যমুনা কিনারে

আজু রজনী হম ভাগে পোহায়লুঁ

আজু রজনী হম ভাগে পোহায়লুঁ
পেখলুঁ পিয়ামুখচন্দা।
জীবন জৌবন সফল করি মানলুঁ
দসদিস ভেল নিরদন্দা।।
আজু মঝু গেহ গেহ করি মানলুঁ
আজু মঝু দেহ ভেল দেহা।
আজু বিহি মোহে অনুকূল হোঅল
টুটল সবহুঁ সন্দেহা।।
সোই কোকিল অব লাখ লাখ ডাকউ
লাখ উদয় করু চন্দা।
পঁচবান অব লাখ বান হোউ
মলয় পবন বহু মন্দা।।
অবহন জবহুঁ মোহে পরি হোয়ল
তবহি মানহু নিজ দেহা।
বিদ্যাপতি কহ অলপ ভাগি নহ
ধনি ধনি তুয়া নব নেহা।।

অন্তঃকথন:
রাধারানীর মনে আজ প্রেমের পরমানন্দের উপলব্ধি ঘটেছে! সকল সন্দেহ সকল দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে, এখন সকল সংসার জুড়ে কেবলই আনন্দ! শ্রীমতী বলছেন, বহু ভাগ্যে আজ আমার নিশা অবসান হল, আমি জেগে উঠে আমার প্রিয়তমের চাঁদমুখ দেখতে পেলাম! আজ আমি আমার জীবন যৌবন সফল বলে মানলাম, দশদিক নির্দ্বন্দ্ব হল, অর্থাৎ কোন দিকেই আর কোন দ্বন্দ্ব রইল না! বুঝলাম তিনি আমারই! মাধবের সঙ্গসুখে আজ আমার গৃহকে সার্থকরূপে গৃহ বলে বোধ হল! আর আমার এই যে দেহ তা কৃষ্ণপ্রেম সম্ভোগের উপকরণ রূপে সার্থক হল! এতদিনে আমার গৃহকে গৃহ বলে, দেহ কে দেহ বলে মনে হল! আজ বিধি আমার প্রতি অনুকূল হলেন তাই আমার মনের সকল সন্দেহ মিটে গেল! যে কোকিলের কুহুতান এক সময় আমায় বিরহ যাতনায় পীড়িত করেছে, আজ সেই কোকিল লাখে লাখে ডাকুক তাতে আমার আনন্দের কোন হেরফের হবে না! আজ লক্ষ চন্দ্র উদিত হোক, কন্দর্পের পঞ্চবাণ লক্ষ বাণ হোক, মৃদু মন্দ মলয় পবন প্রবাহিত হোক, আজ সবেতেই আমার সুখ! আজ যখন আমার মনে এইরকম অনুভব জাগ্রত হল, তখনই আমি আমার দেহকে সার্থক বলে মেনে নিলাম! আসলে আজ শ্রীমতী যথার্থ রূপে হৃদয়ে মাধবকে পেয়েছেন, নিজের অন্তরে প্রেমের পরিপূর্ণতা অনুভব করেছেন, এখন বাইরের কোন প্ররোচনাই আর তাঁর মর্মজ্বালা বাড়াতে পারবে না, কারণ আজ তাঁর মনে সার্থকতার অনুভূতি জাগরিত হয়েছে, নিজেকে তিনি সর্বার্থে ধন্য বলে বোধ করছেন! শ্রীমতীর কথা শুনে বিদ্যাপতি বলছেন, তুমি অল্প ভাগ্য নও, কারণ এই অনুভব সকলের হয় না! ধন্য ধন্য তোমার এই নিত্য-নূতন প্রেম! শ্রীরাধার ভাবোল্লাসের এই পদটি বহু পঠিত, বহুবার গীত! পদটির মধ্যে অলংকারের প্রাচুর্য নেই, অতি নিবিড় ব্যাক্তিগত এক আনন্দের অনুভব বিদ্যাপতি বড় সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন! সেখানেই পদটির বিশেষত্ব।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী