ্বর-প্রিয় জগদানন্দ-প্রাণেশ্বর।
জয় হে,– জয় রূপ-সনাতন-রঘুনাথেশ্বর।।
জয় হে,– জয় গৌরদেহ কৃষ্ণ—স্বয়ং ভগবান।
জয় হে,– কৃপা করি’ দেহ প্রভু নিজপদ দান।।
নিতাই হে,– জয় নিত্যানন্দ জয় চৈতন্যের প্রাণ।
তোমার চরণারবিন্দে ভক্তি দেহ দান।।
জয় জয়াদ্বৈতচন্দ্র চৈতন্যের আর্য্য।
সীতানাথ,– স্বচরণে ভক্তি দেহ জয়াদ্বৈতাচার্য্য।।
জয় গৌর-ভক্তগণ গৌর যাঁর প্রাণ।
গৌরগণ,– ‘‘সব ভক্ত মিলি মোরে ভক্তি দেহ দান।।
জয় রূপ সনাতন জীব রঘুনাথ।
রঘুনাথ গোপাল জয় ছয় মোর নাথ।।
এ সব প্রসাদে লিখি চৈতন্য-লীলাগুণ।
ষৈছে তৈছে লিখি করি আপনা পাবন।।
এই মত মহাপ্রভুর নীলাচলে বাস।
সঙ্গের ভক্তগণ লইয়া কীর্ত্তন-বিলাস।।
দিনে নৃত্য-কীর্ত্তন ঈশ্বর দরশন।
রাত্রে রায়-স্বরূপ-সনে রস-আস্বাদন।।
(মহাভাবে ভোরা গোরা—নিভৃত-গম্ভীরায় বসি’ রে)
রাধাভাবে ভোরা গোরা—নিভৃত-গম্ভীরায় বসি’ রে
(স্বরূপ,–রামরায়-সনে রসাস্বাদন—নিভৃত-গম্ভীরায় বসি’ রে
‘স্বরূপ-রামানন্দে-সনে’—নিভৃত-গম্ভীরায় বসি’ রে
‘স্বরূপ-রামানন্দ-সনে’—
যাঁরা তাঁর মরম জানে—স্বরূপ-রামানন্দ-সনে
স্বরূপ রামরায়, ললিতা বিশাখা
প্রভু আমার শ্রীরাধিকা—স্বরূপ রামরায়, ললিতা বিশাখা
(ভাবনিধি,–গৌর আমার শুদ্ধরাধা—স্বরূপ রামরায়, ললিতা বিশাখা)
নিভৃত-গম্ভীরায় বসি, রে
(নিভৃত-গম্ভীরা-ঘরে
শ্রীকাশীমিশ্রাবাসে—নিভৃত-গম্ভীরা-ঘরে)
(কৃষ্ণ,–বিরহিণী প্রাণ-গোরারায়-জাগিয়া রজনী পোহায়)
মহাভাবে ভোরা গোরারায়—জাগিয়া রজনী পোহায়
(শ্রীরাধাভাবে ভোরা গোরা—জাগিয়া রজনী পোহায়)
গম্ভীরা-ভিতরে গোরারায়—জাগিয়া রজনী পোহায়
স্বরূপ-রামরায়ের কণ্ঠ ধরি—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
(শ্রী,–রাধাভাবে প্রাণ-গোরারায়—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
বঁধু কই,–এল না এল না বলে—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
কৃষ্ণ-বিরহে কাঁদে সদা—গৌর আমার বিরহিণী রাধা
বিরহিণী রাধা প্রাণ-গোহারায়—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
শ্রীরাধার প্রেম কেমন—এবার,–আস্বাদিতে এসেছে
পুরাইতে অপূর্ণ সাধা—হয়েছে বিরহিণী রাধা
স্বরূপ,–রামরায়ের কণ্ঠ ধরি’—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
আপনি বিরহিণী রাধা—সেই ললিতা সেই বিশাখা
স্বরূপ-রামরায়ের ধরি’ গলে—ভাসে,–গৌর-কিশোরীমণি নয়নজলে
বঁধু কই,–এল না এল না বলে—ভাসে,–গৌর-কিশোরমণি নয়নজলে
এই মত মহাপ্রভুর সুখে কাল যায়।
যেন,–বিরহিণী কিশোরীমণি
রাধাভাবে মত্ত দিবা-রজনী—যেন,–বিরহিণী কিশোরীমণি
কৃষ্ণের বিরহ-বিকার অঙ্গে নানা হয়।।
দিনে দিনে বাড়ে বিকার রাত্রে অতিশয়।
চিন্তা-উদ্বেগ-প্রলাপাদি যত শাস্ত্রে কয়।।
স্বরূপ-গোসাঞি আর রামানন্দ-রায়।
রাত্রিদিনে করে দোঁহে প্রভুর সহায়।।’’
অনুকূল-প্রসঙ্গ করে
ভাবনিধির ভাব জেনে—অনুকূল-প্রসঙ্গ করে)
ভাব-অনুকূল-কথা-প্রসঙ্গে
ভাব-অনুকূল-প্রসঙ্গ করে—ভাবনিধির,—ভাব-অনুকূল করে সহায়
তাঁর,–ভাবের অনুকূল সহায় করে—শ্রীমুখ দেখে বুক জেনে)
একদিন গোবিন্দ মহাপ্রসাদ লইয়া।
ঠাকুর,– হরিদাসে দিতে আইলা আনন্দিত হৈয়া।।
গোবিন্দ,–‘‘দেখে হরিদাস-ঠাকুর করিয়াছেন শয়ন।’’
প্রাণ,–গৌর-মনোবৃত্তির বিকাশ
হরিদাসে,–রৌদ্রবৃষ্টি হতে রক্ষার লাগি
সিদ্ধ-বকুল-রূপে প্রকাশ
গোবিন্দ,– ‘‘দেখে হরিদাস-ঠাকুর করিয়াছেন শয়ন।
শ্রীহরিদাস,– মন্দ মন্দ করিতেছেন সংখ্যা সঙ্কীর্ত্তন।।
গোবিন্দ কহে—উঠ’ আসি’ করহ ভোজন।
হরিদাস কহেন—আজ করিব লঙ্ঘন ।।
সংখ্যা সঙ্কীর্ত্তন নাহি পূরে কেমতে খাইব।
ও গোবিন্দ,– মহাপ্রসাদ আনিয়াছ কেমনে উপেক্ষিব।
হরিদাস,– এত বলি’ মহাপ্রসাদ করিল বন্দন।
এক রঞ্চ লৈয়া তার করিল ভক্ষণ।।’’
এমন,–ভজন-নিষ্ঠা না হইলে—শুধু,–মুখের কথায় কি গৌর মিলে,
এমন,–নামে রুচি না হইলে—শুধু,–মুখের কতায় কি গৌর মিলে
তবু ভক্তের দুর্ব্বল-জীবন।।’’ রে !!
‘‘আর দিন মহাপ্রভু তাঁর ঠাঁই আইলা।।’’
মহাপ্রভু আমার নিতুই আসে
ঠাকুর,–হরিদাসে দেখা দিতে—মহাপ্রভু আমার নিতুই আসে)
এই সিদ্ধ-বকুল-তলে—প্রভু আমার,–দেখা দিতে নিতুই আসে
প্রাণ-প্রিয়-হরিদাসে—প্রভু আমার,–দেখা দিতে নিতুই আসে
জগন্নাথের—মঙ্গল-আরতি দর্শন করে—প্রভু আমার,–দেখা দিতে নিতুই আসে
ঠাকুর হরিদাসের আগে—প্রভু আমার,–দেখা দিতে নিতুই আসে
হরিদাস,–মন্দিরে যান না দৈন্যবশে—প্রভু আমার—দেখা দিতে নিতুই আসে
যেন জগন্নাথের,–সেবক আমায় দেখতে না পায়
আমি অদৃশ্য অস্পৃশ্য
আমায়,–দেখে যাবে শ্রীমন্দিরে
করিবে জগন্নাথের সেবা
আমি হব অপরাধী
তারা ত’ কিছু জানবে না—আমি হব অপরাধী
হরিদাস মহাদৈন্যে—এই স্বভাবে
থাকেন,–গম্ভীরা-নিকটে নির্জ্জন-বনে
নিশিদিশি,–মহামন্ত্র করেন সাধনে
প্রাণে ধরি’ প্রাণ-গৌরাঙ্গ-ধনে—নিশিদিশি,–মহামন্ত্র করেন সাধনে
জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—হরিদাস যান না অচলে দেখতে
দেখিবার,–সাধ করে কিন্তু দৈন্যবেশে—হরিদাস যান না অচলে দেখতে
দুই স্বরূপে বিহরে
লীলাময় শ্রীবিগ্রহ—দুই স্বরূপে বিহরে
মধুর-নীলাচলপুরে—দুই-স্বরূপে বিহরে
সচল আর অচল—দুই স্বরূপে বিহরে
গৌর আর জগন্নাথ—এই, —দুই স্বরূপে বিহরে
সচল দেন নাম-প্রেমামৃত
আর, সচল দানে অধরামৃত—সচল দেন নাম-প্রেমামৃত
তাই,–চল রূপে পুরান আশ’—অচল দেখতে আসেন না হরিদাস
প্রাণ প্রিয়-হরিদাসে—দেখা দিতে নিতুই আসে
হরিহাস,–মন্দিরে যান না দৈন্যবশে—দেখা দিতে নিতুই আসে)
হরিদাসের দেখা দিবার আশে’—প্রভু আমার নিতুই আসে
যে জন সঁপেছে সর্ব্বস্ব তাঁরে,–না দেখা দিয়ে কি রইতে পারে,
তাই,–প্রভু আমার নিতুই আসে
বিভোর হয়ে ভক্তবাৎসল্য-রসে—তাই প্রভু আমার নিতুই আসে
(দেখা দিতে আসে কি দেখতে আসে—কিছু বুঝা ত’ যায় না)
প্রাণ-গৌর-লীলা-রহস্য—কিছু বুঝা ত’ যায় না
(নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা—কিছু বুঝা ত’ যায় না
এবার,–মহভোগের অবতার—বড় ভোগী গৌর আমার)
নিতুই,–অভিনব-রস-ভোগ-লোলুপ—প্রাণ-গৌর-লীলা-রহস্য
নিগম-নিগূঢ়-গৌরলীলা—কিছু বুঝ ত’ যায় না
শ্রীগুরুবৈষ্ণবের কৃপা বিনে—কিছু বুঝা ত’ যায় না
দেখা দিতে আসে কি দেখতে আসে—কিছু বুঝা ত’ যায় না
মহাভাবনিধির কিবা আশয়)
প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে
(প্রভু—হরিদাসে দেখতে আসে—প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে)
শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে
(দেখা দিতে আসে না দেখতে আসে—আমার,–প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে)
ভাবনিধি-গৌরাঙ্গ-লীলা—এ যে,–ভোগময়-লীলা রে
অশেষ-বিশেষে আস্বাদনম—এ যে,–ভোগময়-লীলা রে
(এ যে,–মহাভোগের অবতার—ভোগ ছাড়া থাকে না)
বড় ভোগী গৌর আমার—ভোগ ছাড়া থাকে না
এবার লীলার এই ত’ ধারা
অন্তর বাহ্য দুই-রূপ
অন্তরে রস আস্বাদন
বাহিরে জীব-উদ্ধারণ—অন্তরে রস আস্বাদন
উদ্দেশ্য,–নিজ-মাধুরী, আস্বাদন
আনুসঙ্গে নাম-প্রেম বিতরণ—উদ্দেশ্য,–নিজ-মাধুরী আস্বাদন
বিশেষ-রস আস্বাদন আশে’—তাই বলি,–গৌর আমার দেখতেই আসে
অশেষ-বিশেষে আপনায় আস্বাদিতে—এবার লীলা গৌরাঙ্গ-রূপেতে
সদা,–অভিনব ভোগ-লালসা
ভোগময়-গৌর-স্বরূপে—সদা,–অভিনব ভোগ-লালসা
কেবল ভোগের আশে’,–হরিদাসের কাছে আসা—সদা,–অভিনব-ভোগ-লালসা
হরিদাস,–দেখে তারে অনায়াসে—কিন্তু,–প্রভু আমার, হরিদাসে দেখতে আসে
(না দেখলে রইতে নারে—তাই,–প্রভু আমার—হরিদাসে দেখতে আসে)
দেখা দিতে আশা মর্ম্ম নয়—হরিদাসে দেখাই গৌর-আশয়
দেখতে আসলে দেখা দেওয়া—আনুসঙ্গে হয়ে যায়
ইচ্ছা করে করতে হয় না—আনুসঙ্গে হয়ে যায়
প্রাণ-গৌরাঙ্গের মনের ভাব-শ্রীগুরু-কৃপায় এই হয় অনুভব
(কেন এত আকর্ষণ, জগন্নাথে করি’ দরশন,–হরিদাসের কাছে আসেন—কেন এত আকর্ষণ)
নিতুই নিতুই ছুটে ছুটে—কি লোভেতে আসে বল
জগন্নাথ দেখি’ হরিদাসে দেখতে—কি লোভেতে আসে বল
এ-যে,–ভোগময়-অবতার
তাইতে—হরিহাসে দেখতে আসে
রাধাভাবে করেন জগন্নাথ দরশন
শ্রী,–মঙ্গল-আরতি করে দরশন)
শ্রীগুরু-প্রেরণায় এই ত’ জাগে
(প্রভু আমার যান শ্রীমন্দিরে
শ্রী,–জগন্নাথের মঙ্গল-আরতি দেখতে—প্রভু আমার যান শ্রীমন্দিরে
জগন্নাথ-শ্যামের,–কি বল শ্রেষ্ঠ-ভূষণ
মঙ্গল-আরতি-কালে,–জগন্নাথের যেই বেশ
তারেই বড়-সিংহার বলে
সেই ত’ বটে শ্রেষ্ঠ-বেশ
সেই ত’ বড়-বেশ মানি
রসরাজ্যের-অনুশীলনে—সেই ত’ বড়-বেশ মানি
নাগরেন্দ্র-শিরোমণির—সেই ত’ সর্ব্ব-শ্রেষ্ঠ-বেশ
নিকুঞ্জ-বিলাস-চিহ্নে হয় বিভূষিত—সেই ত’ তার বড়-বেশ
মঙ্গল-আরতি-কালে—এই,–বড়-ভূষণে ভূষিত জগন্নাথ
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
সেই ত’—জগন্নাথ-শ্যামের শ্রেষ্ঠ-স্বরূপ
সেই শ্যামের-গূঢ়-স্বরূপ
রজনী-বিলাস চিহ্ন হয়—সেই শ্যামের গূঢ়-স্বরূপ
পাণিশঙ্খের শব্দ শুনে—তাইতে ছুটে ছুটে আসে
এই স্বরূপ দেখবে বলে—তাইতে ছুটে ছুটে আসে
প্রাণ-গৌর-কিশোরী—তাইতে ছুটে ছুটে আসে
রসময়-শ্রীগোবিন্দের—সেই ত’ বটে বড় সিংহার
নিকুঞ্জ,–ভোগ-বিলাস-চিহ্নময়—সেই ত’ বটে বড়-সিংহার
প্রাণের প্রাণ শ্যাম-সুন্দরের—তাই দেখতে নিতুই আসে
জগন্নাথ-শ্যামের—তাই দেখতে নিতুই আসে
ভোগময়-স্বরূপেতে—সেই বেশ ভোগ করে)
নিতুই নিতুই গৌর আমার—মঙ্গল-আরতি দর্শন করে
পরাণ-নাথ-জগন্নাথের—মঙ্গল-আরতি দর্শন করে
অভিলষিত-স্বরূপ দেখবার তরে—মঙ্গল-আরতি দর্শন করে
বড়-সিংহার ভোগের তরে—মঙ্গল-আরতি দর্শন করে
(জগন্নাথ-শ্যামের—বড়-সিংহার ভোগের তরে)
নিকুঞ্জ,–বিহার-জনিত-চিহ্ন-যুত-বড়-সিংহার ভোগের তরে
মঙ্গল-আরতি দর্শন করে—বড়-সিংহার ভোগের তরে
যা’ ভোগ হয় প্রাণ-গৌর-কিশোরীর
তাত তাঁর বুকে জাগে
শুধু বুকে জাগা নয়
সর্ব্বাঙ্গেতে বিকাশ হয়
সেই ভোগ-মাধুরী—সর্ব্বাঙ্গেতে বিকাশ হয়
ভাব-রাজ্যের এই ত’ স্বভাব
বুকেতে যা’ ভোগ হয়
মুখেতে তা’ প্রকাশ পায়—বুকেতে যা’ ভোগ হয়
মুখ দেখে বুক ভোগ করয়—রসিক যে জন হয়
যে ভোগ হয় তার অন্তরে—গৌরের,–শ্রীমুখেতে ঝল্মল্ করে
বুকের ভোগ মুখে ফুটে—গৌরের,–শ্রীমুখেতে ঝল্মল্ করে
এই,–ভোগময়-স্বরূপ লয়ে
(আসেন হরিদাসের কাছে—এই,–ভোগময়-স্বরূপ লয়ে)
সেই,–ভোগ-আবেগে গৌরহরি—হরিদাসের সম্মুখে এলে
সেই,–ভোগ-গৌরবময়-মাধুরী লয়ে—হরিদাসের সম্মুখে এলে
অমনি হয় প্রতিফলিত—হরিদাস যে স্বচ্ছ দর্পণ)
ভোগের সেই অপূর্ব্ব-স্বরূপ—হয় তাতে প্রতিবিম্বিত
হরিদাস যে স্বচ্ছ দর্পণ—হয় তাতে প্রতিবিম্বিত
ভোগমাধুরীময়—গৌর-স্বরূপ—হরিদাসের হৃদয়ে পশিয়া
নয়নের দ্বার দিয়া—হরিদাসের হৃদয়ে পশিয়া
নয়ন-দ্বারে প্রবেশ হয়ে—অমনি হয় প্রতিফলিত
সেই ভোগময়-স্বরূপ—অমনি হয় প্রতিফলিত
প্রাণ-গৌরাঙ্গ—জগন্নাথের,–সেই ভোগময়-স্বরূপ—অমনি হয় প্রতিফলিত
মহাভোগী হরিদাস—সেই স্বরূপ হৃদে ধরে
বিকাশ পায় তার শ্রীমুখেতে
হরিদাসের মুখে ফুটে
হস্ত-মুখাদি-সর্ব্বঙ্গে—হরিদাসের মুখে ফুটে
ভোগময়-স্বরূপের ভোগের ভোগ—হরিদাসের মুখে ফুটে
জাগে বুকে মুখে ফেটে
যা’,–বুকে ওঠে তা’ মুখে ফুটে)
দেয় তারে মাতাইয়া
হরিদাস,–নব-আনন্দ ভোগ করে
গৌরের,–ভোগমাধুরী ভোগ-করে—হরিদাস,–নব-আনন্দ ভোগ করে
হরিদাসের,–শ্রীমুখে হয় বিকাশ
ফুটে হরিদাসের মুখে
হরিদাসর বুকের ভোগ—ফুটে হরিদাসের মুখে
সেই স্বরূপ ভোগের লাগি—তাই প্রভু ছুটে আসে
নিজ-ভোগের ভোগ ভোগ করিতে—তাই প্রভু ছুটে আসে
নিতুই হরিদাসের কাছে—তাই প্রভু ছুটে আসে
হরিদাসের মুখ হেরে—গৌর আমার ভোগ করে)
আমি যদি হরিদাস হতাম—নিরন্তর আস্বাদিতাম্
আমার এই ভোগমাধুরী—সদা ভোগ করতে পেতাম
অবধি ত’ নাই রে
ভোগ নিতুই নিতুই বাড়ে—অবধি ত’ নাই রে
সুস্থ হও হরিদাস’ তাঁহারে পুছিলা।।
নমস্কার করি’ তিঁহ কৈল নিবেদন।
শরীর সুস্থ হয় মোর—অসুস্থ বুদ্ধি মন।।
প্রভু কহে কোন-ব্যাধি কহত নিশ্চয়।
তেঁহ কহে সংখ্যা সঙ্কীর্ত্তন না পূরয়।।’’
আরে আরে আরে আমার—পরাণ গৌরাঙ্গগণ
আরে আরে আমার গুণের—পরাণ-গৌরাঙ্গগণ
গৌর-গোবিন্দ-পরায়ণ—পরাণ-গৌরাঙ্গগণ
(পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—দেহ-ব্যাধি ব্যাধি না গণে)
কৃপার দান করি’ মানে—দেহ-ব্যাধি ব্যাধি না গণে
ভজন-বিঘ্ন ব্যাধি মানে—দেহ-ব্যাধি ব্যাধি না গণে
গৌর-ভজন যে-দিন নাহি হয়—তারেই ত’ দুর্দ্দিন কয়
ও হরিদাস,–সিদ্ধদেহ তুমি সাধনে আগ্রহ কেনে ধর।
হরিদাস,– লোক নিস্তারিতে এই তোমার অবতার।
নামের মহিমা লোকে করিলে প্রচার।’’
আমি,–একমুখে কিবা বলব—অদ্ভুত চরিত্র তোমার
ভোগ্য-স্বরূপের ভোগের ভোগ—গৌর আমার ভোগ করে
এই ভোগ করবার আশে—নিতুই নিতুই ছুটে আসে
মঙ্গল-আরতি হেরে—নিতুই নিতুই ছুটে আসে
বড়,–ভোগী আমার গৌরহরি
ভোগ-লালসায় ফিরে নিরবধি—বড়,–ভোগী আমার গৌরহরি
আপন,–ভোগের ভোগ ভোগ-করিতে—তাই,–আসে হরিদাসের কাছে
দেখা দিতে আসে না দেখতে আসে)
কখনও ভোগ করতে ত’ পায় না
নিজ-ভোগের কি মাধুরী—কখনও ভোগ করতে ত’ পায় না
হরিদাসের বদন হেরে—আজ তাই,–অনিমিখে গৌর দেখে
নিজ ভোগ-মাধুরীর ভোগ—আজ তাই,–অনিমিখে গৌর দেখে
নিতুই নিতুই গৌর আমার—তাই ছুটে ছুটে আসে
আপন,–ভোগমাধুরী—ভোগের ভোগ-আশে—তাই ছুটে ছুটে আসে
জগন্নাথ-দরশন হতেও—বুঝি অধিক সুখ পায়
ঠাকুর,–হরিদাস-দরশনে—বুঝি অধিক সুখ পায়
ভোগলিপ্স গৌর আমার—নৈলে বা আসবে কেন
লুব্ধ হয়ে সেই ভোগে
গৌরের অন্তরে বাসনা জাগে
আমি যদি হরিদাস হতাম
(যারা তোমায়,–বাইশ-বাজারে করিল প্রহার
তুমি,–মঙ্গল-আকাঙ্খা করিলে তার—যারা তোমায়,–বাইশ-বাজারে
বাইশ-বাজারে মারিল যারা
তোমার,–কৃপার পাত্র হইল তারা—বাইশ-বাজারে মারিল যারা)
স্মঙরি প্রাণ কেঁদে উঠছে—তুমি সঙ্কল্প করিলে
কাজির শাসনেতে—তুমি সঙ্কল্প করিলে
তথাপি না ছাড়িব বদনে হরিনাম।।’’
তাতে যায় যাক প্রা—না ছাড়িব হরিনাম
তুমি,–হীরা-বেশ্যা উদ্ধারিলে—আবার,–নাম-কীর্ত্তন-প্রভাব-বলে
রামচন্দ্রখানের প্রেরিত—হীরা-বেশ্যা করিলে উদ্ধার
তার,–দুর্ব্বসনা করি ক্ষালন—তারে করিলে নাম-পরায়ণ)
তার,–দুর্ব্বসনা দূরে গেল—বেশ্যা মহাবৈষ্ণবী হল
তোমার,–নাম-কীর্ত্তন-প্রভাবেতে—বিষধর-অজগর পলাইল।
মায়া,–বিকাইল পদতলে
তোমার,–নাম-ভজন-নিষ্ঠাবলে—মায়া,–বিকাইল পদতলে
হরিদাস করে—শুন মোর সত্য-নিবেদন।।’’
(প্রভু হে–)হীন-জাতিতে জন্ম মোর নিন্দ্য কলেবর।
হীন-কর্ম্মে রত মুঞি অধম-পামর।।
অদৃশ্য-অস্পৃশ্য-মোরে অঙ্গীকার কৈলা।
রৌরের হৈতে কাড়ি বৈকুণ্ঠে চড়াইলা।।’’
দৈন্য-ভূষণে সদা ভূষিত—প্রাণ-গৌরগণ যত
দৈন্য-ভূষণে গৌরগণ—ভূষিত-থাকেন সর্ব্বক্ষণ
গুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগছে
দৈন্য যায় ধন্য হতে—হরিদাসের আশ্রয়েতে
দৈন্য বুঝি ধন্য হয়—বুঝি তাঁদের আশ্রয় লয়)
পরাণ-গৌরাঙ্গগণে—আপনাকে হীন মানে
সর্ব্বোত্তম হইয়াও—আপনাকে হীন মানে
করে গৌর বশীকরণ
হরিদাসের এই দৈন্য-ভূষণ—করে গৌর বশীকরণ
এমন স্বভাব না হইলে—শুধু কি,–মুখের কথায় গৌর মিলে)
‘স্বতন্ত্র ঈশ্বর তুমি হও স্বেচ্ছাময়।
জগত নাচও যৈছে যারে ইচ্ছা হয়।।
প্রভু হে, –অনেক নাচাইলে মোরে প্রসাদ করিয়া।
বিপ্রের শ্রাদ্ধ-পাত্র খাইনু ম্লেচ্ছ হইয়া।।’’
আমি তোমার খেলার পুতুল—যেমন নাচাও তেমনি নাচি
কেবল তোমার সুখের লাগি—যেমন নাচাও তেমনি নাচি
প্রভু হে,– লীলা সম্বরিবে তুমি লয় মোর চিতে।।’’
(যে-দিন—সীতানাথের হেঁয়ালী-পত্র শুনেছি—আমি,–সেদিন হতে জেনেছি)
যেদিন—সীতানাথের তর্জ্জা শুনেছি—আমি—সেদিন হতে জেনেছি
হাটে না বিকায় চাউল
বাউলকে কহিও কহিয়াছে বাউল—হাটে না বিকায় চাউল
(আমি,–সেইদিন হইতে জেনেছি
প্রভু হে লীলা সম্বরিবে তুমি—আমি,–সেইদিন হইতে জেনেছি)
সুখের হাট ভেঙ্গে যাবে—তুমি,–ফাঁকি দিয়ে লুকাইবে।
প্রভু হে,–আপনার আগে মোর এ দেহ পড়িবা।।’’
আমি,–দেহ ছাড়িব তোমার আগে—সেই লীলা প্রকটের আগে
যদি,–নিজগুণে দিয়েছ আশ্রয়—আমার,–এই বাসনা পুরাইতে হবে
‘যদি,–নিজগুণে দিয়েছে আশ্রয়’—
অদৃশ্য অস্পৃশ্য জেনে—যদি,–নিজগুণে দিয়েছ আশ্রয়)
যদি,–নিজগুণে দিয়েছ আশ্রয়—আমার,–এই বাসনা পুরাইতে হবে
‘যদি,–নিজগুণে দিয়েছে আশ্রয়’—
অদৃশ্য অস্পৃশ্য জেনে—যদি,–নিজগুণে দিয়েছ আশ্রয়)
যদি,–নিজগুণে করেছ অঙ্গীকার—এই বাসনা পূরণ করতে হবে
দীনবৎসল-স্বভাবেতে—এই বাসনা পূরণ করতে হবে
আমি মরিব তোমার আগে—এই বাসনা পূরণ করতে হবে
এই মিনতি রাঙ্গা-পায়—যেন,–জ্বালাইও না আমায়
তোমার বিরহ-জ্বালায়—যেন,–জ্বালাইও না আমায়
প্রভু হে,– নয়নে দেখিব তোমার ওচাঁদ-বদন।।
প্রভু হে,– জিহ্বায় উচ্চারিব তোমার কৃষ্ণচৈতন্য নাম।
প্রভু হে,– এই মত মোর ইচ্ছা ছাড়িব পরাণ।।’’
ভকত-বৎসল প্রভু—আমার বাসনা পূরাইতে হবে
তোমার,–নাম লয়ে ছাড়ব পরাণ
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য—তোমার এই,—নাম লয়ে ছাড়ব পরাণ
হৃদে,–ধরব চরণ হেরব বয়ান—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য,–নাম লয়ে ছাড়ব পরাণ
ঠাকুর—হরিদাসের চরিত্রে—অনুভব কর ভাই রে
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম সাধন-ফলে—প্রাণ যায় গৌরাঙ্গ বলে)
নিবেদিলাম অভয়-চরণে—আমার এই বাসনা মনে
এই নিবেদন মোর কর দয়াময়।।
এই নীচ দেহ মোর পড়ে তোমা-আগে।
প্রভু হে,–এই বাঞ্ছাসিদ্ধি মোর, তোমাতেই লাগে।।’’
আমার,—প্রাণ যাবে এই দেহ হতে
তোমার,–যুগল-চরণ ধরি’ হৃদে—আমার,—প্রাণ যাবে এই দেহ হতে
তোমার,–মধুর নাম বলতে বলতে—আমার,—প্রাণ যাবে এই দেহ হতে
তোমার,–চাঁদমুখ দেখতে দেখতে—আমার,—প্রাণ যাবে এই দেহ হতে
কৃষ্ণ কৃপাময় তাহা অবশ্য করিবে।।
কিন্তু আমার যে কিছু সুখ সব তোমা লঞা।’’
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
কি সুখ দেন বা হরিদাস—আমার,—প্রাণ গৌর কি সুখে সুখী
মহাভাবনিধি—প্রাণ-গৌরাঙ্গের সব সুখ কি
ঠাকুর,–হরিদাস তারে কি সুখ দেয়—আমার,—প্রাণ-গৌর কি সুখ পায়
তার বল কিসে সুখ
একবার ভেবে দেখ
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—একবার ভেবে দেখ
আমার প্রাণ-গৌরাঙ্গ—বিরহিণী কিশোরী
কৃষ্ণের বিরহ বিচ্ছেদ বাড়ে নিরন্তর।।’’
কৃষ্ণের বিরহ-দশায়—সর্ব্বদাই আছেন বিভোর
হরিহাস সদাই অনুভব করে—তার কিসে সুখ হয়
যদি মিলন-প্রসঙ্গ পায়—বিরহিণীর তবে সুখ হয়
যদি শ্যাম-সঙ্গ ঘটে—তাইতে তার সুখ বটে
বিরহিণী কিশোরীকে—হরিদাস সেই সুখ দিচ্ছেন
ঠাকুর শ্রীহরিদাস—নিরন্তর ভোগ করান
মহামন্ত্র-নাম শুনায়ে—নিরন্তর ভোগ করান
শ্রীরাধারাণীর দশমী-দশায়—নিরন্তর ভোগ করান
হরিনাম-মহামন্তর—নিরন্তর শুনাইছেন
শ্রী,–রাধারাণীর—দশমী-দশায়-মহামন্ত্রের প্রকাশ হয়
এই মহামন্ত্র হয়—নিকুঞ্জ-রহস্য-ভোগময়
শ্রীমহামন্ত্র-হরিনাম—নিশিদিশি শুনাইছে
এই মহামন্ত্র হরিনাম—অপূর্ব্ব-রহস্যময়
নিগূঢ়-নামের নিগূঢ়-রহস্য-নিজ-গুণে জানায়েছেন
শ্রীগুরুদেব কৃপা-করে—নিজ গুণে জানায়েছেন
কদম-বনে বাঁশী-শুনায়ে—প্রথম-হরে পূর্ব্বরাগ ভোগ কারয়
কদম-বনে বাঁশী শুনায়ে—প্রথম-হরে পূর্ব্ববাগ জাগায়
শেষ—হরে মহারাস দেখায়—প্রথম-হরে পূর্ব্বরাগ জাগায়
শ্যাম-সঙ্গ হারাইয়ে—তাইতে হয়েছে বিরহ
প্রাণ-সঙ্গে বিলাস হয়—সেই কথা শুনতে পায়
গৌর-কিশোরীকে সেই সুখ দেয়
হরিদাস-ঠাকুর আমার—গৌর-কিশোরৈীকে সেই সুখ দেয়
মহামন্ত্র শুনাইয়ে—গৌর-কিশোরীকে সেই সুখ দেয়
তোমার লয়ে সব-সুখ—শ্রীমুখে বলেছেন প্রভু
শ্রীরাধাকৃষ্ণ-বিলাস—নিরন্তর পিয়াও মোরে)
হরিদাস,–নিরন্তর দেয় বাঞ্ছিত-ভোগ—তাইতে প্রভুর সব-সুখ
ব্রজলীলারসপুর—হরিদাস,–নাম শুনায় নিরন্তর
‘প্রাণে প্রাণে ভাব’ ভাই—হরিদাস কে বটে
‘প্রাণে প্রাণে ভাব’ ভাই—
গুরু-চরণ হৃদে ধরে—প্রাণে প্রাণে ভাব’ ভাই
প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে
ঠাকুর-হরিদাসের স্বরূপ—প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে
তার মাঝে একজন হবে
যাঁরা কৃষ্ণ-নাম শুনায়েছিল—তার মাঝে একজন হবে
যাঁরা কৃষ্ণ-নাম শুনায়েছিল’—
শ্রীরাধিকার দশমী-দশায়—যাঁরা কৃষ্ণ-নাম শুনায়েছিল
শুনায়ে লীলা রেখেছিল—যাঁরা কৃষ্ণনাম শুনায়েছিল
শ্রীঠাকুর হরিদাস—তার মাঝে একজন বটে
ঠাকুর,–হরিদাস নিশ্চয় হন—তাদের মাঝে একজন
বিরহিণী,–গৌরিকশোরীকে সুখ দিতে—তাই এখনও শুনাইছে
হরিদাসের মুখে নাম শুনে—গৌরকিশোরী,–প্রাণভরে ভোগ করে
প্রাণবঁধুর সঙ্গে মিলন রঙ্গ—প্রাণভরে ভোগ করে
তোমার যোগ্য নহে যাও আমারে ছাড়িয়া।।’’
এ ত’—অভিনয় বটে—এ ত’,–ছাড়াছাড়ি নয় ভাই
কেবল ভোগের লাগি রে
আবির্ভাব তিরোভাব,–কেবল ভোগের লাগি রে)
অবশ্য মো-অধমে প্রভু করিবে এই দয়া।।
মোর শিরোমণি কত কত মহাশয়।
তোমার লীলার সহায় কোটী-ভক্ত হয়।।
আমা-হেন এক-কীট যদি মরি’ গেল।
এক পিপীলিকা মৈলে পৃথিবীর কাঁহা হানি হৈল।।’’
প্রাণ-গৌরগণের দৈন্যের—বালাই লয়ে মরে যাই
দৈন্য—ভূষণে সদা ভূষিত—প্রাণ-গৌরগণ যত)
পরাণ গৌরঙ্গের গণ—তৃণাদপি-আসনে সদা উপবেশন
অবশ্য পূরাবে প্রভু মোর এই আশ।।
মধ্যাহ্ন করিতে প্রভু চলিলা আপনে।
ঈশ্বর দেখি’ কালি আসি’, দিবেন দরশনে।।
তবে মহাপ্রভু তারে করি’ আলিঙ্গন।
মধ্যাহ্ন করিতে সমুদ্রে করিলা গমন।।
প্রাতঃকালে ঈশ্বর দেখি’ সব ভক্ত লঞা।
হরিদাসে দেখিতে আইলা বিলম্ব ত্যজিয়া।।’’
হরিদাসের বাসনা-পূরণের—আজ সেই দিন রে
হরিদাসের বাসনা-পূরণের দিন—আজ সেই প্রাতঃকাল)
হরিদাসের বাসনা-পূরণের—এই সেই স্থান বটে
তার নিদর্শন এই সিদ্ধ-বকুল—এই ত’,–হরিদাসের বসতি-ভূমি
প্রাণ-গৌরাঙ্গের মনোবৃত্তি-বিকাশ—তার নিদর্শন এই সিদ্ধ-বকুল
‘প্রাণ-গৌরাঙ্গের মনোবৃত্তি-বিকাশ’—
বকুল-বৃক্ষরূপে হইল প্রকাশ—প্রাণ-গৌরাঙ্গের মনোবৃত্তি-বিকাশ
রৌদ্র—বৃষ্টিকালে আবরণ দিবার লাগি’—সিদ্ধ,—বকুলরুপে হইয়া প্রকাশ
ঠাকুর,–হরিদাসের বসতি-ভূমি—এই সিদ্ধ-বকুল-তলে)
হরিদাস বন্দিল—প্রভু আর বৈষ্ণব-চরণ।।’’
যেন,–হয় আমার বাসনা পূরণ—বলে এই—কৃপা কর প্রাণ-গৌরাঙ্গগণ
হরিদাস কহে—প্রভু, যে ইচ্ছা তোমার।।’’
কর যাতে সুখ হয় তোমার
আমি চরণে দিয়েছি ভার—কর যাতে সুখ হয় তোমার
সঙ্কীর্ত্তন,–আরম্ভিলা এই বকুল-তলে—হরিদাসের বাসনা পূরাবে বলে
গৌরের—ভক্ত-বাৎসল্যের প্রধান নিদর্শন—এই সিদ্ধ-বকুল-তলে
হরিদাস থাকেন এই উদ্যানে
নির্জ্জনে অনাবৃত-স্থানে—হরিদাস থাকেন এই উদ্যানে
রৌদ্র বৃষ্টি সহ্য কর—হরিদাস থাকেন এই উদ্যানে
হরিদাস দুঃখ পায়
রৌদ্র-বর্ষাতে আমার—হরিদাস দুঃখ পায়
হরিদাসের দেহ-স্মৃতি নাই—হরিদাসের দুঃখ অনুভব নাই
নিশিদিশি নাম-রসে মত্ত—হরিদাসের দুঃখ অনুভব নাই
কি করিলে বাঁচান যায়
রৌদ্র-বৃষ্টি হতে হরিদাসে—কি করিলে বাঁচান যায়
তবে কি উপায় করা যায়
এত,–মনে ভাবি প্রাণ-গৌরহরি
একদিন,–মঙ্গল-আরতি দর্শন করি’
উপনীত হরিদাসের আগে
শ্রী,–জগন্নাথের দন্তকাষ্ঠ লয়ে—উপনীত হরিদাসের আগে
নিজ,–মনোবৃত্তি সঞ্চারি’ করলেন রোপণ—বকুল-বৃক্ষের প্রসাদী-দাঁতন
হইলা বৃহৎ বকুল-বৃক্ষ
শাখাপত্র পল্লবিত—হইলা বৃহৎ বকুল-বৃক্ষ
বকুল,–বৃক্ষরূপে গৌরহরি—হরিদাসে রক্ষা কৈলা
রৌদ্র-বর্ষার হাত হতে—হরিদাসে রক্ষা কৈলা
গৌরের মনোবৃত্তি-প্রকাশ— এই সেই সিদ্ধ-বকুল
এই সেই অঙ্গণে—এই সেই সিদ্ধ-বকুল-তলে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—আজও আমার গৌর নাচছে।
হরিদাসের বাসনা-পূরণ লীলায়—আজও আমার গৌর নাচছে
মহাসঙ্কীর্ত্তনানন্দে—আজও আমার গৌর নাচছে
শ্রীগুরুদেবের আনুগত্যে—ভাগ্যবান জনে দেখেছে
যার—প্রেমনেত্রের বিকাশ হয়েছে—সেই,–ভাগ্যবান জনে দেখছে
আমাদের কি দেখাবে না
পরম-করুণ শ্রীগুরু-সোণা—আমাদের কি দেখাবে না
বক্রেশ্বর পণ্ডিত তাঁহা করেন নর্ত্তন।।
স্বরূপ গোসাঞি আদি যত প্রভুর গণ।
হরিদাসে বেড়ি’ করে নাম-সঙ্কীর্ত্তন।।’’
হা-গৌর প্রাণ-গৌর—ত্রিকাল-সত্য লীলা তোমার
হরিদাসের বাসনা পুরাইতে—গণ-সনে নাচছ তুমি)
হরিদাসের গুণ প্রভু লাগিলা কহিতে।।’’
প্রভুর মনে বড় সাধ ছিল—আজ সুযোগ পেয়েছে
ঠাকুর-হরিদাসের আগে—হরিদাসের,–গুণের কথা ত, বলতে পারে না
তাই,–প্রাণ-ভরে গুণ শুনাইছে—আজ সুযোগ পেয়েছে
এ যে,–হরিদাসের নির্য্যাণ নয়—আশ’-মিটান-লীলা রে
মহাভোগী প্রাণ-গৌরাঙ্গের—আশ’-মিটান লীলা রে
হরিদাসের নির্য্যাণ ছলে–সেই আশ’ মিটাইছে
স্বরূপ-রামানন্দ—আগে—প্রাণ-ভরে গুণ গাইছে
আ’মরি,–না জানি সে কতই সুধা
প্রভু-মুখে,–হরিদাসের গুণগাথা—আ’মরি,–না জানি সে কতই সুধা
রস-পিপাসু গৌর আমার—আজ,–আস্বাদন করছেন
ভক্ত-গুণগানে কত সুখ—আজ,–আস্বাদন করছেন
ভক্ত-গুণগানে কত সুখ—আস্বাদিচ্ছে ভোগী গোরা)
আস্বাদিতে এসেছেন
রসময় গৌরহরি—আস্বাদিতে এসেছেন
নব-নব-রস এবার—আস্বাদিতে এসেছেন
নিজ-ভক্ত-গুণ-গানে—আজ,–আনন্দ আর ধরে না
একমুখে,–হরিহাসের গুণ গেয়ে—আশা যেন মিট্ছে না
হরিদাসের গুণ গাইতে মন—যেন,–মনে মনে করলেন স্মরণ
আইস আইস পঞ্চানন
পঞ্চমুখে গুণ গাইব—আইস আইস পঞ্চানন
‘পঞ্চমুখে গুণ গাইব’—
প্রাণের প্রাণ হরিদাসের—পঞ্চমুখে গুণ গাইব)
প্রাণ-ভরে করি—হরিদাসের গুণ বর্ণন—আইস আইস পঞ্চানন
প্রেমাবতার গৌর আমার—ভোগের লাগি অবতার
নিতুই নিতুই নব-নব—মনে মনে কেবল ভোগগ-ইচ্ছা
যত ভোগ করে বাঢ়ে আশা—মনে কেবল ভোগ-লালসা
সর্ব্বভক্ত বন্দে হরিদাসের চরণ।।’’
যেন,–পাই তোমার সৌভাগ্য-কণা—বলে,–হরিদাস কর এই করুণা
(আমার,–প্রাণের প্রাণ গৌরসুন্দর—বলে,–একবার এস হে)
ওহে আমার প্রাণ-গৌর—বলে,–একবার এস হে
এ-দাসের,–শেষ-বাসনা পূরণ কর—বলে,–একবার এস হে
এবারকার-মত এ-নিবেদন রাখ—বলে,–একবার এস হে
আমার এই শেষ-নিবেদন রাখ—এস এস আমার সম্মুখে বস
আজকার-মত দেখে লই—এস এস আমার সম্মুখে বস
এবারকার-মত আশ’ মিটাও—এস এস আমার সম্মুখে বস
ঐ,–হরিবোলা রসের বদ—আশ’ মিটায়ে দেখে লই
(অখিল-রসামৃত সদন—তোমার,–হরিবোলা রসের বদন)
অখিল-লাবণামৃত-ধাম—তোমার,–হরিবোলা রসের বদন
(তোমার ঐ,–হরিবোলা রসের বদন—একবার,–শেষ দেখা দেখে লই)
আর দেখতে পাই কি না পাই—একবার,–শেষ দেখা দেখে লই
হরিদাস,–নিজ-নেত্র দুই ভৃঙ্গ (প্রভুর) মুখপদ্মে দিল।।’’
(ওরে,–এ-দেহে আর থাকিস না—বলে,–যারে আমার নেত্র-ভৃঙ্গ)
প্রাণ-গৌর-মুখ-পদ্মে—বলে,–যারে আমার নেত্র-ভৃঙ্গ
(গৌরমুখ,–পদ্ম-মধু-পান করিতে—বলে,–যারে আমার নেত্র-ভৃঙ্গ
গৌর, মুখ-পদ্ম-মধু-পানে—যা’ যা’ মেতে থাক গা)
নিজ-জনম সার্থক করতে—যা’,–যারে গৌর মুখ-পদ্মেতে
(মধু পান করে মেতে থাক্–যা’,–যারে গৌর-মুখ-পদ্মেতে
নিজ-জনম সার্থক করতে—যা’,–যারে,–যারে গৌর-মুখ-পদ্মেতে
ওরে,–ওরে আমার নয়ন-ভৃঙ্গ—পান করে নে রে
গৌর-মুখ-পদ্ম-মধু—পান করে নে রে
এবারকার-মত আশ মিটায়ে—পান করে নে রে
এ সুযোগ আর পারি না—পান করে নে রে
আসিস না আর এ-দেহেত—পান করে থাক মেতে
ওহে,–আমার প্রাণের প্রাণ-গৌর—বলে,–একবার দাও হে
অভয় ঐ,–রাতুল-চরণ হৃদে ধরি—বলে,–একবার দাও হে
এবারকার শেষ-নিবেদন রাখ—বলে,–একবার দাও হে
গোরারসের বদন হেরি—রাতুল-চরণ হৃদে ধরি)
ভাগ্যবতী-ধরণীর-সুসম্পদ—ঐ,–কমল-চরণ হৃদে ধরি
শেষ নিবেদন রাখ—একবার দাও হে
এই নিবেদন রাখ—একবার দাও হে
‘এই নিবেদন রাখ’—
ওহে আমার প্রাণের গৌর—এই নিবেদন রাখ
সর্ব্বভক্ত-পদরেণু মস্তক-ভূষণ।।’’
সবে—পদধূলি দাও মোর শিরে
(পরাণ গৌরাঙ্গগণ—সবে,–পদধূলি দাও মোর শিরে)
এবার যাবার কালে—সবে,–পদধূলি দাও মোর শিরে
ভূবন-পাবন গৌরাঙ্গ—সবে,–পদধূলি দাও মোর শিরে
পতিত-পাবন গৌরাঙ্গগণ—পদধূলি দাও মোরে)
(ভুবন-পাবন গৌরাঙ্গগণ—এই কৃপা কর হে)
পদধূলি দিয়ে শিরে—এই কৃপা কর হে
পতিত-পাবন গৌরাঙ্গগণ—এই কৃপা কর হে
বলতে,–ভয় পাই তোমরা নিজ-গুণে—এই কৃপা কর হে
পতিত-বৎসল গৌরাঙ্গগণ—এই কৃপা কর হে
যেন,–ও-চরণে পরাণ বাঁধা থাকে—এই কৃপা কর হে
(তোমাদের সঙ্গে গৌরলীলা—যেন,–জন্মে জন্মে পাই হে)
তোমাদের সনে চৈতন্য-গোসাঞি—যেন,–জন্মে জন্মে পাই হে
‘‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শব্দ বলে বার বার।
প্রভু-মুখ-মাধুরী পিয়ে নেত্রে জলধার।।’’
এ যে,–মহা মহা মিলন-ময়—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শব্দ হয়
ঐ,–নামেই ত’ স্বরূপ আছে—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
শ্রী মিলিত কৃষ্ণ—সেই ত’ বটে চৈতন্য
হরিদাসের নির্য্যাণ নয়—মহা-মিলন-রঙ্গ রে)
মুখে কিছু বলতে নারে—প্রাণে প্রাণে বলে রে
ব্যাকুল হয়ে কেঁদে বলে—আর কি দেখতে পাব হে
হা গৌর প্রাণ গৌর—আর কি দেখতে পাব হে
তোমার ঐ,–হরিবোলা রসের বদন—আর কি দেখতে পাব হে
(হরিবোলা,–রসের সদন ঐ বদন—আর কি দেখতে পাব হে)
নামের সহিতে প্রাণ কৈল উৎক্রামণ।।’’
নামের সঙ্গে ছাড়ল প্রাণ—এই সিদ্ধ—বকুল-তলে
হরিদাসের নামময়-প্রাণ—নামের সঙ্গে গেল রে)
গৌর-নাম বলতে বলতে—ঐ চলে গেল রে
হরিদাসের নামময়-প্রাণ—ঐ,–নামের সহিত গেল রে
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বলে—এ জগৎ হতে গেল চলে
ঠাকুর,–হরিদাসের ব্যবহার—বড়ই বিরুদ্ধ লাগে
নিগম-নিগূঢ় গৌরলীলা—অনুভব কর ভাই রে
ঠাকুর,–হরিদাস আজীবন—‘হরে কৃষ্ণ’ নাম করিলেন সাধন
ঠাকুর,–হরিদাস সারা-জনম—‘হরে কৃষ্ণ’ নাম কৈলা সাধন
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বলে ছাড়ল জীবন—আজীবন,–‘হরি কৃষ্ণ’ নাম কৈলা সাধন
শ্রী,–গুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে)
শ্রীগুরু-প্রেরণায় বলি—অপরূপ রহস্য ভাই
প্রাণ যায় গৌরাঙ্গ বলে
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম সাধন-ফলে—প্রাণ যায় গৌরাঙ্গ বলে
ঠাকুরস—হরিদাসের চরিতে—সাধ্য-সাধন নির্ণয় হল
সাধন,–‘হরে কৃষ্ণ’ নামকীর্ত্তন—সাধ্য শ্রীচৈতন্য-চরণ
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম সাধন-ফলে—শ্রীচৈতন্য চরণ মিলে
এ কথার প্রত্যক্ষ-প্রমাণ
ঠাকুর হরিদাসের জীবন—এ কথার প্রত্যক্ষ-প্রমাণ
ঠাকুর,–হরিদাসের গৌরময়-প্রাণ—তাই,–গৌর-নামের সঙ্গে গেল রে
ভীষ্মের নির্য্যাণ সবার হইল স্মরণ।।
হরিকৃষ্ণ শব্দে সবে করে কোলাহল।।’’
হরিকৃষ্ণ নয়, হা কৃষ্ণ
গৌরগণ সবাই বলে
ঠাকুর-হরিদাসের-নির্য্যাণে—গৌরগণ সবাই বলে
হরিদাসের সঙ্গ ছা্ড়া করিলে—হায় কৃষ্ণ কি করিলে
হরিদাসে কেড়ে নিলে—হায় কৃষ্ণ কি করিলে
ভক্তবিরহ যে দুঃখ—তারেই দুঃখ-মধ্যে গণে
প্রাণ-গৌরঙ্গগণ যত—আজ সবে হায় হায় করে
প্রেমানন্দে মহাপ্রভু হইলা বিহ্বল।।’’
হরিদাস ছেড়ে গেল—গৌরের প্রেমানন্দ হল
হরিদাস চলে গেল—মহাপ্রভুর প্রেমানন্দ হল
আজ,–মহাপ্রভুর প্রেমোল্লাস
এ ত’ বড় বিরুদ্ধ কথা
এ যে বড় বিরুদ্ধ ভাষ
হরিদাসের নির্য্যাণে প্রভুর উল্লাস—এ যে বড় বিরুদ্ধ ভাষ
তবে কেন আনন্দ
দুঃখের পরিবর্ত্তে—তবে কেন আনন্দ
তাই বুঝি আনন্দ
অপূর্ণ-সাধ পুরাইছে—তাই বুঝি আনন্দ
আস্বাদন কর ভাই রে
অনুভব কর ভাই রে
হরিদাস চলে গেল
মহাপ্রভুর উল্লাস হল—হরিদাস চলে গেল
হরিদাসের-নির্য্যাণে—কেন এত আনন্দ
চিতচোর গৌর আমার—আস্বাদনের মূরতি
প্রাণে প্রাণে সাধ ছিল—কখনও ত’ পায় নাই
কাছে ত’ আসে না
অতি-দৈন্যে হরিদাস—কাছে ত’ আসে না
দৈন্য-বশে হরিদাস—কাছে ত’ আসে না
অনেক-দিনের সাধ ছিল
হরিদাসে বুকে ধরিতে—অনেক-দিনের সাধ ছিল
হরিদাসে বুকে ধরি—গৌরহরির বাসনা ভারি
আজ সুযোগ পেয়েছে)
বড় ভোগী গৌর আমার—বাসনা পুরাইতে
হরিদাসে, বুকে ধরেছে—আজ সুযোগ পেয়েছে
হরিদাসের নির্য্যাণ করে—আজ আশ’ মিটাইছে
হরিদাসে,—বুকে ধরে নাচ্ছে—আজ আশ’ মিটাইছে
হরিদাসে বুকে ধরে—আজ বড় আনন্দ
হরিদাসে বুকে ধরে—তাই প্রভুর আনন্দ
হরিদাসের,–বাসনা-পূর্ত্তি-লীলা হয়—এ ত’,–হরিদাসের নির্য্যাণ নয়
‘এ যে,—বাসনা-পূর্ত্তি-লীলা হয়’
ভকত-বাৎসল্যময়—এ যে,—বাসনা পূর্ত্তি-লীলা হয়
এ যে,–গৌরাঙ্গের গূঢ় অভিনয়
এ ত’,–হরিদাসের নির্য্যাণ নয়—এ যে,–গৌরাঙ্গের গূঢ় অভিনয়
এ যে,–মহা-মহা-ভোগময়—এ যে,–গৌরাঙ্গের গূঢ় অভিনয়
প্রভুর,–ভোগের লাগি এই অভিনয়—হরিদাসের নির্য্যাণ নয়)
শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে
হরিদাসের চরিত্রে –ব্রত উদ্যাপন হল
নামের মহিমা-প্রচার—ব্রত উদ্যাপন হল
গৌরের,–মনোসাধ পূরাইতে—হরিদাসের,–নির্য্যাণ-লীলা প্রকট জগতে
হরিদাসের বাসনা পূরাইতে—হরিদাসের,–নির্য্যাণ-লীলা প্রকট জগতে
ভকতবাৎসল্য দেখাইতে—হরিদাসের,–নির্য্যাণ-লীলা প্রকট জগতে
নামের মহিমা প্রচারিতে—হরিদাসের,–নির্য্যাণ-লীলা প্রকট জগতে)
তাইতে প্রভুর আনন্দ
শুধুই কি গৌরের আনন্দ
এক সঙ্গে দুজন আছে
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
নিতাই জড়িত গৌরহরি—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
নিতাই-চাঁদের হল উল্লাস
গৌর-নামের মহিমা দেখে—নিতাই-চাঁদের হল উল্লাস
নিজ-চরিত্রে হরিদাস—গৌরনামের মহিমা দেখালেন
হরিদাস কৈলেন,–গৌরনামের মহিমা প্রকাশ—তাই নিতাইচাঁদের উল্লাস
ভক্তপ্রীতি দেখাইছেন
হরিদাসের দেহ কাঁধে করি’—ভক্তপ্রীতি দেখাইলেন
আমার ভক্তের দেহ বড়
আমার দেহ হলেও—আমার ভক্তের দেহ বড়
হরিদাসের নির্য্যাণেতে—এবার,—প্রত্যক্ষ দেখাইলেন
ভক্তদেহ কত প্রিয়—এবার,—প্রত্যক্ষ দেখাইলেন
হরিদাসের তনু কোলে লইয়া—আবার,–সাবধান করে দিলেন
হরিদাসের মৃতদেহ বলে—যেন বিচার আসে না
‘জীয়বা মর বা সাধু’—ভক্তদেহ আপ্রাকৃত
নির্য্যাণ কেবল লীলামাত্র—ভক্তদেহ অপ্রাকৃত
শ্রীগুরু-কৃপা-প্রেরণায়—প্রাণে প্রাণে আর কিছু জাগে
হরিদাসে কোলে করে—বুঝি তারই ফল দিলেন
হরিদাস জনম-ভরে—দৈন্য-ব্যবহার দেখাইলেন
অদৃশ্য-অস্পৃশ্য-বোধে—দৈন্য-ব্যবহার দেখাইলেন
প্রাণ-গৌর,–হরিদাসে কৈলা কোলে—সেই দৈন্য-যাজনের বলে
যে,–সাধন করে তৃণাদপি
আমি তারে বুকে রাখি—যে,–সাধন করে তৃণাদপি
অঙ্গণে নাচয়ে প্রভু প্রেমাবিষ্ট হইয়া।।’’
নিগম-নিগূঢ় গৌরলীলা—কিছু,–বোঝা ত’ যায় না
–হরিদাস ছেড়ে গেল—প্রাণ-গৌরাঙ্গের প্রেমানন্দ
হরিদাস,–ছেড়ে গেল গৌরের আনন্দ—এ যে বড় বিরুদ্ধ কথা
পূরণ হয় নিজ-অভীষ্ট
প্রভু আমার প্রেমাবিষ্ট—পূরণ হয় নিজ-অভীষ্ট
প্রেমাবতার প্রাণ-গৌরাঙ্গ
গৌর নাচে প্রেম-হিল্লোলে
হরিদাসের তনু করি’ কোলে—গৌর নাচে প্রেম-হিল্লোলে
সতীদেহ স্কন্ধে করি’—একদিন নেচেছিলেন শিব
না জানি কি সুখে—একদিন নেচেছিলেন শিব
(আজ পূর্ণ হয়েছি
ঠাকুর-হরিদাসে বুকে ধরেছি—আজ পূর্ণ হয়েছি)
হরিদাসের তনু কাঁধে করি’—নাচে প্রাণ-গৌরহরি
নিশ্চয়,—প্রাণে কিছু ভোগ করি’—নাচে প্রাণ-গৌরহরি
হরিদাসের তনু কোলে করি’—প্রভুর কি ভোগ বল দেখি
শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—প্রাণে প্রাণে এই ত’ জাগে
হরিদাসে বুকে ধরব—প্রাণে প্রাণে ছিল প্রভুর
একবার,–হরিদাসে বুকে ধরব—প্রভুর,–বহুদিন হতে প্রাণে সাধ ছিল
হরিদাসও কাছে আসেন নাই—সে সাধ ত’ পূরণ হয় নাই)
বুকে ধরবা দূরের কথা
কাছেও ত’ আসে নাই
হরিদাসে ডাকিলেও—কাছেও ত’ আসে নাই
হরিদাস দৈন্যবশে—কাছেও ত’ আসে নাই
হরিদাসে,–বুকে ধরি’ নাচল—আজ,–সেই বাসনা পূর্ণ হল
আমার,–নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা—এ যে,–অপরূপ লীলা রে
হরিদাসের নির্য্যাণে
প্রভু আমার প্রেমাবিষ্ট
হরিদাসের তনু কোলে লইয়া—প্রভু আমার প্রেমাবিষ্ট
প্রভু আমার প্রেমাবিষ্ট—পূরণ হল নিজ অভীষ্ট
তাইতে প্রভু আবিষ্ট হয়েছে—হরিদাসে বুকে ধরেছে)
আজ তারে বুকে পেয়েছে
ডাকিলেও যারে পান নাই কাছে—আজ তারে বুকে পেয়েছে
সারা-জীবন যে সব দিয়েছে—আজ তারে বুকে পেয়েছে
হরিদাসের নির্য্যাণ করি’ ছলা—আজ,–চির-সাধ পূর্ণ কৈলা
বড় ভোগী গৌর আমার—আজ ভোগ করছেন প্রভু
হরিদাসের অঙ্গ-সঙ্গ—আজ ভোগ করছেন প্রভু
তাই,–তার পরশে প্রভুর উল্লাস—নিজ, ভোগ-মাধুরী ভোগের আধার হরিদাস
হরিদাসেরও আশা মিট্ল
নিতাই ছিলেন সব-উপরে
অনঙ্গ-মঞ্জরী-আবেশে—নিতাই ছিলেন সব-উপরে
প্রাণ-কিশোরীরে আবরণ করে—নিতাই ছিলেন সব-উপরে
হরিদাসের প্রাণে কিন্তু—সইল না সইল না
আমি আবরণ দিব
নিতাই-অঙ্গে লাগতে না দিব—আমি আবরণ দিব
ঠাকুর শ্রীহরিদাসের—আজ,–সেই বাসনা পূরণ হল
নিতাই-গৌর,—জড়িত মুরতি হৃদে ধর্ল—আজ,–সেই বাসনা পূরণ হল
যেন,–গৌর পরিল ওড়নায়—হরিদাসে কাঁধে করা নয়
কেবল আপন-ভোগময়—লীলা নয় গূঢ়-অভিনয়)
হরিদাসের নির্য্যাণ অভিনয়—এ ত’,–লীলা নয় অভিনয়
এই নিগূঢ়-আস্বাদনের লাগি—এ ত’,–লীলা নয় অভিনয়
ভক্ত-বাৎসল্য-লীলাময়—এ ত’,–লীলা নয় অভিনয়
প্রভুর আবেশে আবেশ সর্ব্বভক্তগণে।
প্রেমাবেশে সবে নাচেন করেন কীর্ত্তনে।।
এই মত নৃত্য প্রভু কৈল কতক্ষণ।
স্বরূপ গোসাঞি প্রভুকে করাইল সাবধান।।
হরিদাস-ঠাকুরে তবে বিমানে চড়াইয়া।’’
চিতচোর-প্রাণগৌরাঙ্গের—বালাই লয়ে মরে যাই
এই,–ভকত-বাৎসল্য-লীলার—বালাই লয়ে মরে যাই
অগ্রে মহাপ্রভু চলিলা নৃত্য করিতে করিতে।
পাছে নৃত্য করে বক্রেশ্বর ভক্তগণ-সাথে।।’’
ঠাকুর,—হরিদাসে বিমানে ধরি’—নেচে যায় প্রাণ-গৌরহরি
গৌরের,–ভক্ত-বৎসল্য-লীলার—বালাই লয়ে মরে যাই।
শ্রীশ্রীসিদ্ধ-বকুল হইতে সমুদ্রতীরে গমন
অশেষ-বিশেষে আশ’ মিটাল—হরিদাসে স্নান করাল
প্রভু আমার,–হরিদাসে স্নান করায়ে—সেবা-সুখ আশ’ মিটাইছে
নিজ-মুখে গৌরহরি বলে—সমুদ্র মহাতীর্থ হল
এতদিন তীর্থ ছিল—আজ মহাতীর্থ হল
হরিদাসের চরণ-পরশ পেল—সমুদ্র মহাতীর্থ হল
আর কি সঙ্গ পাব বলে—সদাই ভাসে নয়ন-জলে
হরিদাসের অঙ্গে দিল প্রসাদ-চন্দন।।’’
সমুদ্রতীর হইতে সমাধিতে গমন
বালুকার গর্ত্ত করি তাঁহা শোয়াইল।।
চারিদিকে ভক্তগণ করেন কীর্ত্তন।’’
হরিদাসের সৌভাগ্য হেরি’—সবাই বলে হরি হরি
বক্রেশ্বর পণ্ডিত করেন আনন্দে নর্ত্তন।।
হরিবোল হরিবোল বলে গৌররায়।’’
পরাণ-গৌরাঙ্গের—ও ত’—হরিবোল বলা নয়
হরিদাস চলে যায়—প্রভু করে হায় হায়
হরিদাসের সঙ্গ হারাইয়ে—ব্যাকুল হয়ে গৌর কাঁদে
আপনে শ্রীহস্তে বালু দিলা তাঁর গায়।’’
লীলার,–বালাই লয়ে মরে যাই—আ’মরি কি লীলা রে
গৌর-ভক্তবাৎসল্যের—বালাই লয়ে মরে যাই
পরাণ-গৌরাঙ্গ-লীলার—বালাই লয়ে মরে যাই)
ভক্ত-বিরহে হিয়া জর জর—ভাসি’ দুটী নয়ন-ধারায়
এমন,–কারুণ্য-অবতার-কথা—কেউ কি শুনেছ কোথা’)
তাঁরে বালু দিয়া উপরে পিণ্ডা বাঁধাইল।
চৌদিকে পিণ্ডার মহা-আবরণ কৈল।।’’
সিন্ধুতীরে বিরাজিত,–ভক্তবাৎসল্যের নিদর্শন)
শ্রী,–হরিদাসের সমাধি—দেখ দেখ ভাই রে
ভক্ত-বাৎসল্যের অবধি—শ্রী,–হরিদাসের সমাধি
কর সবে দরশন
জগজন কর দরশন
ভক্ত-বাৎসল্যের নিদর্শন—জগজন কর দরশন
ভক্ত-বাৎসল্যের নিদর্শন—এই সমাধি কর দরশন)
সমাধি পরিক্রমা
হরিধ্বনি কোলাহলে ভরিল ভুবন।।
তবে মহাপ্রভু সব ভক্তগণ সঙ্গে।
সমুদ্রে করিল স্নান জলকেলি রঙ্গে।।’’
হরিদাসের,–পদজলে কেলি করিছে—বড় আশ’ মিটাইছে
এতে,–গৌর কত সুখ পায়—তারি ত’ অনুভব আছে
এ,–গৌর যে হৃদে ধরিছে—তারি ত’ অনুভব আছে
গৌর সহ পরিকরে—সমুদ্র-জলে কেলি করে
হরিদাস পদ-পরশে—গৌর জল-কেলি করে
হরিদাসের পাদোদক জানি—জলকেলিয়া গৌর গুণমণি)
হরিদাসের পদজল-পরশে—সবে,–জলকেলি করে হরষে
জয়—ভক্তবৎসল গৌরহরি—যাই হরিদাস বলিহারি
নাম-মহিমা কৈলা প্রকাশ—জয় ঠাকুর হরিদাস
হরিদাসের বাসনা পূরণকারী—বল জয় গৌরহরি)
সিংহদ্বারে গমন ও কীর্ত্তন
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
(‘‘জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় দয়াময়।
জয়াদ্বৈত-প্রিয় নিত্যানন্দ-প্রিয় জয়।।
জয় শ্রীনিবাসেশ্বর শ্রীহরিদাস-নাথ।
জয় গদাধর-প্রিয় স্বরূপ-প্রাণনাথ।।
জয় কাশীশ্বর-প্রিয় জগদানন্দ-প্রাণেশ্বর।
জয় রূপ-সনাতন –রঘুনাথেশ্বর।।
তবে মহাপ্রভু সব ভক্তগণ সঙ্গে
সমুদ্রে করিল স্নান জলকেলি রঙ্গে।।’’)
‘‘হরিদাসে প্রদক্ষিণ করি’ আইলা সিংহদ্বারে।
হরিকীর্ত্তন-কোলাহল সকল নগরে।।’’
মধুর-নীলাচল ভরি’—সবাই বলে জয় গৌরহরি
হরিদাসের বাসনা পূরণকারী—সবাই বলে জয় গৌরহরি
এই — সিংহদ্বারে আসি প্রভু পসারির ঠাঁঞি।
(আঁচল পাতিয়া ভিক্ষা মাগয়ে এথাই।।
তবে,– হরিদাসঠাকুরের মহোৎসবের তরে।
প্রসাদ মাগিয়ে ভিক্ষা দেহ ত’ আমারে।।’’
প্রেমাবতার গৌরহরির—যাই রে লীলার বলিহারি)
আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
(মহাপ্রভু এই সিংহদ্বারে—আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
প্রাণগৌর এই সিংহদ্বারে—আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
ভকতবাৎসল্য-ভরে—গৌর আমার,–আঁচল পেতে ভিক্ষা করে)
ভক্ত-বৎসল্য গৌরহরি—আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
(হরিদাসের মহোৎসবের তরে—প্রভু আমার,–আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
জগন্নাথের এই সিংহদ্বারে—প্রভু আমার ভিক্ষা করছেন
ভক্তবৎসল চৈতন্য-গোসাঞি—ভক্তবাৎসল্যের বলিহারি যাই
গৌর আমার,–আঁচল পেতে ভিক্ষা করে—বলে দে দে,–পসারি আমায়
ভক্তবৎসল গৌরহরি বলে—দে দে,–পসারি আমায় ভিক্ষা দে রে)
গৌর,–দাঁড়ায়ে বলে এই সিংহদ্বারে—পসারি আমায় ভিক্ষা দে রে
হরিদাসের মহোৎসবের তরে—পসারি আমায় ভিক্ষা দে রে
সিংহদ্বারে গৌর-ভিখারী)
আজ,–বিশ্বম্ভর ভিখারী
বিশ্বের পালন-পোষণ-কর্ত্তা—সেই,–বিশ্বম্ভর ভিখারী
যাই রে লীলার বলিহারি—আজ,–বিশ্বম্ভর ভিখারী
ত্রিকালসত্য গৌরলীলা—কেউ কি ভাই দেখেছ তোমরা
সিংহদ্বারে পসারির ঠাঞি বলে—আজ,–হরিদাসের নির্য্যাণের তিথি
জগন্নাথের এই সিংহাদ্বারে—গৌর আমার ভিক্ষা করছেন
হরিদাসের প্রেমে বাঁধা পড়ি,–দেখা দাও গৌর ভিখারী
ভক্ত বাৎসল্যের নিদর্শন—হৃদি-পটে এ্যাঁকে লব
ত্রিকালসত্য-লীলায়—ভাগ্যবান-জনে দেখছে
গৌরাঙ্গ-ভিখারীকে—ভাগ্যবান-জনে দেখছে
আ’মরি মরে যাই—এ কি ভক্তবাৎসল্য রে
দাস প্রভুর সেবা করে—জগজনে এই ত’ জানে
প্রভু দাসের সেবা করে—এ কথা কি শুনেছ
ঠাকুর-শ্রীহরিদাসের—বড় সেবক গৌর আমার
পরাণ-গৌরাঙ্গ আমার—হরিদাসের সেবা কৈলা
আজ প্রভু দাসকে—অশেষ-বিশেষে সেবা করে
আমার গৌরাঙ্গ-সুন্দরের—ভক্তসেবা দেখ ভাই।
নিতুই নিতুই দর্শন দিয়া—হরিদাসের সেবা কৈলা
হরিদাসের,–দেখতে কি সাধ ছিল না
মন্দিরে গিয়ে জগন্নাথে—হরিদাসের,–দেখতে কি সাধ ছিল না
অচলে দেখতে সাধ ছিল
সচল এসে সাধ মিটাল—অচলে দেখতে সাধ ছিল
রৌদ্র-বর্ষা হতে,–হরিদাসে রক্ষা করে—আবার,–সিদ্ধ-বকুলরূপে-
প্রকট লীলার এই দুই সেবা
অপ্রকটে কত সেবা
কোলে করি’ নাচিলা
হরিদাসের দেহ লয়ে—কোলে করি’ নাচিলা
তাঁর পিণ্ডা বাঁধাইলা
আজ,–আঁচল পেতে ভিক্ষা করে
আরো সেবা আছে ভাই
পরে পরে শুনতে পাবে—আরো সেবা আছে ভাই
দাসের গুণ কি প্রভুর গুণ—কার গুণ গাইব রে
গুণেতে কেউ নয় ঊন—গাইব বল কার গুণ
শচী-দুলাল গৌরহরি—কত-গুণের প্রভু আমার
এত,—গুণনিধি না হইলে—সাধে কি,–গুণ শুনি’ শিলা গলে
প্রসাদ দিতে আইসে সবে আনন্দিত হৈয়া।।’’
যাদের কাছে,–ভিক্ষা মাগে চৈতন্য গোসাঞি—পসারির ভাগ্যের সীমা নাই
হরিদাসের নির্য্যাণেতে—বড়ই ব্যাকুল দেখে)
স্বরূপ গোসাঞি প্রভুকে ঘরে পাঠাইলা।।’’
বড়ই ব্যাকুল দেখে
হরিদাসের বিরহে—বড়ই ব্যাকুল দেখে
চারি বৈষ্ণব চারি পিছোড়া সঙ্গেতে রাখিলা।।
স্বরূপ গোসাঞি কহিলেন সব পসারিরে।
এক এক দ্রব্যের এক এক পুঞ্জা আনি’ দেহ মোরে।।
এই মতে নানা প্রসাদ বোঝা বাঁধাইয়া।
লঞা আইলা চারিজনের মস্তকে চড়াইয়া।।’’
তোমার,–প্রেমের দায়ে গৌর ভিখারী—বলে,–জয় হরিদাস বলিহারি
কাশীমিশ্র অনেক প্রসাদ পাঠাইলা।।
সব বৈষ্ণবেরে প্রভু বসাইলা সারি সারি।
আপনি পরিবেশে প্রভু লঞা জনা চারি।।’’
গৌরের ভক্ত-বাৎসল্য—লীলার—বালাই লয়ে মরে যাই
(ভকত-বাৎসল্যের—বালাই লয়ে মরে যাই
যাই যাই বলিহারি
ভকত-বাৎসল্য-লীলার—যাই যাই বলিহারি
বালাই লইয়া মরি—যাই যাই বলিহারি
গৌরের,–ভক্তবাৎসল্য-লীলার—যাই যাই বলিহারি)
হরিদাসের মহোৎসবে—পরিবেষ্টা গৌরহরি
(পরাণ-গৌরাঙ্গ আমার-ভূরিদাতা প্রভু রে)
প্রাণ গৌর বিশ্বম্ভর—ভূরিদাতা প্রভু রে
প্রেমাবতার গৌরহরি—ভূরিদাতা প্রভু রে
চির,–অনর্পিত অর্পণকারী—আমার,–ভূরিদাতা গৌরহরি
একএক পাতে পঞ্চজনার ভক্ষ্য পরিবেশে।।
স্বরূপ কহে—প্রভু, বসি’ কর দরশন।
আমি ইহাঁ সবা লঞা করি পরিবেশন।।
স্বরূপ জগদানন্দ কাশীশ্বর শঙ্কর।
চারিজন পরিবেশন করে নিরন্তর।।
প্রভু না খাইলে কেহ না করে ভোজন।
প্রভুকে সে দিন কাশীমিশ্রের নিমন্ত্রণ।।
আপনে কাশীমিশ্র আইল প্রসাদ লইয়া।
প্রভুকে ভিক্ষা করাইল আগ্রহ করিয়া।
পুরী-ভারতীয় সঙ্গে প্রভু ভিক্ষা কৈল।
সকল বৈষ্ণব তবে ভোজন করিল।।
আকণ্ঠ পূরিয়া সবার করাইল ভোজন।
‘দেহ দেহ’ বলি’ প্রভু বলেন বচন।।
ভোজন করিয়া সবে কৈল আচমন।
সবারে পরাইলা প্রভু মাল্য চন্দন।।
প্রেমাবিষ্ট মহাপ্রভু করে বরদান।
শুনি ভক্তগণের জুড়ায় মনপ্রাণ।।’’
নিজভক্ত-মহিমা জানাইতে—শ্রীমুখে প্রাণ-গৌর বলে
যেই তাঁহা নৃত্য কৈল যে কৈল কীর্ত্তন।।
যে তারে বালুকা দিতে করিল গমন।
‘‘অচিরে হইবে তা’ সবার কৃষ্ণপ্রাপ্তি।
আমার,– হরিদাস-দরশনে ঐছে হয় শক্তি।।’’
স্বরূপ-রামরায়ের কণ্ঠধরি’—ব্যাকুল হয়ে গৌর কাঁদে
স্বতন্ত্র কৃষ্ণের ইচ্ছা কৈল সঙ্গ-ভঙ্গ।।’’
ভক্ত-বিরহে কত দুঃখ তাই—আজ,–আপনি ভোগ করিছেন প্রভু
ভক্ত-বিরহই শ্রেষ্ঠ-দুঃখ—জানাইলেন রামরায়ের মুখে
ব্যাকুল হয়ে গৌর বলে
আমার শকতি তারে নারিল রাখিতে।।
ইচ্ছামাত্র কৈল নিজপ্রাণ নিষ্ক্রামণ।
পূর্ব্বে যেন শুনিয়াছি ভীষ্মের মরণ।।
হরিদাস আছিল পৃথিবীর শিরোমণি।
তাঁহা বিনু রত্নশূন্য হইল মেদিনী।।’’
হরিদাস ছেড়ে গেল,—পৃথিবী রত্ন-শূন্য হইল
দিনে রেতে নাম শুনাত তিন-লক্ষবার রে।।’’
আমায়,–আর নাম কে শুনাবে বল
হরিদাস ছেড়ে গেল—আমায়,–আর নাম কে শুনাবে বল
আপনি বলেন গৌরহরি—সবে মিলি হরি বলি
হরিদাসের জয় দিয়ে—সবে মিলি’ হরি বল
এত বলি মহাপ্রভু নাচেন আপনি।।’’
জয় হরিদাস বলে—গৌর নাচে হেলে দুলে
নামের মহিমা যেই করিলা প্রকাশ।।’’
নাম-মহিমা কৈলা প্রকাশ—বলে,–জয় ঠাকুর হরিদাস
নাম-মহিমা-প্রচারকারী—জয় হরিদাস বলিহারি
জয় হরিদাস বলিহারি—জয়,–ভক্তবৎসল গৌরহরি)
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
প্রেম্সে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু-নিতাই-শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত-শ্রীরাধারাণীকী জয় !
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন-শ্রীনিতাইচাঁদকী জয় !
করুণাসিন্ধু-গৌরভক্তবৃন্দকী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয় !
খোল-করতালকী জয় !
শ্রীনবদ্বীপধামকী জয় !
শ্রীবৃন্দাবনধামকী জয় !
চারিধামকী জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয় !
অনন্ত-কোটি-ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবকী জয় !
শ্রীশ্রীহরিদাসঠাকুর-মহারাজকী জয় !
আপন আপন শ্রীগুরুদেবকী জয় !
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন—
শিশুপশুপালক-বালকজীবন-শ্রীমদ্রাধারমণকী জয় !
তখন জনম হয় নাই
যখন গৌরের প্রকটবিহার—তখন জনম হয় নাই
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা—দেখিতে ত’ পাই নাই
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–পাষাণ-গলান-লীলা—দেখিতে ত’ পাই নাই
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-নটন-লীলা—দেখিতে ত’ পাই নাই
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রেমোন্মত্তকারী লীলা—দেখিতে ত’ পাই নাই
গমনে নটন বচনে গান—দেখা শুনা হয় নাই
শুনেছিলাম শ্রীগুরু-শ্রীমুখে
ত্রিকালসত্য গৌরলীলা—শুনেছিলাম শ্রীগুরু-শ্রীমুখে
আমরা ভাই ভাই মিলে
গৌরের যখন যেখানে যে লীলাকাল—যাই আমরা ভাই ভাই মিলে
হরিদাসের নির্য্যাণোৎসবে—এই ত’ আমরা গিয়াছিলাম
সিংহদ্বারে গৌর-ভিখারী—বড় সাধ দেখব বলে
হরিদাসের প্রেমে বাঁধা পড়ি—সিংহদ্বারে গৌর-ভিখারী
মহাপ্রসাদ ভিক্ষা হল বটে—গৌর দেখতে পেলাম না
নিশ্চয় দেখতে পাব
মহামহোৎসবের কালে—নিশ্চয় দেখতে পাব
মহামহোৎসবের কালে’—
ঠাকুর-শ্রীহরিদাসের—মহামহোৎসবের কালে
গেলাম শ্রীউৎসবস্থানে
ক্রমে ক্রমে হল সমাগত
বৈষ্ণব-গোসাঞি শত শত—ক্রমে ক্রমে হল সমাগত
হতাশ-প্রাণে আশা জাগিল
এবার বুঝি দেখতে পাব
চিতচোর-প্রাণগৌরাঙ্গ—এবার বুঝি দেখতে পাব
কতই না খুঁজিলাম
কোথায় করেন পরিবেশন
ভক্তবৎসল-শচীনন্দন—কোথায় করেন পরিবেশন
প্রাণে প্রাণে ডাকলাম
কোথা বা আছ হে
দেখা দাও দয়া করি’
পরিবেষ্টা গৌরহরি—দেখা দাও দয়া করি’
গৌর দেখতে পেলাম না
মহামহোৎসব শেষ হল—গৌর দেখতে পেলাম না ।
যারে দেখতে নীলাচলে গেলাম—সেই,–গৌর দেখতে পেলাম না
কে আমারে দেখাইবে
কে এমন বান্ধব আছে—কে আমারে দেখাইবে
পরমকরুণ শ্রীগুরুদেব
ওগো তুমি কোথায় গো
কিছুই ত’ জানতাম না
কোথা নীলাচল সেথা কি বা লীলা—কিছুই ত’ জানতাম না
(কোথা নীলাচল কে জগন্নাথ—কিছুই ত’ জানতাম না)
অহৈতুকী-কৃপা-স্বভাবে—নিজগুণে লয়ে গেলে
(সংসার-কূপ হতে তুলে—নিজ-গুণে লয়ে গেলে
(এনেছ যদি নিজ-গুণে
ভকতবাৎসল্য-লীলা
হৃদিপটে এ্যাঁকে দাও)
দেখাবে বলে বলেছিলে
ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে
লুকাইয়ে করছ খেল।
প্রাণের প্রাণ গৌর লয়ে—লুকাইয়ে করছ খেলা
হরিদাসের নির্য্যাণোৎসবে—একবার দেখা দাও
পরাণ-গৌরাঙ্গ লয়ে—একবার দেখা দাও
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-বিহার—হৃদিপটে এ্যাঁকে নেব
জয় হরিদাস বলিহারি
জয় ভক্তবৎসল-গৌরহরি—জয় হরিদাস বলিহারি
কেন বা দেখা দিবে
আমি স্বতন্তরী অপরাধী—কেন বা দেখা দিবে
তোমার,–আজ্ঞা পালন করি নাই—কেন বা দেখা দিবে
দেখা না দাও দুঃখ নাই—এই কৃপা কর হে
যেন,–নিশিদিশি ঝুরতে পারি
গৌরের,–ভক্তবাৎসল্য স্মঙরি—যেন,–নিশিদিশি ঝুরতে পারি
এই কৃপা কর হে—যেন,–কেঁদে কেঁদে জনম যায়
তোমার অমূল্য-দান—যেন,–প্রাণে প্রাণে রাখতে পারি
শ্রীহরিদাসের সেবা—তোমার অমূল্য—দান
অযোগ্যকে করেছ দান—তোমার অমূল্য-দান
মায়াগুরুর সেবায়—তার কি অধিকার
মায়ার,–লাথি খাওয়া স্বভাব যার—তার কি অধিকার
তোমার অমূল্য-নিধি—অযোগ্যকে করেছ দান
অহৈতুকী-কৃপা-স্বভাবে—অযোগ্যকে করেছ দান
যেন,–বুকে ধরে মরতে পারি
তোমার অমূল্য-দান—যেন,—বুকে ধরে মরতে পারি
তোমার,–কৃপাদত্ত-নামে হয়ে বলী—যেন,–বুকে ধরে মরতে পারি
মহানগরী-বাসী নরনারী—এই কৃপা কর সবে
(ওগো গঙ্গাতীরবাসী—এই কৃপা কর সবে
নিতাই গৌর,–পদাঙ্কিত-ভূমিনিবাসী—এই কৃপা কর সবে
গুরু-চরণ হৃদে ধরি’—নিশিদিশি ঝুরে মরি
গৌরের,–ভক্তবাৎসল্যলীলা স্মঙরি—নিশিদিশি ঝুরে মরি
কাঙ্গাল তোমারদের দ্বারে
ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে করে—এসেছে কাঙ্গাল তোমাদের দ্বারে
দয়া করে নাম শুনাও
কারো কথা শুনো না
নাম-ভুলাবার অনেক আছে—কারো কথা শুনো না
দেখি’ মায়ার ছলনা—নিজধর্ম্ম ভুলো না
কামিনী-কাঞ্চনের হাত হতে—আত্মরক্ষা কর ভালমতে
যদি,–সেবা-সুখভোগে সাধ থাকে—আত্মরক্ষা কর ভালমতে
সেবাসুখে বঞ্চিত হবে
সুদুর্ল্লভ হরিদাসের—সেবাসুখে বঞ্চিত হবে
হরিদাস-ঠাকুর হন
জগৎ-সেব্য-গৌরের সেব্য-ধন—হরিদাস ঠাকুর হন
গৌরের সেব্য-স্বরূপের সেবা—সাবধানে কর ভাই
শ্রীগুরুচরণ ধরি’ হিয়ায়—সাবধানে কর ভাই
আমার শ্রীসেবা-ভাগ্য নাই—তোমরা,–সাবধানে কর ভাই
সুখী হব সুসেবা-বার্ত্তা পাইয়া।।’’
ভাই ভাই একপ্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াই মোরা
জয় হরিদাস বলিহারি—জয়,–ভক্তবৎসল গৌরহরি
সিংহদ্বারে ভিক্ষা করে—গৌর আমার,–হরিদাসের উৎসব করে)
হরিদাসের সেবা-বল পেয়ে—প্রাণভরে গাও ভাই
গুরু-চরণ হৃদে ধরি’—প্রাণভরে গান করি
গুরু-চরণ হৃদে ধরি’—প্রাণভরে গান করি
তাঁর কৃপাদত্ত নাম—প্রাণভরে গান করি)
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।